৩৫. যশোহর-রাজবংশ

সতীশচন্দ্র মিত্র

পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ – যশোহর-রাজবংশ

পূর্ব্বে আমরা একাদশ পরিচ্ছেদে (১১শ পরিচ্ছেদ) প্রতাপাদিত্য পর্য্যন্ত যশোহর রাজবংশের আনুপূর্ব্বিক পরিচয় দিয়াছি। প্রতাপের পতনের পর এই বংশের কিরূপ পরিণতি হইয়াছিল, তাহাই এখানে দেখাইব। পূৰ্ব্বলিখিত সেই ‘বংশকথা’ দৃষ্টিপথে রাখিয়া এই পরিচ্ছেদ পাঠ করিতে হইবে। প্রতাপাদিত্যের ছয়টি পুত্র; তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ উদয়াদিত্য সম্মুখ-যুদ্ধে পতিত হন, তাহা আমরা জানি। দ্বিতীয় পুত্র অনন্ত রায় সম্ভবতঃ পিতার জীবদ্দশায় রোগশয্যায় প্রাণত্যাগ করেন; তিনি চিররুগণ বলিয়া যুদ্ধাদির কার্যে লিপ্ত থাকিতেন না। মৃত্যুকালে তাঁহার একটি শিশুপুত্র মাতামহ গোপালদাস বসুর বাটীতে বসুরহাটে ছিল; এই পুত্রের নাম বিজয়াদিত্য। প্রতাপের পতনের পর বসু মহাশয় যশোহর অঞ্চল ত্যাগ করিয়া ঢাকায় যান; তথায় বিজয়াদিত্য তাঁহারই আশ্রয়ে বয়ঃপ্রাপ্ত হন। ইদিলপুরের কারিকা হইতে জানিতে পারি, এই বিজয়াদিত্যের সহিত মৌলিক রাহা বংশীয় মদন রায়ের কন্যার বিবাহ হয়। রুদ্র রাহা হইতে ধারা এইরূপ : রুদ্র রায় —দুর্গাবর— গোবিন্দ—পরমানন্দ— মদন রায়। ‘দানং সৎ বিজয়াদিত্য প্রতাপাদিত্য পৌত্র।’[১] এই কন্যার বা অন্য স্ত্রীর গর্ভে কোন সন্তানাদি হয় কিনা জানা যায় নাই। প্রতাপের তৃতীয় পুত্র সংগ্রামাদিত্য সংগ্রাম ভালবাসিতেন এবং রাজনৈতিক দৌত্যকার্য্যে সৰ্ব্বদা লিপ্ত থাকিতেন। সম্ভবতঃ প্রতাপ ঢাকায় যাইবার পূর্ব্বেই যুদ্ধকালে সংগ্রামের মৃত্যু ঘটে। তাঁহার কোন সন্তানাদি হয় নাই। প্রতাপাদিত্যের এই তিন পুত্র নাগকন্যা মহারাণী শরৎকুমারীর গর্ভজাত।

ঘোষকন্যার গর্ভে প্রতাপের আরও তিন পুত্র হয়; রামভদ্র, রাজীব ও জগদ্বল্লভ। শেষোক্ত দুইজন বালক মাত্র, তাঁহারা মাতৃসঙ্গে জলমগ্ন হন। রামভদ্রের অন্য নাম প্রতাপভীম; তিনি বালক হইলেও সাহসী ও বলশালী ছিলেন। মহারাণীর পলায়নের পর মোগলেরা দুর্গাক্রমণ সময় তিনি বলদর্প দেখাইতে গিয়া বন্দী হন;[২] প্রবাদ আছে তাঁহাকে পরে বলপূর্ব্বক মুসলমান ধর্ম্মে দীক্ষিত করা হয় এবং ‘তাঁহার বংশধরগণ এক্ষণে পাটনা নগরের এক সম্ভ্রান্ত ও প্রসিদ্ধ মুসলমানবংশের অন্তর্গত।’[৩] প্রতাপাদিত্যের ভ্রাতা ভূপতি রায়ের পুত্র মুকুটমণি যুদ্ধকালে পলায়ন করিয়া বৰ্ত্তমান বাগেরহাটের অন্তর্গত উৎকূল গ্রামে আশ্রয় লন, তথায় তাঁহার বংশ আছে। এই বংশীয় রায় চৌধুরীগণ এক্ষণে সাত ঘর তথায় বাস করিতেছেন; তবে তাঁহারা এক্ষণে এমন হীন দশায় পতিত যে শিক্ষাদীক্ষা ও প্রাচীন কীর্তিকাহিনীর প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন হইয়া, কেবল মাত্র উদরানের চিন্তায় দিন যাপন করিতেছেন। পার্শ্ববর্তী রঘুনাথপুরে এই বংশের প্রতিষ্ঠিত কালীবাড়ী এবং শিলাময় কৃষ্ণচন্দ্র ও পিতলের রাধিকা বিগ্রহ আছেন। কালিকা দেবীর মূর্ত্তি নাই, ঘটে পূজা হয়। আঁধারমাণিকের ভট্টাচার্য্যগণ এখনও এই বংশের গুরু। মুকুটমণির পৌত্র বৈদ্যনাথ হইতে এই বংশের একটি শাখা এখানে প্রদর্শিত হইতেছে :

বৈদ্যনাথ—হরিদেব—ভৈরবচন্দ্র—জগন্নাথ—রাজকুমার, দণ্ডী ও নন্দ; নন্দ এবং তৎপুত্র নলিনী ও শশী জীবিত আছেন। রাজকুমারের পুত্র শ্রীশ ও ভূপেশ এবং দণ্ডীর পুত্র সুরেন্দ্র এখনও বংশ প্রবাহ অব্যাহত রাখিয়াছেন।

মানসিংহের সহিত প্রতাপের সন্ধি হইবার সময়ে, রাঘব রায় তাঁহার পৈতৃক সম্পত্তি অর্থাৎ যশোর-রাজ্যের ছয় আনা অংশ দাবি করেন; উহা না দিবার কারণ ছিল না। তবে লক্ষ্মীকান্তকে কালীঘাটের সন্নিকটবর্ত্তী পরগণাগুলি দেওয়ার প্রয়োজন হইল; কারণ লক্ষ্মীকান্ত বাল্যকালে কালীঘাটেই প্রতিপালিত এবং বয়স্ক হইয়া তথায় বসতি করেন। লক্ষ্মীকান্তকে সন্তুষ্ট না করিলে মানসিংহের যে গুরুদক্ষিণা দেওয়া হয় না। উঁহাকে কয়েকটি পরগণা দিতে গেলে রাঘবের রাজ্যাংশ পশ্চিম দিকে সংকীর্ণ হইয়া পড়িল। সুতরাং তাঁহাকে প্রতাপের রাজধানীর নিকটবর্ত্তী কয়েকটি পরগণা দিতে হইল। পূর্ব্বে কালিন্দীর খাল প্রতাপের নিজ অংশের পশ্চিম সীমা ছিল, এক্ষণে যমুনা নদী পশ্চিম সীমা হইল। যমুনার পশ্চিম তীরস্থ ভূভাগের নাম হইল ধুলিয়াপুর পরগণা; পরে কালিন্দী-স্রোত প্রবল হইয়া ইহাকে দ্বিধা বিভক্ত করিয়াছিল; তখন যমুনা ও কালিন্দীর মধ্যবর্তী স্থান ধুলিয়াপুর এবং কালিন্দীপারে পারধুলিয়াপুর হইল। উভয় পরগণা রাঘবের হস্তে পড়িল। যমুনার উত্তরে বর্ত্তমান কালীগঞ্জের নিকট যে বাজিতপুর পরগণা (২১শ পরিচ্ছেদ) ছিল, তাহাও রাঘবকে প্রদত্ত হইল। এই বাজিতপুরের উত্তরাংশেও তাঁহার রাজ্য অনেক দূর বিস্তৃত ছিল। কালে সেই অংশের নাম হয় সরফরাজপুর পরগণা। তাহার কথা আমরা পরে বলিব। এই সকল পরগণার অধিকারী হইয়া রাঘব রায় কিছু দিন যশোহরের পুরাতন রাজধানীতে রাজত্ব করেন।

রাজা বসন্ত রায়ের চারিটি বিবাহ ও এগারটি পুত্র। তন্মধ্যে প্রথমা পত্নী ঘোষকন্যার কোন সন্তান ছিল না। বসু দুহিতার ছয় পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শ্রীরাম অকালে মৃত্যুমুখে পড়েন; তখন সে পক্ষে জ্যেষ্ঠ পুত্র গোবিন্দ; তিনি প্রতাপ হস্তে নিহত হন। অবশিষ্ট চারি জনের মধ্যে আমরা কেবল সর্ব্বকনিষ্ঠ রমাকান্তের বিশেষ সন্ধান পাই। যুদ্ধবিগ্রহের সময় তিনি চাঁদ রায় প্রভৃতির সহিত বাগেরহাট অঞ্চলে সিংহগাতি গ্রামে মাতুলালয়ে ছিলেন। তথায় ব্রাহ্মণরাঙ্গদিয়ার পূর্ব্ব সীমায় খলসী গ্রামের সন্নিকটে ‘রমাকান্ত রায়ের পুকুর’ নামক একটি পদ্মসমাকীর্ণ জলাশয় দেখিতে পাওয়া যায়। কৃষ্ণরায় দত্তের কন্যাদ্বয়ের মধ্যে একজনের দুই পুত্র, চণ্ডীদাস ও নারায়ণ। চণ্ডীদাস সম্ভবতঃ বসন্ত রায়ের মৃত্যুর পূর্ব্বে পরলোকগত হন। নারায়ণের বংশ ছিল, কিন্তু তাঁহারা নগণ্য। অপর দত্ত কন্যার গর্ভজাত তিন পুত্র, তন্মধ্যে রাঘব বা কচু রায় জ্যেষ্ঠ, চন্দ্রশেখর বা চাঁদ রায় মধ্যম এবং রূপ রায় কনিষ্ঠ। রূপ রায়ের বিশেষ পরিচয় জানি না। তাহা হইলে বসন্ত রায়ের মাত্র তিন পুত্রের সহিত পরবর্ত্তী ইতিহাসের সম্পর্ক আছে; রাঘব রায়, চাঁদ রায় ও রমাকান্ত রায়।

এই তিন জনের মধ্যে রাঘব ও চাঁদ রায় সহোদর ভ্রাতা এবং তাঁহাদের মধ্যে সৌহৃদ্য ছিল। রমাকান্ত বৈমাত্রেয় কনিষ্ঠ ভ্রাতা, তাঁহার সহিত অপর দুইজনের কোন সৌহৃদ্য বা সহানুভূতি ছিল না। সুতরাং রাঘব রায় রাজা হইলে চাঁদ রায় ভ্রাতার সহিত মিশিলেন এবং পৈত্রিক রাজ্যের অংশীদার হইতে পারিলেন; কিন্তু কয়েক বছর পরে যখন চাঁদ রায়ের রাজত্বকালে রমাকান্ত যশোহরে আসিলেন, তখন চাঁদ রায় তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন না। এই জন্য তিনি ও তাঁহার বংশধরগণ চিরদিন রাজোপাধিতে বঞ্চিত রহিলেন। রাঘব ও চাঁদ রায় ছত্রধারী রাজা বলিয়া পরিচিত; চাঁদ রায়ের বংশীয়দিগের কোন রাজ্যাংশ থাকুক বা না থাকুক, তাঁহারা এখনও সকলেই এ দেশীয় লোকের নিকট রাজা বলিয়াই সম্মানিত হন। রমাকান্তের ধারায় সে সম্মান নাই।

রাঘব রায় রাজা হইয়া আর শান্তি পান নাই। তিনি রাজ্য পাইলেন বটে, কিন্তু লোকে তাঁহাকে শ্রদ্ধা করিত না। তাঁহার ‘যশোহরজিৎ’ উপাধি মাত্র সার হইল। সকলই স্পষ্টতঃ বা পরোক্ষে তাঁহাকে দেশদ্রোহী বলিয়া বিদ্রূপ করিত এবং ঘৃণার চক্ষে দেখিত। তিনিও দেখিলেন, যশোহরের যে বলবীর্য্য বা সমৃদ্ধিশোভা ছিল, তাহা যেন নিষ্প্রভ হইয়া গিয়াছে; বাস্তবিক কয়েক বৎসর হইতে বারংবার মোগল শত্রুর আক্রমণ ভয়ে যশোহর সমাজের প্রধান প্রধান সামাজিকগণ রাজধানীর উপকণ্ঠ পরত্যাগ করিয়া, উত্তর দিকে ইছামতীর কূলে অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী স্থানে আশ্রয় লইতেছিলেন; নিম্নজাতীয় লোকেরা আসিয়া তাঁহাদের আবাসস্থানে বসতি করিতেছিলেন। শুধু তাহাই নহে, মানসিংহের আক্রমণের সময় হইতে যশোহরে কেমন এক প্রাকৃতিক বিপর্য্যয় আরব্ধ হইয়াছিল; উহার ফলে দেশের শোভা ও স্বাস্থ্য ক্রমে বিলীন হইয়া যাইতেছিল। প্রতাপাদিত্যও মানসিংহের বিরাট বাহিনীর নিকট পরাজিত ও নিগৃহীত হইয়া অকালে বাৰ্দ্ধক্য- দশায় সমুপস্থিত হইয়াছিলেন। এ নূতন কথা নহে, গত ইয়োরোপীয় তিন বৎসরব্যাপী মহাসমরের পর জন্মান সম্রাট কাইজার কিরূপে হঠাৎ পক্ককেশ বৃদ্ধ হইয়া দাঁড়াইয়াছেন, তাহা অনেকই জানেন। বিশেষতঃ প্রতাপ প্রধান সেনানীগণের পতনে এবং শঙ্করের মত বন্ধুর বিচ্ছেদে একান্ত কাতর ও উৎসাহহীন হইয়া পড়িতেছিলেন; তাহার ফলে, উৎসাহ-উদ্দীপনা, আমোদ- প্রমোদ সবই দেশ হইতে অন্তর্ধান করিতেছিল। আর সকল লোকে দেশের এই পরিবর্ত্তন ও দুরবস্থার জন্য প্রকাশ্যে বা অন্তরালে কচু রায়কেই দায়ী সাব্যস্ত করিয়া অসংযত ভাষা প্রয়োগ করিত। সে সকল কথা শুনিতে বা বুঝিতে তাঁহার বাকী রহিল না। তিনি নিজেও দেশের দশা দেখিয়া স্বকৃত কার্য্যের জন্য অনুতাপানলে দগ্ধ হইতেছিলেন। তাঁহার কোন সন্তানাদি ছিল না বা জীবনে কোনো আশা ভরসা আসিল না। অবশেষে তিনি তিন চারি বৎসরের মধ্যে রাজ্যের প্রতি একেবারে বিরক্ত হইয়া পড়িলেন, এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতা চাঁদ রায়কে ডাকিয়া আনিয়া তাঁহার হস্তে রাজ্যভার সমর্পণ করিয়া, নিজে গ্রামে গুরুগৃহে আশ্রয় লইলেন। তথায় তিনি শেষ জীবন কাটাইবার জন্য নদীকূলে যে গড়বেষ্টিত আবাসবাটী নির্মাণ করিয়াছিলেন, তাহা ভাঙ্গিয়া লইয়া এক সময়ে নিকটে এক নীলকুঠি প্রস্তুত করিলেও,[৪] এখনও তাহার প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড উচ্চ ভিট্টা এবং বিক্ষিপ্ত ইষ্টকরাশি পড়িয়া রহিয়াছে। উহার দক্ষিণ দিকে একটি শিবমন্দিরের ভগ্নাবশেষ ছিল এবং সে মন্দিরের ইটগুলি কারুকার্যখচিত ছিল বলিয়া পরিচয় পাওয়া যায়।[৫] নদীর কূলে তিন দিকে গড়বেষ্টিত আর একটি স্থানে একটি গোল পুকুরের পশ্চিম পাড়ে কালীমন্দিরের ভগ্ন গৃহ আছে। এই স্থানটিকে মঠ-বাড়ী বলে। ছোট গোল পুকুরটির সম্পূর্ণ তলদেশে শালকাঠ বিছান ছিল।[৬]

ইসলাম খাঁর সময়ের আক্রমণের পূর্ব্বেই, সম্ভবতঃ ১৬০৮ খৃষ্টাব্দে, চাঁদ রায় রাজা হন। প্রতাপের ঢাকায় গমন ও তাঁহার পরিবারবর্গের জলমগ্ন হইয়া মরিবার পর, সম্ভবতঃ ইনায়েৎ খাঁর অনুমতিক্রমে, চাঁদ রায় আসিয়া কিছুদিন ধুমঘাটে বাস করেন। এই সময়ে তিনি ১৬১০ খৃষ্টাব্দের পূর্ব্বে মাতা যশোরেশ্বরী ও গোপালপুরের গোবিন্দদেব বিগ্রহের সেবা-ব্যবস্থার জন্য অধিকারীদিগকে পৃথক্ পৃথক্ দেবোত্তর সম্পত্তির সনন্দ দেন। গোবিন্দদেব সংক্রান্ত সনন্দের নকল আমরা পূর্ব্বে দিয়াছি (২৪শ পরিচ্ছেদ); অপর সনন্দ এখন আর পাইবার উপায় নাই, কারণ পূৰ্ব্বতন অধিকারিগণ ঈশ্বরীপুর অঞ্চল জঙ্গলাকীর্ণ হইলে একেবারে দেশত্যাগ করিয়া চলিয়া যান। উহার বহু বৎসর পরে বর্ত্তমান অধিকারীরা এখানে আসিয়া বাস করেন। তাঁহাদের বিবরণ পরে দিব। গোবিন্দদেব সম্পর্কিত সনন্দ হইতে জানা যায়, চাঁদ রায় মাত্র নিজ অধিকারভুক্ত ধুলিয়াপুর চাকলার মধ্যে ২৮৬/বিঘা জমি দেন। ইহা হইতেই বুঝা যায়, মোগলদিগের সহিত বন্দোবস্তসূত্রে চাঁদ রায় উক্ত পরগণার অধিকার লাভ করেন। চাঁদ রায় ধুমঘাটে বাস করিবার সময়, আনুমানিক ১৬২০ খৃষ্টাব্দের প্রাক্কালে আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য ধুমঘাট জলপ্লাবিত হয় এবং ঐ সময় দুর্গটি বাসের অযোগ্য হইয়া পড়ায় চাঁদ রায় তথা হইতে চলিয়া যান। অবনমিত এবং জলপ্লাবিত দুর্গচত্বর তখন হইতে ‘চাঁদ রায়ের দীঘ’ বা দীঘি নামে আখ্যাত হয়। চাঁদ রায় এখান হইতে আঁধারমাণিকে কচু রায়ের বাটীতে চলিয়া যান। কচু রায় অধিক দিন জীবিত ছিলেন না।

কচু রায়ের রাজত্বকালে চাঁদ রায় শারীরিক অসুস্থতাবশতঃ কিছুদিন হালিসহরের সন্নিকটে যমুনাবক্ষে নৌকায় বাস করিতেছিলেন; তখন তিনি কৃষ্ণচন্দ্র দাস ওহদেদার নামক এক মৌলিক কায়স্থ সন্তানের পরমা সুন্দরী কন্যাকে বিবাহ করেন। এইরূপ অপসম্বন্ধের কথা শুনিয়া কচু রায় অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন। পরে রূপরাম বসুর বহু চেষ্টায় কচু রায়ের ক্রোধমোচন এবং বহু অর্থ ব্যয়ে ওহদেদার বংশের সমাজ সমন্বয় হয়। এই সমন্বয় ব্যাপারটা এই বংশের ইতিহাসের একটি প্রধান ঘটনা। এই ওহদেদার কন্যার গর্ভজাত সন্তানেরাই বর্ত্তমান যশোহর রাজবংশীয়। গুজব রটিয়াছিল যে চাঁদ রায় ভ্রাতার অনুমতি না লইয়া ধীবরকুলে বিবাহ করিয়াছেন। ওহদেদারগণ ধীবর নহেন, তাঁহারা নিম্নশ্রেণীর কায়স্থ।[৭] মুসলমান রাজত্বে রাজস্ব বিভাগে চাকরী করিয়া উঁহাদের ‘ওহদেদার’ ও মজুমদার উপাধি এবং বেশ পয়সাকড়ি হইয়াছিল; তাঁহারা মৎস্যজীবীদিগকে টাকা দাদন দিতেন, এই জন্যই ঐরূপ নিন্দাবাদের সৃষ্টি। সমন্বয়ের পর কৃষ্ণদাস ওহদেদার, চাঁদ রায়ের রাজত্বকালে দাসকাটির পার্শ্ববর্তী চাউলিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হন। তথা হইতে তদ্বংশীয়েরা ক্রমে সৈদপুর, দেভোগ, গোপাখালি, বাঁশদহ, টাকী, শ্রীপুর প্রভৃতি স্থানে ছড়াইয়া পড়িয়াছেন।

চাঁদ রায় অন্ততঃ ত্রিশ বৎসর রাজত্ব করেন।[৮] তিনি দীর্ঘকাল ধরিয়া মোগল সরকারে রীতিমত রাজকর পাঠাইয়া দীর্ঘকাল জীবিত থাকিলেও তাঁহার সময়ের কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা জানা যায় না। এইমাত্র জানা যায়, যখন ধুমঘাট ও ঈশ্বরীপুর বাসের অযোগ্য ও বনাকীৰ্ণ হইয়া উঠে, তখন মোগল ফৌজদার সে স্থান ত্যাগ করেন এবং কিছুকাল জাহাজঘাটার অট্টালিকায় বাস করেন। চাঁদ রায়ের মৃত্যুর পর তৎপুত্র রাজারাম অল্প বয়সে রাজা হইয়া পঞ্চাশ বৎসরেরও অধিককাল রাজত্ব করেন। কথিত আছে, এই সময়ে নদীয়া রাজবংশের সহিত তাঁহার সম্প্রীতি স্থাপিত হয় এবং তিনি নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য কৃষ্ণনগর গিয়া যৌতুক দান করিয়া আসেন। রাজারাম আঁধারমাণিকের নিকটবর্ত্তী রুদ্রপুরে বাস করিতেন। ইহার দুই পুত্র, নীলকণ্ঠ ও শ্যামসুন্দর। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে রাজারাম পরলোকগত হইলে উভয় ভ্রাতায় রাজ্য লইয়া কলহ আরম্ভ করেন। তখন আত্মীয় স্বজন এবং কর্মচারিগণও দুইদিকে পক্ষভুক্ত হন। অবশেষে এই মীমাংসা হয় যে, নীলকণ্ঠ জ্যেষ্ঠ বলিয়া জমিদারীর নয় আনা অংশ এবং কনিষ্ঠ শ্যামসুন্দর সাত আনা অংশ পাইবেন। রাজারামের সময়ে ধুলিয়াপুর, পার-ধুলিয়াপুর, বাজিতপুর ও সরফরাজপুর এই চারি পরগণার জমিদারী ছিল। বিরোধ মিটিবার পর শ্যামসুন্দর প্রধানতঃ দক্ষিণাংশের জমিদারী পাইয়া, সেই দিকে কোন স্থানে গিয়া বাস করিবার জন্য যাত্রা করেন। আসিবার কালে পথে খাঞ্জের উত্তরে শোলপুর গ্রামে তিনি এক বৎসরকাল তাঁবুতে বাস করেন এবং পরে ধুলিয়াপুরের অন্তর্গত রামজীবনপুরে আসিয়া বসতি নির্দ্দেশ করেন। এই গ্রাম নুরনগরের সন্নিকট অবস্থিত। তখন মোগল ফৌজদার নূরউল্যা খাঁ ঐ স্থানে আসিয়া নিজ নামে গ্রাম প্রতিষ্ঠা করিয়া কিছুকাল বাস করেন। সে কথা পরবর্ত্তী পরিচ্ছেদে বলিব।

কিছুদিন পরে যখন মুর্শিদকুলি খাঁ বঙ্গের নবাব হইয়া সমগ্র বঙ্গদেশকে তেরটি চাকলায়[১০] বিভক্ত করিয়া সেইগুলি পঁচিশটি জমিদারী ও তের জায়গীরে বন্দোবস্ত করেন, তখন শ্যামসুন্দর জমিদারের তালিকাভুক্ত না হইলেও, তাঁহার ক্ষুদ্র জমিদারী রীতিমত বন্দোবস্ত করিয়া লইয়াছিলেন। নূতন প্রথানুসারে তিনি মনসবদার নিযুক্ত হইয়া কিছু জায়গীর পান। সে সময়ের মনসবদারগণ দেশের সামন্ত জমিদারগণের মধ্য হইতে নির্ব্বাচিত হইতেন; তাঁহাদিগকে পাঁচ শত সেনা রাখিতে হইলেও নিজেরা হাজারী নামে খ্যাত ছিলেন।[১১] শ্যামসুন্দর দক্ষিণবঙ্গের মনসবদার হইলেন, তাঁহার পুত্র নন্দকিশোরও ঐ পদ পাইয়াছিলেন। ফৌজদার নূরউল্যা খাঁর সময়ে রামভদ্র রায় তাঁহার দেওয়ান ছিলেন। ইনি এডুগুহবংশীয় সপ্তদশ পুরুষ, বাক্লার অন্তর্গত কাঁচাবালিয়ায় তাঁহার আদিম বাস। তথা হইতে আসিয়া তিনি প্রথমতঃ নুরনগরের পার্শ্ববর্ত্তী রুথুনপুরে (বর্ত্তমান নাম রতনপুর) গড়কাটা বাড়ীতে বাস করেন, পরে তথা হইতে বিথীরী গ্রামে উঠিয়া যান। উভয় স্থানের বাটী এখনও ‘রায়ের গড়’ নামে পরিচিত।[১২] রামভদ্র রায় সুদক্ষ কর্মচারী, অকৰ্ম্মণ্য ফৌজদার ত তাঁহার হাতের তলে ছিলেনই, মুর্শিদাবাদ নবাব-সরকারেও তাঁহার বিশেষ প্রতিপত্তি ছিল। মুর্শিদকুলি খাঁর সহিত রাজ্য বন্দোবস্ত করা বিষয়ে রামভদ্র, নীলকণ্ঠ ও শ্যামসুন্দরের পক্ষে বিশেষ সহায়তা করেন বলিয়া, রাজারা নিজ অধিকৃত পরগণাগুলি হইতে কতকগুলি মৌজা লইয়া আমীরাবাদ পরগণার সৃষ্টি করেন, এবং উহা রামভদ্রকে বৃত্তি দান করেন। রামভদ্রের বংশধরেরা এই সম্পত্তি এখনও ভোগ করিতেছেন।

কচু রায়ের সময়ে তাঁহার বৈমাত্রের ভ্রাতা রমাকান্ত চাকশিরির সন্নিকটে খানপুরে বাস করিতেন। বসন্ত রায়ের আমল হইতে এখানে একটি রাজবাটী ছিল। এখনও দক্ষিণ খানপুরে একটি স্থানকে ‘হাতীর বেড়’ বলে, এবং উহার পশ্চিমপাড়ায় এক প্রকাণ্ড পুরাতন দীঘির নাম ‘রাজবাড়ীর দীঘি’। দীঘির পূর্ব্বপার্শ্বে অট্টালিকার নিদর্শন না থাকিলেও যেখানে সেখানে ইষ্টকাদি পাওয়া যায়, এবং উহা বসন্ত রায়ের বংশীয় ছত্রধারী রাজাদের আদিম নিবাস বলিয়া কথিত হয়। প্রতাপাদিত্যের ভ্রাতুষ্পুত্র মুকুটমণিও পলায়ন করিয়া এইখানে আসিয়াছিলেন, পরে মগের উৎপাতে উৎকূল গ্রামে উঠিয়া যান। এই খানপুরের নিকটে কত সময়ে কত যুদ্ধ হইয়াছিল, তাহা বলা যায় না। এখনও ঘোষের হাটের উত্তরে ‘রণভূম’ গ্রাম, পার-মধুদিয়ার পশ্চিমে ‘রণজিৎপুর’ স্থান এবং পীলজঙ্গের সন্নিকটে ‘রণের মাঠ’ নামক প্রান্তর প্রাচীন রণ-কাহিনীই স্মরণ করাইয়া দেয়। রমাকান্ত এই খানপুরের বাটী হইতে সপরিবারে যশোহর যান, কিন্তু চাঁদ রায় ভ্রাতাকে রাজ্যাংশ দিলেন না; অধিকন্তু যশোহরের সন্নিকটে, এমন কি, আঁধারমাণিকে গুরুবংশের আশ্রয়েও বাস করিতে দেন নাই। তখন বৰ্ত্তমান সাতক্ষীরার অন্তর্গত ফতুল্যাপুরের জমিদার বাঁশদহনিবাসী নন্দকিশোর রায় চৌধুরী তাঁহাকে আশ্রয় দেন। নন্দকিশোর বিন্ গুহবংশীয় ১৮শ পুরুষ এবং বাক্সা সমাজের অধিনায়ক ছিলেন। এই সময়ে পুঁড়া-খোঁড়গাছি, বাঁশদহ, শিবহাটি প্রভৃতি গ্রামগুলি ইছামতীর একটি শাখার উপর অবস্থিত সুন্দর স্থান ছিল।

নূরউল্যা খাঁর নুরনগর ত্যাগ করিবার পর নীলকণ্ঠের পুত্র মুকুন্দদেব সেই অঞ্চলে কোথাও গিয়া বাস করিবার জন্য উদ্যোগী হন। তখন গুঁড়া, খোঁড়গাছি প্রভৃতি স্থানের বঙ্গজ কায়স্থগণ বিশেষ অনুরোধ করিয়া তাঁহাকে লইয়া খোঁড়গাছিতে বসতি করান। তদবধি নয় আনা অংশের রাজধানী খোঁড়াগাছিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেওয়ান রামভদ্র রায়ের পুত্র রুদ্রদেব নানাস্থানে বাস পরিবর্ত্তন করিয়া অবশেষে বৃদ্ধ বয়সে গুঁড়ায় আসিয়া বাস করেন। মুকুন্দদেব ও রমাকান্তের বাস- গৌরবে উৎসারিত হইয়া রুদ্রদেব পুঁড়া-খোঁড়গাছি অঞ্চলে বঙ্গজ কায়স্থের এক প্রধান সমাজ স্থাপন করেন, তাহার সমাজপতি বা গোষ্ঠিপতি হইলেন মুকুন্দদেব এবং নায়েব গোষ্ঠি পতি হইলেন রুদ্রদেব রায়। ইহাতে আর এক গোলমাল বাধিল। এতদিন টাকীর বড় চৌধুরী বংশীয় জমিদারগণই নায়েব গোষ্ঠিপতি ছিলেন; রুদ্রদেবের অভ্যুদয়ে তাঁহারা প্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া সাত আনী তরফের শ্যামসুন্দরের বংশধরগণকে গোষ্ঠিপতি নির্ব্বাচিত করিয়া নিজেরা নায়েব গোষ্ঠিপতি হইলেন। এইরূপে যশোর-রাজ্যের মত যশোহর-সমাজও দ্বিধা বিভক্ত হইয়া পড়িল। উত্তরকালে বহরমপুরের সেনবংশীয় দেওয়ান কৃষ্ণকান্ত টাকীর বড় চৌধুরীবংশীয় স্বনামখ্যাত রামকান্ত মুন্সীর সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে গিয়া বহু অর্থ ব্যয়ে নায়েব গোষ্ঠিপতি হন, তখন রামকান্তী ও কৃষ্ণকান্তী দুই দলের সৃষ্টি হওয়ায় যশোহর সমাজ তিন ভাগে বিভক্ত হইয়া যায়। বিশ্ববিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক ডাক্তার রামদাস সেন এই কৃষ্ণকান্তের ভ্রাতুষ্পৌত্র। গুঁড়ার রামভদ্র রায়ের বংশধর নিখিলনাথ রায় ডাক্তার রামদাসের জামাতা। নিখিলনাথ প্রতাপাদিত্যের ইতিহাস সঙ্কলনে বহু চেষ্টা ও গবেষণা করিয়া সর্ব্বসাধারণের ধন্যবাদার্হ হইয়াছেন।

রাজা নীলকণ্ঠের চারি পুত্র, তন্মধ্যে চতুর্থ পুত্র ব্রজমোহন নয় আনী বিষয়ের পনর পাই ভাগী ছিলেন। তিনি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সহিত খোঁড়াগাছি না গিয়া নুরনগরের অন্তর্গত মাণিকপুরে বাস করেন। তদ্বংশীয়গণ এখনও সেখানে বাস করিতেছেন। রাজা মুকুন্দদেবের ধারায় তাঁহার প্রপৌত্র নৃসিংহদেব হইতে রাজেন্দ্রনাথ পর্যন্ত তিন পুরুষ দত্তক পুত্র ছিলেন। অতি অল্প দিন হইল প্রায় সপ্ততিবর্ষ বয়সে রাজা রাজেন্দ্রনাথ দেহত্যাগ করিয়াছেন। তিনি অতি সজ্জন, ভক্তিমান ও বিদ্যোৎসাহী পুরুষ ছিলেন। তৎপুত্র রাজা গিরীন্দ্রনাথ এক্ষণে সর্ রেজেষ্টারী চাকরী করিতেছেন। তিনি বংশগৌরব রক্ষার জন্য একান্ত অনুরাগী; তাঁহার রাজোচিত সদাশয়তা ও অমায়িক ব্যবহারে সকলেই মুগ্ধ হন।

সাত আনীর অংশে শ্যামসুন্দর হইতে তাঁহার প্রপৌত্র রামনারায়ণ পর্য্যন্ত সকলে রামজীবনপুরে বাস করিতেছিলেন। রামনারায়ণের সময় পার্শ্ববর্ত্তী কার্টুনিয়া গ্রামে বাটী পরিবর্তনের ব্যবস্থা হয় এবং তাঁহার পুত্রগণই তথায় বাস করেন। মধ্যম পুত্র জয়নারায়ণের পৌত্র রাজা যতীন্দ্রমোহনের কথা বিশেষভাবে পূর্ব্বে বলিয়াছি (২৪শ পরিচ্ছেদ)। যতীন্দ্রমোহনের মধ্যম ভ্রাতা মতীন্দ্র রামনগরে বাস করিতেছেন। ব্রজেন্দ্রনারায়ণের পুত্র রাজা রমেশচন্দ্রের কথা আমরা বেদকাশীর শিলা-লিপি সম্পর্কে পূৰ্ব্বে বলিয়াছি(২৪শ পরিচ্ছেদ)। এখন শুধু নয় আনী বা সাত আনী উভয় তরফের অংশীবর্গের রাজা নামই আছে; সে বিষয় সম্পদ বা প্রবল প্রতিপত্তি কিছুই নাই, ছিন্নভিন্ন শতবিভক্ত সরিকী সম্পত্তির ভাগ যাহা কিছু যাহার ভাগ্যে পড়িয়াছে, তদ্বারা অনেক পরিবারের ব্যয় নির্ব্বাহ হয় না। তবু তাঁহারা রাজা, বঙ্গদেশের শেষ স্বাধীন নৃপতির অশেষ কীর্তিকাহিনীর স্মৃতি লইয়া গৌরবান্বিত। ভাগ্য চিরদিন সমান থাকে না; কিন্তু ভাগ্যবানের বংশধর হওয়াও সৌভাগ্যের বিষয়।

মাতা যশোরেশ্বরীই যশোহর-রাজবংশের ভাগ্যদেবতা। এই পীঠমূৰ্ত্তি যতদিন জাগ্রত থাকিবেন, ততদিন শত ভাগ্য-বিপর্যয়েও এই বংশের বিনাশ নাই। এই পীঠদেবতা কতবার জাগিয়া বিলুপ্ত হইয়াছেন, কিন্তু একেবারে অন্তর্হিত হন নাই। কতবার কত রাজাকে জাগাইবার জন্য ইনি জাগিয়াছেন, আবার সে সব রাজার পতনের সঙ্গে সঙ্গে ভূপ্রোথিত হইয়া লোকচক্ষুর অন্তরালে গিয়াছেন। সুন্দরবনের উত্থান-পতনের সঙ্গে মাতার আবির্ভাব তিরোভাব সম্পন্ন হইয়াছে। সে এক অদ্ভুত ব্যাপার।

যেমন প্রতাপাদিত্যের পতন হইল, অমনি এক আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটিল; পীঠস্থান ধুমঘাটে ক্রমে ক্রমে জলাকীর্ণ ও জঙ্গলাকীর্ণ হইয়া মানুষের বাসের অযোগ্য হইয়া পড়িল। শুধু মোগল ফৌজদার বা রাজবংশধরগণ নহেন, সাধারণ বাসিন্দারাও ঈশ্বরীপুর ছাড়িয়া নানাস্থানে পলাইয়া গেল। প্রতাপাদিত্যের সময়ের সেবাইত অধিকারিগণ আর ঈশ্বরীর পূজা করিতে পারিলেন না; প্রথমতঃ যমুনার পরপারে মামুদপুরে থাকিয়া পূজা করিয়া যাইতেন, শেষে সেখান হইতে গোপালপুর ও পরে পরমানন্দকাটিতে গিয়া বাস করিলেন এবং তথা হইতে নিত্য অশ্বপৃষ্ঠে একবার আসিয়া মায়ের চরণে পুষ্প দিয়া যাইতেন। অবশেষে তাহাও সম্ভবপর রহিল না গ্রাসাচ্ছাদনের অসংস্থান হইল, দেশ ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন। মায়ের নিত্যপূজা কত বৎসরের জন্য একেবারে বন্ধ হইয়া গেল। ঈশ্বরীপুরে ডাকাইতের আড্ডা হইল, মাতা ডাকাইতের পূজা লইতেন। সময়ে সময়ে দুঃসাহসিক ভক্তগণ দূরস্থান হইতে আসিয়া মায়ের পূজা দিয়া যাইতেন। এখনও মায়ের বাড়ীর সন্নিকটে সর্দ্দার উপাধিধারী কয়েকঘর মুসলমান কতকগুলি নিষ্কর জমির অধিকারী হইয়া বাস করিতেছেন। লোকে বলে, উঁহারাই সেই আমলের বাসিন্দা এবং উঁহাদের পূর্ব্বপুরুষগণ দস্যুবৃত্তি দ্বারা জীবন যাপন করিতেন। বেশীদিন আর তাঁহাদের সে ব্যবসায় ভাল লাগিল না। তাঁহারাই নির্জ্জন-প্রবাস ত্যাগ করিবার জন্য অন্য লোক আনিয়া বসাইতে চেষ্টা করিলেন। প্রবাদ এই, এমন সময় বর্তমান অধিকারীদিগের এক পূর্ব্বপুরুষ, জয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় ধান্য সংগ্রহের জন্য দৈবাৎ এ অঞ্চলে আসেন, সদারগণ প্রলুব্ধ করিয়া তাঁহাকে এখানে বসাইলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে এই ঘটনা হয়।

এদিকে দেশেরও অবস্থা একটু ফিরিতে লাগিল। এই সময়ে শ্যামসুন্দরের পুত্র নন্দকিশোর নুরনগরে রাজত্ব করিতেছিলেন। জয়কৃষ্ণও খুব কর্মদক্ষ, বুদ্ধিমান ও কৌশলী লোক; কথিত আছে, তিনি ও তাঁহার পুত্র-পৌত্রেরা ক্রমান্বয়ে নিকটবর্ত্তী স্থানে প্রায় পঞ্চান্ন হাজার বিঘা জমির উপর দখল বিস্তার করিয়া প্রবল প্রতাপে বাস করেন। তাঁহাদের বাটীর ত্রিমহল অট্টালিকা, সিংহদ্বার ও পুষ্করিণী এখনও বর্তমান। জয়কৃষ্ণের প্রপৌত্র বিষ্ণুরাম বা তৎপুত্র বলরামের সময়ে ইংরাজ আমলের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়। এই সময়ে অধিকারী মহাশয়দিগের নিষ্কর তালুকের পরিমাণ অনেক কমিয়া যায়। এ সম্বন্ধে একটি গল্প আছে : উক্ত বন্দোবস্তের আমলে একজন ইংরাজ কর্মচারী এখানে তদন্তে আসিয়াছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলে, দখলী দেবোত্তরের পরিমাণ স্পষ্ট করিয়া পঞ্চান্ন হাজার বিঘা না বলিয়া একটু কেমন অবজ্ঞাচ্ছলে হাজার পঞ্চান্ন বিঘা বলা হয়। সাহেব নাকি তজ্জন্য মাত্র এক হাজার পঞ্চান্ন বিঘা জমি দেবোত্তর সাব্যস্ত করিয়া বাকী জমি বাজেয়াপ্ত করিবার রিপোর্ট দেন। মোট কথা, তদন্তের সময় দলিলের অভাবে সম্পত্তির পরিমাণ কম করিয়া ধার্য্য হইয়াছিল। এই বলরামই মায়ের মন্দির এক প্রকার নূতন করিয়া গঠন করেন এবং পরে নাট-মন্দির নির্ম্মিত হয়। নাট-মন্দিরের গাত্রে সংস্কৃত ও বাঙ্গালা ভাষায় যে স্মারক লিপি আছে, তাহা এই :

‘ধরাগ্নাদ্রিরামানে শাকে শ্রীকালিকাপুরীং।
নিৰ্ম্মায় চৈতলী চট্টবংশপৌরন্দরো মহান্।।
বলরামো ক্ষিতিসুরঃ সমর্গ্যাকিঞ্চনে ময়ি।
বিভবঞ্চাপি তৎসেবামানন্দভুবনং যযৌ।।
তদগ্রজসুতঃ শ্ৰীমান্ কালীকিঙ্করঃ ভূসুরঃ।
লিলেখৈতদরিরসসিন্ধুচন্দ্ৰমিতে শকে।।’

[ধরা=১, অগ্নি=৩, অদ্রি=৭, অরি=৬, রস=৬, সিন্ধু=৭, চন্দ্র=১] অর্থাৎ ১৭৩১ শাকে (১৮০৯ খৃঃ অঃ) চৈতলী চট্টবংশীয় পুরন্দরের সন্তান বলরাম বিপ্র এই কালিকাপুরী নির্ম্মাণ করিয়া মায়ের সেবা ও সম্পত্তি ভ্রাতুষ্পুত্র কালীকিঙ্করের হস্তে সমর্পণ করিয়া স্বর্গগত হন। কালীকিঙ্কর ১৭৬৬ শাকে (১৮৪৪ খৃঃ) এই লিপি সংযুক্ত করেন।

বাঙ্গালা লিপিতে ইহাই স্পষ্টীকৃত হইয়াছে, উহার অবিকল প্রতিলিপি এই :

‘বঙ্গাব্দ বারো শ শোল শাল পরিমাণ,
শ্রীমহাকালিকাপুরী করি সুনিৰ্ম্মাণ,
চৈতলীয় চট্টবংশ পুরন্দর সন্তান,
ক্ষিতিসুর বলরাম মহামতিমান,
যে কিছু বিষয় সেবা অধমে অৰ্পিএ
আনন্দে আনন্দধামে আছেন বসিএ।
তাহার জ্যেষ্ঠের সুত শ্রীকালীকিঙ্কর;
বার শ একান্ন শালে লিপি ততঃপর’

বর্তমান অধিকারিগণ কাশ্যপগোত্রীয় চট্টবংশীয়। দক্ষ হইতে জয়কৃষ্ণ পর্য্যন্ত বংশসূত্র এইরূপ : দক্ষ-সুলোচন—মহাদেব—হলধর – নারিদেব -লালো—গরুড়—শ্রীকণ্ঠ—বাঙ্গালা (আদি কুলীন)—কীত বা কীৰ্ত্তিচন্দ্র-নৃসিংহ—আভো—তপন—চৈতলী (ইনি বংশের মূল)— রঘু-পুরন্দর (বল্লভী মেল ভুক্ত)। এই জন্য জয়কৃষ্ণ চৈতলীর ধারায় পুরন্দরের সন্তান বলিয়া পরিচয় দিয়াছেন। ১ পুরন্দর—২ জগন্নাথ—৩ জানকী—৪ নীলকণ্ঠ—৫ নারায়ণ—৬ রামজীবন; ইহার দশ পুত্র, তন্মধ্যে জয়কৃষ্ণ সৰ্ব্বকনিষ্ঠ। তিনিই প্রথম চব্বিশ-পরগণার অন্তর্গত দোগাছি- পাটভাঙ্গা হইতে ঈশ্বরীপুরে বাস করেন।

এক্ষণে বংশ-তালিকার ১৪ পর্যায়ের প্রায় সকলেই জীবিত আছেন। তন্মধ্যে মথুরানাথ সর্ব্বাপেক্ষা বয়সে প্রবীণ এবং শ্রীশচন্দ্র দেশে বিদেশে সুপরিচিত। আজকাল শ্রীশচন্দ্র অধিকারী ঈশ্বরীপুরের প্রাণ। তিনি সরল ও অমায়িক, সুবক্তা ও ভক্তিমান, দয়ার্দ্রচিত্ত এবং অক্লান্তশ্রমী। এমন অতিথি-বৎসল এবং সেবাপরায়ণ লোক বড় বিরল। একবার ঈশ্বরীপুরের সীমান্তবর্তী হইলে বা তাঁহার দৃষ্টির গণ্ডীতে পড়িলে, সরকারী উচ্চকর্মচারী বা সাধারণ তীর্থযাত্রী, স্বদেশী বা বিদেশী, হিন্দু বা মুসলমান, যিনিই হউন না, কেহই তাঁহার আতিথেয়তার হাত এড়াইতে পারেন না, একদিন অতিথি হইলে বহুদিনেও তাঁহাকে ভুলিতে পারিবেন না। কিসে ঈশ্বরীপুরকে বড় করিবেন, প্রতাপের কীর্তিকাহিনী প্রচার করিয়া মাতা যশোরেশ্বরীর পীঠস্থানের গৌরব-বর্দ্ধন করিবেন— ইহাই তাঁহার জীবনের একমাত্র ব্রত বলিয়া বোধ হয়। সে উদ্দেশ্যে তিনি অসাধ্য সাধন করিতেও প্রস্তুত; চরিত্রগুণে এবং সকল চেষ্টায় ঐকান্তিকতার পরিচয় দিয়া তিনি সকলকে মোহিত করিয়া রাখেন। গত দুই বৎসরব্যাপী দুর্ভিক্ষের সময় তিনি যে প্রাণপাত করিয়া বুভুক্ষু ও আতুরের সেবা করিয়াছেন, তজ্জন্য তাঁহার নাম সে অঞ্চলে চিরস্মরণীয় হইয়া রহিবে। তাঁহারই চেষ্টায় ঈশ্বরীপুরে পোষ্টাফিস হইয়াছে, দাতব্য ডিস্পেন্সারী বসিয়াছে, রাস্তাঘাট ভাল হইয়াছে, মায়ের মন্দিরসংলগ্ন গৃহাদির সংস্কার হইয়াছে, উহার দোতালার একটি ঘরকে তিনি আমাদের উপদেশে ছোটখাট যাদুঘরে পরিণত করিয়া তথায় প্রতাপের কীর্তিচিহ্নসমূহ কুড়াইয়া রাখিয়া আর্কিওলজিকাল ডিপার্টমেন্টেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছেন; আর যমুনার ক্ষীণ স্রোতের বাঁধ কাটিয়া ঈশ্বরীপুরের যাতায়াতের পথ খোলসা করিতে গিয়া কত স্বার্থপরায়ণ বন্ধুরও চক্ষুঃশূল হইতেছেন। আবার কি যমুনা কূল ছাপাইয়া জলভারে ভাসিবে? আর শত সহস্র দূরাগত তীর্থযাত্রী আনিয়া মায়ের মন্দিরে কোলাহল তুলিবে? সে দিন কি আর আসিবে?

পাদটীকা :

১. ‘রাহাবংশকারিকা’ (কাড়াপাড়ায় সংগৃহীত হস্তলিখিত পুঁথি), ৫ পৃ।

২. ‘বিশ্বকোষ’, ১২শ খণ্ড, ২৭৯ পৃ।

৩. সতীশচন্দ্র রায়, ‘বঙ্গীয় সমাজ’, ১৮৬ পৃ।

৪. আঁধারমাণিকের উত্তর পার্শ্বে যে নীলকুঠি ছিল, তাহা হইতে ইট লইয়া রুদ্রপুরের সীতানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় নিজ বাটীতে ব্যবহর করেন। সীতানাথের পুত্র যতীন্দ্রনাথ এক্ষণে ব্যারিষ্টার।

৫. এই ভগ্ন স্তূপের মধ্যে আঁধারমাণিকের ডাক্তার গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয় একটি কষ্টিপাথরের ছোট শিবলিঙ্গ পান, উহা তাঁহাদের বাড়ীতে নিত্য পূজিত হইতেছে।

৬. আঁধারমাণিকের পার্শ্বে আর ইছামতী নদী নাই; উহার প্রাচীন খাত বাওড়ের নদী নামে কথিত এবং তাহা মাসকাটার খাল নামে বাদুড়িয়ার সন্নিকটে ইছামতীর প্রবাহে মিশিয়াছে।

৭. ‘বঙ্গীয় সমাজ’, ২৯৭-৮ পৃ। ইদিলপুরের কারিকা হইতে দেখিতে পাই, এই বংশীয়েরা চাঁদশিয়ার দাস বলিয়া খ্যাত, কারণ এই বংশের এক ঊর্দ্ধতন পুরুষ, অরবিন্দ দাস, চাঁদশিয়ায় বাস করিতেন। অরবিন্দ হইতে কৃষ্ণদাস পর্য্যন্ত ধারা এইরূপ :

অরবিন্দ-২ শিবদাস-৩ শম্ভুদাস-৪ গজপতি-৫ সূর্য্যদাস-৬ ভবানন্দ-৭ জানকী নাথ-৮ কৃষ্ণদাস ওহদেদার। এলাহাবাদের প্রসিদ্ধ ডাক্তার রায়বাহাদুর মহেন্দ্রনাথ ওহদেদার এই বংশের কৃতীপুরুষ। কৃষ্ণদাস হইতে তাঁহার বংশাবলী দিতেছি :

কালীনাথ ওহদেদার বারাণসীর সরকারী হাসপাতালে এসিষ্ট্যান্ট সার্জন ছিলেন। তাঁহার চারি পুত্রের মধ্যে রাজেন্দ্র ও মহেন্দ্র ডাক্তার এবং নরেন্দ্র ও দেবেন্দ্রে এলাহাবাদ হাইকোর্টের উকীল। রাজেন্দ্র ইংলণ্ড ও আমেরিকা হইতে ডাক্তারী পড়িয়া আসেন। কিন্তু তাঁহার মধ্যম ভ্রাতা মহেন্দ্রনাথই বংশের মুখোজ্জ্বলকারী। মহেন্দ্রনাথ ১৮৫৬ খৃষ্টাব্দের ৭ই জানুয়ারী খুলনা জেলার অন্তর্গত শ্রীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৭৪ অব্দে লাহোর মেডিকাল কলেজ হইতে অতি উচ্চ স্থান অধিকার করিয়া L.M.S. পরীক্ষা পাশ করেন। ইনি সৰ্ব্ববিধ অস্ত্রচিকিৎসায় এবং চক্ষুরোগে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ক্রমে শ্রীনগর, বারাণসী ও এলাহাবাদ প্রভৃতি স্থানের প্রধান প্রধান রুগণাবাসে চাকরী করিয়া যশস্বী হন এবং সৰ্ব্বজনপ্রিয় হইয়া গবর্ণমেণ্ট হইতে ১৮৯৩ অব্দে ‘রায়বাহাদুর’ উপাধি লাভ করেন। অল্পদিন হইল তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে। ‘বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী’ ১২০-২৫ পৃ দ্রষ্টব্য।

৮. ১৮৪৩ অব্দের ৬ই এপ্রিল নদীয়ার স্পেশাল ডেপুটি কালেক্টর জেমস্ গর্ডন ক্যাম্পবেল সাহেবের নিকট নদীয়ার ১৮২৩ নং তৌজিভুক্ত রাখিরাজের স্বত্ব সম্বন্ধে যে মোকদ্দমা চলিয়াছিল, উহার ফয়সালা হইতে জানিতে পারি যে, ঐ মোকদ্দমায় ১০১৫ সালে ১৬ই মাঘ তারিখে লিখিত চাঁদ রায়ের প্রদত্ত সনন্দের বেজাবেতা নকল দাখিল ছিল। তাহা হইলে ১৬০৯ অব্দের জানুয়ারীতে চাঁদ রায় রাজা ছিলেন, বুঝা যায়।

৯. রাজারাম ১০৯৪ সালে বা ১৬৮৮ খৃষ্টাব্দে খোঁড়গাছির কৃষ্ণদেব বিশারদকে যে ভূমি দান করেন, তাহার সনন্দের প্রতিলিপি আমরা পূর্ব্বে দিয়াছি (৮ম পরিচ্ছেদ)। ১৬৯৮ খৃষ্টাব্দে বর্দ্ধমানে সভাসিংহের বিদ্রোহ হয়, তখন নূরউল্যা খাঁ মীর্জানগর হইতে সৈন্য লইয়া গিয়াছিলেন। নূরউল্যা নুরনগর ত্যাগ করিযা মীর্জানগরে আসিবার পূর্ব্বে শ্যামসুন্দর রামজীবনপুরে যান। সুতরাং আনুমানিক ১৬৯০ অব্দে রাজারামের মৃত্যু হয়।

১০. ‘Chakla was in existence in Akbar’s time, but its development as an administrative unit was the work of Murshid Quli Khan. ‘ — Ascoli, Early Revenue History, 24.

১১. কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘বাঙ্গালার ইতিহাস, নবাবী আমল,’ ৪৮৬, ৫০০ পৃ।

১২. ‘বঙ্গীয় সমাজ’, ২২৯ পৃ।

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন