২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা

সতীশচন্দ্র মিত্র

বিংশ পরিচ্ছেদ – নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা

নদীবহুল ভাটিরাজ্যে রাজত্ব করিতে গেলে পর্য্যাপ্ত নৌ-সংস্থান না হইলে চলে না। সে অঞ্চলে যেখানে সেখানে গিয়া শত্রুকে অতর্কিত ভাবে আক্রমণ করিবার এমন উপায় আর নাই। মোগলদিগের এ বিষয়ে ভাল ব্যবস্থা ছিল না, তাহা প্রতাপাদিত্য জানিতেন। পূৰ্ব্বকালে সামুদ্রিক জাহাজ প্রধানতঃ বঙ্গদেশেই প্রস্তুত হইত। আকবরের সময় একটি বাদশাহী নৌ-বিভাগ ছিল; বঙ্গদেশ হইতে উৎকৃষ্ট নৌকা সংগৃহীত হইত বটে, কিন্তু বঙ্গদেশ, কাশ্মীর ও সিন্ধুদেশের মত অন্য কোথাও ভাল সমুদ্র-গামী জাহাজ প্রস্তুত হইত না। বাদশাহ নানা দেশ হইতে কারিগর আনাইয়া লাহোর ও এলাহাবাদে বহুসংখ্যক তরণী প্রস্তুত করাইয়াছিলেন।[১] কিন্তু বঙ্গ প্রভৃতি দূরবর্ত্তী স্থানে উহারা অতি কমই আসিত। সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় যখন পূৰ্ব্ববঙ্গে মগ, ফিরিঙ্গি প্রভৃতি জলদস্যুদিগের সহিত যুদ্ধ করিতে হইয়াছিল, তখন নবাব শায়েস্তা খাঁ ঢাকা প্রদেশে অসংখ্য নৌকা ও জাহাজ নির্ম্মাণ করাইয়াছিলেন।

ভারতবর্ষে অতি প্রাচীন কাল হইতে নৌ-বিদ্যার উন্নতি হইয়াছিল। মহাভারতে মনোরথগামিনী, সৰ্ব্ববাতসহা ও যন্ত্রযুক্ত তরণীর উল্লেখ আছে।[২] নৌ-সাধনোদ্যত বঙ্গবাসীকে পরাজিত করিয়া দিগ্বিজয়ী রঘু বঙ্গদেশে জয় পতাকা উড্ডীন করিয়াছিলেন।[৩] বঙ্গবীর বিজয়সিংহ সিংহলে রাজ্য স্থাপন করেন। বঙ্গীয় বণিকেরা বাণিজ্যার্থ যব, সুমাত্রা প্রভৃতি দ্বীপে গিয়া ধর্মপ্রচার ও উপনিবেশ স্থাপন করেন। অজান্তা প্রভৃতি গিরিগুহায় এবং যব দ্বীপাদির ভাস্কর্য-শিল্পে প্রাচীন ভারতের নৌ-বিদ্যার পরিচয় পাওয়া যায়। হিন্দু-বৌদ্ধ যুগে মুসলমান আক্রমণের পূর্ব্ব পর্য্যন্ত কি ভাবে হিন্দু বণিকেরা নানা চিত্রবিচিত্র ডিঙ্গা সাজাইয়া বহু বিদেশের সহিত বাণিজ্য করিতেন, প্রাচীন সাহিত্যে ও চীন পর্যটকের বিবরণীতে তাহার প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে। উড়িষ্যার অন্তর্গত খণ্ডগিরির শিলালিপিতে আছে, কলিঙ্গ-রাজপুত্রকে অন্যান্য শিক্ষার সহিত ‘নাব ব্যাপার’ শিখিতে হইয়াছিল। বঙ্গদেশে এই নাব-ব্যাপার একটি প্রধান শিক্ষার বিষয় ছিল। বঙ্গ ও কলিঙ্গের লোকেরাই যে এই বিদ্যায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন তাহাতে সন্দেহ নাই।[৪] বঙ্গের মধ্যে আবার দক্ষিণ বঙ্গের অর্থাৎ সমতটের অধিবাসীরা নাব-বিদ্যায় অধিক অগ্রসর হইয়াছিলেন। সপ্তডিঙ্গা সাজাইয়া ধনপতি বা চাঁদ সওদাগর কিরূপে বহু বিদেশের সহিত বাণিজ্য করিতেন এবং পণ্য বিনিময়ে দেশের ধনবৃদ্ধি করিতেন, তাহার কথা না শুনিয়াছেন, এমন লোক বিরল। কবিকঙ্কণের চণ্ডীকাব্যে উহার বিশেষ বিবরণ আছে এবং উহা হইতেই দেখা যায়, নৌকাগুলি, মাঝি ও দাঁড়ী পূৰ্ব্ববঙ্গ হইতে আসিত। বাঙ্গাল নাবিকেরা পথে বিপদে পড়িয়া বাঙ্গালের ভাষায় কান্দিয়াছিল, সে বর্ণনা চণ্ডীতে আছে।[৫]

প্রতাপাদিত্যও এইরূপ ডিঙ্গা সাজাইয়াছিলেন, কিন্তু তাহা বাণিজ্যের জন্য নহে। পূর্ব্ববঙ্গে তাঁহার পৈতৃক নিবাস এবং সপ্তগ্রামের সহিত ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ। সুতরাং এই দুই স্থান হইতে তাঁহার উৎকৃষ্ট পোত নির্মাণকারী কারিগর আনিতে কষ্ট হয় নাই। সপ্তগ্রাম তখন বাণিজ্যের জন্য সর্বপ্রধান বন্দর ছিল, ‘কর্ণাট, গুজরাট, কাশী, কনখল, লঙ্কা, দ্রাবিড় হইতে শ্রীহট্ট পৰ্য্যন্ত সকল শফরের (সহরের) বণিক সপ্তগ্রামে আসিয়া বাণিজ্য করিত, কিন্তু সপ্তগ্রামের বণিক কোথাও যাইত না।[৬] এখানে সকল দেশের নৌকা-নির্ম্মাণ পদ্ধতি পরিজ্ঞাত ছিল; সকল দেশীয় লোকেরা এখানে আসিয়া আবশ্যক মত নৌকা নিৰ্ম্মাণ বা সংস্কার করিয়া লইত। কবিকঙ্কণ প্রতাপাদিতের সমসাময়িক লোক।[৭] তাঁহারই বর্ণনায় দেখিতে পাই, কোন কোন সদাগরী ডিঙ্গা ‘আশী গজ জল ভাঙ্গে গাঙ্গের দু’কূল” এবং কোন ডিঙ্গায় বহুসংখ্যক দাঁড় ছিল। প্রতাপাদিত্যের জামাতা রামচন্দ্র যে নৌকায় যশোহর রাজধানী হইতে পলায়ন করিয়াছিলেন, তাহা চৌষট্টি দাঁড়যুক্ত এবং কামান দ্বারা রক্ষিত ছিল।[৮] এই সকল নৌকাকে ‘কোশা’ নৌকা বলিত, এই সকল সুদীর্ঘ নৌকা দ্রুতগমনের জন্য ব্যবহৃত হইত। প্রতাপাদিত্যের বহুসংখ্যক কোশা নৌকা ছিল।[৯] অধ্যাপক যদুনাথ সরকার মহোদয় সম্প্রতি ‘বহারিস্তান’ নামক পারসিক গ্রন্থের পাঠোদ্ধার করিয়া যে অনুবাদ করিয়াছেন, তাহা হইতে জানিতে পারি, যুদ্ধকালে প্রতাপাদিত্যের সেনাপতির সঙ্গে ‘বেপারি, কোশা, বলিয়া, পাল, ঘুরাব, মাচোয়া, পশতা ও জলিয়া জাতীয় নৌকা ছিল।[১০] ইহা ব্যতীত দুই একখানি ‘পিয়ারা’ এবং ‘মহলগিরি’ নৌকাও ছিল। ইহার মধ্যে কোশা নৌকার কথা বলিয়াছি; অপর নৌকা সমূহের কিছু পরিচয় দেওয়া আবশ্যক।

ঢাকাই পলওয়ার

এই সকল নৌকার মধ্যে ঘুরাব (Grab) সর্ব্বাপেক্ষা শক্ত ও শক্তিশালী। উর্দু ‘ঘুরাব’ শব্দে কাক পক্ষী বুঝায়। ইহাতে সাধারণতঃ দুইটি এবং বড়গুলিতে তিনটি মাস্তুল থাকে। দৈর্ঘ্যের অনুপাতে ইহা বেশ প্রশস্ত; প্রায়ই সম্মুখে দুইটি বড় কামান এবং দুইপার্শ্বে কতকগুলি করিয়া ছোট কামান সাজান থাকিত। ‘বলিয়া’ নৌকা বোধ হয় আমরা যাহাকে ‘ভাউলিয়া’ বলি, সেইরূপ ছোট, লম্বা, একপার্শ্বে ছইওয়ালা দ্রুতগামী নৌকাকে বুঝায়। ‘পাল’ বলিতে খুব সম্ভবতঃ ঢাকা হইতে আমদানী ‘পলওয়ার’ নৌকাকে বুঝাইত; ইহাতে একটি মাত্র প্রকাণ্ড মাস্তুল থাকে এবং অত্যন্ত বোঝাই ধরে। ‘মাচোয়া’ (সম্ভবতঃ Massoola boat) নৌকার তক্তাগুলি কাতা বা শণ দিয়া বাঁধিয়া প্রস্তুত করা হইত এবং উহাতে তরঙ্গের বেগ সহ্য করিতে পারিত। এ জাতীয় নৌকা মাদ্রাজের উপকূলে ব্যবহৃত হইত।[১১] ‘পশতা’ (Fusta) এক প্রকার দুই মাস্তুলিয়া দ্রুতগামী জাহাজ।[১২] জলিয়া (gallivat, not galliot) নৌকা দক্ষিণ ভারতের উপকূলে ব্যবহৃত হইত। ইহা দাঁড়ের সাহায্যে চালিত হইত। ইহার উপরে পাতলা বাঁশের পাটাতনের দুই পার্শ্বে ৪০/৫০ টি পর্য্যন্ত দাঁড় বসান থাকিত; বৃহদাকারের জালিয়া বা জলাগুলিতে ৬টি বা ৭টি পর্য্যন্ত ছোট কামান পাতা থাকিতে পারিত।[১৩] পিয়ারা নৌকাগুলি ময়ুরপঙ্খী বা সুন্দর বজরার মত। উহার ভিতর আরোহিগণ স্বচ্ছন্দে বাস করিতে পারিত। মহলগিরি তরণী পিয়ারা অপেক্ষাও সুন্দর ও বড়। উহাতে রাণী বা উচ্চবংশীয়া মহিলারা আরোহণ করিতেন। প্রত্যেক বহরে সেনাপতি বা আমীরদিগের জন্য এরূপ ২/১ খানি তরণী থাকিত। বেপারি নৌকা বাণিজ্যের জন্য এখনও ব্যবহৃত হয়। ইহা ঘুরান ছইওয়ালা এবং সম্মুখে কয়েকটি দাঁড় এবং মধ্যস্থলে একটি প্রকাণ্ড মাস্তুল থাকে। অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্যাদি বহনের জন্যই এ সব নৌকা যুদ্ধকালে প্রয়োজনীয় ছিল।

যে দেশে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংস্থান, নদীর অবস্থা ও উপকূলের প্রকৃতি যেরূপ, সে দেশে তদনুযায়ী নৌকা বা রণতরী প্রস্তুত হইয়া থাকে।[১৪] এইজন্য ভারতবর্ষের এক এক প্রদেশে নৌকা বা জাহাজ নির্মাণের সময় কোন এক প্রকার আদর্শের অনুকরণ করিলেও উহার মাল মসলা এবং ব্যবহারের প্রণালী পৃথক হওয়াতে আদর্শেরও অনেক পরিবর্ত্তন হইয়া থাকে। উপরিভাগে যে সকল পোতের কথা বলা হইল, উহার অধিকাংশই রণতরী; এজন্য প্রতাপাদিত্যকে উহার অধিকাংশই অন্যের অনুকরণে প্রস্তুত করিয়া লইতে হইয়াছিল। তাঁহার নৌ-বিভাগে যে সকল পর্তুগীজ কর্মচারী নিযুক্ত হইয়াছিলেন, তাঁহারাও দাক্ষিণাত্যের মালবর ও করমণ্ডল উপকূলের কয়েক জাতীয় পোত—যেমন ঘুরাব, পশ্‌তা, মাচোয়া বা মাছুলা এবং জালিয়া বা জল্‌বা (Jalbah)— যশোহরে প্রবর্তন করিয়াছিলেন। অবশ্য সপ্তগ্রাম এবং সন্দ্বীপ প্রভৃতি স্থানে এইরূপ পোত পূৰ্ব্ব হইতে প্রস্তুত হইত। প্রতাপাদিত্যের সময়ে যশোহরের কারিগরগণ জাহাজ নির্মাণে বিশেষত্ব লাভ করিয়াছিলেন। তাহার ফলে সায়েস্তা খাঁ অনেক জাহাজ যশোহর হইতে প্রস্তুত করাইয়া লইয়াছিলেন। কয়েক প্রকার নৌকা যশোহরের নিজ সম্পত্তি ছিল; যেমন, ডিঙ্গি, পান্‌সী, বাছাড়ী ও বালাম। “যখন লোহার ব্যবহার জানিত না, তখন বেতে বাঁধা নৌকায় চড়িয়া বাঙ্গালীরা নানাদেশে ধান চাউল বিক্রয় করিতে যাইত। সে নৌকার নাম ছিল ‘বালাম নৌকা’। তাই সে নৌকায় যে চাউল আসিত, তাহার নাম বালাম চাউল হইয়াছে।”[১৫] আমরা এক্ষণে বালাম চাউলই চিনি, বালাম নৌকার কথা ভুলিয়া গিয়াছি। তবে এখনও বালাম চাউল প্রধানতঃ খুলনা ও বরিশাল জেলা হইতে নানা দেশে রপ্তানি হয়। দক্ষিণ খুলনা বা প্রাচীন যশোহরের বালাম নৌকা নিজস্ব। প্রতাপাদিত্যের সময়েও রসদ প্রেরণের জন্য এ নৌকার প্রচলন খুবই ছিল। বড় নৌকা বা জাহাজকে পূৰ্ব্বকালে ডিঙ্গা বলিত; এবং সৰ্ব্বজাতীয় ছোট নৌকার সাধারণ নাম ছিল—ডিঙ্গি। একজন লোকে একখানি বৈঠা দিয়া ইহা স্বচ্ছন্দে বাহিতে পারে; নদীতীরবাসী প্রত্যেক গৃহস্থের এ নৌকার প্রয়োজন ছিল এবং এখনও উহা ব্যবহৃত হয়। যশোহরে ইহার যথেষ্ট ব্যবহার ছিল। ডিঙ্গি অপেক্ষা একটু বড় নৌকা ছই বা আবরণ দিয়া দাঁড় বসাইলে ‘পান্‌সী’ হইত এবং উহাতে অল্প সংখ্যক লোক চলাফেরা করিতে পারিত। যে সব প্রকাণ্ড আকারের পানসী ফরিদপুর অঞ্চল হইতে আসিত, তাহাকে ‘সৈদপুরী পানসী’ বলে। পান্‌সী অপেক্ষা একটু বড় ও শক্ত, অনাবৃত, ভারবাহী নৌকাকে ‘বাছাড়ী’ বলে; তদপেক্ষা বড় হইলে ‘বাছাড়ী জাহাজ’ হয়। এখনও ‘বাছাড়’ উপাধিধারী নমঃশূদ্র জাতীয় লোকেরা বহুসংখ্যক প্রাচীন যশোহরের সন্নিকটে বাস করেন। সম্ভবতঃ তাঁহাদের নামানুসারে এই প্রকার নৌকার নাম হইয়া থাকিবে। এই সকল নৌকা ব্যতীত সংবাদাদি প্রেরণের জন্য অত্যন্ত দ্রুতগামী সিপ নৌকা, ভারী দ্রব্য ও হাতী ঘোড়া প্রভৃতি জীবজন্তু বহনের জন্য ‘ঢাকাই পাটুয়া’ ‘ভড়’ বা ‘জঙ্গ’ নৌকা ব্যবহৃত হইত। ‘পাতিল’ নৌকা উত্তর-পশ্চিম দেশ হইতে আসিত এবং মোগলবাহিনীতে রসদ বহনের জন্য উহা ব্যবহৃত হইত। প্রতাপাদিত্যের নৌ-বাহিনীতে ঘুরাব, জালিয়া, বালাম, পলওয়ারী ও কোশার সংখ্যাই অধিক। তন্মধ্যে, ঘুরাব, কোশা ও জালিয়া প্রকৃত রণতরী।[১৬] অপরগুলি অধিকাংশই ভারবাহী।

এই সকল জাহাজ ও নৌকা গঠন করিতে প্রতাপাদিত্যের আর একটি বিশেষ সুবিধা ছিল। সুন্দরবনে পোতনির্মাণের উপযোগী কাঠের অভাব ছিল না। তন্মধ্যে সুন্দরীকাঠই সর্ব্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট। এই কাঠ দেখিতে সুন্দর, গাঢ় লালবর্ণ, ইহা খুব শক্ত এবং ভারসহ; কাঠে গিরা বা গাঁইট কম, ‘ফাঁড়িলে দীর্ঘ তক্তা হয়; এ কাঠ জলে ভাল থাকে, লোনায় সহজে নষ্ট হয় না। এমন কি, জলের মধ্যে সুন্দরীকাঠ শাল বা সেগুন অপেক্ষাও বেশী দিন টিকে। এখন যেমন ভাল সুন্দরীকাঠের বিশেষ অভাব, তখন তাহা ছিল না।[১৭] প্রতাপাদিত্যের বাড়ীর কাছে নিজের এলেকায় বহুকালের সঞ্চিত সুন্দরীবৃক্ষ যথেষ্ট পাওয়া গিয়াছিল। তিনি অনায়াসে সংগ্রহ করিয়া এই কাঠে অসংখ্য তরণী গড়িয়াছিলেন। জাহাজের তলায় সুন্দরীকাঠ ভাল উপাদান ছিল; বাইনের তক্তায় পাটাতন ও আবরণের বিশেষ সাহায্য করিত। একমাত্র সুন্দরীকাঠই যে অবলম্বন ছিল, তাহা নহে। সকল কারিগরে সুন্দরীকাঠ দ্বারা কার্য্য করিতে সমর্থ বা সম্মত ছিলেন না। ঘুরাব প্রভৃতি প্রধান জাহাজগুলি অন্য দেশের ধরনে শাল সেগুনে নির্ম্মিত হইত। ইয়োরোপে ওক (oak) কাঠে জাহাজ গড়া হইত; সে দেশের লোকে ওকের গৌরবে গর্ব্বান্বিত ছিল। কিন্তু ওক অপেক্ষা সেগুন অনেক ভাল। ওকের জাহাজ বার বৎসরে পরিবর্ত্তন করিতে হইত; কিন্তু সেগুনের পোত ৫০ বৎসর থাকিত। সেগুনের তলা ও শাল শিশু দ্বারা অন্যান্য অংশ গড়িলে জাহাজ খুব দীর্ঘস্থায়ী হইত।

 পাতিল নৌকা

প্রতাপাদিত্যের উৎকৃষ্ট রণতরীর সংখ্যাই সহস্রাধিক ছিল, অন্যান্য পোতের সংখ্যা ততোধিক। ইসলাম খাঁর নবাবী আমলে আবদুল লতীফ নামক যে ভ্রমণকারী নূতন দেওয়ানের সঙ্গে বঙ্গে আসিয়াছিলেন, তাঁহার বর্ণনা হইতে জানিতে পারি, প্রতাপাদিত্যের ‘যুদ্ধ-সামগ্রীতে পূর্ণ প্রায় সাত শত নৌকা ছিল।[১৮] মোগল সেনানী ইনায়েৎ খাঁ যখন তাঁহার বিরুদ্ধে প্রেরিত হন, তখন প্রতাপের পুত্র উদয়াদিত্য ৫০০ রণপোত লইয়া তাঁহাকে প্রথম আক্রমণ করিয়া ছিলেন। ইহা ভিন্ন সেই সময় রাজধানীর সন্নিকটে ও প্রধান প্রধান নৌ-দুর্গে রাজ্যরক্ষার জন্য আরও অনেক রণতরী ছিল। রসদাদি সংগ্রহ ও যাতায়াত ব্যবস্থা জন্য, যুদ্ধের আনুষঙ্গিক কার্য্য ও সংস্কার জন্য যে আরও কত শত জাহাজ ও নৌকা কত স্থানে ছিল, তাহা স্থির করিয়া বলিবার উপায় নাই। তবে তাহারও আনুমানিক সংখ্যা যে সহস্রাধিক হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই।

এই সকল জাহাজ নিৰ্ম্মাণ ও সংস্থানের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হইয়াছিল। যশোহর দুর্গ হইতে[১৯] ৪/৫ মাইল উত্তরে একটি স্থান নির্দ্দিষ্ট হইল এবং তথায় নৌ-বিভাগের কাৰ্যালয় স্থাপিত হইল। প্রথমতঃ বাঙ্গালী বা উজবেগ জাতীয় কর্ম্মচারীর অধীন কার্য্যারম্ভ হইয়াছিল। এই কর্মচারী কে, জানিতে পারি নাই। তৎপরে পর্তুগীজ জাতীয় ফ্রেডারিক্ ডুড্‌লিকে (Frederick Dudley) নিযুক্ত করিলে, তিনিই সর্ব্বময় কর্তা হইয়া বসিলেন। কর্মদক্ষ ডুলির পূর্ব্ব পরিচয় সম্বন্ধে কোনও সন্ধান পাওয়া যায় নাই। নৌ-বিভাগের প্রধান কার্য্যালয়ের নাম হইয়াছিল, জাহাজঘাটা; তথায় ডুলি ও তাঁহার কর্মচারিগণের কর্মশালা ও আবাসগৃহ নির্ম্মিত হইল; উহার ভগ্নাবশেষ এখনও আছে। যমুনার খাতের পূৰ্ব্বতীরে জাহাজঘাটা; এ স্থানের খাতের ধার দিয়া রাস্তা চলিয়া গিয়াছে। প্রতাপাদিত্যের আমলের পুরাতন রাজবর্থ এক্ষণে ডিষ্ট্রাক্ট বোর্ডের রাস্তা হইয়াছে। এই রাস্তার পার্শ্বে ৪১৬ ×২১ó ফুট পরিমিত স্থানে এখনও ইষ্টক স্তূপ, প্রাচীর, খিলান প্রভৃতির ভগ্নাবশেষ রহিয়াছে। উত্তর দিকের মৃত্তিকা প্রোথিত কয়েকটি প্রাচীর দেখিয়া তত পুরাতন বলিয়া বোধ হয় না; সম্ভবতঃ নীলকরগণ এখানেও প্রাচীন গৃহাদি ভাঙ্গিয়া কুঠি স্থাপনের চেষ্টায় ছিলেন; যমুনার জল লোনা হওয়াতে বোধ হয় সে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় নাই। ভগ্নচিহ্নের মধ্যে পূৰ্ব্বপার্শ্বে শতাধিক ফুট দীর্ঘ এক ভগ্ন অট্টালিকা এখনও দণ্ডায়মান রহিয়াছে। সম্ভবতঃ উহাই ছিল পোতাধ্যক্ষের আবাসবাটিকা। উহার উত্তর দিকে একটি খোলা ঘর, সেই দিকে সদর। তাহার দক্ষিণে একটি গুম্বুজওয়ালা ঘর, উহাই আফিস। তৎপরে দুই পার্শ্বে দুইটি গুম্বুজওয়ালা ছোট ঘর, দ্রব্যাদি রাখিবার স্থান। তাহার দক্ষিণে একটি সর্ব্বাপেক্ষা বড় ঘর, সম্ভবতঃ শয়ন ঘর, উহাও গুম্বজওয়ালা। তাহারই পার্শ্বে স্নানাগার, উহাতে দুইধারে দুইটি চৌবাচ্চা; অট্টালিকার গাত্র সংলগ্ন প্রকাণ্ড ইন্দারা হইতে জল তুলিয়া নলদ্বারা ঐ জলে চৌবাচ্চা পুরিয়া দেওয়া হইত। প্রত্যেক গুম্বুজের উপরই এক একখানি গোলাকার স্ফটিক বসান ছিল, তজ্জন্য গৃহগুলি বাহিরের আলোকে আলোকিত হইত।

জাহাজঘাটের ভগ্নগৃহ

জাহাজঘাটাকে কেহ কেহ কোটাঘাটাও বলে। কেহ কেহ বলে, ভগ্ন কোটাটিতে নবাবের কাছারি বাড়ী ছিল। সম্ভবতঃ প্রতাপের পতনের পর অল্পদিন মধ্যে ধুমঘাট বাসের অযোগ্য হইলে, মোগল ফৌজদার কিছু দিনের জন্য জাহাজঘাটার গৃহে অবস্থান করিয়াছিলেন। জাহাজঘাটার একটু উত্তরে একটি ঢিপি আছে; কেহ কেহ অনুমান করেন, এখানে পর্তুগীজ পোতাধ্যক্ষ ও তাঁহার স্বজাতীয়দিগের জন্য একটি গীর্জ্জা ছিল; অনুমান অযৌক্তিক নহে, কারণ পার্শ্ববর্তী মৌতলায় মুসলমানদিগের জন্য একটি মসজিদ আছে। হিন্দুদিগের ত কথাই ছিল না; নিকটবর্ত্তী নকীপুর, পরমানন্দকাঠি ও গোপালপুরে অনেকগুলি হিন্দু মন্দির ছিল।

জাহাজঘাটা ও মৌতলার কতকাংশ লইয়া পরিখাবেষ্টিত দুর্গ ছিল। এখানে নৌ-সৈন্য ও গোলন্দাজ সৈন্যেরা বাস করিত। উত্তরদিক দিয়া পরিখার পরিচয় স্বরূপ একটি কাটাখাল আছে। ঐ খালে এখনও অনেক স্থানে জল থাকে। দুর্গের উত্তর-পূর্ব্ব কোণে খালের দক্ষিণ গায়ে মৌতলার প্রসিদ্ধ মজিদ। উহা এখনও সুন্দর অবস্থায় আছে এবং স্থানীয় বহুলোকে সেখানে নেমাজ করেন। এই মসজিদের জন্যই স্থানটির নাম হইয়াছে নেমাজগড়। মসজিদটির ভিতরের মাপ ১৯-২ ×১৯-২ ইঞ্চি; ভিত্তি ৩-৩, মাটি হইতে গুম্বুজের নিম্ন পর্য্যন্ত উচ্চতা ১২ ফুট; একটি মাত্র বড় গুম্বজ, মিনার নাই। পূর্ব্বদিকে ৩টি এবং উত্তর দক্ষিণে প্রত্যেক দিকে ২টি করিয়া দরজা। পরবাজপুর ও ঈশ্বরীপুরের বিখ্যাত মজিদের মত, এই নেমাজগড়ের মসজিদও প্রতাপাদিত্যের উদারতার পরিচয় দিতেছে।

দুধূলি ডক্

জাহাজঘাটা হইতে একটু উত্তর দিকে গিয়া যমুনার পশ্চিম পারে দুধূলি ডক্ বা পোত নির্মাণ স্থান। কর্ম্মাধ্যক্ষ ফ্রেডারিক ডুড়লির (Dudley) নামানুসারে এই স্থানটির নাম হইয়াছে দুধূলি। এই স্থানে পূবর্বদিক হইতে একটি খনিত খাল আসিয়া যমুনায় মিশিয়াছে এবং উহার অপর পার হইতে বরাবর পশ্চিম দিকে চলিয়া গিয়াছে; এই খাল হইতে উত্তর-পূর্ব্ব মুখে একটি পাশখালি বাহির করিয়া একটি কৃত্রিম হ্রদে মিশান হইয়াছিল। বড় বড় জাহাজ সংস্কারের জন্য এই খাল দিয়া আসিয়া এই হ্রদে নামিতে পারিত; এবং সেখানে প্রবেশপথ বন্ধ করিয়া দিয়া, হ্রদটিকে শুষ্ক করিয়া লইয়া জাহাজের তলদেশ পরীক্ষা বা সংস্কার করা যাইত। উক্ত খালের মুখ হইতে বরাবর উত্তর দিকে নদীর পশ্চিম পার্শ্ব দিয়া বড় পুষ্করিণীর মত কতকগুলি খাত কাটা রহিয়াছে। দুই দুইটি খাতের মধ্যবর্ত্তী স্থান এখনও পাহাড়ের মত উচ্চ আছে। একটি খাতের পরে ঢিপি, পুনরায় খাত, পুনরায় ঢিপি, এই ভাবে আমরা ১৩০টি খাত গণনা করিতে পারিয়াছিলাম। এ খাতগুলিকে ডক বা গুঁদি বলিত। গুঁদির মধ্যে কতকগুলি ১০০×৬০ ফুট পরিমিত এবং অনেকগুলি ইহা অপেক্ষা কমবেশী নানা আকারের হইবে। নদীর দিকে ব্যতীত গুঁদি সকলের অপর তিন পার্শ্ব ইষ্টকথিত ছিল; এখনও ২/৪টিতে সেরূপ গাঁথুনি আছে। মধ্যবর্ত্তী ভিট্টাগুলির কতক অত্যন্ত উচ্চ। এক মাইলের অধিক দূর পর্য্যন্ত হাঁটিয়া গেলে, তবে গুঁদিগুলি পার হইয়া যাওয়া যায়। উত্তর দিকে যেখানে গুঁদিগুলি শেষ হইয়াছে, সেখানে যমুনা নদী প্রায় দুই মাইল প্রশস্ত ছিল; এখনকার খাত দেখিলে উহা অনুমিত হয়। গুঁদির মুখে দুই পার্শ্বের ইষ্টক প্রাচীরের প্রান্তের সহিত কাষ্ঠনির্মিত কপাট লাগান ছিল; জাহাজ বা নৌকাগুলিকে উহার মধ্যে প্রবেশ করাইয়া ঐ সকল কপাট বন্ধ করিয়া জল নিষ্কাশন পূর্ব্বক উহাদিগকে মেরামত করা হইত, অথবা শুষ্ক গুঁদিতে রাখিয়া নূতন পোত নির্ম্মাণ করিয়া জলপূর্ণ করতঃ সেগুলিকে ভাসাইয়া লওয়া হইত। শুধু দুলিতে নহে, জাহাজঘাটা, আড়াইবাকীর মোহানা, সগর দ্বীপ ও অন্যান্য স্থানেও পোত-নির্মাণের ব্যবস্থা ছিল।

পাদটীকা :

১. Ain-i-Akbari (Blochmann), pp. 279-80.

২. ‘ততঃ প্রবাসিতো বিদ্বান্ বিদুরেণ নরস্তদা।
পার্থানাং দর্শয়ামাস মনোমারুতগামিনীম্।।
সৰ্ব্ববাতসহাং নাবং যন্ত্রযুক্তাং পাতাকিনীম্।
শিবে ভাগীরথীতীরে নরৈর্বিস্রংম্ভিতিঃ কৃতাম।।’

—’মহাভারত’, আদিপৰ্ব্ব, ১৪৯/৪-৫

৩. ‘রঘুবংশম’, ৪র্থ, ৩৬ শ্লোক।

৪. Mookerji, Radhakumud, Indian Shipping, 1912, pp, 46-9; Teh Periplus of Erythrean Sea (Wilford W. Schoff), p. 255.

৫. ‘কান্দেরে বাঙ্গাল ভাই বাফোই বাফোই।
কুক্ষণে আসিয়া প্রাণ বিদেশে হারাই।
আর বাঙ্গাল বলে বড় লাগে মায়া মো।
বিদেশে রহিলু না দেখিলু মাগু পো’…ইত্যাদি

—‘কবিকঙ্কণ চণ্ডী’, ডিঙ্গার বিনাশে নাবিকদের রোদন (বঙ্গবাসী সংস্করণ), ১৯৮ পৃ

৬. ‘এসব সফরে যত সদাগর বৈসে।
জঙ্গ ডিঙ্গা ল’য়ে তারা বাণিজ্যেতে আইসে।
সপ্তগ্রামের বেণে সব কোথাও না যায়।
ঘরে বস্যে সুখ মোক্ষ নানা ধন পায়।’

—‘কবিকঙ্কণ চণ্ডী’ (ঐ সংস্করণ), ১৯৬ পৃ

‘কথা-সরিৎ-সাগর’ প্রভৃতি গ্রন্থে দেখা যায়, বণিকেরা ‘যান পাত্র বা যান পাত্রক’ নামে এক প্রকার পোতে সমুদ্র যাত্রা করিতেন, চীনেরা অদ্যাপি উহাকেই যাক নামে ব্যবহার করিতেছেন (Chinese Junk)। ঐ যাকই জঙ্গ বলিয়া উল্লিখিত হইতেছে। এই পোতের আকার খুব বড় এবং তলদেশ বিস্তৃত। ইহাতে অনেক বোঝাই ধরিত।—’বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, বৈশ্যকাণ্ড, ৬৯-৭০ পৃ।

৭. ‘শাকে রস রস বেদ শশাঙ্ক গণিতা’ অর্থাৎ ১৪৯৯ শকে বা ১৫৭৭ খৃষ্টাব্দে কবিকঙ্কণ চণ্ডীকাব্য প্রণয়ন করেন

৮. ‘চতুঃষষ্টিদণ্ডযুক্তা নৌরানীতা মহামতিঃ। নালীকৈঃ সজ্জিতা স্বৈরং সৈন্যাদ্যৈঃ পরিরক্ষিতঃ।’

–ঘটককারিকা, নিখিলনাথের ‘প্রতাপাদিত্য’, মূল ১১৯ পৃ। [উক্ত গ্রন্থের রামরাম বসু রচিত ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ অংশের টিপ্পনী, ৬৯–শি মি ।

৯. সম্ভবতঃ হিন্দুরা পূজার সময় যে কোশা ব্যবহার করেন, কতকটা তাহারই মত আকার বলিয়া এই নৌকাগুলির নাম কোশা নৌকা।

১০. ‘প্রবাসী,’ কাৰ্ত্তিক, ১৩২৭, ৪ পৃ। [পুনরায় পাঠোদ্ধারান্তে অধ্যাপক সরকার ‘বলিয়া’-কে ‘ভলিয়া’ বলিয়াছেন—শনিবারের চিঠি’, জ্যৈষ্ঠ, ১৩৫৫; পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য—শি মি। ]

১১. Wheeler, J. T., Early Records of ‘British India, p. 54; Indian Shipping p. 236.

১২. পশ্তা বা ফস্তা Brigantine নৌকার মত। এই পোত সাধারণতঃ দস্যুদিগের দ্বারা ব্যবহৃত হইত।

১৩. Indian Shipping, p. 242; Bombay Gazetteer, Vol. I, Part II, p, 89. জালিয়া ও জল্‌বা (Jalbah) বোধ হয় একই কথা। ইহা প্রাচীন গ্যালি (Galley) জাহাজেরই প্রকারান্তর। ইংরাজীতে Gallivat ও Galliot দুই নাম আছে। উহার মধ্যে Golliot গুলি ইয়োরোপে ভূমধ্যসাগরে এবং Gallivat গুলি দাক্ষিণাত্যের উপকূলে ব্যবহৃত হইত। মোগলদিগের নৌ-বাহিনীতে জালিয়া বা জবা জাহাজই অধিক সংখ্যক থাকিত।

১৪. ‘The build of the boats all along the coast of India varies according to the localities for which they are destined and each is peculiarly adapted to the nature of the coast on which it is used.’— Bevan, H., Thirty Years in India, Vol. I, p. 14.

১৫. কলিকাতায় বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনের ৭ম অধিবেশনে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর অভিভাষন, ২৭ পৃ।

১৬. মোগলদিগের নওয়ারা বিভাগে ঘুরাব, পাতিল, জলবা এবং কোশার সংখ্যা বেশী ছিল। মগদিগের নৌ-বিভাগে ঘুরাব, জলবা, জঙ্গি (জঙ্গ বা Junk) এবং কোশা ও বালাম অধিক।

১৭. বর্ত্তমান গ্রন্থের ১ম খণ্ড, ৫৭-৬১ পৃ।

১৮. প্রবাসী আশ্বিন, ১৩২৬, ৫৫২ পৃ [পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য—শি মি]।

১৯. ধুমঘাট দুর্গকেই এখন হইতে আমরা সাধারণতঃ যশোহর দুর্গ বলিব। প্রাচীন যশোহর দুর্গ বলিতে হইলে তাহাকে নির্দ্দিষ্ট ভাবে মুকুন্দপুর দুর্গ বলিয়া উল্লেখ করিব।

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন