মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

‘তোমাদের কি পায়ের তলায় চাকা বাঁধাই থাকে? এই তো ফিরলে গ্রীষ্মের গ্রেনাডা থেকে ৷ ক্যারাবিয়ান সাগরের নোনা জল গা থেকে শুকোয়নি বললেই চলে ৷ এক সপ্তাহের মধ্যে স্যুটকেসে শীতের পোশাক গুছিয়ে চললে মেক্সিকো! এই অক্টোবরের ঠান্ডায়!’ বার্কলে থেকে সস্নেহে মেয়ে বকে উঠল ফোনে ৷ ২০০০ সালে বড়ই ঘোরা হয়েছে এটাও ঠিক ৷ দেশ বেড়ানো ঘোরের মতো, যাঁরা বেড়ান তাঁরা জানেন ৷ আমার ভ্রমণ পঞ্জিকা নির্ধারিত হয় স্বামীর কর্মস্থল ইউনেস্কোর প্রোগ্রামের সঙ্গে ৷ ১৮ অক্টোবর পারি শহরের বৃষ্টি, স্যাঁতসেঁতে ঠান্ডা, গোমড়া আকাশ ছেড়ে এক সপ্তাহের জন্য উধাও হওয়া মেক্সিকো ৷ শার্ল দ্য গল বিমানবন্দরে এয়ার ফ্রান্স লাউঞ্জে ঢুকতেই দেখি কাঁচাপাকা দাড়িতে টেলিভিশনে, খবরের কাগজে দেখা চেনা মুখ, কফি আনন, ইজরায়েল থেকে ফিরছেন, প্যারিস হয়ে যাচ্ছেন নিউইয়র্ক ৷ তাই এত সিকিউরিটির কড়াকড়ি ৷ আমাদের চোখে পরিচয়ের দৃষ্টি ফুটে উঠতেই হাত জোড় করে নমস্কার জানালেন ৷ কফি টেবিল ঘিরে গোল হয়ে বসে গল্প করছেন সঙ্গীদের সঙ্গে দ্বাদশ শতকের একটি ব্রোঞ্জের দেবীমূর্তি নিয়ে ৷ বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় কাটল ৷ এখন উড়ছি মেক্সিকোর পথে ৷ ‘ওলা’ অর্থাৎ হ্যালো সম্বোধনে চমকে তাকালাম ৷ পাশে জানলার কাছে বসা মিষ্টি চেহারার মহিলা আলাপ করলেন ৷ আমার স্প্যানিশ একেবারেই কাজ চালানো গোছের ৷ তবু পরস্পরকে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না ৷ পেশায় ডাক্তার ৷ চার বোন আর মেয়েকে নিয়ে ইউরোপ ঘুরে ফিরছে নিজের শহর মেক্সিকো ৷ প্যারিসের কথায় ঝলমলে মুখ ৷ তার প্রিয় শহর ৷ আর মেক্সিকো! আমার প্রশ্ন ৷ হেসে বলল, ‘এক আশ্চর্য শহর ৷ বিশাল, দম বন্ধ, খেপা, রঙিন, হিংস্র, দুঃখী, ঝকমকে, বিপজ্জনক অথচ কী যে মনকে টানে ৷ জানো তো এই শহরকে তুলনা করা হয় কলকাতা, কায়রো, রিও দি জেনেরোর সঙ্গে ৷ আমার তো মনে হয় না পৃথিবীর আর কোনও শহর এত বৈপরীত্য, আকর্ষণ, অবিশ্বাস্য দারিদ্র্য, হতাশা, বাড়তে থাকা জনসংখ্যা, পরিদূষণ, ঐশ্বর্য, সংস্কৃতি সমেত এমন ভালোবাসাতে পারে মানুষকে ৷ (আমার কলকাতার কথা তক্ষুনি মনে পড়ল) সমুদ্র থেকে দু হাজার কুড়ি ফুট ওপরে সাত হাজার আটশো কিলোমিটারের গড়ানো উপত্যকায় পাহাড়ে ঘেরা আমার শহরের জনসংখ্যা মনে হয় ত্রিশ মিলিয়নেরও বেশি ৷ আর তা বেড়েই চলেছে ৷ আর পলিউশন! প্লেন থেকে নামার সময় দেখতে পাবে পশমের চাদরের মতো ঝুলে আছে ধুলো আর ধোঁয়া ৷ যেন ছুরি দিয়ে কেটে এক চাক তুলে নেওয়া যায় ৷ নিশ্বাসে প্রশ্বাসে টের পাবে পরিদূষণের ভয়ানক চেহারা ৷ মেক্সিকো শহরে হাঁটতে চলতে তোমাকে ঘিরে থাকবে ধোঁয়া ধুলো মাখা ভারি বাতাস ৷’ আমার চিন্তিত মুখ দেখে হেসে বলল, ‘আগে ভাগে এ সব বলে নিচ্ছি, তাই বলে মনে করো না আমি আমার শহরকে ভালোবাসি না ৷ আসলে মেক্সিকো মেক্সিকোই ৷ মানুষজন, আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ছবি ভাস্কর্য, কবিতা সাহিত্য সব কিছু নিয়েই মেক্সিকো আমূল মেক্সিকান ৷ প্রাচীন, জটিল, দুর্বোধ্য এই শহরকে এত অল্প সময়ে কি চিনবে? তবে চেষ্টা করো মানুষজনের সঙ্গে আলাপ করতে ৷ পঞ্চাশেরও বেশি ইন্ডিয়ান জাতির সঙ্গে মিশেছে স্প্যানিশ সভ্যতা যাকে ডাকতে পারি মেক্সিকানিসম নামে ৷ দুর্বিষহতা নিয়ে জীবন কখনও উৎসবের ছটায় রঙিন, ফিয়েস্তার আনন্দে ফেটে পড়ে আবার তক্ষুনি লুকিয়ে ফেলতে পারে নিজেকে অন্ধকার বিষাদে ৷’ এত ভালো লাগছিল ওর কথা শুনতে যে নাম জিজ্ঞেস করার ফুরসৎ পাইনি ৷ নাম গুয়াদালুপে ৷ বললাম, ‘তোমার নামে ক্যারিবিয়ান সাগরে একটি দ্বীপ আছে ৷’ বলল, ‘তাই বুঝি! আসলে ইনি হলেন দেবী, মেক্সিকো শহরের রক্ষাকর্ত্রী ৷’ বেশ গল্পগাছা করে ঘুমিয়ে বারো ঘণ্টা সময় কেটে গেল ৷ নামছি ৷ দেখি ফ্ল্যানেলের মতো পুরু আস্তরণ ঢেকে রেখেছে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ শহরের মুখ ৷ এ দেশের বিখ্যাত লেখক কার্লোস ফুয়েন্তেসের লেখা জনপ্রিয় বইটির নাম মনে এল Where the Air is Clear– এখন আর বলা যাবে না নিশ্চয় ৷ গুয়াদালুপের গালে চুমু দিয়ে বিদায় নিলাম ‘আদিয়োস আমিগা’-বিদায় বন্ধু-ভাগ্যিস তোমার পাশে আমার বসার জায়গা ছিল ৷ অল্প সময়ে কত কিছু জানালে ৷ শহরে ব্যাগ নিয়ে সাবধানে চলাফেরা করতে, হোটেলে কলের জল না খেতে, আর প্রত্নতাত্বিক ঐশ্বর্যের ভাণ্ডারগুলি ভালো করে দেখে নিতে অনুরোধ করল ‘শহরের দেবী’ নামে মেয়েটি ৷ এখন রাত আটটা ৷ গাড়ির ভিড়, দেওয়ালের গায়ে রাঙানো গ্রাফিতি শহরের বহুতল বাড়ির চূড়া দেখতে দেখতে শহরের কেন্দ্রে হোটেলে এসে পৌঁছলাম ৷

সকালে ট্যুর নিলাম হোটেল থেকে সারাদিনের জন্য ৷ সালভাতর আমাদের গাইড ৷ বয়সের ভারে নুয়ে আছেন ৷ কিন্তু শহরের নাড়িনক্ষত্র নখদর্পণে, জানাল গাড়িচালক দিয়েগো ৷ তবে তাড়াতাড়ি কথা বলার জন্য, না বাঁধানো দাঁতের জন্য প্রায়ই কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল গাইডের ৷ কান সজাগ রেখে শুনতে হচ্ছে ৷ যেহেতু সময় কম এবং এই বিশাল দেশ ও শহর তাই আমরা দু-তিনটি জায়গা বেছে নিয়েছি ভালো করে দেখার জন্য ৷ সারা দেশে নব্বই মিলিয়ন লোক আর ওই একই সংখ্যার দ্রষ্টব্য স্থান ৷ আর আছে তার সঙ্গে চার হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাস ৷ আমাদের দেশের মতোই এ দেশটা দেশ কাল সময় পেরিয়ে এক বহতা জীবনের ছবি ৷ সারা দেশে ছড়ানো পুরনো সভ্যতার প্রাচীন ভগ্নস্তূপ-ওলমেক টলটেক্স মায়া আজটেক আজও ফেলে আসা সভ্যতার সাক্ষ্য দিচ্ছে অতি আধুনিক বাড়িঘরের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ৷ আমরা দুজন ছাড়া আরও দুজন আরোহী ৷ লেনা অসলোর তরুণী, হান জুরিখের ছেলে, জাজ পিয়ানো সঙ্গীতের সঙ্গে পারকাসন বাজায় ৷ এখন মেক্সিকোতে প্রোগ্রাম করতে এসেছে ৷ সঙ্গী হিসাবে দুজনেই মনোমতো ৷

প্রথমেই এলাম শহরের কেন্দ্রে, বাড়ি আর বাড়ির সমুদ্র পেরিয়ে জোকালো, বিশাল প্লাজাটি শহরের প্রাণভোমরা ৷ পাসেও দ্য লা রিফরমা ধরে হাঁটছি ৷ সঙ্গে বয়সের ভারে কমজোরি পায়ে কথা বলতে বলতে হাঁটছেন সালভাতর ৷ ‘এ রাস্তাকে আদর করে ডাকা হয় মেক্সিকান সঁজেলিজে ৷ কবি অক্টাভিও পাজ এ রাজপথটির নাম রেখেছেন-মেক্সিকো শহরের সিমেন্টের সেইন নদী, প্যারিসের অতি চেনা সেইন নদীর নামে ৷ এখানে আগে দুধারে সাজানো ছিল প্যারিসিয়ান স্টাইলের বিশাল বিশাল প্রাসাদ, ফরাসি ফ্যাশন বুটিক, রেস্তোরাঁ ৷ সালভাতর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, সে দিন কি আর আছে? অত সুন্দর বাড়ি ভেঙে তৈরি হয়েছে চক্ষুশূল স্কাইস্ক্র্যাপার ৷’ আমার হাঁটতে খুব ভালো লাগছিল ৷ ফরাসি স্থপতি শার্ল কর্দলিয়রের তৈরি কলম্বাস মনুমেন্ট, তার একটু দূরে শেষ আজটেক সম্রাট বীর Cuauhtémoc-এর স্তম্ভের ওপর দাঁড়ানো অহংকারী মুখ শহরের সবথেকে ব্যস্ত ও কোলাহল মুখরিত রাস্তাগুলি একেবারে যেখানে মিশেছে ঠিক সেই বিন্দুতে ৷ তার পরেই স্বাধীনতার দেবী সোনালি রঙের El Angel– ডানপায়ের বুড়ো আঙুলে ভর দিয়ে পাখা মেলেছেন যেন স্মৃতি মিনার থেকে উড়ে যেতে চান অন্য কোথাও ৷ ডানহাতে ধরা লরেল পাতার গোল মালা ৷ সুন্দরী এই রমণীকে ডাকা হয় পুংলিঙ্গে, এল এঞ্জেল নামে ৷ লেনা, অসলোর মেয়ে আমাদের সঙ্গিনী বলে উঠল, ‘দেখেছ এদেশের মাচো চরিত্রের অহংকার! দেবীমূর্তিও রেহাই পায়নি তার হাত থেকে ৷’ সালভাতর নিচু হয়ে সিগারেট ধরাচ্ছে বলেই বোধহয় কথাটি কানে নিল না ৷ আমরা এখন চলেছি Tlatelolco; মাটির নিচে কয়েকটি স্তরের ভূমি আর কয়েক শতকের সময় এই সব ব্যবধান ছাড়িয়ে তিনটি সভ্যতা একসঙ্গে এসে মিশেছে এক বিন্দুতে ৷ এক দিকে পিরামিডের চূড়া আজটেক সভ্যতার পরিচয় বহন করছে, এসপ্ল্যানেডের মাঝখানে সপ্তদশ শতকের সেইন্ট জেমস গির্জা ঔপনিবেশিক সভ্যতা আর উঁচু তলার আধুনিক বাড়িটি বিদেশি মন্ত্রণালয় আজকের সময়কে ধরে রেখেছে ৷

Tlatelolco-তে হাঁটছি, গাইড দেখাচ্ছে পুরনো দেওয়াল, মন্দিরের বেদী, সিঁড়ি আর Tzompantli– পাথরে খোদাই করোটির মঞ্চ, ঠিক ঔপনিবেশিক গির্জার পাশটিতে ৷ যেন ওই ঈশ্বর ঢেকে দেবে অতীতের ধ্বংস তাণ্ডবের ছবি ৷ সালভাতরের গায়ে আছে অনেকটা আজটেক রক্ত ৷ কথা বলছিল বেশ উঁচু গলায়, ‘অনেক রক্ত ঝরেছে এখানে ৷ বিজয়ী স্প্যানিশ নেতারা চেয়েছিল এ দেশের প্রাচীন সভ্যতার চিহ্ন সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে ৷ আর না হয় মাটির নিচে কবর দিতে ৷ স্তরে স্তরে এখনও সেই শিল্পভূমির পরিচয় ছড়িয়ে আছে ৷ জলের দেবতা, আগুনের দেবতা, উর্বরতার দেবী-শয়তানের সঙ্গে তাদের গাঁটছড়া বাঁধা ৷ কাজেই এ সব অশুভ ধারণাগুলো তাড়িয়ে ধর্মান্তকরণ সম্পূর্ণ করতে হবে এই ধারণায় তারা কত যে দেবদেবীর মূর্তি, শিল্প কাজ, অলঙ্কৃত বেদী হয় ভেঙেছে না হয় পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলেছে ৷ এভাবে শুধু দলে দলে দেশবাসীদের নিধন করেই ক্ষান্ত হয়নি, একটা পুরো উন্নত শিল্প সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল ৷ শুধু প্রাচীন আজটেক নয় অনেক পরে যখন স্প্যানিশ ও মেক্সিকান দুজাতি মিলে একটা মিশ্রিত জনসংখ্যা mestizos গড়ে উঠেছে ১৬৯২ সালে, তারা ক্রেয়ল আর ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল বিদেশি শ্বেত প্রভুদের কেড়ে নেওয়া তাদের দৈনন্দিন খাবার পবিত্র ভুট্টার আটা বাঁচাতে ৷ বিদ্রোহী জনতা রুখে দাঁড়িয়েছিল ৷ তখন এই প্লাজাতেই রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিল এ দেশের মানুষের প্রাণের বলিদানে ৷ এ স্কোয়্যার রক্তের রঙে লাল ৷ ১৯৬৮ সালে অলিম্পিক খেলা হওয়ার আগে এখানে ছাত্ররা জড়ো হয় প্রতিবাদী শ্লোগানে ৷ প্রতিবাদ তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ৷ অলিম্পিক খেলার জন্য কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নতুন স্টেডিয়াম, ভিলেজ, দেশের সাধারণ মানুষের তখন কঠিন অবস্থা, দারিদ্র্যের সঙ্গে রোজের সংগ্রাম, জীবন কঠিন চাপে দুর্বিষহ ৷ ছাত্রসমাজ রুখে দাঁড়াল ৷ সুবিচার আর স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম তাদের ৷ অলিম্পিক খেলা প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে ৷ সরকারের এই চেহারা বাইরের জগতের কাছে তুলে ধরতে হবে এই বাজির লড়াই ছাত্রদের ৷ অলিম্পিক শুরু হওয়ার ঠিক ষোল দিন আগে প্লাজাতে সমবেত প্রতিবাদী জনতা জিগির তুলেছে ‘ভাই সব এক হও’-সরকারের আরক্ষ পুলিশের গুলির ছররা ছুটে এল, এ যেন এক মৃত্যু ফাঁদ, ছাত্ররা এই অতর্কিত আক্রমণের জন্য একেবারে প্রস্তুত ছিল না, জানেই না কোন দিকে গেলে রেহাই পাওয়া যাবে বুলেটের হাত থেকে ৷ ১৬৯২ সালের মতো আবার রক্তের বন্যা বইল এই প্লাজাতেই ৷ ‘এক অভিশাপ ঘিরে আছে এই প্লাজাকে ঘিরে তা আমরা বিশ্বাস করি’, বলে উঠল সময়ের ভারে নুয়ে পড়া অনেক অভিজ্ঞতা অতিক্রম করা বুড়ো গাইড ৷ ‘১৯৮৫ সালে যে ভূমিকম্প হয় তা এই প্লাজার অনেক ক্ষতি করে ৷ এ অতি পবিত্র আর রহস্যময় স্থান যেখানে ক্রুদ্ধ দেবতারা মাঝে মাঝেই নরবলির উপচার চান ৷ প্রাচীন যুগে উচ্চারিত হয়েছে কতবার পবিত্র বলিমন্ত্র, প্রতিশোধী যজ্ঞের লেলিহান শিখা জ্বলেছে, সূর্য উপাসকেরা ভালোবাসত এমন ব্রত পুজোর আচার অনুষ্ঠিত হয়েছে বারবার এখানেই ৷ ধর্মীয় উৎসব, জীবন মৃত্যুর উৎসব, ওদের নাচ গান স্তোত্র পাঠ, মাটির নিচ থেকে আকাশ পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়, আগুনের ফুলকির মতো অতীত উঁকি দিয়ে যায় এই ত্রিসংস্কৃতি ঘেরা প্লাজায় ৷’ একটু এগিয়ে গিয়ে সবুজ পার্কের গায়ে একটি ছোট্ট কাফেতে ঢুকলাম ৷ আমরা নিলাম টাটকা ফলের রস, সালভাতর কোয়েসাদিল্লা-চিজে মোড়া তরতিলা রুটি আর অগুয়া দ্য জামাইকা-জবা ফুলের রসে তৈরি এক গ্লাস কড়া পানীয় নিয়ে চুপচাপ খেতে খেতে অন্যমনস্ক বসে রইল ৷ এরপর আমাদের অনুরোধে নিয়ে গেলে প্রত্নতত্ব মিউজিয়ামের কাছে অ্যাভেনিউ দ্য মহাত্মা গান্ধী নামের রাস্তায় ৷ ডান্ডি অভিযানের দাঁড়ানো মূর্তিটি কাজ করা রেলিঙে ঘেরা ৷ পিছনে সবুজ গাছের ছায়া পড়েছে তাঁর শরীরে ৷ প্লাজার ক্ষুব্ধ ইতিহাস থেকে একেবারে অন্যরকম ৷ গর্ব বোধ হচ্ছিল এই বিদেশে তাঁকে এমন সম্মানিত করে রাখা হয়েছে দেখে ৷ সালভাতর জানাল, এখানে গান্ধীজিকে একজন সন্ত বলে মনে করা হয় ৷ রাস্তাটি চওড়া ও বেশ দূর পর্যন্ত চলে গেছে ৷

এখন শহর কেটে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে Teotihuacàn পিরামিড শহর লক্ষ্য করে গাড়ি ছুটছে ৷ চোখের সামনে দেখছি পথ আস্তে আস্তে ওপরে উঠছে ৷ সামনে পাহাড় গাছপালায় সবুজ ৷ পথের দুধারে গাছের সারি, লাল টুকটুকে চেরী ফলের মতো ফল ঝুলছে ৷ পিরুল গাছ ৷ আরবল দেল পেরু ৷ পেরু থেকে এসেছিল কবে কে জানে ৷ বাতাসে ঝিরঝির করে মাথা দোলাচ্ছে সবুজ ডালপাতা, পাখির মেলা, এ ফল ওদের খাবার ৷ রোদ চড়া ৷ আমরা পিরামিডের কাছে এসে গেছি ৷ থামলাম ক্যাকটাসের মতো দেখতে উঁচু গাছের সারির কাছে ৷ Pulque পানীয় তৈরি হয় এই Maguey গাছের রস থেকে ৷ সালভাতর গাছের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, পাশের কিউরিও শপের থেকে ছোট ছোট গ্লাসে দিয়ে গেল ৷ ফেনিল দুধ সাদা সামান্য টক স্বাদের এই পানীয় আমার মোটেও ভালো লাগল না ৷ পুরুষ সঙ্গীরা ভালোই সদ্ব্যবহার করলেন ৷ ‘আগুয়া মিল-হনি ওয়াটার’, সালভাতর এক চুমুকে তৃতীয় গ্লাস শেষ করে বলে উঠল ৷ প্রতিটি গাছ থেকে দু লিটার পানীয় তৈরি হয় ৷ এ দেশের শঁপাইন নাকি ৷ প্রচুর ভিটামিন আছে, পান করলে দীর্ঘজীবী হওয়া যায়, একপাটি নকল দাঁতে হেসে উঠল বৃদ্ধ ৷ গাছ মরে গেলে তার থেকে তৈরি হয় সুতো ৷ বোনা হয় কার্পেট, পঞ্চো-আগের দিনে কচি পাতা থেকে তৈরি হত কাগজ, মণ্ড থেকে সাবান ৷ শুকনো কাঠি থেকে ছুঁচও ৷

এরপর গাড়ি ঘুরিয়ে পিরামিডের দিকে যাত্রা ৷ দিয়েগোর হাতে স্টিয়ারিং ৷ সালভাতরের হাতে ছোট বোতলে কয়েকটি পোকা কিলবিল করছে ৷ ম্যাগুয়ে গাছের পোকা নাকি এদেশে ডেলিকেসি ৷ কী করে খাবে? প্রশ্ন করতে বলল, আরে টাকো শেলের ওপর ছড়িয়ে উনুনে সামান্য রোস্ট করে নেওয়া ৷ টাকো এদের ডোঙার মতো রুটি ৷ এ পোকার দাম মহার্ঘ্য ৷ কত রকম খাদ্য যে পৃথিবীতে আছে! গাড়ি ছুটছে ৷ পৌঁছলাম পিরামিডের কাছে ৷ যা দূর থেকে পাথরের ঢিবির মতো লাগছিল দেখি প্রান্তর জুড়ে পাথরের বিশাল গম্বুজের মতো প্রাসাদ, ধাপে ধাপে সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরে ৷ রাস্তার দুধারে প্রাচীন যুগের প্রাচীরের ভগ্ন টুকরো পড়ে আছে ৷ সালভাতর কথা বলতে বলতে আমাদের নিয়ে চলেছে পুরনো অলিন্দের মধ্য দিয়ে ভাঙা মন্দিরের অভ্যন্তরে ৷ সেখানে দেওয়ালের গায়ে প্রায় মুছে যাওয়া লাল রঙের নদীর স্রোত সর্পিল গতিতে আঁকা, মাঝে মাঝে আবছা নীল ৷ প্রাঙ্গণ ঘিরে স্তম্ভ, তার গায়ে কী সূক্ষ্ম কাজ! দীর্ঘ চঞ্চু পাখি, মুখোশ, পুজোর বাসন ঘট গাছের ডাল নানা আজব জীবজন্তু খোদাই করা ৷ সূর্যদেবের মুখ সূর্যমন্দিরে ৷ Teotihuàcan শব্দের মানে এমন স্থান যেখানে মানুষ হয়ে ওঠে দেবতা ৷ প্রায় চল্লিশ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এই প্রাচীন আশ্চর্য শহর তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব একশো পঞ্চাশ থেকে সাতশো খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৷ এক বিশাল সভ্যতার জন্ম ৷ হাজার বছর ধরে তার প্রভাব পুরো মধ্য আমেরিকার শিল্প সংস্কৃতিতে পড়েছে ৷ তিয়োতিহুআকান শহরকে ঘিরে ওঠা এই সভ্যতার নাগরিক সংখ্যা ছিল দশ লক্ষের ওপর ৷ প্রাচীন দিনের অন্যতম বিশাল নগর ৷ সাজানো সুকল্পিত শহর গড়ে উঠেছিল প্রায় দুহাজার শিল্প সম্ভারের সৃষ্টিকাজে ৷ চাষীরা থাকত কাঠের বাড়িতে শহরের উপকণ্ঠে, বনে ৷ নাগরিকেরা পাথরের শিল্প সুষমা সমৃদ্ধ গৃহের আবাসিক ছিল, ছিল মাটির নিচে বয়ে যাওয়া জল পরিসরণের নালি যার ধ্বংসাবশেষ দেখে এখনও অবাক হয়ে যায় আজকের মানুষ সেই যুগের আধুনিকতার পরিচয়ে ৷ অবাক হয়েছি দেওয়ালে আঁকা ছবির শিল্প সুষমায়, পাথরের মূর্তির অভিব্যক্তিতে আর এক সময়ের সৃষ্টি সমৃদ্ধ সভ্যতার ভেঙে পড়া নির্জন সৌন্দর্যে ৷ তিয়োতিহুআকানদের পরিচয় আজ কোনও একটি অলঙ্কৃত স্তম্ভে, প্রাচীর চিত্রে, পিরামিডের গায়ে লেখায় ফোটা ৷ খুব বেশি তথ্য এদের সম্বন্ধে পাওয়া যায়নি ৷ এখানে যারা বাস করত কী নাম ছিল তাদের, নগরের নামই বা কী ছিল জানা যায়নি ৷ তিয়োতিহুআকান নামটিও তো সাতশো বছর পরের সভ্যতার মানুষ আজটেকদের দেওয়া ৷ এই পবিত্র রহস্যময় ভগ্নস্তূপে তারা আসত তীর্থযাত্রায় ৷ সূর্য ও চন্দ্র পিরামিডের নামও আজটেকদের দেওয়া ৷ Quetzalcoatl মন্দিরের ডানা মেলা দেবতা নাগ ও পাখির সমন্বয়ে গড়া সবুজ মূর্তি প্রাচীনকালে এ দেশের ধর্ম বিশ্বাসকে জানাতে চায়, এক দ্বৈত জগতের প্রতীক, স্বর্গ মর্ত, বাতাস জল, জন্ম মৃত্যু, আলো অন্ধকার-এক সুতোয় বাঁধা এ বিশ্বাসে ৷ মন্দিরের সিঁড়িগুলির ধাপে ধাপে ব্যাদিত মুখ সর্পদেবতাদের মূর্তি ৷ মুখের দুপাশে কী ভয়ঙ্কর দাঁত ৷ গা শিউরে ওঠে ৷ আরেক মন্দিরে জলের সিংহাসনে বসা মাতৃদেবীর মতো মূর্তিকে ঘিরে উঠেছে পাথরের লতাপাতা, তাঁর মাথার মুকুটে স্বর্গের পাখির রাজকীয় পালক ৷ গুহা, ঝরনা, দৈববাণী গৃহ, উর্বর মাতৃভূমি, ‘রিভিয়া করিম্বোসার’ লতা যা খেলে দেখতে পাওয়া যায় ভবিষ্যৎ, এ সবই মধ্য আমেরিকার প্রথমতম শহরের মূল মন্ত্র ছিল ৷ মন্দির থেকে বেরোতেই দেখি দূরে উঁচুতে পিরামিডেরা সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ অনেক নিচে রোদে ধোয়া প্রাঙ্গণ থেকে বাঁশির সুর ভেসে আসছে ৷ করুণ অচেনা সুর আমাদের ছুঁয়ে গেল ৷ পুরনো দিনের পোশাকে সাজা আজটেক বংশধরেরা নানা পণ্য দ্রব্য নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ ‘আনদালে সিনিওরা, আনদালে’, এই যে ম্যাডাম আসুন, অন্তত একটু তাকান, না হয় নাই কিনলেন, দেখতে দোষ কী!’ এ সব কথায় চিঁড়ে তো ভেজেই ৷ একটি পাথরের মূর্তি কিনলাম ৷ ছিদ্রে ফুঁ দিতে আশ্চর্য সুর বেজে উঠল ৷ আরও কিছু কেনাকাটা হল, চন্দ্র সূর্য দেবতার মূর্তি, ফসলের দেবী আরও টুকটাক ৷ চত্বর ধরে হেঁটে চলেছি, দেখছি চাঁদের পিরামিড, সূর্যের পিরামিড, জাগুয়ার প্রাসাদ, প্রজাপতি প্রাসাদ ডানামেলা শঙ্খ দেবতার মন্দির ৷ চত্বরের পাশের রাস্তাটির নাম কালজাদা দ্য লস মুয়েরতস, মৃত্যুপথ; দুধারে নরবলির পাথর সাজানো ৷ ভেতরে সুড়ঙ্গে কবরের সারি ৷ এ জায়গাটির নাম সিউদাদেলা প্লাজা ৷ চাঁদের পিরামিডের ওপরে ওঠা হল ৷ কী উঁচু ধাপ ৷ সেখান থেকে দেখলাম এক স্বপ্নের ভগ্নস্তূপ, বহু যত্নে গড়া এক নগর শিল্পের টুকরো ছড়ানো ইতিহাস ৷ এ সভ্যতার পতনের বহু শতক পরেও তীর্থযাত্রায় এসেছে আজটেক রাজপরিবার যারা বিশ্বাস করত এখানেই দেবদেবীকুল প্রাণ বিসর্জন দেন আজটেকদের বাসভূমি ‘পঞ্চম জগতে’ সূর্যদেবতার পরিক্রমণ সূচনায় ৷ এখন ইউনেস্কোর উত্তরাধিকার তালিকায় ভুক্ত এই শিল্প সম্ভার ৷ কাজ চলছে এক প্রাচীন সভ্যতাকে রক্ষার ৷ পুরো শহরে একটা রহস্য জড়ানো ৷ কারা বাস করত এখানে? কী ছিল তাদের রোজের জীবন! কোন দেবতার পায়ে রাখত পুজোর উপচার! সাতশো খ্রিস্টাব্দের পর আর কেন জীবনের কোনও চিহ্ন থাকল না! কোথায় গেল এমন সৃষ্টিশীল মানুষেরা! প্রত্নতাত্বিকেরা গবেষণা করে বলেছেন, এক বিরাট অগ্নিকাণ্ডে শহর পুড়ে ছাই হয়ে যায় ৷ অনুমান করা হয় এ আগুনের হোতা বাইরে থেকে আসা বিজয়ী বাহিনী ৷ কারণ যাই হোক না কেন এ নগর আর কোনওদিন ধ্বংসের অগ্নিস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়াতে পারেনি, এক বিশাল সভ্যতার ছাপ রয়ে গেল শুধু স্বপ্নময় ভগ্নস্তূপে ৷

একদল ছেলেমেয়ে এসেছে শিক্ষকদের সঙ্গে ৷ আমার কপালের টিপ ওদের কৌতূহল জাগাল ৷ একটি মেয়ের মুখ আমাদের দেশের গাঁয়ের কিশোরী মেয়ের মতো ৷ ওর কপালে পরালাম লাল টুকটুকে টিপ ৷ আমরা এগোলাম মিউজিয়ামের দিকে ৷ সেখানে রাখা প্রত্নতাত্বিক রত্নভাণ্ডার ৷ বিভিন্ন সময়ে পাল্টেছে জীবনধারা, শিল্পকলা ৷ কখনও মাথার মুকুটে, কখনও ভয় জাগানো মুখোশে, অলঙ্কৃত জাগুয়ার, কুমির, বানর, সাপ, চিতার রত্নখচিত মূর্তিতে, অলঙ্কারের বৈচিত্র্যে মন চলে যায় শতাব্দীর বেড়া পেরিয়ে অনেক দূরে ৷ একটি কাচের প্ল্যাটফর্মের নিচে সাজানো আজকের স্থপতিদের হাতে গড়া পুরনো দিনের সেই অবিশ্বাস্য সুন্দর নগরভূমি মিনিয়েচার সংস্করণে ৷ কী করে এই নদীমাতৃক, মাতৃকেন্দ্রিক সভ্যতা উধাও হয়ে গেল ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছি ৷ এলাম এক বিচিত্র বাগানে যেখানে এখনও দাঁড়ানো প্রাচীন ঝাউ, তাল গাছ, নাম না-জানা মহীরুহের সারি, ফুটে আছে নাম না-জানা কত ফুল ৷ বেরিয়ে দুধারে দেওয়ালের পাথরের ভগ্নস্তূপের মাঝখান দিয়ে চলেছি ৷ সালভাতর আমাদের যাত্রা শেষে অপেক্ষা করতে বলেছিল এক নম্বর গেটের সাদা বাড়ির সামনে ৷ ওখান থেকেই যাত্রা শুরু করেছিলাম ৷ হাঁটতে হাঁটতে ঢুকে পড়েছি একটি খোলা আকাশের নিচে বিপণি সংস্থায় ৷ ধুলো উড়ছে, দুধারে হকারেরা বিক্রি করছে পাথরের গয়না, মুখোশ, মূর্তি, খুদে পিরামিড, এক বৃদ্ধা ন্যুব্জ হয়ে হাতের ঝুড়ির পসরা নিয়ে এগিয়ে আসছে, বলিরেখায় কুঞ্চিত মুখ, মনে হল পথের পাঁচালির ইন্দির ঠাকরুন ৷ একজোড়া পাথরের দুল কিনলাম ৷ দেখি স্বল্প পসরার মাঝখানে রেখেছে নিজের খাওয়ার জন্য একটি কলা ৷ গাইডরা ঘোরাঘুরি করছে পিরামিড সফরসূচি নেব কিনা, অতদূর দেশ ইন্ডিয়া থেকে এসেছ? এ সব শুনতে শুনতে গেট পেরোতে যাব হঠাৎ টুলে বসা ছেলেটি বলে উঠল ‘টিকিট, টিকিট কোথায়?’ আরে কিসের টিকিট! আমরা তো রাস্তা খুঁজতে ভেতরে ঢুকেছি ৷ বাইরে কিছু লেখা ছিল না তো! ছেলেটি নাছোড়বান্দা ৷ চড়া রোদে আমাদেরও মেজাজ খারাপ ৷ দেব না কিছুতেই টিকিট বলে হনহন করে এগিয়ে গেলাম ৷ দুধারে সেই প্রাচীন ভগ্নস্তূপের দেওয়াল ৷ হঠাৎ ক্রিং ক্রিং সাইকেলের ঘণ্টি ৷ দেখি একটি কমবয়সী পুলিশ দাঁড়িয়ে, ‘তোমরা গেটে টিকিট দাওনি!’ আবার বোঝাই কেন দিই নি ৷ না দিতেই হবে ৷ তর্কাতর্কি চলছে ৷ একদল ইংরিজিভাষী মেক্সিকো নাগরিক যাচ্ছিলেন, তাঁরা আমাদের কাছে সব শুনে ব্যাপারটা ওকে বোঝালেন ৷ তখন পুলিশের মাথা ঠান্ডা ৷ রাস্তার এক নম্বর গেটের রাস্তার হদিশ দেখাতে সাইকেল করে সঙ্গে এল ৷ প্রশ্ন করল কোথা থেকে আসা হল, ইন্ডিয়া? কোন শহর, কালকুতা! তারপর হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে নিজের পথে ফিরে গেল ৷ অনেকক্ষণ পর্যন্ত শোনা গেল ওর সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি ৷ এদিকে আমরা হেঁটে চলেছি পরম লক্ষ্যের দিকে ৷ গরম প্রচণ্ড ৷ অনন্ত রাস্তা, সামনে পাহাড় ৷ কোথায় সাদা বাড়ির সাদা জানলা! তখন রাগ হচ্ছে সালভাতরের ওপরে, আজটেকদের ওপরে, পুরো দেশটার ওপরে ৷ হাঁপাতে হাঁপাতে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেখি সাদা বাড়ির বারান্দায় থামের নিচে ছায়ায় সালভাতর ঘুম দিচ্ছে আরামে ৷ বকব কি, মায়া লাগল দেখে ৷ একে একে এল লেনা, দেরি করে হান ৷

দিয়েগো গাড়ি ঘুরিয়ে চলল রেস্তোরাঁর দিকে ৷ পাহাড়, ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে সুন্দর সাজানো খাবার জায়গা ৷ সামনে আজটেক যোদ্ধার সাজে দুই কিশোর অভ্যর্থনা করার জন্য দাঁড়ানো ৷ ভেতরে দেখি মেক্সিকান টুপি পরা দুজন বয়স্ক মানুষ মারিম্বা, জলতরঙ্গের মতো দেখতে যন্ত্রে বাজাচ্ছে উচ্ছল সুর, কয়েকজন অতিথি জোড়ায় জোড়ায় নাচছেন তার তালে তালে ৷ টেবিলভর্তি খাবার ৷ নেপালে-ক্যাকটাসের কচি পাতার স্যালাড, গুয়াকোমালে-চটকানো আভোকাডো পিঁয়াজ আর কুচোনো টম্যাটো দেওয়া, তরতিয়া ফ্রিতা-ভাজা রুটি, তামাল দ্য দুলসে ডি পিন-ভুট্টার পাতায় মোড়া ভুট্টা সেদ্ধ, বিনস আর মাংসের কাবাব, আরস-ভাত, পইও আ লা মেক্সিকানা-মুরগির ঝালঝাল কারি, ফল পায়েসও রেখেছে দেখছি ৷ চিলাকুয়েলেস, গরদিতা চিজ আর ক্রিমে মুখরোচক, মধু আর দুধে সেদ্ধ চটকানো কলা, কলাপাতায় মুড়ে ভাপানো ৷ খেতে সুস্বাদু যদি ক্যালোরির ভয় না থাকে ৷ খাওয়ার মাঝখানে ওই আজটেক পোশাক পরা ছেলে দুটি মার্শাল নাচ শুরু করেছে অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য ৷ ওয়েটাররা আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়েছে ৷ ‘ভ্রমণ’ পত্রিকার জন্য খাবারের নামগুলি আমার দরকার জানাতে ওরা সহাস্যে এগিয়ে এল ৷ অন্য দেশের পয়সা আছে? বিলি করা হল ৷ এবার বিদায় ৷

ফেরার পথে আমরা থামলাম আবার জোকালোর উত্তরে বাসিলিকা অব আওয়ার লেডি অব গুয়াদালুপে মন্দিরে ৷ মেক্সিকোর রক্ষাকর্ত্রী দেবী, এক অগাধ দেশপ্রেম আর ধর্মীয় বিশ্বাসের মিলনের প্রতীক তিনি ৷ বিশাল প্রাঙ্গণ জুড়ে ছটি মন্দির ও গির্জা ৷ কাহিনী আছে কুমারী মা মেরি এখানে আবির্ভূতা হন ৷ ১৫৩১ সালে ৯ ডিসেম্বর ৷ এক শীতের রাতে গ্রামের ভক্ত চাষী আমেরি ইন্ডিয়ান হুয়ান দিয়েগো গির্জায় যাওয়ার পথে দর্শন পেলেন এক আশ্চর্য দেবীর যাঁর গায়ের রং বাদামি, মাথায় এক রাশ ঘন কালো চুল ৷ পাঁচবার দর্শন দিয়েছেন তিনি ৷ আর্তের ত্রাণকর্ত্রী মা মেরি আদেশ দিলেন এখানে পাহাড়ে গড়ে উঠুক এক ধর্মমন্দির ৷ দিয়েগোর কথায় কান দিলেন না ধর্মযাজকেরা ৷ তাঁদের বিশ্বাস জাগাতে দেবীর আদেশে ক্যাকটাসের বনে আশ্চর্য গোলাপ ফোটালেন দিয়েগো-গোলাপগুচ্ছ হাতে দাঁড়ালেন যাজকদের সামনে-কোথায় গোলাপ! শুধু দিয়েগোর ক্লোকের ভেতরে ফুটে উঠল কুমারী মাতার ছবি ৷ সেই ক্লোক রাখা এখন মন্দিরের বেদীতে ৷ সেখানে আছেন সেই আশ্চর্য দেবীমূর্তি যাঁর গায়ের রং ঈষৎ বাদামি, এ দেশের আদি মানুষের মতোই ৷ ১৫৩৩ সালে তৈরি পুরনো ক্যাথিড্রাল নিচে ডুবছে ধীরে ধীরে মাটির তলায় বয়ে যাওয়া জলধারার কবলে পড়ে মেক্সিকোর বহু প্রাসাদের মতো ৷ তাই ১৯৭৬ সালে এ দেশের নামকরা স্থপতি পেড্রো রামিরেজ ভাস্কেজের ডিজাইনে এই নতুন গির্জা ৷ কী আধুনিক ৷ কী বিশাল! বৈদ্যুতিক সিঁড়ি বেয়ে আমরা একেবারে প্রার্থনা মন্দিরের ভেতরে ঢুকলাম ৷ তখন চলছে প্রধান যাজকের প্রার্থনা ও গান ৷ শত শত লোক গলা মেলাচ্ছেন সেই গানে ৷ এক আশ্চর্য অনুভূতি হয় বইকি ৷ রঙিন কাচের জানলায় আঁকা নানা ধর্মীয় ছবি ৷ মার্বেলের অলঙ্কৃত সিঁড়ি উঠে গেছে দুধারে, ঐশ্বর্যের সম্ভারে সাজানো চারদিক ৷ বাইরে খোলা চত্বরে চলছে আরেক আশ্চর্য প্রার্থনা ৷ নাচছে আজটেকের বংশধর ইন্ডিয়ানরা ৷ ঢাকের আওয়াজ দ্রুত থেকে দ্রুততর, বাঁশির সুর, শঙ্খধ্বনি, ধোঁয়া উঠছে হাতের ধুনুচি থেকে, মাথায় পাখির পালক, পুঁতির মালা, রঙিন সাজে সেজে নাচছে ঝুমঝুমি বাজিয়ে গোল হয়ে পুরুষ ও মেয়েরা, এই ওদের প্রার্থনা ৷ ওই গির্জার ভেতরে যে প্রার্থনা সঙ্গীত চলছে তা কি এদের ঐতিহ্যকে ছুঁতে পারছে না, তাই বাইরের খোলা আকাশের নিচে প্রাঙ্গণে ওদের এই আশ্চর্য প্রার্থনা নাচ ও গান! একটি আমেরি-ইন্ডিয়ান মেয়ের হাতে ধুনুচি থেকে ধূপের ধোঁয়া হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে ৷ সারি দিয়ে মানুষজন দাঁড়িয়ে, ওই পবিত্র ধোঁয়ার আধিব্যাধি দূর হবে এই আশায় ৷ আমিও দাঁড়ালাম ৷ আমার হাত ধরে সে নাচের গোল আসরে নিয়ে গেল, অচেনা ভাষায় গাইছে শ্লোক, ধুনুচি ঘুরিয়ে আমাকে যেন আরতি করছে সে কোন আরোগ্য বিধানে কে জানে ৷ একটু দূরে কৃষ্ণকেশী বাদামি রঙের দেবীমূর্তি উঠোনে বেদীতে রাখা, ফুলের মালায় সাজানো ওদের মতোই দেখতে, গির্জার বেদীর দূরত্বে নয়, একেবারে ওদের বুকের কাছে ৷ একদল বিশ্বাসী হাঁটু ছেঁচড়ে গণ্ডি টেনে চলেছে বেদীর দিকে ৷ এ দেশে শতকরা নব্বই জন রোমান ক্যাথলিক ৷ ১৫১৯-২১ খ্রিস্টাব্দে বিজয়ী স্প্যানিশ বাহিনী ধ্বংস করেছিল এ দেশের তিন হাজারেরও বেশি বছরের প্রাচীন সভ্যতা, ধর্ম, বিশ্বাস, জীবন ৷ প্রোথিত হল নতুন ধর্ম ৷ জোর করে চাপানো হল পুরনো অধিবাসীদের ওপর ৷ অনেক রক্ত ঝরেছে ৷ ইতিহাস তার সাক্ষ্য রেখেছে ৷ আজকের মেক্সিকানরা স্বদেশী ও ইউরোপিয়ান রক্তে মিশে Mestizo, দুই সংস্কৃতি এক ধারায় বইছে ৷ তবু থেকে যায় ধূপের ধোঁয়ার মতো প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস, আচার বিচার ৷ Nuestra Senora de Guadalupe বাদামি রঙের কুমারী মেরি যেন দুই বিশ্বাসকে বাঁধলেন এক অচ্ছেদ্য বাঁধনে ৷ নতুন ধর্ম আর পুরনো আত্মিক বিশ্বাসের মাঝখানে এক ঐক্যের সেতুবন্ধন ৷ মিশ্রিত সমাজে তিনি ঐক্যবদ্ধ প্রতীক ৷ গোটা দেশের রক্ষাকর্ত্রী, ঘন নীল ক্লোকে আবৃত মূর্তি সর্বব্যাপিনী, তাঁর নাম ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, রাজনৈতিক ভাষণে, সাহিত্যে সবখানে উচ্চারিত ৷ দেবী দর্শন দিয়েছিলেন বলেই যেন সম্ভব হয়েছিল প্রাচীন মানুষের নতুন ধর্মকে গ্রহণ করায় ৷ এখন আমাকে ঘিরে আমেরি ইন্ডিয়ান মেয়েটি ধূপের ধোঁয়ায় গান গেয়ে যে নাচ নেচে চলেছে সে তো এ যুগের নয়, যেন কোনও প্রাচীন অতীত থেকে উৎসারিত তার মন্ত্র উচ্চারণ, যখন সবকিছুর মধ্যেই বিচ্ছুরিত হত এক আদিম ধর্মবিশ্বাস, গাছ, নদী, লতাগুল্ম, উদ্ভিদ, বাতাস, সূর্য, চাঁদ, বৃষ্টি, পশু, পাখি সবার মধ্যেই ঈশ্বরের মুখ ৷ রোদ বেশ চড়া ৷ ধূপের ধোঁয়ায় আরও গরম লাগছে ৷ চারদিকে ভিড় ৷ সব মিলিয়ে ঘোরের মধ্যে আছি মনে হচ্ছে ৷ পুরনো জগতের বিশ্বাস অবচেতনে ভেসে উঠছে, যাদু, মায়াজাল, ম্যাজিক! আমাকে ঘিরে নাচছে প্রাচীন দিনের রঙিন পোশাকে কারা! অচেনা ভাষায় মন্ত্রগান গাইছে কারা জানি না ৷ এরাই কি সেই আজটেক সময়ের ব্রুহো-ওঝা পুরোহিত! কুরান্দেরো-ওঝা চিকিৎসক! নাকাওয়ে ফসলের দেবীর মন্দিরে ভুট্টা উৎসব চলছে যেন, আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে শামুলা, চিয়াপাস টলটেক টিকালো টোটোনাকস, পিউরেপেচা, ওটোমি হুইছল, জাপোটেক আজটেক মায়া যুগের হারিয়ে যাওয়া মানুষের আত্মারা ৷ হঠাৎ থামল ঢাকের দ্রিমিদ্রিমি, বাঁশির ফুঁ, শঙ্খধ্বনি-চোখ খুলে দেখি পূজারিণীর হাত পাতা অঞ্জলির মতো আমার সামনে-পুজোর দক্ষিণা কয়েকটি পেসো নম্র হাতে দিতেও কুণ্ঠা লাগছিল ৷ ততক্ষণে আমার জায়গায় দাঁড়িয়েছে আরেক অপেক্ষমাণ ট্যুরিস্ট ৷ তাকে ঘিরে শুরু হবে বৃত্তাকারে অনুষ্ঠান ব্রতনৃত্য ৷ আমাদের ফেরার পালা ৷ নানা পসরা সাজানো দুধারে যে কোনও তীর্থস্থানের মতোই, কুমারী মাতার ছবি, জপের মালা, অশুভ আত্মা তাড়ানোর কবজ মাদুলি, জড়িবুটি, পোপ জঁ পলের চাবির রিং গলিয়ে তৈরি বিশাল মূর্তি পেরিয়ে ফিরে চলেছি চেনা জগতের দিকে ৷ সিঁড়ি ভেঙে উঠছি, গাড়ির দিকে এগবো, দূর থেকে বাঁশি আর শঙ্খধ্বনি অস্পষ্ট ভেসে এল, গির্জার চূড়া তখন বেলাশেষের সূর্যের আলো পড়ে ঝকমক করছে ৷

ভ্রমণ অক্টোবর, ২০০১

সকল অধ্যায়

১. অর্ধশতাব্দীর আগের বদ্রীনাথ যাত্রা – প্রতাপকুমার রায়
২. মানস অভয়ারণ্য – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩. জলদাপাড়া অরণ্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪. জলের ধারে ঘর – নবনীতা দেব সেন
৫. জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির – উষা সেন
৬. তাহিতি – হরপ্রসাদ মিত্র
৭. মার্কন্ডেয় গঙ্গার উত্স সন্ধানে – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮. কেদার বদ্রী – মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
৯. তেহরানি হয়রানি – অমিতাভ চৌধুরি
১০. শোনপুরের মেলায় – বরুণ দত্ত
১১. এলেম নতুন দেশে – কমলা মুখোপাধ্যায়
১২. মস্কো থেকে সাইবেরিয়া হয়ে পিকিং – গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩. পাতাল-ভুবনেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
১৪. ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ
১৫. নিকোবরের দ্বীপে – তিলকরঞ্জন বেরা
১৬. তিরতিরে নদী আর শাল জঙ্গলের দেশে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭. আমার ভ্রমণ – মহাশ্বেতা দেবী
১৮. সুন্দরবন – হীরক নন্দী
১৯. ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত
২০. সাইকেলে পাঁচ বছরে ভূ-পর্যটন – ভূপর্যটক বিমল দে
২১. আঙ্কোর ভাট – প্রীতি সান্যাল
২২. হিমালয়ের সাতকাহন – ত্রিদিব বসু
২৩. স্বপ্নের পথেই যাওয়া যায় – মহাশ্বেতা দেবী
২৪. ছোট কৈলাস – সুভাষ দত্ত
২৫. বালতাল হয়ে অমরনাথ – প্রতাপকুমার রায়
২৬. মধ্য এশিয়া অভিযান – গৌতম ঘোষ
২৭. পথ হারিয়ে সিকিমের জঙ্গলে – রতনলাল বিশ্বাস
২৮. নতুন করে পাব বলে – বন্দনা সান্যাল
২৯. সেবার ব্রেকজার্নি করে – জয়া মিত্র
৩০. চন্দ্রভাগার উৎস চন্দ্রতাল সুর্যতাল – সুনীলকুমার সরদার
৩১. ওঙ্কারেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
৩২. সুন্দরবনে দুদিন – পবিত্র সরকার
৩৩. মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়
৩৪. দিকবিদিকে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৫. তিস্তানদীর উৎসে – শরৎ ঘোষ
৩৬. পশ্চিমে হাওয়াবদল – মধুপর্ণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৭. এক টুকরো নীল চাঁদ – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৩৮. কালিম্পং থেকে তিব্বত – অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
৩৯. সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু
৪০. মির্জা শেখ ইতেসামুদ্দিনের বিলেত যাত্রা এবং আমি – নবনীতা দেব সেন
৪১. বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
৪২. গানতোক থেকে ইয়ুমথাং – সুতপা ভট্টাচার্য
৪৩. ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল
৪৪. ডুয়ার্সের দুয়ার এখন খোলা – সমরেশ মজুমদার
৪৫. ইউরোপে দিন কয়েক – পূর্ণেন্দু পত্রী
৪৬. রামচন্দ্রের বনবাসের পথ পরিক্রমা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. আসমুদ্রককেশাস – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
৪৮. নিরলংকার ভ্রমণ – শঙ্খ ঘোষ
৪৯. চেঙ্গিস খানের দেশে – প্রতাপকুমার রায়
৫০. মিজোরামের নীল পাহাড়ে – দীপঙ্কর ঘোষ
৫১. সিন্ধুদুর্গ – বিশ্বদীপ দত্ত
৫২. জিম করবেটের জঙ্গলে – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩. থর মরুভূমিতে ট্রেকিং – শিবনাথ বসু
৫৪. মরোক্কো ভ্রমণ – হরপ্রসাদ মিত্র
৫৫. ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ – নবনীতা দেব সেন
৫৬. গন্তব্য মাচুপিচু – প্রতাপকুমার রায়
৫৭. কই যাইত্যাছি জানি না – শঙ্খ ঘোষ
৫৮. পারাংলা অভিযান – সুনীলকুমার সরদার
৫৯. পুশকিন, মলদভা আর কচি পাতার বাঁশিতে মোত্সার্ট – প্রীতি সান্যাল
৬০. আমাদের ছোট নদী : পার্বতী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬১. দেবলোকের পথে পথে – অশোক চক্রবর্তী
৬২. না-ভ্রমণের বৃত্তান্ত – আশাপূর্ণা দেবী
৬৩. এভারেস্টের পাদদেশে যাত্রা – কমলা মুখোপাধ্যায়
৬৪. নীল নদে পাঁচদিন – হরপ্রসাদ মিত্র
৬৫. বারাণসীর ঘাটের কথা – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৬. বালফাক্রমের পাহাড়-জঙ্গলে – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৬৭. গৌরীগঙ্গার উৎসব মিলাম হিমবাহ – পুরুষোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৮. মরুভূমির দিনরাত্রি – পবিত্র সরকার
৬৯. ঢাকা : একুশ বছর পর – অন্নদাশঙ্কর রায়
৭০. ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
৭১. ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউ – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৭২. কালিন্দী গিরিবর্ত্ম – রথীন চক্রবর্তী
৭৩. একযাত্রায় ভোরামদেরও আর কানহা – হীরক নন্দী
৭৪. মদমহেশ্বরের ডোলিযাত্রা – কাজল দত্ত
৭৫. কেনিয়ায় পাঁচ অরণ্য – প্রতাপকুমার রায়
৭৬. কোনাডা থেকে রেভুপাল ভরম – রতনলাল বিশ্বাস
৭৭. চাঁদের দেশ লাদাখ – কমলেশ কামিলা
৭৮. বোকের তোভ, ইজরায়েল – নবনীতা দেব সেন
৭৯. বিষ্ণুপুর মুকুটমণিপুর – হরপ্রসাদ মিত্র
৮০. ডোকরিয়ানি বামক – অনিন্দ্য মজুমদার
৮১. তাওয়াং থেকে তাসি-চু জং – কমলা মুখোপাধ্যায়
৮২. মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল
৮৩. আকাশচূড়ায় অভিযান – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮৪. ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ
৮৫. সারেঙ্গেটির জঙ্গলে – হরপ্রসাদ মিত্র
৮৬. এবারের কুম্ভমেলায় – চিন্ময় চক্রবর্তী
৮৭. অন্য পথের পথিক – বুদ্ধদেব গুহ
৮৮. গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়
৮৯. নিশীথ সূর্যের দেশ – প্রতাপকুমার রায়
৯০. সবুজ নামদাফাতে – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
৯১. পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু
৯২. গোঁসাইকুণ্ড – কমলা মুখোপাধ্যায়
৯৩. অমরকন্টক – হীরক নন্দী
৯৪. আদিম ডুয়ার্সের আধুনিক রূপকথা – সূর্য ঘোষ
৯৫. পার্বতী উপত্যকায় সার পাস – বিদ্যুৎ দে
৯৬. মিয়ানমার, ইরাবতীর সঙ্গে – পবিত্র সরকার
৯৭. রূপসী রিশপ – হীরক নন্দী
৯৮. হিমবাহের জন্মভূমিতে – শেখর ভট্টাচার্য
৯৯. ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার
১০০. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত – হরপ্রসাদ মিত্র
১০১. বক্সা দুর্গ – টুটুল রায়
১০২. সিন্ধু নদের ধারে – রতনলাল বিশ্বাস
১০৩. মেঘালয়ের দাউকি – সুমিত মুখোপাধ্যায়
১০৪. আমাদের ছোট নদী : লিডার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০৫. লাসা – সমীর রায়
১০৬. ২ নম্বর লোভালোয়া স্ট্রিট – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
১০৭. অযোধ্যা পাহাড় – বিশ্বদীপ দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন