ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

আমাদের যাত্রা এক আশ্চর্য হ্রদের উদ্দেশে ৷ নাম তার ফোকসোমদো ৷ শুনেছি, নীলকান্ত মণির মতো তার রং ৷ নেপালের পশ্চিমপ্রান্তে এককোণে পড়ে থাকা দুর্গম দোলপো উপত্যকার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ফোকসোমদো হ্রদ ৷ এই দোলপো উপত্যকার উত্তরে তিব্বত তথা চিন, পূর্বে কালীগণ্ডকী অঞ্চল, দক্ষিণে ধৌলাগিরি গিরিশিরা ও পশ্চিমে কাঞ্জিরোবা হিমল ৷ দোলপোর মোট ১,৩০০ বর্গমাইল পরিব্যাপ্তির মধ্যে শুধুমাত্র দক্ষিণ-পশ্চিম দিকটিতেই সবাই যেতে পারেন ৷ বাকি অঞ্চলগুলোতে যাবার জন্য বিস্তর সরকারি বাধা-নিষেধ আছে ৷

নেপালগঞ্জের রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হল, আমাদের সব পরিকল্পনা বুঝি ভেস্তে গেল ৷ সকাল দশটায় কাউন্টার খুলবে ও জুমলাগামী ১৮ সিটের ছোট প্লেনের টিকিট দেওয়া হবে ৷ কাউন্টারের সামনে তখন নিদেনপক্ষে শ-দুয়েক লোকের জটলা ৷ কেউ চালের ব্যবসায়ী, কেউ গবাদি পশুর ব্যাপারী, কেউবা শুধু এক বস্তা নুন নিয়ে যাবার জন্য জুমলা থেকে নেপালগঞ্জ এসেছে, কাজ সেরে আবার ফিরে যাবে জুমলায় ৷ নেপালগঞ্জ ও জুমলার সংযোগরক্ষাকারী মাধ্যম বলতে শুধু এই টুইন অটার বিমানগুলো ৷ এই পরিস্থিতিতে টিকিট পাওয়ার কোনও আশা নেই দেখে বুকিং অফিসারের সঙ্গে কথা বললাম ৷ তিনি বললেন, ঘণ্টাখানেক পরে আসুন ৷ দুরু দুরু বক্ষে এক ঘণ্টা অপেক্ষা এবং অতঃপর বিমানের আসন লাভ ৷

দুপুর ঠিক বারোটা পঁচিশ মিনিটে আমাদের প্লেন নেপালগঞ্জের মাটি ছেড়ে আকাশে ডানা মেলল ৷ মাত্র ৩৫ মিনিটের উড়ান ৷ যাত্রীরা সবাই দেহাতি জুমলাবাসী ৷ সঙ্গের মালপত্রের ওজনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় (২৫ কিলোগ্রাম জনপ্রতি) সবাই সমস্ত গরম জামাকাপড় গায়ে পরে নিয়েছে ৷ সময়টা অক্টোবর মাসের প্রথমদিক ৷ প্লেনের ছোট জানলা দিয়ে বাইরের কৃষ্ণনীল আকাশে মেঘের আনাগোনা ৷ ঠিক ১টায় একটা ঝাঁকুনি দিয়ে প্লেন জুমলার (২,৩৪০ মিটার) মাটি স্পর্শ করে ৷ এত কম সময়ের মধ্যে চারপাশের পরিবেশ অদ্ভুত পাল্টে যাওয়াতে বেশ হতচকিত হয়ে যাই ৷ চারপাশে বড় বড় সবুজ পাহাড় দিয়ে ঘেরা একটি ছোট মাঠই এয়ারপোর্ট ৷ অদূরে ছোট ছোট কাঁচা ঘরবাড়ি ৷ তারই একপাশ দিয়ে স্রোতস্বিনী তিলা নদী বয়ে চলেছে ৷ দুপাশে হরেকরকম সবজির খেত-খামারি ৷ তবে ধানেরই প্রাধান্য বেশি ৷ প্লেনেই জুমলার একটি অল্পবয়স্ক ছেলের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ৷ ও আমাদের ওর চেনা একজনের বাড়িতে একটি ঘরের বন্দোবস্ত করে দেয় এবং সন্ধ্যায় একজন মালবাহককে সঙ্গে করে নিয়ে আসার কথা দিয়ে চলে যায় ৷ ঘরে মালপত্র রেখে জুমলার বাজার দেখতে বেরোই ৷ বেশকিছু দোকানপাট, প্রাথমিক স্কুল ও কিছু সরকারি অফিস নজরে পড়ে কিন্তু সবকিছুতেই দারিদ্রের ছাপ ৷ লোকজনের জীবনধারণের মান বেশ নিচু হওয়া সত্বেও মানসিক স্বাস্থ্য বেশ অটুট ৷ সবারই মুখে হাসি লেগে আছে ৷ সারাদিন মাঠে মাঠে ঘাম ঝরিয়ে সন্ধেয় বাড়ি ফিরে মৌতাতে ডুবে যায় গোটা গ্রাম ৷ পশ্চিমে পাত্রাসী গিরিশিরার কোন অজানা তুষারশৃঙ্গের ওপর গোধূলির আলো এক রক্তিম আলপনা এঁকে দেয় ৷ অন্ধকার নেমে এলে টর্চ নিয়ে বাজারে যাই পদযাত্রার কদিনের রসদ কেনবার জন্য ৷

১১ অক্টোবর, ১৯৯৮ ৷ বেরোতে বেরোতে অনেক দেরি হয়ে যায় ৷ তিলা নদীর ধার দিয়ে পথ ৷ ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর প্রথম গ্রাম দেপলগাঁও ৷ গোটাচারেক মাটির ঘর নিয়েই গ্রাম ৷ বাড়িগুলোর রং অর্ধেক গেরুয়া ও অর্ধেক সাদা, দেখেই বোঝা যায় এরা সব ছেত্রী সম্প্রদায়ের মানুষ ৷ আমাদের গাইড দত্তবাহাদুরের বাড়ি এই গ্রামেই ৷ ও এক ফাঁকে ওর ছোট মেয়ের সঙ্গে দেখা করে আসে ৷ তিলা নদীর অপর পারে মাঝে মধ্যেই ছোট ছোট ঘর চোখে পড়ে ৷ গোটা জুমলা উপত্যকাটি বিখ্যাত রেড রাইসের জন্য ৷ তবে তার দাম অত্যন্ত বেশি ৷ দত্তবাহাদুরের কাছ থেকে জানা গেল বিশেষভাবে উৎপন্ন এই চাল বিদেশে রপ্তানি হয় আর নেপালের রাজপরিবারের রসুইখানায় চালান হয় ৷ অর্থাৎ এই চাল সাধারণের জন্য নয় ৷ আজ আকাশ একদম মেঘশূন্য ৷ নদীর জলেও একটা নীলচে আভা লেগেছে ৷ দুপুরের রোদ্দুরের তাত বেশ গায়ে লাগছে ৷ নদীর ধারে একটি গাছের শীতল ছায়ায় বসে সঙ্গে আনা শুকনো খাবার দিয়ে আহার সারা হয় ৷ মিনিট পনেরো বিশ্রাম নিয়ে আবার চলা শুরু ৷ সন্ধে নাগাদ গজরানকোটে প্রথম রাত্রিবাস ৷ চারপাশে ধানখেত থাকায় একটি বাড়ির ছাদে তাঁবু ফেলা হয় ৷ এ অঞ্চলের বাড়ির ছাদগুলি সব কাঠ আর মাটি দিয়ে তৈরি হওয়াতে তাঁবু খাটাতে কোনও অসুবিধে হয় না ৷ প্রথমদিনের হাঁটার দরুন গায়ে-হাতে বেশ ব্যথা ৷ নিচের বাড়ির দিদির হাতে তৈরি রুটি ও আধসেদ্ধ আলুর তরকারি দিয়ে নৈশাহার সেরে সোজা স্লিপিং ব্যাগে ৷

পরদিন খুব ভোর-ভোর বেরিয়ে পড়ি ৷ মিনিট পনেরো হাঁটতেই গ্রাম শেষ ৷ গ্রামেরই এক বাড়ির উঠোনের গাছ থেকে আপেল পাওয়া গেল ১ টাকা করে ৷ স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এই জুমলা উপত্যকার আপেল ৷ তিলা নদীর তীর ধরে সবুজ গালচে বিছোনো পথ ৷ পথ ক্রমশ সরু হয়ে উঠেছে একটি ছোট পাসের মাথায় ৷ জানতে পারলাম এর নাম পাতিয়াতা পাস (২৮৩০ মিটার) ৷ ছোট ছোট পাথর দিয়ে সাজানো পাসের মাথা থেকে সামনের দিকে তাকিয়ে চোখ যেন জুড়িয়ে গেল ৷ সবুজ উপত্যকার মাঝখান দিয়ে অনেকটা আলপনার মতো বাপিলা খোলা তার অজস্র শাখা-প্রশাখা নিয়ে তিরতির করে বয়ে চলেছে ৷ মন্ত্রমুগ্ধের মতো খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নেমে এলাম নিচে ৷ প্রকৃতির কোলে এই মনোরম উদ্যানের নাম গোথিচর (২,৭৬০ মিটার) ৷ একটি সরকারি ভেড়া প্রজননকেন্দ্র আছে এখানে ৷ তারই অফিস ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের থাকার দুয়েকটি ঘরবাড়ি ৷ আজ মধ্যাহ্নের বিরতি এখানেই ৷ একটি মনোমত জায়গা বেছে নিয়ে দত্তবাহাদুর স্টোভ জ্বালায় ৷ আমরাও সটান শুয়ে পড়ি সবুজ গালিচার ওপর ৷ পশ্চিমদিকের পাহাড়ের ওপর দিয়ে চাঁদ তখনও দৃশ্যমান ৷ ঘণ্টাদেড়েক কাটিয়ে আবার পথে ৷ এবার বেশ ঘন জঙ্গল ৷ ঘণ্টাখানেক পর জঙ্গল বেশ হালকা হয়ে আসে ৷ একটি কাঠের পুল পেরিয়ে তিলা নদীর ডানতীরে চলে আসি আমরা ৷ প্রথম চেকপোস্টের নাম মণিসাঙ্গু ৷ কর্তব্যরত প্রহরী আমাদের নাম-ঠিকানা লিখে দিতে বলে ৷ তিলা নদীর এখানে নাম চুরতা খোলা ৷ পথ চলতে চলতে অজস্র পাখির ডাক ৷ সন্ধে নাগাদ পৌঁছই চোত্রা (৩,০১০ মিটার) ৷ এই চোত্রা গ্রামের লোকজন প্রধানত পূর্ব তিব্বতের খাম অঞ্চল থেকে আসা খাম্পা সম্প্রদায়ের অধিবাসী ৷ বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হওয়ায় এদের সকলের বাড়ির সামনে চোর্তেন ও প্রার্থনা পতাকা ৷ নৃতত্ববিদেরা অবশ্য এদের মাতওয়ালি ছেত্রী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করেন যাদের বংশানুক্রমিক উৎস ছিল ভারতের কুমায়ুন হিমালয়ে ৷ আজ আমাদের দ্বিতীয় রাত্রিবাস এখানে ৷ একটি বাড়ির উঠোনে তাঁবু ফেলা হয় ৷ আশপাশের ঘর থেকে দুয়েকজন গল্প করতে আসে ৷

পরদিন প্রায় কাকভোরে বেরিয়ে পড়ি ৷ আজ আমাদের অতিক্রম করতে হবে মৌরিয়া লগনা, লগনা মানে গিরিবর্ত্ম ৷ উচ্চতা ৩,৮২০ মিটার ৷ ঘণ্টাদুয়েক মৃদু চড়াইয়ের পর একটি গিরিশিরা দিয়ে ঘেরা জায়গায় চলে আসি ৷ চতুর্দিকে পাহাড়ের কোল ঘেঁসে জঙ্গল ৷ ছোট গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ থেকে পাইন, দেবদারু ও ভুজ গাছও রয়েছে ৷ নানারকম পর্ণমোচী গাছগাছালির ভেতর দিয়ে হেঁটে পৌঁছই মৌরিয়া গিরিবর্ত্মের ঠিক নিচে ৷ ঝকঝকে নীল আকাশের প্রেক্ষাপটে আমাদের গন্তব্য পাসটিকে দেখতে পাই ৷ পথে এক জায়গায় দুপুরের আহারপর্ব সেরে নিয়েই আবার পথে নামি ৷ চড়াইয়ের প্রকৃতি ক্রমশ তীব্র হতে থাকে ৷ বেশ খানিকটা উঠে এলে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বহুদূরে ধৌলাগিরি গিরিশ্রেণীর পাহাড়গুলো একটু স্পষ্ট হয় ৷ ঘণ্টাদুই একটানা ওঠার পর উঠে আসি মৌরিয়া গিরিবর্ত্মের মাথায় ৷ এর অবস্থান ঠিক কর্নালি ও ভেরি নদীর জল বিভাজিকা গিরিশিরার ওপর ৷ পাসের ওপর দাঁড়িয়ে উত্তরে গুতুম্বা (৫,৬০৮ মিটার) ও মাতাতুম্বা (৫,৭৬৭ মিটার) শৃঙ্গদ্বয়ের দৃশ্য আমাদের চড়াই অতিক্রমের সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয় ৷ পাসের মাথায় রাখা পাথরের স্তূপের ওপর লজেন্স রেখে প্রার্থনা সেরে নিই ৷ আজ মন খুশিতে ভরপুর, কেননা আমরা আজ প্রবেশ করব আমাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত দোলপো উপত্যকায় ৷ পাহাড়ের ঢাল ধরে একটানা নেমে চলা ও মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে পড়া ৷ পশ্চিমে ভালু হিমলের ওপর সূর্যের শেষ কিরণ এক করুণ সুর সৃষ্টি করে ৷ এরইমধ্যে একটি প্রশস্ত ঢাল পেয়ে তার ওপর রাত্রিবাসের আয়োজন করা হয় ৷ তাঁবু ফেলার পর খেয়াল করি আশপাশের জঙ্গলে কতকগুলি ভেড়াওয়ালাদের ঝুপড়ি রয়েছে ৷ আমাদের দেখে তাদেরই ছেলেমেয়েরা এগিয়ে আসে ৷ ওরা এর আগে কোনওদিন তাঁবু দেখেনি ৷ তাঁবুর ফ্ল্যাপের ভেতর উঁকি দিয়ে আমাদের অস্থায়ী সংসারের খবর নিতে চায় ৷ এরই মধ্যে একটি ছোট মেয়ে দৌড়ে গিয়ে বাটিতে করে কী যেন নিয়ে এসে আমাদের দেয় ৷ তাকিয়ে দেখি একবাটি সদ্য প্রস্তুত ছানা ৷ আমাদের আনন্দ দেখে ওরাও খুব খুশি ৷ ওদের গোটাকতক ছবি তুলে দিই ৷ হৈ-চৈ করতে করতে ওরা চলে যায় ৷ আমরা মোটামুটি ৩,৫০০ মিটার উচ্চতায় আছি তাই রাতে বেজায় ঠান্ডা ৷ পরদিন সকালে উঠে দেখি তাঁবুর আউটারে বরফকুচির আস্তরণ ৷ শরীর ক্লান্ত থাকায় একটু দেরিতে বেরনো হয় ৷ উতরাই পথ বলে বেশ জোরেই পা চালাই ৷ পাসের এদিককার পাহাড়গুলো রুক্ষ ৷ তারই মধ্যে ছোট ছোট রংবেরঙের ফুল ফুটে রয়েছে ৷ দুপুর নাগাদ দেখি কয়েকজন বয়স্ক লোক উল্টোদিক থেকে হেঁটে আসছেন ৷ বুঝলাম আমরা চৌরিকোট গ্রামের কাছাকাছি এসে পড়েছি ৷ খুব সুন্দর গ্রাম এই চৌরিকোট ৷ পাহাড়ের ঢালে ধাপে ধাপে ছবির মতো সুন্দর ঘরবাড়ি ৷ লোকজন সবাই কৃষিনির্ভর ৷ তাই দুপুরে গ্রাম একদম সুনসান ৷ চৌরিকোট গ্রামের শেষপ্রান্তে একটি সুন্দর পাহাড়ি বাঁক আছে ৷ বাঁকটা পেরতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল এক অপূর্ব দৃশ্য ৷ পুব আকাশের নীল প্রেক্ষাপটে সদম্ভে দাঁড়িয়ে আছে কাগমারা শৃঙ্গ (৬,৭০৫ মিটার) ৷ পথ এখানে প্রায় সমতল ৷ চতুর্দিকের সবুজ, নীল রঙের মধ্যে গা ডুবিয়ে আমরা পথ চলতে থাকি ৷ আকাশে আজ অলক মেঘের আনাগোনা ৷ রিমি ও মাঝগাঁও নামের দুটি গ্রাম পেরিয়ে যাই ৷ বহুদূরে নিচে ভেরি নদীর আঁকাবাঁকা গতিপথ নজরে আসে ৷ ওরই তীরে আছে কাইগাঁও গ্রাম ৷ কাইগাঁও পৌঁছতে প্রায় অন্ধকার হয়ে যায় ৷ আজ আর তাঁবুতে থাকার প্রয়োজন নেই ৷ স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে রাতের আশ্রয় নিই ৷ এই কাইগাঁও থেকে দুভাবে ফোকসোমদো তাল যাওয়া যায় ৷ একটি রাস্তা ভেরি নদীকে ডানদিকে রেখে সোজা চলে গেছে হরিকোট, তৈজাম হয়ে কাগমারা লা (৫,১১৫ মিটার) অতিক্রম করে ফোকসোমদো তালের দিকে ৷ এই পথটিতে যেতে সরকারি বিধি-নিষেধ আছে ৷ অন্যপথটি ভেরি নদীকে বাঁদিকে রেখে সোজা উঠে এসেছে আরও একটি গিরিবর্ত্মের মাথায় এবং বালাংরা নামের গিরিবর্ত্মটি সবার জন্য উন্মুক্ত ৷ পরদিন প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক চড়াই ভেঙে উঠে আসি বালাংরা গিরিবর্ত্মের (৩,৭৬০ মিটার) মাথায় ৷ চড়াই পথে পড়ে প্রচুর রডোড্রেনডন গাছের জঙ্গল ৷ এপ্রিল-মে মাসে এই জঙ্গলের রূপ কল্পনা করে শিহরিত হলাম ৷ অথচ এখন সমগ্র বনাঞ্চল তৈরি হয়ে আছে আগামী শীতের তুষারের প্রতীক্ষায় ৷ পাসের মাথায় কিছুক্ষণ কাটিয়ে আবার নামতে শুরু করি ৷ প্রায় সত্তর ডিগ্রি ঢালের উতরাই পথ এঁকেবেঁকে নেমে গেছে ঘোড়াখোর গ্রামের দিকে ৷ হাঁটুর প্রায় দফারফা করে যখন ঘোড়াখোর পৌঁছই তখন শরীরের সব শক্তি নিঃশেষিত ৷ একটি চায়ের দোকানে চায়ের কথা বলে দোকানেরই ছাদে তাঁবু টাঙিয়ে ফেলি ৷

পরদিন আমাদের থুলো ভেরি উপত্যকায় প্রবেশ করার কথা ৷ স্থানীয় ভাষায় থুলো মানে বড় ৷ ভেরি নদীর কলেবর এখানে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই বোধহয় তার এই বিশেষণ ৷ নদীকে বাঁয়ে রেখে ঘন সিলভার পাইনের বনের মধ্য দিয়ে চড়াই-উতরাই পথ ৷ উল্টোদিক থেকে একপাল ইয়াক নিয়ে কয়েকজনকে আসতে দেখি ৷ আমাদের দেখে ইয়াকগুলি দাঁড়িয়ে পড়ে ৷ আজ আকাশের মুখ ভার ৷ একে মেঘলা আবহাওয়া তদুপরি ঝোড়ো হাওয়া ৷ কতদূর যেতে পারব কে জানে ৷ তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে দুপুর নাগাদ টিবরিকোট গ্রাম ৷ গ্রামে ঢোকার মুখে আবার পুলিশ চেকপোস্ট ৷ যথারীতি নাম-ঠিকানা লিখে দিতে হয় ৷ টিবরিকোটে দোলপো জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকেরা আসে এখানকার সদা জাগ্রত ত্রিপুরেশ্বরী দেবীর মন্দিরে পুজো দেবার জন্য ৷ নদীর অপর পারে পাহাড়ের ঢালে ধাপে ধাপে ধান গাছের সারির ওপর বাতাসের ঢেউ খেলে যাওয়া দেখতে ভারি ভালো লাগে ৷ ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর কালাগৌরা (২,০৫০ মিটার) ৷ চারদিক কালো হয়ে এসেছে ৷ বৃষ্টির ফোঁটার আয়তনও একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছে ৷ উপায়ান্তর না দেখে একটি বাড়ি কাম হোটেলে রাতের আশ্রয় নিই ৷

পরদিন দু-ঘণ্টা হেঁটে পৌঁছে যাই দোলপো জেলার সদর দুনাই (২,০৯০ মিটার) ৷ গ্রামে ঢোকার মুখে একটি সুন্দর গেট আমাদের অভ্যর্থনা জানায় ৷ বেশ বড় জায়গা এই দুনাই ৷ স্কুল, অফিস, থানা এমনকী একটা ওয়্যারলেস স্টেশনও দেখলাম ৷ গ্রামের ঠিক মাঝখানে নেপালের প্রাক্তন রাজা মহেন্দ্রর একটি প্রস্তরমূর্তি ৷ তার চারপাশের পাথর বাঁধানো চাতালে খেলে বেড়াচ্ছে দোলপোর শিশুরা ৷ বেশভূষায় হতদরিদ্র কিন্তু উচ্ছলতায় ভরপুর ৷ এখান থেকে আমাদের রেশন নতুন করে নিতে হবে পরবর্তী পর্যায়ের পদযাত্রার জন্য ৷ সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আবার যখন পথে নামি তখন বেলা প্রায় বারোটা ৷

আমরা দুনাই এসেছি থুলো ভেরিকে বাঁদিকে রেখে ৷ এবারে নদীকে অতিক্রম করে আমাদের ধরতে হবে অপর পাড়ের সরু পায়ে চলা পথটি, যেটি ক্রমাগত উত্তরদিকে চলে গেছে একটি গিরিখাদের মধ্য দিয়ে ৷ এই গিরিখাদ দিয়ে দক্ষিণ বাহিনী হয়ে নেমে এসেছে ফোকসোমদো খোলা এবং দুনাইয়ের অদূরে ভেরি নদীতে এসে মিশেছে ৷ মিলিটারি ক্যাম্পকে বাঁয়ে রেখে এগিয়ে চলি ৷ কিছুদূর এগোতেই আবার একটি চেকপোস্ট ৷ চেকপোস্ট পেরিয়েই একটি ছোট ব্রিজের ওপর দিয়ে ফোকসোমদো খোলাকে পেরিয়ে গেলাম ৷ যতই এগোচ্ছি জঙ্গলের ঘনত্ব বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে চড়াইয়ের ঢাল ৷ কতদূর এগনো সম্ভব হবে বুঝতে পারছি না ৷ টিপ টিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে ৷ সেইসঙ্গে হাড়কাঁপানো বাতাস ৷ বেলা তিনটে নাগাদ জঙ্গলের মধ্যে একটি গবাদি পশু রাখার চালা দেখতে পেয়ে তার নিচে খানিকক্ষণ দাঁড়ালাম ৷ আর ঠিক সেই মুহূর্তেই যেন গোটা আকাশটা জঙ্গলের ওপর ভেঙে পড়ল ৷ চালার নিচে ততক্ষণে আমাদের তাঁবু খাটানো হয়ে গিয়েছে ৷ পাহাড়ের একপাশে পাথরের একটু আড়াল পেয়ে দত্তবাহাদুর চায়ের জল বসিয়ে দিয়েছে ৷ ঠান্ডা বাতাসের দাপটে শরীর হিম হয়ে যাবার জোগাড় ৷ এক মগ গরম চা গলাধঃকরণ করে একটু ধাতস্থ হলাম ৷ তারপর চলল প্রকৃতির তাণ্ডবলীলা ৷ দুদিন দুরাত আমরা তাঁবুবন্দী হয়ে রইলাম ৷ নানা আশঙ্কা নিয়ে তৃতীয়দিনের ভোরে তাঁবু থেকে মুখ বাড়িয়ে দেখি আকাশে আবার নীলচে আভা লেগেছে ৷ সঙ্গে সঙ্গে তাঁবু গুটিয়ে আবার পথে ৷ দুদিনের প্রবল বর্ষণে পথের অবস্থা শোচনীয় ৷ খানিকক্ষণ বাদেই শুরু হল আখরোট গাছের জঙ্গল ৷ অজস্র আখরোট ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে ৷ দুপুর নাগাদ পৌঁছই ছেপকা (২,৬৫০ মিটার) ৷ জঙ্গলের মধ্যে একটিমাত্র দোতলা ঘর ৷ বেলা তিনটে নাগাদ জঙ্গল একটু যেন হালকা হয়ে আসে ৷ ফোকসোমদো খোলার এখন ভয়ংকর রুদ্রমূর্তি ৷ তার গর্জন বহু ওপর থেকে শুনতে পাই ৷ পথ ক্রমশ নেমে আসে নদীর ধারে ৷ দূরে রিয়াজি গ্রামের (২,৯৫০ মিটার) চালাগুলো দেখা যায় ৷ আজকের চলার ওখানেই ইতি ৷

১৮ অক্টোবর, ১৯৯৮ ৷ আমার হিমালয় পদযাত্রার দিনগুলির মধ্যে এমন সুন্দর সকাল বোধহয় আর আসেনি ৷ তাঁবুর ফ্ল্যাপ খুলতেই এক চিলতে সোনালি রোদ্দুর আমাদের উষ্ণতায় ভরিয়ে দেয় ৷ চারদিক অসম্ভব ঝকঝকে ৷ সদ্য ধুয়ে যাওয়া গাছের সবুজ পাতাগুলি থেকে আকাশের নীল রং যেন চুঁইয়ে পড়ছে ৷ তাড়াতাড়ি পথে নেমে পড়ি ৷ গত দুদিন গর্জের মধ্য দিয়ে হাঁটার পর উপত্যকাটি আস্তে আস্তে খুলতে শুরু করেছে ৷ গাছের সংখ্যাও ক্রমশ কমে আসছে ৷ বড় বড় মহীরুহের পরিবর্তে ছোট ছোট গুল্ম জাতীয় গাছে লাল, হলুদ নানারকম ফুল থোকায় থোকায় ফুটে রয়েছে ৷ ঘণ্টাদুই চলার পর পৌঁছে যাই পালাম (৩,২৩০ মিটার) ৷ এখানেই স্য-ফোকসোমদো ন্যাশনাল পার্কের চেকপোস্ট ৷ শেষবারের মতো নাম-ঠিকানা লেখা ৷ পালাম থেকে বেরিয়েই ঝুরো পাথর বেয়ে তীব্র চড়াই ৷ উঠে এলাম একটি ছোট গিরিশিরার মাথায় ৷ সেই প্রথম দেখা ৷ দূরে দেখা যাচ্ছে ধবধবে সাদা কাঞ্জিরোবা শৃঙ্গ (৬,৮৮৩ মিটার) ও তার নিচে একটি নীল রঙের ধাতব শীট ৷ বহু নিচে দেখা যাচ্ছে সুলিগাড জলপ্রপাতের জল আছড়ে পড়ছে ৩৩০ মিটার নিচে ৷ জোরে হাঁটলে এখনও এক ঘণ্টার পথ ৷ বেশ খানিকক্ষণ পর রিংমো গ্রামের প্রবেশদ্বারের চোর্তেনটি দেখা যায় ৷ একটি সুন্দর কাঠের পুল পেরিয়ে গ্রামে প্রবেশ করি ৷ লোকজন কেউ কোথাও নেই ৷

অবশেষে পৌঁছলাম সেই অপরূপের দেশে ৷ কোনও কথা বলতে পারছি না ৷ সৌন্দর্য সম্বন্ধে সব পূর্ব ধারণা ভেঙে চুরমার ৷ অপার্থিব সৌন্দর্যের আধার হয়ে ফোকসোমদো তাল আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয় ৷

ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টে যাচ্ছে ৷ কখনও নীলচে সবুজ, কখনও ঘন নীল, কখনও বা ময়ূরপঙ্খী ৷ চরাচর অস্বাভাবিক রকমের নিস্তব্ধ ৷ সন্তর্পণে নেমে আসি সরোবরের তীরে ৷ বাতাসে তীব্রতা, হ্রদের জলের কিনারায় ছোট ছোট ঢেউ ৷ তার ওপর সূর্যকিরণ পড়ে ঝিকমিক করছে ৷ লেকের পাশেই তাঁবু ফেলা হয় ৷ ধীরে ধীরে দিনের আলো কমে আসে ৷ তাঁবুতে ফিরে যেতে মন চায় না ৷

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪,০০০ মিটার উচ্চতায় দৈর্ঘে, ৪.৮ কিলোমিটার ও প্রস্থে মোটামুটি ১.৮ কিলোমিটার নিয়ে এই ফোকসোমদো তাল ৷ পরদিন সকালে তাঁবু থেকে বেরিয়ে আবার হতবাক হবার পালা ৷ সূর্য উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফোকসোমদোর জলে নীল রঙের বন্যা ৷ তালের পূর্ব পার ধরে সরু হাঁটাপথে এগিয়ে গিয়ে বহু প্রাচীন বন-পো সম্প্রদায়ের গুম্ভাটি দেখে আসি ৷ আবার ফিরে আসা হ্রদের তীরে, এবারে পশ্চিম তীর বরাবর ৷ সারাদিন ধরে হ্রদকে বিভিন্ন দিক থেকে দেখেও আশ মেটে না ৷

প্রয়োজনীয় তথ্য

কীভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে ট্রেনে লখনউ ও ওখান থেকে বাসে বা জিপে রপাইডিয়া ৷ সীমানা পেরলেই নেপালের শহর নেপালগঞ্জ ৷ ওখান থেকে ছোট প্লেনে চেপে জুমলা ৷ ভাড়া ভারতীয় মুদ্রায় ৪৫০ টাকা ৷ ফেরার সময় ফোকসোমদো তাল থেকে দুদিনে দুনাই ফিরে অদূরে জুফল এয়ারপোর্ট থেকে ছোট প্লেনে নেপালগঞ্জ ফিরতে হয় ৷ ভাড়া একইরকম ৷

দরকারি টুকিটাকি: নেপাল বিদেশি রাষ্ট্র বলে সচিত্র পরিচয়পত্র সর্বদা সঙ্গে রাখতে হবে ৷ চাল, ডাল সবই জুমলা ও দুনাইয়ে পাওয়া যাবে ৷ সঙ্গে স্টোভ, তাঁবু নেওয়া একান্ত প্রয়োজন ৷ প্রয়োজনে কিছু ওষুধপত্র সঙ্গে রাখলে ভালো ৷

ভ্রমণ অক্টোবর, ১৯৯৯

সকল অধ্যায়

১. অর্ধশতাব্দীর আগের বদ্রীনাথ যাত্রা – প্রতাপকুমার রায়
২. মানস অভয়ারণ্য – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩. জলদাপাড়া অরণ্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪. জলের ধারে ঘর – নবনীতা দেব সেন
৫. জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির – উষা সেন
৬. তাহিতি – হরপ্রসাদ মিত্র
৭. মার্কন্ডেয় গঙ্গার উত্স সন্ধানে – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮. কেদার বদ্রী – মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
৯. তেহরানি হয়রানি – অমিতাভ চৌধুরি
১০. শোনপুরের মেলায় – বরুণ দত্ত
১১. এলেম নতুন দেশে – কমলা মুখোপাধ্যায়
১২. মস্কো থেকে সাইবেরিয়া হয়ে পিকিং – গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩. পাতাল-ভুবনেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
১৪. ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ
১৫. নিকোবরের দ্বীপে – তিলকরঞ্জন বেরা
১৬. তিরতিরে নদী আর শাল জঙ্গলের দেশে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭. আমার ভ্রমণ – মহাশ্বেতা দেবী
১৮. সুন্দরবন – হীরক নন্দী
১৯. ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত
২০. সাইকেলে পাঁচ বছরে ভূ-পর্যটন – ভূপর্যটক বিমল দে
২১. আঙ্কোর ভাট – প্রীতি সান্যাল
২২. হিমালয়ের সাতকাহন – ত্রিদিব বসু
২৩. স্বপ্নের পথেই যাওয়া যায় – মহাশ্বেতা দেবী
২৪. ছোট কৈলাস – সুভাষ দত্ত
২৫. বালতাল হয়ে অমরনাথ – প্রতাপকুমার রায়
২৬. মধ্য এশিয়া অভিযান – গৌতম ঘোষ
২৭. পথ হারিয়ে সিকিমের জঙ্গলে – রতনলাল বিশ্বাস
২৮. নতুন করে পাব বলে – বন্দনা সান্যাল
২৯. সেবার ব্রেকজার্নি করে – জয়া মিত্র
৩০. চন্দ্রভাগার উৎস চন্দ্রতাল সুর্যতাল – সুনীলকুমার সরদার
৩১. ওঙ্কারেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
৩২. সুন্দরবনে দুদিন – পবিত্র সরকার
৩৩. মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়
৩৪. দিকবিদিকে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৫. তিস্তানদীর উৎসে – শরৎ ঘোষ
৩৬. পশ্চিমে হাওয়াবদল – মধুপর্ণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৭. এক টুকরো নীল চাঁদ – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৩৮. কালিম্পং থেকে তিব্বত – অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
৩৯. সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু
৪০. মির্জা শেখ ইতেসামুদ্দিনের বিলেত যাত্রা এবং আমি – নবনীতা দেব সেন
৪১. বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
৪২. গানতোক থেকে ইয়ুমথাং – সুতপা ভট্টাচার্য
৪৩. ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল
৪৪. ডুয়ার্সের দুয়ার এখন খোলা – সমরেশ মজুমদার
৪৫. ইউরোপে দিন কয়েক – পূর্ণেন্দু পত্রী
৪৬. রামচন্দ্রের বনবাসের পথ পরিক্রমা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. আসমুদ্রককেশাস – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
৪৮. নিরলংকার ভ্রমণ – শঙ্খ ঘোষ
৪৯. চেঙ্গিস খানের দেশে – প্রতাপকুমার রায়
৫০. মিজোরামের নীল পাহাড়ে – দীপঙ্কর ঘোষ
৫১. সিন্ধুদুর্গ – বিশ্বদীপ দত্ত
৫২. জিম করবেটের জঙ্গলে – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩. থর মরুভূমিতে ট্রেকিং – শিবনাথ বসু
৫৪. মরোক্কো ভ্রমণ – হরপ্রসাদ মিত্র
৫৫. ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ – নবনীতা দেব সেন
৫৬. গন্তব্য মাচুপিচু – প্রতাপকুমার রায়
৫৭. কই যাইত্যাছি জানি না – শঙ্খ ঘোষ
৫৮. পারাংলা অভিযান – সুনীলকুমার সরদার
৫৯. পুশকিন, মলদভা আর কচি পাতার বাঁশিতে মোত্সার্ট – প্রীতি সান্যাল
৬০. আমাদের ছোট নদী : পার্বতী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬১. দেবলোকের পথে পথে – অশোক চক্রবর্তী
৬২. না-ভ্রমণের বৃত্তান্ত – আশাপূর্ণা দেবী
৬৩. এভারেস্টের পাদদেশে যাত্রা – কমলা মুখোপাধ্যায়
৬৪. নীল নদে পাঁচদিন – হরপ্রসাদ মিত্র
৬৫. বারাণসীর ঘাটের কথা – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৬. বালফাক্রমের পাহাড়-জঙ্গলে – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৬৭. গৌরীগঙ্গার উৎসব মিলাম হিমবাহ – পুরুষোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৮. মরুভূমির দিনরাত্রি – পবিত্র সরকার
৬৯. ঢাকা : একুশ বছর পর – অন্নদাশঙ্কর রায়
৭০. ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
৭১. ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউ – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৭২. কালিন্দী গিরিবর্ত্ম – রথীন চক্রবর্তী
৭৩. একযাত্রায় ভোরামদেরও আর কানহা – হীরক নন্দী
৭৪. মদমহেশ্বরের ডোলিযাত্রা – কাজল দত্ত
৭৫. কেনিয়ায় পাঁচ অরণ্য – প্রতাপকুমার রায়
৭৬. কোনাডা থেকে রেভুপাল ভরম – রতনলাল বিশ্বাস
৭৭. চাঁদের দেশ লাদাখ – কমলেশ কামিলা
৭৮. বোকের তোভ, ইজরায়েল – নবনীতা দেব সেন
৭৯. বিষ্ণুপুর মুকুটমণিপুর – হরপ্রসাদ মিত্র
৮০. ডোকরিয়ানি বামক – অনিন্দ্য মজুমদার
৮১. তাওয়াং থেকে তাসি-চু জং – কমলা মুখোপাধ্যায়
৮২. মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল
৮৩. আকাশচূড়ায় অভিযান – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮৪. ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ
৮৫. সারেঙ্গেটির জঙ্গলে – হরপ্রসাদ মিত্র
৮৬. এবারের কুম্ভমেলায় – চিন্ময় চক্রবর্তী
৮৭. অন্য পথের পথিক – বুদ্ধদেব গুহ
৮৮. গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়
৮৯. নিশীথ সূর্যের দেশ – প্রতাপকুমার রায়
৯০. সবুজ নামদাফাতে – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
৯১. পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু
৯২. গোঁসাইকুণ্ড – কমলা মুখোপাধ্যায়
৯৩. অমরকন্টক – হীরক নন্দী
৯৪. আদিম ডুয়ার্সের আধুনিক রূপকথা – সূর্য ঘোষ
৯৫. পার্বতী উপত্যকায় সার পাস – বিদ্যুৎ দে
৯৬. মিয়ানমার, ইরাবতীর সঙ্গে – পবিত্র সরকার
৯৭. রূপসী রিশপ – হীরক নন্দী
৯৮. হিমবাহের জন্মভূমিতে – শেখর ভট্টাচার্য
৯৯. ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার
১০০. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত – হরপ্রসাদ মিত্র
১০১. বক্সা দুর্গ – টুটুল রায়
১০২. সিন্ধু নদের ধারে – রতনলাল বিশ্বাস
১০৩. মেঘালয়ের দাউকি – সুমিত মুখোপাধ্যায়
১০৪. আমাদের ছোট নদী : লিডার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০৫. লাসা – সমীর রায়
১০৬. ২ নম্বর লোভালোয়া স্ট্রিট – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
১০৭. অযোধ্যা পাহাড় – বিশ্বদীপ দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন