ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল

ক্যামেরুন যাওয়ার আমন্ত্রণ কয়েকবার এসেছিল, আমি যাইনি ৷ যাঁর জন্য নেমন্তন্ন তিনি অনেকবার দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর কাজে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি হয়ে ঘুরে এসেছেন শিক্ষামন্ত্রীর ডাকে ৷ আমার মনে হয়েছিল কী করব সেখানে ৷ দেখার কী বা আছে! শিক্ষাবিদ সঙ্গী তো ব্যস্ত থাকবেন সারাদিন, দেশের মন্ত্রী গোষ্ঠীর সঙ্গে ৷ রাজধানী ইয়ায়ুন্দে শহরে বন্দী হয়ে থাকার চেয়ে আমার প্যারিসে থাকা ঢের ভালো ৷ এই তৃতীয়বারের আমন্ত্রণে ঠিক করলাম, অজানা এই দেশটির কথা ‘ভ্রমণ’-এর পাঠক-পাঠিকার জন্য লিখে আনতে পারলে কেমন হয়! প্যারিস থেকে টেলিফোনে সম্পাদককে এই বার্তা জানাতেই তিনি উচ্ছ্বসিত, মনে হল, যেন সেই মুহূর্তেই ক্যামেরুন ঘুরে এসে সেখানকার সব কথা তাঁকে শোনাতে পারলে তবেই তিনি শান্তি পান ৷

এয়ার ফ্রান্সে চলেছি আফ্রিকা ৷ তখনও জানি না কী বিস্ময় অপেক্ষায় আছে ৷ উড়োজাহাজে বসে পর্দায় ম্যাপ দেখছি ৷ ইউরোপ থেকে খুব দূর নয় ৷ কাসাব্লাঙ্কা, আলজিরিয়া হয়ে সাহারা মরুভূমি পেরলাম ৷ আদ্দিস আবাবা, ডাকার, বাঙ্গুই, ব্রাজাভিল, নাইরোবি বুজুমবুরা, হারারে লিবারভিল আবিদজান কিগালি কিনচাসা, কোতোনু … নানা দেশের নাম পড়তে গিয়ে বেশ চনমনে লাগছে ৷ সাহারার বিস্তৃত হলুদ রং ছাড়িয়ে ক্যামেরুনের বন্দর শহর দুয়ালায় উড়োজাহাজ নামল কিছুক্ষণের জন্য ৷ নামছি যখন দেখি দুধারে ঘন জঙ্গল… সমুদ্রের নীল একটু উঁকি দিয়ে গেল ৷ ইয়ায়ুন্দে পৌঁছতে সন্ধে ৷ আমাদের নিতে এসেছিলেন শিক্ষাসচিব জোয়েল মুলাঁ সঙ্গে গি সালা, তাঁদের সঙ্গে প্যারিসেই পরিচয় ৷ কূটনৈতিক সুবিধার জন্য এয়ারপোর্টের সুন্দরী মেয়েটি আমাদের কাগজপত্র, স্যুটকেস ইত্যাদি গুছিয়ে এনে লাউঞ্জে বসাল ৷ কোঁকড়া চুল টেনে সোজা করা আফ্রিকার তরুণীদের নতুন ফ্যাশন ৷ তার কাঁধ পর্যন্ত ছাঁটা চুল ৷ রংও তেমন কালো নয় ৷ মাখে নাকি চামড়া ফর্সা করার জন্য বিশেষ সাবান ‘মোভাতে’, যা তৈরি হচ্ছে আমেরিকা বা ইউরোপে, আফ্রিকার কৃষ্ণকলিদের জন্য! স্কার্টের নিচে পা দুখানি কিন্তু সুন্দর চকচকে কালো ৷ বাইরে অন্ধকার ৷ বিমানবন্দরেও তেমন একটা আলো নেই ৷ একটি কালো ও আরেকটি সাদা মার্সিডিজ বেনজ গাড়ি দাঁড়ানো ৷ দুটি ভিখারি পয়সা চাইছে ৷ ঘন মেঘ, জোলো হাওয়া, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ৷ মালপত্র উঠিয়ে দুটি গাড়ি আমাদের নিয়ে শহরের দিকে এগোল ৷ অন্ধকার হাইওয়ের দুধারে জঙ্গল, উঁচু গাছের সারি ৷ গাড়ির জানলা খোলা ৷ পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছি ৷ কলা গাছ ফলের ভারে নিচু হয়ে, আছে অন্ধকারে তারার মৃদু আলোয় টের পাচ্ছি ৷ অনেকটা পথ এলাম, নির্জন, কেউ বাস করে না যেন এদেশে ৷ হঠাৎ দুয়েকটি আলোর ফুটকি, দুঃখী চায়ের দোকান, শেষ না হওয়া কয়েকটি বাড়ি, তার ভেতরেই মিটমিট করে আলো জ্বলছে… দোকানের সামনে কমবয়সী ছেলেমেয়েরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে ৷ কোনও তাড়া নেই, ছোটাছুটি নেই অথচ রাজধানী কয়েক কিলোমিটার দূরে ৷ ম্যালেরিয়ার কুইনিন, পীতজ্বরের টিকা এসব অস্ত্রশস্ত্রে আগেই সেজেছি ৷ এখন কিনব খনিজ জল ৷ ফরাসি ডাক্তারের বিধান ৷ ‘ক্যামেরুন যাচ্ছ, অন্য কোনও জলপান নৈব নৈব চ ৷’ গাড়ি থামানো হল ছোট্ট একটি মনিহারী দোকানের সামনে ৷ প্রায় বন্ধ দোকানের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক বালক লাল প্যাকিং বাক্স নিয়ে নানা কসরতে নাচছিল গান গেয়ে-‘মাওয়ানা… নোদোলো ও-ও-এ…এ’ ভারি মজা লাগছিল দেখতে ৷ আমি তাকাচ্ছি দেখে চট করে বাক্সটা মাথার ওপর হুডের মতো চাপিয়ে ঘুরে ঘুরে কিছুক্ষণ নাচল সুর ছাড়াই ৷ বাবা মা দোকান চালায় ৷ বাড়ি ফিরবে একসঙ্গে ৷ অপেক্ষার বিরক্তি কাটাতেই এই নাচ বোধহয় ৷

রাজধানীতে ঢুকছি ৷ বেশ মলিন চেহারা ৷ আলো কম ৷ মন্ত্রীভবন, সংসদ ভবন, জাতীয় পরিষদ এসব পেরিয়ে এলাম হিলটন হোটেলে ৷ বেশ সাজানো গোছানো ৷ কিন্তু লবিতে অলস অপেক্ষায় যারা ভিড় জমিয়েছে তারা কেন এখানে তখন বুঝতে পারিনি ৷ পরে দেখেছিলাম নানা ধরনের ব্যবসার কথাবার্তা লবির সোফাতেই ঘটে যায় ৷ স্বচ্ছ স্বল্পবসনে কৃষ্ণকলি মেয়েদের গৌরবর্ণ পুরুষের হাত ধরে ককটেল লাউঞ্জে চলে যেতে দেখি ৷ কী সুন্দর এই মেয়েদের মুখ! দশতলার ওপরে ঘর ৷ জানলা থেকে দেখছি আলো-আঁধারে এক রহস্যময় শহর অপেক্ষায় আছে ৷

ভোরে ঘুম ভাঙল ৷ পর্দা সরাতে দেখি আকাশ মেঘলা ৷ বাইরে আম তালগাছ ৷ হলুদ ট্যাক্সি ছুটছে ৷ নীল টুপি পরা কিশোর একা দাঁড়িয়ে ৷ যেন তার এই সকালে কোনও কাজ নেই, কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই ৷ চা খেতে নিচে রেস্তোরাঁয় নামলাম ৷ সুন্দরী সোফি হাসিমুখে জানতে চাইল কোথা থেকে এসেছি, কী দেখার বাসনা ৷ বললাম, ‘শহর ৷’ -‘ধুর! শহরে কী আছে! শহরের বাইরে চলে যাও ৷ দেখবে আমার দেশ সবুজের লাবণ্যে কত সুন্দর ৷’ ওর কথাটা কত খাঁটি একটু পরেই টের পেলাম ৷ লবিতে আসতেই দেখি বেশ লম্বা চেহারার এক মহিলা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন ৷ দেলফিন তান ৷ স্কুলে ফরাসি সাহিত্য পড়ান ৷ ক-দিন ছুটি চলছে ৷ আমাকে সঙ্গ দেবেন ৷ জোয়েল মুলাঁ ব্যবস্থা করেছেন ৷ আলাপ পরিচয় হল ৷ ফরাসি ভাষায় কথাবার্তা ৷ ফরাসি, ইংরিজি দুটিই সরকারি ভাষা, কিন্তু ফরাসি ভাষার প্রাধান্য দেশে ৷ দেলফিনের সঙ্গে অল্প সময়ে আলাপ সহজ হয়ে এল ৷ নিচে নেমে দেখি আরেক বিস্ময় অপেক্ষা করছে ৷ বড় একটি গাড়ি আর চালক কাম গাইড আলফনসো দাঁড়িয়ে আছে ৷ আবার ধন্যবাদ জোয়েল মুলাঁকে ৷ হোটেল ছেড়ে শহরে ঢুকছি ৷ বাড়ি আর গাড়ির জঙ্গল ৷ পথঘাট রাজধানীর পক্ষে বেশ সরু ৷ তার মধ্যেই সাইকেল, নামীদামি মোটরগাড়ি, পথচারী, হকারের ভিড় ৷ কী করে এগনো যাবে ভাবছি ৷ হোটেলের কাছাকাছি জায়গাটাই সাজানো গোছানো ৷ তারপর কোনও অদৃশ্য হাতে শহরটা ঘেঁটে এলোমেলো ৷ এ বছর শান্তিনিকেতন থেকে মাতুলালয় কীর্ণাহার যেতে ঠিক এই অনুভূতি হয়েছিল ৷ কিন্তু কোথায় একটি মফস্বল শহর আর এখানে দেশের রাজধানী! শিক্ষা মন্ত্রণালয় এত সুযোগ দিয়েছেন ঘোরাঘুরির তা সত্বেও এরকম ভাবছি জানতে পারলে কী মনে করবে ভেবে নিজেকেই বকুনি দিলাম ৷ রাস্তার দুধারে তিলার্ধ স্থান নেই ৷ কত ধরনের পসরা ৷ শাকসবজি থেকে ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি ৷ জামাকাপড় ডাঁই করে বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের ওপর ৷ তারই কোল ঘেঁসে সারি বাঁধা সব পেয়েছির দেশের মতো পণ্যদ্রব্যে ভরা দোকান ৷ পিঠে শিশুকে কাপড়ে বেঁধে রঙিন গোন্ডো পরা মেয়েরা গুছি বিনুনিতে চুল বেঁধে বাজার করছে ৷ অনেকের চুলের রং সোনালি ও ঢেউ খেলানো ৷ কোঁকড়া আফ্রিকান চুল শুধু ছেলেদের ও বর্ষীয়সীদের ৷ দেলফিন জানাল, মেয়েরা অনেকেই এখন রংপসন্দ পরচুলা পরে নেয় ৷ ক্যামেরুনের মেয়েদের সোনালি চুল আর সোনার পাথরবাটি একই অর্থ বহন করে শেখাল আমাকে ৷ কোঁকড়া চুল বাড়ে না, তাছাড়া আঁচড়ানোর নানা ঝামেলা ৷ তাই পরচুলাও কাঁধ ছাড়িয়ে সটান নামছে ৷ আমার তো দেখতে বেশ লাগল ৷ দেলফিন ও আলফনসোর এসব তেমন পছন্দ নয় বুঝতে পারছিলাম ৷ একটি দোকানে মাছ বিক্রি হচ্ছে, সাইনবোর্ডে লেখা অ্যান্টি ক্রাইসিস মাছ ৷ তিনজনেই হেসে উঠলাম ৷ দেলফিন জানাল, দেশের অবস্থা তেমন ভালো নয় ৷ বেতন কমে যাচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া, মাছের কিলো ফরাসি সত্তর ফ্রাঁ, মাংসও ওই দামেই ৷ সুখের কথা জমি খুব উর্বর ৷ শাকসবজি ফলমূল ফলে সহজেই ৷ গ্রামে তেমন অসুবিধা নেই ৷ কিন্তু দলে দলে মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসছে উন্নত জীবনের আশায় ৷ ফলে দারিদ্র আরও বাড়ছে ৷ ধনীরা অসম্ভব ধনী ৷ বাড়ি-গাড়ি কিছুরই অভাব নেই ৷ শহরের পথে দেখেছিলাম অল্পবয়সী দু-তিনটি ছেলে দাঁতে নখে মারামারি করছে ৷ লোকজন নিরপেক্ষ ৷ শহরে ড্রাগ সমস্যা আছে, প্রায়ই ছিনতাই, ডাকাতি চলছে ৷ একটা না শেষ করা বিশাল শূন্য বাড়ি দেখিয়ে দেলফিন বলেছিল, ‘প্রীতি, এর নাম মরণ প্রাসাদ ৷ গভীর রাতে নিঃসঙ্গ পথচারীকে গ্যাংস্টাররা তুলে নিয়ে খালি বাড়ির কোনায় সবকিছু কেড়ে কখনও খুন করে ফেলে রেখে যায় ৷ অথচ সবকিছু ঘটছে টগবগে শহরের মধ্যে ৷ সাবধানে থাকতে হয় ৷’

গাড়ি চলছে শহর কেটে ৷ একটাই রাজপথ ৷ আলফনসো টেপে বাজাচ্ছে অচেনা ভাষার গান ৷ বাসা উপজাতির ভাষা-

‘মু দো বিগ বাগা রে
মু ভুম লা জিবো আনা টগ দ লা না-
তোর কাঁচা বয়স চাখ রে বিয়ার বল স্বাদু কি বিস্বাদ-’

দুশো উপজাতি, ভাষা, আচার ব্যবহার, উৎসব, এক গ্রাম থেকে আরেক গাঁয়ে সম্পূর্ণ আলাদা ৷ বান্টু উপজাতির মধ্যেই ভাগাভাগি ৷ দেলফিন বুলু, আলফনসো বেতি ৷ কিন্তু রাজধানীতে বলা হয় বাসা ভাষা ৷ সকলেই সে ভাষা বলতে ও বুঝতে পারে ৷ ভাগ্যিস! দেলফিন যেন ইতিহাসের পাতা উল্টে কথা বলে চলেছে ৷ ওর ফরাসি ভাষায় আফ্রিকান ছাপ ৷ খুব ভালো লাগছিল শুনতে ৷

ক্যামেরুন ৷ খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে বিখ্যাত নৌসেনাপতি হানন কার্থেজ থেকে জাহাজ ভাসিয়ে আসেন এখানে ৷ সমুদ্র থেকে দেখলেন উঁচু পাহাড়ের ওপরে আগুনের শিখা জ্বলছে, রাতের আকাশের অন্ধকার গিলে খাচ্ছে লাল রঙের আগুন, উগরে দিচ্ছে আগুনের স্রোত এত জোরে যে লাভা গড়িয়ে আসছে সমুদ্রের দিকে ৷ কত দিন আগে মাউন্ট ক্যামেরুনের আগ্নেয়গিরির বর্ণনা তাঁর লেখায় ৷ এই মুহূর্তে সেই আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছে ৷ হাননের আঁকা ছবি নিজের চোখে দেখে এসেছি ৷ সে কথায় পরে আসব ৷ তিনি ওই পাহাড়ের নাম দিলেন ‘ঈশ্বরের রথ’ ৷ কার্থেজের নাবিকেরা পাহাড়কে ঘিরে ইতিহাসের পাতায় দেশটিকে লিখে রাখল ৷ বহুদিন পর ১৪৭২ সালে পর্তুগিজ নাবিকেরা এ দেশের উরি নদীর মোহানা আবিষ্কার করতে গিয়ে দেখল জলে হাজার হাজার চিংড়ি মাছ ৷ তারা নদীর নাম দিল Rio Dos Camaroes চিংড়ি-নদী ৷ কামারোয়েস থেকে দেশটির নাম ক্যামেরুন ৷ ৪,৭৫,০০০ কিলোমিটার চওড়া, অপটু হাতে আঁকা ত্রিভুজ আকৃতি পশ্চিম আফ্রিকায় গিনি উপকূলের কাছে ক্যামেরুন ৷ এই দেশের দক্ষিণে, নিরক্ষীয় গিরি, গ্যাবন, কঙ্গো; দক্ষিণ পশ্চিমে অতলান্ত আটলান্টিক, পশ্চিমে নাইজিরিয়া, পুবে সেন্টার আফ্রিকা আর চাদ ৷ উত্তরে, করিডরের মতো হাত বাড়িয়ে দেশটি ছুঁয়েছে মাছে ভরা ‘চাদ’ হ্রদ ৷ আফ্রিকায় বিদেশিদের পায়ের ছাপ বারবার পড়েছে ৷ ক্যামেরুনের ইতিহাস ব্যতিক্রম নয় ৷ পর্তুগিজদের পর এল ওলন্দাজ, জার্মান ৷ ১৯১৮ সালে বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের পরাজয়ের পর ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড দেশটাকে ভাগাভাগি করে উপনিবেশ গড়ে তুলল ৷ পশ্চিমে ফরাসি আধিপত্য, পুবে ব্রিটিশরাজ ৷ এত কথা লিখতে হল দেশটার চরিত্র বোঝার জন্য ৷ দুই দেশই ক্যামেরুনে ছাপ ফেলে গেছে ভালো ভাবেই ৷ ফরাসি দেশ নিজেদের মতো অঙ্গীভূত করে আর ইংরেজরা পরোক্ষ শাসনের মাধ্যমে ৷ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় জাতীয় চেতনা আফ্রিকায় যে নতুন হাওয়া আনল তা ছুঁয়ে গেল এ দেশের দুটি বিচ্ছিন্ন উপনিবেশকে ৷ ১৯৬০ সালে ফরাসি আধিপত্যের অবসান ও আংশিক স্বাধীনতা, ১৯৭২ সালে পুরো দেশ ঐক্যবদ্ধ, স্বাধীন, প্রজাতান্ত্রিক সরকার ৷ শুধু ভাষা থেকে গেল বিচ্ছিন্ন ৷ দক্ষিণের লোকেরা ইংরিজি বলে ৷ পিজিয়ন ইংলিশ সাধারণ মানুষ তৈরি করেছে ফরাসি আর ইংরিজি শব্দ মিশিয়ে পারস্পরিক সমঝোতার জন্য ৷ বাকি দেশে ফরাসি ৷

আমরা চলেছি নতুন তৈরি হওয়া মসজিদের দিকে ৷ ইয়ায়ুন্দে শহর তৈরি নিয়ে কাহিনী শোনাল দেলফিন ৷ অনেকদিন আগে সাভানার তৃণভূমি ছেড়ে এওন্ডো উপজাতিরা নাগদেবতার পিঠে চড়ে সানাগা নদী পার হয়ে বাসা বাঁধল এই সাত পাহাড়ের চূড়ায় ৷ গড়ে উঠল আজকের রাজধানী ৷ উঁচুতে উঠছি, নিচে ইট সিমেন্টের তৈরি বাড়ির জঙ্গল, সবুজের কোনও ছোপ দেখছি না ৷ অথচ এই ওপরে বৃষ্টিধন্য গাছের শ্যামলিমা চোখ জুড়িয়ে দিচ্ছে ৷ লাল মাটির রাস্তা পেরিয়ে উঠছি ফিবি পাহাড়ের দিকে ৷ ফ্ল্যামেঙ্কো গাছ লাল ফুলে ছেয়ে আছে, বুনো ঝোপে হলুদ মার্গারিটা ফুটে আলো করে রেখেছে যেন ধুয়ে দেবে অনেক নিচে পড়ে থাকা শহরের মালিন্য ৷ দুধারে আমগাছ, ফলের ভারে নিচু ৷ পাতা দেখা যাচ্ছে না ৷ দেশ ছাড়ার পর এত ফল ভারানত আমগাছ চোখে পড়েনি ৷ কলার কাঁদি, বিশাল পাকা পেঁপে গাছে গাছে ৷ মনে হচ্ছে গাড়ি থামিয়ে কয়েকটা তুলে আনি ৷ রাস্তার ধারে এমন ফসল, অথচ চুরি হয়ে যাচ্ছে না দেখে অবাক লাগল ৷ মসজিদের কাছে পৌঁছলাম ৷ ধপধপে সাদা ও নীলে প্রাসাদের মতো দাঁড়িয়ে ৷ মিনারের মাথা থেকে দুপুরের আজান ভেসে এল ৷ ভেতরে শ্বেতপাথরের ছড়াছড়ি ৷ মাদ্রাসা, প্রার্থনা ঘর, বিশাল চত্বরে তিনহাজার লোক বসতে পারে ৷ একটি তরুণ মৌলবি আমাদের চারদিক ঘুরিয়ে দেখালেন ৷ নির্জন মসজিদে আমাদের উপস্থিতি তাঁর ভালোই লাগল মনে হচ্ছে ৷ বাইরে খোলা চত্বর রোদে ভেসে যাচ্ছে ৷ সামনে ফিবি পাহাড় সবুজ গাছগাছালিতে ঢাকা ৷ নিচে ঢালু উপত্যকা ৷ গরুর গলার ঘন্টা বাজছে ৷ শব্দ প্রতিধ্বনিত মসজিদ মাঠ প্রান্তর উপত্যকা ঘিরে ৷ ধীর গতিতে পাহাড়ে গাড়ি উঠছে ৷ এই পাহাড়ের চূড়ার ওপরের মঠে মহামান্য পোপ দ্বিতীয় জন পল দুবার কয়েকটি দিন কাটিয়েছিলেন ৷ দেলফিন প্রটেস্ট্যান্ট, আলফনসো ক্যাথলিক ৷ দেশে প্রায় সমান সংখ্যক ক্যাথলিক, প্রটেস্ট্যান্ট ও মুসলমান ৷ তাছাড়া বিভিন্ন উপজাতির আছে নিজেদের সর্বপ্রাণবাদমূলক ধর্মবিশ্বাস ৷ সেও অসংখ্য ৷ দেলফিন বলল, এতেও রক্ষে নেই ৷ ইসলাম, খ্রিস্টধর্মেও নানা শাখা গজাচ্ছে ৷ দেশের মানুষ দুঃখ, আর্তি দারিদ্রের হাত থেকে রেহাই পেতে চেয়ে এরকম অনেক ফাঁদে পড়ছে ৷

ফিবি পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছি ৷ একটা উঁচু পাথরের ওপর বসে আমরা তিনজন গল্প করছি ৷ পাশেই গড়ানো ঢালু জমিতে তিনটি কমবয়সী মেয়ে বাদাম গাছ পুঁতে চলেছে নিচু হয়ে ৷ এখানে মেয়েরা খুব পরিশ্রমী ৷ পাহাড়ের গায়ে জঙ্গল ৷ অনেকে ঝোপ থেকে পাতা তুলছে সাবধানে একটি একটি করে ৷ তৈরি হবে ভেষজ ওষুধ ৷ জড়িবুটিতে বিশ্বাস অগাধ ৷ আলফনসোর কৈশোরে হাম হয়েছিল ৷ বাড়িতে ওঝা ডেকে ঝাড়ফুঁক, শেকড় বেঁটে খাওয়ানো, তারপর তাকে নোংরা ফেলার খালি টিনের ড্রামের ওপর একপায়ে নাচানো হয়েছিল ৷ তার কথায় রোগ দুদিন পরেই উধাও ৷ গা ঝরঝরে ৷ ছেলেমেয়েদের অসুখে ডাক্তার না ওঝা কী ডাকবে জিজ্ঞেস করলাম ৷ লজ্জিত হাসিতে জানাল, ডাক্তার ৷ সবাই গুণিন বা ওঝা নয় ৷ বুজরুকেরাও সংখ্যায় অনেক ৷ নেমে আসছি, দেখি চেনা ফুল জবা, করবী, চাঁপা ফুটে আছে ৷ নানা রঙের প্রজাপতির ওড়াউড়ি ৷ লাল মাটি, হলুদ ফুল, সবুজ খেত প্রকৃতির বাহারি রূপ ৷ পথে একটি অ্যান্টিক মুখোশের দোকান ৷ মালিক শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে বাইরে দাঁড়ানো ৷ ভেতরে দুই রানির কাঠের মূর্তি আমার চোখে ধরল ৷ খোলা বুকে করোটির মালা, মুখে হাতির দাঁতে তৈরি দন্ত বিকশিত হাসি, মুখে লম্বা পাইপ, কটিবস্ত্রে কড়ি, পাখির পালক, মাকড়সার জাল সাজানো ৷ দেলফিন শিউরে উঠে বলল, মেয়েদের যে এখানে ভালো চোখে দেখা হয় না এই নারীমূর্তি দুটি তার জ্বলন্ত স্বাক্ষর ৷ নিজের কথা জানাল ৷ আঠারো বছর বয়সে বিয়ে করেছিল ভুল মানুষকে ৷ চার সন্তানের জননী হয়েও নিস্তার পায়নি ৷ প্রতিদিন প্রহৃতা হয়েছে স্বামীর হাতে ৷ বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে হয় প্রথমে নিজের গোষ্ঠী সংসদের কাছে, সেখানে সাত বছরের ওপরে সন্তানের ওপর মায়ের কোনও অধিকার নেই ৷ উপার্জন না করা মায়ের অধিকার নেই কোনও সন্তানকেই কাছে রাখার ৷ মদ্যপ স্বামীর অবহেলায় যখন চার বছরের ছেলে তৌকা জলে ডুবে মারা গেল দেলফিন সরকারি কোর্টে বাকি তিনজনকে ফিরে পাওয়ার আবেদন জানিয়ে কাছে এনে মানুষ করে তুলছে ৷ নিজে কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছে এই ঝড়ঝাপটের মধ্যে ৷ শিশু ও নারী অবহেলিত ৷ তারা ডিম খেতে পাবে না, বিষাক্ত সাপ দামি খাবার এখানে ৷ গোষ্ঠীপতি, স্বামী ও পুরোহিতকে দিয়ে অন্য পুরুষেরা তার অংশ পাবে, মেয়েরা বা শিশুরা কখনওই নয় ৷

ফরাসি দেশের বিখ্যাত টেনিস খেলোয়াড় ইয়নিক নোয়া ক্যামেরুনের ছেলে ৷ মা ফরাসি ৷ বাবার কাছেই তার টেনিস খেলার হাতেখড়ি ৷ সেখানে গেলাম ৷ বিশাল বাগানঘেরা সাজানো বাড়িতে তিনি সমাদরে বসালেন ৷ ছেলেকে নিয়ে পিতা গর্বিত, একই সঙ্গে দুটি মেয়ের সম্বন্ধেও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ৷ আইডিয়া পাল্টাচ্ছে ফিসফিসিয়ে দেলফিনকে বললাম ৷

সন্ধেয় নেমন্তন্ন ছিল শিক্ষাসচিব মসিয় মুলাঁর বাড়ি ৷ তাঁর এক ছাত্র অঙ্কে ডক্টরেট উপাধি পেয়েছেন, তাঁরই সম্বর্ধনায় ৷ প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনজন জুরি এসেছেন ৷ বিশাল বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা ৷ ঝকঝকে বাড়ি, অথচ সামনে লাল রঙের কাঁচা রাস্তার গর্তে বৃষ্টির জল জমে আছে ৷ পেরনো মুশকিল ৷ অভ্যর্থনা করে ভেতরে নিয়ে গেল ৷ এলাহি কারবার ৷ খাওয়ার টেবিলে কত অজানা খাবার ৷ সাপের কোনও তরকারি থাকলে মেয়ে হিসেবে আমার পাতে পড়বে না, এই ভেবে যা সান্ত্বনা ৷ বিভিন্ন প্রদেশের আলাদা রান্নার স্টাইল ৷ মাদাম মুলাঁ উত্তর পশ্চিমের মেয়ে ৷ স্পেশ্যাল খাবার হল সবজি Kwem ৷ মানিয়কের পাতা জলে সেদ্ধ করে বেঁটে মণ্ড তৈরি করেছেন, জানালেন খুব পুষ্টিকর, গায়ে জোর আনে, দীর্ঘ জীবন লাভ হয় ৷ তাঁর প্রদেশের শতকরা আশিজনের মূল খাদ্য ৷ সঙ্গে কাঁচা কলা ভাজা, মাকাবো বা আলু টুকরো করে সেদ্ধ ৷ ইয়ায়ুন্দের খাবারও ছিল ৷ Ntomba nam, বাটা চিনাবাদাম দিয়ে মাছ ও মাংস মাখানো হয় তারপর কলাপাতায় মুড়ে রান্না ৷ পাতুরি বলে ডাকব? দারুণ খেতে ৷ টাটকা সিরিউল মাছ কালো সসে রান্না করা-চারা পোনার স্বাদ ৷ Ndole (দোলে), মাংসের কিমা দেওয়া শাক ৷ এল miondo ৷ রান্না করতে ধৈর্য চাই ৷ মানিয়কের (বনে দেখেছি তেঁতুল ছড়ার মতো ঝুলে থাকতে) খোসা ছাড়িয়ে তিন চারদিন হাঁড়ির জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে নরম করার জন্য, কষ দূর করার জন্য ৷ তারপর বারবার জলে ধুয়ে হাতে চিপে জল বার করে মিহি করে পিষে সাদা ময়দার মতো মাখা আর গোল করে কেটে কচি কলাপাতায় মুড়ে রাখতে হয় ৷ গরম বা ঠান্ডা যার যেমন পছন্দ কেটে খাও ৷ ভাতও ছিল ৷ শেষ পাতে মিষ্টি আম, কলা, আনারস ৷ খাওয়ার মধ্যেই বারবার ধন্যবাদের হরির লুঠ, বাইবেল থেকে প্রার্থনা আবৃত্তি বহুক্ষণ চলল ৷ রাত বারোটায় বন্ধু গি ও তার নৃতত্ববিদ স্ত্রী আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিচ্ছেন যখন, মনে হল সুনসান শহরে মরণের ফাঁদ বাড়িটার একটা ঘরে আলো জ্বলছে ৷

পৃথিবীর ছোট মানুষদের দেখতে বেরিয়েছি ৷ আলফনসো জানিয়েছিল পুরো একটা দিন হাতে পেলে সে দেলফিন সহ আমাকে রাজধানী থেকে অনেক দূরে গিনি উপকূল ও গ্যাবনের সীমারেখার কাছে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যেতে পারে পিগমিদের দেখা পাওয়ার জন্য ৷ আমরা আজ সেই পথে চলেছি ৷ গাড়ি ভর্তি তেল নেওয়া হল ৷ ওপর মহলে তেমন করে খবর দেওয়া হয়নি ৷ যদি বাধা পড়ে! হাট থেকে কিনলাম কয়েক বস্তা নুন, গোটা তিরিশেক সাবান, সিগারেটের প্যাকেট, দেশলাই, লজেন্স, প্যাকিং বাক্স ভর্তি রুটি ৷ না, বনে বাস করার রসদ নয় ৷ ছোট্ট মানুষদের জন্য সামান্য উপহার ৷ খোলা বাজারে শাকসবজি, ফল রঙের বাহারে ঝলমলে ৷ ময়দার গোলা জিলিপির মতো ভাজা হচ্ছে ৷ সঙ্গী দুজন মনের আনন্দে গরম এক এক প্যাকেট হুসহাস ওড়াল ৷ এবার চলেছি দক্ষিণে সাংমেলিমা অঞ্চলের দিকে ৷ জুম শহর পর্যন্ত রাস্তা ভালো ৷ দুধারে ছোট ছোট গ্রাম সবুজে সবুজ ৷ বৃষ্টি এল তোড়ে ৷ নিও নদী পেরলাম ৷ বৃষ্টি আটকাতে কলাপাতায় মাথা ঢেকে চলেছে স্কুলের পথে ছেলেমেয়েরা ৷ রাস্তায় পচা শিম্পাজি জলে ভিজছে ৷ ছোট্ট ব্রিজের নিচে সরু নালায় ট্রাক পড়ে আছে ৷ পোড়া মাছ বিক্রির জন্য বাঁশের ডগায় ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একা একজন ৷ আলফনসোর গাঁ এবোলা পেরলাম ৷ আগে ওকে এখানে বাস থেকে নেমে হাঁটতে হত ত্রিশ কিলোমিটার, বাড়ি পর্যন্ত ৷ এখন বাড়ির সামনে বাস থামে ৷ শুধু গাঁয়ে আসার সময় মেলে না ৷ অঙ্গুলি নির্দেশে দূরে একটা ভাঙা চালার দোকান দেখিয়ে জানাল, ওখান থেকে বাবার হাত ধরে ওর পনেরো বছর বয়সে প্রথম জুতো কেনার কথা, সেই নতুন জুতোর গন্ধ এখান দিয়ে গেলেই ওর স্মৃতিতে ভেসে আসে ৷ জুম পেরতেই ঝুপ করে লাল মাটির উঁচু নিচু কাঁচা রাস্তা, বৃষ্টি হয়ে গেছে ৷ পিছল পথ খানাখন্দ পেরিয়ে দুধারে আফ্রিকার ঘন জঙ্গল পাশে রেখে গাড়ির তরঙ্গময় গতি ৷ অনেকটা পথ পেরলাম ৷ কাঠের গুদাম, টিনের চালা ৷ পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে লরি ভর্তি সাপেলি, আবলুস আর লাল টুকটুকে দীর্ঘ গাছের কাঠের গুঁড়ি ৷ কাঠ দেশের প্রধান বাণিজ্য পণ্য ৷ বাদাম খেত, লিবি, আবুঙ্গা আরও কয়েকটি গ্রাম পেরিয়ে এখন গভীর জঙ্গলে ঢুকছি ৷ দুধারে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ মিটার লম্বা গাছ দাঁড়িয়ে ৷ বাওয়াব গাছ দেখিয়ে দেলফিন জানাল, ‘দেশের পবিত্র বৃক্ষ ৷ এখানে কেউ কোনও বিষয়ে দক্ষতা দেখালে বলা হয় উরে বাবা, একেবারে বাওয়াব গাছ যেন ৷’ গাছেরা এ ওর উঁচু মাথা ছুঁয়ে দাঁড়ানো ৷ আকাশ দেখতে পাচ্ছি না ৷ জঙ্গলে এক আশ্চর্য গা ছমছম করা নৈঃশব্দ্য ৷ ঘন সবুজে রঙিন ফুলের ফুটকি ৷ আকাশ চুইয়ে কখনও সূর্যের আলোর ক্ষীণ রেখা ৷ মাটি থেকে সোঁদা গন্ধ ভেসে আসছে ৷ বন না গুহা! দম বন্ধ ভাব ৷ ছ কিলোমিটার হাঁটলে গরিলার দেখা পাওয়া যাবে জানাল আলফনসো ৷ কোনও সাধ নেই ৷ এক কিলোমিটার দূরে চোখে পড়ল পিগমিদের ক্ষণবসতি পাতার ঝুপড়ি, যাতে কালকেই অন্য কোথাও আরও গভীর জঙ্গলে চলে যেতে পারে বাড়ির তোয়াক্কা না করে ৷ এই বিশাল বনের মালিক যেন ছোট মানুষেরা ৷ দেশের প্রাচীনতম বাসিন্দা ৷ সরকার চেষ্টা করছেন তাদের বিচ্ছিন্নতা থেকে সরিয়ে এনে গাঁয়ের ধারে কাছে বাসা বেঁধে দিতে ৷ সফল হওয়া কঠিন ৷ কয়েকটি পর্ণকুটির এলোমেলো ছড়ানো ৷ দলপতি একা বসে আছে ৷ আলফনসোর প্রশ্নে জানাল, সবাই এখন বনে আহার্য আহরণে বেরিয়েছে ৷ একটা বড় বাওয়াব গাছের নিচে দাঁড়িয়ে সে শিস দিয়ে উঠল ৷ বনের নিস্তব্ধতা চিরে উঁচু গাছের সারির ওপর দিয়ে ডাক ভেসে গেল ৷ অল্প কিছুক্ষণ পরেই বনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখছি দলের অন্যান্য সদস্যদের ৷ কী সহজ চলাফেরা! বন থেকে শিকার করে ফিরছে ৷ রোদে পোড়া ক্লান্ত মুখ ৷ আমি কোনও উপহার এনেছি কিনা, টাকা দেব কিনা এসব কিছু না জেনেই মেয়েরা কোমরে গুঁজে নিল ফার্ন পাতার অলঙ্কার, ছেলেরা মাথা ঘিরে পরল বিনুনি করা ঘাসের শিষ ৷ কাঠের গুঁড়ির ওপর চামড়া লাগিয়ে তৈরি ড্রাম ৷ দ্রিমিদ্রিমি ঢাকের মতো আওয়াজের তালে ওরা নাচছে ৷ আমরা সবাই ওই আনন্দ উৎসবে যোগ দিলাম ৷ মেয়েরা গাইছে-

‘মাম এ এ ও মা মা ইয়া ইয়া ও

মামা লে কো বাবা লেকো

লু তা লু তা ইয়া ও ও ও…

লু তা লু তা ইয়া ও ও ও…’

হাততালি দিয়ে একই সুরের গান আর সারি দিয়ে নাচ ৷ হঠাৎ বৃষ্টি এল ৷ আমরা পাতার কুটিরে এ-কোণে ও-কোণে মাথা বাঁচাতে দাঁড়াচ্ছি ৷ বাড়ির ছাদে ফুটো, শালপাতার মতো দেখতে পাতা কাঠি দিয়ে ফুটিয়ে সারাবার চেষ্টা করছে ৷ ওদের চালা ঘরে জ্বালা আগুন ঘিরে দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলছিলাম আর মনে হচ্ছিল নাগরিক সভ্যতা কত দূরে ৷ বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ৷ আগুনের ধুনি থেকে ভ্যাপসা তাপ উঠে আসছে ৷ হাতে হাতে ঘুরে যাচ্ছে আমাদের আনা উপহার সিগারেট ৷ একটি মেয়ে তেকে ফল ভাঙছে, কানে গলায় কাঠের গয়না ৷ তেকে থেকে তৈরি হবে ভেষজ তেল ৷ মা ছেলেকে বুকের দুধ দিচ্ছে, দুজনের পা ভর্তি খোস পাঁচড়া ৷ তেকে তেল মাখলে সারবে ৷ বুতাঙ্গার হাঁটুতে বিরাট ক্ষত, বয়স্ক পুরুষ সবুজ পাতার গুঁড়ো ছড়িয়ে দিচ্ছে তার ওপর বিশল্যকরণীর মতো ৷ বুতাঙ্গাকে ভেবেছিলাম কিশোর ৷ আসলে সে তিন সন্তানের পিতা, পূর্ণ যুবক ৷ এরকম অনেক বিস্ময় জমা হল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৷ সেদিন ওদের শিকারের ঝুড়িতে ছিল চাক ভাঙা সামান্য মধু ও একটি শীর্ণ মৃত সরীসৃপ ৷ কুড়িটি পেট ভরাতে হবে ৷ আমাদের উপহার রুটি ও অন্যান্য খাবার পেয়ে খুব খুশি ৷ উচ্ছ্বাস নেই ৷ আরও ভালো লাগল ৷ দেশলাই তো ওদের কাছে পরম সম্পদ ৷ তাই খুব যত্নে রাখল ৷ যেখানেই যাক আগুন ওদের প্রিয় সঙ্গী ৷ সারাদিন বনে কাটায় খাদ্যের খোঁজে ৷ নাগরিক মানুষ এদের খুঁজতে আসে বনে ৷ কেউ কেউ আসে রান্নার বাসন বা জামাকাপড় বিক্রি করতে ৷ বিনিময় মুদ্রা ভেষজ ওষুধ যার খোঁজ জানে শুধু বনের খুদে মানুষেরা ৷ তাছাড়া চাক ভাঙা মধু, শিকারের ফসল লোভনীয় খাবার-বাঁদর, শিম্পাজি, সজারু, অজগর সাপ ইত্যাদি ৷ পিগমিরা নাগরিক পোশাকে আচ্ছাদিত কেন এখন বুঝতে পারলাম ৷ জরাজীর্ণ জামাকাপড়, কিন্তু আবৃত ৷ এদের দেখা পাওয়া খুব কঠিন ৷ কখন কোথায় চলে যাবে নিজেরাই জানে না ৷ তাই নিজের কপালকে নিজেই সাধুবাদ দিলাম ৷ ফিরছি জঙ্গল ছেড়ে শহরের পথে ৷ দেখি রাস্তায় শিকারের পসরা সাজিয়ে বসেছে কয়েকজন ৷ বাঁদর, পাইথন, হরিণ, বিষাক্ত সাপ কী নেই! ছবি তুলতেই সাংঘাতিক চেঁচামেচি! এক রমণী তো এই মারে সেই মারে ৷ দেলফিন আমার হাত ধরে গাড়ির দিকে ছুটল ৷ পরে শুনলাম ছবি তোলাতে ওদের ভীষণ আপত্তি ৷ ছবির মাধ্যমে আত্মা চুরি করে ওকে মেরে ফেলে অন্য দেশে আমি তাকে ক্রীতদাস বানিয়ে কাজে লাগাতে পারি এই বিশ্বাস অনেকের ৷

দুদিন পর আমরা বড় শহর দুয়ালা গেলাম ৷ উরি নদীর কোল ঘেঁসে বন্দর শহরে সবসময় কর্মচাঞ্চল্য ৷ অনেকদিন আগে মধ্য আফ্রিকার বান্টুরা বসতি বাঁধে ৷ এখন নানা জাতি উপজাতি, বিদেশি বণিক ভিড় জমিয়ে শহর গুলজার করে রেখেছে ৷ আলফনসো ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে হাটবাজার, মুখোশের পসরা, মাছের ভেড়ি ৷ বোনাকুয়ামাং পাড়ায় আম্রকুঞ্জের কাছে দাঁড় করিয়ে ভুতুড়ে কাহিনী শোনাল ৷ মৃত্যু প্রায় সব গল্পের প্রাণবিন্দু ৷ কোনও এক সময় এক ইউরোপিয়ান ব্যবসায়ী লোকজন জুটিয়ে গাছ কেটে প্রাসাদ তৈরি করবে ঠিক করেছিল এখানে ৷ গাছেরা ডালপাতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে খুন করে তাদের ৷ চারদিকে নিষেধের বেড়া দেওয়া ৷ উরি নদীতে গিয়ে মিশছে তিরতিরে বোপি নদী ৷ গরম বেশ ৷ জলে পা ছোঁয়াতে যাব আলফনসো বাধা দিয়ে বলে উঠল, ‘সর্বনাশ! কোনও রহস্যময় কারণে কেউ জলে নামলেই ডুবে মরে এখানে ৷’ শহর ছেড়ে বাঁদর-বনের পাশ দিয়ে চলেছি তোকোতো ঝরনার দিকে ৷ সেখানে নীল রঙের ‘পুরোহিত হ্রদে’ ঝাঁকে ঝাঁকে মাছেরা খেলা করছে ৷ কেউ ধরে না ৷ কবে নাকি এয়োন্ডোর মেয়েরা দল বেঁধে মাছ ভর্তি হ্রদে আহ্লাদে ডুব দেয় কোঁচড় ভরে মাছ ধরবে বলে ৷ শান্ত হ্রদের নিচে সলিল সমাধি তক্ষুনি ৷ এখানেও পা ভেজানো যাবে না ৷ আলফনসোর মতো ক্যামেরুনের অনেকেই এসব কাহিনী বিশ্বাস করে ৷

দক্ষিণ-পশ্চিমে বুয়া ও লিম্বে শহরের দিকে ক্যামেরুন পাহাড়ের আগ্নেয় বিস্ফোরণ দেখতে চলেছি ৷ একদিকে অতলান্তিক সাগর সাদা ফেনার মুকুটে তীরে আছড়ে পড়ছে, অন্য দিকে পাহাড়চূড়ায় ক্র্যাটারে আগুন আর ধোঁয়া ৷ হোটেল মাউন্টেন হিলে জায়গা পেলাম ৷ জানলা থেকে দেখতে পাচ্ছি আগুনের ধোঁয়া ৷ রাতে গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম আগ্নেয়গিরির পায়ের কাছে ৷ লাভার জ্বলন্ত স্রোত গড়িয়ে নেমে আসছে উঁচু থেকে ৷ গাছে ডালে পাতায় আগুন ঝাঁপাচ্ছে আর আমরা ছ-সাত মিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছি রাতের অন্ধকারে ৷ আলো শুধু পাহাড়ের ক্র্যাটারে ৷ দিনে আবার গেছি ৷ লিবের আগ্নেয়গিরি আজ সকালে উন্মাদ ৷ তরল কমলা রঙের লাভা গড়িয়ে দ্রুত এগিয়ে আসছে ৷ পাথর জ্বলতে জ্বলতে কী ভীষণ আওয়াজ করে ছিটকে পড়ছে! ক্র্যাটারের হাঁ মুখে গনগন আগুন-জ্বলে যাচ্ছে তালের বন, রাবার খেত, গরিব গাঁ ৷ আগুনের হলকায় মুখ তেতে উঠছে ৷ বাতাসে পোড়া গন্ধ ৷ বারবার তাড়া দিচ্ছে ফেরার জন্য ৷ যে কোনও মুহূর্তে লাভা গ্রাস করে নিতে পারে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সে টুকু দূরত্ব ৷ বাকুঙ্গিনি, পতোপতো গাঁ আগুনের চাবুকে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ৷ লাভা স্রোত সমুদ্র পর্যন্ত গড়িয়ে আসার অশুভ সম্ভাবনা আছে ৷ তাই গাঁয়ে ঘরে ওঝারা পুজোআর্চা করছে ৷ অগ্নি পাহাড়ের দেবতা ‘এফাসো মতো’ ত্রুদ্ধ হয়েছে নানা কারণে ৷ টিকা গাঁয়ে গিয়ে দেখি ওঝারা পড়ছেন ঈশ্বরের রথকে শান্ত করার মন্ত্র ৷ সামান্য দূরে অগ্নিরথের বহ্নিশিখা দপদপ করে জ্বলছে ৷

ভ্রমণ অক্টোবর, ১৯৯৯

সকল অধ্যায়

১. অর্ধশতাব্দীর আগের বদ্রীনাথ যাত্রা – প্রতাপকুমার রায়
২. মানস অভয়ারণ্য – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩. জলদাপাড়া অরণ্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪. জলের ধারে ঘর – নবনীতা দেব সেন
৫. জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির – উষা সেন
৬. তাহিতি – হরপ্রসাদ মিত্র
৭. মার্কন্ডেয় গঙ্গার উত্স সন্ধানে – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮. কেদার বদ্রী – মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
৯. তেহরানি হয়রানি – অমিতাভ চৌধুরি
১০. শোনপুরের মেলায় – বরুণ দত্ত
১১. এলেম নতুন দেশে – কমলা মুখোপাধ্যায়
১২. মস্কো থেকে সাইবেরিয়া হয়ে পিকিং – গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩. পাতাল-ভুবনেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
১৪. ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ
১৫. নিকোবরের দ্বীপে – তিলকরঞ্জন বেরা
১৬. তিরতিরে নদী আর শাল জঙ্গলের দেশে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭. আমার ভ্রমণ – মহাশ্বেতা দেবী
১৮. সুন্দরবন – হীরক নন্দী
১৯. ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত
২০. সাইকেলে পাঁচ বছরে ভূ-পর্যটন – ভূপর্যটক বিমল দে
২১. আঙ্কোর ভাট – প্রীতি সান্যাল
২২. হিমালয়ের সাতকাহন – ত্রিদিব বসু
২৩. স্বপ্নের পথেই যাওয়া যায় – মহাশ্বেতা দেবী
২৪. ছোট কৈলাস – সুভাষ দত্ত
২৫. বালতাল হয়ে অমরনাথ – প্রতাপকুমার রায়
২৬. মধ্য এশিয়া অভিযান – গৌতম ঘোষ
২৭. পথ হারিয়ে সিকিমের জঙ্গলে – রতনলাল বিশ্বাস
২৮. নতুন করে পাব বলে – বন্দনা সান্যাল
২৯. সেবার ব্রেকজার্নি করে – জয়া মিত্র
৩০. চন্দ্রভাগার উৎস চন্দ্রতাল সুর্যতাল – সুনীলকুমার সরদার
৩১. ওঙ্কারেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
৩২. সুন্দরবনে দুদিন – পবিত্র সরকার
৩৩. মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়
৩৪. দিকবিদিকে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৫. তিস্তানদীর উৎসে – শরৎ ঘোষ
৩৬. পশ্চিমে হাওয়াবদল – মধুপর্ণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৭. এক টুকরো নীল চাঁদ – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৩৮. কালিম্পং থেকে তিব্বত – অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
৩৯. সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু
৪০. মির্জা শেখ ইতেসামুদ্দিনের বিলেত যাত্রা এবং আমি – নবনীতা দেব সেন
৪১. বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
৪২. গানতোক থেকে ইয়ুমথাং – সুতপা ভট্টাচার্য
৪৩. ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল
৪৪. ডুয়ার্সের দুয়ার এখন খোলা – সমরেশ মজুমদার
৪৫. ইউরোপে দিন কয়েক – পূর্ণেন্দু পত্রী
৪৬. রামচন্দ্রের বনবাসের পথ পরিক্রমা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. আসমুদ্রককেশাস – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
৪৮. নিরলংকার ভ্রমণ – শঙ্খ ঘোষ
৪৯. চেঙ্গিস খানের দেশে – প্রতাপকুমার রায়
৫০. মিজোরামের নীল পাহাড়ে – দীপঙ্কর ঘোষ
৫১. সিন্ধুদুর্গ – বিশ্বদীপ দত্ত
৫২. জিম করবেটের জঙ্গলে – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩. থর মরুভূমিতে ট্রেকিং – শিবনাথ বসু
৫৪. মরোক্কো ভ্রমণ – হরপ্রসাদ মিত্র
৫৫. ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ – নবনীতা দেব সেন
৫৬. গন্তব্য মাচুপিচু – প্রতাপকুমার রায়
৫৭. কই যাইত্যাছি জানি না – শঙ্খ ঘোষ
৫৮. পারাংলা অভিযান – সুনীলকুমার সরদার
৫৯. পুশকিন, মলদভা আর কচি পাতার বাঁশিতে মোত্সার্ট – প্রীতি সান্যাল
৬০. আমাদের ছোট নদী : পার্বতী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬১. দেবলোকের পথে পথে – অশোক চক্রবর্তী
৬২. না-ভ্রমণের বৃত্তান্ত – আশাপূর্ণা দেবী
৬৩. এভারেস্টের পাদদেশে যাত্রা – কমলা মুখোপাধ্যায়
৬৪. নীল নদে পাঁচদিন – হরপ্রসাদ মিত্র
৬৫. বারাণসীর ঘাটের কথা – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৬. বালফাক্রমের পাহাড়-জঙ্গলে – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৬৭. গৌরীগঙ্গার উৎসব মিলাম হিমবাহ – পুরুষোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৮. মরুভূমির দিনরাত্রি – পবিত্র সরকার
৬৯. ঢাকা : একুশ বছর পর – অন্নদাশঙ্কর রায়
৭০. ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
৭১. ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউ – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৭২. কালিন্দী গিরিবর্ত্ম – রথীন চক্রবর্তী
৭৩. একযাত্রায় ভোরামদেরও আর কানহা – হীরক নন্দী
৭৪. মদমহেশ্বরের ডোলিযাত্রা – কাজল দত্ত
৭৫. কেনিয়ায় পাঁচ অরণ্য – প্রতাপকুমার রায়
৭৬. কোনাডা থেকে রেভুপাল ভরম – রতনলাল বিশ্বাস
৭৭. চাঁদের দেশ লাদাখ – কমলেশ কামিলা
৭৮. বোকের তোভ, ইজরায়েল – নবনীতা দেব সেন
৭৯. বিষ্ণুপুর মুকুটমণিপুর – হরপ্রসাদ মিত্র
৮০. ডোকরিয়ানি বামক – অনিন্দ্য মজুমদার
৮১. তাওয়াং থেকে তাসি-চু জং – কমলা মুখোপাধ্যায়
৮২. মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল
৮৩. আকাশচূড়ায় অভিযান – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮৪. ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ
৮৫. সারেঙ্গেটির জঙ্গলে – হরপ্রসাদ মিত্র
৮৬. এবারের কুম্ভমেলায় – চিন্ময় চক্রবর্তী
৮৭. অন্য পথের পথিক – বুদ্ধদেব গুহ
৮৮. গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়
৮৯. নিশীথ সূর্যের দেশ – প্রতাপকুমার রায়
৯০. সবুজ নামদাফাতে – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
৯১. পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু
৯২. গোঁসাইকুণ্ড – কমলা মুখোপাধ্যায়
৯৩. অমরকন্টক – হীরক নন্দী
৯৪. আদিম ডুয়ার্সের আধুনিক রূপকথা – সূর্য ঘোষ
৯৫. পার্বতী উপত্যকায় সার পাস – বিদ্যুৎ দে
৯৬. মিয়ানমার, ইরাবতীর সঙ্গে – পবিত্র সরকার
৯৭. রূপসী রিশপ – হীরক নন্দী
৯৮. হিমবাহের জন্মভূমিতে – শেখর ভট্টাচার্য
৯৯. ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার
১০০. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত – হরপ্রসাদ মিত্র
১০১. বক্সা দুর্গ – টুটুল রায়
১০২. সিন্ধু নদের ধারে – রতনলাল বিশ্বাস
১০৩. মেঘালয়ের দাউকি – সুমিত মুখোপাধ্যায়
১০৪. আমাদের ছোট নদী : লিডার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০৫. লাসা – সমীর রায়
১০৬. ২ নম্বর লোভালোয়া স্ট্রিট – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
১০৭. অযোধ্যা পাহাড় – বিশ্বদীপ দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন