সাইমন কমিশন বর্জন আন্দোলনে ছাত্ররা সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছিল। শক্তিশালী ছাত্র সংগঠনের প্রয়োজন বোধ থেকে ছাত্র-আন্দোলনের জন্ম হয়। প্রথম নিখিল বঙ্গ ছাত্র সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জওহরলাল। এই আন্দোলন খুব দ্রুত বাংলার অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন প্রদেশেও ছাত্র সংগঠন গড়ে ওঠে। স্বদেশী আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনেও ছাত্ররা যোগ দিয়েছিল। কিন্তু ১৯২৭-১৯২৮ সালে ছাত্র আন্দোলন আরও ব্যাপক হয়ে পড়ে। যুব-সমাজেও এক অভূতপূর্ব জাগরণ দেখা দেয়। এর পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল জওহরলাল ও সুভাষচন্দ্রের। বাংলার জেলায় জেলায় এবং বাংলার বাইরে বহু যুব-ছাত্র সম্মেলন হয়। এগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল মহারাষ্ট্র, আমেদাবাদ, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, মাদ্রাজ প্রভৃতি স্থানে অনুষ্ঠিত সম্মেলন। লাহোর কংগ্রেসের সময় লাহোর শহরে পণ্ডিত মদনমোহন মালব্যের পৌরোহিত্যে একটি সর্বভারতীয় ছাত্র সম্মেলন হয়। কংগ্রেস ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন মালব্যজি। বারানসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি প্রতিষ্ঠাতা ও উপাচার্য ছিলেন।
বাংলার বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে সুভাষচন্দ্র বক্তৃতা দিতে থাকেন। তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল ছাত্র-যুব শক্তিকে জাগ্রত করা। দেশের তরুণদের চরিত্র গঠনে উদ্বুদ্ধ করা। সর্বাত্মক দেশ গড়ার ওপর তিনি জোর দিয়েছিলেন। পূর্ববঙ্গে তিনি ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর পাবনা জেলার হিমাইতপুরের আশ্রমে দেখা করেছিলেন। অনুকূলচন্দ্রের কাছে সুভাষচন্দ্রের পিতা-মাতা দীক্ষিত হয়েছিলেন। তা ছাড়া, সাধু, সন্ন্যাসী, ধর্মজগতের মানুষ সম্পর্কে সুভাষচন্দ্রের শৈশব থেকেই গভীর আগ্রহ ছিল। ইংলন্ড থেকে প্রত্যাবর্তন করে তিনি একবার অনুকূলচন্দ্রের এক ভক্তের বাগবাজারের গৃহে অনুকূলচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন তিনি অসুস্থ থাকায় দেখা করা সম্ভব হয়নি। হিমাইতপুরের আশ্রমে অনুকূল ঠাকুর সুভাষচন্দ্রকে স্বাগত জানান। সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর দেশ ও সমাজের নানান সমস্যা ও প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হয়। সুশীলচন্দ্র বসুর ‘মানসতীর্থ পরিক্রমা’ গ্রন্থে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, মহাত্মা গান্ধী ও সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে অনুকূলচন্দ্রের সাক্ষাৎ ও আলোচনার প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ আছে। দেশ ও মানুষ গড়া, বিবাহ-সংস্কার, আদর্শ শিক্ষা, পরিবার-পরিজন সহ আশ্রম-জীবনযাপন ইত্যাদি বিষয়ে দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছিল। অনুকূলচন্দ্রের ‘সৎসঙ্গ’ আশ্রম দেখে সুভাষচন্দ্র মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরে অনুকূলচন্দ্রের সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের আর একবার সাক্ষাৎ হয়েছিল কিন্তু একান্তে কোনও কথা বলার সুযোগ হয়নি।
পূর্ববঙ্গে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে, এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়েও, তিনি কেমনভাবে সুদূর গ্রামাঞ্চলেও গিয়েছিলেন তার চিত্তাকর্ষক ঘটনাগুলির মধ্যে একটি উল্লেখ করি। ঘটনাটি সাবিত্রীপ্রসন্নের স্মৃতিচারণে আছে। একবার সুভাষ ও তাঁর কিছু সহকর্মী এক দুঃসহ গ্রীষ্মের দিনে পদ্মানদীর খেয়াঘাটে হাজির হন নদী পার হতে। আকাশে তখন ঘন কালো মেঘ। সে দিকে তাকিয়ে মাঝি সুভাষচন্দ্রকে বললে, “বাবু, আমার মনে হয় একটু অপেক্ষা করাই ভাল।” সুভাষচন্দ্র হেসে বললেন, “কেন? তুমি কি ভয় পাচ্ছ ?” মাঝি বলল, “না, বাবু। আমি নিজের জন্যে ভয় পাই না। ঝড়ের সঙ্গে পাল্লা দেওয়াই আমার কাজ। কিন্তু আপনারা যাত্রী। আপনাদের জন্যেই আমায় সাবধান হতে হবে।” নৌকা পাড়ি দিল বিশাল দুরন্ত পদ্মার বুকে। কথায় কথায় সুভাষ জানতে পারলেন, মাঝি পদ্মার জলে তার এক পুত্রকে হারিয়েছে। শুনে তাঁর চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল। মুখে ফুটল বিষাদের ছায়া। একটু পরে তিনি মাঝিকে একটি গান ধরতে বললেন। মহা উৎসাহে গান ধরল মাঝি। গানের মূল কথা: ‘নদীর তল পেতে হলে গভীরে ঝাঁপ দিতে হবে। আর, ঝাঁপ দিতে যদি ভয় না হয় তাহলে ঝড়ের ভয় কিসের? নদী যখন বাঁধ ভাঙে তখন বাঁধভাঙা জল দুকূল ছাপিয়ে যায়। দূরের যাত্রী! গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে হলে তোমাকে মাঝে মাঝে স্রোতের বিরুদ্ধে যেতেই হবে।’ মাঝির ভরাট গলার ভাটিয়ালি শুনে সুভাষ সহযাত্রীদের বললেন, ‘তোমরা কেউ শ্যামা সঙ্গীত গাইতে পার?’ সবাই চুপ করে রইল। তখন সুভাষ নিজেই শুরু করলেন গান:
কবে আবার নাচবি শ্যামা
মুণ্ডুমালা দুলিয়ে গলে,
ওই কালো মেঘের অন্ধকারে,
তোর হাতের খড়্গ উঠুক জ্বলে।
হয়তো সেই মুহূর্তে তাঁর মনে এসেছিল স্বামী বিবেকানন্দের অমর কবিতাটি ‘Kali The Mother’ (মৃত্যুরূপা মাতা)-এর কয়েকটি ছত্র:
করালি! করাল তোর নাম, মৃত্যু তোর নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে
তোর ভীম চরণ নিক্ষেপ প্রতিপদে ব্ৰহ্মাণ্ড বিনাশে!
কালি, তুই প্রলয় রূপিণী, আয় মা গো আয় মোর পাশে।
(সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের অনুবাদ)
গ্রামে পৌঁছে সুভাষচন্দ্র রাত কাটিয়েছিলেন এক দরিদ্র মুসলমান কংগ্রেস কর্মীর গৃহে। কোনও বিত্তবান নেতার আতিথেয়তা গ্রহণ করেননি। গ্রামের সব মানুষ মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখেছিল সৌম্যদর্শন, মৃদুভাষী, পরিশীলিত, গভীর দরদী মনের এক মানুষকে।
ছাত্র-যুব আন্দোলনের পাঁচটি দিকের ওপর সুভাষচন্দ্র গুরুত্ব দিয়েছিলেন: রাজনৈতিক; সামাজিক; অর্থনৈতিক; শারীরিক; সাংস্কৃতিক। এই সবকটি ক্ষেত্রে দাসত্ববন্ধন ছিন্ন করা এবং আত্মশক্তি ও আত্মপ্রকাশকে প্রেরণাদান হবে যুব-ছাত্র আন্দোলনের লক্ষ্য। প্রয়োজনে নির্মম ধ্বংস ও তারপর নতুন সৃষ্টিই হবে ছাত্রজীবনের আদর্শ। কলকাতার কংগ্রেস অধিবেশনে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ভূমিকা এবং ক্রমেই ওই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে সন্তুষ্ট হননি। তাঁদের লক্ষ্য করে তিনি বলেন, সবার আগে প্রয়োজন শৃঙ্খলা। আর, তার জন্যে চাই সামরিক শিক্ষা। প্রয়োজন, নিজের দল (কংগ্রেস) সম্বন্ধে শ্রদ্ধা, স্বদেশের প্রতি ভালবাসা ও আনুগত্য। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ‘ইউনিফর্ম’ বা ‘উর্দি’ পরা নিয়ে প্রবীণ গান্ধীবাদীদের সমালোচনা প্রসঙ্গে সুভাষচন্দ্র বলেন, “কটি বস্ত্র (স্পষ্টতই গান্ধী পোষাক) এই আনুগত্য অথবা শৃঙ্খলা আনতে পারে না। এই কারণেই আমি জোর দিয়ে বলছি যে, গরুর গাড়ির যুগে ফিরে যাওয়া অসম্ভব।” এই রকম কঠোর প্রকাশ্য সমালোচনা স্বয়ং গান্ধীজি ও তাঁর ভক্তদের ক্ষুব্ধ করেছিল। ছাত্র-যুবকদের মধ্যে সুভাষের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা, তাঁর সম্বন্ধে তাদের আগ্রহ, আকর্ষণ, শ্রদ্ধা অনেককেই বিচলিত করে তুলছিল। তাঁরা আশঙ্কা করছিলেন, সুভাষচন্দ্রের পরামর্শে ও উদ্দীপ্ত বক্তৃতার প্রভাবে ছাত্র ও যুবকরা বিপথগামী হবে, কংগ্রেসের আদর্শ, নীতি ও লক্ষ্য সম্পর্কে আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
বাংলা প্রদেশ কংগ্রেসের মধ্যে দলাদলি এই সময় আরও প্রকাশ্য হয়। এর প্রভাব ছাত্র সংগঠনেও পড়ে। ছাত্রদের মধ্যে বিরোধ মাঝে মাঝেই কুৎসিত রূপ নেয়। এর পিছনে ছিল কিছু নেতাদের প্ররোচনা। কোনও কোনও পত্র-পত্রিকা এবং রাজনৈতিক নেতারা এর জন্যে সুভাষচন্দ্রকে দোষারোপ করেন। সুভাষচন্দ্র এতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি প্রকাশ্য বিবৃতিতে বলেন যে, ছাত্রদের মধ্যে গোলমাল ও বিবাদ, বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটিতে রাজনৈতিক গোষ্ঠী বিবাদের ফল। যেহেতু প্রদেশ কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা তাঁকে সমর্থন করছেন তাই তাঁর বিরোধীরা নিজেদের স্বার্থে ছাত্রদের ব্যবহার করছেন। কিন্তু এতে তাঁর কোনও ক্ষতি হবে না। ছাত্র আন্দোলন ও ঐক্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাজনৈতিক জগতের এসব কৌশলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় আছে। ছাত্রদের এবং ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি তাঁর মনোভাব ও সহানুভূতি আগে যেমন ছিল, চিরকালই তা থাকবে।
সুভাষচন্দ্র ও যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তকে কেন্দ্র করে প্রদেশ কংগ্রেসে যে দুঃখজনক বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল তাতে সুভাষচন্দ্র গভীর বেদনা বোধ করতেন। তিক্ত বিবাদের মধ্যেও সুভাষচন্দ্র কীভাবে তাঁর চিত্তের ঔদার্য হারাননি তার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এক স্মৃতিচারণে। বীরভূম কংগ্রেসের বিরোধ সংক্রান্ত ব্যাপারে তারাশঙ্কর সুভাষচন্দ্রের অনুগত এক নেতার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন শুনে সুভাষচন্দ্র তারাশঙ্করকে তাঁর সঙ্গে একবার দেখা করতে অনুরোধ করেন। দেখা হলে সুভাষচন্দ্র তারাশঙ্করকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি কেন সাক্ষী দেবেন?” উত্তরে তারাশঙ্কর বলেন, “আমরা যারা কংগ্রেসকর্মী হয়ে কাজ করি, তারা দেশের সেবা করতেই আসে, তারা তো সুভাষচন্দ্র বা জে. এম. সেনগুপ্তের সেবা করতে আসে না!…তাই সত্য বলতে সাক্ষী দেব আমি।” বলেই, তারাশঙ্কর ভাবলেন সুভাষ উষ্ণ হয়ে উঠবেন। মুহূর্তের জন্যে সুভাষচন্দ্রের সুন্দর মুখটা কঠিন হয়ে উঠল, টকটকে রঙ লাল হয়ে গেল। পর মুহূর্তে প্রসন্ন হাসিতে ভরে উঠল। বললেন, “নিশ্চয়। মানুষকে দেবতা হিসাবে সেবা করলে সব সাধনাই পণ্ড হয়ে যাবে। কিন্তু আমি সত্য কথাটাই জানতে চাই।” পরে তারাশঙ্করের মুখে সব ঘটনা শুনে তিনি তাঁর অনুগত স্থানীয় নেতার আচরণের জন্যে দুঃখ ও লজ্জা প্রকাশ করে বলেন, “এঁরা আমাকে ছোট করেছেন, কলঙ্কভাগী করেছেন।” তারাশঙ্কর এরপর নিজের অনুভূতি সম্বন্ধে লিখেছেন, “আমি অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম। হারিয়ে ফেলেছিলাম নিজেকে।” তিনি তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘চৈতালী ঘূর্ণী’ উৎসর্গ করেছিলেন সুভাষচন্দ্রকে।
সব নিন্দা-সমালোচনা, ব্যক্তিগত আক্রমণ সত্ত্বেও সুভাষচন্দ্রের প্রতি যুব-ছাত্র সমাজের শ্রদ্ধা, ভালবাসা, আনুগত্য এতটুকু কমেনি। বাংলা তথা ভারতবর্ষের জাগ্রত যুব সমাজ ও যুব শক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁকে দেখার জন্যে, প্রণাম করার জন্যে, তাঁর ভাষণ শোনার জন্যে যুবক ও ছাত্রদের মধ্যে হইচই পড়ে যেত। মধ্যপ্রদেশের অমরাবতীতে ছাত্র সম্মেলনে (১ ডিসেম্বর, ১৯২৯) সুভাষচন্দ্র বলেছিলেন, “তোমাদের কেউ কেউ আমাকে হয়তো বাস্তবসম্পর্কবিহীন দিবা-স্বপ্নে মশগুল বলে ভাববে। যদি সেই কারণে আমাকে বর্জন কর তবে আমি অসহায়। এই অপরাধ আমাকে মেনে নিতে হবে এবং প্রকাশ্যেই স্বীকার করে নিতে হবে যে বাস্তবিকই আমি দিবাস্বপ্নবিলাসী। আমি কোন্ স্বপ্নে বিভোর একের পর এক তা তোমাদের কাছে উদঘাটিত করেছি…এই স্বপ্নগুলি হতেই আমার জীবনের প্রেরণা ও শক্তি আহরণ করে থাকি। এই স্বপ্ন বর্জিত হলে আমার জীবন অর্থহীন মাধুর্যহীন হয়ে আমার পক্ষে অসহনীয় হয়ে উঠতো, শুধু তাই নয়, তা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ ও শূন্যগর্ভ দর্শনরূপে পর্যবসিত হত।… স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন আমার অতি প্রিয় স্বপ্ন।” এই স্বপ্ন সার্থক করার জন্যে তিনি তরুণ-তরুণীদের কাছে আবেদন করেছিলেন এবং যে সাড়া তিনি পেয়েছিলেন তা ইতিপূর্বে ও পরে অন্য কোনও ভারতীয় রাষ্ট্রনেতা পাননি। সুভাষচন্দ্রের স্বপ্নের ভারত লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীরও স্বপ্ন হয়ে উঠেছিল।
স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার তথা ভারতীয় নারীর অসাধারণ অবদান শুরু হয়েছিল অসহযোগ আন্দোলনের পূর্ব থেকেই। গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনের ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে মেয়েদের যোগসূত্র আরও সুদৃঢ় হয়। বাংলার নারী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোভাগে আসতে শুরু করেন। নারী জাগরণ ব্যাপকতর হয়। সাইমন কমিশন-বিরোধী বয়কট আন্দোলন এবং ১৯২৮ সালের কংগ্রেস অধিবেশনের সময় সুভাষচন্দ্র মেয়েদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব আলোড়ন ও উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে ‘নারী ডিভিসন’-এর উল্লেখ ইতিপূর্বেই করেছি। শ্রীঅরবিন্দের অগ্রজ কবি মনোমোহন ঘোষের কন্যা লতিকা ঘোষ, অরু সেন প্রমুখরা মেয়েদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা জাগাবার কাজে এগিয়ে আসেন। লতিকা ঘোষের নেতৃত্বে বহু ছাত্রী ও সাধারণ নারী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে যোগ দেন। কংগ্রেস সভাপতি মতিলাল নেহরুকে নিয়ে যে শোভাযাত্রা সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে রাজপথে বেরিয়েছিল তাতে মার্চ করেছিলেন বহু দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ নারী। প্রকাশ্য রাস্তায় নারীদের ওইভাবে শোভাযাত্রায় যোগদান করা ছিল এক দুঃসাহসিক ঘটনা। বাংলার নারী সেদিন দেখিয়েছিলেন যে, ঘরের কাজ ও বাইরের স্বাধীনতা আন্দোলনের কাজ একই সঙ্গে তাঁরা করতে পারেন। সুভাষচন্দ্রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কলকাতার কল্যাণী দাস (ভট্টাচার্য) ‘ছাত্রীসংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঢাকাতে লীলা নাগ এর আগেই (১৯২৩) গড়ে তুলেছিলেন দীপালি সঙ্ঘ। এঁরাই শুরু করেন মহিলা সত্যাগ্রহ সমিতি এবং ‘জয়শ্রী’ পত্রিকা। এই সংগঠনের সদস্যরা বিপ্লব আন্দোলনের সঙ্গেও ক্রমে ক্রমে জড়িত হয়ে পড়েন। অনিল রায় ১৯২৪ সালে ‘শ্রীসঙঘ’ প্রতিষ্ঠা করার পর স্বাধীনতাকামী নারীরা এই বিপ্লবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করতে থাকেন। লীলা নাগ (রায়) ও অনিল রায় উভয়েই সুভাষচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ অনুগামী হয়ে ওঠেন।
খড়্গ বাহাদুর নামে এক নেপালী যুবক একজন বিপন্না নারীর সম্মান বাঁচাতে গিয়ে এক দুর্বৃত্তকে হত্যার অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে দণ্ডিত হয়েছিলেন। আদালতের বিচারে তাঁর এই শাস্তি বাংলায় তুমুল বিক্ষোভ সৃষ্টি করে। সভা-সমিতিতে তাঁর সাহস ও বীরোচিত কাজের প্রশংসা করা হয়। কারামুক্ত হলে তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সুভাষচন্দ্র বাংলার যুবকদের খড়্গ বাহাদুরের দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হতে আহ্বান করেন। কলকাতার টাউন হলে আয়োজিত খড়্গ বাহাদুর অভিনন্দন সভায় (৭ এপ্রিল, ১৯২৯) সুভাষচন্দ্র বলেন যে, বীরত্বের সম্মান না জানাতে শিখলে কোনও জাতির মধ্যে মনুষ্যত্বের উদ্বোধন হয় না। সভায় বহু মহিলা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য করে সুভাষচন্দ্র বলেন, মেয়েদের অস্ত্র ধারণ করতে হবে। নিজেদের সম্মান রক্ষার জন্যে অলঙ্কার রূপে তাঁদের সবসময় ছোরা রাখতে হবে। নারীশক্তির বোধন না হলে দেশের মুক্তি হবে না। অসংখ্য জনসভায় সুভাষচন্দ্রের ভাষণের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল নারীমুক্তি, নারীর অধিকার ও নারী-পুরুষের সমমর্যাদার ওপর গুরুত্বদান। সর্বপ্রকার কৃত্রিম বৈষম্যের অবলুপ্তি, পুরুষের দাসত্ব থেকে নারীর মুক্তি না হলে জাতির প্রকৃত মুক্তিলাভ অসম্ভব বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। গ্রামে গ্রামে মহিলা সমিতি গড়ে তুলে ঘরে ঘরে স্বদেশী ও আত্মনির্ভরতার বাণী প্রচার করতে হবে। বাংলার নারী বিপ্লবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ঐতিহাসিক জেরাল্ডাইন ফরবস্ (Geraldine Forbes) বলেছেন যে তাঁদের দৃষ্টিতে সুভাষচন্দ্র ছিলেন নারী অধিকারের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা, তাঁদের উৎসাহ অনুপ্রেরণার জীবন্ত মূর্তি। তাঁর মতে নারীবাদের (feminism), অর্থাৎ নারীর অধিকার, তার নিজের জীবনগঠনের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সুভাষচন্দ্রের যে আন্তরিকতা ছিল, যে ভূমিকা ছিল তা যথাযথ স্বীকৃতি পায়নি।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও আমূল সমাজ-সংস্কারের সঙ্গে নারীর অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত বলে সুভাষচন্দ্র উপলব্ধি করেছিলেন। হিন্দু সমাজের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, হিন্দুরা মাতৃমূর্তির মাধ্যমে আরাধনা করে বলে গর্ব করে। কিন্তু ক’জন হিন্দু ‘বুকে হাত দিয়ে’ বলতে পারে তারা মাতৃজাতিকে সত্যিই সম্মান করে, তাদের সম্মান রক্ষা করে? যদি তা করতো তাহলে সমাজে এত নারী-লাঞ্ছনা, নির্যাতনের ঘটনা ঘটতো না। ছাত্রদের তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, “তোমরা হয়তো ইংরেজদের ঘৃণা কর। কিন্তু ইংরেজরা যেমন তাদের নারীজাতিকে সম্মান করতে জানে, তা তোমাদের তাদের কাছে শিক্ষা করা উচিত।” সমাজে পরিবর্তন আনায়, নারীকে সম্মান ও গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠা করায় ছাত্রদের দায়িত্ব আছে। বাল্যবিবাহ প্রথা উচ্ছেদ করতে হবে। স্ত্রীজাতিকে আজীবন ব্রহ্মচর্য পালনের (অর্থাৎ অবিবাহিত থাকার) অধিকার দিতে হবে, তাদের যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বিধবাদের পুনর্বিবাহের অনুমতি দিতে হবে। ব্যায়াম শিক্ষার, লাঠি ও ছোরা খেলার শিক্ষা দিতে হবে। সাবলম্বী হবার মতো অর্থকরী শিক্ষালাভের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি ছাত্র-যুবক সমাজকে সতর্ক করে বলেন যে, রাষ্ট্রীয় বিপ্লব করার জন্যে কারাবাস বা অন্য নিযার্তন হয়তো সহ্য করতে হবে। কিন্তু এর জন্যে সকলের সহানুভূতি ও ভালবাসা পাওয়া যায়। যাঁরা সমাজ বিপ্লবের জন্যে চেষ্টা করেন তাঁদের বিপদ অনেক বেশি। ঘরে, বাইরে, নিজের আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গে তাঁদের লড়াই করতে হয়। লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হয় দিন-রাত। অখণ্ড সমাজের সহানুভূতি কোনওদিন তাঁরা পান না।
কোনও রাজনৈতিক নেতা নির্মম নিষ্ঠুর সত্য এত গভীরভাবে উপলব্ধি করে নির্ভীকভাবে ব্যক্ত করেছিলেন কি না, এমন প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা অন্য কোনও নেতার ছিল কি না তা সন্দেহ। সামাজিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে যে কর্মসূচী সুভাষচন্দ্র স্থির করেছিলেন প্রায় সাত দশক আগে (এবং তা কার্যকর করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন), তা একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও ভারতে বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব হয়নি। তাঁর কর্মসূচীর মধ্যে ছিল অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ; রাস্তা ও কুয়া ব্যবহারে সকল সম্প্রদায়ের অধিকার; মন্দিরে সকল বর্ণের প্রবেশাধিকার; আন্তঃবর্ণ ভোজন; আন্তঃবর্ণ বিবাহ; পর্দা-প্রথার অবসান; নারীর অধিকার সংক্রান্ত আইনের সংশোধন; পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই বিবাহের নিম্নতম বয়ঃসীমা বেঁধে দেওয়া; পণপ্রথা নিষিদ্ধ করা; পেশাদার পুরোহিত ছাড়াই ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে উৎসাহ দান। সুভাষচন্দ্র অসবর্ণ বিবাহের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছিলেন। রক্তের সংমিশ্রণের ফলে জাতি পুনর্জীবন লাভ করে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। ভারতবর্ষের ইতিহাসের দৃষ্টান্ত ও মানব-বিজ্ঞানীদের (Anthropologists) অভিমতের ভিত্তিতে তিনি বর্ণসংকরের ভয় অমূলক বলে মনে করতেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, সুভাষচন্দ্র তাঁর সমাজ বিপ্লব ও সামাজিক গণতন্ত্রের কর্মসূচী কার্যকর করার জন্যে কতটুকু সক্রিয় হয়েছিলেন? ভাবপ্রবণ স্বপ্নবিলাসী সুভাষচন্দ্রের এটাও ছিল এক অলীক আশা মাত্র। এর উত্তর প্রসঙ্গে স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে ১৯৩৩ সালে অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি ইউরোপে চলে গিয়েছিলেন। কয়েক বছর পর যখন তিনি দেশে ফেরেন তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে পড়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই গান্ধী-সুভাষ মতভেদ কংগ্রেসের মধ্যে তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব সঙ্কট সৃষ্টি করে। সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে সুভাষচন্দ্রের নিজের জীবনে ও বিশ্বের ইতিহাসে এক নাটকীয় পরিবর্তন দেখা দেয়। সামাজিক বিপ্লব ওই পরিস্থিতিতে আর সম্ভব ছিল না। কিন্তু আজাদ হিন্দ ফৌজের পরিচালনায় নেতাজি সুভাষ দেখিয়েছিলেন যে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা। বীরাঙ্গনা ভারতীয় নারীর আদর্শ তাঁর কাছে শুধুই স্বপ্ন ছিল না। এক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। স্বাধীন ভারতবর্ষে সুভাষচন্দ্রের প্রত্যাবর্তন ঘটলে তাঁর রাজনৈতিক এবং সামাজিক আদর্শ ও কর্মসূচী তিনি কতখানি রূপায়িত করতে সফল হতেন সেটা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের প্রশ্ন।
১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ পর্যন্ত ছিল সুভাষচন্দ্রের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কর্মবহুল, চাঞ্চল্যকর ঘটনাবহুল অধ্যায়। নিখিল বঙ্গ যুব-সম্মেলনে (১৭ ডিসেম্বর, ১৯২৮) সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস কর্মীদের আশু কর্তব্য সম্বন্ধে বিশেষ জোর দিয়ে বলেন যে, ভারতীয়দের কাছে এখন Marxism, Socialism, Bolshevism প্রভৃতি কোনো ‘ism’ই নয়— একমাত্র Nationalismই গ্রহণযোগ্য। ছাত্র-যুবকদের মধ্যে আদর্শ-নিষ্ঠার অভাবের জন্যে তিনি শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষক সমাজকে দায়ী করেন। বেকার যুবকদের চাকরির সন্ধান করার বদলে ব্যবসাক্ষেত্রে প্রবেশের কথা বলে নিঃসম্বল ও কপর্দকহীন মাড়োয়ারিদের সাফল্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। তিনি পল্লী সংস্কার, উন্নয়ন ও স্ব-নির্ভরতা, বন্যা-দুর্ভিক্ষের কারণ সম্পর্কে গবেষণা ও তাঁর প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ, ধর্মকর্ম, শিল্পকলা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে দেশকে উজ্জীবিত করার জন্যে আহ্বান জানান। ১৯২৯ সালের সূচনায় তিনি কংগ্রেসের কার্যপদ্ধতির পর্যালোচনা করে প্রস্তাব করেন যে, আগামী দু’মাসের মধ্যে নতুন পাঁচ লক্ষ কংগ্রেস সদস্য করতে হবে, দু’ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি শহরে এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করতে হবে।
সুভাষচন্দ্র যা বিশ্বাস করতেন, দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক মনে করতেন তা প্রকাশ্যে ব্যক্ত করতে কোনও দ্বিধা করতেন না। এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি না হ্রাস পাবে, নিজের রাজনৈতিক জীবনের পক্ষে ক্ষতিকর হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা করতেন না। রাজনৈতিক সুবিধাবাদ, প্রয়োজন-ভিত্তিক আপস, ‘আবহাওয়া’ বুঝে নিজের নীতি ও কর্মসূচী সংশোধন করা তাঁর স্বভাব বিরুদ্ধ ছিল। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রশ্নে, মুসলমানদের কর্পোরেশনে চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগের ব্যাপারে গান্ধীজি ও কংগ্রেসের প্রভাবশালী প্রবীণ নেতাদের প্রকাশ্য বিরোধিতায়, সুভাষচন্দ্রের চরিত্রের এই দিকটি বারবার ফুটে উঠেছিল। হিন্দীকে রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ করার প্রশ্নটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় ছিল। রাষ্ট্রীয় ভাষা রূপে হিন্দীকে স্বীকার করার ব্যাপারে বাংলা দেশে ও দক্ষিণ ভারতে যে প্রবল আপত্তি আছে তা কারও অজানা ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও সুভাষচন্দ্র হিন্দীকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেবার পক্ষে জোরাল যুক্তি দিয়েছিলেন। হিন্দীর প্রচারের ফলে মাতৃভাষার উচ্ছেদের আশঙ্কাকে তিনি ‘অমূলক’ মনে করে বাঙালি যুবকদের হিন্দী শিখতে বলেছিলেন। প্রাদেশিক বা মাতৃভাষার চর্চার গুরুত্বের ওপর জোর দিলেও, সুভাষচন্দ্র নির্ভীকভাবে বলেছিলেন, “অদূর ভবিষ্যতে হিন্দী স্বাধীন ভারতের জাতীয় ভাষা হবে” (৩১ ডিসেম্বর, ১৯২৮)। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে, বাংলার চিন্তা ও সাধনার কথা অন্যান্য রাজ্যের মানুষকে জানানো প্রয়োজন। তার জন্যে হিন্দীভাষা জানা একান্তই প্রয়োজন। এরকম সাহসী বক্তব্য সমসাময়িক কালে কোনও অ-হিন্দীভাষী নেতার পক্ষে বলা দুরূহ ছিল। সুভাষচন্দ্রের মতো একজন নেতার পক্ষেই তা সম্ভব ছিল।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন