৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী

সতীশচন্দ্র মিত্র

নবম পরিচ্ছেদ – রেণী ও মরেল-কাহিনী

পূর্ব্ব পরিচ্ছেদে নীল-বিদ্রোহ উপলক্ষ্যে যে সকল সাহেবের কথা বলিয়াছি, তাঁহারা সকলেই যশোহর-জেলার নীল-ব্যবসায়ী; এখন আর যে দুইজনের কথা বলিব, তাঁহারা খুলনা জেলার ব্যবসায়ী, এবং এই স্থানে জমিদারী বা তালুকের মালিক হইয়া স্থায়িভাবে বসতি করিয়াছিলেন; কিন্তু এখন তাঁহাদের জমিদারীও নাই, বংশও নাই; আছে মাত্র অন্যাধিকৃত তাঁহাদের পুরাতন বাটী, দুই একটি সমাধি-স্তম্ভ আর লোকমুখে প্রচারিত সদসৎ চরিত্র-কথা। অগ্রে রেণীর কথা বলিতেছি।

রেণী সাহেব। রেণী সাহেবের পরিচয় পূর্ব্বে দিয়াছি। তিনি পত্নীর উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হোগলা পরগণার চারিআনা অংশের ট্রাষ্টী নিযুক্ত হইয়া ঐ সম্পত্তি পরিচালনা করিতেন। সে সময়ে তিনি কলিকাতার হ্যামিল্টন্ কোম্পানির হৌস্ হইতে ৮ লক্ষ টাকা মূলধন লইয়া, খুলনার অপর পারে থাকিয়া, চিনি ও নীলের বিস্তৃত ব্যবসায় আরম্ভ করেন। তালিবপুর গ্রামে ভৈরবর্তীরে যেখানে তাঁহার বাটী ছিল, উহাকে এখন ‘পুরাতনকুঠি’ বলে; তাঁহার রম্যহম্ম ও বাঁধাঘাট সবই আজ নদীগর্ভস্থ, কেবলমাত্র বিস্তীর্ণ আম লিচু নারিকেলের বাগানের মধ্যে কয়েকটি উত্তুঙ্গ ঝাউগাছ এবং রেণীদম্পতীর সমাধিস্তম্ভ পূর্ব্বচিহ্ন রক্ষা করিতেছে। ঐ ‘পুরাতন কুঠি’র অপর পারে নন্দনপুরে কয়েকটি (ইক্ষু) চিনির কল ছিল এবং তালিবপুর, লখপুর, ঘোষেরহাট প্রভৃতি অনেক স্থানে এখনও তাঁহার নীলকুঠির নিদর্শন আছে। বেলফুলিয়ার দীননাথ সিংহ, নওয়াপাড়ার গদাধর ঘোষ প্রভৃতি কয়েকজন তাঁহার বিশিষ্ট কার্য্যকারক ছিলেন। ঐ সকল কুঠির কার্য্য-চালনার জন্য তিনি স্থানীয় লোকের উপর অত্যাচার করিতেন। স্ত্রীলোকের উপর অত্যাচারের কথা শুনা যায় না বটে, কিন্তু অন্য কারণে বহু লোক উত্যক্ত হইত। এমন কি, তাঁহার বাড়ীর নিকট দিয়া চলাফেরা করা বন্ধ হইয়াছিল; তিনি পথের লোক ধরিয়া কার্য্য করাইয়া লইতেন। এখনও ‘শ্বশুরবাড়ী যাইবার পথে রেণী সাহেবের খড় কাটিবার’ প্রবাদ-বাক্য আছে। উদ্যানের বৃক্ষাদি ছেদন, সীমানা নষ্ট করিবার জন্য বড় বড় পগার খনন, জোর করিয়া দাদন দেওয়া, ধান্যশস্য নষ্ট করিয়া নীল বপন—এসব কাৰ্য্য যখন তখন, হইত। এজন্য পার্শ্ববর্ত্তী কয়েকখানি ক্ষুদ্র গ্রাম একপ্রকার নিষ্প্রদীপ হইয়া গিয়াছিল। এই সব দেখিয়া স্থানীয় প্রধান প্রধান লোক অর্থাৎ লখপুরের চৌধুরী, নওয়াপাড়ার ঘোষ, তিলকের মিত্র, শ্রীরামপুর- নৈহাটির ঘোষ মহোদয়েরা একত্র হইয়া অত্যাচারের প্রতিরোধ জন্য পরামর্শ করেন। তন্মধ্যে শ্রীরামপুরের ঘোষবংশীয় শিবনাথ ঘোষ সকলের অগ্রণী হন।[১] ১২৪৬ হইতে ১২৪৯ পৰ্য্যন্ত রেণী ও শিবনাথের ঘোর বিরোধ চলিয়াছিল। কিন্তু বাঙ্গালীর যেমন ধরন, কার্য্যকালে পরামর্শকারিগণ কেহই শিবনাথের সহায়তা করেন নাই; তিনি একপ্রকার একক দুর্দান্ত কুঠিয়ালের অত্যাচার হইতে প্রতিবেশীকে রক্ষা করিবার জন্য সর্ব্বস্বপণ করিয়া সদর্পে দণ্ডায়মান হইয়াছিলেন। প্রত্যেক পক্ষে সহস্রাধিক ঢাল-শড়কীওয়ালা লাঠিয়াল বহাল হইয়াছিলেন। রেণীর পক্ষে দেশীয় কর্ম্মচারী ছাড়া কয়েক জন গোরা ছিলেন, শিবনাথের পক্ষে বাহিরদিয়া নিবাসী চন্দ্রকান্ত দত্ত, তিলকের রামচন্দ্র মিত্র, পানিঘাটের ভৈরবচন্দ্র মিত্র এবং বিরাট নিবাসী লাঠিয়াল সর্দ্দার সাদেক মোল্যা প্রভৃতি বীরবৃন্দ জুটিয়া রেণীর দর্প চূর্ণ করিয়াছিলেন।[২] গ্রাম্য কবিতায় এখনও শুনিতে পাওয়া যায় :

‘চন্দ্র দত্ত, রণে মত্ত, শিব-সেনাপতি
* * *
গুলিগোল্যা সাদেকমোল্যা, রেণীর দর্প করল চুর
বাজিল শিবনাথের ডঙ্কা, ধন্য বাঙ্গালা বাঙ্গালী বাহাদুর।।’

বাস্তবিকই শিবনাথের ডঙ্কা বাজিয়াছিল, চৌগাছার বিশ্বাস ভ্রাতৃদ্বয়ের মত শ্রীরামপুরের শিবনাথও বীরত্ব-গৌরবে বাঙ্গালী বাহাদুর। তাঁহার রণ-ডঙ্কায় রেণী সাহেবকে শঙ্কান্বিত করিয়াছিল। শিবনাথ প্রতিকার্য্যে তাঁহার প্রতিরোধ করিতেন, এজন্য তিনি ক্রোধান্ধ হইয়া আরও অত্যাচার করিতেন; দিনে দিনে যখন তখন, যেখানে সেখানে উভয়পক্ষে খণ্ড-যুদ্ধ হইত। প্রায়শঃ সাহেবের লোকদিগকে রণভঙ্গ দিতে হইত। এখনও কথায় আছে, ‘দেখিয়া শিবের ভঙ্গি পলাইল দীনেই সিঙ্গি’ (দীননাথ সিংহ)।[৩] উভয়ের বিরোধ ভঙ্গের জন্য গবর্ণমেণ্ট উভয়ের বাসস্থানের মধ্যে নয়াবাদ থানা ও পরে খুলনা মহকুমা স্থাপন করিতে বাধ্য হন। বিবাদ ঘোরতররূপে আরব্ধ হইল, সে থানাও সেখানে তিষ্ঠিতে পারে নাই। সেকথা পূর্ব্বে বলিয়াছি (২য় অংশ, ২ পরিচ্ছেদের শেষের দুটি স্তবক)। শিবনাথ রেণী সাহেবের ৩৬ খানা নীল ও চিনি বোঝাই নৌকা কলিকাতা যাইবার পথে কাঁচিবাঁকা নদীর মধ্যে ডুবাইয়া দেন, উহার একখানা মাত্র নৌকা পলায়ন করিতে সমর্থ হয়। সাহেব সে নৌকার মাল স্বীয় মহাজনের হৌসে না দিয়া গোপনে অন্যত্র বিক্রয় করেন এবং সমস্ত নৌকাগুলির লুট-তরাজের অভিযোগ শিবনাথের স্কন্ধে চাপাইয়া মোকদ্দমা করেন। কিন্তু শিবনাথ গুপ্ত বিক্রয় ধরাইয়া দেওয়ায় মোকদ্দমা ফাঁসিয়া যায়। ১২৪৯ (১৮৪৩) সালে রেণী সাহেব শিবনাথের নামে ৯৬টি খুনের অভিযোগ আনেন, কিন্তু তাহাতেও কিছু করিতে পারেন না। এমন কি, শিবনাথ রেণীর কুঠির নীল গাছ লুটিয়া লইয়া স্বকীয় নেহালপুর ও বিরাটের কুঠিতে নীল প্রস্তুত করিতেন। এমন সময় মহাজনেরা টাকা দেওয়া বন্ধ করিলেও সাহেব কিছুদিন নিজ জমিদারীর আয় হইতে কুঠি চালাইয়াছিলেন, কিন্তু বেশী দিন পারেন নাই। দেশব্যাপী নীল- বিদ্রোহের সমকালে তাঁহারও কুঠি বন্ধ হইয়া যায়। রেণী ও শিবনাথ উভয়েই বীর ছিলেন; বীরই বীরত্বের মর্ম্ম বুঝেন; উহাদের পরস্পরের মধ্যে শ্রদ্ধা ছিল। ১২৫৫ সালে ৩৯ বৎসর বয়সে শিবনাথের মৃত্যু ঘটিলে, একজন রেণী সাহেবকে ঐ সংবাদ জানাইয়া সন্তুষ্ট করিবেন ভাবিয়াছিলেন; কিন্তু সাহেব শিবনাথের মৃত্যুতে অশ্রুবর্ষণ করিয়াছিলেন। ইহাই তাঁহার জাতির মহত্ত্ব এবং বীরের ধৰ্ম্ম।

মরেল সাহেব। হেঙ্কেল সাহেবের সময় হইতে সুন্দরবন আবাদ করিবার চেষ্টা চলিতেছিল বটে, কিন্তু জমিদারদিগের সহিত সীমানা-সংক্রান্ত বিবাদের জন্য সে চেষ্টায় কোন ফল হয় নাই। ১৮২৮ অব্দে সীমা স্থির করিবার আইন (Regulation III of 1828) হয়। তদনুসারে কমিশনার ড্যাম্‌ম্পিয়ার (Dampier) সাহেবের তত্ত্বাবধানে সুন্দরবন জরিপ হইয়া সীমা স্থির হয় (১৮৩০) এবং নব বিধানমত সমস্ত সুন্দরবন লাটে (Lot) বা খণ্ডে বিভক্ত হইতে থাকে।[৪] সৰ্ব্বপ্রথমে পূৰ্ব্ব সীমায় বলেশ্বর কূলবর্তী ১,২,৩ এবং ৪ নং লাট ও বারুইখালি গ্রাম টাকীর স্বনামখ্যাত জমিদার কালীনাথ মুন্সীর সঙ্গে ৯৯ বৎসরের জন্য বন্দোবস্ত হয়। কিন্তু কয়েক বৎসর মধ্যে তিনি ৮০০ বিঘার অধিক আবাদ করিতে না পারায়, চারি লাটের মধ্যে ঐ অংশ (৩নং অন্তর্গত খাউলিয়া আবাদ) ব্যতীত অবশিষ্ট জমি অন্যের সহিত বন্দোবস্তের হুকুম হয়। তখন শ্রীমতী মরেল (Mrs. Morrell) নামক এক ইংরাজ-পত্নী প্রার্থী হইয়া উক্ত লাটগুলি নিজ পুত্রদিগের নামে বন্দোবস্ত করিয়া লন (১৮৪৯)। উঁহার চারিটি পুত্র ছিলেন, রবার্ট, টমাস্, উইলিয়ম্ ইভান্‌স ও হেরী। তন্মধ্যে মধ্যম টমাস্ অল্প বয়সে মারা যান। অপর তিন ভ্রাতা নৌকাযোগে আসিয়া বলেশ্বর ও পানগুচি নদীর সঙ্গম সন্নিকটে সরালিয়া নামক স্থানে জঙ্গল কাটিয়া বসতি করেন। অচিরে তাঁহাদের অদম্য উদ্যম, অক্লান্তশ্রম, ইংরাজোচিত অধ্যবসায় ও ব্যবস্থা-নৈপুণ্য দ্বারা প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধক তুচ্ছ করিয়া বিস্তীর্ণ জঙ্গল আবাদ করিয়া তুলেন এবং দশ বৎসরের মধ্যে ৬০/৬৫ হাজার বিঘা কৃষিক্ষেত্রে পরিণত করেন। দলে দলে প্রজা আসিয়া স্থায়ী নিরীখে (১ বিঘা ২ কাঠা হিসাবে) পাট্টা গ্রহণ করেন; শীঘ্রই তাঁহাদের সম্পত্তির মূল্য ১০ লক্ষ টাকা দাঁড়ায়।[৫] মরেলগণ সুদৃঢ় ভিত্তির উপর সুবৃহৎ ইমারত নির্ম্মাণ করিয়া আবাস বাটিকা করেন; উহার চতুঃপার্শ্বে সুবিস্তৃত পাকারাস্তা, ঘাটবাঁধা পুকুর ও ফলের বাগান রচনা করেন। এখনও ৫০ বিঘা জমিতে একটি নারিকেল বাগান রহিয়াছে। উঁহারা নদীতীরে বাজার বসাইয়া তাহার নাম রাখেন মরেলগঞ্জ। সে হাট এখনও আছে, সোম শুক্রবারে সমস্তদিন ধরিয়া একটি হাট বসে; উহা বড়দলের মত না হইলেও সুন্দরবনের একটি বড় হাট; ধান চাউলই প্রধান পণ্য।

অবস্থান গুণে মরেলগঞ্জ একটি বিশিষ্ট বাণিজ্য স্থান হইয়া উঠে। হাট যত বড় হইতে লাগিল, নানা দেশীয় পণ্য-তরণী এখানে আসিতেছিল। ১৮৬৯ অব্দে গবর্ণমেন্ট মরেলগঞ্জকে বন্দর (Port) বলিয়া নির্দ্দিষ্ট করেন এবং বড় বড় জাহাজ এখানে আসিবার ব্যবস্থা হয়।[৬] ক্রমে সাহেবদিগের উদ্যোগে মরেলগঞ্জে একটি থানা, স্কুল, সবরেজেষ্ট্রী আফিস ও ডিস্পেন্সারী বসিয়াছিল।

পূর্ব্বেই বলিয়াছি বারুইখালি গ্রামটি মরেল সাহেবদিগের ছিল।[৭] ঐ গ্রামে সাহেবদিগের সময় বহু কৃষকের বসতি হইয়াছিল। মরেলগঞ্জের নীলের চাষ ছিল না বা এখানকার সাহেবেরা যশোহরের নীলকরদিগের মত অসঙ্গত নীতিতে দাদন প্রথা প্রবর্তিত করেন নাই। প্রজাদিগের মধ্যে স্থায়ীভাবে বাস করিয়া তাঁহারা বিশ্বাসভাজন হইয়াছিলেন। খুলনা তখন মহকুমা মাত্ৰ; সেখান হইতে মরেলগঞ্জ বহুদূরে দুর্গম স্থানে অবস্থিত; মরেলেরাই সেখানে সর্ব্বেসর্ব্বা, গবর্ণমেণ্টের আইন-কানুনের ধার না ধারিয়া তাঁহারা এক প্রকার স্বাধীনভাবে প্রজা শাসন করিতেন। রবার্ট মরেল্ সুবিজ্ঞ ব্যক্তি হইলেও যে সময় সময় শাসন বিষয়ে মাত্রা ছাড়াইতেন না, তাহা নহে; তিনি অনেক সময় ঠিক থাকিলেও তাঁহার কার্য্যকারকেরা সর্ব্বদাই মাত্রা ছাড়াইতেন, এবং কার্য্যতঃ অত্যাচারী হইয়া উঠিয়াছিলেন। তাঁহার অধীন কতকগুলি বেতনভোগী লাঠিয়াল ছিল, উহাদের দলপতি ছিলেন তাঁহার ম্যানেজার হেলি (Denys Hely) সাহেব। এই হেলি প্ৰথম সামান্য বেতনের সৈনিক ছিলেন, সেই চাকরী ত্যাগ করিয়া পয়সার লোভে মরেলের সরকারে প্রবেশ করিয়াছিলেন।[৮] এই হেলির দোষে বারুইখালির প্রজার সঙ্গে একটা ঘোর দাঙ্গা হয়; তেমন দাঙ্গা যখন তখন হইত।[৯] যে একটা ঘটনায় মরেলদিগের পতনের পথ পরিষ্কার করিয়াছিল, তাহাই এখানে বলিব।

বারুইখালির একজন মাতব্বর প্রজার নাম রহিমউল্যা; এই সুস্থ সবল কর্মঠ কৃষকের অবস্থার অতিরিক্ত তেজস্বিতা ছিল। তিনি হেলির অপব্যবহার জন্য উদ্রিক্ত প্রজার পক্ষাবলম্বন করিতেন। তাই সাহেব তাঁহার উপর জাতক্রোধ ছিলেন। ১৮৬১ অব্দের নভেম্বর মাসে রহিমউল্যার সহিত তাঁহার প্রতিবেশী গুণীমামুদ তালুকদারের সীমানা লইয়া বিবাদ হয়; হেলি সাহেব তাহার মিটমাট করিতে গিয়া গুণীমামুদের প্রতি পক্ষপাতিতা দেখান। রহিমউল্যা তাহা না মানিয়া সাহেবকে কিছু অপমানসূচক গালি দেন। উহা সহ্য করিতে না পারিয়া হেলি কতকগুলি লাঠিয়াল লইয়া রহিমউল্যাকে নির্যাতন করিতে যান। কিন্তু সেদিন সাহেবের পক্ষে রামধন মালো খুন হইলে তিনি রণে ভঙ্গ দেন। দ্বিতীয় দিন বহুসংখ্যক লাঠিয়াল লইয়া রহিমউল্যার বাড়ী ঘেরাও করেন। রহিমউল্যার অল্পসংখ্যক স্বজন এবং কিছু গুলিবারুদ ছিল। উহার সাহায্যে তিনি সমস্ত রাত্রি যুদ্ধ চালাইয়াছিলেন। তাঁহার বাড়ীর চারিধারে গড়কাটা ছিল, সুন্দরবনের অনেক বাড়ীতে এমন থাকে। সম্মুখের সদর পথে ভিজা কাঁথা টাঙ্গাইয়া কৃষকবীর উহার আড়াল হইতে সমস্ত রাত্রি গুলি চালাইয়াছিলেন। গুলি ফুরাইয়া গেলে স্ত্রীলোকের হাতের রূপার কঙ্কণ (কাহন) ভাঙ্গিয়া উহার খণ্ডাংশগুলি দ্বারা গুলির কার্য্য চালাইয়াছিলেন। অবশেষে গুলিবারুদ নিঃশেষ হইলে রাত্রিশেষে রহিমউল্যা ঢাল ও রামদাও হস্তে করিয়া লম্ফ দিয়া পড়িলেন, তখন হেলি ও অন্য একজনের গুলিতে রহিমউল্যার মৃত্যু ঘটিল। সেইখানেই যুদ্ধ শেষ হইল। আত্মরক্ষা ও স্বজাতির মান সম্ভ্রম রক্ষার জন্য রহিমউল্যা যে প্রাণপাতী যুদ্ধ করিলেন, তাহা চিরস্মরণীয় হইয়া রহিল। এই যুদ্ধে ১৭ জন হত এবং বহুজন আহত হয়, অধিকাংশই সাহেব পক্ষের। শবগুলি জঙ্গলে লইয়া পুড়াইয়া দেওয়া হয়। পূর্ব্বদিন হইতে গ্রামের লোক অনেক পলাইয়াছিল; যাহা বাকী ছিল, সাহেবের লোকেরা পরদিন সকাল পর্যন্ত তাহাদের সব বাড়ী লুঠ করে, ঘর জ্বালাইয়া দেয়, এমন কি স্ত্রীলোক ধরিয়া লইয়া অত্যাচার করিতেও ছাড়ে নাই। এই পাপে সাহেবদিগের সৰ্ব্বনাশ হয়।

এই সময়ে সাহিত্য-রথী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় খুলনার মহকুমা ম্যাজিষ্ট্রেট। সকলেই জানেন, তিনিই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ব্বপ্রথম বি, এ, উপাধিধারী। পাশের সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটী চাকরী হয়। যশোহরে সে চাকরীর আরম্ভ এবং খুলনায় তাঁহার প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ ঘটে। খুলনাতেই তাঁহার প্রকৃত সাহিত্যিক জীবনের আরম্ভ হয়। খুলনায় আসিয়াই তিনি কিশোরীচাঁদ মিত্র-সম্পাদিত Indian Field সংবাদপত্রে “Rajmohan’s Wife” নাম দিয়া একটি ক্রমিক গল্প প্রকাশিত করিতেছিলেন, এই স্থানে বসিয়াই তিনি তাঁহার সর্ব্বপ্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’র পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেন। তিনি ১৮৬০ সালের নভেম্বর হইতে ১৮৬৪ সালের মার্চ মাস পৰ্য্যন্ত কিঞ্চিদধিক তিন বৎসর কাল খুলনায় ছিলেন, তন্মধ্যে তিনি জলদস্যুদিগের ডাকাইতি ও অন্য নানাবিধ অত্যাচার নিবারণ করিয়া দেশে শান্তি সংস্থাপন করিয়া গিয়াছিলেন।[১০] যখন দেখি, এ সময় বঙ্কিমচন্দ্র অজাতশ্মশ্রু যুবক, তাঁহার বয়স ২৩/২৪ বর্ষ মাত্র, অথচ সেই যুবকের প্রতাপে মহকুমা টলটলায়মান, আর যখন ভাবি, দৌরাত্ম্য-পীড়িত প্রদেশের কঠোর শাসনের মধ্যে তিনি তাঁহার যুগান্তকারী উপন্যাসের প্রথমখানির রচনা শেষ করিয়াছিলেন, তখন তাঁহার সৰ্ব্বতোমুখী প্রতিভা দেখিয়া বিস্ময়ান্বিত হইতে হয়।

যেদিন বারুইখালিতে ভীষণ দাঙ্গা ও রহিমউল্যার হত্যা হয়, সেদিন বঙ্কিমচন্দ্র ফকিরহাট থানায় ছিলেন।[১১] ঘটনার দুইদিন পরে সেখানে তাঁহার নিকট খুনের এজাহার হয়। তৎক্ষণাৎ তিনি যশোহর হইতে ৫০ জন সিপাহি সৈন্য প্রেরণের প্রার্থনা করিয়া, স্বয়ং নৌকাযোগে স্বল্প পুলিসসহ মরেলগঞ্জ রওনা হন। সেখানে পৌঁছিয়া তিনি নির্ভীকভাবে দাঙ্গার স্থান ও পরদিন সাহেবদিগের কুঠি প্রভৃতি পরিদর্শন করেন, কিন্তু সিপাহি পৌঁছিবার পূর্ব্বে কোন উচ্চবাচ্য করেন নাই। কিন্তু গুপ্তচরমুখে সিপাহি প্রেরণের সংবাদ পাইবামাত্র মরেল ও হেলি প্রভৃতি সাহেবেরা এবং প্রধান কর্মচারীরা সকলে রাত্রিযোগে পলায়ন করেন। যাহারা অবশিষ্ট ছিল, বঙ্কিমের হস্তে গ্রেপ্তার হইয়া খুলনায় নীত হইল। বহু তদন্তের পর তিনি জোর কলমে তীব্র মন্তব্য সমেত সুদীর্ঘ রিপোর্ট দাখিল করেন। বেনব্রিজ (Bainbridge) সাহেব তখন যশোহরের ম্যাজিষ্ট্রেট, তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের কৰ্ম্মদক্ষতা দেখিয়া মুগ্ধ হন। বঙ্কিমচন্দ্র হেলি ও অন্যান্য আসামীর নামে ওয়ারেন্ট বাহির করিলেন এবং তাঁহাদিগকে ধরিয়া দিবার জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করিলেন। সাহেবদিগের একজন প্রধান কার্য্যকারক দুর্গাচরণ সাহা পলায়ন করতঃ রাধামাধব দাস নামে বৃন্দাবনে লুক্কায়িত ছিলেন, বঙ্কিমের ওয়ারেন্ট সেখানে পৌঁছিয়া তাহাকে ধরিয়া আনিয়ছিল। হেলি ছদ্মবেশে নামান্তর গ্রহণ করিয়া বম্বে হইতে পলাইতেছিলেন, পুলিস সেখান হইতে তাঁহাকে ধরিয়া আনিয়াছিল। ইঁহারা ধৃত হইবার পূর্ব্বেই বঙ্কিমের তদন্ত-রিপোর্ট যশোহরে প্রেরিত হয়; তিনি নিজে তদন্তকারী বলিয়া মোকদ্দমার বিচার করিতে পারিলেন না। ১৮৬২ সালের জানুয়ারী হইতে নূতন পেনাল কোড প্রচারিত হয়; ঘটনাটি তাহার পূর্ব্ববর্ত্তী সময়ের বলিয়া তিনি যে এ মোকদ্দমা বিচার করিতে সমর্থ, তাহা তিনি বুঝাইয়া দিতে ছাড়েন নাই। তদন্তকালে সাহেবেরা বঙ্কিমকে লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে এবং উহা লইতে না চাহিলে খুন করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু কিছুতেই তিনি বিচলিত হন নাই।[১২]

যশোহর দায়রার বিচারে একজনের ফাঁসি এবং ৩৪ জন আসামীর যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়। দুর্গাচরণের কয়েক বৎসর জেল হইয়াছিল; তাহার পুত্র ও পৌত্র এখনও মরেলগঞ্জ ষ্টেটে চাকরী করিতেছেন। রবার্ট মরেল ঘটনার সময়ে বরিশালে ছিলেন, তিনি আসামী শ্রেণীভুক্ত হন নাই। হেরি মরেল বিলাতে পলাইয়াছিলেন, কয়েক বৎসর পরে ফিরিয়া আসিবার সময়ে পথে তাঁহার মৃত্যু হয়। হাইকোর্টের দায়রায় হেলি প্রভৃতি গোরাদিগের বিচার হয়, কিন্তু কেহ হেলিকে সনাক্ত করিতে না পারায় তিনি খালাস পান। লোকে বলে, কয়েক বৎসর পরে আসামের কোন স্থানে বজ্রাঘাতে তাঁহার মৃত্যু হয়।

এই মোকদ্দমার ব্যাপার প্রায় ১৪/১৫ বৎসর চলিয়াছিল; তাহাতে সাহেবদিগের যথেষ্ট অর্থব্যয় ও গ্লানি ভোগ হয়। ইহারই মধ্যে বড় সাহেব রবার্ট মরেল বরিশালে গতাসু হন। মরেলগঞ্জে তাঁহার জন্য একটি সুন্দর স্মৃতিস্তম্ভ আছে। হেন্ত্রীর মৃত্যুর পর একমাত্র উইলিয়ম্ জীবিত ছিলেন। দাঙ্গার পর রবার্ট সাহেব হেলিকে বরখাস্ত করিয়া লাইটফুট (Lightfoot) সাহেবকে ম্যানেজার নিযুক্ত করেন; তিনি বিশেষ বিবেচক ও ন্যায়পর লোক ছিলেন এবং তিনি ষ্টেটের অংশীদার হইয়াছিলেন।

রবার্টের মৃত্যুর পর ১, ২, ৩নং লাট মহারাজ দুর্গাচরণ লাহার নিকট বন্ধক রাখিয়া টাকা কর্জ্জ করা হয়। তিনি বন্ধকী ষ্টেট হস্তগত করিবার সুযোগ খুঁজিতেছিলেন। অবশেষে ১৮৭৮ অব্দে সে সুযোগ আসিল; মরেল ভ্রাতৃগণের মধ্যে একমাত্র জীবিত উইলিয়ম দেনার জন্য বিষয় বিক্রয় করিতে উদ্যত হইলে, পর বৎসর মহারাজ লাহা, ডগলাস কোম্পানির নিকট বন্ধকী ৪নং লাট ও বারুইখালির দেনা শোধ করিয়া দিয়া মরেলদিগের সমস্ত সম্পত্তি নিজে খরিদ করিয়া লন। তাঁহাদের অন্য সম্পত্তি সোণাখালি প্রভৃতি রাজা দিগম্বর মিত্রের নিকট বিক্রীত হয় এবং তুষখালি শেষ মরেল বাকী করের জন্য গবর্ণমেণ্টকে ইস্তাফা করেন। তদবধি মরেলগঞ্জ ষ্টেট লাহারাজগণের স্বত্বাধীন আছে এবং খুলনা জেলার মধ্যে ইহার মত লাভের সম্পত্তি অন্য কোন জমিদারের নাই।

.

পাদটীকা :

১. আনা-সমাজের কুলীন রাধামাধব ঘোষ বিবাহ দোষে কুল হারাইয়া নেহালপুরে বাস করেন, তৎপুত্র রামভদ্র কাশ্যপ-চৌধুরীদিগের নিকট হইতে শ্রীরামপুর প্রভৃতি তালুক বন্দোবস্ত করিয়া লন; রামভদ্রের পুত্র রামনারায়ণ পশর ও মাথাভাঙ্গা নদীর সংযোগ করিবার জন্য যে খাল খনন করেন, তাহার নাম রাখেন ‘নারায়ণ খালি’, শিবনাথ এই রামনারায়ণের বৃদ্ধ প্রপৌত্র। বংশধারা এই : রামনারায়ণ- রাধাকান্ত— বানেশ্বর (নৈহাটি), ভুবনেশ্বর ও রামকিশোর (শ্রীরামপুর); ভুবনেশ্বর-সদানন্দ— শিবনাথ— প্রসন্ন, রাজেন্দ্র, ব্রজেন্দ্র, যতীন্দ্র প্রভৃতি।

২. বিরাটের গয়রা তুল্যা, গৌর ধোপা, ফকির মামুদ, আফাজদ্দি, খানমামুদ জোলা প্রভৃতি আরও অনেক বিখ্যাত লাঠিয়ালগণের নাম শুনা যায়। সভ্যতার হিসাবে ইঁহারা নগণ্য মূর্খ লোক, কিন্তু আত্মরক্ষা ও স্বজাতিসেবার বীরত্ব হিসাবে ইঁহাদের নাম ইতিহাসের পৃষ্ঠে স্থান পাওয়ার যোগ্য।

৩. দীননাথ সিংহ পরে অত্যাচারীর চাকরী ত্যাগ করিয়া চলিয়া যান, এবং রাজসাহীতে বড় কুঠির দেওয়ান ও প্রসিদ্ধ মোক্তার রূপে কার্য্য করিয়া যথেষ্ট অর্থোপার্জ্জন করেন। অনুদানে এবং দীন দুঃখী বা আশ্রিতের সাহায্যকল্পে কেমন করিয়া অজস্র অর্থের সদ্ব্যবহার করিতে হয়, তাহা ইঁহার মত অতি কম লোকেই জানিয়াছেন। তাঁহার দীননাথ নাম সার্থক হইয়াছিল এবং এখনও তিনি এতদঞ্চলে প্রাতঃস্মরণীয় হইয়া রহিয়াছেন। একদা তিনি রাজসাহীতে এক মাতালকে তিরস্কার করিয়া আশ্রয় দিতে না চাহিলে, সে উচিত কথা বলিয়া ফেলিয়াছিল : ‘তুমি অন্যের বেলায় দীননাথ, আমার বেলায় সিঙ্গি’ (সিংহ)। খুলনার অপর পারে বেলফুলিয়া-আইচগাতি গ্রামে তাঁহার নিবাস, তদ্বংশীয়েরা এখনও সম্মানিত তালুকদার। তাঁহাদের বাটীতে অদ্যাপি শ্রীবিগ্রহ ও শিবলিঙ্গের নিত্যসেবা চলিতেছে। দীননাথের মধ্যম পুত্র, যোগেন্দ্রকুমার সিংহ এম, এ, মহোদয় বিহার গবর্ণমেন্টের অধীন ম্যাজিষ্ট্রেটী কাৰ্য্য হইতে সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করিয়াছেন। তিনি চিরজীবন বিদ্যাদেবীর একনিষ্ঠ সাধক। স্বধর্ম্মে তাঁহার সুদৃঢ় আস্থা এবং সমগ্র হিন্দুশাস্ত্রে তাঁহার প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য দেখিলে বিস্মিত হইতে হয়।

৪. Pargiter, Revenue History of Sunderbans, Chap. VI; Ascoli, Sunderbans (1870-1920). p. 3.

৫. Sir J. P. Grant’s Minute on the Indigo Commission, para 59; Buckland, Vol. I. p. 260.

৬. Hunter, Jessore pp. 232-3.

৭. এই বারুইখালির অন্য নাম ফকিরের-তাকিয়া। কারণ সাহেবদিগের আগমনের বহু পূৰ্ব্বে কালাচাঁদ নামক এক বিখ্যাত ফকির, তাঁহার শিষ্য কচুয়াথানার মোঙ্গল জমাদারকে সঙ্গে করিয়া এখানে আসিয়া জঙ্গলের মধ্যে আস্তানা করেন। মোঙ্গল সে আস্তানার কাছে পরে সপরিবারে বাস করেন। এবং তাঁহার জামাতা রবিউল্যা কাজি ফকিরের চেলা হন। ফকিরের আদেশে প্রতিবৎসর ২৫শে অগ্রহায়ণ তারিখে ঐ আস্তানার পার্শ্বে মেলা বসিত, তাহাতে ৭/৮ হাজার লোক সমাগত হইত। এখনও বছর বছর মেলা বসে, লোকসংখ্যা কম হয় না। এখন রবিউল্যার পৌত্রগণ আস্তানার উপস্বত্বভোগী। আবাদ সম্বন্ধে ফকিরর একটা উক্তি ছিল : ‘আবাদ করিবে টুপিওয়ালা, খাবে টিকিওয়ালা।’ আবাদ সাহেবের হাত হইতে হিন্দুর হাতে আসিয়াছে বটে, কিন্তু এখনও ব্রাহ্মণস্ব হয় নাই।

৮. শতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ‘বঙ্কিম-জীবনী’, ১১৯ পৃ।

৯. ঐ সময় ‘Friend of India’ কাগজে বাহির হয়— ‘Such affrays have been only too common.’

১০. ‘While in charge of Khulna subdivision he (Bankimchandra) helped very largely in suppress- ing river dacoities and establishing peace and order in the eastern canals’–Buckland, Bengal. Vol. II, p. 1079.

১১. এই সময়ে আমার পিতৃদেব প্যারীমোহন মিত্রের বয়স ১৯/২০ বৎসর মাত্র। তিনি খুলনায় বঙ্কিমচন্দ্রের অধীন কর্ম্মচারী ছিলেন এবং মফঃস্বল-ভ্রমণে এবার তাঁহার সহচর ছিলেন। তিনিও বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে বারুইখালির শোচনীয় দশা স্বচক্ষে দর্শন করেন। গরুবাছুর ঘরবাড়ী ফেলিয়া গ্রাম হইতে সব লোক পলাইয়া গিয়াছিল, কত গৃহ পুড়াইয়া দেওয়া হইয়াছিল, কত লোক খুন হইয়াছিল, তাহা ঠিক করা গেল না। তদন্তকালে বঙ্কিমচন্দ্রের গুরুগম্ভীর মূর্ত্তির কথা পিতৃদেবের মুখে শুনিয়াছি। আমি নিজে মরেলগঞ্জে গিয়া স্থানীয় অনুসন্ধানেও অনেক বাৰ্ত্তা জানিয়াছি।

১২. ‘বঙ্কিম-জীবনী’, ১২৪-৭ পৃ।

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন