১২. সাহিত্য

সতীশচন্দ্র মিত্র

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ – সাহিত্য 

সাহিত্য সম্বন্ধে বিশেষ আলোচনার স্থান এখানে নাই। এখানে শুধু শ্রেণীবিভাগানুসারে প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদিগের নামোল্লেখের সঙ্গে অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয় মাত্র দিব। সৰ্ব্ববিধ সাহিত্যে যশোহর- খুলনা কিরূপে আত্ম-প্রাধান্য অক্ষুণ্ণ রাখিয়াছে, উহাতে তাহা সপ্রমাণ করিবে। 

১. কাব্য ও কবিতা। বঙ্গ-সাহিত্যে যশোহর-খুলনার প্রভাব প্রতিপন্ন করিবার পক্ষে ইহাই বলিলে যথেষ্ট হইবে যে, কবিকুলচূড়ামণি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং প্রসিদ্ধ নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র যশোহরের সুসন্তান। সেনহাটির স্বভাবকবি ‘সদ্ভাবশতক’-রচয়িতা কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার এবং সিঙ্গিয়ার নিকটবর্ত্তী জগন্নাথপুর-নিবাসী, ‘মহিলা’-কাব্যের কবি সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার সৰ্ব্বত্র সুবিখ্যাত। মাইকেল ভ্রাতুষ্পুত্রী বিদ্যানন্দকাটির মানকুমারী বসু বঙ্গীয় মহিলা কবিবৃন্দের অগ্রগণ্য।[১] বারুইখালির সংস্কৃত-স্বভাব-কবি কবিচন্দ্র এবং আধুনিক সময়ের খণ্ডকবিতা-লেখক কালিয়া নিবাসী প্যারীশঙ্কর দাসগুপ্ত প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। 

২. শাস্ত্র চর্চ্চা ও গদ্য সাহিত্য। মনুসংহিতাদি বহুগ্রন্থের টীকাকার গঙ্গাধর কবিরাজ, ‘নাট্য পরিশিষ্ট’ প্রণেতা কৃষ্ণানন্দ বাচস্পতি, দর্শনাদির ব্যাখ্যাতা পূর্ণচন্দ্র বেদান্তচুঞ্চু, বাৎসায়ন-ভাষ্যের অনুবাদক শ্রীযুক্ত ফণিভূষণ তর্কবাগীশ প্রভৃতি মহাত্মাগণের উল্লেখ বংশ-পরিচয়ে পূর্ব্বে করিয়াছি। প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক সারসানিবাসী ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায়, ‘আমিত্বের প্রসার’ প্রভৃতি বহুগ্রন্থ লেখক রায় বাহাদুর শ্রীযুক্ত যদুনাথ মজুমদার, সংস্কৃত কাব্য-সমালোচক সুলেখক অধ্যাপক শ্রীযুক্ত রাজেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ, ‘মানবতত্ত্ব’ প্রভৃতির গ্রন্থকার সামটা-নিবাসী পণ্ডিত বীরেশ্বর পাঁড়ে এবং বৌদ্ধজাতকের অনুবাদক এবং বহুসংখ্যক স্কুলপাঠ্য ইতিহাসাদি গ্রন্থ-রচয়িতা সুলেখক রায় সাহেব ঈশানচন্দ্র ঘোষ বঙ্গসাহিত্যে সুপরিচিত। হিন্দু-রসায়নের (ইংরাজী) ইতিহাস-লেখক প্ৰসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক স্যর প্রফুল্লচন্দ্র রায় সমাজ ও অর্থ-সমস্যার মীমাংসক বহু প্রবন্ধ লিখিয়া খ্যাতি লাভ করিয়াছেন। ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’-সম্পাদক ভক্তকবি শিশিরকুমার ঘোষ ‘অমিয় নিমাই চরিত’ প্রভৃতি গ্রন্থ লিখিয়া ভাষার মধ্যে ভাবের বন্যা প্রবাহিত করিয়া দিয়াছেন। একই কপোতাক্ষীর কূলে বঙ্গের সর্ব্বপ্রধান কবি মধুসূদন, সৰ্ব্বপ্রধান পত্রিকা সম্পাদক শিশিরকুমার এবং সর্ব্বপ্রধান রাসায়নিক প্রফুল্লচন্দ্রের জন্ম; একজনের আবির্ভাবই দেশের গৌরবের পক্ষে যথেষ্ট হইত, তিনজনের জন্মগৌরবে যশোহর-খুলনা ধন্য হইয়াছে। 

৩. উপন্যাস ও ইতিহাস। যশোহর-বাগ্‌আচড়া-নিবাসী তাঁরকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ‘স্বর্ণলতা’র মত গার্হস্থ্য উপন্যাস লিখিয়া বঙ্গসাহিত্যে অমরত্ব লাভ করিয়াছেন। বঙ্কিমচন্দ্র গরিবের ঘরের প্রকৃত চিত্র দিতে পারেন নাই, তারকনাথ সে বিষয়ের প্রথম প্রবর্তক এবং ‘স্বর্ণলতা’ আদর্শ গ্ৰন্থ। তারকনাথের আরও গ্রন্থ আছে। খুলনার অন্তর্গত বিষ্ণুপুর-নিবাসী শ্রীযুক্ত বিধুভূষণ বসু ‘লক্ষ্মীমেয়ে’, ‘লক্ষ্মীমা’ ও ‘লক্ষ্মীবউ’ প্রভৃতি সুলিখিত উপন্যাসে তারকনাথের পথানুবর্ত্তন করিয়া খ্যাতিলাভ করিয়াছেন। অন্য ঔপন্যাসিক বা গল্প লেখক দিগের মধ্যে চৌগাছার ঘোষ – জমিদারবংশীয় বর্তমান ‘বসুমতী’-সম্পাদক শ্রীযুক্ত হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, সেনহাটি-নিবাসী শ্রীযুক্ত কালীপ্রসন্ন দাস গুপ্ত, পলিতানহাটা-নিবাসী অন্ধলেখক যদুনাথ ভট্টাচার্য্য, ধুলগ্রাম নিবাসী ধুলগ্রাম-নিবাসী অধ্যাপক শ্রীযুক্ত খগেন্দ্রনাথ মিত্র, পাঁজিয়া-নিবাসী শ্রীযুক্ত সতীশচন্দ্র বসু ও নলদী-নিবাসী শ্রীযুক্ত শ্যামলাল গোস্বামীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

ঐতিহাসিক ক্ষেত্রে ‘সমসাময়িক ভারত’ প্রভৃতি গ্রন্থ-প্রণেতা অধ্যাপক শ্ৰীযুক্ত যোগীন্দ্রনাথ সমাদ্দার ও ‘গৌড়ের ইতিহাস’ লেখক সিদ্ধিপাশার অধিবাসী রজনীকান্ত চক্রবর্ত্তী যশস্বী হইয়াছেন এবং বর্তমান গ্রন্থকারের জীবনব্যাপী প্রচেষ্টা লোকচক্ষুর গোচরীভূত হইয়াছে। প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক শ্রীযুক্ত রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি যশোহর-ছঘরিয়ার সুসন্তান বলিয়া দাবি করি। প্রখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক শ্রীযুক্ত উমেশচন্দ্র বিদ্যারত্ন কালিয়ার অধিবাসী ছিলেন। ঘটকগ্রন্থকার কালিয়া-নিবাসী রামকান্ত কবিকণ্ঠহার, মহেশপুর-নিবাসী লালমোহন বিদ্যানিধি, নদী-নিবাসী বংশীবদন বিদ্যারত্ন, মিক্‌শিমিল-নিবাসী জয়চন্দ্র মিত্র ও সেনহাটি-নিবাসী শ্যামলাল মুন্সী সুবিদিত।[২]

ভারতবর্ষে হিন্দু-সমাজের নিম্নস্তরে যেরূপ ধর্ম্মভাব প্রসারিত হইয়াছে, জগতের বক্ষে কুত্রাপি এমন হয় নাই। এই জন্য ঋষিগণ এদেশে পুরাণের সৃষ্টি করেন, এই জন্যই সর্ব্বত্র রামায়ণ মহাভারতের পঠনপাঠন হয়। বঙ্গীয় হিন্দু কৃত্তিবাস ও কাশীরামের নিকট যত ঋণী, এত আর কাহারও নিকট নহে। শুধু পল্লীতে পল্লীতে দেবমন্দিরে, বৃক্ষতলে বা গৃহকোণে ভারতাদি পুরাণের পঠন-পাঠন নহে, ঐ সকল পৌরাণিক গ্রন্থ হইতে নীতি-গল্প সংগ্রহ করিয়া, তাহাই সাধারণের বোধগম্য সরস ভাষায় কবিতার পয়ারে বা সঙ্গীতের সুরে অন্তর্নির্বিষ্ট করিয়া সাজসজ্জা, ভাবভঙ্গি, বাদ্যালাপ ও নৃত্যরঙ্গের সাহায্যে আবালবৃদ্ধবনিতাকে ভাবমুগ্ধ করা হইত। ইহা হইতেই ক্রমে কথকতা, পাঁচালী, নাটক, যাত্রা, ভাসান প্রভৃতি উদ্ভব হইয়াছে। যশোহর ধর্ম্মতত্ত্ব প্রচার কার্য্যে এ অঞ্চলের সকল স্তরের সকল লোকে সাধ্যমত চেষ্টা করিয়া কৃতিত্ব ও বিশিষ্টতা লাভ করিয়াছেন। শুধু শাস্ত্রদর্শী পণ্ডিত ও কবি নহেন, এ অঞ্চলের অনেক নিরক্ষর গ্রাম্যলোকেও অনর্গল কবিতা ও গান রচনা করিয়া, তর্জ্জার লড়াই ও ছড়া কাটাকাটির ছলে, চামর ঢুলাইয়া রামায়ণের গানে বা ঢু’লের সঙ্গে নাচিয়া ‘কবির পাল্লায়’ ধর্ম্মতত্ত্ব প্রচারের পথে প্রশস্ত করিয়া দিয়াছেন। এমন কি, নবাগত মুসলমান অধিবাসিগণও হিন্দুর সহিত মিলিয়া মিশিয়া উভয় ধর্ম্মের সারনীতিসমূহ সর্ব্বজাতীয় লোকের সাধারণ সম্পত্তি করিয়া দিয়াছেন। উন্নত বঙ্গীয় সাহিত্যের সমালোচনা আমাপেক্ষা যোগ্যতর ব্যক্তিগণ করিতে পারেন ও করিতেছেন, কিন্তু আমার আলোচ্য জেলাদ্বয়ের এই জাতীয় নিম্ন-সাহিত্যের সংবাদ তাঁহারা না রাখিতে পারেন, এজন্য সাধ্যমত আমি কিছু সংবাদ সংগ্রহ করিয়া দিয়া এই সাহিত্য-প্রসঙ্গের উপসংহার করিব। মাইকেল, দীনবন্ধু প্রভৃতি যাঁহারা আমার দেশের মুখোজ্জ্বলকারী, তাঁহাদের গুণগ্রামের কথা স্থগিত রাখিয়াও আমি এই সকল স্বল্প- শিক্ষিত বা নিরক্ষর কবির নাম ও কীর্তিকাহিনী চিরস্থায়িনী করিতে প্রয়াসী। আমার বিশ্বাস প্রাদেশিক ইতিহসের সঙ্কলয়িতা ইঁহাদের নাম বিস্মৃত হইলে প্রত্যবায়গ্রস্ত হইতে পারেন। 

১. কথকতা। শ্ৰীমদ্ভাগবত ও মহাভারতাদি পুরাণের শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যার সঙ্গে সরল ও সরস ভাষায় যে বিশদ ব্যাখ্যা হয়, তাহারই নাম কথকতা। উহার মধ্যে মধ্যে ভাবোদ্দীপক গান ও সুরের খেলা এবং লোকরঞ্জনের জন্য তীব্র পরিহাস ও রসিকতা চলে। প্রাচীন কাল হইতে এ প্রদেশে বহু কথকের আবির্ভাব হইয়াছে; উহাদের কেহ কেহ কথকতার জন্য স্বতন্ত্র পুঁথিরচনা করিতেন। আধুনিক সময়ে বিভাগদি নিবাসী কথকচূড়ামণি বিশ্বেশ্বর শিরোমণির নাম সমধিক বিখ্যাত। তৎপুত্র শ্রীযুক্ত বাণেশ্বর বিদ্যারত্ন নব্য প্রণালীর কথকতায় খ্যাতিলাভ করিয়াছেন। 

২. পাঁচালী। কবিতাকারে পুরাণের অনুবাদ হইতেই পাঁচালীর উৎপত্তি। অধিকাংশ পাঁচালীই কৃষ্ণকথা লইয়া রচিত। একদা বঙ্গে শৈবমতের বহুল প্রচার হয়, তখন ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ চলিত, আধুনিক সময়ে সে ভাব বিলুপ্তপ্রায় হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গে দাশু রায় ও গোবিন্দ অধিকারী প্রধানতঃ কৃষ্ণকীৰ্ত্তনে দেশজয় করিয়াছিলেন, যশোহরেও উলসী-নিবাসী মধুবর্ষী মধুকা’ন (কিন্নর) তেমনই নূতন ধরনে নূতন সুরে কীর্ত্তন গাহিয়া দেশবিখ্যাত হইয়াছেন। কপোতাক্ষীকূলে দত্ত মধুসূদন ‘ব্রজাঙ্গনা’-বিরহের যে সুরভঙ্গি দিয়াছিলেন, বেত্রবতীকূলে কিন্নর মধুসূদনও তেমনই তাঁহার ‘ঢপ’-সঙ্গীতের বিভিন্ন পালায় নূতন পদ্ধতির পাঁচালী রচনা করিয়া গিয়াছেন। রায়গ্রাম – নিবাসী রায়গুণাকর রসিকচন্দ্র চক্রবর্ত্তী অমিয়ভাষিত বালকবৃন্দের সাহায্যে তাঁহার ‘বালক-সঙ্গীত’ নামক পাঁচালীর নূতন সংস্করণ প্রচার করিয়া যশস্বী হইয়াছিলেন। কেবল কৃষ্ণকথা নহে, বহু গ্ৰাম্য দেবতার নামেও পাঁচালী রচিত হইয়াছিল। মনসার গল্প এদেশের বড় প্রিয় প্রসঙ্গ, তাঁহারও অনেক পাঁচালী এ দেশে রচিত ও বরিশাল হইতে প্রচারিত হইয়াছিল। গানবাদ্যসহযোগে উহাই যাত্রাভিনয়ের মত ‘মনসার ভাসানে’ পরিণত হয়; এখনও ‘ভাসানের দল’ আছে, তাহার গান ও কবিতায় এদেশীয় বহু অজ্ঞাতনামা কবির হস্ত দেখিতে পাওয়া যায়। সর্পভয়ের সঙ্গে যেমন মনসার সম্পর্ক, বসন্তরোগের সঙ্গে তেমনিই শীতলাদেবীর পূজা পদ্ধতি প্রচারিত হয়। শীতলাদেবীর করুণাকাহিনী প্রচারের জন্য বহু পাঁচালী রচিত হয়; শীতলাকে বৌদ্ধদেবতা বলিয়া সন্দেহ হইবার কারণ আছে; এদেশে যোগি-জাতীয় লোকেই বসন্তের চিকিৎসা করিতেন এবং শীতলার পাঁচালী গাহিতেন। যশোহরের নিকটবর্ত্তী আম্‌দাবাজ-নিবাসী রামেশ্বর ঘোষ কর্তৃক রচিত একখানি বিরাট ‘শীতলা মঙ্গল’ পুঁথি যশোহর-খুলনার কয়েক স্থানে দেখিয়াছি। উহা ১৬৮৫ শকে রচিত।[৩] মুসলমানেরা পীরের উদ্দেশে সির্ণী দিতেন দেখিয়া হিন্দুরাও সত্যনারায়ণকে ‘সত্যপীর’ করিয়া তাঁহার নামে সির্ণী মানসা করিতেন, এবং সত্যনারায়ণের বহু পাঁচালী রচিত হইয়া গৃহে গৃহে পঠিত হইতে থাকে। মুসলমানের পীর ‘মুস্কিলের আসান’ (উপশম) করেন, এজন্য এখনও হিন্দু গৃহে ‘আসান নারায়ণ’ ও সত্যপীরের সির্ণী দেওয়া হয়। সত্যনারায়ণের পাঁচালী যে কতজনে লিখিয়াছেন, তাহার ইয়ত্তা নাই। সিঙ্গা-শোলপুরের রঘুনাথ সার্ব্বভৌম, খরনিয়া-নিবাসী তারিণীশঙ্কর ঘোষ ও পাঁজিয়ার নন্দরাম মিত্রের পাঁচালী উল্লেখযোগ্য। ব্ৰহ্মা, বিষ্ণু, শিব— ইঁহারা ত্রিনাথ। পূৰ্ব্ববঙ্গে এই ত্রিনাথের মেলা বা পূজা হয়। সন্ধ্যার সময় তাম্বুল, সুপারি ও গাঁজা লইয়া দলবল জুটিয়া পূজা ও গান হয়; সঙ্গে সঙ্গে ‘ত্রিনাথের পাঁচালী’ পাঠ করা হয়। বরিশাল হইতে খুলনায়ও এই উৎসব সংক্রামিত হয় এবং কতজনের রচিত ‘ত্রিনাথের পাঁচালী’ আছে। বৰ্ত্তমান সময়ে স্বনামধন্য মতিরায়ের অনুকরণে অনেকে যাত্রাভিনয়ের পালা রচনা করিতেছেন, তন্মধ্যে মল্লিকপুর-নিবাসী অঘোরনাথ ভট্টাচার্য্য ও মাগুরা (খুলনা)-নিবাসী শ্রীযুক্ত মতিলাল ঘোষের নাম উল্লেখযোগ্য। 

৩. সারিগীত ও ভাটিয়াল গান। গ্রাম্যগানের মধ্যে সারিগীত প্রধান। নদীবক্ষে জলযাত্রায় এই গান গাওয়া হয়। সুতরাং নদীমাতৃক যশোহর-খুলনার উহা একটি বিশেষত্ব। বর্ষাকালে ইহার অধিক প্রচলন; ধান্যোৎপাদনে হর্ষোৎফুল্ল কৃষক ও মৎস্যজীবী নাবিকেরা ইহার প্রধান গাথক। আষাঢ়মাসে রথযাত্রায়, শ্রাবণসংক্রান্তিতে মনসাপূজায়, ভাদ্রসংক্রান্তিতে বিশ্বরম (বিশ্বকৰ্ম্মা) পূজায় এবং বিজয়া দশমীর ভাসানে নৌকার বাইচ দিবার সময় এই গানের অধিক প্রচলন ছিল। ‘ছিল’ই বলিতে হয়, কারণ কি জানি কি দুর্ভাগ্যের ফলে, দুর্ভিক্ষাদির তাড়নায় নির্মল আনন্দ যেন কৃষকপল্লী হইতে পলায়ন করিয়াছেন, এখন আর এ সব উৎসবে তেমন আমোদ প্রমোদ নৃত্যগীত হয় না। নৌকার উপর সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়াইয়া বা বসিয়া এই গান গীত হয় বলিয়া ইহার নাম ‘সারি গান’। শুনা যায়, নড়াইলের বিখ্যাত কালীশঙ্কর রায় রাজা সীতারামের ভাগ্য-বিগ্রহ আনিয়া নাম ভাঁড়াইয়া গোবিন্দরায় নামে একদা শ্রাবণী পূর্ণিমায় নড়াইলে প্রতিষ্ঠিত করেন; তৎপৌত্র স্বনামখ্যাত রতন বাবু ঐ তিথিতে এক জলযাত্রার বাৎসরিক উৎসব করিতেন, তদুপলক্ষে তাঁহার চেষ্টায় সারিগানের পাল্লা চলিত। আজকাল নদীবক্ষে তরঙ্গ-ভঙ্গের সঙ্গে স্বর-তরঙ্গ মিলাইয়া নাবিকেরা যে সব গীত গাহিয়া থাকেন, তাহারই সাধারণ নাম সারিগীত। খুলনার দক্ষিণাংশে অর্থাৎ ভাটি প্রদেশে ঐ জাতীয় গানের স্বরকম্পন-সম্বলিত সুর-বিশেষকে ‘ভাটিয়াল’ সুর বলে। সুরে এ দেশীয় অনেক নিরক্ষর লোকও দেহতত্ত্ব এবং ভগবানে আত্মনিবেদন সম্বন্ধীয় ভাবময় গান রচনা করিয়াছেন; উহার কত গান শুনিয়াছি, কিন্তু সে সব গান ও রচয়িতার নামের তালিকা সংগ্রহ করিতে পারিলে ধন্য হইতাম। এই সব ভাটিয়াল গানে মানুষের মর্ম্মে মর্ম্মে ধৰ্ম্মভাব প্রবেশ করাইয়া দেয়। নিস্তব্ধ সন্ধ্যালোকে গৃহপানে ধাবিত শ্রান্তক্লান্ত নিরক্ষর নাবিক যখন নদীবক্ষে শ্লথহস্তে বৈঠা টানিতে টানিতে উদাস প্রাণে গাহিতে থাকে : 

“হরি! বেলা গেল, সন্ধ্যা হ’ল, পার কর আমারে। 
তুমি পারের কর্তা, জেনে বার্ত্তা, ডাকি হে তোমারে।।”

তখন তাহার অসামান্য স্বরলহরী পল্লীপবন বিকম্পিত করিয়া লোকের চিত্তের যে চরম-চিন্তা জাগাইয়া দেয়, শিক্ষিত কবির জটিল ভাবময়ী মার্জিত ভাষায় তাহার প্রান্তস্পর্শও করিতে পারে না। 

৪. ‘গুরু সত্য’-গীত।। বঙ্গে কত সম্প্রদায় আছেন, তাহার শেষ নাই। কর্তাভজা বা বাউলের মত ‘গুরুত্য’ও একটি সম্প্রদায়। প্রায়ই নিম্নশ্রেণীর সংসার-বিরাগী অকৃতদার লোকে এই সম্প্রদায় রক্ষা করেন এবং মুসলমানের মত ‘জিগীর’ দিয়া (উচ্চ কীৰ্ত্তন করিয়া) ধর্ম্ম প্রচার করেন। যে সব লোকে এই মতের গান রচনা করিয়াছেন, তন্মধ্যে যশোহরের লালন ফকির ও ঈশান ফকির প্রধান। শুনা যায়, খুলনার দক্ষিণে জমা নামক স্থানের এক পোদজাতীয় ফকির প্রথমে এই ‘গুরুসত্য’ গান সুন্দরবনের কাঠুরিয়া যাত্রিগণের নিকট প্রকাশ করেন। 

৫. ‘বার’-সঙ্গীত, অষ্টক ও চড়ক সঙ্গীত ॥ স্থানে স্থানে স্ত্রী-পুরুষের ‘বার’ হয়, অর্থাৎ তাঁহার দৈবানুপ্রাণিত হইয়া ভাবোচ্ছ্বাসে নানা কথা বলেন। কেহ বা উৎসব অনুষ্ঠানে ধুয়া ধরিয়া গান করিয়া পয়সা রোজগার করেন। বাগেরহাটের খাঞ্জালির ‘বার’ ও মাগুরা মহকুমার শিমাখালির ‘বার’ উল্লেখযোগ্য। প্রতি বৎসর ঐ সব স্থানে গাহিবার জন্য অনেক গান রচিত হইত এবং তাহা দেশমধ্যে প্রচলিত আছে। হিন্দুদের চড়ক পূজার সময়ে পৌরাণিক প্রসঙ্গ লইয়া অষ্টকের গান হয়। নিরক্ষর লোকে অষ্টকের দল করিয়া বাহির হন; তাঁহারা শিবদুর্গা প্রভৃতি নানা সাজে সাজিয়া বেহালাদারের অগ্রে অগ্রে, ঢাকের তালে তালে, সাঁওতালী ধরনে নাচিয়া নাচিয়া গান করেন। এই গীতগুলি প্রায়শঃ আট চরণে সমাপ্ত, এজন্য উহাকে অষ্টক বলে। চড়ক পূজার ‘গাজন’ যে প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ উৎসব তাহা প্রথম খণ্ডে বিচার করিয়াছি (২৮৩-২৮৪ পৃ)। ঐ উপলক্ষ্যে যোগীরা দেউল পাটের সম্মুখে নূপুর পায়ে নাচিয়া নাচিয়া ‘বালাকি’ পাঁচালী পড়েন। ঐ জাতীয় বহুলোকে ‘বালার গান’ রচনা করিতে গিয়া যথেষ্ট কবিত্বের প্রকাশ করিয়াছেন। 

৬. গাজীর গীত ও মাণিক পীরের ছড়া। যিনি পৌত্তলিকতার বিনাশ করিয়া ইসলাম-ধৰ্ম্ম প্রচার করেন তিনিই গাজী। সুন্দরবনে বাঘ মারিলেও গাজী উপাধি হয়, কিন্তু তাহা নকল মাত্ৰ। পাঠান আমলে ধৰ্ম্ম প্রচারের জন্য বহুসংখ্যক গাজী এদেশে আসেন এবং তাঁহাদের সহিত হিন্দুদিগের বিবাদসূত্রে বহু সত্য মিথ্যা গল্প গুজব পুঞ্জীভূত হইয়াছে রহিয়াছে। সুদীর্ঘ ‘গাজীর পটে’ এই সকল ঘটনার চিত্র দেখান হইত এবং সুদীর্ঘ ‘গাজীর গীতালাপে’ উহার কথা রঞ্জিত ভাষায় লোকসমাজে বিবৃত হইত। গাজীর আগমন ও আক্রমণের বিশেষ বৃত্তান্ত প্রথম খণ্ডে দিয়াছি (২৬৫-২৬৯ পৃ)। কিছুকাল পরে গাজীর অত্যাচারের কথা বিস্মৃত হইয়া লোকে উহাদের অদ্ভুত শক্তির (বুজুরগী) কথা আলোচনা করিতেন এবং হিন্দু-মুসলমানে অভেদে গাজীর সির্ণী দিতেন ও গাজীর গীতের দুই-এক পালা মানসা করিতেন। মুসলমান ও নমঃশূদ্রেরা গাজীর গীতের দল করিয়া নানা স্থানে গান গাহিয়া বেড়াইতেন। একজন মূল গাইন (গায়ক), কয়েকটি নৃত্যতৎপর সুকণ্ঠ বালক, বেহালাদার ও মৃদঙ্গবাদক গাজীর দলে থাকেন। মূল গাইনকে ‘খেড়ো’ বলে; তিনি চাপ্‌কান গায়ে, মাথায় লম্বা চুল ও গলায় পুঁথির মালা ঝুলাইয়া, হাতে কালো চামর ঢুলাইয়া গাজী কালুর কথা-প্রসঙ্গে কীর্ত্তনের পদাবলীর মত একঘেয়ে সুরে, প্রায়শঃ ঠুংরি-তালে, গান গাহিতেন। বিষয় ছিল, গাজীর চরিত্র বা অন্য কেচ্ছা এবং কল্পিত বাদশাহ বা ওমরাহের কাহিনী। গাজীর গীতের যে কত ‘কারিকর’ (কারুকর) বা রচয়িতা হইয়াছেন, তাহার সংখ্যা নাই। মাগুরার অন্তর্গত ধনেশ্বরগাতির জয়চাঁদ মণ্ডল নামক একজন নমঃশূদ্র প্রসিদ্ধ ‘গাইন’ ছিলেন, তিনি আবার তালখড়ির নিকটবর্ত্তী উগ্রামের তরিবুল্যা ‘কারিকরের শিষ্য। তরিবুল্যার পুত্র হাচিম বিশ্বাস বিখ্যাত ওস্তাদ। জয়চাঁদ গাজীর গীতের অনেক সংস্কার করেন। তিনি হিন্দু-মুসলমানের ভেদবুদ্ধি রহিত করিবার চেষ্টা করিতেন। ১৩০৭ সালে ৭২ বৎসর বয়সে তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে, তৎপুত্র প্রসন্ন বিশ্বাস গানের দল চালাইতেছেন। 

মুসলমানদিগের অন্য একজন পীরের নাম মাণিক পীর; তিনি গোরু বাছুর সুস্থ রাখেন, ক্ষেত্রকে শস্যপূর্ণ ও গৃহস্থালী শান্তিপূর্ণ করেন। এদেশীয় হিন্দু-মুসলমান উভয়ে, অন্ততঃ গোরুর কল্যাণ-কামনায়, উহার সির্ণী দেন এবং পীরের নাম করিয়া ভিক্ষার্থী ফকিরকে অকাতরে ভিক্ষা দেন। ফকির গৃহস্থের অন্দরদ্বারে দাঁড়াইয়া গৃহলক্ষ্মীদিগকে সতীধর্ম্ম ও গৃহকর্ম্মের সুন্দর উপদেশমালা সুরসংযোগে শুনাইয়া যান। গ্রাম্য কবিরা এই সব নীতিকথা কবিতাকারে রচনা করিয়া নিজশক্তির পরিচয় দিবার সুযোগ পান। যশোহরের উত্তরাংশে এই মাণিক পীরের গীত অহরহ শুনিতে পাওয়া যায়। 

৭. কবি ও বাউল সঙ্গীত। কবিত্বের প্রকৃষ্ট পরিচয় হয় বলিয়া এক জাতীয় গানের নামই ‘কবির গীত’ এবং যে গায়, তাহাকে ‘কবিদার’ বা কবিওয়ালা বলে। কে কেমন গান বাঁধিতে (রচিতে) এবং অনর্গল ‘উপস্থিত বোল’ আওড়াইতে পারেন, তাহাই পরীক্ষার জন্য কবির পাল্লা বা তর্জ্জা হয়। পৌরাণিক কথা বা রহস্যের মীমাংসা উপলক্ষ্য মাত্র, অবিরাম পয়ার ত্রিপদীতে কবিতা রচিয়া ‘ছড়া কাটিয়া’ যাওয়াই কৃতিত্বের পরিচায়ক। স্বল্পশিক্ষিত নিম্নশ্রেণীর লোককে এত দ্রুতবেগে উপস্থিত মাত্র শুদ্ধভাষায় কবিতা রচিয়া বলিয়া যাইতে শুনিয়াছি, যে তাঁহার শক্তি দেখিয়া অবাক্ হইয়া গিয়াছি। সাধারণতঃ কোন পৌরাণিক কাহিনী তুলিয়া একটি প্রশ্ন বা পূর্ব্বপক্ষ উত্থাপিত করিয়া একদল অন্যদলকে ‘বেড়িয়া’ ফেলেন বা আক্রমণ করেন; অপর পক্ষের কবিদার বা সরকারকে সুকৌশলে উহার জবাব দিতে হয়। এই উত্তর প্রত্যুত্তর কালে অনেক সময়ে বিষম ঝগড়া, এমন কি, অশ্লীল বা ‘মোটা’ ভাষায় গালাগালি চলে; নিম্নশ্রেণীর শ্রোতৃবর্গ উহাই ভালবাসেন এবং বাহবা দেন। এজন্য এ সব গান গৃহস্থ বাড়ীতে না হইয়া অধিকাংশ সময়ে হাটে বাজারে বারোয়ারী পূজা উপলক্ষ্যে হইয়া থাকে; বহুদূর হইতে কৃষকগণ উহা শুনিতে আসিয়া হল্লা করেন এবং সমস্ত রাত্রি বিনিদ্রভাবে গানের বান্ধুটি (রচনা) বা ভাষার কতের প্রশংসা করেন। প্রারম্ভে এবং মধ্যে মধ্যে অবশ্য শ্রোতার নেত্র অশ্রুসিক্ত করিয়া দেহতত্ত্ব বা ধৰ্ম্মভক্তি বিষয়ক উচ্চাঙ্গের গানও হয় এবং উহার ভাব ও রচনা-চাতুর্য্য উচ্চ সমাজে প্রশংসিত হইবার যোগ্য। তারক কাঁড়াল, পাঁচু দত্ত, গোবিন্দ তাঁতি, রূপে পাঠা, হারাণ ঠাকুর, হরমোহন ও মথুর সরকার প্রভৃতি কবিদারেরা যশোহর-খুলনার অধিবাসী ও সর্ব্বত্র বিখ্যাত। 

খুলনার নিকটবর্ত্তী জাপ্‌সা গ্রামের “ক’বেল (কবিওয়ালা) কামিনী” নামক একজন নিরক্ষরা পোদ-রমণী তাঁহার ভাগিনীপুত্র তারাচাঁদ বা অন্যের গীতের দলের জন্য অসংখ্য কবিত্বপূর্ণ গান ও শ্লোক রচনা করিয়া দিতেন; তজ্জন্য তাঁহার বংশীয়গণ “ক’বেল বংশ” বলিয়া সম্মানিত হইয়াছেন। তাঁহার গানের সুরমাত্রা গাজীর গীতের মত বা ভাটিয়াল জাতীয়, বিষয় কিন্তু হিন্দুসাধনার উচ্চাঙ্গের অনুরূপ। এই কামিনী কালী মায়ের ভক্ত; প্রবাদ এই, বিরাট গ্রামে খালে জল আনিবার কালে কালী তাঁহাকে দর্শন দিয়াছিলেন, তিনি কালীরূপ সর্ব্বত্র দর্শন করিতেন । নমুনাস্বরূপ একটি গানের চাবিটি চরণ দিতেছি : 

“কালো বেটি কত খাঁটি সে যে ফুলের মাথার পরে, 
চরণ দু’টি কত কোটি চাঁদসুরযে আলো করে।।
কত শলক, কত রশ্মি কালী মায়ের পায় 
ধানের ক্ষেতে ঢেউ উঠিয়ে কালী কালের ঢেউ দেখায়।।” 

কাঙ্গাল হরিনাথ বা ফিকিরচাঁদ ফকিরের মত এদেশেও ‘বাউল কবির’ আবির্ভাব হইয়াছে এবং সেই সকল বাউল বা বাতুল প্রেমিকের উচ্ছ্বাসপূর্ণ কবিতায় ভোগাসক্ত লোককে পারাপার বা পরপারের চিন্তায় ব্যাকুল করিয়া দিয়াছে। গৈরিক আলখেল্লা পরা ফকির যখন গোপীযন্ত্রের তালে নাচিয়া বাউলের সুর গান, তখন নিরক্ষর কবির গানে আমীরকেও আত্মহারা করিয়া থাকে। মাগুরার নিকটবর্ত্তী শিবরামপুর-নিবাসী রাধারমণ ও শ্যাম বাউলের অনেক কালোয়াতী গান আছে, আর শ্যাম বাউলের খোলে হরিনামের বোল উঠিত।

৮. জারী গীত। কোন বিষয় প্রকাশ্যে প্রচার বা জাহির করিবার নাম জাহিরী বা জাত্রী। সাধারণ কথায় জারী বলে। এইরূপে বিচারকের ডিক্রী বা হুকুমের জারী হয়। সমাজের নিম্নস্তরে ধর্ম্ম বা নৈতিকতত্ত্ব প্রচারের জন্য জারী গানের সৃষ্টি। উহার প্রধান গায়কের নাম বয়াতি অর্থাৎ ‘বয়েৎ’ বা শ্লোকের রচয়িতা। এই গীতের অধিকাংশ কোরাণের সুক্ত বা আরবিক কাহিনী ঘটিত। ইহাতে ধুয়া, আরেব, ফেরতা, মুখড়া, বাহির, চিতেন প্রভৃতি অংশ থাকে। খুঞ্জরী নামক বাদ্যযন্ত্র এই গানের প্রধান সাধন। অদ্ভুত কৌশলে দুইটি খুঞ্জরী বাজাইতে বাজাইতে, বয়াতি প্রথম ‘ঝুমুর’ ধরিয়া পাকশাট দিয়া ঘুরিতে থাকেন, পরে গান ধরেন। কয়েকটি বালক, বালকণ্ঠবিশিষ্ট কয়েকজন কৃষক গায়ক, দুই একজন বাদক এবং সর্ব্বোপরি মূল গাইন বা বয়াতি জারীর দলের প্রধান অঙ্গ। বেশী বক্তৃতা নাই, বাহাদুরী শুধু গীতের মধ্যে। কবির তৰ্জ্জুামত দুই দলে পাল্লা দিয়া জারী হয়। নানামতে সিদ্ধান্ত করা যায়, প্রায় ১৫ বৎসর ধরিয়া যশোহর জেলায় জারী চলিতেছে— এই গানের উৎপত্তিস্থান বলিয়া যশোহর যশস্বী। যদিও সনাতন রামচাঁদ প্রভৃতি দুই চারি জন হিন্দু বয়াতির নাম শুনিতে পারি, তবুও বলিতে পারি সাধারণতঃ মুসলমানগণই এই গীতের পালক, গায়ক, রচক ও প্রচারক। জারী গীতের প্রধান প্রবর্ত্তকদিগের মধ্যে পাগলা কানাই প্রথম এবং ইদু বিশ্বাস দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী। যশোহরের উত্তরাংশ অর্থাৎ ঝিনাইদহ ও মাগুরা মহকুমা জারীগানের পীঠস্থান। পাগলাকানাই এর শিক্ষাগুরু ছিলেন কেশবপুরের নিকটবর্ত্তী রসুলপুরের নয়ান ফকির। নিম্নলিখিত গানে পাগলা কানাইয়ের সমকালবর্ত্তী ও প্রতিদ্বন্দ্বী কয়েক জন বয়াতির নাম পাওয়া যায় : 

“নামটি আমার মেহের চাঁদ কালীশঙ্করপুর বাড়ী 
আমি দেশ বিদেশে গেয়ে বেড়াই জারী। 
শুনি, আকাশে এক মেলা হ’য়েছে ভারি 
তা’তে বায়না নিয়ে পাগলা কানাই গাইতে গিয়াছে জারী।
গিয়াছে ঘুণির জাহের, পাগলা তাহের, আর আরজান্ মোল্লা, 
আসান উল্লা, সোণা সেদু, তরিবুল্যা, কোরবান মোল্লা
গেছে রোশন খাঁ, নৈমদ্দী মুন্সী আর সুলতান মোল্লা, – 
এরা কয়জনেতে পাগলা কানাইর সাথে দিয়াছে পাল্লা; 
এরা সব চালাক চতুর, কানাই বড় কল্লা।”[৪]

কিন্তু পাগলা কানাই ও ইদু বিশ্বাসই সকলের শ্রেষ্ঠ। শিক্ষিত সমাজে বড় বড় কবির মত কৃষক সমাজে ইঁহারা এক ডাকে পরিচিত। তবে সাহস করিয়া বলিতে পারি, ইঁহাদের উৎকৃষ্ট গানগুলি বাছিয়া ‘গুছাইয়া প্রকাশ করিলে, ‘তাহা যে কোন সমাজে আদর পাইবার যোগ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যে সব ধনীর গৃহে বান্সের কবিতাদি পঠিত হয়, তাহাদের অর্থ এ জাতীয় অর্থসাপেক্ষ ব্যাপারে প্রযুক্ত হয় না। কানাই ও ইদুর জারী বঙ্গীয় নিম্নস্তরের ধর্মপ্রাণতা ও দেহাত্মবাদের সাক্ষী, এজন্য উহার অনুবাদ পাশ্চাত্য মুলুকেও অবজ্ঞাত না হইতে পারে ঝিনাইদহের অন্তর্গত গয়েশপুরের সন্নিকটে বেড়বাড়ীতে পাগলা কানাই এবং ঐ মহকুমার ঘোড়ামারা গ্রামে ইদু বিশ্বাসের জন্ম। কানাই এক প্রকার নিরক্ষর, কিন্তু ইদু বেশ লেখাপড়া জানিতেন। কানাইএর গান সরল ও স্বাভাবিক, ইদুর গান কিছু জটিল ও দীর্ঘ। কুড়ন সেখের পুত্র জানাই বাল্যে দুরন্ত ও যৌবনে উচ্ছৃঙ্খল বলিয়া, তাঁহার পিতা তাঁহাকে পাগলা বলিতেন। কানাই প্রথম জীবনে আঠারখাদার চক্রবর্ত্তীদিগের বেড়বাড়ীস্থিত নীলকুঠিতে দুইটাকা বেতনে খালাসী ছিলেন; তাঁহার বংশ বা অন্য গৌরব ছিল না, থাকিবার মধ্যে ছিল হৃদয়ে কবিত্ব, মুখে মিষ্ট কথা, কণ্ঠে পাপিয়ার সুর আর চরিত্রে অপূর্ব্ব বিনয়শীলতা। তাঁহার হিন্দু-মুসলমানে ভেদবুদ্ধি ছিল না, সৰ্ব্বত্র প্রশংসিত সমদৃষ্টি ছিল। কানাই দেহতত্ত্ব-সঙ্গীত রচনায় সিদ্ধহস্ত। মরণ-রহস্য ও আত্মতত্ত্ব তাঁহার বেশ পরিজ্ঞাত ছিল। সহজ সরল গ্রাম্য ভাষায় উহার অপূর্ব্ব বিকাশ দেখিলে বিস্মিত হইতে হয়। কানাইয়ের পরবর্ত্তী বয়াতিগণ জারীগানের ভাবভঙ্গির অনেক পরিবর্তন করিয়া প্রায় যাত্রায় পরিণত করিয়াছেন। এই সকল সংস্কারকদিগের মধ্যে নহাটার নিকটবৰ্ত্তী দীঘলকান্দিনিবাসী হাকিম চাঁদ, পূর্ব্বোক্ত মেহের চাঁদ, কলম বিশ্বাস, হাকিম বিশ্বাস, হাড়া- নিবাসী বিনোদ বয়াতি ও আরজার সেখের নাম উল্লেখযোগ্য। শৈলকূপা থানার অন্তর্গত পদদি- নিবাসী আসাদ্ বিশ্বাস, চৌগাছা-নেয়ামত পুরনিবাসী পাঁচু বিশ্বাস, মেহেরচাঁদের পুত্র জয়লাল এবং ইদু বিশ্বাসের ভাগিনেয় মেহের বিশ্বাস বর্ত্তমান জীবিত বয়াতিদিগের মধ্যে বিখ্যাত।

.

পাদটীকা 

১. [মাইকেল মধুসূদন—১৮২৪-৭৩; দীনবন্ধু মিত্র—১৮২৯-৭৩; কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার—১৮৩৭-১৯০৭; মানকুমারী বসু—১৮৬৩-১৯৪৩; সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার-১৮৩৮-৭৮–শি মি 

২. [প্রখ্যাত ঐতিহাসিক বিভারিজ (H. Beveridge) সাহেবের সহিত গ্রন্থকারের ইতিহাসগত নানা তথ্য ও ঘটনা লইয়া বরাবর পত্র-বিনিময় হইত। বৰ্ত্তমান গ্রন্থ আদ্যোপান্ত পাঠের পর তিনি ইংলণ্ড হইতে এক দীর্ঘ পত্রে (১০/৪/২৩) রেভারেণ্ড উইলিয়ম কেরীর বিষয় উত্থাপন করেন এবং উহার এক বিস্তৃত সমালোচনায় বলেন : ‘Mr. Satish C. Mitra Seems to have studied nearly all available sources. The only omission that occurs to me is that he has said nothing about Carey and the mission- aries. I think the omission a mistake. Though Serampore is on Hooghly, there ought to have been some mention of Mr. Carey. After all he is, with the doubtful exception of Hiuen Taang, the most interesting figure in East Bengal. Mr. Mitra knows about him. for he kindly gave me information about Debhatta and Hasnabad in khulna, where Carey and his family made a short stay before Mr. Udney made him an Indigo-planter and gave him a home in Maldah.’ রেভারেণ্ড ডক্টর উইলিয়ম কেরী (Rev. Dr. William Carey. 1761-1834) ধর্ম্ম-প্রচার কাৰ্য্যে অনুপ্রাণিত হইয়া ইংলণ্ড হইতে পরিবারসহ বিপদসঙ্কুল পাঁচ মাসের সমুদ্রযাত্রার পর এক ডাচ্-জাহাজ হইতে প্রায় নিঃসম্বল অবস্থায় ১৭৯৩ খৃষ্টাব্দে ১১ই নভেম্বর কলিকাতায় অবতরণ করেন। জন্ থমাস্ (John Thomas) সাহেব তাঁহার সহযাত্রী ছিলেন। ইতিপূৰ্ব্বে থমাস্ সাহেব একবার কলিকাতা থাকাকালীন বঙ্গভাষা শিক্ষার্থে রামরাম বসুকে মুন্সী হিসাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন। এইবার থমাস্ সাহেবের সূত্রে রামরাম বসুর সহিত পরিচয় হইবামাত্র কেরী সাহেবও তাঁহাকে মুন্সীরূপে গ্রহণ করিলেন। এই যোগাযোগ পরবর্ত্তীকালে বঙ্গভাষা; বঙ্গ-সাহিত্য ও বঙ্গদেশের মুদ্রণ বিষয়ে এক নবজাগরণের সূচনা করে। 

কিছুদিনের মধ্যেই কলিকাতায় মাণিকতলা অঞ্চলে জনৈক কুসীদজীবী নেলু দত্তের গৃহে রামরাম বসু ও কেরী সাহেবকে তাঁহার পরিবারসহ আশ্রয় গ্রহণ করিতে হয়। একদিকে নিদারুণ অর্থাভাব, অন্যদিকে পরিবারের সকলে রোগাক্রান্ত হওয়ায় কেরী সাহেবের দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। ইহার ফলে তাঁহার স্ত্রীও উন্মাদ হইয়া যান। 

ইহাদের অনন্যোপায় অবস্থা দেখিয়া রামরাম বসুর অনুরোধক্রমে তাঁহার পিতৃব্য হাসনাবাদের বনাকীর্ণ অঞ্চলে একখণ্ড জমি কেরী সাহেবকে ব্যবস্থা করিয়া দেন। এইস্থানে দেশীয় চালচলনে সাধারণের সঙ্গে বসবাস এবং ধর্ম্ম-প্রচার কার্য্যের সুবিধা হইবে বলিয়া কেরী সাহেব হাসনাবাদেই আসা স্থির করেন। কোনমতে কিছু ঋণের সাহায্যে একখানি নৌকা ক্রয় করিয়া সপরিবারে ৪ঠা ফেব্রুয়ারী, ১৭৯৪, তারিখে যাত্রা করিলেন। নৌকাপথে চারদিন কাটিয়া যায় ও তখন সঙ্গে মাত্র একদিনের খোরাকী; এমন সময়ে তাঁহারা দেবহাটায় নৌকা হইতে দূরে একখানি সাহেবী-বাড়ী দেখিতে পান। সেখানে উপস্থিত হইলে কোম্পানীর তত্রস্থ লবণ-কারখানার অধিকর্তা চার্লস সর্ট (Charles short) সাহেবের সাহায্য পাইতে বিলম্ব হয় না। 

কয়েকদিনের মধ্যে এখান হইতে উঠিয়া কেরী সাহেব হাসনাবাদ অঞ্চলে ‘চালাঘর’ নির্ম্মাণ করিয়া বসবাস করিতে থাকেন। ঐতিহাসিক বিভারিজ সাহেব এই স্থানকে ‘জঙ্গল-বাড়ী’ বলিয়া অনুমান করিতে চান। কেরী-পরিবার এখানে অনধিক প্রায় পাঁচ মাস ছিলেন। পুনরায় থমাস্ সাহেবের চেষ্টায় মালদহে মদনাবতীতে নীলের কারখানায় কাজ পাইলে কেরী সাহেব সপরিবারে ১৫ই জুন (১৭৯৪) হাসনাবাদ ত্যাগ করেন। 

ইহার কয়েক বৎসর পর (১৮০০) কেরী সাহেবের নেতৃত্বে এবং অন্যান্য সতীর্থের সাহায্যে শ্রীরামপুর মিশনরী স্থাপিত হয়। পরবর্ত্তীকালে তাঁহার কার্যাবলি ও অবদান সৰ্ব্বজনবিদিত। এই মিশন শ্রীরামপুরে মুদ্রাযন্ত্র স্থাপন করিয়া এবং পঞ্চানন কর্মকার ও তাঁহার ভ্রাতুষ্পুত্র মনোহরের সাহায্যে ভারতীয় ভাষার টাইপ সৃষ্টি করিয়া ১৮০১-৩২ খৃষ্টাব্দের মধ্যে ৪০টি ভাষায় ২,১২,০০০ পুস্তকখণ্ড মুদ্রিত করেন। শ্রীরামপুর মিশনেই কেরী সাহেব ৯ই জুন, ১৮৩৪ খৃষ্টাব্দে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 

উপরোক্ত ঘটনা ব্যতীত যশোর-রাজ্যের ইতিবৃত্তে অন্য এক সূত্রেও কেরী সাহেবের নাম উল্লেখযোগ্য। বঙ্গভাষায় প্রথম গদ্য-সাহিত্য এবং প্রথম প্রকৃত ইতিহাস-গ্রন্থ মহারাজা প্রতাপাদিত্য বিষয়ক। উহা রামরাম বসু কর্তৃক রচিত এবং কেরী সাহেবের সাহায্যে ও অনুপ্রেরণায় শ্রীরামপুর মিশন প্রেস হইতে ১৮০১ খৃষ্টাব্দে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। 

এই সম্পর্কিত দ্রষ্টব্য : Marshman, J. C., Life and Times of Carey, Marshman, and Ward, 1859, 2 Vols; নিখিলনাথ রায়, ‘প্রতাপাদিত্য’, ১৩১৩ সাল; 24 Parganas Gazetteers, 1914; kesavan, B. S.x ed., The Carey Exhibition, 1955-fat fal 

৩. পুস্তকের শেষ ভাগে সময়-জ্ঞাপক কবিতাটি এই : 

‘বীণ বসু রস ইন্দু শক পরিমিত। 
হেনই সময়ে হৈল শীতলার গীত।।’ 

এই পুঁথি এখনও ছাপা হয় নাই। উহার একখানি পুঁথি চাঁচড়ার দশমহাবিদ্যার বাটীতে আছে। খুলনার অন্তর্গত পীলজঙ্গের নিকটবর্ত্তী ষাটতলার শীতলা কীর্তনের দল ছিল, তথাকার যোগীরা দল লইয়া নানাস্থানে গান গাহিয়া বেড়াইতেন। 

৪. ইঁহাদের মধ্যে তরিবুল্যার বাড়ী ঘোড়ামারার কাছে লক্ষ্মীপুরে, কোরবান্ মোল্লার বাড়ী দিঘলিয়া গ্রামে, রোশন খাঁ, পাঁচুরিয়ার, নৈমদ্দি মুন্সী পোড়াহাটির নিকটবর্ত্তী আড়িয়া গ্রামের এবং সুলতান মোল্লা পবহাটির নিকটবর্ত্তী আড়ুয়াডাঙ্গার অধিবাসী। ইহা ব্যতীত আবাইপুরের কোরেশ, আড়ংঘাটার নেওয়াজ, পুটের আজিম, বাকালির একব্বর ও নানাস্থানের তারা খাঁ মধু, বালকচাঁদ, মদন, বদন, তিলক, হাচিম, ওমেদালি, এনাতুল্যা, এরাজতুল্যা, আসানউল্যা প্রভৃতি অসংখ্য বয়াতিগণের নাম পাওয়া যায়। 

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন