৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ

সতীশচন্দ্র মিত্র

দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছেদ – দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ

আকবরের মৃত্যুর পর (১৬০৫) জাহাঙ্গীর সিংহাসন আরোহণ করিয়া দেখিলেন, বঙ্গে তখনও বিদ্রোহের শান্তি হয় নাই। এই সময়ে রাজা মানসিংহ আগ্রায় থাকিয়া নানা চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন বলিয়া জাহাঙ্গীর তাঁহাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুদিনের জন্য পুনরায় বঙ্গে পাঠাইয়া দেন এবং আট মাস যাইতে না যাইতে তাঁহাকে ফিরিয়া আসিতে বলেন। সে স্বল্পকালের মধ্যে যে তিনি রাজমহল ত্যাগ করিয়া বিশেষ কোন কার্য্য করেন নাই, তাহা আমরা পূর্ব্বে বলিয়াছি (৩০শ পরিচ্ছেদ)। মানসিংহকে এবার ডাকিয়া আনিবার হেতু ছিল। যাঁহারা ইতিহাস পাঠ করিয়াছেন, তাঁহারা সকলেই জানেন যে, এই সময়ে বর্দ্ধমানের শাসনকর্তা শের-আফগানকে খুন করিয়া তাঁহার পত্নী মেহেরউন্নিসাকে হস্তগত করা জাহাঙ্গীরের প্রয়োজন হইয়াছিল এবং রাজপুতবীরের দ্বারা যে সে প্রয়োজন সিদ্ধ হইবে না, তাহা তিনি বুঝিতেন। সুতরাং কুতবউদ্দীনকে বঙ্গের নবাব করিয়া পাঠান হইল। শের-আফগানের সহিত সংঘর্ষে কুতব ও শের উভয়ে নিহত হইলেন। তখন মেহেরউন্নিসা আগ্রাতে নীত হইয়া কয়েক বৎসর পরে নুরজাহান নামে জাহাঙ্গীরের প্রধানা মহিষী এবং প্রকৃত রাজ্যেশ্বরী হইয়াছিলেন। (১৬১১)। এদিকে কুতবের মৃত্যুর পর বিহারের শাসনকর্তা জাহাঙ্গীর কুলি খাঁকে বঙ্গের নবাব করিয়া পাঠান হইল।[১] কিন্তু বৎসরাধিক কালের মধ্যে কুলি খাঁ মৃত্যুমুখে পড়িলে, ইসলাম খাঁ বঙ্গের সর্ব্বময় শাসনকর্তা হইলেন (১৬০৮)।

ফতেপুর-শিরিতে এক মুসলমান পীর ছিলেন— সেখ সেলিম চিস্তি। তাঁহার প্রতি আকবর বিশেষ ভক্তিমান ছিলেন। তাঁহারই বরে তিনি প্রথম পুত্র লাভ করিয়া উক্ত মহাপুরুষের নামানুসারে তাঁহার নাম রাখেন— সেলিম। ইসলাম খাঁ উক্ত সেখ সেলিমের পৌত্র, তাঁহার প্রকৃত নাম সেখ আলাউদ্দীন। ১৫৭০ খৃঃ অব্দে তাঁহার জন্ম হয়, তিনি জাহাঙ্গীরের এক বৎসরের ছোট, এবং উভয়ে শৈশবে একত্র প্রতিপালিত হন বলিয়া অত্যন্ত সৌহাৰ্দ্দ ছিল। বাদশাহ হইয়াই জাহাঙ্গীর তাঁহাকে ইসলাম খাঁ উপাধি দিয়া দুহাজারী মন্সবদার করেন। তিনি যেমন সাহসী, তেজস্বী, তেমনই সচ্চরিত্র, এমন কি কোন মাদক দ্রব্য পর্যন্ত স্পর্শ করিতেন না।[২] জাহাঙ্গীর তাঁহাকে এত ভালবাসিতেন যে, আকবর যেমন মানসিংহকে পুত্র (ফর্জন্দ) বলিতেন, জাহাঙ্গীরও তেমনই তাঁহাকে পুত্র বলিয়া সম্বোধন করিতেন এবং পাটনার শাসনকর্তা করিয়া পাঠাইয়াছিলেন। কুলি খাঁর মৃত্যুর পর তিনি ইসলাম খাঁকে চার-হাজারি মন্সবদার করিয়া বঙ্গের নিজাম বা নবাব নিযুক্ত করিয়াছিলেন। তখন তাঁহার অল্পবয়স ও অনভিজ্ঞতার জন্য কত জনে কত কথা বলিলেন, কিন্তু বাদশাহ তাহা শুনিলেন না। কারণ তাঁহার ধারণা ছিল, প্রতিভা বয়সের অপেক্ষা না করিয়া দক্ষতার পরিচয় দিয়া থাকে। সে ধারণা সফল হইয়াছিল।

ভুঞাদিগের হস্ত হইতে বঙ্গদেশ তখনও অধিকৃত হয় নাই। মানসিংহ আসিয়া কতজনকে পরাজিত করিলেন, সন্ধি ও সৌহৃদ্য করিলেন; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাহা জলের উপর রেখার ন্যায় অচিরে তিরোহিত হইল। আকবর ও মানসিংহ শান্তি-নীতির পক্ষপাতী ছিলেন; কেহ বশ্যতা স্বীকার করিবামাত্র যুদ্ধে বিরত হইতেন। অবশ্য বিদ্রোহী দেশকে শাসন তলে আনিবার উহাই প্রথম পন্থা। কিন্তু জাহাঙ্গীরের আমলে সে পন্থা পরিত্যক্ত হইয়া রণ-নীতি আরব্ধ হইল, সামদানের স্থলে ভেদ ও দণ্ড নীতির প্রবর্তন হইল। জাহাঙ্গীরের নবাবেরা বঙ্গীয় ভুঞাদিগকে সমূলে উৎপাটিত ও উৎসন্ন করিবার জন্য যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়া আসিয়াছিলেন। ইসলাম খাঁ আবার তাঁহাদের মধ্যে সর্ব্বপ্রধান। তিনি এক মহাপ্রাণ সাধু ফকিরের পৌত্র হইলে কি হয়, ঐশ্বর্য্যের ক্রোড়ে প্রতিপালিত হইয়া তিনি কঠোর-প্রকৃতির হইয়া পড়িয়াছিলেন। তিনি ঐতিহাসিক আবুল ফজলের ভগিনীকে বিবাহ করায় রাজ-দরবারে তাঁহার একটা প্রতিপত্তি ছিল।[৩] বাদশাহের প্রিয়পাত্র বলিয়া তিনি কঠোর নীতির বলে বঙ্গীয় রাজন্যবর্গকে নিষ্পেষিত করিয়া গিয়াছিলেন।

এই সময়ে ইসলাম খাঁর সঙ্গে বঙ্গের দেওয়ান হইয়া আসিয়াছিলেন— আসফ খাঁ; ইনি নুরজাহানের ভ্রাতা। আবদুল লতীফ নামক আমদাবাদবাসী এক ব্যক্তি আসফ খাঁর অনুচর ও সঙ্গী ছিলেন। লতীফের ভ্রমণ-কাহিনী হইতে তখনকার বঙ্গের অবস্থাদি সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ পাওয়া যায়।[৪] বহারিস্তান নামক এক পারসিক গ্রন্থ হইতে প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে আরও অধিক সংবাদ পাওয়া যায়; সে কথা আমরা বারংবার উল্লেখ করিয়াছি। ইহার গ্রন্থকার মীর্জা নথন (মীর্জা সহন)[৫] ইসলামের সেনানীবর্গের অন্যতম। আমরা এস্থলে মীর্জা নথন ও তাঁহার পুস্তকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়া পরে প্রতাপাদিত্যের প্রসঙ্গে আসিব।

মীর্জা নথন আলাউদ্দীন ইস্পাহানী, জাহাঙ্গীরের রাজত্বের শেষ ভাগে, শিতাব খাঁ উপাধি পান, তাঁহার ছদ্ম নাম ঘাইবী; এজন্য তাঁহার গ্রন্থের পুরা নাম- ‘বহারিস্তান-ই-ঘাইবী’। ইহার পিতা ইত্তামাম্ খাঁ (পূৰ্ব্বনাম মালিক আলি) আকবরের সময়ে কোতোয়াল বা শান্তি-রক্ষক সেনানী ছিলেন। প্রতাপাদিত্যের সহিত আগ্রায় তাঁহার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। ইসলাম খাঁর সময়ে তিনি একহাজারী মন্সবদারী পাইয়া বঙ্গীয় নওয়ারার মীর বহর হইয়া আসিয়াছিলেন।[৬] পুত্র মীর্জা নথন তাঁহার সহকারী ছিলেন। বহারিস্তান বলিতে বসন্তের রাজ্য বুঝায়, উহাদ্বারা শস্যশ্যামলা বঙ্গভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের ইঙ্গিত করে। এই গ্রন্থে ১৬০৮ হইতে ১৬২৩ খৃঃ অব্দ পর্য্যন্ত বঙ্গদেশের ও মোগলাধিকৃত উড়িষ্যার বিশেষ বিবরণ আছে। উহার অধিকাংশ ঘটনা গ্রন্থকারের স্বচক্ষে দেখিয়া লেখা; সুতরাং প্রামাণিক বলিয়া ধরা যায়, যদিও সঙ্গে সঙ্গে বিবেচনা করিতে হইবে যে বিজেতার পক্ষ হইতে লেখা বলিয়া উহা পক্ষপাতিতার হাত এড়াইতে পারে নাই। পুস্তকখানি চারি খণ্ডে অর্থাৎ দপ্তরে বা ভাবে বিভক্ত। প্রত্যেক দপ্তরে কতকগুলি ক্ষুদ্র ভাগ বা দস্তান আছে। প্রথম খণ্ডে ইসলাম খাঁর শাসন বর্ণিত হইয়াছে বলিয়া উহার নাম ইসলাম নামা। সেই অংশই আমাদের প্রয়োজনীয়। উহার ৫ম দস্তানে ইসলামের সহিত প্রতাপের সাক্ষাৎ, ১০ম দস্তানে যশোহর ও বালা আক্রমণ, প্রতাপাদিত্যের পরাজয় ও পতন এবং রামচন্দ্রের বশ্যতা স্বীকার বর্ণিত হইয়াছে।[৭]

নবাব ইসলাম খাঁ ১৬০৮ খৃষ্টাব্দে রাজমহলে আসিয়া পৌঁছিলেন। ঐ বৎসরের শেষ ভাগে প্রতাপাদিত্যের দূত শেখ বদী রাজকুমার সংগ্রামাদিত্যকে সঙ্গে করিয়া আনিয়া রাজমহলে নবাবের সহিত দেখা করিলেন। প্রতাপাদিত্য পুত্রের সঙ্গে নূতন নবাবের জন্য কয়েকটি হাতী এবং নানাবিধ বহুমূল্য উপহারদ্রব্য পাঠাইয়াছিলেন; এবং প্রয়োজন হইলে তিনি নিজেও গিয়া দেখা করিবেন, একথাও পত্রে লিখিত ছিল। মানসিংহের সহিত সন্ধি করিয়া প্রতাপাদিত্য যে মোগল বাদশাহের বশ্যতা স্বীকার করিয়াছিলেন, সংগ্রামদিত্যকে পাঠাইয়া নূতন নবাবের সহিত সাক্ষাৎ করান তাহারই বাহ্য নিদর্শন। সংগ্রাম তখন বালক, নবাব তাহার সহিত যথোচিত সদ্ব্যবহার করিয়া তাহাকে বাড়ী ফিরিয়া যাইবার অনুমতি দিলেন। প্রতাপাদিত্যকে স্বয়ং আসিয়া দেখা করিবার জন্য লিখিয়া দেওয়া হইল। যে দুৰ্দ্ধৰ্ষ ভুঞাদিগের দমনের জন্য ইসলাম খাঁ বদ্ধপরিকর, প্রতাপাদিত্য তাঁহাদের অন্যতম। সুতরাং তাঁহার সহিত দেখা হওয়ার প্রয়োজন ছিল। আবদুল লতীফের ভ্রমণ-কাহিনী হইতে জানিতে পারি, এই সময়ে ‘প্রতাপাদিত্যের মত সৈন্য ও অর্থবলে বলী রাজা আর বঙ্গদেশে নাই। তাঁহার যুদ্ধ-সামগ্রীতে পূর্ণ প্রায় সত শত নৌকা, বিশ হাজার পাইক (পদাতিক সৈন্য) এবং ১৫ লক্ষ টাকা আয়ের রাজ্য’ ছিল।[৮]

১৬০৮ ডিসেম্বর মাসের শেষে নবাব সদলবলে রাজমহল হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন। বাদশাহী নওয়ারায় চড়িয়া তাঁহারা গঙ্গাপথে গোয়াশ পরগণার[৯] উত্তর সীমান্তে পৌঁছিলেন। যেখানে নবাব পৌঁছিলেন, উহারই অপর পারে বুড়ুল নদীর মোহানা ও রাজশাহী জেলার অন্তর্গত শরদহ নামক স্থান। ইহা একটি পুরাতন রাজপথের খেয়াঘাট। এখান হইতে একটি রাস্তা একদিকে গোয়াশের মধ্যে দিয়া মুত্সুদাবাদের কাছে গৌড় বঙ্গের বাদশাহী সড়কে মিশিয়াছিল এবং অপর দিকে পদ্মা পার হইয়া পুঁটিয়া দিয়া ঘোড়াঘাটের সর্ব্বত্র যাওয়া যাইত। নবাব এইস্থানে পদ্মা পার হইবার সময়ে ভূষণার সত্রাজিৎ রায়ের ভ্রাতা কয়েকটি হাতী লইয়া আসিয়া নবাবের সঙ্গে দেখা করেন এবং প্রতাপাদিত্যের নিকট হইতেও সংবাদ পাওয়া যায় যে, তিনি স্বয়ং শীঘ্র আসিয়া দেখা করিবেন। নবাব সত্রাজিৎকেও স্বয়ং আসিতে আদেশ করিলেন এবং ভুঞাদ্বয়ের আগমনের অপেক্ষায় নিকটবর্ত্তী আলাইপুর গ্রামে প্রায় দুইমাস কাল অপেক্ষা করিলেন। এইস্থানে থাকিবার কালে নবাব ইত্তামাম্ খাঁর অধীন বঙ্গদেশস্থ বাদশাহী নওয়ারা এবং তোপখানার মহলা (review) পরিদর্শন করিলেন। ১৬০৯ অব্দের জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারি এইস্থানে কাটিয়া গেল। তবুও প্রতাপাদিত্য বা সত্রাজিৎ আসিলেন না। তখন নবাব পুনরায় উত্তর দিকে কুচ (march) আরম্ভ করিলেন এবং কিছুদূরে ফতেপুর নামক স্থানে পৌঁছিয়া পুনরায় একমাস অপেক্ষা করিলেন। সেখানে সত্রাজিৎ ১৮টি হাতী উপহার দিয়া দেখা করিলেন। ৩০শে মার্চ পুনরায় সেখান হইতে কুচ চলিল। পথে অন্যান্য ভুঞাগণ উপহার দিয়া গেলেন।

আরও একটু উত্তর দিকে আত্রেয়ী নদীর তীরে, বর্ত্তমান নাটোরের ১৫ মাইল উত্তরে বজ্রপুর নামক স্থানে ২৬শে এপ্রিল তারিখে সেখ বদীর সহিত প্রতাপাদিত্য আসিয়া নবাবের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন। তিনি ৬টি হাতী, নানা মূল্যবান দ্রব্য, কর্পূর, অগুরু এবং নগদ প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা উপহার দিলেন।[১০] বহারিস্তান হইতে আমরা জানিতে পারি, এই সাক্ষাৎকালে ‘ইসলাম খাঁ তাহাকে অত্যন্ত সম্মানের সহিত অভ্যর্থনা করিলেন এবং মিষ্ট কথাবার্তা কহিতে থাকিলেন। তাহার পর এই সর্ত্তে তাঁহাকে বিদায় দিলেন যে, দেশে ফিরিয়া [তিনি] তাঁহার পুত্র ও যুদ্ধনৌকাগুলি বাদশাহী নওয়ারার সহিত যোগদান করিতে পাঠাইবেন এবং যখন বর্ষার শেষে নবাব স্বয়ং ভাটি প্রদেশের জমিদারদিগের বিরুদ্ধে যাত্রা করিবেন, তখন প্রতাপ সসৈন্য বাদশাহী সেনাপতিদের সহিত মিলিত হইয়া যুদ্ধ করিবেন। প্রথমতঃ প্রতাপ কনিষ্ঠ পুত্র সংগ্রামাদিত্যের সহিত ৪০০ রণপোত পাঠাইবেন এবং বর্ষাশেষে স্বয়ং আরও একশত নৌকা (একুনে পাঁচ শত), এক হাজার অশ্বারোহী এবং বিশ হাজার পদাতিক সৈন্য লইয়া আন্দল খাঁ [আড়িয়াল খাঁ] নদীর পথে গিয়া শ্রীপুর ও বিক্রমপুর আক্রমণ করিয়া ভাটির জমিদার মুসা খাঁ মসনদ-ই-আলাকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিবেন; এইরূপ প্রতিজ্ঞা করিলেন।[১১]

প্রতাপাদিত্যের মত পরাক্রান্ত ভুঞা এইভাবে সাহায্য করিলে, নবাবের পক্ষে ভাটি রাজ্যের সমস্ত রাজন্যবর্গকে কতরলস্থ করা সহজ হইবে। ভেদনীতির প্রবর্তন দ্বারা তাঁহার অভীষ্ট সিদ্ধ হইবে। ইসলাম খাঁ প্রতাপাদিত্যের স্বীকারোক্তিতে সন্তুষ্ট হইয়া, তাঁহাকে শ্রীপুর ও বিক্রমপুরের জমিদারী পুরস্কার দিলেন। কেদার রায়ের মৃত্যুর পর এই রাজ্য নামে মাত্র মোগলদিগের অধিকারে আসিয়াছে, শাসনাধীন হয় নাই। এক্ষণে প্রতাপের স্বাধীনতার বিনিময়ে তাঁহাকে এই দুই রাজ্য প্রদত্ত হইল এবং তাঁহার পূর্ব্ব সম্পত্তি বহাল রহিল। শুধু ইহাই নহে, ‘সুবাদার যাইবার সময় প্রতাপকে [নানবিধ] খেলাৎ, রত্নখচিত ছোরা, তিনটা হাতী, কয়েকটি ঘোড়া এবং বাদশাহের পক্ষ হইতে নক্কাড়া উপহার দিলেন।’ উহাই লইয়া প্রতাপ স্বরাজ্যে প্রতাগত হইলেন।

মোগলের খেলাৎ এবং সামন্ত রাজের খেতাব লইয়া প্রতাপাদিত্য দেশে ফিরিলেন; কিন্তু সে প্রতাপ আর নাই। উড়িষ্যাভিযানের সময় হইতে আমরা প্রতাপাদিত্যের যে দোর্দন্ত প্রতাপ দেখিয়া আসিয়াছি, সত্য সত্যই যাহার ‘ভয়ে যত ভূপতি দ্বারস্থ’ হইয়াছিল, সে প্রতাপাদিত্য আর নাই। এখন তাঁহার বয়সও প্রায় ৫০ বৎসর; জ্ঞাতি-বিরোধ, যুদ্ধ বিগ্রহ এবং বিষয়-বিষে জর্জরিত হইয়া তিনি অকালে বার্দ্ধক্যে উপনীত হইয়াছেন। মানসিংহের সহিত রণরঙ্গই তাঁহার বীরজীবনের শেষ প্রকৃষ্ট পরিচয়। নবাব দরবার হইতে বিদায় লইয়া যখন তিনি যশোহরে আসিতেছিলেন, তখন শুধুই ভাবিতে লাগিলেন, ‘করিলাম কি? স্বাধীনতা ঘোষণার এই কি শেষ ফল? বঙ্গে যে স্বাধীনতার উন্মেষ করিবার জন্য যৌবনকে বার্দ্ধক্যে পরিণত করিলাম, তাহার পরিণাম কি এই?’ যতই ভাবিতে লাগিলেন, নবাবের নিকট যে প্রতিজ্ঞা করিয়া আসিয়াছেন, কার্যক্ষেত্রে তাহা প্রতিপালন করিবার প্রবৃত্তি ততই কমিতে লাগিল। এক প্রকার কাপুরুষতা আসিয়া তাঁহার পতনশীল প্রতিভাকে নিষ্প্রভ করিয়া দিয়ছিল। তিনি গৃহে ফিরিলেন, বর্ষা চলিয়া গেল, কিন্তু প্রতিশ্রুতি মত নবাবকে কোন সাহায্য পাঠাইলেন না। কারণ তাঁহার সাহায্যে অন্য ভুঞাদিগকে দমন করিয়া অবশেষে যে মোগলেরা তাঁহাকে ছাড়িবে না, তাহা তিনি বুঝিতেন।

নবাব ঘোড়াঘাট হইতে সৈন্য পাঠাইয়া, কত্রাভুর মুসা খাঁ ও ভাটির অন্যান্য ভুঞাদিগকে পরাস্ত ও বশীভূত করাইলেন। ওসমান খাঁ পরাজিত হইয়া বকাই নগর দুর্গ ছাড়িয়া শ্রীহট্টের দিকে পলাইয়া গেলেন। ভূষণার মুকুন্দরাম ও তৎপুত্র সত্রাজিৎ পূৰ্ব্বেই আসিয়া মোগল পক্ষে যোগদান করিয়াছিলেন। এই সময়ে শুধু ভুঞা-বিদ্রোহ নহে, আরাকাণী মগ ও সিবাষ্টিন গঞ্জালিসের অধীন পর্তুগীজ দস্যুরা পুনরায় পূর্ব্ববঙ্গে অত্যন্ত উৎপাত আরম্ভ করিয়াছিল। নবাব বুঝিলেন, গৌড় বা রাজমহল প্রভৃতি দূরবর্তী স্থান হইতে আসিয়া এই সকল ভীষণ শত্রুর কবল হইতে রাজ্যরক্ষণ করা চলে না। তাই তিনি বুড়িগঙ্গা তীরবর্ত্তী ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করিয়াছিলেন। ইহাই ঢাকানগরীর উৎপত্তির প্রথম কারণ। তথায় লালবাগে এখনও ইসলাম খাঁর দুর্গ ও প্রাসাদাদির ভগ্নাবশেষ বর্ত্তমান। যেমন বিদ্রোহ-সঙ্কুল দেশ, তেমনই প্রতাপশালী নবাব। প্রতাপ যথাসময়ে প্রতিজ্ঞা মত সৈন্য সাহায্য পাঠান নাই বলিয়া তিনি ক্রোধে অধীর হইলেন। তিনি ঘোড়াঘাট হইতে ঢাকায় গিয়া বসিবার পূর্ব্বেই যশোহর বিজয়ের জন্য বিরাট বাহিনী প্রেরণ করিয়া গেলেন।

‘বহারিস্তান’ হইতে জানা যায়,–’ইসলাম খাঁর এই সব বিজয়ের পর প্রতাপের চৈতন্য হইল। তিনি পূৰ্ব্ব অপকর্ম্মের জন্য অনুতাপ করিয়া নিজপুত্র সংগ্রামাদিত্যকে ৮০ খানা রণপোতা সহ নবাবের নিকট পাঠাইলেন এবং ক্ষমা চাহিলেন। ইসলাম খাঁ রাগে আজ্ঞা দিলেন যে মীর- ইমারৎ (গৃহনির্মাণের অধ্যক্ষ) ঐ ৮০ খানা নৌকায় কাঠ, খড়, ইট, পাথর বহিয়া বহিয়া ঐগুলো ভাঙ্গিয়া ফেলুক।[১২] তাহার পর ইনাএৎ খাঁর[১৩] অধীনে এক প্রকাণ্ড সৈন্যদল, অগণিত অশ্বারোহী ও পদাতিক, ৫০০০ বর্ক-আন্দাজ, ৩০০ রণপোত এবং অনেকগুলি তোপ দিয়া তাঁহাকে যশোহর প্রদেশ জয় করিবার জন্য পাঠাইলেন। মুসা খাঁ ও অন্যান্য বাধ্য জমিদারগণ নিজ নিজ নৌকা ও সৈন্যসহ বাদশাহী অভিযানে যোগ দিল। ঠিক এই সময়ে অপর একদল বাদশাহী সৈন্য বগলার [বাক্লার] জমিদার (কন্দর্পের পুত্র) রামচন্দ্রকে জয় করিবার জন্য সৈয়দ হকীমের অধীনে প্রেরিত হইল। আর ২০০০ বর্ক-আন্দাজ ও ৪০০ নৌকা অনেকগুলি ওম্রাসহ উসমান [ওসমান] খাঁর গতিবিধি লক্ষ্য করিবার জন্য ‘বার সিন্দুর ‘ নামক স্থানে বসিয়া রহিল। প্রতাপ যেন কোন দিক হইতে সাহায্য না পান।[১৪] রামচন্দ্র যে প্রতাপাদিত্যের জামাতা এবং ওসমান খাঁর সহিত তাঁহার সখ্য থাকিতে পারে, ইহা নবাবের বিদিত ছিল বলিয়া বোধ হয়।[১৫] কতলুর পুত্র জমাল খাঁ প্রতাপাদিত্যের অধীন সেনানী ছিলেন।

১৬০৯ খৃষ্টাব্দের শেষ ভাগে ইনাএৎ খাঁ ঘোড়াঘাট হইতে কুচ করিয়া স্থলপথে অগ্রসর হন। তাঁহার প্রধান সহকারী হইয়াছিলেন, ইত্তামাম্ খাঁর পুত্র মীর্জা নথন। ইনিই বহারিস্তানের গ্রন্থকার। ইনাএৎ হইলেন স্থলসৈন্যের কর্তা এবং মীর্জা নথন নওয়ারা ও তোপ বিভাগের অধিনায়ক। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, বঙ্গদেশস্থ বাদশাহী নওয়ারা ও আগ্নেয়াস্ত্র সমূহ মীর-বহর ইত্তামাম্ খাঁর অধীন ছিল এবং তিনি এই সময়ে আলাইপুরের সন্নিকটে পদ্মাবক্ষে ছিলেন। ইনাএৎ ঐ স্থানে আসিয়া পদ্মা পার হইয়া, কুচ করিয়া মহৎপুর বাগোয়ানে উপস্থিত হইলেন। মীর্জা নথনও ভাতুড়িয়ার জমিদার পীতাম্বরকে (১ম অংশ, ৩য় পরিচ্ছেদ) পরাস্ত ও বিতাড়িত করিয়া পদ্মাতীরে পৌঁছিলেন এবং তথায় পিতার নিকট হইতে রণতরী ও তোপ লইয়া গঙ্গা হইতে জলঙ্গী ও জলঙ্গী হইতে ভৈরব নদে পড়িয়া তত্তীরবর্ত্তী বাগোয়ানে আসিয়া প্রধান সেনাপতি ইনাএতের সহিত মিলিত হইলেন। ইনাএৎ এইস্থানে মীর্জা ও অন্যান্য ওমরাহের জন্য অপেক্ষা করিতেছিলেন।

এই বাগোয়ান বৰ্ত্তমান কৃষ্ণনগর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদারের আবাসস্থল। মানসিংহ যখন প্রতাপাদিত্যকে আক্রমণ করিতে যান, তখন ভবানন্দ তাঁহাকে সাহায্য করিয়া কি ভাবে মহৎপুর বাগোয়ান প্রভৃতি ১৪ পরগণার জমিদারী লাভ করেন, তাহা পূৰ্ব্বেই বলা হইয়াছে। এই সময়ে তিনি মাথাভাঙ্গা নদীর তীরবর্ত্তী মাটীয়ারিতে রাজপ্রাসাদ নির্ম্মাণ করিয়া প্রবল জমিদারের মত বাস করিতেছেন। তিনি মোগলদিগের বিশেষ অনুগৃহীত ও বশীভূত। এই জন্য ইনাএৎ তাঁহারই জমিদারীর মধ্যে বাগোয়ানে আসিয়া কিছু কাল আড্ডা করিয়াছিলেন। ভবানন্দ যে এবারেও মোগলদিগকে নানাবিধ নৌকা ও সরঞ্জাম দিয়া সাহায্য করিয়াছিলেন, সে কথা বলাই বাহুল্য। প্রতাপাদিত্যের পরাজয়ের পর যখন এই কথা ইসলাম খাঁর কর্ণগোচর হয়, তখন তিনি ভবানন্দকে হুগলীর কানুনগো পদে প্রতিষ্ঠিত করিয়া মজুমদার উপাধি দিয়াছিলেন।

‘তাহার পর প্রতাপাদিত্যের রাজ্যের দিকে সকলে অগ্রসর হইলেন। পথে শিকার চলিতে লাগিল।’[১৬] বাগোয়ান হইতে বিরাট মোগল বাহিনী ভৈরব ও মাথাভাঙ্গা নদী দিয়া বৰ্ত্তমান কৃষ্ণগঞ্জের সন্নিকটে পৌঁছিল। পথিমধ্যে মাটীয়ারিতে ভবানন্দ ঘাটোয়াল জমিদারের মত মোগল সৈন্যদলকে সৎকৃত করিয়াছিলেন। কৃষ্ণগঞ্জের নিকটে যেখানে মাথাভাঙ্গা নদী চুর্ণি নাম ধারণ করিয়া দক্ষিণ বাহিনী হইয়াছে, সেই স্থান হইতে পূৰ্ব্বমুখে ইচ্ছামতী বাহির হইয়া আসিয়াছে। এই ইচ্ছামতী নদীতে পড়িয়া মোগল সৈন্য ও নওয়ারা ক্রমশঃ পূর্ব্ব-দক্ষিণ মুখে অগ্রসর হইতে লাগিল। সুদীর্ঘ আঁকাবাঁকা নদীপথ বাহিতে বহু সময় লাগিয়াছিল। পরে বনগ্রাম পার হইয়া মোগল সৈন্য প্রতাপাদিত্যের যশোহর রাজ্যের সীমান্তে আসিয়া পৌঁছিল। এই স্থানে যমুনা ও ইচ্ছামতী সঙ্গমের নিকট প্রতাপ-সৈন্যের সহিত মোগলদিগের প্রথম যুদ্ধ হইল।

পাদটীকা :

১. ইনি বঙ্গের পূর্বতন শাসনকর্তা খাঁ আজমের পুত্র, ইঁহার পূর্ব্বনাম সামসুদ্দীন খাঁ — Tuzuk-i-Jahangiri (Rogers), Vol. I. p. 144.

২. Tuzuk-i-Jahangiri (Rogers), Vol. I. pp. 208-9.

৩. আবুল ফজলের এই ভগিনীর নাম লালী বেগম : উহার গর্ভে ইসলাম খাঁর যে পুত্র হয়, তাহার নাম হুশঙ্গ।- Ain (Blochmann). p. 493; Tuzuk. Vol. 1. p. 173.

৪. এই পারসিক পুঁথি হইতে প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে যে সংবাদ পাওয়া যায়, অধ্যাপক যদুনাথ সরকার মহোদয় তাহা ১৩২৬ আশ্বিনের ‘প্রবাসী’তে প্রকাশ করেন। এখানে উহার সারোদ্ধার করিব।

কিছু সংস্কারান্তে উক্ত প্রবন্ধ অধ্যাপক সরকার পুনরায় ‘শনিবারের চিঠি’, ১৩৫৫, আষাঢ় সংখ্যায় প্রকাশ করেন। উহা পরিশিষ্টে সংযোজিত করা হইল।— শি মি]

৫. [অধ্যাপক যদুনাথ সরকার বহারিস্তানের প্রথম পাঠোদ্ধারান্তে ‘প্রবাসী’, ১৩২৭, কাৰ্ত্তিক সংখ্যায় ‘প্রত্যাপাদিত্যের পতন’ নামক প্রবন্ধে গ্রন্থাকারের নাম ‘মির্জা সহন’ বলিয়া বলেন। নূতন পাঠোদ্ধারান্তে উক্ত প্রবন্ধ পুনরায় ‘শনিবারের চিঠি’, ১৩৫৫, জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশ করেন, উহাতে ‘মির্জা নথন’ বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছে। বৰ্ত্তমান সংস্করণে তদনুযায়ী ‘মীর্জা নথন’ই গ্রহণ করা হইল। এই প্রবন্ধ পরিশিষ্টে সংযোজিত হইয়াছে। ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দে Dr. M. I. Borah বহারিস্তানের ইংরাজী অনুবাদ দুই খণ্ডে প্রকাশ করেন। উহার ভূমিকায় তিনি বলেন : ‘Sir Jadunath Sarkar……. calls the author as Mirza Sahan which I believe is a misreading of the name Nathan. The manuscript is quite clear and there is very little room for doubt to call it otherwise. But the dots over the letters nun and ta are put so close to one another that one may easily be led to read it sa. Besides this we have definite evidence from the Assamese sources e.g. Purani Asam Buranji. Kamrupar Buranji and others. where he is often referred to as Mirza Nathan.’—শি মি]

৬. ‘Ihtimam khan was raised to the rank of 1.000 personal and 300 horse and made mirbahar (admiral) and was appointed to charge of the mawara of Bengal.’-Tuzuk. Vol. 1. p. 144.

৭. অধ্যাপক সরকার মহাশয় প্যারিস হইতে এই গ্রন্থের যে হস্তলিখিত পুঁথির সমগ্র আলোকচিত্র (roto- graph) আনিয়াছেন, তাহা ৬৫৬ পৃষ্ঠায় পূর্ণ এবং উহার প্রতিপৃষ্ঠায় ২১ লাইন করিয়া আছে। পুঁথিখানি গ্রন্থকারের স্বহস্তে লিখিত এবং ১৬৪১ খৃঃ অব্দ পর্যন্ত উহা যে তাঁহার হস্তে ছিল, স্থানে স্থানে পার্শ্ববৰ্ত্তী টিপ্পনী হইতে তাহা জানা গিয়াছে। এই পুঁথির অন্য কোন প্রতিলিপি অন্য কোথাও আছে কিনা জানা যায় নাই। ‘The Bibliotheque Nationale of Paris possesses the only copy of it known to exist in the world. Its number is ‘Gentil 42-supplement 252’ and it is described on p. 356 (Entry no. 617) of E. Blochet’s catalogue des monacsrits persans, Bibliotheque Nationale, tome premiere (Paris, 1905).” অধ্যাপক সরকার মহাশয় এই পুস্তকের কতকাংশের বিবরণ বেহার ও উড়িষ্যা রিচার্চ সোসাইটির জর্ণালে (১৯২১) এবং কতক ১৩২৭ সালের কার্তিক মাসের ‘প্রবাসী’ পত্রে প্রকাশিত করিয়াছেন। [পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য— শি মি]

৮. ‘আবদুল লতীফের ভ্রমণ’– ‘প্রবাসী’, ১৩২৬ আশ্বিন, ৫৫২ পৃ। [পরিশিষ্ট দ্র. শি মি]

৯. গোয়াশ সহর এক্ষণে গঙ্গাতীর হইতে দক্ষিণে বহুদূরে অবস্থিত। গোয়াশ ভৈরব নদের প্রাচীন খাতের পার্শ্বে, উহার সন্নিকটে ইসলামপুর নামক একটি স্থানও আছে। ইসলাম খাঁ কখনও গোয়াশে আসিয়াছিলেন কিনা জানা যায় না। আসিতে হইলে অনেক ঘুরিয়া ভৈরব নদ দিয়া আসিতে হইত। রেণেলের ৬ নং ম্যাপে মুর্শিদাবাদ হইতে গোয়াশ, শরদহ ও পুটিয়া দিয়া ঘোড়াঘাট পর্যন্ত রাস্তা অঙ্কিত আছে।

১০. ‘লতীফের ভ্রমণ’- ‘প্রবাসী’, ১৩২৬, ৫৫৩ পৃ। [পরিশিষ্ট দ্র.- শি মি

১১. ‘প্রতাপাদিত্যের পতন’ – ‘প্রবাসী’, ১৩২৭, কার্তিক ২ পৃ। [পরিশিষ্ট দ্র. – শি মি]

১২. সম্ভবত এই সময়ে ঢাকায় যে দুর্গ ও প্রাসাদ নির্ম্মিত হইতেছিল, তাহারই আবশ্যক কার্য্যে প্রতাপের প্রেরিত নৌকাগুলি লাগান হইয়াছিল।

১৩. ১৬০৯ অব্দের প্রারম্ভে ঘিয়াস খাঁ বা ইনাএৎ উল্যা, ইসলাম খাঁর অনুরোধক্রমে জাহাঙ্গীর কর্তৃক ইনাএ খাঁ এই সম্মানিত উপাধি এবং দুই-হাজারী মনসবদারী পান।— Tuzuk, Vol. 1. pp. 158, 160.

১৪. ‘প্রবাসী’, ১৩২৭ কার্ত্তিক, ২-৩ পৃ। [পরিশিষ্ট দ্র.- শি মি]

১৫. এই সময়ে প্রতাপের কন্যা বিমলা বালায় গিয়া গৃহীত হইয়াছেন। সুতরাং এখন রামচন্দ্রের বৈরীভাব ছিল বলিয়া মনে হয় না।

১৬. ‘প্রবাসী’, ১৩২৭, কার্তিক, ৩ পৃ। [পরিশিষ্ট দ্ৰ— শি মি]

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন