ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ

বেড়ানোর সময়ে যদি কোনও ঝঞ্ঝাটই না হল, তাহলে সে বেড়ানোটায় আর সুখ কী! পালামৌ গিয়ে বেতলার জঙ্গলে গাড়ির চাকা একেবারে বিগড়ে গেল যখন, তখনই যেন সেরকম এক সুরম্য ঝঞ্ঝাটের মুখোমুখি হলাম সেবার ৷

কয়েকদিন হল এসেছি বেতলায় ৷ দশ-বারো দিন থাকব বলে কিছুরই জন্য কোনও তাড়া নেই ৷ বেতলায় বারো দিন? শুনে কারও কারও মুখে ভেসে ওঠে কৌতুকমাখা বিস্ময় ৷ আরও তো কত বেড়াবার জায়গা আছে পড়ে, কে আর এখানে জমে থাকে এতদিন? অবশ্য এ বিস্ময় আর কতটুকুই বা? দীঘায় একবার ছদিনের দিন স্থানীয় এক দোকানি জিজ্ঞাসা করে বসেছিলেন: ‘এ কী কাণ্ড, যাননি এখনও আপনারা? করছেন কী এখানে?’ কিছুই যে করছি না, সে কথাটা আর কবুল করা গেল না তাঁকে, প্রতিশ্রুতি দিতে হল যে ফিরে যাব নিশ্চয় শিগগিরই ৷

নইহার নামে বেতলার যে হোটেলটায় আছি, কেবলই তার বদল হয়ে যাচ্ছে বাসিন্দা, স্বভাবতই ৷ কিন্তু, একেবারে বারো না হলেও, দিন সাতেকের জন্য সঙ্গী পাওয়া গেল শৈশবে-যৌবনে-বার্ধক্যে মেলানো ছজনের এক ভরাট পরিবারকে, পিপলাই তাঁদের পদবি ৷ মনসামঙ্গলের বিপ্রদাস পিপিলাইয়ের পর এই দ্বিতীয়বার বোধহয় শুনলাম ওই নাম ৷

পরিবারের যিনি প্রধান, পরম সুভাষী আর সুহাস মানুষ তিনি ৷ বয়স অনেক, শারীরিক অসুবিধাও বেশ প্রবল ৷ কিন্তু অপ্রতিহত তাঁর কৌতূহল, অবাধ তার প্রাণোচ্ছলতা, আর প্রায় কিশোরের মতো অদম্য তাঁর বাঘ দেখবার ইচ্ছে ৷ স্ত্রী-পুত্র-পুত্রবধূ আর নাতনিদের নিয়ে এসেছেন তিনি এখানে বাঘের আশায় আশায় ৷

আছে কি সত্যিই বাঘ, এ জঙ্গলে? আমার স্বরে অবিশ্বাসের ইশারা পেয়ে ক্ষুব্ধ বনরক্ষীরা গর্বিতভাবে জানান যে এই তো কদিন আগেই জঙ্গলসীমানায় এক বাছুর মেরে গেল ওরা ৷ বাঘ যদি নেই তো বাছুরটাকে মারল কে? আর সত্যিও, সরকারিভাবে নোটিস বোর্ডে তো ঝুলছে এই খবর যে আমরা ওখানে পৌঁছবার ঠিক বাইশ দিন আগে এক পর্যটকদল এ জঙ্গলে শেষবার দেখে গেছে বাঘ ৷ বাঘদর্শনের শেষ তারিখটা এইভাবে সবার সামনে ঘোষিত রাখাই নিয়ম ৷ ওই দলটির নাম মুছে কি তবে আমাদের নামটাও উঠে আসতে পারে না ওখানে?

নাম তুলবার সেই সাধনায়, দিনের পর দিন, আমাদের তৎপরতা চলল জঙ্গলপ্রবেশের ৷ কখনও ভোরবেলায়, কখনও বিকেলে ৷ গাড়ি ছাড়া কিংবা হাতি ছাড়া জঙ্গলে ঢোকা নিষেধ ৷ পায়ে হাঁটা নিষেধ ৷ অন্ধকারে ঘোরা নিষেধ ৷ এইসব নিষেধসূত্র মেনে নিয়ে বনবিভাগের গাড়িতে বা হোটেলের গাড়িতে জঙ্গলের এ মুখ ও মুখ ঘুরে বেড়াই আমরা, কখনও কখনও পরিচালকের নির্দেশে নাটকীয় নৈঃশব্দ্য পালন করি, চকিতে চকিতে ঘাড় ঘোরাই ডাইনে-বাঁয়ে, কিন্তু বাঘের কোনও হাওয়াও মেলে না কোথাও ৷ গাড়ি থমকে দিয়ে গাইড মহোদয় কখনও কখনও সুনিশ্চিতভাবে ধুলোর কোনও চিহ্ন দেখিয়ে বলেন: ‘আঃ হা, একটু আগেই চলে গেছে, এই দেখুন পায়ের ছাপ ৷’ সে যে বাঘেরই পায়ের ছাপ, সেকথা বুঝিয়ে দিয়ে আমাদের বাধিত করেন তিনি, আর অনায়াসে সেটা মেনে নিয়ে আমরাও বাধিত করি তাঁকে ৷ ধোঁয়া থেকে যেমন আগুনের ধারণা হয়, ওরকম অলীক পদচিহ্ন থেকে তেমনই বাঘের ধারণা নিয়ে তুষ্ট থাকি আমরা ৷

এইরকমেরই এক ভ্রমণকালে, গাছগাছালির গাঢ় গন্ধে যখন বিভোর আমরা জঙ্গলের গভীরে, হঠাৎ একটা ধাক্কা দিয়ে থেমে যায় গাড়ি ৷ তবে কি বাঘ এল? উৎসুক চোখে ঝুঁকে পড়ি সবাই ৷ কিন্তু না, তেমন কিছু নয় ৷ বিকারহীন ড্রাইভারটি শুধু বলেন, ‘টায়ার পাংচার! গাড়ি আর যাবে না ৷’

‘যাবে না? সে কী কথা? যাবে না কেন? আরেকটা টায়ার লাগিয়ে নিন তবে ৷’ দলের যুবকসঙ্গীটি বলেন ৷

‘নেই সঙ্গে ৷’

‘নেই? স্টেপনি না নিয়েই বার করেছেন গাড়ি? এ রকম কেউ করে কখনও? এখন তাহলে কী করব আমরা?

‘হাঁটতে হবে ৷ উপায় তো নেই ৷’

‘হাঁটতে হবে? জঙ্গলের মধ্যে হাঁটা না নিষেধ?’

‘কিন্তু এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তো আরও নিষেধ ৷’

বিতণ্ডায় কোনও ফল নেই বুঝে গাড়ি থেকে নামবারই আয়োজন করি একজন-দুজন ৷ সন্তর্পণে জিজ্ঞাসা করি শুধু: ‘বেরোবার পথ এখান থেকে ঠিক কতদূর?’

একটুও না ভেবে ড্রাইভার বলে: ‘পাঁচ কিলোমিটার ৷’

‘পাঁচ? পাঁচ কিলোমিটার এঁরা হাঁটবেন এই জঙ্গলে? এইসব মহিলা আর শিশু?’

সত্যিই তো, ড্রাইভার আর গাইড ছাড়া আমাদের আটজনের দলে তখন তিনজন মহিলা, দুজন শিশু ৷ পাঁচ কিলোমিটার হাঁটবেন কেমন করে এঁরা?

‘আপনারা কেউ কি গিয়ে অন্য গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন না?’

‘সে তো অনেক সময়ের ব্যাপার ৷ ততক্ষণ এখানে থাকা ঠিক হবে না ৷ নিয়ম নেই ৷’

‘তাহলে?’

শেষপর্যন্ত এই রফা হয় যে ফাটা টায়ারেই কোনওরকমে টেনে টেনে চলবে গাড়ি, কেবল মহিলা আর শিশুদের নিয়ে ৷ আমরা পুরুষেরা শুধু বীরদর্পে অনুসরণ করব তাকে ৷

যাতে একেবারে বিপদে না পড়ি তার জন্য ক্ষীণ একটা আয়োজনও ছিল অবশ্য ৷ পথচলতি পাওয়া গেছে একটা ভাঙা সরু ডাল, সম্ভাব্য বাঘের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করবার অন্তিম উপায় হিসেবে সেটা যেন অবশ্যই ব্যবহার করি, মহিলারা বারংবার বলে দিলেন সেটা ৷ ভাঙা গাড়ির পিছনে পিছনে ভাঙা ডাল হাতে নিয়ে বনের পথে পথে বেশ খুশিভাবেই চলতে থাকি আমরা ৷ খুশি, কেননা নিষেধ ভাঙা গেছে এতক্ষণে ৷ তবে এও ঠিক, এতদিন মনে হচ্ছিল আমাদের দুর্ভাগ্য যে বাঘ দেখতে পাচ্ছি না আমরা, আর এবার মনে হল আমাদের সৌভাগ্য যে আমাদেরও দেখতে পাচ্ছে না বাঘ ৷

সত্যের খাতিরে অবশ্য বলতে হয় যে পাঁচ কিলোমিটারই হাঁটতে হয়নি শেষপর্যন্ত ৷ খানিক দূর এগিয়ে দেখি দূরে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি ৷ দাঁড়িয়ে কেন? পারছে না আর যেতে? উৎকণ্ঠা নিয়ে কাছে পৌঁছে দেখি ড্রাইভারের মুখে এক হতাশ নম্রতা ৷ বলেন, ‘উঠুন, উঠে আসুন সকলেই ৷’ ওই পর্যন্ত যেতে যেতে মহিলারা না কি তাঁকে বোঝাতে পেরেছেন যে ওঁদের নিয়ে যখন চলতে পারছে গাড়ি, বাকি কজনকে তুলে নিলে এমন আর কী হবে!

একেবারে যে কিছু হল না তা নয় ৷ সবাইকে নিয়ে চলতে চলতে গাড়ির চাকা এবার সমূলে গেল ভেঙে ৷ এমনকী তার কিছুটা গেঁথে গেল মাটির মধ্যে, আমাদের কারও কারও মনে এল একটা কর্ণভাব ৷ এবার আর কোনও বিকল্প নেই, হাঁটতেই হবে সবাইকে ৷

তবে, খুব বেশি আর বাকিও নেই ৷ ওই দূরে দেখা যায় বেরোবার পথ ৷ বাঘের রাজত্ব ছেড়ে এখন আমরা হরিণদের দেশে এসে পৌঁছে গেছি প্রায় ৷ নানা বিভঙ্গে শয়ে শয়ে হরিণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে যেন চিত্রিত কোনও সীমানারেখার মতো ৷ ওই অচলতা থেকে চকিতে তারা ভেতরকার একটা দৌড় সংগ্রহ করে নেবে এক্ষুনি ৷

গাড়ি নিয়ে পরিক্রমা জঙ্গলের একটা শৌখিন চেহারাই শুধু দেখায় ৷ তার ঠিক ঠিক বুকের মধ্যে পৌঁছতে যদি চাই, হাতিই বরং ভালো-মনে হল আমাদের ৷ বিশেষত, সওয়ার নিয়ে চলতে প্রস্তুত, এমন দুটো শিষ্ট হাতি যখন মজুতই ছিল বনবিভাগের হাতে ৷

বুনো হাতি অবশ্য চারদিকেই ৷ ঝকমকে বাদামি তাদের গা, দলবল নিয়ে চলবার সময়ে রাজসিক তাদের পা ফেলা, ভ্রামণিকদের দিকে মাঝে মাঝে তাদের সংশয়ভরা অবজ্ঞাভরা চাহনি ৷ এদের সৌন্দর্যে আমাদের মুগ্ধতা দেখে স্থানীয় লোকেরা খুশি হন না অবশ্য, সাতকাহনে তাঁরা শোনান এদের প্রাত্যহিক উৎপাতের খবর, এদের সঙ্গে এখানকার বাসিন্দাদের দৈনন্দিন যুদ্ধের কাহিনী ৷ সে যুদ্ধ আমরাও যে একেবার টের পাইনি তা নয় ৷

প্রথম সন্ধ্যাতেই অন্ধকারে ফিরছি যখন হোটেলের দিকে, টর্চ হাতে আমাদের দুজনকে খুঁজতে বেরিয়েছেন উদবেগমুখর রায়মশাই, হোটেলের ম্যানেজার ৷ ‘কোথায় চলেছেন?’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করি ৷

‘এই যে, আপনারা! ফিরছেন এত অন্ধকারে, টর্চ ছাড়া বেরিয়েছেন কেন?’

‘ক্ষতি কী?’

‘ক্ষতি? চুপচাপ কখন হাতি এসে যাবে অন্ধকারের সঙ্গে মিশে, টেরও তো পাবেন না ৷’

‘আসে না কি এরকম?’

‘প্রায়ই ৷ জানতেই পাবেন দুয়েকদিনের মধ্যে ৷ হয়তো আজ রাতেও হতে পারে ৷’

‘ক্ষতি কী, আসেই যদি?’

‘বলেন কী? ক্ষতি নেই? মেরে দিতে পারে তো ওরা ৷ এই তো সেদিন সকালবেলায় এখানকার এক বউ বাসন মাজছিল ঘাটে ৷ পিছন থেকে হঠাৎ এসে পা দিয়ে থেঁতলে দিয়েছে তার মাথা ৷’

শুনতে শুনতে আমরা ঢুকে যাই হোটেলে ৷ রায়মশাইকে প্রথমে হয়তো একটু বেশিমাত্রায় সতর্ক আর সন্ত্রস্ত বলে ভাবি ৷ তবে দু-চারদিনের মধ্যে এও বুঝতে পারি যে একেবারে নিষ্কারণ নয় তাঁর উদবেগ ৷ অন্তত রাত্রিবেলার ঘুম যে মাঝে মাঝেই টুটে যায় গ্রামবাসীদের চিৎকারে আর টিনের বাজনায় আর পটকা ফাটানোয় আর মশাল জ্বালানোয়, সে অভিজ্ঞতা তো হলই আমাদের কদিন ৷ ধানের খেত পাহারা দিয়ে বসে থাকে অনেকে, কেননা হাতির লোভ ধানখেতে আর বাঁশঝাড়ে, রাত্রিবেলার অন্ধকারে চুপিসারে চোরের মতো আনাগোনা তাদের ৷ ঘুম ছেড়ে এক রাতে দৌড়ে এসে দেখি সমস্ত দিকে চলছে দৌড়ঝাঁপ ৷ বহুদূর বৃত্ত করে চারদিকটাকে ঘিরে ফেলেছে সবাই উৎকট শব্দে আর আলোয়, দূরবর্তী ও কোণ থেকে এ কোণে হয়তো কেউ খবর পাঠাচ্ছে যে হাতি এসেছে এই দিকেই ৷ কিন্তু কোথায় হাতি? পাঁচিলের এদিক-ওদিক চেষ্টা করে কোথাও তাকে দেখতে না পেয়ে হতাশ আমরা আশ্রয় নিই ঘুমে ৷ পরদিন ভোরবেলায় ততোধিক হতাশ হয়ে শুনতে পাই যে সে না কি চুপ করে লুকিয়ে ছিল একেবারে আমাদের পাঁচিলটারই গা ঘেঁসে, কুলগাছটার নীচে, লতায় পাতায় অন্ধকারে মিশে ৷

দিনের আলোয় বেরিয়ে এসে দেখি, জঙ্গলসীমার ঠিক বাইরেই যে দুয়েকটি ঘর দেখেছিলাম কাল, আজ আর তা নেই ৷ ‘আরে, ঘরটার কী হল?’ আমার এই প্রশ্ন শুনে বাচ্চা একটি ছেলে খুব সহজভাবেই বলে: ‘হাতিতে ভেঙে দিয়েছে কাল ৷’ ‘তুমি কোথায় থাক?’ ‘কাল ছিলাম এইখানে, আজ থাকব ওইখানে’-আঙুল তুলে পাশেরই আরেকটা ঘর দেখিয়ে দেয় সে ৷ ‘ওটাও যদি ভেঙে দেয় আজ?’ শুনে তাকিয়ে থাকে ছেলেটি ৷ তাহলে যে কী করবে, সেটা তার জানা নেই ঠিক ৷

দিনেরবেলাতেও ত্রুদ্ধ এক বুনো হাতিকে দূর থেকে দেখেছিলাম সূর্যগ্রহণের দিনে, গ্রহণ শেষ হয়ে যাবার মুখে ৷ বেতলার জঙ্গলে কিছু কিছু জায়গা আছে পাথরস্তূপে উঠে যাওয়া ছোট ছোট পাহাড়চুড়োর মতো ৷ ভোরেরবেলাই অন্ধকার হয়ে গিয়ে আবার যখন আবছামতো দেখা দিচ্ছে আলো, আলো-আঁধারি সন্ধ্যা ভেবে বকের দল সবাই যখন উড়ে এসেছে ডালে, কাছাকাছি সব বসে আছে স্তব্ধ, আকস্মিক ওই অন্ধকারে পশুপাখিদের নিত্যদিনের চলন যখন বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই শোনা গেল এক দূরাগত বৃংহিত ৷ ‘বৃংহিত’ শব্দটা যে এমনভাবে ব্যবহার্য হতে পারবে তা ভাবিইনি কখনও আগে ৷ হোটেলের জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি জঙ্গলের সেই চুড়োয় মত্ত এক দাপাদাপি, কোনও এক অজ্ঞাতের বিরুদ্ধে আক্রোশে যেন ভেঙে দিচ্ছে কেউ বড় বড় গাছের ডাল, ঘন গাছের বেষ্টন সরে গিয়ে দেখা দিচ্ছে শুঁড়, আর তারপর পুরোপুরি হাতিটা ৷ কে জানে, হয়তো বা এই হাতিরই মদগর্বিত মন্থর চলা দেখে আপ্লুত ছিলাম কদিন আগেই, হয়তো এইটেই সে ৷

আর, হয়তো এই চুড়োরই কাছাকাছি উঠে গিয়েছিলাম সেদিন আমরা, পোষা হাতির পিঠে ৷ চার চাকার জন্য তৈরি পথে নয়, সে হাতি চলেছিল, জলাজমি ডিঙিয়ে গাছে-আগাছায় ভরা পথহীন পথে ৷ আমরা এখন অনেকটা উচ্চতায় বসেছি বলে সেসব গাছের শাখাপ্রশাখা কখনও আঘাত করতে চায় মাথায়, সময়মতো নিচু হয়ে যাই চারজনে, এ শাখা ও শাখার মাঝখানে ফুটচারেক লম্বা-চওড়া মাকড়সার জালের ওপর চিকচিক করে ভোরবেলাকার শিশির, হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে হয় যাতে তারা না জাপটে ধরতে পারে মাথা ৷ কবে কে এসেছিল এ পথে, কবে কোন বিপদ ঘটেছিল, নিচু গলায় মাহুত বলতে থাকে অতীতের সেসব গল্প ৷ নিশ্চিতভাবেই অনেকবার বলা তার সেই গল্পগুলোকে শোনায় যেন স্বতঃস্ফূর্ত, সজীব; আর হাতি উঠতে থাকে চুড়োর দিকে ৷

সংকীর্ণ সেই পাথুরে পথে একটিমাত্র হাতিরই পদক্ষেপের জায়গা হতে পারে কোনওমতে, সে পথে পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি কোণ করে উঠে যাচ্ছে সে অবহেলায় ৷ দুলকি চালে দুলতে দুলতে আমরা কখনও আকাশ দেখছি কখনও মাটি ৷ আর, একটা জায়গায় থমকে গিয়ে মাহুত দেখাচ্ছে ‘ওই যে একেবারে শেষ পাথরটা, তাকান’ ৷ তাকিয়ে দেখি সেখানে স্থির একলা এক ময়ূর, যেন মহাশূন্যতায় দাঁড়ানো ৷ বৃক্ষবিরল সেই জায়গার দিকে ইঙ্গিত করে মাহুত বলে: ‘ওরই ঠিক পিছনে একটা গুহা ৷ সেখানে থাকে বাঘ ৷’

বাঃ ৷ বাঘ দেখা না হোক, বাঘের ডেরা দেখা হল ৷

শান্ত হাতি আবার আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে চলল নীচে ৷ কিন্তু নামবার পথে আরেক তথ্য জেনে প্রায় চমকে উঠি আমরা ৷ বনবিভাগের হাতিদুটোর একটাকে নাকি ওঁরা ডাকেন ‘আনারকলি’ ৷ ‘আর এইটে? যার পিঠে আমরা চলছি?’ মৃদুহাস্যে মাহুত বলে, ‘এর নাম জুহি চাওলা ৷’

কী সর্বনাশ! কিন্তু তখন তো আর নেমে পড়বারও কোনও উপায় নেই ৷

না, বেতলা ছেড়ে যে অন্য কোথাও যাইনি একেবারে, সেটা ঠিক কথা নয় ৷ একদিন এক রাতের জন্য আরও এক জঙ্গলে আমরা গিয়েছিলাম, মারুমার ৷

নইহারের মালকিন যিনি, পাপড়ি চৌধুরী, তাঁর সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য ৷ অক্টোবরের এক ভোরে সে হোটেলে পৌঁছবার পর বেশ আত্মজনসুলভ ব্যবহার মিলল তাঁর কাছে ৷ অল্প পরেই তিনি ফিরে আসবেন কলকাতায়, তারই মধ্যে বুঝে নিতে ভোলেন না আমাদের ইচ্ছে-অনিচ্ছে, আমাদের পছন্দ-অপছন্দ ৷ ‘একেবারে জঙ্গলের ভেতরে একটা রাত কি কাটাতে ভালো লাগবে আপনাদের’ এও জানতে চান তিনি ৷ সেইরকমই যে আমাদের আদত ইচ্ছে ছিল, সেটা শুনে রায়মশাইকে কিছু কিছু নির্দেশ দিয়ে যান তিনি ৷ আর বলেন আমাদের, ‘মারুমারে একটা কটেজ আছে আমাদের, ছোট্ট, হয়তো আপনাদের অসুবিধাই হবে একটু ৷ তবে দেখাশোনা করবার মালীও আছে একজন, সে ব্যবস্থা করে দেবে সব ৷ আপনাদের সুবিধেমতো যে কোনওদিন চলে যাবেন অগ্রিম একটা খবর দিয়ে ৷’

গেলামও একদিন, আমরা দুজন ৷ নইহারের কর্মীরা গাড়িতে তুলে দিলেন দরকারমতো অনেক সম্ভার, এমনকী রান্নারও সব উপাদান ৷ তরুণ আদিবাসী ড্রাইভার রামদয়াল ছাড়া সঙ্গে থাকে আরেক কর্মী পিন্টু ৷ গাড়ি চলবার সঙ্গে সঙ্গে তারা ডাইনে বাঁয়ে দ্রষ্টব্যের পরিচয় দিতে থাকে অল্পস্বল্প ৷ দুধারে বনভূমি রেখে পরিচ্ছন্ন বাঁধানো সড়ক চলেছে মাইলের পর মাইল, চোখে এসে লাগে অগাধ শুশ্রূষা ৷ অনেক দূরে দূরে ছোট ছোট একটা-দুটো বসতি ৷ রাস্তার ওপর দিয়েই কখনও বয়ে গেছে ঝোরা ৷ তেমনই এক ঝোরার ওপর জল ছিটিয়ে গাড়ি পেরোবার সময়ে পিন্টু বলে, এইখানে দেখবেন পর পর দশটা এমন পেরোতে হবে ৷ ঠিক, জল ছিটিয়ে ছিটিয়ে পেরিয়ে যাই দশটা যেন সমান মাপের ঝোরা, প্রায় সমান সমান দূরত্বে ৷

বেতলা আর মারুমারের মধ্যে বড় একটা জনপদের নাম গারু ৷ সেই গারু পেরিয়ে যাবার ঠিক আগেই চোখে পড়ল, উল্টোদিক থেকে হেঁটে আসছে অল্পবয়সী আদিবাসী এক তরুণী ৷ মনে হল গাড়ির দিকে তাকিয়ে তার চোখ যেন ঝিলিক দিচ্ছে ৷ হেঁটে চলা এরকম দু-চারজন মানবমানবী তো সব সময়েই দেখা যায় ধাবমান পথের দুধারে, কিন্তু প্রগাঢ় কালো রঙের ওই মসৃণ মুখমণ্ডল তার রহস্যময় চাহনিতে যেন স্মৃতির মধ্যে গাঁথা হয়ে যায় ৷ ওরকম তাকাতে পারে কেউ?

একটু এগিয়েই আচমকা থেমে যায় গাড়ি ৷ স্বল্পভাষী রামদয়াল নেমে যায় কিছু না বলে ৷ পিছন দিকে কোথায় চলল সে হঠাৎ? তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে দূরে, লজ্জায় কৌতুকে বাসনায় ভরা এক আধো কটাক্ষে সে তাকিয়ে আছে এই দিকে, আর তার সামনে পৌঁছে গিয়ে কিছু হয়তো বলছে রামদয়াল ৷ ‘কী কথা তাহার সাথে? তার সাথে?’ অল্প পরে প্রোজ্জ্বল মুখে ফিরে আসে সে গাড়িতে, চলতে শুরু করে গাড়ি, পিছন দিকে মেয়েটিও মিলিয়ে যায় দূরে ৷ আমাদের কৌতূহল অনুমান করে পিন্টু তখন বলে, ‘ওর বউ ৷ এইজন্যই বারবার এ পথে আসতে চায় ও ৷’

তাই বলো! দৃষ্টিরহস্যের একটা কিনারা হল তবে ৷ বহুস্তরান্বিত ওই কালো চোখের চাওয়া জঙ্গলবাসের একটা উপার্জন হল এবার ৷ নব্যবিবাহিত রামদয়ালের দিকে তাকাতে হবে এবার তবে ভিন্নরকম চোখে ৷

জঙ্গলের একেবারে ভেতরে বলতে যা বোঝায়, চৌধুরীদের কটেজটা ঠিক সেরকম নয় ৷ পথের ধারে ছোট্ট এক বাড়ি ৷ পথের ধারেই, তবে সে পথে একটি-দুটি বাস চলাচল ছাড়া আর কিছু নেই, নিঃশব্দ নির্জন সে পড়ে আছে প্রাকৃতিক নিশ্বাসে ৷ সামান্য একটু অবতলে নেমে গাছপালা ঘেরা সুশোভন বাড়ির বারান্দায় বসে শোনা যায় শুধু পাখির স্বর, আর দেখা যায় কেবল সামনেই উঠে যাওয়া উঁচু পাহাড়ের চুড়ো, মেঘমণ্ডনে মসৃণ ৷ অনুক্ষণ টের পাওয়া যায় আমরা এখন পাহাড়ের দেশে আছি, সবুজে সবুজে লাবণ্যময় পাহাড় ৷ এগারোটার মধ্যে এসে পৌঁছে গেছি আমরা ৷

পিন্টু বলে, ‘রান্না হতে হতে আমরা কি তবে সুখা বাঁধে ঘুরে আসব, না কি বিকেলবেলায় যাবেন?’

‘কেন ৷ বিকেল কেন, এই তো ঠিক সময় ৷’

উঠে পড়ি আবার গাড়িতে ৷ পনেরো কিলোমিটারের মধ্যেই সুপ্রসর এক ঝরনা আছে এদিকে, সুখা বাঁধ তার নাম ৷ সুখা কেন? শুকিয়ে থাকে কি জল? মরা ঝরনা তবে? পরে অবশ্য বোঝা গেল কথাটা ঠিক সুখা নয়, সুগ্গা, ও অঞ্চলের ভাষায় তার মানে নাকি টিয়াপাখি ৷ টিয়ার ঝাঁকে ভরে থাকা পাথর, তার ওপরে ঝাঁপিয়ে নামছে জল ৷

কিছুক্ষণের মধ্যে তার সামনে পৌঁছে বোঝা গেল, ঝরনা কথাটার আর মানে নেই এখানে ৷ জলের তোড় এখানে অনেকটা নদীর চেহারা নিয়েছে, আর এই খরস্রোত থেকেই শেষপর্যন্ত নাকি কোয়েল নদী ৷ বড় ছোট উঁচু নিচু নানা মাপের পাথরখণ্ডের ওপর দিয়ে ছুটছে জল, পায়ের পাতা ভেজা গভীরতা থেকে ডুবজল পর্যন্ত একেক জায়গায় একেক রকম তার ঢল, এই দুপুরে কি তার মধ্যে একটু না দাঁড়ালে চলে? স্নানের জন্য তৈরি হয়ে আসিনি মনে মনে, কিন্তু তাই বলে হাঁটুজল পর্যন্ত চলে যেতে অসুবিধা কী? পিন্টু আর রামদয়াল তাদের ট্রাউজার গুটিয়ে তোলে, এগোতে থাকে সামনে ৷ তাদের অনুসরণ না করে ভিন্নপথে আমি টপকাতে থাকি পাথরের পর পাথর ৷ অভ্যাসবশে দূরের থেকে তর্জন করেন গৃহিণী ৷ সে তো ওঁরা করেই থাকেন, এই বিবেচনায় একটি থেকে অন্য পাথরে লাফ দিয়েছি যখন, সংকীর্ণ আর সংগুপ্ত তার পিচ্ছিলতায় হড়কে গেল পা, জলের তোড়ে চমৎকার এক পতন হল আমার ৷

দেহাতি বেশ কিছু ছোট ছোট ছেলেমেয়ে দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল অনেকের স্নানোৎসব, এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি পিকনিক দল, আমার সেই অনিচ্ছুক অর্ধশয়ান দশা দেখে পরম ফুর্তি হল তাদের ৷ করতালিতে আর হাস্যরোলে মুখর হল তারা ৷ কোনওরকমে উঠে দাঁড়াই আমি ৷ ভিজেই যখন গেছি তখন আর সাবধানতার দরকার কী? উপরন্তু এতগুলি মানুষকে একসঙ্গে খুশি করাও তো কম কথা নয় ৷ অন্য আরেক দিক থেকে তাই পেরিয়ে যাবার চেষ্টা করি আবার ৷ এবং আবারও ঘটে পতন ৷ এবং আরও, আরও একবার ৷

পিন্টু আর রামদয়াল তখন ওপাশের বিশাল পাথরখণ্ডের ওপরে দাঁড়ানো, আর সেখানে পৌঁছতে পারলেই না কি অসামান্য দৃশ্য, বলছে তারা ৷ স্মিত মুখে ওপার থেকে তারা আমাকে নির্দেশ দিতে থাকে কীভাবে আমাকে পা ফেলতে হবে কোথায় ৷ বাঁদিকেই পড়ছি বারবার, তাই কোমর পর্যন্ত বাঁ পাশটা ভিজে গেছে বেশ ৷ ‘ওরকম বয়সে এ তো হতেই পারে’-গোছের মুখ করে যৌবনগর্বে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দেয় পিন্টু, বলে: ‘আপনি ওই পাথরটায় পা রেখে আমার হাতটা ধরুন, আমি নেমে আসছি এইখানে-’ আর ওইটুকু বলবার সঙ্গে সঙ্গে ঝুপুস করে মাথা পর্যন্ত তলিয়ে যায় সে, দূরবর্তী হৈহৈ জেগে ওঠে আবার অট্টরোলে, কোনওমতে তার হাত ধরে টেনে তোলে রামদয়াল, আর স্রোতের মধ্যে আমি আবারও খুঁজতে থাকি কোন পাথরটা পিছল নয় তত!

নিজেদের নিয়ে কৌতুক করতে করতে ঘরে ফেরবার পথটা বেশ ভালোই কাটে আমাদের ৷

শ্রান্ত গায়ে মালীর হাতের স্বাদু রান্নার ব্যবহার হয় ভালো, তার পরিচর্যার সুদীক্ষিত ভঙ্গি দেখেও চমৎকার লাগছে আমাদের ৷ রোদের চলনের সঙ্গে সঙ্গে বারান্দার চেয়ারদুটো কোথায় কোথায় সরিয়ে দিতে হবে, কখন আনতে হবে চা, কখন তুলে নিতে হবে চেয়ার আর রেখে যেতে হবে লণ্ঠন, পড়ার জন্য ছোট্ট একটা টেবিল হয়তো, নিজেকে একেবারে প্রচ্ছন্ন রেখে নিঃশব্দে এসব সম্পন্ন করে যায় সে ৷ চৌধুরীদম্পতির এই গল্পের বইয়ের মতো বাড়িটিতে ছোট একখানা আলমারিতে বইও মজুত কয়েকখানা-পর্যটনের, পশুপাখির, চিকিৎসার, আর গল্প-উপন্যাসও দু-চারটে ৷ রামদয়াল গাড়ি নিয়ে আবার চলে গেছে গারুর দিকে, পিন্টুরও কোনও সাড়া নেই আপাতত, বিকেলে আমরা বেরিয়ে পড়ি গাছগাছালির পথে, সরকারি এক বিশ্রামাগার পড়ে আছে এক পাশে আঁটোসাঁটো বন্ধ, কোথাও কেউ নেই ৷ স্তব্ধতার শান্তি যেন মাথার চারদিকে ঘিরে থাকে বলয়ের মতো ৷ ঝপ করে নেমে আসে সন্ধ্যা ৷ কালই এখান থেকে চলে যাব ভেবে মনখারাপ লাগে বেশ ৷

ফিরতেই হয় তবু ৷ ফেরবার আগে অবশ্য আরও একটা দায়িত্ব থাকে আমাদের ৷ মারুমারে আসব জেনে পাপড়ি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বেশ কয়েকটা ওষুধের কৌটো ৷ ওসব অঞ্চলের মানুষেরা বছর জুড়েই জীর্ণ হয়ে থাকে ম্যালেরিয়ায়, চিকিৎসারও তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই কোথাও ৷ কৌটোর মধ্যে প্যাকেটকরা কিছু ওষুধ, মারুমারে গিয়ে খবর দিলেই দূরদূরান্ত থেকে চলে আসবে সবাই ৷ বলতে হবে তাদের, বারো বছরের চেয়ে বেশি বয়স যে মেয়েদের, এ ওষুধ কেবল তাদেরই জন্য ৷ পঁচিশটা ট্যাবলেট একেক প্যাকেটে, একেকজনকে একেকটি প্যাকেট ৷ ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসাবে একটা করে খেতে হবে রোজ ৷

কথাটা ভুলিনি আমরা ৷ সঙ্গে এনেছি কৌটোগুলো ৷ গাড়ি পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে খবরও দিয়েছি পাঠিয়ে ৷ সময়মতো একজন-দুজন করে একে একে আসতে থাকে ওরা ৷ কেউ কাঁধে বয়ে আনছে তার অসাড় ছেলেকে বা মেয়েকে, কেউ-বা নিজেই আসছে ধুঁকতে ধুঁকতে, খোঁড়াচ্ছে-বা কেউ, কারও চোখের অসুখ, কারও গায়ে ঘা, কেউ-বা কেশেই চলেছে অবিরাম ৷ ছেলেবুড়ো, মেয়েপুরুষ, আসছে তো আসছেই তারা, কিন্তু কী দেব আমরা তাদের হাতে? আমরা তো এনেছি কেবল ম্যালেরিয়া না-হবার ওষুধ! যে অসুখ হয়নি এখনও, তার জন্য ওষুধ খেতে হবে কেন সেটা তাদের বোঝানো বেশ শক্ত হয়ে পড়ে, চিন্তিত অবিশ্বাসী মুখে কেউ কেউ তবু নিয়ে নেয় প্যাকেট, ‘বারো বছরের ওপরের মেয়ে’ কথাটা শোনে মন দিয়ে, কিন্তু তার পরেও কাতর গলায় জানতে চায়: ‘এই ছেলেটার যে গা পুড়ে যাচ্ছে, এর জন্য হবে না কিছু ওষুধ?’

তারা ভেবেছে আমরা ডাক্তার ৷ তারা ভেবেছে শহর থেকে সমস্তরকম রোগহরণের জাদু নিয়ে এসেছি আমরা ৷ বারান্দার অল্প আলোয় বসে আছি আমরা বিকেলবেলা, আস্তে আস্তে ফিরে যাচ্ছে দেহাতিরা, তাদের পিছনদিকে মেঘমণ্ডিত পাহাড়ের পাল্টে যাচ্ছে রং, নীলচে থেকে ধূসর থেকে কালো ৷ এতগুলি রোগীর সামনে আমাদের অসহায়তার এক পরিহাস্য স্মৃতি নিয়ে আমরা ফিরে যাব এবার কলকাতায় ৷

আর, কী আশ্চর্য, কলকাতায় ফিরেই গিন্নির শরীরে দেখা দেবে, ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া!

ভ্রমণ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, ১৯৯৬

সকল অধ্যায়

১. অর্ধশতাব্দীর আগের বদ্রীনাথ যাত্রা – প্রতাপকুমার রায়
২. মানস অভয়ারণ্য – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩. জলদাপাড়া অরণ্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪. জলের ধারে ঘর – নবনীতা দেব সেন
৫. জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির – উষা সেন
৬. তাহিতি – হরপ্রসাদ মিত্র
৭. মার্কন্ডেয় গঙ্গার উত্স সন্ধানে – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮. কেদার বদ্রী – মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
৯. তেহরানি হয়রানি – অমিতাভ চৌধুরি
১০. শোনপুরের মেলায় – বরুণ দত্ত
১১. এলেম নতুন দেশে – কমলা মুখোপাধ্যায়
১২. মস্কো থেকে সাইবেরিয়া হয়ে পিকিং – গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩. পাতাল-ভুবনেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
১৪. ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ
১৫. নিকোবরের দ্বীপে – তিলকরঞ্জন বেরা
১৬. তিরতিরে নদী আর শাল জঙ্গলের দেশে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭. আমার ভ্রমণ – মহাশ্বেতা দেবী
১৮. সুন্দরবন – হীরক নন্দী
১৯. ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত
২০. সাইকেলে পাঁচ বছরে ভূ-পর্যটন – ভূপর্যটক বিমল দে
২১. আঙ্কোর ভাট – প্রীতি সান্যাল
২২. হিমালয়ের সাতকাহন – ত্রিদিব বসু
২৩. স্বপ্নের পথেই যাওয়া যায় – মহাশ্বেতা দেবী
২৪. ছোট কৈলাস – সুভাষ দত্ত
২৫. বালতাল হয়ে অমরনাথ – প্রতাপকুমার রায়
২৬. মধ্য এশিয়া অভিযান – গৌতম ঘোষ
২৭. পথ হারিয়ে সিকিমের জঙ্গলে – রতনলাল বিশ্বাস
২৮. নতুন করে পাব বলে – বন্দনা সান্যাল
২৯. সেবার ব্রেকজার্নি করে – জয়া মিত্র
৩০. চন্দ্রভাগার উৎস চন্দ্রতাল সুর্যতাল – সুনীলকুমার সরদার
৩১. ওঙ্কারেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
৩২. সুন্দরবনে দুদিন – পবিত্র সরকার
৩৩. মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়
৩৪. দিকবিদিকে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৫. তিস্তানদীর উৎসে – শরৎ ঘোষ
৩৬. পশ্চিমে হাওয়াবদল – মধুপর্ণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৭. এক টুকরো নীল চাঁদ – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৩৮. কালিম্পং থেকে তিব্বত – অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
৩৯. সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু
৪০. মির্জা শেখ ইতেসামুদ্দিনের বিলেত যাত্রা এবং আমি – নবনীতা দেব সেন
৪১. বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
৪২. গানতোক থেকে ইয়ুমথাং – সুতপা ভট্টাচার্য
৪৩. ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল
৪৪. ডুয়ার্সের দুয়ার এখন খোলা – সমরেশ মজুমদার
৪৫. ইউরোপে দিন কয়েক – পূর্ণেন্দু পত্রী
৪৬. রামচন্দ্রের বনবাসের পথ পরিক্রমা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. আসমুদ্রককেশাস – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
৪৮. নিরলংকার ভ্রমণ – শঙ্খ ঘোষ
৪৯. চেঙ্গিস খানের দেশে – প্রতাপকুমার রায়
৫০. মিজোরামের নীল পাহাড়ে – দীপঙ্কর ঘোষ
৫১. সিন্ধুদুর্গ – বিশ্বদীপ দত্ত
৫২. জিম করবেটের জঙ্গলে – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩. থর মরুভূমিতে ট্রেকিং – শিবনাথ বসু
৫৪. মরোক্কো ভ্রমণ – হরপ্রসাদ মিত্র
৫৫. ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ – নবনীতা দেব সেন
৫৬. গন্তব্য মাচুপিচু – প্রতাপকুমার রায়
৫৭. কই যাইত্যাছি জানি না – শঙ্খ ঘোষ
৫৮. পারাংলা অভিযান – সুনীলকুমার সরদার
৫৯. পুশকিন, মলদভা আর কচি পাতার বাঁশিতে মোত্সার্ট – প্রীতি সান্যাল
৬০. আমাদের ছোট নদী : পার্বতী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬১. দেবলোকের পথে পথে – অশোক চক্রবর্তী
৬২. না-ভ্রমণের বৃত্তান্ত – আশাপূর্ণা দেবী
৬৩. এভারেস্টের পাদদেশে যাত্রা – কমলা মুখোপাধ্যায়
৬৪. নীল নদে পাঁচদিন – হরপ্রসাদ মিত্র
৬৫. বারাণসীর ঘাটের কথা – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৬. বালফাক্রমের পাহাড়-জঙ্গলে – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৬৭. গৌরীগঙ্গার উৎসব মিলাম হিমবাহ – পুরুষোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৮. মরুভূমির দিনরাত্রি – পবিত্র সরকার
৬৯. ঢাকা : একুশ বছর পর – অন্নদাশঙ্কর রায়
৭০. ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
৭১. ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউ – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৭২. কালিন্দী গিরিবর্ত্ম – রথীন চক্রবর্তী
৭৩. একযাত্রায় ভোরামদেরও আর কানহা – হীরক নন্দী
৭৪. মদমহেশ্বরের ডোলিযাত্রা – কাজল দত্ত
৭৫. কেনিয়ায় পাঁচ অরণ্য – প্রতাপকুমার রায়
৭৬. কোনাডা থেকে রেভুপাল ভরম – রতনলাল বিশ্বাস
৭৭. চাঁদের দেশ লাদাখ – কমলেশ কামিলা
৭৮. বোকের তোভ, ইজরায়েল – নবনীতা দেব সেন
৭৯. বিষ্ণুপুর মুকুটমণিপুর – হরপ্রসাদ মিত্র
৮০. ডোকরিয়ানি বামক – অনিন্দ্য মজুমদার
৮১. তাওয়াং থেকে তাসি-চু জং – কমলা মুখোপাধ্যায়
৮২. মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল
৮৩. আকাশচূড়ায় অভিযান – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮৪. ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ
৮৫. সারেঙ্গেটির জঙ্গলে – হরপ্রসাদ মিত্র
৮৬. এবারের কুম্ভমেলায় – চিন্ময় চক্রবর্তী
৮৭. অন্য পথের পথিক – বুদ্ধদেব গুহ
৮৮. গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়
৮৯. নিশীথ সূর্যের দেশ – প্রতাপকুমার রায়
৯০. সবুজ নামদাফাতে – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
৯১. পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু
৯২. গোঁসাইকুণ্ড – কমলা মুখোপাধ্যায়
৯৩. অমরকন্টক – হীরক নন্দী
৯৪. আদিম ডুয়ার্সের আধুনিক রূপকথা – সূর্য ঘোষ
৯৫. পার্বতী উপত্যকায় সার পাস – বিদ্যুৎ দে
৯৬. মিয়ানমার, ইরাবতীর সঙ্গে – পবিত্র সরকার
৯৭. রূপসী রিশপ – হীরক নন্দী
৯৮. হিমবাহের জন্মভূমিতে – শেখর ভট্টাচার্য
৯৯. ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার
১০০. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত – হরপ্রসাদ মিত্র
১০১. বক্সা দুর্গ – টুটুল রায়
১০২. সিন্ধু নদের ধারে – রতনলাল বিশ্বাস
১০৩. মেঘালয়ের দাউকি – সুমিত মুখোপাধ্যায়
১০৪. আমাদের ছোট নদী : লিডার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০৫. লাসা – সমীর রায়
১০৬. ২ নম্বর লোভালোয়া স্ট্রিট – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
১০৭. অযোধ্যা পাহাড় – বিশ্বদীপ দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন