১৭. প্রতাপের আয়োজন

সতীশচন্দ্র মিত্র

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ – প্রতাপের আয়োজন

প্রতাপাদিত্যের নূতন রাজধানী কোথায় নির্ম্মিত হইয়াছিল, তাহা আমরা দেখিয়াছি। যশোরেশ্বরী দেবী যেখানে আবির্ভূত হইয়াছিলেন, সেখানেই আছেন; সেই ঈশ্বরীপুরের সন্নিকটে প্রতাপের ধুমঘাট দুর্গ ও রাজপ্রাসাদ গঠিত হইল। তখন পুনরায় বসন্ত রায়ের উদ্যোগে মহাসমারোহে সেই নূতন রাজধানীতে প্রতাপাদিত্যের অভিষেক ক্রিয়া সুসম্পন্ন হইল। রাজধানীর কিন্তু নামের পরিবর্তন হইল না; তাহা পূর্ব্ববৎ যশোহর নামেই অভিহিত হইত। রাজ্যাভিষেকের সময়ে এবারও অনেক ভুঞা রাজা যশোহরে আসিলেন; আত্মবল ও দেশরক্ষার অনেক কল্পনা স্থিরীকৃত হইয়া গেল পরবর্ত্তী ঘটনাবলী হইতে তাহার কিঞ্চিৎ আভাস পাওয়া যায় মাত্র; নতুবা তৎসম্বন্ধীয় কোন বিশ্বাসযোগ্য সমসাময়িক বিবরণ পাইবার উপায় নাই।

রাজ্যলাভের সঙ্গে প্রতাপের আনন্দলাভ হইয়াছে; রাজ্যের অপরিমিত কর্ম্মভার পাইয়া তাঁহার দৃপ্ত চিত্ত শান্ত হইয়াছে; দুর্গম প্রদেশে দুর্ভেদ্য দুর্গ তুলিয়া রাজধানী প্রতিষ্ঠা করিতে পারিয়া তাঁহার অপরিমিত সাহস ও বীরপ্রতিভা জাগিয়াছে; আর দৈবানুগ্রহে যশোরেশ্বরী দেবীর বিকাশে তাঁহার মনে দৃঢ় বল ও অপরিমিত আশার সঞ্চার হইয়াছে। এইভাবে তৃপ্তি, বল ও আশার সংমিশ্রণফলে তিনি ভবিষ্যতের জন্য এক বিরাট কার্য্য-প্রণালীর ব্যবস্থা করিতে লাগিলেন। নূতন রাজ্যের নূতন প্রজাদ্বারা যদি কিছু করিতে হয় তাহার সকল আয়োজন নিজেরই করা প্রয়োজন; তাঁহাকে আগাগোড়া সবই নিজেই গড়িয়া লইতে হইবে। তাঁহার পিতা ও পিতৃব্য রাজ্য পত্তন করিয়াছেন মাত্র, সে ভিত্তির উপর গঠন কার্য্য কিছুই হয় নাই। কোন কিছু গঠন বা সংগঠনের পূর্ব্বে তিনি তাঁহার উদ্দেশ্য গুছাইয়া লইলেন।

তিনি বাদশাহ আকবরকে দেখিয়াছেন, আগ্রার রাজদরবার ও রাজনীতি পরীক্ষা করিয়া দেখিয়া আসিয়াছেন; আর দেখিয়াছেন রাজপরিবারে আত্মকলহ, শিবিরে ষড়যন্ত্র এবং পাঠানের পুনরুত্থান চেষ্টা। সে চেষ্টার স্রোতে যে রাজধানী প্লাবিত করে নাই, তাহা নহে। তবে বাদশাহের গুণগ্রাহিতা কতিপয় হিন্দু বীরের মর্য্যাদার সমাদর করিয়া মোগল সিংহাসন দৃঢ় করিয়াছিল। হিন্দু লবণের মর্য্যাদা রক্ষা করিতে জানে এবং সেই জন্য বাদশাহের নিমিত্ত দেহের রক্ত জলের মত ব্যয় করিতে প্রস্তুত ছিল।[১] যে হিন্দু মিষ্ট ব্যবহারে তুষ্ট হইয়া শিষ্টভাবে মোগলের সেবা করিতে পারিত, হিন্দু বীর্য্যের উন্মেষ দেখিলে সে হিন্দু যে সহজেই সেই দিকে যোগ দিতে পারে, প্রতাপের তাহা বুঝিতে বাকী ছিল না।

পাঠানরাজত্ব গিয়াছে, কিন্তু পাঠান শক্তি যায় নাই। বাহিরের স্রোত এখন অন্তঃসলিল হইয়া বহিতেছে। মোগল রাজতক্ত কাড়িয়া লইলেও সমগ্র বঙ্গে কখনও সম্পূর্ণ প্রভুত্ব বিস্তার করিতে পারিবে কিনা সন্দেহ আছে। যেখানে মোগলের অত্যাচার, যেখানে মোগলের প্রতি অসন্তোষ বা যেখানে মোগলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ-বহ্নি জ্বলিবে, সেখানেই পাঠানেরা শত্রুপক্ষের দলবৃদ্ধি করিবে। সুতরাং হিন্দুস্বাধীনতার জন্য সুকৌশলে চেষ্টা করিতে পারিলেই হিন্দু ও পাঠান উভয় বলের সাহায্য অনায়াসলভ্য হইয়া পড়িবে। সুযোগ বুঝিয়া কার্য্য করাই এক্ষণে কৃতিত্বের পরিচায়ক। প্রতাপ এ সুযোগ পরিত্যাগ করিতে চাহিলেন না। তিনি নানাভাবে সৈন্য গঠন ও সীমান্ত রক্ষা করিয়া যুদ্ধের আয়োজন করিতে লাগিলেন। কয়েকটি প্রধান কারণে তিনি যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইলেন।

প্রথমতঃ, আত্মরক্ষা ও আত্মপ্রাধান্য স্থাপন তাঁহার প্রথম উদ্দেশ্য হইল। এ উদ্দেশ্য ছোট বড় সকলেরই থাকে, তাঁহারও ছিল। সে অরাজকতার যুগে সবলে দাঁড়াইতে না পারিলে, পতন অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং দাঁড়াইতে হইলেই যুদ্ধবল চাই। তেমন দাঁড়াইতে অনেকেই চাহিয়াছিল; ভুঞারাজগণ সকলেই নিজের গণ্ডীতে মাথা তুলিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন; সঙ্গে সঙ্গে প্রাধান্য বিস্তারের জন্য সকলেরই একটি তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল। সুতরাং প্রতাপাদিত্যের আত্মপ্রাধান্যের চেষ্টা স্বার্থমূলক বা ঘৃণাজনক হইতে পারে, কিন্তু তাহা তাঁহার মত বীরপুরুষের পক্ষে অস্বাভাবিক বা নিতান্ত অগৌরবের বিষয় ছিল না। প্রতাপের উত্থান চেষ্টা প্রারম্ভকালে ব্যক্তিগত বা প্রাদেশিক হইতে পারে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাহার ফল বহুদূর গড়াইয়াছিল।

দ্বিতীয়তঃ, পাঠানের পক্ষসমর্থনের জন্য প্রতাপ যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইয়াছিলেন। একটি ধর্ম্মবুদ্ধি তাঁহাকে এই কার্য্যে বিশেষভাবে উদ্রিক্ত করিয়াছিল। পাঠান-রাজের কৃপাবলেই তাঁহারা প্রথম যশোররাজ্য প্রাপ্ত হন। পাঠানের ধনবলই যশোরের সমৃদ্ধির ভিত্তি। মোগলের বিপক্ষে যুদ্ধ পরিচালন জন্য যে সমস্ত ধনসম্পত্তি ন্যাস-স্বরূপ বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায়ের হস্তে সমর্পিত হইয়াছিল, তদ্বারা মোগলের চরণে উপঢৌকন দেওয়া নিতান্ত অকৃতজ্ঞের কার্য্য। যে কার্য্যের জন্য দায়ুদের জীবন গিয়াছে, যে সাধনায় পাঠানেরা ছিন্ন ভিন্ন উৎসন্ন হইয়া পড়িয়াছে, সেই কার্য্যের জন্য যিনি উদ্যোগী হইবেন, তিনিই দায়ুদের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। পাঠান ভূপতির রক্তসম্পর্কিত ওসমান উড়িষ্যা অঞ্চলে যে পাঠান শক্তির উদ্বোধনের জন্য আমরণ চেষ্টিত ছিলেন, প্রতাপাদিত্য আপনাকে বঙ্গদেশে পাঠানের উত্তরাধিকারী কল্পনা করিয়া, সেই পাঠান প্রতিপত্তি অক্ষুণ্ণ রাখিতে উদ্যোগী হইলেন। মিথ্যা কথা বলিয়া এবং সামন্তরাজ হইবার অঙ্গীকার করিয়া আকবর বাদশাহের নিকট হইতে সনন্দ লাভ করা প্রতাপের একটি যৌবনসুলভ চাপল্যের ফল; সে দুরভিসন্ধি তাঁহার চরিত্রানুগত নহে এবং তদ্বারা তাহার চরিত্রে দুরপনেয় কলঙ্কই আরোপিত হইয়াছে।

পাঠানেরা যখন প্রথম বঙ্গদেশ জয় করিয়াছিল, তখন তাহারা বিদেশীয় এবং শত্রুর মত বিবেচিত হইত। শেষে পাঠানেরা এদেশে স্থায়িভাবে বাস করিল; বঙ্গের অন্ন, বঙ্গের পণ্য, বঙ্গের সুখদুঃখ সকলই তাহারা আপন করিয়া লইল। তখন পাঠানে হিন্দুতে গলাগলি, কোলাকুলি বন্ধুত্ব হইল। হিন্দু পাঠান হইল, পাঠান হিন্দুর মতে মিশিতে লাগিল। তৎপরে আসিল— মোগল। পশ্চিমাঞ্চলকে অসিমুখে ও অগ্নিমুখে দিতে দিতে যখন মোগল আসিল, তখন হিন্দুর নিকট মোগল হইল শত্রু, আর পাঠান হইল আপন জন। হিন্দুরা এ ভাব পোষণ করিতে করিতে, যখন ত্বরিতে মোগলের হাতে পাঠান হারিল এবং অবশেষে তাড়িত হইয়া দেশ ছাড়িল, তখন দেশ মধ্যে একটা তীব্র কল্পনা ইহাই জাগিল, কেমন করিয়া মোগল শত্রুর ধ্বংস করিয়া দেশকে পুনর্ব্বার পাঠান শাসনতলে স্থাপন করা যায়। তাই প্রতাপ পাঠান সৈন্য ও পাঠান সেনানীর সহায়তা পাইয়া মোগলের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিয়াছিলেন।

তৃতীয়তঃ, বঙ্গদেশে হিন্দুশক্তির পুনঃ প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য প্রতাপ চেষ্টিত হইয়াছিলেন। আত্মপ্রতিষ্ঠা তাঁহার প্রথম উদ্দেশ্য হইতে পারে, পাঠানের সমর্থন তাঁহার অব্যর্থ লক্ষ্য থাকিতে পারে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়া স্বীয় সামর্থ্যের সফলতা দেখিয়া অবশেষে জাতীয় গৌরবের জন্য প্রাণপাত করিবার কল্পনা তাঁহাকে যে অমানুষিক কার্য্যে উদ্রিক্ত করিয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। পাঠানের জন্য চেষ্টা করিতে হইবে বটে, কিন্তু আত্মকলহের জন্য যদি পাঠানের দিন শেষ হইয়া থাকে,[২] পাঠান যদি কিছুতেই আর না জাগে, তবে হিন্দুশক্তি জাগাইতে হইবে, মোগলকে কিছুতেই উঠিতে দেওয়া হইবে না, ইহাই প্রতাপের প্রতিজ্ঞা হইল। বঙ্গদেশ তখন হিন্দুর দেশ; সকল দেশের সকল জাতিরই নিজের দেশে স্বরাজ প্রতিষ্ঠা করার অধিকার আছে। হিন্দুরা পাঠান শাসনকালে প্রায় চারিশত বৎসর ধরিয়া সে স্বাধিকার লাভে বঞ্চিত থাকিলেও, আবার যদি মোগল-পাঠানের সংঘর্ষকালে সুযোগ বুঝিয়া তাহারা স্বাতন্ত্র্যলাভের চেষ্টা করে, তাহা অন্যায় বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে না। প্রতাপাদিত্য তাঁহার স্বজাতীয় হিন্দুর এই চিরন্তন অধিকার লাভের জন্য উদ্যোগী হইয়াছিলেন। সমগ্র দেশ যদি জাগিত, তবে প্রতাপের প্রতিজ্ঞাও থাকিত। কিন্তু তাঁহার চেষ্টা শেষকালে সফল হয় নাই বলিয়া আমরা মূলে তাহার উদ্দেশ্যেরই সন্দেহ করি। প্রকৃতপক্ষে সময় তখন আসে নাই, দেশ তখন জাগে নাই; একজন বা দশজন জাগিলেই দেশ জাগে না। তখনও ঘরে ঘরে আত্মকলহ চলিতেছিল, অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারে দেশ ডুবিয়া ছিল; সমাজ ও সংস্কারের মোহমন্ত্রে দেশের বা দশের কথা লোকে ভুলিয়া গিয়াছিল। একাকী প্রতাপ বা ভুঞারাজগণ তাহার কি করিবেন? প্রতাপ চেষ্টা করিয়াছিলেন, অসময়ে চেষ্টা করিতে গিয়া কত ভুল করিয়াছিলেন, কত নৃশংসতার পরিচয় দিয়াছিলেন; কিন্তু তাঁহার অভীষ্ট সিদ্ধ হয় নাই বলিয়া, তাঁহার একনিষ্ঠ সাধনার কথা আমরা সকলেই ভুলিয়া গিয়াছি। কিন্তু তাঁহার আয়োজনের যদি পরিচয় দেওয়া যায়, তবে আশা করি, তাঁহার দেশসেবার বার্তা একেবারে মুছিয়া যাইবে না।

চতুর্থতঃ, সকল উদ্দেশ্যের কথা ভুলিয়া গেলেও আমরা প্রতাপাদিত্যের একটা চেষ্টার কথা কিছুতেই ভুলিতে পারিব না; তিনি একদিকে যেমন মোগলের অত্যাচার, অন্য দিকে তেমনই মগ ও ফিরিঙ্গি দস্যুদিগের পাশবিক অত্যাচার হইতে দেশবাসীদিগকে শান্তি দিবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করিয়াছিলেন। মোগলের সহিত তাঁহার পঁচিশ বৎসর ধরিয়া দারুণ সংঘর্ষ চলিয়াছিল; তাঁহার যুদ্ধবিগ্রহের বিবরণ হইতে উহার পরিচয় পাওয়া যাইবে। তাঁহার রাজ্যারম্ভের পূর্ব্ব হইতেই আরাকাণী মগ ও পাশ্চাত্য পর্তুগীজ বা ফিরিঙ্গি দস্যুগণের ভীষণ আক্রমণে দক্ষিণবঙ্গের অনেক স্থান সম্পূর্ণ মনুষ্যশূন্য হইয়াছিল; তাঁহার রাজত্বকালে এই উভয় দস্যুদলের প্রবল প্রতাপ আরও বৰ্দ্ধিত হইতে চলিয়াছিল। এজন্য নানাস্থানে দুর্গ সংস্থান ও উপযুক্ত নৌবাহিনী সংগ্রহ করিয়া তিনি এই দস্যুদিগকে দমন করিয়াছিলেন। সে অত্যাচারের বিবরণ না জানিলে, প্রতাপের কার্য্যের গুরুত্ব ও তাহার উপকারিতা হৃদয়ঙ্গম হইবে না। এজন্য আমরা পরবর্ত্তী পরিচ্ছেদে সেই অত্যাচার কাহিনী বলিব

এক দিক হইতে বাদশাহী মোগল সৈন্য ও অন্যদিক হইতে দুর্বৃত্ত দস্যুদল, উভয়ের আক্রমণ হইতে দেশ রক্ষা ও আত্মরক্ষা করা বড় সহজ ব্যাপার নহে, বিশৃঙ্খল দস্যুদলকেও নিবৃত্ত বা নিগৃহীত করা যায়, কিন্তু সুশিক্ষিত মোগলকে বিধ্বস্ত করা অতি দুরূহ কার্য্য। মোগলের গুণগ্রাহিতা লোক বাছিয়া উপযুক্ত কর্ম্মভার দিয়াছিল; আকবরের সমদর্শিতা বহু লোককে বশীভূত করিয়াছিল। সে শান্তনীতির বলে অনেকেই মোহিত হইল। পাঠান আত্মবিক্রয় করিল; হিন্দু জাতি গিয়া দাসত্ব করিতে লাগিল। সুতরাং মোগলেরা দেশীয়দিগের বাহু ও মস্তিষ্কের বলে বলবান হইয়া দুর্দ্ধর্ষ হইয়াছিল। এ দুরন্ত শত্রুর বিপক্ষে অস্ত্র ধারণ করিতে হইলে যথেষ্ট সতর্কতা আবশ্যক। প্রতাপাদিত্য মোগল দরবারে বাস করিবার সময় এ সকল বিষয় বিশেষভাবে দেখিয়া আসিয়াছেন। তিনি জানিয়াছেন, মোগলের অশ্বারোহী যেমন সুপটু, পদাতিক তেমন নহে। মোগল স্থলে যেমন বলী, জলে তেমন কৌশলী নহে। মোগলের অন্য প্রকার সাজ সরঞ্জাম যথেষ্ট থাকিলেও নৌকা বা জাহাজের তেমন সংস্থান নাই; যাহা কিছু ছিল, তাহাও প্রধানতঃ বঙ্গদেশের জন্য এবং উহা বঙ্গদেশ হইতে সংগৃহীত। এখনও মোগলদিগের কামান বন্দুকের পর্যাপ্ত সংগ্রহ বা ব্যবহারপটুতা হয় নাই। মোগলেরা পাহাড় পর্ব্বতে ও মরুকল্প শুষ্কদেশে যেমন অভ্যস্ত, সিক্তবাত বা কদমাক্ত বঙ্গদেশে তাহারা সেরূপভাবে স্বাস্থ্য রক্ষা করিতে পারে না। মোগলের সাজসরঞ্জাম এত অধিক এবং ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার যে, অতিদূরবর্ত্তী বঙ্গের এক কোণে আসিয়া নদীবহুল ও জঙ্গলাকীর্ণ দেশের সহিত যুদ্ধ করা তাহাদের পক্ষে বড় দুঃসাহসিক সংকল্প। এই সকল তথ্যের প্রতি বিশিষ্টভাবে লক্ষ্য রাখিয়া, প্রতাপ সুকৌশলে নিজের দুর্গ নির্ম্মাণ, সৈন্যগঠন ও নৌবাহিনী প্রস্তুত করিতে লাগিলেন। আমরা অগ্রে মগ ও ফিরিঙ্গির অত্যাচারের কথা বলিয়া, পরে মোগলের সহিত তাঁহার যুদ্ধায়োজনের পরিচয় দিব।

পাদটীকা :

১. বর্তমান-ইংরাজ-রাজত্বের সৈনিকবিভাগ এখনও প্রকৃষ্টভাবে এই গুপ্তরহস্য বুঝিতে পারেন নাই। সুবিখ্যাত ঐতিহাসিক হান্টার সাহেব একস্থলে রাজা টোডরমল্ল সম্বন্ধে লিখিয়াছেন :

‘This valiant soldier whose history exhibits the support which Mahomedan Emperors derived from Hindu valour and suggests the loss which the Anglo-Indian army sustains for not avail- ng itself of native officers of rank &c’—Hunter. W. W., Orissa, 1872. Vol. 11. p. 15.

২. Sher-khan once said: ‘I will very shortly expel the Mughals fro Hind, for the Mughals are not superior to the Afghans in battle or single combat, but the Afghans have let the empire of Hind slip from their hands on account of their internal dissensions.’-Twarikh-i-sher shahi, (Elliot & Dowson), Vol. iv, p.

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন