অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
এবার প্রায় একটি অজানা দেশে যাবার সুযোগ ঘটেছিল-যদিও তা আমাদের ভারতেই অবস্থিত ৷ কিন্তু সমগ্র ভারতকে আমরা কতটুকুই বা জানি! বহুদিন ধরেই পশ্চিম সীমান্তের কচ্ছের ‘রণ’ অঞ্চল দেখবার ইচ্ছা ছিল, এবার যোগাযোগও ঘটে গেল ৷ ১৯৮১ ও ৮২ সালের সমগ্র ভারতীয় পদযাত্রা শিবিরে (দিল্লি ইউথ হস্টেলের প্রযোজনায়) গুজরাট তথা কচ্ছের তরুণ অভিযাত্রীদের সঙ্গে আলাপ হওয়াতে তারা সাদরে আমন্ত্রণ জানাল কচ্ছ প্রদেশটি দেখবার ৷ -তবে সেখানে যাবার প্রকৃত সময় হল শীতকাল ৷ সুতরাং ২-৩ বছর ধরে চেষ্টা করেও যেতে যেতে ১৯৮৫ এসে গেল ৷ দেশটি মরুভূমিসদৃশ-গ্রীষ্মকালে যাওয়া কষ্টকর, সুতরাং যেতে হলে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই যাওয়া ভালো ৷ রাতে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রিতে নেমে গেলেও দিনে বেশ গরম ৷
যাহোক কচ্ছ দেখবার প্রাথমিক আকর্ষণ ছিল দুটি-একটি এখানকার বিখ্যাত ‘রণ’ অঞ্চল-ছোট ও বড় রণ-যার বিষয়ই মাত্র ভূগোল বইতে পড়ানো হয়-এর বাইরে যে কচ্ছের আরও কত প্রাচীন ইতিহাস আছে-এর জীবজন্তু গাছপালা চাষবাস-জনসাধারণের জীবনযাত্রা-যেসব বিষয়ে কোনও কিছুই ভূগোল বইয়ে নেই ৷ দ্বিতীয় আকর্ষণের বিষয় হল শীতকালে সাইবেরিয়া থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ফ্লেমিঙ্গো পাখি রণ অঞ্চলে ভিড় করে এসে থাকে কয়েক মাস ৷ ডিম পাড়ে, বাচ্চার জন্ম হলে ও কিছুটা বড় হলে আবার শীতের শেষে উত্তরে চলে যায়-একটা অঞ্চল সেজন্য ফ্লেমিঙ্গো সিটি বলেই বিখ্যাত ছিল-কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই, আধুনিক সভ্য জগতের যত প্রসার ঘটছে-ততই প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, ফলে গাছপালা পশু পাখি-সকলের ওপরই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ৷ এখন এদের দেখতে পাওয়া যাবে শুধু লিটল রণের রিজার্ভ জলাশয়ে, জামনগরের কাছে তিজারিয়া পক্ষিনিবাসে, নল সরোবরে এবং ভরতপুরে ৷ এছাড়া এখানকার বিখ্যাত বুনো গাধার সৌন্দর্যও বিখ্যাত-এদের চামড়া মসৃণ ও চকচকে-দৌড়ের বেগ বোধহয় ঘণ্টায় ৩২-৩৩ মাইল ৷ এখন মাত্র লিটল রণের কোনও কোনও জায়গায় এদের দেখতে পাওয়া যায় ৷ হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের কিয়াঙের সঙ্গে এরা তুলনীয় ৷ বুনো গাধাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে-এদের সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা চলছে ৷ তবে এখানকার ভারবাহী গাধারাও দেখতে ভালো-আমাদের দেশের তুলনায় ৷
ভূগোল ও পশুপাখি সম্পর্কে হয়তো আরও কিছু বলা যায়-কিন্তু সেখানকার মানুষরা? তাদের বিষয় তো সর্বাগ্রে বলা দরকার! অথচ তাদের বিষয় এক লাইনও পাঠ্য বইয়ে নেই, অন্তত পশ্চিমবঙ্গের স্কুল-কলেজের বইয়ে ৷ শ্রীরায় সিং রাঠোর ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে পদযাত্রা শিবিরে আলাপ হলেও বিশেষ ধারণা করতে পারিনি ওই দেশবাসী সম্পর্কে-কিন্তু গিয়ে দেখলাম এ অঞ্চলের দেশবাসী, তাদের প্রাচীন ইতিহাস, কিংবদন্তী কাহিনী, প্রাচীন স্থাপত্য ও ধ্বংসাবশেষ সমস্তই চিত্তাকর্ষক ও জানবার মতো ৷ সীমান্ত প্রদেশ বলে কোনও কোনও অঞ্চলে যেতে অনুমতিপত্র লাগে বটে কিন্তু প্রশাসন ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছিলেন ভূগোল শিক্ষক ও ছাত্রদের পক্ষে যেতে কোনও অসুবিধা নেই ৷ সুতরাং এই নতুন অজানা দেশে যেতে বিশেষ কিছু অসুবিধা তো হলই না বরঞ্চ তাদের যথাসাধ্য আতিথ্যে অভিভূত হয়ে বিশেষ ভালোভাবে জানতে পারলাম দেশটাকে ৷ নতুন দেশে বন্ধুও জুটল অনেক ৷
কচ্ছের প্রধান শহর ভুজ ৷ আমেদাবাদ এক্সপ্রেস আমেদাবাদ হয়ে সোজা গান্ধীগ্রাম হয়ে ছোট লাইনে ভুজ পর্যন্ত যায় ৷ গান্ধীগ্রাম থেকে বাসে কয়েক মাইল গেলে কচ্ছ উপসাগরের তীরে ভারতের অধুনা প্রধান বন্দর কান্ডলা ৷ করাচি বন্দর দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানে চলে যাবার পর কান্ডলার গুরুত্ব এখন খুব বেশি ৷ অতীতে কচ্ছ জুরাসিক যুগে কাছিমের পিঠের মতো একটি দ্বীপ ছিল ৷ এটি সম্পূর্ণ পার্বত্য দেশ-হিমালয়ের জন্মের বহু যুগ আগে এর সৃষ্টি-সমস্ত অঞ্চল জুড়ে বিরাট বিরাট অ্যামোনাইট ও সামুদ্রিক জীবের ফসিল দেখা যায়-বৃহৎ থেকে ছোট ছোট সামুদ্রিক ঝিনুক পাথরের মধ্যে সংগ্রথিত হয়ে আছে-কিন্তু বহু যুগের প্রাচীন বলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উচ্চতার হ্রাস পেয়েছে, এখন কোনও অংশই ২০০০ (আনুমানিক) ফুটের বেশি উঁচু নয় ৷ সমভূমি কম-পাহাড়ি এলাকাই বেশি ৷ পূর্বে আরব সাগরের একাংশ উত্তর-পূর্বদিকে প্রবেশ করে একে ঘিরে ছিল ৷ সিন্ধু নদীর এক প্রশাখা প্রাচীনকালে পূর্বদিক দিয়ে প্রবাহিত ছিল-ফলে মিঠা জলের জোগান ছিল ওই অঞ্চলে ৷ কিন্তু বরাবরই স্থানটি ছিল ভূমিকম্পপ্রবণ, ফলে ঘন ঘন ভূমিকম্প হত ৷ এইরকম এক ভূমিকম্পের সময় সিন্ধু নদীর ওই প্রশাখা আরও পশ্চিমদিকে সরে গিয়ে বর্তমান খাতে প্রবাহিত হতে থাকে-ফলে উত্তর-পূর্বদিকে বালুচর জমতে জমতে ক্রমে এটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয় ৷ দক্ষিণদিকটা কচ্ছ উপসাগর বলে পরিচিত হয় ৷ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে বিস্তৃত বৃহৎ রণের আয়তন ৮,০০০ বর্গ কিলোমিটার ৷ এদেশ পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর অবস্থিত তাই এর গুরুত্বও খুব বেশি ৷ বোধহয় বছর দশেক আগে এই অঞ্চলের দক্ষিণ ভাগে খনিজ তেল পাবার সম্ভাবনার ফলে পাকিস্তান এ অঞ্চল আক্রমণ করে, অবশ্য বিদেশি বিশেষজ্ঞরা তাদের বলেছিলেন ওখানে তেল পাবার সম্ভাবনা আছে, ভারতকে বলেছিলেন-এখানে তেল পাবার সম্ভাবনা নেই ৷ অবশ্য এখন বৃহৎ রণের পশ্চিমাঞ্চলে লাখপত নগরে ও এন জি সি-র সদর দপ্তর খোলা হয়েছে ৷ সীমান্ত ইটের গাঁথনি দিয়ে চিহ্নিত করা হলেও যাতায়াত বা চোরাচালানীদের কিছুমাত্র অসুবিধা নেই-বহু দূরের বিস্তীর্ণ গতিবিধি কোনও পাহাড় থেকেই দেখা যায় তবে ধরা মুশকিল ৷ তাছাড়া চোরাবালির ভয় আছে ৷ বর্ষাকালে বৃহৎ রণ অঞ্চল জলের তলায় থাকে-তাই অগম্য-শীতের সময় জেগে ওঠে চর অঞ্চল বা বেটগুলি ৷ আমরা পাহাড়ের ওপর থেকে মাইলের পর মাইল ব্যাপী লবণাক্ত শুভ্র ভূমি দেখতে পেলাম তারও পরে নীলের আভাস-দূরে একদিকে ‘ইন্ডিয়া পুল’ বা ঘাঁটি ৷ ভেড়া বা গরুর পদচিহ্ন ধরেই সেই লবণাক্ত জমি পার হলাম-তারপর সীমান্ত চেকপোস্ট ৷
ক্ষুদ্র রণ অবশ্য প্রায় ৫,০০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত-অভ্যন্তর ভাগে স্থিত আমেদাবাদ থেকে বাসে সহজেই যাওয়া চলে-অনুমতির ব্যাপার নেই ৷ এখানে সংরক্ষিত কর্দমাক্ত ভূমি ও জলে (অভয়ারণ্য) ফ্লেমিঙ্গোরা আসে ৷
কচ্ছিদের লিখিত কোনও ভাষা নেই কিন্তু বহু যুগ ধরে এদের প্রাচীন ইতিহাস চারণদের গানে লোকগাথায়, উত্তরে সিন্ধুদেশের বিজয়ী মুসলমান রাজা, গুজরাটের কাথিয়াবাড় ও সৌরাষ্ট্রের রাজাদের শাসনকালীন লিখিত অনুশাসন ও তৎকালীন ইতিহাস লেখকদের গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়-তবে পুরুষানুক্রমে এখানকার চারণদের কাছ থেকেই বহু কাহিনী উদ্ধৃত করা গেছে ফলে কয়েকটি গ্রন্থও গুজরাটি ও ইংরিজিতে এখন প্রকাশিত হয়েছে ৷ উত্তরের সিন্ধুর শাসকদের ও সৌরাষ্ট্রের রাজাদের মধ্যে যাতায়াতের পথ ছিল এই কচ্ছ অঞ্চল-এর ইতিহাসের সঙ্গে জনগণের সঙ্গে তাই সৌরাষ্ট্রের ইতিহাস ও জনগণ সংযুক্ত-আলাদা করা মুশকিল ৷ মুসলমান বিজেতারা সিন্ধুদেশ জয় করার পর জনসাধারণকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করলেও হিন্দু ঐতিহ্যকে মুছে ফেলা যায়নি ৷ দক্ষিণের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের ‘যাদব’ বা বর্তমান ‘জাডেজা’ শাসকবৃন্দ বহুকাল ধরেই এখানকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলিকে একত্রিত করে কচ্ছকে শাসন করেছেন ৷ এই ‘জাডেজা’রা রাজপুত বংশীয় বলে দাবি করেন ৷ শেষ রাজা মদন সিংজির পিতামহ খেস্তরজি (৩) এই কচ্ছ প্রদেশের বিখ্যাত রাজা ৷ যেটা আমাদের সবচেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা হল এখানকার হিন্দু-মুসলমানদের মিশ্রিত সংস্কৃতি ৷ পীর ও ফকিরদের আধিক্য ও মাহাত্ম্য ৷ পোশাক-পরিচ্ছদ, বিয়ের সময় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছাড়া এদের বিবাহের যৌতুকে যে সুন্দর কাচ বা পুঁতি বসানো হাতে তৈরি বর ও কনের পরিচ্ছদ (যা এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে) সেগুলি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই দেখা যায় ৷ কনের হাতে বিরাট মোটা হাতির দাঁতের বালা-যা অবশ্য এখন প্লাস্টিকের বালায় পরিণত হয়েছে তা বিবাহিতা মেয়েদের হাতে সর্বত্র দেখেছি ৷ এমনকী তা আমেদাবাদেও গুজরাটিদের মধ্যে প্রচলিত ৷ এখানকার পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘাঘরা ও ওড়নার সঙ্গে রাজস্থানি ও গুজরাটি পরিচ্ছদের যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে-তবে কে কাকে প্রভাবিত করেছে তা বলা মুশকিল ৷ ওদের চেহারাতেও সংমিশ্রণ স্পষ্ট-সাধারণ লোকেদের রং কালোর দিকেই ঘেঁসে ৷ এখানকার দেবদেবীরাও অন্যান্য হিন্দু দেবদেবীর থেকে স্বতন্ত্র-জাডেজা রাজবংশের আশাপুরা দেবীই এখানকার অধিষ্ঠাত্রী দেবী-তাঁর আরও তিন বোন আছেন ৷ ভুজের পশ্চিমে নারায়ণ সাগরের কাছে আশাপুরা দেবীর প্রধান মন্দির-মাঘ মাসে বিশেষ উৎসব হয় ৷ হিন্দু-মুসলমান জনগণের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ফলে পীর ফকির সাধু সম্প্রদায়ের প্রভাব বেশ কিছুটা দেখা গেল সর্বত্র ৷ সাম্প্রদায়িক বিরোধও কিছু নেই ৷ পরিবারের এক ভাই হিন্দু সাধু হিসেবে পূজা পাচ্ছেন ও অনেক শিষ্য আছে-তেমনই পাশেই তাঁর অন্য ভাই ফকির বা পীর-তাঁরা সকলেই তাঁদের শিষ্যবর্গ নিয়ে শান্তিতে সহাবস্থান করছেন ৷
অতীতকাল থেকেই বালুকাপূর্ণ মৃত্তিকা, অনিশ্চিত বৃষ্টিপাতের জন্য চাষবাসের ওপর এরা কখনওই নির্ভরশীল ছিল না ৷ পশুপালনও একটা সমস্যা-কারণ প্রচুর ঘাস বা পশুখাদ্য জন্মায় না এখানে ৷ শুধু গুল্ম জাতীয়, কাঁটা জাতীয় বাবলা বা ওই ধরনের তৃণ গুল্ম হয় যা উটরাই কেবল খেতে পারে-সেজন্য উটই এখানকার প্রধান পরিবহন চালায় ৷ এরা পশুপালন করে বটে কিন্তু নিকটে সমুদ্র থাকায় নৌ-বিদ্যায় এরা বেশ পারদর্শী হয়ে পড়ে ৷ সমুদ্রে যাতায়াত এদের মধ্যে খুব বেশি প্রচলিত ছিল ৷ পূর্ব আফ্রিকা, লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগর (Gulf) অঞ্চল অবধি এদের নৌ-বাণিজ্য বিস্তৃত ছিল ৷ সেকালে নির্মিত জাহাজগুলির গঠনশৈলী বেশ উন্নতমানের ছিল-যার মডেল এখানকার মিউজিয়ামে রাখা আছে, তা দেখলে সত্যিই আশ্চর্য হতে হয় ৷ এখনও দুবাই অঞ্চলে এখানকার বহু লোক কাজ করতে যায়-পথেঘাটে এক বিশেষ ধরনের নকশাদার স্কার্ফ পরিহিত লোক দেখলেই বোঝা যায় যে এরা দুবাই ফেরত ৷ সেখানে এরা যথেষ্ট টাকা রোজগার করে ৷ এদের জাহাজ সৌরাষ্ট্রের জামনগর, ওখা প্রভৃতি স্থানে যাতায়াত করত-নাবিক হিসাবেও এদের বেশ সুনাম ৷ আমাদের আমন্ত্রণকারী রায় সিংজির ঘরে প্রাচীন হরপ্পা মহেঞ্জোদারো যুগের যে বসতিগুলি উত্তর থেকে দক্ষিণে কচ্ছ উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তার বহু নমুনার সংগ্রহ দেখলাম-সে যুগের লোথাল যা মহেঞ্জোদারোর নদীবন্দর ছিল-সেটি তো এখন সম্পূর্ণভাবে খনন করে তার প্রাচীন ইতিহাস উন্মুক্ত হয়েছে-সেটি আমেদাবাদ থেকে ২-৩ ঘণ্টার রাস্তা মাত্র-কচ্ছ উপসাগরের কিছু উত্তরে ৷ সে কাহিনী স্বতন্ত্র ৷ প্রাচীন বন্দরগুলির মধ্যে মাণ্ডবী, মুন্দ্রা, জাখাউ, কোটেশ্বর ও লাখপতের নাম উল্লেখযোগ্য ৷ তবে এগুলি স্থানীয় বন্দর-খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় এখন-কাউলাই হল এখন প্রধান ৷
ভুজ প্রদেশের ৯টি জেলা-ভুজ, মাণ্ডবী, জাথোর, মুন্দ্রা, লাখপত, অঞ্জার, নক্ষত্রাণা, তেরা, আদাবাসা ৷ মাণ্ডবী বেশ বড় শহর হলেও সমুদ্র সরে যাওয়াতে এখন দ্বিতীয় শ্রেণীর স্থানীয় বন্দর ৷ ভুজিয়া পাহাড়ের ওপর ভুজ শহর-পাশেই একটি বৃহৎ সরোবর-সমস্ত শহরটি ছিল প্রাচীরবেষ্টিত ৷ জলাভাবের জন্য এখানকার রাজা ও শাসকবৃন্দ বৃহৎ সরোবর খনন করে দিতেন, অতীতকাল থেকেই তার চিহ্ন সর্বত্র মিলবে ৷ এখন মরুভূমিতে জন্মাতে পারে এরকম ঘাস ও বৃক্ষাদি লাগানো হয়েছে-বহু কুয়ো খোঁড়া হয়েছে ৷ মাটির নিচে, যেখানে বৃষ্টির জল সঞ্চিত হয়েছে সেখান ভূগর্ভে সুড়ঙ্গ কেটে একটি এলাকার নালার সঙ্গে অন্য এলাকার নালার সংযোগ করা হয়েছে ৷
ভুজের রাস্তাগুলি আঁকাবাঁকা গলি হলেও স্কুটার বেশ সহজেই প্রবেশ করে-এর মধ্যে আশাপুরা দেবী ও স্বামীনাথ (কৃষ্ণ)-এর মন্দির বিরাট জায়গা জুড়ে রয়েছে প্রধান রাস্তায় ৷ সমস্ত ধরনেরই দোকান ও রেস্তোরাঁ রয়েছে, ইডলি ধোসার দোকানটি দেখলাম বেশ জনপ্রিয় ৷ আমাদের স্থানীয় বন্ধুরা এক অতিথিশালায় নিয়ে গিয়ে চা খাবার জন্য স্টোভ দুধ পেয়ালা পিরিচ ইত্যাদি দিয়ে গেলেন-মায় লেপ বিছানা অবধি-কোনও ভাড়া নেওয়ার কথাই উঠল না ৷ এই কতকগুলি অতিথিশালা আছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় ইউথ হস্টেল অ্যাসোসিয়েশনের একাধারে সম্পাদক এবং পি আর ও রাঠোরই এ সমস্ত ব্যবস্থার সংগঠক ৷ ইনি আবার একজন চিত্রকরও ৷
ভুজে স্থানীয় মিউজিয়াম, রাজার প্রাসাদ-মিউজিয়াম, আয়না মহল প্রভৃতি দেখে পরদিন সকালে উত্তরদিকে বাসে চেপে লৌরিয়া সুমরামার গ্রামে রাঠোরজির ভাই দৌলত সিংহর স্কুলে পৌঁছলাম-ছেলেমেয়েরা তো আমাদের দেখে আশ্চর্য ৷ একটু বিশ্রাম করে-দৌলত সিংহ ও আরও ২ জনের সঙ্গে জুরা পাহাড় অঞ্চলে গেলাম-এটি প্রাচীন পাহাড়, ফসিলে ভর্তি ৷ প্রথমে ২-৩টি আমোনাইট ফসিল তুলতে গিয়েছিলাম-তারপর দেখি বিরাট বিরাট সব আমোনাইট ছড়ানো, এর গায়ে ছোট ছোট ঝিনুক প্রভৃতি গেঁথে রয়েছে ৷ দৌলত সিংহ দিল্লি ইউথ হস্টেলের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বহু স্থানে গেছেন, ভূগোলের জ্ঞানও বেশ আছে ৷ পর্বতারোহণের ট্রেনিংও নিয়েছেন ৷ বেলা ১টার সময় রোদে ক্লান্ত হয়ে তাঁর বাড়িতেই মধ্যাহ্নভোজন সেরে আরও উত্তরে বাসে খাওড়া বলে এক গ্রামে পৌঁছলাম ৷ আগেই বলা ছিল-এখানে একটি ছেলে গাইডের কাজ করে বিদেশি পর্যটকদের ৷ রাতে পঞ্চায়েত ভবনের অতিথিগৃহে বিশ্রাম নিয়ে-সকালে গ্রাম দেখতে বেরোলাম ৷ এদের হাতে তৈরি ছাপানো চাদর চাকনি কিছু কেনা হল ৷ লোকসংখ্যা বেশি নয়, তবে সরকারি নীতি হল সর্বত্র গ্রাম বসিয়ে ভূমির উপযোগী ফসল লাগানো ও তার জন্য প্রয়োজনীয় জলের ব্যবস্থা করা ৷ জুরা পর্বতের পাশেই ছিল ধীনোধর (ধৈর্যধর) পাহাড়-বিখ্যাত সাধু ধর্মনাথের (৬৪২ খ্রিস্টপূর্ব) ক্রোধের ফলে নাকি এ জায়গা এত শুষ্ক হয়ে যায়-স্থানাভাবে সে সব কাহিনী দেওয়া গেল না ৷ এখানকার বসতি এলাকাটাই বেশ সমৃদ্ধ ও উল্লেখযোগ্য ৷
সুমরাসার ও জুরা থেকে ক্রমশ উত্তরে যাব ৷ এবারকার যাত্রা দক্ষিণ থেকে উত্তরে বৃহৎ রণের পচ্ছাম এলাকায় ৷ পূর্ব-পশ্চিমে সুবিধা হলে পরে যাব ৷ আমাদের গাইড ঘনশ্যাম খুব চটপটে, তার সঙ্গে বেলা ৯টার বাসে দ্রুবানা বলে গ্রামে গিয়ে ব্যবসায়ীদের আড়তে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হল কারণ এখান থেকেই উট নিতে হবে ৷ চারদিকে লবণের ও অন্যান্য জিনিসপত্রের বস্তা ৷ ১টি উট আছে মাত্র ৷ বেলা হয়ে গেছে ৷ উটরা সব জিনিসপত্র নিয়ে বার হয়ে গেছে ৷ আমরা ৪ জন, ২ জন করে একটি উটে যাওয়া চলে, কুঁজের সামনে ও পিছনে বসতে হয়, সে আসন মোটেই সুখকর নয় ৷ কিন্তু আমার দুই সঙ্গিনী হাঁটতে নারাজ ৷ অগত্যা একটা উটে তাদের উঠিয়ে আমরা দুজন হেঁটেই চললাম ৷ দূরে দেখা যাচ্ছে কালাডুংরি বা Black Hill ৷ গ্রাম ছাড়িয়ে শুরু হল তেপান্তরের মাঠ ৷ উটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না-সেই বিস্তীর্ণ প্রান্তরে হঠাৎ একা হয়ে গেলাম ৷ অনেক ডাকাডাকি, পরে দেখি আমার বাঁদিকে দিগন্ত রেখায় উটের দল ৷ পরে ঘনশ্যাম বুঝিয়ে দিল যে পাথরে সাদা চুনের দাগ দেওয়া আছে-সে সব দেখে চলতে হবে-না হলে মুশকিল ৷ প্রান্তর ছাড়িয়ে এবড়োখেবড়ো পাথুরে পথ-প্রতিপদে ঠোক্কর খেতে হচ্ছে-সামনের নিশানা পচ্ছাম ঘরানার গুরু দত্তাত্রেয়ের শুভ্র চতুর্মুখ মন্দির ৷ ৭ কিলোমিটার নাকি পথ, ৪ কিলোমিটার যাবার পর লোকজনের দেখাসাক্ষাৎ পাওয়া গেল ৷ আগামী শিবরাত্রিতে মেলা, সেইজন্য পথঘাট তৈরি করা হচ্ছে ৷ এখানে আরেকটি উট পাওয়া গেলে আমরা তাতেই উঠে পড়লাম-ইচ্ছা তাড়াতাড়ি মন্দিরে পৌঁছে একটু বিশ্রাম করে সেদিনই ৯ কিলোমিটার নেমে আসব ৷ কিন্তু পৌঁছতেই প্রায় বেলা ২টো হয়ে গেল, নামতে নামতে ৯ কিলোমিটার পথ সন্ধে হয়ে যাবে, অতএব সন্তরাম সিংয়ের মন্দির প্রাঙ্গণেই রাত কাটাতে হল ৷ তখন পূজারী নেই-লালা বলে মন্দির রক্ষক সযত্নে আমাদের দেখাশোনা করল ৷ নিচের গ্রাম থেকে বহু লোকজন আসে, মেলায় থাকার ব্যবস্থা আছে ৷ ৫০০ মতো কাঁথা ভাণ্ডারে মজুত থাকে, আমরাও সেসব রাতে ব্যবহার করলাম ৷ এখানকার উচ্চতা মাত্র ১,৪৭০ ফুট, কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে রাতেও বেশ শীত ৷ পচ্ছাম ঘরানার পীর হলেন এখানকার গুরু দত্তাত্রেয় ৷ গিরনারের ৭টি পাহাড়ের মধ্যে ষষ্ঠটিতে মুসলমান পীরের স্থান-সপ্তমটি গুরু দত্তাত্রেয়র ৷ পূজারী জাডেজা বংশীয়-তবে এখানে জাতিভেদ বিশেষ আছে বলে মনে হল না ৷ মন্দিরে গুরুর পায়ের ছাপ আছে ৷ রাম সিং (সাধু) এখানে ১৪৬০ সালে থাকতেন-চোখ বুজে ধ্যানে বসলে শিবরাত্রির দিন গিরনারে পৌঁছে যেতেন-কেউ উট থেকে পড়ে গেলে বা রাস্তা হারালে ওপর থেকেই বুঝতে পারতেন-এসব বহু কিংবদন্তী আছে ৷ জুনাগড় থেকে এখানে সুড়ঙ্গ ছিল, এখন নাকি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ আমরা তাঁর ধ্যান করার ঘর, ধুনি-ব্যবহৃত দ্রব্যাদি দেখলাম ৷ প্রতি সন্ধেবেলা ‘লং লং’ বলে ডাকলে কয়েকটি শিয়াল খেতে আসে-তারা না আসলে সেদিনের পূজা ব্যর্থ ৷ রাম সিংয়ের সমাধি ছাড়াও তাঁর শিষ্যদের সমাধিও ক্ষুদ্রাকারে আছে ৷
কাহিনী যাইহোক, সারা বিকেল ও সন্ধেবেলায় উঁচু পর্বত থেকে চতুর্দিকের দৃশ্যাবলী খুব সুন্দর ও পরিষ্কারভাবে দেখা গেল ৷ চতুর্দিকে লবণক্ষেত্র-শুভ্র বিস্তৃত ক্ষেত্র, রণে এখন জল নেই ৷ এরকম মাইলের পর মাইল, তারপর একটু নীলের আভাস, অর্থাৎ সমুদ্র ৷ সীমান্তে পুলের (চেকপোস্ট) অস্পষ্ট লাইন, কাল যে কোন পথ দিয়ে নামব জানি না ৷ কেলাসিত সাদা বিস্তীর্ণ লবণক্ষেত্র-এখানকার লোকদের তো নুন কিনতে হয় না কিন্তু ব্রিটিশ আমলে এখান থেকে ভারতে রপ্তানি করা নিষিদ্ধ ছিল-এসব বাইরে যেত ৷ বোধহয় তাই কাথিয়াবাড়ের গান্ধীজির মনে লবণ আইন অমান্য করার কথা মনে হয়েছিল ৷ রাতের অন্ধকারে পথজানা লোকদের যাতায়াত করা সহজ হয়তো, চোরাবালি থাকা সত্বেও ৷ তবে ওপর থেকে গতিবিধি সবই দেখা যায় ৷ ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পূর্বে কদিন নাকি খুব লোক চলাচল হয়েছিল ৷
রাতে দুধরুটি খেয়ে গভীর রাতে কাক-জ্যোৎস্নায় উঠে অপ্রস্তুত-ভোর হতে বেলা ৮টা এই পশ্চিমের দেশে ৷ এবার কিছুটা উটের পিঠে চেপে নামার পালা-পাহাড়ি পথে পায়ে হাঁটাই সুবিধা ৷ তবে আমার সঙ্গিনীদ্বয় অটল, গা ছড়ে গেলেও কিছুতে হাঁটবেন না ৷ বালুকাময় কাঁটা গাছের মধ্য দিয়ে পথ পাহাড় থেকে নেমে গেছে-তবু সীমান্তে পৌঁছতে বেলা ১১টা হয়ে গেল-মাঝে মাঝে ছোট দুয়েকটা বাড়ি বালুর ও গাছের মধ্যে-এইভাবে লবণক্ষেত্রের কিনারায় এসে পড়া গেল ৷ একদল ছাগল ও গরু ওদিক থেকে উঁচু ঢিবির অন্তরাল থেকে চলে আসছে দেখে আমরা বিপরীত দিক থেকে ওই পথেই চললাম ৷ ঝকঝকে সাদা কেলাসিত লবণ-অনেক চাঙড় তোলা হল-কিছুদূরে সীমান্ত ইন্ডিয়া পু বা দেওয়াল ৷ বেলা বাড়ছে ফিরতেই হল ৷ গ্রামে পুলিশ চেকপোস্ট ৷ কাগজপত্র দেখে ছেড়ে দিল ৷ সূর্যের রশ্মিতে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে ৷ বেলা ১টা নাগাদ কোটরা বা কুরন গ্রামে ক্লান্ত দেহে এসে পৌঁছলাম ৷ মুসলমানদের গ্রাম এটি, খুব দরিদ্র গ্রাম, কেবল আখের গুড় ও মাপা জল খেয়েই ক্ষুধাতৃষ্ণা মেটাতে হল ৷ জলাভাব আছে বোঝা গেল কিন্তু গ্রামের দীর্ঘদেহী কৃষ্ণকায় লোকগুলি খুব অতিথিবৎসল ৷ মুসলমান সিন্ধিদের সঙ্গে খুব মিল ৷ মুসলমানদের বিয়ে দুপুরে হয়-সেদিন একটা বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল, মেয়েরা রঙিন ঘাঘরা পরে জল আনতে যাচ্ছে, দেখে তো বোঝাই যায় না কোন জাতের ৷ গ্রামবাসীদের কৌতূহল মেটাতে আর বিশ্রাম করা হল না, আমরা কোথা থেকে এসেছি সব জানতে চায় ৷ তাদের গ্রামে স্কুল আছে মাস্টার নেই-যেন আমরা সদরে গিয়ে বলি-ইত্যাদি নানা কথাবার্তায় বেলা শেষ ৷ ৫টায় বাস এল, বর তার দীর্ঘ দেহ ও যৌতুকের ২-৩টি পুঁটলি (বিয়ের জন্য তৈরি জামাকাপড়) ও ক্রন্দনরতা বৌকে নিয়ে একই বাসে উঠলেন ও পরের গ্রামে নেমে গেলেন ৷ আমরা ধাওড়াতে থেমে চা ইত্যাদি পান করে অনেক রাতে ভুজে এসে পৌঁছলাম ৷ প্রতি উটের দুদিনের ভাড়া ৬০ টাকা মোট-বেশ একটা অভিজ্ঞতা হল ৷ এখানকার ছোট ছোট দ্বীপগুলিকে বেট বলে-আমরা পচ্ছাম বেটের ওপরে কালাডুংরি থেকে ফিরলাম-অদূরে রয়েছে খদির বেট ৷ এবার আমরা ভুজ থেকে পচ্ছাম এলাকা দিয়ে উত্তর সীমান্তেই ছিলাম বেশিদিন ৷
এর পরদিন প্রাক্তন মহারাজার সেক্রেটারির ছেলে গাড়ির বন্দোবস্ত করে দিলেন-প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা করে ৷ ভুজকে কেন্দ্র করে ১৮৪ কিলোমিটার ভ্রমণ করা হল ৷ এর মধ্যে গ্রামের পাঠশালা, আহীরদের গ্রাম, আশাপুরা দেবী ও তাঁর তিন বোনের মন্দির এবং মেকর দাদার স্মৃতিমন্দির ও তীর্থ দেখা হল ৷ এই মেকর দাদা বাঁক কাঁধে করে জল নিয়ে এবং একটি কুকুর নিয়ে ঘুরতেন ৷ গাধার পিঠেও জল থাকত-কুকুর অসহায় তৃষিত ব্যক্তির খোঁজ দিলে এঁরা তাদের জল খাওয়াতেন-এই মরুভূমির দেশে এ ধরনের সেবার কাজ কম নয় ৷ তাই দেবতাতুল্য মানুষ, পশু দুটি-সবারই স্মৃতি ধরে রাখা হয়েছে সমাধিক্ষেত্রে ৷ কিছুদূরেই এঁর ভ্রাতা স্থানীয় একজন মুসলমান পীরের ও সাধুর সমাধিক্ষেত্র ৷ তাঁর শিষ্যরাও মুসলমান-চা না খাইয়ে ছাড়ল না ৷ কচ্ছের ইতিহাস তো বহু প্রাচীন-প্রাচীন রাজাদের ও অন্যান্য বহু কীর্তির নিদর্শন আছে সর্বত্র ৷ রুদ্রমাতার মন্দিরে মহিষমর্দিনী মূর্তি-কাছেই রুদ্রসাগর বাঁধ-যতদূর সম্ভব গাছপালা লাগানো হয়েছে, পথের দুপাশে মরুভূমি বলে মনেই হয় না ৷ বর্ষাকালে বৃষ্টির জল সমস্তটাই ধরে রাখার প্রয়াস চলেছে, ফলে পানীয় জল ও সবুজের অভাব কমছে ৷ পাকা রাস্তা দূর দূর গ্রামেও তৈরি হয়েছে-তার দুপাশে গাছপালা ৷ কয়েকটা গ্রাম ও মন্দির দেখার পর কোট্টেই গ্রামের এক সূর্যমন্দির দেখলাম ৷ অতি সুন্দর কারুকার্য, অনেকটা ওড়িশার মতো, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ৷ এক আহীর গ্রামে দুপুরের খাওয়া না খাইয়ে ছাড়বেন না পঞ্চায়েত প্রধান ও তাঁর স্ত্রী ৷ এখানকার বাড়িগুলি বেশ দূরে দূরে ৷ সবারই গরু-ছাগল আছে-তাদের খাদ্য জোটানোই বড় সমস্যা ৷ এখানকার প্রাচীন বিখ্যাত রাজা লাখো ফুলানির রাজধানী কেরার (Kera) শিবমন্দিরটিও খুব সুন্দর ও কারুকার্যমণ্ডিত-তাঁর মা ছিলেন যাযাবর বংশীয়া এক সুন্দরী মহিলা ৷ রাজার নামেই বর্তমানের লাখপতনগর ৷ মাণ্ডবীর আগের গৌরব না থাকলেও ছোটখাটো স্থানীয় বন্দর হিসাবে নাম আছে-দেখলাম রাসায়নিক সার এসেছে বিদেশ থেকে, তাই বোঝাই হচ্ছে ডকে ৷ আধুনিক যুগে উত্তরণ হয়েছে কচ্ছের-চতুর্দিকের ব্যস্ততা দেখলে তা বোঝা যায়-তবে এর জন্য মহারাজাদের তিন-চার পুরুষের কৃতিত্ব খুব ৷ ক্ষমতা হস্তান্তরে আগে যিনি ছিলেন সেই মদন সিংজির নাম তো ক্রিকেট জগতে বিখ্যাত ৷ এঁরা কচ্ছের জনসাধারণের জন্য ও দেশের জলাভাব মিটিয়ে আধুনিকীকরণ করার জন্য বহু প্রচেষ্টা করে গেছেন ভারত ভুক্তির পূর্ব পর্যন্ত-তার পরের দায়িত্ব তো ভারত সরকারের ৷ সীমান্ত অঞ্চল বলে সরকারের বেশ মনোযোগ দিতে হয় ৷
এখানে আবার আসব-পুব থেকে পশ্চিম অঞ্চল ঘোরা বাকি এখনও ৷ -এক নতুন অভিজ্ঞতা ও বন্ধুত্বের স্বাদ নিয়ে ফিরলাম ৷
ভ্রমণ মার্চ, ২০০২
ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলে
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন