পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

কেদারনাথ ছাড়া আরও যে চারটে কেদার আছে অনেকেই তা হয়তো ভালোভাবে জানেন না ৷ এই পঞ্চকেদার হল-কেদারনাথ, মদমহেশ্বর, তুঙ্গনাথ, রুদ্রনাথ ও কল্পেশ্বর ৷ দারুণ সুন্দর এই ট্রেকিং রুট ৷ বিশেষ প্রস্তুতিরও প্রয়োজন নেই ৷ শুধুমাত্র টাকাকড়ি, গরম জামাকাপড় আরেকটা স্লিপিং ব্যাগ জোগাড় হয়ে গেলেই যাওয়া চলে ৷ পাঁচ কেদারে হাঁটাপথ সব মিলিয়ে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার ৷ আমার নিজের মতে, ভারতীয় হিমালয়ে পঞ্চকেদারের জুড়ি মেলা ভার ৷ একসঙ্গে হিমালয়ের ও তীর্থের নানা বৈচিত্র্যের অশেষ সমারোহ এই একই ট্রেকিং রুটে পাওয়া সত্যিই দুর্লভ ৷

কেদারের কিন্তু দারুণ সব কাহিনী আছে ৷ পৌরাণিক মতে, পঞ্চপাণ্ডব এই পাঁচ কেদারের নির্মাতা ৷ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষে পাণ্ডবরা আত্মীয়বন্ধু নিধনের গ্লানিতে প্রায়শ্চিত্তের উদ্দেশে শিবের সঙ্গে দেখা করার সংকল্পে রওনা দিলেন ৷ কিন্তু শিবের দেখা দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না ৷ শুরু হল পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গে মহাদেবের লুকোচুরি খেলা ৷ কাশী, উত্তরকাশী, গুপ্তকাশী হয়ে শিব কেদারের হিমালয়ের কোলে দেখলেন প্রচুর মহিষ চরে বেড়াচ্ছে ৷ শিব মহিষরূপ ধারণ করে নিশ্চিন্তে ওখানে লুকিয়ে রইলেন ৷ পাণ্ডবরাও শেষে বুঝলেন শিব মহিষরূপী ৷ কিন্তু কেমন করে বুঝবেন স্বয়ং মহাকাল কোনজন ৷ শেষে বুদ্ধি করে ভীম এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ের মাথায় পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে রইলেন ৷ সন্ধেবেলা মহিষদের ঘরে ফেরার সময়ে দেখা গেল একটা মহিষ ভীমের পায়ের ফাঁক দিয়ে গলতে চাইছে না ৷ ভীম বুঝলেন এই নিশ্চয়ই মহাদেব ৷ পিছনদিকে তাই জাপটে ধরলেন ৷ পিছনদিক পড়ে রইল ৷ বাকি অংশ উধাও ৷ তাই কেদারনাথের বিগ্রহ মহিষের পশ্চাদ্দেশ ৷ বাকি অংশও এইভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ধরা পড়ল ৷ মদমহেশ্বরে নাভি, তুঙ্গনাথে বাহু, রুদ্রনাথে মুখ আর কল্পেশ্বরে জটা ৷ আর মহিষরূপী-মুখ নেপালের পশুপতিনাথে ৷ তাই অনেকে পশুপতিনাথকে ষষ্ঠ কেদারও বলেন ৷ যাইহোক, শেষপর্যন্ত শিব পঞ্চপাণ্ডবের গ্লানি মুক্ত করে বর দিলেন ৷ আর পাণ্ডবরা খুশি মনে এই পাঁচ জায়গায় মন্দির নির্মাণ করলেন ৷ পুজো শুরু হল পঞ্চকেদারের ৷

সাধারণত কেদারনাথের মন্দির খোলার সময়ে অর্থাৎ মে-জুন মাসে আর আমাদের পুজোর সময়ে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে স্বচ্ছন্দেই পঞ্চকেদার যাওয়া চলে ৷ মে-জুনে অবশ্য বরফ থাকে আর পুজোতে নতুন করে বরফ পড়ার সম্ভাবনা ৷ এবারে পুজো প্রায় অক্টোবরের শেষে ৷ তাই নতুন বরফ পড়া অবশ্যম্ভাবী ৷

আমি অবশ্য মন্দির খোলার সময়ে যাব ঠিক করি ৷ সেইমতো দুন এক্সপ্রেসে হরিদ্বারের টিকিট কাটি ৷ এই দুন এক্সপ্রেসে হরিদ্বার যাওয়া এক যন্ত্রণা ৷ দ্বিতীয় শ্রেণীর ভাড়াই প্রায় ২৫০ টাকা হয়ে গেছে ৷ অথচ সুযোগ-সুবিধার কোনওরকম বাড়-বৃদ্ধি নেই ৷ অনেকে দিল্লি হয়ে হরিদ্বার যাওয়া পছন্দ করেন ৷ দিল্লি থেকে মাত্র ঘণ্টাছয়েকের বাস জার্নি ৷ দিল্লির অনেক ভালো ভালো ট্রেনও আছে ৷ আবার অনেকে অমৃতসর মেলে হরিদ্বার যান ৷ মাঝরাতে লাক্সারে নেমে ঘণ্টাদুয়েক স্টেশনে অপেক্ষা করে ভোররাতে হরিদ্বারের বাস ধরলে ঘণ্টাদুয়েকের পথ ৷ হরিদ্বার পৌঁছে দেখি স্টেশনের বাইরে অনেক বেসরকারি বাস রুদ্রপ্রয়াগের পথে যাচ্ছে ৷ সেদিনই ওর থেকে বেশিদূর যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না ৷ আর প্রথমেই হরিদ্বারে বিশ্রাম নেওয়ার কোনও যুক্তি নেই ৷ তাই দেখেশুনে রুদ্রপ্রয়াগের সুন্দর একটা বাসে উঠে পড়ি ৷ প্রথমদিনেই অনেকটা এগিয়ে থাকা হবে ৷ বাস হৃষিকেশ হয়ে পাহাড়ি রাস্তা ধরে ৷ সেই অত্যন্ত চেনা পাহাড়ি পরিবেশ ৷ একরাশ ঠান্ডা হাওয়ায় শরীর আর মন দুই-ই জুড়োয় ৷ চেনা ঠান্ডা, চেনা রাস্তা, চেনা গন্ধ, চেনা ভালো লাগা নিয়ে অসীম এক তৃপ্তি মনে জমাট বাঁধতে থাকে ৷ কলকাতা থেকে শুকনো কিছু বাদাম, আমসত্ব, কাজু, বিস্কুট ছাড়া আর কিছু আনিনি ৷ এ রাস্তায় খাবার মোটামুটি পাওয়া যাবে ৷ শুধু একটা প্রেসারকুকার সঙ্গে রেখেছি ৷ রুদ্রনাথে অনেক সময় নাকি লাগে ৷ আর তাছাড়া প্রেসারকুকার থাকলে একবার খিচুড়ি অন্তত নিজে করে নিতে পারব যদি ভীষণ দরকার পড়ে ৷ সেইমতো একবারের খিচুড়ির সব কিছু প্রেসারকুকারে কলকাতা থেকে ভরে রেখেছি ৷ সকাল সাড়ে আটটায় বাস ছেড়েছে ৷ আর বিকেল চারটে নাগাদ রুদ্রপ্রয়াগ ৷ অলকানন্দা আর মন্দাকিনী নদীর সঙ্গম ৷ থাকার অনেক জায়গা আছে ৷ গত বছরই নতুন বড় ট্যুরিস্ট লজ হয়েছে, অলকানন্দা-মন্দাকিনীর সঙ্গমের ধারে ৷ গমগম করছে বাজার এলাকা ৷ গাড়োয়াল বিকাশ নিগমের পুরনো বাংলোও আছে ৷ জায়গা পেলাম না ৷ কারণ মে মাস হল কেদার-বদ্রী যাত্রার সময় ৷ কালীকমলি মন্দির কমিটির ধর্মশালায় উঠলাম ৷ ভালোই ৷ বড় ট্রেক ৷ বড় তীর্থ ৷ তাই মানিয়ে নেওয়ার মন না হলে মুশকিল ৷ এইসব জায়গায় একটু কষ্টকে মানিয়ে নিতেই হয় ৷ এর মধ্যেই এল বৃষ্টি ৷ সজোরে ৷ বেশ লাগছিল সব মিলিয়ে ৷

পরদিন ভোরে বাস ধরব এখান থেকে বদ্রীনাথ যাওয়ার ৷ আমরা নামব হেলাং ৷ যোশিমঠের কিছু আগে ৷ হেলাং থেকে কল্পেশ্বরে যাব ৷ আমরা কল্পেশ্বর থেকে পঞ্চকেদার শুরু করছি ৷ প্রথমে কল্পেশ্বর, তারপর রুদ্রনাথ, তুঙ্গনাথ, মদমহেশ্বর শেষে আমাদের চেনা কেদারনাথ ৷ তবে বেশিরভাগ যাত্রীই কেদারনাথ দিয়ে শুরু করেন ৷ তাতে একটু সুবিধা হয় ৷ এখান থেকে মানে রুদ্রপ্রয়াগ থেকে গৌরীকুণ্ড যাবার প্রচুর বাস আছে ৷ যার যেমন পছন্দ ৷ হেলাংয়ের পথে কর্ণপ্রয়াগে পিণ্ডার ও অলকানন্দা, নন্দপ্রয়াগে মন্দাকিনী আর অলকানন্দার সঙ্গম ৷ আর তাছাড়া অলকানন্দাকে সঙ্গী রেখে পথ চলা ৷ বেলা ১২ নাগাদ হেলাং এল ৷ সকাল সাড়ে ছটায় বাস ছেড়েছে ৷ জানলা দিয়ে আপনি বুঝতেই পারবেন না হেলাং এসে গেছে ৷ তাই কন্ডাক্টরকে অবশ্যই বলে রাখবেন যে হেলাং নামব ৷ বাসস্ট্যান্ডের সামনে একটা ছোট্ট চায়ের দোকান ৷ দোকানের মালিক কিশোর পাহাড়ি, ছেলেটির নাম বংশী ৷ প্রথমে চা খেলাম ৷ বললাম, রুকস্যাকের অদরকারি এই ট্রেকিংয়ের মালপত্রগুলো তুমি একটু রেখে দাও ৷ কল্পেশ্বর ঘুরে কাল ফেরার পথে নিয়ে যাব ৷ আর এখন একটু জমিয়ে খিচুড়ি বানাও চটপট করে ৷ বংশী কাজে লেগে গেল ৷ জানি না, কী পরম নিশ্চিন্তে বেশিরভাগ জিনিসপত্রই দোকানে একটা কাপড়ে বেঁধে রাখলাম ৷ এই বিশ্বাসের নিশ্চিন্তি আছে বলেই এখনও হিমালয় হিমালয় ৷ পাহাড়ি সৌন্দর্য, ওরকম মনোরম ভাবগম্ভীর পরিবেশ ছাড়িয়ে আমার আকর্ষণ মানুষগুলোর প্রতি ৷ এদের সাহচর্যে মনে হয় এখনও আমরা এত কিছুর পরেও মানুষ আছি ৷

খাওয়া শেষে রওনা হলাম কল্পেশ্বরের পথে ৷ হেলাং থেকে দূরত্ব ৯ কিলোমিটার ৷ মোটামুটি মাঝারি চড়াই ৷ প্রথমদিন ট্রেকিংয়ের গতি শ্লথ থাকে ৷ তাই আস্তে আস্তেই পথ চলা ৷ পুরো এলাকার নাম উরগম ৷ রাস্তাতে প্রচুর গ্রাম ৷ মাঝে মাঝে ঢেউখেলানো উপত্যকা ৷ সোনালি শস্যভরা খেত ৷ চারপাশে পাহাড়ের শান্ত সৌম্যকান্তি রূপ ৷ কল্পেশ্বরের মন্দিরের লাগোয়া থাকার জায়গা আছে ৷ ১ কিলোমিটার আগে মহাবীর সিংয়ের একটা ছোট্ট অতিথিশালাও আছে ৷ মহাবীর সিংয়ের মাকে বলে ওদের বাড়িতেই উঠি ৷ মাতাজি ভীষণ ভালো ৷ রাতে খেতের কচি মটরশুঁটির ডালনা আর রুটি ৷ সঙ্গে আলুর দম ৷

খুব ভোরেই রওনা দিই মন্দিরের পথে ৷ মিনিট কুড়ি লাগল ৷ বেশ প্রাচীন মন্দির ৷ চাতাল পেরিয়ে প্রায় একটা গুহার মতো মন্দিরের গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গ ৷ মহাদেবের জটা ৷ পুরোহিত আর এক বাঙালিবাবা ওখানে থাকেন ৷ প্রবেশমুখেই বাঙালিবাবা গরম গরম এক বাটি কালো চা দিলেন ৷ জাপানি কায়দায় বাটিতে চা ৷ চা খেতে খেতে কল্পেশ্বর শিবের কাহিনী শুনলাম ৷ দুর্বাসা ইন্দ্রকে একটা পারিজাতের মালা উপহার দেন ৷ ইন্দ্র আবার সেই মালা হাতির শুঁড়ে একবার পরিয়ে দিয়েছিলেন ৷ দুর্বাসা তাই দেখে অত্যন্ত রেগে যান ৷ তাঁর দেওয়া মালাকে অপমান! দুর্বাসার শাপে স্বর্গচ্যুত হলেন ইন্দ্র ৷ এখানে বসে কল্পেশ্বর শিবের আরাধনা করে ইন্দ্র আবার ফিরে পান তাঁর রাজ্য ৷ তাই কল্পেশ্বরকে সত্যি সত্যি মন থেকে ডাকলে তিনি সবার মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন ৷ বেশ অনাড়ম্বর আর আন্তরিকভাবে পুজো হল শিবের ৷ কোনও লোকজন নেই ৷ তাড়া নেই ৷ পুজোর আচার-অনুষ্ঠান ভক্তদের ভালো লাগবে ৷ তারপর কল্পেশ্বর থেকে সোজা হেলাং ৷ যাব রুদ্রনাথের পথে মণ্ডলে ৷ হেলাং থেকে মণ্ডলের বাস ধরব ৷ কিন্তু ঘটনাচক্রে জানতে পারি, রুদ্রনাথে তখন প্রচণ্ড বরফ ৷ আর মন্দির খোলেনি ৷ পঞ্চকেদার ঘুরতে গিয়ে একটা কথা নতুন করে আমরা জানতে পারি ৷ এই প্রসঙ্গে সেটা একটু বলে রাখি ৷ কাগজে কেদার-বদ্রী মন্দির কবে খুলবে তা জানানো হয় ৷ কেদার মন্দির কবে খুলছে জেনেই এই প্রোগ্রামে এসেছি ৷ কিন্তু এখানে এসে দেখি শুধুমাত্র কেদারনাথই খুলেছে ৷ ওখানেই সবচেয়ে বেশি মানুষ যায় বলে শুধু কেদারনাথ খোলার কথাই জানানো হয় ৷ অন্য কেদার দিন-তিথি দেখে তারপর আস্তে আস্তে খোলে ৷ এখন রুদ্রনাথ বন্ধ ৷ তাই চললাম হেলাং থেকে বাসে গুপ্তকাশী হয়ে কুণ্ড ৷ ওখান থেকে একটু দূরে উখিমঠ ৷ উখিমঠ থেকে মদমহেশ্বর ৷ বিকেল নাগাদ এল কুণ্ড ৷ মাথাপিছু পাঁচ টাকা নিয়ে একটা ট্যাক্সি কুণ্ড থেকে উখিমঠ এল ৷ উখিমঠে নীল আকাশের গায়ে দেখি ঝকঝকে সোনালি চৌখাম্বা শিখর ৷ জমকালো সূর্যাস্ত হচ্ছে ৷ শীতকালে উখিমঠেই কেদারনাথ আর মদমহেশ্বর নেমে আসেন ৷ গরমে আবার তাঁদের স্বস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ কেদারনাথকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ কিন্তু মদমহেশ্বরকে এখনও নিয়ে যাওয়া হয়নি ৷ আগামীকাল মদমহেশ্বরের ডোলি যাবে ওপরে ৷ উত্তেজনায় শরীর অধীর হয়ে উঠল ৷ ডোলির সঙ্গে যাব ৷ এ যে পরম পুণ্যের ফল ৷

মদমহেশ্বরে একটা পোর্টার নেব ঠিক হল ৷ কল্পেশ্বর যাওয়া-আসা যেখানে ১৮ কিলোমিটার সেখানে মদমহেশ্বর ৬০ কিলোমিটার ৷ ৪ দিন লাগবে ৷ মদমহেশ্বরের উচ্চতা ১১,৭৪৪ ফুট ৷ উখিমঠেই পোর্টার মিলল ৷ দৈনিক ৫০ টাকা ৷ সকালে উখিমঠ থেকে ট্যাক্সি করে মনসুনা গ্রাম ৷ মাথাপিছু ট্যাক্সিভাড়া ৫ টাকা ৷ ওখান থেকে হাঁটা শুরু ৷ যাব ১৫ কিলোমিটার দূরে রাঁসিতে ৷ প্রথমে অল্প একটু উতরাই ৷ নদীর সেতু পেরিয়ে চড়াই ৷ এল লেঙ্ক ৷ লেঙ্কের স্কুলবাড়িতে একটু বিশ্রাম, চা খাওয়া ৷ তারপর আবার পথ চলা ৷ রাঁসি পৌঁছে দেখি হইচই ব্যাপার ৷ ডোলি আজ এখানে দেবী রাকেশ্বরী মন্দিরে থাকবে ৷ ডোলি এল ৷ সমস্ত গ্রামেই উৎসবের মেজাজ ৷ সময় ছিল হাতে অনেক ৷ তাই জনার্দন ভাটের দোকানে খাওয়া সেরে এগিয়ে চললাম আরও ৷ রাঁসি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে গৌণ্ডার গ্রাম ৷ ক্ষেত্রপালের মন্দির ৷ এখানে কাল ডোলি থাকবে ৷ ভিড় এড়ানোর জন্য আরও ১ কিলোমিটার দূরে বিকেলের মধ্যেই এসে পৌঁছই বানতলি ৷ দারুণ জায়গা ৷ সবুজের সমারোহ চারদিকে ৷ সবস্বতী আর মদমহেশ্বরের গঙ্গার সঙ্গম ৷ ছোট্ট একটা অতিথিশালা ৷ লোকজনের ভিড় নেই ৷ উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের একটা নিজস্ব ঘরও আছে অতিথিশালার লাগোয়া ৷ বানতলিতে একদিনের বিশ্রাম ৷ বিশ্রাম নেওয়ার আরেকটা কারণও ছিল ৷ ডোলি মদমহেশ্বরে না যাওয়া পর্যন্ত মন্দির খুলবে না ৷ অতিথিশালাও খুলবে না ৷ অতএব একদিন আমাদের থামতেই হবে ৷

বানতলি থেকে ৪ কিলোমিটার চড়াই ভেঙে নানুর ৷ থাকার জায়গা বলতে দোকান ৷ প্রয়োজনে থাকা যেতে পারে ৷ তবে বেশ চড়াই ৷ নানুর গ্রামটা বেশ ৷ দোকানের পিছনে বিশাল সবুজ ভ্যালি ৷ চারপাশে তুষারশৃঙ্গ ৷ নানুর থেকে ৫ কিলোমিটার মদমহেশ্বর ৷ দুপুরের খাওয়া সেরে নানুর থেকে সেদিনই মদমহেশ্বর পৌঁছনো যেতে পারে ৷ শেষপর্যন্ত নানুরে ডোলিকে ধরলাম ৷ ডোলির মিছিলে আস্তে আস্তে চলেছি ৷ ঢোলের গুমগুম আওয়াজ ৷ চারপাশে কাঁসর-ঘণ্টা ৷ মদমহেশ্বর ঝলমলে হলুদ কাপড়ে ঢাকা ৷ পূজারীজি ঘোড়ায় চড়ে ৷ নানুর থেকে এই ৫ কিলোমিটার ভালোই চড়াই ৷ প্রথমে রুক্ষ ৷ ঝুরো মাটি ৷ তারপর জঙ্গলের পথ ৷ অবশ্য রাস্তা আছে ৷ রডোডেনড্রন গাছে ভর্তি ৷ লাল, সাদা, গোলাপি ৷ ডোলি মন্দিরে আসার পর মন্দির প্রদক্ষিণ হল ৷ ডোলিকে এদিক-ওদিক হেলানো হল ৷ রাতে পূজারীর কাছে শুনেছিলাম হেলে-দুলে মহাদেব নিজের সম্পত্তি নাকি বুঝে নেন ৷ ইতিমধ্যে বাংলোর দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে ৷ বেশ বাংলোটি ৷ দোতলা ৷ সামনে বারান্দা ৷ সারা পথে মোটামুটি খাওয়া-থাকার জায়গা আছে ৷ অথচ সেরকম ভিড় নেই ৷ সৌন্দর্যের দিক থেকে অতুলনীয় ৷ চারপাশ নরম সবুজ ৷ অজস্র ফুলের গাছ ৷ মদমহেশ্বরের ওপরে একটু উঠলে তিনদিকে হিমালয়ের তুষারশৃঙ্গ ৷ হঠাৎ হঠাৎ মেঘ ৷ কুয়াশায় সব ঢেকে যাচ্ছে ৷ বয়স যেন কমে গেল ৷ ছেলেমানুষের মতো ওই কুয়াশায়-রোদ্দুরে ক্যামেরা নিয়ে সন্ধে পর্যন্ত ছোটাছুটি করে মন্দিরে যখন পুজো দেখতে গেলাম তখন বেশ শীত করছে ৷ ঠান্ডা ভালোই এখানে ৷ সন্ধ্যায় আরতি দেখার মতো ৷ মদমহেশ্বরে কেদারনাথের মতো ভিড় হয় না ৷ তাই সবকিছু সহজে আরামে উপভোগ করা যায় ৷ পুজো শেষে পূজারীর সঙ্গে অনেক গল্প হল ৷ আর মজার মজার শিবের কাহিনী ৷ এই মন্দিরে প্রচুর দামি সোনা-রুপোর গহনা আছে ৷ কখনও কিছু নষ্ট হয়নি ৷ একবার সরকার ঠিক করেন মন্দিরের সম্পত্তির হিসেব করতে হবে ৷ কিন্তু দেখা যায়, যে কর্মচারী কাজে আসেন পরের দিনই পালিয়ে যান ৷ খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রাতে মহাদেব নাকি ত্রিশূল নিয়ে আসেন ৷ রাগী মহাদেবের হুঙ্কার-আমার নিজের সম্পত্তি যদি নিজে রক্ষা করতে না পারি তাহলে তোরা কী করবি ৷ পালা এখান থেকে ৷ শেষপর্যন্ত সরকারি হিসেব আর নেওয়া হয়নি ৷ আরেকটা মজার গল্প আছে ৷ তিব্বতের রাজার গাভী এখানে চরতে আসত ৷ দেখা গেল সবচেয়ে ভালো গাইটির দুধ থাকে না ৷ খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, মদমহেশ্বরে শিবলিঙ্গের কাছে গাভিটি দাঁড়িয়ে ৷ ঝরঝর করে দুধ পড়ছে পাথরের মাথায় ৷ রাজা শিবের কথা জানতেন না ৷ রেগে গিয়ে মারলেন এক লাঠির ঘা ৷ শিবলিঙ্গের মাথা গেল ফেটে ৷ তাই মদমহেশ্বরে শিবলিঙ্গ ফাটা আর একদিকে হেলানো ৷ যাইহোক, অনুতপ্ত রাজা শেষে অনেক কষ্টে এখানে মন্দির নির্মাণ করেন ৷

পরদিন খুব ভোরে ২ কিলোমিটার চড়াই ভেঙে ওপরে উঠলাম ৷ বুড়া মদমহেশ্বর ৷ পাহাড়ের মাথায় বুড়ো শিব ৷ দারুণ মনোরম এক জায়গা ৷ সবুজ কার্পেটে মোড়া চারপাশ ৷ একপাশে জমা একটু জলে পাহাড়ের ছায়া ৷ সোনালি রোদ্দুরে হাত বাড়ালেই চৌখম্বা ৷ নিচে মদমহেশ্বরের অনুপম মায়াবি সবুজ ৷ দেখে সাধ মেটে না ৷ অবশেষে ফেরা ৷ এবারে উখিমঠে নেমে দেউরিয়া তাল দেখে সোজা তুঙ্গনাথ ৷ ফেরার পথে মদমহেশ্বর থেকে সোজা লেঙ্ক ৷ রাতে লেঙ্কে পোস্টমাস্টারের বাড়িতে থেকে পরদিন সোজা মনসুনা হয়ে উখিমঠ ৷

আজ উখিমঠে থাকব ৷ কাল তুঙ্গনাথ যাব চোপতা হয়ে ৷ দুপুরের খাওয়ার পর অনেকটা সময় ছিল ৷ চললাম দেউরিয়াতাল ৷ এখন অনেকটা পথই ট্যাক্সি যায় ৷ মাত্র ৩ কিলোমিটার হাঁটতে হবে ৷ ১৫০ টাকায় রফা হল দেউড়িয়া তাল ৷ শেষ ৩ কিলোমিটার ভালোই চড়াই ৷ এক টুকরো ছোট্ট সবুজ উপত্যকা ৷ মাঝ তালে শ্যাওলা সবুজ জল ৷ আর জলে তুষারশৃঙ্গের ছায়া ৷ ঠান্ডা নিরিবিলি বেশ জায়গাটা ৷ পথশ্রমের ক্লান্তি ভুলে বেশ কাটালাম সময়টা ৷ সরকার থেকে দেউরিয়াতালকে একটা ট্যুরিস্ট স্পষ্ট হিসেবে পরিণত করার চেষ্টা চলছে এখন ৷ উখিমঠ থেকে চোপতা যাবার বাস খুব একটা নেই ৷ সকালে একটা আছে ৷ তারপরেই একটু অনিশ্চিত মনে হল ৷ আমরা ৫ জন ৷ তাই বাসের চেষ্টা না করে ২৫০ টাকায় ট্যাক্সিতেই চোপতা যাব ঠিক করি ৷ খুব ভোরে আলো ফোটার আগেই উখিমঠ ছাড়লাম ৷ ভোরের আলো-অন্ধকারে পাহাড়ি রাস্তায় ট্যাক্সিতে দারুণ লাগছিল ৷

চোপতা থেকে তুঙ্গনাথ মাত্র ৩ কিলোমিটার ৷ চোপতার উচ্চতা প্রায় ৯,৫৫০ ফুট ৷ আর তুঙ্গনাথের ১১,৬৪৪ ফুট ৷ খুব আস্তে হাঁটলে ঘণ্টাদুয়েক সময় লাগবে ৷ চোপতা পর্যন্ত বাস-গাড়ি সব আসছে ৷ তাই যাঁদের পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেক করতে অসুবিধা হয়, তাঁরা শুধু তুঙ্গনাথ আসতে পারেন ৷ অসাধারণ সুন্দর এই তুঙ্গনাথ ৷ পঞ্চকেদারের কোনটা ছেড়ে কোনটা ভালো তুলনা করা মুশকিল ৷ চোপতাতে মঙ্গল সিংহের একটা দোকান আছে ৷ ওখানে খাওয়াদাওয়া আর বিনা পয়সায় থাকা স্বচ্ছন্দেই চলতে পারে ৷ আর যাঁরা তুঙ্গনাথে থাকবেন তাঁদের কথা স্বতন্ত্র ৷ আমাদের আস্তানা মঙ্গল সিং ৷ প্রচুর বিদেশি এখানে আসে ৷ তাদের India বইতে চোপতায় মঙ্গল সিংয়ের দোকানের কথা লেখা আছে ৷ খাঁটি, সৎ, কর্মঠ পাহাড়ি মানুষ এই মঙ্গল সিং ৷ আমুদেও বটে ৷ বলল, তোমরা তুঙ্গনাথে থাকো ৷ ফেরার সময়ে একদিন এখানে কাটিয়ে যেও ৷ মাত্র দুঘণ্টার রাস্তা ৷ গল্পগুজব করতে করতে পথ চলা ৷ চারপাশটা অসম্ভব সবুজ ৷ মাঝে মাঝে মেঘ আসছে ৷ সাদা সাদা প্রচুর ভেড়া ওই সবুজের মধ্যে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ সব মিলিয়ে যেন একটা বিদেশি গন্ধ ৷ অস্ট্রিয়ার ল্যান্ডস্কেপের সঙ্গে ভীষণ মিল ৷ সেই সবুজ যেন কেউ মুঠো করে তুলে নিয়ে এসেছে ৷ আর দুঘন্টার হাঁটাপথ বলে শরীর-মনে আশ্চর্য এক নিশ্চিন্তি ৷ কেদারনাথ, মদমহেশ্বর আর তুঙ্গনাথের মন্দির দেখতে অনেকটা এক ধরনের ৷ মন্দিরের বাইরে বিরাট এক চাতাল ৷ মন্দিরের গায়ে হর-পার্বতী, গণেশ আর পাথরের ষাঁড়ের প্রচুর মূর্তি ৷ হলুদ-কমলা-চন্দন-আবীরে মাখামাখি ৷ ছবি তুলে ভীষণ সুখ ৷ মন্দিরের ভেতরে অবশ্য ছবি তোলা বারণ ৷ কেদারনাথের মতো হইচই মারামারি করে পুজো নয় ৷ তাই পুজো দিতেও আনন্দ ৷ মন্দিরের সামনের পাহাড় থেকে ও-পাহাড়ে ভীষণ খাদ ৷ ওই উপত্যকার মধ্যে জলভরা মেঘ জমাটবাঁধা ৷ আর সামনে বিশাল হিমালয়ের রেঞ্জ ৷

একপাশে পাহাড়ের গা দিয়ে মণ্ডলের রাস্তা চলে গেছে ৷ যেখান থেকে রুদ্রনাথের ট্রেকিং শুরু হয় ৷ তাই ইচ্ছে করলে ওই রাস্তা ধরে মণ্ডলও যেতে পারি ৷ তুঙ্গনাথে উঠি বচ্চন সিংয়ের বাড়িতে ৷ ওখানেই খাওয়াদাওয়া ৷ ঘরভাড়া নেই ৷ বেশিরভাগ জায়গাতেই এখানে ঘরভাড়া লাগে না ৷ তবে খেতে হবে ৷ খাওয়া ১০-১২ টাকা ৷ জলখাবার ৬-৮ টাকা ৷ চা ২ টাকা ৷ হালুয়া ৬ টাকা ৷

সন্ধেবেলা সেদিন এক অপূর্ব সূর্যাস্ত হল ৷ ঘন মেঘ সরিয়ে শুভ্র তুষারশৃঙ্গে সোনালি রং ৷ থোক থোক মেঘের রঙ গোলাপি, কমলা, ধূসর, সাদা ৷ রঙের হোলিখেলায় আকাশে যে কী হচ্ছিল আমার পক্ষে তা বলা অসম্ভব ৷ শুধু মনে হচ্ছিল, স্বর্গ যদি কোথাও থাকে তবে নিশ্চয়ই এখানে ৷

পরদিন অন্ধকার থাকতে উঠে একটু ওপরে উঠি ৷ প্রায় দেড় কিলোমিটার ৷ চন্দ্রশিলা ৷ যেখানে রামচন্দ্র বসে শিবের তপস্যা করেছিলেন ৷ চন্দ্রশিলা থেকে হিমালয়ের অনেক তুষারশৃঙ্গ দেখা যায় ৷ এমনকী নেপালেরও ৷ শিবলিঙ্গ, কেদারনাথ, চৌখাম্বা, নীলকণ্ঠ থেকে শুরু করে অন্নপূর্ণা, ধৌলাগিরি পর্যন্ত ৷ সকালের আলো ফুটতে ঝকঝকে নীল আকাশে চারদিকে শুধুই তুষারশৃঙ্গ ৷ কী অপরূপ বোঝানো ভার ৷ তুঙ্গনাথে এলে চন্দ্রশিলা যেন কখনওই বাদ দেবেন না ৷ তারপর চন্দ্রশিলা থেকে সোজা চোপতা ৷ ছোট্ট শৈলশহর যেন ৷ কিন্তু আধুনিকতার কোনও ছোঁয়া নেই ৷ মঙ্গল সিংয়ের ডেরায় রাত কাটানো ৷ এবার রুদ্রনাথ ৷ সকালে চোপতা থেকে বাস ধরব মণ্ডলের ৷

এই পাঁচ কেদারের মধ্যে সবচেয়ে কষ্টকর আর কিছুটা দুর্গম হল রুদ্রনাথ ৷ তাই অনেককে দেখেছি রুদ্রনাথ বাদ দেন তাদের প্রোগ্রাম থেকে ৷ এতে প্রথমত পাঁচ কেদার হয় না, তার চেয়েও বড় কথা, রুদ্রনাথ না দেখলে এই প্রোগ্রামও যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায় ৷ একবার মনের জোর করে বেরিয়ে পড়লে রুদ্রের মোহনরূপ দেখা যাবে, হলফ করে বলা যেতে পারে ৷ রাস্তা থেকে কেউ ফিরে এসেছে এরকম ঘটনা বিরল ৷ যদিও একটা প্রচলিত কথা আছে এখানে, রুদ্রনাথ কা চড়াই জার্মান কা লড়াই ৷

রুদ্রনাথ যেতে হলে প্রথমে মণ্ডলে আসতে হবে ৷ মণ্ডল পর্যন্ত বাস আছে ৷ চোপতা থেকে ঘণ্টাদুয়েক লাগল মণ্ডল আসতে ৷ মণ্ডলে আমাদের প্রথম কাজ ছিল একটা পোর্টার জোগাড় করা ৷ কারণ রুদ্রনাথের রাস্তায় একজন পোর্টার-কাম-গাইডের প্রয়োজন হয় ৷ জঙ্গলের রাস্তা ৷ ভুল হলে প্রচণ্ড হয়রানি ৷ প্রথমে আমরা যাব অনসূয়াতে ৷ মণ্ডল থেকে ৬ কিলোমিটার ৷ তারপর অনসূয়া থেকে একদিনে রুদ্রনাথ ৷ ২২ কিলোমিটারের পথ ৷ রাস্তায় থামবার তেমন জায়গা নেই ৷ রুদ্রনাথের উচ্চতা ১১,৫৪০ ফুট ৷ মাঝে ১৪,৫০০ ফুটের নাওলা পাস ৷ অনসূয়ার উচ্চতা হল ৭,২০০ ফুট ৷ অতএব একদিনে প্রচুর চড়াই ৷ রাস্তায় জল পর্যন্ত নেই ৷ জঙ্গলে রাত কাটানোও সম্ভব নয় ৷ একদিনে সন্ধের মধ্যে রুদ্রনাথে পৌঁছতেই হবে ৷ পোর্টার ঠিক হল ৷ এ দুদিনে ১০০ টাকা নেবে ৷ কিছু টুকরো বাজারও সেরে ফেলা হল ৷ যদি রাস্তায় মানে অনসূয়া বা রুদ্রনাথে কিছু না পাই ৷ মণ্ডলে বালখিল্য নদী আর অমরগঙ্গার সঙ্গম ৷ খাওয়াদাওয়া সেরে একটু বেলাতেই অনসূয়ার পথে পা বাড়ালাম ৷ ৬ কিলোমিটার রাস্তার প্রথম ২ কিলোমিটার সমতল, তারপর ৪ কিলোমিটার চড়াই ৷ অনসূয়ার পরিবেশ সত্যিই আশ্রমের মতো ৷ শান্ত নির্জন তপোবন ৷ দেবী অনসূয়ার মন্দির ৷ থাকার জন্য চটি ৷ একটু নোংরা বটে ৷ তবুও অসুবিধা হয় না ৷ বাসনপত্র ভাড়া পাওয়া যায় রান্নার জন্য ৷ আমাদের পোর্টার রান্নার সব জিনিসপত্র ঠিক করতে লাগল ৷ তৈরি হবে কাল রাস্তার প্যাকেট লাঞ্চ ৷ আমরা এই ফাঁকে একবার দেখে আসব অত্রিমুনির গুহা ৷ ৩ কিলোমিটার দূরে ৷ তবে অনসূয়াতে এসে অত্রিমুনি আর অনসূয়ার গল্প না শুনলে চলবে না ৷ রাম-সীতা অত্রিমুনির পত্নী অনসূয়ার আশ্রমে এসেছিলেন ৷ শ্রেষ্ঠ সতী হিসেবে পূজিত হন অনসূয়া ৷ সতীত্বের মাহাত্ম্যে হিংসেয় জ্বলে পুড়ে দেবতার স্ত্রীরা তাঁদের স্বামীদের পাঠালেন অনসূয়ার সতীত্বের পরীক্ষা করাতে ৷ ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে দেবতারা এলেন আশ্রমে ৷ অতিথিসেবায় অনসূয়া উদ্বিগ্ন ৷ ব্রাহ্মণরা বললেন, মধ্যাহ্নের খাবার তাঁরা নিয়ে এসেছেন ৷ লোহার গুলি ৷ এগুলিই সিদ্ধ করে খাবেন ৷ অনসূয়াকে বললেন, লোহার গুলিগুলোকে সিদ্ধ করে দিতে ৷ বিপন্ন অনসূয়া অত্রিমুনিকে ডেকে আনলেন ৷ কমণ্ডলুর জল ছিটিয়ে দিতে সিদ্ধ হল গুলি ৷ দেবতারা ফিরে গেলেন ৷ এতে দেবতার স্ত্রীরা আরও রেগে গেলেন ৷ তাঁদের কথামতো দেবতারা আবার আশ্রমে এলেন ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে ৷ এবারে আবার অন্য আবদার ৷ অনসূয়ার স্তন্যপান করবেন ব্রাহ্মণরা ৷ মাতা আবার স্মরণ করলেন স্বামী অত্রিকে ৷ মুনি এসে কমণ্ডলুর জল ছেটালেন অতিথিদের গায়ে ৷ তিন দেবতা তিনটি দুগ্ধপোষ্য শিশু হয়ে গেলেন ৷ আর অনসূয়াও যত্নে তাদের স্তন্যপান করালেন ৷ এদিকে দেবতারা স্বর্গে ফিরছেন না ৷ শেষে স্বামীদের খোঁজে আশ্রমে এসে তিনটি শিশু দেখে তারা কান্নায় ভেঙে পড়লেন ৷ শেষে ক্ষমা প্রার্থনা করে অনসূয়ার সতীত্বের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়ে দেবতাদের নিজস্ব অবয়বে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন স্বর্গে তাঁদের স্ত্রীরা ৷ তাই অনসূয়া মর্ত্যে একজন শ্রেষ্ঠ সতী ৷ দয়ার শরীর ৷ স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই ৷ কিন্তু একটা আশ্চর্যের কথা ৷ এত স্নিগ্ধ মেজাজের দম্পতির কী করে দুর্বাসার মতো সন্তান হয় তা ভেবে পাইনা ৷ সেই দুর্বাসা মুনি যিনি কিছু হলেই অভিশাপ দিতেন ৷ যাইহোক, অত্রিমুনির গুহা দেখতে যাওয়া অবশ্যই চাই ৷ এরকম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা জীবনে কমই আসে ৷ ৩ কিলোমিটার দূরত্বে অত্রিমুনির গুহা ৷ যেখানে মুনি তপস্যা করতেন ৷ পোর্টার-গাইডকে সঙ্গে নিলাম ৷ পথ চিনতে একটু অসুবিধা হতে পারে ৷ এক ঝরনার ধারে নামলাম ৷ প্রচণ্ড তোড়ে জল বইছে ৷ কাঠের গুঁড়ি ফেলা তার ওপরে ৷ শ্যাওলা ধরা ৷ অতিকষ্টে সেই কাঠ পার হয়ে দেখি পাথরের দেওয়ালে লোহার চেন ঝুলছে ৷ চেন ধরে হ্যাঁচকা দিয়ে ওপরে উঠলাম ৷ খাড়া দেওয়ালের একপাশে খরস্রোতা নদী ৷ দেওয়ালে সুড়ঙ্গ ৷ সরীসৃপের মতো বেয়ে বেয়ে এগনো, শুয়ে না এগোলে পাথরের ছাদে পিঠ লাগবে ৷ প্রায় হামাগুড়ি দিতে হয় ৷ এক পাশটা কিন্তু খোলা ৷ হঠাৎ একটু নিচে পড়ে যাওয়া ৷ গুহা ৷ গুহাকে প্রদক্ষিণ না করে ফেরা অসম্ভব ৷ একপাশে বিশাল ঝরনা ৷ ঝরনার ভেতর দিয়ে পথ ৷ দেখি সবাই ঝরনার মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে ৷ ভয়ে রোমাঞ্চে এগোই ৷ ঝরনা পার হয়ে দেখি খরস্রোতা নদীর ওপারে চলে এসেছি ৷ গায়ে জলের ঝাপটা ৷ অন্য একটা কাঠের গুঁড়ি দিয়ে নদী পেরনো ৷ কী করে যে প্রদক্ষিণ করলাম ঠাহর করতে পারি না ৷ আনন্দে সবাই নাচানাচি করি ৷ দারুণ ৷

এরপর ফিরে চলা অনসূয়া আশ্রমে ৷ আজ কিন্তু খুব ভোরে উঠেছি ৷ রুদ্রনাথ পৌঁছতে ১০-১২ ঘণ্টা সময় লাগবে ৷ ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয় ৷ জঙ্গল বেশ গভীর ৷ ঝরা পাতায় পা ডুবে যাচ্ছে ৷ বৃষ্টির পর হলে কাদা আর পাতায় চলা বেশ মুশকিল ৷ এক জায়গায় দেখি লেখা আছে, আর জল পাওয়া যাবে না ৷ সবার ওয়াটার বটল ভর্তি ৷ শুধু চড়াই আর চড়াই ৷ একেবারেই উতরাই নেই ৷ এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ৷ এল হলুদ-বেগুনি ফুলে ভরা এক উপত্যকা ৷ পুষ্প-বাটিকা ৷ একটু বিশ্রাম ৷ জলখাবার খাওয়া ৷ আবার চড়াই ৷ এ যেন অন্তহীন চড়াই ৷ দম ফুরিয়ে আসছে ৷ আর কতদূর কে জানে ৷ শেষপর্যন্ত মনে হল আর পারব না ৷ একটুও শক্তি নেই ৷ হঠাৎ কে যেন বলল, পাস এসে গেছে ৷ আরেকটু উঠলেই টপ ৷ শেষপর্যন্ত টপে এলাম নাওলা পাসের ৷ চোখ জুড়িয়ে গেল ৷ ১৪,৫০০ ফুট ৷ এরপর উতরাই ৷ চারপাশে বরফে মোড়া ৷ ঘড়িতে ৩টে বেজে গেছে ৷ টপের ওপরে বসেই প্যাকেট লাঞ্চ শেষ করলাম ৷ দূরে নীল আকাশের নিচে আমার চেনা পৃথিবী ৷ চিরতুষারে আবৃত তুষারশৃঙ্গ ৷ ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম ৷ বিকেলের পড়ন্ত রোদ্দুরে বরফ ভেঙে মন্দিরের পথে ৷ উতরাই ৷ কিন্তু বরফে হাঁটতে বেশ কষ্ট ৷ পা ডুবে যাচ্ছে মাঝে মাঝে বরফে ৷ সামান্য ওঠা ৷ নামাই বেশি ৷ অবশেষে মন্দিরের রাস্তা ৷ মন্দিরের সামনে নন্দাঘুণ্টি ও পঞ্চচুলিতে রং ধরেছে সন্ধ্যার ৷ পৌঁছতেই এক সাধুবাবা গরম চা আর জল এনে দিলেন ৷ অনেকক্ষণ জল ফুরিয়ে গিয়েছিল ৷ প্রথমে জল ৷ তারপর চা ৷ পূজারীজি এলেন ৷ আর কেউ নেই ৷ বললেন সন্ধ্যারতি হবে ৷ আগে আরতি দেখুন ৷ তারপর গল্প ৷ আর সাধুবাবাকে বলে দিন রাতে কজনের খিচুড়ি হবে ৷ আমরা প্রেসারকুকারে খিচুড়ির সরঞ্জাম নিয়ে এসেছি বলাতে সাধুবাবা বললেন, তাহলে যখন হোক তোমরা ফুটিয়ে নিও খিচুড়ি ৷ এখন চলো সন্ধ্যারতি দেখি ৷ মন্দিরটা এখানে অন্য কেদারের মতো বড় নয় ৷ গুহারই কিছুটা কেটে তৈরি এই মন্দির ৷ ভেতরে দেখি মহাদেবের কষ্টিপাথরে খোদাই মুখ ৷ মুখে এক বিশাল সরু একজোড়া গোঁফ ৷ রাতে ঘরে খড়ের মেঝেতে শোয়া ৷ সারাদিনের ওই পরিশ্রমের পর তা-ই তখন স্বর্গ ৷

পরদিন সোজা রুদ্রনাথ থেকে মণ্ডল ৷ মানে একেবারে ৫,০৮৪ ফুট নিচে নামব ৷ একটু বেলাতেই হাঁটতে শুরু করলাম ৷ ২৮ কিলোমিটার ৷ মাঝে দুপুরে রান্না করে খাওয়া ৷ সন্ধ্যায় মণ্ডল ৷ ক্লান্ত অবসন্ন দেহে মণ্ডলে একটা ঘর মিলল ৷ সুরিন্দর সিং বিস্তের বাড়ি ৷ ভালোই ৷ মণ্ডলে বেশ গরম লাগছিল ৷ স্নান করে সবাই রাতে বসলাম বালখিল্য নদীর ধারে ৷ কে কেমন হেঁটেছে, কার শরীর কীরকম খারাপ লাগছিল এইসব নিয়ে হাসি-ঠাট্টা ৷ এবারে পঞ্চকেদারের শেষ কেদার ৷ আমাদের পরিচিত অত্যন্ত চেনা কেদারনাথ ৷ কাল সকালেই আমরা বাস ধরব এখান থেকে গৌরীকুণ্ডের ৷ আর যাঁরা কেদারনাথ দিয়ে পঞ্চকেদার শুরু করেন তাঁরা ধরবেন এখান থেকে গোপেশ্বরের বাস ৷ গোপেশ্বর থেকে বদ্রীর বাস ধরে হেলাং ৷ তারপর কল্পেশ্বর ৷ আর সময় থাকলে ফেরার সময়ে আবার একবার বদ্রীনাথ ৷ আমাদের বাস সকাল ১১টা নাগাদ ৷ চলো গৌরীকুণ্ড ৷ শেষ কেদার ৷ জয় বাবা কেদারনাথ ৷

বাসে বেশ ভিড় ছিল ৷ প্রথমে তো সিটই পাওয়া গেল না ৷ বাস চোপতা এল ৷ লাঞ্চ ৷ তারপর যখন গৌরীকুণ্ড এল, তখন প্রায় সন্ধে ৷ যাত্রার সময় ৷ প্রচণ্ড ভিড় গৌরীকুণ্ডে ৷ ভারত সেবাশ্রমের স্টোররুমে মালপত্র রেখে শুধু স্লিপিং ব্যাগ বার করে গৌরীকুণ্ডের গরম জলে স্নান ৷ টিফিন করে অন্ধকারেই হাঁটতে শুরু করি ৷ পুলিশ প্রথমে বারণ করেছিল ৷ উত্তরে বলি, বেশিদূর যাব না ৷ মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলচটিতে রাতের বিশ্রাম ৷ চাঁদের আলোতে হাঁটতে খুব একটা অসুবিধে হচ্ছিল না ৷ জঙ্গলচটিতে একটা ফাঁকা আস্তানাতে মানে দোকানে খাওয়া সেরে রাত কাটাই ৷ নিরিবিলি আর পরিচ্ছন্ন রাতটা কাটে ওই জঙ্গলচটিতে ৷ পরদিন খুব ভোরে রওনা ৷ ৩ কিলোমিটার পরে রামওয়াড়া ৷ চা-পকোড়া খেয়ে এবারে কেদারের চড়াইয়ের পথে ৷ প্রচুর লোকজন ৷ খচ্চর, ডোলি ৷

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই নীল আকাশে কেদারশৃঙ্গ আর নিচে সেই কেদারের মন্দির ৷ মনে পরম এক তৃপ্তি ৷ পঞ্চকেদার দর্শন শেষ হতে চলেছে ৷ এখন প্রচুর থাকার জায়গা কেদারনাথে ৷ দেখেশুনে পছন্দ করে নিলেই হল ৷ ওই ঠান্ডাতে দেখি মন্দাকিনীর জলে স্নান সেরে অনেকে পুজো দিতে চলেছেন ৷ একজন পাণ্ডা ধরে পুজো দিতে গেল আমাদের সবাই ৷ শিবলিঙ্গকে স্পর্শ করে দেখি হাত যেন ঢুকে যাচ্ছে পাথরে ৷ ঘি-সিঁদুরে চপচপ করছে শিবলিঙ্গ ৷ এক আশ্চর্য অনুভূতি ৷ সারাদিন কেদারে এখানে-ওখানে ঘুরে সময় কাটানো ৷ রাতে জ্যোৎস্নায় কেদারশৃঙ্গ ৷ চাঁদের আলোতে চেনা অথচ রহস্যময় কেদার ৷ অপূর্ব ৷ পরদিন সকালে সোজা গৌরীকুণ্ড ৷ বাসে প্রচণ্ড ভিড় ৷ তাই অগত্যা ট্যাক্সি ৷ ত্রিযুগীনারায়ণ হয়ে রুদ্রপ্রয়াগ ৷ ত্রিযুগীনারায়ণ গৌরীকুণ্ড থেকে ১২ কিলোমিটার ৷ আর শোনপ্রয়াগ থেকে ৯ কিলোমিটার ৷ শোনপ্রয়াগে শোন আর মন্দাকিনীর সঙ্গম ৷ ৪০০ টাকায় ট্যাক্সিতে ত্রিযুগীনারায়ণ হয়ে রুদ্রপ্রয়াগ ৷ আগে ত্রিযুগীনারায়ণ শোনপ্রয়াগ থেকে হাঁটতে হত ৷ এখন পুরোটাই প্রায় ট্যাক্সি যায় ৷ নারায়ণকে সাক্ষী রেখে হর-পার্বতীর এখানে বিয়ে হয়েছিল ৷ মন্দিরের ভেতরে ছাদনাতলা ৷ হর-পার্বতীর মূর্তি ৷ পূজারী প্রচুর হলুদ আর সিঁদুর কপালে মাখিয়ে দিল ৷ তাই মেখে বিকেলের মধ্যেই ফিরলাম রুদ্রপ্রয়াগ ৷ সম্পূর্ণ হল পঞ্চকেদার ট্রেকিং ৷

রুদ্রপ্রয়াগ থেকে সোজা হৃষিকেশে ৷ সন্ধ্যায় ত্রিবেণী ঘাটে প্রদীপ ভাসাতে ভাসাতে মনে হচ্ছিল আমার জীবনে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ট্রেক এই পঞ্চকেদার ৷ সোনালি-রূপালি-সবুজে-সুনীলে আঁকা অনবদ্য এই প্রকৃতির সৃষ্টি জীবনে কোনওদিনই ভুলতে পারব মনে হয় না ৷ বুঝতে পারি ডাক এলেই আবার আসব ৷

ভ্রমণ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩

সকল অধ্যায়

১. অর্ধশতাব্দীর আগের বদ্রীনাথ যাত্রা – প্রতাপকুমার রায়
২. মানস অভয়ারণ্য – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩. জলদাপাড়া অরণ্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪. জলের ধারে ঘর – নবনীতা দেব সেন
৫. জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির – উষা সেন
৬. তাহিতি – হরপ্রসাদ মিত্র
৭. মার্কন্ডেয় গঙ্গার উত্স সন্ধানে – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮. কেদার বদ্রী – মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
৯. তেহরানি হয়রানি – অমিতাভ চৌধুরি
১০. শোনপুরের মেলায় – বরুণ দত্ত
১১. এলেম নতুন দেশে – কমলা মুখোপাধ্যায়
১২. মস্কো থেকে সাইবেরিয়া হয়ে পিকিং – গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩. পাতাল-ভুবনেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
১৪. ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ
১৫. নিকোবরের দ্বীপে – তিলকরঞ্জন বেরা
১৬. তিরতিরে নদী আর শাল জঙ্গলের দেশে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭. আমার ভ্রমণ – মহাশ্বেতা দেবী
১৮. সুন্দরবন – হীরক নন্দী
১৯. ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত
২০. সাইকেলে পাঁচ বছরে ভূ-পর্যটন – ভূপর্যটক বিমল দে
২১. আঙ্কোর ভাট – প্রীতি সান্যাল
২২. হিমালয়ের সাতকাহন – ত্রিদিব বসু
২৩. স্বপ্নের পথেই যাওয়া যায় – মহাশ্বেতা দেবী
২৪. ছোট কৈলাস – সুভাষ দত্ত
২৫. বালতাল হয়ে অমরনাথ – প্রতাপকুমার রায়
২৬. মধ্য এশিয়া অভিযান – গৌতম ঘোষ
২৭. পথ হারিয়ে সিকিমের জঙ্গলে – রতনলাল বিশ্বাস
২৮. নতুন করে পাব বলে – বন্দনা সান্যাল
২৯. সেবার ব্রেকজার্নি করে – জয়া মিত্র
৩০. চন্দ্রভাগার উৎস চন্দ্রতাল সুর্যতাল – সুনীলকুমার সরদার
৩১. ওঙ্কারেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
৩২. সুন্দরবনে দুদিন – পবিত্র সরকার
৩৩. মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়
৩৪. দিকবিদিকে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৫. তিস্তানদীর উৎসে – শরৎ ঘোষ
৩৬. পশ্চিমে হাওয়াবদল – মধুপর্ণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৭. এক টুকরো নীল চাঁদ – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৩৮. কালিম্পং থেকে তিব্বত – অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
৩৯. সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু
৪০. মির্জা শেখ ইতেসামুদ্দিনের বিলেত যাত্রা এবং আমি – নবনীতা দেব সেন
৪১. বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
৪২. গানতোক থেকে ইয়ুমথাং – সুতপা ভট্টাচার্য
৪৩. ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল
৪৪. ডুয়ার্সের দুয়ার এখন খোলা – সমরেশ মজুমদার
৪৫. ইউরোপে দিন কয়েক – পূর্ণেন্দু পত্রী
৪৬. রামচন্দ্রের বনবাসের পথ পরিক্রমা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. আসমুদ্রককেশাস – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
৪৮. নিরলংকার ভ্রমণ – শঙ্খ ঘোষ
৪৯. চেঙ্গিস খানের দেশে – প্রতাপকুমার রায়
৫০. মিজোরামের নীল পাহাড়ে – দীপঙ্কর ঘোষ
৫১. সিন্ধুদুর্গ – বিশ্বদীপ দত্ত
৫২. জিম করবেটের জঙ্গলে – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩. থর মরুভূমিতে ট্রেকিং – শিবনাথ বসু
৫৪. মরোক্কো ভ্রমণ – হরপ্রসাদ মিত্র
৫৫. ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ – নবনীতা দেব সেন
৫৬. গন্তব্য মাচুপিচু – প্রতাপকুমার রায়
৫৭. কই যাইত্যাছি জানি না – শঙ্খ ঘোষ
৫৮. পারাংলা অভিযান – সুনীলকুমার সরদার
৫৯. পুশকিন, মলদভা আর কচি পাতার বাঁশিতে মোত্সার্ট – প্রীতি সান্যাল
৬০. আমাদের ছোট নদী : পার্বতী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬১. দেবলোকের পথে পথে – অশোক চক্রবর্তী
৬২. না-ভ্রমণের বৃত্তান্ত – আশাপূর্ণা দেবী
৬৩. এভারেস্টের পাদদেশে যাত্রা – কমলা মুখোপাধ্যায়
৬৪. নীল নদে পাঁচদিন – হরপ্রসাদ মিত্র
৬৫. বারাণসীর ঘাটের কথা – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৬. বালফাক্রমের পাহাড়-জঙ্গলে – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৬৭. গৌরীগঙ্গার উৎসব মিলাম হিমবাহ – পুরুষোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৮. মরুভূমির দিনরাত্রি – পবিত্র সরকার
৬৯. ঢাকা : একুশ বছর পর – অন্নদাশঙ্কর রায়
৭০. ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
৭১. ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউ – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৭২. কালিন্দী গিরিবর্ত্ম – রথীন চক্রবর্তী
৭৩. একযাত্রায় ভোরামদেরও আর কানহা – হীরক নন্দী
৭৪. মদমহেশ্বরের ডোলিযাত্রা – কাজল দত্ত
৭৫. কেনিয়ায় পাঁচ অরণ্য – প্রতাপকুমার রায়
৭৬. কোনাডা থেকে রেভুপাল ভরম – রতনলাল বিশ্বাস
৭৭. চাঁদের দেশ লাদাখ – কমলেশ কামিলা
৭৮. বোকের তোভ, ইজরায়েল – নবনীতা দেব সেন
৭৯. বিষ্ণুপুর মুকুটমণিপুর – হরপ্রসাদ মিত্র
৮০. ডোকরিয়ানি বামক – অনিন্দ্য মজুমদার
৮১. তাওয়াং থেকে তাসি-চু জং – কমলা মুখোপাধ্যায়
৮২. মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল
৮৩. আকাশচূড়ায় অভিযান – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮৪. ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ
৮৫. সারেঙ্গেটির জঙ্গলে – হরপ্রসাদ মিত্র
৮৬. এবারের কুম্ভমেলায় – চিন্ময় চক্রবর্তী
৮৭. অন্য পথের পথিক – বুদ্ধদেব গুহ
৮৮. গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়
৮৯. নিশীথ সূর্যের দেশ – প্রতাপকুমার রায়
৯০. সবুজ নামদাফাতে – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
৯১. পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু
৯২. গোঁসাইকুণ্ড – কমলা মুখোপাধ্যায়
৯৩. অমরকন্টক – হীরক নন্দী
৯৪. আদিম ডুয়ার্সের আধুনিক রূপকথা – সূর্য ঘোষ
৯৫. পার্বতী উপত্যকায় সার পাস – বিদ্যুৎ দে
৯৬. মিয়ানমার, ইরাবতীর সঙ্গে – পবিত্র সরকার
৯৭. রূপসী রিশপ – হীরক নন্দী
৯৮. হিমবাহের জন্মভূমিতে – শেখর ভট্টাচার্য
৯৯. ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার
১০০. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত – হরপ্রসাদ মিত্র
১০১. বক্সা দুর্গ – টুটুল রায়
১০২. সিন্ধু নদের ধারে – রতনলাল বিশ্বাস
১০৩. মেঘালয়ের দাউকি – সুমিত মুখোপাধ্যায়
১০৪. আমাদের ছোট নদী : লিডার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০৫. লাসা – সমীর রায়
১০৬. ২ নম্বর লোভালোয়া স্ট্রিট – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
১০৭. অযোধ্যা পাহাড় – বিশ্বদীপ দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন