অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
তিব্বতের মূল কৈলাস ছাড়া আর যেসব কৈলাস রয়েছে তাদের অবস্থানের ব্যাপারে একটা ধারণা করা যায় তাদের পুরো নাম থেকে, যেমন মণিমহেশ কৈলাস বা কিন্নর কৈলাস ৷ ছোটা কৈলাস কিন্তু শুধুই ছোটা কৈলাস ৷ অবশ্য কোথাও কোথাও একে ‘আদি কৈলাস’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ৷
ছোটা কৈলাস সবদিক দিয়েই অনন্য, একথা যাঁরা বড় ও ছোট দুই কৈলাসই দেখেছেন তাঁরাও একবাক্যে স্বীকার করেন ৷ যদিও ছোটা কৈলাস ও মূল কৈলাস পিকের আকৃতিতে সাদৃশ্য প্রায় ৮০ শতাংশ ৷ সরোবর না থাকলেও এখানে পার্বতীকুণ্ড বলে একটি চমৎকার কুণ্ড আছে ৷ এবং সরকারি কৈলাস-মানসসরোবর যাত্রা মার্গই আপনাকে ব্যবহার করতে হবে ছোটা কৈলাস পৌঁছতে হলে ৷
দুভাবে যেতে পারেন ছোটা কৈলাস-নিজেদের উদ্যোগে অথবা কে এম ভি এন-এর ব্যবস্থাপনায় ৷ যাবার সময় জুন থেকে অক্টোবর ৷ আমরা গিয়েছিলাম ১৯৯৫-এর আগস্টে ৷ প্রতিবছর কে এম ভি এন ছোটা কৈলাসে নিয়ে যাবার জন্য কয়েকটি কন্ডাক্টেড ট্যুরের ব্যবস্থা করে ৷ এবছরের রেট ছিল সাত হাজার টাকা মাথাপিছু ৷ এ ব্যাপারে বিশদ জানতে লিখুন: Kumaon Mandal Vikass Nigam Ltd., Secretariat Building, Nainital-263 001. ভারত, চিন ও নেপাল, তিনটি দেশের সীমান্ত মিশেছে এখানে ৷ স্পর্শকাতর এলাকা ৷ অনুমতিপত্র ছাড়া প্রবেশ নিষেধ ৷ যাঁরা নিজেরা যাবেন তাঁরা অনুমতিপত্রের জন্য লিখুন পিথোরাগড়ের জেলাশাসককে, লিখতে পারেন ধারচুলায় সহকারী জেলাশাসককেও ৷ পথ ও অন্যান্য বিবরণের জন্য ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশনের দিল্লির ঠিকানায় লিখুন ৷ এছাড়া ছবি তোলার অনুমতির জন্য লিখতে পারেন মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্সে ৷ ১৯৯৬-তে নির্দিষ্ট সময়ে যেতে চাইলে এখন থেকেই লেখালেখি শুরু করা দরকার ৷ নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র ও ষোল হাজার ফুট উচ্চতায় ট্রেকিং করতে সক্ষম এরকম সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখবেন ৷
ত্রিশ জুলাই রাত নটায় যখন ধারচুলায় এসে পৌঁছলাম তখন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে ৷ ধারচুলায় বেশ কয়েকটা মাঝারি ধরনের হোটেল আছে ৷ তারই একটায় ওঠা হল ৷ একত্রিশ তারিখ সোমবার কাটল ধারচুলার এ ডি এম-এর অফিসে আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগাড় করতে ৷ পদযাত্রার জন্য অন্তত বারো দিন হাতে রাখুন ও দরকারি খাদ্যদ্রব্য, কেরোসিন ইত্যাদি অবশ্যই সংগ্রহ করুন ধারচুলা বা তার আগে থেকে ৷ পথের ছোট ছোট গ্রামগুলোতে কোনও কিছু পাবার সম্ভাবনা একেবারেই অনিশ্চিত ৷ আমরা বিশেষ কিছু পাইনি ৷ কে এম ভি এন-এর সঙ্গে যাঁরা যাবেন তাঁদের ক্ষেত্রে এসব অবশ্য প্রযোজ্য নয় ৷ তাঁদের ক্ষেত্রে এসব ব্যবস্থা ওঁরাই করবেন ৷
হাঁটাপথ শুরু হচ্ছে পাঙ্গু (উচ্চতা ৭,৩৮২ ফুট) থেকে ৷ ধারচুলা থেকে পাঙ্গু পর্যন্ত বাস চলছে তাওয়াঘাট হয়ে ৷ বাস চলাচল অবশ্য রাস্তার অবস্থার ওপর নির্ভর করে ৷ আমরা পাঙ্গু পৌঁছনোর পরদিনই তাওয়াঘাটের কাছে ধস নেমে বাস বন্ধ হয়ে যায় ৷ কে এম ভি এন-এর যাত্রীরা অবশ্য হাঁটবেন বা খচ্চরের পিঠে চাপবেন তাওয়াঘাট থেকেই ৷ পুরো পথটাতে মালবহনকারী খচ্চর ছাড়া চড়বার জন্যও খচ্চর পাবেন ৷ কে এম ভি এন-এর বেশিরভাগ যাত্রীই খচ্চরের পিঠে যান কৈলাস-মানসসরোবর যাত্রীদের মতো ৷ আমার মতে, একেবারে অসম্ভব হয়ে না পড়লে হেঁটে যাওয়াই ভালো ৷ পথের যা অবস্থা তাতে খচ্চরের পিঠে চাপলে সুবিধার থেকে অসুবিধাই বেশি ৷ তীব্র চড়াই-উতরাই পেরোতে হবে পায়ে হেঁটেই-এ সম্পর্কিত সাবধানবাণী মাঝে-মাঝেই চোখে পড়বে ৷ এক ঘণ্টার রাস্তায় কে এম ভি এন যাত্রী পাঁচবার খচ্চরে উঠছেন আর নামছেন এরকমও দেখেছি ৷ ফলে হেঁটে গেলেও প্রায় একই সময়ে পৌঁছবেন ৷
১ আগস্ট প্রবল বৃষ্টির মধ্যে পাঙ্গু পৌঁছে খচ্চর ও পোর্টার ঠিক করতেই সেই দিনটা গেল ৷ রাস্তার ওপর দিয়ে তোড়ে জল বইছে ৷ ঝরনাগুলোর চেহারাও অত্যন্ত বিপজ্জনক ৷ পাঙ্গুতে গ্রাম সমিতির একটা ঘর আছে ৷ এখানে থাকতে পারেন ৷ চলে আসার আগে ঘর পরিষ্কার করার জন্য কিছু দিতে হবে ৷ কে এম ভি এন যাত্রীরা থাকবেন কৈলাস-মানসসরোবর যাত্রা ক্যাম্পে ৷
পরদিন সকালে আবহাওয়ার যথেষ্ট উন্নতি হল ৷ খচ্চরের পিঠে মালপত্র চাপিয়ে বেরিয়ে পড়া গেল সিরখার উদ্দেশে ৷ রাস্তা মাত্র নয় কিলোমিটার ৷ লোক নির্মাণ বিভাগ, আস্কোটের এই কিলোমিটার হিসাব আগাগোড়াই পাবেন ৷ এদের হিসাব অনুযায়ী পাঙ্গু-ছোটা কৈলাস-পাঙ্গু দূরত্ব হচ্ছে মোট দুশো কিলোমিটার ৷ হাঁটার সময় মাঝে-মধ্যে অবশ্য এই হিসাবের সত্যতা সম্বন্ধে সন্দেহ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় ৷
দুভাবে যেতে পারেন সিরখায় ৷ সরাসরি অথবা তিন কিলোমিটার বেশি হেঁটে নারায়ণ আশ্রম দেখে ৷ সরাসরি সিরখা যাবার রাস্তায় যথেষ্ট চড়াই, নারায়ণ আশ্রম হয়ে গেলে অনেকটা কম ৷ আশ্রমটি দেখার মতো ৷ এই অঞ্চলে অনেক সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে এঁরা জড়িত ৷ আশ্রমের ফুলের শোভা আপনাকে মুগ্ধ করবে ৷ পরিচিতি হোন গঙ্গোত্রী মাতাজি ও অন্যান্যদের সঙ্গে ৷
নারায়ণ আশ্রম দেখে সিরখা পৌঁছতে একটু দেরি হয়ে গেল ৷ সিরখা (উচ্চতা ৮,০০০ ফুট) বেশ বড় গ্রাম ৷ থাকবার জায়গার কোনও অভাব হবে না ৷ বস্তুত পুরো রুটেই গ্রামে কোথাও না কোথাও থাকবার জায়গা পাবেন অত্যন্ত সামান্য মূল্যে ৷ একমাত্র ছোটা কৈলাস ও জোলিংকং ছাড়া ৷ এখানে কোনও গ্রাম নেই ৷ কে এম ভি এন-এর যাত্রীরা সর্বত্রই থাকবেন যাত্রা ক্যাম্পে ৷
পরদিন ৩ আগস্ট সিরখা থেকে গালার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করতেই বৃষ্টি নামল ৷ বৃষ্টির মধ্যে ১০,০০০ ফুট উঁচু রুলিং টপে পৌঁছতেই অনেক সময় লেগে গেল ৷ চারপাশে অবিকল যেন ট্রপিকাল রেন ফরেস্ট ৷ বৃষ্টি যখন হচ্ছে না তখনও টুপটাপ জল পড়েই যাচ্ছে গাছ থেকে ৷ কুমায়ুনের অন্যান্য কিছু জায়গার মতো জোঁক অবশ্য এখানে চোখে পড়ল না ৷ রুলিং টপ থেকে নামার পথে এক জায়গায় রাস্তা ভাগ হয়ে গেছে ৷ একটি রাস্তা গেছে পুল পেরিয়ে গালার দিকে ৷ আরেকটি নিচে নেমে গেছে সিমখোলার দিকে ৷ আমরা সেদিন সিমখোলাতেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম ৷ দুটি নালার মধ্যবর্তী স্থানে এই সিমখোলা ৷ আবহাওয়া ভালো থাকলে এখান থেকে স্নো-পিক দেখতে পাবেন ৷
গালা পেরিয়ে মালপায় চলে এলাম পরদিন ৷ এই রাস্তাটা একটু অন্যরকম বলা যেতে পারে ৷ অন্তত পাঁচ কিলোমিটার লম্বা ও এক থেকে দুফুট চওড়া রাস্তায় পাবেন ডানদিকে গভীর গর্জের মধ্যে নদীর কানে তালা ধরানো আওয়াজ সহ স্প্রে এবং পাবেন জল ৷ জল বইছে রাস্তার ওপর দিয়ে, নামছে পাহাড় বেয়ে-ফোঁটায় ফোঁটায় ও ঝরনার আকারে ৷ ঝরনার জল সরাসরি এসে পড়বে আপনার মাথায়, ফলে আগে থেকেই উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করুন ৷ খচ্চরের পিঠের জিনিসপত্র বাঁচানোর জন্য প্লাস্টিক শিটে যথাসাধ্য মুড়ে দিন ৷ পিচ্ছিল পথে চলার সময়ও সতর্ক থাকুন ৷ ফেরার পথে এখানে আমার একটি লেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷
৫ আগস্ট শনিবার মাত্র ৯ কিলোমিটার হেঁটে মালপা থেকে বুধি (উচ্চতা ৯,০০০ ফুট) পৌঁছতে বেশি সময় লাগল না ৷ এখান থেকে পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গ্লেসিয়ার দেখতে পাবেন ৷ পরদিন সকাল সাড়ে আটটায় বুধি ছাড়াতেই পড়ল ছিয়ালেক টপের চড়াই ৷ কষ্টকর ২ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে ১০,৯৯০ ফুট উঁচু ছিয়ালেক টপে পৌঁছতে দশটা বেজে গেল ৷ ছিয়ালেক টপ যেন এক বিস্তৃত সমতলভূমি ৷ সবুজ ঘাস আর ফুলে ঢাকা এক অপূর্ব জায়গা ৷ অজস্র ফুল ফুটে রয়েছে সর্বত্র ৷ এখানে ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ ক্যাম্পে দেখান আপনার অনুমতিপত্র ৷ এখানে আমাদের একজন সামান্য অসুস্থ বোধ করায় আমরা আর বেশি না এগিয়ে কিছুটা নেমে গারবিয়াংয়ে রাতের মতো আশ্রয় নিলাম ৷
গারবিয়াং (উচ্চতা ১০,৩৩৫ ফুট) প্রায় পরিত্যক্ত এক জনপদ ৷ ল্যান্ডস্লাইডে গ্রামের বেশিটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত ৷ অথচ চিনের তিব্বত অধিকারের আগে গ্রামটি এই অঞ্চলের এক উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল ৷ আসবার সময় যাঁরা নারায়ণ আশ্রম হয়ে আসবেন তাঁরা গঙ্গোত্রী মাতাজির মুখে গারবিয়াংয়ের পুরনো ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন ৷ সামান্য কিছু মানুষ এখনও বাস করছেন এখানে ৷ সঙ্গে তাঁবু না থাকলে এখানে থাকবার অসুবিধা হতে পারে ৷ সুতরাং সকালে যাঁরা বুধি থেকে বেরবেন তাঁরা ১৭ কিলোমিটার দূরে গুঞ্জি চলে গিয়ে সেখানেই থাকুন ৷
গারবিয়াং থেকে আমরা ৭ আগস্ট পৌঁছলাম গুঞ্জি পেরিয়ে নাভিতে ৷ গুঞ্জি (উচ্চতা ১১,৪৮৩ ফুট) বেশ বড় জায়গা ৷ এখান থেকেই আলাদা হচ্ছে বড় ও ছোট কৈলাসের পথ ৷ কৈলাস-মানসসরোবর যাত্রীরা যাচ্ছে নাভিডাং হয়ে লিপুলেখ পাসের দিকে আর ছোটা কৈলাস যাত্রীরা এই রুটেই শেষ গ্রাম কুটির দিকে ৷ গুঞ্জিতে আবার আপনাকে অনুমতিপত্র দেখাতে হবে ৷ যদি নাভিডাং যাবার অনুমতি জোগাড় করতে পারেন তাহলে ফেরার পথে সেখান থেকে ওঁ পর্বত দেখতে পারেন ৷
গুঞ্জি থেকে আরও ১৭ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে চলুন কুটিতে ৷ ৮ আগস্ট আমরা কুটির উদ্দেশে রওনা হতেই শুরু হল বৃষ্টি ৷ একনাগাড়ে প্রায় সমস্ত দিন চলল ৷ বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে গড়িয়ে পড়ছে ছোট-বড় পাথর ৷ দুপুরের একটু পরে আই টি বি পি-র তিনজন কর্মীর সঙ্গে দেখা হল, গুঞ্জিতে যাচ্ছেন ওঁরা ৷ ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ বলে সম্ভাষণ বিনিময়ের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একজনের মাথায় মাঝারি এক টুকরো পাথর গড়িয়ে পড়ল ও তিনি তখনই ঘটনাস্থলে মারা গেলেন ৷ বাকি দুজন মৃতদেহের দিকে দ্বিতীয়বার দৃষ্টিপাত না করেই ছুটতে শুরু করলেন ৷ একেবারে মুখোমুখি এই ঘটনা ঘটায় আমাদের একজন অসুস্থও হয়ে পড়লেন ৷ কুটি পৌঁছে আমরাই এই খবর জানাই ৷ পরে জানতে পেরেছি মৃত ব্যক্তি লখনউয়ের বাসিন্দা ছিলেন ও ওয়ারলেস অপারেটরের কাজ করতেন ৷
কুটির অবস্থান এই অঞ্চলের অন্যান্য গ্রামের চেয়ে একেবারে অন্যরকম ৷ তুষারশৃঙ্গ দিয়ে ঘেরা এক সুদৃশ্য উপত্যকায় কুটি ৷ উচ্চতা ১২,০০০ ফুট ৷ এটিই এই রুটের শেষ গ্রাম ৷ এখান থেকে দেখুন কুন্তী পর্বত ও অন্যান্য শৃঙ্গ ৷ দেখুন ‘পাণ্ডবদের’ খণ্ডহর ৷ দেখুন তিব্বতে যাবার প্রাচীন পথ ৷ পরিচিত হোন স্থানীয় মানুষ ও সংস্কৃতির সঙ্গে ৷ গ্রামে ঢোকবার ২ কিলোমিটার আগেই দেখবেন ‘ওয়েলকাম টু কুটি’ লেখা সুসজ্জিত তোরণ ৷ আশ্রয় নিন শান্তি কুটিয়াল বা শান্তি কাকির পরিচালিত অতিথিশালায় ৷ কুটি থেকে আরও এগিয়ে যেতে হলে এই শান্তি কাকির সইয়ের দরকার হবে আপনার ৷ এবং অবশ্যই যোগাযোগ করুন আই টি বি পি-র সুবেদার শ্রীবিজয় সিং যাদবের সঙ্গে ৷ এরকম সহৃদয় ও পরোপকারী মানুষ বিরল ৷ অবশ্য সর্বত্রই আই টি বি পি-র লোকেরা আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করেছেন ৷ শ্রীযাদব আমাদের বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন ৷ আমাদের দলের সবার জন্য পর্যাপ্ত টেন্ট না থাকায় ওঁর পরামর্শে আমরা ৯ আগস্ট কুটিতেই থেকে গেলাম ৷ উনি জোলিংকংয়ে আই টি বি পি-র একটি স্থায়ী টেন্ট পরদিন আমাদের জন্য ব্যবস্থা করে দেবেন ৷
১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার ষোল কিলোমিটার কষ্টকর চড়াই ও উতরাই পেরিয়ে পৌঁছনো গেল জোলিংকংয়ে ৷ কুটির কাছে একটি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় চার কিলোমিটার রাস্তা বাড়তি হাঁটতে হল ৷ পি ডাব্লু ডি-র তাঁবু দুজায়গায় চোখে পড়লেও ব্রিজ সারাবার কোনও উদ্যোগ দেখতে পেলাম না ৷ জোলিংকংয়ের উচ্চতা ১৫,০০০ ফুট ৷ আই টি বি পি এবং কে এম ভি এন ক্যাম্প ছাড়া জনবসতি নেই ৷ এখানে পানীয় জলের অভাব আছে ৷ গ্লেসিয়ার গলে আসা জল পানের উপযুক্ত নয় ৷ একটিমাত্র পানীয় জলের উৎস রয়েছে আই টি বি পি ক্যাম্প থেকে অনেকটা নিচে ৷ আই টি বি পি-র লোকেরা নানাভাবে সাহায্য করলেন আমাদের ৷ একটি অ্যালুমিনিয়াম টেন্ট পরিষ্কার করে দিলেন আমাদের রাত্রিবাসের জন্য ৷ ক্যাম্প থেকে চা করে নিয়ে এসে খাইয়ে গেলেন ৷ শুকনো পেঁয়াজ ও রাজমাও পাওয়া গেল ওঁদের থেকে ৷ বিনিময়ে চেয়েছেন শুধু ছবি তোলার জন্য নেগেটিভ ফিল্ম, ন্যায্য মূল্যেই-যা ওঁদের কাছে একেবারেই দুষ্প্রাপ্য ৷
মেঘ না থাকলে মনে হবে যেন জোলিংকং থেকেই ছুঁতে পারছেন ছোটা কৈলাসকে ৷ সত্যি সত্যি ছোঁয়ার জন্য পরদিন সকালে তিন কিলোমিটার হেঁটে আরও কাছে চলুন ৷ পরিক্রমাও করতে পারেন ৷ এরপর চলুন পার্বতীকুণ্ডে ৷ জোলিংকং থেকে তিন কিলোমিটার দূরে এই কুণ্ড ৷ নামে কুণ্ড হলেও আকার মাঝারি ধরনের ৷ উচ্চতা নিয়ে মতভেদ আছে-আমার সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী ১৫,৫৬০ ফুট ৷ আশপাশের শৃঙ্গগুলির, বিশেষ করে ছোটা কৈলাসের প্রতিফলন দেখতে পারেন ৷ আই টি বি পি-র লোকেরা ছোট একটা মন্দির করেছেন কুণ্ডের একপাশে, একজন পূজারীও আছেন ৷
সব দেখা দুপুরের আগেই শেষ করতে পারলে ফিরতে পারেন কুটিতে ৷ অথবা আরেক রাত জোলিংকংয়ে থেকে পরদিন সকালে ফিরুন ৷
পিথোরাগড়ের জেলাশাসক প্রতিবছর খচ্চর ও পোর্টারের রেট ঠিক করে দেন-এব্যাপারে ধারচুলায় খোঁজ নিন ৷ জ্বালানি হিসাবে কেরোসিন ব্যবহার করাই শ্রেয় ৷ ডালপালা নিজেরা জোগাড় করতে পারলে ভালো ৷ গ্রাম থেকে কিনতে চাইলে চড়া দাম দিতে হতে পারে ৷ দরকারি ওষুধপত্র সঙ্গে রাখুন, কোনও গ্রামেই চিকিৎসার ন্যূনতম সুযোগও পাবেন না ৷ বিশেষ প্রয়োজনে আই টি বি পি কিংবা কে এম ভি এন ক্যাম্পে যোগাযোগ করতে পারেন ৷ পথে মাঝে মধ্যে চায়ের দোকানে চাবিটা ছাড়া তৈরি ম্যাগি নুডলস পাবেন দশ টাকায় ৷ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর বৃষ্টি পাবেন স্বাভাবিকভাবেই, সেইসঙ্গে ধস ৷ তবে রাস্তা সারাবার কাজ চলছে সবসময়ই ৷ চেষ্টা করুন সকাল ছটায় বেরিয়ে দুপুরের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে যাবার ৷ জুলাই-আগস্টে খুব বেশি শীতের পোশাকের দরকার হবে না ৷ রাস্তায় বরফও থাকে না এ সময়ে ৷
ভ্রমণ জানুয়ারি, ১৯৯৬
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন