৭. যশোর-রাজ্য

সতীশচন্দ্র মিত্র

সপ্তম পরিচ্ছেদ – যশোর-রাজ্য

দায়ুদ খাঁর সিংহাসন প্রাপ্তির অব্যবহিত পরেই যশোর-রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় (১৫৭৪)। সেখানে দুর্গ-সংস্থাপন ও গৃহ নির্মাণ কাৰ্য্য শেষ হইতে না হইতে, বসন্ত রায় আপনাদের পরিবারবর্গের সহিত ধনসম্পত্তি যশোরে প্রেরণ করেন। যখন দায়ুদের মোগল-বিদ্রোহ কার্য্যে পরিণত হইতে চলিল, তখন শুধু বঙ্গেশ্বর দায়ুদ নহেন, তাঁহার অনেক আমীর ও প্রধান কর্মচারীও নিজ নিজ বহু সম্পদ বিক্রমাদিত্যের নিকট গচ্ছিত রাখেন। যেদিন দায়ুদ নিশাকালে নৌকাযোগে পাটনা-দুর্গ হইতে পলায়ন করেন, সেদিন কিরূপে বিক্রমাদিত্য অপরিমিত ধনরত্ন নৌকায় বোঝাই করিয়া লইয়াছিলেন, তাহা পূৰ্ব্বে বলা হইয়াছে। মোগল সৈন্য তেলিয়াগড়ি পার হইয়া তাণ্ডার নিকটবর্ত্তী হইলে, দায়ুদ হস্তিপৃষ্ঠে দ্রব্যাদি লইয়া রাজধানী ত্যাগ করেন; তখন অনেক ধনরত্ন যশোরে আসিয়াছিল। রাজধানী লুণ্ঠনের ভয়ে নগরবাসীরা অনেকে ঐ সময়ে স্ব স্ব বসন-ভূষণ পর্য্যন্ত বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায়ের হস্তে প্রদান করেন। তাঁহারা ক্রমে নৌকাযোগে ঐ সকল দ্রব্যাদি যশোরে প্রেরণ করিতেছিলেন। পরবর্ত্তী যুদ্ধে ও মহামারীতে সমস্ত নগরবাসী ছিন্ন ভিন্ন ও উৎস হওয়ায় এবং যুদ্ধক্ষেত্রে অনেকে প্রাণত্যাগ করায়, প্রত্যর্পণ-প্রার্থীর অভাবে ঐ সকল সম্পত্তির অধিকাংশ যশোরে থাকিয়া যায়। ইহা ভিন্ন যুদ্ধভয়ে এবং মহামারীর উৎপাতে গৌড়-তাণ্ডার কত অধিবাসী যে যশোর রাজ্যের নানাস্থানে বসতি স্থাপন করিয়াছিলেন, তাহার ইয়ত্তা নাই।

গৌড় নগরী বহুশত বৎসর হইতে প্রধান রাজধানী ছিল। হিন্দু ও পাঠান নৃপতিগণের অতুল ঐশ্বর্য্য তাহার শোভা ও গৌরব বর্দ্ধন করিতে কখনও কাতরতা করে নাই। কথিত আছে, বঙ্গেশ্বর হুসেন শাহের আমলে গৌড়ের অনেক মধ্যবিত্ত লোকও স্বর্ণপাত্রে পানভোজন করিত। এখনও ‘হুসেন শাহের আমল’ বলিলে, এক গৌরবময় সুবর্ণযুগের কথা স্মরণ-পথে আনিয়া দেয়। সেই হুসেনী গৌড়,— সেই হিন্দুর গৌরব-প্রদীপ্ত, বৌদ্ধের কীর্তিমণ্ডিত, পাঠানের বিলাস-বিলসিত, ধনসমৃদ্ধ ও হৰ্ম্মমালাসমন্বিত পুরাতন মহানগরী বহুযুগ ধরিয়া যে সম্পদ সংগ্রহ করিয়াছিল, তাহার কতকাংশ এক দৈব দুর্যোগে সুদূর সুন্দরবনে আসিয়া, বসন্ত রায়ের নব প্রতিষ্ঠিত যশোর-রাজ্যের মহিমা বর্দ্ধন করিল।

যশোর নূতন রাজ্য নহে, বসন্ত রায় উহা নূতন করিয়া গড়িয়া ছিলেন মাত্র। যশোরের প্রাচীনত্বের কথা বিশেষভাবে এই পুস্তকের প্রথম খণ্ডে উল্লিখিত হইয়াছে। পূৰ্ব্বে যে চাঁদ খাঁ চকের কথা বলিয়াছি, তাহা এই যশোর রাজ্যেরই একাংশ। সুন্দরবনের উত্থানপতনে কত যুগ যুগান্তরের কীর্ত্তিচিহ্ন লোকচক্ষুর বহির্ভূত হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু সব চিহ্ন যায় নাই। বসন্ত রায় আসিয়া বন কাটাইয়া নূতন আবাদ, নূতন গ্রাম পত্তন করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু সে বন চিরকালই বন ছিল না, এক সময়ে সেখানে জনস্থানও ছিল। আমরা প্রথম খণ্ডে সুন্দরবনের ইতিহাস প্রসঙ্গে দেখাইয়াছি, সমতটের এই সব অংশ প্রাকৃতিক কারণে কতবার উঠিয়াছে, কতবার পড়িয়াছে। সুন্দরবনের উন্নমনে কত স্থান উঠিয়া মনুষ্যাবাসে পরিণত হইয়াছে, আবার আকস্মিক অবনমনে সে সব স্থান বসিয়া গিয়া ভূগর্ভে বিলুপ্ত হইয়াছে। আমরা দেখিব, কিরূপে প্রতাপাদিত্য কর্তৃক যশোরেশ্বরী দেবীর পীঠ-মূৰ্ত্তি আবিষ্কৃত হইয়াছিল; কিন্তু সে মূর্তির আবির্ভাব প্রাচীনকালে আরও কতবার হইয়াছিল, কত ভাগ্যবান ভক্ত সে মূর্ত্তির জন্য কতবার মন্দির গড়িয়াছিল। সুতরাং বসন্ত রায়ের যশোর যে নূতন কিছু, তাহা নহে; ইহার পুরাতন কাহিনী যুগান্ত-বিস্তৃত।

যশোহরের প্রাচীনত্বের চিহ্ন আমরা এখনও পাইতেছি। কয়েক বৎসর পূর্ব্বে কালীগঞ্জ হইতে ঈশ্বরীপুরের মধ্যে নানাস্থানে প্রাপ্ত কতকগুলি প্রাচীন মুদ্রা আমার হস্তগত হইয়াছে। উহার মধ্যে তিনটি প্রাচীন হিন্দু আমলের ‘কার্ষাপণ’ বা ‘পুরাণ’ নামক রৌপ্য মুদ্রা আছে।[১] প্রত্নতত্ত্ববিদ্ পণ্ডিতগণ স্থির করিয়াছেন যে, আলেকজেণ্ডারের আক্রমণের বহু পূর্ব্ব হইতে ভারতবর্ষে মুদ্রা প্রচলনের নিদর্শন পাওয়া যায়। খৃঃ পূর্ব্ব চতুর্থ শতাব্দীতে লিখিত বৌদ্ধজাতকে কার্ষাপণ বা কাহাপণ নামক ভারতীয় মুদ্রার উল্লেখ দেখা যায়।[২] ‘নাতিস্থুল রূপার পাত খণ্ড খণ্ড করিয়া কাটিয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চতুষ্কোণ রজতমুদ্রা নির্ম্মিত হইত; পরে বিশুদ্ধি জ্ঞাপনের জন্য এই সকল মুদ্রার এক পার্শ্বে বা উভয় পার্শ্বে অঙ্কচিহ্ন মুদ্রাঙ্কণ’ করা হইত।[৩] এইজন্য এই সকল মুদ্রাকে অঙ্কচিহ্নযুক্ত (punchmarked) মুদ্রা বলে। ইহা পুরাণ, কার্ষাপণ বা রূপ্য প্রভৃতি বিভিন্ন নামে অভিহিত হইত। মনুর মতে তাম্রমুদ্রাকেই কার্ষাপণ বলে, কিন্তু বৌদ্ধগ্রন্থে কার্ষাপণ বলিতে রজত বা সুবর্ণমুদ্রাও বুঝাইত। সেন রাজগণের তাম্রশাসনে, বিশেষতঃ লক্ষ্মণসেনের সুন্দরবনের তাম্রশাসনে, বহুস্থলে পুরাণের উল্লেখ আছে। পুরাণ যে রৌপ্য মুদ্রা, তাহাতে সন্দেহ নাই। ‘দিগ্বিজয় প্রকাশ’ হইতে জানিতে পারি, লক্ষ্মণসেন দেব যশোরেশ্বরীর মন্দির সন্নিধানে চণ্ডভৈরবের এক মন্দির নির্ম্মাণ করিয়া দেন। প্রাচীন যশোরের সহিত লক্ষ্মণসেনের সম্বন্ধ ছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। সেই সূত্রে সে সময়ের ‘পুরাণ’ মুদ্রা এ অঞ্চলে প্রচারিত হইতে পারে। প্রাকৃতিক বিপ্লবে ঐ সকল স্থান মনুষ্যাবাসের অযোগ্য হইলে, নানাস্থানে নানাপাত্রে ঐ সকল মুদ্রা মৃত্তিকা- গর্ভে রক্ষিত হইতে পারে। বসন্ত রায় আসিয়া নূতন গ্রাম পত্তন করিলে পুনরায় তদবধি ঐ সকল মুদ্রা স্থানীয় লোকের নিকট থাকিয়া যাইতে পারে। আমি যে তিনটি মুদ্রার চিত্র বর্তমান গ্রন্থে প্রকাশ করিতেছি, উহাকে পুরাণ বা রজত কার্ষাপণ বলা যাইতে পারে। ভিন্সেন্ট স্মিথ প্রভৃতি মুদ্রাতাত্ত্বিক পণ্ডিতগণের মতে গোলাকার ও অসমচতুষ্কোণ এই দুই প্রকার এই জাতীয় মুদ্রা দেখিতে পাওয়া যায়; আমার নিকট দুই প্রকার মুদ্রাই আছে, উহার দুইটি গোলাকার এবং একটি অসমচতুষ্কোণ। তবে কোন গোলাকার মুদ্রার দুই পাশ ছাটিয়া লওয়ায় অসমচতুষ্কোণ হইয়াছে কিনা, ঠিক বলা যায় না। নিম্নশ্রেণীয় লোকে এই সকল মুদ্রা অলঙ্কারের মত গলায় পরিতেন বলিয়া উহাতে এখনও রৌপ্যের কড়া লাগান বা চিহ্ন আছে। এই সকল মুদ্রার বিশুদ্ধি পরীক্ষার জন্য, উহা যে সব নগরে মুদ্রিত হইত, তাহার চিহ্ন বা লাঞ্ছন দেওয়া থাকিত। এই জাতীয় মুদ্রার বিবরণীতে যে সকল চিহ্নের কথা উল্লিখিত হইয়াছে, তাহার অনেকগুলি চিহ্ন আমার মুদ্রায় দেখা যায়।[৯] উহা হইতে মুদ্রাগুলির বিশুদ্ধি সম্বন্ধে সন্দেহ থাকে না। আর এইরূপ বহু প্রকারের মুদ্রা যে এখনও এই প্রদেশে যেখানে সেখানে পাওয়া যায়, তাহাতে যশোরের প্রাচীনত্বেরই প্রমাণ হয়।

সেই বহুকালের প্রাচীন পতিত রাজ্য কাননাবর্জ্জনা ত্যাগ করিয়া আবার উঠিল। ইহার নাম পূর্ব্বে ছিল— ‘যশোর’, এখন গৌড়ের যশঃ হরণ করিয়া সুপণ্ডিত বসন্ত রায় কর্তৃক ‘যশোহর’ নামে কীর্ত্তিত হইল।[১০] সুতরাং যশোহর একটি আধুনিক নাম। প্রতাপাদিত্যের আমলের পূর্ব্বে লিখিত কোন প্রাচীন পুস্তকে ‘যশোহর’ নামে যশোর কখনও অভিহিত হয় নাই।[১১]

প্রথমতঃ বসন্ত রায় আসিয়া উপনিবেশের স্থান বাছিয়া লন। উর্ব্বর মস্তিষ্কের কল্পনা অত্যল্পকাল মধ্যে কার্য্যে পরিণত হয়। তখন উপবঙ্গে যশোর রাজ্যের সীমা ছিল পূৰ্ব্বভাগে মধুমতী নদী, উত্তরে কেশবপুর,১২ পশ্চিমে কুশদ্বীপ ও প্রাচীন ভাগীরথীর খাত এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর কুশদ্বীপ বা কুশদহ, বৰ্ত্তমান বসিরহাট ও বনগ্রাম মহকুমার অন্তর্গত। ইহারই অন্তর্ভুক্ত গোবরডাঙ্গার দক্ষিণে যমুনা ও ইচ্ছামতী সম্মিলিত হইয়া দক্ষিণবাহিনী হইয়াছে। বৰ্ত্তমান টাকী ও হাসনাবাদের দক্ষিণে আসিয়া এই যুক্তনদী কালিন্দী নামে ক্ষুদ্র শাখা রাখিয়া বামদিকে প্রবাহিত হইত। কালিন্দী তখন একটি ক্ষুদ্র খাল মাত্র; এখনকার মত বিপুলকায়া প্রবল নদী ছিল না। উহারই মোহনার দক্ষিণভাগে সমস্ত ভূভাগ ভীষণ সুন্দরবন ছিল। ঐ যমুনা ও কালিন্দীর মোহানার নিকট বসন্ত রায় প্রথম পত্তন করেন এবং তিনিই স্বীয় নামানুসারে স্থানটির নাম রাখেন— বসন্তপুর।

তখন এই স্থান হইতে বনের আরম্ভ হইয়াছিল। বসন্ত রায় এই স্থান হইতে বন কাটাইয়া দশ বার মাইল স্থান পরিষ্কৃত করেন। বিলম্ব করার উপায় ছিল না; এজন্য তিনি যথাসম্ভব সত্বরতার সহিত একটি স্থান গড়বন্দী করিয়া রাজধানী স্থাপন করিলেন। এই স্থানকে এক্ষণে বড় মুকুন্দপুর বলে।[১৩] বৃদ্ধ ভবানন্দ ও অন্য পরিবারবর্গ এই স্থানে আসিয়া বাস করিলেন। কেবল রাজকর্মচারী বলিয়া— বিক্রমাদিত্য, বসন্ত রায় ও শিবানন্দ তাণ্ডার রাজধানীতে ছিলেন। বসন্ত রায় দায়ুদের পলায়নের পর ধনরত্ন বোঝাই নৌকা লইয়া যশোরে আসেন। কতবার এইরূপ ধনরত্ন আসিয়াছিল, তাহার হিসাব নাই। দায়ুদের সঙ্গে দ্বিতীয়বার সন্ধির পর, যখন মুনেম খাঁ গৌড়ে আসিয়া রাজধানী খুলিয়া বসেন, তখন বিক্রমাদিত্য গৌড়ে আসিয়াছিলেন এবং মহামারীর সময়ে পলায়নপর বহু হিন্দু পাঠান ভদ্রলোকদিগকে প্রবোধ দিয়া যশোরে প্রেরণ করেন। গৌড় বহুকাল হইতে হিন্দু ও পাঠানের রাজধানী ছিল। সুলেমান প্রভৃতির আমলে শুধু পাঠান নিবাস নহে, তথায় বহু সামন্ত রাজন্যবর্গের আবাসবাটিকা ছিল। এমন কি, বর্তমান কলিকাতার মত, বহুলোকে পৈতৃক গৃহাদি পরিত্যাগ করিয়া গৌড় ও তাণ্ডায় স্থায়ী বাসস্থান নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। একে মোগলের লুণ্ঠন ও অত্যাচার, তৎপরে স্বপ্নাতীত মহামারীর ভয়ঙ্কর আক্রমণ, উভয় বিপদে গৌড়বাসীরা একেবারে বিপর্যস্ত হইয়া পড়িয়াছিলেন।

বাঙ্গালার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক আকাশের প্রতিও লোকের দৃষ্টি পড়িয়াছিল। নবনির্ম্মিত, কাননবেষ্টিত এবং সুরক্ষিত যশোর রাজধানীর প্রতিপত্তির কাহিনীও লোকমুখে গৌড়ে পৌঁছিতেছিল। সুতরাং অনেকের মনে ধারণা হইল যে, শুধু স্বাধীনতা রক্ষা নহে, জীবনরক্ষার জন্যও যশোরের বক্ষ তাহাদের আশ্রয়স্থান। কত পরাজিত পাঠান সেনানী, কত লুণ্ঠিত-সৰ্ব্বস্ব দেশীয় রাজন্য, পিতৃমাতৃহীন বা রাজ্যহীন রাজকুমার, পলায়িত পরিবারের অশক্ত আত্মীয়, প্রতিহিংসালোলুপ পাঠান সর্দ্দার এবং সর্ব্বোপরি চাকরীবিহীন অসংখ্য পাঠান সৈন্য— সকলেই যশোরকে একমাত্র শরণস্থল মনে করিয়া নানা পথে সেদিকে অগ্রসর হইল। এদিকে অরণ্য মধ্যে রাজ্য পত্তন করিয়া গুহপরিবারস্থ সকলে নবাগতদিগকে সাদরে সম্বর্দ্ধনা করিতেছিলেন। সুতরাং অল্পকাল মধ্যে যশোহর প্রদেশ বহুজনসমাগমপূর্ণ জনপদে পরিণত হইল। এই সময়ে দায়ুদের শেষ পরাজয় ও হত্যা হইল। তখন সকল আশা ফুরাইল, পাঠানের সকল সাধনা বিফল হইয়া গেল। বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায় দায়ুদের সঙ্গে সঙ্গে বা নিকটে নিকটে ছিলেন। এখন আর সেরূপ থাকিলে আত্মরক্ষা হয় না। সুতরাং তাঁহারা তখন হইতে ছদ্মবেশে গা ঢাকা দিলেন। কেহ তাঁহাদিগকে খুঁজিয়া পায় না; প্রবাদ এই, তাঁহারা সন্ন্যাসীর বেশে ফিরিতেন

খাঁ জাহান আকমহলের যুদ্ধজয়ের পর টোডরমল্লকে আগ্রায় এবং মুজঃফর খাঁকে পাঠানদিগের অনুসরণে বিহার অঞ্চলে পাঠাইয়া, নিজে প্রথমে সপ্তগ্রামে ও পরে কুচবেহারের বিদ্রোহদমনে প্রবৃত্ত হন। টোডরমল্ল বহুসংখ্যক হস্তী ও লুণ্ঠিত ধনরত্ন লইয়া আকবরের নিকট যাইবার জন্য আদেশ পাইয়া প্রথমতঃ তাণ্ডায় আসেন। এবার তিনি এখানে অধিক কাল থাকিতে পারেন নাই।[১৪] দায়ুদের প্রথম পরাজয়ের পর যখন মুনেম খাঁ গৌড়ে আসিয়া শাসনকাৰ্য্য পরিচালনা করিতে থাকেন, তখন টোডরমল্ল কিছুদিন হিসাবপত্র স্থির করিবার জন্য তাঁহার সহযোগী হইয়া তাণ্ডায় ছিলেন।[১৫] সেই সময়ে তিনি জানিতে পারেন যে, হিসাবপত্র সমুদায়ই বিক্রমাদিত্য, বসন্ত রায় ও শিবানন্দ প্রভৃতির করায়ত্ত। তজ্জন্য তিনি উঁহাদের সন্ধান করেন এবং রাজসরকারে হিসাবপত্র পাইলে, তিনি তাঁহাদিগকে যথেষ্ট পুরস্কৃত করিবেন এমনও কথা ছিল।

তাহারই ফলে, এবং কায়স্থকুলতিলক টোডরমল্লের পবিত্র চরিত্রে পূর্ব্ব হইতে বিশ্বাস ছিল বলিয়া, বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায় ছদ্মবেশ ত্যাগ করিয়া প্রথম তাঁহার সহিত দেখা করেন। আগ্রায় যাইবার পথে টোডরমল্ল পুনরায় তাণ্ডায় আসিলে, এবারও সম্ভবতঃ উঁহাদের সহিত তাঁহার সাক্ষাৎ হইয়াছিল। এবং তখন তাঁহারা দুই ভ্রাতায় মোগলের অধীনতা স্বীকার করেন এবং হিসাবপত্র যেখানে যাহা ছিল, প্রত্যর্পণ করেন (১৫৭৬)। আকমহলের যুদ্ধের পূৰ্ব্বে মহম্মদ কুলি খাঁ[১৬] নামক একজন মোগল সেনানী আফগানদিগের অনুসরণ করিবার জন্য সপ্তগ্রামে ছিলেন, তিনি তথা হইতে যশোররাজ্য আক্রমণ করেন, কারণ দায়ুদের বন্ধু বিক্রমাদিত্য ধনরত্ন সহ তথায় গিয়া বিদ্রোহী হইয়াছিলেন। কিন্তু সুদূর সুন্দরবন দুরধিগম্য স্থান এবং বিক্রমাদিত্যও তথায় তুকারই যুদ্ধ হইতে পলায়িত এবং অন্য প্রকার আশ্রয়ার্থী পাঠান সেনা হইতে যথেষ্ট পদাতিক ও নৌসেনা সংগ্রহ করিয়াছিলেন, কারণ তাঁহারা জানিতেন যে, দায়ুদের বিপক্ষে যে যুদ্ধ-তরঙ্গ উঠিবে, তাহা যশোর পর্য্যন্ত না গিয়া ছাড়িবে না। কুলি খাঁর সহিত কোন বিশেষ স্থানে যুদ্ধ বাধিয়াছিল কিনা, তাহা জানা যায় না; তবে কুলি খাঁ যে কিছু করিতে না পারিয়া সপ্তগ্রামে ফিরিয়া আসিয়াছিলেন, আবুল ফজলের ইতিহাসে তাহার উল্লেখ আছে।[১৭] ইহারই পর বিক্রমাদিত্য আসিয়া টোডরমল্লের সহিত সাক্ষাৎ করেন এবং সম্ভবতঃ তখনই হিসাবের পুস্তকাদি সমর্পণ করিয়া মোগল বাদশাহের সামন্তরাজ বলিয়া স্বীকৃত হন। তিনি যশোর-রাজ্যের বাদসাহী সনন্দ কিছু পরে পাইয়াছিলেন এবং সম্ভবতঃ টোডরমল্লের অনুরোধ মত সে সনন্দ প্রদত্ত হয়। তবে এই সময় (১৫৭৭) হইতে বিক্রমাদিত্যের রাজত্বের আরম্ভ বলা যাইতে পারে এবং এই সময় হইতে তাঁহারা রাজস্ব প্ৰদান করিতে থাকেন। বাদশাহী সনন্দ সেনাপতি খাঁ জাহানের মৃত্যুর (১৫৭৮) পূর্ব্বে পৌঁছিয়াছিল বলিয়া বোধ হয়। মুজঃফর খাঁর শাসনকালে বঙ্গে যে জায়গীরদারগণের সর্ব্বব্যাপী বিদ্রোহ হয়, তখন যশোরে কোন গোলযোগ ছিল না; বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায়ের এইরূপ আনুগত্য দেখিয়া বিদ্রোহদমনকারী টোডরমল্ল অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন।[১৮]

১৫৭৭ খৃষ্টাব্দে যশোরে ফিরিয়া আসিয়া বিক্রমাদিত্য রাজসিংহাসনে সমাসীন হন। তদুপলক্ষে নূতন রাজধানীতে নানা উৎসব অনুষ্ঠিত হইয়াছিল। নিষ্কণ্টকে গৌড়ের ধনরত্নের অধিকারী হইয়া এবং সন্ধিসূত্রে মোগল বাদশাহের সঙ্গে সম্প্রীতি সংস্থাপন করিয়া, বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায় উভয়ে শান্তির সহিত রাজ্য শাসন করিতে লাগিলেন। অনেক দিন পরে দক্ষিণবঙ্গ অরাজকতার হস্ত হইতে নিষ্কৃতি পাইয়া, আবার শান্তির মুখ দেখিল এবং প্রজাবর্গের সুখসমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। মহারাজ বিক্রমাদিত্য নূতন রাজ্যের রাজা বটে, কিন্তু তাহার শাসক ও পালক ছিলেন রাজা বসন্ত রায়।

পাদটীকা :

১ . কালিয়া-নিবাসী বন্ধুবর হিরণ্যকুমার দাসগুপ্ত মহাশয় এই মুদ্রা কয়েকটি সংগ্রহ করিয়া দিয়া আমাকে চিরবাধিত করিয়াছেন।

২. রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়; ‘প্রাচীনমুদ্রা’, ১১-2 পৃ; Rhys Davids, Ancient Weight & Measures, pp. 1-8.

৩. ‘প্রাচীন মুদ্রা’ (রাখাল দাস), ১৬ পৃ।

8. Rapson, Indian coins, p. 3.

৫. ‘প্রাচীনমুদ্রা’ (রাখালদাস), ১৪-১৫ পৃ।

৬. বর্ত্তমান গ্রন্থের ১ম খণ্ড, ১৬৩-১৬৬ পৃ।

৭. ‘প্রাচীনমুদ্রা’ (রাখালদাস), ১৬ পৃ।

৮. J. A. S. B., 1890, part 1, p. 151.

৯. রথ, রথের চক্র, অশ্ব, রথের মধ্যে উপবিষ্ট মূর্ত্তি এবং আরও বহুবিধ চিত্র আমার মুদ্রাতে আছে।

১০. দিগ্বিজয় প্রকাশে—”উপবঙ্গে যশোরাদি দেশ কানন-সংযুতা’; তন্ত্রচূড়ামণিতে-’যশোরে পাণিপদ্মঞ্চ’ ভবিষ্যপুরাণে—’যশোর দেশ বিষয়ে’; ঘটককারিকায়—’চন্দ্রদ্বীপ শিরস্থানং যশোরা বাহবস্তথা’; ইত্যাদি সৰ্ব্বত্রই ‘যশোর’ শব্দ আছ। ক্যানিংহাম সাহেবের মতে আরবীয় জসর (সেতু) শব্দ হইতে যশোর শব্দের উৎপত্তি।- Ancient Geography, p. 502; বর্ত্তমান গ্রন্থের ১ম খণ্ড, ১-৬ পৃ দ্রষ্টব্য। বসন্ত রায়ের রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর ইহার ‘যশোহর’ নাম হইয়াছিল।

১১. বর্ত্তমান যশোহর জেলার সদর ষ্টেশন সহর যশোহর বা Jessore এর সহিত এই প্রাচীন যশোরের রাজধানী যশোহরের কোন সম্পর্ক নাই, বলিলেও চলে। অনেকে রেলপথে সহর যশোহরে নামিয়া বিক্রমাদিত্যের রাজধানী যশোহরের ভগ্নাবশেষের অনুসন্ধান করেন। এমন কি, কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথের নব্যবয়সের নভেল ‘বৌঠাকুরাণীরহাটে’ ভৈরব-তটে প্রতাপের রাজধানী যশোহর অবস্থিত এবং ভৈরববক্ষে কামানগর্জ্জনে প্রতাপের নিদ্রাভঙ্গ হইল এইরূপ বর্ণনাই আছে; দুঃখের কথা বলিবার নহে, বিংশাধিক সংস্করণেও সে ভ্রান্তির সংশোধন হয় নাই। সহর যশোহরের প্রাচীন নাম মুড়লী-কা বা শুধু কা। সেই পাঠান আমলের কসবা বা সহরে যশোর-রাজ্যের একটি কিল্লা বা দুর্গ ছিল বলিয়া জানা যায়। প্রতাপাদিত্যের পতনের পর চাঁচড়ার রাজবংশীয়েরা যশোর রাজ্যের একাংশ পাইয়া ‘যশোরের রাজা’ বলিয়া পরিচিত হইয়া সেখানে বাস করেন। ইংরাজগণ জেলা করিবার সময়ে কসবার বদলে যশোহর (Jessore) নাম করিয়া দেন। -বর্তমান গ্রন্থের ১ম খণ্ড, ১-৬ পৃ।

১২. কেশবপুর যশোহর জেলার একটি প্রসিদ্ধ স্থান এবং বাণিজ্যকেন্দ্র। উহা যশোহর সহর হইতে ২০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। কেশবপুর এখনও চিনি, গুড়, লঙ্কা ও বস্ত্রের ব্যবসায়ের জন্য বিখ্যাত।

১৩. ‘সে স্থানে লোক পাঠাইয়া দরোবস্ত জঙ্গল কাটাইলেন ও নদী নালার উপর স্থানে স্থানে পুলবন্দি করাইয়া রাস্তার নমুদ করিলেন। পাঁচ ছয় ক্রোশ দীর্ঘ প্রস্থ এমত দিব্য স্থান তৈয়ার হইল।’—রামরাম বসু, ‘রাজা প্রতাপাদিত্যচরিত্র’, ১৮০১, প্রথম সংস্করণ, ১৮ পৃ। [‘প্রতাপাদিত্য’ (নিখিলনাথ), মূল ৭ পৃ–শি. মি]. মুকুন্দপুরে বা সন্নিকটবর্ত্তী কোন স্থানে বসন্তরায়ের প্রতিষ্ঠিত যশোহর রাজধানী ছিল বলিয়া অনুমান করা যায়। বিক্রমাদিত্যের রাজধানী হইতে কয়েক মাইল দক্ষিণে গিয়া প্রতাপাদিত্য নিজের নূতন রাজধানী স্থাপন করেন। এই উভয় রাজধানীর অবস্থান লইয়া অনেক মতভেদ আছে। আমরা পরে একটি পৃথক পরিচ্ছেদে উহার মীমাংসা করিতে চেষ্টা করিব। মুকুন্দপুর অঞ্চলে বিক্রমাদিত্যের রাজধানী ছিল, এইটুকু আপাততঃ জানিয়া রাখা ভাল। মুকুন্দপুরের নামই এক্ষণে গড় মুকুন্দপুর, সেখানে এখনও গড়বন্দী বিস্তীর্ণ স্থান আছে, নদীর মত সে গড়ে বারমাস জল থাকে। সাতক্ষীরা ষ্টেটের ম্যানেজার লক্ষ্মণচন্দ্র রায় মহাশয় এই গড়বন্দী স্থানে বাস করিতেছেন।

১৪. ১৫৭৬ জুলাই মাসে আকমহলের যুদ্ধ হয়। ঐ বৎসর অক্টোবর মাসে টোডরমল্ল গুজরাটের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। সুতরাং তিনি যুদ্ধের পর ২/৩ মাসের মধ্যে আগ্রায় পৌঁছিয়াছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। —Smith, Akbar, p. 155.

১৫. ‘In the 19th year, when Daud had withdrawn to Satganw (Hugli), Munim Khan remained with Rajah Todar Mall in Tandah to settle financial matters.’-Ain. (Blochmann), p. 341, ‘Engaged in arranging matters political and financial . ‘ – Akbarnama (Beveridge), III, p. 169.

১৬. ইনি বার্লাস্ বা বর্ম্মকবংশীয় সম্ভ্রান্ত সেনানী। কিছুদিনের জন্য মালবের শাসনকর্তা ছিলেন, পরে মুনেম খাঁর সহকারিরূপে বঙ্গে আসেন। বিক্রমাদিত্য ধনরত্ন লইয়া যশোর যাইবার সময় ইনি তাঁহাকে অনুসরণ করেন। কিন্তু বিফল মনোরথ হইয়া ফিরিয়া আসেন। টোডরমল্লের নিকট তিরস্কৃত হইয়া তিনি পুনরায় উড়িষ্যায় প্রেরিত হন, সেখানে তাঁহার মৃত্যু হয়।- Ain. (Blochmann), p. 341.

১৭. ‘From Satganw Mahammad Quli Khan invaded the district of Jasar (Jessore) where Sarmadi a friend of Daud’s, had rebelled but the Imperialists met with no success and returned to Satganw’-Ain. (Blochmann), pp. 341-2. এখানে ব্লকম্যান শ্রীহরিকে সর্মাদি বলিয়াছেন, বিভারিজের অনুবাদে শ্রীহরি (Sirhari) আছে।— Akbarnama, III, p. 172.

১৮. টোডরমল্ল এক বৎসরকাল গুজরাটের শাসনকর্তা থাকিয়া ১৫৭৭ অব্দের শেষভাগে আগ্রায় আসিয়া সাম্রাজ্যের উজীর হন; পরে ১৫৮০ অব্দের প্রথমে বঙ্গের জায়গীরদারদিগের বিদ্রোহ দমন জন্য বাদশাহ অনন্যোপায় হইয়া টোডরমল্লকেই সেখানে প্রেরণ করেন এবং তিনি ১৫৮২ পর্যন্ত বঙ্গের শাসন কর্তা ছিলেন। শুধু যশোরের রাজা নহেন, জায়গীরদার-বিদ্রোহে কোন হিন্দু যোগ দেন নাই। কারণ, আকবরের নূতন ধর্ম্মমত উক্ত বিদ্রোহের অন্যতম কারণ। ব্লকম্যান লিখিয়াছেন ‘not a single Hindu was on the side of the rebels.’-Ain, p. 431.

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন