২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা

সতীশচন্দ্র মিত্র

পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ – বসন্ত রায়ের হত্যা

প্রতাপের জন্মমাত্র জনৈক জ্যোতিষী দ্বারা তাঁহার কোষ্ঠী রচিত হয়; তাহা হইতে জানা যায় যে, তাঁহার জীবনে পিতৃদ্রোহিতা দোষ ছিল। এই কথা শুনিবামাত্র বিক্রমাদিত্য পুত্রের প্রতি বিরক্ত ও বিরূপ হন। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন, তাঁহার সে বিরক্তি যায় নাই। প্রতাপের জন্মের কিছুদিন পরে তাঁহার জননীর মৃত্যু হওয়ায় বিক্রমাদিত্যের বিরক্তি আরও বর্দ্ধিত হয়, এমন কি, পুত্রের গতিবিধি ও কার্য্যকলাপ সবই সন্দেহের চক্ষে দেখিতেন। অপর পক্ষে গুণগ্রাহী বসন্ত রায় রাজপুত্রের সুকুমার তনু ও বীরোচিত মূর্ত্তি দেখিয়া একেবারে মুগ্ধ হইয়া গিয়াছিলেন। তাঁহার জ্যেষ্ঠা পত্নীর কোন সন্তানাদি হয় নাই;[১] প্রতাপ মাতৃহারা হইলে তিনিই শিশুর লালন পালনের সম্পূর্ণ ভার গ্রহণ করেন, সঙ্গে সঙ্গে বসন্ত রায়েরও পুত্রস্নেহ প্রতাপের উপর সমর্পিত হইল। ক্রমে বসন্ত রায় অন্যান্য পত্নীর গর্ভে বহুপুত্রের পিতা হইলেও, প্রতাপ যে তাহাদের সর্ব্বজ্যেষ্ঠ এবং সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রতিভাসম্পন্ন, সে কথা তিনি কখনও ভুলিয়া যাইতে পারেন নাই। বিক্রমাদিত্য আশঙ্কা করিতেন, প্রতাপের পিতৃহন্তা দোষের ফল তিনিই ভোগ করিবেন, সুতরাং তিনি সর্ব্বদাই সন্দিগ্ধ থাকিতেন। বসন্ত রায় ও তাঁহার পত্নী প্রতাপের সকল দোষ ঢাকিয়া রাখিয়া তাহাকে পিতৃকোপ হইতে রক্ষা করিতেন এবং স্নেহাধিক্যবশতঃ প্রশ্রয় দিতেন। কাৰ্য্যতঃ দাঁড়াইল এই, প্রতাপ প্রকৃত পিতৃস্নেহ খুল্লতাতের নিকট হইতে পাইয়াছিলেন এবং ঘটনাচক্রে সেই খুল্লতাতকেই হত্যা করিয়া তিনি ভাগ্যচক্রের ফল প্রতিপন্ন করিয়াছিলেন।

বসন্ত রায় চিরদিন অযাতিত স্নেহ-ধারায় প্রতাপকে প্লাবিত করিয়া রাখিলেও নিয়তির হাতে নিস্তার পান নাই। তিনি, যতই স্নেহশীল হইয়া প্রতাপের প্রতি সদ্বব্যবহার করিতেন, মস্তিষ্কের কেমন যেন এক বিকৃতিবশতঃ প্রতাপ ততই তাঁহার প্রতি মনে মনে সন্দেহযুক্ত হইতেন। জ্ঞাতি-বিরোধ ও সঙ্গিগণের কুপরামর্শ এই সন্দেহ বৃদ্ধি করিয়া দিত। প্রতাপের প্রতি বসন্ত রায়ের পুত্রগণের অত্যন্ত জ্ঞাতি-বিদ্বেষ ছিল; বিশেষতঃ জ্যেষ্ঠ পুত্র গোবিন্দ রায় প্রতাপের প্রায় সমবয়স্ক ছিলেন এবং উঁহাদের উভয়ের মধ্যে সর্ব্বদাই একটি বিজাতীয় মনোমালিন্য এবং বিবাদ বিসম্বাদ চলিত। প্রতাপ বসন্ত রায়ের জ্যেষ্ঠা পত্নীর পুত্রতুল্য বলিয়া গোবিন্দের মাতা তাঁহাকে সপত্নীপুত্রের মত ঘৃণার চক্ষে দেখিতেন। উহারই ফলে পুত্রগণের মধ্যে সৰ্ব্বদা কলহ হইত। প্রতাপ মনে করিতেন, এই কলহের অন্তরালে বসন্ত রায় নির্লিপ্ত ছিলেন না। যে সকল কারণে বসন্ত রায়ের প্রতি প্রতাপের আক্রোশ জন্মাইতেছিল, এই জ্ঞাতি-বিদ্বেষ তাহার সর্ব্বপ্ৰথম

দ্বিতীয়তঃ, প্রতাপকে আগ্রায় পাঠাইবার মূল প্রস্তাব বিক্রমাদিত্যই উপস্থিত করেন; বসন্ত রায় বহু চেষ্টায় তাঁহাকে নিরস্ত করিতে না পারিয়া অবশেষে বাধ্য হইয়া অনুমোদন করেন, এবং সে কার্য্যে প্রতাপের মঙ্গল হইবে বুঝিয়াই নিজে অগ্রণী হইয়া উহার সুব্যবস্থা করিয়া দেন। প্রতাপ ভাবিলেন, খুল্লতাতের চক্রান্তেই তাঁহাকে দূরদেশে নির্ব্বাসিত করা হইল।

তৃতীয়তঃ, প্রতাপাদিত্য মোগল বাদশাহের নিকট হইতে সনন্দ লইয়া আসেন। কয়েক বৎসর তদনুসারে সামন্তরাজের মতই ছিলেন এবং মানসিংহের নির্দেশমত মোগল পক্ষে যুদ্ধ করিবার জন্য উড়িষ্যায় না যাইয়াও পারেন নাই। সেই অভিযান হইতে প্রত্যাগমনের পর প্রতাপ মোগলের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করিবার জন্য কৃতসংকল্প হন। তখন বসন্ত রায় তাঁহাকে বাধা দিলেন এবং নানামতে বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন যে, মোগলের বিপক্ষে দণ্ডায়মান হইলে ঐশ্বর্য্যযুক্ত যশোর রাজ্য হস্তচ্যুত হইয়া যাইবে। প্রতাপ তাহা বুঝিলেন না; তিনি মনে করিলেন, খুল্লতাত দেশদ্রোহী, নতুবা দেশের স্বাধীনতার পথে অন্তরায় হইবেন কেন? হয়ত তিনি প্রতাপের বলবীর্য্য পরিমাপ করিতে পারেন নাই, নতুবা মোগল শত্রু হওয়া এতই বিপজ্জনক বলিয়া মনে ভাবিলেন কেন? আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি, প্রতাপ একটা সহজ কথা বুঝিতেন; পাঠানেরাই যশোর-রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা, এবং পাঠানের অর্থ-সম্পদেই সে রাজ্যের সমৃদ্ধি এত বৃদ্ধি পাইয়াছে; সুতরাং পাঠানের রাজ্য ও অর্থের অধিকারী হইয়া মোগলের বশ্যতা স্বীকার করা বিশ্বাসঘাতকতার কাৰ্য্য; প্রতাপ তাহাতে সম্মত ছিলেন না। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা বিচার করিয়া বসন্ত রায় রাজ্যের মঙ্গলার্থই প্রতাপকে নিরস্ত হইতে উপদেশ দিলেন। ফল বিপরীত হইল; প্রতাপ খুল্লতাতের প্রতি জাতক্রোধ হইলেন। মোগলের সহিত বসন্ত রায়ের চক্রান্তের আশঙ্কা করিয়া প্রতাপ তাঁহার প্রাণ- বিনাশেরই কল্পনা পোষণ করিতে লাগিলেন।

চতুর্থতঃ, এই সময়ে চাকশিরি পরগণা লইয়া উভয়ের মধ্যে বিবাদ হইল। বিক্রমাদিত্যের বিভাগানুসারে যশোর-রাজ্যের পূর্ব্বাংশ প্রতাপের এবং পশ্চিমাংশ বসন্ত রায়ের হস্তগত হয়। বসন্ত রায়ের শ্বশুর কৃষ্ণরায় দত্ত ভূসম্পত্তি লাভ করিয়া রাঙ্গদিয়া পরগণায় বাস করেন। চকশ্রী বা চাকশিরি তাঁহারই সম্পত্তির অন্তর্গত, সুতরাং তাহা প্রতাপের রাজ্যমধ্যে হইলেও তাঁহারই স্বাধিকারভুক্ত ছিল না। অথচ অবস্থানগুণে নদীতীরবর্ত্তী চাকশিরিতে একটি নৌ-দুর্গ স্থাপন করিয়া পূর্ব্বদেশীয় শত্রুর হস্ত হইতে রাজ্যরক্ষা করা প্রতাপাদিত্যের বিশেষ প্রয়োজনীয় হইয়া পড়িল। তিনি অন্য স্থানের বিনিময়ে চাকশিরি পরগণা চাহিলেন, বসন্ত রায় তাহা প্রত্যাপর্ণ করিবার পথ পাইলেন না, বিশেষতঃ তাঁহার পুত্রগণ ও শ্যালকেরা বিরোধী হইয়া পড়িলেন। প্রতাপের যখন যাহা মাথায় ঢুকিত, তাহা না করিয়া ছাড়িতেন না। অবিরত চেষ্টা চলিতে লাগিল, বারংবার খুড়ার নিকট যাতায়াত করিতে লাগিলেন। কিন্তু গোবিন্দ রায় প্রভৃতির চক্রান্তে কিছুতেই চাকশিরি পাওয়া গেল না। এই সময় হইতে প্রবাদ হইয়া রহিয়াছে : ‘সারা রাতি ঘুরি ফিরি, তবু না পাই চাকশিরি।’ প্রতাপের ক্রোধ সপ্তমে চড়িল; তিনি খুল্লতাতকে হত্যা করিবার জন্য কৃতসংকল্প হইলেন। গুপ্তভাবে সুযোগ অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন।

পঞ্চমতঃ, এমন সময়ে একদা বসন্ত রায়ের পিতৃশ্রাদ্ধ তিথি উপস্থিত হইল। সস্ত্রীক ধর্মাচরণ করিতে হয়, গোঁড়া হিন্দু বসন্ত রায় তাহা মানিতেন। জ্যেষ্ঠা পত্নীই প্রকৃত ধৰ্ম্মপত্নী; সে পত্নী প্রতাপের নিকট ধূমঘাট দুর্গেই অবস্থান করিতেন। বসন্ত রায় প্রত্যেক যাগযজ্ঞ বা শ্রাদ্ধাদিতে জ্যেষ্ঠা পত্নীকে নিজ বাটীতে লইয়া কৰ্ত্তব্য সম্পাদন করিতেন। কিন্তু এবার উভয় পক্ষে এমন মনোমালিন্য চলিয়াছিল যে, গোবিন্দ রায়ের মাতার চক্রান্তে বসন্ত রায় জ্যেষ্ঠা পত্নীকে আনিলেন না বা নিমন্ত্রণ করিলেন না। কেবল মাত্র প্রতাপাদিত্যকেই নিমন্ত্রণ করা হইল। ইহাতে সেই জ্যেষ্ঠা পত্নী বা যশোহরের মহারাণী অত্যন্ত অপমানিত বোধ করিলেন। সপত্নী-বিদ্বেষ এই ঘটনার মূল কারণ মনে করিয়া, তিনি চক্ষুর জলে ভাসিতে ভাসিতে দুঃখের কথা প্রতাপাদিত্যকে জানাইলেন। প্রতাপ একে খুল্লতাতের প্রতি অত্যন্ত বিরক্ত, তাহাতে মাতার এই অবমাননা কিছুতেই সহ্য করিতে পারিলেন না। প্রতিশোধ লইবার জন্য অঙ্গীকার করিয়া, নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য যাত্রা করিলেন। কলহ পূৰ্ব্ব হইতে চলিতেছিল; সুতরাং এবার প্রতাপ নিরীহ ভ্রাতুষ্পুত্রের মত নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে সাহসী হইলেন না। তিনি নিজে সম্পূর্ণ যোদ্ধৃবেশে এবং বাছা বাছা কতকগুলি সশস্ত্র শরীররক্ষী দ্বারা পরিবৃত হইয়া শ্রাদ্ধাদিনে রায়গড় দুর্গে প্রবেশ করিলেন। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, তাঁহার পান-দোষ ছিল, এ সময় তিনি অতিরিক্ত মদ্যপানে রক্তচক্ষু হইয়া উপস্থিত হইলেন। প্রলয়ের আকাশ পূৰ্ব্ব হইতেই প্রস্তুত হইয়া রহিল।

সেই অবস্থায় যখন প্রতাপাদিত্য প্রবেশ করিলেন, তখন গোবিন্দ রায়ের আশঙ্কা হইল; সে আশঙ্কা অমূলক বলা যায় না। তিনি ভাবিলেন, প্রতাপ বুঝি তাঁহাদিগকে নিহত করিবার জন্যই সশস্ত্র হইয়া প্রবেশ করিতেছেন। বসন্ত রায়ের মিষ্ট সস্নেহ ব্যবহারে অনেকবার প্রতাপের রুদ্রমূৰ্ত্তি শান্ত হইয়াছে, হয়ত এবারও সেরূপ হইত। কিন্তু বসন্ত রায়ের সহিত তাঁহার সাক্ষাতের পূর্ব্বেই গোবিন্দ রায় দুর্বুদ্ধিতাবশতঃ এক অত্যহিত উপস্থিত করিলেন। কোন কথাবার্তা হইবার পূর্ব্বেই তিনি দোতালার বারান্দা হইতে প্রতাপাদিত্যকে লক্ষ্য করিয়া দুইবার তীর নিক্ষেপ করিলেন। তীর ঠিকমত লাগিলে প্রতাপের রক্ষা ছিল না। কিন্তু লক্ষ্য ব্যর্থ হইল, অমনি মদোন্মত্ত দৃপ্ত বীরের ক্রোধ সীমাতিক্রম করিল। প্রতাপ উন্মুক্ত তরবারি হস্তে ছুটিয়া উঠিয়া এক আঘাতে গোবিন্দরায়কে দ্বিখণ্ডিত করিয়া ফেলিলেন। চারিদিকে বিষম হাহাকার রোল উঠিল।

বসন্ত রায় যেখানে শ্রাদ্ধে বসিয়াছিলেন, সে শব্দে তিনি চমকিয়া উঠিলেন। প্রতাপের প্রতি তাঁহার যতই স্নেহ থাকুক এবং গোবিন্দের দুব্বুদ্ধির জন্য তাঁহার প্রতি যতই বিরক্তি থাকুক, বৃদ্ধকালে তাঁহারই সম্মুখে তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্রের নৃশংস হত্যা তিনি কিছুতেই সহ্য করিতে পারিলেন না; এমন সহ্য জগতের অতি কম লোকেই করিতে পারে। বিশেষতঃ তিনি নিজে প্রবীণ যোদ্ধা এবং অসমসাহসী। পুত্রহত্যার প্রতিশোধ লইবার জন্য তিনি ‘গঙ্গাজল আন, গঙ্গাজল আন’ বলিয়া চীৎকার করিতে লাগিলেন। তাঁহার নিজের প্রকাণ্ড তরবারির নাম ছিল ‘গঙ্গাজল’। নিকটবর্ত্তী ভৃত্য তাহা বুঝিল না, সে ভাবিল শ্রাদ্ধকালে যে গঙ্গাজল লাগে, রাজা মহাশয় তাহাই চাহিতেছেন। সে দৌড়িয়া গিয়া এক ঘটি গঙ্গাজল আনিয়া উপস্থিত করিল। বসন্ত রায় প্রতাপাদিত্যকে চিনিতেন, তিনি হতবুদ্ধি হইয়া ভাবিলেন এইবার সর্ব্বনাশ হইল। অপর পক্ষে তিনি যখন ‘গঙ্গাজল’ ‘গঙ্গাজল’ বলিয়া চীৎকার করিতেছিলেন, তখন প্রতাপ বুঝিলেন সে কোন গঙ্গাজল। সশস্ত্র হইয়া দণ্ডায়মান হইলে বহু যোদ্ধাও যাঁহার নিকটে যাইতে পারিত না, প্রতাপের অস্ত্রশিক্ষা-গুরু সেই বসন্ত রায় আজ গঙ্গাজল হাতে পাইলে তাঁহার নিস্তার নাই, ইহা তাঁহার বুঝিতে বাকী রহিল না। এই আশঙ্কায় প্রতাপাদিত্য সদসৎ বিবেচনা করিবার অবসর না পাইয়া, হতবুদ্ধির মত দৌড়িয়া গিয়া বসন্ত রায়ের মুণ্ডচ্ছেদ করিয়া ফেলিলেন। বহুদিনের সম্পোষিত জিঘাংসা, ক্রোধে ও মদ্যপানে চৈতন্যের লোপ এবং সর্ব্বশেষে স্বকীয় জীবননাশের অত্যধিক আশঙ্কা— এই তিনটি কারণ ভাগ্যদোষে একত্র হইয়া তাঁহাকে তিলার্দ্ধের জন্য কিছু ভাবিয়া দেখিতে দিল না, তিনি হঠকারিতা ও কৃতঘ্নতার একশেষ দেখাইয়া নিতান্ত দুৰ্দ্দান্ত পাষণ্ডের মত পিতা হইতেও যিনি তাঁহার আপনজন, সেই পিতৃতুল্য খুল্লতাতের হত্যাসাধন করিলেন। এইবার তাঁহার কোষ্ঠীর ফল ফলিল; এই দিন হইতে তাঁহার রাজ্যের ভিত্তি শিথিল হইয়া পড়িল।[৩] ইহার পর তিনি বাহুবলে আরও রাজ্য ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু তাহা নির্ব্বাণোন্মুখ প্রদীপের মত ক্ষণস্থায়ী হইয়াছিল। ‘সারতত্ত্বতরঙ্গিণীতে’ আছে :

“রাজ্যলোভে হয়ে মূঢ় নিদরুণ চিত
কাটি খুল্লতাত মাথা পাপে হইল হত।”

এই নৃশংস হত্যার যে কোন কারণ থাকুক না কেন, ইহা প্রতাপ-চরিত্রকে দুরপনেয় কলঙ্কে মণ্ডিত করিয়া রাখিয়াছে। এবং এখনও তদ্বংশীয়েরা ‘খুড়া কাটার গোষ্ঠী’ বলিয়া লোক-সমাজে নিন্দিত হন।

বসন্ত রায়কে হত্যা করিবার পর প্রতাপাদিত্য কৃত কর্ম্মের গুরুত্ব বুঝিয়া একেবারে স্তম্ভিত হইয়া পড়িলেন। কোন গুরুতর অপকর্ম্মের পর সকল লোকের যেরূপ তীব্র অনুতাপ উপস্থিত হয়, তাঁহারও তাহাই হইয়াছিল। ইহার পর তিনি অন্য কাহাকেও হত্যা করিয়াছিলেন বা কাহারও উপর অত্যাচার করিয়া ছিলেন, এমন মনে হয় না। ঘটককারিয়ায় আছে— ‘নিহতৌ চন্দ্ৰগোবিন্দৌ প্রতাপেন মহাত্মনা’, অর্থাৎ প্রতাপ কর্তৃক গোবিন্দ ও চন্দ্র দুই ভ্রাতা নিহত হইয়াছিলেন। এ কথা সত্য নহে। আমরা দেখিতে পাই, প্রতাপের পতনের পর বসন্ত-পুত্র চন্দ্র বা চাঁদ রায় কয়েক বৎসর রাজত্ব করিয়াছিলেন। এবং তাঁহার প্রদত্ত সনন্দ ও দানপত্রাদি পাওয়া গিয়াছে। বসু মহাশয় লিখিয়াছেন— ‘গোবিন্দ রায়ের মস্তক কাটিল এবং তাঁহার স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন তাহাকে কাটিয়া বসন্ত রায়ের কাটা মুণ্ড লইয়া নিজ স্থানে গমন করিলেন।’ গোবিন্দের গর্ভবতী স্ত্রীর কথা অন্যত্র নাই। তাই বলিয়া বসু মহাশয়ের উক্তি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিতে পারি না। স্বামীর হত্যাকালে হয়ত তিনি সম্মুখে পড়িয়া ক্রোধান্ধ বীরের উন্মুক্ত কৃপাণ হইতে রক্ষা পান নাই। কথা সত্য হইলে, গোবিন্দের হত্যা অপেক্ষাও এই হত্যা আরও নৃশংস এবং মহাপাতকের কার্য্য। প্রতাপের পাপ- চরিত্র সমর্থন করিবার কোন উপায় থাকে না। কিন্তু একথা সত্য বলিয়া মনে হয় না।

প্রতাপাদিত্য গোবিন্দ ভিন্ন বসন্ত রায়ের আর কোন পুত্রকে নিহত করেন নাই। সম্ভবতঃ অনেকেই এ সময়ে স্থানান্তরে ছিলেন। বসু মহাশয়ের মতে বসন্ত রায়ের মৃত্যুর পর তাঁহার ৭ পুত্ৰ জীবিত ছিলেন, তন্মধ্যে রাঘব রায় জ্যেষ্ঠ।[৪] রাণী বা তাঁহার রেবতী নাম্নী এক দাসী রাঘবকে কচুবনে লুকাইয়া প্রতাপের হস্ত হইতে রক্ষা করিয়াছিলেন, এ জন্য পরে তাহার নাম হয়— কচু রায়। এই কচু রায়ই আগ্রায় গিয়া মানসিংহকে লইয়া আসেন, এবং প্রতাপের পতনের পর যশোরের সামন্ত-রাজ হইয়া ‘যশোহরজিৎ’ উপাধি লাভ করেন। খুল্লতাতের হত্যার পর তাঁহার স্ত্রীগণের উপর প্রতাপ কর্তৃক যে সব পাশবিক অত্যাচারের প্রসঙ্গ তুলিয়া ‘বঙ্গাধিপ পরাজয়ে’র গ্রন্থকার নবীন বয়সে স্বীয় লেখনী কলঙ্কিত করিয়াছিলেন, তাহার কোন প্রমাণ নাই। প্রবাদের সঙ্গে অনেক অতিরঞ্জিত গল্প জড়িত আছে, ইহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই; কিন্তু সে প্রবাদও তান্ত্রিকভক্ত প্রতাপাদিত্যের নামে তেমন কোন অস্বাভাবিক গল্পের সৃষ্টি করে নাই।

রায়গড় দুর্গ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইবার পূর্ব্বে প্রতাপাদিত্য রক্ষি-সৈন্য দ্বারা তাহার পাহারা ঠিক রাখিয়া এবং রাজকার্য্য নির্ব্বাহের সাময়িক ব্যবস্থা করিয়া আসেন। তিনি ধুমঘাটে পৌঁছিলে, মাতা মহারাণী সংবাদ শুনিয়া হতচৈতন্য হইয়া পড়েন। তাঁহার কোন সন্তান ছিল না; যাহাকে তিনি স্তন্য দিয়া পুত্ৰাপেক্ষাও অধিক স্নেহে প্রতিপালন করিয়াছেন, সেই আজ তাঁহার দেবতুল্য স্বামীকে হত্যা করিয়া আসিয়াছে, এ শোক ও ক্ষোভ সহ্য করা যায় না। আকাশ অনেক দিন হইতে ঘনাচ্ছন্ন হইতেছিল, কিন্তু এমন ভীষণ প্রলয় আশঙ্কিত হয় নাই। আজ মহারাণীর সপত্নী-বিদ্বেষ আর নাই, প্রতাপের প্রতি পুত্রস্নেহও কোথায় চলিয়া গেল, জাগিয়া উঠিল শুধু সতী রমণীর অতুলনীয় পতিভক্তি। বিলাপ, আর্তনাদ ও ভর্ৎসনার বেগ অচিরে বিলুপ্ত হইলে, সতীর অপূর্ব্ব তেজ সমুজ্জ্বল হইয়া উঠিল। এত বড় প্রতাপশালী মহাবীর যে প্রতাপ, তিনি আজ দেবী-প্রতিমার পদপ্রান্তে বিলুণ্ঠিত হইয়া, নয়ন জলে ভাসিতে ভাসিতে আর্তনাদ করিয়া ক্ষমা চাহিতে লাগিলেন। অনুতাপের পার নাই। ভুল অনেকের হয়, তাঁহার জীবনেও হইয়াছিল, এমন ভুল কদাচিৎ দেখা যায়। (এই জাতীয় ২/১টি ভুল করিয়া মহাবীর আলেকজেণ্ডর নিজ চরিত্র কলঙ্কিত করিয়াছিলেন।) অবশেষে বসন্ত রায়ের ধর্মপত্নী সহমরণের জন্য ব্যাকুল হইলেন। প্রতাপ মহারাণীকে না জানাইয়া খুল্লতাতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করিতে পারেন নাই। বসু মহাশয় লিখিয়াছেন, প্রতাপ বসন্ত রায়ের কাটামুণ্ড লইয়া আসিয়াছিলেন। পুরোহিত দ্বারা সেই মুণ্ড আনাইয়া মহারাণী তৎসহ চিতারোহণ করিলেন। যখন মহাসমারোহে চিতার আগুন জ্বলিল, তখন মহারাণী প্রতাপাদিত্যকে অভিসম্পাত করিয়া গেলেন যে, ‘তাহার স্ত্রীপুত্র অন্ত্যজগ্রস্ত হইবে’। এই উক্তির সত্যতা কি এবং কোথায় কি ভাবে চিতা জ্বলিয়াছিল, তাহা নির্ণয় করিবার উপায় নাই। তবে প্রতাপের পতনের পর তাঁহার স্ত্রী-পুত্র জলমগ্ন হইয়া মারা গিয়াছিল, ইহাই মাত্র প্রবাদ আছে।

পাদটীকা :

১. বৰ্ত্তমান খণ্ড, ১ম অংশ, ১২শ পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।

২. বৰ্ত্তমান খণ্ড, ১ম অংশ, ১৪শ পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।

৩. বসন্ত রায়ের হত্যার তারিখ সম্বন্ধে নানা মত আছে। সবগুলির উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। সাধারণ মত এই, চন্দ্রদ্বীপের রাজপুত্র রামচন্দ্রের সহিত প্রতাপ-কন্যার বিবাহকালে বসন্ত রায় জীবিত ছিলেন। ‘বৌঠাকুরাণীর হাটে’ এই প্রসঙ্গে বসন্ত-চরিত্রের অনেক চিত্র দেওয়া হইয়াছে। সে বিবাহ ১৬০২ খৃষ্টাব্দে হয়। সুতরাং বসন্তের হত্যাও ১৬০২ অব্দে হয়। ঘটককারিকায় আছে :

‘যুগযুগ্মেষু চন্দ্রে চ শকে হত্বা বসন্তকং।
প্রতাপাদিত্য নামাসৌ জায়তে নৃপতির্মহান।।’

অর্থাৎ ১৫২৪ শকে বা ১৬০২ খৃষ্টাব্দে বসন্ত রায় হত হন। ইহারই অব্যবহিত পরে মানসিংহের আক্রমণ ঘটে। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে সে আক্রমণের অন্ততঃ ৭/৮ বৎসর পূর্ব্বে বসন্ত রায়ের হত্যার প্রমাণ আছে। সুতরাং রামচন্দ্রের বিবাহকালে বসন্ত রায় জীবিত ছিলেন না এবং রামচন্দ্রের জীবন রক্ষার জন্য তিনি প্রতাপের শত্রু হইয়াছিলেন, একথা সত্য বলিয়া ধরিতে পারি না। আমাদের মতে ১৫৯৪-৫ অব্দে বসন্তের হত্যা সাধিত হয়। এই সিদ্ধান্তের অন্ততঃ তিনটি কারণ দিতে পারি। প্রথমতঃ, যখন জেসুইট পাদরিগণ ১৫৯৯ হইতে ১৬০৩ অব্দ পর্য্যন্ত এদেশে ছিলেন, তাঁহারা যশোর রাজ্যের পূর্ব্বে ও পশ্চিমে সকল দিক ভ্রমণ করেন। কিন্তু তাঁহারা কোথাও বসন্ত রায়ের রাজ্যাংশের উল্লেখ করেন নাই, অথচ চাঁদখা চকের মধ্যে যে সগরদ্বীপে তাঁহাদের একটি প্রধান আড্ডা হয়, তাহা বসন্ত রায়েরই সম্পত্তিভুক্ত ছিল। সুতরাং তাঁহাদের আগমন অর্থাৎ ১৫৯৯ খৃষ্টাব্দের বহুপূর্ব্বে সমস্ত রাজ্য প্রতাপাদিত্যের করায়ত্ত হইয়াছিল ও বসন্ত রায়ের হত্যা ঘটিয়াছিল, তৎপক্ষে সন্দেহ নাই। দ্বিতীয়তঃ রামরাম বসুর গ্রন্থ ও অন্যান্য প্রবাদ হইতে জানা যায়, বসন্ত রায়ের মৃত্যুর পর তৎপুত্রগণ হিজলীর ঈশা খাঁ মছন্দরীর শরণাপন্ন হন। সেই ক্রোধে প্রতাপ হিজলী আক্রমণ করিয়া অধিকার করেন; সেই যুদ্ধে বা পরে ঈশা খাঁর মৃত্যু হয়। সে মৃত্যু যে ১৫৯৫ অব্দের পরে হয় নাই, তাহার প্রমাণ আমরা পূর্ব্বে দিয়াছি (১ম অংশ, ৩য় পরিচ্ছেদ)। তৃতীয়তঃ, বসন্ত রায়ের হত্যার পর যখন তৎপুত্র কচু রায় দিল্লী যান, তখন তিনি অল্পবয়স্ক। কুলাচার্য্যগণের মতে তখন তাঁহার বয়স ১২ বৎসর।

‘বর্ষদ্বাদশমাপন্ন স্তীব্রধীলক্ষণান্বিতঃ।
উপগম্যাতিদুঃখেন দিল্লীশ্বরসমীপতঃ।।’

যখন তিনি কচু বনে পলাইয়া জীবন রক্ষা করেন, তখন তাঁহার বয়স বড় বেশী ধরিলেও ১৫/১৬ বর্ষের অধিক নহে, অথচ মানসিংহ যখন যুদ্ধার্থ আসেন, তখন কচু রায় মহাবীর এবং কুটবুদ্ধিবলে মানসিংহকেও ‘নীতিসার বাক্য’ শুনাইতেছেন। সুতরাং তখন তাঁহার বয়স ২৩/২৪ বর্ষের কম নহে। মানসিংহের আগমন কাল ১৬০২-৩ অব্দে ধরিলে কচু রায়ের দিল্লী যাত্রার সময় ১৫৯৫ অব্দের পরে হইতে পারে না। অতএব বসন্ত রায়ের হত্যা ১৫৯৪-৫ অব্দেই হইয়াছিল। এ সম্বন্ধে নিখিলনাথ রায়ের টিপ্পনী দ্রষ্টব্য।— প্রতাপাদিত্য, মূল ১২১-৩ পৃ।

৪. বসন্ত রায়ের ১১ পুত্রের মধ্যে ৭ জন জীবিত ছিলেন। অপর ৪ জনের মধ্যে গোবিন্দ নিহত হন। অবশিষ্ট তিন জন সম্ভবতঃ তাঁহার জীবদ্দশায় কালগ্রাসে পতিত হন। চণ্ডীদাস নারায়ণদাসের অকাল মৃত্যুর কথা আমরা পূর্ব্বে বলিয়াছি। ১ম অংশ, ১২শ পরিচ্ছেদ, ১ নং পাদটীকা দ্রষ্টব্য।

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন