ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

বিশাল নদীর এক কোল ঘেঁসে দক্ষিণ মুখে চলেছি ৷ আমাদের ডাইনে ঘোলা জল ধু-ধু করছে, তার শেষ সীমায় শিরশির করে কাঁপছে দিগন্তরেখা ৷ বাঁয়ে পঞ্চাশ মিটারের মধ্যে বেলাভূমি ৷ প্রায় জলের ভেতর থেকে মাথা তুলেছে হেঁতাল, গোলপাতা, গরান, কেওড়া ও সুঁদরিগাছের দুষ্প্রবেশ্য জঙ্গল ৷ স্থান বাংলাদেশ, খুলনা জেলার দক্ষিণাংশ ৷ কাল গত বছর অষ্টমীপুজোর দিন, বেলা আন্দাজ দেড়টা ৷ খুলনা শহর ছেড়ে বেরিয়েছে বেলা দশটায়, ঘণ্টা দেড়েকে পৌঁছেছি মঙ্গলা বা মংলা বন্দরে-সেখান থেকে লঞ্চে ৷ আমাদের উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চল ঘুরে দেখা ৷

সুন্দরবন আমার প্রিয় জায়গা, সুযোগ পেলেই একবার ঘুরে আসি ৷ কিন্তু তার সত্যিকার আরণ্যক চেহারাটা যে কীরকম, এইদিককার জঙ্গল না দেখলে সেটা অপরিচিতই থেকে যেত ৷ প্রথম, যে সুন্দরী বা সুঁদরিগাছ থেকে সুন্দরবনের নাম সে গাছ পশ্চিমবঙ্গে নেই-ই বলা চলে ৷ কোনও-কোনও সুদূর বনদপ্তরের আঙিনায় আদর করে এক-আধটা গাছ লাগানো থাকতে দেখেছি ৷ আর এখানে মাইলের পর মাইল শুধুই সুঁদরিগাছ ৷ আর বন এত ঘন, এত বিশাল! পশ্চিমবাংলার সুন্দরবনে তিরিশ ফুটের চেয়ে বড় গাছ চোখে পড়ে না-তাই দেখে দেখে আমার ধারণা ছিল ম্যানগ্রোভ ফরেস্টে গাছের উচ্চতাই বুঝি এই ৷ এখানে দেখি কেওড়া, গরান ও সুঁদরিগাছ ঠেলে উঠেছে পঞ্চাশ-ষাট ফুট, আর কী স্বাস্থ্য সেসব গাছের! গোলপাতাও আরেকটি গাছ যা পশ্চিমবঙ্গে দুষ্প্রাপ্য ৷ প্রায় অবিকল নারকেল চারার মতো চেহারা, পাতাও তাই-এর নাম কেন গোলপাতা হল বোঝা দুষ্কর ৷

যে অরণ্য আমাদের পাশ দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বয়ে চলেছে তা চব্বিশ পরগনার সুন্দরবনের মতো মাঝে মাঝে গ্রামের দ্বারা বিভাজিত নয় ৷

অনেক রাতে জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে দশদিগন্ত, লঞ্চের ছাদে বসে সামনের অন্ধকার বনভূমির দিকে তাকিয়ে আছি ৷ লঞ্চ বাঁধা আছে কটকা বনদপ্তরের ঘাটে ৷ খুলনা জেলার দক্ষিণতম বিন্দু এটা ৷ দক্ষিণে দেখা যাচ্ছে বঙ্গোপসাগর, দুই কিলোমিটারের মধ্যে ৷ কোনওদিকে পঞ্চাশ কিলোমিটারের মধ্যে লোকালয় নেই, নিশ্ছিদ্র আদিম বনভূমি, কেবলমাত্র নদীজলের দ্বারা দ্বীপ থেকে দ্বীপ বিচ্ছিন্ন ৷ কেওড়ার ফল অবিরল খসে পড়ছে জলে ৷ এ কেওড়া কিন্তু যার থেকে সুগন্ধী তৈরি হয় সেই কবিপ্রসিদ্ধ কেয়া বা কেতকী নয়, গোপালপুর যাবার পথের দুপাশে যার ঘন বন চোখে পড়ে ৷ এ সুন্দরবনের কেওড়া, দেখতে অনেকটা অর্জুনগাছের মতো ৷ জোয়ারের জলে রাশি রাশি কেওড়া ফল তীরে উঠে আসে-জোয়ার নেমে যায়, ফলগুলি তীরে উঠে আসে-দলে দলে চিতল হরিণ কেওড়া ফল খেতে বেলাভূমিতে নেমে আসে ৷ বনের তলায় ঘন অন্ধকারে যেখানেই টর্চ ফেলি শত শত হরিণচোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে ৷ জেটি থেকে বনবিশ্রামগৃহের দূরত্ব একটা বাসস্টপের চেয়ে বেশি নয় ৷ কিন্তু সন্ধ্যার পর এই পথটুকু একা অতিক্রম করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, বনরক্ষীরাও যেতে চায় না ৷ কারণ হরিণের দলের পিছনে, নিয়তির মতো বাঘ থাকবেই ৷

সুন্দরবনের বাঘ সম্পর্কে সাধারণভাবে একটা ধারণা আছে যে, এখানকার সব বাঘই বুঝি মানুষখেকো ৷ কথাটা আংশিকমাত্র সত্য ৷ বাঘের মানুষখেকো হবার যেসব স্বাভাবিক কারণ-বুড়ো হওয়া, আহত হওয়া ইত্যাদি, তাছাড়া সুন্দরবনে আরও কতগুলি কারণ বর্তমান ৷ এখানে দীর্ঘদিন, হয়তো আট-দশ শতাব্দী ধরে মানুষ আর বাঘ পাশাপাশি বাস করছে, ফলে মানুষ এখানে বাঘের কাছে অচেনা প্রাণী নয় ৷ বাঘের স্বাভাবিক খাদ্য হরিণ ও শুয়োর মানুষে মারতে মারতে প্রায় নিঃশেষ করে এনেছে বহু জায়গায়, বিশেষত এ বঙ্গে ৷ আমি নিজেই একবার বনলগ্ন কুমিরমারি নামক গঞ্জে ‘মাংস-ভাত পাওয়া যায়’ বিজ্ঞাপন দেখে হোটেলে ঢুকে হরিণের মাংস পেয়েছিলাম ৷ এই কারণে, এবং বনের মধ্যে কাঠ কাটা, মধু সংগ্রহ বা মাছ ধরার কাজে নিঃসঙ্গ মানুষ দুর্লভ নয় বলে সুন্দরবনের বহু এলাকায় বাঘ অভাবে পড়ে মানুষ মারতে অভ্যস্ত ৷ মায়ের কাছ থেকেই শাবকরাও শিখে যায় ৷ কিন্তু এই অঞ্চলে বাঘের স্বাভাবিক খাদ্য হরিণের এমন প্রাচুর্য এবং মানুষ এত বিরল যে এখানে বাঘে মানুষ মারার ঘটনা খুব একটা শোনা যায় না ৷ পশ্চিমবাংলায় চামটা, ঝড়খালি, সজনেখালি, কলস ইত্যাদি অঞ্চলে একদিনমাত্র ঘুরলেও এ দৃশ্যটা আপনার চোখে পড়বেই-নির্জন নদীতীরে একটি গাছের ডাল মাটিতে পোঁতা, তার থেকে একফালি ছেঁড়া কাপড় ঝুলছে ৷ বাঘে কোথাও মানুষ নিলে তার সঙ্গীরা সেখানে এই চিহ্নটি রেখে যায়, যাতে পরবর্তী পথিক সাবধান হতে পারে ৷ প্রথাটি উভয়বঙ্গের সুন্দরবনেই প্রচলিত, কিন্তু কটকা অঞ্চলে তিন-চারদিন বহু মাইল ভ্রমণ করেও চিহ্নটি চোখে পড়েনি ৷ তবু অবশ্য সাবধান থাকতেই হয় ৷

পরদিন ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিঙিতে করে বেরনো গেল-উদ্দেশ্য, জঙ্গলকে ক্লোজ-আপে দেখা ৷ বড় নদী থেকে ছোট নদী, ছোট নদী থেকে খাঁড়ি-এত সরু যে হাত বাড়ালে পাড়ের গাছ স্পর্শ করা যায় ৷ কথাবার্তা বন্ধ, ধূমপান বারণ, মাঝি এত আস্তে বৈঠা ফেলছে যাতে জলে কোনও শব্দ না ওঠে ৷ নিঝুম বিশাল আদিম অরণ্যের পেটের ভেতরে ঢুকে এসেছি আমরা-যে অরণ্য জুরাসিক যুগে যা ছিল এখনও তাই আছে ৷ জলের কিনারায় লক্ষ লক্ষ ফিডলার ক্র্যাব ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ আরশোলার চেয়ে সামান্য বড় লালচে রঙের কাঁকড়া, তার একটিমাত্র দাঁড়া ৷ নৌকা বাঁক নিতে প্রায় পায়ের তলা থেকে দুটি অদ্ভুত ধরনের মাছরাঙা উড়ল-সাদার ওপর কালো বুটি, ড্যালমেনিয়ান কুকুরের মতো ৷

জানা গেল, এ জঙ্গলে মাছরাঙাই আছে ন-রকম ৷ মাছরাঙা, বক, সারস, কাদাখোঁচা, মেছো শঙ্খচিল-জলনির্ভর পাখিদের অজস্র প্রজাতি এই সুন্দরবনের, এই বন বার্ড ওয়াচারের স্বর্গ বললে বাড়িয়ে বলা হয় না ৷

আরেকটা বাঁক ঘুরেই চমকে উঠি ৷ জলের ধারে দাঁড়িয়ে কী পাখি-ওটা? মাটি থেকে মাথা পর্যন্ত খাড়াই অন্তত পাঁচ ফুট ৷ দীর্ঘপক্ষ বিশাল পাখি, পিঠটা ঘন কালচে, পেটের দিকটা উজ্জ্বল বাদামি ৷ ওজন শুনলাম পনেরো কেজিরও বেশি ৷ অ্যাডজটেন্ট স্টর্ক, স্থানীয় নাম মদনটাক ৷ আমাদের দেখে কর্কশ কাঁরররর-শব্দে বিরক্ত জানিয়ে উড়াল দিল ৷

ফেরার পথে ওয়াচ টাওয়ার দেখতে নামলাম-এখানে আজ আমরা কয়েকজন রাত্রিবাস করব ৷ কাঠের তৈরি ছোট্ট একটি খেলনার মতো জেটিতে নৌকা লাগিয়ে আমরা তীরে উঠি ৷ জেটি থেকে শখানেক মিটার দূরে চারতলা সমান উঁচু কাঠের ওয়াচ টাওয়ার ৷ ঘুরে-ঘুরে সিঁড়ি উঠে গেছে ৷ ওপরে আন্দাজ সাত ফুট ব্যাসের গোলাকৃতি জলটুঙ্গি, মাথায় কাঠের ছাদ, চারদিকে খোলা ৷ টাওয়ারের তিনদিকে ঘন বন, একটা দিক মাঠের মতো খোলা ৷ দূরে দূরে হরিণ চরছে দল বেঁধে ৷ জলের সীমানায় একটি দুটি হরিণ কিন্তু চরছে না, স্থির দাঁড়িয়ে গলা উঁচু করে এদিক ওদিক দেখছে, কানদুটি বায়ুমোরগের মতো ঘুরছে ৷ সামান্যতম বিপদের আভাস পেলেই ঠককর-ঠককর করে বিপদসঙ্কেত জানাবে-অ্যালার্ম কল ৷ আর মুহূর্তের মধ্যে হয়তো পঞ্চাশটি হরিণের একটি দল স্রেফ হালকা হাওয়ায় উবে যাবে ৷ নিচে নেমে দেখি গত রাতে যে নাটক এখানে অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে তার চিহ্ন পড়ে আছে বালির ওপর তখনও ৷ দ্রুতগতি হরিণের পদচিহ্ন-দ্রুতগতি, কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রে চারটি করে খুরের ছাপ একসঙ্গে পড়েছে, গ্যালপ করলে যেমন হয়, সামনের দিকটা গভীর পিছনদিকটা হালকা ৷ বালি পেরিয়ে পাশের হাঁটুসমান কুশবনে ঢুকে গেছে ৷ আর তার ওপরেই পড়েছে বাঘের পায়ের ছাপ-তেমনই সামনের দিকটা গভীর, পিছনদিকটা হালকা ৷ কুশবন ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে, শুধু যেখান দিয়ে পায়ের ছাপগুলো ঢুকেছে সেখানটা লণ্ডভণ্ড ৷

দুপুরে সমুদ্রে স্নান হল নতুন-জাগা দ্বীপ এগ আইল্যান্ডের পাশে লঞ্চ লাগিয়ে ৷ জেলে নৌকা থেকে কেনা সদ্যধরা ইলিশ মাছে ভুরিভোজ হল-কিনতে তার দাম পড়েছিল ভারতীয় মুদ্রায় ১২ টাকা কিলো ৷ অবশ্য সত্যের খাতিরে বলা দরকার এই মূল্যমান সুন্দরবনের সেই প্রত্যন্ত প্রদেশে যত সত্য, ঢাকায় এমনকী খুলনায়ও তত সত্য নয় ৷ সন্ধ্যার একটু পরে আমরা চার-পাঁচজন গিয়ে ওয়াচ টাওয়ারে উঠলাম ৷

রাত বাড়ল, মাথার ওপর মহানবমীর চাঁদ ৷ সে অনুভূতি বর্ণনা করা যায় না ৷ একটা সত্যিকার আদিম জঙ্গল, যেখানে মানুষের পায়ের চিহ্ন কদাচিৎ পড়ে এমন একটা জায়গায় বসে আছি-দুর্গমতায়, নির্জনতায় ও ভয়াবহতায় কঙ্গোর জঙ্গলের সঙ্গে যার বিশেষ পার্থক্য নেই ৷ রাতচরা হট্টিটি পাখি ডাকছে মাঝে মাঝে ৷ এই একটা পাখি যার ডাক ছোটবেলা থেকে শুনছি কিন্তু পাখিটা কখনও দেখিনি ৷ কোটি কোটি ঝিঁঝির ডাক ৷ যিনি জঙ্গলে কখনও রাতে কাটাননি তাঁকে বোঝানো যাবে না একটা গভীর ট্রপিক্যাল অরণ্য মধ্যরাত্রে কেমন একইসঙ্গে নিঃশব্দ ও শব্দময় হতে পারে ৷ মাঝে মাঝে বহু দূর থেকে চিতলের অ্যালার্ম কল ভেসে আসে, ঠককঃ-ঠককঃ-৷ কাচের মতো স্বচ্ছ বাতাস, জ্যোৎস্নায় মায়াময় বনভূমি রুসোর ছবির মতো অপ্রাকৃত, অর্ধসত্য ৷

রাত প্রায় একটা ৷ শিশির পড়ে স্লিপিং ব্যাগ ভিজে গেছে ৷ আমরা ফিসফিস করে আলোচনা করছি, বইয়ে পড়া গেছে কাছাকাছি বাঘ বেরলে নাকি ঝিঁঝির ডাক থেমে যায়, কখনও পরীক্ষা করবার সুযোগ হয়নি-এমন সময় একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল ৷ যেন মন্ত্রবলে এক কোটি ঝিঁঝি হঠাৎ একসঙ্গে চুপ করে গেল ৷

খানিকক্ষণ আমরা হতবাক হয়ে বসে রইলাম ৷ তারপর নিঃশব্দে উঠে দাঁড়িয়ে জঙ্গলের দিকে হান্টিং টর্চটা ফেলা হল ৷ কিছু নেই ৷ টর্চের আলোকবৃত্ত বাঁদিক থেকে ডানদিকে ঘনসংবদ্ধ বৃক্ষরাশির তলা দিয়ে সরে সরে যাচ্ছে-প্রায় নব্বই ডিগ্রি ঘুরল, সামনে জেটি, তারপর আরও প্রায় নব্বই ডিগ্রি খোলা মাঠ-তারপর আবার জঙ্গল আরম্ভ হয়েছে ৷

জেটির দিকে যাবার সোজা শুঁড়িপথটার ওপর আলো পড়ল ৷ ফুটবল মাঠের সাইডলাইন থেকে সেন্টার যতটা দূরে, ততটা দূরে একটা বৃহৎ জানোয়ার দ্রুতগতিতে বেরিয়ে এল বাঁদিকের জঙ্গল থেকে ৷ চলন থেকে বোঝা গেল প্রাণীটি তৃণভোজী নয় ৷ তৃণভোজী প্রাণীর একেক দিকের সামনের ও পিছনের পা একসঙ্গে পড়ে, মাংসাশী প্রাণীর পড়ে বাঁদিকের সামনের পায়ের সঙ্গে ডানদিকের পিছনের পা ৷ চলনভঙ্গির পার্থক্যটা এতই স্পষ্ট যে অন্ধকারেও বোঝা যায় ৷ দ্রুত এগিয়ে আন্দাজ ত্রিশ মিটার ফাঁকা জমি পার হয়ে সে একটা ঝোপের আড়ালে চলে গেল ৷ তাকে আমরা দেখতে পেয়েছিলাম দেড় সেকেন্ড-দু সেকেন্ডের বেশি কিছুতেই নয় ৷ গায়ের ডোরা বুঝতে পারিনি, কিন্তু সুন্দরবনে মাংসাশী প্রাণী বলতে ওই একটিই আছে ৷

আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি ৷ সত্যি কি আমি সুন্দরবনে বাঘ দেখলাম? কারণ এটা যে কত বড় ব্যাপার তা সুন্দরবনের অভিজ্ঞতা যার নেই তাকে বোঝানো যাবে না ৷ সুন্দরবনের বাঘকে যে দেখে, সাধারণত ফিরে এসে গল্পটা বলার সুযোগ তার হয় না ৷ পৃথিবীর সবচেয়ে ধূর্ত, সবচেয়ে নিঃশব্দ, সবচেয়ে বিদ্যুৎচারী বাঘ হল সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল ৷

তাকেই কি দেখলাম সেদিন? সে ছাড়া আর কী হতে পারে? পাঁচ জোড়া চোখ তো আর একসঙ্গে ভুল করতে পারে না? সর্বোপরি, সেই ঝিঁঝির ডাক?

প্রায় কুড়ি মিনিট পরে ঝিঁঝির ডাক আবার আরম্ভ হল ৷

পরদিন বিজয়া দশমী ৷ সেদিন সন্ধ্যায় কটকা বনদপ্তরের জেটির ওপর আমাদের বিজয়াসম্মিলনী হল ৷ নির্মেঘ আকাশে সন্ধ্যা থেকে জ্বলছে বাঘের মুড়োর মতো চাঁদ ৷ আমরা বারো-চোদ্দজন স্ত্রী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান, কিশোর-যুবক ও তত-যুবক-নয় মানুষের সমাবেশ ৷ তাদের কেউ ফরেস্ট গার্ড, কেউ লঞ্চের সারেং, কেউ কেরানি, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বা দূরদর্শনের কারিগর ৷ লঞ্চের বিজলিবাতি নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ পঞ্চাশ মাইলের মধ্যে কোনওদিকে কোনও মানুষ নেই আর বনের সীমানায় জ্বলজ্বল করছে চিতল হরিণের চোখ ৷

মাঝে মাঝে গান, গান থামলে হাসি ও কলরব ৷ এর মধ্যে সেই জ্যোৎস্নালোকে নৈশাহার পরিবেশিত হল, লঞ্চের মাঝিরাও এসে আহার গ্রহণ করল আমাদের সঙ্গে ৷ এমন বিজয়াসম্মিলনী আর কখনও অনুষ্ঠিত হয়েছে কি?

পরদিন ফেরা ৷ ফেরার পথে বিকেলে চাঁদপাই বলে একটা ছোট্ট গ্রামে লঞ্চ থামল তেল নিতে-খুদে একটি তেলের ডিপো আছে সেখানে ৷ ধান খেতের মাঝে মাঝে কয়েকটি করে কুঁড়েঘর ৷

পরদিন সন্ধেবেলা ফিরে এলাম চিরকালের চেনালোকের কলকাতায় ৷ এসে দেখলাম কলকাতা আছে কলকাতাতেই ৷

যাবার উপায়

বাংলাদেশ বেড়াতে যাওয়া কিছু কঠিন নয় ৷ পাসপোর্ট লাগবে-ঠিকমতো ফর্ম ভরে আবেদনপত্র জমা দিলে সাধারণত মাস দুইয়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রি ডাকে পাসপোর্ট পাঠিয়ে দেন ৷ তারপর ভিসা, অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ৷ দৈনিক পাঁচ ডলার (প্রায় ১৬০ টাকা) খরচ করতে পারবেন এমন প্রমাণপত্র দেখালে ভিসা পাওয়া যায় ৷ ডলার কিনতে পারবেন অনুমোদিত ডিলার বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ৷ বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনে সকালে ভিসার আবেদনপত্র জমা দিলে সাধারণত সেদিনই বিকেলে ভিসা পাওয়া যায় ৷

হাসন মনসুরের ভ্রমণসংস্থা দি গাইড ট্যুরস বাংলাদেশে নানা ধরনের সফরের আয়োজন করে থাকেন ৷ বিশদ জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলে সানন্দে সহযোগিতা করবেন ৷ একা যাওয়ার চাইতে কয়েকজন মিলে গেলে খরচ অনেক কম পড়ে ৷ এবং খরচে পোষালে ওঁরা পর্যটকদের চাহিদামতো যে-কোনও ধরনের ভ্রমণসূচি তৈরি করে তাকে সার্থক করিয়ে দেবার দায়িত্ব নিয়ে থাকেন ৷

ভ্রমণ এপ্রিল, ১৯৯৪

সকল অধ্যায়

১. অর্ধশতাব্দীর আগের বদ্রীনাথ যাত্রা – প্রতাপকুমার রায়
২. মানস অভয়ারণ্য – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩. জলদাপাড়া অরণ্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪. জলের ধারে ঘর – নবনীতা দেব সেন
৫. জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির – উষা সেন
৬. তাহিতি – হরপ্রসাদ মিত্র
৭. মার্কন্ডেয় গঙ্গার উত্স সন্ধানে – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮. কেদার বদ্রী – মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
৯. তেহরানি হয়রানি – অমিতাভ চৌধুরি
১০. শোনপুরের মেলায় – বরুণ দত্ত
১১. এলেম নতুন দেশে – কমলা মুখোপাধ্যায়
১২. মস্কো থেকে সাইবেরিয়া হয়ে পিকিং – গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩. পাতাল-ভুবনেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
১৪. ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ
১৫. নিকোবরের দ্বীপে – তিলকরঞ্জন বেরা
১৬. তিরতিরে নদী আর শাল জঙ্গলের দেশে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭. আমার ভ্রমণ – মহাশ্বেতা দেবী
১৮. সুন্দরবন – হীরক নন্দী
১৯. ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত
২০. সাইকেলে পাঁচ বছরে ভূ-পর্যটন – ভূপর্যটক বিমল দে
২১. আঙ্কোর ভাট – প্রীতি সান্যাল
২২. হিমালয়ের সাতকাহন – ত্রিদিব বসু
২৩. স্বপ্নের পথেই যাওয়া যায় – মহাশ্বেতা দেবী
২৪. ছোট কৈলাস – সুভাষ দত্ত
২৫. বালতাল হয়ে অমরনাথ – প্রতাপকুমার রায়
২৬. মধ্য এশিয়া অভিযান – গৌতম ঘোষ
২৭. পথ হারিয়ে সিকিমের জঙ্গলে – রতনলাল বিশ্বাস
২৮. নতুন করে পাব বলে – বন্দনা সান্যাল
২৯. সেবার ব্রেকজার্নি করে – জয়া মিত্র
৩০. চন্দ্রভাগার উৎস চন্দ্রতাল সুর্যতাল – সুনীলকুমার সরদার
৩১. ওঙ্কারেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
৩২. সুন্দরবনে দুদিন – পবিত্র সরকার
৩৩. মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়
৩৪. দিকবিদিকে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৫. তিস্তানদীর উৎসে – শরৎ ঘোষ
৩৬. পশ্চিমে হাওয়াবদল – মধুপর্ণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৭. এক টুকরো নীল চাঁদ – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৩৮. কালিম্পং থেকে তিব্বত – অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
৩৯. সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু
৪০. মির্জা শেখ ইতেসামুদ্দিনের বিলেত যাত্রা এবং আমি – নবনীতা দেব সেন
৪১. বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
৪২. গানতোক থেকে ইয়ুমথাং – সুতপা ভট্টাচার্য
৪৩. ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল
৪৪. ডুয়ার্সের দুয়ার এখন খোলা – সমরেশ মজুমদার
৪৫. ইউরোপে দিন কয়েক – পূর্ণেন্দু পত্রী
৪৬. রামচন্দ্রের বনবাসের পথ পরিক্রমা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. আসমুদ্রককেশাস – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
৪৮. নিরলংকার ভ্রমণ – শঙ্খ ঘোষ
৪৯. চেঙ্গিস খানের দেশে – প্রতাপকুমার রায়
৫০. মিজোরামের নীল পাহাড়ে – দীপঙ্কর ঘোষ
৫১. সিন্ধুদুর্গ – বিশ্বদীপ দত্ত
৫২. জিম করবেটের জঙ্গলে – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩. থর মরুভূমিতে ট্রেকিং – শিবনাথ বসু
৫৪. মরোক্কো ভ্রমণ – হরপ্রসাদ মিত্র
৫৫. ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ – নবনীতা দেব সেন
৫৬. গন্তব্য মাচুপিচু – প্রতাপকুমার রায়
৫৭. কই যাইত্যাছি জানি না – শঙ্খ ঘোষ
৫৮. পারাংলা অভিযান – সুনীলকুমার সরদার
৫৯. পুশকিন, মলদভা আর কচি পাতার বাঁশিতে মোত্সার্ট – প্রীতি সান্যাল
৬০. আমাদের ছোট নদী : পার্বতী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬১. দেবলোকের পথে পথে – অশোক চক্রবর্তী
৬২. না-ভ্রমণের বৃত্তান্ত – আশাপূর্ণা দেবী
৬৩. এভারেস্টের পাদদেশে যাত্রা – কমলা মুখোপাধ্যায়
৬৪. নীল নদে পাঁচদিন – হরপ্রসাদ মিত্র
৬৫. বারাণসীর ঘাটের কথা – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৬. বালফাক্রমের পাহাড়-জঙ্গলে – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৬৭. গৌরীগঙ্গার উৎসব মিলাম হিমবাহ – পুরুষোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৮. মরুভূমির দিনরাত্রি – পবিত্র সরকার
৬৯. ঢাকা : একুশ বছর পর – অন্নদাশঙ্কর রায়
৭০. ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
৭১. ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউ – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৭২. কালিন্দী গিরিবর্ত্ম – রথীন চক্রবর্তী
৭৩. একযাত্রায় ভোরামদেরও আর কানহা – হীরক নন্দী
৭৪. মদমহেশ্বরের ডোলিযাত্রা – কাজল দত্ত
৭৫. কেনিয়ায় পাঁচ অরণ্য – প্রতাপকুমার রায়
৭৬. কোনাডা থেকে রেভুপাল ভরম – রতনলাল বিশ্বাস
৭৭. চাঁদের দেশ লাদাখ – কমলেশ কামিলা
৭৮. বোকের তোভ, ইজরায়েল – নবনীতা দেব সেন
৭৯. বিষ্ণুপুর মুকুটমণিপুর – হরপ্রসাদ মিত্র
৮০. ডোকরিয়ানি বামক – অনিন্দ্য মজুমদার
৮১. তাওয়াং থেকে তাসি-চু জং – কমলা মুখোপাধ্যায়
৮২. মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল
৮৩. আকাশচূড়ায় অভিযান – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮৪. ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ
৮৫. সারেঙ্গেটির জঙ্গলে – হরপ্রসাদ মিত্র
৮৬. এবারের কুম্ভমেলায় – চিন্ময় চক্রবর্তী
৮৭. অন্য পথের পথিক – বুদ্ধদেব গুহ
৮৮. গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়
৮৯. নিশীথ সূর্যের দেশ – প্রতাপকুমার রায়
৯০. সবুজ নামদাফাতে – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
৯১. পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু
৯২. গোঁসাইকুণ্ড – কমলা মুখোপাধ্যায়
৯৩. অমরকন্টক – হীরক নন্দী
৯৪. আদিম ডুয়ার্সের আধুনিক রূপকথা – সূর্য ঘোষ
৯৫. পার্বতী উপত্যকায় সার পাস – বিদ্যুৎ দে
৯৬. মিয়ানমার, ইরাবতীর সঙ্গে – পবিত্র সরকার
৯৭. রূপসী রিশপ – হীরক নন্দী
৯৮. হিমবাহের জন্মভূমিতে – শেখর ভট্টাচার্য
৯৯. ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার
১০০. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত – হরপ্রসাদ মিত্র
১০১. বক্সা দুর্গ – টুটুল রায়
১০২. সিন্ধু নদের ধারে – রতনলাল বিশ্বাস
১০৩. মেঘালয়ের দাউকি – সুমিত মুখোপাধ্যায়
১০৪. আমাদের ছোট নদী : লিডার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০৫. লাসা – সমীর রায়
১০৬. ২ নম্বর লোভালোয়া স্ট্রিট – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
১০৭. অযোধ্যা পাহাড় – বিশ্বদীপ দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন