১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি

সতীশচন্দ্র মিত্র

প্রথম পরিচ্ছেদ – বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি

১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ষড়যন্ত্রের ফলে পলাশীর যুদ্ধে সেনাপতি কর্ণেল ক্লাইভের নিকট পরাজিত ও পলায়িত হইলেন বটে, কিন্তু উহাতে নবাবী শাসনের পরিবর্ত্তন হয় নাই; কারণ সিরাজের নৃশংস হত্যার পর, তাঁহার স্থলে মীরজাফরকে মুর্শিদাবাদের মসনদে বসান হইল। তবে বিশ্বাসঘাতকতার বিষদোষে মানুষের মেরুদণ্ড বিনষ্ট হয়, তাঁহার আত্মসম্মান বা স্বাতন্ত্র্যের জ্ঞান থাকে না; মীরজাফর ইংরাজের হস্তে কলের পুতুল হইয়া বসিলেন, লোকে তাঁহাকে ‘কর্ণেল ক্লাইভের গদর্ভ’ বলিয়া উপহাস করিত।[১] এমন কি, তাঁহার ইংরাজ-প্রভুই তাঁহাকে অকৰ্ম্মা সাব্যস্ত করিয়া গদিচ্যুত করতঃ তাঁহার জামাতা মীরকাশেমকে নবাব-তক্তে বসাইলেন। কিন্তু মীরকাশেমের প্রকৃত চরিত্র পূর্ব্বে জানা যায় নাই; তিনি যখন স্বদেশীয় রাজ-তক্তের মর্য্যাদা রক্ষার জন্য মাথা তুলিলেন, তখন তিনি বিদ্রোহীর মত যুদ্ধক্ষেত্রে বিধ্বস্ত হইলেন এবং পলায়ন করিয়া দীনহীনের মত জীবন শেষ করিলেন। অহিফেনসেবী, কুষ্ঠাক্রান্ত, বৃদ্ধ ও অকৰ্ম্মণ্য মীরজাফরের আবার ডাক পড়িল, কিন্তু অচিরে মৃত্যু তাঁহার বিষণ্ণ অবসন্ন জীবনের সমাপ্তি করিয়া দিল। বঙ্গীয় মুসলমান-শাসনের স্বাতন্ত্র্যের যাহা কিছু অবশিষ্ট ছিল, তাহাও এই সঙ্গে শেষ হইয়া গেল। ইহার পর বৈদেশিক শাসক-সম্প্রদায়ের ক্রীড়া পুতুলের মত কত জন নবাব-তক্তে বসিয়া বৃত্তিভোগ করিলেন, তাঁহাদের কাহিনীর সহিত দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের কোন সম্পর্ক নাই।

১৭৬৫ অব্দে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি বাদশাহ শাহ আলমের নিকট হইতে বঙ্গ বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানী গ্রহণ করিলেন; তখন অর্থ আসিল ইংরাজের হস্তে, শাসন থাকিল চরিত্রহীন মজ্জাহীন স্বার্থসম্বন্ধহীন নবাবের হাতে। সুতরাং কড়াকড়ি করিয়া শুধু টাকাকড়িই আদায় হইত; তাহারও কতক ইংরাজ কোম্পানির হস্তে পৌঁছিত, কতক দেশীয় দুৰ্ব্বত্ত কর্মচারীরা চুরি করিয়া খাইত; জবরদস্তি করিয়া অতিরিক্ত আদায়ের চাপ নিরীহ প্রজাবর্গের উপর পড়িয়া তাহাদিগকে নিঃস্ব ও নিরন্ন করিয়া তুলিয়াছিল। ইহার উপর আবার প্রাকৃতিক বিপর্য্যয় বশতঃ অনাবৃষ্টি হওয়ায়, ১১৭৬ সালে (১৭৬৯ খৃঃ) ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামক ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল, উহাতে বঙ্গের এক- তৃতীয়াংশ লোক মৃত্যুমুখে পড়িল। ঐ দুর্ভিক্ষের প্রকোপ যশোহর-খুলনায়ও আসিয়াছিল; যে অঞ্চলে ‘সকল ধান ২২ পাহারী’ (১১০ সের) ছিল, সেখানেও এই ‘কাটা’ মন্বন্তরে টাকায় দশসের করিয়া ধান্য বিক্রয় হইয়াছিল। নদীমাতৃক দেশ বলিয়া লোকের একেবারে অন্নাভাব বা অতিরিক্ত প্রাণহানি হয় নাই।[২]

এই দুর্ভিক্ষের পর ভারত-শাসনের উপর বিলাতের কর্তৃপক্ষের নজর পড়ে এবং নূতন বিধানানুসারে ওয়ারেণ হেষ্টিংস বঙ্গের গবর্ণর হইয়া দেওয়ানী আফিস মুর্শিদাবাদ হইতে কলিকাতায় তুলিয়া আনেন (১৭৭২)। আসিয়াই তিনি রাজস্ব আদায়ের জন্য স্থানে স্থানে কালেক্টর বা সংগ্রাহক নিযুক্ত করেন। কিন্তু খরচের ভয়ে শীঘ্রই সে প্রথা তুলিয়া দেওয়া হইল। যশোহরে প্রায় দুই বৎসরকাল একজন কালেক্টর ছিলেন, কিন্তু তাঁহাকে তুলিয়া লওয়ায় কর সংগ্রহে গোলমাল ঘটিল। প্রকৃত পক্ষে ১৭৮১ অব্দের পূর্ব্বে, যশোহরে কোনই শাসন থাকিল না। নবাবী আমলে ভূষণা ও মীর্জানগর এই দুই স্থানে দুইজন ফৌজদার থাকিয়া কর আদায়ের ব্যবস্থা করিতেন এবং অবস্থানুসারে যাঁহারা নবাবের প্রিয় পাত্র, সেই সব জমিদারদিগকে প্রতিবেশীর সম্পত্তি নিজের সামিল করিয়া লইতে সাহায্য করিতেন। নবাবী শাসন গিয়াছে, কিন্তু বৃটিশ শাসন আসে নাই; এই সন্ধিযুগে ফৌজদার না থাকায় অরাজক দেশে জমিদারেরাই সর্ব্বেসৰ্ব্বা হইল দাঁড়াইলেন।

পূর্ব্বেই বলিয়াছি চাঁচড়ার সন্নিকটে প্রাচীন মুড়লীতে মুসলমান আমলের একটি শাসন-কেন্দ্র ছিল। ১৭৮১ অব্দে ইংরাজেরাও ঐ স্থানে একটি ‘আদালত’ বা কাছারী খুলিলেন এবং যশোহর, ফরিদপুর ও খুলনার অধিকাংশ স্থান উহার শাসনাধীন হইল। গবর্ণর-জেনারেল তখন টিলম্যান হেঙ্কেল (Tilman Henkell) নামক সুযোগ্য সদাশয় ব্যক্তিকে মুড়লীতে জজ্ ও ম্যাজিষ্ট্রেট নিযুক্ত করিয়া পাঠাইলেন। তাঁহার সহকারী (Registrar) হইয়া আসিলেন রিচার্ড রোক সাহেব (Richard Rocke)। উভয়ের জন্য উচ্চ বেতন ও বাসস্থানের ব্যবস্থা হইল। মুড়লীতে একটি পুরাতন কুঠি ছিল, তাহাই মেরামত করিয়া হেঙ্কেল সাহেব নিজের মনোমত করিয়া লইলেন।

নিয়ম হইল, জজ্ সাহেবই পূৰ্ব্বর্তন ফৌজদার ও থানাদারের কার্য্য করিবেন। পূর্ব্বে পুলিস বিভাগের কার্য্য থানাদারেরা করিতেন, এখন এই বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হইয়া জজের অন্য নাম হইল ম্যাজিষ্ট্রেট। অপরাধীর বিরুদ্ধে মোকদ্দমা পরিচালনের জন্য মুড়লী ও ভূষণায় দুইজন দারোগা ছিলেন। কিন্তু দারোগারা মুখ্যতঃ তখনও মুর্শিদাবাদের নাজিম বা নবাবের অধীন ছিলেন, কারণ ফৌজদারীর শাসনভার তখনও কোম্পানির হস্তে যায় নাই। জেল বা কারাগার এবং মোকদ্দমার কাগজ পত্র সবই দারোগার হাতে থাকিত। নায়েব নাজিমের হুকুম তাঁহারা ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের হস্ত দিয়াই পাইতেন, তবুও তাঁহারা অনেক সময়ে ম্যাজিষ্ট্রেটের হুকুম মানিতেন না; দ্বৈত-শাসনের ইহাই ফল।

হেঙ্কেলের আসিবার পূর্ব্বে ৪টি প্রধান থানা ছিল, ভূষণা ও মীর্জানগরের কথা পূর্ব্বে বলিয়াছি; ইহা ব্যতীত খুলনার অপর পারে নয়াবাদ এবং কেশবপুরের কাছে ধরমপুরে দুইটি থানা বসিয়াছিল। দেশে তখন চুরি ডাকাইতি খুব চলিতেছিল, থানার লোকেরা অনেক সময়ে দুর্বৃত্তদিগের সঙ্গে যোগ দিয়া রক্ষকেরাই ভক্ষক হইত। হেঙ্কেল সাহেব প্রত্যেক থানায় প্রধান দারোগার অধীন দেশী বরকন্দাজ না রাখিয়া, বিদেশী সিপাহী রাখার প্রস্তাব করিলেন। সে প্রস্তাব মঞ্জুর হইল, মুড়লীতে ৫০ জন, ভূষণা ও মীর্জানগরে ৩০ জন করিয়া এবং ধরমপুরে ৪ জন সিপাহী গেল। নয়াবাদে পৃথক্ সিপাহী থাকিল না; খুলনায় (বর্তমান কয়লাঘাট) যে নিমক চৌকি ছিল, তথাকার লোকদ্বারাই থানার কার্য্য চালাইয়া লওয়া হইত।

এইভাবে পুলিস রক্ষা করিতে যথেষ্ট খরচ পড়িতে লাগিল। তাৎকালিক গবর্ণমেণ্টের ব্যবসায়ী বুদ্ধিতে উহা অতিরিক্ত বলিয়া বোধ হইল। পর বৎসর (১৭৮২) হেঙ্কেলের ব্যবস্থা উল্টাইয়া দিয়া, কোম্পানি এই মৰ্ম্মে এক ইস্তাহার জারী করিলেন যে, তখন হইতে জমিদার তালুকদারগণ দেখিবেন যেন তাঁহাদের স্ব স্ব এলেকায় কোন চুরি ডাকাইতি বা খুন না হয়, ম্যাজিষ্ট্রেটের নিদেশমত তাঁহাদিগকেই স্থানে স্থানে থানা রাখিতে হইবে এবং প্রজার চরিত্রের জন্য তাঁহারাই দায়ী থাকিবেন। চুরি ডাকাইতির জন্য প্রজার ক্ষতিপূরণ জমিদারকেই করিতে হইবে, এসব হুকুম পালন করিয়া দেশের শান্তিরক্ষা করিতে না পারিলে, উঁহারা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। এই ভীষণ সারকিউলারের জন্য জমিদারেরা বিষম বিপন্ন হইলেন। মোট ৫টি স্থলে থানা বসিল ১৩টি, তন্মধ্যে ঝিনেদহ ও নয়াবাদের থানা গবর্ণমেণ্টের নিজ হস্তে রহিল। ১৭৮২ হইতে ১৭৯২ পৰ্য্যন্ত এই ব্যবস্থা চলিল, কিন্তু চুরি ডাকাইতি ঠেকাইল না। ইস্তাহার যেমন আসিল, তেমনই থাকিল, উহা কখনও কার্য্যে পরিণত হইল না। গবর্ণমেন্টের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ পণ্ড হইল।

হেঙ্কেল সাহেব জজ্ ও ম্যাজিষ্ট্রেট হইয়া আসিয়াছিলেন বটে, কিন্তু বিচারের ক্ষমতা তাঁহার হাতে ছিল না। তিনি আসামী ধরিয়া চালান দিলে, দারোগা বিচার করিতেন। সে দারোগা নিজামের লোক, কোম্পানির কর্মচারী নহেন। এতদতিরিক্ত তিনি দারোগার কাজে হাত দিতে পারিতেন না। ম্যাজিষ্ট্রেটের হাত হইতে দারোগার হাতে যাইতেই আসামীর মাসাধিক লাগিত, সেখানে যে কত মাস কাটিত, তাহার নিশ্চয়তা ছিল না। দারোগা এক প্রকার কাজির বিচার করিতেন; কখনও সামান্য শাস্তি দিয়া ঘোর দুর্বৃত্তকে ছাড়িয়া দিতেন, কখনও বা অতিরিক্ত শাস্তি দিয়া চিরজীবন কারারুদ্ধ করিয়া রাখিতেন। মৃত্যুদণ্ড, কারাযন্ত্রণা, বেত্রাঘাত বা অঙ্গহানি এই চারিপ্রকারে শাস্তি দেওয়া হইত।[৩]

তখনও ডাকাইতেরা সর্ব্বত্র উৎপাত করিত। এই আমলের একজন নামজাদা ডাকাইত ছিল— হীরা সর্দ্দার। নবাবের লোকেরা চেষ্টা করিয়াও তাহাকে ধরিতে পারে নাই। জমিদারেরা কখনও বা ডাকাইতদিগকে হাতে রাখিতেন; তাঁহারাই মিথ্যা করিয়া হীরার মৃত্যু খবর প্রচার করিয়া দেন। ইংরাজ আমলে ধরা পড়িয়া হীরা জেলে গেল; কিন্তু জেল হইতে তাহাকে খালাস করিবার জন্য খুলনায় ৩০০ লোক জমা হইয়াছিল; তখন হেঙ্কেল সাহেব পূৰ্ব্বোক্ত মত মুড়লীতে ৫০ জন সিপাহী আনিয়া আত্মরক্ষা করেন। জমিদারেরাও অনেক সময়ে লুটতরাজে লিপ্ত থাকিতেন। ১৭৮৩ অব্দে ভূষণা হইতে যখন কলিকাতার দিকে ৪০,০০০ টাকা চালান যাইতেছিল, তখন পথে তিন হাজার লোক পড়িয়া উহা লুটিয়া লয়। সে আসামীরা আর ধরা পড়ে নাই। নড়াইলের জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা কালীশঙ্কর রায় লাঠিয়াল লইয়া একখানি চাউলের নৌকা লুটিয়া লন; সম্ভবতঃ নৌকার মালিককে নির্যাতন করাই উহার উদ্দেশ্য ছিল। অনেক দিন পরে অনেক কষ্টে তাঁহাকে কলিকাতা হইতে গ্রেপ্তার করিয়া, ৪০ জন পাহারা সহ আনিয়া মুড়লীর হাজতে রাখা হয়, কিন্তু দারোগার বিচারে তিনি খালাস পান। ভূষণাতেই ডাকাইতের বেশী উপদ্রব ছিল, কিন্তু নাটোরের রাজা সেদিকে দৃষ্টিপাত করিতেন না। ১৭৮৪-৫ অব্দে নানাস্থানে দুর্ভিক্ষ হয়; ঐ সময়ে ডাকাইতির সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।

দেওয়ানী বিচারের জন্যই হেঙ্কেল সাহেব ছিলেন জজ্‌; ১৭৯৩ অব্দে মুন্সেফ নিয়োগের পূৰ্ব্বে অন্য কোন দেওয়ানী বিচারক ছিল না। হেঙ্কেল সাহেবও একক বেশী কিছু করিয়া উঠিতে পারিতেন না। জমির স্বত্ব বা ব্রহ্মোত্তরাদির সম্বন্ধেই অধিক মোকদ্দমা হইত; উহার বিচারের জন্য তিনি স্থানীয় জমিদারদিগের উপর ভার দিতেন। সুতরাং যেখানে প্রজা ও জমিদারে কলহ, সেখানে কোন কাজ হইত না। বিচারকার্য্যের সুবিধার জন্য তিনি কয়েকজন সদর আমীন নিযুক্ত করিবার প্রস্তাব করিলেন; ব্যয়বাহুল্য মনে করিয়া কর্তৃপক্ষ উহা মঞ্জুর করিলেন না।

হেঙ্কেল সাহেবের আরও বিপত্তি ঘটিয়াছিল। কোম্পানি শুধু শাসক নহেন, তখন তাঁহাদের নানাবিধ ব্যবসায়ও ছিল। যশোহর-খুলনার মধ্যে লবণ ও কাপড়ের ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য। এই উভয় ব্যবসায়ের জন্য পৃথক্ লোকজন ছিল; কিন্তু তাহারা দেশের সাধারণ শাসন মানিয়া চলিত না। এজন্য হেঙ্কেল সাহেবের সঙ্গে তাহাদের নিত্য কলহ ঘটিত, সময়ে সময়ে মারামারি কাটাকাটি পর্য্যন্ত চলিত। মহামতি হেঙ্কেল এদেশীয় প্রজার জন্য স্বদেশীয় লোকের সঙ্গে বিরোধ করিতে কুণ্ঠিত হইতেন না। এইজন্যই তাঁহার নাম চিরস্মরণীয় হইয়াছে।

প্রথমতঃ লবণের ব্যবসায়ের কথা বলিয়া লইতেছি। সুন্দরবনের রায়মঙ্গল বিভাগের উৎপন্ন লবণের ব্যবসায়ের সদর কাছারী বা আফিস ছিল খুনায়; উহাকে নিমক-চৌকি বলিত; উহার প্রধান কর্তা ছিলেন ইউয়ার্ট সাহেব (Ewart)। তাঁহার অধীন দুইজন দারোগা এবং যথেষ্ট লোকজন ছিল।[৪] সুন্দরবনের মধ্যে নদীতীরবর্ত্তী স্থানে লবণ প্রস্তুত হইত, কিন্তু সেখানে লোকের বাস ছিল না। আবশ্যক লোক অর্থাৎ মাহিন্দার গ্রাম হইতে দাদন দিয়া সংগ্রহ করিতে হইত। এইরূপে মাহিন্দার সংগ্রহ করিয়া কার্যোদ্ধারের জন্য যাঁহারা সাহেবের সঙ্গে চুক্তি করিয়া লইতেন, তাঁহাদিগকে মোলঙ্গী বলিত। সুন্দরবনের লোনা জায়গায় মাটিতে লবণ হইত। ঐ লোনা মাটি অল্পঅল্প কোপাইয়া রাখিয়া, উহার উপর খালের লোনা জল ভর্তি করিয়া চারিপাশ বাঁধিয়া রাখা হইত। জল নিৰ্ম্মল হইলে যখন নিম্নে লবণ পড়িত, তখন আস্তে আস্তে জল বাহির করিয়া দিবার ব্যবস্থা ছিল। যে খোলা মাটি রহিল, তাহা উপর উপর তুলিয়া লইয়া কাপড়ে করিয়া টাঙ্গাইয়া রাখিতে হইত এবং উহার নিম্নে বড় বড় চাড়ি পাতা থাকিত। চাড়িতে জল জমিলে সেই জল মোলঙ্গা বা ভাঁড়ে করিয়া প্রকাণ্ড বাইনে (উনুনে) জ্বাল দিলে নুন পাওয়া যাইত। মোলঙ্গীরা মাহিন্দারের সাহায্যে এই কাজ করিতেন। এখনও অনেক স্থলে মোলঙ্গী উপাধি আছে, কিন্তু নিমকের কারবার এই লবণের দেশ হইতে উঠিয়া গিয়াছে। সস্তা সাদা বিলাতী লবণ এদেশে রপ্তানি হইয়া দেশীয়দিগের অপেক্ষাকৃত অপরিষ্কৃত লবণের ব্যবসায় মাটি করিয়া দিয়াছে।

মাহিন্দারী কার্য্যে গরিব প্রজার পয়সার লোভ ছিল বটে, কিন্তু প্রাণের ভয়ে অনেকে গৃহ ছাড়িয়া জনশূন্য লবণাক্ত দূর দেশে সহজে যাইতে চাহিতেন না। রায়মঙ্গল বড় ভীতিসঙ্কুল স্থান ছিল, প্রতি বৎসর তথায় গিয়া বহুলোক মারা যাইতেন। এখনও কাহাকেও শাস্তির ভয় দেখাইতে হইলে রায়মঙ্গলে যাওয়ার কথা বলে। লোকে সহজে মাহিন্দারী লইতেন না; এমন কি, দাদন লইয়াও সময়মত কথামত কাজ করিতেন না। এজন্য মোলঙ্গীরা লোক সংগ্রহ জন্য জোর জুলুম করিতেন এবং সে সময়ে ইউয়ার্ট সাহেব নিজের সিপাহী দিয়া তাঁহাদিগকে সাহায্য করিতে বাধ্য হইতেন। প্রজারা মোঙ্গলীর অত্যাচারের নালিশ করিলে, বা দাদন-প্রাপ্ত লোকেরা অন্য কারণে আসামী হইলে, হেঙ্কেল সাহেবের কার্য্যবিধির গোলযোগ উপস্থিত হইত এবং নিমকের সাহেবের সঙ্গে বিরোধ ঘটিত। তাই তিনি প্রজার পক্ষভুক্ত হইয়া নিমক মহলের কার্য্য প্রণালীর বিপক্ষে অবিরত অভিযোগ করিতেন এবং প্রজার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাদন দেওয়া যে অন্যায়, তাহা প্ৰতিপন্ন করিয়া দিতেন। অবশেষে তিনি উভয়দিক রক্ষা করিবার জন্য নিজেই নিমক মহলের তত্ত্বাবধানের ভার অতিরিক্ত ভাবে গ্রহণ করিতে চাহিলেন। তখন গবর্ণমেণ্ট তাহাতে রাজি হইয়া ইউয়ার্ট সাহেবকে খুলনা হইতে বাখরগঞ্জে সরাইয়া দিলেন। হেঙ্কেল ভার গ্রহণ করিয়াই প্রচার করিয়া দিলেন যে, (১) কয়েকটি মাত্র নির্দ্দিষ্ট স্থানে মাহিন্দার লইবার জন্য দাদন দেওয়া হইবে, (২) কাহাকেও ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করিয়া দাদন দেওয়া হইবে না, এবং (৩) এক বৎসরের দাদনের জন্য পর বৎসর দায়ী হইতে হইবে না। গবর্ণমেণ্ট হইতে উহার সঙ্গে আর একটি কথা সংযুক্ত করিয়া দেওয়া হইল যে, (৪) যদি দেখা যায়, প্রজারা স্বেচ্ছায় লবণের কারবারে কার্য্য করিতে চাহে না, তাহা হইলে এই ব্যবসায় বন্ধ করা হইবে। অবশেষে মহামতি হেঙ্কেলের প্রস্তাব সমূহের ভিত্তিতে লর্ড কর্ণওয়ালিসের সময়ে এই বিষয়ক প্রজাস্বত্ব সম্বন্ধীয় নূতন আইন প্রণীত হইয়াছিল।[৬]

যশোহরের মধ্যে দুইটি মাত্র স্থানে কোম্পানির কাপড়ের কারখানা ছিল। দুইটি স্থানই এক্ষণে খুলনার অন্তর্গত সাতক্ষীরার মধ্যে পড়িয়াছে। একটি কলারোয়ার নিকটবর্ত্তী সোনাবাড়িয়া, অন্যটি সাতক্ষীরার নিকটবর্ত্তী বুড়ন। এই দুই স্থানে কোম্পানির কর্মচারী থাকিতেন, তাঁহারা দাদন দিয়া নিকটবর্ত্তী স্থানের জোলা ও তাঁতিদিগের নিকট হইতে বস্ত্র সংগ্রহ করিয়া কলিকাতায় চালান দিতেন। এই সূত্রে জোলাদিগের সঙ্গে বিরোধ ঘটিলে যখন মুড়লীতে নালিশ হইতে লাগিল, তখন হেঙ্কেল সাহেব এই সকল কর্মচারীর অত্যাচারের বিষয়ও রেভেনিউ বোর্ডের দৃষ্টিপথে আনিলেন এবং যথাসাধ্য ন্যায়বিচারের জন্য চেষ্টা করিতেন। এই সকল লেখালেখির ফলে উভয় পক্ষের বিরোধ ভঞ্জনের জন্য গবর্ণমেণ্ট কতকগুলি নিয়ম করিতে বাধ্য হন। কোম্পানির লোকের কয়েক প্রকার কাপড়ের একচেটিয়া ব্যবসা ছিল; এজন্য তাঁহারা কতকগুলি তন্তুবায়কে নিজের লোক বলিয়া চিহ্নিত করিয়া লইয়াছিলেন; উঁহাদের উপর অন্য কাহারও কোন ক্ষমতা ছিল না। উঁহাদের খাজানা বাকী পড়িলে বা উঁহাদের নামে ফৌজদারী নালিশ হইলে, কোম্পানির কর্মচারীকে লিখিতে হইত। সুতরাং, কার্য্যতঃ কারবারী কর্মচারী সর্ব্বেসর্ব্বা হইয়া দাঁড়াইলেন। হেঙ্কেলের প্রতিবাদেও বিশেষ ফল হয় নাই। তবুও তিনি ছাড়িবার লোক ছিলেন না। ন্যায়ের মর্য্যাদা ও শাসন-গৌরব সুপ্রতিষ্ঠিত করিবার জন্য তিনি সময়ের অগ্রবর্ত্তী হইয়াও শাসন-সংস্কারের চেষ্টা করিতেন। লর্ড কর্ণওয়ালিসের সময় যে সব সংস্কার হইয়াছিল, উহার অধিকাংশের মূলীভূত কারণ যশোহরের হেঙ্কেল সাহেব। তাঁহারই প্রস্তাব মত ১৭৮৬ অব্দে যশোহর একটি পৃথক্ জেলারূপে পরিণত হয়। ইহাই বঙ্গদেশের প্রথম জেলা এবং তিনিই সে জেলার প্রথম কালেক্টর। এই জেলার সর্ব্ববিধ সুশাসন এবং স্থায়ী উন্নতির জন্য তিনি যে কত ভাবে চেষ্টা করিয়াছিলেন, তাহা বলিবার নহে।

পূৰ্ব্বাঞ্চল হইতে কলিকাতায় যাইবার যে প্রধান নদীপথ সুন্দরবনের মধ্য দিয়া ছিল তাহা দস্যু-ডাকাইতের প্রধান আড্ডা হইয়াছিল। ঐ দস্যুদল উৎখাত করিবার জন্য, সুন্দরবনের পতিত ও জঙ্গলভূমি আবাদ করিয়া শস্যশ্যামলা করিবার জন্য এবং দীর্ঘ-মেয়াদী কয়েদীগের উপনিবেশ স্থাপনের জন্য হেঙ্কেল মহোদয় বিশেষ উদ্যোগী হন। এই বিষয়ক তাঁহার প্রস্তাবসমূহ ওয়ারে হেষ্টিংস মঞ্জুর করিলে, তিনি বলেশ্বর ও কালিন্দীর মধ্যবর্ত্তী সুন্দরবন ভাগ নিজ কর্তৃত্বাধীন করিয়া উহার জরিপ জমাবন্দী করেন (১৭৮৪)। ইহার ফলে ৬৪,৯২৮ বিঘা জমি বিলি হওয়ায় ১৪৪টি তালুকের সৃষ্টি হয়; উহাদিগকে হেঙ্কেলের তালুক বলিত।[৭] উহাদের শাসন ও কর-সংগ্রহের জন্য তিনি তিনটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন— পশ্চিম প্রান্তে কালিন্দীকূলে হেঙ্কেলগঞ্জ, ৮ মধ্যভাগে কপোতাক্ষীকূলে চাঁদখালি এবং পূৰ্ব্বসীমায় বলেশ্বরতীরে কচুয়া। কিন্তু সুন্দরবনের উত্তরসীমা লইয়া পূর্ব্বর্তন জমিদারদিগের সঙ্গে অবিরত বিবাদ হওয়ায় এবং অবশেষে হেঙ্কেল সাহেব অন্যত্র বদলী হইয়া যাওয়ায়, উহার ব্যবস্থা বেশীদিন ভাল ভাবে চলে নাই। কতকগুলি তালুক জমিদারেরা বেদখল করিয়া লন, কতকগুলির ইস্তাফা হয়, কতকগুলির জন্য মোকদ্দমার ফলে গবর্ণমেণ্ট মালিকানা দিতে বাধ্য হন। সবিশেষ বিবরণ সুন্দরবন প্রসঙ্গে দিব। অবশেষে ১৮১৪ অব্দে সুন্দরবনের সংশোধিত জরিপ ম্যাপ প্রস্তুত করাইয়া, গবর্ণমেণ্ট প্রকাশ্য ইস্তাহার দ্বারা উহা পৃথক করিয়া লন। তদবধি নূতন বিলি বন্দোবস্ত আরম্ভ হইয়াছে। আজ যে সুন্দরবন গবর্ণমেন্টের একটি প্রধান আয়ের সম্পত্তি, হেঙ্কেলের প্রাথমিক চেষ্টা উহার ভিত্তি-স্বরূপ। নিজে কোন অতিরিক্ত বেতন ত লইতেনই না, পরন্তু সময়ে সময়ে নিজের তহবিল হইতে অর্থ দিয়া আবাদকারী তালুকদারদিগকে সাহায্য করিতেন। তিনি প্রজাদিগকে সন্তানের মত ভালবাসিতেন। ‘কৃতজ্ঞ প্রজারা তাহাদের প্রাণের অনুরক্তি দেখাইবার জন্য প্রত্যেক গৃহে তাঁহার মৃন্ময় মূর্ত্তি গড়িয়া দেবতার মত পূজা করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। একথাটি পরে সংবাদরূপে সেকালের একখানি সংবাদ-পত্রে প্রকাশিত হয়। (২৪/৪/১৭৮৮)’।[১০]

.

পাদটীকা :

১. Stewart, History of Bengal (Bangabasi edition), p. 608.

২. Khulna Gazetteer, p. 102.

৩. Summarised from Westland, Jessore, Chap, XIII-IV.

৪. Calcutta Rev., 1878. p. 420. খুলনার নিকটবর্ত্তী মুছৰ্ব্বপুরগ্রাম নিবাসী, সাতুরাম মজুমদার মহোদয় এক সময়ে খুলনার নিমক মহলের দারোগা ছিলেন। তখন ইহা বেশ নামের ও পয়সার চাকরী ছিল। মজুমদার মহাশয় উপার্জিত অর্থের সদ্ব্যবহার করিয়াছিলেন। খুলনায় স্কুলের জন্য পাকা ঘর এবং নদীর উপর সুন্দর ঘাট তিনিই প্রস্তুত করিয়া দেন। সে ঘাট নদীগর্ভস্থ হইয়াছে। স্কুলের সে দালান নাই, উহা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া জিলা-স্কুলের জন্য বর্ত্তমান বিস্তীর্ণ অট্টালিকা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। এবং উহার মধ্যবর্ত্তী হলে মজুমদার মহাশয়ের কীর্তি রক্ষার জন্য স্মৃতিফলক সংযোজিত হইয়াছে।

৫. যে সকল ছোট ভাঁড়ে লবণের রস সরবরাহ করা হইত, তাহার নাম রসাঙ্গী; নিমকের কারখানার স্থানকে নিমক-খালাড়ী এবং উহার প্রহরীদিগকে স্থল-পহরী বলিত। লবণের রাশির উপর যাহারা ছাপ দিতেন, তাঁহাদের নাম আদলদার। গবর্ণমেন্টের সহিত চুক্তি ব্যতীতও যাঁহারা লবণ প্রস্তুত করিতেন, উঁহাদের সাধারণ নাম ছিল মোলঙ্গী।

৬. Regulation 29 of 1793.

৭. Pargiter, F. E., Revenue History of the Sundarbans, Chap. 1

৮. হেঙ্কেল সাহেবের নিজ নামে হেঙ্কেলগঞ্জ নাম হয়, উহাই অপভ্রংশে ‘হিঙ্গুলগঞ্জ’ দাঁড়াইয়াছে। প্রথম আবাদের সময় যখন অত্যন্ত বাঘের উৎপাত হয়, তখন গবর্ণমেন্টের কর্মচারী স্থানটির নাম হেঙ্কেলগঞ্জ রাখিয়া ভাবিয়াছিল, সাহেবের ভয়ে বাঘের ভয় থাকিবে না। সুন্দরবনের ম্যাপ প্রস্তুত করিবার কালে উহাতে স্থানীয় লোকের উচ্চারণ-ভ্রম বজায় রাখিয়া হিঙ্গুলগঞ্জ লেখা হয়। সেই নামই চলিতেছে। ইহা সুন্দরবনের একটি প্রধান গঞ্জ বা বাজার।- 24 Parganas Gazetteer. p. 242.

৯. Westland, Jessore, PP. 106-7; Hunter, Statistical Accounts, Vol. I, p. 328.

১০. “কলিকাতা, সেকালের ও একালের’, ৬৭২ পৃ।

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন