ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার

রাহুল সংকৃত্যায়ন তাঁর ‘কিন্নর দেশে’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘(বাঙতু থেকে) কিছুক্ষণ চলার পরে বাঁদিক থেকে ভাবা-র খদ্দ গর্জন করতে করতে এসে শতদ্রুর বুকে আছড়ে পড়ল ৷ এই খদ্দের পাশে দু-তিনটি গ্রাম আছে ৷ এর কিনারা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছু ক্ষেতখামার পেরিয়ে স্পিতি পর্যন্ত পৌঁছনো যায় ৷ লোকের যাতায়াতও কিছু আছে এ পথে ৷ এমনিতে স্পিতি যাবার কোনও বড় রাস্তা নেই এ পথে’ ৷ সেই সূত্র ধরেই আমরা খুঁজে বের করি ভাবা জোত বা গিরিপথ ৷ সঠিক অর্থে অবশ্য হাঁটতে হাঁটতে কিছু ‘খেত-খামার পেরিয়ে’ নয়, দিন পাঁচ-ছয়েক গিরিপথ পেরিয়ে স্পিতি পৌঁছনো যায় এই ভাবা উপত্যকা ধরে ৷ মরু হিমালয় স্পিতির সঙ্গে কিন্নরের সংযোগকারী এই ভাবা জোত (৪৬৭০ মিটার) স্থানীয়দের কাছে বেশ জনপ্রিয় ৷ অথচ ট্রেকাররা বিশেষত ভারতীয় ট্রেকাররা এ পথে আসেন না বললেই চলে ৷

রাহুলের সময় ঘোড়ার পিঠে বা পায়ে হেঁটে কিন্নর দেশ ভ্রমণ করতে হত ৷ বর্তমানে অবশ্য গাড়ির রাস্তা তৈরি হয়েছে ৷ তাই কলকাতা থেকে কালকা হয়ে সেখান থেকে সরাসরি বাসে পৌঁছে যাওয়া যায় ভাবা উপত্যকার কাফনু গ্রামে ৷ আমরা অবশ্য এসেছিলাম অন্যভাবে ৷ গাড়োয়াল হিমালয়ের ধৌলা থেকে পায়ে পায়ে রূপিন ঘাটি অতিক্রম করে পৌঁছলাম কিন্নরের সাংলা ৷ দু-চারদিনে কিন্নর দর্শন সেরে বাস ধরে ওয়াংতু হয়ে চলে আসি ভাবানগর ৷ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কল্যাণে ভাবানগর এক ব্যস্ত শহর ৷ তাই প্রথম সুযোগেই বাস ধরে চম্পট দিই কাফনুর দিকে ৷ আবার ওয়াংতুতে ফিরে আসতে হয় হিন্দুস্থান-তিব্বত রোড ধরে ৷ তারপর জাতীয় সড়ক ছেড়ে লোহার ব্রিজে শতদ্রু পার হওয়া ৷ ওপারের পাহাড়ের গা বেয়ে বাস এগিয়ে চলে ৷ রাস্তা বেশি চওড়া নয়, কিন্তু মসৃণ পিচে মোড়া ৷ ঢুকে পড়ি ভাবা নদীর উপত্যকায় ৷ একে অনেকে ওয়াঙ্গার নদীও বলেন ৷ পথে বেশি জনবসতি চোখে পড়ে না ৷ তার মধ্যে কোটগাঁও বেশ জমজমাট জায়গা ৷ এখানকার ভাবা মহেশ্বরের মন্দির বিখ্যাত ৷ কোটগাঁওতে গাড়ি দাঁড়াতেই হৈ হৈ করে বাচ্চা ছেলেরা বাসভর্তি করে ফেলে ৷ কী ব্যাপার? না, কোটগাঁওয়ে ক্রিকেট প্রতিযোগিতা হচ্ছে ৷ খেলা শেষ, এখন ঘরে ফেরার ভিড় ৷

কাফনু (২৪৪০ মিটার) পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল গড়িয়ে যায় ৷ ছোট্ট জায়গা ৷ দিনে খানপাঁচেক বাস চলাচল করে ৷ একটিমাত্র খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে বাসআড্ডার পাশে, কিন্তু থাকার হোটেল নেই ৷ প্রয়োজনবোধে রেস্তোরাঁর মালকিন তাঁর বাড়তি ঘরে মেহমানদের আশ্রয় দেন ৷ এখন সেগুলি কয়েকজন বস্ত্রবিক্রেতার দখলে, সুতরাং আমরা এই অচেনা স্থানে নিরাশ্রয় ৷ স্থানীয়রা বুদ্ধি দেন বাঁধের ধারে তাঁবু গেড়ে থাকতে ৷ গ্রামের মধ্যে এভাবে তাঁবু করে থাকাটা আমাদের পছন্দ নয়, কিন্তু রাত নামার আগে তো একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই জোগাড় করে নিতেই হবে ৷ ক্যাম্পসাইট দেখতে এগোই ৷ পথে পড়ে কাফনু থানা ৷ কি মনে হল, থানায় ঢুকে গেলাম সাহায্যপ্রার্থী হয়ে ৷ জীবনে প্রথম এভাবে কোনও থানায় হাজির হলাম ৷ হিন্দি সিনেমা দেখে দেখে থানা বলতে যে ভীতিপ্রদ ছবিটা আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তার সঙ্গে কাফনু থানার কোনও মিল নেই ৷ হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের পোস্টারে সজ্জিত অফিসঘরটি তো রীতিমতো আকর্ষণীয়! পুলিশকর্মীরাও খুব খোলামেলা ৷ আমাদের অসুবিধার কথা শুনে এক সদাশয় ব্যক্তি নিজের থেকে রেস্তোরাঁর মালকিনকে আমাদের হয়ে অনুরোধ করলেন ৷ পুলিশি অনুরোধ এড়াতে না পেরে মালকিন আমাদের জন্য তার স্টোররুমটি বরাদ্দ করলেন ৷ ঘরটি একটু ছোট, অন্ধকারও বটে ৷ তবে এমনিতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ৷

রেস্তোরাঁটি সাধারণ ৷ নিমকি, গজা, অল্প কিছু মিষ্টি-তালাবন্ধ কাচের বাক্সে বন্দী ৷ না হলে নাকি স্থানীয় খদ্দেররা বিনা পয়সায় খেয়ে নেবে! দোকানের একমাত্র কর্মী ‘ছোট্টু’ প্রবল উৎসাহে খদ্দেরদের চা দিয়ে বেড়াচ্ছে ৷ লোক মন্দ হয়নি ৷ তাদেরই একজন পদম সিং নেগি ৷ পদম ঘোড়াওয়ালা, বাড়ি ইয়াংপা-টু গ্রামে ৷ ষোলটা ঘোড়ার মালিক, তার একটা আবার রামপুরের লাভি মেলায় কিন্নর-সেরা শিরোপা পেয়েছে ৷ ঠিক হল পদম দুটি ঘোড়া নিয়ে আমাদের সঙ্গে ভাবা জোত পার হয়ে স্পিতি যাবে ৷ পরদিন কলকাতা থেকে আমাদের এক বন্ধুর দলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল, তাই ঠিক হল আগামী পরশু আমরা পদযাত্রা শুরু করব ৷

পরদিন সকালবেলা ঘরে এসে চা দিয়ে যায় ছোট্টু ৷ ওর আসল নাম মীরচাঁদ ৷ কুলুতে ঘর, জীবিকার খাতিরে কিন্নরের এই অজগাঁয়ে পড়ে আছে ৷ আমাদের চা খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই পদম এসে যায় ৷ একবার থানায় যাই নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে ৷ তারপর বাঁধ দর্শন ৷ ভাবা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল অংশটি ভাবানগরে অবস্থিত ৷ কাফনুতে ভাবা নদীকে বাঁধ দিয়ে জল আটকানো হয়েছে ৷ ফলে একটা কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে এখানে ৷ রঙিন রেলিংয়ে ঘেরা জলাশয় ৷ একদিকে সার সার গাছের হাল্কা জঙ্গল ৷ ভালোই লাগে ঘুরতে ৷ পদযাত্রা পর্বের জন্য বাজারহাট করার দরকার ছিল ৷ কাফনুর বাজারটি ছোট, তবে প্রয়োজনীয় খাবারদাবার জুটে গেল, যদিও বাছাবাছির সুযোগ নেই বিশেষ ৷ মুশকিল হল কেরোসিন তেলের জোগান নেই আপাতত কাফনুতে ৷ শেষে বাস ধরে ছোট্টুর সঙ্গী কপিল নিচের দিকে চলে গেল কেরোসিন আনতে ৷ প্রথমে কোটগাঁও, সেখানে না পেয়ে ভাবানগর, তারপর আরও নিচে জিওরি থেকে তেল সংগ্রহ করে ফিরল সে ৷ তেল জুটল বটে, কিন্তু যাতায়াতে প্রচুর খরচ হয়ে গেল ৷

৫ জুন কলকাতা থেকে বন্ধু শেষপর্যন্ত এসে পৌঁছয়নি ৷ সুতরাং পদম, কপিলকে নিয়ে আমরা দলে পাঁচজন ৷ সকাল সকাল পদম ওর ঘোড়াগুলিকে নিয়ে এসেছে ৷ দুটি ঘোড়া, কালু ও তাসি, আমাদের মাল বইবে ৷ এছাড়া পদম সঙ্গে এনেছে কিন্নর-সেরা শেরুকে ৷ শেরু অবশ্য ঘোড়াদের গাইড, অর্থাৎ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মাল বইবে না ৷ মালপত্র ঘোড়াদের পিঠে চাপিয়ে আমরা ঝাড়া হাত-পায়ে চলি ৷ ভাবা নদীর ডানতীর ধরে উত্তর দিকে চলা ৷ পথের পাশে খেত, একটি বৌদ্ধমন্দির ৷

শেষ গ্রাম হোমতি পেরিয়ে নদী পার হতে হয় ৷ নদীর পাশে পথ, পথের পাশে খেত, কাজের ফাঁকে গ্রামের মেয়েরা আড়চোখে দেখে নেয় পথচলতি পথিকদের ৷ চড়াই পথে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পৌঁছে যাই হোমতি (২৮৪০ মিটার) ৷ দু-তিনটে কুঁড়েঘর, কয়েকটা খেত ৷ ভাবা উপত্যকার গ্রামবাসীরা এখানে চাষবাস করেন ৷ আমরা এখন ভাবা-রূপী অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে চলেছি ৷ বনপরীর মতো কয়েকটি মেয়ে ঘোড়া নিয়ে বন ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে ৷ শালতি চলেছে তারা ৷ মেয়েরা পদমকে অনুরোধ করে ওদের ঘোড়াগুলিকে থাচে (বুগিয়ালে) ছেড়ে দিতে ৷ হিমালয়ে এটা প্রচলিত পদ্ধতি ৷ গ্রামে বসিয়ে ঘোড়াকে খাওয়ানোয় খরচ আছে ৷ তার থেকে বরং পাহাড়ে ছেড়ে দাও, প্রয়োজনে নামিয়ে আনলেই হবে ৷

হোমতি থেকে শালতি মোটামুটি সমতল পথ ৷ তারপর আবার নেমে যাওয়া নদীর পাশে ৷ কোনও কারণে জল বেড়ে গেলে, পথ বোধহয় ডুবে যাবে! একটা সরু জলধারা পার হতে হয় ৷ নালার ওপরে গাছের গুঁড়ির সেতু ৷ ছায়ামোড়া জঙ্গল, পথের ওপর ঝরাপাতা, মাঝে মধ্যে পাখির সুরেলা ডাক ৷ কিন্নরের এই অঞ্চলের শ্যামলতা মনকে স্নিগ্ধ করে ৷ গিয়ের, ডাঙ্গারে হয়ে পৌঁছলাম মুলিং (৩২৬০ মিটার) ৷ সুন্দর বা অপূর্ব নয়, স্বপ্নালু বললে হয়তো মুলিংকে খানিকটা বোঝানো যেতে পারে ৷ সবুজ ঘাসের মখমলে মোড়া এক বিস্তীর্ণ সমতলভূমি ৷ তার বুক চিরে বয়ে যাচ্ছে সর্পিল ভাবা, নদীর ওধারে পাইনের জঙ্গল ৷ কাছে-দূরের পাহাড়চূড়ায় বরফের প্রলেপ ৷ সেদিন ছিল পূর্ণিমা ৷ চাঁদের আলোয় ভাসছে মুলিং ৷

পরদিনের লক্ষ্য কারা ৷ দূরত্ব বেশি নয় ৷ তাই দেরি করে পথে নামি ৷ উচ্চতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাছের সংখ্যা কমে আসছে ৷ পশ্চিমদিক থেকে একটা নদী এসে মিশেছে ভাবায় ৷ ওই নদী ধরে ওয়াশিলিং যাওয়া যায় ৷ সেখান থেকে সাকারোগ খাগো (৫১০০ মিটার) পেরিয়ে স্পিতির পিন উপত্যকায় পৌঁছনো যায় ৷ সঙ্গমস্থলের নাম নিগুলা ৷ ভাবা নদী পেরিয়ে তার ডানতীরে আসতে হল ৷ অসুবিধার কিছু নেই, কারণ পাথরের প্রাকৃতিক সেতু রয়েছে ৷ নদীর ডানতীর ধরে চড়াই ভাঙা ৷ গাছপালা আর নেই, শুধু চোখ ধাঁধানো লাল লাল ছোট ছোট ফুল ৷ দেখতে দেখতে পৌঁছে যাই কারা (৩৭৭০ মিটার) ৷ চওড়া উপত্যকা, ঈষৎ ঢেউখেলানো ৷ চারদিক উঁচু পাহাড় দিয়ে ঘেরা ৷ পাহাড়ের ঢালে ঘোড়ার দল চড়ে বেড়াচ্ছে ৷ ওদের কয়েকটির মালিক আমাদের পদম সিং, মালিককে তারা চিনতে পারে বলে মনে হয় না ৷ পদমও জানায় এভাবে ছেড়ে রাখলে ঘোড়া ‘জানোয়ার’ (অর্থাৎ বন্য) হয়ে যায় ৷ তখন আর মানুষকে মানতে চায় না ৷ কারা জায়গাটা অদ্ভুত ৷ অসংখ্য শীর্ণকায় জলধারা জলাভূমির মতো স্যাঁতসেঁতে করে রেখেছে চারধার ৷ নদীর ধারে আমাদের তাঁবু পড়ে ৷ পিঠের থেকে মাল নামিয়ে আমাদের অশ্ববাহিনী যোগ দেয় ঘোড়ার দলে ৷ কপিল রান্নার বন্দোবস্ত করে, আমরা বেরিয়ে পড়ি কারা দর্শনে ৷ আজ হাতে অফুরন্ত সময় ৷ চাইলে হয়তো আরও এগিয়ে ফুসতিরাং পৌঁছনো যেত ৷ কিন্তু অপ্রয়োজনে এভাবে দৌড়তে দৌড়তে ট্রেক করার মধ্যে আনন্দ পাই না ৷ তাড়াহুড়োতে অনেক কিছু অদেখা থেকে যায়, যেমন কারাহ্রদ ৷ আগেই বলেছি কারা একটু ঢেউখেলানো উঁচু নিচু ৷ এমনই এক ঢেউয়ের পিছনে হঠাৎ চোখে পড়ল কাকচক্ষু জলাশয় ৷ তার বুকে বরফচূড়ার কাঁপা কাঁপা প্রতিচ্ছবি ৷ কারায় না থেকে এগিয়ে গেলে হয়তো খেয়াল করতাম না এই কৃষ্ণকালো সুন্দরীকে ৷

নিচের দিক থেকে কয়েকটা লোক উঠে আসছে, সঙ্গে ছোট ছোট ঘোড়া ৷ কাছে এলে দেখি ঘোড়া নয়, খোতে অর্থাৎ স্পিতি ভাষায় গাধা ৷ লোকগুলি পিন উপত্যকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসেছে ৷ সেখানে কাঠের খুব অভাব, তাই তারা কিন্নর থেকে গাছ কেটে খোতের পিঠে চাপিয়ে দেশে নিয়ে যাচ্ছে ৷ এভাবে গাছ কাটা বেআইনি, কিন্তু গরজ বড় বালাই ৷ শুনে মজা লাগল যে গিরিপথের ওপর বরফ বেশি থাকলে, এই বেঁটে বেঁটে গাধাগুলির বুক অবধি বরফে ডুবে যায় ৷ তখন তারা কাঠ বইবে কি, তাদেরই কোলে তুলে বরফ পার করিয়ে দিতে হয় ৷

ইতিমধ্যে খাবার তৈরি ৷ খেতে খেতে বৃষ্টি এসে যায় ৷ তাড়াহুড়ো করে জিনিসপত্র তাঁবুতে ঢোকাচ্ছি, হঠাৎ চোখ চলে যায় আকাশের দিকে, দেখি, মেঘের পর্দা ভেদ করে একফালি রোদ পড়েছে ঝিরঝিরে বৃষ্টিকণার গায়ে ৷ আর চারদিক আলো করে রামধনু উঠেছে আকাশে ৷ প্রায় মাটি ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা আর তাদের পায়ের ফাঁক দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ভাবা নদী ৷

পরদিন গন্তব্য ফুসতিরাং ৷ দূরত্ব বেশি নয় ৷ তবে দেরি করা ঠিক হবে না, কারণ পথে নদী পার হতে হয় ৷ স্পিতিবাসীরা খোতে নিয়ে অনেক ভোরে বেরিয়ে পড়েছে, আমাদের মুশকিল হয় শেরুকে নিয়ে ৷ পদম ওর বল্গা ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে ৷ কিছু মালও চাপানো হয়েছে শেরুর পিঠে ৷ নদী পার হওয়াটা যত ঝামেলার ভেবেছিলাম তেমন কিছু নয় ৷ নদী এখানে বহুধারায় বিভক্ত হয়ে বয়ে যাচ্ছে ৷ কয়েকটাকে পাথরের ওপর দিয়ে পেরিয়ে যাই ৷ শেষ রক্ষা অবশ্য হল না, জুতো খুলে জলে পা ছোঁয়াতেই হল ৷ নদী পেরিয়ে অল্প বিশ্রাম ৷ পূর্বদিক থেকে একটা নদী মিশেছে ভাবায় ৷ এই নদী ধরে গেলে একটি গিরিপথ পেরিয়ে স্পিতির পিন উপত্যকায় পৌঁছনো যায় ৷

এগিয়ে চলি ভাবা নদীর বামতীর ধরে ৷ পথের ধারে, স্থানে স্থানে, হলুদ ফুলের কেয়ারি, সংকীর্ণ গর্জ, হাল্কা চড়াই ৷ দূর থেকে দেখা যায় ফুসতিরাংকে ৷ কারার তুলনায় জায়গাটি (৩৯৫০ মিটার) বড্ড বেশি রুক্ষ ৷ গর্জের মধ্যে হওয়ার জন্য ছায়াছন্ন এবং ঠান্ডা ৷ এরকম চাপা জায়গায় মনও যেন গুমোট হয়ে যায় ৷ কিন্তু জোতের আগে আর তৃণভূমি নেই, তাই ঘোড়া নিয়ে আজ এগনো যাবে না ৷

পরদিন ৮ জুন, রাত না পোহাতেই তোড়জোড় শুরু করি ৷ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হবে আজ-গাড়োয়াল, কিন্নরের পর স্পিতির মাটি স্পর্শ করব ৷ হিমালয় পেরিয়ে পৌঁছব ট্রান্স হিমালয় অঞ্চলে ৷ গোছগাছ করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে যাই ৷ অসহ্য ঠান্ডায় হাত পা যেন বিকল হয়ে গেছে ৷ সারা গায়ে উলের মোটা মোটা পোশাক চাপিয়ে বেরিয়ে পড়ি ৷ আজ প্রথম থেকে টানা চড়াই, কিছুক্ষণ চলার পর দর দর করে ঘামতে শুরু করি ৷ ভাবা নদীর একটি শাখা ধরে উত্তরদিকে চলেছি আমরা ৷ অপরটি ধরে উত্তর-পশ্চিম দিকে গেলে নিমিশ খাগো (৪৯৫০ মিটার) পেরিয়ে পিন উপত্যকায় পৌঁছনো যায় ৷ অর্থাৎ কিন্নরের ভাবা উপত্যকা থেকে স্পিতির পিন উপত্যকায় যাবার জন্য চারটি গিরিপথ আছে (পশ্চিমদিক থেকে)-সাকারোগ খাগো, নিমিশ খাগো, ভাবা জোত ও তথাকথিত তারি খাগো ৷ এদের মধ্যে ভাবা জোত সবচেয়ে জনপ্রিয় ৷ অন্যগুলির ক্ষেত্রে উপযুক্ত পাহাড়ি সঙ্গী খুঁজতে হতে পারে ৷

স্ক্রি জোনের মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে পথ উঠে গেছে ৷ টানা চড়াই, মাঝে মাঝে বিপজ্জনকভাবে সংকীর্ণ পথ ৷ এই চড়াইয়ে ঘোড়া বেশি মাল বইতে পারে না ৷ তাই, তাসি-কালুর পিঠ থেকে মাল কমিয়ে শেরুর ঘাড়ে চড়িয়েছে পদম ৷ চড়াই শেষে পাথর বিছানো অঞ্চল ৷ একপাশে কিছু পাথর সাজিয়ে রাখা হয়েছে ৷ সম্ভবত, আমাদের স্পিতির বন্ধুরা গতকাল এখানে রাত কাটিয়েছেন ৷

পাথরের পরে বরফ মোড়া অঞ্চল শুরু হল ৷ কিছু কিছু জায়গায় বরফের ছোট ছোট ঢিপি, তাদের মাথায় পাথর, পোশাকি ভাষায় যাকে বলে ‘গ্লেসিয়াল টেবিল’ ৷ নির্ঘাৎ আমরা কোনও হিমবাহের ওপর দিয়ে হাঁটছি, কিন্তু এত বরফে তার হদিশ করা মুশকিল ৷ ঝকঝকে নীল আকাশ, ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া ৷ চারদিকে বরফের চোখধাঁধানো ঝলকানি ৷ ছোট ছোট চড়াই, মাঝে মধ্যে একটু নেমে আসা ৷ হাঁটু ডোবা বরফে সাবধানে চলতে হয় ৷ নাহলে হুমড়ি খেয়ে পড়ার ভয় ৷ গিরিশিরার ওপর থেকে প্রদীপ হাত নাড়ে ৷ উঠে আসি, এবং দেখি এটা গিরিপথ নয় ৷ দূরে দেখা যাচ্ছে পতাকা উড়ছে ৷ ওটাই ভাবা জোত (৪৬৭০ মিটার) ৷ অর্থাৎ আরও খানিকটা এগোতে হবে আমাদের ৷ মোটামুটি সমতল, তবে বরফের প্রাচুর্য চলার গতিকে শ্লথ করে দেয় ৷ পথের ডানহাতে বরফের সরে মোড়া নীল জলকুণ্ড ৷ এগিয়ে চলি ৷ রোদ পড়েছে বরফের ওপর ৷ বরফ গলতে শুরু করেছে আর নরম বরফে পা ডুবে যায় ঘোড়ার ৷ হঠাৎ দেখি কোমর পর্যন্ত বরফে ঢুকে গেছে প্রদীপ ৷ নরম বরফ, তার মধ্যে ও উঠে আসার চেষ্টা করে ৷ ওদিকে, অন্য পাশ দিয়ে পদম ঘোড়াদের নিয়ে যায় ৷ শেরু, তাসিকে নিয়ে অসুবিধা হয় না, মুশকিল হল কালুকে নিয়ে ৷ যে কোনও কারণেই হোক, কালু আর এগোতে চায় না-রীতিমতো বিদ্রোহ ৷ সে বড় বিপজ্জনক অবস্থা ৷ একদিকে বরফের ফাঁদে আটকে আছে প্রদীপ, অন্যদিকে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে পদমদের হাত ছাড়িয়ে পালাবার চেষ্টা করছে কালু ৷ কোন দিকে ছুটে কার ঘাড়ে পড়বে কোনও ঠিক নেই ৷ শেষে তার পিঠের মাল আমরা ভাগ করে নিলাম ৷ ব্যস, তাতেই শান্ত হল কালু ৷ বীরের মতো সে উঠে আসে ভাবা জোতের ওপরে ৷ গ্রেট হিমালয়ান রেঞ্জের ওপরে ভাবা জোত অবস্থিত ৷ বহু শতাব্দী ধরে কিন্নরবাসী ও স্পিতিবাসীদের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই গিরিপথ ৷ সাধারণ গ্রামবাসী, ব্যবসায়ী, তীর্থযাত্রী প্রভৃতি বহু মানুষ যাতায়াত করতেন এই পথ ধরে ৷ বর্তমানকালে সামদো হয়ে গাড়ির রাস্তা তৈরি হওয়ার ফলে হাঁটাপথের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে গেছে, তবু প্রাচীনকালের সেই ফ্লেভার যেন অনুভূত হয় চলতে চলতে ৷

ভাবা জোতে পৌঁছে অবশ্য সকল অনুভূতিকে ছাপিয়ে গেল কনকনে ঠান্ডা ৷ এত তীব্র, ঝোড়ো হাওয়ার মুখোমুখি হইনি কোনও গিরিপথের মাথায় ৷ এত ঠান্ডা সহ্য করা দায় ৷ গিরিপথের একদিকে কেয়ার্ন, কয়েকটা ধর্মীয় পতাকা উড়ছে ৷ তার তলায় নমো নমো করে পুজো সেরে তাড়াতাড়ি নামতে শুরু করি ৷ আমাদের পিছনে পড়ে রইল শ্যামলসুন্দর কিন্নর, সামনে ঊষরভূমি স্পিতি ৷ বহুদূর পর্যন্ত চোখে পড়ে বরফের রাজ্য, তার পিছনে বাদামি পাহাড় ৷ বরফের বুক ছুঁয়ে হাওয়া বইবার একটা অদ্ভুত শন শন আওয়াজ ৷ টানা উতরাই, কয়েকটা জায়গায় ঢাল বেশ খাড়াই ৷ সেক্ষেত্রে স্রেফ বসে বসে নেমে আসি ৷ ঘোড়াগুলি কী করে নামল, সেটাই আশ্চর্য ৷ বলতে ভুলে গেছি, কালুর মাল আবার তার পিঠে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ নীরবেই মাল বইছে সে ৷ প্রদীপের বরফে আটকে যাওয়া দেখে বোধহয় ঘাবড়ে গিয়েছিল ৷

আবার গ্লেসিয়াল টেবিল ৷ বরফ কখনও শক্ত, কখনও নরম ৷ অবশেষে বরফাঞ্চল শেষ হল ৷ বরফ গলে একটি সরু নদীর সৃষ্টি হয়েছে ৷ তার পাশে একটু বিশ্রাম, হাল্কা খাওয়া ৷ তারপর আবার চলা শুরু ৷ আমাদের পাশে নদী, নদীর বুকে ছোট বড় বরফখণ্ড ভাসছে ৷ স্পিতি আমাদের কাছে নতুন ৷ তাই হয়তো সব কিছুতে বিস্ময় জাগে ৷ মাথার ওপরে ঘন নীল আকাশ, তার বুকে রাজহাঁসের মতো ধবধবে সাদা মেঘ, চারপাশে রুক্ষ পাহাড় ৷ পাহাড়ের গায়ে গাছ নেই, বরফ নেই-যেন সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী ৷ আছে শুধু অন্তরের রং-বাদামি, বেগুনি, লালচে; কত রঙের যে পাহাড় হতে পারে!

ফুসতিরাং থেকে বলদার বেশ লম্বা পথ ৷ নদীর ডানতীর দিয়ে পথ ৷ ভাবা জোতের মূল তুষারক্ষেত্রটি এখনও ছড়ানো ছিটানো, ছোট-মাঝারি আইসপ্যাচ পার হতে হচ্ছে ৷ বরফে হাঁটতে প্রথম প্রথম মজা লাগলেও ক্রমশ ব্যাপারটা বিরক্তিকর হয়ে ওঠে ৷ মনঃসংযোগ হারালে পিছলে পড়ার ভয়, বরফে পা ঢুকে যাওয়ার ভয় ৷ চলেছি তো চলেছি ৷ পদমরা অনেক এগিয়ে গেছে, কালো কালো পিঁপড়ের মতো দেখাচ্ছে ওদের ৷ বাঁদিক থেকে একটা নদী এসে মিশেছে আমাদের সঙ্গিনী নদীর সঙ্গে ৷ সাকারোগ খাগো বা নিমিশ খাগো পেরিয়ে এলে ওই নদীর পার দিয়ে পথ আসত ৷ আরও এগোলে বামদিক থেকে আরও একটি নদী এসে মিশল আমাদের সঙ্গিনীর সঙ্গে ৷ কুলু উপত্যকা থেকে পিন পার্বতী গিরিপথ (৫৩১৯ মিটার) পেরিয়ে এলে এই নদীটির ধার দিয়ে আসতে হত ৷ এই তিনটি নদী মিলিত হয়ে পিন নদীর সৃষ্টি করেছে ৷ অবশেষে আমরা পিন উপত্যকায় ৷ পিন ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে তুষারচিতা, আইবেক্স, ভরাল, তুষার মোরগ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রাণীর বসবাস, যদিও তাদের কেউ আমাদের দর্শন দেয়নি, তাদের দেখা না পেলেও না হয় চলবে, কিন্তু পদমরা কোথায় গেল? দুপাশের পাহাড়ের মধ্য দিয়ে পিন নদী সোজা বয়ে যাচ্ছে, ফলে উপত্যকার বহুদূর পর্যন্ত সরাসরি দেখা যায় ৷ অথচ পদমদের দেখা নেই ৷ পিন নদীর ডানতীর ঘাসে মোড়া সমতল ৷ অবশেষে এক সময় তাঁবুর দর্শন পেলাম ৷ বলদার (৩৮৪০ মিটার) জায়গাটির সৌন্দর্য রেখাপাত করার মতো কিছু নয় ৷ তবে সারাদিনের চড়াই-উতরাই, বরফ পেরনোর পর মনে একটা আশ্রয়ের নিরাপত্তা এনে দেয় ৷

পরদিন পিন নদীর ডানতীর ধরে যেতে হবে আমাদের, পৌঁছতে হবে ফারকা ৷ পথে দুটো নালা পার হতে হয়; প্রথমটিতে সেতু থাকলেও দ্বিতীয়টির সেতু জলে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ৷ একটু চিন্তায় থাকি ৷ পথে দেখা হল মুদ গ্রামের কয়েকটি লোকের সঙ্গে ৷ খোতে, ইয়াক নিয়ে তারা চলেছে ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নরে, ওরা জানাল, জল বেড়ে যাওয়ায় ওদের আসতে অসুবিধা হয়েছে ৷ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে নদী পার হওয়ার জন্য রোপ বের করে রাখি, কার্যক্ষেত্র অবশ্য তার প্রয়োজন হল না ৷ হাঁটু জল, কিন্তু স্রোত খুব ৷ জলে ডোবা পিচ্ছিল পাথরের ওপর দিয়ে চলা ৷ জলের তোড়ে ভেসে চলা নুড়িপাথর পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায় ৷ তবু যে খুব একটা অসুবিধা হল না তার কারণ পদম-কপিলের সাহায্য ৷ ওদের হাত ধরে নদী পার হলাম নিশ্চিন্তে ৷

নদী পেরিয়ে চলি ৷ চওড়া উপত্যকার মাঝে মাঝে হলুদ রঙা ফুলের মেলা ৷ মোটামুটি সমতল পথ, মাঝে মধ্যে হাল্কা চড়াই উতরাই ৷ আমাদের বামে, রাস্তা থেকে খানিকটা নিচে, পিন নদী বয়ে যাচ্ছে ৷ পিন বললেই মনে এসে যায় রূপিনের কথা, যার তীর ধরে গাড়োয়ালের ধৌলা থেকে আমাদের হাঁটা শুরু হয়েছিল ৷ তবে সে যাত্রায় যেভাবে রূপিন নদীর পাশে পাশে হাঁটার সুযোগ হয়েছিল, সেভাবে কিন্তু পিনকে পাচ্ছি না ৷ মনের দুঃখ ঘোচাতে পথ যেন নেমে এল পিনের ধারে ৷ মুদ গ্রামের আরও কয়েকজন চলেছে ভাবা জোতের দিকে রাস্তা মেরামত করতে ৷ কাঠ জোগাড় করতে পিন উপত্যকার লোকজনকে প্রায়ই ভাবা গিরিপথ পেরিয়ে কিন্নরে যেতে হয় ৷ তাই পথঘাটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তারা নিজের কাঁধে নিয়েছে ৷ তবে পিন নদীর বামতীর ধরে গাড়ি চলার উপযুক্ত রাস্তা তৈরির কাজ চলছে ৷ কয়েক বছর বাদে হয়তো বাসে করে পৌঁছনো যাবে কাফনু থেকে গুলিং ৷

আবার হাল্কা চড়াই ৷ পথে চড়াই-উতরাই বেশি না থাকলেও হাওয়া আমাদের নাজেহাল করে ছাড়ে ৷ ভাবা জোতের মতো নয় ঠিকই, কিন্তু হাওয়ার তীব্রতা স্পিতির প্রায় সর্বত্র অনুভূত হয় ৷ হাওয়ার আক্রমণ থেকে বাঁচতে স্থানীয় মহিলারা কাপড়ে মুখ ঢেকে রাখেন ৷ দেখাদেখি আমরাও ৷ এক সময় পৌঁছে গেলাম ফারকা গ্রামে (৩৭০০ মিটার), গ্রাম মানে চার-পাঁচটা বাড়ি ৷ বরং নদীর ওপারে মুদ গ্রাম অনেক জমজমাট ৷ গুম্ভা, বাড়ি, এমনকী হোটেল অবধি আছে ৷ আমরা অবশ্য তাঁবুতে থাকার পক্ষপাতী ৷ তাছাড়া আমাদের ঘোড়াগুলি স্পিতির সেতু পেরিয়ে নদীর ওপারে যেতে ভয় পায় ৷ সরু একটা জলধারার পাশে ক্যাম্পসাইট ৷ কাছেই বিশাল মাঠ ৷ তার মধ্যে চরে বেড়াচ্ছে গ্রামের ইয়াক, ঘোড়া, ভেড়া, খোতে আর চোবু (এক জাতীয় ছোট ছাগল) ৷ তাঁবু খাটিয়ে বেরিয়ে পড়ি মুদ দর্শনে ৷ কপিল আমাদের সঙ্গী হয়, পদম ব্যস্ত থাকে ঘোড়াদের নিয়ে ৷

রুক্ষ পাহাড়ের মাঝে চোখ জুড়ানো মরূদ্যান এই মুদ গ্রাম ৷ এত সবুজ ভাবা জোত অতিক্রম করার পর চোখে পড়েনি ৷ গ্রামের পা ছুঁয়ে বয়ে যাচ্ছে শ্যাওলা সবুজ পিন নদী ৷ নদী পার হওয়ার জন্য সেতু রয়েছে ৷ বেশ শক্তপোক্ত তবে চলার তালে দোলে ৷ আর এই দোলার ভয়ে কিন্নরের ঘোড়া স্পিতির সেতু পার হতে চায় না ৷ নদী পেরিয়ে হাল্কা চড়াই ভেঙে পৌঁছে যাই মুদ গ্রামে ৷ সাদা সাদা বাড়িঘর ৷ প্রার্থনা পতাকা, চোর্তেন ৷ কড়াইশুঁটির খেতে কাজে ব্যস্ত মেয়েরা ৷ গ্রাম পেরিয়ে গুম্ভা, মাঝে একটা নালা পড়ে, তার পাশে এসে দেখি সাঁকো নেই ৷ নেই মানে সকালে ছিল, কিছুক্ষণ আগে জল বেড়ে যাওয়ায় ভেসে গেছে ৷ ফলে আমাদের গুম্ভা দর্শনের ওখানেই ইতি ৷ আমাদের না হয় গুম্ভা দর্শন হল না, কিন্তু গ্রামের যে সব লোকজন নালার ওপারে কাজে গিয়েছিল, তাদের কী হবে? এধরনের ঘটনার সঙ্গে তারা অভ্যস্ত মনে হল ৷ বেশিরভাগই পাথরের ওপর দিয়ে বড় বড় লাফ মেরে পার হয়ে এল ৷ মুশকিল এক বৃদ্ধাকে নিয়ে, তাঁর পক্ষে লাফ দেওয়া সম্ভব নয় ৷ শেষে একটা খোতে জোগাড় করে তার ওপরে ওঁকে চড়িয়ে দেওয়া হল ৷ এক বুক জলে হিমসিম খেয়ে তাঁরা পার হলেন ৷

গ্রামের অন্যদিকে চোমোদের (মহিলা লামা) গুম্ভা ৷ চোমোরা সব গ্রামে গেছেন, এক বয়স্কা মহিলা আমাদের ঘুরিয়ে দেখান ৷ দুখাং বা মূল উপাসনাগৃহ দোতলায় ৷ অন্ধকার সরু সিঁড়ি দিয়ে ওঠা ৷ জাঁকজমকহীন সাধারণ ব্যবস্থা ৷ তাড়াতাড়ি দেখে নিই ৷ গ্রাম দেখা সেরে আবার ফারকায় ফেরা ৷ সন্ধে নেমে আসে ৷ পদম চলে যায় মাঠ থেকে শেরুদের নিয়ে আসতে ৷ কপিল রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে ৷ আজ ট্রেকের শেষ রাত ৷ লক্ষ তারার চাঁদোয়ার নিচে বসে আমাদের রোমন্থন চলে ৷ হঠাৎ উদ্বিগ্ন মুখে পদম ফিরে এল, সঙ্গে শেরুরা কেউ নেই ৷ ‘সাব, শেরুর সঙ্গে স্থানীয় ঘোড়াদের লড়াই শুরু হয়েছে’ ৷ ঘটনাটা আর তার ফলাফল অনুধাবন করতে সময় লাগল, তারপর বুঝলাম পাশের মাঠে শেরুর সঙ্গে এখানকার স্থানীয় ঘোড়াদের নেতার লড়াই শুরু হয়েছে ৷ এ লড়াই বড় ভয়ানক হয়, অনেকক্ষেত্রে ঘোড়া মারাও যেতে পারে ৷ স্পিতির ঘোড়া মারা গেলে মুদ গ্রামের লোকেরা পদমকে ছাড়বে না, আর শেরুর কিছু হলে পদমের অনেক ক্ষতি হবে ৷ শেরুকে লড়াই থেকে আলাদা করতে পারলে এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ৷ তাই পদমদের সঙ্গে টর্চ নিয়ে বেরিয়ে পড়ি ৷ অন্ধকার রাত ৷ মাঝে মাঝে ঘোড়ার ডাক আর খুরের আওয়াজ পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফেরে ৷ কিছুই দেখা যায় না ৷ তবু তারই মধ্যে পদমরা ঠিক ঘোড়ার পালের কাছে পৌঁছে যায়, পিছু পিছু আমরা ৷ কুড়ি-পঁচিশটা ঘোড়া ৷ টর্চের আলোয় চোখ জ্বলজ্বল করছে সবার ৷ লড়াই থামিয়ে পাথরের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ রাতের অন্ধকারে মনে হয় যেন এ জগতের প্রাণী নয় তারা ৷ পদমরা গুঁড়ি মেরে এগিয়ে যায় ৷ আমাদের দায়িত্ব শেরুর চোখে আলো ফেলে তাকে বিভ্রান্ত করে রাখা ৷ আচমকা, একটা ঘোড়া নড়ে উঠল; তারপর সবাই মিলে এক দৌড়ে মিলিয়ে গেল অন্ধকারে, আমাদের টর্চের নাগালের অনেক বাইরে ৷

পরদিন ভোরবেলা উঠে দেখি পদম তাঁবু ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে ঘোড়াদের খোঁজে ৷ ফারকা গ্রামের কয়েকটি বাচ্চা পিঠে ঝুড়ি নিয়ে মাটি থেকে কীসব কুড়োচ্ছে ৷ কাছে এলে জানলাম মাঠে ঘাটে গোবর জোগাড় করছে তারা, জ্বালানি হবে ৷ কালকে ঘোড়ার লড়াইয়ের খবর তারা জানে না ৷ ওদিকে শেরুকে না পাওয়া গেলে আমাদের খুব অসুবিধা হবে, আজ আদৌ বের হতে পারব কিনা সন্দেহ ৷ হঠাৎ দেখি দিগন্তে শেরু ৷ পদম আর কপিল সহজেই গ্রেপ্তার করে নেয় রণক্লান্ত শেরুকে ৷ রাতে উদ্বিগ্ন থাকলেও এখন খুব খুশি পদম ৷

এবার আমরা রওনা দিতে পারি ৷ আজ যাব গুলিং (৩৪৫০ মিটার) ৷ অনেকে ভোরবেলা ফারকা ছেড়ে দুপুরের মধ্যে মিক্কিম পৌঁছে, দুপুর এগারোটার বাসে সোজা চলা যায় কাজা ৷ আমাদের অত তাড়া নেই ৷ হাল্কা চড়াই-উতরাই পথ ৷ পথের ধারে দুয়েকটা খেত ৷ তারপর সটান নেমে আসি নদীর ধারে ৷ পাথরে মোড়া চওড়া নদীখাত ৷ আরেকটা নদীর সামনে এসে দাঁড়াই ৷ নাম কোটকি নালা ৷ যথারীতি নদীতে সেতু নেই ৷ কোটকি নালা বেশ চওড়া নদী, কিন্তু পার হতে আমাদের কোনও অসুবিধা হল না ৷ নদী পার হয়ে হয়ে আমাদের বোধহয় অভ্যাস হয়ে গেছে ৷ নদীর ওপারে তিলিং গ্রাম ৷ এই গ্রাম থেকে কোটকি নালা ধরে লারসা ওয়ে গিরিপথ (৫২০০ মিটার) পেরিয়ে কিন্নরে যাওয়া যায় ৷ আরও এগিয়ে তান্নাম, একটি বাড়ি নিয়েই গ্রাম ৷ বাড়ির মালিক আমাদের পূর্বপরিচিত ৷ কিন্নর থেকে কাঠ কেটে ফেরার সময় কারাতে আলাপ হয়েছিল ৷ আবার চলা, নদীর ওপারে গাড়ির রাস্তা তৈরি হচ্ছে ৷ দূর থেকে দেখা যায় সগনম ৷ ক্রমে সে বড় হতে থাকে ৷ পিন নদী ও পীরহিও নদীর সঙ্গমস্থিত এই জনপদটিতে থাকার ভালো ব্যবস্থা আছে ৷ সঙ্গমের অপর পারে মিক্কিম ৷ আমাদের রাস্তা থেকে খার গ্রাম হয়ে যেতে হয় ওখানে ৷ সেদিকে না গিয়ে, আমরা সোজা চলি ৷ একসময় দূরে দেখা যায় গুলিং গ্রাম ৷ ট্রেকিংয়ের শেষ অঙ্কে এসে পৌঁছেছি আমরা ৷ নেমে আসতে হয় পিন নদীর পারে ৷ নদী পার হওয়ার জন্য স্টিলের ব্রিজ আছে, কিন্তু শেরুরা তাতেও নারাজ, সুতরাং বাকি অংশটুকু নিজেদেরই মাল বয়ে নিয়ে যেতে হয় ৷ গুলিংয়ে থাকার হোটেল মাত্র একখানি ৷ সস্তায় রাজকীয় ব্যবস্থা ৷ মালপত্র পৌঁছে দিয়ে পদমরা ফিরে যায় ৷ হোটেল লাগোয়া রেস্তোরাঁয় খাবার বানাতে বলে ছাদে চলে আসি ৷ ছাদের ওপরে ধর্মীয় পতাকা আর ডিশ অ্যান্টেনার অদ্ভুত মেলবন্ধন ৷ চারদিকে উঁচু উঁচু বাদামি পাহাড় ৷ ওধারে বয়ে যাচ্ছে পূর্ণ যৌবনা পিন ৷ দূরে, তার বুকের ওপর একটা ব্রিজের আবছা আদল ৷ সেখান থেকে পাঁচটি ছায়ামূর্তি ফিরে যাচ্ছে মুদের দিকে ৷ এবার পদমদের ঘরে ফেরার পালা, আমাদেরও ৷

ভ্রমণ অক্টোবর, ২০০১

সকল অধ্যায়

১. অর্ধশতাব্দীর আগের বদ্রীনাথ যাত্রা – প্রতাপকুমার রায়
২. মানস অভয়ারণ্য – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩. জলদাপাড়া অরণ্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪. জলের ধারে ঘর – নবনীতা দেব সেন
৫. জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির – উষা সেন
৬. তাহিতি – হরপ্রসাদ মিত্র
৭. মার্কন্ডেয় গঙ্গার উত্স সন্ধানে – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮. কেদার বদ্রী – মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
৯. তেহরানি হয়রানি – অমিতাভ চৌধুরি
১০. শোনপুরের মেলায় – বরুণ দত্ত
১১. এলেম নতুন দেশে – কমলা মুখোপাধ্যায়
১২. মস্কো থেকে সাইবেরিয়া হয়ে পিকিং – গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩. পাতাল-ভুবনেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
১৪. ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ
১৫. নিকোবরের দ্বীপে – তিলকরঞ্জন বেরা
১৬. তিরতিরে নদী আর শাল জঙ্গলের দেশে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭. আমার ভ্রমণ – মহাশ্বেতা দেবী
১৮. সুন্দরবন – হীরক নন্দী
১৯. ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত
২০. সাইকেলে পাঁচ বছরে ভূ-পর্যটন – ভূপর্যটক বিমল দে
২১. আঙ্কোর ভাট – প্রীতি সান্যাল
২২. হিমালয়ের সাতকাহন – ত্রিদিব বসু
২৩. স্বপ্নের পথেই যাওয়া যায় – মহাশ্বেতা দেবী
২৪. ছোট কৈলাস – সুভাষ দত্ত
২৫. বালতাল হয়ে অমরনাথ – প্রতাপকুমার রায়
২৬. মধ্য এশিয়া অভিযান – গৌতম ঘোষ
২৭. পথ হারিয়ে সিকিমের জঙ্গলে – রতনলাল বিশ্বাস
২৮. নতুন করে পাব বলে – বন্দনা সান্যাল
২৯. সেবার ব্রেকজার্নি করে – জয়া মিত্র
৩০. চন্দ্রভাগার উৎস চন্দ্রতাল সুর্যতাল – সুনীলকুমার সরদার
৩১. ওঙ্কারেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
৩২. সুন্দরবনে দুদিন – পবিত্র সরকার
৩৩. মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়
৩৪. দিকবিদিকে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৫. তিস্তানদীর উৎসে – শরৎ ঘোষ
৩৬. পশ্চিমে হাওয়াবদল – মধুপর্ণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৭. এক টুকরো নীল চাঁদ – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৩৮. কালিম্পং থেকে তিব্বত – অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
৩৯. সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু
৪০. মির্জা শেখ ইতেসামুদ্দিনের বিলেত যাত্রা এবং আমি – নবনীতা দেব সেন
৪১. বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
৪২. গানতোক থেকে ইয়ুমথাং – সুতপা ভট্টাচার্য
৪৩. ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল
৪৪. ডুয়ার্সের দুয়ার এখন খোলা – সমরেশ মজুমদার
৪৫. ইউরোপে দিন কয়েক – পূর্ণেন্দু পত্রী
৪৬. রামচন্দ্রের বনবাসের পথ পরিক্রমা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. আসমুদ্রককেশাস – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
৪৮. নিরলংকার ভ্রমণ – শঙ্খ ঘোষ
৪৯. চেঙ্গিস খানের দেশে – প্রতাপকুমার রায়
৫০. মিজোরামের নীল পাহাড়ে – দীপঙ্কর ঘোষ
৫১. সিন্ধুদুর্গ – বিশ্বদীপ দত্ত
৫২. জিম করবেটের জঙ্গলে – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩. থর মরুভূমিতে ট্রেকিং – শিবনাথ বসু
৫৪. মরোক্কো ভ্রমণ – হরপ্রসাদ মিত্র
৫৫. ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ – নবনীতা দেব সেন
৫৬. গন্তব্য মাচুপিচু – প্রতাপকুমার রায়
৫৭. কই যাইত্যাছি জানি না – শঙ্খ ঘোষ
৫৮. পারাংলা অভিযান – সুনীলকুমার সরদার
৫৯. পুশকিন, মলদভা আর কচি পাতার বাঁশিতে মোত্সার্ট – প্রীতি সান্যাল
৬০. আমাদের ছোট নদী : পার্বতী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬১. দেবলোকের পথে পথে – অশোক চক্রবর্তী
৬২. না-ভ্রমণের বৃত্তান্ত – আশাপূর্ণা দেবী
৬৩. এভারেস্টের পাদদেশে যাত্রা – কমলা মুখোপাধ্যায়
৬৪. নীল নদে পাঁচদিন – হরপ্রসাদ মিত্র
৬৫. বারাণসীর ঘাটের কথা – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৬. বালফাক্রমের পাহাড়-জঙ্গলে – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৬৭. গৌরীগঙ্গার উৎসব মিলাম হিমবাহ – পুরুষোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৮. মরুভূমির দিনরাত্রি – পবিত্র সরকার
৬৯. ঢাকা : একুশ বছর পর – অন্নদাশঙ্কর রায়
৭০. ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
৭১. ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউ – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৭২. কালিন্দী গিরিবর্ত্ম – রথীন চক্রবর্তী
৭৩. একযাত্রায় ভোরামদেরও আর কানহা – হীরক নন্দী
৭৪. মদমহেশ্বরের ডোলিযাত্রা – কাজল দত্ত
৭৫. কেনিয়ায় পাঁচ অরণ্য – প্রতাপকুমার রায়
৭৬. কোনাডা থেকে রেভুপাল ভরম – রতনলাল বিশ্বাস
৭৭. চাঁদের দেশ লাদাখ – কমলেশ কামিলা
৭৮. বোকের তোভ, ইজরায়েল – নবনীতা দেব সেন
৭৯. বিষ্ণুপুর মুকুটমণিপুর – হরপ্রসাদ মিত্র
৮০. ডোকরিয়ানি বামক – অনিন্দ্য মজুমদার
৮১. তাওয়াং থেকে তাসি-চু জং – কমলা মুখোপাধ্যায়
৮২. মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল
৮৩. আকাশচূড়ায় অভিযান – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮৪. ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ
৮৫. সারেঙ্গেটির জঙ্গলে – হরপ্রসাদ মিত্র
৮৬. এবারের কুম্ভমেলায় – চিন্ময় চক্রবর্তী
৮৭. অন্য পথের পথিক – বুদ্ধদেব গুহ
৮৮. গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়
৮৯. নিশীথ সূর্যের দেশ – প্রতাপকুমার রায়
৯০. সবুজ নামদাফাতে – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
৯১. পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু
৯২. গোঁসাইকুণ্ড – কমলা মুখোপাধ্যায়
৯৩. অমরকন্টক – হীরক নন্দী
৯৪. আদিম ডুয়ার্সের আধুনিক রূপকথা – সূর্য ঘোষ
৯৫. পার্বতী উপত্যকায় সার পাস – বিদ্যুৎ দে
৯৬. মিয়ানমার, ইরাবতীর সঙ্গে – পবিত্র সরকার
৯৭. রূপসী রিশপ – হীরক নন্দী
৯৮. হিমবাহের জন্মভূমিতে – শেখর ভট্টাচার্য
৯৯. ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার
১০০. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত – হরপ্রসাদ মিত্র
১০১. বক্সা দুর্গ – টুটুল রায়
১০২. সিন্ধু নদের ধারে – রতনলাল বিশ্বাস
১০৩. মেঘালয়ের দাউকি – সুমিত মুখোপাধ্যায়
১০৪. আমাদের ছোট নদী : লিডার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০৫. লাসা – সমীর রায়
১০৬. ২ নম্বর লোভালোয়া স্ট্রিট – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
১০৭. অযোধ্যা পাহাড় – বিশ্বদীপ দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন