ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ

এটা লিখবার কথা ছিল নবনীতার, নবনীতা দেবসেনের ৷ কিন্তু পঁচিশ বছর পেরিয়ে যাবার পরেও যখন লিখলেন না তিনি, অগত্যা তখন আমাকেই বলতে হয় গল্পটা ৷

গল্প অবশ্য এর মধ্যে কিছু নেই, আর ভ্রমণ তো একেবারেই নয় ৷ কজন বন্ধুবান্ধবের একসঙ্গে নাজেহাল হবার একটা বৃত্তান্ত শুধু ৷ হয়েছিল কী, ১৯৭৫ সালে একবার বনগাঁ যেতে হয়েছিল আমাদের ৷ এই নিয়ে স্মৃতি ৷

বনগাঁ কেন হঠাৎ? কথাটা তাহলে শুরুর থেকেই শুরু করতে হয় ৷

বাংলাদেশ থেকে আমাদের এক বন্ধু এসেছেন নার্গিস আখতার ৷ অল্পদিনই থাকবেন, এসেছেন তাঁর ডাক্তারির কাজে ৷ ওরই মধ্যে কলকাতার সংস্কৃতি-জগতের প্রত্যক্ষ খানিকটা ছোঁয়াও পেতে চান বলে এখানে ওখানে ঘুরছি তাঁকে নিয়ে ৷ আর সেইভাবেই এক সন্ধ্যায় গানের এক অনুষ্ঠান শুনতে হাজির হয়েছি রবীন্দ্রসদনে ৷

গান শুরু হবার অল্প আগে, আসনের সামনে এসে দাঁড়ান এক দীর্ঘাঙ্গ যুবা ৷ বলেন তিনি: ‘আপনাকেই খুঁজছিলাম, খুব ভালো হল পেয়ে গেলাম এখানে ৷’

‘খুঁজছিলেন? কেন খুঁজছিলেন?’

‘আপনাকে একবার বনগাঁ নিয়ে যেতে চাই আমরা ৷ যেতেই হবে কিন্তু ৷ সামনের শনিবারে গাড়ি করে নিয়ে যাব, ফিরিয়ে দিয়ে যাব রবিবারেই ৷ বাড়িতে যেতাম, কিন্তু পেয়ে গেলাম এইখানেই-’

‘কেন হঠাৎ নিয়ে যাবেন?’

‘ওখানে একটা কবি-সম্মেলন আছে ৷ ওখানকার কবিরা করবেন, অনেক বড় করে ৷ কলকাতা থেকেও কজনকে নিয়ে যাবার জন্য আমাকে ওরা পাঠিয়েছে ৷’

‘সম্মেলনে তো আমি যাই না বড়-একটা ৷ আমাকে ছেড়ে দিন, অন্য কারও সঙ্গে কথা বলুন ৷’

‘অন্যদের সঙ্গে কথা তো হয়েইছে ৷ ওঁরা সবাই যাবেন বলেছেন ৷ শক্তিদা যাবেন, সুনীলদা যাবেন ৷ আপনাকেও যেতেই হবে ৷’

‘শুনুন, সম্মেলনে কবিতা পড়তে আমার একটু অসুবিধে হয় ৷ হয়তো ঠিক জানেন না আপনারা-’

‘না না, জানব না কেন, জানি ৷ আপনাকে পড়তে হবে না ৷ শুধু গেলেই হবে ৷ ওখানে সবাই খুব অপেক্ষা করে থাকবে ৷ ‘না’ বলবেন না ৷ না নিয়ে যেতে পারলে আমি খুব লজ্জায় পড়ে যাব ৷’

‘দেখুন, আমার আরও অনেক অসুবিধে আছে ৷ এই যে দেখছেন আমার এক বন্ধু, ঢাকা থেকে এসেছেন দু-চারদিনের জন্য, তাঁকে ফেলে রেখে আমি চলে গেলাম বনগাঁয়ে -এ কি হয়?’

আমার কুনো স্বভাবটা পুরো জানা নেই বলে মাঝখান থেকে হঠাৎ বলে ওঠেন নার্গিস: ‘তা হবে না কেন? আমি প্রতিমাদির সঙ্গে দিব্যি থাকতে পারব ৷ ঘুরে আসেন-না আপনি ৷’

তাঁর কথা শেষ হতে-না-হতেই যুবকটি বলে ওঠেন: ‘তা কেন, ফেলে রেখে যাবেন কেন, ওঁকেও সঙ্গে নিয়ে চলুন না ৷ তাহলে তো আরওই ভালো হয় ৷ যাবেন, দিদি? চলুন-না? আপনার তাহলে বনগাঁ দেখাও হয়ে যাবে ৷’

‘সত্যি তো, তা তো গেলেই হয়’-বলেন নার্গিস-‘সেইসঙ্গে এখানকার কবি-সম্মেলন কেমন হয় সেটাও বেশ দেখা হয়ে যাবে ৷’

কথাটা অবশ্য মন্দ নয় ৷ কমাস আগেই এঁদের আতিথ্যে বাংলাদেশের এখানে-ওখানে দিব্যি ঘুরে এসেছি-তার বদলে এঁকে যদি অন্তত বনগাঁটাই দেখিয়ে দেওয়া যায়, সেটাই-বা কম কথা কী! উপরন্তু শক্তি-সুনীল! ভেতরে ভেতরে নিজেকে তৈরি করে খানিকটা সন্দেহের স্বরে যুবকটিকে প্রশ্ন করি: ‘কিন্তু কবিতা পড়তে বলবেন না তো আমাকে?’

‘না না, কখনওই নয় ৷ তাহলে কিন্তু ওই কথাই রইল ৷ শনিবার বিকেলে গাড়ি নিয়ে আপনার বাড়িতে চলে যাব ৷ আপনারা কিন্তু তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে থাকবেন ৷ আটটার মধ্যে পৌঁছতে হবে বনগাঁয়ে ৷ ঠিক আছে? আচ্ছা চলি ৷’

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হল গান ৷

‘আচ্ছা, একরাত্রি থাকতে হবে বলে আমাদের তো সঙ্গে কিছু নিয়ে নেওয়া উচিত?’ শনিবার বিকেলে জিজ্ঞেস করেন নার্গিস ৷

‘আমার কিছু দরকার হবে না ৷ আপনি একটা ছোট ব্যাগে টুকিটাকি কিছু নিয়ে নিতে পারেন ৷’

‘কিছু তো নিতেই হবে ৷ অন্তত আমার ওষুধ তো নিতে হবে ৷ দশটা নাগাদ একটা ওষুধ খেতে হয়, তার একটা টেনশনও হয়-ও, আচ্ছা, ছেলেটি তো বলল আটটার মধ্যেই পৌঁছে যাব-তাই তো?’

‘মনে হয় ৷ খুব তো বেশি দূর নয় এখান থেকে ৷ দু-আড়াই ঘণ্টা লাগবে বড় জোর ৷’

‘তাহলে কোনও সমস্যা নেই ৷ ছেলেটি আসবে তো সময়মতো?’

‘একেবারে সময়মতো কি আর আসবে? বলা-সময়ের সঙ্গে আধঘণ্টা অন্তত জুড়েই নিতে পারেন ৷’

তৈরি হয়ে বসে থাকি আমরা ৷ যুবকটির আধঘণ্টা দেরিও হতে পারে, কিন্তু আসবার পর তাঁর যেন সময় নষ্ট না হয় সেটা দেখা আমাদের কর্তব্য ৷ আটটা না হোক, অন্তত দশটার মধ্যে তো পৌঁছতেই হবে নার্গিসকে ৷

কিন্তু না, আধঘণ্টা একঘণ্টা দুঘণ্টা পেরিয়ে যাবার পরেও সে-যুবকের কোনও হদিস নেই ৷ নার্গিস তখন বলতে শুরু করেছেন: ‘আচ্ছা, ওই ছেলেটিকে আগে কখনও দেখেছেন আপনি?’

‘না তো ৷’

‘তাহলে কে না কে একটা কথা বলল, তাও আপনার বাড়িতে নয়, রবীন্দ্রসদনে-আর অমনি আপনি নেচে উঠলেন? এ আবার কীরকম ব্যাপার? ঢাকায় এরকম রাজি হবে না কেউ ৷’

‘কী মুশকিল, আমি কোথায় নেচে উঠলাম ৷ আপনি বললেন বলেই তো রাজি হতে হল ৷’

‘দূর, ব্যাপারটাই বাজে ৷ ধোঁকা দিয়ে গেছে আপনাকে ৷ ছাড়েন তো, কাল আমরা নিজেরা-নিজেরাই বনগাঁ চলে যাব, প্রতিমাদিকে নিয়ে ৷’

‘আরে যাবই যদি তো বনগাঁ কেন যাব? অন্য কি কোনও জায়গা নেই?’

ওভাবে রাজি হয়ে যাওয়াটা ঠিক হয়নি বুঝে ঈষৎ অপ্রতিভ মুখে কথা বলতে থাকি অন্য নানা প্রসঙ্গ নিয়ে, যেন আমাদের কোথাও যাবার কথা ছিলই না কখনও, যেন এইভাবেই একটা সান্ধ্য আড্ডার জন্যই বসে আছি আমরা ৷

এমন সময়ে, রাত যখন প্রায় সাড়ে আট, ঘণ্টি বাজল দরজার ৷ কিছুটা বিস্রস্ত শরীরে যুবাটি ঘরে এসে দাঁড়ালেন ৷ ক্ষীণ হেসে বললেন: ‘আপনারা তৈরি তো?’

ফুঁসে উঠলেন নার্গিস: ‘আচ্ছা লোক তো আপনি ৷ তিন ঘণ্টা পরে এসে জিজ্ঞেস করছেন আমরা তৈরি কি না ৷ না, তৈরি না ৷ এখন রওনা হলে তো দশটার মধ্যে পৌঁছনো যাবে না, আমার একটু অসুবিধে আছে তাতে ৷ যেতে পারছি না আমি ৷ কিছু মনে করবেন না ভাই ৷’

‘সত্যি, আমার খুব দেরি হয়ে গেল ৷ অনেক জায়গায় ঘুরতে হল তো ৷ গাড়ি আসবার কথা ছিল দুটো, কিন্তু পাওয়া গেছে একটা ৷ সব জায়গাতেই দেরি করে দিল ৷ দিদি, যাবেন না?’

‘না ভাই, আমার কোনও উপায় নেই ৷ আর তাছাড়া আমার যাওয়াটা তো কোনও ব্যাপারও না, শঙ্খদা গেলেই হল ৷’

‘না, এমন অবস্থায় আমিও আর যেতে পারি না ৷ বলেই তো ছিলাম আপনাকে ফেলে রেখে যাব না ৷’

‘আপনি তো কথা দিয়েছিলেন ৷’

‘ঠিকই ৷ কিন্তু আপনি আপনার কথা রাখেননি ৷ এই কি আপনার বিকেল?’

এর পর ঘরে অল্প একটু নীরবতা ৷ তার পরে তাকিয়ে দেখি, শক্তসমর্থ সেই যুবকের দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে নামছে জল ৷

‘আরে আরে, এটা কী করছেন ৷ এতে এত ভেঙে পড়বার কী আছে ৷ আমাকে দিয়ে তো আপনাদের কাজও কিছু হত না ৷ আমি না গেলে কী অসুবিধে?’

‘কিন্তু আমি কী করে বনগাঁয়ে ফিরব? আমাকে যে ওরা একেবারে মেরে ফেলবে! কলকাতা থেকে আপনারা কেউই যদি না যান-’

‘কেউই কেন যাবে না ৷ অন্যরা তো যাচ্ছেন?’

‘না, যাচ্ছেন না ৷ শক্তিদার বাড়িতে গিয়ে দেখি শক্তিদা নেই ৷ সুনীলদাও এখন বলছেন কী-যেন-সব অসুবিধে আছে ৷ অনেক কষ্টে শুধু নবনীতাদিকে রাজি করিয়ে ধরে এনেছি, এখন আপনি না গেলে উনিও যদি বেঁকে বসেন, আমি কী করব তখন-’

‘ধরে এনেছেন মানে? কোথায় এনেছেন?’

‘নীচে গাড়িতে বসে আছেন ওঁরা ৷ নবনীতাদি, অজিতেশদা-’

‘সে কী কথা! গাড়িতে বসিয়ে রেখে এসেছেন আর বলেননি এতক্ষণ? ছি-ছি-ছি ৷ চলুন চলুন, যাই-বা-না-যাই একটু দেখা তো করতে হবে ওঁদের সঙ্গে ৷’

ঝাঁপ দিয়ে ওঠেন নার্গিসও ৷ ‘নবনীতা দেবসেন? অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়? বলেন কী! দেখতে পাব এঁদের? যাব একটু সঙ্গে?’

সবাই মিলে নেমে এলাম সার্কুলার রোডের ওপর, উল্টোদিকের ফুটপাথের পাশে দাঁড়িয়ে আছে শাদা একখানা অ্যামবাসাডর ৷

একেবারে হৈহৈ করে উঠলেন অজিতেশ: ‘আসুন আসুন, চলে আসুন ৷’

আমি বলি: ‘না না, আসছি না আমি ৷ সেই কথাটুকু জানাতেই শুধু নেমে এলাম ৷’

‘সে কী? যাবেন না? এরা তো মহা মুশকিলে পড়ে যাবে তবে ৷’

প্রত্যাশিতভাবেই নবনীতা বলেন: ‘বা রে, আপনি যাবেন বলেই তো আমাকে ধরে নিয়ে এল ৷ এই ছেলে, এসব কী ব্যাপার?’

ছেলেটি অবশ্য চুপ ৷ মিথ্যেবলার অপবাদ থেকে ওকে বাঁচাবার জন্য বলি: ‘আমি ওঁকে কথা দিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু ওঁর আসবার কথা ছিল ঘণ্টাতিনেক আগে ৷ মুশকিল হয়েছে কী, এত দেরিতে আমার এই বাংলাদেশের বন্ধুটির অসুবিধে ৷ এঁরও যাবার কথা ছিল ৷ আলাপ করিয়ে দিই-এঁর নাম নার্গিস আখতার-ঢাকা থেকে এসেছেন-’

অজিতেশ বলেন: ‘হ্যাঁ হ্যাঁ ওঁর কথাও তো বলেছে ৷ তা উনি যাবেন না কেন? নার্গিস-নার্গিসই তো নাম বললেন-চলে আসুন চলে আসুন ৷ বেশ মজা করা যাবে-’

‘মজা তো করা যাবে ৷ কিন্তু রাত দশটায় আমার একটা ওষুধ খাবার সমস্যা আছে ৷’

‘রাখুন তো! কোনও সমস্যাই সমস্যা নয় ৷’

‘গাড়িকে তখন অনেকক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে ৷’

‘থাকবে দাঁড়িয়ে ৷ সবাই আছি সঙ্গে, সমস্যা আবার কী! চলুন, উঠে আসুন শঙ্খদা ৷’

‘উঠে যে আসব, বুঝতে তো পারছি না জায়গা হবে কেমন করে ৷’

‘জায়গা কেন হবে না? আমরা তো সবাই সুজন! আর দেখুন তো ড্রাইভারসাহেব, আপনার তেঁতুলপাতায় নজন কি হচ্ছে?’

শেষ পর্যন্ত, যাওয়াই সাব্যস্ত হল ৷ অজিতেশের সঙ্গে আছেন তাঁর স্ত্রী রত্না, রত্নার সঙ্গে তাঁর তবলার মাস্টারমশাই, আছেন নবনীতা আর নার্গিস, আছেন গাড়ির বিশালবপু চালক, পথের দিশারি দীর্ঘদেহী যুবা আর সেইসঙ্গে আমি ৷ এপর্যন্ত হিসেব করলে আটজন, তবু নজনই শেষমেশ দাঁড়াল ৷ সেটা একারণে নয় যে গাড়ির মধ্যে অনেকেই ছিলেন শরীরে বেশ ফুল্ল এবং স্ফূর্ত, কারণটা এই যে রত্নার হারমোনিয়ামটা গাড়ির ডিকির মধ্যে ধরে গেলেও তাঁর তানপুরাটা টানটান করে রাখতে হয়েছিল গোটা গাড়ির মধ্যবর্তী এক সেতু হিসেবে, সামনের সিটে ড্রাইভারের বাঁপাশ দিয়ে পিছনের সিটে অজিতেশের কাঁধ পর্যন্ত লম্বালম্বি ৷

তেঁতুলপাতা নড়তে শুরু করল নটা নাগাদ, বনগ্রামের পুণ্য অভিমুখে ৷

ঠাসাঠাসি যতই হোক, পথটা যে খুব ভালোই কাটবে সে-বিষয়ে কোনও সংশয় ছিল না ৷ একদিকে অজিতেশ অন্যদিকে নবনীতা, কথার দুই ফুলঝুরি ৷ কয়েক মিনিটের মধ্যে নার্গিসও এমনভাবেই জড়িয়ে গেলেন গল্পে, মনে হল এঁরা অনেকদিনের চেনা ৷ নতুন বাংলাদেশের কথা চলছে ৷ নার্গিস বলছেন মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কীভাবে তাঁরা দিন কাটিয়েছেন ঢাকায়, তার উত্তেজক নানা কাহিনী ৷ অজিতেশ বলছেন তাঁর নাটকের গল্প ৷

‘এ-রাস্তাটার কী নাম?’ জানতে চান নার্গিস ৷

‘যশোর রোড ৷’

‘যশোর রোড? যশোর রোড কেন আপনাদের এখানে? যশোর তো আমাদের দেশ!’

সত্যি তো! যশোর তো ওঁদের দেশ!

এই রাস্তাটার ওপর পা রাখলেই সেকথা আমার মনে পড়ে ৷ মনে পড়ে দেশে যাবার পথে রানাঘাটের ট্রেনবদল বনগাঁর ট্রেনবদল আর তারপর বনগাঁ-যশোর-খুলনা হয়ে স্টিমারে উঠে গ্রামের বাড়ির পথ ৷ যশোর রোড যেন সেই আমাদের দেশের পথের নিশানা হয়ে জেগে আছে, যে-পথের নাম শুনেই নার্গিস আজ বলেন ‘আমাদের দেশ’!

গাড়ি চলছে ৷ ফিকে একটা আলো আছে আকাশে ৷ বসতি ছেড়ে এখন দুধারে ছড়ানো প্রান্তরের মধ্য দিয়ে ছুটে চলেছে যশোর রোড, দূরে-চলে-যাওয়া সটান লম্বা পথে হেডলাইটের আলোয় দুপাশের গাছগুলিকে দেখায় যেন সাজানো তোরণ, যেন সেই অন্তহীন তোরণের মধ্য দিয়ে চলেছি আমরা ৷ যেন কোনও বড়-একটা অভ্যর্থনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেশ ৷

হঠাৎ মনে হল, বেড়াতে গেলে যে অনেক দূরেই যেতে হবে তার কী মানে আছে ৷ এই যাওয়াও কি অনেকখানি নয়? অনেকখানি নয় এ তোরণ? জোর করেছিলেন বলে মনে মনে যুবকটির ওপর খুশিই হয়ে উঠি ৷ অনেকদিন মনে থাকবে এই যাওয়া ৷

এমন সময়ে অজিতেশ বলে বসেন: ‘এই-যে ভাই, দোকানপাটের রাজ্য তো সব ফুরিয়ে যাচ্ছে ৷ কোথাও নেমে একটু খেয়ে নিলে হত না? শুধু কাব্য করলে তো চলবে না, খিদে তো পেয়েছে সবারই-’

যুবা বলেন: ‘না না, এখানে কেন, খাবেন তো আপনারা ওখানে গিয়ে ৷ ওখানে সব ব্যবস্থা করা আছে-’

‘সে তো থাকবেই ৷ তবে পৌঁছতে তো অনেক দেরি-’

‘আমি ফোন করে দিয়েছি যে দেরি হবে আমাদের, সেটা কোনও অসুবিধা নয় ৷’

কিছুক্ষণ প্রতিহত রাখা গেল অজিতেশকে ৷ কিন্তু বেশিক্ষণ নয় ৷ ওই দূরের মোড়ে একটা চায়ের ঝুপড়ি দেখা যায় যেন ৷ অজিতেশ বলেন: ‘ড্রাইভারসাহেব, একটু থামান তো ওখানে ৷ অন্তত একটু চা খেয়ে নিই ৷ একটু হাতপা ছড়িয়ে নেওয়া যাবে ৷ কী বলেন নবনীতা? নামবেন?’

‘সে আর বলতে! শুধু হাতপা ছড়ানো? মাঠের ওপর একটু দৌড়োদৌড়ি করে নিলেও হয় ৷ সুজন হই আর যাই-ই হই, গায়ে যে বেশ ব্যথা ধরে গেছে সেটা ঠিক ৷’

নামা হল পথের পাশে চায়ের দোকানে ৷ এত রাতে একসঙ্গে এত খদ্দের পেয়ে দোকানি বেশ খুশি ৷ জিজ্ঞেস করেন: ‘কেবলই চা, না অন্যকিছুও দেব সঙ্গে?’

‘অন্য কী আছে ভাই?’

‘কচুরিটচুরি আছে কয়েকখানা ৷ তবে ঠান্ডা হবে একটু ৷’

‘ঠান্ডা তো হবেই ৷ আমরা আসব বলে আপনি কি আর গরম গরম ভেজে রেখেছেন? নাঃ, এখন কচুরি খেলে খিদেটাই নষ্ট হয়ে যাবে ৷ দরকার নেই ৷ আপনি বরং কয়েকখানা বিস্কুট দিন ৷ আর চা ৷ চা-টা গরম হবে তো?’

চা-বিস্কুট নিয়ে গল্প করছি আমরা ৷ নবনীতা বলছেন, অজিতেশ বলছেন, মাথা নিচু করে শুনছি আমি ৷ দেরি হচ্ছে বলে যুবকটি মাঝে মাঝে তাড়া দিচ্ছিলেন বটে, কিন্তু সেটাকে উপেক্ষা করছেন সবাই ৷ এরই মধ্যে, আধখানা কথার মাঝখানে একেবারে হঠাৎ বলে ওঠেন অজিতেশ: ‘চলুন আমরা যাই ৷’

মাথা তুলে দেখি আমাদের চারপাশে বেশ হৃষ্টপুষ্ট উৎসুক একটা ভিড় ৷ এত রাতে এত লোক জমল কোথা থেকে? কোথা থেকে এসে পৌঁছল এরা? কারা এরা?

অজিতেশ বললেন: ‘চলুন চলুন, উঠে পড়ি গাড়িতে ৷’

ভিড়টাকে একটা বৃত্ত করে নিয়ে, কেন্দ্র হয়ে, অজিতেশ চললেন গাড়ির দিকে ৷ আমরা আছি পিছনে ৷ সবাইকে নিয়ে গাড়ি যখন চলল শেষপর্যন্ত, মুগ্ধ স্বরে বলি: ‘সত্যি, এইসব লোকেরাও আপনার নাটক দেখেছে! গ্রুপ থিয়েটারের আজকাল তবে এতটা দৌড়?’

‘কী যে ভাবেন! এরা কি কেউ থিয়েটারের অজিতেশকে দেখছে?’

‘দেখছে যে, সে তো দেখাই যাচ্ছে ৷’

‘তা যাচ্ছে, তবে ওরা এসেছে ফিল্মের ভিলেইনকে দেখতে ৷ জানেন তো, বেশ কয়েকখানা ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছি এর মধ্যে? এ হল তারই পাওনা ৷’

‘যারই পাওনা হোক’ -নবনীতা বলেন-‘আমার কিন্তু একটু হিংসেই হচ্ছিল বাপু ৷ আচ্ছা, সঙ্গে আমরা এতগুলি মেয়ে আছি, আমাদের তো একটু নায়িকাটায়িকাও ভাবলে পারত ৷’

খুব হতাশ একটা শ্বাস ফেলে নার্গিস বলে: ‘হায় আল্লা! আমি কী ভাবলাম জানেন তো? ভাবলাম কতদূরই-না এগিয়ে গেছে ইন্ডিয়া ৷ কয়েকজন কবিকে দেখবার জন্য এত রাতে এত ভিড়!’

শুনে অজিতেশ একটু লজ্জিত হয়ে পড়েন ৷ কথা ঘুরিয়ে নেন অন্যদিকে ৷

যেমন হয়, যাত্রাপথের শেষ দিকে একটু ঝিম ধরে যায় ৷ অজিতেশ বলেন: ‘কী গো ভাই, পথের যে আর শেষই হয় না ৷ এ যে প্রায় দেড়টাই বাজিয়ে দিলে ৷’

‘আপনারা মাঝে মাঝে থামলেন তো! তাই একটু দেরি হল ৷ এতটা তো হয় না ৷ তবে আমি ফোন করে দিয়েছি ওদের ৷’

‘আর কতক্ষণ?’

‘এই তো প্রায় এসে গেছি ৷’

প্রায় দুটোর সময়ে গাড়ি এসে পৌঁছল নিশানায় ৷ চারদিকে তারের বেড়া দেওয়া প্রকাণ্ড একটা মাঠ, তার মাঝখানে এক চিলতে লম্বামতো বাড়ি ৷ মাঠের গেট দিয়ে ঢুকে গাড়ি দাঁড়াল বাড়িটির সামনে, সে-বাড়িতে আলোর কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ মনে হয় ছেড়ে-দেওয়া কোনও স্কুলবাড়ি ৷ সাদরে সেখানে আমাদের নামিয়ে যুবকটি ডাকতে শুরু করেন দুয়েকটি নাম ৷ সাড়া মেলে না কোনও ৷ ঘরে ঢুকে অন্ধকারেই আমরা টের পাই সারি সারি কয়েকখানা মাদুর পাতা আছে মেঝের ওপর, এমনকী তার সঙ্গে বালিশও যেন আছে কয়েকখানা ৷

‘কোথায় যে গেল সব’ -বিড়বিড় করেন যুবা ৷

অজিতেশ বলেন: ‘শোবার ব্যবস্থা তো ভাই বুঝতে পারছি ৷ কিন্তু খাবার ব্যবস্থাটা কোথায় বলো তো? তখন যে বললে খাবার সব রেডি করা আছে, তা সেসব কোথায়?’

‘সবই তো থাকবার কথা এখানে ৷ একটু দেরি হয়ে গেল কি না ৷ আচ্ছা দেখছি আমি ৷ আপনারা একটু হাত-পা ধুয়ে নিন ৷ আমি ওদের ডেকে আনি ৷’

‘দত্তা’ উপন্যাসে রাসবিহারী যেমন সামনের একটা থামকে ‘বিলাস’ কল্পনা করে ডাকতে ডাকতে এগিয়ে গিয়েছিলেন, মাঠের গেটটাকে তেমনই একটা অলীক নামে ডাকতে ডাকতে অদৃশ্য হয়ে গেলেন যুবকটি ৷ এই পঁচিশ বছর জুড়ে আর তাঁর কোনও দেখাই পাওয়া গেল না!

বসে থেকে আর লাভ কী, তাহলে শুয়েই পড়া যাক ৷ এই বিবেচনায় টান-টান শুয়ে পড়ি সবাই ৷ এত রাতে কোনও খাবারের দোকানের হদিস পাওয়া যাবে না, এ নিয়ে সংশয় নেই ৷

নার্গিস জিজ্ঞেস করেন: ‘আপনাদের এখানে কবি-সম্মেলন বুঝি এইভাবেই হয়?’

‘কী করে বলব, আগে তো আসিনি কখনও ৷ অবশ্য সম্মেলন দেখতে তো এখনও বাকি আছে ৷ সে তো কাল ভোরবেলাকার ব্যাপার ৷’

অজিতেশের গলা শোনা যায়: ‘আচ্ছা, কার কার এখন সেই ঠান্ডা কচুরিগুলির কথা মনে পড়ছে না, হলফ করে বলুন তো?’

নিজের গায়ে চটাস চটাস কয়েকটা চাপড় দিয়ে নবনীতা উত্তর করলেন: ‘আমার কিছুই মনে পড়ছে না, কেবল এই মশাগুলির কথা ছাড়া ৷ বনগাঁ বলে কি এতই গাঁ, মশারিও মেলে না? অন্তত কটা মশারির তো ব্যবস্থা রাখবে এরা!’

‘মোটে মা রাঁধে না, তপ্ত আর পান্তা! ঘুমোবার চেষ্টা করুন, সব সয়ে যাবে ৷’

‘ঘুম?’ অজিতেশ বলেন: ‘ঘুম অসম্ভব ৷ এ-রকম তাগড়াই তাগড়াই মশা দেখেছেন কখনও? যাকগে, কতটাই-বা আর বাকি আছে রাত ৷ গল্পে গল্পেই কাটিয়ে দেওয়া যাবে ৷’

‘সারা রাত জেগে কাল ভোরে গান গাইব কেমন করে? এ তো মহা মুশকিল হল ৷’ -রত্নার গলা ৷

‘সকালবেলা উঠেই পালিয়ে গেলে কেমন হয়?’

‘তা বোধহয় পারা যাবে না, তখন বোধহয় আটকে দেবার জন্য ওদের লোকজন থাকবে ৷ পেট্রোলের দাম নেই?’

কথায় কথায় রাত গড়ায় ৷ আমরা কখনও বসি কখনও শুই ৷ যাদের গলা শুনতে পাই না, ধরে নিই তারা ঘুমিয়ে পড়েছে ৷ তারিফ করি তাদের ক্ষমতার ৷

কিন্তু অনেকক্ষণ পরে খেয়াল হয়, ঘুম তো নয়, দল থেকে দুজন মহিলা উধাও ৷ নবনীতা আর রত্না ৷ কোথায় গেলেন এঁরা?

‘বারান্দায় হেঁটে বেড়াচ্ছে হয়তো ৷ এই গরমে, এই মশায়, শোয়াবসা কি সম্ভব?’

কই, বারান্দাতেও নেই তো?

‘আরে, দুজন সমর্থ মহিলা, এত উদবেগের কী আছে? আছেই কোথাও না কোথাও ৷’

‘কিন্তু এত রাতে, অচেনা জায়গা, উদবেগ নেই?’

‘বেড়াচ্ছে নিশ্চয় বাইরে ৷’

হবেও-বা ৷ আমরা আবার শুরু করি কথা ৷ খানিক পরে দূর থেকে আবছা দেখা যায় গেট পেরিয়ে মহিলা দুজন ঢুকছেন এসে মাঠে ৷ বারান্দায় এসে পৌঁছতেই প্রায় অভিভাবকের স্বরে জিজ্ঞেস করি: ‘ব্যাপারটা কী? কোথায় গিয়েছিলেন?’

‘আমরা?’ শিশুসরল হাসিতে নবনীতা বলেন: ‘আমরা গিয়েছিলাম থানায় ৷’

‘থানায়? এই রাতে থানায়? নালিশ করতে?’

‘না না তা নয় ৷ মশার জ্বালায় ঘুমোতে পারছিলাম না তো ৷ তাই হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম থানায় ৷ আসার পথে দেখলেন না খুব কাছেই একটা থানা আছে?’

‘সে তো দেখলাম ৷ কিন্তু কেন গেলেন সেখানে?’

‘ঢুকে গেলাম দুজনে ৷ ঢুকে দেখি সব শুনশান ৷ চোর ধরবে আর কে! শুধু দুজন কনেস্টবল বন্দুক পাশে রেখে ঘুমোচ্ছে ৷ আমরা হাঁকডাক করলাম অনেক-‘‘এই-যে মশাইরা, শুনছেন? একটু কি উঠবেন দয়া করে?’’ বেশকিছু চ্যাঁচামেচির পর ধড়মড়িয়ে উঠে পড়ল দুজন ৷ উঠে তো চোখের সামনে জ্যান্ত দুজন মহিলা দেখে ওদের চোখ একেবারে কপালে ৷ ভয় পেয়ে গিয়ে বলছে-‘‘কে? কে? আপনারা কারা? এখানে কেন ঢুকেছেন? কী চান এত রাতে?’’ আমরা বললাম-‘‘ভাই, ওডোমস আছে?’’ শুনে তো তারা থ ৷ অনেকক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে থেকে শেষ অব্দি তারা বলে-‘‘ওডোমস? আপনারা ওডোমস খুঁজতে থানায় এসেছেন?’’ ‘‘নেই?’’ সগর্জনে বলে তারা ‘‘না, নেই ৷’’ ‘‘ও, তা সেকথা বললেই হয় ৷ এত রাগ করবার কী আছে? আচ্ছা চলি ভাই ৷’’ বলে, চলে এলাম আমরা ৷ কী আর করব ৷ এইসব করতে করতে একটু দেরি হয়ে গেল!’

ওঁরা দুজন ঢুকে গেলেন ভেতরে ৷ অজিতেশ আর আমি বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ ৷ অল্প পরে অজিতেশ বললেন: ‘আচ্ছা এক কাজ করলে হয় না? ঘুম যখন হবেই না তখন তো আমরা ইছামতীর পাড়ে বসেই গল্প করতে পারি ৷ নদীটাও দেখা হয়ে যাবে ৷ কাছাকাছিই হবে নিশ্চয়? চলুন, হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই ৷’

কী আশ্চর্য, একথাটা আগে মনে হয়নি কেন? ঘরের মধ্যে আটকে না থেকে ইছামতীর খোলা হাওয়ায় বসে থাকা তো চোখেরও পক্ষে অনেক আরামের ৷ ইছামতী পদ্মা নয়, তবু তো নদী, তবু তো জলের সামনে বসে সূর্য-ওঠাটা দেখতে পাব ৷

এক-একটা নামের সঙ্গে কত-কত অনুষঙ্গ জড়ানো ৷ ইছামতী বললেই বিভূতিভূষণ ৷ মাছরাঙা পাখি, নলবন, কাঁটাকুমুরে লতার গন্ধভরা ফুল আর শান্ত সন্ধ্যায় কালো নিথর নদীজলে মনের শুশ্রূষা! সেই ইছামতীতে না গিয়ে কেনই-বা এখানে বসে আছি আমরা? চলুন চলুন ৷

গিয়ে পৌঁছতেই অবশ্য সমস্ত আহ্লাদ থমকে গেল ৷ কোথায়-বা নদী, কোথায়-বা জল! যতদূর চোখ যায়, শুধু থিকথিকে কচুরিপানা ৷ ছোটবেলায় আমাদের গ্রামের যে খাল দেখেছি, সেও তো এর চেয়ে বড়, সেও তো এর চেয়ে সাবলীল ৷ যে-দৃশ্যে যে-গন্ধে ভরে আছে এই নদীতীর, সেটা আমাদের পক্ষে উপাদেয় কোনও পরিত্রাণ নয় ৷

তারই মধ্যে একটা কোণ বেছে নিয়ে বসতে বসতে অজিতেশ একটু স্বপ্নালু গলায় বলছেন তাঁর ভাবী নাটকের পরিকল্পনা ৷ ঘরে যদি মশা থাকে তাহলে এখানে থাকবে না এমন ভাবা ভুল ৷ মশার সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতেই অজিতেশ বলছেন কেন এখন তিনি টলস্টয় নিয়ে মেতে আছেন, কেন করতে চাইছেন তাঁর লেখা থেকেই অভিনয় ৷ মনে পড়ছে কদিন আগে কেয়ারও সঙ্গে কথা হয়েছে এই টলস্টয় নিয়েই ৷ শুধু লেখক হিসেবে নন, তাঁর কাছে প্রিয়তম মানুষও এখন টলস্টয় ৷ অজিতেশ বলছেন: ‘হ্যাঁ, জানি সেই কথা, এক সঙ্গেই আমরা ভাবছি তাঁকে নিয়ে ৷’

ইছামতীর ধারে, মশার বেষ্টনের মধ্যে বসে, বাংলা থিয়েটারের ভবিষ্যতের ছবি দেখতে দেখতে, চোখের সামনে অল্পে অল্পে খুলতে লাগল আলো ৷ ভোর হল ৷

আর ঠিক সেই সময়েই দলের মহিলারা এসে হাজির হলেন নদীতীরে, বলতে লাগলেন: ‘বাঃ, বেশ তো মশাই আপনারা! আমাদের একটা ঘুপচির মধ্যে ফেলে রেখে নিজেরা এখানে দিব্যি বসে হাওয়া খাচ্ছেন!’

‘আমরা কি আর খাচ্ছি? আমাদেরই খাচ্ছে ৷ এই দেখুন না-’ বলে অজিতেশ তাঁর সুঠাম দীর্ঘ হাতখানা বাড়িয়ে ধরলেন সামনে ৷ হাতের ওপর লেপটে আছে সারিবাঁধা রক্তাক্ত আর মৃত কয়েকটা মশা!

এরও পরে অজিতেশের আবৃত্তিসুদ্ধ কবি-সম্মেলনটা কেমনভাবে ঘটল, কেমনভাবে-বা বেঁচেবর্তে ফিরে এলাম আমরা, সে অবশ্য ভিন্ন এক গল্প ৷

ভ্রমণ অক্টোবর, ২০০১

সকল অধ্যায়

১. অর্ধশতাব্দীর আগের বদ্রীনাথ যাত্রা – প্রতাপকুমার রায়
২. মানস অভয়ারণ্য – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩. জলদাপাড়া অরণ্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪. জলের ধারে ঘর – নবনীতা দেব সেন
৫. জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির – উষা সেন
৬. তাহিতি – হরপ্রসাদ মিত্র
৭. মার্কন্ডেয় গঙ্গার উত্স সন্ধানে – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮. কেদার বদ্রী – মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
৯. তেহরানি হয়রানি – অমিতাভ চৌধুরি
১০. শোনপুরের মেলায় – বরুণ দত্ত
১১. এলেম নতুন দেশে – কমলা মুখোপাধ্যায়
১২. মস্কো থেকে সাইবেরিয়া হয়ে পিকিং – গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩. পাতাল-ভুবনেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
১৪. ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ
১৫. নিকোবরের দ্বীপে – তিলকরঞ্জন বেরা
১৬. তিরতিরে নদী আর শাল জঙ্গলের দেশে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭. আমার ভ্রমণ – মহাশ্বেতা দেবী
১৮. সুন্দরবন – হীরক নন্দী
১৯. ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত
২০. সাইকেলে পাঁচ বছরে ভূ-পর্যটন – ভূপর্যটক বিমল দে
২১. আঙ্কোর ভাট – প্রীতি সান্যাল
২২. হিমালয়ের সাতকাহন – ত্রিদিব বসু
২৩. স্বপ্নের পথেই যাওয়া যায় – মহাশ্বেতা দেবী
২৪. ছোট কৈলাস – সুভাষ দত্ত
২৫. বালতাল হয়ে অমরনাথ – প্রতাপকুমার রায়
২৬. মধ্য এশিয়া অভিযান – গৌতম ঘোষ
২৭. পথ হারিয়ে সিকিমের জঙ্গলে – রতনলাল বিশ্বাস
২৮. নতুন করে পাব বলে – বন্দনা সান্যাল
২৯. সেবার ব্রেকজার্নি করে – জয়া মিত্র
৩০. চন্দ্রভাগার উৎস চন্দ্রতাল সুর্যতাল – সুনীলকুমার সরদার
৩১. ওঙ্কারেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
৩২. সুন্দরবনে দুদিন – পবিত্র সরকার
৩৩. মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়
৩৪. দিকবিদিকে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৫. তিস্তানদীর উৎসে – শরৎ ঘোষ
৩৬. পশ্চিমে হাওয়াবদল – মধুপর্ণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৭. এক টুকরো নীল চাঁদ – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৩৮. কালিম্পং থেকে তিব্বত – অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
৩৯. সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু
৪০. মির্জা শেখ ইতেসামুদ্দিনের বিলেত যাত্রা এবং আমি – নবনীতা দেব সেন
৪১. বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
৪২. গানতোক থেকে ইয়ুমথাং – সুতপা ভট্টাচার্য
৪৩. ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল
৪৪. ডুয়ার্সের দুয়ার এখন খোলা – সমরেশ মজুমদার
৪৫. ইউরোপে দিন কয়েক – পূর্ণেন্দু পত্রী
৪৬. রামচন্দ্রের বনবাসের পথ পরিক্রমা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. আসমুদ্রককেশাস – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
৪৮. নিরলংকার ভ্রমণ – শঙ্খ ঘোষ
৪৯. চেঙ্গিস খানের দেশে – প্রতাপকুমার রায়
৫০. মিজোরামের নীল পাহাড়ে – দীপঙ্কর ঘোষ
৫১. সিন্ধুদুর্গ – বিশ্বদীপ দত্ত
৫২. জিম করবেটের জঙ্গলে – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩. থর মরুভূমিতে ট্রেকিং – শিবনাথ বসু
৫৪. মরোক্কো ভ্রমণ – হরপ্রসাদ মিত্র
৫৫. ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ – নবনীতা দেব সেন
৫৬. গন্তব্য মাচুপিচু – প্রতাপকুমার রায়
৫৭. কই যাইত্যাছি জানি না – শঙ্খ ঘোষ
৫৮. পারাংলা অভিযান – সুনীলকুমার সরদার
৫৯. পুশকিন, মলদভা আর কচি পাতার বাঁশিতে মোত্সার্ট – প্রীতি সান্যাল
৬০. আমাদের ছোট নদী : পার্বতী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬১. দেবলোকের পথে পথে – অশোক চক্রবর্তী
৬২. না-ভ্রমণের বৃত্তান্ত – আশাপূর্ণা দেবী
৬৩. এভারেস্টের পাদদেশে যাত্রা – কমলা মুখোপাধ্যায়
৬৪. নীল নদে পাঁচদিন – হরপ্রসাদ মিত্র
৬৫. বারাণসীর ঘাটের কথা – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৬. বালফাক্রমের পাহাড়-জঙ্গলে – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৬৭. গৌরীগঙ্গার উৎসব মিলাম হিমবাহ – পুরুষোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৮. মরুভূমির দিনরাত্রি – পবিত্র সরকার
৬৯. ঢাকা : একুশ বছর পর – অন্নদাশঙ্কর রায়
৭০. ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
৭১. ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউ – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৭২. কালিন্দী গিরিবর্ত্ম – রথীন চক্রবর্তী
৭৩. একযাত্রায় ভোরামদেরও আর কানহা – হীরক নন্দী
৭৪. মদমহেশ্বরের ডোলিযাত্রা – কাজল দত্ত
৭৫. কেনিয়ায় পাঁচ অরণ্য – প্রতাপকুমার রায়
৭৬. কোনাডা থেকে রেভুপাল ভরম – রতনলাল বিশ্বাস
৭৭. চাঁদের দেশ লাদাখ – কমলেশ কামিলা
৭৮. বোকের তোভ, ইজরায়েল – নবনীতা দেব সেন
৭৯. বিষ্ণুপুর মুকুটমণিপুর – হরপ্রসাদ মিত্র
৮০. ডোকরিয়ানি বামক – অনিন্দ্য মজুমদার
৮১. তাওয়াং থেকে তাসি-চু জং – কমলা মুখোপাধ্যায়
৮২. মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল
৮৩. আকাশচূড়ায় অভিযান – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮৪. ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ
৮৫. সারেঙ্গেটির জঙ্গলে – হরপ্রসাদ মিত্র
৮৬. এবারের কুম্ভমেলায় – চিন্ময় চক্রবর্তী
৮৭. অন্য পথের পথিক – বুদ্ধদেব গুহ
৮৮. গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়
৮৯. নিশীথ সূর্যের দেশ – প্রতাপকুমার রায়
৯০. সবুজ নামদাফাতে – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
৯১. পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু
৯২. গোঁসাইকুণ্ড – কমলা মুখোপাধ্যায়
৯৩. অমরকন্টক – হীরক নন্দী
৯৪. আদিম ডুয়ার্সের আধুনিক রূপকথা – সূর্য ঘোষ
৯৫. পার্বতী উপত্যকায় সার পাস – বিদ্যুৎ দে
৯৬. মিয়ানমার, ইরাবতীর সঙ্গে – পবিত্র সরকার
৯৭. রূপসী রিশপ – হীরক নন্দী
৯৮. হিমবাহের জন্মভূমিতে – শেখর ভট্টাচার্য
৯৯. ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার
১০০. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত – হরপ্রসাদ মিত্র
১০১. বক্সা দুর্গ – টুটুল রায়
১০২. সিন্ধু নদের ধারে – রতনলাল বিশ্বাস
১০৩. মেঘালয়ের দাউকি – সুমিত মুখোপাধ্যায়
১০৪. আমাদের ছোট নদী : লিডার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০৫. লাসা – সমীর রায়
১০৬. ২ নম্বর লোভালোয়া স্ট্রিট – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
১০৭. অযোধ্যা পাহাড় – বিশ্বদীপ দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন