৯. যশোহর-সমাজ

সতীশচন্দ্র মিত্র

নবম পরিচ্ছেদ – যশোহর-সমাজ

বিক্রমাদিত্য যখন যশোহরে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করিলেন, ক্রমেই তাঁহার রাজনৈতিক প্রতিপত্তি বাড়িতে লাগিল। এই সময়ে তাঁহার পিতা ভবানন্দ পরলোকগত হইলেন। বিক্রমাদিত্য প্রভৃতি অর্থব্যয়ে পরম সমারোহে পিতৃশ্রাদ্ধ সম্পন্ন করিলেন। এতদুপলক্ষে অনেক চেষ্টার ফলে পূর্ব্ববঙ্গ হইতে আত্মীয়কুটুম্ব ও জ্ঞাতিবর্গকে আহ্বান করিয়া আনা হইল। তখন বালাই বঙ্গজ কায়স্থকুলের প্রধান সমাজ। নবপ্রতিষ্ঠিত যশোহর সেই বাক্‌লা সমাজের অধীন ছিল। শ্রাদ্ধবিবাহাদি প্ৰত্যেক অনুষ্ঠানে এভাবে পূৰ্ব্বাঞ্চল হইতে জ্ঞাতি কুটুম্ব আনিতে যাওয়া বড় কষ্টকর; বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ অত্যন্ত দূরে অবস্থিত এবং সামাজিক ব্যাপারে বালার অধীনতা বড় অপ্রীতিকর হইল। বিশেষতঃ বালা-সমাজে বহুকাল হইতে নানা নিম্নশ্রেণীর মৌলিকের সহিত কুলীনের বিবাহ-প্রথা অত্যন্ত অধিক মাত্রায় প্রবর্তিত থাকায় সমাজ-শোণিত কলুষিত হইতেছিল।[১] দূরদর্শী বসন্ত রায় বুঝিলেন, বংশবিশুদ্ধি দ্বারা সামাজিক উন্নতি ব্যতীত কোন জাতির উন্নতি হয় না। সুতরাং এই কুল-বিশুদ্ধি রক্ষা তাঁহার প্রধান লক্ষ্য হইল।

বসন্ত রায় নিজের চেষ্টায় যশোহরে নূতন সমাজ প্রতিষ্ঠা করিয়া উহা সুপ্রণালীতে নিয়ন্ত্রিত করিলেন। বালা (বরিশাল) ও ফতেহাবাদ (ফরিদপুর) প্রভৃতি পূর্বাঞ্চল হইতে বহুসংখ্যক আত্মীয়- স্বজন ও জ্ঞাতিগোত্রীয়দিগকে অর্থ ও ভূমিবৃত্তি লোভে বশীভূত করিয়া যশোহরে আনিলেন; রাজধানীর নিকটবর্ত্তী চারিধারে তাহাদের বসতি নির্দ্দেশ করিয়া দিলেন। শুধু স্বজাতীয় বঙ্গজ কায়স্থ নহে, সমাজ-দেহপুষ্টির জন্য বহুজাতির প্রয়োজন। সুতরাং বসন্ত রায় দেবোত্তর ব্রহ্মোত্তর ও মহত্রাণ দিয়া নানাশ্রেণীর সুব্রাহ্মণ ও বৈদ্য প্রভৃতি জাতিদিগকে বসতি করাইলেন।[২] সহজে-কোন সম্মানিত ব্যক্তি পরাশ্রয় আসেন নাই, এজন্য বিক্রমাদিত্য সকলকেই স্ব স্ব মর্য্যাদার অনুরূপ ভূমিবৃত্তি দিয়াছিলেন। বিশেষতঃ নবোত্থিত যশোর-রাজ্য তখন লক্ষ্মীর লীলাভূমি; এমন স্থলে বাস করিবার লোভ অনেকেই সম্বরণ করিতে পারেন নাই।

এই নূতন সমাজে বহু কুলীন ও মৌলিক যোগ দিয়াছিলেন। তন্মধ্যে কুলীনের সংখ্যাই অধিক। মিত্রবংশীয় কেহই আসেন নাই; বঙ্গজ মিত্রগণ কুলীন নহেন। মৌলিকদিগের মধ্যেও মাত্র কয়েক ঘর আসিয়াছিলেন। যাঁহারা আসিয়াছিলেন, তাঁহাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিতেছি।[৩] বৎস, রাঘব, পৃথ্বীধর, চক্রপাণি, থাকবসু ও গাভবসু প্রভৃতি বিভিন্ন ধারার বসু কুলীনগণ ইচ্ছামতী-কূলবর্ত্তী টাকী, শ্রীপুর, সৈদপুর, গুঁড়া ও জালালপুরে, বর্ত্তমান বাগেরহাটের নিকটবর্ত্তী কাড়াপাড়া ও উৎকূল গ্রামে এবং বর্ত্তমান ফরিদপুর জেলার ওলপুরে বাস করেন। ওলপুর ও কাড়াপাড়ার রায় চৌধুরীগণ উচ্চ কুলীন। তন্মধ্যে শেষোক্ত স্থানের গাভবসুবংশীয় পরমানন্দ রায় চৌধুরীগণ উচ্চ কুলীন। পরমানন্দ রায় বসন্ত রায়ের ভগিনী ভবানীদেবীকে বিবাহ করিয়া যশোহর রাজধানীর নিকটবর্ত্তী পরমানন্দ কাঠিতে বাস করেন। ঘোষ কুলীনদিগের বিভিন্ন থাক এই সময় হইতে ক্রমে বাঁশদহ, শিবহাটি, জালালপুর, শ্রীপুর, পুঁড়া ও খোঁড়গাছিতে উপনিবিষ্ট হন।

পূৰ্ব্বেই বলা হইয়াছে, বিক্রমাদিত্য আগুহবংশীয়। এই থাকের রাজজ্ঞাতিগণ অনেকে যশোহরে আসেন। তন্মধ্যে ভবানীদাস রায় চৌধুরী প্রধান এবং মহাপ্রতিভাশালী। ইনি রামচন্দ্র গুহের পিতৃব্য চতুর্ভুজের প্রপৌত্র, সুতরাং বিক্রমাদিত্যের জ্ঞাতি ভ্রাতা। ভবানীদাস রাজবংশীয়দিগের নিকট হইতে মাইহাটি পরগণা বৃত্তি পান। সামাজিক হিসাবে রাজবংশীয়দিগের নিম্নেই তাহার আসন ছিল; এজন্য পরবর্ত্তী যুগে ইঁহার বংশধরগণকে নায়েব গোষ্ঠীপতি বলিত।[৪] ইনি টাকী ও শ্রীপুরের রায় চৌধুরীগণের মূল। মুন্সী রামকান্ত ও কালীনাথ এই বংশের কৃতী পুরুষ এবং বর্তমান সময়ে রায় যতীন্দ্রনাথ চৌধুরী সর্ব্বত্র সুপরিচিত।[৫] গুহ বংশের অন্য শাখাও ক্রমে এদেশে আসিয়াছিলেন। রায় চৌধুরী, রায় সরকার, চাক্লাদার প্রভৃতি নানা উপাধিধারী হইয়া তাঁহারা টাকী, শ্রীপুর, পুঁড়া, বেওকাটি, সৈদপুর ও জালালপুর প্রভৃতি স্থানে এখনও বসতি করিতেছেন। এডুগুহবংশীয় দেওয়ান রামভদ্র রায় এক সময় গুঁড়ায় বসতি করেন ও সমধিক বিখ্যাত হইয়াছিলেন।[৬] তাঁহার কথা পরে বলিতে হইবে। গুহবংশীয় যাহাদের কথা বলা হইল, তাহাদের কতক কুলীন, কতক বা কুলজ।

শুধু তাহাই নহে। মৌলিকদিগের মধ্যেও মধ্যল্য[৭] দত্ত ও দাস বংশীয়েরা যশোহর-রাজধানীর সন্নিকটে পূর্ব্বোক্ত স্থানসমূহে, এমন কি, ভৈরবকূলবর্তী রঙ্গদ্বীপ বা রাংদিয়ার অন্তর্গত সিংগাতি উৎকূল প্রভৃতি স্থানের বাসিন্দা আছেন।

বহরমপুরের সেনগণও যশোহর-সমাজভুক্ত ছিলেন। প্রসিদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক ডাক্তার রামদাস সেন বহরমপুরের আদি সম্মানিত জমিদার বংশ সমুজ্জ্বল করিয়াছেন। যশোহর জেলার অন্তর্গত ইনা এবং খুলনার সিংহগাতির দত্ত চৌধুরীগণ বসন্ত রায়ের শ্বশুর বংশীয়। যশোহর-সমাজে কুলীনের সংখ্যাই অধিক এবং সে কুলীনগণ প্রায়ই মৌলিকক্রিয়া করিতেন না; এই জন্য এ সমাজে মৌলিকের সংখ্যা বড় অল্প। মৌলিকদিগের সকলেই মধ্যল্য অর্থাৎ প্রধান; মৌলিকের নিম্নশাখাগুলি এ সমাজে নাই।

যশোহর সমাজ কেবল কায়স্থ লইয়া হয় নাই। নানা শ্রেণীর কুলীন ও শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণ এবং বঙ্গজ ও রাঢ়ীয় বৈদ্য এ সমাজের গৌরব বৃদ্ধি করিয়াছিলেন। গুরুবংশীয় কাশ্যপ চট্টোপাধ্যায়ের কথা পূৰ্ব্বে বলিয়াছি; অনেক কুলীন ব্রাহ্মণ তাঁহাদের আশ্রিত হইয়াছিলেন। মুকুন্দপুরের দক্ষিণে ও পূর্ব্বে ধলবাড়িয়া, দেবনগর প্রভৃতি স্থানে অসংখ্য ব্রাহ্মণের বসতি ছিল। বৈদিক শ্রেণীভুক্ত রামভদ্র ভট্টাচার্য্য[৮] সিদ্ধপুরুষ ছিলেন, তিনি পরমানন্দ কাটিতে বাস করেন। তাঁহার বংশধরগণ এখনও ইচ্ছামতীর কূলবর্তী শ্রীপুর, ঘলঘলিয়া ও ধলতিতা গ্রামে এবং ভাগীরথীতীরে রাজবংশের গঙ্গাবাসের বাটীর সন্নিকটে ভট্টপল্লী বা ভাটপাড়ায় বাস করিতেছেন এবং বঙ্গের বহু উচ্চবংশের কুলগুরুরূপে দেশপূজ্য হইয়া রহিয়াছেন। এই বংশে বহু প্রসিদ্ধ পণ্ডিতের আবির্ভাব হইয়াছে। বঙ্গজ বৈদ্যদিগের মধ্যে কেহ কেহ কর্ম্মোপলক্ষে যশোহর রাজ সরকারে প্রবেশ করেন[৯] এবং অবশেষে ভৈরবকূলে উৎকূল, মূলগড় ও ভট্টপ্রতাপ প্রভৃতি স্থানে বাস করেন; রাঢ়ীয় বৈদ্যগণের মধ্যে কৃষ্ণানন্দ মজুমদার রাজ-কবিরাজরূপে যশোহরে আসেন এবং রাজ্যপতনের পর বর্তমান কলারোয়ার নিকটে কেরলকাতায় ও পরে তথা হইতে ভাণ্ডারপাড়ায় আসিয়া বাস করেন। এখনও ভাণ্ডারপাড়ার কবিরাজ গোষ্ঠী বিশেষ খ্যাতিসম্পন্ন। এইরূপে পূৰ্ব্বদিকে মধুমতী ও পশ্চিমে ভাগীরথীতীরে ত্রিবেণী পর্য্যন্ত এবং উত্তরে কপোতাক্ষী ও ইচ্ছামতী পথে বহুদূর পর্য্যন্ত নানাবিধ কুলীন, বংশজ ও মৌলিক কায়স্থ, বৈদিক রাঢ়ী ও কুলীন শ্রোত্রিয় প্রভৃতি নানাবিধ ব্রাহ্মণ এবং বঙ্গজ ও রাঢ়ীয় বৈদ্য প্রভৃতি জাতি যশোহর-খুলনার সমাজ-দেহের প্রধান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হইয়া রহিয়াছেন। মুকুন্দপুরের পশ্চিমদিকে ক্ষুদ্র কালিন্দীর অপর পারে যেখানে পূৰ্ব্বদেশীয় সামাজিকগণ প্রথম বসতি করেন, তাহাকে এখনও ‘বাঙ্গালপাড়া’ বলে; প্রাচীন ম্যাপে বাঙ্গালপাড়া বেশ বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল। বাঙ্গালপাড়া ও বাঁকড়া প্রভৃতি স্থান হইতে সামাজিকগণ ক্রমে উত্তরদিকে গিয়া বসতি করিয়াছিলেন।

এইরূপে পৃথকভাবে বসন্ত রায় যে একটি সমাজ প্রতিষ্ঠিত করিলেন উহার নাম হইল,—’যশোহর-সমাজ’। এ সমাজ এখনও আছে; যশোর-রাজ্য নাই, কিন্তু যশোহর সমাজ প্রতিপত্তি-শূন্য হয় নাই। মহারাজ বিক্রমাদিত্য ছিলেন যশোহর-সমাজের সমাজপতি। বিশেষ ক্ষমতা ও ন্যায়পরতার সহিত ইহার সামাজিক শাসন চলিতে লাগিল। আজ সে শাসন নাই, বন্ধন অনেক শিথিল হইয়াছে; কিন্তু যশোহর-সমাজের নাম আছে, খ্যাতি সম্মান আছে, আরও আছে এবং তাহা সহজে যাইবে না— ইহার বংশ-বিশুদ্ধি। এখনও এই সমাজের লোকেরা বালা প্রভৃতি স্থানের সামাজিকের সহিত বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেন না।

যাবতীয় সামাজিক বিষয়ের মীমাংসার জন্য সামাজিকগণ সময় সময় সমবেত হইতেন; তজ্জন্য সমাজগৃহ বা মিলন-মন্দির ছিল। আমরা পূর্ব্বেই উল্লেখ করিয়াছি, মুকুন্দপুরের সন্নিকটে ধামরাইল বা ডামরেলী পরগণার অন্তর্গত মুস্তাফাপুর গ্রামে কালিন্দী তীরে একটি বিরাট নবরত্ন মন্দির ব্যতীত যশোহর-খুলনার মধ্যে এত বড় নবরত্ন মন্দির আর নাই; কিন্তু ইছাপুরের মন্দির অপেক্ষা এ মন্দির আরও সুন্দর এবং অধিকতর কারুকার্য্যযুক্ত। মন্দিরটি এখনও দণ্ডায়মান আছে, কিন্তু উহার নয়টি রত্ন বা চূড়াই ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে। কথিত আছে, এখানে মালবরাজ বিক্রমাদিত্যের সভার মত যশোরেশ্বর বিক্রমাদিত্যের নবরত্ন সভা বসিত; সমাজের মিলন হইত, তাহাতে সামাজিক বিধি-নিষেধ লিপিবদ্ধ হইয়া থাকিত। প্রবাদের কথা সরকারী রিপোর্টেও মানিয়া লওয়া হইয়াছে।[১০] এই মন্দিরে কোন দেব বিগ্রহ ছিল না। মন্দির ত অনেক আছে, কিন্তু এ মন্দির দেখিতে বড় সুন্দর ছিল, ইহা খুলনা জেলার অপূর্ব্ব কীর্ত্তি।[১১] ইহা দেখিলে দিনাজপুরের কান্তনগরের মন্দিরের দৃশ্য মনে পড়ে; উভয়ই একই প্রকার স্থাপত্যানুমোদিত নবরত্ন মন্দির।[১২] প্রতাপাদিত্যের যুগের বহু মন্দিরের মত ইহারও সদর পশ্চিম দিকে; সে দিকে কালিন্দীতীরে দ্বাদশটি শিব মন্দির ছিল, মন্দিরের পূর্ব্ব-দক্ষিণেও সামাজিক ও লোকজনের থাকিবার জন্য বহু ইষ্টক গৃহ ছিল বলিয়া বোধ হয়। স্থানে স্থানে স্তূপীকৃতী ভগ্নাবশেষ আছে। সেই সব ভগ্নস্তূপের মধ্যস্থানে নির্জ্জন প্রান্তরে বহুবিস্তীর্ণ ধান্যক্ষেত্র সমূহের মাঝে এখনও ডামরেলীর মন্দির দাঁড়াইয়া আছে; এখনও ইহার ভগ্নাংশে যে শিল্পকৌশল ও ভাব-চাতুর্য্যের বিকাশ আছে, তাহা দেখিলে বিস্ময়াবিষ্ট হইতে হয়। ১৩

এই মন্দিরের গায়ে পশ্চিম বা সদরদিকে গর্ভমন্দিরের গায়ে একখানি ইষ্টকলিপি আছে। উহার কয়েকটি অক্ষরের একটু একটু ভাল পড়িতে পারা যায় নাই, তাহা হইলেও আমরা যে পাঠোদ্ধার করিয়াছি, তাহা এই :

শাকে বেদসমাযুক্তে বিন্দু বাণেন্দু সংমিতে
মঠোহয়ং স্বৰ্গসোপানং শ্রীকৃষ্ণেন কৃতঃ স্বয়ং॥[১৪]

ইহা হইতে বুঝা যায়, ১৫০৪ শাকে বা ১৫৮২ খৃষ্টাব্দে শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং স্বৰ্গসোপনতুল্য এই মঠ নির্মাণ করেন। অর্থাৎ পরম বৈষ্ণব কর্মকর্তা (বিক্রমাদিত্য) ‘সৰ্ব্বং কৃষ্ণাপণমস্তু’ এই ভাবের অনুবর্ত্তী হইয়া স্বকীয় কর্তৃত্ববুদ্ধি সম্পূর্ণরূপে পরিহার করিয়া শ্রীভগবানই স্বয়ং এই মন্দির নির্মাণ করিয়াছেন, এই কথা অভিব্যক্ত করিয়াছেন। বিক্রমাদিত্য প্রভৃতি পুরুষানুক্রমে পরম বৈষ্ণব ছিলেন; মন্দিরের দক্ষিণ গায়ে শ্রীকৃষ্ণ রাধিকার যুগল রূপের চিত্র দেখিয়াও তাহাই অনুমান হয়। এখানে যে লিপি প্রদত্ত হইল, আমরা স্বচক্ষে দেখিয়াই বিশেষ সতর্কতার সহিত উহার পাঠোদ্ধার করিয়াছি। ইহাতে যে তারিখ নির্দ্দিষ্ট হইতেছে, তাহাতে ঠিক বিক্রমাদিত্যের সময়ই পড়ে।

সম্ভবতঃ বিক্রমাদিত্যের রাজ্যারম্ভের অব্যবহিত পরে এই মন্দিরের কার্য্যারম্ভ হয় এবং অবশেষে ১৫৮২ খৃষ্টাব্দে উহার কার্য্য শেষ হয়। সুতরাং প্রতাপের রাজত্বারম্ভ এই অব্দের পূর্ব্বে হইতে পারে না এবং এ মন্দিরও প্রতাপাদিত্যের মত শাক্তের নির্ম্মিত নহে।

পাদটীকা :

১. সতীশচন্দ্র রায়, ‘বঙ্গীয় সমাজ’, ১৪৫, ৩৪০-১ পৃ; খোসালচন্দ্র, ‘বাখরগঞ্জের ইতিহাস’, ৫৪ পৃ।

২. ‘চন্দ্রদ্বীপ পুরাৎ তস্মিন্ কায়স্থান ব্রাহ্মণান্ তথা।
বৈদ্যকমানয়ামাস সমাজেশঃ বভুবঃ সঃ’— ঘটককারিকা
‘চন্দ্রদ্বীপ আদি সমাজ মানে সৰ্ব্বজন। সমাজ করিলা যশোর ঘটক কুলীনে
বিক্রমপুর ইদিলপুর সমাজ বাখানি। যথায় পূজিত সদা ঘটক চুড়ামণি॥
যশোহরের কথা কিছু করি নিবেদন। আশ বংশে নরপতি ছিলা মহাজন।।
কায়স্থ কুলীন যত গুণেতে পূজিত। নানা ধন দিয়া সবে করিলা তোষিত।।
গোষ্ঠীপতি হইলা রাজা বহু পুণ্যফলে। ঘটক কুলীন মতে অনুমতি দিলে।।’

৩. বিশেষ বিবরণ সতীশচন্দ্র রায় প্রণীত ‘বঙ্গীয় সমাজে’ ও ঘটকদিগের কারিকায় প্রদত্ত হইয়াছে। বঙ্গজ কায়স্থের কুলকারিকা আমার নিকট আছে। সেগুলি অত্যন্ত প্রাচীন পুঁথি।

৪. ‘বঙ্গীয় সমাজ’, ৩৪১ পৃ; নিখিলনাথ, ‘প্রতাপাদিত্য’ মূল ১৬৬-৭ পৃ।

৫. সুপণ্ডিত দধিভূষণ ভট্টাচার্য্য মহাশয় ‘টাকী রায়চতুধুরীণ বংশম্’ নাম দিয়া সংস্কৃত কবিতায় এই বংশের বিবরণ প্রকাশ করিয়াছেন। কবিতাগুলির নিম্নে সুন্দর বঙ্গানুবাদ আছে।

৬. প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক নিখিলনাথ রায়; এই বংশীয় এবং গুঁড়ার অধিবাসী।

৭. বঙ্গজ মৌলিকেরা যে চারি শ্রেণীতে বিভক্ত, তন্মধ্যে মধ্যল্য প্রধান। অন্য তিন শাখা—মহাপাত্র, নিম্ন মহাপাত্র ও অচলা। ‘যশোহর সমাজ কুলীন প্রধান বলিয়া তথায় কুলীন, কুলজ ও মৌলিক এই তিন শাখা মাত্র।’—’বঙ্গীয় সমাজ’, ৬৪ পৃ।

৮. করতোয়া তটবর্ত্তী মালতী নামক স্থানে ‘বাৎস্যগোত্রীয়’ রামভদ্রের পূর্ব্বনিবাস ছিল। তিনি কুলদেবতা সঙ্গে করিয়া প্রথমতঃ কলিকাতায় গোবিন্দপুরে বাস করেন; পরে তথা হইতে বসন্ত রায়ের সহিত পরিচয়সূত্রে যশোহরে আসেন। তিনি মৃত্যুকালে স্বকীয় সিদ্ধমন্ত্র দৈবক্রমে পুত্র নারায়ণকে না দিয়া জামাতা নারায়ণকে দিয়া যান। জামাতা নারায়ণ (বশিষ্ট গোত্রীয়, বৈদিক) এই ভাবে সিদ্ধ হইয়া গঙ্গাতীরে ভট্টপল্লীতে বাস করেন। নারায়ণ ভট্টের নামেই ভট্টপল্লী হইয়াছে, আধুনিক ভাটপাড়ার ভট্টচার্য্যগণ অধিকাংশই ইঁহার বংশধর। রামভদ্রের পুত্র নারায়ণ নিজ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করিয়াছিলেন। প্রতাপাদিত্যের পতনের পর, তাঁহার তিন পুত্রের একজন পিতার গৃহদেবতার অধিকারী হইয়া শ্রীপুরে বাস করেন, অন্য এক পুত্র পৈত্রিক ব্রহ্মোত্তরের অধিকারী হইয়া শ্রীপুরের নিকটবর্ত্তী ঘলঘলিয়ায় বাস করেন। সে বংশে বহু বিখ্যাত পণ্ডিত জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। তৃতীয় পুত্র পৈতৃক পুঁথিপত্রের অধিকারী হইয়া বর্ত্তমান বারাসাত লাইট রেলওয়ের দণ্ডীরহাট ষ্টেশনের সন্নিকটে ধলতিতা নামক স্থানে বাস করেন।

৯. বঙ্গজ বৈদ্যকুলে বিষ্ণুদাসবংশীয় জানকীবল্লভ বিশ্বাস (মজুমদার) প্রতাপাদিত্যের সরকারে চাকরী করিয়া পুরস্কার স্বরূপ সুলতানপুর-খড়রিয়া পরগণার জমিদারী পাইয়া মূলঘরে বাস করেন, তাহার আশ্রিত কুলীনদিগের মধ্যে ধন্বন্তরি (লক্ষ্মণ, আদিত্য ও বিকর্তন) বংশীয়গণ উল্লেখযোগ্য। বিশেষ বিবরণ পরে দেওয়া হইবে।

১০. ‘The Navaratna is said to have been built by Raja Vikramaditya the father of Maharaj Pratapaditya. There is no idol within the Navaratna and it seems that there never was any image within it. It appears that Navaratna was never dedicated to a God or Goddess. …. It was built for a different purpose, viz. as a Shamaj mandir. ‘ – Ancient Manuments in the Lower Provinces of Bengal, 1896, p. 150.

১১. যশোর-রাজগণের পতনের পর ধামরাইল পরগণা নতার গোলকনাথ ভঞ্জ চৌধুরীর অধিকৃত হয়। ভঞ্জ মহাশয়দের নিকট হইতে উহা এক সময়ে জয়নগরের মিত্রগণ ক্রয় করেন। তৎপরে উহা বর্ত্তমান গড়মুকুন্দপুর নিবাসী লক্ষ্মণচন্দ্র রায় মহাশয়ের পিতা নন্দকুমার রায় খোস কোবালায় খরিদ করেন। শুনা যায়, তিনিই জঙ্গল কাটাইয়া মন্দিরের আবিষ্কার করেন। কালে তাঁহার পুত্রগণের হস্ত হইতে উহা হুগলী জেলার কাকশিয়ালী নিবাসী মহেন্দ্রনাথ বসু মহাশয় খরিদ করিয়া লন। শ্রীপুর নিবাসী তারাপদ ঘোষ মহাশয় উহার অধীনে পত্তনীদার।

১২. দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরের মত সুন্দর অভগ্ন ইষ্টক-মন্দির বঙ্গদেশে আর আছে কিনা সন্দেহ। ফার্গুসন সাহেব কৃত সুবিখ্যাত ‘স্থাপত্যের ইতিহাসে’ এবং কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় কৃত ‘নবাবী আমলের বাঙ্গালার ইতিহাসে’ ঐ মন্দিরের ছবি আছে।

১৩. ডামরেলীর মন্দিরটি সমচতুষ্কোণ। সমগ্র মন্দিরটি বাহিরে প্রত্যেক দিকে ৩৩ ́-৮ ́ ́ ইঞ্চি এবং গর্ভমন্দিরও বাহিরে প্রত্যেক দিকে ১৩ ́-১০ ́ ́ ইঞ্চি। গর্ভমন্দিরের উপর একটি বড় গুম্বুজ ও চতুঃপার্শ্বস্থ অলিন্দের চারিকোণে চারিটি ছোট গুম্বুজ ছিল। এই পাঁচটি গুম্বুজের উপর পাঁচটি চূড়া ব্যতীত সর্ব্বোচ্চ চূড়ার চতুষ্কোণে আরও চারিটি চূড়া ছিল, এইরূপে সর্ব্বসমেত নয়টি চূড়া। সমগ্র মন্দিরের উচ্চতা মেজে হইতে ৪৭ ফুট। মন্দিরের মেজে কত উচ্চ ছিল, জানিবার উপায় নাই; কারণ মন্দির অনেক বসিয়া গিয়াছে। মন্দিরের বাইরে উত্তরদিকে দরজা বা খিলান নাই। অন্য তিনদিকে তিনটি করিয়া খিলান। গর্ভমন্দিরে মাত্র পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে দরজা আছে। গর্ভমন্দিরের গায়ে দক্ষিণ দিকে নানা ফুল কাটা ছবি, ও একটি বড় গরুড় মূর্তির উপর কৃষ্ণরাধার যুগলরূপ। পশ্চিমদিকেও ঐরূপ গর্ভমন্দিরের গায়ে অসংখ্য ছবি অঙ্কিত; ধনুকধারী বীর, হস্তিপৃষ্ঠে যুদ্ধযাত্রা, অশ্বারোহী সিপাহী, দশ-অবতার প্রভৃতি অসংখ্য চিত্রে সুখচিত।

১৪. ‘Ancient Manuments’, 1896. নামক সরকারী বিবরণীতে এই লেখাটি এইরূপে পঠিত হয়: ‘শাকে বেদ
সমযুতে-বসুবাণ সমন্বিতে
ইয়ং মগসোপান—–
After the word “ what followed cannot be made out.’

শ্রদ্ধেয় বন্ধু ঐতিহাসিক নিখিলনাথ রায় উক্ত পাঠই স্থির রাখিয়া প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধীয় বহু যত্নসংকলিত স্বকীয় বিখ্যাত পুস্তকে (মূল ৮০-৮৩ পৃ) নানা বাদানুবাদ করিয়াছেন কিন্তু একান্ত দুঃখের বিষয়, যিনি বহুভাষা হইতে বহুতথ্য সংগ্রহ পূৰ্ব্বক বহ্বায়াসে প্রকাণ্ড গ্রন্থ রচনা করিয়া স্বদেশবাসীর অশেষ ধন্যবাদ ভাজন হইয়াছেন, যিনি স্বয়ং প্রতাপাদিত্যের স্বশ্রেণীভুক্ত কায়স্থ এবং যাঁহার জন্মপল্লী প্রতাপের রাজধানী হইতে বহুদূরবর্ত্তী নহে, তিনিও সামান্য একটু কষ্ট স্বীকার করিয়া প্রতাপাদিত্যের কীর্ত্তিচিহ্নের মধ্যে বোধহয় কিছুই প্রত্যক্ষ করেন নাই। সেরূপ একটু চেষ্টা করিলে দেখিতে পাইতেন তিনি যে একটি ‘ইন্দু’ শব্দ বাস্তবিক অনুমান বলে স্থির করিয়া লইয়াছেন, তাহা ঐ লিপিতে স্পষ্ট বিদ্যমান আছে। ‘খুলনা’ পত্রের অন্যতম লেখক অবিনাশচন্দ্ৰ মুখোপাধ্যায় মহাশয় উক্ত লিপির যে পাঠোদ্ধার করিয়াছিলেন (‘খুলনা’, ১০ই ফাল্গুন, ১৩২৬) তাহা এই :

‘শকে বেদ সমায়ত বসুরাব্দে—রিতে
মঠোয়ম—র্গ সোপান শ্রীকৃষ্ণেন কৃতময়। ১৬০৪’ কিন্তু ইহাতে ভাষাই হয় না। তিনি লিখিয়াছেন, ‘শ্লোকের ব্যাকরণ শুদ্ধির দিকে শিল্পীরও লক্ষ্য নাই, আমরাও লক্ষ্য করি নাই।’ বিক্রমাদিত্যের সভায় এমন সুন্দর মন্দিরের জন্য একটি সাধারণ শ্লোক লিখিবার পণ্ডিত ছিলেন না, বা শিল্পীর যথেচ্ছ কার্য্যের প্রতি কটাক্ষ করিবার লোক ছিল না, – একথা আমরা বিশ্বাস করি না। অবিনাশচন্দ্র ১৫০৪ সংখ্যার ‘৫’ টির উপরিভাগ একটু সামান্য ভাঙ্গিয়া যাওয়ায় তাহাকে ‘৬’ পড়িয়াছেন এবং পরে ১৬০৪ শক মিলাইবার জন্য কতকগুলি অযৌক্তিক জল্পনা কল্পনার অবতারণা করিয়াছেন। এখন যে কেহ ইচ্ছা করিলে আমাদের উদ্ধৃত পাঠ সেই স্থানে গিয়া মিলাইয়া দেখিতে পারেন; তখন আমাদের কথার সত্যতা সপ্রমাণ হইবে। আমি ‘খুলনা’ পত্রে অবিনাশচন্দ্রের পত্রের যথোপযুক্ত উত্তর দিয়াছিলাম। আমার স্বচক্ষে পাঠোদ্ধার করিবার সময় দুই একস্থলে ইষ্টকাক্ষর লোণার দোষে একটু একটু ভাঙ্গিয়া যাওয়ায় যে সব সন্দেহ উপস্থিত হইয়াছিল, তাহার উল্লেখ করিতেছি। ‘বিন্দু কথা ‘ব’ কারে একটি ই’কার চিহ্ন স্পষ্ট নাই, উহা হইতে কেহ কেহ ‘বসু’ পড়িয়াছেন। ‘সংমিতে’ শব্দের ‘সং’ স্পষ্ট নাই এবং ‘ম’টি ‘ব’এর মত পড়া যায়। কিন্তু ইহাতে অর্থবোধের কোন ক্ষতি নাই। মঠোহয়ং’ শব্দে লুপ্ত অকারটিকে কেহ কেহ ‘ই’ পড়িয়াছেন; কিন্তু পুংলিঙ্গ মঠ শব্দে ইয়ং ব্যবহৃত হইতে পারেনা। ‘স্বর্গ’ কথার ‘স্ব’টি ‘ম’এর মত পড়িয়া ও রেফটি একটু অস্পষ্ট থাকায় ‘স্বর্গ’ মগে পরিণত হইয়াছে। উহাতে কোন অর্থ বোধ হয় না। বেদ=৪, বিন্দু, বাণ=৫, ইন্দু=১। ‘অঙ্কস্য বামাগতি’ অনুসারে ১৫০৪ শাক বা ১৫৮২ খৃষ্টাব্দ হয়। ইহাই বিক্রমাদিত্যের সময়। যাহারা ‘বিন্দু স্থানে ‘বসু’ পাঠ করেন, তাহারা মন্দিরটি ১৫৮৪ শাক বা ১৬৬২ খৃষ্টাব্দে নিম্মিত বলেন অর্থাৎ উহা বিক্রমাদিত্যের মৃত্যুর বহুবৎসর পরে অন্য কর্তৃক নির্মিত বলেন। আমরা তাহা বিশ্বাস করি না। ইহার কয়েকটি কারণ আছে; প্রথমতঃ, লিপির নিম্নে যে শাক সংখ্যা আছে, তাহার শূন্যটিকে কোন প্রকারে ৮’ বলিয়া পড়া যায় না; দ্বিতীয়তঃ, মন্দিরে কোন দেববিগ্রহ ছিল না, থাকিলে সেকথা লিপিতে বা প্রবাদে থাকিত; সুতরাং ইহা মঠ বা সমাজ মন্দির বা অন্য কোন স্মৃতি সৌধ। তৃতীয়তঃ, এমন সুন্দর মঠ বিক্রমাদিত্যের পরে কেহ করিয়াছিলেন বলিয়া শুনি নাই। তবে অপরপক্ষে একটি প্রবাদ চলিয়া আসিতেছে যে, কালিন্দী নদীর পশ্চিম পারে বুদ্ধিমন্ত খাঁ চৌধুরী নামক একজন বারুজীবী জাতীয় জমিদার বাস করিতেন; এখনও খোসবাসে তাঁহার খনিত পুষ্করিণী আছে এবং ঐস্থান ভাদবাড়ী (ভদ্রাসন) নামে খ্যাত। তিনিই নাকি এই মঠের প্রতিষ্ঠাতা। নিখিলনাথ রায় মহাশয়, এইরূপ একটা মতের পরিপোষক। তিনি বলেন, ‘উহা বিক্রমাদিত্যের বহুপরে অপর কোন ব্যক্তি কর্তৃক নিৰ্ম্মিত হইয়া থাকিবে।’ (‘প্রতাপাদিত্য,’ মূল ৮৩ পৃ) কিন্তু তিনি নিশ্চয়ই ‘বিন্দু’ স্থানে বসু পাঠের সমন্বয় করিতে গিয়া এইরূপ সিদ্ধান্ত করিতে বাধ্য হইয়াছেন। স্বচক্ষে দেখিলে এসব ভুল হয় না। কবে আমাদের দেশে চাক্ষুষ প্রমাণের বলে ইতিহাস লিখিত হইবে? ডামরেলীর মন্দিরের লিপির তারিখ হইতে নিঃসন্দেহরূপে বিক্রমাদিত্যের সময় নিরূপিত হইতে পারে বলিয়া এত বিস্তৃতভাবে ইহার প্রকৃত পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করিলাম।

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন