৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল

সতীশচন্দ্র মিত্র

সপ্তম পরিচ্ছেদ – বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল

মুসলমান আমলে যশোহর-খুলনার বাণিজ্য কেমন ছিল, তাহার কোন বিশ্বাসযোগ্য বৃত্তান্ত পাওয়া যায় না। ইংরাজ আমলের প্রথম হইতেই কিছু কিছু বিবরণ আমাদের দৃষ্টিপথে পড়ে। ইংরাজ – রাজত্বকালকে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়—কোম্পানির শাসন ও রাজকীয় শাসন। ১৭৮১ অব্দে যশোহরে ইংরাজ-শাসন প্রবর্তিত হওয়ার সময় হইতে সিপাহি-বিদ্রোহের পর মহারাণী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক ভারত-শাসন গ্রহণ করিবার পূর্ব্ব পর্য্যন্ত কোম্পানির আমল এবং তৎপরে বর্ত্তমান সময় পর্য্যন্ত রাজকীয় যুগ। এই যুগের বাণিজ্যাবস্থা আমাদের চক্ষুর উপর আছে, বিস্তৃত বিবরণ দিতে গেলে পুঁথি বাড়িয়া যাইবে মাত্র। সেজন্য আমরা প্রধানতঃ কোম্পানির আমলের কথাই বলিব।

কোম্পানির শাসনের প্রথম ভাগে ১৭৯০ খৃষ্টাব্দে এই কয়েকটি প্রধান বাণিজ্য-কেন্দ্র ছিল : কসবা, মুড়লী, কেশবপুর, সেনেরবাজার, ফকিরহাট, কচুয়া, মনোহরগঞ্জ, খুলনা, তালা, কালীগঞ্জ (যশোহর), ইছাখাদা, ঝিনাইদহ্ গোপালপুর ও শৈলকুপা,[১]—ইহার মধ্যে মুড়লীর স্থানে বৰ্ত্তমান রাজারহাট ধরা যায়, অপরগুলি এখনও আছে; কিন্তু এখনকার বড় বড় হাটের নাম ইহার ভিতর নাই,—চৌগাছা, কোটচাঁদপুর, বসুন্দিয়া, নওয়াপাড়া, ফুলতলা, দৌলতপুর, বড়দল, ত্রিমোহানী, ঝিকারগাছা, বাগেরহাট, রূপগঞ্জ ও বিনোদপুর সুন্দরবন বিভাগে হিঙ্গুলগঞ্জ, বসন্তপুর, কালীগঞ্জ, ন’বাকীর হাট, বড়দল, সোলাদানা, চালনা, গৌররম্ভা, মরেলগঞ্জ প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৭৯৩ অব্দে যখন পুলিস ট্যাক্স বসে, তখন উৎপন্নের পরিমাণ অনুসারে বাণিজ্যস্থানের ক্রমিক তালিকা এইভাবে দেওয়া যায় – সাহেবগঞ্জ, ফকিরহাট, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ, কেশবপুর, সেনেরবাজার, মনোহরগঞ্জ, মুড়লী, তালা ও খাজুরা। ইহার মধ্যে সাহেবগঞ্জ ও মনোহরগঞ্জ আধুনিক যশোহর সহরের দুই অংশ ছিল। চাঁড়ার রাজা মনোহর রায়ের নামে মনোহরগঞ্জ হইয়াছিল।

এই সময়ে এই কয়েকটি স্থলে আমদানী হইত—নওয়াপাড়া, কুমারগঞ্জ (নদী), ফকিরহাট চাঁদখালি, ও হেঙ্কেলগঞ্জ বা হিঙ্গুলগঞ্জ। যশোহর-খুলনা হইতে ধান্য চাউল ত যথেষ্ট রপ্তানি হইতই, তদ্ব্যতীত বরিশালের চাউলও এই পথে কলিকাতায় যাইত। ১৭৯১ অব্দে যশোহরের রপ্তানি ৯ লক্ষ মণ চাউল এবং বরিশালের দেড়লক্ষ মণ। যশোহরের মুগ, মসূর, ছোলা ও অন্যান্য কলাই এবং খুলনার ধান্য, নারিকেল ও সুপারির রপ্তানি পূর্ব্ববৎ চলিতেছে। শুধু তামাকের উৎপন্ন পূর্ব্বের তুলনায় কিছুই নাই বলিলে হয়। ঐ সময় বাৎসরিক উৎপন্ন ৩০ হাজার মণের মধ্যে ১০ হাজার মণ তামাক রপ্তানি হইত। এখন রঙ্গপুর, জলপাইগুড়ি প্রভৃতি স্থান হইতে তামাক আসিয়া এদেশের চাষ পর্য্যন্ত বন্ধ করিয়া দিয়াছে।

কোম্পানির আমলের অবশিষ্ট উৎপন্নের মধ্যে যশোহরের তুলা, চিনি, ও নীল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তুলার চাষ একেবারে গিয়াছিল, বিদেশী সুতার কাপড়ের ব্যবসায় অবাধে চলিতেছিল। সম্প্রতি আবার একটু নূতন বাতাস বহিয়াছে, তুলা চাষের সাড়া পড়িয়াছে, চরকার সূতার বস্ত্র-বয়ন আরব্ধ হইয়াছে, শীঘ্রই স্বাবলম্বিতার দিন ফিরিবে কিনা, শ্রীভগবানই জানেন। চিনির ব্যবসায় অনেক কমিলেও, এখনও আছে; যশোহর এখনও চিনির জন্য বিখ্যাত। এক সময়ে যশোহরের নীল জগতের মধ্যে সর্ব্বোৎকৃষ্ট ছিল; এখন উহার ব্যবসায় একেবারে গিয়াছে। আমরা এস্থলে তুলা ও চিনির কথা বলিয়া পরবর্তী পরিচ্ছেদে নীলের কথা লিখিব।

অতি প্রাচীন কাল হইতে তুলাই ভারতবর্ষের সর্ব্বপ্রধান শিল্প-সামগ্রী। পৃথিবীর মধ্যে তুলার রপ্তানি হিসাবে ভারতবর্ষেরই প্রথম স্থান ছিল, এখন সে বিষয়ে আমেরিকা সর্ব্বপ্রধান হইয়া ভারতবর্ষকে দ্বিতীয় স্থানে ফেলিয়াছে। ভারতের মধ্যে বঙ্গদেশে ও আমাদের বিচার্য্য যশোহরে তুলার চাষ কম ছিল না। ১৭৮৯ অব্দের হিসাবে দেখা যায়, সে বৎসর যশোহরে ২৪,০০০ মণ তুলা জন্মিয়াছিল এবং ৩৬,০০০ মণ তুলা বাহির হইতে আসিয়াছিল। এই ৬০ হাজার মণ তুলার সূতা ও ভূষণা হইতে আগত সামান্য পরিমাণ সূতা হইতে যশোহরের বস্ত্র-শিল্প চলিয়াছিল; ঐ বৎসর, ১,৪৮,১০০ খানা কাপড় প্রস্তুত হইয়াছিল। কৃষকের নিকট তুলা কিনিয়া স্ত্রীলোকদিগের দ্বারা চরকায় কাটা সূতা হইত; উহাই লইয়া তাঁতি, জোলা ও যোগীরা বস্ত্র প্রস্তুত করিতেন। হাটে বাজারে তুলা, সূতা ও বস্ত্র তিন দ্রব্যই বিক্রয় হইত। গৃহস্থেরা ঘরে কাটা সূতা লইয়া বয়নকারিগণের বাড়ীতে গিয়া কিছু নির্দ্দিষ্ট ‘বাণী’ (মজুরী) দিয়া ফরমাইজ মত বস্ত্র প্রস্তুত করিয়া লইতেন। স্ত্রীলোকেরা চরকায়, এমন কি হাতে পৰ্য্যন্ত, অতি সূক্ষ্ম সূতা কাটিতে পারিতেন। ব্রাহ্মণ-রমণীরা সূক্ষ্ম পবিত্র পৈতার সূতা কাটিয়া দেশমধ্যে খ্যাতি লাভ করিতেন। বস্ত্রের চিন্তা ও তদানুষঙ্গিক কাৰ্য্য যে গৃহস্থের একটা দৈনিক কর্তব্য ছিল, প্রবাদে প্রবচনে তাহার যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়।[২]

এখনও যশোহর-খুলনায় বস্ত্রের ব্যবসায় বিলুপ্ত হয় নাই, তবে অধিকাংশ বিদেশী সূতায় প্রস্তুত হয়। যশোহরের অন্তর্গত সিদ্ধিপাশা, নরনিয়া, সাতবাড়িয়া ও চিংড়া এবং সাতক্ষীরার অন্তর্গত বাক্‌সা প্রভৃতি কতকগুলি স্থানের ধুতি ও শাড়ী উৎকৃষ্ট। তন্মধ্যে সিদ্ধিপাশা ও বাসার দেশবিদেশে সুনাম আছে। এখনও সিদ্ধিপাশায় ১৫/১৬ টাকা দরের জোড়ার ধুতি ও চাদর প্রস্তুত হয়। ইহা ব্যতীত নিম্ন শ্রেণীর লোকের নিমিত্ত ছোট ধুতি, স্ত্রীলোকের ‘তবন্’ ও ‘ডুমো’ (নাতিদীর্ঘ শাড়ী), নানাবিধ লুঙ্গি, রঙ্গিন গামছা ও মশারির থান, ইহা প্রায় সকল প্রধান প্রধান হাট বা গঞ্জের নিকটবর্ত্তী গ্রামে প্রস্তুত হয়। প্রথম আমলে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি বঙ্গদেশের মধ্যে বিশেষ বিশেষ স্থলে বস্ত্রের কারখানা স্থাপন করিয়া পার্শ্ববর্তী তাঁতিদিগকে অগ্রিম দাদন দিয়া কাপড়ের ব্যবসায়ে লাভবান্ হইবার জন্য উহার উৎসাহ দিয়াছিলেন। সোনাবাড়িয়া ও বুড়ন বা সাতক্ষীরার কথা পূর্ব্বে বলিয়াছি। পরে যখন ম্যাঞ্চেষ্টার প্রভৃতি স্থানের ব্যবসায়িকগণ এদেশের লোকের পছন্দমত বা বাসোপযোগী কাপড় প্রস্তুত করিতে শিখিল এবং রাশি রাশি বিলাতী বস্ত্র পণ্য-জাহাজে ভারতে পৌঁছিতে লাগিল, তখনই কোম্পানির লোকেরা কারখানা তুলিয়া দিয়া এবং অন্য প্রকারে এদেশীয় ব্যবসায়িকে হাতেভাতে মারিবার জন্য চেষ্টা করিয়াছিলেন। সে মর্ম্মভেদী কাহিনীর স্থান এখানে নাই। কলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে গিয়া গৃহশিল্প বিকলাঙ্গ হইল বটে, কিন্তু একেবারে মরিল না; একবার একটা ব্যবসায়ের সৃষ্টি হইলে, তাহা সহজে যায় না; সূক্ষ্মশিল্পীর অল্পতা হইলেও অন্ততঃ যাঁহারা মোটা কাপড় বুনিতেন, তাঁহাদের বংশ-ধারা নষ্ট হইল না। তবে সস্তাদরে পাট মিশ্রিত বা শিহি বিলাতী সূতা হাটে বাজারে আমদানী হইয়া চরকার মূলে কুঠারাঘাত করিল।

‘চরকা আমার নাতিপুতি, চরকা আমার প্রাণ,
চরকার দৌলতে মোর গোলাভরা ধান’–

এ বুলি আর থাকিল না। কলের চরকার বিলাতী সূতা সস্তায় পাইয়া লোকে চরকাদ্বারা ইন্ধনের কার্য্য সারিল এবং সস্তায় পস্তাইয়া, নিজের ঘরে নিজে আগুন দিয়া একেবারে পরমুখাপেক্ষী হইয়া পড়িল। তবুও বস্ত্র-শিল্প একেবারে উড়িয়া গেল না। অগ্রে বিলাতী বণিক ব্যবসায় করিবার ছলে এদেশের লোকের পছন্দের সন্ধান ও মাত্রা বুঝিয়া লইয়াছিল, শেষে বিলাতেই বাঙ্গালীর জন্য নূতন পছন্দ নূতন ফ্যাসান্ আবিষ্কৃত হইতে লাগিল, বস্ত্রের রঙ্গে ও পাড়ের বাহারে লোকের চক্ষু ধাঁধিয়া দিল। ঘরসন্ধানী প্রতীচ্য বণিক এইবার স্কন্ধে চাপিয়া বসিল। শাড়ীতে দুইটি পাড়ের স্থলে “পাছা পা’ড়” বাড়িল, রঙ্গিন সূতায় চন্দ্রহারের স্থান অধিকার করিয়া গৃহস্থ-ললনার রুচি বিগড়াইয়া দিল। শুধু তিন পা’ড় নহে, ৪/৫ পা’ড় পর্যন্ত হইল, আর কাঙ্গালের ঘরে গুলবাহার ও হাতিপা’ড় আসিয়া গৃহধর্ম্মের তোলপাড় করিয়া তুলিল। কিন্তু রুচি-বিকার হইলেও শিল্পী একেবারে মরিল না, আজও হাটে বাজারে তাহার পরিচয় পাওয়া যায়।

যশোহর সহর হইতে ১৮ মাইল দক্ষিণে কেশবপুরের নিকট মধ্যকূল নামক একটি ক্ষুদ্র স্থানে প্রতি শুক্রবারে প্রধানতঃ একটি কাপড়ের হাট বসে; উহাতে প্রতি হাটে একদিনে প্রায় ৫০ হাজার টাকার দেশী তাঁতের কাপড় বিক্রয় হয়। নরনিয়া, পালা, রস্তমপুর, বরাতিয়া, নূরপুর, ভাইসা, সাতবাড়িয়া, জানপুর, দুর্ব্বাডাঙ্গা, বাঙ্গালীপুর, কোমরপুর, বেগমপুর, (খৃষ্টান জোলাগণ), কড়িয়াখালি, ঝাপা, মস্বিননগর, চিংড়া, ধানদিয়া প্রভৃতি বহুস্থানের জোলা ও তাঁতিগণ এই মধ্যকূলে আসিয়া কাপড় বিক্রয় করেন। এসব কাপড় অধিকাংশই পাইকারি বিক্রয় হয়, খুজুরা বিক্রয় হয় না বলিলেও চলে। এজন্য বড় বড় পাইকারি ব্যাপারী আছেন,৺ উঁহারা কাপড় লইয়া প্রতি মঙ্গলবারে কলিকাতার পরপারে হাওড়ার হাটে বা চেতলার হাটে বিক্রয় করেন এবং কলিকাতা হইতে সূতা ক্রয় করিয়া সময়মত মধ্যকূলে উপস্থিত হন। কাপড়ের মূল্য কতক নগদ, কতক সূতায় দেওয়া হয়, তাঁতির হিসাব ব্যাপারীর খাতায় উঠে ও তাঁহারা দরকার মত দাদন পান। এইভাবে বছর ভরিয়া কারবার চলিতেছে; কিন্তু এই কারবার প্রধানতঃ আমেরিকার তুলা হইতে ল্যাঙ্কাসায়ারে (ইংলণ্ড) প্রস্তুত মিহি সূতার খেলা মাত্র; ভারতীয় তুলার মোটা সূতায় যখন এই খেলা চলিবে, সেই দিনই লক্ষ্মী ফিরিয়া আসিবেন।

মধ্যকূলের নিম্নেই মুড়লীর পার্শ্ববর্তী রাজারহাট, কেশবপুর, ধাদিয়া চান্দুড়িয়া এবং মধুমতীর কূলে বোয়ালমারি (এখন ফরিদপুরের মধ্যে) প্রভৃতি স্থানের হাট বস্ত্রের জন্য বিখ্যাত। বোয়ালমারির কাপড় পূর্ব্বে অধিকাংশই লক্ষ্মীপাশা আসিয়া বিক্রয় হইত।[৪] সিদ্ধিপাশা, বাসা, সাতবাড়িয়া (ত্রিমোহানীর নিকটবর্তী) প্রভৃতি স্থানে তাঁতির বাড়ী হইতেও ব্যাপারিগণ কাপড় লইয়া যান। এখনও এই সকল স্থানের বয়নকারীদিগকে উন্নত পদ্ধতিতে সামান্য শিক্ষা দিলে এবং অর্থ দাদন দিয়া সাহায্য করিলে উঁহারা দেশের লজ্জা নিবারণ পক্ষে প্রধান সহায়ক হইতে পারেন। জাতিভেদের সুফল কুফল যাহাই থাকুক, উহাতে যে পুরুষানুক্রমে কতকগুলি শিল্প- নৈপুণ্য বংশবিশেষে চিরস্থায়ী করিয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। আমাদের শিল্পী আছে, এখন দেশের লোকে পুনরায় তুলার চাষ ও চরকা ধরিলে, বস্ত্রশিল্প পুনর্জীবিত হইবে। সে কিছু কঠিন কথা নহে। ১৬৪৩ অব্দের পূর্ব্বে মোমবাতির পলিতা ভিন্ন অন্য কার্য্যে ইংলণ্ডের লোকে তুলার ব্যবহারই জানিত না; চেষ্টার ফলে সেই দেশে পৃথিবীর ৩ এর ২ অংশ সূতা প্রস্তুত করিতেছে, অথচ সেদেশে এক ছটাক তুলার চাষ হয় না।[৫] আর যে দেশের ভূমি তুলার চাষের উপযুক্ত ও লোকে সে চাষ জানে, যেখানে এখনও চাষীর মুখে শুনা যায়, “ষোল চাষে মূলা, তা’র অর্দ্ধেক তুলা,” যে যশোহর-খুলনায় এখনও ব্রাহ্মণেরা সাধারণতঃ স্ত্রী-কন্যার হস্তরচিত সূক্ষ্ম পৈতা ভিন্ন পরেন না, যেখানে এখনও কার্পাসতরু গৃহকোণ হইতে চিরবিদায় লয় নাই, সেই সমুর্ব্বর-ক্ষেত্রবহুল শিল্পীর নিবাস-ভূমে শীঘ্রই যে অন্নবস্ত্রের জন্য পরের দ্বারস্থ হওয়ার অভ্যাস বন্ধ হইবে, তাহা আশা করিতে পারি।

চিনিই যশোহরের প্রধান পণ্য। এখানে ইক্ষুর চাষ বা ইক্ষুর চিনি অতি কমই হয়। চিনি বলিতে এ অঞ্চলে খেজুর চিনিই বুঝায়, কারণ উহাই সহজে ও সস্তায় উৎপন্ন হয়। লবণাক্ত ভূমিতে ভাল ইক্ষু জন্মে না; উচ্চ জমিতে যথেষ্ট চাষ ও অতিরিক্ত সার দিয়া পরম যত্নে ইক্ষু জন্মাইতে হয় এবং ক্ষেত্রগুলি সমস্ত বৎসর ঘিরিয়া রাখিয়া উহার পাছে লাগিয়া থাকিতে হয়। অপর পক্ষে এদেশে খেজুর গাছ সহজে জন্মে, একটু উচ্চজমিতে বীজ ছড়াইয়া রাখিলেই গাছ হয়, ছাগল গরুর উৎপাতের ভয় নাই, ক্ষেত্র ঘিরিতে হয় না, বৎসরের মধ্যে একবার জমিখানিতে চাষ দিয়া রাখিলেই চলে। ৬/৭ বৎসর পরে গাছগুলি হইতে রস বাহির করা যায় এবং পরবর্ত্তী অন্ততঃ ২৫/৩০ বৎসরকাল উহা একটি বাৎসরিক লাভের সম্পত্তি হইয়া থাকে। খেজুরগাছ যশোহর-খুলনার একটি প্রধান বিশেষত্ব; এখানকার লোকেই ইহা কাটিয়া রস বাহির করিতে এবং রস হইতে গুড় চিনি প্রস্তুত করিতে জানে। অন্য জেলার লোকে তাহা জানে না। এমন কি, অন্য জেলায় খেজুরগাছ থাকিলেও তাহার সদ্ব্যবহার হয় না; সময় সময় উহার পাতা দিয়া পাটি এবং সাহেবী হ্যাট তৈয়ার করা হয় মাত্র। হুগলী জেলায় দেখিয়াছি, যশু’রে লোক তাহাদের নিজ অস্ত্র লইয়া সেখানে না গেলে, বৃক্ষগুলি অস্ত্রাঘাত পায় না, কণ্টকিত তরু সরস হয় না। যে বৎসর গাছ ‘দিবার’ (কাটিবার) জন্য যশু’রে গাছি যায়, সে বৎসর তাহার একচেটিয়া কারখানা বালক বৃদ্ধের জয়োল্লাসে পূর্ণ হইয়া উঠে এবং সেও কিছু পয়সা লুটিয়া লইয়া স্বদেশে আসে। কিন্তু তবুও সহজে ঘরুয়া বাঙ্গালী সকল বৎসর পরদেশী হইতে চায় না।

যশোহর-খুলনার লোককে গুড় প্রস্তুত করার কথা না শুনাইলেও চলিতে পারিত। তবে অনেকে দেশে থাকেন না, থাকিয়াও দেখিতে জানেন না, গুড়ের কথা জানেন ত চিনির কথা জানেন না; বিশেষতঃ অন্যস্থানের লোকে এতদুভয়ের কোনটির কথাই জানেন না, অথচ তাঁহারাও এ পুস্তক পড়িবেন কাজেই সংক্ষিপ্ত ভাবে গুড় ও চিনির প্রস্তুত প্রণালী বলিতে হইল। উহাতে অনেক ব্যবহারিক বা প্রাদেশিক কথা প্রয়োগ করিতে হইবে। যাঁহারা খেজুর গাছ কাটিয়া রস বাহির করেন, তাঁহাদের নাম গাছি (বা শিউলি)। বর্ষান্তে গাছিরা খেজুর গাছ ‘তোলে’ অর্থাৎ উহার মাথার একদিকের পাতাগুলি গোড়া কাটিয়া তুলিয়া ফেলিয়া সেই অর্দ্ধেকটা চাঁছিয়া পরিষ্কার করেন। কিছুদিন পরে ঐস্থান বেশ শুকাইয়া গেলে, পুনরায় ‘চাঁছ দেন’ অর্থাৎ চাঁছিয়া পরিষ্কার করেন এবং ভাঁড় টাঙ্গাইবার জন্য উপরের একটি পাতার গোড়ায় একগাছি করিয়া দড়ি ঝুলান এবং চাঁছ দেওয়া স্থানটির নিম্নভাগে দুইদিকে দুইটি খাঁজ কাটিয়া তাহার সন্ধিস্থলের কিছু নিম্নে একটি বিঘত-প্রমাণ বাঁশের কঞ্চির ‘নলী’ বসান। তখন কর্তিত স্থানের রস খাঁজ বাহিয়া নলীর মুখ দিয়া ভাঁড়ের মধ্যে পড়িতে পারে। চাঁছের পর ভাঁড় পাতিলে রাত্রিতে সামান্য রস হয় বটে, কিন্তু উহা লবণাক্ত। উহাও জ্বালাইলে এক প্রকার গুড় হয় এবং তাহা পাতায় ঢালিয়া শুকাইয়া ‘পাটালি’ প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু চাঁছের পাটালি লবণাক্ত বলিয়া সুস্বাদু নহে। গাছটি আরও একটু শুকাইলে, কয়েকদিন পরে যখন পরিষ্কৃত স্থানটির মধ্যস্থলে দুই পার্শ্বে অৰ্দ্ধচন্দ্রাকারে কাটিয়া উহার রস নলীতে যাইবার পথ করিয়া দেওয়া হয়, তখনকার রসে এক প্রকার সুন্দর গন্ধ পাওয়া যায়, উহাকে ‘নলিয়ান’ গন্ধ বলে। সে রসের গুড় হইতে যে নলিয়ান গুড় বা পাটালি হয়, উহা বাঙ্গালীর বড় লোভনীয় খাদ্য। এই গুড় পৃথক করিয়া সংগ্রহ করিয়া রাখিলে কয়েক মাস তাহার গন্ধ থাকে এবং চিনির সঙ্গে উহার স্বল্প সহযোগে ‘ভীমনাগের নূতন গুড়ের সন্দেশ’ তৈয়ারী হয়। অতি অল্প কয়েকদিন নলিয়ান গন্ধ থাকে; পরবার যখন গাছগুলি কাটা হয়, তখন সেই পরবর্ত্তী কাটকে ‘পর-নলিয়ান’ বলে। গাছিরা তাঁহাদের গাছগুলি কয়েক ‘পালায়’ বিভক্ত করিয়া, এক এক পালা একদিনে কাটেন। পর পর তিনদিনের বেশী এক সময়ে কোন গাছে রস প্রদান করেন না; পরবর্ত্তী আর তিন দিন গাছকে বিশ্রাম বা ‘জিরান’ দিয়া আবার যখন কাটা হইতে থাকে, তখন প্রথম দিনের কাটবে ‘জিরানকাট’ বলে, সেদিনের রস খুব পরিষ্কৃত ও সুস্বাদু হয়। পরদিনের কাটকে ‘দোকাট’ ও তৃতীয় দিনের কাটকে ‘তেকাট’ কহে। গাছগুলিকে রোগীর মত সন্তর্পণে। পালন করিতে হয়, বেশী গভীর করিয়া বারংবার কাটিলে শীঘ্রই উহাদের জীবনান্ত হয়। তৃতীয় দিনে প্রায়ই গাছটিকে না কাটিয়া কেবল মাত্র মুছিয়া পরিষ্কার করিয়া রাত্রির জন্য ভাঁড় বাঁধা হয়, ‘উহাকে ‘ঝরা’ বলে, এবং দিনের বেলায় সংগৃহীত রসের নাম ‘ওলা’। প্রথম দিন অপেক্ষা প্ৰতি রাত্রিতে ক্রমেই রস কম হয় এবং ঘোলা হইতে থাকে। জিরান রসেরই গুড় ও চিনি ভাল হয়, রাত্রিতে শীত কম পড়িলে অপর দিনের রসের গুড়ে একটু অম্ল আস্বাদন হয়। ঝরা ও ওলা রসের গুড়ে দানা বাঁধে না; উহা হইতে পাতলা বা ঝোলা গুড় হয়। উহার অধিকাংশই তামাক মাখিবার জন্য ব্যবহৃত হয়।

প্রত্যুষ হইতে গাছের রস পাড়িয়া গাছিরা রসের ভাঁড়গুলি বাঁকে করিয়া কারখানায় বা বাইনশালে লইয়া যান। যে উনুনে রস জ্বাল দিয়া গুড় হয়, তাহার নাম বা’ন বা বাইন। ঐ চুল্লীতে দুইটি হইতে ৮/১০টি পর্যন্ত মুখ থাকে, তাহাতে নাদা বা ‘জ্বালুয়া’ নামক মাটিয়া কড়া চড়াইয়া দিয়া রস পূর্ণ করা হয় এবং ৪/৫ ঘণ্টা ধরিয়া যথেষ্ট জ্বালানি কাঠ বা শুষ্ক পত্রে সদ্ব্যবহার করিলে, রসের রঙ্ সরিষা ফুলের মত হইয়া পরে উহা হইতে হরিদ্রাভ লাল গুড় হয়। সময় মত জ্বালুয়াগুলি নামাইয়া কাঠি বা তাড়ুয়া দিয়া গুড়ের পার্শ্বে ঘসিয়া ‘বীজ মারিতে’ হয়; যখন ঘন ঘর্ষণে গুড় হইতে শুষ্ক শ্বেতবর্ণ গুঁড়া ঝরিয়া পড়িতে থাকে, তখন গুড়ের দানা বাঁধাইবার জন্য ঐ গুঁড়া বীজ গুড়ের সঙ্গে মিশাইয়া তাহা হইতে পাটালি প্রস্তুত হয়, অথবা সে গুড় বড় কলসী, গাদন বা গাছানে কিম্বা ছোট ভাঁড় বা ঠিলায় ঢালিয়া রাখা হয়। এই সকল কলসী বা ভাঁড় হাট বাজারে বিক্রয় হয়। গুড় কতক গৃহস্থের সংসার খরচে লাগে, কতক হইতে চিনি প্রস্তুত হয়। পূর্ব্বে যাঁহারা গুড় হইতে চিনি বাতাসা প্রস্তুত করিতেন, তাঁহাদের নাম কুরি। সেই কুরি বা কারিগরেরা গুড় কিনিয়া লইয়া চিনি প্রস্তুত করেন, কোন কোন স্থানে গাছিরাও নিজ বাটীতে অল্প চিনি প্ৰস্তুত করিয়া হাটে বিক্রয় করেন। ৫০ বৎসর পূর্ব্বে গুড়ের কাঁচি (৬০ তোলায় সের) মণের দর এক হইতে দুই টাকার মধ্যে ছিল, এখন উহা দ্বিগুণেরও অধিক অর্থাৎ ৪ টাকা বা সাড়ে ৪ টাকা পৰ্য্যন্ত উঠিয়াছে।

এই গুড় হইতে দেশী প্রণালীতে কি ভাবে চিনি হয়, তাহাই এখন বলিব। প্রত্যেক চিনির কারখানায় অসংখ্য গুড়ের কলসী বা ভাঁড় খরিদ করিয়া মজুত করা হয়। প্রথমতঃ ভাঁড়গুলি ভাঙ্গিয়া চাড়া বা খাপরা ফেলিয়া গুড়টুকু চুড়ী (ঝুড়ি) বা পেতেতে রাখা হয়। পেতেগুলি মৃন্ময় নাদার উপর তেকাঠা দিয়া বসান থাকে। পেতে হইতে গুড়ের রস গলিয়া ঐ নাদায় সঞ্চিত হয়। পেতেয় গুড় রাখিবার তৃতীয় দিনে গুড়ের দলাগুলি ‘বেঁকি’ অস্ত্র দিয়া কুঁচাইয়া ভাঙ্গিয়া দেওয়া হয় অর্থাৎ ‘মুটানো’ হয়। এবং পরদিন ঐ গুড়ের উপর শেওলা (শৈবাল) দিয়া ঢাকিয়া দেওয়া হয়। সকল শেওলায় এই কাজ হয় না। বিধির কি সুন্দর বিধান, যে দেশে খেজুর গাছের এত আমদানী, সেই স্থানের কপোতাক্ষী প্রভৃতি মরণোন্মুখী নদীতে চিনি প্রস্তুত করিবার উপযোগী এক প্রকার ‘চিনিয়া’ বা পাটা শেওলা প্রচুর পরিমাণে জন্মে এবং কত লোকে ঐ শেওলা নৌকা পুরিয়া তুলিয়া আনিয়া ভারে ভারে কারখানার দ্বারে উপস্থিত করে। ইহাতেও কত জনের জীবিকার সংস্থান হয়। আর এই কপোতাক্ষী নদীর কূলে কূলে চিনির কারখানার প্রধান স্থানগুলি এক সময়ে যশোহরের পণ্য-সমৃদ্ধির পরিচয় দিত। শেওলা দেওয়ার ৭ দিন পরে পেতের উপরের যে অংশ সাদা চিনি হইয়া যায়, তাহা কাটিয়া তুলিয়া লওয়া হয় এবং অবশিষ্ট পুনরায় ‘মুটিয়া’ নূতন শেওলা দিয়া ঢাকিয়া দেওয়া হয়। আবার ৭/৮ দিন পরে কতকটা চিনি কাটিয়া লওয়া হয়, এইরূপ ৪/৫ বার করিলে এক পেতে শেষ হয়।

প্রথমবারে যে মাৎ বা পাতলা গুড় (কোন কোন স্থানে ইহাকে কোত্রা গুড়ও বলে) নাদায় পড়ে, তাহা লইয়া বড় বড় লোহার কড়ায় জ্বাল দেওয়া হয়। পরে সেই মাৎ গুড় মৃত্তিকা প্রোথিত জালার মধ্যে ঢালিয়া ঢাকিয়া রাখা হয়। ৮/১০ দিন মধ্যে উহা হইতে গুড় জমিয়া যায়। সে গুড় পেতেয় দিয়া শেওলা ঢাকা দিয়া মুটিয়া মুটিয়া তিন চারিবার চিনি পাওয়া যায়।

এইভাবে যে চিনি প্রস্তুত করিবার কথা বলিলাম, তাহার নাম ‘দলুয়া চিনি’। উহা কিছু সরস, কোমল, সুস্বাদু এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলা যুক্ত, এজন্য উহার নাম দলুয়া। ময়রাগণ এই চিনর সমধিক পক্ষপাতী। এই দলুয়া চিনির আবার প্রকার ভেদ আছে; পেতেয় প্রদত্ত প্রথমবারের গুড় হইতে যে উৎকৃষ্ট চিনি হয়, তাহার নাম ‘আড়া’ এবং উহা অপেক্ষা যে কিছু লাল চিনি বাহির হয় তাহার নাম ‘চন্তা’। আর দ্বিতীয়বারের চিনিকে ‘কুন্দো’ কহে। প্রথমবারের মাৎ জ্বাল দিয়া কুন্দো চিনির জন্য পেতেয় দেওয়া হয়; কুন্দোর পেতে হইতে যে মাৎ হয় এবং তাহা বাখরগঞ্জ প্রভৃতি পূর্বাঞ্চলে তামাক মাখিবার গুড়রূপে ব্যবহৃত হয়। আখড়া ও কুন্দোর দামে ছয় বা আটআনা মণকরা প্রভেদ হয়, চতার মূল্য উহার মাঝামাঝি। খরিদ্দার বুঝিয়া দামের ন্যূনাধিক্য হয়।

দলুয়া চিনি বেশীদিন ভালভাবে বা শুষ্ক অবস্থায় থাকে না, শীঘ্রই ‘মাতিয়া’ উঠে। এজন্য দলুয়া চিনিকে দীর্ঘস্থায়ী করিবার জন্য উহাকে ‘পাকা চিনি’ করিয়া লওয়া হয়। দলুয়া চিনি কলিকাতা প্রভৃতি স্থানে মেটে খোলায় বা বড় কড়াতে জ্বাল দিয়া দুধ দিয়া উহার ‘গাদ কাটিয়া’ বা ময়লা উঠাইয়া ফেলে। শেষে উহা ছিদ্রযুক্ত খোলায় রাখিয়া শেওলার সাহায্যে পুনরায় পূৰ্ব্ববৎ চিনি করিয়া লওয়া হয়। উহার মধ্যে যাহা খুব সাদা এবং বড় দানাওয়ালা, তাহাকে ‘দোবরা’ চিনি বলে এবং তদপেক্ষা লালচে চিনির নাম ‘একবরা’ চিনি।

দলুয়া হইতে পাকা চিনি প্রস্তুত করিবার কথা যেমন বলিলাম, তেমনই যশোহর-খুলনার অনেক স্থানে গুড় হইতে পাকাচিনি প্রস্তুত করিবার প্রথা আছে। তাহা এই : ভাঁড় ভাঙ্গিয়া গুড় লইয়া প্রথমতঃ বস্তায় পুরিয়া টাঙ্গাইয়া দেওয়া হয়, উহার নিম্নে প্রোথিত বড় বড় নাদা থাকে। বস্তার দুই পার্শ্বে দুই দুইখানি বাঁশকে দড়ি দ্বারা চাপিয়া বাঁধিয়া বস্তার গুড়ের মাৎ নিংড়াইবার কৌশল থাকে। এইভাবে রস ঝরিয়া গেলে, বস্তার শুকনা গুড় জলসহ জ্বাল দিয়া, দুগ্ধদ্বারা গাদ কাটিয়া, পরে নাদায় ফেলিয়া শেওলা দিয়া ঢাকিয়া দেওয়া হয়। উহার উপর যে সাদা চিনি পাওয়া যায়, তাহা পিটাইয়া গুঁড়া করিয়া রৌদ্রে শুকাইয়া লইলে উৎকৃষ্ট পাকা চিনি হয়।

কেশবপুরে পাকা চিনি প্রস্তুত করিবার একটি পৃথক্ প্রণালী আছে : প্রথমেই ভাঁড় ভাঙ্গিয়া গুড় লইয়া তাহা বড় বড় নাদা বা জ্বালুয়ায় জ্বাল দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক নাদায় দুই এক মুষ্টি বীজগুড় নিক্ষিপ্ত হয়। মাগুড় জ্বালাইয়া শুল্ক ও নীরস করিলেই বীজ হয়, ঐ বীজ মিশাইলে গুড় একবারের অধিক জ্বাল দিতে হয় না; একবার জ্বালেতেই বীজের গুণে গুড় হইতে মাৎ নিঃসরণের ক্ষমতা বাড়ে। জ্বাল হইতে নামাইয়া গুড়কে শীতল করিয়া তাহার উপর শেওলা চাপান হয়, তখন সেই গুড় হইতে চিনি হয়। সেবারে যাহা মাতযুক্ত গুড় থাকে, তাহা বস্তায় পুরিয়া পূর্ব্ববৎ চাপিয়া যাহা সারভাগ পাওয়া যায়, তাহাতে জল মিশাইয়া জ্বাল দিয়া শীতল করিয়া শেওলা চাপা দিয়া পরিষ্কৃত চিনি উৎপন্ন হয়।

পাকা চিনিই বিদেশে রপ্তানি হয়, ইয়োরোপে দলুয়া চিনি যায় না। এদেশেও সাধারণ ব্যবহারে ও সন্দেশাদি প্রস্তুত করিবার জন্য পাকা চিনির অধিক ব্যবহার হয়। পাকা চিনির পাকা একমণ, ৬০ তোলার সেরের কাঁচা দুইমণের সমান। বর্তমান সময়ে ঐরূপ পাকামণ ২২ টাকা হইতে ২৬ টাকা পৰ্য্যন্ত বিক্রয় হইতেছে। পূর্ব্বে এই পাকামণের দামই ১২ টাকা হইতে ১৮ টাকা পর্যন্ত ছিল। তখন দলুয়ার পাকামণ ৮ টাকা হইতে ১২/১৩ টাকার মধ্যে পাওয়া যাইত। মাগুড় সবই জ্বাল দিয়া পূৰ্ব্বে চিটা গুড় করা হইত এবং উহার অধিকাংশই নলছিটি, ঝালকাটি প্রভৃতি স্থানের ব্যাপারীরা কিনিয়া লইয়া যাইতেন। শীতকালের শেষভাগে বরিশালের লোকে বড় বড় নৌকা পুরিয়া সিদ্ধ চাউল লইয়া আসিতেন এবং উহা বিক্রয় করিয়া গুড় ও চিনি বোঝাই করিয়া স্বদেশে ফিরিতেন। উহাদের পণ্য-তরণীতে ভৈরব ও কপোতাক্ষীর বক্ষ আকীর্ণ হইয়া থাকিত। এখন ভৈরবের অর্দ্ধেক মরিয়া গিয়াছে; তবুও বহুদূর বক্রপথ ঘুরিয়া শৈবালমণ্ডিত কপোতাক্ষীর কূলে বহু ব্যাপারী নৌকার সমাগম হইয়া থাকে। আজকাল কোটচাঁদপুর প্রভৃতি স্থানে সব মাগুড় চিটা করা হয় না, উহার কতক মদের ভাঁটির জন্য মাৎ অবস্থাতেই কলিকাতা, কাশীপুর প্রভৃতি স্থানে নীত হয়।

যশোহরের মধ্যে কোটচাঁদপুর ও কেশবপুরই সর্ব্বপ্রধান চিনির কারবার স্থান, তন্নিম্নে ছিল চৌগাছা ও ত্রিমোহানী; সবগুলি স্থানই কপোতাক্ষীর সন্নিকটে। ইহা ছাড়া আরও অনেক স্থানে চিনি প্রস্তুত হইত; যেমন, যশোহর (রাজার হাট), খাজুরা, মণিরামপুর, ঝিঙ্গারগাছা, তালা, বসুন্দিয়া, নওয়াপাড়া, ফুলতলা, নিমুরায়ের বাজার (সেনহাটি), সেনেরবাজার ও ফকিরহাট। কিন্তু ঝিঙ্গারগাছা, যাদবপুর, কালীগঞ্জ, ইছাখাদা ও নওয়াপাড়া প্রভৃতি স্থানে চিনির কারখানা অপেক্ষা গুড়ের হাটই বড় ছিল। কোটচাঁদপুরে শতাধিক কারখানায় সহস্র সহস্র লোকে কাজ করিত, শীতকালে গুড়ের গাড়ীতে রাস্তা বন্ধ হইত, ভাঁড়ভাঙ্গা চাড়া বা খাপ্পা পর্ব্বত প্রমাণ হইয়া থাকিত। ঐস্থানে এখনও সেই খাপ্পা দিয়া রাস্তা প্রস্তুত হয়, ইটের খোয়া লাগে না। কেশবপুরে ‘কারখানা পাড়া’ ও ‘কলিকাতা পট্টী’ ছিল; কলিকাতার বড় বড় ব্যবসায়ী এখানে আসিয়া চিনির কারবার করিতেন। চৌগাছা এবং ত্রিমোহানীতেও বহু সংখ্যক কারখানা ছিল। আমাদের শিশুকালে সেনেরবাজার ও ফকির হাটে ৩০/৪০টি করিয়া কারখানা দেখিয়াছি। এখন তাহার কিছুই নাই। সেনেরবাজার, ফকিরহাট, নিমুরায়ের বাজার ও নওয়াপাড়ার কারখানা উঠিয়া গিয়াছে। সংক্ষেপে বলা যায় খুলনায় চিনি কারবার নাই, যাহা আছে যশোহরেই আছে। বিলাতী বিট চিনি এবং যবদ্বীপের বিলাতী কারখানার ‘যাবা’ চিনি আসিয়া দেশের ব্যবসায় নষ্ট করিয়া দিয়াছে। এখন মাত্র কোটচাঁদপুরে শতাধিক স্থলে ৩০/৩২টি, চৌগাছায় ১টি, ত্রিমোহানী ও কেশবপুরে ৫/৭টি করিয়া কারখানা চলিতেছে। এখন যশোহরের গুড়ই অন্য জেলায় নীত হইয়া চিনির কারখানায় ব্যবহৃত হইতেছে।

চিনির কারখানা যাহাই হউক, শীতকালে কতকগুলি গুড়ের হাট দেখিবার উপযুক্ত। ইহার মধ্যে রূপদিয়ার নিকটবর্ত্তী ছাতিয়ান-তলার হাট সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট। শীতকালে প্রতি বৃহস্পতিবারে হাটের দিন তথায় সহস্রাধিক গরুর গাড়ীতে গুড় আসে এবং উহা কিনিয়া লইয়া যাইবার জন্য দুই তিন শত ব্যাপারী নৌকা মরা ভৈরবের শৈবালময় বক্ষে ভাসমান থাকে। ইহার পর রাজারহাট, কালীগঞ্জ, মণিরামপুর, ঝিঙ্গারগাছা, যশোহর ও যাদবপুর (নাভারণ) এবং দক্ষিণে বড়দল, বসন্তপুর ও হিঙ্গুলগঞ্জের হাটে সর্ব্বাপেক্ষা অধিক গুড়ের আমদানী হয়।

কোটচাঁদপুর এখনও যশোহরের মুখ রাখিয়াছে। এখানকার কারবার অনেকটা মন্দীভূত হইয়া গেলেও বিগত ইয়োরোপীয় মহাসমরের সময় হইতে উহার অনেকগুলি কারখানা আবার সবেগে চলিতেছে। ১৮৭৪ অব্দে এখানে ৬৩ কারখানায় মোট ৯,৩৮,৮৫০ টাকা খাটাইয়া ১,৫৬,৪৭৫ মণ চিনি পাওয়া যায়; ১৮৮৯ অব্দে ৮/৯ লক্ষ টাকায় ১,৭৫০০ মণ চিনি পাওয়া যায়। এখন ৩২টি কারখানা চলিতেছে। প্রতি শীতকালে প্রত্যেক পেতেয় ৪ মণ গুড়ের কাজ হয়; উর্দ্ধসংখ্যা ৫ হাজার পেতের কাজ একটি কারখানায় হইতে পারে; এক হাজারের কম পেতের কাজে কোন কারখানা চলে না। গুড়ের মূল্যের ৩ এর ২ অংশ টাকা মূলধন হইলে কারখানা চালান হয়। গুড়ের মূল্য মণপ্রতি ৩ টাকা ধরিলে প্রত্যেক পেতেয় ৮ টাকা হিসাবে মূলধনের আবশ্যক হয়। যদি গড়ে ৩০০০ পেতে দ্বারা প্রত্যেক কারখানা চলে, তাহা হইতে প্রত্যেক কারখানায় ২৪০০০ টাকা এবং ৩২টি কারখানায় ৭,৬৮,০০০ টাকা মূলধন খাটিতেছে ধরা যায়। প্রত্যেক পেতেয় ৪ মণ গুড়ে ১/৮ সের আন্দাজ আখড়া চিনি, ২ কিম্বা ৩ সের কুন্দো, ১/৩ সের মাগুড় এবং অবশিষ্ট। ৬ সের ঘাটতি বা জ্বল্লি (wastage) যায়। উক্ত চিনি ও গুড়ের মূল্য মোট ২৪ টাকা ধরা যায়। খরচের মধ্যে গুড়ের মূল্য ১২/১৩ টাকা, পেতে প্রতি খরচ ২ টাকা, মোট খরচ ১৪/১৫ টাকা বাদ দিলে, প্রত্যেক পেতেয় আনুমানিক ৯/১০ টাকা লাভ দাঁড়ায়। অবশ্য ইহার মধ্য হইতে সরঞ্জাম, টাকার সুদ প্রভৃতি আরও খরচ বাদ পড়ে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে বিলাতী ব্যবসায়ীরা চিনির কারবার করিতে বঙ্গে আসেন। বর্দ্ধমানের অন্তর্গত ধোবা নামক স্থানে ব্লেক (Blake) সাহেব প্রথম ইংরাজ কুঠি স্থাপন করেন। কিন্তু তাঁহার লোকসান হইতে লাগিলে, একটি কোম্পানি গঠন করিয়া তিনি নিজ কুঠি সাড়ে ৪ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করেন। কোটচাদপুর ও ত্রিমোহানীতে ঐ কোম্পানির কুঠি বসিয়াছিল। সেই সময়ে নিউহাউস্ (Newhouse) সাহেব কোটচাঁদপুরে এবং সেন্টারি সাহেব ত্রিমোহানীর কুঠির মালিক হন। এই সময়ে কলিকাতায় Gladstone Wyllie & Co. চৌগাছায় আসিয়া কারখানা খুলেন। প্রথমে স্মিথ ও পরে ম্যালিয়ড্ (Mcleod) সাহেব ম্যানেজার ছিলেন। ম্যালিয়ড্ প্রথমে স্থানীয় সমস্ত খেজুর রস কিনিয়া লইয়া গুড় ও চিনি প্রস্তুত করিতেন। বড় বড় খেজুর ক্ষেতে রস ঢালিয়া দিলে উহা কিরূপে লোহার নল দিয়া কারখানায় পৌঁছিত, তাহা এখনও দেখিয়া বুঝিয়া যায়। কারখানার পার্শ্বে সাহেবের যে সুন্দর পাকা আবাস বাটিকা ছিল, তাহা এখনও বাসোপযোগী রহিয়াছে। চারিপার্শ্বে এখনও সুন্দর কমলের বাগান, কবর স্থান ও সন্তান সন্ততির অকাল মৃত্যু-জনিত মর্মস্পর্শী স্মারকলিপি আছে। কোটচাদপুর, কেশবপুর, ত্রিমোহানী, ঝিঙ্গারগাছা ও নারিকেলবাড়িয়ায় এই কোম্পানির কারখানা ছিল। কিন্তু ১৮৫০ অব্দে সবগুলি উঠিয়া গিয়া কেবল কোটচাঁদপুর ও চৌগাছায় থাকে।

১৮৬১ অব্দে নিউহাউস্ সাহেব চৌগাছার কারখানার শাখারূপে কপোতাক্ষী ও ভৈরবের সঙ্গমস্থলে তাহিরপুর (Tarpu) নামক স্থানে একটি চিনির কল খুলিয়া ইয়োরোপীয় মতে চিনি প্রস্তুত করিতে থাকেন। উহার সঙ্গে রম্ মদ প্রস্তুত করিবার ভাটিখানারও যোগ হয়। কিন্তু ক্ৰমশঃ দেনা বাড়িতে লাগিলে, ১৮৮০ অব্দের পর এমেট চেম্বার্স কোম্পানির নিকট কারবার বিক্রয় করা হয়। সাহেবেরা আসিয়া কলকারখানা ও বাড়ী ঘরের যথেষ্ট উন্নতি করিয়া, হাড়ের গুঁড়ার সাহায্যে চিনি পরিষ্কার করিবার নূতন পদ্ধতি প্রবর্তন করিবার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না, ১৮৮৪ অব্দে সে কোম্পানি উঠিয়া গেল; বালুচর নিবাসী রায় বাহাদুর ধনপত্ সিংহ উহা খরিদ করিয়া লইলেন এবং তিনি মৃত্যুকাল (১৯০৬) পর্য্যন্ত কারবার চালাইলেন।

১৯০৯ অব্দে কাশিমবাজারের মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্র, হাইকোর্টের জজ্ সারদা চরণ মিত্র, নাড়াজোলের রাজা বাহাদুর প্রভৃতি প্রধান প্রধান ব্যক্তিগণ রায় বাহাদুরের সম্পত্তি খরিদ করিয়া লইয়া ‘তারপুর চিনির কারবার’ নামক যৌথ ব্যবসায় খুলেন এবং ইয়োরোপ, আমেরিকা ও জাপান হইতে বিশেষজ্ঞ আনিয়া কার্য্যারম্ভ করেন। কিন্তু কার্য্য ভাল চলে নাই। আমেরিকা ও জাপান হইতে শিক্ষাপ্রাপ্ত এ দেশীয় একজন সুযোগ্য ব্যক্তি ইহার উন্নতির জন্য বিশেষ চেষ্টা করিতেছেন বটে, কিন্তু পতনের হাত হইতে কারবার রক্ষা করিতে পারিবেন কিনা সন্দেহস্থল।

মোট কথা, বিলাতী কল-কারখানার ব্যয়সাপেক্ষ প্রণালীতে এ গরীব দেশের ব্যবসায় চলিবে না, দেশীয়দিগের প্রাচীন গার্হস্থ্য পদ্ধতি দ্বারা কার্য্য হইবে। সে প্রকার ক্ষুদ্র গৃহস্থ-ব্যবসায়ীর লোকসান হইবে না এবং দেশের কার্য্যও সুন্দর ভাবে চলিবে। এখনও কপোতাক্ষীকূলে ঝিঙ্গারগাছা ও মিছরীদাঁড়া এবং ভৈরবকূলে যশোহর ও বসুন্দিয়া প্রভৃতি হাটে গেলে, কৃষকদিগের গৃহজাত সুন্দর দানাওয়ালা পরিষ্কৃত চিনি ক্রয় করা যায়। বহুস্থানে চিনির কল বা কারখানা বন্ধ হইলেও, এখনও সৰ্ব্বত্র কুড়াইয়া যশোহরে যে চিনি পাওয়া যায়, তাহা সমগ্র বঙ্গের উৎপন্ন চিনির ৪ এর ৩ অংশ অপেক্ষাও বেশী। ১৯০০-০১ অব্দে যশোহরের ১১৭টি কারখানায় ১৫ লক্ষ টাকার চিনি দিয়াছিল। সে বৎসর সমগ্র বঙ্গের ২১,৮০,৫৫০ মণ চিনির মধ্যে একমাত্র যশোহর হইতে ১৭,০৯,৯৬০ মণ চিনি উৎপন্ন হয়।[৬]

পাদটীকা :

১. Westland, Report, Jessore, p. 134. [ ed. 1871, p. 172-শি মি]।

২. এখনও ‘কাট্‌না কাটা’ বৃত্তির উল্লেখ আছে; পরের চিন্তা করা অপেক্ষা ‘আপন চরকায় তেল দাও’ বলিয়া উপদেশ শুনা যায়; শাসন করিতে গিয়া পুত্র বা ছাত্রকে বলা হয়, ‘টা’কোয় আড় থাকে ত তোমাতে আড় রাখিব না।’ টা’কোয় আড় থাকা যে সূতাকাটার কি বিঘ্নকর, তাহা আবার লোকে বুঝিবে। অলস-স্বভাবা বধূকে এখনও শ্বাশুড়ী তিরস্কার করেন, “দিন যায় বউএর হেলে পেলে, রাত হ’লে বউ কাপাস ডলে।” কাপাস ডলিয়া বীচি বাছা প্রভৃতি কার্য্য দিবাভাগে করাই ভাল।

৩. বৰ্ত্তমান সময়ে এই সকল ব্যাপারীদিগের মধ্যে জয়লাল কারিগর, ওমেদালি কারিগর, বেণীদাস, রসিকলাল দালাল প্রভৃতির নাম করা যাইতে পারে। এক জয়লাল কারিগরই প্রতি হাটে ১৫/১৬ হাজার টাকার কাপড় খরিদ করেন।

8. Hunter, Jessore, p. 302.

৫. সতীশচন্দ্র দাসগুপ্ত, ‘চরকা’ (পুস্তিকা), ৫ পৃ।

৬. ‘Inspite of the decline in the manufacture, Jessore is still the chief date sugar producing district in Bengal, the outturn per annum being estimated at 1,221,400 cwts. out of total of 1,559,679 cwts. for the whole Province.’-Quarterly Journal of the Bengal Agricultural Department (arti- cle ‘The Date Sugar Palm’ by N. N. Banerji), 1908, pp. 161-62; Jessore Gazetteer, p. 91.

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন