দেশনায়ক – ৪২

ত্রিপুরী অধিবেশনে যোগদানের জন্যে নিদারুণ অসুস্থ শরীর নিয়ে সুভাষচন্দ্র ৬ মার্চ জব্বলপুরে উপস্থিত হন। পরের দিন বিষয়-নির্বাচনী কমিটিতে গোবিন্দবল্লভ পন্থ একটি প্রস্তাব তুললেন। প্রস্তাবটিতে বলা হল: ত্রিপুরীর কংগ্রেস অধিবেশন গত বিশ বছর ধরে মহাত্মা গান্ধীর নির্দেশমত যে সব মৌলিক নীতির দ্বারা পরিচালিত হয়ে এসেছে তার প্রতি আস্থা প্রকাশ করছে। কোনও ক্রমেই ওই নীতি থেকে সরে আসা উচিত হবে না। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বিগত বৎসরের কার্যক্রমের প্রতি আস্থা জানাচ্ছে এবং ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে যেসব সন্দেহপ্রকাশমূলক মন্তব্য করা হয়েছে তার জন্য দুঃখপ্রকাশ করছে। আগামী দিনের সঙ্কটকালে গান্ধীজিই কংগ্রেস ও সমগ্র দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে জয়যুক্ত করতে পারেন। তাঁর আস্থাভাজন হওয়া কংগ্রেস পরিচালকমণ্ডলীর পক্ষে অপরিহার্য। গান্ধীজির পছন্দমত ব্যক্তিদের নিয়েই নতুন ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের জন্যে কংগ্রেস সভাপতিকে অনুরোধ জানান হচ্ছে।

পন্থের এই প্রস্তাবের আক্রমণের লক্ষ্য এবং মর্মকথা দিনের আলোর মতোই সুস্পষ্ট ছিল। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা এবং নব নির্বাচিত সভাপতিরূপে গান্ধীজির কাছে তাঁর আত্মসমর্পণ করার প্রস্তাব। গান্ধীজি নিজে ত্রিপুরী অধিবেশনে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি রাজকোটে জয়পুরের রাজাদের সঙ্গে প্রজামণ্ডলের দাবি নিয়ে এক সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। ওই সমস্যা যতই জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, তা ত্রিপুরী অধিবেশনের চেয়েও জরুরি ছিল না। ত্রিপুরী অধিবেশনের অভূতপূর্ব সঙ্কট যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল তাতে গান্ধীজির উপস্থিতি একান্তই অপরিহার্য ছিল। রাজকোটের সমস্যার সমাধান প্রচেষ্টা মাত্র ক’দিনের জন্যে পিছিয়ে দিলে তেমন কোনও ক্ষতি হত না। গান্ধীজির অনুপস্থিতির পিছনে যে রাজনৈতিক কৌশল কাজ করেছে সে রকম মনে হওয়া স্বাভাবিক ছিল। বড়লাট লিনলিথগো ৭ মার্চ এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন যে, গান্ধীজি ত্রিপুরীতে যান আর নাই যান, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, তিনি সুভাষচন্দ্রকে ‘কনুই’-এর ধাক্কা দিয়ে কোণঠাসা করেছেন এবং নিজেকে মঞ্চের আলোর সামনে নিয়ে এসেছেন (‘Whether he goes to Tripuri or not he has beyond any question completely elbowed the unhappy Bose out into the cold…and has concentrated the spotlight on himself’.)। বড়লাট খুব ভুল কিছু বলেননি!

তুমুল বিতর্ক ও বাদানুবাদের পর পন্থ প্রস্তাবটি ২১৮-১৩৫ ভোটে গৃহীত হয়। মাত্র কয়েকদিন পূর্বেই সভাপতি পদে নির্বাচনে সাফল্যের পর এই ফলাফল অপ্রত্যাশিত মনে হলেও খুব বিস্ময়কর ছিল না। সুভাষচন্দ্র পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পরেই তাঁর প্রবল প্রতাপ ও প্রভাবশালী বিরোধীপক্ষ সুপরিকল্পিতভাবে তাঁকে সভাপতি রূপে নিষ্ক্রিয় করার উদ্যোগ নেন। আবেগপ্রবণ সুভাষচন্দ্রের তুলনায় তাঁরা ছিলেন অনেক ধীর স্থির ও কৌশলী। তাঁদের প্রথম লক্ষ্য ছিল সুভাষচন্দ্র যেন সত্যিই সুসংহত ও কর্মক্ষম কোনও ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করতে না পারেন। ওয়ার্কিং কমিটি যদি সভাপতির পছন্দমত না হয়, তাঁর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা না করেন তাহলে তাঁর পক্ষে কংগ্রেস সংগঠন পরিচালনা ও নিজের নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা অসম্ভব হবে। প্রবীণ গান্ধীপন্থী নেতারা সভাপতি পদে তাঁদের মনোনীত প্রার্থীকে জয়ী করতে না পারলেও সামগ্রিকভাবে কংগ্রেস সংগঠনে তাঁদের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ ছিল অনেক বেশি। গান্ধী-অনুগত দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীরূপেও তাঁরা ছিলেন অনেক বেশি সংগঠিত। রাজনীতির পিচ্ছিল পথ ও কূট-কৌশলের সঙ্গে তাঁদের প্রত্যক্ষ পরিচয় ছিল অনেক বেশি। কেমন ভাবে ও কী উপায়ে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা যায় সেই বিষয়ে তাঁরা ছিলেন অভিজ্ঞ। তুলনামূলকভাবে এইসব দিক থেকেই সুভাষচন্দ্র ছিলেন কম অভিজ্ঞ ও দক্ষ। তাঁর শক্তির প্রধান উৎস ছিল এক উজ্জ্বল ভাবমূর্তি, সম্মোহনী ভগবদ্দত্ত আধ্যাত্মিক শক্তি। সঙ্গী সাথী ও সহকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার ক্ষমতা। ইংরাজি পরিভাষায় charisma। কিন্তু সারা দেশে তাঁর জনপ্রিয়তা থাকলেও বিভিন্ন প্রদেশে তিনি তাকে সাংগঠনিক রূপ দিতে পারেননি। সেই সুযোগ ও সময়ও তিনি পাননি। তিনি এগার বার কারাবরণ করেছিলেন। তাঁর ওপর যে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন হয়েছিল তা অন্য কোনও সর্বভারতীয় নেতাকে সহ্য করতে হয়নি। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে দীর্ঘ সময় তিনি ইউরোপে ছিলেন। ভারত সরকার, বাংলা সরকার, গোয়েন্দা-পুলিশ বাহিনী এবং ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রধান শত্রু। কোনও সময়ে এক মুহূর্তের জন্যেও তিনি সরকারি রোষানল ও সতর্কদৃষ্টি থেকে মুক্তি পাননি। তাঁর মনোবল ও লৌহসঙ্কল্প এতটুকু শিথিল না হলেও তাঁর স্বাস্থ্য সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গিয়েছিল। সুভাষচন্দ্রের আকর্ষণী শক্তি ও জনপ্রিয়তা সম্পর্কে আর একটি কথা স্মরণ রাখা প্রয়োজন। তিনি ছিলেন যৌবনের প্রতীক। ভারতবর্ষের জাগ্রত যুবশক্তির কাছে তিনি ছিলেন জ্বলন্ত দেশপ্রেম, সর্বত্যাগী মুক্তিসংগ্রামী এক আদর্শ পুরুষ। কিন্তু কংগ্রেস সংগঠনে, রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী উচ্চমহলে এবং নীতি ও কার্যসূচী নির্ধারণে ছাত্র-যুব সমাজের প্রভাব ও ভূমিকা ছিল গৌণ। সুভাষচন্দ্র ১৯৩৮-১৯৩৯ সালে, বিশেষ করে হরিপুরা কংগ্রেসে ও ত্রিপুরী অধিবেশনের সঙ্কটকালে কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পার্টি ও অন্যান্য বামপন্থী দল এবং গোষ্ঠীর সমর্থন পেয়েছিলেন। কিন্তু ওই সমর্থনের ভিত দুর্বল ছিল। কংগ্রেসের মধ্যে বামপন্থীদের দুর্বলতা সুভাষচন্দ্রের অজানা ছিল না। সভাপতি পদের নির্বাচনের দু’ সপ্তাহ পূর্বে ‘ইউনাইটেড প্রেস’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন (১৫ জানুয়ারি, ১৯৩৯), “আমি দেখতে পাচ্ছি সংখ্যাধিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত বামপন্থীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিরোধ ও বিসম্বাদে বিদীর্ণ। কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থীরা গত কয়েকমাসে শক্তি সঞ্চয় করা দূরে থাকুক, শক্তি খুইয়েছে।” সুভাষ-সমর্থক বামপন্থীদের দুর্বলতা ও দ্বিধা পরিবর্তিত পরিস্থিতির চাপে আরও প্রকট হয়েছিল।

ত্রিপুরী কংগ্রেসে সুভাষচন্দ্রের সভাপতির ভাষণ (১০ মার্চ) ছিল সংক্ষিপ্ত। তিনি নিজে অসুস্থতার জন্যে ভাষণটি দিতে পারেননি। শরৎচন্দ্র বসু এটি পাঠ করেছিলেন। রাজকোটের সমস্যার প্রশ্নে গান্ধীজি অনশন শুরু করেছিলেন। সমস্যার সন্তোষজনক মীমাংসার পর তিনি অনশন ভঙ্গ করেন। সুভাষচন্দ্র তার জন্যে আনন্দ প্রকাশ করেন। প্যাটেল, আজাদ, রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রমুখদের ওয়ার্কিং কমিটি থেকে পদত্যাগ এবং জওহরলালের কার্যত পদত্যাগের উল্লেখ করলেও তিনি ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি মিউনিখ চুক্তির (সেপ্টেম্বর, ১৯৩৮) উল্লেখ করে বলেন ওই চুক্তির ফলে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানীকে আরও আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণে প্ররোচিত করেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গ্রেট ব্রিটেনের দুর্বলতা সুস্পষ্ট হয়েছে। এর সুযোগ গ্রহণ করে এখনি স্বরাজের দাবিটি উত্থাপন করে একটি চরমপত্র দাখিল করতে হবে। উত্তরের জন্যে ব্রিটিশ গভর্নমেন্টকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দিতে হবে। যদি অসন্তোষজনক উত্তর কিংবা আদৌ উত্তর না পাওয়া যায় তাহলে জাতীয় দাবি আদায়ের জন্যে সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্রিটিশ সরকার বর্তমানে সর্বভারতীয় সত্যাগ্রহের মতো বৃহৎ সংগ্রামের মুখোমুখি দাঁড়াতে প্রস্তুত নয়’। এই রকম সংগ্রামের সময় এখনও আসেনি বলে সংশয় প্রকাশ দুঃখজনক। এরকম বিরল সুযোগ গ্রহণ করতে না পারলে তা রাজনৈতিক অদূরদর্শিত হবে। পরিশেষে তিনি কংগ্রেসের মধ্যে ঐক্য প্রতিঠার জন্যে আবেদন করে বলেন যে তাঁর বিশ্বাস ‘মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া’ দূর হবে। মহাত্মা গান্ধী জাতিকে পরিচালনা করে কংগ্রেসকে বর্তমান সঙ্কটমুক্ত করতে সহায়তা করবেন।

সুভাষচন্দ্রের ভাষণে সুস্পষ্ট ছিল যে তিনি দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থীদের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে গভীরভাবে আগ্রহী। সাম্প্রতিক মতভেদ, মতান্তর এবং তিক্ততা ভুলে এক শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করতে উদগ্রীব। ওয়ার্কিং কমিটি গঠনে, কংগ্রেসের নীতি ও কর্মসূচী রূপায়ণে সকল দল ও মতের যথাযথ স্বীকৃতি এবং মর্যাদা দিতে তিনি প্রয়াসী। মতপার্থক্য সত্ত্বেও গান্ধীজির প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা আছে। গান্ধীজিই ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের জন্যে শেষ ও চূড়ান্ত সংগ্রামের নেতৃত্ব দান করুন।

ত্রিপুরী কংগ্রেসের অব্যবহিত পরেই সুভাষচন্দ্র ঐকান্তিকভাবে তাঁর লক্ষ্যসাধনের জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যান। তাঁর দৃঢ় ধারণা ছিল যে, মহাত্মা গান্ধীই কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন। সর্দার প্যাটেল, গোবিন্দবল্লভ পন্থ, রাজেন্দ্র প্রসাদ, মৌলানা আজাদ, কৃপালনী প্রমুখ নেতারা তাঁর একান্ত অনুগত হলেও গান্ধীজি নিজে সব সঙ্কীর্ণতা, গোষ্ঠীতন্ত্র, ব্যক্তিস্বার্থ, বিদ্বেষ-বিরূপতার ঊর্ধ্বে। মতপার্থক্য, প্রকাশ্য বিরোধ-বিতর্ক এবং তাঁর পুনর্নির্বাচনে গান্ধীজির অসন্তোষ সত্ত্বেও গান্ধীজি তাঁর আবেদনে সাড়া দেবেন। ওয়ার্কিং কমিটির থেকে ১২ জন সদস্যদের পদত্যাগ করার ফলে যে অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তার সুষ্ঠু ও সম্মানজনক মীমাংসায় গান্ধীজি সাহায্য করবেন। জওহরলালও গান্ধীজির পরামর্শ ও ইচ্ছার বিরোধিতা করবেন না। গান্ধীজিকে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালত বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু সুভাষচন্দ্র অন্যদের মতো ‘অন্ধ গান্ধীভক্ত’ ছিলেন না। মৌলিক নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে কারোর সঙ্গেই তিনি আপস করতেন না। গান্ধীজি জ্ঞানত কোনও অন্যায়-অবিচার করবেন না, এই বিশ্বাস সুভাষচন্দ্রের বদ্ধমূল ছিল। সিতারামাইয়ার পরাজয়কে নিজের পরাজয় রূপে বর্ণনা করার পরেও সুভাষচন্দ্র উপলব্ধি করেননি (বা করতে চাননি) যে, তাঁর মূল বিরোধ গান্ধীজির সঙ্গেই। তিনিই তাঁর আসল প্রতিপক্ষ। অন্যরা যা কিছু বিবৃতি দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ও কৌশল গ্রহণ করেছেন তার পিছনে গান্ধীজির পরোক্ষ বা প্রচ্ছন্ন অনুমোন আছে। তাঁকে না জানিয়ে, তাঁর অনুমোদন সম্বন্ধে নিশ্চিত না হয়ে তাঁদের পক্ষে কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া অসম্ভব।

গান্ধীজির সঙ্গে সাক্ষাতে খোলাখুলি আলোচনা করে তিনি নতুন ওয়ার্কিং কমিটি গঠনে গান্ধীপন্থী নেতাদের সহযোগিতা পাবেন আশা করেই সুভাষচন্দ্র অসুস্থ শরীর নিয়ে ওয়ার্ধায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও ফল হয়নি। এরপর গোবিন্দবল্লভ পন্থ যখন কার্যত সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন তখনও সুভাষচন্দ্রের সন্দেহ ছিল পন্থের প্রস্তাবের বয়ান গান্ধীজি দেখেছিলেন কি না বা ওই বিষয়ে তাঁর অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল কি না। অথচ ত্রিপুরীতে ব্যাপকভাবে এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল যে পন্থ, প্যাটেল প্রমুখের প্রস্তাবের পিছনে গান্ধীজির সমর্থন আছে। সুভাষচন্দ্র এটা বিশ্বাস করেননি। ওয়ার্কিং কমিটি গঠন, কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও সঙ্কট, বিশ্ব পরিস্থিতি সম্বন্ধে দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতি নির্ধারণ এবং ব্রিটিশ সরকারকে অবিলম্বে চরমপত্র দিয়ে দেশজুড়ে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করা নিয়ে গান্ধীজি ও সুভাষচন্দ্রের মধ্যে দীর্ঘ পত্রালাপ (২৪ মার্চ-৬ মে, ১৯৩৯) হয়েছিল। ২৭ এপ্রিল সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে গান্ধীজির কলকাতায় সাক্ষাতও হয়। সুভাষচন্দ্র পন্থ-প্রস্তাব অনুযায়ী ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করার জন্যে গান্ধীজিকে অনুরোধ করেন। তাঁর (গান্ধীজির) সিদ্ধান্ত মেনে নেবার প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু গান্ধীজি তাতেও অসম্মত হন। তিনি বলেন সভাপতি হিসেবে সুভাষচন্দ্রের নিজের পছন্দমত ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। অথচ গান্ধীজি ভালভাবেই জানতেন যে, তাঁর ভক্তদের সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে তাঁদের বিরোধিতা সত্ত্বেও তাঁর পক্ষে সভাপতি রূপে কাজ করা অসম্ভব। ওই পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে পদত্যাগ ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। শেষপর্যন্ত সুভাষচন্দ্র পদত্যাগই করেছিলেন (৩০ এপ্রিল, ১৯৩৯)।

গান্ধী-সুভাষ বার্তা ও পত্র বিনিময় উভয়ের মধ্যে মতবিরোধ তথা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক যুগসন্ধিক্ষণের মূল্যবান দলিল। এইগুলির ঐতিহাসিক মূল্য অসীম। কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের অবসান ঘটিয়ে, গান্ধীজির নেতৃত্বে অবিলম্বে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদের জন্যে গণ-আন্দোলন শুরু করার জন্যে সুভাষচন্দ্র অধীর হয়ে পড়েছিলেন। গান্ধীজির পরামর্শ ও নির্দেশ মেনে নিতে সম্মত ছিলেন শুধু একটি মাত্র শর্তে। সেটি হল, ব্রিটিশ সরকারকে চরমপত্র ও গ্রহণযোগ্য উত্তর দেবার সময়সীমা বেধে দিয়ে চূড়ান্ত সংগ্রাম শুরু করার স্থির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু গান্ধীজির অভিমত ছিল যে, উপযুক্ত সময়, পরিস্থিতি ও পরিবেশ তখনও সৃষ্টি হয়নি। সুভাষচন্দ্রের প্রতি ব্যক্তিগত স্নেহ ও শুভ কামনা জানালেও গান্ধীজি তাঁর অবস্থান থেকে এতটুকু সরে আসেননি। নমনীয়তা দেখাননি। গান্ধীজির সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে সুভাষচন্দ্র এত বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন যে, কারোর কারোর কাছে তা প্রায় তাঁর ‘আত্মসমর্পণ’-এর ইচ্ছা বলে মনে হয়েছিল। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। গান্ধীজিকে তিনি লিখেছিলেন (২৯ মার্চ, ১৯৩৯), “আমি প্রকৃতিগত ভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ ব্যক্তি নই এবং বিরোধ পুষে রাখি না। এক অর্থে আমার মনোবৃত্তি মুষ্টিযোদ্ধার মতো অর্থাৎ মুষ্টিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে হাসিমুখে করমর্দন করি এবং খেলোয়াড়ি মনোবৃত্তিতে ফলাফল গ্রহণ করি।”

গান্ধীজি সুভাষচন্দ্রকে জানিয়েছিলেন যে, পন্থ-প্রস্তাবের কোনও অনুলিপি তাঁকে পাঠান হয়নি। কয়েকদিন পরে এলাহাবাদে না আসা পর্যন্ত প্রস্তাবটি তাঁর চোখেও পড়েনি। গান্ধীজির এই কথা জেনে সুভাষচন্দ্র তাঁর বিস্ময় প্রকাশ করে লেখেন, “ত্রিপুরীতে এই গুজবে আকাশ ভরপুর ছিল যে প্রস্তাবটির পিছনে আপনার পূর্ণ সমর্থন ছিল। আমরা যখন ত্রিপুরীতে ছিলাম তখন এই মর্মে একটি বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।” প্রশ্ন ওঠে, সত্যিই কি এটি ভিত্তিহীন গুজব মাত্র ছিল? গান্ধীজি পন্থ-প্রস্তাব পড়েননি এবং তাঁকে ওই বিষয়ে কিছু জানান হয়নি? এই প্রশ্নের উত্তর কঠিন। গান্ধীজি সারা জীবন সত্যের পূজারী ছিলেন। সত্য নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাই ছিল মহাত্মা গান্ধীর জীবনের মূল কথা। সুতরাং তাঁর পক্ষে অসত্য ভাষণ ছিল অসম্ভব। অন্য দিকে পুনর্নির্বাচিত সভাপতি সুভাষচন্দ্রের প্রতি কংগ্রেস অধিবেশনের মধ্যেই অনাস্থা প্রকাশ করে প্রস্তাব আনার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গান্ধীজির সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে তাঁর একান্ত অনুগত ও বিশ্বস্ত কংগ্রেস নেতাদের পক্ষে আনা অসম্ভব ছিল। সমস্ত প্রস্তাবটির মূল সুর ছিল গান্ধী বনাম সুভাষচন্দ্র। পন্থ পরে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, তাঁরা গান্ধীজির পক্ষে ছিলেন, সুভাষের বিপক্ষে নয়। এ ছিল লৌকিক ভাষায় ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র চেষ্টা মাত্র। গান্ধীজিকে সরাসরি যুক্ত করে এরকম একটি প্রস্তাব, যা প্রকৃত অর্থে সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা জেহাদ ঘোষণার নামান্তর মাত্র ছিল, গান্ধীজির অজ্ঞাতসারে আনা সম্ভব ছিল না। এই রহস্যের সমাধানের সূত্র সম্ভবত আছে গান্ধীজি সম্বন্ধে একটি প্রসিদ্ধ উক্তিতে। তাকে বলা হয়েছে ‘A politician saint’। আসলে গান্ধীজির মধ্যে এক সন্ত বা মহাপুরুষ এবং এক ধুরন্ধর রাজনীতিবিদের দ্বৈত সত্তা ছিল। মাঝে মাঝেই তার প্রকাশ ঘটত।

গান্ধীজি কোনও অসত্য ভাষণ করেননি। তিনি পন্থ-প্রস্তাবটি পড়েননি। প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রিপুরীতে বিষয়-নির্বাচনী সভায় পেশ করার পূর্বে তিনি তা দেখেননি। প্রস্তাবের বয়ান তাঁর জানা ছিল না। কিন্তু ওই রকম একটি উদ্যোগ যে পন্থ প্যাটেল প্রমুখ নিতে চলেছেন তা তিনি জানতেন। তাঁর সমর্থনও তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন। এরপর যা কিছু করার করেছিলেন তাঁর ভক্তরা। ত্রিপুরীর ঘটনা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দ্রোণাচার্যের হত্যায় যুধিষ্ঠিরের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দ্রোণাচার্যকে বধ না করলে পাণ্ডবদের পক্ষে যুদ্ধে জয়লাভ অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। কিন্তু পুত্র অশ্বত্থামার মৃত্যু হয়েছে একমাত্র এই সংবাদ শুনলে দ্রোণাচার্য অস্ত্রত্যাগ করবেন বলে সঙ্কল্প করেছিলেন। আর তা না করলে দ্রোণাচার্যকে বধ করা ছিল অসম্ভব। তাই শেষপর্যন্ত ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে দ্রোণাচার্যকে শোনাতে হয়েছিল, ‘অশ্বত্থামা হত, ইতি গজঃ’। মহাত্মা গান্ধীর বক্তব্য ছিল দ্রোণাচার্য বধে যুধিষ্ঠিরের ভূমিকার মতো। ত্রিপুরীর ঘটনা এবং শেষপর্যন্ত সুভাষচন্দ্রের পদত্যাগ ও কংগ্রেস থেকে তাঁকে বহিষ্কারের আদেশ অভিমন্যুর কথাও স্মরণ করায়। চক্রব্যূহে প্রবেশ করে বীর অভিমন্যু সংগ্রাম করেছিলেন সাত মহারথীর বিরুদ্ধে। সুভাষচন্দ্র সংগ্রাম করেছিলেন বল্লভভাই প্যাটেল, গোবিন্দবল্লভ পন্থ, রাজেন্দ্র প্রসাদ, আবুল কালাম আজাদ, আচার্য কৃপালনী, রাজাগোপালাচারি, ভুলাভাই দেশাই, পট্টভি সিতারামাইয়া, সরোজিনী নাইডু প্রমুখ মহারথীদের বিরুদ্ধে। এঁদের সঙ্গে পরোক্ষভাবে ছিলেন জওহরলাল নেহরুও। মহারথীদের পিছনে অলক্ষ্যে ছিলেন স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী। অভিমন্যু চক্রব্যূহের মধ্যেই প্রাণ দিয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র কিন্তু বেরিয়ে এসে সংগ্রাম চালিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সংগ্রাম কংগ্রেসের যে মহারথীরা তাঁকে কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে ছিল না। অমিত শক্তিশালী ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে—স্বদেশে এবং দেশের বাইরে। নেতাজিরূপে বিভিন্ন ভাষণে তিনি গান্ধীজি ও জওহরলালকে সম্মান ও স্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কোনও তিক্ততা বা বিদ্বেষ তাঁকে স্পর্শ করেনি। প্রকৃত অর্থেই তিনি ‘খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব’-এর (sportsmanship) দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

কংগ্রেসের যে নেতারা সুভাষচন্দ্রের বিরোধিতা করেছিলেন, রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা ও কিছুটা ব্যক্তিগত বিদ্বেষের পরিচয় কখনও কখনও দিয়েছিলেন তাঁদেরও স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষ গঠনে অবদান অবিস্মরণীয়। রাজনৈতিক জীবনে ঘটনাচক্রে আবিলতার আবর্তে পড়া দুঃখজনক হলেও এটি কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল না। তিরিশের দশকে গান্ধীজির নেতৃত্বকে কেউ চ্যালেঞ্জ করবেন, তাঁর নীতি ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং বিচারবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন, এটি ছিল তাঁদের কাছে অসহনীয়। গান্ধীজি নিজেও তাঁর অনুগামীদের পূর্ণ আনুগত্য চাইতেন। কিন্তু সুভাষচন্দ্র ১৯৩৪ সালেই বলেছিলেন, “মহাত্মার ক্ষেত্রে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী বিপজ্জনক। কিন্তু একটি বিষয় সুনিশ্চিত। মহাত্মা আর কারও নেতৃত্ব মেনে নেবেন। না।” ১৯৩৮-১৯৩৯-এ সুভাষচন্দ্র কিন্তু ঠিক তাই-ই করেছিলেন। গান্ধীজির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা, তাঁর খ্যাতি, জনপ্রিয়তা এবং কংগ্রেস সংগঠনে ও জনচিত্তে তাঁর অনন্যসাধারণ মর্যাদার সম্বন্ধে পূর্ণ সচেতন হয়েও তিনি গান্ধীজির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। এই বিদ্রোহ ব্যক্তি গান্ধীর বিরুদ্ধে ছিল না। তাঁর নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও নয়। সুভাষচন্দ্র প্রথমে প্রতিবাদ ও পরে বিদ্রোহ করেছিলেন গান্ধীজির রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পটভূমিতে কংগ্রেসের নীতি ও কর্মসূচী নির্ধারণ, অবিলম্বে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করতে তাঁর অসম্মতি এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে ভবিষ্যতে ভারতের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করার প্রবণতার বিরুদ্ধে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের প্রশ্নেও গান্ধী-সুভাষের মধ্যে মৌলিক মতপার্থক্য ছিল। গান্ধীজি ও দক্ষিণপন্থী কংগ্রেসী নেতারা ‘সর্বহারা’দের পাশে না দাঁড়িয়ে ক্রমেই ‘ধনিক’দের পাশে ঝুঁকে পড়ছেন বলে সুভাষচন্দ্রের মনে হয়েছিল। তিনি তাঁর ‘The Indian Struggle’-এ দুঃসাহসিক মন্তব্য করেছিলেন, “দেশের জন্যে মহাত্মা গান্ধী অভূতপূর্ব কাজ করেছেন ও করে যাবেন। কিন্তু ভারতের মুক্তি তাঁর নেতৃত্বে আসবে না।”

গান্ধী-সুভাষ বিরোধ সুভাষের পুনর্নির্বাচন ও পদত্যাগের নাটকীয় ঘটনা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ গভীর আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছিলেন। সুভাষচন্দ্রের প্রতি কোনও সহানুভূতি বা সমর্থন থাকার প্রশ্নই ছিল না। তাঁর পরাজয় ও রাজনৈতিক বিপর্যয় ব্রিটিশ সরকারের কাছে একান্ত কাম্য ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও গান্ধীজির ভূমিকা সম্পর্কে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের অতিরিক্ত সচিব স্যার রিচার্ড টটেনহ্যামের মন্তব্য ছিল কৌতূহলোদ্দীপক এবং তাৎপর্যপূর্ণ। টটেনহ্যাম সুস্পষ্ট ইঙ্গিত করেন যে, রাজকোটে গান্ধীজির ‘আমরণ-অনশন’-এর উদ্দেশ্য ছিল ত্রিপুরী কংগ্রেসের সময় মূল দৃষ্টি রাজকোটে কেন্দ্রীভূত করা। ‘মহাত্মার ইচ্ছা অনুসারে’-ই পন্থ-প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। সুভাষচন্দ্রের সভাপতি পদ ত্যাগ করা প্রসঙ্গ টটেনহ্যাম লেখেন, “সেই মানুষটির বিরুদ্ধে এই ছিল কংগ্রেস স্বৈরাচারীর প্রতিশোধ, যিনি ঠিক তিন মাস আগে স্বৈরাচারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ন্যায্যভাবে এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে কংগ্রেস সভাপতির পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।” গান্ধীজি ও তাঁর অনুগামীদের প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন যে, তাঁদের কোনও প্রচেষ্টাই কখনও সফল হয়নি, কিংবা অশান্তি, বিশৃঙ্খল, হিংসা অথবা কষ্টস্বীকার ছাড়া আর কোনও লাভ হয়নি। রাজনীতি বাদ দিলেও সাম্প্রদায়িক ঐক্য, অস্পৃশ্যতা, মদ্যপান নিষিদ্ধকরণ এবং এমনকি চরকা কাটা—সেখানেও গান্ধীজি কাজ শুরু করে কখনও সম্পূর্ণ করে তুলতে পারেননি। কিছুদূর এগিয়ে কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় রেখে তা পরিত্যাগ করেছেন। টটেনহ্যাম পরিশেষে মন্তব্য করেন, “বলা হয় যে, মিস্টার গান্ধী তাঁর সময় থেকে শত বৎসর এগিয়ে ছিলেন। তা হতে পারে···যদি তা সত্যি হয়, তবে এটিও সমভাবে সত্য যে, একজন মানুষ, যিনি সময় থেকে এতখানি এগিয়ে, তিনি আমাদের প্রতিদিনকার পৃথিবীর দৈনন্দিন কাজকর্মের একজন বাস্তববাদী নেতা হিসাবে তাঁর অনেক পিছনের সারির নেতার থেকে বেশি কার্যকর নন। আজ ভারতের প্রয়োজন একজন বা একদল যুবকের, যাঁদের স্বচ্ছ দৃষ্টি আছে অথচ যাঁরা অলীক কল্পনাপ্রবণ নন। এমন একদল যুবক চাই যাঁরা পরিস্থিতির যথাযথ অবস্থা অনুযায়ী বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারেন, যাঁরা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রয়োজনে দেখাতে পারেন আপস করার সাহসকে···।” টটেনহ্যামের মতো ব্রিটিশ প্রশাসকদের গান্ধীজি সম্বন্ধে বীতরাগ প্রমাণ করছিল তাঁদের গান্ধী-ভীতি কতখানি প্রবল ছিল। অন্যদিকে সুভাষচন্দ্রের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি ও সপ্রশংস মনোভাব থাকলেও তাঁর আপসহীন মনোভাবের জন্যে সুভাষচন্দ্র ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত হয়েছিলেন।

সকল অধ্যায়

১. দেশনায়ক – ১
২. দেশনায়ক – ২
৩. দেশনায়ক – ৩
৪. দেশনায়ক – ৪
৫. দেশনায়ক – ৫
৬. দেশনায়ক – ৬
৭. দেশনায়ক – ৭
৮. দেশনায়ক – ৮
৯. দেশনায়ক – ৯
১০. দেশনায়ক – ১০
১১. দেশনায়ক – ১১
১২. দেশনায়ক – ১২
১৩. দেশনায়ক – ১৩
১৪. দেশনায়ক – ১৪
১৫. দেশনায়ক – ১৫
১৬. দেশনায়ক – ১৬
১৭. দেশনায়ক – ১৭
১৮. দেশনায়ক – ১৮
১৯. দেশনায়ক – ১৯
২০. দেশনায়ক – ২০
২১. দেশনায়ক – ২১
২২. দেশনায়ক – ২২
২৩. দেশনায়ক – ২৩
২৪. দেশনায়ক – ২৪
২৫. দেশনায়ক – ২৫
২৬. দেশনায়ক – ২৬
২৭. দেশনায়ক – ২৭
২৮. দেশনায়ক – ২৮
২৯. দেশনায়ক – ২৯
৩০. দেশনায়ক – ৩০
৩১. দেশনায়ক – ৩১
৩২. দেশনায়ক – ৩২
৩৩. দেশনায়ক – ৩৩
৩৪. দেশনায়ক – ৩৪
৩৫. দেশনায়ক – ৩৫
৩৬. দেশনায়ক – ৩৬
৩৭. দেশনায়ক – ৩৭
৩৮. দেশনায়ক – ৩৮
৩৯. দেশনায়ক – ৩৯
৪০. দেশনায়ক – ৪০
৪১. দেশনায়ক – ৪১
৪২. দেশনায়ক – ৪২
৪৩. দেশনায়ক – ৪৩
৪৪. দেশনায়ক – ৪৪
৪৫. দেশনায়ক – ৪৫
৪৬. দেশনায়ক – ৪৬
৪৭. দেশনায়ক – ৪৭
৪৮. দেশনায়ক – ৪৮
৪৯. দেশনায়ক – ৪৯
৫০. দেশনায়ক – ৫০

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন