২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ

সতীশচন্দ্র মিত্র

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ – খৃষ্টান পাদরীগণ

খৃষ্টধর্ম প্রচারের জন্য যে সব পাদরীগণ সর্ব্বপ্রথম বঙ্গে আসেন, তন্মধ্যে জেসুইটগণই প্রধান। ১৫৪০ খৃষ্টাব্দে ইগ্লেসিয়াস লয়োলা (Ignatius Loyola) নামক এক স্পেনদেশীয় ব্যক্তিদ্বারা জেসুইট বা যীশু-সম্প্রদায় গঠিত হয়। নানা উপায়ে জগতের সর্ব্বদেশে খৃষ্টধর্ম প্রচার ও শিক্ষা বিস্তারাদি নানা প্রণালীতে লোক-সেবা করাই এই সমিতির উদ্দেশ্য। দুঃসাহসিক সৈন্য দলের মত এই সম্প্রদায়ের লোকেরা দেশে দেশে ঘুরিতেন এবং সদসৎ যে কৌশলে প্রয়োজন, রাজ্যমধ্যে প্রতিপত্তি লাভ করিয়া স্বকার্য্য উদ্ধার করিতেন।[১] শত বৎসরের মধ্যে জগতের এমন কোন দেশ ছিল না, যেখানে ইঁহাদের প্রচারকার্য্যের ভিত্তি পত্তন হয় নাই। পাদরীগণ সেনাদলের মত শাসন মানিয়া একমতে চলিতেন এবং সৈন্যাধ্যক্ষের মত তাঁহাদেরও সর্ব্বময় কর্তার নাম জেনারেল। ১৫৪২ খৃঃ অব্দে এই সম্প্রদায়ের সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার সর্ব্বপ্রথম ভারতবর্ষে আসেন, তাঁহারই নামে কলিকাতায় এক কলেজ আছে। ১৫৭৬ অব্দে ফাদার ভাজ ও ভিয়াজ নামক দুই জন পাদরী বঙ্গে আসিলেও তাঁহারা আকবর কর্তৃক আহূত হইয়া শিকরীতে যান। ১৫৯৮ খৃঃ অব্দেই ইঁহাদের প্রকৃত প্রচার কার্য্যে আরম্ভ হয়। এই সময়ে নিকলাস্ পাইমেণ্টা নামক একজন পাদরী জেসুইট সম্প্রদায়ের ভারতীয় পরিদর্শক (Visiteur) রূপে গোয়া নগরীতে ছিলেন। তাঁহার তত্ত্বাবধানে চারি জন পাদরী বঙ্গদেশে প্রেরিত হন। তন্মধ্যে ফ্রান্সিস ফার্ণাণ্ডেজ (Francisco Fernandez) এবং ডোমিনিক সোসা (Domingo de Souza) কোচিন হইতে ১৫৯৮ সনের ৩রা মে তারিখে বঙ্গে রওনা হন এবং মেলকিওর ফনসেকা (Melchior da Fonseca) ও এনড্র বাউয়েস (Andre Bowes) পর বৎসর সেই দিকে যাত্রা করেন।

এই চারিজনের মধ্যে ফার্ণাণ্ডেজ সর্বপ্রধান ছিলেন। তিনি ঐ বৎসরই পাইমেন্টার নিকট লাটিন ভাষায় কয়েকখানি পত্র লিখেন।[২] ঐ সকল পত্র অবলম্বনে পাইমেণ্টা ১৬০০ খৃষ্টাব্দে সম্প্রদায়ের সর্ব্বাধ্যক্ষ বা জেনারাল ক্লড একোয়াভিবার (Claude Aquaviva) নিকট বঙ্গীয় মিশন সম্বন্ধে পর্তুগীজ ভাষায় যে সব পত্র লিখেন, ১৬০২ অব্দে লিসবন হইতে উহা মুদ্রিত হইয়া প্রকাশিত হয়। পিয়ারে ডু জারিক (Pierre Du Jarric) নামক একজন ফ্রান্সবাসী গ্রন্থকার ঐ সকল পত্র ও অন্যান্য বিবরণী হইতে, এশিয়ায় খৃষ্টধর্ম্মের অবস্থা সম্বন্ধে ফরাসী ভাষায় এক বিরাট ইতিহাস লিখেন।[৩] দক্ষিণ ফ্রান্সের বোর্ডো নগরী হইতে ১৬০৮-১৬১৪ খৃষ্টাব্দে তিন খণ্ডে উক্ত ইতিহাস প্রকাশিত হয়। উহার তৃতীয় খণ্ডে প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধীয় কিছু বিবরণ পাওয়া যায়। আমরা তাহার সারমর্ম্ম এখানে প্রকটিত করিব। এই ইতিহাসে স্পষ্টতঃ প্রতাপাদিত্যের নাম না থাকিলেও, তিনি চ্যাণ্ডিকানের অধীশ্বর এবং বাক্লার রাজপুত্র রামচন্দ্রের ভাবী শ্বশুর, এই পরিচয় হইতে প্রতাপাদিত্যকে বুঝিয়া লইতে বিলম্ব হয় না। চ্যাণ্ডিকান ও যশোহর-ধুমঘাট যে অভিন্ন তাহা আমরা পূর্ব্বে সপ্রমাণ করিয়াছি।[৪] তদনুসারে এখানেও চ্যাণ্ডিকানের পরিবর্তে স্থানে স্থানে যশোহর নাম ব্যবহার করিব।

উক্ত চারিজন মিশনরী সর্ব্বপ্রথমে কোচিন হইতে হুগলীর (Gullo) পথে চট্টগ্রামে আসেন এবং তথা হইতে ডিয়াঙ্গায় গিয়া অবস্থান করেন। পর্তুগীজ-পল্লীমাত্রেরই সাধারণ নাম ছিল ব্যাণ্ডেল (Bandel) বা বন্দর। হুগলীর কাছে পুরাতন ফিরিঙ্গি-পল্লীর নাম এখনও ব্যাণ্ডেল এবং ডিয়াঙ্গাকেও ফিরিঙ্গি বন্দর বলিত, ইহা আমরা পূর্ব্বে বলিয়াছি (১ম অংশ, ১৮শ পরিচ্ছেদ)। ফার্ণাণ্ডেজ ও সোসা যখন পথে হুগলীতে আসিয়া পৌঁছেন, তখনই প্রতাপাদিত্য তাঁহাদিগকে যশোহরে গিয়া সাক্ষাৎ করিতে বলিয়া পাঠান। কিন্তু তখন তাঁহারা সে অনুরোধ রক্ষা করেন নাই। পরে ফার্ণাণ্ডেজ ডিয়াঙ্গা হইতে যখন শুনিলেন, যে রাজা ঐ কারণে ক্রুদ্ধ হইয়াছেন, তখন তিনি সোসাকে যশোহরে পাঠাইয়া দেন। সোসা ১৫৯৯ খৃষ্টাব্দে মে মাসে যাত্রা করিয়া হুগলীর পথে অক্টোবর মাসে যশোহরে পৌঁছেন। যশোহর হইতে তিনি ফার্ণাণ্ডেজকে স্বয়ং তথায় আসিবার জন্য পত্র লিখেন। ফার্ণাণ্ডেজের নিজ লিখিত বিবরণী হইতে আমরা এই প্রসঙ্গে জানিতে পারি : ‘অক্টোবর মাসে ফাদার ডোমিনিক আমাকে লিখিলেন যে, আমাদের সমস্ত কার্য্য সম্বন্ধে রাজার সহিত একটা বন্দোবস্ত স্থির করিবার জন্য আমার চাঁদেকান যাওয়া আবশ্যক, কারণ রাজার (মত) ) পরিবর্ত্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমি তাহাই করিলাম। যখন রাজা জানিলেন যে আমি পৌঁছিয়াছি, তিনি তাঁহার একজন প্রধান ব্রাহ্মণ পাঠাইয়া আমাকে অভ্যর্থনা করিলেন এবং বলিলেন যে, আমার আগমনে তিনি অত্যন্ত খুসী হইয়াছেন এবং আমাকে দেখিবার জন্য অত্যন্ত ব্যস্ত হইয়াছেন। পরদিন ফাদার সোসাকে সঙ্গে লইয়া আমি তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলাম। তিনি আমাকে অত্যন্ত আদর করিলেন এবং নিজ পরিত্রাণ (Salut) সম্বন্ধীয় বিষয়গুলি লইয়া আমাদের সহিত কথাবার্তা কহিলেন।’[৫] প্রতাপাদিত্য কি ভাবে এই সকল নবাগত বৈদেশিক মিশনরীগণের সহিত সদ্ব্যবহার করিয়াছিলেন, তিনি একজন স্বাধীন রাজার মত কি ভাবে রাজ্য-মধ্যবর্তী সকল বিষয়ের সন্ধান লইতেন এবং সবদিকে দৃষ্টি রাখিতেন, এই ঘটনা হইতে তাহার বেশ পরিচয় পাওয়া যায়। ফার্ণাণ্ডেজের ব্যবহারে ও বাক্য-কৌশলে তুষ্ট হইয়া তিনি রাজ্যমধ্যে খৃষ্টধর্ম প্রচারের জন্য আজ্ঞাপত্র প্রদান করেন।[৬] অনতিবিলম্বে ফার্ণাণ্ডেজ যশোহর হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া প্রথমে শ্রীপুরে ও পরে ডিয়াঙ্গাতে পৌঁছেন এবং ফাদার ফনসেকাকে আবশ্যক কার্য্য-নির্ব্বাহের জন্য বালার পথে যশোহরে পাঠাইয়া দেন।

ডু জারিকের বিবরণী হইতেই জানা যায়, বালা, শ্রীপুর ও যশোহর তখনকার প্রধান তিনটি হিন্দুরাজ্য। চাকরী, বাণিজ্য প্রভৃতি নানা কাৰ্য্য-ব্যপদেশে এই তিন স্থানেই বহু পর্তুগীজ ও অন্যান্য খৃষ্টানগণ আসিয়া বাস করিতেছিল। তাহারা কোন কোন সময়ে দুইচারি বর্ষের মধ্যে মিশনরীর মুখ দেখিত না বা ধৰ্ম্ম উপাসনার কোন সুযোগ পাইত না। ফাদার ফনসেকা বালায় পৌঁছিলে উহারা যেন হাতে স্বর্গ পাইল, রাজার সহিত তাঁহার সাক্ষাৎ করাইয়া দিল। তখন বালক রামচন্দ্র বালার রাজা, তাহার বয়স মাত্র ৮/৯ বৎসর। তবুও তাহার বয়সের অতিরিক্ত বুদ্ধি, রাজোচিত গাম্ভীর্য্য ও সৌজন্য দেখিয়া জেসুইট পাদরী একান্ত মুগ্ধ হইলেন। রাজসভায় ফনসেকা সমাদরে অভ্যর্থিত হইলেন। প্রতাপাদিত্যের কন্যার সহিত রামচন্দ্রের বিবাহ প্রস্তাব তখন সকলের জানা ছিল। রামচন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘আপনি কোথায় যাইবেন?’ তখন ফনসেকা উত্তর করিলেন, ‘আমি আপনার ভাবী শ্বশুরের রাজ্যে যাইব। আশা করি, আপনি আমাকে এই রাজ্যমধ্যে গীৰ্জ্জা নির্ম্মাণ ও খৃষ্টধর্ম প্রচারের জন্য অনুমতি দিবেন।’ রামচন্দ্র তদুত্তরে বলিলেন, ‘ইহা আমারও অভিপ্রেত, কারণ আমি আপনাদের অনেক সদগুণের বার্তা শুনিয়াছি।’ তখনই পাদরীকে যথারীতি আজ্ঞাপত্র প্রদান করা হইল। উহার সঙ্গে দুইজন লোকের আহারাদির ব্যবস্থাসহ রাজ্য মধ্য দিয়া চলিয়া যাইবার অনুমতিও থাকিল।[৭] ফন্‌সেকা তখন বালা হইতে নদীপথে দুইধারে মনোরম দৃশ্য দেখিতে দেখিতে, ২০শে নভেম্বর তারিখে ধুমঘাটে পৌঁছিলেন।

সেখানে তিনি ফাদার সোসাকে দেখিতে পাইয়া পরম সুখী হইলেন। স্থানীয় পর্টুগীজেরা তাঁহাকে খুব অভ্যর্থনা করিল। পরদিন তিনি প্রতাপাদিত্যের বারদুয়ারী দরবারে উপস্থিত হইয়া, তাঁহাকে বেরিঙ্গান জাতীয় একপ্রকার কমলা লেবু উপহার দিলেন। এগুলি অতি সুন্দর এবং এদেশে পাওয়া যায় না। রাজা পাইয়া খুব সন্তুষ্ট হইলেন এবং সমাদরে গ্রহণ করিলেন। উত্তর-পূর্ব্ব কোণে ইচ্ছামতীর কূলে পর্তুগীজদিগের পল্লী ছিল, সেখানে এখনও মৃত্তিকার নিম্নে বহু সংখ্যক কবর দেখিতে পাওয়া যায়। ফনসেকা ঐ স্থানে একটি গীর্জ্জা নির্মাণের জন্য, অনুমতি প্রার্থনা করিলেন। ১৬০০ খৃষ্টাব্দের ২০শে জানুয়ারী তারিখে ফনসেকা গোয়াতে পাইমেণ্টার নিকট যে পত্র লিখেন তাহা হইতে আমরা পাই : ‘তিনি আমাদিগকে এত মান্য করিলেন যে, আমাদিগকে দেখিবামাত্র নিজ সিংহাসন ছাড়িয়া দাঁড়াইয়া মাথা নত করিলেন। ইহার কারণ এই যে, এদেশের লোকেরা ব্রহ্মচর্য্যকে (Chastere) অত্যন্ত ভক্তি করে এবং ইনি, আমরা পূর্ণ ব্রহ্মচর্য্য রক্ষা করি শুনিয়া, আমাদের সম্বন্ধে অতি উচ্চ মত পোষণ করিয়াছেন। আমাদের বাসার কাছে একটা বড় জায়গা আছে। আমরা রাজার কাছে সেটি চাহিলাম, কারণ যাহাদিগকে আমরা খৃষ্টান করিব তাহাদিগকে সেখানে বাস করাইলে, তাহাদিগকে অতি সহজে সাহায্য করিতে ও ধর্মপথে রাখিতে পারিব। তিনি তৎক্ষণাৎ এ প্রার্থনা মঞ্জুর করিয়া এ সম্বন্ধে একখানা ফৰ্ম্মাণ শীঘ্র প্রস্তুত করিতে বলিলেন এবং আজ্ঞা দিলেন যে, ঐ বাড়ীতে যে সব হিন্দু (অর্থাৎ নূতন খৃষ্টানেরা) বাস করিবে, তাহারা যে কর দিত, তাহা আমাদিগকে দিবে।’[৮]

এই সনন্দ পাইবামাত্র গীর্জ্জা নির্মাণের কার্য্যারম্ভ হইল। রাজানুগ্রহ লাভ করিলে রাজ্যমধ্যে অর্থ-সংগ্রহ বা কাৰ্য্য-সাধনের ব্যাঘাত হয় না; বিশেষতঃ বহু পটুজীজ তখন সৈন্যদলে ও নানা বিভাগে চাকরী করিতেছিল। তাহারা সানন্দে প্রচুর অর্থ আনিয়া দিল; স্বকীয় ধর্ম্মের জন্য সকল জাতিই উন্মুক্তহস্ত হইয়া থাকে। রাজাও যথেষ্ট মালপত্র দিয়া সাহায্য করিলেন। পাদরীগণের ঐকান্তিক চেষ্টায় অতি দ্রুতভাবে কাৰ্য্য চালাইয়া প্রায় একমাস কাল মধ্যে গীর্জ্জা প্রস্তুত করা হইল। ১৫৯৯ খৃষ্টাব্দে নভেম্বর মাসের শেষভাগে ফনসেকা যশোহরে আসেন। সেই বৎসর ডিসেম্বর মধ্যেই গীর্জ্জার কার্য্য শেষ হয়। ফনসেকার পত্রেই আছে :

‘বঙ্গদেশে জেসুইটদিগের সর্ব্বপ্রথম গীর্জ্জা এইখানে প্রস্তুত হয় এবং ইহাকে যীশুর গীর্জ্জা নাম দেওয়া হইল। পোর্তুগীজদিগের সাহায্যে এই গীৰ্জ্জা খুব জাঁকজমক সহকারে সাজান হইল এবং ১লা জানুয়ারীতে খুব ধুমধামের সহিত উপাসনা করা হইল। চারিদিকে ইহার নাম পড়িয়া গেল…..।

‘এই গীর্জ্জা দেখিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়া রাজা সভাসদের এক প্রকাণ্ড দল লইয়া আমাদের নিকট আসিলেন এবং গীর্জ্জার সাজসজ্জা দেখিয়া অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করিলেন। খুব ভক্তির সহিত গীর্জ্জা-ঘরে প্রবেশ করিলেন এবং যখন প্রধান চ্যাপেলটির নিকট আসিলেন, তখন জুতা খুলিয়া ফেলিলেন। তাঁহার জন্য একখানা চেয়ার আগে হইতে প্রস্তুত রাখা ছিল, কিন্তু আমরা কিছুতেই তাঁহাকে বসাইতে পারিলাম না, এমন কি, কার্পেটেও নহে। তিনি শুধু সিঁড়ির উপর একখানা ছোট মাদুরে বসিলেন এবং সেখানে অনেকক্ষণ ধরিয়া কথাবার্তা বলিতে লাগিলেন। গীর্জ্জার বেদীর উপর যে সব দুর্লভ দ্রব্য ছিল, এবং অন্যান্য জিনিষ যাহা দেখিলেন, তাহা সম্বন্ধে আমাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন। আর আমাদিগকে একটি পাথরের গীর্জ্জা নির্ম্মাণ করিতে অনুমতি দিলেন, যাহা বঙ্গদেশের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা সুন্দর হইবে।’[৯]

কিন্তু সে পাথরের গীর্জ্জা আর প্রস্তুত হয় নাই। তবে অল্প সময় মধ্যে যে ইষ্টক-রচিত গীৰ্জ্জা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল, তাহাও খুব সুন্দর ছিল বলিয়া জানা যায়। উহার গঠন-কৌশল অপেক্ষা সাজসজ্জার পারিপাট্য যে বেশী ছিল, তাহা মিশনরীদিগের কথা হইতে বুঝা যায়। ১৬০০ খৃষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারী গীর্জ্জা খোলা হইল, সে দিন প্রতাপাদিত্য দেখিয়া গেলেন। ‘পরদিন রাজপুত্র[১০] গীর্জ্জার সাজসজ্জা দেখিতে আসিলেন। ইহার নিকটবর্ত্তী স্থানে যত হিন্দু, ছোট হউক বড় হউক, গীৰ্জ্জা দেখিয়া গেল, কারণ ইহার জাঁকজমকের খ্যাতি সর্ব্বত্র প্রচারিত হইয়াছিল। প্রত্যহ হাজার হাজার দর্শক উপস্থিত হইত। পনের দিনের বেশী ধরিয়া এইরূপ হইতে লাগিল।’[১১] সে সুন্দর গীর্জ্জা আর নাই। বর্ত্তমান ঈশ্বরীপুরের উত্তর -পূর্ব্ব কোণে যুধিষ্ঠির সর্দ্দারের ভিট্টা বাড়ীর পার্শ্বে জঙ্গলের মধ্যে স্তূপীকৃত ইষ্টকরাশি এক্ষণে তাহার স্থান নির্দ্দেশ করিয়া দেয় মাত্র। লোকে সে জঙ্গল কাটিতে চায় না, কাটিতে গিয়া কে নাকি নিৰ্ব্বংশ হইয়াছিল। ভয়ে কেহ নিকটে বাস করিতেও চায় না। গীর্জ্জার সংলগ্ন প্রশস্ত ক্ষেত্রে প্রাঙ্গণ ও সমাধিস্থান ছিল। ঐ সমাধি-ক্ষেত্র সে সময়ে ইষ্টক প্রাচীরে বেষ্টিত ছিল। ইহারই নিকটে পর্তুগীজদিগের ব্যাণ্ডেল বা পল্লী ছিল। সমাধি-স্থানে অন্ততঃ ৪০টি ইষ্টকরচিত কবরের ভগ্নাবশেষ দেখিতে পাওয়া যায়। এবং তাহার মধ্যে অনেকগুলি কবর পূর্ব্ব-পশ্চিমে দীর্ঘ। গীর্জ্জার কাছে কোরমাণ সর্দ্দার নামক এক ব্যক্তি কয়েক বৎসর পূর্ব্বে যে একটি পুষ্করিণী খনন করাইয়াছিলেন, তাহা আমি স্বচক্ষে দেখিয়াছি। উহার মধ্যেও পূৰ্ব্ব-পশ্চিমে দীর্ঘ গোর ও মনুষ্যাস্থি আবিষ্কৃত হইয়াছিল।[১২] মুসলমানের কবর উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ হইবার নিয়ম আছে, খৃষ্টানের তেমন কিছু নিয়ম নাই। সুতরাং কবরগুলি যে খৃষ্টানের তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। একজন খৃষ্টধর্মাবলম্বী সহৃদয় লেখক এ সম্বন্ধে যাহা লিখিয়াছেন, এস্থলে তাহাই উল্লেখ করিতেছি :

‘The graves which I examined are lined with brick and it was explained to me that the skeletons when exhumed were noticed not to conform with Moslem custom, in as much as they did not lie north and south. This means that those buried here were not adherents of the Musalman faith, and it therefor follows that they must have been Christians. It might be urged that perhaps they are the resting place of those killed in battle and deposited in the earth at random. This argu- ment is, however, not convincing, as it is improbable that they would have been interned in brick-lined graves. Such being the case, Iswaripur is not only of interest to the Hindus for Shrine to Kali, and to the Moslems for the well-prepared Tenga Masjid, but it is hallowed with sacred memories for Christians in general and Catholics in particular, as the site of the first Church created in Bengal.’

বাস্তবিক ইহাই বঙ্গদেশে খৃষ্ট-ধর্মাবলম্বীদিগের সর্ব্বপ্রথম গীর্জ্জা।[১৪] কেহ কেহ বলেন উহা জেসুইট সম্প্রদায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রথম গীৰ্জ্জা হইতে পারে, তদ্বারা যে তখন বঙ্গদেশে অন্য গীর্জ্জা ছিল না তাহা বুঝায় না। সে গীর্জ্জা হুগলীর নিকট থাকিবার সম্ভব, কারণ জেসুইট মিশনরীগণ ব্যাণ্ডেলে আসিয়া তথায় খৃষ্টানদিগের একটি প্রধান আড্ডা দেখিয়াছিলেন। পূৰ্ব্বতন কোন উপাসনা-গৃহ-তথায় থাকিতে পারে; কিন্তু যে ইষ্টক-রচিত বিহার ও গীর্জ্জা ব্যাণ্ডেলকে এখনও ভারতবর্ষের মধ্যে একটি অপূর্ব্ব দর্শনীয় স্থান করিয়া রাখিয়াছে, তাহা ১৫৯৯ খৃষ্টাব্দের পূর্ব্বে হয় নাই। ব্যাণ্ডেল গীৰ্জ্জা এখনও অভগ্ন অবস্থায় দাঁড়াইয়া আছে এবং তাম্রফলকে প্রতিষ্ঠার তারিখ প্রদর্শন করিয়া জানাইয়া দিতেছে যে, উহাও যশোহর-গীর্জ্জার মত একই বৎসরে নির্মিত হইয়াছিল।[১৫] এক্ষণে প্রশ্ন এই, যশোহরের গীর্জ্জা যখন ডিসেম্বর মাসে নির্ম্মিত হয়, তখন কোটি অগ্রে কোটি পরে তাহা নির্ণয় করিবার উপায় কি? তদুত্তরে বলা যায়, যশোহরের গীর্জ্জা প্রথম গীর্জ্জা বলিয়াই উহা যীশুখৃষ্টের পবিত্র নামে উৎসর্গীকৃত হয় এবং উহা যে প্রথম, তাহা ডু জারিক স্পষ্টতঃ বলিয়া গিয়াছেন।[১৬] সুতরাং এ বিষয়ে আর কাহারও সন্দেহ থাকিতে পারে না। প্রাচীন যশোহর যে কেবল হিন্দুর পীঠস্থান, মুসলমানের মজিদের জন্যই বিখ্যাত তাহা নহে; ইহা খৃষ্টানদিগেরও এতদ্বেশীয় আদি ধৰ্ম্মপীঠ বলিয়া চিরপবিত্র হইয়া রহিয়াছে।

সে পবিত্র পীঠের স্মৃতিরক্ষা করিবার জন্য কি কেহ নাই? যে স্থানটিতে প্রাচীন গীর্জ্জার ভগ্নাবশেষ এখনও বিলুপ্ত হয় নাই, সেখানে কোন গীর্জ্জা নির্মাণ করা হউক বা না হউক, স্থানটি অবিলম্বে কোন স্তম্ভফলক দ্বারা চিহ্নিত ও স্মরণীয় করিয়া রাখা কর্তব্য। ভারত গভর্ণমেন্টের প্রাচীন কীর্তি-রক্ষণবিভাগের দৃষ্টি কি এদিকে পড়িবে না? এই প্রাচীন কীর্তি রক্ষার জন্য স্থানীয় হিন্দু মুসলমানের যে সহানুভূতি নাই, তাহা নহে; তবে খৃষ্টানদিগেরই এ বিষয়ে অগ্রণী হইয়া কার্য্য করা উচিত। অনেক খৃষ্টধর্ম্মাবলম্বী উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী বা মিশনরী খুলনায় থাকেন, তাঁহারা এবং বিভাগীয় কমিশনার প্রভৃতি আরও অনেকে ঈশ্বরীপুরের প্রাচীন কীর্তি দর্শন করিতে আসিয়া থাকেন; অক্লান্তকর্মী বন্ধুবর শ্রীশচন্দ্র অধিকারী মহাশয় সকল পরিদর্শকেরই দৃষ্টি এ দিকে আকৃষ্ট করিতে কখনও বিরত হন না। তাঁহারা কেহ কেহ একবার সামান্য উদ্যোগ করিলেই অনায়াসে প্রস্তাবিত প্রস্তর-ফলক রক্ষা করিতে পারেন। ফনার সাহেব আমাদের সহিত একমত হইয়া এই গীর্জ্জা সম্বন্ধে যে সুমত প্রকাশ করিয়াছেন, তাহা উদ্ধৃত করিয়াছি। কলিকাতার সেন্ট জেভিয়ার কলেজের অধ্যাপক, প্রসিদ্ধ জেসুইট ধৰ্ম্মযাজক ফাদার হোষ্টেন (Rev. H. Hosten. S. J.) এই জাতীয় ঐতিহাসিক লুপ্ত রত্নের সমুদ্ধারকল্পে যে অক্লান্ত শ্রম করিতেছেন, ব্যাণ্ডেলের প্রাচীন কীর্তি আবিষ্কারের জন্য[১৭] যেরূপ একাগ্র চেষ্টা করিয়াছেন, তাহা সুধীসমাজে সুপরিচিত। তিনিই পুরোহিতের মত অগ্রণী হইয়া ঈশ্বরীপুর দর্শন করতঃ গীর্জ্জার স্থান নির্দ্দেশ ও স্মারকস্তম্ভ-প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করিবেন, ইহাই আমাদের একান্ত প্রার্থনীয়।

রাজানুগ্রহ লাভ করিয়া পাদরীরা যশোহরে পরম সুখে বাস করিতেছিলেন, ইহা বেশ বুঝা যায়। গীর্জ্জা নির্মাণের পর প্রায় দুই বৎসর কাল এইরূপ সদ্ভাব ছিল। ১৬০০ খৃঃ অব্দের জানুয়ারীর প্রথমভাগে গীর্জ্জা প্রতিষ্ঠার দিনে উহা যেমন করিয়া সাজান হইয়াছিল, পর বৎসর (১৬০১) ঠিক ঐ তিথিতে পুনরায় ঐরূপ একটি বাৎসরিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাজাজ্ঞায় যুবরাজ উদয়াদিত্য এবং তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা (সম্ভবতঃ সংগ্রামাদিত্য[১৮]) একত্র হইয়া উৎসব-দিনে গীৰ্জ্জা দেখিতে আসিয়াছিলেন। পাদরীদিগের পত্রে আছে, ‘রাজা নিজে অনেক সম্ভ্রান্ত পুরুষ সঙ্গে লইয়া এটি দর্শন করিলেন এবং সুন্দর দৃশ্য দেখিয়া অতি সন্তুষ্ট হইয়া, পাথরের গীর্জ্জা নির্ম্মাণ করিবার জন্য আমাদিগকে যে অনুমতি দিয়াছিলেন, তাহা দৃঢ়তর করিয়া দিলেন। ফলতঃ রাজা পাদরীদের প্রতি এত স্নেহ দেখাইতে লাগিলেন যে, তাহাদের যে কোন প্রার্থনা পূরণে তাঁহার অতিমাত্র সুখ হইবে, এরূপ বোধ হইতে লাগিল।’[১৯] পাদরীরা জানাইলেন, একজন পর্টুগীজের একখানি জালিয়া নৌকা দেনার জন্য এক ব্যক্তি আটক করিয়াছিলেন। রাজার আদেশে তাহা মালিককে প্রত্যর্পিত হইল। এমন কি একজন হিন্দু রাজার নিকট বহু টাকার জন্য ঋণী ছিল, সে গিয়া পাদরীদিগকে ধরিল এবং তাঁহাদের দ্বারা অনুরোধ করাইয়া দেনা হইতে অব্যাহতি পাইল। এ সব ঘটনা হইতে বিশেষ সদ্ভাবেরই পরিচয় পাওয়া যায়। যশোহরে জেসুইটদিগের উপাসনা ও প্রচারকার্য্য সুন্দরভাবে চলিতেছিল। এমন সময়ে সন্দ্বীপ লইয়া এক ভীষণ গোলযোগ বাধিল এবং তাহার ফলে যশোহরের গীর্জ্জা গেল এবং পাদরীদিগকেও দেশান্তরিত হইতে হইল। সে কথা আমরা পরবর্ত্তী পরিচ্ছেদে বিবৃত করিতেছি।

পাদটীকা :

১. ‘No religious community could produce a list of men so variously distinguished; none had extended its operation over so vast a space; yet in none had there ever been such perfect unity of feeling and action. There was no region of the globe, no walk of speculative or of active life in which Jesuits were not to be found.’-Macaulay, History of England, Vol. II, p. 208 See also, D’orsey, J.D., Portuguese Discoveries, Dependencies and Missions, pp. 95-100.

২. ‘A Portuguese edition of the letter was published at Lisbon in 1602. Fernandez was born in 1550. entered university of Alcala in 1570. arrived in Goa 1575 and died in 1602. — Beveridge, Bakarganj, p. 447.

৩. Pierre Du jarric was born at Toulouse in 1565, was for 15 years Professor of Theology in that town, died in 1666. তাঁহার পুস্তকের নাম L’Histoire des Choses plus memorables advenues taut des Indes Orientales &c. সংক্ষেপতঃ উহাকে Histoire des Indes Orientales বা পূর্ব্ব ভারতীয় ইতিহাস বলা যায়। অধ্যাপক যদুনাথ সরকার মূল ফরাসী হইতে উহার অনুবাদ করিয়া ‘প্রতাপাদিত্যের সভায় খৃষ্টান্ পাদরী’ নাম দিয়া একটি প্রবন্ধ ১৩২৮, আষাঢ় মাসের ‘প্রবাসী’তে প্রকাশ করিয়াছেন। নিখিলনাথও উহার ২৯-৩০ ও ৩২-৩৩ অধ্যায়ের মূল ও অনুবাদ প্রকাশ করিয়াছিলেন। – ‘প্রতাপাদিত্য’, ৪০৭-৪৭৫ পৃ দ্রষ্টব্য। [অধ্যাপক সরকার কিছু সংস্কারান্তে উক্ত প্রবন্ধ ১৩৫৫, আষাঢ় মাসের ‘শনিবারের চিঠি’তে প্রকাশ করেন। উহা বর্ত্তমান সংস্করণের পরিশিষ্টে সংযোজিত হইল—শি মি]

৪. বৰ্ত্তমান খণ্ড, ১ম অংশ, ১৬শ পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।

৫. অধ্যাপক যদুনাথ সরকার কৃত অনুবাদ, ‘প্রবাসী’, ১৩২৮, আষাঢ়, ৩২২ পৃ।

৬. ‘Fernandez himself went to Chandican in October, 1599, and got letters – patent from the king authorising him to carry on the mission.’-Beveridge, Bakarganj. p. 174.

৭. Beveridge, Bakarganj. p. 31

৮. ‘প্রবাসী’, ১৩২৮, আষাঢ়, ৩২২ পৃ (অধ্যাপক যদুনাথ সরকারের অনুবাদ)। [পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য-শি মি

৯. Du Jarrics, Historie &c, p. 832 34 (অধ্যাপক যদুনাথ সরকারের অনুবাদ)।

১০. এই রাজপুত্র যে উদয়াদিত্য, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই।

১১. অধ্যাপক যদুনাথের অনুবাদ, ‘প্রবাসী’, ১৩২৮, আষাঢ়, ৩২৩ পৃ।

১২. ঈশ্বরীপুরে ডাক্তার নিরঙ্কভূষণ রায় চৌধুরী মহাশয় নিজ গৃহে এই অস্থি সংগ্রহ করিয়া রাখিয়াছিলেন, দেখিয়াছি। সে অস্থি যে মনুষ্যাস্থি তাহাতে সন্দেহ নাই।

১৩. P. Leo Faulkner, District Superintendent of Police, Khulna, wrote an article headed, ‘Where Pratapaditya Reigned’ in the Calcutta Review, 1920. pp. 186-7.

১৪. ‘From the work of Pierre du Jarric, who was also a Jesuit, we learn that Ciandeca was the first Church in Bengal, Chittagong the second and Bandel the third . ‘ – Beveridge, Bakarganj. p. 33. ১৫.

১৫. ব্যাণ্ডেল সম্বন্ধে Mr. Campos লিখিয়াছেন : ‘It is the oldest Christian convent and Church in Bengal being founded in 1599, the year when Monoel Tavares, in virtue of a farman from Akbar, established the great Portuguese settlement in Hoogly . ‘ – Portuguese in Bengal, p. 228; Manrique, Itinerario (in Bengal, Past and Present, 1916, vol. XII, p. 290). এখন ব্যাণ্ডেল গীর্জ্জার পশ্চিম তোরণে তাম্রফলকে লেখা আছে, ‘Founded 1599’ এবং বিহারের পশ্চিম গেটের উপর প্রস্তরফলকে বড় বড় পুরাতন অক্ষরে ‘১৫৯৯’ লিখিত আছে। চট্টগ্রামে ডিয়াঙ্গায় যে গীৰ্জ্জা নিৰ্ম্মিত হয়, তাহা বিনষ্ট হইয়াছিল (বর্ত্তমান খণ্ড, ১ম অংশ, ১৮শ পরিচ্ছেদ, ১২ ও ১৩ নং পাদটীকা দ্রষ্টব্য)। তিনটি গীৰ্জ্জাই যে একই বৎসরে গঠিত হইয়াছিল, তৎপক্ষে সন্দেহ নাই।

১৬. ‘The (Bandel ) Convent was dedicated to the Augustinian Saint, St. Nicholas of Tolention, and the attached Church to our Lady of Rosary.’-Campos, pp. 288-9.

১৭. Hosten, H.-’A Week at the Bandel Convent’. Hugli. in Bengal Past and Present, 1915, pp. 36-120.=

১৮. উদয়াদিত্যের দুইটি সহোদর, অনন্ত রায় ও সংগ্রাম রায়। এই দুইজনের কেহ জ্যেষ্ঠের অনুবর্ত্তী হন। ( ১ম অংশ, ১১শ পরিচ্ছেদ, ‘বংশলতিকা’ দ্রষ্টব্য)

১৯. অধ্যাপক সরকারের অনুবাদ। [পরিশিষ্ট দ্র.―শি মি]

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন