দেশনায়ক – ৪৪

জওহরলালের অভিযোগ ছিল যে, সুভাষচন্দ্র কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলছেন তা ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক। শরৎচন্দ্রও নাকি তাঁর তৎকালীন একান্ত সচিব নীরদচন্দ্র চৌধুরীকে বলেছিলেন যে, সুভাষের এধরণের অভিযোগ করা উচিত হচ্ছে না, কেননা তিনি এগুলি প্রমাণ করতে পারবেন না। যেভাবে সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে ঘুঁটি সাজান হয়েছিল, ওয়ার্কিং কমিটি থেকে একযোগে পদত্যাগ করা হয়েছিল, অসুস্থ সভাপতির অনুরোধ সত্ত্বেও ওয়ার্কিং কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক স্থগিত রাখা হয়নি, ত্রিপুরীতে মূল অধিবেশনের পূর্বে বিষয়-নির্বাচন কমিটিতে পন্থ-প্রস্তাব পাশ করা হয়েছিল, সুভাষের ‘নাটক’ ও ‘রাজনৈতিক অসুস্থতা’ নিয়ে প্রচার চালান হয়েছিল, স্বয়ং গান্ধীজি যেভাবে সুভাষচন্দ্রের সকল অনুরোধ ও সহযোগিতার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তারপরেও কি সুভাষচন্দ্রের সন্দেহ এবং অভিযোগ অমূলক ছিল বলা যায়? অবশ্যই সুভাষচন্দ্রের ভাষণে, বিবৃতি ও চিঠিপত্রে মাঝে মাঝেই তীক্ষ্ণ ভাষায় তাঁর প্রতিবাদ প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু যে তিক্ত পরিবেশ ও ‘অসুস্থ আবহাওয়া’ সৃষ্টি হয়েছিল, যেভাবে কংগ্রেস মহারথীরা সুভাষচন্দ্রকে ঘিরে ধরে সমবেতভাবে আক্রমণ করেছিলেন তাতে তিনি কোনও প্রত্যাঘাত করবেন না, অসহিষ্ণু হয়ে উঠবেন না, এ প্রত্যাশা কেমন করে সম্ভব ছিল? কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা (Old Guard) ১৯৩৫ সালের আইন অনুসারে নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা গঠনের ও ক্ষমতালাভের স্বাদ পেয়ে ক্রমেই সংগ্রামবিমুখ হয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্গে আপসের দিকে ঝুঁকে পড়ছিলেন, এই অভিযোগ ঐতিহাসিকেরাও করেছেন। ডঃ অনিলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘Two Nations’ গ্রন্থে দেখাবার চেষ্টা করেছেন যে, দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামে ক্লান্ত বয়োবৃদ্ধ কংগ্রেস নেতারা ক্রমেই আরও দীর্ঘ লড়াই করার শক্তি ও উৎসাহ হারিয়ে ফেলছিলেন। তাই তাঁরা আপস-আলোচনার পথই বেছে নিয়েছিলেন এবং শেষপর্যন্ত ভারত-বিভাগও মেনে নিয়েছিলেন। ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্লেষণের যৌক্তিকতা সহজে উপেক্ষা করা যায় না। বস্তুত সুভাষচন্দ্রের মনে ওইরকমই এক আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। গান্ধীজিকে বাদ দিয়ে দেশব্যাপী কোনও বৃহৎ আন্দোলন করা সম্ভব নয় তা সুভাষচন্দ্রও জানতেন। তাই নেতৃত্ব দেবার জন্যে তিনি বারবার গান্ধীজির কাছে আবেদন করেছিলেন। এটিকে বর্তমান কালেও কোনও কোনও ঐতিহাসিক সুভাষচন্দ্রের দুর্বলতা ও গান্ধীজির কাছে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত বলে সমালোচনা করেছেন। এই ব্যাখ্যা ঠিক নয়। সুভাষচন্দ্র শেষপর্যন্ত চেয়েছিলেন কংগ্রেস যেন ঐক্যবদ্ধ থাকে। গান্ধীজি আবার কংগ্রেস তথা সমগ্র জাতিকে পথ দেখান এবং চূড়ান্ত সংগ্রামের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু যখন গান্ধীজি সেই পথ গ্রহণে অসম্মত, ব্রিটিশ সরকারকে চরমপত্র দেবেন না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তখন সুভাষচন্দ্র তাঁর নিজস্ব পথ বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর ওই সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ সঠিক ও বাস্তববাচিত ছিল কি না তা বহু বিতর্কিত। কিন্তু ত্রিপুরী কংগ্রেসের পর পাঁচ বছরে ভারতের মুক্তি সংগ্রামে সুভাষচন্দ্রের অবদান গান্ধীজি ও জওহরলালের অবদানকেও অতিক্রম করেছিল।

কলকাতায় সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির (AICC) সভায় সুভাষচন্দ্র পদত্যাগ করার পর প্রবল উত্তেজনা ও বিক্ষোভ দেখা দেয়। সুভাষচন্দ্রের উগ্র সমর্থকরা নেহরু, পন্থ, কৃপালনী প্রমুখ নেতাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জওহরলাল শরৎচন্দ্র বসুর উডবার্ন পার্কের বাড়িতে অতিথি হয়েছিলেন। সভার পর শরৎচন্দ্র গাড়ি করে তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। শরৎচন্দ্র তাঁর পরিবারের সকলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে গৃহের সম্মানিত অতিথির প্রতি যত্ন ও শিষ্টাচারের যেন কোনও ত্রুটি না হয়। রাজনৈতিক বিরোধ ব্যক্তিগত সম্পর্ককে যেন স্পর্শ না করে। সুভাষচন্দ্রও একাধিকবার জনসাধারণের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন কোনও বহিরাগত অতিথির যেন অমর্যাদা না হয়। প্রাদেশিকতার কোনও ছাপ যেন আচার-আচরণে না পড়ে।

অমলেশ ত্রিপাঠী লিখেছেন সুভাষচন্দ্র ও শরৎচন্দ্র ‘সর্বাপেক্ষা মিত্ৰতাভাবাপন্ন’ নেহরুর সঙ্গেও সুবিচার করেননি। গান্ধী-সুভাষের মধ্যে মিটমাট করে দেবার ব্যাপারে জওহরলাল তেমন কোনও চেষ্টা করেননি, এই অভিযোগ ঠিক নয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। নেহরুর পরামর্শমত বামপন্থী-দক্ষিণপন্থীদের বিভেদের ওপর অত জেদ না ধরে সুভাষচন্দ্রের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়াই শ্রেয় ছিল বলে অমলেশ ত্রিপাঠী ইঙ্গিত করেছেন। তাঁর মতে, “সবচেয়ে বড় কথা, ১৭ এপ্রিল তিনি (জওহরলাল) গান্ধীকে অনুরোধ করেছেন ‘সুভাষের অনেক দোষ আছে কিন্তু বন্ধুভাবাপন্ন হলে তাঁর হৃদয়তন্ত্রীতে ঘা লাগবে’।” জওহরলাল নিজে সুভাষচন্দ্রের ‘হৃদয়তন্ত্রীতে ঘা’ দেবার জন্যে কতটুকু আন্তরিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন? সুভাষচন্দ্রকে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্যে তিনি যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তার প্রকৃত মূল্য বা অর্থ কী ছিল? ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের একযোগে পদত্যাগ করা ও পন্থ-প্রস্তাব উত্থাপন করার ব্যাপারে জওহরলাল কতটা সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন? তিনি কী ওই ধরনের সুভাষ-বিরোধী উদ্যোগের কার্যকর বিরোধিতা করেছিলেন? ইচ্ছা থাকলেও জওহরলালের পক্ষে তা সম্ভব ছিল না। কেননা তা করলে কার্যত গান্ধীজির বিরোধিতা তাঁকে করতে হত। জওহরলাল কখনই তা করতে পারেননি। কিন্তু সুভাষচন্দ্রের প্রতি তাঁর একপ্রকার স্নেহ ছিল। তাঁর দেশপ্রেম, অদম্য শক্তি ও কর্মক্ষমতার প্রতি নেহরুর শ্রদ্ধা ছিল। কিন্তু ঘটনা প্রবাহে ও নানান বিরোধী রাজনৈতিক স্রোতের আবর্তে জওহরলাল এবং সুভাষচন্দ্র দুই বিপরীত মেরুতে পৌঁছেছিলেন।

অমলেশ ত্রিপাঠীর আর একটি মন্তব্য বিস্ময়কর। তিনি লিখেছেন, “নেহরু এক চিঠিতে সুন্দর করে বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে সুভাষ বাংলার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং কোনও প্রতীকের সঙ্গে বা ব্যাপারে যুক্তি প্রয়োগ অসম্ভব’।” এই মন্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ হল জওহরলালের সুভাষচন্দ্রকে ‘বাংলার প্রতীক’ বলে অভিহিত করা সঠিক ছিল এবং ‘বাঙালি’ সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে আলাপ আলোচনা এবং বোঝাপড়ার ব্যাপারে ভারতের অন্য কোনও প্রদেশের মানুষের পক্ষে যুক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব ছিল না। সুভাষচন্দ্রকে শুধুমাত্র ‘বাংলা’র নেতারূপে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা প্রথম থেকেই লক্ষণীয় ছিল। এর উল্লেখ পূর্বেই করেছি। তাঁকে সর্বভারতীয় নেতারূপে স্বীকৃত জানানোর কুণ্ঠা প্রচ্ছন্নভাবে গান্ধীজির মধ্যেও লক্ষণীয় ছিল। কিন্তু সুভাষচন্দ্র জাতীয় প্রশ্নে ও তাঁর সঙ্গে গান্ধীপন্থীদের বিরোধে প্রাদেশিক মনোভাব আনার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্রের সর্বভারতীয় ভাবমূর্তি ও ভারতের সর্বপ্রান্তে অসাধারণ জনপ্রিয়তা ছিল সংশয়াতীত। ত্রিপুরী কংগ্রেসে সভাপতি পদে তাঁর পুনর্নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তিনি গান্ধীজির মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সিতারামাইয়ার বিরুদ্ধে অবাঙালি প্রতিনিধিদের ভোট কত পেয়েছিলেন।

সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে বাঙালির গর্ব নিশ্চয় ছিল। এই গর্ববোধ রবীন্দ্রনাথ অনুপম ভাষায় ব্যক্ত করেছিলেন সুভাষচন্দ্রের প্রতি তাঁর মানপত্রে। কবি লিখেছিলেন, “বাঙালি কবি আমি, বাংলাদেশের হয়ে তোমাকে দেশনায়কের পদে বরণ করি। গীতায় বলেন, সুকৃতের রক্ষা ও দুষ্কৃতের বিনাশের জন্যে রক্ষাকতা বারংবার আবির্ভূত হন। দুর্গতির জালে রাষ্ট্র যখন জড়িত হয়, তখনই পীড়িত দেশের অন্তর্বেদনার প্রেরণায় আবির্ভূত হয় দেশের অধিনায়ক।” রবীন্দ্রনাথ ‘রাষ্ট্রের দুর্গতির অবসানে’র জন্যে, দেশের অন্তর্বেদনার প্রেরণায় আবির্ভূত ‘দেশনায়ক’ সুভাষচন্দ্রের রূপ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। বাংলাদেশের বাঙালি নেতারূপে নয়। বাংলাদেশের প্রতি বঞ্চনা, বাংলার বিড়ম্বনার বেদনা ব্যক্ত করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ আশা করেছিলেন যে, সমগ্র দেশকে সুভাষচন্দ্র জাগিয়ে তুলবেন। “সাংঘাতিক মার খেয়েও বাঙালি মারের উপরে মাথা তুলবে।” তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন, “এমন ভুল কেউ যেন না করেন যে, বাংলাদেশকে আমি প্রাদেশিকতার অভিমানে ভারতবর্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাই…সমগ্র ভারতবর্ষের কাছে বাংলার সম্মিলন যাতে সম্পূর্ণ হয়, মূল্যবান হয়, পরিপূর্ণ ফলপ্রসূ হয়, যাতে সে রিক্তশক্তি হয়ে পশ্চাতের আসন গ্রহণ না করে, তারই জন্যে আমার এই আবেদন।” কবি বলেন, ভারতবর্ষের রাষ্ট্রমিলন-যজ্ঞে প্রত্যেক প্রদেশকে উপকরণ সাজিয়ে আনতে হবে। তাঁর প্রার্থনা ছিল যে সুভাষচন্দ্রের সাধনায় “বাংলাদেশের সেই আত্মাহুতি ষোড়শোপচারে সত্য হোক, ওজস্বী হোক—তার আপন বিশিষ্টতায় উজ্জ্বল হয়ে উঠুক।” দেশের দুঃখকে আপন দুঃখ করে নিয়েছেন সুভাষচন্দ্র। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে আশীবাদ জানান এই জেনে যে, “দেশের সার্থক মুক্তি অগ্রসর হয়ে আসছে তোমার চরম পুরস্কার বহন করে।” কবির দৃষ্টিতে সুভাষচন্দ্র শুধু বাংলার প্রতীক ছিলেন না, সমগ্র দেশ ও জাতির মুক্তির অগ্রদৃত, রাষ্ট্রমিলন-যজ্ঞের হোতা ছিলেন। এই দৃষ্টিতে গান্ধীজি, জওহরলাল ও কংগ্রেসের প্রবীণ গান্ধীপন্থী নেতারা সুভাষচন্দ্রকে দেখেননি। তাঁর জনপ্রিয়তা, চুম্বকী আকর্ষণী শক্তিকে তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাঙালি স্বাদেশিকতা ও প্রাদেশিকতার ছাপ দিতে চেয়েছিলেন। অন্তত ওইভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।

এর পূর্বে ২১ জানুয়ারি রবীন্দ্রনাথ সুভাষচন্দ্রকে শান্তিনিকেতনে আহ্বান করে আম্রকুঞ্জে সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “তোমাকে আমি রাষ্ট্রনেতা রূপে স্বীকার করেছি মনে মনে।” সুভাষচন্দ্রকে তিনি বিশ্বভারতীর প্রত্যক্ষ পরিচয় দিতে চেয়েছিলেন কেননা মানুষের মানবত্ব সুভাষচন্দ্র নিজের জীবনের অভিজ্ঞতায় উপলব্ধি করেছেন। তাঁর সাধন ক্ষেত্র বিশ্বভারতীতে কেমনভাবে রবীন্দ্রনাথ মানুষের এই পরিচয় জাগ্রত করার চেষ্টা করেছেন তা দেখে সুভাষচন্দ্র আনন্দিত হবেন এই আশা তাঁর ছিল। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় তাঁকে জনসংবর্ধনা জানানোর ইচ্ছা তিনি প্রকাশ করেন। কিন্তু অনিবার্য কারণে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। রবীন্দ্রনাথ মানপত্রটি পূর্বেই রচনা করে রেখেছিলেন। পরে সেটি প্রকশিত হয়েছিল।

নেহরু-সুভাষের সম্পর্ক ও পারস্পরিক মনোভাব প্রসঙ্গে একটি তথ্য স্মরণ রাখা জরুরি। এটি হল ১৯৩৪ সালে সুভাষচন্দ্রের The Indian Struggle-এর এবং দু’বছর পরে জওহরলাল নেহরুর আত্মজীবনীর (An Autobiography) প্রকাশ। সুভাষচন্দ্রের গ্রন্থের বহু বক্তব্য ও সমালোচনা গান্ধীজি, জওহরলাল ও দক্ষিণপন্থী কংগ্রেস নেতাদের পছন্দ হয়নি। তাঁরা খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। বইটি ইংলন্ডে প্রকাশিত হলেও ভারতে নিষিদ্ধ ছিল। এই নিষেধাজ্ঞার কারণ ছিল যে বইটির প্রচার ভারতে ব্রিটিশ শাসন-বিরোধী ও সন্ত্রাসবাদী মনোভাবকে বৃদ্ধি করবে বলে আশঙ্কা ছিল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও ভারতে ব্রিটিশ শাসনের নির্মম সমালোচনা করলেও সুভাষচন্দ্র কিন্তু ব্রিটেনের সাধারণ মানুষদের প্রতি কোনও বিদ্বেষ প্রকাশ করেননি। বরং তাঁদের চরিত্রের বহু গুণের প্রশংসা করেন। ইংরাজদের প্রতি তাঁর যে কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই তা তিনি তাঁর গ্রন্থে ও অন্যান্য লেখায় ও ভাষণে একাধিকবার ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ রাজশক্তি ও ভারতে ব্রিটিশ শাসন সম্বন্ধে তাঁর মনোভাব ছিল আপসহীন। ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ ও স্বাধীন ভারতের লক্ষ্য থেকে কোনও কারণে মুহূর্তের জন্যেও বিচ্যুত হননি।

জওহরলালের আত্মজীবনীর সুর ছিল ভিন্ন। জওহরলাল তাঁর আত্মজীবনী লিখেছিলেন কারাগারে। কিন্তু তাঁর কারাজীবন আর সুভাষচন্দ্রের কারাজীবনের অভিজ্ঞতা এক ছিল না। জওহরলালের ‘আত্মজীবনী’ এক অসাধারণ গ্রন্থ। এক উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের এক মূল্যবান উপাদান। জওহরলালের স্বদেশপ্রেম ছিল প্রশ্নাতীত। তিনিও স্বপ্ন দেখেছিলেন ব্রিটিশ শাসনমুক্ত ভারতের। পিতা মতিলাল নেহরু একদা ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে “সর্বাপেক্ষা বৃহৎ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন” (‘the greatest terrorist organisation’) রূপে বর্ণনা করেছিলেন। জওহরলাল তা বিস্মৃত হননি। কিন্তু কারাগারে বসেও আত্মজীবনী লেখার সময় তিনি ইংরাজদের বিরুদ্ধে তেমন কোনও বিরুদ্ধ ভাব অনুভব করেননি। ইংলণ্ডের হ্যারো ও কেমব্রিজে ছাত্রজীবনের প্রভাবের কথা, ইংলন্ডের কাছে তাঁর ঋণের কথা তিনি বলেছেন। ১৯৩৬ সালে জওহরলালের ‘আত্মজীবনী’ প্রকাশের তাৎপর্য প্রসঙ্গে বি. আর. নন্দ লিখেছেন যে, বইটি ইংরাজ পাঠকদের কাছে অভূতপূর্ব সমাদর পায়। ‘বেস্ট সেলার’ হয়ে ওঠে। বইটি পড়ে তাঁরা শুধু নেহরু সম্পর্কে নয়, গান্ধী সম্পর্কেও এক অন্তর্দৃষ্টি লাভ করে। নেহরুর ‘অবিশ্বাস্য দার্শনিকসুলভ নির্লিপ্ততা এবং অবিচল সততা (astonishing philosophic detachment and unflinching honesty)’ বি. বি. সি-র মুখপত্র ‘Listner’-এ উচ্ছ্বসিতভাবে প্রশংসিত হয়। কলকাতার ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকা সকল ইংরাজ রাজকর্মচারীদের নেহরুর বইটি পড়ার উপদেশ দেয়। নেহরুর ‘জাদু’ (charm) ইংরাজদের অভিভূত করে। উচ্চপদস্থ ইংরাজ রাজকর্মচারীরা নেহরুর বন্দনা করতে থাকেন। ব্রিটিশ সরকারের সর্বোচ্চ মহলে এবং রাজনৈতিক নেতাদের কাছে নেহরুর সততা, আন্তরিকতা, বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব প্রভৃতি গুণগুলি কংগ্রেস সম্বন্ধে অনেক ‘ভয়ঙ্কর’ ধারণা দূর করতে সহায়তা করে।

The Indian Struggle এবং An Autobiography—দুই ঐতিহাসিক পুরুষের দুই অসামান্য গ্রন্থ। দু’টির স্বাদ, রচনাশৈলী ও সাহিত্যমূল্য ভিন্ন হলেও মূল বিষয়বস্তু অভিন্ন—ভারতবর্ষের মুক্তি আন্দোলন, ব্রিটিশ শাসন, তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা ও ঘটনার বিশ্লেষণ। দু’টি গ্রন্থ সুভাষচন্দ্রের ও জওহরলালের মধ্যে মৌলিক প্রশ্নে গভীর পার্থক্য সুস্পষ্ট করে তোলে। সুভাষচন্দ্র যে ব্রিটিশ শাসন ও সাম্রাজ্যবাদের অনমনীয় বিরোধী তা তাঁর The Indian Struggle-এ আরও সুস্পষ্ট হয়েছিল। অন্যদিকে কংগ্রেসে জওহরলাল নেহরুর স্থান যে গান্ধীজির পরেই, তিনিই যে গান্ধীজির সবচেয়ে স্নেহ ও আস্থাভাজন এবং সম্ভাব্য রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী—এটিও ক্রমেই ফুটে উঠছিল। সুতরাং নেহরুর ব্রিটিশ শাসন ও ব্রিটিশ জনগণের প্রতি এমন উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব ব্রিটেন ও ভারতের মধ্যে সংঘাতের পরিবর্তে আপস-আলোচনার মাধ্যমে বোঝাপড়ার সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছিল। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ আশান্বিত হয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র তা উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন যে, ইতালী ও জার্মানীর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ জওহরলাল ‘সযত্নে পরিহার করে চলেছেন’ তার কারণ ফ্যাসিবাদ ও জাতীয় সমাজতন্ত্রবাদের প্রতি তাঁর বিরাগই শুধু নয়, জওহরলাল ইংলন্ড ও ফ্রান্সে তাঁর বন্ধুদের অসন্তুষ্ট করতে চান না। জওহরলালের আত্মজীবনীর কোনও বিরূপ সমালোচনা সুভাষচন্দ্র করেননি। শুধু লেখেন, “ইউরোপে অবস্থানকালে তিনি তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশ করেন যাঁর ফলে উদারপন্থী ইংরেজ জনগণের মধ্যে তিনি বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।” জওহরলাল অবশ্য সুভাষচন্দ্রের গ্রন্থ পড়ে অখুশি হয়েছিলেন এবং তা সুভাষচন্দ্রকে জানিয়েছিলেন।

গান্ধী-জওহরলাল-সুভাষ এই ত্রয়ীর সম্পর্ক ও তৎকালীন রাজনৈতিক ঝঞ্ঝা-সঙ্কটের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ মানসিক এবং সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন, যদিও প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে স্বদেশী আন্দোলনের পর থেকেই তিনি সরে গিয়েছিলেন। গান্ধীজি ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে গভীর পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং প্রীতির সম্পর্ক ছিল। কিছু মৌলিক মতাদর্শ ও নীতিগত পার্থক্য থাকলেও ওই সম্পর্ক অটুট ছিল। জওহরলাল এবং সুভাষচন্দ্র দু’জনেই কবির অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন। তাঁদের ওপরে তাঁর গভীর আস্থা ছিল। জওহরলাল ও সুভাষচন্দ্র রবীন্দ্রনাথকে শিক্ষাগুরু, মহান পথপ্রদর্শক এবং তাঁদের পরম শুভার্থী বলে গণ্য করতেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের প্রথম সাক্ষাৎকার (১৯১৪) এবং বিলেত থেকে স্বদেশ ফেরার সময় জাহাজে কথাবার্তার (১৯২১) উল্লেখ পূর্বেই করেছি। মান্দালয় জেল থেকে সুভাষচন্দ্র দিলীপকুমার রায়কে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও লোকসঙ্গীত সম্পর্কে তাঁর অভিমত জানিয়ে যে চিঠি দিয়েছিলেন দিলীপকুমার সেটি রবীন্দ্রনাথকে দেখিয়েছিলেন। ওই চিঠি পড়ে রবীন্দ্রনাথ দিলীপকুমারকে লেখেন, “…সুভাষের চিঠিটিও বড় সুন্দর—এই লেখার ভিতর দিয়ে তার বুদ্ধি ও হৃদয়ের পরিচয় পেয়ে তৃপ্তিলাভ করলুম।”

১৯৩০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ ও সুভাষচন্দ্রের মধ্যে চিঠিপত্র ও তারবার্তার আদান-প্রদান শুরু হয়। রবীন্দ্রনাথ গভীর আশা ও আগ্রহের সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক ও জনকল্যাণমূলক কাজকর্ম লক্ষ্য করতে থাকেন। উত্তর ও পূর্ববঙ্গে বন্যাত্রাণের জন্যে গঠিত কমিটি থেকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পদত্যাগের পরে সুভাষচন্দ্রের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ ওই কমিটির সভাপতি হতে সম্মত হন। হিজলী বন্দী শিবিরে গুলিচালনার প্রতিবাদে কলকাতার টাউন হলে জনসভায় সুভাষচন্দ্রের অনুরোধে অসুস্থ রবীন্দ্রনাথ সভাপতিত্ব করেন। হিজলীর বন্দীরা তাঁদের আমরণ অনশন রবীন্দ্রনাথ ও সুভাষচন্দ্রের অনুরোধে ভঙ্গ করেছিলেন। সুভাষচন্দ্রের ইউরোপ প্রবাসকালে তাঁর The Indian Struggle বইটির ভূমিকা লেখাকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্রনাথের ওপর সুভাষচন্দ্রের অভিমান হয়। সুভাষচন্দ্র চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ যেন বার্নাড শ’কে এই বিষয়ে অনুরোধ জানান। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ জানান যে, বার্নাড শ’কে তাঁর পক্ষে অনুরোধ জানানো ঠিক হবে না। এর ফল ভাল না হবারও আশঙ্কা আছে। ক্ষুব্ধ সুভাষচন্দ্রের মনে হয় যে, গান্ধীজি অসন্তুষ্ট হবেন ভেবেই রবীন্দ্রনাথ শ’কে অনুরোধ জানাতে অনিচ্ছুক। সুভাষচন্দ্র তাঁর ক্ষোভের কথা সরাসরি জানিয়ে লেখেন যে, রবীন্দ্রনাথকেই ভূমিকা লেখার জন্যে অনুরোধ করার কথা তাঁর মনে হয়েছিল। কিন্তু তাঁর বইয়ে গান্ধীজির সমালোচনা আছে। সুভাষচন্দ্রের ধারণা হয়েছে যে রবীন্দ্রনাথ সম্প্রতি গান্ধীজির ‘অন্ধ ভক্ত’ হয়ে পড়েছেন। সেই ভেবে তিনি আর রবীন্দ্রনাথকে ভূমিকা লেখার জন্যে অনুরোধ করেননি। সুভাষচন্দ্রের চিঠি পেয়ে রবীন্দ্রনাথ দুঃখবোধ করেন। তিনি উত্তরে লেখেন, “এই উপলক্ষে একটি কথা তোমাকে বলা আবশ্যক বোধ করি। মহাত্মা গান্ধী অতি অল্পকালের মধ্যে সমস্ত ভারতবর্ষের মনকে এক যুগ থেকে আরেক যুগে নিয়ে যেতে পেরেছেন…মনের দিকে, কল্পনার দিকে, ব্যবহারের দিকে, তিনি আর আমি সম্পূর্ণ বিপরীত শ্রেণীর জীব। কোনও কোনও বিষয়ে তিনি দেশের ক্ষতি করেছেন—কিন্তু দেশের নির্জীব চিত্তে হঠাৎ যে বল এনে দিয়েছেন একদিন সেটা সমস্ত ক্ষতিকে উত্তীর্ণ হয়ে টিকে থাকবে। আমরা কেউ সমস্ত দেশকে এই প্রাণশক্তি দিইনি।” এরপর রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে সুভাষচন্দ্রের আর কোনও দিন ভুল হয়নি। সব বিরোধ-বিতর্ক ঘাত-প্রতিঘাতের পরেও রবীন্দ্রনাথের মূল্যায়নের সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের গান্ধী-মূল্যায়নের খুব পার্থক্য ছিল না।

১৯৩৭ সালে সুভাষচন্দ্র কারামুক্ত হলে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন থেকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তিনি হরিপুর কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হলে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র বিপ্লবী-সহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির জন্যে আন্দোলন শুরু করলে রবীন্দ্রনাথ সর্বতোভাবে তা সমর্থন করেন। সুভাষচন্দ্রের জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন গঠনের আদর্শ ও লক্ষ্যকে রবীন্দ্রনাথ স্বাগত জানান। ত্রিপুরী কংগ্রেসে সভাপতি পদে সুভাষচন্দ্রকে পুনর্নির্বাচিত করা হোক তা রবীন্দ্রনাথ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চেয়েছিলেন। এই অনুরোধ জানিয়ে গান্ধীজি ও জওহরলালকে চিঠি লিখেছিলেন। সেই অনুরোধে কাজ হয়নি। ওই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ সুভাষচন্দ্রকে লেখেন (১৯ জানুয়ারি, ১৯৩৯) যে, তিনি ইতিপূর্বেই ওই বিষয়ে মহাত্মাজী ও জওহরলালকে লিখেছেন। কিন্তু “আমি রাষ্ট্রিক সম্প্রদায়ের বহির্ভূত মানুষ…সুতরাং অব্যবসায়ীর ইচ্ছা জ্ঞাপনের বেশি আর কিছু করার অধিকার আমার নেই।” ২১ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্রকে শান্তিনিকেতনে অভিনন্দন জানানো হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় সুভাষচন্দ্রের নাগরিক সংবর্ধনা দেবার প্রস্তাব করে ও উদ্যোগ নিয়েও রবীন্দ্রনাথ ওই সভায় যোগ দিতে পারেননি। কিন্তু সুভাষের জন্যে মানপত্রটি তিনি রচনা করে রেখেছিলেন। কেন তিনি শেষ পর্যন্ত আসেননি এবং কেন ওই মানপত্র তখনি প্রকাশিত হয়নি এই নিয়ে অনেক গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। একটি ধারণা জন্মেছিল যে, সুভাষচন্দ্রকে কেন্দ্র করে ও গান্ধীজি এবং জওহরলালকে জড়িয়ে এমন প্রবল রাজনৈতিক ঝড় উঠেছিল, পরিবেশ এত তিক্ত হয়ে পড়েছিল যে, রবীন্দ্রনাথ নিজেকে তার থেকে দূরে সরিয়ে রাখাই শ্রেয় মনে করেছিলেন। কিন্তু ত্রিপুরীর সঙ্কটের চরম মুহূর্তে রবীন্দ্রনাথ প্রকাশ্যেই সুভাষচন্দ্রকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছিলেন। তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন মধ্যস্থতা করার। জওহরলাল ও সুভাষচন্দ্রকে পরামর্শ দিয়েছিলেন সাক্ষাতে আলাপ-আলোচনা করে, গান্ধীজির সঙ্গে পরামর্শ করে সমস্যা মিটিয়ে নিতে। কিন্তু শেষপর্যন্ত কোনও সুফল হয়নি। রবীন্দ্রনাথও ব্যর্থ হন বিরোধ মেটাতে। ত্রিপুরী কংগ্রেসের ঘটনা, সুভাষ-বিরোধী সঙ্ঘবদ্ধ প্রচেষ্টা, পন্থ-প্রস্তাব ও সুভাষচন্দ্রকে অপদস্থ ও কোনঠাসা করার নিন্দনীয় কার্যকলাপে রবীন্দ্রনাথ মর্মাহত হয়েছিলেন। ১৯ মার্চ গান্ধীজিকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানান, “অনুগ্রহ করে আর বিলম্ব না করে এই আঘাত প্রশমনের জন্যে আপনার কারুণ্যের হস্তপ্রয়োগ করুন যাতে আঘাত ক্ষতে পরিণত না হয়।” গান্ধীজি তাঁর ‘গুরুদেব’-এর আবেদনের পরেও করুণার হাত প্রসারিত করেননি।

এর পরেও রবীন্দ্রনাথ হতোদ্যম হননি। গান্ধী-সুভাষ বিরোধের বিয়োগান্ত পরিণতি নিবারণের চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় কলকাতায় নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনের পূর্বে সোদপুরের খাদি প্রতিষ্ঠানের আশ্রমে চার ঘণ্টা ধরে গান্ধী-সুভাষ বৈঠক হয়। তাতেও ফল হয়নি। ২৯ এপ্রিল সুভাষচন্দ্র পদত্যাগ করার পর অধিবেশনের ভিতরে ও বাইরে প্রবল জনবিক্ষোভ দেখা দেয়। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। সুভাষচন্দ্র নিজে জনতাকে সংযত করে নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাঁদের গাড়িতে তুলে দেবার পর নিজে বাড়ি ফেরেন। সুভাষচন্দ্রের সেদিনের আচরণ, দৃঢ়তা ও যেভাবে চরম উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তিনি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন তার জন্যে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ তারবার্তা পাঠিয়ে বলেন, “অত্যন্ত বিরক্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়েও তুমি যে ধৈর্য ও মর্যাদাবোধের পরিচয় দিয়েছ তাতে তোমার নেতৃত্বের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। আত্মসম্মান রক্ষার জন্য বাংলাকে এখনও সম্পূর্ণ ধীরতা ও ভদ্রতাবোধ অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে; তা হলেই আপাতদৃষ্টিতে যা তোমার পরাজয় বলে মনে হচ্ছে তাই চিরন্তন জয়ে পরিণত হবে।”

রবীন্দ্রনাথের এই আশীর্বাদ, আশা এবং আস্থা সুভাষচন্দ্রের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ ছিল।

সকল অধ্যায়

১. দেশনায়ক – ১
২. দেশনায়ক – ২
৩. দেশনায়ক – ৩
৪. দেশনায়ক – ৪
৫. দেশনায়ক – ৫
৬. দেশনায়ক – ৬
৭. দেশনায়ক – ৭
৮. দেশনায়ক – ৮
৯. দেশনায়ক – ৯
১০. দেশনায়ক – ১০
১১. দেশনায়ক – ১১
১২. দেশনায়ক – ১২
১৩. দেশনায়ক – ১৩
১৪. দেশনায়ক – ১৪
১৫. দেশনায়ক – ১৫
১৬. দেশনায়ক – ১৬
১৭. দেশনায়ক – ১৭
১৮. দেশনায়ক – ১৮
১৯. দেশনায়ক – ১৯
২০. দেশনায়ক – ২০
২১. দেশনায়ক – ২১
২২. দেশনায়ক – ২২
২৩. দেশনায়ক – ২৩
২৪. দেশনায়ক – ২৪
২৫. দেশনায়ক – ২৫
২৬. দেশনায়ক – ২৬
২৭. দেশনায়ক – ২৭
২৮. দেশনায়ক – ২৮
২৯. দেশনায়ক – ২৯
৩০. দেশনায়ক – ৩০
৩১. দেশনায়ক – ৩১
৩২. দেশনায়ক – ৩২
৩৩. দেশনায়ক – ৩৩
৩৪. দেশনায়ক – ৩৪
৩৫. দেশনায়ক – ৩৫
৩৬. দেশনায়ক – ৩৬
৩৭. দেশনায়ক – ৩৭
৩৮. দেশনায়ক – ৩৮
৩৯. দেশনায়ক – ৩৯
৪০. দেশনায়ক – ৪০
৪১. দেশনায়ক – ৪১
৪২. দেশনায়ক – ৪২
৪৩. দেশনায়ক – ৪৩
৪৪. দেশনায়ক – ৪৪
৪৫. দেশনায়ক – ৪৫
৪৬. দেশনায়ক – ৪৬
৪৭. দেশনায়ক – ৪৭
৪৮. দেশনায়ক – ৪৮
৪৯. দেশনায়ক – ৪৯
৫০. দেশনায়ক – ৫০

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন