১৯৩৯ সালের ত্রিপুরী কংগ্রেস সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনের তথা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা বললে অত্যুক্তি হবে না। হরিপুরা কংগ্রেসের পর সভাপতিরূপে সুভাষচন্দ্র সচেতনভাবে গান্ধীজি ও তাঁর অনুগত প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সৌহার্দের সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নিজের বিবেচনায় স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং তা অর্জন করার জন্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির প্রশ্নে তিনি অবিচল ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকলের সঙ্গে খোলাখুলি বিতর্ক ও আলোচনার মাধ্যমেই তিনি জাতীয় কংগ্রেসকে সেই লক্ষ্যে পরিচালিত করতে সক্ষম হবেন। তাঁর এই মনোভাবের জন্যে আধুনিক ঐতিহাসিকরাও মন্তব্য করেছেন যে, পূর্ববর্তী অন্য সব কংগ্রেস সভাপতিদের মতোই সুভাষচন্দ্র কার্য পরিচালনা করেছিলেন। উল্লেখযোগ্য তেমন কোনও বৈশিষ্ট্য ছিল না। কোনও কোনও মহলে এই মনোভাবের জন্যে সুভাষচন্দ্র সমালোচিতও হয়েছিলেন। কিন্তু এ সত্ত্বেও ১৯৩৮ সালের শেষ দিকেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, গান্ধীপন্থী কংগ্রেস নেতারা সুভাষচন্দ্রের সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচনের বিরোধিতা করবেন। ফেডারেশন-পরিকল্পনা বর্জন সম্পর্কে তাঁর অনমনীয় মনোভাব, নিয়মতান্ত্রিকতার পথে সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে আপস-প্রচেষ্টার কঠোর বিরোধিতা, আসন্ন আন্তর্জাতিক যুদ্ধের পূর্ণ সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ শক্তিকে চরমপত্র দান এবং তা প্রত্যাখ্যাত হলে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে তাঁর সঙ্কল্প গান্ধীজি ও দক্ষিণপন্থী কংগ্রেস নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না।
অন্য দু’টি কারণের উল্লেখ প্রয়োজন। প্ল্যানিং কমিশন গঠন, আর্থিক পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্যে যে পরিকল্পনা সুভাষচন্দ্রের উদ্যোগে (জওহরলালেরও সক্রিয় সমর্থন এবং সহযোগিতায়) গৃহীত হয়েছিল তা গান্ধী-সমর্থক রক্ষণশীল পুঁজিপতিদের (যেমন ঘনশ্যামদাস বিড়লা) পছন্দ হয়নি। এঁদের প্রভাব স্বয়ং গান্ধীজি ও অন্য দক্ষিণপন্থী কংগ্রেস নেতাদের ওপর কম ছিল না। অন্য কারণটি হল, দক্ষিণপন্থী কংগ্রেস নেতারা বুঝেছিলেন যে, কংগ্রেস সভাপতির পদে নির্বাচিত করেও সুভাষচন্দ্রকে নিজেদের গোষ্ঠী ও মতভুক্ত করা সম্ভব হয়নি, করার কোনও সম্ভাবনাও নেই। এমনকি গান্ধীজির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল, তাঁর অসামান্য অবদান এবং ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হলেও সুভাষচন্দ্র মহাত্মা গান্ধীর অন্ধ ভক্ত হবেন না। গান্ধীজির উপদেশ ও নির্দেশকেই সর্বক্ষেত্রে শেষ কথা বলে মেনে নিতে তিনি সম্মত হবেন না। এই পটভূমি ও পরিস্থিতিতে সুভাষচন্দ্রের কংগ্রেস সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচন যে গান্ধীপন্থী কংগ্রেস নেতারা (যাঁরা কংগ্রেস সংগঠনে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ছিলেন) কোনওমতেই চাইবেন না তা অনিবার্য ছিল।
তাঁর পুনর্নির্বাচনের প্রতি দক্ষিণপন্থী কংগ্রেস নেতাদের প্রবল বিরূপ মনোভাব সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন হলেও সুভাষচন্দ্র পুনরায় দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত করেন। তার কারণ তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, কংগ্রেসের মধ্যে বামপন্থী মনোভাবাপন্নদের প্রতিনিধিত্ব করার মতো তেমন কোনও প্রার্থী নেই। অথচ দেশের ভিতরকার ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যে অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে বৃহত্তর আন্দোলন-বিমুখ, আপসনীতি ও রক্ষণশীল মনোভাবাপন্ন কোনও সভাপতি নির্বাচিত হলে স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষতি হবে। এক সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হবে। তিনি জানান যে, যদি আচার্য নরেন্দ্র দেব সভাপতি হতে সম্মত হন তাহলে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ইতিপূর্বেই (১১ জানুয়ারি, ১৯৩৯) ডাঃ পট্টভি সীতারামাইয়াকে সভাপতি পদে নির্বাচনপ্রার্থী করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রথমে মৌলানা আজাদের নাম প্রস্তাব করা হয়। তিনি অসম্মতি জানিয়ে পট্টভি সীতারামাইয়াকে সমর্থন করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হবেন, এই আশা ব্যক্ত করে এক বিবৃতি দেন। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি পরবর্তী সভাপতি পদের প্রার্থী নির্বাচনের ব্যাপারে সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে পরামর্শ করা তো দূরের কথা, তাঁকে ওই বিষয়ে তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা জানাননি পর্যন্ত। সুতরাং সুভাষচন্দ্রের ক্ষোভ এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের মনোভাব এবং উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তাঁর সন্দেহ খুবই সঙ্গত ছিল। সুভাষচন্দ্র তাঁর সিদ্ধান্তে অবিচল থাকায় সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, আচার্য কৃপালনী, রাজেন্দ্র প্রসাদ, প্রমুখ কয়েকজন ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য এক বিবৃতিতে (২৪ জানুয়ারি, ১৯৩৯) কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব ও ক্ষমতা সম্বন্ধে এক অদ্ভুত যুক্তি উত্থাপন করেন। তা হল: কংগ্রেসের নীতি ও কার্যপদ্ধতি কংগ্রেস সভাপতি নির্ধারণ করেন না। সভাপতির মর্যাদা প্রকৃতপক্ষে চেয়ারম্যানের মতো। “নিয়মতন্ত্রানুগ রাজতন্ত্রের অধীনে রাজা যেমন সমগ্র জাতির ঐক্য ও সংহতির প্রতীক, ভারতের পক্ষে কংগ্রেসের সভাপতিও সেইরূপ। অতএব একান্ত সঙ্গতভাবেই এই পদপ্রাপ্তি পরম সম্মানজনক বিবেচিত এবং বার্ষিক নির্বাচন দ্বারা ভারতমাতার কৃতী সন্তানগণের মধ্যে যথাসম্ভব বেশি সংখ্যক লোককে এই সম্মানদানের চেষ্টা হইতেছে।” অর্থাৎ, কংগ্রেস সভাপতি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির (নেপথ্যে গান্ধীজির!) হাতের পুতুল মাত্র। নীতি নির্ধারণ, কর্মসূচী গ্রহণ এবং তা রূপায়ণে কোনও সার্থক ক্ষমতা বা ভূমিকা তাঁর নেই। বল্লভভাই, কৃপালনী ও রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রমুখরা তাঁদের বিবৃতিতে আরও একটি অভিনব কথা বলেন। সেটি হল যে, বিশেষ কারণ ছাড়া একই ব্যক্তিকে সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত করা উচিত নয়। ইতিপূর্বে একাধিকবার কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচিতদের দীর্ঘ তালিকার (১৯৩৮ পর্যন্ত) উল্লেখ অপ্রয়োজন। শুধু এইটুকু বিশেষভাবে স্মরণ করা যেতে পারে যে, জওহরলাল নেহরু ১৯২৯ (লাহোর), ১৯৩৬ (লক্ষ্ণৌ) এবং ১৯৩৭ সালে (ফৈজপুর) কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এই বিবৃতিতে সুভাষচন্দ্র যে খুবই ক্ষুব্ধ ও আহত হয়েছিলেন তা সহজেই অনুমেয়। তিনি অভিযোগ করেন যে, ওয়ার্কিং কমিটির ওই সদস্যরা অন্যায়ভাবে ভোটারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। যদি সভাপতি পদে স্বাধীনভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ না দেওয়া হয় তাহলে নির্বাচনের প্রথা তুলে দিয়ে ওয়ার্কিং কমিটিই সভাপতি মনোনয়ন করবেন, এই নিয়ম প্রবর্তন করাই অধিকতর কাম্য। নির্বাচনের দিন আসন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধ বিতর্ক এবং তিক্ততা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ২৫ জানুয়ারির এক বিবৃতিতে সুস্পষ্ট হয় যে, এক ‘ঘরোয়া’ আলোচনায় পট্টভি সীতারামাইয়াকে সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্যাটেল বলেন যে ওই আলোচনায় “সুভাষবাবুকে পুনর্নির্বাচিত করা অনাবশ্যক বলেই আমরা পরিষ্কার অভিমত জ্ঞাপন করি”। আলোচনার সময় গান্ধীজি উপস্থিত ছিলেন।
সর্দার প্যাটেল তাঁর ২৫ জানুয়ারির বিবৃতিতে বারদৌলিতে ‘ঘরোয়া’ আলোচনায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন বলে উল্লেখ করেছিলেন সেই নামগুলি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ—মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, জওহরলাল নেহরু, রাজেন্দ্র প্রসাদ, ভুলাভাই দেশাই, আচার্য কৃপালনী, বল্লভভাই প্যাটেল ও মহাত্মা গান্ধী। সুভাষচন্দ্রের বিরোধীশক্তি কতটা প্রবল পরাক্রান্ত ও সুসংগঠিত ছিল তা ওই নামগুলি থেকেই সুস্পষ্ট হয়েছিল। তুলনামূলকভাবে তাঁর সমর্থকদের মধ্যে তেমন কোনও ‘বড় নাম’, ইংরাজি পরিভাষায় ‘political heavy weight’, ছিল না। ত্রিপুরী কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে অনেকেই সর্দার প্যাটেল ও ওয়ার্কিং কমিটির অন্য সদস্যদের ওই যুক্ত বিবৃতির প্রতিবাদ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন রফি আহমদ কিদোয়াই, কে, এফ. নরিম্যান (K. F. Nariman), ডাঃ খারে, মিনু মাসানি, ইউসুফ মেহের আলি, জিতেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, যোগীন্দ্র চক্রবর্তী প্রমুখ। জিতেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায় কঠোর ভাষায় নিন্দা করে বলেন যে, সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে ওয়ার্কিং কমিটির ওই সাতজন সদস্যের প্রচারকার্যে নামা এত ক্ষুদ্রজনোচিত, হীন ও অশোভন হয়েছে যা কংগ্রেসের ইতিহাসে এর তুলনা বিরল।
শরৎচন্দ্র বসুকে একটি তারবার্তায় (২৩ জানুয়ারি, ১৯৩৯) সুভাষচন্দ্র সম্পর্কে বল্লভভাই প্যাটেলের মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তোলে। বল্লভভাই জানান যে, সুভাষচন্দ্রকে পুনর্নির্বাচনের কোনও বিশেষ প্রয়োজন দেখা যাচ্ছে না এবং তিনি (শরৎচন্দ্র) যেন সুভাষচন্দ্রকে সভাপতি নির্বাচনের ব্যাপারে কংগ্রেসকর্মীদের মধ্যে ভেদ সৃষ্টি না করতে অনুরোধ জানান। শরৎচন্দ্র এই তারবার্তার তীব্র প্রতিবাদ করলে বল্লভভাই প্রত্যুত্তরে সরাসরি মন্তব্য করেন যে, দেশের স্বার্থে সুভাষচন্দ্রের পুনর্নির্বাচন “ক্ষতিকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে”। সর্দার প্যাটেলের ওই ধরনের রুচিবিরুদ্ধ, অবমানকর মন্তব্য শরৎচন্দ্র, আচার্য নরেন্দ্র দেব, সর্দার শার্দূল সিং কবিশের ও সুভাষচন্দ্রের অগণিত সমর্থক এবং গুণগ্রাহীদের গভীরভাবে মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ করে। এম. এস. আনে, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, চারুচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ বিভিন্ন নেতারাও এইভাবে প্রতিনিধিদের ভোটাধিকারে হস্তক্ষেপ করার প্রতিবাদ জানান এবং সুভাষচন্দ্রের পক্ষ সমর্থন করেন। সুভাষচন্দ্র এক বিবৃতিতে (২৭ জানুয়ারি, ১৯৩৯) প্রশ্ন করেন, “আমি উক্ত সদস্যদের (ওয়ার্কিং কমিটির) হাতের পুতুল হব না—এই জন্যই কি তাঁরা আমার বিরোধী?” বল্লভভাই প্যাটেলের যুক্তিগুলির অসারতার পুনরুল্লেখ করে তিনি চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, “আমার পুনরায় নির্বাচন দেশের পক্ষে ক্ষতিকর হবে, এই যুক্তি এমনই বিস্ময়কর যে, এর প্রতিবাদ করা অনাবশ্যক। যদি ওই সমস্ত নেতারা (সর্দার প্যাটেল প্রমুখ) তাঁদের প্রভাব আমার বিরুদ্ধে প্রয়োগ না করতেন এবং আমার নিবার্চনের বিরুদ্ধে অনুজ্ঞা প্রচার না করতেন, তাহলে আমরা কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের যথার্থ অভিমত জানতে পারতাম এবং ওই অভিমত সর্দার প্যাটেলকে বিস্ময়ে অভিভূত করত। ”
রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা ও দেশজোড়া গভীর আগ্রহের মধ্যে ত্রিপুরী কংগ্রেসের সভাপতি পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় (২৯ জানুয়ারি, ১৯৩৯)। সকলকে বিস্মিত করে সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেস মহারথীদের সমর্থিত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে ১৫৮০-১৩৭৫ ভোটে পরাজিত করে পুনর্নির্বাচিত হলেন। বিভিন্ন প্রদেশের প্রতিনিধিদের প্রদত্ত ভোটের বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, মোট প্রাপ্ত ১৫৮০টি ভোটের মধ্যে ৪০৪টি সুভাষচন্দ্র পেয়েছিলেন বাংলা থেকে। অর্থাৎ ১১৭৬টি ভোট তিনি পান ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশ থেকে। সুভাষচন্দ্রের সর্বভারতীয় জনপ্রিয়তা ও সমর্থন ছিল সংশয়াতীত। বিশেষ করে, প্রচ্ছন্নভাবে গান্ধীজির এবং প্রত্যক্ষভাবে তাঁর অনুগত বড় বড় কংগ্রেস নেতাদের প্রবল বিরোধিতা, প্রচার এবং চাপ সৃষ্টি সত্ত্বেও সুভাষচন্দ্রের পুনর্নির্বাচন ছিল এক চমকপ্রদ অপ্রত্যাশিত ঘটনা। স্বভাবতই সুভাষচন্দ্র এবং তাঁর অনুরাগী সমর্থকরা অত্যন্ত উৎফুল্ল বোধ করেন। বিজয় অভিনন্দনের উত্তরে অভিভূত সুভাষচন্দ্র বলেন যে, সভাপতি পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘ব্যক্তিগত’ কিছু নেই, এই কথাটি তিনি প্রথম থেকেই বলে এসেছেন। এই জন্যেই ‘তিক্ততা কিংবা বিদ্বেষের লেশমাত্র ছাড়াই’ তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠেছিল। সমর্থকদের গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আবেদন করেন তাঁরা যেন ‘বয়োজ্যেষ্ঠদের অহেতুক সমালোচনা কিংবা নিন্দা’ না করেন। এই আনন্দের মুহূর্তে এমন কোনও শব্দ উচ্চারণ কিংবা এমন কোনও কাজ না করেন যাতে কারোর অনুভূতি আহত হয়, কারোর প্রতি কটাক্ষ না করা হয়। সুভাষচন্দ্রের এই বিবৃতি তাঁর সদিচ্ছা ও এক সহযোগিতার বাতাবরণ সৃষ্টির আন্তরিক প্রয়াসের প্রকাশ হলেও এর মধ্যে বাস্তবচিত্রের কোনও প্রতিফলন ছিল না। তাঁর প্রতি ওয়ার্কিং কমিটির ‘বয়োজ্যষ্ঠ’ বা প্রবীণ নেতাদের বিরূপতা কতটা, তাঁর অপ্রত্যাশিত জয়ে তাঁরা কতখানি ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তাঁদের পিছনে তাঁর (সুভাষচন্দ্রের) আসল প্রতিপক্ষ কে তা সুভাষচন্দ্র সঠিক অনুমান করতে পারেননি। এই মারাত্মক ভুল তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, বিচক্ষণতা এবং বিচারবুদ্ধির অভাবের ফলেই হয়েছিল বললে অন্যায় হবে না।
সুভাষচন্দ্রের পুনর্নির্বাচন যে গান্ধীজি চান না তা পূর্বেই সুস্পষ্ট হয়েছিল। অন্যান্যদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং গান্ধীজিকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলেন সুভাষচন্দ্রের পুনর্নির্বাচন সমর্থন করতে। তিনি জওহরলালকেও অনুরূপ অনুরোধ করেছিলেন। তাতে কোনও ফল হয়নি। যে ‘ঘরোয়া’ আলোচনায় পট্টভি সীতারামাইয়াকে ত্রিপুরী কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেখানে গান্ধীজি উপস্থিত ছিলেন। তাঁর উপস্থিতিতে কোনও সিদ্ধান্ত যে তাঁর পূর্ণ অনুমোদন ছাড়া নেওয়া অসম্ভব তা কারোর অজানা ছিল না। গান্ধীজি নিজেও সুভাষচন্দ্রকে প্রার্থী না হতে বলেছিলেন। প্যাটেল, পন্থ, রাজেন্দ্র প্রসাদ, কৃপালনী প্রমুখ নেতারা গান্ধীজির ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও কিছু করবেন না তাও জানা কথা ছিল। তবুও সুভাষচন্দ্র উপলব্ধি করতে পারেননি বা পারলেও মন থেকে মানতে পারেননি যে, গান্ধীজিই তাঁর বিরোধীদের শক্তির মূল উৎস। তাঁর বিশ্বাস ছিল গান্ধীজি এই ধরনের রাজনৈতিক বিতর্ক-বিরোধ ও ক্ষুদ্রতার ঊর্ধে। তাঁর সেই বিশ্বাস প্রচণ্ড আঘাত পেল নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরেই গান্ধীজির বিবৃতিতে (৩১ জানুয়ারি, ১৯৩৯)। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন যে, গোড়া থেকেই তিনি সুভাষচন্দ্রের পুনর্নির্বাচনের সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন। সুভাষচন্দ্র তাঁর সহকর্মীদের সম্পর্কে যেভাবে উল্লেখ করেছেন তা শোভন হয়নি। পট্টভি সীতারামাইয়া তাঁর উদ্যোগে প্রার্থী হয়েছিলেন। সুতরাং এই পরাজয় “সীতারামাইয়ার পরাজয় আমারই বেশি, তাঁর নয় (the defeat is more mine than ‘his’)।” তথাপি তিনি সুভাষচন্দ্রের জয়লাভে আনন্দিত। সুভাষচন্দ্র ‘দক্ষিণপন্থী’দের অনুগ্রহে সভাপতি না হয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। এখন তিনি বিনা বাধায় একমতাবলম্বী সদস্যদের নিয়ে একটি সুসংহত ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করতে পারবেন। নিজের নীতি ও কর্মসূচী কার্যকর করতে পারবেন। এই বিবৃতিতে তিনি সুভাষচন্দ্রকে ‘প্রশংসাপত্র’ও দিয়ে বললেন, “যাই হোক, সুভাষবাবু দেশের শত্রু নন (After all, Subhas Babu is not an enemy of the country)।” গান্ধীজির এই বিবৃতি সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো ছিল। তিনি কার্যত জানালেন সুভাষচন্দ্র তাঁর এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের বিরাগভাজন হয়ে এবং তাঁদের অসহযোগিতা সত্ত্বেও কেমন করে সভাপতিরূপে কাজ করতে পারেন তা তিনি দেখবেন। অমলেশ ত্রিপাঠী গান্ধীজির এই বিবৃতির সঠিক ব্যাখ্যা করে লিখেছেন, “এত ভদ্র ভাষায় এমন ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ কি হতে পারে?”
গান্ধীজির বিবৃতিতে সুভাষচন্দ্র গভীর মর্মাহত হন। গান্ধীজির বক্তব্য এবং নির্বাচনের ফলাফলকে তাঁর (গান্ধীজির) ব্যক্তিগত জয়-পরাজয়ের প্রতীকরূপে দেখার যুক্তিকে খণ্ডন করেন। গান্ধীজির প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “আমার সম্পর্কে মহাত্মা গান্ধী কিরূপ মত পোষণ করেন, তা আমি জানি না। কিন্তু তাঁর মতামত যাই হোক না কেন, তাঁর বিশ্বাসভাজন হওয়ার জন্যে আমি সর্বদাই সচেষ্ট থাকব। অন্যান্য সকলের আস্থা অর্জন করেও আমি যদি ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের আস্থা লাভ করতে না পারি, তাহলে সেটা আমার পক্ষে বিশেষ পরিতাপের বিষয় হবে।” আবেগপ্রবণ সুভাষচন্দ্র ভুল প্রত্যাশা করেছিলেন। তাঁর প্রতি গান্ধীজি ও গান্ধীপন্থীদের বিরোধিতার গভীরতা, নির্বাচনে পরাজয়ে তাঁদের হতাশা ও অপমানবোধের তীব্রতা তিনি পরিমাপ করতে পারেননি। কোনও মতেই তাঁরা যে তাঁকে সভাপতি পদে মেনে নেবেন না (একমাত্র সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা ছাড়া) তা সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস করতে পারেননি। তাঁর দৃঢ় আশা ছিল যে, উদার সহযোগিতার মনোভাব গ্রহণ করলে বিভিন্ন মতের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সুসংহত ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে। বিরোধ ও তিক্ততা পিছনে ফেলে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করা সম্ভব হবে। তবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে কোনও আপস ও অবিলম্বে এক সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করার প্রশ্নে কোনও সমঝোতা করতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন না।
গান্ধীজির সঙ্গে সাক্ষাতে কথাবার্তা বলে তাঁর সমর্থন লাভের জন্যে সুভাষচন্দ্র ১৫ ফেব্রুয়ারি ওয়ার্ধায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। ওই দিনই ওয়ার্ধা থেকে প্রচারিত বিবৃতিতে সুভাষচন্দ্র জানান যে, মহাত্মা গান্ধী তাঁর ‘স্বভাবসিদ্ধ সদয় ব্যবহার ও প্রীতির সঙ্গে’ তাঁকে গ্রহণ করেছেন। ‘পরিপূর্ণ হার্দ্য পরিবেশে ‘উভয়ের মধ্যে তিন ঘণ্টা ব্যাপী ‘জ্বলন্ত’ সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা হয়নি। কয়েকটি সাময়িক সিদ্ধান্তে উপনীত হলেও সেগুলি জানাবার সময় আসেনি। বাস্তবে কিন্তু এই সাক্ষাৎকার ব্যর্থ হয়েছিল। গর্ডন এর কারণ উল্লেখ করে লিখেছেন যে, সুভাষচন্দ্র তাঁর The Indian Struggle বইটিতে গান্ধীজি ও গান্ধীপন্থীদের সম্বন্ধে যা লিখেছিলেন তাতে গান্ধীজি তাঁর ওপর খুবই রুষ্ট হয়েছিলেন। এর ওপর ছিল ত্রিপুরীর সভাপতি নির্বাচনের সাম্প্রতিক ঘটনা। গান্ধীজি ও তাঁর অনুগামীরা সুভাষচন্দ্রকে ‘শিক্ষা দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন’ (‘preparing to teach him a lesson’)। পরে গান্ধীজিকে লেখা সুভাষচন্দ্রের পত্রে (২৫ মার্চ, ১৯৩৯) জানা গিয়েছিল যে, গান্ধীজির সঙ্গে তাঁর কোনও ঐকমত্যই হয়নি। তবু সুভাষচন্দ্র একটি সম্মানজনক মীমাংসা ও ওয়ার্কিং কমিটি গঠনে গান্ধীপন্থী নেতাদের সহযোগিতার আশা ছাড়েননি। আচার্য কৃপালনী লিওনার্ড গর্ডনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন (১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৬) প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা (Old Guard) তাঁর সঙ্গে কংগ্রেস পরিচালনায় সহযোগিতা করবে, এটা চিন্তা করার অর্থ সুভাষচন্দ্র ‘মূখের স্বর্গে’ বাস করছিলেন। সুভাষচন্দ্রের দিক থেকে গান্ধীজির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি দূর করে একটি সম্মানজনক মীমাংসায় আসার চেষ্টার কোনও ত্রুটি হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও অমলেশ ত্রিপাঠী বিস্ময়কর মন্তব্য করেছেন যে, গান্ধীজির সঙ্গে ওয়ার্ধায় সাক্ষাৎকারে ‘ব্যাপারটা ভদ্রভাবে মিটিয়ে না নিয়ে’ সুভাষচন্দ্র একটি বড় ভুল করেছিলেন!
মস্ত ভুল সুভাষচন্দ্র সত্যিই করেছিলেন, কিন্তু সেটি কয়েকদিন পরে। ওই প্রসঙ্গে আসার পূর্বে কৃপালনীর সুভাষচন্দ্রের মূল্যায়ন সম্বন্ধে একটি তথ্য উল্লেখ করি। আচার্য কৃপালনী কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা ও ওই সময় কংগ্রেসের মহাসচিব ছিলেন। সুভাষচন্দ্রের কট্টর বিরোধীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। ত্রিপুরী কংগ্রেস অধিবেশনের সময় সুভাষচন্দ্র যখন গুরুতর অসুস্থ এবং প্রায় শয্যাশায়ী অবস্থায় অধিবেশনে আসেন তখন কৃপালনী মন্তব্য করেছিলেন যে সুভাষচন্দ্র সত্যিই অসুস্থ নন। তিনি ‘নাটক করছেন’। সেই কৃপালনীই পরবর্তীকালে ঘোষণা করেছিলেন, “কংগ্রেস পঞ্চাশ বছরে যা করতে পারেনি সুভাষ তা পাঁচ বছরে করেছেন।” অবশ্যই এই স্বীকারোক্তি তিনি করেছিলেন বহু বছর পরে ‘নেতাজি’র অবদান স্মরণ করে। এই স্বীকৃতি অন্য বহু নেতা, একদা যাঁরা সর্বতোভাবে সুভাষচন্দ্রের বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁকে শেষপর্যন্ত কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাঁরাও মুক্তকণ্ঠে জানিয়েছিলেন। কিন্তু যে ঐতিহাসিক সত্যটি বিস্মৃত হওয়া সম্ভব নয় তা হল, ‘দেশনায়ক’ ও ‘রাষ্ট্রপতি’ (কংগ্রেস সভাপতি) সুভাষচন্দ্রের ‘নেতাজি’ সুভাষচন্দ্রে উত্তরণ এক অবিচ্ছেদ্য ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ ও ইতিহাসের ধারার পরিণতি ছিল।
কয়েকদিন পরেই (২২ ফেব্রুয়ারি) ওয়ার্কিং কমিটির ১২ জন সদস্য একযোগে পদত্যাগ করলে সঙ্কট ঘনীভূত হয়। জওহরলাল নেহরু একই দিনে এক পৃথক পত্রে ওয়ার্কিং কমিটি থেকে কার্যত তাঁর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত সুভাষচন্দ্রকে জানান। প্রকৃতপক্ষে তাঁর চিঠির ভাষা ও সুভাষচন্দ্রের সমালোচনা ছিল তীব্রতর। ব্যক্তিগতভাবেও তিনি সুভাষচন্দ্রকে কোনওরূপ সাহায্য করতে পারবেন না বলে জানিয়ে তিনি লেখেন, “আমি পাকা সমাজতান্ত্রিক এবং গণতন্ত্রে আস্থাবান হলেও গত কুড়ি বছর যাবৎ অনুসৃত মহাত্মা গান্ধীর অহিংস শান্তিপূর্ণ পন্থা সর্বান্তকরণেই গ্রহণ করেছি।” প্যাটেল প্রমুখ ১২ জন ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের পদত্যাগ গ্রহণ করা ছাড়া সুভাষচন্দ্রের কোনও বিকল্প বাধা ছিল না। ২২ ফেব্রুয়ারির ওয়ার্ধাতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সভায় অসুস্থতার জন্যে তিনি যোগ দিতে যেতে পারবেন না জানিয়ে সুভাষচন্দ্র ওই সভা স্থগিত রাখার জন্যে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অনুরোধ রক্ষার সৌজন্য পর্যন্ত দেখান হয়নি। নেহরুর চিঠিতে সুভাষচন্দ্র বিশেষ আহত বোধ করেছিলেন। ত্রিপুরী অধিবেশন শুরু হওয়ার কয়েকদিন পূর্বে এক বিবৃতিতে (৪ মার্চ, ১৯৩৯) তিনি জওহরলালের অভিযোগগুলি খণ্ডন করেন। তিনি বলেন, “সর্বাপেক্ষা বিস্ময়কর পণ্ডিতজীর এই অভিযোগ যে, আমার কার্যকালে স্থানীয় কংগ্রেসের বিরোধ সাধারণ বাঁধাধরা পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি না করে শীর্ষবিন্দু থেকে নিষ্পত্তি করার একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। আমার বিশ্বাস যে আমার কার্যকাল অপেক্ষা পণ্ডিত নেহরুর কার্যকাল সম্বন্ধে একথা বেশি পরিমাণে ঘটে।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, নেহরুই একটি চিঠিতে সুভাষচন্দ্রকে লিখেছিলেন, “বস্তুত আপনি নির্দেশদানকারী সভাপতি অপেক্ষা স্পীকার হিসেবেই বেশি কাজ করেছেন।”
সুভাষচন্দ্র যে অযৌক্তিক কথা বলেননি তার সমর্থন রয়েছে খোদ পট্টভি সীতারামাইয়ার স্বীকৃতিতে। তৎকালীন ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ও জাতীয় কংগ্রেসের ইতিহাস-রচয়িতা সীতারামাইয়া লিখেছেন যে, সুভাষচন্দ্র কখনও নিজের মতামত জাহির করা পছন্দ করতেন না। সভাপতিরূপে কোনও বিরোধে পক্ষ অবলম্বন করার ইচ্ছা থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন।
তাঁর রাজনৈতিক জীবনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও স্পষ্ট বক্তা হলেও কংগ্রেস সভাপতিরূপে সুভাষচন্দ্র অত্যন্ত সংযত, সহনশীল, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রীতি-পদ্ধতিতে বিশ্বাসী ছিলেন।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন