সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু

অমরেন্দ্র চক্রবর্তী

সারা পৃথিবীতে হাতে গোনা যে কটি রেনফরেস্ট আছে সাইলেন্ট ভ্যালি তার অন্যতম ৷ দক্ষিণ ভারতের এই বনের বয়স নাকি পঞ্চাশ লাখ বছর ৷ মানুষের জন্মের বহু আগে এই অরণ্য তিল তিল করে তৈরি হয়েছিল ৷ সাইলেন্ট ভ্যালি ছাড়া পঞ্চাশ লাখ বছরের অরণ্য সারা পৃথিবীতে মাত্র ওই চারটেই আছে ৷ এই ভ্যালিতে এমন ধরনের গাছ আছে যা সারা পৃথিবীতে একটাই ৷ হাজার-লক্ষ বছরের ফসিল, পোকামাকড়, জীবজন্তুর আশ্রয় এই সাইলেন্ট ভ্যালি ৷ জীবন্ত এক গবেষণাগার বললেও ভুল বলা হয় না ৷ তবে এই সাইলেন্ট ভ্যালিতে কেউ যায় না ৷

অ্যাডভেঞ্চারের লোভেই একদিন ভিড়ে পড়ি একটা নেচার সংস্থার সঙ্গে ৷ বিপদসঙ্কুল এই পথে কী হতে পারে বা কী হয় না জেনেই রাজি হয়েছি ৷ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি মাদ্রাজ থেকে নীলগিরি এক্সপ্রেসে কোয়েম্বাটুর হয়ে মেট্টুপোলিয়াম এলাম ৷ তারপর টয়ট্রেনে উটি বা উটকামন্ড ৷ সাহেবদের আদরের নাম এখন হয়ে গেছে উধাগামণ্ডলম ৷ দক্ষিণের জনপ্রিয় শৈলশহর ৷ পূর্ব ও পশ্চিমঘাটের সংযোগ জুড়ে নীলগিরি ৷ ধূসর খামে মোড়া নীলগিরির তামিলনাড়ুতে এই উটি ৷ লাভাডেল, ওয়েলিংটন সব সাহেবি স্টেশন পার হয়ে নীল রঙের টয়ট্রেনে চেপে নীলগিরির পথে শেষে কুন্নুর হয়ে উটি বা উধাগামণ্ডলম ৷ উচ্চতা ২,২৪০ মিটার ৷ হাল্কা ঠান্ডা ৷ উটি আমাদের আসতে হয়েছে ডি এফ ও নীলগিরি সাউথ ডিভিশনের কাছ থেকে সাইলেন্ট ভ্যালি যাবার অনুমতিপত্র নিতে ৷ কথা বলতে হবে ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেনের সঙ্গে ৷ কলকাতা থেকে অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল অনুমতিপত্রের জন্য ৷ কিন্তু কিছুই উত্তর পাওয়া যায়নি ৷ সাক্ষাতে সব বুঝিয়েও শেষরক্ষা হল না ৷ আমাদের পরিকল্পনা ছিল, আমরা তামিলনাড়ু থেকে সাইলেন্ট ভ্যালিতে ঢুকব ৷ তারপর সিসপারা পাস পার হয়ে কোর এরিয়ার পথে ৷ শেষে কেরালার মুককালি দিয়ে পালঘাট ৷ ওদের মতে, সাইলেন্ট ভ্যালিতে কারোর যাওয়া উচিত নয়, কারণ, প্রথমত, সাইলেন্ট ভ্যালিকে বলা হয় ল্যান্ড অব কিং কোবরা ৷ দ্বিতীয়ত, এখন ফায়ার থ্রেট পিরিয়ড অর্থাৎ আগুন লাগার সময় ৷ অনুমতিপত্র দেওয়া যাবে না ৷ কিন্তু আমরাও নাছোড়বান্দা ৷ তিনদিন ধরে উটিতে চলল নানান কথাবার্তা ৷ শেষে আমাদের অদম্য ইচ্ছে দেখে যেখান থেকে সাইলেন্ট ভ্যালির কোর এরিয়া দেখা যায় সেই সিসপারা পাস পর্যন্ত যাবার অনুমতি মিলল ৷ আর অনুমোদিত গাইড নিতে হবে এবং সমস্ত দায়িত্ব নিজেদের-এই শর্তে ৷ কিন্তু মুশকিল হল, গাইড বা পোর্টার কেউই ওই পথে যাবে না ৷ অন্য বনে যাবে কিন্তু সাইলেন্ট ভ্যালিতে নয় ৷ আরও একদিন কেটে গেল ৷ কিন্তু গাইড জোগাড় হল না ৷ যাই হোক, শেষে একজন গাইডের খোঁজ পাওয়া গেল ৷ নাম মিঃ শিলভন ৷ কেরালা খ্রিস্টান ৷ কথাবার্তা ইংরিজিতেই ৷ শিলভন সাহেবদের সঙ্গে সার্ভে করার সময়ে সাইলেন্ট ভ্যালিতে ছিল ৷ পরে পুনার একটা সমীক্ষা দলকেও ওই পথে নিয়ে গিয়েছে ৷ তিনজন পোর্টার সঙ্গে করে ও কাল আসবে ৷ সকালে কাঁচা বাজার, চাল-ডাল সব কেনা হল ৷ উটি রেলস্টেশনের কাছেই বাসস্ট্যান্ড ৷ আমরা যাব আপার ভবানী ৷ একটাই বাস বিকেল সাড়ে তিনটেয় ৷ ঘণ্টাচারেক সময় নেয় ৷ কিছুক্ষণ বাসের জন্য লাইনও দিতে হল ৷ নীলগিরির বিস্তীর্ণ চা-কফি বাগান পেরিয়ে এক আরণ্যক পরিবেশের মধ্যে সন্ধে সাড়ে সাতটায় আপার ভবানীতে বাস এসে থামল ৷ হাজার পাঁচেক ফুট উচ্চতা আপার ভবানীর ৷ কনকন করে ঠান্ডা হাওয়া বইছে আপার ভবানী পাহাড়ের ওপরে ৷ সামান্য দু-চার ঘর মানুষের বাস ৷ সবই মোটামুটি বনদপ্তরের ৷ বাসস্ট্যান্ড থেকে গেস্টহাউসটা একটু দূরে ৷ আমরা ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ডের একজনের কোয়ার্টারে উঠলাম ৷ খরচ নেই ৷ আর রান্না তো নিজেরাই করব ৷ রাতটুকু ওখানে কাটিয়ে সকাল ৮টায় শুরু হল তামিলনাড়ুর দিক থেকে সাইলেন্ট ভ্যালির পথে ট্রেকিং ৷ ভবানী নদীর বাঁধের ধারে আপার ভবানীর গেস্টহাউস ৷ দারুণ জায়গা ৷ গেস্টহাউসের ভেতর দিয়েই চলে গেছে সাইলেন্ট ভ্যালির রাস্তা ৷ গার্ড পারমিশন দেখতে চাইল ৷ এছাড়া ন্যাশনাল পার্কে প্রবেশমূল্য ছাড়াও ক্যামেরা বাবদ কিছু দিতে হয়েছে ৷ নীলগিরি সাউথ ডিভিশনের ১৭৫ টাকার একটা রসিদ ছিল ৷ কতদিন থাকব ওতে বলা আছে ৷ সবকিছু দেখে বাঁধের ছবি না তুলে এগিয়ে যেত বলল আমাদের ৷

শুরু হল পথ চলা ৷ প্রথমদিকের জঙ্গল পর্ণমোচী ৷ পাহাড়ি জঙ্গলের নৈসর্গিক দৃশ্য ৷ কিছুটা রুক্ষ ৷ ফেব্রুয়ারিতে ঝরাপাতা উড়ছে চারধারে ৷ সিগারেট খাওয়া একেবারেই বারণ ৷ আবহাওয়া বেশ মিষ্টি ৷ অনবরত পাখির ডাক ৷ কাঁচা রাস্তায় মাঝে-মধ্যে হাতি আর বাঘের পায়ের ছাপ ৷ যদিও সিসপারা পাস পার হলেই মূল সাইলেন্ট ভ্যালি শুরু ৷ অরণ্য ক্রমশ গভীর হচ্ছে ৷ হঠাৎ আস্তে আস্তে সব কুয়াশায় ঢেকে গেল ৷ কিছুই দেখা যাচ্ছে না ৷ হোয়াইট আউট ৷ গা ছমছম করা পরিবেশ এক মুহূর্তেই যেন তৈরি হয়ে গেল ৷ ওরই মাঝে এক রুক্ষ পাহাড়ের কোলে ভবানীপূজা নামে এক জায়গায় থেমে মধ্যাহ্নভোজন ৷ আস্তে আস্তে আবার কুয়াশা কেটে গেল ৷ বেশ পরিষ্কার জায়গা ৷ রান্না হবার ফাঁকে জানলাম কলকাতা থেকে একটা দল একবার সিসপারা পাস পর্যন্ত যাবে বলে এসেছিল ৷ এখানে এক চিতার সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ায় দল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ৷ তাদের মধ্যে থেকে একজনকে পাওয়া যায় প্রায় তিনদিন পর ৷ পথ হারিয়ে প্রায় তিনদিন তিনি ছিলেন জঙ্গলে ৷

খাওয়ার পর আবার পথ চলা ৷ আমরা আজ প্রায় ১৭ কিলোমিটার যাব ৷ জায়গার নাম নাডুগানি ৷ ঘনঝোপ আর গুল্মজাতীয় গাছ পেরিয়ে চলা ৷ অসংখ্য ঝোপঝাড় ৷ বেশ চলতে অস্বস্তি হচ্ছে ৷ জানি না চিতার গল্প শুনে কিনা ৷ ঘণ্টাআষ্টেক হাঁটা হয়ে গেল ৷ শেষে এক বিশাল বুশ এরিয়া পেরিয়ে সবুজ ভ্যালি ৷ সামনেই নাডুগানি পিক ৷ আজ এখানেই শেষ ৷ রাস্তা ছেড়ে শিলভন মালপত্তর সব বুশের ভেতর নিয়ে গেল ৷ বলল, বাইরে জানোয়ার চলার সোজা রাস্তা ৷ তাই আমরা একটু বুশের ভেতরেই থাকব জায়গাটা একটু পরিষ্কার করে ৷ টেন্টও এখানে ফেলতে সুবিধা ৷ আর আমরা পাথরের তলায় আগুন জ্বালব ৷ রান্না করব ৷ রাতে অবশ্য শোব না ৷ ওখান থেকেই আপনাদের পাহারা দেব ৷

দূরে কয়েকটা সম্বর দেখতে পেলাম ৷ আকাশ লাল হচ্ছে ৷ শিলভন কফি আর চিঁড়েভাজা দিয়ে গেল ৷ কফি মুখে দিতেই দেখি একটু দূরে ঘন ঘাসের ভেতর দিয়ে একটা কিং কোবরা এগিয়ে যাচ্ছে ৷ মুখের কফি মুখের ধারেই ঠান্ডা হল ৷ আস্তে আস্তে বনে অন্ধকার নামল ৷ কী ঘন অন্ধকার ৷ অদ্ভুত অদ্ভুত সব আওয়াজ ৷ সজোরে হঠাৎ এক বার্কিং ডিয়ারের ডাক ৷ কর্কশ আওয়াজ ৷ আগুনের ফাঁকে রাতের খাওয়া সারা হল ৷ ঝিঁঝি থেকে শুরু করে নানান পোকামাকড়ের সিম্ভনি ৷ গাছের পাতার আওয়াজ ৷ ঝরাপাতা উড়ে যাওয়ার আওয়াজ ৷ রাত যত বাড়তে লাগল তত শব্দের বৈচিত্র ৷ মাঝে মধ্যে চিতার ডাক ৷ হঠাৎ বাসন পড়ে যাওয়ার শব্দ ৷ শিলভন চিৎকার করে বলে উঠল, ওয়াইল্ড বোর স্যার ৷

বিনিদ্র রজনীর যথারীতি শেষ হল ৷ আজ আমরা সিসপারা পাস পার হয়ে সাইলেন্ট ভ্যালির কোর এরিয়াতে পড়ব ৷ সবাই চললাম একসঙ্গে ৷ গাছপালা ক্রমশ কমে আসছে ৷ দূরে নীলগিরির সব অচেনা-অজানা পাহাড় শৃঙ্গ ৷ ভিজে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া ৷ কুয়াশা ৷ সিসপারা শৃঙ্গের রিজে যখন পৌঁছলাম তখন ঘড়িতে সকাল দশটা ৷ একপাশে একদম গাছপালা নেই ৷ ন্যাড়া ৷ আরেক পাশে ঘন সবুজে মোড়া গভীর বন ৷ মাঝে ফায়ার লাইন ৷ ঘাস উপড়ানো রাস্তার মতো ৷ যাতে আগুন লাগতে না পারে ৷ আমাদের পারমিশন কতটা ভুলে গেছি ৷ মন্ত্রমুগ্ধের মতো বনের দিকে এগিয়ে চলি ৷ ঘন নিকষ অন্ধকার দিনেরবেলাতেও ৷ নানারকমের পোকামাকড়, পাখি, ফুল ফাংগাস ৷ একটা অদ্ভুত রকমের পোকা দেখে ঝোপ ঠেলে ক্যামেরা বার করেছি, শিলভন বারণ করল ৷ বলল, জায়গাটা ভিজে হওয়ায় পোকামাকড় ভয়ে কামড়ে দিতে পারে ৷ আর বুশের মধ্যে পা জড়িয়ে গেলে দেখে নেবেন সাপ কিনা ৷ অবশ্য সাপ এমনিতে কামড়ায় না ভয় না পেলে ৷ কিং কোবরার তো মাত্র ১২ মিলিলিটার বিষ আছে ৷ ও সঙ্গে সঙ্গে চুষে বার করে দেব ৷ ভয় পাবেন না ৷

সব ভীষণ চুপচাপ ৷ আমরাও কথা বলছি না, মানে বলার কিছু নেই ৷ হঠাৎ একঝাঁক লায়ন টেল ম্যাকাক দেখলাম ৷ আবার পথ চলা ৷ হঠাৎ রাস্তার ধারে এক টাস্কার ৷ একলা ওই বিরাট শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ এত কাছ থেকে হাতি ভাবতেই পারি না ৷ ক্যামেরায় হাতটা আপনিই উঠল ৷ হাতিটা আমাকে ভালো করে দেখলও না ৷ শিলভন হেসে বলল, জঙ্গলের জীবজন্তুকে একদমই ভয় নেই ৷ বরঞ্চ সত্যিকারের ভয় জঙ্গলে হঠাৎ দেখা মানুষকে ৷ গন্ধ শুঁকে শিলভন বলতে পারে সামনে কোনও জন্তু-জানোয়ার আছে কিনা ৷ দুপুরের রান্না শুরু করার সময় এল তেড়ে বৃষ্টি ৷ থামার লক্ষণ নেই ৷ অগত্যা ওখানেই রাত কাটানো ৷ শিলভনের ইচ্ছে ছিল ওই দিন ২৪ কিলোমিটার বালাকাড পর্যন্ত হাঁটব ৷ তা আর হল না ৷ যাহোক করে প্লাস্টিক বেঁধে রাত কাটানো ৷ পরদিন ভেজা পিচ্ছিল রাস্তায় আবার হাঁটা শুরু ৷

বালাকাড আসার একটু আগে হঠাৎ নজরে আসে একটা ক্যাম্প ৷ কয়েকজন ফরেস্ট গার্ড ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের পারমিশন দেখতে চাইলেন ৷ কাগজপত্র বার করা হল ৷ দেখে বললেন, এই পারমিশন তো সিসপারা পাস পর্যন্ত ৷ ক্যাম্পের ভেতরে চলুন ৷ ডি এফ ও-র সঙ্গে কথা বলতে হবে ৷ ডি এফ ও প্রথমেই আমাদের এগনো বন্ধ করে ফিরে যেতে বললেন ৷ বনদপ্তরের চিঠি, পরিবেশমন্ত্রীর শুভেচ্ছা থেকে নানান কাগজপত্র দেখিয়ে শেষে ডি এফ ও আমাদের এগোতে বলেন ৷ তবে মুককালিতে যেন অবশ্যই রিপোর্ট করি ৷ আমরা ভাবতেই পারিনি, আর যাওয়া হবে ৷

আজ আমরা যাব বালাকাড থেকে পুচিপারা ৷ ভীষণ জঙ্গলের রাস্তা ৷ মাঝে কুন্তী নদী পেরোতে হবে ৷ ওই নদীতে অসংখ্য জোঁক ৷ মোজা খুলে খালি পায়ে নদী পার হয়ে দেখি পা রক্তে ভেসে যাচ্ছে ৷ অনেক কষ্ট করেই জোঁক ছাড়ানো হল ৷ তারপর আবার পথ চলা ৷ ওই জঙ্গলেই রাস্তা ৷ শেষে পাহাড়ি পথ, যদিও এখন জঙ্গল খানিকটা কম ৷ বালাকাড থেকে পুচিপারা ১৭ কিলোমিটার ৷

দুপুরের পর পুচিপারাতে এসে পৌঁছলাম ৷ আজ এখানেই বিরতি ৷ বৃষ্টি শুরু হয়েছে আবার ৷ ঘন কালো মেঘ সারা আকাশে ৷ এখানেও ছোট্ট একটা ফরেস্ট ক্যাম্প হয়েছে ৷ ফরেস্ট গার্ডরা ওয়ারলেসে জেনে গেছে আমরা আসছি ৷ তাই একটা ঘর খালি করে রেখেছে ৷ বৃষ্টি থামার পর দেখি সাইলেন্ট ভ্যালির বহুদূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে ৷

মেঘে ভরা আকাশ ৷ ক্যাম্পটার সামনে পরিখা কাটা ৷ তাই ক্যাম্প থেকে একটা ইজিচেয়ার নিয়ে বসতেই মনে হল জীবনে এমন মুহূর্ত একবারই আসে ৷ এই পুচিপারা থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে সৈরিন্ধি ৷ আজ খুব ভোর ভোরই চলা শুরু হল ৷ মাত্র ৭ কিলোমিটার যাব ৷ কুন্তী নদীকে তিনবার পার হয়ে অপূর্ব আরণ্যক পরিবেশের মধ্যে এলাম সৈরিন্ধি ৷ এখানে সুন্দর একটা গেস্টহাউস আছে ৷ সাইলেন্ট ভ্যালি কেরালার ম্যাপে একটা ট্যুরিস্ট স্পট ৷ সৈরিন্ধি থেকেও সাইলেন্ট ভ্যালির কোর এরিয়া দেখা যায় ৷ তাই অনুমতিপত্র কেরালার মুককালি থেকে সৈরিন্ধি পর্যন্ত চেষ্টা করলেও পাওয়া যায় ৷ প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ অনেকে এই পর্যন্ত আসেন ৷ সৈরিন্ধি পৌঁছে ব্রেকফাস্ট সেরে গেলাম কুন্তী নদীতে ৷ এই কুন্তী নদীর ওপরই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার জন্য বাঁধ দেওয়া শুরু হয়েছিল অমূল্য সব বনসম্পদ ডুবিয়ে ৷ প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী প্রকৃতিপ্রেমী সংস্থার আন্দোলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই প্রকল্প বাতিল করে ১৯৮৪ সালে সাইলেন্ট ভ্যালিকে ন্যাশনাল পার্কের মর্যাদা দেন ৷ সৈরিন্ধি থেকে আমরা ফিরব মুককালিতে ৷ প্রায় ২২ কিলোমিটার রাস্তা ৷ ঘন বন ছেড়ে আবার আমরা পর্ণমোচী জঙ্গলে পড়ব ৷ জিপও এই রাস্তাতে চলে ৷ আমরা হাঁটা শুরু করি ৷ ঝরাপাতা চারপাশে উড়ছে ৷ চারদিকে বোর্ড, ফায়ার থ্রেট পিরিয়ড, বি কেয়ারফুল ৷ এটা হল আট্টাপারি রিজার্ভ ফরেস্ট ৷ মুককালির কিছু আগে কুরুম্বাস আদিবাসীদের বাস ৷ এই কুরুম্বাসরা আগে ঘন জঙ্গলের মধ্যেই বাস করত গাছের কোটরে ৷ একেকটা গাছ আছে যার কোটরই হল একেকটা গুহার মতো ৷ কিন্তু এখন ওদের সরিয়ে আনা হয়েছে মুককালির কাছে ৷ সরকার থেকে ঘরদোর করে দেওয়া হয়েছে ৷ রাস্তা থেকে ২০০ ফুট নিচে কুরুম্বাস কলোনি ৷ ছবি তুলব বলে ঘুরে এলাম একবার ৷ শেষে মুককালি ৷ ডি এফ ও অফিসে গিয়ে লিখে আসতে হল আমরা নিরাপদে ফিরে এসেছি ৷ মুককালির চেকপোস্টের ধারেই গেস্টহাউস ৷ রাতটুকু এখানে কাটিয়ে আজ আমরা ফিরে যাব ৷ ৯টায় বাস ৷ প্রথমে মান্দারঘাট ৷ ওখান থেকে পালঘাট ৷

প্রয়োজনীয় তথ্য

সাইলেন্ট ভ্যালি যাবার অনুমতির জন্য লিখতে হবে একইসঙ্গে দুজায়গায়:

(১) ডি এফ ও , সাইলেন্ট ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক, পোঃ মান্দারঘাট, জেলা-পালঘাট ৷ কেরালা-৬৭৮ ০০৯ ৷ (২) ডি এফ ও, নীলগিরি সাউথ ডিভিশন, উটি-৬৪৩ ০০১, তামিলনাড়ু ৷

ভ্রমণ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫

সকল অধ্যায়

১. অর্ধশতাব্দীর আগের বদ্রীনাথ যাত্রা – প্রতাপকুমার রায়
২. মানস অভয়ারণ্য – সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
৩. জলদাপাড়া অরণ্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৪. জলের ধারে ঘর – নবনীতা দেব সেন
৫. জয়ন্তীর মহাকাল মন্দির – উষা সেন
৬. তাহিতি – হরপ্রসাদ মিত্র
৭. মার্কন্ডেয় গঙ্গার উত্স সন্ধানে – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮. কেদার বদ্রী – মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়
৯. তেহরানি হয়রানি – অমিতাভ চৌধুরি
১০. শোনপুরের মেলায় – বরুণ দত্ত
১১. এলেম নতুন দেশে – কমলা মুখোপাধ্যায়
১২. মস্কো থেকে সাইবেরিয়া হয়ে পিকিং – গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১৩. পাতাল-ভুবনেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
১৪. ইছামতীর মশা – শঙ্খ ঘোষ
১৫. নিকোবরের দ্বীপে – তিলকরঞ্জন বেরা
১৬. তিরতিরে নদী আর শাল জঙ্গলের দেশে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
১৭. আমার ভ্রমণ – মহাশ্বেতা দেবী
১৮. সুন্দরবন – হীরক নন্দী
১৯. ওপারবাংলার সুন্দরবনে – সমীর সেনগুপ্ত
২০. সাইকেলে পাঁচ বছরে ভূ-পর্যটন – ভূপর্যটক বিমল দে
২১. আঙ্কোর ভাট – প্রীতি সান্যাল
২২. হিমালয়ের সাতকাহন – ত্রিদিব বসু
২৩. স্বপ্নের পথেই যাওয়া যায় – মহাশ্বেতা দেবী
২৪. ছোট কৈলাস – সুভাষ দত্ত
২৫. বালতাল হয়ে অমরনাথ – প্রতাপকুমার রায়
২৬. মধ্য এশিয়া অভিযান – গৌতম ঘোষ
২৭. পথ হারিয়ে সিকিমের জঙ্গলে – রতনলাল বিশ্বাস
২৮. নতুন করে পাব বলে – বন্দনা সান্যাল
২৯. সেবার ব্রেকজার্নি করে – জয়া মিত্র
৩০. চন্দ্রভাগার উৎস চন্দ্রতাল সুর্যতাল – সুনীলকুমার সরদার
৩১. ওঙ্কারেশ্বর – বিশ্বদীপ দত্ত
৩২. সুন্দরবনে দুদিন – পবিত্র সরকার
৩৩. মণিমহেশ – কমলা মুখোপাধ্যায়
৩৪. দিকবিদিকে – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
৩৫. তিস্তানদীর উৎসে – শরৎ ঘোষ
৩৬. পশ্চিমে হাওয়াবদল – মধুপর্ণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৭. এক টুকরো নীল চাঁদ – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৩৮. কালিম্পং থেকে তিব্বত – অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়
৩৯. সাইলেন্ট ভ্যালি – শিবনাথ বসু
৪০. মির্জা শেখ ইতেসামুদ্দিনের বিলেত যাত্রা এবং আমি – নবনীতা দেব সেন
৪১. বক্সা বাঘ-প্রকল্প – বুদ্ধদেব গুহ
৪২. গানতোক থেকে ইয়ুমথাং – সুতপা ভট্টাচার্য
৪৩. ক্যামেরুন, আগ্নেয়গিরি ও গভীর জঙ্গলের খুদে মানুষেরা – প্রীতি সান্যাল
৪৪. ডুয়ার্সের দুয়ার এখন খোলা – সমরেশ মজুমদার
৪৫. ইউরোপে দিন কয়েক – পূর্ণেন্দু পত্রী
৪৬. রামচন্দ্রের বনবাসের পথ পরিক্রমা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. আসমুদ্রককেশাস – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
৪৮. নিরলংকার ভ্রমণ – শঙ্খ ঘোষ
৪৯. চেঙ্গিস খানের দেশে – প্রতাপকুমার রায়
৫০. মিজোরামের নীল পাহাড়ে – দীপঙ্কর ঘোষ
৫১. সিন্ধুদুর্গ – বিশ্বদীপ দত্ত
৫২. জিম করবেটের জঙ্গলে – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৫৩. থর মরুভূমিতে ট্রেকিং – শিবনাথ বসু
৫৪. মরোক্কো ভ্রমণ – হরপ্রসাদ মিত্র
৫৫. ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, নোবেল প্রাইজ – নবনীতা দেব সেন
৫৬. গন্তব্য মাচুপিচু – প্রতাপকুমার রায়
৫৭. কই যাইত্যাছি জানি না – শঙ্খ ঘোষ
৫৮. পারাংলা অভিযান – সুনীলকুমার সরদার
৫৯. পুশকিন, মলদভা আর কচি পাতার বাঁশিতে মোত্সার্ট – প্রীতি সান্যাল
৬০. আমাদের ছোট নদী : পার্বতী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৬১. দেবলোকের পথে পথে – অশোক চক্রবর্তী
৬২. না-ভ্রমণের বৃত্তান্ত – আশাপূর্ণা দেবী
৬৩. এভারেস্টের পাদদেশে যাত্রা – কমলা মুখোপাধ্যায়
৬৪. নীল নদে পাঁচদিন – হরপ্রসাদ মিত্র
৬৫. বারাণসীর ঘাটের কথা – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৬. বালফাক্রমের পাহাড়-জঙ্গলে – সুমিত মুখোপাধ্যায়
৬৭. গৌরীগঙ্গার উৎসব মিলাম হিমবাহ – পুরুষোত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়
৬৮. মরুভূমির দিনরাত্রি – পবিত্র সরকার
৬৯. ঢাকা : একুশ বছর পর – অন্নদাশঙ্কর রায়
৭০. ফোকসোমদো হ্রদ – ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত
৭১. ইন্টারলাকেন থেকে ইয়ুংফ্রাউ – মণিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
৭২. কালিন্দী গিরিবর্ত্ম – রথীন চক্রবর্তী
৭৩. একযাত্রায় ভোরামদেরও আর কানহা – হীরক নন্দী
৭৪. মদমহেশ্বরের ডোলিযাত্রা – কাজল দত্ত
৭৫. কেনিয়ায় পাঁচ অরণ্য – প্রতাপকুমার রায়
৭৬. কোনাডা থেকে রেভুপাল ভরম – রতনলাল বিশ্বাস
৭৭. চাঁদের দেশ লাদাখ – কমলেশ কামিলা
৭৮. বোকের তোভ, ইজরায়েল – নবনীতা দেব সেন
৭৯. বিষ্ণুপুর মুকুটমণিপুর – হরপ্রসাদ মিত্র
৮০. ডোকরিয়ানি বামক – অনিন্দ্য মজুমদার
৮১. তাওয়াং থেকে তাসি-চু জং – কমলা মুখোপাধ্যায়
৮২. মেক্সিকো শহরের একটি দিন – প্রীতি সান্যাল
৮৩. আকাশচূড়ায় অভিযান – অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়
৮৪. ভ্রমণের ঝঞ্ঝাট – শঙ্খ ঘোষ
৮৫. সারেঙ্গেটির জঙ্গলে – হরপ্রসাদ মিত্র
৮৬. এবারের কুম্ভমেলায় – চিন্ময় চক্রবর্তী
৮৭. অন্য পথের পথিক – বুদ্ধদেব গুহ
৮৮. গরুমারা জঙ্গলে – টুটুল রায়
৮৯. নিশীথ সূর্যের দেশ – প্রতাপকুমার রায়
৯০. সবুজ নামদাফাতে – সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
৯১. পঞ্চকেদার – শিবনাথ বসু
৯২. গোঁসাইকুণ্ড – কমলা মুখোপাধ্যায়
৯৩. অমরকন্টক – হীরক নন্দী
৯৪. আদিম ডুয়ার্সের আধুনিক রূপকথা – সূর্য ঘোষ
৯৫. পার্বতী উপত্যকায় সার পাস – বিদ্যুৎ দে
৯৬. মিয়ানমার, ইরাবতীর সঙ্গে – পবিত্র সরকার
৯৭. রূপসী রিশপ – হীরক নন্দী
৯৮. হিমবাহের জন্মভূমিতে – শেখর ভট্টাচার্য
৯৯. ভাবা জোত পেরিয়ে কিন্নর থেকে স্পিতি – অনিন্দ্য মজুমদার
১০০. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত – হরপ্রসাদ মিত্র
১০১. বক্সা দুর্গ – টুটুল রায়
১০২. সিন্ধু নদের ধারে – রতনলাল বিশ্বাস
১০৩. মেঘালয়ের দাউকি – সুমিত মুখোপাধ্যায়
১০৪. আমাদের ছোট নদী : লিডার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০৫. লাসা – সমীর রায়
১০৬. ২ নম্বর লোভালোয়া স্ট্রিট – অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
১০৭. অযোধ্যা পাহাড় – বিশ্বদীপ দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন