সাবমেরিনে এক বিপজ্জনক ও দুঃসাহসিক সমুদ্রযাত্রার পর সুভাষচন্দ্র কীভাবে শেষপর্যন্ত টোকিওতে পৌঁছেছিলেন সে এক কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। সাবমেরিনটি ছিল ছোট মাপের। ভেতরে ডিজেল তেলের গন্ধ, এমনকি খাবারেও। চলা-ফেরার জায়গা প্রায় ছিল না। ওই দমবন্ধ করা পরিবেশে নেতাজিকে তিন মাস কাটাতে হয়েছিল। যে কোনও মুহূর্তে শত্রুপক্ষের বিমান বা যুদ্ধ জাহাজ থেকে আক্রমণের ভয় ছিল। যাত্রা শুরুর পূর্বেই তাঁকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল চরম বিপদের আশঙ্কা সম্বন্ধে। কিন্তু সুভাষচন্দ্রের কোনও দিনই মৃত্যুভয় ছিল না। সাবমেরিনেও তিনি কোনও বিশ্রাম নেননি। সব সময়ই মগ্ন থাকতেন তাঁর পরিকল্পনার খুঁটিনাটি বিচার করে যাতে তা কার্যকর হয় তা সুনিশ্চিত করতে। ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করার পর মাদাগাস্কারের কয়েক শো নৌ-মাইল দূরে উত্তাল মাঝ সমুদ্রে জার্মান সাবমেরিন থেকে নেতাজি ও তাঁর সঙ্গী হাসান রবারের ভেলায় চড়ে একটি জাপানী সাবমেরিনে ওঠেন (২৮ এপ্রিল, ১৯৪৩)। ওই রকমভাবে শত্রুপক্ষের বিমান ও নৌ-শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন সমুদ্রপথে একটি সাবমেরিন থেকে অন্য একটি সাবমেরিনে স্থানান্তরের মতো অবিশ্বাস্য দুঃসাহসিক ঘটনা আর কখনও ঘটেনি। ৬ এপ্রিল জাপানী সাবমেরিনটি সুমাত্রার উত্তরে সমুদ্রতীরে সাবাঙ নামে একটি ছোট দ্বীপে পৌঁছয়। এখানে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্যে ক’দিন তাঁদের আলাদা করে রাখার পর (Quarantine) ১৩ মে একটি বিমানে করে সুভাষচন্দ্র টোকিও পৌঁছন। তাঁকে বিখ্যাত ইম্পিরিয়াল হোটেলে রাখা হয়।
টোকিও পৌঁছবার একমাস পরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী জেনারেল তোজোর সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের প্রথম সাক্ষাৎকার হয় (১০ জুন, ১৯৪৩)। ওই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকারের পূর্বে সুভাষচন্দ্র জাপানের রাজনৈতিক নেতা, কূটনীতিজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শিল্প, কৃষি, শিক্ষা ও জনকল্যাণমূলক কাজের ক্ষেত্রে জাপানের অগ্রগতি তিনি প্রত্যক্ষ করেন। জাপানী সেনাধ্যক্ষ সুগিয়ামা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিগোমিৎসু-র উদ্যোগেই প্রধানমন্ত্রী তোজোর সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের সাক্ষাৎকার সম্ভব হয়। ওই দু’জনেই সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকালের পর তোজোরও একই অনুভূতি হয়েছিল। সুভাষচন্দ্র তোজোকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার দাবিকে সমর্থনের কথা বললে তোজো তাঁর সম্মতি জানান। ১৬ জুন জাপানী পার্লামেন্টের (Diet) এক অধিবেশনে সুভাষচন্দ্রের উপস্থিতিতে তোজো ঘোষণা করেন যে, জাপান সর্বতোভাবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সাহায্য করতে দৃঢ়সঙ্কল্প। কয়েকদিন পরে এক বড় সাংবাদিক সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বলেন যে, যুদ্ধে অক্ষশক্তির জয় হলে ভারতবর্ষ তার স্বাধীনতা ফিরে পাবে। অস্ত্রের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের অস্ত্রধারণ করতে হবে। একমাত্র রক্তের বিনিময়ে ভারতীয়রা তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে। এরপর থেকে সুভাষচন্দ্র নিয়মিত টোকিও বেতারকেন্দ্র থেকে ভাষণ দিতে শুরু করেন। জার্মানী থেকে প্রচারিত ভাষণের মতো তাঁর জাপানী বেতারভাষণেরও মূল বক্তব্য ছিল যে, জাপানের সহযোগিতায় সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ভারতবর্ষ স্বাধীনতা অর্জন করবে। সুভাষচন্দ্রের বেতারভাষণ ব্রিটিশ সরকার ও সামরিক কর্তৃপক্ষকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। সুভাষচন্দ্রের পরিকল্পনা ও সামরিক উদ্যোগের কোনও সংবাদ যাতে না ভারতবর্ষের মানুষ জানতে পারে তার জন্যে সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তারই সঙ্গে মিথ্যা প্রচার শুরু হয় যে, প্রতিটি ভারতীয় হল শত্রুপক্ষের সহযোগী এক সম্ভাব্য (potential) স্বদেশদ্রোহী (fifth- columnist)।
সুভাষচন্দ্রের জাপানে আগমনের সংবাদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় সৈন্য ও সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। সকলে সাগ্রহে তাঁর জন্যে অপেক্ষা করছিল। ৩ জুলাই নেতাজি সুভাষ রাসবিহারী বসুর সঙ্গে সিঙ্গাপুরে পৌঁছলে তাঁকে বিপুলভাবে সংবর্ধনা জানানো হয়। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় তাঁর সশস্ত্র অভ্যুত্থানের এক পরিকল্পনা ব্যর্থ হবার পর রাসবিহারী বসু জাপানে পলায়ন করেছিলেন ও সেখানে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্যে তাঁর বিপ্লবী প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে টোকিওতে ও অল্পকাল পরে জুন মাসে ব্যাঙ্ককে বিপ্লবী ভারতীয়দের দু’টি সম্মেলন হয়। ওই দু’টি সম্মেলনের ফলশ্রুতিরূপে খণ্ড খণ্ড বিভিন্ন দলগুলিকে সুসংহত করে ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লীগ’ (Indian Independence League) নামে একটি বিপ্লবী সংস্থা গঠিত হয়। সম্মেলনে স্থির হয় যে, ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের মুক্তির জন্যে একটি বাহিনী গঠিত হবে। বাহিনীর নামকরণ হয় আজাদ হিন্দ ফৌজ (Indian National Army)। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় এবং জাপানীদের হাতে বন্দী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠিত হয়। ওই পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্যে যে কমিটি গঠিত হয় তার সভাপতি হন রাসবিহারী বসু। সৈন্যদল গঠনের ভার পান ক্যাপ্টেন মোহন সিং। জাপান সরকার এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন, বিশেষ করে ব্যাঙ্ককের ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লীগ ও অন্যান্য ভারতীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলার বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন জাপানী সামরিক বাহিনীর মেজর ফুজিয়ারা (Major Fujiwara Iwaichi) এবং ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লীগের প্রীতম সিং ও অমর সিং। ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লীগের নেতৃত্বে ছিলেন রাসবিহারী বসু ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মোহন সিং। মোহন সিং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা INA গঠনের ব্যাপারে পূর্বেই তৎপর হয়েছিলেন। কিন্তু রাসবিহারী বসু ও মোহন সিং-এর মধ্যে মতবিরোধ, মোহন সিং-এর ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ, নেতাদের রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করার অভিজ্ঞতার ফলে সমগ্র আন্দোলনটি অবিন্যস্ত ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। কিছুকালের মধ্যেই রাসবিহারী বসু স্বয়ং সমগ্র আন্দোলনের পরিচালন ভার গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি এবং অন্য সকলেই উপলব্ধি করছিলেন যে, জার্মানী থেকে সুভাষচন্দ্র বসুকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফৌজের পূর্ণ নেতৃত্বভার তুলে দিতে পারলেই তবে ওই আন্দোলন পুনর্জীবিত ও শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাসবিহারী-মোহন সিং-এর বিরোধের পরিণতিতে মোহন সিং গ্রেপ্তার হন (২৯ ডিসেম্বর, ১৯৪২)। এর ফলে কার্যত আই. এন. এ-র বিলোপ হয়।
ব্যাঙ্কক সম্মেলনের জন্যে জার্মানী থেকে নেতাজি সুভাষ এক অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছিলেন। ওই বাতায় তিনি বলেন যে, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জন মূলত ভারতীয়দেরই দায়িত্ব। স্বাধীনতা সংগ্রামে এমন একটি সময় আসবেই যখন অস্ত্রধারণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়াবে। ভারতের স্বাধীনতার অর্থই হল ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অবলুপ্তি। ওই সাম্রাজ্যবাদের পতনই হল জাপানী সেনাবাহিনীর লক্ষ্য। বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যখন পৃথিবীর সব জাতীয়তাবাদীদের একটি সুসংহত সংগঠনের মাধ্যমে সংযুক্ত করা প্রয়োজন। বার্লিন থেকে টোকিওতে টেলিফোনে সুভাষচন্দ্র রাসবিহারী বসুকে জানান (৪ জুলাই, ১৯৪২) যে, গান্ধীজি ও জওহরলাল কখনই অক্ষশক্তিকে সমর্থন করবেন না। সুতরাং জাপানে যুদ্ধ-সম্পর্কিত নীতি নির্ধাণের জন্যে কংগ্রেস নেতাদের মুখাপেক্ষী হলে চলবে না।
পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের নাম তিনি জাপানে এসে পৌঁছবার বহু পূর্ব থেকেই জড়িত হয়ে পড়েছিল। ১৯৪১ সালে মোহন সিং ফুজিয়ারার কাছে সুভাষচন্দ্রকে নেতৃত্ব গ্রহণের জন্যে আহ্বান করার কথা বলেছিলেন। সিঙ্গাপুর ও টোকিও সম্মেলনে সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বের প্রয়োজনের প্রসঙ্গ উঠেছিল। জুন মাসে ব্যাঙ্কক সম্মেলনে তাঁর অভিনন্দন বার্তা প্রবল উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল এবং সম্মেলনের পক্ষ থেকে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লীগ ও INA-র মধ্যে অন্তর্বিরোধের ফলে INA-এর কার্যত বিলোপ ঘটলে সুভাষচন্দ্রের উপস্থিতি ও সর্বাধিনায়কের গুরুদায়িত্বভার গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। রাসবিহারী বসু সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাঁর আসা সম্বন্ধে সুনিশ্চিত হয়ে সানন্দে ঘোষণা করেন যে, সুভাষচন্দ্র শীঘ্রই পূর্বাঞ্চলে আসছেন এবং তিনিই হবেন তাঁর (রাসবিহারীর) উত্তরাধিকারী।
১৯৪৩-এর ৪ জুলাই সিঙ্গাপুরের জনাকীর্ণ ক্যাথে থিয়েটার হলে রাসবিহারী বসু তুমুল হর্ষধ্বনি ও উদ্দীপনার মধ্যে সুভাষচন্দ্রকে উপস্থাপিত করেন। ইতিপূর্বেই দু’দিন আগে সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরেই উপস্থিত INA-এর সামরিক অফিসাররা সুভাষচন্দ্রকে বিমান থেকে অবতরণ করতে দেখা মাত্রই ‘সুভাষচন্দ্র বসু জিন্দাবাদ’ ধ্বনি দিতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শী মেজর পি. কে. সেগল (পরে নেতাজির সামরিক সচিব হয়েছিলেন) বলেছেন যে ওই মুহূর্তেই অনেকের মনে হয়েছিল যেন এক দেবতার আবির্ভাব ঘটেছে। তাঁদের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে সেই মানুষটি এসেছেন যিনি সঠিক পথে ভারতের মুক্তি সংগ্রামকে পরিচালিত করবেন। ক্যাথে থিয়েটার হলে তাঁর ভাষণে রাসবিহারী বসু সুভাষচন্দ্রকে ভারতীয় যুবশক্তির সাহস, গতিশীলতা ও মহত্তম গুণের শ্রেষ্ঠ প্রতীকরূপে বর্ণনা করেন। রাসবিহারী বসু নিজে পদত্যাগ করে সুভাষচন্দ্রকে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লীগের সভাপতিরূপে ঘোষণা করেন। রাসবিহারী বসু সর্বাধিনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্রের সর্বোচ্চ উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। রাসবিহারীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সুভাষচন্দ্র তাঁকে ‘পূর্ব এশিয়ায় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জনক’ বলে অভিহিত করেন।
INA-এর দায়িত্বভার গ্রহণের পরের ক’দিন সুভাষচন্দ্র তাঁর সেনাবাহিনীর সামনে একাধিক উদ্দীপ্ত ভাষণ দেন। তাঁর উদাত্ত স্লোগান ‘চলো দিল্লি’ অভূতপূর্ব উন্মাদনা সৃষ্টি করে। আজাদ হিন্দ ফৌজের আসন্ন সংগ্রামের জন্যে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব অসামরিক ভারতীয়দের সর্বাত্মক প্রস্তুতি ও সহযোগিতার আহ্বান জানান। ৬ জুলাই সিঙ্গাপুর মিউনিসিপ্যাল অফিসের সামনে প্রধানমন্ত্রী তোজো ও নেতাজি সুভাষ একত্রে INA-এর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। কীভাবে নানান অসুবিধা, বাধা-বিঘ্ন ও প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে সুভাষচন্দ্র আজাদ হিন্দ ফৌজকে পুনর্গঠন ও পুনর্জীবিত করেছিলেন, প্রায় অবলুপ্ত ও আশাভগ্ন একটি বাহিনীকে এক নতুন রূপ দিয়েছিলেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। এই কাহিনী গর্ডন তাঁর Brothers Against the Raj গ্রন্থে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে আকর্ষণীয়ভাবে বর্ণনা করেছেন। সুভাষচন্দ্র নেতাজি রূপেই INA-এর সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কোনও সামরিক রীতিবদ্ধ পদ (rank) গ্রহণ করেননি। কিন্তু তিনি সামরিক পোশাক ব্যবহার করতেন। সৈন্য সংগ্রহ করে তাঁর বাহিনীকে আরও শক্তিশালী এবং সুসংহত করার জন্যে তিনি এবং তাঁর উচ্চপদস্থ সহকর্মীরা মালয়, শ্যামদেশ ও বর্মায় যান। রেঙ্গুনে বর্মার স্বাধীনতা ঘোষণার দিনটিতে (১ আগস্ট, ১৯৪৩) নেতাজি উপস্থিত ছিলেন। বর্মার স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী বা ম’র (Ba Maw) সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল। বা ম’র সঙ্গে নেতাজির প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরে (৫ জুলাই)। উভয়ের লক্ষ্য ছিল একই—ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উচ্ছেদের জন্যে জাপানের সহযোগিতা লাভ করা। কিন্তু দু’জনেই চেয়েছিলেন তাঁদের স্বদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা। এক বিদেশী শাসনের পরিবর্তে অন্য এক বিদেশী শাসন নয়। সুভাষচন্দ্রের আর এক নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল। তিনি চেয়েছিলেন ভারতবর্ষের ভূখণ্ডে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে বর্মা দেশ ও বর্মী সরকারের সাহায্য ব্যবহার করতে। বা ম ও আউঙ্গ সান (Aung San)-এর মতো বর্মার স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতারা বর্মায় ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে জাপানের সাহায্য প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু বা ম পরে জাপানীদের নীতি ও আচরণে হতাশ হয়েছিলেন। তিনি অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছিলেন যে, জাপানের সামরিক বাহিনী ও কর্তৃপক্ষ নিজেদের ‘জাতি প্রাধান্য’ সম্বন্ধে এতই গর্বিত যে তাদের পক্ষে অন্য দেশ ও জাতিকে বোঝা প্রায় অসম্ভব। সুভাষচন্দ্রেরও তা অজানা ছিল না। তবু ব্রিটিশ শক্তি অপরাজেয় এই বিশ্বাস চূর্ণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। বা ম ও সুভাষচন্দ্রের স্বপ্ন ও জীবনের লক্ষ্য ছিল অভিন্ন—মাতৃভূমির স্বাধীনতা। বর্মার স্বাধীনতা ঘোষণার দিনটিতে তাঁর সম্মানিত অতিথি সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের স্মৃতিচারণ করে বা ম লিখেছেন যে, সেদিন তিনি সুভাষচন্দ্রের চোখে সেই একই স্বপ্ন দেখেছিলেন—ভারতবর্ষের স্বাধীনতা। শুধু ওই দিন মনে হয়েছিল তাঁর চোখের স্বপ্ন যেন একটু বিষণ্ণ, শোকার্ত, প্রত্যাশাপূর্ণ। তাঁর হাসিটিও যেন একইরকম। বা ম’র মনে হয়েছিল যে, বর্মাকে স্বাধীন হতে দেখে সুভাষচন্দ্র নিশ্চয় ভাবছিলেন তাঁর নিজের মাতৃভূমি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে তাঁর বাহিনী ও তাঁর সামনে কত রক্তক্ষয় ও দীর্ঘ রক্তাক্ত পথ বাকি রয়েছে।
ভারতবর্ষের মুক্তি সংগ্রামে ভারতীয় নারীর যে এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে এই কথা সুভাষচন্দ্র বহু পূর্বেই বলেছিনে। কলকাতা কংগ্রেস অধিবেশনের সময় স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠনে তিনি নারীদের যে মর্যাদা দিয়েছিলেন তা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। INA-তেও নারীরা যেন এগিয়ে এসে যোগ দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে এক বড় ভূমিকা নেয় তা নেতাজি চেয়েছিলেন। কঠিন হলেও তাঁর এই প্রত্যাশা সফল হয়েছিল। INA-তে লক্ষ্মী স্বামীনাথনের নেতৃত্বে ‘ঝান্সীর রানী’ বাহিনী গঠিত হয়েছিল। সুভাষচন্দ্রের বিশ্বাস ছিল যুদ্ধে নারীদের ভূমিকা দেখে পুরুষ সৈন্যরা আরও উৎসাহ বোধ করবে। সুভাষচন্দ্র যখন জাপানীদের বলেন যে, আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্যে একটি পৃথক জায়গার প্রয়োজন তখন তারা প্রথমে মনে করেছিল তিনি পরিহাস করছেন। লক্ষ্মী স্বামীনাথনকে সুভাষচন্দ্র প্রথম সাক্ষাতে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি একশো নারী মালয় থেকে ওই বাহিনীতে যোগদানের জন্যে পাবেন কি না। উত্তরে লক্ষ্মী স্বামীনাথন বলেছিলেন ঠিকমত চেষ্টা করলে আরও বহু সংখ্যক নারী ওই বাহিনীতে যোগ দেবে। তিনি ভুল বলেননি। ঝান্সীর রানী বাহিনীর প্রতিটি নারী সৈনিকের কাছে নেতাজি পিতৃতুল্য ছিলেন। তাদের তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একাধারে তোমাদের পিতা ও মাতা।’ তারাও মনেপ্রাণে তা অনুভব করেছিল।
কোনও কোনও উচ্চপদস্থ জাপানী সামরিক অফিসারের ধারণা ছিল যে, নিছক প্রচারকার্যের জন্যেই আজাদ হিন্দ ফৌজ জাপানী বাহিনীর সঙ্গে রণক্ষেত্রে যুক্ত থাকবে। এই মনোভাবে ক্রুদ্ধ হয়ে নেতাজি তাদের সোজাসুজি জানিয়ে দেন যে, আজাদ হিন্দ বাহিনী সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে চায়। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, একবার জাতীয় সৈন্যবাহিনী ভারতে প্রবেশ করতে পারলে সারা দেশে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে গণ-অভুত্থান দেখা দেবে। আজাদ হিন্দ বাহিনী ও তাঁর পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্যে অর্থ সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। সুভাষচন্দ্র জাপান সরকারর কাছে এর জন্যে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে স্বাধীন ভারত সরকার এই ঋণ সম্পূর্ণ শোধ করে দেবে। জাপানের সহযোগিতা বাস্তব প্রয়োজনে গ্রহণ করতে বাধ্য হলেও নেতাজি সুভাষচন্দ্রের আত্মমর্যাদা, আত্মনির্ভরতার প্রয়োজনবোধ ছিল প্রখর। স্বাধীন ভারতবর্ষের সম্মান রক্ষা সম্বন্ধে তিনি অত্যন্ত সতর্ক ও স্পর্শকাতর ছিলেন।
১৯৪৩ সালের শেষের দিক থেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছিল। বিভিন্ন রণাঙ্গনে অক্ষশক্তির অপ্রতিহত জয়যাত্রা ব্যাহত হয়ে প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছিল। কিন্তু নেতাজির অদম্য উৎসাহ ও উদ্যমে কোনও ভাটা পড়েনি। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভ যে আসন্ন তাঁর এই অটল বিশ্বাসে সামান্যতম চিড় ধরেনি। ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে পূর্ব-এশিয়ার সকল স্থানের প্রতিনিধিদের সমাবেশে সর্বসম্মতিক্রমে স্বাধীন ভারতবর্ষের অস্থায়ী সরকার (Provisional Government of Azad Hind/ Free India Provisional Government) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অস্থায়ী স্বাধীন ভারত সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। নারী বাহিনীর ভারপ্রাপ্ত হন ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী। অন্যান্য মন্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন এস. এ. আয়ার (প্রচার) ও লেঃ কর্নেল এ. সি. চ্যাটার্জী (অর্থ)। সর্বোচ্চ উপদেষ্টা হন রাসবিহারী বসু। উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন করিম গণি, দেবনাথ দাস, ডি. এম. খান, এ. ইয়েলাপ্পা, জন থিবি, সর্দার ঈশ্বর সিং ও এ. এন. সরকার (আইন বিষয়ক উপদেষ্টা)। সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন লেঃ কর্নেল আজিজ আহমেদ, এন. এস. ভগৎ, জে. কে. ভোঁসলে, শাহ নওয়াজ, এ. এম. সহায় (সচিব) প্রমুখ। দু’দিন পর (২৩ অক্টোবর) জাপান এই ‘অস্থায়ী স্বাধীন ভারত সরকার’কে স্বীকৃতি দেয়। এরপর জার্মানী, ইতালী, ক্রোয়েশিয়া, মাঞ্চুকুয়ো, বর্মা, শ্যামদেশ, ফিলিপাইনস প্রমুখ দেশ একের পর এক স্বীকৃতি জানায়।
আজাদ হিন্দ সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে পঠিত শপথে সুভাষচন্দ্র বসু বলেন, “ঈশ্বরের নামে আমি আজ এই পবিত্র শপথ গ্রহণ করি যে ভারতকে ও আমার আটত্রিশ কোটি স্বদেশবাসীকে মুক্ত করার জন্যে আমি, সুভাষচন্দ্র বসু, আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত স্বাধীনতার এই পবিত্র সংগ্রাম চালাইয়া যাইব। আমি সর্বদা ভারতের সেবক হইয়া থাকিব এবং আমার আটত্রিশ কোটি ভারতীয় ভ্রাতা-ভগ্নীর কল্যাণ বিধান হইবে আমার সর্বাধিক কর্তব্য। স্বাধীনতা অর্জনে উদ্গ্রীব হইয়া ভারতের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে আমি আমার রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত মোক্ষণ করিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকিব।” তিনি আবেগকম্পিত কণ্ঠে ঘোষণা করেন যে, ভারতীয় জনগণের সদিচ্ছা সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলে ব্রিটিশ শাসন ভারতবর্ষে কোনও রকমে টিকে আছে মাত্র। “এই বেদনাদায়ক শাসনের শেষ চিহ্ন ধ্বংস করতে মাত্র একটি অগ্নিশিখার প্রয়োজন। সেই অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলনই হল ভারতীয় মুক্তি বাহিনীর কাজ।” অস্থায়ী সরকারের উদ্দেশ্য হল ভারতভূমি থেকে ব্রিটিশ ও তার মিত্রদের বিতাড়িত করার জন্যে সংগ্রাম শুরু করা। তারপর ভারতীয় জনগণের ইচ্ছাক্রমে ও তাদের আস্থাভাজন একটি স্থায়ী আজাদ হিন্দ জাতীয় সরকার গঠন করা। ব্রিটিশ ও তাদের মিত্রদের পরাজয়ের পর ভারতভূমিতে স্থায়ী স্বাধীন জাতীয় সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী সরকার ‘ভারতীয় জনগণের অছি স্বরূপ দেশের প্রশাসন কার্য চালাবে’।
আজাদ হিন্দ সরকারের ঘোষণাপত্রটি সুভাষচন্দ্র একদিন সারা রাত জেগে লিখেছিলেন। ওই শপথ ও ঘোষণার প্রতিটি অক্ষর ছিল সত্য। আনুষ্ঠানিক কোনও রীতিবদ্ধ রচনা ও ঘোষণা নয়। ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবরের ঐতিহাসিক দিনটির বহু পূর্বেই সুভাষচন্দ্র ওই শপথ এবং সঙ্কল্প গ্রহণ করেছিলেন। কখনও কোনও প্রলোভনে, কোনও পরিস্থিতিতে ও চরম বিপর্যয়ের মধ্যেও মুহূর্তের জন্যে তার থেকে বিচ্যুত হননি।
সিঙ্গাপুরে সুভাষচন্দ্র প্রায়ই রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধ্যান করতেন। বার্লিনেও বোমা-বর্ষণের মধ্যেও শেষ রাতে তিনি ধ্যানমগ্ন থাকতেন। শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের ভাবধারার সঙ্গে প্রথম জীবনে তাঁর যে যোগসূত্র গড়ে উঠেছিল জার্মানি ও পূর্ব রণাঙ্গনের ভয়াবহ যুদ্ধকালীন পরিবেশে সেই যোগসূত্র যেন আরও সুদৃঢ় হয়েছিল। নেতাজি সুভাষ সম্পর্কে কিছুটা সমালোচনার সুরে বলা হয়েছে যে, তিনি তাঁর জাতীয় মুক্তি বাহিনীর সৈন্যদের যতটা আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন তার থেকে যদি তাদের সামরিক শিক্ষণের ওপর আরও বেশি জোর দিতেন তাহলে ভাল হত।
টোকিওতে ‘গ্রেটার ইস্ট এশিয়ান নেশনস’-এর (Greater East Asian Nations) সমাবেশে বিশিষ্ট দর্শকরূপে তিনি আমন্ত্রিত হন (৫-৬ নভেম্বর, ১৯৪৩)। ওই বৃহত্তর পূর্ব এশীয় সম্মেলনে তিনি ভারতীয় প্রতিনিধিরূপে যোগ দিতে চাননি কয়েকটি কারণে। প্রথমত, ভারতবর্ষ তখনও স্বাধীন হয়নি। দ্বিতীয়ত, জাপান এবং জাপানের বৃহত্তর পূর্ব-এশীয় সহ-উন্নয়ন মণ্ডলের (Co-prosperity Sphere) মিত্রদেশগুলির যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনায় বা ব্যবস্থায় ভবিষ্যতের স্বাধীন ভারতবর্ষের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিশ্রুতি তিনি পূর্ব হতে দিতে প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু স্বীকৃত প্রতিনিধি না হয়েও তাঁর ভাষণ, আন্তজাতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আন্তজাতিক সমতা, সম্প্রীতি ও সহযোগিতা সম্পর্কে তাঁর চিন্তা-ভাবনা সকলকে মুগ্ধ করেছিল। সুভাষচন্দ্রের ভাষণ দেওয়া পূর্ব-নির্ধারিত ছিল না। কিন্তু ওই ‘অপ্রত্যাশিত ভাষণে’ (৬ নভেম্বর) তিনি বলেন, “বিজয়ীদের মধ্যে লুষ্ঠিত সম্পদ বণ্টনের জন্যে এই সম্মেলন হচ্ছে না। …এটি মুক্তিপ্রাপ্ত জাতিগুলির একটি সমাবেশ, যে সমাবেশ ন্যায়, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদানপ্রদান ও পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার পবিত্র নীতির ভিত্তিতে পৃথিবীর এই অঞ্চলে নতুন বিধান গড়ে তুলবে।” ভারতের জনগণ প্যান-এশিয়াটিক ফেডারেশনের চিন্তা করছে ও স্বপ্ন দেখেছে। সুভাষচন্দ্র বলেন, “আমরা জানি যে প্রকৃত আন্তজাতিকতা তাই যা জাতীয়তাবাদ অবজ্ঞা করে না, বরং যা জাতীয়তাবাদের মধ্যে প্রোথিত। …বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া-সহ সমৃদ্ধ অঞ্চল গঠন শুধু পূর্ব এশিয়ার জনগণের পক্ষেই বিশেষ প্রয়োজনীয় নয়, সমগ্র এশিয়ার জনগণ ও সাধারণভাবে মানবসমাজের পক্ষে গভীর গুরুত্বপূর্ণ।” এই সম্মেলনে জাপানী প্রতিনিধিদলের নেতা ছিলেন তোজো ও বর্মার প্রতিনিধিদলের নেতা ছিলেন বা ম। এই সম্মেলনে বা ম ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি ও সমর্থন জানিয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই প্রস্তাব গৃহীত হয়। সম্মেলনের শেষে এক ঘোষণায় সবগুলি দেশের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার সঙ্কল্পের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সম্মেলনের পর সুভাষচন্দ্র অল্প দিনের জন্যে জাপান-অধিকৃত চীনের অংশ, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া সফর করেন। চীনে তিনি নানকিং-এর কাছে চীন-বিপ্লবের জনক সান-ইয়াৎ-সেনের সমাধি দর্শন করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
১৯৪৩ সালের শেষ দিকে সুভাষচন্দ্রের মাতা প্রভাবতী দেবীর মৃত্যু হয়। শরৎচন্দ্র বসু তখন কারাগারে। মৃত্যুপথযাত্রী মা’র সঙ্গে শেষ দেখার সুযোগ পর্যন্ত তাঁকে দেওয়া হয়নি। সুভাষচন্দ্র ঠিক কখন মা’র মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলেন জানা যায় না। জাপানী সামরিক অফিসার লেঃ জেনারেল ইসোদা এই সংবাদ পেয়ে সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখেছিলেন তাঁর চোখ অশ্রুসিক্ত। তিনি লিখেছেন যে, এই একবারই মাত্র তিনি সুভাষচন্দ্রকে শোকে অভিভূত হয়ে ভেঙ্গে পড়তে দেখেছিলেন।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন