২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি

সতীশচন্দ্র মিত্র

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি

১৭৭২ অব্দে ওয়ারেণ হেষ্টিংস গবর্ণর নিযুক্ত হইয়াই রাজস্ব আদায়ের জন্য স্থানে স্থানে কালেক্টর বসাইয়া দেন। ঐ সময়ে ফরিদপুর, যশোহর ও খুলনা লইয়া একটি তহশীল-বিভাগ গঠিত হইয়া একজন কালেক্টরের হস্তে ন্যস্ত হয়। কিন্তু দুই বৎসর মধ্যে এ ব্যবস্থা রহিত হয় এবং কর- সংগ্রহের নানা গোলযোগ চলিতে থাকে। ১৭৮১ অব্দে হেঙ্কেল সাহেব যশোহর সার্কেলের জজ্ ও ম্যাজিষ্ট্রেট্ হইয়া মুড়লীতে আসেন, সে কথা বলিয়াছি। ১৭৮৬ অব্দে যশোহর একটি পৃথক্ জেলারূপে পরিণত হয়। ইহাই বঙ্গের প্রথম জেলা এবং হেঙ্কেল সাহেব সে জেলার প্রথম কালেক্টর। তখন মোটামুটি ইশপপুর ও সৈয়দপুর পরগণা-সমষ্টি বা চাঁচড়া-রাজ্য লইয়া জেলা হয়। ১৭৮৭ অব্দে মামুদশাহী পরগণা উহার সহিত যুক্ত হয়। যশোহর হইতে বনগ্রাম পৰ্য্যন্ত রাস্তার দক্ষিণভাগে ইচ্ছামতী নদীই এই জেলার পশ্চিম সীমা ছিল। ১৭৯৩ অব্দে নদীসমেত ভূষণা বিভাগ যশোহরের অন্তর্ভুক্ত করিয়া দেওয়া হয়।

১৭৯৪ খৃষ্টাব্দে পুনরায় সীমার পরিবর্তন হয়। তখন ঝিকারগাছার কাছে কপোতাক্ষী নদী যশোহর জেলার পশ্চিম সীমা হয়। ঝিকারগাছা হইতে বনগ্রাম যাইবার রাস্তার উত্তরাংশ নদীয়া জেলাভুক্ত হয়, কিন্তু উহার দক্ষিণাংশ অর্থাৎ কপোতাক্ষী ও ইচ্ছামতীর মধ্যবর্তী প্রদেশ যশোহরের মধ্যেই রহিয়া যায়। বহুকাল পরে ১৮৬৩ অব্দে এই দক্ষিণাংশ অর্থাৎ প্রধানতঃ সাতক্ষীরা সব্‌ডিভিসন চব্বিশ-পরগণা জেলার মধ্যে যায় এবং উত্তরাংশ বা বনগ্রাম মহকুমা নদীয়া হইতে যশোহরের অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৮৪২ অব্দে খুলনাকে একটি মহকুমায় পরিণত করা হয়। ইহাই বঙ্গদেশের মধ্যে সৰ্ব্বপ্ৰথম সডিভিসন। সম্পূর্ণ বাগেরহাট এবং যশোহর সদর ও নড়াইলের কতকাংশ ঐ সময়ে খুনা মহকুমার শাসনাধীন হইয়াছিল।

১৮৪৫ অব্দে মাগুরা মহকুমা স্থাপিত হয়। যেখানে মুচিখালী দিয়া গড়ই ও কুমারনদের জল নবগঙ্গায় পড়িতেছিল, সেই সন্ধিস্থলে নবগঙ্গার দক্ষিণমুখী বাঁকের তীরে মাগুরা অবস্থিত। পূৰ্ব্বে এই নদীকূলবর্ত্তী স্থানে মগ প্রভৃতি নানাজাতীয় দস্যুদিগের কিরূপ উপদ্রব ছিল, তাহা পূর্ব্বে বলিয়াছি (১৮শ পরিচ্ছেদ ও ৪১শ পরিচ্ছেদ)। ইংরাজ আমলে এই প্রদেশে সর্ব্বদা ডাকাইতি হইত। উহা দমন করিবার সুবিধার জন্য এই মহকুমা খোলা হয়। ককবার্ণ (Cockburn) সাহেব উহার প্রথম ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট্।

ঝিনেদহ (Jhenidah) বা ঝিনাইদহ নবগঙ্গার কূলে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এখন সেখানে নবগঙ্গা একপ্রকার মরিয়া গিয়াছে। সুতরাং যশোহর-ঝিনেদহ নূতন লাইট-রেলওয়ে ভিন্ন যাতায়াতের অন্য সুবিধা নাই। ওয়ারেণ হেষ্টিংসের সময় হইতে এখানে ভূষণার অধীন চৌকি ছিল। ১৭৮৬ অব্দ পর্য্যন্ত মামুদশাহীর তহশীল কাছারী এখান ছিল। শেরবার্ণ (Sherburne) সাহেব শেষ কালেক্টর ছিলেন। ১৭৮৭ অব্দে মামুদশাহী যশোহর কালেক্টরী ভুক্ত হয়। এখনও মামুদশাহীর নয় আনা অংশের নড়াইল-জমিদারদিগের কাছারী বর্ত্তমান ঝিনেদহের পার্শ্ববর্ত্তী চাকলা নামক স্থানে রহিয়াছে। ১৭৯৩ অব্দে এখানে একটি পুলিস থানা স্থাপিত হয়। নীল-বিদ্রোহের ফলে ১৮৬২ অব্দে এখানে মহকুমা খুলিবার প্রয়োজন হয়।

নড়াইলেও নীল-বিদ্রোহের সময়ে ১৮৬১ অব্দে মহকুমা হয়। প্রথমতঃ ফরিদপুরের অন্তর্গত গোপালগঞ্জে এই মহকুমার স্থান নির্ব্বাচিত হয়; পরে অতি অল্প সময় মধ্যে সেখান হইতে ক্রমান্বয়ে বারাসিয়া কূলে ভাটিয়াপাড়া, নবগঙ্গার কূলে লোহাগড়া ও নদীর পরপারে কুমারগঞ্জে (চণ্ডীবরপুর) এবং অবশেষে নড়াইলে মহকুমার সদর ষ্টেশন স্থাপিত হয়।

১৮৬১ অব্দে সাতক্ষীরা মহকুমা গঠিত হয় এবং দুই বৎসর পরে উহা চব্বিশ পরগণার অন্তৰ্ব্বৰ্ত্তী হইয়া যায়। ১৮৬৩ অব্দে বাগেরহাটও একটি মহকুমা বলিয়া চিহ্নিত হয়, এতদিন উহা খুলনারই মধ্যে ছিল। মোরেল সাহেবদিগের অত্যাচার নিবারণ কল্পে এই ব্যবস্থার প্রয়োজন হইয়াছিল। সে কথা পরে বলিব। সৰ্ব্বপ্রথমে বাগ অর্থাৎ বাগানের মধ্যে হাট মিলিয়াছিল বলিয়াই ইহার নাম বাগেরহাট। বাঘ বা ব্যাঘ্রের সঙ্গে এ নামের কোন সম্বন্ধ নাই।

১৮৮১-২ অব্দে বঙ্গীয় গবর্ণমেণ্ট স্থির করিলেন যে, খুনাকে কেন্দ্রস্থান করিয়া সুন্দরবনের জন্য একটি পৃথক্ জেলা গঠন করা প্রয়োজনীয়। এজন্য যশোহরের মধ্য হইতে খুলনা ও বাগেরহাট মহকুমাদ্বয় এবং ২৪-পরগণার মধ্য হইতে সাতক্ষীরা মহকুমা লইয়া খুলনাকে একটি নূতন জেলায় পরিণত করা হয়। ১৮১৬ খৃষ্টাব্দ হইতে সুন্দরবনের শাসন জন্য রেভেনিউ বোর্ডের অধীন একজন পৃথক্ কমিশনার ছিলেন। ১৯০৫ অব্দ হইতে সুন্দরবনের কর্তৃত্বভার সংশ্লিষ্ট তিনটি (২৪-পরগণা, খুলনা ও বাখরগঞ্জ) জেলার কালেক্টরগণের উপর পড়িয়াছে।

তাহা হইলে দেখা গেল, এক্ষণে যশোহর জেলায় সদর মহকুমার সঙ্গে নড়াইল, মাগুরা, ঝিনেদহ ও বনগ্রাম লইয়া মোট পাঁচটি মহকুমা। সমগ্র জেরার পরিমাণ ফল ২,৯০৪ বর্গমাইল এবং ১৯২১ অব্দের গণনানুসারে লোকসংখ্যা ১৭,২২,২১৯ জন। খুলনা জেলায় সদর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এই তিনটি মহকুমা। পরিমাণফল ৪,৭৩০ বর্গমাইল, তন্মধ্যে সুন্দরবনেরই পরিমাণ ২২৯৭ বর্গমাইল। ১৯২১ অব্দের সমাহার (Census) অনুসারে লোকসংখ্যা ১৪,৫৩,০৩৪ জন। উভয় জেলার পরিমাণফল ৭,৬৩৪ বর্গমাইল এবং লোকসমষ্টি ৩১,৭৫,২৫৩ জন।[১]

হেঙ্কেল সাহেবের সময় মুড়লীতে যশোহর জেলার সদর ষ্টেশন ছিল; ১৭৮৯ অব্দে তিনি বদলী হইবার পর, যখন রোক সাহেব (Richard Rocke) কালেক্টর হন, তখন তিনি, কি কারণে ঠিক জানা যায় না, মুড়লী ত্যাগ করিয়া পার্শ্ববর্ত্তী সাহেবগঞ্জে আফিসাদি স্থানান্তরিত করেন। ঐ সময় চাঁচড়ার রাজগণ ঐ জন্য গবর্ণমেণ্টকে ৫০০ বিঘা ভূমিদান করিয়াছিলেন। পাঠান আমলে মুড়লীর নাম ছিল মুড়লী-কা (সহর)। হেঙ্কেলের সময়ে ইংরাজ কর্মচারীরা কেহ কেহ একটু পশ্চিমদিকে ভৈরব-তীরে যেখানে আসিয়া বাস করিতেছিলেন, উহাকে সাহেবগঞ্জ বা সংক্ষেপতঃ কসবা বলিত।[২] ঐ কায় যশোহর জেলার আফিস আদালত আসিলে কর্তৃপক্ষ উহারই নাম রাখিলেন,—যশোহর। কিন্তু সাধারণ লোকে উহাকে কবাই বলিত, এখনও সাধারণ লোকের মধ্যে সে নাম লুপ্ত হয় নাই। ভৈরব-নদ তখনই মরিয়া আসিতেছিল এবং উহা খেয়া নৌকায় পার হইতে হইত। তবে নদীর খাত সংকীর্ণ বলিয়া নৌকায় দড়ি বাঁধা থাকিত এবং উহাই টানিয়া লোকে এপার ওপার যাইত, এজন্য উহাকে ‘দড়াটানার খেয়া’ বলিত। এখন সেখানে দড়াটানার পুল হইয়াছে। ভূষণার রাজস্ব সংগ্রহের ভার যশোহরের উপর পড়িলে, মহম্মদপুর অপেক্ষাকৃত কেন্দ্রস্থান এবং স্রোতস্বিনী মধুমতীর তীরবর্ত্তী বলিয়া ১৭৯৫ অব্দে তথায় সদর ষ্টেশন স্থানান্তরিত করিবার কথা উঠিয়াছিল। কিন্তু সে মতলব কার্য্যে পরিণত হয় নাই। এখন মহম্মদপুরে একটি থানা ও রেজেষ্ট্রী আফিস মাত্র আছে। হেঙ্কেলের সময় জজ্, ম্যাজিষ্ট্রেট ও কালেক্টরের পদ সম্মিলিত হয়, রোক সাহেবের সময় ঐরূপই ছিল; ১৭৯৩ অব্দে তিনি চলিয়া গেলে; কালেক্টরের পদ পুনরায় পৃথক্ হয়। পরে কালেক্টর ও ম্যাজিষ্ট্রেটের এলেকা সব সময়ে এক ছিল না। এখন আবার পদদ্বয়ের সম্মিলনের সঙ্গে এলেকারও ঐক্য হইয়াছে। ১৮৬৪ অব্দে যশোহরে প্রথম মিউনিসিপালিটি হয়, এখন উহা পার্শ্ববর্ত্তী কতকগুলি গ্রামের উপর বিস্তৃত হইয়াছে। যশোহর ব্যতীত কোটচাদপুর ও মহেশপুরে আর দুইটি মাত্র মিউনিসিপালিটি আছে, কিন্তু উহার কোনটি মহকুমা নহে।

খুলনা জেলার সদর ষ্টেশনের কিছু প্রাচীন ইতিহাস আছে। মহকুমা হইবার সময় রূপসা একটি খাল মাত্র ছিল; রূপ সাহা নামক এক লবণের ব্যবসায়ী কর্তৃক উহা প্রথমে খনিত হয়। উহার পূর্ব্বপার অর্থাৎ যে পারকে এখন রেণীগঞ্জ বলে, তাহারই নাম ছিল খুল্লনা বা খুলনা। সেইখানেই প্রাচীন খুল্লনেশ্বরীর মন্দির ছিল।[৩] বড় বেশী দিনের কথা নয়, উহা নদীগর্ভস্থ হইয়াছে। সেই স্থানেই জঙ্গল কাটিয়া প্রাচীন নয়াবাদ (নূতন আবাদ) থানা বসিয়াছিল। রেণী সাহেবের পুরাতন বাটী ও শ্রীরামপুর গ্রামের মধ্যস্থানে এখনও থানার ভিট্টা ও পুকুরের চিহ্ন বিলুপ্ত হয় নাই। ঐ স্থানে লখপুরের চৌধুরীদিগের যে তালুক ছিল, তাহার নাম ‘তালুক খুলনা-ইলাইপুর’। ১৭৬৬ অব্দেও যে খুলনা একটি নগণ্য স্থান ছিল না, তাহার প্রমাণ আছে।[৪] প্রাচীন ম্যাপে খুলনাকে ‘Jessore-Culna’ বলিয়া লিখিত দেখি। ঐ ম্যাপে যশোহর বলিয়া কোন পৃথক সদর ষ্টেশনের উল্লেখ নাই।[৫] তখন খুলনাই ইংরাজ-আমলের যশোহর বিভাগীয় সদর ষ্টেশন বলিয়া মনে হয়।[৬]

১৮৪০ অব্দের কিছু পূর্ব্বে রেণী সাহেব নামক (Henry Sneyd Rainey of the 3rd Buffs) একজন সৈনিক পুরুষ দৈবক্রমে হোগলা পরগণার চারি আনা অংশের মালিক হইয়া প্রাচীন খুলনায় আসেন এবং গবর্ণমেন্টের নিকট হইতে রূপসা-চর এবং লখপুরের চৌধুরীদিগের নিকট হইতে খুলনা-ইলাইপুর তালুকের কয়েকটি পত্তনী লইয়া নয়াবাদের কাছে বাস করেন এবং নিকটবর্ত্তী নানাস্থানে নীল ও ইক্ষুচিনির ১০/১২ টি কুঠি খুলিয়া অত্যাচার অবিচারে প্রজাবৰ্গকে ব্যাকুল করিয়া তুলেন। ওয়েষ্টল্যাণ্ড সাহেব বলেন, রেণী সাহেবকে শাসনাধীন রাখিবার জন্যই খুলনায় প্রথম মহকুমা হয়।[৭] উহার প্রথম জয়েন্ট ম্যাজিষ্ট্রেট M.A.G. Shawe সাহেব।” তিনি মহকুমার কর্ত্তা হইয়া আসিয়া রেণীর বাড়ীর কাছে তাঁবুতে কাছারী আরম্ভ করেন। তখনকার দিনে বর্ণের সাম্যই সম্প্রীতির কারণ হইত; কথিত আছে, শ-সাহেব প্রথম হইতেই রেণীর পক্ষপাতী হন। জামাতৃ-পদ লাভের অভিসন্ধি উহার মূলীভূত কারণ কিনা বলা যায় না। যাহা হউক, অল্পদিন মধ্যে রেণী সাহেব নবাগত সরকারী কর্মচারীর যোগে বন্দোবস্ত করিয়া, নিজের হোগলা- পরগণার অন্তর্গত টুটপাড়া গ্রামে জমি বদল দিয়া মহকুমার স্থান রূপসার পশ্চিম পারে সরাইয়া দেন। তদবধি টুপাড়া গ্রামের একাংশ খুলনা নামে অভিহিত হইয়া একটি প্রধান স্থান হইয়া দাঁড়াইয়াছে। রেণীর ইতিহাস আমরা পরে দিব।

খুলনার বাজারকে এখনও ‘সাহেবের হাট’ বলে। উহা তখন খালিসপুরের মধ্যবর্তী ছিল। খালিসপুরে অনেকদিন হইতে একটি বড় নীলকুঠি ছিল; এক সময় তাহার কর্তা ছিলেন চোলেট (Chollet) সাহেব। সাধারণ লোকে তাঁহাকে স্যালেট বলিত এবং সেই জন্য হাটের নাম হইয়াছিল, ‘স্যালেট সাহেবের হাট’। ওয়েষ্টল্যাণ্ড সাহেব যে চার্লস সাহেবের নামে হাটের নাম Charligunj বলিয়াছেন, তাহা সত্য নহে। এই হাট সে সময়েও বুধ ও শনিবারে বসিত, এখন প্রত্যহ দুইবেলা বাজার হইলেও সেই দুইদিনে হাট বসে। বাজারের পশ্চিম দিকে নদীতীরে উক্ত চোলেট সাহেবের বাড়ী ছিল; বহু সংস্কারের পর তাহা এখনও ষ্টীমারঘাটের পার্শ্বে খাড়া আছে এবং উহা রেলওয়ে গার্ডদিগের আবাস-বাটিকায় পরিণত হইয়াছে। ইহাই খুলনার সর্ব্বাপেক্ষা পুরাতন অট্টালিকা।

.

পাদটীকা :

১. ১৯১১ অব্দের গণনায় যশোহরের লোকসংখ্যা ১৯০১ অপেক্ষা ৩০৩ জন কমিয়াছিল, পরবর্ত্তী দশবৎসরে উহা শতকরা ১.২ জন কমিয়াছে। খুলনার লোকসংখ্যা ১৯১১ অব্দে দশবৎসরে শতকরা ৯ জন বাড়িয়াছিল, পরবর্ত্তী সমাহারে উহার বৃদ্ধির পরিমাণ শতকরা ৬.৮ জন করিয়া ঠিক হইয়াছে। [প্রকাশিত ‘Census, 1921’ অনুযায়ী সংখ্যাগুলি সংশোধিত—শি মি]

২. লোকে কসবা শব্দের অর্থ ভুলিয়া গিয়া উহাকে একটি স্থানের নাম বলিয়া মনে করিত। তাহারা ভাবিত মুড়লী-কসবা দুইটি স্থানের জোড়া নাম। এজন্য মুড়লীর পার্শ্ববর্তী সাহেবগঞ্জ কসবা বলিয়াই পরিচিত হইল, বাস্তবিক যশোহর সহরকে মুড়লীরই অংশ বলিতে পারি।

৩. খুল্লনেশ্বরীর মন্দিরের ঠিক অপর পারে “উলুবু’নের কালীবাড়ী”, কেহ কেহ বলেন সেটি ‘লহনেশ্বরী’। প্রাচীনকালে চাঁদ সওদাগরের দুই পত্নী, লহনা ও খুল্লনার নামে ভৈরবের ‘দুইপারে দুইটি কালীবাড়ী ছিল। নদীর ভাঙ্গনের জন্য দুইটি কালীবাড়ীই এক্ষণে স্থানান্তরিত হইয়াছে।

৪. ১৭৬৬ অব্দে পশরনদীর দক্ষিণভাগে Falmouth নামক একখানি জাহাজ ডুবিয়াছিল, তৎপ্রসঙ্গে সরকারী কাগজপত্রে দেখিতে পাই :

“The Buxey (বকসী) lays before the Board an account of charges incurred in the Buxey connah (বকসী খানা) in Budgerows (বজরা), Boats and necessaries suppled at Culnea (Khulna), and sent from hence for the relief of the people saved from the ‘Falmouth’ amounting to Rs. 10. 135, which is ordered to be paid.”-Long, Rev. J., Selections. Vol. I.p 457.

৫. Map published with Vol. IV of Selections of Calcutta Gazettes, by SetonKarr.

৬. Calcutta Review, Vol. 66, 1878, p. 418-article on Jessore, by H. J. Rainey. এই লেখক উল্লিখিত রেণী সাহেবের মধ্যম পুত্ৰ।

৭. ‘A sub-division, the first established in Bengal, was set up here (khulna) in 1842. Its chief object was to hold in check Mr. Rainey, who had purchased a zemindari in the vicinity and resided at Nihalpur and who did not seem inclined to acknowledge the restrains of law.’- Westland, Jessore, 1871. p. 284.

৮. খুলনার বিবরণে ওয়েষ্টল্যাণ্ড সাহেব ভুল করিয়াছেন। তিনি বলেন প্রথম মহকুমা ম্যাজিষ্ট্রেটের নাম শোর (Mr. Shore’), তাহা সত্য নহে।-Cal, Rev, Vol. 66, 1878. p. 418.

সকল অধ্যায়

১. ১. উপক্রমণিকা
২. ২. পাঠান রাজত্বের শেষ
৩. ৩. বঙ্গে বারভুঞা
৪. ৪. প্রতাপাদিত্যের ইতিহাসের উপাদান
৫. ৫. পিতৃ-পরিচয়
৬. ৬. পাঠান রাজত্বের পরিণাম ও যশোর-রাজ্যের অভ্যুদয়
৭. ৭. যশোর-রাজ্য
৮. ৮. বসন্ত রায়
৯. ৯. যশোহর-সমাজ
১০. ১০. গোবিন্দদাস
১১. ১১. বংশ-কথা
১২. ১২. প্রতাপাদিত্যের বাল্যজীবন
১৩. ১৩. আগ্রার রাজনীতি ক্ষেত্ৰ
১৪. ১৪. প্রতাপের রাজ্যলাভ
১৫. ১৫. যশোরেশ্বরী
১৬. ১৬. প্রতাপাদিত্যের রাজধানী
১৭. ১৭. প্রতাপের আয়োজন
১৮. ১৮. মগ ও ফিরিঙ্গি
১৯. ১৯. প্রতাপের দুর্গ-সংস্থান
২০. ২০. নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থা
২১. ২১. লোক-নির্বাচন
২২. ২২. সৈন্যগঠন
২৩. ২৩. প্রতাপের রাজত্ব
২৪. ২৪. উড়িষ্যাভিযান ও বিগ্ৰহ-প্ৰতিষ্ঠা
২৫. ২৫. বসন্ত রায়ের হত্যা
২৬. ২৬. সন্ধি-বিগ্রহ
২৭. ২৭. খৃষ্টান পাদরীগণ
২৮. ২৮. কার্ভালো ও পাদ্রীগণের পরিণাম
২৯. ২৯. রামচন্দ্রের বিবাহ
৩০. ৩০. প্রথম মোগল-সংঘর্ষ : মানসিংহ
৩১. ৩১. মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধ ও সন্ধি
৩২. ৩২. দ্বিতীয় মোগল-সংঘর্ষ : ইসলাম খাঁ
৩৩. ৩৩. শেষ যুদ্ধ ও পতন
৩৪. ৩৪. প্রতাপাদিত্য সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৩৫. ৩৫. যশোহর-রাজবংশ
৩৬. ৩৬. যশোহরের ফৌজদারগণ
৩৭. ৩৭. নলডাঙ্গা রাজবংশ
৩৮. ৩৮. চাঁচড়া রাজবংশ
৩৯. ৩৯. সৈয়দপুর জমিদারী
৪০. ৪০. রাজা সীতারাম রায়
৪১. ৪১. সীতারাম : বাল্যজীবন ও জমিদারী
৪২. ৪২. সীতারাম : রাজ্য ও রাজধানী
৪৩. ৪৩. সীতারাম : রাজত্ব ও ধৰ্ম্মপ্রাণতা
৪৪. ৪৪. সীতারাম : মোগল সংঘর্ষ ও পতন
৪৫. ৪৫. সীতারাম : বংশ, রাজ্য ও কীর্ত্তির পরিণাম
৪৬. ৪৬. সীতারাম সম্পর্কিত কয়েকটি বংশ
৪৭. ৪৭. প্রাক্-ইংরাজ আমলে রাজন্য-বংশ
৪৮. ১. বৃটিশ-শাসন ও হেঙ্কেলের কীৰ্ত্তি
৪৯. ২. যশোহর-খুলনা : গঠন ও বিস্তৃতি
৫০. ৩. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
৫১. ৪. ভূসম্পত্তির স্বত্ব-বিভাগ
৫২. ৫. নড়াইল জমিদার-বংশ
৫৩. ৬. নব্য জমিদারগণ
৫৪. ৭. বাণিজ্য-তুলা, চিনি ও নীল
৫৫. ৮. নীলের চাষ ও নীল-বিদ্রোহ
৫৬. ৯. রেণী ও মরেল-কাহিনী
৫৭. ১০. সমাজ ও আভিজাত্য
৫৮. ১১. শিল্প ও স্থাপত্য
৫৯. ১২. সাহিত্য
৬০. এক – প্রতাপাদিত্যের পতন
৬১. দুই – প্রতাপাদিত্যের সভায় খ্রীষ্টান পাদরী
৬২. তিন – প্রতাপাদিত্য সম্বন্ধে কিছু নূতন সংবাদ
৬৩. সতীশচন্দ্র মিত্র

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন