মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়

ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে লোকচক্ষুর অন্তরালে হিমালয়ের দুর্ভেদ্য পর্বতশ্রেণীর মধ্যে যে একটি সুন্দর ছোট্ট রাজ্য তার অতীত গৌরব ও সৌন্দর্য নিয়ে বিরাজমান তা কজনই বা জানেন? কুলু, কাংড়া, বাঁশোলি, ডালহৌসির নামই পরিচিত সবার কাছে ৷ এখানে যে একটি পর্বতশৃঙ্গ আছে যা শিবলিঙ্গেরই মতো-তা কি কেউ জানে? অতএব পাঠানকোট যাচ্ছি শুনেই সকলে ধরে নেয় যে কাশ্মীর যাচ্ছি নিশ্চয় ৷

চাম্বা দেশ, তার গদ্দী জনসাধারণ, তার দৃশ্যাবলি-সবই সুন্দর, তার সোনালি রঙের আপেল বিখ্যাত, তার শুভ্রবর্ণ মেষলোম মূল্যবান, সে এখন তার রুদ্ধদুয়ার খুলে ভারতের অপরাপর দেশবাসীর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে ৷ নতুন জীবনকে তারা সহজেই গ্রহণ করেছে, তাদের সরল জীবনযাত্রায় আমরা অভিভূত ৷

ছোট্ট রাজ্য চাম্বা-অধুনা হিমাচল প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ৷ এর চারদিকে জম্মু, লাহুল ও পাঞ্জাব ৷ হিমালয়ের তিনটি তুষারাবৃত পর্বতশ্রেণী সমান্তরালভাবে দক্ষিণ-পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিমে ৩০-৪০ মাইল অন্তর অবস্থিত ৷ বহির্হিমালয়ের অংশটি ধওলাধর নামে খ্যাত ও সমভূমির নিকট ৷ দ্বিতীয় শ্রেণীটি মধ্য হিমালয়ের অংশ পীরপাঞ্জাল ও তৃতীয়টি অন্তর্হিমালয়ের অংশ এখানে এটি জাঁসকার নামে বিখ্যাত ও চন্দ্রভাগা আর সিন্ধু নদের মধ্যে জলবিভাজিকা ৷ পঙ্গী পর্বতশ্রেণী চন্দ্রভাগা ও ইরাবতীর মধ্যে জলবিভাজিকা ৷ প্রধানত চাম্বা রাজ্যটি তিনটি নদী উপত্যকায় বিভক্ত ৷ পাঠানকোট থেকে চাম্বা পর্যন্ত ৭৬ মাইল বাস রাস্তা হয়েছে ৷ সকালে রওনা হলে বিকেলের মধ্যেই পৌঁছনো যায়, কিন্তু কিছুদিন আগে পর্যন্তও পায়ে হেঁটে যেতে হত ৷ রাজধানী বর্তমানে চাম্বাতেই স্থিত, কিন্তু চাম্বা যখন দুর্ভেদ্য পাহাড়ি স্বাধীন রাজ্য ছিল তখন তার রাজধানী ছিল ব্রহ্মপুর বা ভারমুরে ৷ সেখানে যাওয়া এখনও শক্ত, ৪,০০০ ফুট থেকে ৭,০০০ ফুটে চলে গেছে পথ, এখন একটি বাস রাস্তা হয়েছে বটে খড়ামুখ পর্যন্ত কিন্তু তারপরে ১০-১১ মাইল হাঁটতে হয় ভারমুর পৌঁছতে হলে ৷ হয়তো বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্যই এত দুর্গম জায়গায় রাজধানী ছিল ৷ ৭,০০০ ফুট পর্যন্ত মোটামুটি ধান, ভুট্টা, গম ও বার্লি হয়ে থাকে, তার ওপরে মাত্র একটি ফসল হয় ৷ শীতকালে হাডসার (৮,০০০ ফুট) গ্রামগুলিতেও বরফ পড়ে, আগে নাকি আরও নিচুতে পড়ত ৷ খড়ামুখ থেকে ভারমুর যেতে খাড়া ও অসমান নগ্ন পর্বতগাত্র দেখলে সেই কথাই মনে হয় ৷ সেই সময়ে ওপরের গ্রামগুলি থেকে গ্রামবাসীরা নেমে আসে ৷ আমরা এবার যখন অক্টোবরের প্রথমে যাই তখন তাড়াতাড়ি মকাই, রামদানা শুকিয়ে নিয়ে নিচে আসার তোড়জোড় চলছে ৷

চাম্বাতে ইরাবতীর দুটি উপনদী-বুধিল ও তুন্দা ৷ বুধিল এসেছে মধ্য হিমালয়ের কুগতি গিরিপথের পাশ দিয়ে ৷ হাডসারের কাছে এর সঙ্গে মিশেছে মণিমহেশ হ্রদ (১৩,০০০ ফুট) থেকে বার হওয়া ছোট স্রোতস্বিনীটি ৷ দশ মাইলেরও কিছু বেশি পথ বেয়ে এটি ইরাবতীতে এসে পড়েছে, যে সঙ্গমস্থলে খড়ামুখ স্থানটি অবস্থিত ৷ অপর নদী তুন্দা বুধিলের নিচ দিয়ে বয়ে মিশেছে ইরাবতীর সঙ্গে ৷

চাম্বাতে ২-৩দিন থাকতে হয়েছিল যাবার ও আসবার পথে, তাই ভালো করে দেখবার সুযোগ হয়েছে ৷ এখানে এখন স্কুল-কলেজ স্থাপিত হয়েছে, চারপাশের অঞ্চলের সঙ্গে বাস মারফত বেশ খানিকটা যোগাযোগও শুরু হয়েছে ৷ রাজধানীর নামও চাম্বা ৷ রাজধানী হওয়াতে নতুন নতুন বাড়িঘর, ট্যুরিস্ট অফিস, রেস্টহাউস তৈরি হচ্ছে ৷ যাত্রীদের খুব একটা ভিড় নেই ৷ সবচেয়ে ভালো লেগেছে ভূরি সিং মিউজিয়ামটি ৷ রাজপুত চিত্রাবলী ও বাগৌলী চিত্রাবলীর আসল চিত্রগুলি দেখবার সৌভাগ্য হল ৷ তাছাড়া নিপুণ কাঠের কাজকরা তোরণ, সিংহাসন প্রভৃতি তো আছেই ৷ ভূরি সিং ১৯০৩-৪ সালে এখানে রাজত্ব করেছেন, তাঁর সময়েই Rose এবং Huchinson যে গেজেটিয়ার রচনা করেন তার মধ্যেই চাম্বার পুরনো ইতিহাস ও তার বিষয়ে বহু তথ্য জানা যায় ৷ বর্তমানে এখানকার লোকসংখ্যা ২১ লক্ষ, আগে কয়েকটি ছোট ছোট রাজ্য ছিল ৷ পরে শাহিল বর্মা এই চাম্বা শহরটি প্রতিষ্ঠিত করেন এখানকার ক্ষত্রিয় রাজাদের পরাজিত করে ও তাঁর মেয়ে চম্পাবতীর নামে এই শহরের নামকরণ করেন ৷ চাম্বার প্রধান দেবতার মন্দির হল লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির ৷ তারপরে গৌরীশঙ্কর মন্দির, ত্রিমুখলিঙ্গ মন্দির ও লক্ষ্মীদামোদর মন্দির ৷ এগুলি প্রায় একই জায়গায় অবস্থিত ৷ রাজপ্রাসাদের কাছে আছে বংশীগোপাল মন্দির ও শহরের বাইরে ভগবতী বজ্রেশ্বরীর মন্দির, আসলে এটি মহিষমর্দিনীর মূর্তি ৷

চাম্বার প্রাচীন ঐতিহ্য শৈবধর্মের সঙ্গে সম্বন্ধিত-ভারমুর ও মণিমহেশ শিবের স্থান ৷ এ রাজ্যে বৈষ্ণবধর্ম এসেছে পরবর্তীকালে ৷ যত ওপরে উঠছি ততই এই শিবের পূজারীদের এবং মন্দিরগুলি দেখে তা উপলব্ধি করছি ৷

চাম্বা থেকে খড়ামুখ পর্যন্ত কঠিন পথে বিকেলে বাস থামল-কিন্তু এখনও ওপরে যেতে হবে দশ মাইল ৷ কোনও কুলি পাওয়া গেল না ৷ এখানে যাত্রী বেশি আসেন না, তাই কুলিগিরিকে বৃত্তি হিসাবে কেউ গ্রহণ করেনি ৷ সকলেই নিজেদের খেতখামার ও ভেড়ার পাল নিয়ে ব্যস্ত ৷ ২-৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর রাস্তা তৈরি করছিল যে কুলির দল তাদের সর্দারকে অনুনয় করাতে সে রাজি হল একজন লোক দিতে ৷ কিন্তু ৫টার আগে ছাড়তে পারবে না তাকে কারণ যদি পি ডাব্লু ডি সাহেব এসে পড়েন! তাতেই রাজি না হয়ে উপায় কী? খাবার ব্যবস্থা কিছুই নেই, একটি ছোট চায়ের দোকান ছাড়া ৷ যাই হোক স্বর্ণাভ আপেলের বাক্স নিচে চালান যাচ্ছিল তার থেকেই কিছু কেনা হল ৷ কোথায় লাগে এর কাছে কাশ্মীরের আপেল! শেষপর্যন্ত স্থির হল আমি দিন থাকতেই রওনা হয়ে ওপরের পথের ও গ্রামের প্রান্তে অপেক্ষা করব, আমার সঙ্গী পরে কুলিকে নিয়ে ও মাল নিয়ে আসবেন ৷ ভারমুর পৌঁছতেই সূর্যের আলো শেষ হয়ে গেল ৷ আমি রাতের বাসস্থান খোঁজ করে রাখলাম ৷ কুগতি গিরিপথের একজন বনবিভাগের কর্মচারী (সে স্কুল ফাইন্যাল পড়ে এই চাকরি পেয়েছে) খুব সাহায্য করল ৷ তহশিলদারের বাড়িতে নিয়ে গেল, তহশিলদার ছিলেন না, বাইরে Tour-এ ছিলেন ৷ তাঁর বৃদ্ধা মা আমাকে কিছুতেই ছাড়বেন না, অনেক কষ্টে পরে আসব বলে নিচে নেমে এলাম ৷ কারণ তহশিলদারদের বাড়িটা বেশ কিছু উঁচুতে ৷ গ্রামে ঢুকতেই বহু মন্দির চোখে পড়ে, তার সামনেই চায়ের দোকান ৷ মন্দিরগুলির মধ্যে মণিমহেশ মন্দির, লক্ষ্মণাবতী (দুর্গা), নৃসিংহদেব ও গণেশের অষ্টধাতুর মূর্তি উল্লেখযোগ্য ৷ মন্দিরের ওপরের কাঠের কারুকার্যগুলি সত্যিই দর্শনীয় ৷ বরফে ঢেকে যায় বলে মণিমহেশ পর্বতের নিচে কোনও মন্দির নেই ৷

ভারমুর বা ব্রহ্মপুর ছিল চাম্বা রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী ৷ ব্রাহ্মণী দেবীর বাসস্থান পাহাড়ের ওপর; সেখানে মন্দির আছে ৷ তার পাশ দিয়ে যে জলস্রোত বইছে, তা থেকেই শহরের পানীয় জল আসে ৷ এর নাম চৌরাশী ক্ষেত্রও বটে, চুরাশি জন সিদ্ধপুরুষ এখানে এসে মূর্তি ধারণ করেছেন ৷ অত মন্দির আছে কিনা জানি না তবে একই প্রাঙ্গণে বহু ছোট বড় মন্দির আছে ৷ সামনেই একজন পরোপকারী সাধু নাগাবাবার মন্দির ৷ তাঁর মৃত্যুর পর তিনিও দেবতা বলে পূজা পাচ্ছেন এখানে ৷ আঙিনার অন্যদিকে মাধ্যমিক স্কুলটি অবস্থিত ৷ আমাদের সঙ্গে একই বাসে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা চাম্বা থেকে ফুটবল ম্যাচ খেলে ফিরল ৷ মন্দিরের স্থানীয় পূজারী থেকে শিক্ষক সকলেই অভয় দিয়ে জানাল, আশ্রয়ের অভাব হবে না ৷ মন্দিরের যাত্রীশালা ও স্কুল তো আছেই, এক জায়গায় আস্তানা জুটে যাবে ৷ এদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে, দোকান যা দুয়েকটি ছিল, তাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, পাহাড়িরা সকাল সকাল শুতে যায়, কোথায় থাকি! নিচে পথের দিকে চেয়ে বসে আছি কখন কুলি সহ আমার সঙ্গী আসবেন! হয়তো কুলি শেষপর্যন্ত অস্বীকার করেছে আসতে, তবে কী হবে! মনে মনে ঠিক করে ফেলি তাহলে ওই যে মাতৃসমাকে (তহশিলদারের মা) দেখেছি, তাঁর কাছেই রাতে থাকবে ৷

অবশেষে প্রায় রাত ৮টার সময় সঙ্গী এলেন ক্লান্ত হয়ে ৷ কুলি তার মজুরি নিয়ে তখনই সেই সর্পিল hairpin bend রাস্তা ধরে নেমে গেল কারণ, তাকে ভোরেই কাজে লাগতে হবে ৷ আমরাও মনোমতো আস্তানা না পেয়ে তহশিলদারের গৃহ অভিমুখেই গেলাম অনেক সঙ্কোচ নিয়ে ৷ কিন্তু কী রাজকীয় অভ্যর্থনা যে পেলাম! গৃহকর্তা নেই, কিন্তু তাঁর মা তাঁর নিজের ঘরটিতে আমাদের থাকতে বললেন ও তখুনি চাকরকে ডেকে খাবার তৈরি করতে আদেশ দিলেন ৷ তহশিলদার হলেন প্রায় 2nd class magistrate-এর সমান ক্ষমতাসম্পন্ন ৷ তিনি ১৫-২০ দিন তাঁর তহশিল পরিদর্শন করেন-তবে তা করতে হয় পায়ে হেঁটে ৷ কারণ ওপরের দিকের পথ এরকম খাড়া যে ঘোড়া পর্যন্ত চলে না ৷ অবশ্য এই সরকারি কর্মচারীরা সবাই প্রায় হিমাচল প্রদেশের লোক এবং স্বভাবতই স্বাস্থ্যবান ৷ বৃদ্ধার ঘরে অপর শয্যায় আমি রাতে শুলাম, অন্য একটি ঘরে আমার সঙ্গী রইলেন ৷ জিনিসপত্র গুছনোর ফাঁকে ফাঁকে বৃদ্ধার সাংসারিক সুখ-দুঃখের কাহিনীও শুনতে লাগলাম ৷ একটি ১২-১৩ বছরের নাতনি তাঁর কাছে থেকে পড়ে ৷ খুবই নিঃসঙ্গ বোধ করেন হয়তো, তাই লোকজন দেখলে তাঁর এই সাদর অভ্যর্থনা; কিন্তু সম্পূর্ণ অপরিচিত, অন্য দেশের লোককে একেবারে আত্মীয়ের মতো গৃহে স্থান দেওয়া, এক অভাবনীয় ব্যাপার! আমরা কি পারতাম! পরদিন সকালে চৌরাশী ক্ষেত্রে বা মন্দির প্রাঙ্গণে নেমে কুলির খোঁজ হল ৷ সেই বনরক্ষক এবারও আমাদের সাহায্য করলেন ৷ বাজারে কুলিদের থেকে একজনকে নিয়ে এলেন ও পারিশ্রমিকও ঠিক করে দিলেন ৷ স্থির হল এখান থেকে শেষ গ্রাম হাডসারে গিয়ে পূজারীদের (গদ্দীদের) গ্রাম থেকে আরেকজন লোক নিয়ে মণিমহেশ যাওয়া হবে ৷ এ পথে ভিড় নেই, আগেই বলেছি, সুতরাং এখানকার কুলিদের নির্দিষ্ট কোনও রেট নেই ৷ বরফ পড়ে যাচ্ছে বলে কেউই এখন মণিমহেশ যায় না ৷ সেখানে একটি চটি বা আশ্রয় থাকলেও শীতের জন্য রাতে থাকা যাবে না কারণ কাঠ কাছাকাছি পাওয়া যায় না ৷ অসময় বলে ১০ টাকা প্রতিদিন হিসাবে রেট ঠিক হল ৷ আমরা পরদিন ৮-৯ মাইল হেঁটে ৭,৮০০ ফুট উঁচু হাডসার গ্রামে পৌঁছলাম ও একজন গদ্দী বা শিবের পূজারীর বাড়িতেই আশ্রয় নিলাম ৷ সে অনায়াসে একটা ঘর ছেড়ে দিল ৷ রান্নাঘরে রান্না করতে দিল, কোনও ভাড়া ইত্যাদি দাবি করল না ৷ মুক্তিনাথের পথে আকালি গ্রামগুলির সঙ্গে কত তফাত এই সরল গদ্দীদের ৷ আকালীরা প্রত্যেকটি জিনিস পয়সা ছাড়া দেয় না, এতটা ব্যবসায়ী মনোভাবাপন্ন তারা ৷

শীত এসে পড়ছে বলে রাত অবধি ফসল মাড়িয়ে শুকিয়ে তোলার কাজ চলছে দ্রুতগতিতে ৷ পথের ধারে সমস্ত বাড়িগুলির ছাদে মকাই শুকোচ্ছে, শীতের সঞ্চয় ৷ এরা কিছুদিনের মধ্যেই নেমে যাবে ৷ সেইদিন মাত্র ৯-১০ মাইল যেতে হবে বলে দুপাশে ভালো করে দেখে শুনে চললাম ৷ ভারমুর থেকে পথের দুপাশে উঁচু পর্বতে ফসলের খেতের ধাপ, সঙ্গে বাসগৃহ স্থিত ৷ কয়েক মাইল আসার পর এক জায়গায় পথটি দুভাগ হয়ে একটি রাস্তা সামনের দিকে ওপরে চলে গেছে ৷ সেইখানেও গ্রাম আছে, নাংগ্রি (১৩,০০০ ফুট) হয়ে চোবিয়া গিরিপথ পার হয়ে (১৬,৭০০ ফুট) বুগ্গী হয়ে বারাখাণ্ডা শৃঙ্গ ও গিরিপথ পার হয়ে নেমে ২৩ মাইল বনের মধ্য দিয়ে গেলে বিখ্যাত ত্রিলোকনাথের মন্দির ৷ যেতে কি পারব এবার! যা হোক পথে বহু গদ্দী মেয়েদের সঙ্গে দেখা হল, বহু গদ্দী, মেষপালক ও গ্রামের লোকের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হল ৷ ভারমুরকে গদ্দেরানও বলা হয়, অর্থাৎ গদ্দীদের স্থান ৷ গদ্দীদের মধ্যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, রাজপুত, থাকু, রাশ্বী সব জাতই আছে ৷ ভারমুরের আশপাশেই এরা বেশি থাকে, তবে অতীতকালে এরা এসেছে বাইরের রাজ্যগুলি পাঞ্জাব, লাহোর, দিল্লি প্রভৃতি স্থান থেকে ৷ পূজারীরা স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে কোমরে ৪০ হাত মেষলোমের বন্ধনী বা ডোরা পরে ৷ ওইটাই প্রমাণ করে এরা শিবের পূজারী ৷ সকলেই দেখতে খুব সুন্দর ৷ গৌরবর্ণ, দীর্ঘ, স্বাস্থ্যবান ৷ বেশিরভাগ লোকই মেষপালন করে, ধবধবে সাদা মেষ, গ্রামবাসীদের গায়ের কোট, মাথার টুপি সেগুলিও শুভ্রবর্ণের ৷ প্রথম মেষশাবকটি মানত করে রাখে ও কোনও দেবমন্দিরে আবার বলি দেয় ৷ ভারমুর স্থাপিত হয় ৫৫০ খ্রিস্টাব্দে ৷ বিখ্যাত মেরুবর্মার সময়ই (৬৮০ খ্রিস্টাব্দ) ভারমুরের প্রসিদ্ধ মন্দিরগুলি নির্মিত হয় ৷ অজেয় বর্মার (এর পরের রাজা) সময়ই গদ্দীরা এখানে এসেছে ৷ বর্মণ রাজবংশ এসেছে কুমায়ুনের তালেশ্বর থেকে ৷ এই রাজ্য ও রাজবংশের বিস্তৃত ইতিহাস আছে যার ভিত্তি হল শিলালিপিগুলি ৷ এই Inscriptionগুলি পুরনো মন্দিরগুলিতে আছে ৷ চাম্বার চামুণ্ডা মন্দিরে শক্তি পূজার প্রভাব দেখা যায় ৷ গদ্দীরা সবাই শিবের পূজারী বলে নিজেরাও ৪০ হাত ডোরা পরে ৷ হাডসার হল পূজারীদের শেষ গ্রাম ৷ এখানে একটি শিবের মন্দির আছে ৷

পরদিন ভোরে উঠে, ধানচো অভিমুখে রওনা হলাম ৷ প্রায় দশ মাইল পথ! এর পরে আর গ্রাম নেই ৷ এখান থেকে আলু, টমাটো নিলাম ৷ বোঝা কমাবার জন্য অনেক জিনিস ছেড়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিই শুধু নিয়ে রওনা হলাম ৷ এখানকার উচ্চতা ৯,০০০ ফুট; ঘরবাড়ি নেই ৷ আছে একটি আশ্রয়স্থল, যার আবার দুদিক খোলা অর্থাৎ বৃষ্টি, হাওয়া ঢোকবার প্রচুর সুবিধা আছে ৷ ধানচোর উচ্চতা ৯,০০০ ফুট মাত্র হলে কী হয়, হাডসার থেকে আসার রাস্তা খুবই খারাপ ৷ কোনও কোনও জায়গায় পাহাড় ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে, কোথাও ৬-১২ ইঞ্চি সরু পথ ৷ এগুলি আসলে মেষপালকদের যাতায়াতের পথ, পাথর ভেঙে কোনও রাস্তা তৈরি হয়নি ৷ আমাদের সঙ্গে বরাবরের সঙ্গী ছিল ইরাবতী নদী ৷ মেষপালকদের দুয়েকজনকে চোখে পড়ছে, যত ওপরে উঠছি ততই চোবিয়া গিরিপথ ও বারাখাণ্ডা শৃঙ্গ (১৭,০০০ ফুট) দৃশ্যমান হচ্ছে ৷ এসব পার হয়ে কুগতি গিরিপথের রাস্তা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেখলাম ৷ এখান থেকে বনপথে স্পিতির রাজধানী কেইলংয়ে যাওয়া যায় ৷ এ গিরিপথটিও ১৬,০০০ ফুট উঁচু ৷ ধানচোর কাছে মণিমহেশ থেকে আগতা নালাটি বুধিলের সঙ্গে মেলবার আগে বেশ একটি সুন্দর তবে ছোটখাটো জলপ্রপাত সৃষ্টি করেছে ৷ সেই নদীস্রোত পার হয়ে আবার উঠতে হল, এবং আবার কিছুটা নেমে ধানচোর আশ্রয়স্থলে পৌঁছলাম ৷ তখনই শীত শুরু হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি আগুন জ্বেলে গরম পানীয় খেয়ে রাতের খাবার তৈরি করা হল; প্লাস্টিক শীটগুলি দিয়ে চারদিকের ফাঁকগুলিতে পর্দা দেওয়া হল ৷ জল অনেক নিচে, কুলিরা বুদ্ধি করে একটা বড় প্লাস্টিকের থলিতে জল ভরে রেখে দিল ৷ ঠিক হল সারারাত আগুন জ্বালিয়ে রাখা হবে, আমি সারারাত কাঠ ঠেলে দেব বলে আগুনের পাশেই শুলাম ৷ কয়েক ঘণ্টা পরে দেখি রাত দুটো বেজে গেছে, আগুন নিভে গেছে, চারদিকে ঠান্ডা হাওয়া, কনকনে শীত ৷ কুলিরা আবার আগুন ধরাল ৷ এইভাবে ভোর অবধি কাটল ৷ ঘুম না হওয়াতে শরীর বেশ শ্রান্ত অথচ পরদিন মণিমহেশের চড়াই উঠতে হবে ও ফিরতে হবে ৷ অন্তত ১০ মাইল পথ হাঁটতে হবে ৷ সম্ভব হলে ওই দিনই হাডসারে ফিরতে হবে কারণ ধানচোতে খুবই ঠান্ডা-৷ পরদিন শুধু পূজারী ও সামান্য কিছু জিনিস নিয়ে মণিমহেশের পথে যাত্রা শুরু করতে হল ৷ মণিমহেশ প্রায় ১৪,০০০ ফুট উঁচু, সমস্ত পথটাই চড়াই আর এখানে পি ডাব্লু ডি-র লোকে কোনও পথ তৈরি করেনি, মেষপালকরা যে পথে গিয়েছে, সেগুলিই হল পথ, তবে শ্রাবণ মাসে অষ্টমী শুক্লা তিথিতে মণিমহেশের মেলা হয়, তখন বাইরে থেকে বহু তীর্থযাত্রী যান ৷ শীতকালে এসব জায়গা তুষারাবৃত থাকে তাই পাথরগুলি খটখটে ৷ একেক জায়গায় পথ এত সরু যে কোনওমতে এক পা রাখা যায় ৷ এইভাবে সঙ্কীর্ণ পথে চড়াই উঠে একটা উন্মুক্ত উপত্যকার মাথায় এসে দাঁড়ালাম ৷ সেটার সঙ্গে সংযুক্ত আরেকটি উপত্যকা দিয়ে আবার তৃণযুক্ত পাহাড়ের মাথায় চড়তে শুরু করলাম ৷ মাঝে এক জায়গায় একটি অগভীর জলস্রোত-কুলিরা জানাল, ওটি গৌরীকুণ্ড ৷ এখানে একটি পাথর সিঁদুর লেপা আছে ৷ ভেবেছিলাম, ৫ মাইল পথ যেতে কতই বা সময় লাগবে? অবশেষে বেলা ১২টার সময় একটি hump বা কুঁজের নিচে এসে দাঁড়ালাম ৷ এই hump পার হয়ে নিচে নামতে হবে তবেই নাকি মণিমহেশ হ্রদ ও শিবের পূজাস্থান দেখা যাবে ৷ অনেকক্ষণ আগে থেকেই মণিমহেশ পর্বতশাখার মহিমময় কৈলাস শৃঙ্গ (১৮,৫৬৪ ফুট) দেখা যাচ্ছিল ৷ শিবের স্থান তাই কৈলাস নাম! আবার অমরনাথ থেকে শিব নাকি এখানে পালিয়ে এসেছিলেন এরকম কিংবদন্তী ও আরও বহুরকম কিংবদন্তী আছে ৷ Hump-এর ওপর রাতে বরফ পড়েছিল, এখন গলে গেছে, তাই দ্রুত চলা সম্ভব হচ্ছে না ৷ যা হোক এবারে নিচে নামার পালা ৷ মণিমহেশের হ্রদটির নামও ডাল হ্রদ ৷ একটি লম্বাটে ধরনের অগভীর জলাশয় ৷ চতুর্দিকের পাহাড় থেকে যে বরফ গলা জল এসে পড়ে তাই থেকে এই হ্রদের সৃষ্টি ৷ জলাশয়ের অপর প্রান্তে ত্রিশূল গ্রথিত ও কয়েকটি পতাকা উড়ছে ৷ একটি চতুর্মুখ প্রস্তর মূর্তি, শিব, ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও আরেকজন দেবতার মুখ-স্বচ্ছ জলে বরফমণ্ডিত পর্বতশ্রেণীতে ছায়া পড়েছে ৷ আমরা জলাশয় বা হ্রদটির পাশে বসে বিশ্রাম নিয়ে চারপাশে পর্বতশ্রেণীর বিভিন্ন দিক দেখতে পেলাম ৷ আমরা পর্বতশ্রেণীর পাদদেশে বসেছিলাম, সেখান থেকে ২-৩ হাজার ফুট উঠলেই মনে হচ্ছে শৃঙ্গে পৌঁছনো যায়, এত কাছে মনে হয় ৷ আমার সঙ্গীর পর্বতারোহণে শিক্ষা আছে, তিনি তো খুব উৎসুক ৷ আমাদের পিছনে, মহিমময় কৈলাস শৃঙ্গ সূর্যকিরণে দীপ্তিমান ৷ পর্বতের গায়ে বরফের আস্তরণ, ফাটল সব দেখা যাচ্ছে ৷ কয়েক বছর আগে, খুব সম্ভব ১৯৬৬ সালে জাপানি ও ভারতীয় (গুজরাতি) মহিলাদের একটি যৌথ দল কুগতি গিরিপথ দিয়ে কৈলাস শৃঙ্গে আরোহণ করেন ৷

এদিকে দুটো বেজে গেছে-ফেরার তাড়া; ভাবি, উতরাই পথ বেয়ে আসতে আর কতই বা সময় লাগবে! কিন্তু তৃণময় উপত্যকাগুলি পার হয়ে যখন আবার নগ্ন প্রস্তরপথে পৌঁছলাম, তখন বুঝি, নামাটাও কী প্রাণান্তকর! ক্লান্তিতে ঠিকমতো পা ফেলতে পারছি না, সঙ্কীর্ণ পথে একটু এদিক ওদিক হলেই নিচে পড়ে যাব ৷ আমাদের গদ্দী পূজারী আমার গামছা নিয়ে এক বোঝা শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে ফেলল-কারণ, সেদিন রাতেও তো ধানচোতে থাকতে হবে ৷ -অতি কষ্টে বিকেল পাঁচটায় সেই ধানচোতে এসে পৌঁছলাম ৷ অপর কুলি রান্না করে বসে রয়েছে, ভাবছে, আজ রাতে আর শীতের কামড় খেতে হবে না ৷ কিন্তু সেরাতে তো আর দশ মাইল পথ যাওয়া যায় না, অতএব রাতে সেখানেই রইলাম ৷ পরদিন ভোরে রওনা হয়ে বেলা ১০টায় হাডসারে পৌঁছে ভোজনপর্ব সেরে সেদিনই রওনা দিয়ে ভারমুরে পৌঁছলাম ৷ আমাদের পূজারী গদ্দী রয়ে গেল তার আপন গ্রামে ৷ পৃথ্বী সিং ভারমুর পর্যন্ত এসে টাকা নিয়ে খুশি হয়ে বাড়ি ফিরে গেল ৷ এবার নেমে তহশিলদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল ৷ সাদরে আহ্বান করলেন তাঁর নিজের বাড়িতে ৷ খুব যত্ন করে খাওয়ালেন এবং আরও একদিন থাকতে বললেন ৷ এত দূরে একজন এরকম সজ্জন ব্যক্তিকে দেখব তা কল্পনাই করিনি ৷ তাঁর কাছেই চাম্বার গেজেটিয়ার দেখলাম ও মোটামুটি এর একটা পরিচয় পেলাম ৷ ভোরে উঠে আবার যাত্রা করতে হবে চাম্বার দিকে ৷

ভ্রমণ জানুয়ারি, ২০০২

আমার ভ্রমন

সকল অধ্যায়

১. অর্ধশতাব্দীর আগের বদ্রীনাথ যাত্রা – প্রতাপকুমার রায়
২. মানস অভয়ারণ্য – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩. জলদাপাড়া অরণ্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪. জলের ধারে ঘর – নবনীতা দেব সেন
৫. জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির – উষা সেন
৬. তাহিতি – হরপ্রসাদ মিত্র
৭. মার্কন্ডেয় গঙ্গার উত্স সন্ধানে – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮. কেদার বদ্রী – মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
৯. তেহরানি হয়রানি – অমিতাভ চৌধুরি
১০. শোনপুরের মেলায় – বরুণ দত্ত
১১. এলেম নতুন দেশে – কমলা মুখোপাধ্যায়
১২. মস্কো থেকে সাইবেরিয়া হয়ে পিকিং – গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩. পাতাল-ভুবনেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
১৪. ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ
১৫. নিকোবরের দ্বীপে – তিলকরঞ্জন বেরা
১৬. তিরতিরে নদী আর শাল জঙ্গলের দেশে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭. আমার ভ্রমণ – মহাশ্বেতা দেবী
১৮. সুন্দরবন – হীরক নন্দী
১৯. ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত
২০. সাইকেলে পাঁচ বছরে ভূ-পর্যটন – ভূপর্যটক বিমল দে
২১. আঙ্কোর ভাট – প্রীতি সান্যাল
২২. হিমালয়ের সাতকাহন – ত্রিদিব বসু
২৩. স্বপ্নের পথেই যাওয়া যায় – মহাশ্বেতা দেবী
২৪. ছোট কৈলাস – সুভাষ দত্ত
২৫. বালতাল হয়ে অমরনাথ – প্রতাপকুমার রায়
২৬. মধ্য এশিয়া অভিযান – গৌতম ঘোষ
২৭. পথ হারিয়ে সিকিমের জঙ্গলে – রতনলাল বিশ্বাস
২৮. নতুন করে পাব বলে – বন্দনা সান্যাল
২৯. সেবার ব্রেকজার্নি করে – জয়া মিত্র
৩০. চন্দ্রভাগার উৎস চন্দ্রতাল সুর্যতাল – সুনীলকুমার সরদার
৩১. ওঙ্কারেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
৩২. সুন্দরবনে দুদিন – পবিত্র সরকার
৩৩. মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়
৩৪. দিকবিদিকে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৫. তিস্তানদীর উৎসে – শরৎ ঘোষ
৩৬. পশ্চিমে হাওয়াবদল – মধুপর্ণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৭. এক টুকরো নীল চাঁদ – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৩৮. কালিম্পং থেকে তিব্বত – অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
৩৯. সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু
৪০. মির্জা শেখ ইতেসামুদ্দিনের বিলেত যাত্রা এবং আমি – নবনীতা দেব সেন
৪১. বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
৪২. গানতোক থেকে ইয়ুমথাং – সুতপা ভট্টাচার্য
৪৩. ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল
৪৪. ডুয়ার্সের দুয়ার এখন খোলা – সমরেশ মজুমদার
৪৫. ইউরোপে দিন কয়েক – পূর্ণেন্দু পত্রী
৪৬. রামচন্দ্রের বনবাসের পথ পরিক্রমা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. আসমুদ্রককেশাস – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
৪৮. নিরলংকার ভ্রমণ – শঙ্খ ঘোষ
৪৯. চেঙ্গিস খানের দেশে – প্রতাপকুমার রায়
৫০. মিজোরামের নীল পাহাড়ে – দীপঙ্কর ঘোষ
৫১. সিন্ধুদুর্গ – বিশ্বদীপ দত্ত
৫২. জিম করবেটের জঙ্গলে – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩. থর মরুভূমিতে ট্রেকিং – শিবনাথ বসু
৫৪. মরোক্কো ভ্রমণ – হরপ্রসাদ মিত্র
৫৫. ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ – নবনীতা দেব সেন
৫৬. গন্তব্য মাচুপিচু – প্রতাপকুমার রায়
৫৭. কই যাইত্যাছি জানি না – শঙ্খ ঘোষ
৫৮. পারাংলা অভিযান – সুনীলকুমার সরদার
৫৯. পুশকিন, মলদভা আর কচি পাতার বাঁশিতে মোত্সার্ট – প্রীতি সান্যাল
৬০. আমাদের ছোট নদী : পার্বতী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬১. দেবলোকের পথে পথে – অশোক চক্রবর্তী
৬২. না-ভ্রমণের বৃত্তান্ত – আশাপূর্ণা দেবী
৬৩. এভারেস্টের পাদদেশে যাত্রা – কমলা মুখোপাধ্যায়
৬৪. নীল নদে পাঁচদিন – হরপ্রসাদ মিত্র
৬৫. বারাণসীর ঘাটের কথা – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৬. বালফাক্রমের পাহাড়-জঙ্গলে – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৬৭. গৌরীগঙ্গার উৎসব মিলাম হিমবাহ – পুরুষোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৮. মরুভূমির দিনরাত্রি – পবিত্র সরকার
৬৯. ঢাকা : একুশ বছর পর – অন্নদাশঙ্কর রায়
৭০. ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
৭১. ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউ – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৭২. কালিন্দী গিরিবর্ত্ম – রথীন চক্রবর্তী
৭৩. একযাত্রায় ভোরামদেরও আর কানহা – হীরক নন্দী
৭৪. মদমহেশ্বরের ডোলিযাত্রা – কাজল দত্ত
৭৫. কেনিয়ায় পাঁচ অরণ্য – প্রতাপকুমার রায়
৭৬. কোনাডা থেকে রেভুপাল ভরম – রতনলাল বিশ্বাস
৭৭. চাঁদের দেশ লাদাখ – কমলেশ কামিলা
৭৮. বোকের তোভ, ইজরায়েল – নবনীতা দেব সেন
৭৯. বিষ্ণুপুর মুকুটমণিপুর – হরপ্রসাদ মিত্র
৮০. ডোকরিয়ানি বামক – অনিন্দ্য মজুমদার
৮১. তাওয়াং থেকে তাসি-চু জং – কমলা মুখোপাধ্যায়
৮২. মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল
৮৩. আকাশচূড়ায় অভিযান – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮৪. ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ
৮৫. সারেঙ্গেটির জঙ্গলে – হরপ্রসাদ মিত্র
৮৬. এবারের কুম্ভমেলায় – চিন্ময় চক্রবর্তী
৮৭. অন্য পথের পথিক – বুদ্ধদেব গুহ
৮৮. গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়
৮৯. নিশীথ সূর্যের দেশ – প্রতাপকুমার রায়
৯০. সবুজ নামদাফাতে – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
৯১. পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু
৯২. গোঁসাইকুণ্ড – কমলা মুখোপাধ্যায়
৯৩. অমরকন্টক – হীরক নন্দী
৯৪. আদিম ডুয়ার্সের আধুনিক রূপকথা – সূর্য ঘোষ
৯৫. পার্বতী উপত্যকায় সার পাস – বিদ্যুৎ দে
৯৬. মিয়ানমার, ইরাবতীর সঙ্গে – পবিত্র সরকার
৯৭. রূপসী রিশপ – হীরক নন্দী
৯৮. হিমবাহের জন্মভূমিতে – শেখর ভট্টাচার্য
৯৯. ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার
১০০. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত – হরপ্রসাদ মিত্র
১০১. বক্সা দুর্গ – টুটুল রায়
১০২. সিন্ধু নদের ধারে – রতনলাল বিশ্বাস
১০৩. মেঘালয়ের দাউকি – সুমিত মুখোপাধ্যায়
১০৪. আমাদের ছোট নদী : লিডার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০৫. লাসা – সমীর রায়
১০৬. ২ নম্বর লোভালোয়া স্ট্রিট – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
১০৭. অযোধ্যা পাহাড় – বিশ্বদীপ দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন