অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
এই লেখা কিন্তু যতখানি মানসভ্রমণের ততখানি প্রকৃত ভ্রমণের নয় ৷ নয়, এই জন্য যে, বক্সার বনাঞ্চল এখনও সাধারণ ভ্রমণার্থীদের থাকার উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি ৷
বক্সা অবশ্য সাধারণ ভ্রমণার্থীদের গন্তব্যও নয় ৷ কিন্তু যাঁরা বনের খবর কিছু কিছু রাখেন, মানে, বনের মনের খবর, তাঁদের যেতে বাধা নেই ৷ ভ্রমণার্থীদের মধ্যে অনেক রকমের স্তর থাকে সব দেশেই ৷ বক্সা সমস্ত স্তরের ভ্রমণার্থীদের জন্য নিশ্চয়ই নয় ৷
প্রশ্ন হচ্ছে এই যে, কোনও ভ্রমণার্থীকেই এখুনি বক্সা নিমন্ত্রণ জানাবে কি না! বনসংরক্ষণ আর বনভ্রমণের মধ্যে চিরদিনই বিরোধ ছিল ৷ ভবিষ্যতেও থাকবে ৷ আজ থেকে একযুগ আগে মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বি কে বাগচি মশাই আর কানহার ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর লাওলেকার সাহেবের মধ্যে আমার উপস্থিতিতেই তর্কাতর্কি হয়েছে কানহাতে ৷ সেই সময়ে মধ্যপ্রদেশের বনবিভাগ বাঘ বাড়ানোর ন্যায্য স্বার্থেই চাননি যে, কানহা-কিসলিতে দর্শনার্থীদের নিয়ত ভিড় লেগে থাকুক ৷ কিন্তু সরকারের মদতে বাগচিমশাই জিতেছিলেন ৷
মধ্যপ্রদেশের কানহাতে বা কিসলিতে যাঁরা আজকাল বাঘ দেখেন অথবা অসমের কাজিরাঙায় গণ্ডার, তাঁরা ওই দুই প্রাণীর স্বরূপ কখনওই জানবেন না ৷ কৃতী, স্বাধীনচেতা জামাই আর আদরে-গোবরে নদনদে ঘরজামাইয়ের মধ্যে চিরদিনই যা তফাত ছিল, নিছক বনে বাস করা বাঘ বা গণ্ডার এবং প্রকৃত বুনোদের সঙ্গে লালিত-পালিত সহজ খাদ্যপ্রাপ্ত বাঘ বা গণ্ডার বা অন্য বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে সেই রকমই তফাত ৷
সব বনেই বাঘ দেখাটা কপালের ব্যাপার কিন্তু প্রায় নিশ্ছিদ্র বক্সা বাঘ প্রকল্পের বনাঞ্চলে বাঘ দেখা প্রায় অসম্ভবই ৷
পাঠক, আপনি ভাবতে পারেন যে, বাঘই যদি না দেখা গেল তবে কী করতে মরতে ওই পাণ্ডববর্জিত বাঘ প্রকল্পের বনে আদৌ যাওয়া?
কেন আদৌ যাবেন এবারে তাই বলি ৷
আলিপুরদুয়ারে আপনি কাঞ্চনজঙ্ঘা, কামরূপ এবং অন্যান্য নানা ট্রেনে গিয়েই পৌঁছতে পারেন ৷ প্লেনেও বাগডোগরাতে গিয়ে নামতে পারেন ৷ তবে সেখান থেকে ভাড়াগাড়িতে আলিপুরদুয়ার কোর্টে এসে পৌঁছতে চার-পাঁচ ঘণ্টা তো লাগবেই ৷ কোচবিহারে যখন বায়ুদূতের প্লেন যেত তখন সেখান থেকে আসা খুবই সোজা ছিল ৷ কিন্তু এখন বায়ুদূতের সার্ভিস বন্ধ আছে ৷ কলকাতা থেকে বাগডোগরাতে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের উড়ান সপ্তাহে চারদিন যায় ৷ বিমানবন্দর থেকেই সোজা গাড়িতে রওনা দেওয়াই ভালো ৷ শিলিগুড়ি থেকে মিটার গেজ লাইনের ট্রেনেও যাওয়া যায় ৷
আলিপুরদুয়ারে থাকার মতো তেমন ভালো হোটেল নেই বলেই শুনেছি ৷ জানি না, ঠিক কিনা ৷ সার্কিট হাউস, পি ডাব্লু ডি-র বাংলো অথবা সেচ বিভাগের বাংলোতে আগে থেকে বুকিং করা থাকলে থাকতে পারেন ৷
আলিপুরদুয়ারে নোনাই আর ডিমা নদী আছে ৷ আলিপুরদুয়ার থেকে আধঘণ্টা লাগবে বনের মধ্যের পথ দিয়ে গিয়ে গাড়িতে রাজাভাতখাওয়াতে পৌঁছতে ৷ থাকার জায়গা রাজাভাতখাওয়াতেও সীমিত ৷ রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তী, ভুটানঘাট, বক্সাদুয়ার এই সবই বনবিভাগের রাজত্ব ৷ সব জমিও বনবিভাগের ৷ রাজাভাতখাওয়াতে বনবিভাগের একটি ভি আই পি রেস্টহাউস আছে ৷ সেখানে সাধারণের জায়গা হবে না ৷ আগে যে বাড়িটি ডি এফ ও-র বাংলো ছিল সেখানে বনবিভাগ একটি ডর্মিটরি করেছেন ৷ কিন্তু সেই বাংলোতে অনেক সময়েই প্রাণীতত্বে পি এইচ ডি করতে আসা ছাত্ররা থাকেন ৷ আমি যখন গিয়েছিলাম তার দু-তিনদিন আগেই একটা হাতির দলের এক হাতিকে রেডিও কলার পরাবার জন্য কলকাতা থেকে টেকনিক্যাল অফিসার সুব্রত পালচৌধুরী গিয়েছিলেন ৷ এ ডি এফ ও কল্যাণ দাসের সহযোগিতাতে একটি মাকনা হাতিকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে ওঁরা তার গলায় গয়না পরিয়ে ছিলেন ৷
বুকিংয়ের জন্য লিখে দেখতে পারেন ৷ তবে অনেকই আগে লিখতে হবে ৷ আগের এ ডি এফ ও-র বাংলোটিতে দুটি ঘর জনসাধারণের জন্য অগ্রিম বুকিং-এ পাওয়া যায় ৷ অন্য একটি ঘর বনবিভাগের আমলাদের জন্য সব সময়েই রাখতে তো হয়ই ৷ রাত-বিরেতে তাঁদের কখন যে আসতে হয় তা আগে থাকতে কে বলতে পারে!
এ অঞ্চলের সব বুকিংই দেন ফিল্ড ডিরেক্টর, বক্সা টাইগার প্রোজেক্ট, আলিপুরদুয়ার কোর্ট, পিন নম্বর-৭৩৬ ১২২ ৷
রাজাভাতখাওয়া জায়গাটি খুবই ভালো লাগবে ৷ নিবিড় জঙ্গলের মধ্যে একথাবা ফাঁকা জায়গা ৷ ছোট্ট জনপদ ৷ জঙ্গলের আর চা-বাগানের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া ছবির মতো মিটার গেজ-এর রেললাইন ৷ বনবিভাগের কর্মীদের বাড়িঘর, রেল কলোনি, পোস্ট অফিস এবং নবনির্মিত নেচার ইনফর্মেশন সেন্টার ৷ এই ইনফর্মেশন সেন্টারের উল্টোদিকেই আছে WHISPERING TRAIL ৷ ঘন বনের মধ্য দিয়ে সরু পায়েচলা পথ প্রায় পৌনে দু কিলোমিটারের মতো ৷ তাতে সাহস করে যাঁরা যাবেন তাঁরা অগণ্য অচেনা গাছ, অচেনা পাখি দেখতে পাবেন ৷
এই ইনফর্মেশন সেন্টারটি সত্যিই দর্শনীয় ৷ শ্রী এস এস বিস্ত সাহেব যখন বক্সার ফিল্ড ডিরেক্টর ছিলেন তখনই করে গিয়েছিলেন ৷ ফরেস্ট সার্ভিসের এই দেরাদুনবাসী ভদ্রলোকটি বাংলা শুধু বলেন এবং পড়েনই না, বাংলা আরণ্য সাহিত্যের একজন মস্ত ভক্তও ৷ বক্সার বাঘ প্রকল্প ভদ্রলোকের প্রাণ ছিল ৷
আলিপুরদুয়ার থেকে রাজাভাতখাওয়াতে আসার পথে প্রায়ই নাকি ছিনতাই হয় আজকাল ৷ পুলিশ বা বনবিভাগের জিপকে কিছু বলে না কিন্তু অন্য গাড়ি বা স্কুটারের শব্দ শুনলেই পথপাশের নিশ্ছিদ্র জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে তারা ছিনতাই করে ৷ পুলিশের এই ছিনতাই রোধে সক্রিয় থাকা উচিত ৷
রাজাভাতখাওয়াতে গেলে নেচার ইনফর্মেশন সেন্টারটি অবশ্যই ঘুরে দেখে আসবেন আরও ভেতরে যাওয়ার আগে ৷ রাজাভাতখাওয়ার জনপদে মাঝে মাঝেই হাতি আসে ৷ মানুষে পটকা ফাটায়, চিৎকার করে, নানারকম আওয়াজ করে ৷ আমি থাকতে থাকতেই এক সন্ধেতে একটি একা দাঁতাল হাতি এসেছিল ৷ রেল কলোনির এক কুঁড়েঘরের চারপাশ ঘুরে, কুঁড়েটি অক্ষত রেখে ইনস্পেকশন করে, একটি কলাগাছ উপড়ে নিয়ে চিবোতে চিবোতে ফিরে গিয়েছিল নিজের খেয়ালে ৷ পটকা-টটকাতে কোনও ভ্রূক্ষেপ করে না উত্তরবঙ্গের হাতি ৷
এ ডি এফ ও-র পূর্বতন কোয়ার্টারের হাতাতে, গেটের পাশেই একটি তরুণ চিকণ গামহার গাছ আছে ৷ মার্চের শেষে হলুদ আর খয়েরি ফুল এসেছিল তাতে ৷ এখানে কতরকম যে গাছ আছে, যা উত্তর ভারতে বা বিহারে বা ওড়িশাতে নেই, তা কী বলব!
রাজাভাতখাওয়া থেকে জয়ন্তীতে আসতেও, আস্তে জিপ চালিয়ে গেলে, ঘণ্টাখানেকেরও কম লাগে ৷ জয়ন্তী পাহাড়ের কোলে জয়ন্তী নদীর একেবারে ওপরেই জয়ন্তী বনবাংলো ৷ ছবির মতো ৷ মাত্র একটি ঘর পাওয়া যেতে পারে এখানে ৷ নদী আগে ছিল দূরে ৷ কিন্তু তিরানব্বইয়ের বন্যাতে পি ডাব্লু ডি-র বাংলো এবং নদীর ওপরে যে ব্রিজটা ছিল ভুটানঘাটের দিকে যাওয়ার, তা প্রায় নিশ্চিহ্ন করে নদী-রেখাকে বহুধা বিস্তৃত করে, যেন বিস্ত সাহেবের আদেশেই, বনবিভাগের বাংলোকে অক্ষত রেখে তার পাদদেশ চুম্বন করে চলে গেছে ৷
বাংলোর ছোট্ট হাতার বাইরে বেশিই শাল গাছ ৷ মধ্যে, দুটি কাঠগোলাপের গাছ আছে, একটি কৃষ্ণচূড়া ৷ নদীর দিকে মুখ-করা যে বসার জায়গাটি আছে, সেখানে কাঠের গেট বেয়ে গ্যাঁদাল লতা উঠেছে ৷ ছিঁড়ে শুকনো লঙ্কার সঙ্গে বেটে, ভাত মেখে খেলাম আমরা ৷
জয়ন্তী বাংলোর হাতাতে, মিহি জাল লাগানো ছোট্ট বসবার ঘরে, শোবার ঘরে এমনকী স্নানঘরেও জানলা খুলে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকলে সারা দিন কেটে যায় ৷ রাতও মনে হয় যেন নদীতেই স্নান করছে ৷ অন্ধকারেও নদীর বুক সাদা দেখায় ৷ আর চাঁদনি রাতে তো কথাই নেই!
যাঁরা পাখির ভক্ত তাঁদের পক্ষে জয়ন্তী এক স্বর্গরাজ্য ৷ গাছ-ভক্তদের পক্ষে এই পুরো বক্সা এলাকাই ৷
ভোর চারটেতে ঘুম থেকে উঠে জয়ন্তীতে যত পাখির ডাক শুনেছিলাম তার মধ্যে অনেকই আগে শোনা ছিল না ৷ দেশের প্রায় সব উল্লেখযোগ্য বনেই আমার পা পড়েছে ৷ একারণেই এবং নিজে পরম মূর্খ বলে, মনের গায়ে এক ঢিলেঢালা গর্বের জামা পরেছিলাম ৷ ভেবেছিলাম যে, গাছেদের বা পাখিদের কিছু আমি চিনি ৷ জয়ন্তীতে এসে বোঝা গেল যে চেনার অনেকই বাকি ৷
র্যাকেট-টেইল্ড ড্রঙ্গোদের একটি বাসা ছিল নদী পারের একটি চিকরাসি গাছে ৷ তাদের ডাকেই রোজ ঘুম ভাঙত ৷ কম শোনা অথবা আগে আদৌ না-শোনা পাখিদের মধ্যে ছিল টিবেটান হুপী, বাজা এবং চির ফেজেন্ট ৷
রেড-ওয়াটেল্ড ল্যাপউয়িং মাঝরাতে জয়ন্তী নদীর নিস্তব্ধ, রুক্ষ সাদা বুকে চমক তুলে তুলে ডাকত ৷ তবে ওইরকম জায়গাতে ওই প্রজাতির পাখির যত সংখ্যায় থাকা উচিত ছিল সেই পরিমাণে কিন্তু ছিল না ৷
অবশ্য বক্সার মতো জঙ্গলে আগে যাইওনি ৷ বক্সাতে ‘ভাবার’ ও ‘তেরাই’ দুরকমেরই বনভূমি আছে ৷ ভাবার জঙ্গলে মাটির অনেক নিচে থাকে জল ৷ নদীরা এ অঞ্চলে পৌঁছেই ডুব দেয় পৃথিবীর গহনে ৷ অন্তঃসলিলা হয়ে কিছুদূর ডুবসাঁতার দিয়ে গিয়ে আবার মাথা তোলে ৷ জলস্তর অনেকই নিচে বলেই এই ভাবার অঞ্চলের গাছেদের শিকড়দের রকমই আলাদা ৷ প্রকৃতি নিজেই তৃষ্ণা সৃষ্টি করে নিজেই নানাভাবে তা নিবারণ করেন ৷ সুন্দরবনের বা অন্য ম্যানগ্রোভ বনের সতত নোনা জলের জোয়ার-ভাঁটা খেলা বনভূমির অর্ধেক সময়ে ডুবন্ত গাছেদের শিকড় যেমন বিশেষ প্রকৃতির, ভাবারের গাছেদের শিকড়েরাও তেমনই এক বিশেষ প্রকৃতির ৷ বহু নিচ অবধি গিয়ে পৌঁছয় এই শিকড়েরা জলের সন্ধানে ৷ আর ম্যানগ্রোভ বনের গাছেরা মাটি ফুঁড়ে শিকড়দের ওপরে উঠিয়ে পচন থেকে বাঁচায় নিজেদের ৷ ভাবারের শিকড়দের নাম TAP ROOTS আর ম্যানগ্রোভ বনের শিকড়দের বা শুলোদের বলে RESPIRATORY ROOTS ৷
ভাবারের গাছেদের নাম শুনলে খুশি হবেন আপনারা ৷
জলপাইগুড়িরই মতো ময়নাগুড়ির নাম শুনেছেন অনেকেই কিন্তু ময়না নামে যে গাছ আছে তা কি জানতেন?
অন্য সব জায়গার নাম হয় গাছের তলা দিয়ে ৷ কুলতলি, বকুলতলা, শিমুলতলা, পলাশতলি ইত্যাদি ৷ কিন্তু উত্তরবঙ্গীয়রা, মনে হয়, গুড়ি ভক্ত ৷ এই ময়না গাছেরা প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড হয় ৷ প্রাচীন শিমুলের মতো মসৃণ ৷ কিন্তু কাণ্ডে শিমুলের মতো কাঁটা নেই এবং কাণ্ডর গোড়াটা শিমুলের মতো অতখানি বিভক্ত ও বিন্যস্তও নয়, যদিও মিল আছে ৷
লালি নামে একরকমের গাছ হয় এই অঞ্চলে ৷ দুরকম লালি আছে ৷ এমনি লালি আর দুধে লালি ৷ টুন গাছ ৷ লামপাতি ৷ চিকরাসি ৷ পারুল ৷ জারুল ৷ ছাতিয়ান বা ছইতান অর্থাৎ, ছাতিম গাছ ৷ পাতা দেখলেই ভুল হবার উপায় নেই ৷ আকাতরু! সত্যি! তরুর নাম আকাতরু ৷ আরও কতরকম অচেনা গাছ ৷ সহজে চেনা যায় এমন গাছেদের মধ্যে আছে শাল, সেগুন, শিশু, বিজা, গামহার, খয়ের, কুল, বন-কাঁঠাল ৷ এ-কাঁঠালে না হয় এঁচোড় না হয় কাঁঠাল ৷ কিন্তু ভালো আসবাব হয় ৷ ময়নার কথা তো বলেইছি ৷ শাল ও সেগুন এখানের আদি গাছ নয় ৷ বহুযুগ হল বনবিভাগ প্ল্যানটেশান করে করে এই অঞ্চলে এইসব গাছ গজিয়েছেন ৷ সেগুনের প্ল্যানটেশানে বনবিভাগের রোজগার ভালো হয় কিন্তু বন নষ্ট হয় ৷ সেগুনের নিচে কোনওরকম আন্ডারগ্রোথ হয় না ৷ সেই কারণে ECOLOGY বা বাস্তুসংস্থান-এর ভারসাম্য ব্যাহত হয় ৷ লালি গাছ অনেকটা শালেরই মতো ৷ চাঁপ গাছ ৷ কাট্টুস গাছ ৷ শিরিষ গাছ ৷ শিমুল তো আছেই! অগণ্য ৷
লতাও আছে নানারকম ৷ আসামী লতা ৷ আরারিকান্টা ৷ তিনরকম বটানিকাল নাম আছে এদের ৷ ফার্ন, তার মধ্যে আবার ঢেকির মতো ফার্নই বেশি ৷ বিভূতিভূষণের প্রিয় পশ্চিমবাংলার গ্রামে নদীতীরে অযত্নে ফুটে-থাকা ঘেঁটু ফুল যেখানে সেখানে ফুটে থেকে ‘হাম কিসিসে কম নেহি’ প্রমাণ করছে ৷ বেনটিক লতা ৷ বহিনিয়া, জলবাহী লতাও আছে ৷
বেত-বন আছে ৷ বর্ষায় হয়তো কেয়াও ফোটে ৷ আর সাপেরা সেখানে খেলা করে ৷ ময়ূরের কেকাধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পিঠের ওপরে কালো চুল-খোলা ভরা-শ্রাবণের বন ৷
বক্সাতে পোকামাকড়-প্রজাপতি আছে সতেরো রকমের ৷ তার মধ্য আবার পাঁচশো পঁচিশ রকমের উপভাগ আছে ৷ যেমন মাকড়সা, ঝিঁঝিঁ ও লাফানে পোকা, প্রজাপতি ও মথ, ফড়িং জাতীয়, কাচ পোকা ও গুবড়ে পোকা, মৌমাছি, বোলতা এবং পিঁপড়ে ৷ লম্বা পা-ওয়ালা শিকারি পোকা, ছারপোকা, দু-ডানাওয়ালা মাছি, বাঁকানো-ডানাওয়ালা পতঙ্গ, উই, রোচেস ৷
হারভেস্টম্যান পোকা আছে চার প্রজাতির ৷ তার মধ্যে লালরঙা লম্বা ঠ্যাঙওয়ালা প্রজাতিটি ভারি সুন্দর ৷ এর নাম আমি জানি না ৷ লাঠি পোকা ও লতা পোকাও আছে, হোমোপটেরা ৷ সিকার্ড ও লিফ হপারই আছে কুড়ি প্রজাতির ৷
গাছ-গাছালি সত্যিই বিস্মিত করেছে আমাকে ৷ এই বনে গাছ আছে একশো উনপঞ্চাশ প্রজাতির, ঝোপ (গুল্ম) একশো সাতান্ন প্রজাতির, পাদপ একশো সাতাশি প্রজাতির, লতা উনসত্তর প্রজাতির, বেত আট প্রজাতির, বাঁশ ছ-প্রজাতির ৷ নানারকম ঘাস আছে উননব্বই প্রজাতির, জলতৃণ আছে পঁচিশ প্রজাতির ৷ অর্কিডই আছে একশো বত্রিশ প্রজাতির ৷
এতরকম পোকামাকড় আছে বলেই পাখির স্বর্গরাজ্য বক্সা ৷ দুশো চৌত্রিশ প্রজাতির পাখি এখানে দেখা গেছে ৷ ভাবুন একবার ৷ দুশো চৌত্রিশ প্রজাতির!
ভারতের প্রায় সব ব্যাঘ্র-প্রকল্পেই গেছি এবং আফ্রিকার অনেকই গেম-পার্ক-এও, কিন্তু ঘরের কাছের বক্সাতে যে গবেষণা বনবিভাগ করেছেন, যেমন যোগ্য আমলাদের ওপরে এর ভার অর্পিত থেকেছে, তাতে সত্যিই বিস্মিত হয়েছি ৷ এই কৃতিত্ব অবশ্যই প্রশংসার্হ ৷ কারণ, এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ যানবাহন অত্যন্তই পুরনো এবং অন্যান্য অনেক সুযোগ-সুবিধাই এই প্রকল্পের কর্মীদের নেই ৷ রেডিও ট্রান্সমিশানের সুবিধা অবশ্য আছে ৷ এঁরা কাঠ-চুরি ও চোরাশিকার বন্ধেও যেসব ব্যবস্থা নিয়েছেন তা যুগান্তকারী ৷
ব্যাঘ্র-প্রকল্পের মধ্যে জনবসতি থাকলে নানারকমের সমস্যা হয়ই ৷ সেইসব সমস্যার মোকাবিলা মনস্তাত্বিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নানাবিধ নতুন ক্রিয়াকলাপে এঁরা যা করেছেন এবং করছেন তা জেনে এঁদের প্রশংসা না করে কোনও উপায়ই নেই ৷ বনবিভাগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি, প্রকৃতার্থে শিক্ষিত এবং উদ্যোগী শ্রী কল্যাণ বিশ্বাসের প্রশংসায় এঁরা সকলেই পঞ্চমুখ দেখলাম ৷ এবং পূর্বতন ফিল্ড ডিরেক্টর শ্রী এস এস বিস্ত সাহেবেরও ৷ নতুন ফিল্ড ডিরেক্টর সবে কার্যভার নিয়েছেন ৷
এযুগে এমন অনাবিল গুরু বা প্রভুভক্তি বড় একটা দেখা যায় না ৷
জয়ন্তীতে গাছ, পাখি ও নদী ছাড়াও আমাকে সত্যিই অবাক করেছে তক্ষকেরা ৷ আমাদের চিরচেনা, ঠিক! ঠিক! ঠিক! বলে আমাদের আশ্বস্ত করা তক্ষকদের ইংরিজি নাম GECKO অথবা TUCKTOO ৷
অত গাব্দা-গোব্দা, ভয়-পাওয়ানো অগণ্য সাধারণ তক্ষক আর কোথাও দেখিনি ৷ মনিটর লিজার্ড হলেও না হয় অন্য কথা ছিল ৷ জয়ন্তী নদীর ওপার থেকে তক্ষক ডাকলেও রাতের বেলাতে এপার থেকে ডাক শোনা যায় স্পষ্ট ৷ বাংলোর ফলস-সিলিং-এর মধ্যে, হঠাৎ অবাক করে রাতের বাথরুমের জানলার বাইরের দিকে সাদা কাচের ওপরে তাদের আধিভৌতিক শিল্যুট ৷
জয়ন্তীতে যাবার পরেই আমার মনে হয়েছে যে, বড় বড় উচ্চাঙ্গ-সঙ্গীত শিল্পীমাত্রই সম্ভবত পঞ্চত্বপ্রাপ্তির পরে তক্ষক হয়ে জন্মান নইলে তক্ষকমাত্রই টাক-টু-উ, টুক-টু-উ ডাকার আগে আশ্চর্য প্রক্রিয়াতে অমন গলা সেধে নেবে কেন?
জয়ন্তী থেকে কার্তিকা রেঞ্জের রেঞ্জার সুধীর দাস সাহেবের জিপে বেরিয়ে, ব্রিজ ভেঙে গেছে বলে, জয়ন্তী নদীর শুকনো বুক মাড়িয়ে, বেঙ্গল লাইম স্টোন ও ডোলোমাইট কোম্পানির নদী পারের বাড়িঘর ছাড়িয়ে জয়ন্তী, চুণিয়া-ঝোড়া এবং ফাসখাওয়া নদী মাড়িয়ে জয়ন্তী ও তুরতুরি চা-বাগান পেরিয়ে কার্তিকা রেঞ্জ অফিসের পথ ডাইনে রেখে ময়নাবাড়ি বিট অফিসের বাঁপাশ দিয়ে ভুটানঘাটের বাংলোর দিকে এগোলাম ৷ জয়ন্তী বাংলো থেকে ঘণ্টাখানেকের পথ ৷ জয়ন্তীর রেঞ্জার বিমান বিশ্বাস জয়ন্তীতে আমাদের সী-অফ করেছিলেন ৷
ভুটানঘাটে যাওয়ার আগে জয়ন্তী থেকে যে জায়গার নামে এই ব্যাঘ্র-প্রকল্পের নাম, সেই বক্সাদুয়ারে যাওয়া যায় সান্ত্রাবাড়ি রেঞ্জ অফিস হয়ে ৷ রাস্তাটা ভেঙে গেছে ৷ এখন ট্রেকিং করে যেতে হয় ৷ সান্ত্রাবাড়ির পথে সুন্দর একটা নদী পড়ে ৷ বক্সা-খোলা তার নাম ৷ সান্ত্রাবাড়ি থেকে জয়ন্তীর রেঞ্জার বিমান বিশ্বাস এবং সান্ত্রাবাড়ির রেঞ্জার গোপাল চক্রবর্তী আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে এগোলেন ৷ পাঁচ কিলোমিটার মতো চড়াইতে উঠে তারপর বক্সাদুয়ার ৷ এবং বক্সা দুর্গ ৷ সেখানেও রেঞ্জ অফিস আছে ৷ ওখানে একটি বড় ডর্মিটরি তৈরি হচ্ছে ৷ তরুণ বনপ্রেমীরা কিছুদিন পরেই এসে থাকতে পারবেন ৷ এবং আমি বনবিলাসীদের অনুরোধ করব যে, তাঁরা যেন অবশ্যই বক্সা-দুর্গে যান ৷
খাড়া চড়াই ৷ তাই কিছুদূর গিয়ে আমাকে ফিরে আসতে হয়েছিল ৷ সময়ও বেশি নিয়ে যাইনি হাতে ৷ এর পরের বারে উঠব বক্সাদুয়ারে ৷ বক্সাদুয়ারে না গিয়ে পৌঁছলে বক্সা ব্যাঘ্র-প্রকল্পে যাওয়ার কোনও মানেই হয় না ৷ অপূর্ব দৃশ্য নাকি! প্রত্যেকেই বললেন ৷ ব্রিটিশরা দুর্গম তো বটেই, প্রায় অগম্য নিবিড় ও শ্বাপদসঙ্কুল বনমধ্যের এই পাহাড়চুড়োয় আন্দামানের সেলুলার জেলেরই মতো এক জেলখানা বানিয়েছিলেন, মুখ্যত স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের বন্দী করে রাখারই জন্য ৷ এই জেলখানা থেকে পালানো শ্রীঅরবিন্দর পক্ষেও হয়তো সম্ভব ছিল না ৷ আপনারা বক্সা গেলে, বক্সাদুয়ারে অবশ্যই যাবেন ৷
তবে এই সব অঞ্চলে ঘুরতে হলে নিজেদের সঙ্গে জিপ বা গাড়ি থাকা অবশ্যই দরকার ৷ আলিপুরদুয়ার থেকে সকালে এবং বিকেলে বাস আসে রাজাভাতখাওয়া থেকে জয়ন্তী অবধি ৷ তারপরে বাসও নেই ৷ জয়ন্তীর ওপরের ব্রিজও তো আধখানা ধুয়ে গেছে তিরানব্বুইয়ের বন্যাতে ৷ বর্ষা নেমে গেলে যাতায়াতেরও খুবই অসুবিধা ৷ তবে বর্ষার রূপও যে আলাদা! এই জয়ন্তী ও ভুটান পাহাড়, জয়ন্তী, ডিমা, ফাসখাওয়া এবং রায়ডাক নদীর, এই নিবিড় নিশ্ছিদ্র বনের কী যে রূপ হবে ঘন বরষণের সময়ে তা ভাবলেই আনন্দে আত্মহারা হতে হয় ৷ যখন সত্যি সত্যিই চোখে দেখব, তখন যে কী হবে তা কে জানে!
ভুটানঘাট বাংলোটিও চমৎকার ৷ হাতার মধ্যে একটি STUNTED জারুল গাছ আছে ৷ বনের জারুলেরা দীর্ঘাঙ্গী এবং সুতনুকাই হয় সচরাচর ৷ এমন বেঁটে-মোটা খারাপ ফিগারের জারুল আগে দেখিনি ৷ অর্কিডও আছে বাংলোর হাতার মধ্যেই একটি শিশু গাছে ৷
রায়ডাক নদীর যে কী অপূর্ব শোভা এখানে তা বলার নয় ৷ একে অসমের মানস এবং বাংলার ও অসমের সীমান্ত চিহ্নিত করা সংকোশের সঙ্গে তুলনা করা গেলেও যেতে পারে ৷ এই তিন জায়গাতেই নদী পেরোলেই ভুটান ৷ তবে ভুটানঘাট থেকে পাঁচ কিলোমিটার মতো গেলে পীপিং ৷ ওয়াংচু নদীর ওপরের একটি ছোট্ট ঝুলন্ত ব্রিজ পেরিয়ে ভুটানে যায় মানুষে ৷ প্রথম গ্রামের নাম সাখু ৷ ভুটান থেকে পর্বতের সংকীর্ণ গিরিখাতের মধ্য দিয়ে যে ওয়াংচু নদী বয়ে আসছে সেই নদীই ভারতে পড়ে সমতলে ছড়িয়ে যাওয়ার পরে তার নাম হয়েছে রায়ডাক ৷
কৃষ্ণর গায়ের রঙের মতো কালচে-নীল-রঙা ভুটান পাহাড়ের পটভূমিতে দ্রুতধাবমানা বিচিত্র-রঙা নুড়িময় নদীর এই মার্চ মাসে যা রূপ! এই নীল-রঙা শাড়ি-পরা নৃত্যরতা নারীর হঠাৎ পাথরের ওপরে লাফিয়ে ওঠায়, তার উছলে-ওঠা সাদা সায়ার আভাস যে কেমন দেখায় তা দেখতে হলে পাঠক, আপনাকেই নিজে যেতে হবে ৷ আমার সাধ্য কি আমি আপনার চোখ হই! এই রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ-শব্দের বর্ণনা দেবার মতো কলম ঈশ্বর আমাকে দেননি ৷
একদিন বেলা পড়লে, নদীতে গিয়েছিলাম অনেকই ঘুরে ৷ নদীর বুক থেকে নুড়ি সংগ্রহ করার জন্য ঠিকাদারের ট্রাক যে পথে নদীতে নামে সেই পথ বেয়ে ৷
শেষ ট্রাক ফিরে গেছে অনেকক্ষণ, লোকজনও ৷ হাতির এবং বাঘের ভয়ে সন্ধে হওয়া অবধি কেউই থাকে না ৷ নুড়ির ওপর দিয়ে হেঁটে এসে জলের পাশে দাঁড়ালাম ৷ বেলা-শেষের গান গাইছে আকাশ ৷ ভুটান-পাহাড়ের গায়ে ফিকে কমলা-রঙা এক বিধুর কোমল চাদর বিছিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি শেষবেলাতে ৷ বীজ-ফাটা শিমুল তুলোর আঁশ উড়ে উড়ে আসছে হাওয়াতে ৷ খরস্রোতা জল পড়ছে, সাবধানে, যেন স্নান করবে বলে ৷ কিছুক্ষণ ভেসেই তলিয়ে যাচ্ছে ৷ এমনই তুলো-ওড়া দেখেছিলাম মানস অভয়ারণ্যে, মানস নদীর পাশে মার্চের শেষে ৷ শিমুল তুলো আলতো হাওয়ায় উড়তে দেখলেই আমার ভুল হয়ে যায় ৷ ভুল হয়ে যায় সবকিছুই ৷
মস্ত বড় এক জোড়া সাদা-কালো উড-ডাক উড়ে যাচ্ছে পীপিংয়ের দিকে ৷ ওদেরই ওড়ার ধরন বুঝি চুরি করেছে CONCORDE ৷ কী সুন্দর তাদের উড়ানো ঋতি ৷ এমন এমন দৃশ্যর সম্মুখীন হয়েই মনে প্রত্যয় জাগে যে, প্রকৃতির মধ্যে থেকেই আমরা এবং আমাদের সবকিছু উদ্ভুত ৷ প্রকৃতির মধ্যেই আমাদের নিবৃত্তি ৷ প্রকৃতিই আমাদের উৎস ৷ এবং শেষ গন্তব্যও ৷
স্তব্ধ হয়ে, সেই অপূর্ব দৃশ্যর দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে রইলাম ৷ এই প্রজাতির উড-ডাকই শেষ দেখেছিলাম, জোড়াতে নয়, একটিমাত্র, নিম্ন-অসমের গৌরীপুরের কাছে রাঙামাটি পাহাড়ে, এক গ্রীষ্মের চাঁদের রাতে, মরা নদীর ওপরে একটা মরা গাছের মগডালে বসেছিল সে ৷
দ্রুত অন্ধকার হয়ে আসছিল ৷ একটি বড় লেপার্ড, সবে নদীতে জল খেয়ে, আমরা যে জঙ্গল থেকে এলাম, সেই জঙ্গলেই ঢুকে গেছে ৷ একেবারে টাটকা পায়ের দাগ ৷ অথবা সে ভুটানের দিক থেকেও আসতে পারে নদী সাঁতরে ৷ একটি বড় বাঘের পায়ের দাগ দেখলাম তারই কাছাকাছি ৷ তবে দিন সাতেকের পুরনো ৷ বালির ওপরে ফেলা পায়ের থাবার ছাঁচ ক্ষয়ে গেছে ৷
নদীরেখা ধরে, দিনশেষে ভুটানঘাট বাংলোর পিছনদিক দিয়ে পাম্প-হাউসের কাছে এসে উঠব ভেবে, এগোতে এগোতেই হঠাৎ অন্ধকার নেমে এল ৷ ভুটান পাহাড়ের দিকের নদীপার থেকে হাতির দল বৃংহন করে উঠল ৷ চাঁদ ছিল ৷ কিন্তু সেই পাহাড়ের কালোতে এবং নদীর সেই অংশে সাদা পাথর এবং সাদা বালির অভাবে আলো প্রতিফলিত প্রতিসারিত হতে পারছিল না ৷
সাংঘাতিক সাপের আড্ডায় এসে পড়ে অনেকক্ষণ ধরে হাচোড়-পাচোর করে প্রায় ঘণ্টা দুই পরে কোনওক্রমে বাংলোতে এসে পৌঁছলাম পিছন দিয়ে, চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন চৌকিদারকে আশ্বস্ত করে ৷
এবারের মার্চ মাসের যাত্রাতে বক্সাতে সবচেয়ে বেশি আনন্দর ভাগীদার করল রায়ডাক নদীর বুকের ওপরের সেই শেষ বিকেল এবং রাতটি ৷
যাঁরা নির্জনতা ভালোবাসেন, বনের সঙ্গে একাত্ম হতে জানেন, যাঁরা নিজেদের কথা শোনাতে নয়, বনের কথা নির্বাক হয়ে শুনতে জানেন, তাঁদের কাছে আমার অনুরোধ যে একবার ঘরের কাছের বক্সাতে যান ৷
ভ্রমণ জুলাই, ১৯৯৬
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন