সুন্দরবন – হীরক নন্দী

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

হাতে টানা ডিঙিতে খাঁড়িতে ঢুকছিল ওরা তিনজন ৷ সবাই বনবিভাগের লোক ৷ সঙ্কীর্ণ খাঁড়ি, বহুদিনের অভিজ্ঞতায় সতর্ক ছিল প্রত্যেকেই ৷ হয়তো সেই কারণেই বাঁকের মুখে ঝলসে ওঠা হলুদের আভাসটুকু চিনতে ভুল হয়নি হরিনন্দন মাঝির ৷ ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে নিমেষের মধ্যে দেহটাকে ছুড়ে দিয়েছিল খাঁড়ির জলে ৷ মানুষখেকোর থাবা পিঠে পড়েও তাই ধরে রাখতে পারেনি ভাগ্যবান মানুষটাকে ৷ জলে পড়েই ডুব দিয়েছিল হরিনন্দন ৷ হাতের বৈঠাটা খাঁড়ির মাটিতে গেঁথে চুপচাপ পড়ে ছিল যতক্ষণ শ্বাস থাকে ৷ সীমাহীন আতঙ্কে অনুভব করেছিল মাথার ওপরে ঘোলা জলে বাঘের তোলপাড় ৷ ফুসফুসের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে ভেসে উঠে দেখেছিল বাঘও নেই, নৌকোও নেই ৷ প্রাণপণে হাঁক দিতে সামনের বাঁক ঘুরে ফিরে এসেছিল সন্ত্রস্ত সঙ্গীরা ৷ নৌকোর পাটায় উঠে জ্ঞান হারিয়েছিল হরিনন্দন ৷ বহুদিনের চিকিৎসা আর বিশ্রামে সেরে উঠেছিল আবার ৷ ‘দেখবেন সেই থাবার দাগ?’ পরনের জামাটাকে হাট করে খুলে ধরেছিল প্রৌঢ় হরিনন্দন মাঝি ৷ ভেবেছিলাম শিউরে উঠব, কিন্তু অবাক হলাম ৷ বুক-পিঠের কাঁকড়ার গর্তের মতো ফুটোফাটা আর ইতস্তত আঁচড়ের গভীর ক্ষত অবলীলায় মিশে গেল আশপাশের ভূপ্রকৃতির সঙ্গে ৷ মনে হল এটাই স্বাভাবিক -এই ভয়ংকর অরণ্যের আশ্চর্য সুন্দর পটভূমি মানুষটার দেহটাকে সুদ্ধ আপন করে নিয়েছে ৷

একই ধরনের অজস্র কাহিনী ছড়িয়ে রয়েছে সুন্দরবনের সর্বত্র ৷ যেখানে যখন যাওয়া, কান পাতলেই মানুষ আর মানুষখেকোর গল্প ৷ মানুষগুলো বীর, যদিও বীর্যবান বলতেই যে ছবিটা আমাদের চোখে ভাসে, তা কিন্তু নয় ৷ বুকের পাটার জায়গায় বুকের খাঁচা, দৃপ্ত ঋজুতার পরিবর্তে কোলকুঁজো ছোটখাটো চেহারা, লালচে ঘোলাটে চোখে দীপ্তির বদলে ডাঙায় পড়া মাছের শূন্যতা ৷ তবু এরা দুর্জয় ৷ ঝড়ে, জলে, বাদাবনের বিস্তীর্ণ বাদাড়ে ৷

এই মানুষগুলোকে চোখে না দেখলে সুন্দরবন দেখা সম্পূর্ণ হয় না ৷ জেলে, মউলে, কাঠুরে আর নিছক চাষী -এই চতুর্বর্ণের সমাজ ৷ বর্ণসংকর প্রায় সবাই, কখন যে জেলে আর কখন কাঠুরে তা বোঝা দায় ৷ এই একই মানুষটা বীজ বোনে আবার মধুও ভাঙে ৷ এরই মাঝে আরও দুটো গোত্রের মানুষ-ডাকাত আর বাউলে ৷ প্রথমটা ভক্ষক আর দ্বিতীয়টা রক্ষক ৷ প্রথম শ্রেণীর মানুষগুলোকে চেনা যায় না, আর দ্বিতীয় শ্রেণীটা খোঁজখবর করলে দেখা যায় ৷ বাউলেরা মানুষের বিশ্বাসে গড়া দেশজ মনস্তাত্বিক, মানুষকে ভরসা দিয়ে যমের মুখেও লড়িয়ে দিতে পারে ৷ তন্ত্রমন্ত্রের কথা বলতে পারি না, তবে এদের বাঘের মতো মনোবল, তাই বাঘের সামনেও অক্লেশে রুখে দাঁড়ায় ৷ সুন্দরবনের মাটিতে এরা প্রকৃতির পুরোহিত ৷

সুন্দরবনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ‘বনবিবি’ ৷ তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর সাধারণ তালিকার বাইরে তাঁর অস্তিত্ব ৷ ধর্মভেদ আর শাস্ত্রবিধির বেড়া ডিঙিয়ে মানুষের সহজাত সংস্কার আর বিশ্বাস দানা বেঁধে কীভাবে মূর্তি ধারণ করতে পারে-বনবিবি তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত ৷ হিন্দু হোক মুসলমান হোক, জঙ্গলে যারাই পা ফেলেন তারা বনবিবির শরণাগত ৷ বনবিবি আর তাঁর ধর্মপুস্তিকা জহরনামার নামে তাই একাধিক ধর্মের মিলনের সুর ৷ বাঘ তাঁর বাহন, ‘শা-জঙ্গলি’ তাঁর ভাই, আবার সেনাপতিও বটে ৷ ‘দুখে’ তাঁর আশ্রিত সাধারণের প্রতিভূ ৷ এছাড়াও আছেন দক্ষিণরায়, যিনি বাঘেদের দেবতা-বাঘরূপ ধারণ করে বিপদের কারণ ঘটান ৷ জঙ্গলের মোম আর মধুর তিনিই সৃষ্টিকর্তা ৷ দুখেকে বাদ দিলে, এঁরা সবাই লোকদেবী আর লোকদেবতা ৷ পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে বনবিবির পুজো, যে পুজোর বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা জঙ্গলেরই মাটিতে ৷ আজকাল লোকালয়েও পুজো হয় ৷ বনবিবির পুজোয় উৎসর্গ হয় দেশী মুরগি ৷ বলি নয়, জ্যান্ত মুরগি জঙ্গলের মধ্যে মুক্তি পায় ৷ সুন্দরবনের বাদায় নাকি বনমুরগি ছিল না ৷ আজকে যেগুলো দেখা যায়, সবই উৎসর্গের বংশ ৷

সুন্দরবনের কাঁচাখেকো দেবতা বাদাবনের বাঘ ৷ ‘রয়্যাল বেঙ্গল’ মানেই সুন্দরবনের রাজা-বাঘ ৷ লোকের ধারণা, তাদের কুলোর মতো কান, মুলোর মতো দাঁত, একেকটা থাপ্পড় দিলে দু-দশটা হাতি মাথা ঘুরে পড়বে ৷ কিন্তু সুন্দরবনের বাঘেরা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের স্বজাতির তুলনায় আকারে সাধারণত ছোট, আর সবাই যে মানুষ দেখলেই ধরে ধরে খায় -তাও নয় ৷ দোষের মধ্যে বাঘগুলো মানুষকে বোঝে বেশি, সাঁতার কাটে অসাধারণ আর প্রতিকূল বনাঞ্চলে বেঁচে থাকার দায়ে অতিরিক্ত রকমের সাবধানী ৷ এই কয়েকটা কারণে আর ক্ষেত্রবিশেষে নরঘাতী স্বভাবের গুণে, বাদার বাঘ কিংবদন্তী ৷ সুন্দরবনের জল ছোঁয়া প্রতিটা পর্যটক তাই অক্লান্ত চোখে খুঁজে বেড়ায় ছেলেবেলা থেকে শুনে আসা একটাই প্রতিচ্ছবি ৷ যে দেখে সে ভাগ্যশালী, অধিকাংশই ফেরে শূন্য মনে ৷ দুয়েকজন ছাড়া বনের বাকিটুকু কেউ ফিরেও দেখে না ৷

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পে যাতায়াতের যেটা চালু নিশানা সেটা ক্যানিং থেকে বাসন্তী-গোসাবার ঘাট ছুঁয়ে দুর্গাদুয়ানি খালের বাঁকাচোরা জলপথে ৷ কেউ কেউ বাসে কি গাড়িতে চেপে সোনাখালি (বাসন্তী) গিয়ে জলযানে ওঠে, আবার কেউ বা ক্যানিং থেকেই গা ভাসায় ৷ জলযাত্রার খোলামেলা স্বাচ্ছন্দ্য ভ্রমণে অন্য মাত্রা আনে ৷ প্রকৃতিকে প্রকৃতির মধ্যে খুঁজে পাওয়ার যে বিচিত্র সুখ, সবাই তার পিছনেই ছোটে ৷

ক্যানিং থেকে দুর্গাদুয়ানি এই পথটুকুতে সুন্দরবন সম্বন্ধে কোনও পরিষ্কার ধারণা হয় না ৷ নদীবাঁধের একপাশে বাদাবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দশমিক, দু-চারটে গরান কি বাইনের অপভ্রংশ ৷ নদীবাঁধের ওপাশে লোকালয় ৷ সুন্দরবনের যত লোকালয় এই নদীবাঁধ দিয়ে ঘেরা ৷ দেখতে অনেকটা কানা উঁচু পদ্মথালার মতো, ভাসমান কিন্তু স্থির ৷ পূর্ণিমা-অমাবস্যার আশপাশে ভরা কোটালের জল গ্রামের জমি ছাড়িয়ে উঠে নদীবাঁধে মাথা আছড়ায় ৷ একবার গ্রামে ঢুকলে সর্বনাশ ৷ অন্তত দু-তিন বছর অজন্মা ৷ ফসল বলতে মোটামুটি ধান আর লঙ্কা ৷ এখান থেকে লঙ্কা ওঠে বস্তা বস্তা ৷ কলকাতায় গিয়ে ‘ভাগা’ হয় আর চটে চেপে খদ্দের খোঁজে ৷ ধানও মন্দ হয় না, কিন্তু শুধু ওই খেয়ে আর কেনাবেচা করে লোকের পেট চলে না ৷ তাই ঘুরে ফিরে জঙ্গলই এদের ডেকে নেয় ৷

গত বছর পনেরো-কুড়ি ধরে এদের নতুন একটা পেশা বা নেশা হয়েছে বাগদা চিংড়ির মীন ধরা ৷ মীন হল ‘আর ছোট হলে চেনা যাবে না’ ঠিক এইরকম আকারের অতিশিশু অথচ স্বাধীন চিংড়ি ৷ সুন্দরবনের ছেলে-বুড়ো-মা-মেয়ে, সব মশারির জাল টেনে কোমর জলে হেঁটে বেড়ায়, নয়তো নৌকোয় বসে জল ছাঁকে ৷ জালের ফুটোর থেকে বড় মাপের যা কিছু জীব সব জালে ফাঁসলো ৷ এবার তার থেকে শুধু বাগদার মীনগুলো খুঁটে হাঁড়িতে ভরা ৷ বাকি জীবগুলোর সাধারণত গতি হয় ডাঙায় পড়ে পুনর্জন্মের পথে পা বাড়ানো ৷ বাস্তুতন্ত্রের দিক দিয়ে চরম ক্ষতি, কিন্তু গণতন্ত্রের মুখের দিকে তাকালে এই জীবিকা অপ্রতিরোধ্য ৷ সুন্দরবনের প্রেক্ষাপটে তাই এও এক দর্শনীয় ৷ পাঁচ বছরের কচি ছেলে টিনের রেলগাড়ির বদলে জাল টেনে জলে চলেছে ৷ দিকশূন্য, ভয়শূন্য-শূন্য হাঁড়িটা শুধু ভরে তোলার আশায় ৷

দুর্গাদুয়ানি খালের শুরু গোসাবা থেকে ৷ এই পথে গোসাবাই শেষ বড় লোকালয় ৷ থানা, হাসপাতাল, বাজার, হ্যামিল্টন সাহেবের ঐতিহাসিক দপ্তর মিলিয়ে যথেষ্ট রমরমা ৷ গোসাবার একটা বৈশিষ্ট্য স্থানীয় সব বেকারির হরেকরকমের বিস্কুট আর টাটকা তুলতুলে পাউরুটি ৷ দুর্গাদুয়ানি খালে অসংখ্য ছোট ছোট বাঁক ৷ গোসাবা ছাড়িযে খাল ধরে ঘণ্টাখানেক গেলে তবে বড় নদীর মুখ আর সেই সঙ্গে আসল জঙ্গলের মুখবন্ধ ৷ লঞ্চ ভেসে চলে লোকালয় আর জঙ্গলের প্রায় মাঝখানে ৷ এই বড় নদীর স্থানীয় নাম গোঙর; কেউ বলে গোমতী, কেউ বলে বিদ্যা ৷ দুর্গাদুয়ানি যেখানে এসে গোঙরে মিশেছে সেখান থেকে আরও এক ঘণ্টার পথে সজনেখালি ৷ জঙ্গল সঙ্গে চলে পুরোটাই ৷ ভাঁটার আশপাশে যারা সজনেখালি পৌঁছয়, এইটুকু পথেই তারা হরিণ দেখে অনেক সময় ৷ ভাঁটায় চরা পড়ে জঙ্গলের গা ঘেঁসে, তাই জন্তু দেখা সোজা ৷ জোয়ারের সময়ে বাইরের সারির গাছগুলোর আধখানা ডুবে থাকে জলে ৷ তখন দেখার মধ্যে শুধু মগডাল, পাখি, জল আর জলজন্তু ৷ সজনেখালিতে বসেও হরিণ আর বাঁদর দেখাটা খুবই সহজ, বরং না দেখাটাই আশ্চর্যের ৷

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আওতায় জঙ্গলের মধ্যে একমাত্র থাকার ব্যবস্থা সজনেখালিতে ৷ পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের ইংরিজি ‘এল’ আকারের ট্যুরিস্ট লজে ৩০টা দুশয্যার ঘর ৷ পুরো বন্দোবস্ত মোটামুটি স্বচ্ছন্দ ৷ খাবার ব্যবস্থা লজের মধ্যেই ৷ থামের ওপরে বসানো দোতলা বাড়ি; সন্ধ্যার পরে মাটিতে নেমে ঘোরাঘুরি করায় বাধানিষেধ আছে ৷ রাতে বারান্দা থেকে জঙ্গলের গায়ে আলো ফেললে হরিণের চোখ জ্বলে ওঠে যেখানে সেখানে ৷ সজনেখালিতে একটা ওয়াচ টাওয়ারও আছে, ট্যুরিস্ট লজ সংলগ্ন ফরেস্ট অফিসের হাতায় ৷ এছাড়া আছে মিষ্টি জলের পুকুর যার চারপাশে সকালে বিকালে হরিণ আর বাঁদরের প্রায় নিশ্চিত আনাগোনা ৷ ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ‘ম্যানগ্রোভ ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার’ তৈরি হয়েছে আবার নতুন করে, তার সাজগোজ এখনও চলছে ৷ হাতে অফুরন্ত সময় থাকলে নদীর ঘাটে বা ওয়াচ টাওয়ারে বসে থাকলেই সময় কেটে যায় ৷ কোনও কিছুর প্রত্যাশায় না থাকলে, আর যাই হোক হতাশা আসে না ৷

সজনেখালির উল্টো পারে পাখিরালা বা পাখিরালয় গ্রাম ৷ গোসাবা থেকে ভ্যানরিকশায় চেপেও সরাসরি আসা যায় পাখিরালয়, তারপর খেয়া পার হয়ে সজনেখালি ৷ পাখিরালয়ে কিছু রাত কাটাবার বন্দোবস্ত হয়েছে আজকাল, সেইসঙ্গে খাবার জায়গাও ৷ অবশ্য জেলা পরিষদের বাংলো এখানে অনেকদিনই ছিল ৷ পর্যটক যাঁরা সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পে আসেন তাঁরা বেশিরভাগই সজনেখালিতে থাকেন, আর তা নয়তো লঞ্চে বা বড় নৌকোয় রাত কাটান ৷ লঞ্চে থাকা আর খাওয়ার ব্যবস্থা ৷ বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা কমবেশি খরচে এই ধরনের বন্দোবস্ত করে থাকে ৷ এখানে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের কন্ডাক্টেড ট্যুরের ব্যবস্থাই সব থেকে ভালো আর সুরক্ষিত ৷ আগে যে লঞ্চটা যেত তার নাম ছিল ‘মধুকর’, আজকাল যায় ‘চিত্ররেখা’ও ৷ ফুটফুটে রাজহাঁসের মতো ভেসে বেড়ায় এখানে সেখানে ৷ থাকার ব্যবস্থাও ভালো ৷ লঞ্চই হোক, ভটভটিই হোক, জলযানে চেপে জঙ্গলে ঘোরার অভিজ্ঞতাই আলাদা ৷ ভটভটি বলতে মোটর লাগানো নৌকো ৷ মোটরের অবিশ্রান্ত শব্দের সুবাদে নামকরণ ৷ পর্যটকের ছোট ছোট দলের পক্ষে ভটভটি অনেক সাশ্রয়কর ৷ ভটভটির আরেকটা সুবিধা যে ছোটখাটো খাঁড়িতেও স্বচ্ছন্দে ঢুকে যেতে পারে ৷ গতিতে লঞ্চ আর ভালো ভটভটি দুই-ই সমান ৷ মসৃণ, সহজ তালে জল আর জঙ্গল পিছনে হাঁটে ৷ প্রতিটা বাঁকের মুখে ভরা উত্তেজনা ৷ সারেঙের গালগল্পে আগ্রহ বাড়ে বই কমে না ৷ এরই মধ্যে রান্না চাপে, হালকা হাওয়ায় আড্ডার মেজাজ ৷ কখনও সখনও হৈ-চৈ চিৎকার, হেঁতাল পাতার বাঘ, বাইন কাঠের কুমির, রোম্যান্স আর রোমাঞ্চ সব মিলিমিশে একটা সম্পূর্ণ উপন্যাস ৷

সুন্দরবন কথাটা নাকি ‘সুন্দরী’ থেকে এসেছে ৷ আজকের সুন্দরবনে, অন্তত এপার বাংলায়, সুন্দরী গাছের সংখ্যা কম, যদিও প্রতিটা গাছই কমবেশি সুন্দর ৷ অদ্ভুত গড়ন বাদাবনের গাছগাছালির ৷ ক্ষয়াটে রুক্ষ শিকড়গুলো মাটি আঁকড়ে ধরে প্রাণপণে, সাতপুরুষের ভিটের প্রতি মানুষের যা টান তার থেকেও গাঢ় প্রয়াসে ৷ ঠাসবুনুনি নিশ্ছিদ্র মাটিতে বাতাসের বড় অভাব ৷ নিম্নগামী শিকড় যথাসাধ্য এগিয়ে তাই উঠে আসে আবার নয়তো অংশবিশেষ ঠেলে দেয় প্রশ্বাসের আশায় ৷ কোথাও এক বিঘত, কোথাও এক হাত-মাটির ওপরে উঁচিয়ে থাকে এই শ্বাসমূলের গোড়া ৷ স্থানীয় মানুষেরা একেই বলে শুলো ৷ শুলোর জন্য খুব সাবধানে পা ফেলতে হয় বাদাবনের মাটিতে-বাঘকেও আবার মানুষকেও ৷ ঊর্ধ্বগামী আর নিম্নগামী শিকড়ের ফলে রোধ হয় ভূমিক্ষয় ৷ গাছগুলোও খাড়া হয়ে টিকে থাকতে পারে ৷ সাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের কাছে তাই বাদাবন একটা মস্ত বাধা ৷ এমনকী সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস পর্যন্ত পথ পায় না এই সৃষ্টিছাড়া গোলকধাঁধায় ৷ কলকাতা শহরটা যে এরকম বহাল তবিয়তে রাজত্ব করছে তার একটা বড় কারণ উপকূল ধরে বাদাবনের বর্ম ৷

সুন্দরবনের বিখ্যাততম গাছ হল হেঁতাল ৷ এই হেঁতালের যষ্টি হাতে ধরে চাঁদ সদাগর কত কিছুই না করেছে ৷ খেজুর গাছের মতো পাতা, শুকনো হলুদ, কাঁচা সবুজ আজ হাল্কা আলোছায়ার দৌলতে বাঘের নিশ্চিন্ত আশ্রয় ৷ গায়ে বড় বড় কাঁটা আর ঝোপের তলায় তলায় সুড়ঙ্গের মতো ফাঁক ৷ বাঘের বেশিরভাগ বাচ্চাই নাকি বড় হয় হেঁতাল বনে ৷ হেঁতাল ছাড়া গোলপাতাও অনেকটা একই ধরনের গাছ, শুধু খেজুরের বদলে ধাঁচটা নারকোল পাতার মতো ৷ গুঁড়ি আর কাণ্ড বস্তুটা চোখে পড়ার মতো নয় ৷ এছাড়া আছে বাইন, গরান, পশুর, খলসি, গর্জন, বনধুঁধুল, কাঁকড়া-এইসব নানা গাছ আর তাদের সব উপপ্রজাতি ৷ গর্জন গাছের শিকড় অনেকটা ঠেসমূল ধরনের, তাই গাছটা সহজেই আলাদা করে চোখে পড়ে ৷ অন্যান্য গাছগুলো চিনে নিতে যথেষ্ট অভিজ্ঞতার দরকার ৷ হঠাৎ ঘুরতে যাওয়া পর্যটকের চোখে সুন্দরবনের সবুজ তাই অনেকটা একঘেয়ে ৷ মনটা ঘুরে বেড়ায় চারপেয়ে প্রাণী আর দুপেয়ে পাখিদের ঘিরে ৷

সুন্দরবনে বড় জন্তুর প্রজাতির সংখ্যা খুবই কম ৷ এই প্রতিকূল অদ্ভুত পরিবেশে যারা শক্তপোক্ত আর সহিষ্ণু, তারাই কেবল টিকে আছে ৷ আধুনিক জীববিজ্ঞান ইঙ্গিত করে, এক সময় গণ্ডার আর বারাশিঙ্গার বসবাস ছিল এই অঞ্চলে, এখন যার কোনওটাই নেই ৷ মোটামুটি মাঝারি থেকে বড় আকারের স্তন্যপায়ী যারা এখনও আছে, তারা হল-বাঘ, চিতল হরিণ, রেসাস বাঁদর, বুনো শুয়োর, ভোঁদড়, এক বা একাধিক প্রজাতির বনবিড়াল যেমন বাঘরোল বা ফিশিং ক্যাট, আর গঙ্গার শুশুক ৷ সরীসৃপের মধ্যে সাপ, গোসাপ আর কুমির ৷ এই কুমিরগুলো বাঘের থেকে কম যায় না ৷ এরা নোনাজলের প্রজাতি, পৃথিবীর সরীসৃপদের মধ্যে সব থেকে বড় আকারের প্রাণী, প্রয়োজনে বা সুযোগ পেলে মানুষ খায় ৷ জঙ্গলের খাঁড়ি ধরে ঘুরতে থাকলে হরিণ, বাঁদর আর শুয়োর ভালোই চোখে পড়ে, বাকিরা কমবেশি ভাগ্যের খেলা ৷ শীতকালে কুমির খুব একটা নিরাশ করে না ৷ কয়েকটা নির্দিষ্ট জায়গায় এরা চরায় উঠে গা গরম করে ৷ গোসাপ ঝোপেঝাড়ে বড় একটা দেখা যায় না, তবে মাঝে মধ্যেই গলা তুলে জল সাঁতরায় ৷ শুশুক দেখা যায় বড় বড় নদীতে, জলের ওপরে উঠে নেমে মিলিয়ে যায় কালো কালো ঢেউয়ের মতো ৷ শীতকালের তিন-চারটে মাস জলে ভেসে বেড়ায় আরেক সরীসৃপ ৷ এরা মহাসাগর থেকে আসা অতিথি কচ্ছপ ৷ ডিম পাড়ে উপকূলেই, মাঝে মধ্যে ঢুকে আসে অনেকটা ওপরে ৷ ছোটখাটো প্রাণীদের মধ্যে চোখে পড়বেই পড়বে ফিডলার ক্র্যাব আর মাড স্কিপার ৷ মাড স্কিপার মাছ হয়েও উভচর, চরের মাটিতে বুকে হেঁটে বেড়ায় ৷ এক আঙুল লম্বা পিছল দেহটা, পিঠে পতাকার মতো পাখনা আর মাথার প্রায় ওপরে বসানো দুটো গোল গোল চোখ ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না ৷ এরা বাদাবনের এক নম্বর অধিবাসী, সেই ক্যানিং থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত এদের দখলে ৷ এছাড়া আছে ছোটখাটো হাঙরের মতো কামট ৷ প্রাণীটাকে জালে না জড়ালে, চোখে দেখা যায় না ৷ কালেভদ্রে জেলেদের জলে ডোবানো আঙুল কি পায়ের গোছ থেকে মাংস তুলে নেয় ৷ জলে নামার এই আরেকটা ভয় সুন্দরবনে ৷

সুন্দরবনে পাখি চোখে পড়ে প্রচুর ৷ আসলে অসংখ্য প্রজাতি আছে যেগুলো জলের ধারে ধারে ঘুরে বেড়ায় আর খাবার খুঁটে খায় ৷ স্বাভাবিকভাবেই এই পাখিগুলো একটু নজর করলেই দেখা যায়, যেমন নানান ধরনের স্যান্ডপাইপার, কারলিউ, স্নাইপ ইত্যাদি ৷ কারলিউ আর হুইমব্রেল-এর ঠোঁট বেশ লম্বা আর কাস্তের মতো বাঁকানো, তাই চেনা মোটামুটি সোজা ৷ বড় পাখিদের মধ্যে হোয়াইট বেলিড সি ঈগল এমন একটা পাখি যেটা দেখতে পেলেই ভালো লাগে ৷ আরেকটা যথেষ্ট বিরল পাখি হল গোলিয়াথ হেরন ৷ এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির স্টর্ক, হেরন, ইগ্রেট, করমোর্যান্ট আর গাছে বসা ছোট-বড় পাখিরা যাদের তালিকা এখন সবেমাত্র তৈরি হচ্ছে বনদপ্তর আর বেসরকারি পাখি-পড়ুয়াদের মিলিত উদ্যোগে ৷ সজনেখালির কাছে একটা হেরনারি বা হেরন জাতীয় পাখিদের প্রজননক্ষেত্র ছিল এক সময়ে ৷ কোনও অজ্ঞাত কারণে গত প্রায় বছর আষ্টেক সেটা সরে গেছে ঝিল্লা অঞ্চলে অর্থাৎ অনেকটা পুবের দিকে ৷ আর দেখার মধ্যে আছে পরিযায়ী হাঁস জাতীয় পাখি ৷ স্থানীয় আর দূর-পরিযায়ী বুনোহাঁসের বিভিন্ন প্রজাতি সুন্দরবনে শীত কাটায় বেশ ভালো সংখ্যায় ৷ এদের দেখার আদর্শ জায়গা ক্যানিং থেকে বাসন্তীর মধ্যে মাতলা নদীর জলে ৷ জঙ্গলের আনাচে-কানাচে আরেকটা পাখি যেটা চোখে পড়বেই পড়বে সেটা হল মাছরাঙা ৷ সুন্দরবনে একযাত্রায় আটটা আলাদা প্রজাতির মাছরাঙা দেখেছিলাম ৷ জলের মাছ আর গাছের মাছরাঙা-এই নিয়ে সুন্দরবন ৷

পর্যটকদের মাটিতে পা রাখার খুব একটা অবকাশ নেই সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পে ৷ ২৫৮৫ বর্গ কিলোমিটার প্রকল্পে ১২৫৫ বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চলে পর্যটকদের অধিকার, বাকিটা ‘কোর এরিয়া’ তাই যাত্রা নাস্তি ৷ নেতিধোপানি, সুধন্যখালি, বুড়িরডাবরি, ঝিঙেখালি, সজনেখালি-এই ধরনের কতগুলো জাল দিয়ে ঘেরা সুরক্ষিত ওয়াচ টাওয়ারে ছাড়া নামার অনুমতি নেই ৷ তাই জলযাত্রার স্মৃতিটাই আসল স্মৃতি ৷

ভ্রমণ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮

সকল অধ্যায়

১. অর্ধশতাব্দীর আগের বদ্রীনাথ যাত্রা – প্রতাপকুমার রায়
২. মানস অভয়ারণ্য – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩. জলদাপাড়া অরণ্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪. জলের ধারে ঘর – নবনীতা দেব সেন
৫. জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির – উষা সেন
৬. তাহিতি – হরপ্রসাদ মিত্র
৭. মার্কন্ডেয় গঙ্গার উত্স সন্ধানে – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮. কেদার বদ্রী – মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
৯. তেহরানি হয়রানি – অমিতাভ চৌধুরি
১০. শোনপুরের মেলায় – বরুণ দত্ত
১১. এলেম নতুন দেশে – কমলা মুখোপাধ্যায়
১২. মস্কো থেকে সাইবেরিয়া হয়ে পিকিং – গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩. পাতাল-ভুবনেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
১৪. ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ
১৫. নিকোবরের দ্বীপে – তিলকরঞ্জন বেরা
১৬. তিরতিরে নদী আর শাল জঙ্গলের দেশে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭. আমার ভ্রমণ – মহাশ্বেতা দেবী
১৮. সুন্দরবন – হীরক নন্দী
১৯. ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত
২০. সাইকেলে পাঁচ বছরে ভূ-পর্যটন – ভূপর্যটক বিমল দে
২১. আঙ্কোর ভাট – প্রীতি সান্যাল
২২. হিমালয়ের সাতকাহন – ত্রিদিব বসু
২৩. স্বপ্নের পথেই যাওয়া যায় – মহাশ্বেতা দেবী
২৪. ছোট কৈলাস – সুভাষ দত্ত
২৫. বালতাল হয়ে অমরনাথ – প্রতাপকুমার রায়
২৬. মধ্য এশিয়া অভিযান – গৌতম ঘোষ
২৭. পথ হারিয়ে সিকিমের জঙ্গলে – রতনলাল বিশ্বাস
২৮. নতুন করে পাব বলে – বন্দনা সান্যাল
২৯. সেবার ব্রেকজার্নি করে – জয়া মিত্র
৩০. চন্দ্রভাগার উৎস চন্দ্রতাল সুর্যতাল – সুনীলকুমার সরদার
৩১. ওঙ্কারেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
৩২. সুন্দরবনে দুদিন – পবিত্র সরকার
৩৩. মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়
৩৪. দিকবিদিকে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৫. তিস্তানদীর উৎসে – শরৎ ঘোষ
৩৬. পশ্চিমে হাওয়াবদল – মধুপর্ণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৭. এক টুকরো নীল চাঁদ – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৩৮. কালিম্পং থেকে তিব্বত – অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
৩৯. সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু
৪০. মির্জা শেখ ইতেসামুদ্দিনের বিলেত যাত্রা এবং আমি – নবনীতা দেব সেন
৪১. বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
৪২. গানতোক থেকে ইয়ুমথাং – সুতপা ভট্টাচার্য
৪৩. ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল
৪৪. ডুয়ার্সের দুয়ার এখন খোলা – সমরেশ মজুমদার
৪৫. ইউরোপে দিন কয়েক – পূর্ণেন্দু পত্রী
৪৬. রামচন্দ্রের বনবাসের পথ পরিক্রমা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. আসমুদ্রককেশাস – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
৪৮. নিরলংকার ভ্রমণ – শঙ্খ ঘোষ
৪৯. চেঙ্গিস খানের দেশে – প্রতাপকুমার রায়
৫০. মিজোরামের নীল পাহাড়ে – দীপঙ্কর ঘোষ
৫১. সিন্ধুদুর্গ – বিশ্বদীপ দত্ত
৫২. জিম করবেটের জঙ্গলে – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩. থর মরুভূমিতে ট্রেকিং – শিবনাথ বসু
৫৪. মরোক্কো ভ্রমণ – হরপ্রসাদ মিত্র
৫৫. ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ – নবনীতা দেব সেন
৫৬. গন্তব্য মাচুপিচু – প্রতাপকুমার রায়
৫৭. কই যাইত্যাছি জানি না – শঙ্খ ঘোষ
৫৮. পারাংলা অভিযান – সুনীলকুমার সরদার
৫৯. পুশকিন, মলদভা আর কচি পাতার বাঁশিতে মোত্সার্ট – প্রীতি সান্যাল
৬০. আমাদের ছোট নদী : পার্বতী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬১. দেবলোকের পথে পথে – অশোক চক্রবর্তী
৬২. না-ভ্রমণের বৃত্তান্ত – আশাপূর্ণা দেবী
৬৩. এভারেস্টের পাদদেশে যাত্রা – কমলা মুখোপাধ্যায়
৬৪. নীল নদে পাঁচদিন – হরপ্রসাদ মিত্র
৬৫. বারাণসীর ঘাটের কথা – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৬. বালফাক্রমের পাহাড়-জঙ্গলে – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৬৭. গৌরীগঙ্গার উৎসব মিলাম হিমবাহ – পুরুষোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৮. মরুভূমির দিনরাত্রি – পবিত্র সরকার
৬৯. ঢাকা : একুশ বছর পর – অন্নদাশঙ্কর রায়
৭০. ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
৭১. ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউ – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৭২. কালিন্দী গিরিবর্ত্ম – রথীন চক্রবর্তী
৭৩. একযাত্রায় ভোরামদেরও আর কানহা – হীরক নন্দী
৭৪. মদমহেশ্বরের ডোলিযাত্রা – কাজল দত্ত
৭৫. কেনিয়ায় পাঁচ অরণ্য – প্রতাপকুমার রায়
৭৬. কোনাডা থেকে রেভুপাল ভরম – রতনলাল বিশ্বাস
৭৭. চাঁদের দেশ লাদাখ – কমলেশ কামিলা
৭৮. বোকের তোভ, ইজরায়েল – নবনীতা দেব সেন
৭৯. বিষ্ণুপুর মুকুটমণিপুর – হরপ্রসাদ মিত্র
৮০. ডোকরিয়ানি বামক – অনিন্দ্য মজুমদার
৮১. তাওয়াং থেকে তাসি-চু জং – কমলা মুখোপাধ্যায়
৮২. মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল
৮৩. আকাশচূড়ায় অভিযান – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮৪. ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ
৮৫. সারেঙ্গেটির জঙ্গলে – হরপ্রসাদ মিত্র
৮৬. এবারের কুম্ভমেলায় – চিন্ময় চক্রবর্তী
৮৭. অন্য পথের পথিক – বুদ্ধদেব গুহ
৮৮. গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়
৮৯. নিশীথ সূর্যের দেশ – প্রতাপকুমার রায়
৯০. সবুজ নামদাফাতে – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
৯১. পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু
৯২. গোঁসাইকুণ্ড – কমলা মুখোপাধ্যায়
৯৩. অমরকন্টক – হীরক নন্দী
৯৪. আদিম ডুয়ার্সের আধুনিক রূপকথা – সূর্য ঘোষ
৯৫. পার্বতী উপত্যকায় সার পাস – বিদ্যুৎ দে
৯৬. মিয়ানমার, ইরাবতীর সঙ্গে – পবিত্র সরকার
৯৭. রূপসী রিশপ – হীরক নন্দী
৯৮. হিমবাহের জন্মভূমিতে – শেখর ভট্টাচার্য
৯৯. ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার
১০০. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত – হরপ্রসাদ মিত্র
১০১. বক্সা দুর্গ – টুটুল রায়
১০২. সিন্ধু নদের ধারে – রতনলাল বিশ্বাস
১০৩. মেঘালয়ের দাউকি – সুমিত মুখোপাধ্যায়
১০৪. আমাদের ছোট নদী : লিডার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০৫. লাসা – সমীর রায়
১০৬. ২ নম্বর লোভালোয়া স্ট্রিট – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
১০৭. অযোধ্যা পাহাড় – বিশ্বদীপ দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন