অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
চোখের সামনে দিয়ে ছুটে গেল ২২৫এ নম্বরের একটা বাস ৷ তাকিয়ে দেখি তার পিছনে গোটা গোটা হরফে লেখা আছে: ‘সুন্দর মুখের চেয়ে ভদ্র ব্যবহার অনেক বেশি আকর্ষণীয়’ ৷
এ তো প্রায় বাণীর মতো! উপরন্তু, বাস-ট্রাকের পিছনে যে রকম হেলফেলায় অক্ষরবিন্যাস দেখা যায় তেমন নয় একেবারেই ৷ এর ছাঁদের মধ্যেও বেশ একটা চারুতা ৷ বাসের গায়ে এমন কথাও লেখা হয় তাহলে? সচরাচর তো এসব জায়গায় ইংরিজিতে বা হিন্দিতে পাবার কথা ‘ব্লো হর্ন’ ‘টা-টা’ ‘ডু নট কিস মি’ কিংবা ‘বুরি নজরওয়ালে তেরি মুঁহ কালা’ ৷ না, শুধু এইটুকুই নয়, কদিন আগে আরও একটা দেখেছিলাম ‘ইন্ডিয়া ইজ গ্রেট’ ৷
সম্প্রতি বাংলাদেশে গিয়ে ট্রাকের বা অটোরিকশার পিছনে ওই ধরণের নানারকম লেখন দেখছিলাম, দেখতে দেখতে ভিন্ন একটা সুখের বোধ হচ্ছিল, কেননা তার সবটাই ছিল বাংলা ৷ ‘ব্লো হর্ন’ নয়, সেখানে থাকে ‘ভেঁপু বাজান’ বা ‘ভেঁপু দিন’ ৷ সেখানে পাওয়া যায় এইসব বাচন বা নির্দেশ: ‘১০১ হাত দূরে থাকেন’ ‘এবার তবে চলি’ ‘মা-বাবার দোয়া’ কিংবা একেবারে ঢাকাই রসবোধ থেকে উঠে আসা: ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ ৷ তবে, এসব ছাপিয়ে সবচেয়ে যেটা আমাদের মনে গেঁথে রইল এবার, তা হল আচমকা পেয়ে যাওয়া এই চমৎকার এক ঘোষণা: ‘যাইত্যাছি যাইত্যাছি, কই যাইত্যাছি জানি না’ ৷
ঘোষণাটার মধ্যে ঠিক কী যে আছে, ভাবতে থাকি ৷ কোনও স্পর্ধা, না কি উপেক্ষা? অ্যাডভেঞ্চার, না ঔদাস্য? রকেট-বাসের সামনের আসনে বসে আমরা চলেছি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার, আমাদের দিকে ওই বাণীনিক্ষেপ করতে করতে সামনে সামনে চলেছে একটা ট্রাক, আর ব্যক্তিগত স্তর থেকে প্রায় যেন রাষ্ট্রনৈতিক কিংবা দার্শনিক নিরুদ্দেশের দিকে চকিতে চকিতে ইশারা পাঠাচ্ছে কথাগুলি, বলে চলেছে: যাইত্যাছি যাইত্যাছি, কই যাইত্যাছি জানি না ৷
কে বলতে পারে, গোটা বাংলাদেশরই এটা মর্মকথা কি না ৷
রামু কলেজের অধ্যক্ষ অবশ্য জানেন কোথায় তিনি যেতে চান ৷ কক্সবাজারে পৌঁছবার ঘণ্টাদেড়েকের মধ্যেই সমুদ্রকে পিছনে ফেলে উল্টোমুখে চলে এসেছি আবার, তার ঠিক আগের বসতি রামু শহরের দিকে ৷ আমাদের নিয়ে চলেছেন নতুন পাওয়া বন্ধু জাফর আহমদ হানাফি ৷
কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক এই হানাফি ৷ নিজের নামটাকে সব সময়েই লেখেন জাফার আহমাদ, কেননা জাফর বা আহমদ লিখলে শব্দগুলি তার যথার্থ আরবি রূপ পায় না বলে তাঁর ঘোর বিশ্বাস ৷ সজ্জন, সুপারিবারিক, অতিথিবৎসল এই মানুষটি কথা বলেন নিরন্তর, আকর্ষক সেসব কথার মধ্যে ওতপ্রোত জড়ানো থাকে ইতিহাস-ভূগোল-ভাষাতত্ব ৷ তাঁর একেবার নিজস্ব চর্চার বিষয় হল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের উপজাতীয় বৃত্তান্ত ৷ অচিরেই আমাদের সমস্ত দায়িত্ব হাতে তুলে নেন তিনি, আর কক্সবাজারে পৌঁছবার দেড়ঘণ্টার মধ্যেই নিয়ে চলেন রামুর দিকে, পুরনো এক বৌদ্ধমন্দির দেখাবার জন্য ৷
‘কিন্তু তার আগে’-বলেন হানাফি-‘চলেন এই কলেজটা একবার ঘুরে যাই ৷’ কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম ফিরে যাবার ঝকঝকে পিচের মসৃণ চওড়া রাস্তাটা থেকে হঠাৎ একটু ডাইনে বেঁকে যায় গাড়িটা, তিনদিকে ছড়ানো প্রান্তরের মধ্যে গাছগাছালি ঘেরা লম্বাটে একখানা দালানের সামনে দাঁড়ায় এসে, গাড়ি থেকে নামতে নামতে জানতে পাই এ হল বছর তিনেক আগে শুরু করা রামু কলেজ ৷ এ কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা না বললে কক্সবাজারে বেড়ানোটা সম্পূর্ণ হতে পারে না: এই হচ্ছে হানাফির অভিমত ৷
অধ্যক্ষের নাম মোশতাক আহমদ ৷ ইংরিজির এই অধ্যাপক তাঁর কাজ ছেড়ে দিয়ে জীবিকাজগতের বাইরে ছিলেন কিছুদিন, কেননা কর্তৃমহলের কোনও কোনও আচরণকে খুবই নীতিভ্রষ্ট মনে হচ্ছিল তাঁর ৷ রামু কলেজ প্রতিষ্ঠার পর এখানকার নিযুক্ত অধ্যাপকেরা কেউ কেউ তাঁর প্রাক্তন ছাত্র, সানুনয়ে তাঁরা তাঁদের শিক্ষককে ধরে এনেছেন কলেজের দায়িত্ব নেবার জন্য, আর নতুন কিছু গড়ে তোলবার সম্ভাবনায় অনেক স্বপ্ন নিয়ে তিনিও চলে এসেছেন খুশি মনেই ৷
খুব বেশি ছাত্রছাত্রীর দরকার নেই তাঁর, মোশতাক ভাবেন ৷ শৃঙ্খলা দিয়ে, কল্পনা দিয়ে, বিদ্যাচর্চার আনন্দ দিয়ে তিনি গড়ে তুলতে চান এই কলেজ ৷ অসম্ভব কি তা? অসম্ভব কেন মনে হবে তাঁর, অনেক ঝুঁকি নিয়ে যিনি একদিন চলে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সেনা হয়ে? ‘চারপাশের অবস্থা ভালো না ৷ কোন ইতিহাসের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা এসেছে দেশে, এরা সব ভুলে গেছে তা ৷ কিন্তু এর মধ্য থেকেই ভালো কিছু গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ তো নিতেই হবে আমাদের, কী বলেন?’ ঠিক, সেই গড়ে তোলার আবেগে মোশতাক ভাবেন যে শিক্ষার চাই পরিবেশের সঙ্গে যোগ ৷ ছেলেমেয়েদের চাই প্রকৃতির সঙ্গে লগ্নতা ৷ ‘আমি তো ভেবেছি বাইরের ওই গাছগুলি আরেকটু বড় হলে তার চারপাশে গোল করে বাঁধিয়ে নেব বেদি, ক্লাস হবে সেইখানে, শান্তিনিকেতনের মতো ৷ এখনই অবশ্য মাঝে মাঝে ক্লাস নিই বাইরে ৷ রবীন্দ্রনাথই ঠিক ঠিক জানতেন কীভাবে শেখাতে হয় লেখাপড়া ৷’ বলতে থাকেন মোশতাক: ‘সরকারের কাছে আমরা কতটুকুই আর দাবি করি বলেন ৷ আমরা তো চাই মোটামুটি একটা সুখী সচ্ছল দেশ? তার তো পূর্বশর্তই হল শিক্ষা ৷ শিক্ষা না থাকলে হবে কিছু? তা সেদিকেই এদের নজর নাই ৷ যে কোনও মূল্যে সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ ফিরাতে হবে স্কুল-কলেজে, আর সেইজন্য সংস্কৃতিচর্চায় উৎসাহ দিতে হবে ছাত্রছাত্রীদের ৷ ভাবেন তো, যে গান ভালোবাসে, যে কবিতা ভালোবাসে, ভালোবাসে ফুল পাখি নদী-সে কি কখনও সন্ত্রাসী হতে পারে? সেই ভালোবাসাটাই তো তৈরি করে দিতে হবে ছেলেমেয়েদের মনে?’
চা খেয়ে উঠে আসছি যখন, বিশাল হাতের থাবায় আমার হাতটা ধরে নেন মোশতাক, বলেন: ‘আপনাদের যেন শুভেচ্ছা পাই এই কাজে ৷’
শুধুমাত্র শুভেচ্ছায় কী হবে? ‘চতুরঙ্গ’র জ্যাঠামশাইয়ের মতো বলতে ইচ্ছে করে যে শুভেচ্ছাতে আমার ‘সিকি পয়সার বিশ্বাস’ নেই ৷ কিন্তু এই কলেজের ভবিষ্যৎ কী হয়, তা নিয়ে একটা আগ্রহ আর উৎকণ্ঠা নিশ্চয় বহুকালই জেগে থাকবে আমাদের মনে ৷
কলেজ থেকে বেরিয়ে ঘোর দুপুরবেলায় আমরা এসে পৌঁছে গেছি রামু নামের ছোট্ট শহরে ৷ আসবার সময় পথের নানা বাঁকে ঘুরেফিরে বারে বারেই একটা নদীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় আমাদের, কেননা সেই নদীও বাঁক নিতে নিতে ঘুরে চলেছে কেবলই ৷ ‘আর সেইজন্য’-হানাফি বলেন-‘এর নাম বাঁকখালি’ ৷
নামের সঙ্গে তার তাৎপর্যকে মিলিয়ে নেবার অভ্যাস অবশ্য এর চেয়ে অনেক বেশি গড়িয়ে গেছে ও অঞ্চলে ৷ রামুর যে মন্দিরের দিকে আমরা চলেছি, সেখানে ছোট একটা জলাশয় ঘিরে পাঁচ-পাঁচটা বটগাছ ৷ তাহলে কি পঞ্চবটীই হল না? আর, এর মাইল কয়েক দূরে, টেকনাফের দিকে যেতে, একটা জনপদের নাম হল মরিচ্যা ৷ এ তো নিশ্চয় মারীচ শব্দেরই স্থানীয় রূপ? তাহলে তো বোঝাই যাচ্ছে এ হল সেই জায়গা যেখানে রাম-সীতা-লক্ষ্মণ দিন কাটাতেন বনবাসে ৷ এই সেই পঞ্চবটী ৷ আর সোনার হরিণকে তাড়া করতে করতে মরিচ্যার কাছে গিয়েই রাম তাকে মেরেছিলেন নিশ্চয়, সেইজন্যই তার ওইরকম নাম ৷
এসব কল্পকথা শুনে হনুমানের বিষয়ে সম্ভ্রম আরও বেড়ে যায় নিশ্চয় অনেক দূর? ভাবুন একবার ব্যাপারটা, কন্যাকুমারিকা থেকে নয়, একেবার এই কক্সবাজার বা টেকনাফ থেকেই হয়তো তাকে লাফ দিতে হয়েছিল লঙ্কায়!
এমন সব গল্পের প্রচলন থেকেই মন্দির, না কি মন্দির থেকেই এমন সব গল্পের প্রচলন, তা অবশ্য জানি না ৷ রামুর বৌদ্ধমন্দিরের প্রায় গায়ে গায়ে লাগানো আছে একটা রামমন্দির, আর তার মধ্যে রাম-সীতা-লক্ষ্মণের যৌথ বিগ্রহ ৷ কেবল সে বিগ্রহের দিকে তাকালে বোঝা যায় যে আমরা আরাকান সীমান্তের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি, কেননা সেই রাম বা সীতা বা লক্ষ্মণের মুখের আদলে চিহ্নিত হয়ে আছে বেশ একটা বর্মি-বর্মি ভাব ৷
‘আরাকান’ শব্দটায় পৌঁছে মনে পড়ে যে রামু শহরের সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচয় হয়েছিল ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসে ৷ রাজ্য থেকে নির্বাসিত গোবিন্দমাণিক্য যখন চট্টগ্রামে এসে পৌঁছন, সে অঞ্চল তখন ছিল আরাকানের অধীন ৷ পার্বত্য অঞ্চল থেকে দক্ষিণ সমুদ্রের দিকে এগিয়ে চলেছেন গোবিন্দমাণিক্য, রামু তখনও দশ ক্রোশ দূরে, এক গরিবঘরে আশ্রয় নিলেন তিনি ৷ পুজোর দিনেও সে ঘরের ছোট ছেলেটির কোনও আবদার মেটাতে পারে না তার বাবা, অগোচরে সে কথা জেনে গোবিন্দ্যমাণিক্য চলেছেন ছেলেটির জন্য একখানা রাঙা শাল কিনতে ৷ কিন্তু চলেছেন কোথায়? ‘রামু শহরের অভিমুখে’ ৷ এই সেই রামু, গোবিন্দমাণিক্য যেখান থেকে না কি রাঙা শাল কিনে এনেছিলেন একদিন, আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে আছি আজ ৷
ওই গরিবঘর থেকে গোবিন্দমাণিক্য পরে চলে গিয়েছিলেন রামুরও দক্ষিণে রাজাকুলের কাছে মগদের এক দুর্গে ৷ এই দুর্গেই তিনি নির্বাসিত সুজা আর তাঁর মেয়েদের আতিথ্য দেন, এখানেই গড়ে ওঠে দুই নির্বাসিতের সখ্য ৷ দুজনকেই নির্বাসন দিয়েছেন তাঁর ভাইয়েরা ৷ গোবিন্দমাণিক্যের দুর্ভাগ্যের কথা শুনতে শুনতে সুজা বলেছিলেন: ‘আর সকলেই অতি সহজে ভাইয়ের মতো ব্যবহার করে, কেবল নিজের ভাই করে না ৷’
এটা তবে নির্বাসিতদেরই জায়গা! রামও যে এইখানে চলে আসবেন তাতে আর আশ্চর্য কী!
রামুরও চেয়ে সেই দক্ষিণে যাব আমরা কাল ৷ গোবিন্দমাণিক্যের রাঙা শালের গল্পকথা আর নির্বাসিত রামচন্দ্রের কল্পকথার ভূমিতে দাঁড়িয়ে আজ আমরা শুধু দেখতে পাচ্ছি দুই দিকে দুই টিলা, একটিতে রামমন্দির আর অন্যটিতে বুদ্ধ ৷
টিলার ওপর উঠে একটা আশ্রম, রামকোট বনাশ্রম এর নাম ৷ সেই আশ্রমে আছেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা, আছে বুদ্ধমন্দির ৷ রামকোট অথবা রামকূট থেকে রামু নামটা পৌঁছে গেছে তবে ৷ না কি উল্টোটাই? রামুও কি মূল নাম ছিল? এর সঙ্গে বুদ্ধেরই বা কী যোগ? রামের সঙ্গে বুদ্ধের?
সে যোগের একটা আভাস হয়তো পাওয়া যায় স্নিগ্ধ বুদ্ধমূর্তিটির সামনে এসে দাঁড়ালে ৷ প্রত্নতত্ব বিভাগের দাবিমতো এই মূর্তি প্রায় দুহাজার বছরের পুরনো ৷ তৈরি হয়েছিল না কি অশোকের সময়ে, আর তৈরি হয়েছিল বুদ্ধের এক পঞ্জরাস্থির ওপর ৷ সে অস্থির প্রতিশব্দ রাংফু ৷
তাহলে কি সেই রাংফু থেকে রামু? আর সেই রামু থেকে রামকোট বা রামকূট? আর এইভাবে রাম নাম পাওয়া গেল বলে বিপরীত টিলায় এক বৌদ্ধস্তূপের পাশেই গড়ে তোলা হল রামমন্দির? সে মন্দিরটা যে কত পুরনো, তার অবশ্য নিশ্চিত কোনও হদিশ দিতে পারেন না তার সেবায়েত ৷
বেশ বড় রকমেরই একটা বৌদ্ধ সমাবেশ যে ছিল রামুর এই অঞ্চলে, তার নিত্যনতুন নজির আজও পাওয়া যায় এই টিলাগুলির এধারে ওধারে ৷ হানাফি, আর এ অঞ্চলের দেখাশোনা করেন যে বড়ুয়া, এঁরা দুজনেই দেখাতে থাকেন নতুন নতুন খুঁড়ে তোলা দেড়-দু ইঞ্চির অনেক বুদ্ধমূর্তি, ব্রোঞ্জের তৈরি, মাটি থেকে তুলে নিয়ে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা অনেক সময়ে খেলা করে তা নিয়ে ৷ আরও অনেক বড় কীর্তিও হয়তো এখানে আবিষ্কারের অপেক্ষায় পড়ে আছে আজও, এরকমই ভাবছেন এঁরা ৷
কিন্তু খুবই বিস্ময়ের কথা, প্রাচীনতার চিহ্ন মাখানো গায়ে গায়ে লাগা এই দুই টিলার মাঝখানে, বুদ্ধ আর রামের মাঝখানে, দাঁড়িয়ে আছে অত্যাধুনিক এক স্থাপত্য ৷ খুবই শোভন সেই স্থাপত্য ৷ কিন্তু এইখানে, এই পরিবেশের মধ্যে, একে মনে হয় যেন প্রক্ষিপ্ত ৷ গর্ব করে বলেন বড়ুয়া: ‘বাড়িটা দেখুন, ভেতরের ব্যবস্থা একটু ভালো করে দেখুন ৷’ ভালো করে দেখি আমরা সবাই ৷ চোখজুড়ানো সুব্যবস্থার কোনও অন্ত নেই, কিন্তু স্থান-নির্বাচনের অসংগতি ছাড়াও আরও একটা জটিলতার কথা মনে হয় এখানে এসে দাঁড়ালে ৷
ইতালীয় সরকারের টাকায় ফরাসি স্থপতির নির্দেশনায় তৈরি হয়ে উঠেছে এই বাড়ি, ছাত্রনিবাস ৷ কাদের জন্য? ভব্যসমাজের ছোঁয়া না-লাগা অনগ্রসর আদিবাসীদের অনাথ ছেলেমেয়ের জন্য ৷ সেই ছেলেমেয়েরা এখানে থেকে বড় হচ্ছে, স্কুলে যাচ্ছে, ভব্যতা শিখছে ৷ একইসঙ্গে চর্চা চলছে স্বাবলম্বনের, সংস্কৃতির ৷ নির্দেশ পাওয়া মাত্র খোলা জায়গায় অভিনয় করে দেখিয়ে দিতে পারে এরা, অপরিচিত জনের সঙ্গে দেখা হলে সভ্য কানুনমতো ত্বরিতে নমস্কার জানাতে পারে এরা ৷ কিন্তু এদের চারদিকে সর্বময় স্বাচ্ছন্দ্যের যে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা দেখা গেল, যে আধুনিকতার আবহাওয়া, তার মধ্যে বেড়ে উঠে এরা কি আর সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যেতে পারবে কোনওদিন? তাদের নিজেদের সমাজ থেকেও যেমন একটা বিচ্ছেদ এদের পক্ষে অনিবার্য, অন্য সমাজের সঙ্গে মিশে যাওয়াও তেমন সহজ হবে না হয়তো ৷ কোথায় গিয়ে পৌঁছবে তখন এরা, সযত্নলালিত এই অনাথেরা, যার মধ্যে রাখাইনও আছে অনেক?
রামু থেকে ফিরে আসবার পথে এই প্রশ্নটাকে মন থেকে তাড়াতে পারি না আমরা ৷ মনে হয়, ওরা যে কেবল বুদ্ধ আর রামের দুই ভিন্ন মূর্তির মাঝখানে পড়ে আছে তা নয়, পড়ে আছে ভিন্ন দুই সমাজেরও মাঝখানে ৷ শেষপর্যন্ত কোনখানে গিয়ে যে পৌঁছবে এরা, কারও কাছেই খুব স্পষ্ট নয় সেটা ৷
সুজার অবশ্য রাজাকুলেও থাকা হয়নি বেশিদিন ৷ ঔরঙ্গজেবের রোষ থেকে বাঁচাবার জন্য তাঁকে আরাকানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন গোবিন্দ্যমাণিক্য ৷ দক্ষিণ থেকে আরও দক্ষিণে সরতে সরতে দেখা দেবে নাফ নদী, তার ওপারের পর্বতমালায় আরাকান ৷ দুই দেশের সীমান্ত চিহ্নিত হয়ে আছে ওই নদীতে ৷ তার এপারের উচ্চভূমি বা টেক, সেইখানে আজকের বাংলাদেশ শেষ ৷ আজ আমরা চলেছি সেই টেকনাফের দিকে ৷
কক্সবাজারের দীর্ঘ সৈকতের ঠিক সমান্তরাল নতুন একটা সড়ক তৈরি হচ্ছে একেবারে টেকনাফ পর্যন্ত পৌঁছে দেবার জন্য ৷ হয়তো আর দুয়েক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে সেই পথ, সমুদ্রজলের পাশ দিয়ে দিয়ে চলে যাওয়া যাবে অতটা দূর ৷ সে খুব মনোরম পথ হবে নিশ্চয়, কিন্তু মনে হয় না যে এখনকার পথটাও রম্যতার দিক থেকে তেমন কিছু কম ৷ কক্সবাজার থেকে আরও একবার রওনা হওয়া গেল রামুর দিকে, কিন্তু রামু পর্যন্ত পৌঁছবার আগেই ডানদিকে বেরিয়ে গেছে টেকনাফে যাবার এখনকার পথ, মরিচ্যারই ওপর দিয়ে চলে যাবে সেটা ৷ হানাফির কাছে অগ্রিম শুনে নিয়েছি মাইলের পর মাইল দুধারে গর্জনগাছের সারি, কখনওবা চাষ-আবাদের খেত, লবণ খেত কখনওবা, আর তারপর নাফ নদীর কূল ধরে ধরে সমুদ্র পর্যন্ত বয়ে যাওয়া সেই পথ ৷ এই বিচিত্রতাও কি সুন্দর নয় যথেষ্ট?
হানাফি বলেন: ‘মুশকিল কী জানেন, এই রাস্তাটায় এখন ডাকাতের বড় হাঙ্গামা ৷ এই তো ঈদের আগের দিনই হয়ে গেল বিরাট ডাকাতি, একটা গাড়ি থেকে যথাসর্বস্ব কেড়েকুড়ে নিল ৷’
‘এখন তো দিনেরবেলা’-তাঁকে ভরসা দেবার ভঙ্গিতে বলি ৷
‘আরে দিনের বেলাতেই তো ৷ রাতের দিকে তো এদিকে আসেই না কেউ ভয়ে!’
হানাফি গাড়ি চালাচ্ছেন, সঙ্গে আছেন তাঁর চাকমা স্ত্রী হেলেন আর তাঁদের পাঁচ বছরের ছেলে ৷ ছেলেটি সমস্ত পথ তার ভিডিও খেলনা নিয়ে ব্যস্ত, আর আমাদের অবিবাহিত সঙ্গীবন্ধু টুলু কেন বিয়ে করছেন না এই নিয়ে মশকরা করছেন হেলেন, আর আমাদের সবসময়েই কোনও না কোনও গল্পে মশগুল রাখছেন হানাফি ৷ ডাকাতের গল্প কি সেইরকমই কোনও গল্প, পরিবেশটাকে সরস রাখবার আয়োজন কেবল?
কিন্তু না, হানাফির চোখের সঞ্চালন দেখে সেটা ঠিক মনে হচ্ছে না আর ৷ স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি: ‘ওটা কী গাড়ি গেল হেলেন, ওই যে ওভারটেক করল? দেখলে কিছু?’
‘আরে না না, ও তো ছোট একটা গাড়ি ৷’
ছোট গাড়ি বড় গাড়িতে কী প্রভেদ? জানা গেল তখন, ডাকাতদের ডাকাতি করবার করণকৌশল ৷ একলা কোনও গাড়ি দেখলে একটা মাইক্রোবাস নিয়ে ধাওয়া করে তারা, টপকে যায় গাড়িটাকে, তারপর একেবারে নিঃসঙ্গ জায়গায় গাড়ি ঘুরিয়ে মুখোমুখি পথ আটকে দাঁড়ায়, আর তারপর রাহাজানি ৷
ঠিক সেই লোকালয়হীন দুর্বৃত্ত অঞ্চল দিয়ে চলছি এখন আমরা, সেই গর্জনগাছের সারি, সুমসৃণ পথ ৷ এখন কি তবে ডাকাতদের কথা ভাবব আমরা? না, এই যে প্রায় শেষ হয়ে এল ভয়চিহ্নিত পথটা ৷ সামনেই ছোট একটা বসতি আসছে মনে হয় ৷ আর রাস্তার পাশে বসে বিক্রি করছে ওটা কী? বড়ই, বড়ই ৷ কুল ৷ কাজেই থামাতে হল গাড়ি ৷ অম্লরসে দেখা গেল সবারই খুব আসক্তি ৷
গাড়ি থামল, আর আমাদের পাশ দিয়ে চকিতে বেরিয়ে গিয়ে একটা মাইক্রোবাস মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে দাঁড়াল ঠিক মুখোমুখি ৷ এভাবে হঠাৎ এসে দাঁড়ায় কেন ওরা? কুল কিনবার জন্য? কিন্তু না, সঙ্গে সঙ্গেই আবার পাশ কাটিয়ে গাড়িটা ফিরে গেল পিছনে, যে পথে সে এসেছিল ৷ মিলিয়ে গেল দূরে ৷
কী হল ব্যাপারখানা? ডাকাতদের কি আমাদের ঠিক পছন্দ হল না? না কি আরও বড় কোনও দল আনতে ফিরে গেল ডেরায়? সে যাই হোক, কুল খেতে খেতে আমরা চলতে থাকি আবার ৷
নদী-সমুদ্রের অনেক কাছাকাছি চলে এসেছি বলে বোঝা যায় এখন ৷ এখন সারি সারি লবণখেত ৷ আমাদের কারও কারও কাছে বেশ নতুন অভিজ্ঞতা এটা ৷ ফসল ফলানোর জমিতে অফলা ঋতুতে মাটি নিকিয়ে তৈরি হয় জমি, জমানো হয় জল, দিনের পর দিন সূর্যতাপে আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায় সেটা, তৈরি হয়ে যায় নুন ৷ সে রকম নুন তৈরির নানা পর্যায় দেখতে দেখতে পৌঁছই আমরা উদবাস্তু অঞ্চলে ৷
হানাফি বললেন: ‘ঠিক এইজন্যই বলছিলাম যে পথটা এখন খারাপ হয়ে গেছে ৷ নদীর ওপার থেকে তাড়া খেয়ে দলে দলে মানুষ এসে বসতি করেছে এখানে, কোনও সুব্যবস্থাও নেই, নষ্ট এখন জায়গাটা ৷ অবশ্য এবার একটা মীমাংসা হয়ে আসছে, ফিরেও যাচ্ছে ওরা আস্তে আস্তে ৷ দুয়েকদিনের মধ্যেই আছে দুদেশের সীমান্তের ফ্ল্যাগমিটিং, রফা হয়ে গেছে, মিটে যাবে সব ৷’
নাফ নদীর ধার দিয়ে চলেছি আমরা ৷ টলটলে নীল জলের ঠিক মাঝখান দিয়ে দেখা যায় যেন শাদা একটা টান ৷ হতে পারে চোখের ভুল, কিন্তু ওইটেকেই না কি ধরে নেওয়া হয় দুদেশের সীমানারেখা ৷ নদীর মাঝখানে, সবুজ একটা হরতনের মতো, একখণ্ড জমি পড়ে আছে শান্ত ৷ তাকে ঠিক সামনে রেখে দাঁড়াই আমরা, ওই সবুজ হরতন, তার ওপারে সবুজ পাহাড়ের সারি ৷ কাছেই একটা নদীপারের রেস্টহাউসে আমরা বসব এরপর ৷
কিন্তু সর্বনাশ, ওসব কী? রেস্টহাউসের দিকে সারি সারি ওসব নিশেন উড়ছে কেন? অল্প একটু তদন্ত করে হানাফি এসে জানালেন: ‘যাঃ আজই তো দেখছি ফ্ল্যাগমিটিং ৷ দুই দেশের সরকারি লোকেরা এসে গেছে এইখানে ৷ এ অঞ্চলটা আজ সুরক্ষিত হয়ে আছে তাই ৷ আমাদের আর ঢুকবার কোনও উপায় নেই ওখানে ৷’
শুনে মনে পড়ে গাড়ি থামানো গাড়িটার কথা, তার মানুষগুলির মুখ ৷ তারা কি তবে ডাকাত ছিল না, ছিল পুলিশের লোক? সরকারি আয়োজন বলে নজর রাখছিল সবদিকে? আচ্ছা, গাড়িটা আমাদেরই কি তবে ভেবেছিল ডাকাত অথবা সন্ত্রাসী?
বেশ কয়েকটা দ্বীপ আছে কক্সবাজারের কাছাকাছি ৷ সময় তত নেই বলে আমরা যাব শুধু ছ-মাইল দূরের মহেশখালিতে ৷ সকালবেলায় হিলটপ সার্কিট হাউস থেকে অনেকটা দূর দেখে নিয়েছিলাম একসঙ্গে, শহর আর সমুদ্র ৷ মহেশখালির প্রান্তরেখা দেখা যায় সেই চুড়ো থেকে ৷ ঘাট থেকে স্পিডবোট নিয়ে নিলে সেখানে পৌঁছতে সময় লাগবে মিনিট কুড়ি ৷
দ্বীপ শুনলে এখনও একটা মায়াময় ধারণা তৈরি হয় মনে ৷ মনে হয় যেন সেখানে আছে কেবল গাছের সারি আর পশুপাখির দল, আর তার সজল ভূমির মাঝখানে ঘুরে বেড়ায় হয়তো ক্বচিৎ কজন মানুষ, সরল, শুশ্রূষাময় ৷ সেটা যে একেবারে অলীক কল্পনা তা বুঝে নেওয়া শক্ত নয়, তবু একটু ধাক্কাই লাগে মহেশখালিতে প্রথম পা রেখে ৷ সামুদ্রিক হাওয়ায় কুড়ি মিনিট শরীর-মন ভিজিয়ে নেবার পর, আকাশজলের সুনীলিমায় চোখদুটোকে একেবারে মাখামাখি করে নেবার পর, স্পিডবোট ছেড়ে ডাঙায় উঠতেই সেই একইরকম শহুরে হুল্লোড় আর বাণিজ্যিকতায় যখন জাপটে ধরে আমাদের, কোন রিকশা আমাদের তুলে নেবে তা নিয়ে যখন পান্ডাসুলভ ছিনিমিনি চলতে থাকে প্রায়, হঠাৎ যেন অবসাদ ঘিরে ধরে তখন ৷ প্রায় দেড়শো বর্গমাইল আয়তন যে দ্বীপের, জনসংখ্যা যেখানে প্রায় সওয়া দুলক্ষ, সেখানে এটা অপ্রত্যাশিত হওয়া উচিত নয় ৷ তবুও, পাঁজর বার করা পথে ইটের খোঁচায় খোঁচায় অটোরিকশার চাকা লাফাতে থাকে যখন, মনে হতে থাকে ফিরে যাই আবার জলের দিকে ৷ কিন্তু না, আমাদের দেখতে হবে পাহাড়ের ওপর আদিনাথের মন্দির ৷
ছোটই পাহাড়, মাত্র তিনশো ফুট উঁচু, তার ওপর সরু পথে আরওই ছোট এক মন্দির ৷ লোকে বলে পাহাড়ের নাম মৈনাক, রামায়ণে পড়া সেই মৈনাক ৷ চারশো বছরের পুরনো মন্দিরের অপরিসর দুই ঘরের একটাতে শাদা পাথরের অষ্টভুজা দুর্গামূর্তি, আর অন্যটাতে শিবলিঙ্গ ৷
সূচনায় এ ছিল না কি নাথসম্প্রদায়ের কেন্দ্র, তাই আদিনাথ ৷ পরে হিন্দু দেবদেবীর কল্পনা দিয়ে ভরে দেওয়া হয়েছে একে ৷ মন্দিরে যে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত, তার নামেই কি তবে মহেশখালির নাম? মহেশ থেকে মহেশখালি? নাকি মাছ থেকে? আমাদের ঠিক দুশো বছর আগে এ দ্বীপ জরিপ করতে এসেছিলেন যে সাহেব, ফ্রান্সিস বুকানন, তাঁর মনে হয়েছিল পাশের প্রণালীতে অনেক মাছ মেলে বলে এর নাম ছিল মাছখালি!
শ্রীহীন ওই মন্দির খুব টানে না আমাদের, আমরা সরে যাই তার পিছনদিকের নির্জনতায় ৷ অল্প একটু ঢালু হয়ে পাহাড়ের ওপরেই একটা পুকুর হয়ে আছে সেখানে, পুকুরের সিঁড়িতে বসে আপনমনে গান গাইছে বিস্রস্তবাস এক যুবা, বেশ সুরেলা তার গলা ৷ পুকুরটা ভরে আছে বেগুনি রঙের শাপলা ফুলে ৷ মন্দিরপথের সিঁড়ি দিয়ে ওঠবার সময়ে ধূলিধূসর যে দুটি কিশোর আমাদের সঙ্গ ধরেছিল আর কাতর অনুনয়ে বেচতে চাইছিল ফুল, তাদের সংগ্রহের উৎস তাহলে বোঝা গেল এবার ৷
মন্দিরের পিছনের দাওয়ায় এসে দাঁড়াই আমরা, ছেলেদুটি ঠেস দিয়ে থাকে ফুলপাতাহীন এক গাছের কঙ্কালে ৷ এখান থেকে মহেশখালির যে অংশটুকু দেখা যায় তার মধ্যে এখনও জেগে আছে কল্পনার দ্বীপ, নিঃসঙ্গ জমি অনেকদূর এগিয়ে গিয়ে সমুদ্রকে ছুঁয়ে আছে ওখানে ৷ সেদিকে তাকিয়ে নাছোড় ছেলেদুটির সঙ্গে গল্প শুরু করি আমরা ৷
সারাদিনই কি ফুল বেচো তোমরা?
না ৷
কী করো তবে? পড়াশোনা করো?
ইস্কুলে যাই ৷
কোন ক্লাস?
ফোর ৷
আজ যাওনি ইস্কুলে?
আজ ছুটি ৷
বাবা আছেন? বাবা কী করেন?
চাষ ৷
সবাই এখানে চাষ করে?
আমরা সবাই করি, বাঙালিরা সবাই করে না ৷
বাঙালিরা করে না? তোমরা বাঙালি না? নাম কী তোমার?
সুমন ৷
সুমন কী?
সুমন দে ৷
তাহলে তো বাঙালিই তোমরা ৷
না, আমরা হিন্দু ৷
বাঙালি তবে কারা?
ওরা, যারা রোজা রাখে, যারা নামাজ পড়ে ৷
তা কেন হবে, শুধু ওরাই কেন হবে, তোমরাও তো ৷ তুমি তো বাংলাই বলছ ৷ তাহলে তুমিও তো বাঙালি, তাই না?
কিন্তু ছেলেদুটি অবোধভাবে তাকিয়ে থাকে ৷ আমাদের কথার কোনও মানেই খুঁজে পায় না তারা ৷
আর আমাদের মনে হয়, ইতিহাসের বৃত্ত তাহলে পূর্ণ হয়ে এল এবার ৷ এই বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়েই একদিন বলা হত, শুনতে হত ‘ওরা বাঙালি না, ওরা মুসলমান’, আর আজ এই ছেলেদুটি বলছে ‘আমরা বাঙালি না, আমরা হিন্দু’ ৷ কোথায় আমরা চলেছি, এখনও জানি না ঠিক ৷ ট্রাকের পিছনদিকের সেই লেখনটা আরও একবার ভেসে উঠল চোখে ৷
মহেশখালি থেকে ফিরে আসবার স্পিডবোট ধরি আমরা ৷
ভ্রমণ মে, ১৯৯৭
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন