গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়

হিমালয়ের পাদদেশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিছিয়ে থাকা অরণ্যভূমি ও তার আদিম বাসিন্দাদের অক্ষত রাখার জন্য বেশ কয়েকটি সংরক্ষিত অরণ্যের সৃষ্টি করা হয়েছে ৷ যেমন, মহানন্দা, চাপড়ামারি ও জলদাপাড়া অভয়ারণ্য, বক্সা টাইগার রিজার্ভ এবং ডুয়ার্সের একমাত্র জাতীয় উদ্যান গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক ৷

নেওরা উপত্যকার গভীর জঙ্গল ভেদ করে সামসিং, চালসার পাশ দিয়ে সমতলে নেমেছে চঞ্চলা মূর্তি নদী ৷ তার বেশ কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে বিন্দু, ঝালং হয়ে ভারত-ভুটানের সীমান্ত এঁকে নেমে এসেছে জলঢাকা ৷ এই দুই নদীর মধ্যবর্তী সমতলে গরুমারা অরণ্যের বিস্তার ৷ অতি বৈচিত্রময় সেই জঙ্গলে হাতি-সমান লম্বা এলিফ্যান্ট গ্রাস-এর তৃণভূমি থেকে শুরু করে নিঃসীম হরজাই জঙ্গল, সর্পিল গতিপথের গণ্ডাখানেক নদী থেকে বনের সীমানায় আকাশের গায়ে হিমালয়ের আভাস-প্রাকৃতিক রূপের সমস্ত রসদই মজুত ৷

প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের বৈচিত্রে সমৃদ্ধ গরুমারার বনাঞ্চলকে স্বাধীনতার দুবছর পরেই অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয় ৷ অর্ধশতাব্দী আগে সে জঙ্গলের আয়তন অবশ্য ছিল মাত্রই ২১২৯ একর ৷ আস্তে আস্তে গরুমারা ডুয়ার্সবাসী হাতি, গাউর ও একশৃঙ্গী গণ্ডারের স্থায়ী বাসস্থান হিসেবে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অরণ্যভূমিতে উন্নীত হওয়ায় বনদপ্তর ১৯৯২ সালে গরুমারাকে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা দেওয়া স্থির করেন ৷ ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে ৮০ বর্গ কিলোমিটার জঙ্গলমহল নিয়ে সৃষ্টি হয় রাজ্যের চতুর্থ জাতীয় উদ্যান গরুমারা ৷

শিলিগুড়ি থেকে কিলোমিটার-ষাটেক দূরে ডুয়ার্সের একটি ছোট্ট শহর চালসা ৷ মহানন্দা অভয়ারণ্যের বুক চিরে, তিস্তা সমেত বিস্তর ছোট-বড় নদী পেরিয়ে, চা-বাগানের আদিগন্ত ঢেউ খেলানো গালচের মধ্য দিয়ে শিলিগুড়ি থেকে চালসা যাওয়ার রাস্তাটিও ভারি নয়নলোভন ৷ এই চালসা থেকেই ডানদিকে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক গিয়েছে লাটাগুড়ি ময়নাগুড়ি হয়ে জলপাইগুড়ির দিকে ৷ গরুমারা জাতীয় উদ্যানের যাত্রাপথও ওইটাই ৷

চালসা থেকে জাতীয় সড়ক ধরে এগারো কিলোমিটার এগনোর পরে গহন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চার কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাড়ি দিতে হয় ৷ শ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যময় সে রাস্তায় গাড়ি ছাড়া যাতায়াত নিষেধ ৷ তাই চালসায় বাস থেকে নেমে আমরা একটা অ্যাম্বাসাডর ভাড়া করে নিলাম ৷ আইভিল, বড়দিঘি ইত্যাদি চা-বাগান আর মঙ্গলবাড়ি, বাতাবাড়ির মতো ছোট ছোট জনপদ পেরিয়ে মিনিট পনেরোর মধ্যেই গাড়ি গিয়ে গরুমারার চেকনাকা ছুঁলো ৷ চওড়া পিচরাস্তার বাঁয়ে গণ্ডার আঁকা একটা বোর্ড বলে দিচ্ছে ডুয়ার্সের একমাত্র জাতীয় উদ্যানের সীমানা এখানেই শুরু ৷

গরুমারা বনবাংলোয় রাত্রিবাসের ছাড়পত্র জলপাইগুড়ির বনদপ্তর থেকে আগেই জোগাড় করা হয়েছিল ৷ চেকপোস্টে সেটা দেখিয়ে এন্ট্রি করতেই বাঁশ উঠল ৷ শতখানেক মিটার রাস্তার বাঁয়ে সঙ্গ দিল বড়দিঘি চা-বাগান ৷ তার পরেই আমাদের ঘিরে ফেলল নিরন্ধ্র নিরবচ্ছিন্ন জঙ্গল ৷ বন্যপ্রাণী দেখার আশা-উৎকণ্ঠা নিয়ে মিনিট দশেক না কাটতেই গাড়ি এসে থামল জঙ্গল কেটে তৈরি কিছুটা খোলা চত্বরে ৷ চত্বরের বাঁ-পাশে বনকর্মীদের কাঠের একসার কোয়ার্টার ৷ কোয়ার্টারের পাশেই পরিখাঘেরা জায়গায় নিশ্চিন্তে ঘাস চিবোচ্ছে দুটি মাঝারি আকারের হস্তিনী ৷ তাদের সামনের পায়ে মোটা শিকলের প্যাঁচ ৷ কোয়ার্টারের উঠোনে শুঁড় নাড়িয়ে দেয়ালা করছে আরেকটি মাস চার-পাঁচের ছোট্ট হাতি ৷ গত জানুয়ারিতে চাপড়ামারির জঙ্গলে মৃতা মায়ের পাশ থেকে উদ্ধারের পরে বনদপ্তর ওকে এখানেই ঠাঁই দিয়েছে ৷ নাম রাখা হয়েছে হিলাবতী ৷

চত্বরের ডানপাশে জঙ্গল ঘেঁসে গরুমারার সুপ্রাচীন অথচ সুসংস্কৃত বনবাংলো ৷ বন্যদের দৌরাত্ম্য এড়ানোর জন্য বাংলোর তিনদিকে পরিখা কাটা ৷ উত্তরে খাড়া খাদ নেমে যাওয়ায় সেটার আর প্রয়োজন হয়নি ৷ দোতলা বাংলোর নিচে রঙিন টিভি, সুদৃশ্য বেতের সোফা, গ্লাস-টপ ডাইনিং টেবিল ইত্যাদি দিয়ে রুচিসম্মতভাবে সাজানো লাউঞ্জ-কাম-ডাইনিং ৷ ওপরতলায় দুটি দ্বিশয্যার শয়নকক্ষ ৷ লাগোয়া থ্রি-স্টার হোটেলের উপযোগী চানঘর ৷ সোনায় সোহাগার মতো বাংলোর সদা হাসিখুশি কুক গোপাল ৷

বাংলোর ঠিক পিছনে এক ঝাঁক লিচুগাছ ৷ বাংলোর চত্বরে প্রতিটি ওদাল, বনকাঁঠাল, টুন, লসুনি ইত্যাদি গাছকে বৈজ্ঞানিক নাম সমেত চিহ্নিত করেছেন বনদপ্তর ৷ গাছের গায়ে লেগে থাকা ডেনড্রোবিয়াম ফারমেরি, লুসিয়া ফিলিফরমিস, ভ্যান্ডা ইত্যাদি অর্কিডগুলিকেও চেনানোর চেষ্টা হয়েছে ৷

গরুমারা বাংলোর তিনদিক ঘিরে রয়েছে শাল, সেগুন, বহেরা, খয়ের, শিশু, শিমুল ইত্যাদির মিশ্র জঙ্গল ৷ অধিকাংশ গাছের গায়ে লাইকেনস-এর সাদাটে সবুজ ছোপ আর মসের ঝুলন্ত দাড়ি-গোঁফ ৷

বাংলোর ডানদিক দিয়ে একটা জিপচলা রাস্তা চলে গিয়েছে উত্তর-পুবে, কয়েক ফার্লং দূর দিয়ে বয়ে যাওয়া মূর্তি নদীর পাড়ে ৷ গরুমারার বীট অফিসার মহেশ রায় সরকার ওই রাস্তা দিয়েই আমাদের অরণ্য-সন্দর্শনে নিয়ে চললেন ৷ মহেশবাবুর হাতে দোনলা বন্দুক, দৃষ্টি সজাগ ৷ কারণ সাতসকালে বামনি বীট থেকে ফেরার পথে বনরক্ষীরা আশপাশেই নাকি একটি লেপার্ড দেখেছেন ৷ এই মুহূর্তে ডুয়ার্সের জঙ্গলে লেপার্ডের সংখ্যা আড়াইশো থেকে তিনশো ৷ তার মধ্যে দশ-পনেরো শতাংশের বাসস্থান এই জাতীয় উদ্যান ৷ তবে শিকারের সহজলভ্যতার জন্য তারা গভীর জঙ্গলের চেয়ে অরণ্যসীমান্তে গ্রামগঞ্জ বা চা-বাগানের আশপাশে থাকাই বেশি পছন্দ করে ৷ গরুমারায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার নেই ৷ তবে বন্য বিড়াল প্রজাতির অন্য কয়েক সদস্য ফিশিং ক্যাট, লেপার্ড ক্যাট ইত্যাদি আছে ৷

বন্দুকধারী মহেশবাবুর পাশে পাশে মিনিট দশেক হাঁটার পরেই জঙ্গল পাতলা হয়ে এল ৷ এখন বেশ খানিকটা নিচে দেখা যাচ্ছে দু-পাশে দুধসাদা বালির চর ফেলে বয়ে চলা আসমানি রঙের মূর্তি নদী ৷ গ্রীষ্মের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে তার স্রোত অতি ক্ষীণ ৷ নদীর ও পার থেকেই শুরু হয়েছে পুণ্ডি, মালসা, চেপটি, কাশিয়া ইত্যাদি ঘাসের বিস্তীর্ণ প্রান্তর ৷ তৃণভূমির শেষে কালচে-সবুজ জমাট বাঁধা জঙ্গলের রেখা ৷

মূর্তি নদীর এপারেই রয়েছে খালসদৃশ আরেকটি সরু নদী, ইংডং ৷ এই নদীটিই গরুমারা বনবাংলোর সামনের খাদ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ৷ দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টিতে তার অবস্থাও তথৈবচ ৷ তবু এ নদীর আকর্ষণ অন্যখানে ৷ ইংডংয়ের পাড়েই রাতুলের বাস এবং রাতুলের দৈনন্দিন কাদা-মাখামাখিও তারই গর্ভে ৷ পাঁচটি ছোট বড় হাতির পাশাপাশি গরুমারা একটি গণ্ডারকেও পোষ্য নিয়েছে ৷ সেই যুবক গণ্ডারটিরই আদরের নাম ‘রাতুল’ ৷

বছর কয়েক আগে কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্কে বানের তোড়ে ভেসে যাচ্ছিল দুটি গণ্ডারশিশু ৷ বনকর্মীরা তাদের উদ্ধার করেন ৷ অতঃপর, গণ্ডারের উপযোগী চারণভূমি আছে বলে দুই অনাথের একজনকে আনা হয় গরুমারায়, অন্যজনকে ‘মধু’ নাম দিয়ে পাঠানো হয় জলদাপাড়ায় ৷

রাতুলকে ফের বুনো করে তোলার বিস্তর চেষ্টা বনদপ্তর করেছিলেন কিন্তু বন্য গণ্ডারেরা মানুষের গন্ধমাখা রাতুলকে পরিবারভুক্ত করতে নারাজ হওয়ায় এবং রাতুলও জ্ঞাতিদের প্রতি বিশেষ আসক্তি না দেখানোয় ইংডং আর মূর্তির মাঝে বেশ কিছুটা জায়গা বৈদ্যুতিক বেড়া দিয়ে ঘিরে তৈরি হয় রাতুল এনক্লেভ ৷ গরুমারার গণ্ডারকুলের দুই দৈত্যাকার দলপতি ‘বিগ বস’ ও ‘মাস্তান’ বৈদ্যুতিক শকের পরোয়া না করে সেখানে ঢুকেও রাতুলকে মারধর করায় এখন তার এনক্লেভের পাশে নজর মিনার বসেছে ৷ দোতলা-সমান সেই ওয়াচ টাওয়ারে চড়ে বনরক্ষীরা ২৪ ঘণ্টা রাতুলের পাহারাদারি করেন ৷

টনদুয়েক ওজনের গণ্ডারটা বোধহয় কোথাও নিশ্চিন্তে দিবানিদ্রা দিচ্ছিল ৷ মহেশবাবু বেড়ার ধারে দাঁড়িয়ে কয়েকবার তার নাম ধরে হাঁক পাড়তেই ঝোপঝাড় ঠেলে ধেয়ে এল রাতুল ৷ রাতুলের এনক্লেভে ঘাসজমি নেই, তাই সঙ্গে করে বেশ খানিকটা ঘাস আনা হয়েছিল ৷ প্রাগৈতিহাসিক তৃণভোজীটির সামনে সেগুলি ছড়িয়ে দিয়ে রাতুলের পেটের কাছে একটি পুরনো ক্ষতে পরম স্নেহে অ্যান্টিবায়োটিক মলম ঘষতে লাগলেন গরুমারার বাসিন্দাদের পিতৃপ্রতিম বীট অফিসার ৷

ইতিমধ্যে ছোট্ট হিলাবতীকে মূর্তি নদীতে স্নান করাতে নিয়ে এসেছে তার সর্বক্ষণের কেয়ারটেকার বিমল ভুজেল ৷ আদুরে চেহারার হাতিটা কেমন করে জলকেলি করে দেখতে গিয়েই সাক্ষী হয়ে গেলাম এক অভাবনীয় দৃশ্যের ৷ মূর্তি নদীর ঠিক ওই পারেই বুকসমান ঘাস-জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে সর্বাঙ্গে ধুলো মাখতে ব্যস্ত দুটি নিখাদ, নির্ভেজাল বন্য হাতি ৷ বিমল জানাল, হাতির পিঠের মোটা চামড়ায় নাকি একরকমের পোকা সংসার বসায় ৷ ধুলোর পাউডার তাদেরই নির্বংশ করার জন্য ৷ দাঁতহীন মাঝারি আকারের হাতি দুটির উদাসীন হাবেভাবে বোঝা গেল গরুমারার বন্য হস্তিকুল মনুষ্যদর্শনে অভ্যস্ত ৷ তাই নদীর এপারে এক পাল উত্তেজিত দর্শকের আস্ফালনেও তাদের বিন্দুমাত্র চিত্তবৈকল্যের লক্ষণ নেই ৷

বেশ কিছুক্ষণ আশ মিটিয়ে হস্তিদর্শন করে আমরা বনবাংলোর পথ ধরলাম ৷

জঙ্গলের গহনে না ঢুকেই যাতে নিরাপদ দূরত্বে বসে বন্যজন্তুর দর্শন মেলে সে জন্য গরুমারার বাংলোর হাতায়, খাদের কিনারা ঘেঁসে একটি পর্যবেক্ষণ মঞ্চ বানিয়েছেন বনদপ্তর ৷ মাথার ওপর ছাদ আর চারপাশ রেলিংয়ে ঘেরা আগাগোড়া কাঠের তৈরি মঞ্চটির নাম রাইনো অবজারভেশন পয়েন্ট ৷ এর প্রায় নিচেই রাতুলের এনক্লেভ ৷ অবজার্ভেশন পয়েন্টের গা বেয়ে খাদ নেমে গিয়েছে শ-খানেক ফুট ৷ খাদ যেখানে সমতলে গড়িয়েছে সেখানেই বদ্ধ, সবুজ জলের সর্পিল ইংডং নদী ৷ নদীর ওপারে, জঙ্গলে ঘেরা এক টুকরো তৃণভূমি ৷ খোলা প্রান্তরে বন্যদের আকর্ষণ করে পর্যটকের আশ মেটানোর জন্য ইংডংয়ের পারেই একটি নুনি তৈরি করা হয়েছে ৷ একটি কংক্রিট খণ্ডের ওপর নিয়মিত রাখা হয় পাথুরে নুন আর চিটেগুড় ৷ পরমানন্দে তা-ই চাটতে আসে হরিণ, বাইসন, শুয়োর এমনকী হাতিও ৷

বন্যপ্রাণী দর্শনের নজরমিনার গরুমারায় আরও দুটো রয়েছে ৷ বনবাংলো থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে, বামনি বীট যাওয়ার রাস্তায় যাত্রাপ্রসাদ ওয়াচ টাওয়ার এবং কিলোমিটার তিনেক দূরে জঙ্গলের একেবারে কোরকের মধ্যে গরাতি ৷

ওয়াচ টাওয়ার শুনলেই যে ছবিটা চোখে ভাসে যাত্রাপ্রসাদ ওয়াচ টাওয়ার ঠিক তা নয় ৷ বরং অনেকটা রাইনো অবজারভেশন পয়েন্টের মতো খাদের কিনারে কাচের জানলায় ঘেরা একটি কাঠের ঘর ৷ তবে সৌন্দর্য ও লোকেশনের বিচারে অনেক কদম এগিয়ে ৷ হাতির হামলা থেকে বাঁচার জন্য ওয়াচ টাওয়ারের তিনদিক সিমেন্ট বাঁধানো চওড়া পরিখায় ঘেরা ৷ উত্তরে খাড়া খাদ নেমে গিয়েছে মূর্তি নদীর বিস্তীর্ণ সমতলে ৷ নিচে, নদীর পারের তৃণপ্রান্তরে একটি কৃত্রিম সল্ট লিক বা নুনি ৷ এপাশ ওপাশের জঙ্গল থেকে বেশ কয়েকটি জানোয়ার চলা শুঁড়িপথ গিয়ে সেখানে মিশেছে ৷

ওয়াচ টাওয়ারে রয়েছে এক টুকরো ফুলবাগান, জলের ট্যাঙ্ক ৷ বাড়তি সুরক্ষার জন্য পরিখার পাশে কয়েক ফুট পর্যন্ত লোহার শিক শুলের মতো উঁচু করা ৷ তাতেও অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি ৷ বছর দুয়েক আগে পরিখা ও শুলো টপকে যাত্রাপ্রসাদের ফাইবার গ্লাসের মূর্তি ভেঙে দিয়ে যায় এক ঈর্ষাকাতর দাঁতাল ৷

গরুমারার কিংবদন্তী যাত্রাপ্রসাদের পরিচয় লিপিবদ্ধ করে বনদপ্তর জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে আসাম থেকে নিয়ে আসা হয় সুপুরুষ যাত্রাপ্রসাদকে ৷ এখানেই সে ‘কুনকি’ হিসেবে প্রশিক্ষিত হয় ৷ ক্রমে ক্রমে যাত্রা বনবিভাগের বহু অভিযানে তার অসামান্য বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে, বহু সঙ্কটে বনরক্ষীদের প্রাণ বাঁচিয়ে নিছক এক পোষা হাতি থেকে গরুমারার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে ওঠে ৷ তাকে ঘিরে গরুমারার অনেক স্মৃতি, অনেক কাহিনী ৷ জাতীয় উদ্যানের কর্মীরা যাত্রার কর্মজীবনের রজতজয়ন্তী পালনের তোড়জোড়ও শুরু করেছিলেন ৷ এমন সময়ে, ১৯৯৭ সালের ১৪ জুলাই সে মারা যায় ৷ গরুমারার বনবাংলো লাগোয়া চত্বরেই জঙ্গল ঘেঁসে তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে ৷

এখন গরুমারাতে চারটি কুনকি হাতি রয়েছে, পর্বতপ্রমাণ দুই পুরুষ চন্দ্রচূড় ও জনার্দন এবং দলমা থেকে আসা দুই যুবতী কাবেরী ও শিলাবতী ৷

হঠাৎ খেয়াল হয় বিন্দুর শীর্ণস্রোতে কমলা রং, পশ্চিমে গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে সূর্য অস্তাচলে ৷

ভ্রমণ জুন, ১৯৯৯

সকল অধ্যায়

১. অর্ধশতাব্দীর আগের বদ্রীনাথ যাত্রা – প্রতাপকুমার রায়
২. মানস অভয়ারণ্য – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩. জলদাপাড়া অরণ্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪. জলের ধারে ঘর – নবনীতা দেব সেন
৫. জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির – উষা সেন
৬. তাহিতি – হরপ্রসাদ মিত্র
৭. মার্কন্ডেয় গঙ্গার উত্স সন্ধানে – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮. কেদার বদ্রী – মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
৯. তেহরানি হয়রানি – অমিতাভ চৌধুরি
১০. শোনপুরের মেলায় – বরুণ দত্ত
১১. এলেম নতুন দেশে – কমলা মুখোপাধ্যায়
১২. মস্কো থেকে সাইবেরিয়া হয়ে পিকিং – গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩. পাতাল-ভুবনেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
১৪. ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ
১৫. নিকোবরের দ্বীপে – তিলকরঞ্জন বেরা
১৬. তিরতিরে নদী আর শাল জঙ্গলের দেশে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭. আমার ভ্রমণ – মহাশ্বেতা দেবী
১৮. সুন্দরবন – হীরক নন্দী
১৯. ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত
২০. সাইকেলে পাঁচ বছরে ভূ-পর্যটন – ভূপর্যটক বিমল দে
২১. আঙ্কোর ভাট – প্রীতি সান্যাল
২২. হিমালয়ের সাতকাহন – ত্রিদিব বসু
২৩. স্বপ্নের পথেই যাওয়া যায় – মহাশ্বেতা দেবী
২৪. ছোট কৈলাস – সুভাষ দত্ত
২৫. বালতাল হয়ে অমরনাথ – প্রতাপকুমার রায়
২৬. মধ্য এশিয়া অভিযান – গৌতম ঘোষ
২৭. পথ হারিয়ে সিকিমের জঙ্গলে – রতনলাল বিশ্বাস
২৮. নতুন করে পাব বলে – বন্দনা সান্যাল
২৯. সেবার ব্রেকজার্নি করে – জয়া মিত্র
৩০. চন্দ্রভাগার উৎস চন্দ্রতাল সুর্যতাল – সুনীলকুমার সরদার
৩১. ওঙ্কারেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
৩২. সুন্দরবনে দুদিন – পবিত্র সরকার
৩৩. মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়
৩৪. দিকবিদিকে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৫. তিস্তানদীর উৎসে – শরৎ ঘোষ
৩৬. পশ্চিমে হাওয়াবদল – মধুপর্ণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৭. এক টুকরো নীল চাঁদ – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৩৮. কালিম্পং থেকে তিব্বত – অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
৩৯. সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু
৪০. মির্জা শেখ ইতেসামুদ্দিনের বিলেত যাত্রা এবং আমি – নবনীতা দেব সেন
৪১. বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
৪২. গানতোক থেকে ইয়ুমথাং – সুতপা ভট্টাচার্য
৪৩. ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল
৪৪. ডুয়ার্সের দুয়ার এখন খোলা – সমরেশ মজুমদার
৪৫. ইউরোপে দিন কয়েক – পূর্ণেন্দু পত্রী
৪৬. রামচন্দ্রের বনবাসের পথ পরিক্রমা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. আসমুদ্রককেশাস – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
৪৮. নিরলংকার ভ্রমণ – শঙ্খ ঘোষ
৪৯. চেঙ্গিস খানের দেশে – প্রতাপকুমার রায়
৫০. মিজোরামের নীল পাহাড়ে – দীপঙ্কর ঘোষ
৫১. সিন্ধুদুর্গ – বিশ্বদীপ দত্ত
৫২. জিম করবেটের জঙ্গলে – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩. থর মরুভূমিতে ট্রেকিং – শিবনাথ বসু
৫৪. মরোক্কো ভ্রমণ – হরপ্রসাদ মিত্র
৫৫. ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ – নবনীতা দেব সেন
৫৬. গন্তব্য মাচুপিচু – প্রতাপকুমার রায়
৫৭. কই যাইত্যাছি জানি না – শঙ্খ ঘোষ
৫৮. পারাংলা অভিযান – সুনীলকুমার সরদার
৫৯. পুশকিন, মলদভা আর কচি পাতার বাঁশিতে মোত্সার্ট – প্রীতি সান্যাল
৬০. আমাদের ছোট নদী : পার্বতী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬১. দেবলোকের পথে পথে – অশোক চক্রবর্তী
৬২. না-ভ্রমণের বৃত্তান্ত – আশাপূর্ণা দেবী
৬৩. এভারেস্টের পাদদেশে যাত্রা – কমলা মুখোপাধ্যায়
৬৪. নীল নদে পাঁচদিন – হরপ্রসাদ মিত্র
৬৫. বারাণসীর ঘাটের কথা – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৬. বালফাক্রমের পাহাড়-জঙ্গলে – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৬৭. গৌরীগঙ্গার উৎসব মিলাম হিমবাহ – পুরুষোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৮. মরুভূমির দিনরাত্রি – পবিত্র সরকার
৬৯. ঢাকা : একুশ বছর পর – অন্নদাশঙ্কর রায়
৭০. ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
৭১. ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউ – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৭২. কালিন্দী গিরিবর্ত্ম – রথীন চক্রবর্তী
৭৩. একযাত্রায় ভোরামদেরও আর কানহা – হীরক নন্দী
৭৪. মদমহেশ্বরের ডোলিযাত্রা – কাজল দত্ত
৭৫. কেনিয়ায় পাঁচ অরণ্য – প্রতাপকুমার রায়
৭৬. কোনাডা থেকে রেভুপাল ভরম – রতনলাল বিশ্বাস
৭৭. চাঁদের দেশ লাদাখ – কমলেশ কামিলা
৭৮. বোকের তোভ, ইজরায়েল – নবনীতা দেব সেন
৭৯. বিষ্ণুপুর মুকুটমণিপুর – হরপ্রসাদ মিত্র
৮০. ডোকরিয়ানি বামক – অনিন্দ্য মজুমদার
৮১. তাওয়াং থেকে তাসি-চু জং – কমলা মুখোপাধ্যায়
৮২. মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল
৮৩. আকাশচূড়ায় অভিযান – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮৪. ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ
৮৫. সারেঙ্গেটির জঙ্গলে – হরপ্রসাদ মিত্র
৮৬. এবারের কুম্ভমেলায় – চিন্ময় চক্রবর্তী
৮৭. অন্য পথের পথিক – বুদ্ধদেব গুহ
৮৮. গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়
৮৯. নিশীথ সূর্যের দেশ – প্রতাপকুমার রায়
৯০. সবুজ নামদাফাতে – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
৯১. পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু
৯২. গোঁসাইকুণ্ড – কমলা মুখোপাধ্যায়
৯৩. অমরকন্টক – হীরক নন্দী
৯৪. আদিম ডুয়ার্সের আধুনিক রূপকথা – সূর্য ঘোষ
৯৫. পার্বতী উপত্যকায় সার পাস – বিদ্যুৎ দে
৯৬. মিয়ানমার, ইরাবতীর সঙ্গে – পবিত্র সরকার
৯৭. রূপসী রিশপ – হীরক নন্দী
৯৮. হিমবাহের জন্মভূমিতে – শেখর ভট্টাচার্য
৯৯. ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার
১০০. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত – হরপ্রসাদ মিত্র
১০১. বক্সা দুর্গ – টুটুল রায়
১০২. সিন্ধু নদের ধারে – রতনলাল বিশ্বাস
১০৩. মেঘালয়ের দাউকি – সুমিত মুখোপাধ্যায়
১০৪. আমাদের ছোট নদী : লিডার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০৫. লাসা – সমীর রায়
১০৬. ২ নম্বর লোভালোয়া স্ট্রিট – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
১০৭. অযোধ্যা পাহাড় – বিশ্বদীপ দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন