অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
দিল্লি থেকে তাসখন্দ এসেছি বিমানে ৷ এখান থেকে আমাদের অভিযান শুরু ৷ যাব জিপে চড়ে ৷ উজবেকিস্তান, কিরঘিজস্তান হয়ে তাকলামাকান মরুভূমিকে পাশে পাশে রেখে শিনশিয়ান প্রদেশের ইয়ারখন্দ, খাসগড়, উরুমচি, তুরফান, দুনহুয়াং পেরিয়ে তিব্বত ৷ তারপর এভারেস্ট নর্থ বেস ক্যাম্প ছুঁয়ে কাঠমান্ডু হয়ে দেশে ফিরব ৷ মোট ১২,০০০ কিলোমিটার রাস্তা, পুরো দুমাসের অভিযান ৷
আমাদের দল মোট ১৮ জনের ৷ চিন থেকে আরও চারজন যোগ দেবেন ৷ এই অভিযানের মূল লক্ষ্য মধ্য এশিয়া ও তিব্বতের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের পুনরুদ্ধার বা মেলবন্ধন ৷ বহু কালের পুরনো সেই সম্পর্কের ভূগোল-ইতিহাসের খানিকটা আঁচ নেওয়া ৷ সেইজন্যই প্রাচীন সিল্করুট ধরে পুরোটাই স্থলপথে যাবার পরিকল্পনা ছিল ৷ কিন্তু পাকিস্তান, আফগানিস্থানের রাজনৈতিক অবস্থার জন্য তাসখন্দ পর্যন্ত আমাদের বিমানে যেতে হল ৷
দিল্লি থেকে তাসখন্দ এলাম কাশ্মীর, লাদাখ উপত্যকা, হিন্দুকুশ পর্বত, কারাকোরাম পর্বতমালা পেরিয়ে ৷ এই বিরাট পর্বতমালা, যেদিকেই তাকাই বরফাবৃত চূড়া দেখে আমার মনে হচ্ছিল কী বিপুল সাহস আর ইচ্ছে নিয়ে সেই কতকাল আগে শাসক, পরিব্রাজকরা যুগে যুগে এই পথ পেরিয়েছে ৷ বিমান থেকেই দেখলাম রুক্ষ তাকলামাকান মরুভূমি ৷
তাসখন্দে জিনিসপত্র গুছোতে আমরা দুদিন থেকে গেলাম ৷ তাসখন্দ এখন বিরাট শহর ৷ পুরনো তাসখন্দের নিদর্শন রয়েছে রেগিস্তান স্কোয়্যার, বিভিন্ন মাদ্রাসা, পুরনো বাড়িগুলিতে ৷ এখানে নানারকম মুখ দেখলাম ৷ কাজাক, উজবেক, কিরঘিজ, রুশ নানা জাতির এখানে মিলেমিশে বাস ৷
তাসখন্দের বাজার দেখার মতো ৷ এত সস্তায় যে কিসমিস, বাদাম পাওয়া যায়, আমাদের কোনও ধারণাই ছিল না ৷ আমাদের অভিযানের সদস্যরা তো মুঠো-মুঠো কিনে ফেললেন ৷ যদিও শুনলাম দাম এখন অনেক বেড়ে গেছে ৷ এখানকার যানবাহনও খুব উন্নত ৷ নানারকম ট্রলিবাস, বাস রাস্তায় চলে ৷ এখানকার উজবেকরা মুসলিম ৷ যদিও ধর্ম নিয়ে মাতামাতি চোখে পড়ল না ৷
তাসখন্দ থেকে রওনা হলাম ঐতিহাসিক শহর সমরখন্দ এবং বুখারার দিকে ৷ সমরখন্দ ছিল তৈমুরলঙের রাজধানী ৷ তারও আগে চেঙ্গিস খাঁ এখানে লুঠপাট করেন ৷ সমরখন্দ একটা পুরনো মরূদ্যান ৷ এখানে দেখার যেন আর শেষ নেই ৷ অসংখ্য স্থাপত্য, দেখতে দু-তিনদিন লেগে যায় ৷ সমরখন্দের একটা অংশ প্রাচীন রয়ে গেছে ৷ বাকি অংশের আধুনিকীকরণ হয়েছে, যদিও সব মিলিয়ে একটা প্রাচীনতার স্পর্শ পাওয়া যায় ৷ এই শতাব্দীর শুরুতে স্থাপত্যগুলির পুনর্নির্মাণ হয় ৷ এখানকার আরেকটা মজার জিনিস চায়ের দোকান-স্থানীয় ভাষায় চায়খানা ৷ এই চায়খানায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা মারতে এরা খুব ভালোবাসে ৷
সমরখন্দ থেকে বুখারা ৷ বুখারায় অসংখ্য মসজিদ আর মাদ্রাসা ৷ এর মধ্যে বিবিখান মাদ্রাসা খুব বিখ্যাত ৷ এখানকার স্থাপত্য দেখার জন্য একদিনের প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা আছে ৷ বুখারাতে নানা জাতের, নানা ধর্মের লোকের বাস ৷ বুখারার বাজার আর চায়খানা অপূর্ব ৷ মোল্লা নাসিরুদ্দিনের জন্মস্থান এই বুখারা ৷ এখানে তাঁর একটা মুর্তি আছে, খচ্চরের পিঠে বসে আছেন ৷ এই মূর্তির চারপাশে ছোট ছোট চায়খানা ৷ দেখে মনে হল, এরা সবাই যেন মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্প বলছে ৷ বুখারা-সমরখন্দের রাস্তায় রাস্তায় ধ্রুপদী সঙ্গীত শোনা যায় ৷ এইসব শিল্পীরা সারেঙ্গি দোতারা ব্যবহার করেন ৷ ভাষা বুঝলাম না, কিন্তু সুর শুনে মনে হল যেন রাজস্থানি সঙ্গীত শুনছি ৷
বুখারা থেকে তাসখন্দ ফিরতে আমাদের একদিন লাগল ৷ পথ প্রায় চারশো কিলোমিটার ৷ এই রাস্তায় একদিকে রুক্ষ মরুঅঞ্চল, তাকে ঘিরে আছে তিয়েনশানের বরফ ঢাকা চূড়া, পামীর মালভূমি ৷ অন্যদিকে মাইলের পর মাইল টিউলিপ ফুটে রয়েছে ৷
অক্টোবর থেকে এপ্রিল এই মরুভূমি বরফে ঢেকে যায় ৷ এইসময় তাপমাত্রা মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে ৷ মে থেকে সেপ্টেম্বর বেড়াবার উপযুক্ত সময় ৷
এরপর আমরা ঢুকলাম কাজাখস্তানে ৷ প্রথমেই পথে পড়ল চিমিকেন্ট বলে একটা ছোট শহর ৷ উজবেকিস্তান থেকে যখন কাজাখস্তানে ঢুকছি সীমান্তরক্ষীরা আমাদের দেখে হাত নেড়ে দিল ৷ নতুন দেশ তো, ভিসা-পাসপোর্ট পরীক্ষা করা এখনও এদের ধাতে আসেনি ৷
এখান থেকে আমরা দুভাগে ভাগ হয়ে গেলাম ৷ একটা দল ফরঘনার দিকে চলে গেলাম ৷ ফরঘনা তাসখন্দ থেকে স্থলপথে একদিনের রাস্তা ৷ আকাশপথে আধঘণ্টা ৷ ফরঘনা সুলেমান পর্বতশ্রেণী, পামীর, তিয়েনশান পর্বতমালা দিয়ে ঘেরা ৷ বাবরনামা থেকে জানা যায়, ফরঘনা ছিল ফুলে-ফলে ভরা আশ্চর্য সুন্দর এক রাজ্য ৷ এখানে বৃষ্টি হয় না ৷ চারদিকের পর্বতের বরফগলা জল মাটির তলা দিয়ে যাবার ব্যবস্থা ছিল বলে ফরঘনা এত সবুজ ৷ ফরঘনায় আন্দিজান আর ওশ-এই দুটোই বড় শহর ৷ আন্দিজান বাবরের জন্মস্থান ৷ শহরটা দেখলাম ফুলে ভর্তি ৷ রাস্তায় রাস্তায় গোলাপ ফুলের গাছ ৷ সর্বত্র জলের ব্যবস্থা উন্নত ৷ এই কৃত্রিম জলের ব্যবস্থা না থাকলে ফরঘনা মরুভূমি হয়ে যেত ৷ এখানকার ছেলেমেয়েরা দেখতে ভারি সুন্দর ৷ এখানেও নানাজাত মিলে গেছে ৷ ফরঘনায় আমরা রইলাম তিনদিন ৷ এখানেও দেখার জায়গা অসংখ্য, আর রাস্তার মোড়ে মোড়ে সঙ্গীত ৷ কেউ যদি খেতে নিমন্ত্রণ করেন, খাবারের সঙ্গে একজন পাশে দাঁড়িয়ে গান শোনাবেন ৷ এদের খাবারও খুব অদ্ভুত ৷ শুকনো ফল দিয়ে আরম্ভ ৷ তারপর শোরবা, ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি স্টু ৷ আবার ফল, আবার মাংস, আবার ফল এইরকম চলতেই থাকে ৷ অসংখ্য পদ ৷ ছোট রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে সর্বত্র এই রীতি ৷ ফরঘনার মানুষজন খুব অতিথিবৎসল ৷ এখানে সবে ট্যুরিজম ঢুকেছে ৷ ফরঘনার গ্রামগুলিতে একটা এশীয় ছাপ রয়েছে ৷
ফরঘনা থেকে কিরঘিজস্তানের বিসকেক ৷ কিরঘিজস্তান পুরোটাই পার্বত্য অঞ্চল, তিয়েনশান পর্বতমালা দিয়ে ঘেরা ৷ এর একদিকে চিন, একদিকে উজবেকিস্তান, একদিকে কাজাখস্তান ৷ কিরঘিজরা যাযাবর উপজাতি ৷ এদের মধ্যে অনেকেই গরমকালে তাঁবুতে থাকে ৷ এগুলিকে ইয়ুর্দ বলে ৷ ইয়ুর্দে আমরা একটা রাত কাটালাম ৷ আমাদের অতিথি পেয়ে খুব আনন্দিত তাঁবুর বাসিন্দারা ৷ এখনও এদের মধ্যে অদ্ভুত সরলতা ৷ বিসকেকের ওশ বাজার বিখ্যাত ৷ এখানে প্লেনের টিকিট বিক্রি হয়ে যাবার পর নিলাম হয় ৷ ভাগ্যে থাকলে বাসের টিকিটের চেয়েও সস্তায় ছোট ছোট উড়ানগুলির টিকিট পাওয়া যায় ৷ এইসব প্লেনে করে বালতি ভরে ফল নিয়ে ব্যাপারীরা আসে ওশ বাজারে ৷ বিসকেকের হাওয়ায় একটা ইউরোপীয় গন্ধ আছে ৷ বিসকেক থেকে ইসুকুল লেক ঘণ্টাচারেকের পথ ৷ সাড়ে সাত-আট হাজার ফিট ওপরে চল্লিশ বর্গ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে বিশাল এই ইসুকুল লেক ৷ তার চারদিকে তিয়েনশান পর্বতমালা ৷ এরই একটা পাস দিয়ে ইসুকুলে যেতে হয় ৷ এত সুন্দর জায়গা আমি আর দেখিনি ৷ জেনিভা, কানাডার হ্রদ অঞ্চলের চেয়েও সুন্দর ৷ নোনা জলের হ্রদ ৷ তাই শীতকালে চারদিকে বরফ থাকলেও এই হ্রদের জল জমে না, আর জলের রংও তেমনই-একেবারে টলটলে নীল ৷ এখানে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে ৷ আগে শুধু রাষ্ট্রপ্রধানরা সোভিয়েত সরকারের আমন্ত্রণে এখানে আসতে পারতেন ৷ রাজীব গান্ধীও এসেছিলেন ৷ হ্রদের চারপাশে ছোট ছোট কিরঘিজ গ্রাম ৷ এখন গরমকাল বলে প্রচুর অশ্বপালক দেখলাম ৷ তারা অসংখ্য ঘোড়া নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ ইসুকুল হ্রদে সূর্যোদয়, সূর্যাস্তের দৃশ্য অকল্পনীয় ৷ মোটর লঞ্চে হ্রদে বেড়ানো যায় ৷ তাছাড়া চারপাশের গ্রামগুলোতে ঘুরে ভালো সময় কাটে ৷
ইসুকুল প্রাচীন সিল্করুটের একটা অংশ ছিল ৷ যেসব ব্যবসায়ীরা ককেশাস হয়ে ইউরোপ চলে যেত, তারা এই হ্রদের ধারে বিশ্রাম নিত ৷
ইসুকুল থেকে বেরিয়ে আমরা পাড়ি দিলাম চিনের দিকে ৷ চিনা তুর্কিস্তান ৷ যার অন্য নাম শিনশিয়ান ৷ এটি একটি স্বয়ংশাসিত প্রদেশ ৷ এই পথে শিনশিয়ানের আগে পড়ল ছোট্ট শহর নারিন ৷ নারিনের ঠিক আগে আমরা বরফ পেলাম ৷ এটিও একটি মনোরম উপত্যকা, একদিকে রুক্ষ মরুভূমি, অন্যদিকে ঘন সবুজ মরূদ্যান ৷ আর এই প্রথম চোখে পড়ল দুই কুঁজওয়ালা উটের পাল ৷ এখানে প্রচুর ভেড়া চরে বেড়াতে দেখলাম ৷ কিরঘিজরা তাদের পালিত পশুর পাল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ দূরে একদিকে পামীর, আরেকদিকে তিয়েনশান পর্বতমালা ৷ কিরঘিজ বর্ডারের দৃশ্যও অদ্ভুত ৷ রুক্ষভূমি কিন্তু বরফে ঘেরা ৷ কিরঘিজস্তান আর শিনশিয়ান প্রদেশের মাঝখানে নো ম্যানস ল্যান্ড ৷ এখানে মানুষ না থাকায় প্রচুর বন্যজন্তু স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ প্রচুর মরূভূমির সরীসৃপ, অসংখ্য পাখি আর বন্য লোমশ দুই কুঁজওয়ালা উটের দল ৷ টানা বারো কিলোমিটার এইরকম ৷ পশুপাখি, কীটপতঙ্গের স্বর্গরাজ্য ৷
এর পরের গন্তব্য তোরুগাড পাস (১০,৫০০ ফুট) ৷ এই পথটা অত্যন্ত খারাপ ৷ তার ওপর হঠাৎ বৃষ্টি এল ৷ সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল তুষারঝড় ৷ কয়েক মিনিটের মধ্যে চারদিক বরফে সাদা হয়ে গেল ৷ যদিও এই সময় গাড়ি চালানোর ঝুঁকি আছে, তবু এর মধ্য দিয়েই আমরা শিনশিয়ানের সীমানায় চলে এলাম ৷
এই অঞ্চলটা এখনও পর্যটকের জন্য নিষিদ্ধ ৷ কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নো ম্যানস ল্যান্ড দিয়ে অনবরত ট্রাক চলাচল করছে ৷
চিনে ঢোকার অনুমতিপত্র সংক্রান্ত আইনকানুনের জন্য আমাদের সারাদিন তোরুগাড পাসেই কাটাতে হল ৷ এখান থেকেই চারজন চিনা অভিযাত্রী আমাদের দলে যোগ দিলেন ৷
তোরুগাড পেরোতেই আমরা তিয়েনশানের অন্যদিকে চলে এলাম ৷ একেবারে মরুভূমির মধ্যে নেমে এলাম ৷ এই শিনশিয়ান প্রদেশের মাঝখানে তাকলামাকান মরুভূমি ৷ এই তাকলামাকান পরে গোবিতে গিয়ে মিশেছে ৷ তোরুগাড থেকেই দেখতে পেলাম একদিকে তিয়েনশান পর্বতমালা, অন্যদিকে কুয়েনলুন পর্বতমালা আর দূরে পামীর মালভূমি ৷
এই অঞ্চলটা দখল করা নিয়ে রুশ, ইংরেজ এবং চিনাদের মধ্যে একটা ঠান্ডা লড়াই চলেছিল ৷ কারণ এখান থেকে পুরো মধ্য এশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ৷ আর্কিওলজিস্টদের মতে, তাকলামাকানের তলায় তিনশো বৌদ্ধ শহর চাপা পড়ে গেছে ৷ কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বরফগলা জলপুষ্ট নদীগুলি শুকিয়ে গেলে নদীতীরবর্তী মরূদ্যান শহরগুলি ধ্বংস হয়ে যায় ৷ তুর্ক ভাষায় তাকলামাকান শব্দের অর্থ, যে একবার ঢোকে সে আর ফেরে না ৷ এই ভয়ঙ্কর মরুভূমির ঝড়, আঁধি একটা গোটা ক্যারাভানকে শেষ করে ফেলতে পারে ৷ আমরা যখন খাসগড় থেকে ইয়ারখন্দের দিকে যাচ্ছি হঠাৎ আঁধি শুরু হল ৷ প্রথমেই আমার মনে হল কালো মেঘ তলা থেকে উঠে আসছে ৷ পরে বুঝলাম এটা একটা ভয়ঙ্কর ধুলোর ঝড় ৷ বড় বড় পাথর উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৷ এই পাথর যদি লাগে নির্ঘাৎ মৃত্যু ৷ আমাদের গাড়িতেও দুয়েকটা ইট-পাটকেল এসে পড়েছিল ৷ স্থানীয় মানুষরা আঁধিকে বুঢ়ান বলে ৷
এই মরু অঞ্চলের প্রথম শহর খাসগড় ৷ বাবরনামায় খাসগড়ের উল্লেখ আছে ৷ খাসগড়ের খানিকটা অংশ আধুনিক হলেও, কোথাও কোথাও একটা পুরনো গন্ধ পেলাম ৷ এটা একটা বিরাট উর্বর মরূদ্যান ৷ আমার ধারণা ছিল মরূদ্যান মানে মরুভূমির মাঝখানে কয়েকটা খেজুর গাছ আর কাঁটাঝোপ ৷ তা নয়, মাইলের পর মাইল মরূদ্যান ৷ খাসগড় আর ইয়ারখন্দের মাঝখানের ভয়ঙ্কর মরুভূমি সম্বন্ধে পড়েছিলাম এখানে মানুষের, উটের কঙ্কাল পড়ে থাকে ৷ কিন্তু এখন মানুষের অসীম ক্ষমতায় এই দুই মরূদ্যানের মাঝখানের মরুভূমি ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে ৷ এখানকার জলের ব্যবস্থা এত উন্নত বলেই এটা সম্ভব হয়েছে ৷ খাসগড়ে প্রথম দিন আকাশ ঝকঝকে ছিল ৷ কিন্তু তার পরের দিনগুলোয় ধোঁয়াশার জন্য সূর্য দেখা গেল না ৷ এটা এখানকার একটা অদ্ভুত ব্যাপার, মরুভূমি থেকে মিহি ধুলো এসে সর্বত্র ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে ৷ এখানে দিনের পর দিন এই জন্য সূর্যের দর্শন মেলে না ৷ যদিও স্থানীয় মানুষ এতে 4ক্ষেপও না করে যে যার কাজ চালিয়ে যায় ৷
খাসগড় একেবারে প্রাচীন এশীয় শহর ৷ খাসগড়ের মূল মসজিদ একাদশ শতকে তৈরি ৷ খাসগড়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল রবিবারের বাজার ৷ আমরা এখানে শ্যুটিং করেছিলাম ৷ ধুলোর ধোঁয়াশা সত্বেও হাজার হাজার মানুষ এই বাজারে বেচাকেনা করে চলেছেন ৷ কতরকম যে সামগ্রী তা বলে শেষ করা যায় না ৷ নানারকম খাবারদাবার তো আছেই, সেইসঙ্গে হাঁস, মুরগি, ঘোড়া, মায় কামার-কুমোর-সবাই হাজির ৷ সে এক জমজমাট ব্যাপার ৷
খাসগড় থেকে আমরা চলে গেলাম ইয়ারখন্দ ৷ এখানে আমরা একদিন ছিলাম ৷ ইয়ারখন্দ থেকেই চোখে পড়তে শুরু করল নৈশ বাজার ৷ বিকেল পাঁচটা বেজে গেলেই নানারকম খাবারদাবার নিয়ে লোকেরা একেকটা পাবলিক স্কোয়্যারে চলে আসে ৷ কাবাব, চিনা খাবারের স্টল ছাড়াও রয়েছে কিছু বিলিয়ার্ড বোর্ড ৷ কাজকর্ম সেরে লোকেরা সপরিবারে এখানে চলে আসে ৷ এখানকার কাবাব বিখ্যাত ৷ মাংসের দোকানের সঙ্গেই কাবাবের দোকান ৷ একই দোকানে মাংস ঝুলছে আবার তা থেকে কেটে নিয়ে মশলাছাড়া সুস্বাদু কাবাব বানিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৷ এখানকার লোকেরা দেখলাম বহুক্ষণ ধরে গল্পগুজব করে নানারকম খাবার খেয়ে আর বিলিয়ার্ড খেলে সন্ধেটা কাটায় ৷
পরদিন ইয়ারখন্দ ছেড়ে চলে এলাম হোতান ৷ হোতানের জেড পাথর বিখ্যাত ৷ তবে ট্যুরিস্টদের ঠকাবার ব্যবস্থাও রয়েছে ৷ হোতান আর কারকাশ নদী সাদা আর সবুজ জেড বয়ে আনে ৷ বাচ্চা ছেলেরা নদী থেকে জেড কুড়িয়ে বিক্রি করে ৷ পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা জেড এখানে পাওয়া যায় ৷ এই নদী থেকে বহু বছরের পুরনো মুদ্রাও কুড়িয়ে পাওয়া যায় ৷ ছোটরা এগুলোও বিক্রি করে ৷ হোতানের মিউজিয়াম দেখার মতো ৷
হোতান থেকে নর্দান সিল্করুট ধরে আমাদের পরের গন্তব্য উরুমচি ৷ উরুমচির পথে পড়ে আক্সু ৷ আক্সুর কাছে কুরলা, কুচা প্রাচীন বৌদ্ধ শহর ৷ যদিও এখন এগুলি আধুনিক চিনে শহর ৷ এখানে প্রচুর খনিজ তেল পাওয়া গেছে ৷ এই তেলে চিনের আগামী একশো বছরের তেলের সমস্যা মিটে যাবে ৷ উরুমচি শিনশিয়ান প্রদেশের রাজধানী, বিরাট শহর ৷ এখানে বহু জাতির বাস ৷ উরুমচি থেকে ঘণ্টাদুয়েকের যাত্রায় আমরা গেলাম হেভেনস লেক ৷ ভারি সুন্দর মিষ্টি জলের হ্রদ ৷ এখানে থাকার অনুমতিও আছে ৷ এই হ্রদের ওপরেও তিয়েনশান পর্বত ৷ অদূর ভবিষ্যতে এটি একটি ট্যুরিস্ট স্পট হয়ে যাবে ৷ উরুমচি থেকে আমি আর আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট শিয়ান উড়ে গিয়েছিলাম ৷ শিয়ান মূল চিনা ভূখণ্ডের একদম মধ্যে ৷ শিয়ান থেকে হিউয়েন সাং, ফা-হিয়েন ভারতবর্ষে এসেছিলেন ৷ শুধু এই জন্যই শিয়ানকে আমাদের অভিযানের বাইরে রাখা সম্ভব হল না ৷ শিয়ান এখন আধুনিক শহর ৷ প্রচুর সাইকেল ৷ এখানে বিগ গুস প্যাগোডা, লিটল গুস প্যাগোডা, হিউয়েন সাঙের সমাধি অন্যতম দ্রষ্টব্য ৷ ভারত থেকে ফিরে বিগ গুস প্যাগোডায় হিউয়েন সাং আঠেরো বছর ধরে ভারতীয় পুঁথি অনুবাদ করেছিলেন ৷ শিয়ানের চারপাশে সবুজ ধানখেত, দেখলে মনে হয় গ্রামবাংলা ৷ শিয়ান শহর প্রাচীরবেষ্টিত ৷ শিয়ানে তিনদিন থেকে আবার উরুমচি ফিরে এলাম ৷
উরুমচি থেকে স্থলপথে শিয়ান যাওয়া সম্ভব ৷ প্রাচীন সিল্করুটের হেক্সি করিডর দিয়ে শিয়ান যাওয়া যায় ৷
উরুমচি এয়ারপোর্ট থেকে চায়না এয়ারলাইন্সের বিমানে খাসগড়, হোতান যাওয়া যায় ৷
উরুমচি থেকে তুরফান ৷ তুরফান উপত্যকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯০০ ফুট নিচে ৷ পৃথিবীর নিম্নতম অঞ্চল ৷ আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন ৷ এখানে বাষ্পীভবনের ফলে মাটির ওপরের জল শুকিয়ে যায় ৷ এখানকার জলব্যবস্থা আড়াই হাজার বছরের পুরনো ৷ এর নাম কারেজ ৷ মাইলের পর মাইল মাটির তলা দিয়ে বরফগলা জলের খাল বয় ৷ বাড়িতে বাড়িতে এই জল ব্যবহার করার ব্যবস্থা রয়েছে ৷ এই আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বীজ ছাড়া আঙুর এখানে জন্মায় ৷ আমরা যখন তুরফান পৌঁছলাম, তখন আঙুর পাকতে তিন সপ্তাহ বাকি ৷ এখানকার কিসমিসও বিখ্যাত ৷ এখানে প্রচুর দীর্ঘায়ু লোক দেখলাম ৷ বেশিরভাগই একশোর ওপরে ৷ তুরফানের গড় আয়ু বেশি ৷ উরুমচির কাছেই পৃথিবীর কেন্দ্র ৷ এই অঞ্চল সমুদ্র থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত ৷ দুহাজার মাইলের মধ্যে কোনও সমুদ্র নেই ৷ এই নিয়ে একটা মজার গল্প আছে ৷ এখানকার লোকেরা সিনেমায় সমুদ্রের দৃশ্য দেখে হল ছেড়ে পালিয়ে গেছিল ৷ জল যে এভাবে এগিয়ে আসতে পারে, তা তাদের কল্পনাতেও ছিল না ৷ তুরফানের বেজেক্লিকে বৌদ্ধ গুহা এক অসাধারণ দ্রষ্টব্য ৷ এত দুর্গম অঞ্চল যে কেন তাঁরা তাঁদের সাধনার জন্য বেছেছিলেন তা রহস্য ৷ এই বৌদ্ধ গুহায় অসংখ্য প্রাচীন পেন্টিং ছিল ৷ এগুলি এখন ইউরোপের মিউজিয়ামে ৷
বেজেক্লিক দেখে আমরা চলে গেলাম হামি ৷ আটঘণ্টার পথ ৷ খুব ভালো, একদম সোজা পিচের রাস্তা, মরুভূমির মাঝখান দিয়ে ৷ এই রাস্তায় আমি দুবার দুর্ঘটনা ঘটাতে ঘটাতে বেঁচে গেলাম ৷ এত সোজা রাস্তায় গাড়ি চালানো খুব বিপজ্জনক ৷ একই স্পিডে, স্টিয়ারিং একদম না ঘুরিয়ে বসে থাকতে থাকতে, দুবার ঢুলে পড়েছিলাম ৷
তাছাড়া, এই অঞ্চলের দমকা হাওয়া ছোট ছোট পাথর উড়িয়ে নেয় ৷ দুবার এই পাথর লেগে আমাদের জিপের উইন্ড শিল্ড ভেঙে গেল ৷
হামি ছোট প্রাচীন শহর ৷ এখানকার নৈশ বাজার বিখ্যাত ৷ স্থাপত্যের ওপর মুসলমান ও চিনা দুয়েরই প্রভাব রয়েছে ৷ মার্কো পোলো হামিতে এসে দেখেছিলেন, এখানকার মানুষ অতিথিবাৎসল্যের চোটে তাদের স্ত্রীদের অতিথিকে দিত সম্ভোগের জন্য ৷ সে অন্ধকার যুগ আর না থাকলেও হামির অতিথিপরায়ণতা এখনও যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য ৷ কোনও রেস্তোরাঁয় কেউ যদি মন দিয়ে না খায়, রেস্তোরাঁর মালিক অপমানিত হয়ে পয়সা নেয় না ৷
হামি থেকে চললাম দুনহুয়াং ৷ দুনহুয়াং প্রাচীন সিল্করুটের একটা অত্যন্ত সম্পন্ন মরূদ্যান ৷ প্রাচীনকালে দুনহুয়াংয়ে ব্যবসায়ীরা বিশ্রাম নিতে থামত ৷ দুনহুয়াংয়ের অন্যতম দ্রষ্টব্য পৃথিবীর বৃহত্তম বৌদ্ধগুহা মাগাঁও ৷ এখন থেকেই অরেলস্টাইন পৃথিবীর প্রথম মুদ্রিত বই ‘হীরক সূত্র’ খুঁজে বার করেন ৷ মাগাঁও দেখতেই দিনকয়েক লেগে যায় ৷ এখানে মিংশা বালিয়াড়ি আরেক দ্রষ্টব্য ৷ বিশাল বালিয়াড়ি ৷ এখানে নানারকম বালুকাক্রীড়া (Sand Sports) ও উটের পিঠে চড়ার বন্দোবস্ত আছে ৷ দুনহুয়াং থেকে আমরা তিব্বতের উদ্দেশে রওনা হই ৷ প্রায় ছ-দিনের পথ ৷ পথে পড়ে গোলমু ৷ গোলমু থেকে চড়াই শুরু ৷ তিব্বতের গড় উচ্চতা ১২,০০০ থেকে ১৫,০০০ ফুট ৷ আগে উত্তরদিক থেকে তিব্বত পৌঁছনো খুবই কঠিন কাজ ছিল ৷ এই শতকের গোড়া পর্যন্ত কেউই এই পথে লাসা পৌঁছতে পারেননি ৷ আধুনিককালের শিনশিয়ান-তিব্বত হাইওয়ে (প্রায় ৩,৫০০ মাইল) ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক বিস্ময় ৷ এত উঁচুতে এত লম্বা রাস্তা আর কোথাও নেই ৷ অভিযানের এই অংশে প্রথম আমাদের তাঁবু খাটাতে হয় ৷ মাইলের পর মাইল ধারেকাছে কোনও জনবসতি নেই ৷ উত্তর তিব্বত থেকে লাসা পৌঁছতে ছ-সাত দিন লেগে গেল ৷ এই পথে আমরা প্রথম তিব্বতি ইয়াক দেখলাম ৷ এত উঁচুতে গ্রামগুলোও আলাদারকম ৷ এখানকার মানুষরা খুবই ধর্মভাবাপন্ন ৷ প্রায়ই দেখলাম দণ্ডী কেটে তীর্থযাত্রীরা চলেছেন ৷
গোলমুতেই সমতল মরুভূমি শেষ দেখেছি, তিব্বত লাদাখের মতো পার্বত্য মরু ৷ পাহাড়গুলি ন্যাড়া ৷ কিন্তু উপত্যকাগুলি দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে ৷ সবুজের মধ্যে হলুদ সর্ষে বা রেপসিড ফুল ফুটে আছে শত শত মাইল ৷ তিব্বতে প্রথম কয়েকদিন উচ্চতাজনিত অসুস্থতা সকলেরই হল ৷ দু-তিনদিনের ব্যাপার ৷
অবশেষে দামসুং উপত্যকা পেরিয়ে ষষ্ঠদিনে আমরা লাসা পৌঁছলাম ৷ লাসায় ঢোকার আগে সব গাড়ি ধুতে হয় ৷ বহুদিনের মরুযাত্রায় গাড়িগুলো নোংরা হয়ে যায় বলেই সম্ভবত এই ব্যবস্থা ৷ লাসার মূল দ্রষ্টব্য পোটালা প্যালেস ৷ এটা দলাই লামার প্রাসাদ ছিল ৷ পোটালা ছাড়াও লাসায় দেখার জায়গা প্রচুর ৷
লাসায় একটা সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব টের পেলাম ৷ একদিকে আধুনিকীকরণ, অন্যদিকে প্রাচীন তিব্বতি ঐতিহ্য ৷ মনে হয় আধুনিক প্রজন্ম এই দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে আরও কিছুদিন যাবে ৷ তিব্বতের আবহাওয়াও অদ্ভুত ৷ একইদিনে আমরা চারটে ঋতু দেখলাম ৷ লাসায় একদিন দিনেরবেলা বেশ গরম লাগছে বলে টি শার্ট পরে আছি ৷ হঠাৎ ঝড় উঠল, প্রচণ্ড বালির ঝড়; আস্তে আস্তে বালি জমে বরফ হয়ে গেল ৷ তখুনি কাঁপুনি ৷ গরমজামা পরলাম ৷ একটু বাদেই তেড়ে বৃষ্টি এল ৷ তারপর আবার সব স্বাভাবিক ৷ বছরে কয়েকটা মাস তিব্বতের আবহাওয়ার কোনও ঠিকঠিকানা নেই, বাকি সময়টা প্রচণ্ড ঠান্ডা ৷
এখানকার গ্রামগুলোকে দেখলে মনে হয় আধুনিকতা থেকে বহুদূরে একটা আদিম জগৎ ৷ ছোট শহরগুলিতে অবশ্য আধুনিকতার স্পষ্ট ছাপ আছে ৷ লাসা থেকে আমরা চলে এলাম শিগাৎসে ৷ এটি তিব্বতের দ্বিতীয় শহর, পাঞ্চেন লামার জায়গা ৷
এই পথেও নানা গ্রাম, নানা উপজাতি ৷ এই পথের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ইয়ারলুং সাংপো নদী ৷ সাংপোর ধারেই প্রাচীন তিব্বত গড়ে উঠেছিল ৷ এত উঁচুতে এত চওড়া নদী আমি আর দেখিনি ৷ তাতে চামড়ার তৈরি বড় বড় নৌকা চলে ৷ সাংপো পরে ব্রহ্মপুত্র নামে অরুণাচলে ঢুকেছে ৷
শিগাৎসেতে আমাদের অভিযানের ১০,০০০ কিলোমিটার পূর্ণ হয় ৷ পাঞ্চেন লামার প্রাসাদ, উপাসনাগৃহ শিগাৎসের দ্রষ্টব্য ৷ প্রায় দুমাস পর এখানে প্রথম হিন্দি ভাষা শুনলাম ৷
শিগাৎসে থেকে চলে এলাম গিয়ানসে ৷ ফ্রান্সিস, ইয়ং হাজব্যান্ডের ইংরেজ অভিযাত্রীদলকে গিয়ানসের উপজাতি প্রথম বাধা দিয়েছিল ৷ এদের হারিয়ে ইয়ং হাজব্যান্ড ১৯০৪ সালে লাসা পৌঁছন ৷ এখানকার জং, কুম্বুম মনাস্ট্রি অবশ্যদ্রষ্টব্য ৷
গিয়ানসে থেকে একটা রাস্তা কালিম্পং গিয়েছে ৷ এই পথে শিলিগুড়ি থেকে তিব্বত খুব সহজে যাওয়া যাবে ৷ শোনা যাচ্ছে এই রাস্তাটা পর্যটকদের জন্য শিগগির খুলে দেওয়া হবে ৷
গিয়ানসে থেকে রওনা হলাম শেরপাদের গ্রাম টিংরির উদ্দেশে ৷ পৃথিবীবিখ্যাত শেরপারা এই গ্রামেরই মানুষ ৷ টিংরিতে পৃথিবীর উচ্চতম ডাকঘর ৷ এখান থেকে বাড়িতে একটা চিঠি লিখলাম ৷ এরপর আমরা চলে গেলাম এভারেস্ট নর্থ বেসক্যাম্পে (প্রায় ১৮,০০০ ফুট) ৷ এখানে পৃথিবীর উচ্চতম মনাস্ট্রি রংবুক ৷ রংবুকে আমরা দুদিন রইলাম ৷ রংবুকের ঘরগুলোকে অবশ্য ঘর না বলাই ভালো ৷ কোনও কোনওটিতে ছাদ পর্যন্ত নেই ৷ সকাল-বিকেলের আলোয় এভারেস্ট দেখার অভিজ্ঞতা লিখে বোঝাতে পারব না ৷ এত কাছ থেকে এভারেস্ট দেখব কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবিনি ৷
এভারেস্ট বেসক্যাম্প থেকে আমরা নেমে এলাম মিলারেপা উপত্যকায় ৷ এখান থেকে একদিকে দেখা যায় রুক্ষ তিব্বত, অন্যদিকে বর্ষাভেজা সবুজ নেপাল ৷ সমস্ত বর্ষামেঘ নেপালের ওপরে, কিন্তু তারা হিমালয় টপকে তিব্বতে আসতে পারছে না ৷ বেশ কতকগুলি গ্রাম পেরিয়ে, ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ পেরিয়ে আমরা নেপাল উপত্যকায় নেমে এলাম ৷ এখানে এসেই গন্ধটা পাল্টে গেল ৷ বহুদিন পর দুপুরে ডালভাত খেয়ে লুম্বিনি হয়ে দেশে ফিরে এলাম ৷
ভ্রমণ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন