৩. অতলে অন্তরীণ – ০৯

তসলিমা নাসরিন

বারো জুন, রবিবার

ইনকিলাবের প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা পর্যন্ত তসলিমাগংদের বিরুদ্ধে জেহাদি আন্দোলনের খবরই লেখা হয়। সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, মন্তব্য, কলাম প্রতিদিন যা চলছে, তা তসলিমার বিরুদ্ধে।

তসলিমাসহ মুরতাদদের ফাঁসি ও ধর্মদ্রোহী পত্রিকা নিষিদ্ধ করতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ।
ইসলামের ক্ষতি করার জন্য যুগে যুগে কুলাঙ্গারের আবির্ভাব ঘটেছে, বলেছেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। লেখিকা তসলিমা তাঁর যা ইচ্ছা তাই লিখুন, কিন্তু লেখার স্বাধীনতার নামে কারও ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর আঘাত হানার অধিকার তাঁর নেই। দেশজুড়ে যে জেহাদী আন্দোলন চলছে, তা তিনি সমর্থন করছেন এবং ধর্মদ্রোহীতার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের ব্যাপারটিকেও তিনি সমর্থন করছেন।

মিজান চৌধুরী যে সে লোক নন, তিনি বড় রাজনৈতিক নেতা, একসময় আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন, তারপর এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। এখন তিনি জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ভারপ্রাপ্ত এই জন্য যে আসল চেয়ারম্যান এখন জেলে। খালেদা তাঁকে জেলে ভরে রেখেছেন। নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী আন্দোলনে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা কমে গেছে, তাই জনপ্রিয়তা অর্জন করার জন্য মিজান চৌধুরী ইসলামী দলের সমর্থনে এগিয়ে এলেন।

দেশ ও ঈমানবিরোধী চক্রান্ত রুখতে আজকের সংগ্রামী মিছিলে শরিক হোন।
ইসলাম ও রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা প্রতিরোধ মোর্চা গঠনের লক্ষে গঠিত সমন্বয় কমিটির আহবায়ক মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দিন খান, সমন্বয় কমিটির আহবায়ক মুফতী ফজলুল হক আমিনী আজ ১২ই জুন সকাল দশটায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে দেশবাসীকে সমবেত হয়ে দেশ ও ঈমানবিরোধী অপতৎপরতা রুখতে সংগ্রামী মিছিলে শরিক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

তাঁরা বলেন, আমরা জনতার মিছিল নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবো এবং মুরতাদ তসলিমা নাসরিনগংদের ফাঁসি, জনকণ্ঠ নিষিদ্ধকরণ এবং ধর্মদ্রোহিতার জন্য মৃত্যুদন্ডের আইন প্রণয়নের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করব। এই নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্য দিয়েই আমরা সেই সব হায়েনাচক্রের দাফন প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাবো, যারা একটি সরল, ধর্মপ্রাণ ও আত্মমর্যাদাবান জাতিকে বারবার বোকা মনে করে রক্তাক্ত করে চলেছে। এই চক্রের দুঃসাহস আজ সীমাহীন স্পর্ধার রূপ ধারণ করেছে। এরা মুক্তবুদ্ধি, প্রগতিশীলতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবতার জিগির তুলে অব্যাহতভাবে ঈমান ও ইসলামের বিরুদ্ধে সব রকম অস্ত্র প্রয়োগ করে যাচ্ছে। এই হায়েনাচক্র এখন জাতির মুখোমুখি দাঁড়াতে চাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে শহর বন্দর, গ্রাম পর্যায়ের সকল মানুষ ঐক্যবদ্ধ । এদের মৃত্যু সুনিশ্চিত করার জন্য ১২ জুনের স্মারকলিপি প্রদানের শোভাযাত্রায় শরিক হওয়ার জন্য নেতৃবৃন্দ দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।

তসলিমার ফাঁসির দাবিতে বরিশালে স্মরণকালের বৃহত্তম মিছিল।
ইসলাম ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তুলন।
তসলিমার ফাঁসি ও জনকণ্ঠ নিষিদ্ধের দাবিতে সভা সমাবেশ অব্যাহত।
নাস্তিক মুরতাদের পক্ষে বিবৃতির পরিণাম ভয়াবহ হবে।
নাস্তিক মুরতাদদের ফাঁসির দাবিতে তৌহিদী জনতা রাজপথে।
মুরতাদ তসলিমার জন্য আনন্দবাজার গোষ্ঠী অস্থির হয়ে পড়েছে। মুরতাদ মহিলা তসলিমার জন্য ভারতের আনন্দবাজার গোষ্ঠী বড় বেচায়েন হয়ে পড়েছে। তারা জানিয়েছে, তসলিমা তাদের আত্মার আত্মীয়। আনন্দবাজারীদের এমন আপনজন বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষের কাছ থেকে ঘৃণা, ধিককার ও অবমাননাকর বিষাক্ত শেলে যেভাবে জর্জরিত হচ্ছে, তাতে তারাও অস্থির হয়ে পড়েছে। কারণ, এ শেল যে তাদের উপরও আঘাত হানছে, তসলিমার মত এমন ভ্রষ্টা নারীকেই তাদের প্রয়োজন যে ভ্রষ্টা হতেই গৌরব বোধ করে, যে নীতি-নৈতিকতার তোয়াককা করে না, যে দেশের স্বাধীনতাকে আনন্দবাজারীদের হাতে তুলে দিতে চায় এবং দেশের সার্বভৌম স্বাধীন সীমানাকে মুছে দিয়ে ভারতের সাথে এককার হয়ে যেতে চায়। এই উপমহাদেশে মুসলমানদের মানসম্ভ্রম, ঐতিহ্য গৌরবকে ধুলায় ভূলণ্ঠিত করতে সহায়তা করতে পারে, এমন মুসলিম নামধারী কোনও পা চাটা কুলাঙ্গারকেই আনন্দবাজারীদের প্রয়োজন। এমন প্রয়োজনের ভ্রষ্টা নারী বাংলাদেশে অসুবিধার মধ্যে আছে, আনন্দবাজারীরা তা সইবে কেমনে! তারা অস্থির হয়ে উঠেছে, তসলিমা নামের কুলাঙ্গারকে উদ্ধার করার জন্য। তাদের উদ্বেগ যন্ত্রণা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে তসলিমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় ইতোমধ্যে ভারতের উগ্র হিন্দু সংগঠন বিজেপি, যুবকংগ্রেস এবং নিখিল ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে। আনন্দবাজার গোষ্ঠী এতেও তৃপ্ত হতে পারছে না। যেন তাদের তর সইছে না। তারা চাইছে গোটা ভারতে ঝড় উঠুক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। আনন্দবাজারীরা তাই বিভিন্নভাবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসরকারসহ ভারতের বিভিন্ন সংগঠনকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উস্কিয়ে দেওয়ার মত ঘৃণ্য কাজে মেতে উঠেছে। আনন্দবাজার লিখেছে, দুনিয়ার কোথাও পান থেকে চুন খসলেই প্রতিবাদে সরব হতে যাদের তিলমাত্র বিলম্ব হয় না, সেই বামপন্থীদের পড়শি দেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিনের ওপরে রাষ্ট্রযন্ত্রের আঘাতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর ব্যাপারে প্রাথমিক জড়তা কাটতেই বেলা বয়ে গেল। আনন্দবাজার পশ্চিমবঙ্গের বাম সরকার এবং কংগ্রেসকে এই মর্মে অভিযুক্ত করেছে যে তাদের ভোট নষ্ট হওয়ার ভয়েই তারা তসলিমার ব্যাপারে চুপ থাকছে। যারা প্রতিবাদ জানাতে এগিয়ে আসতে বিলম্ব করছে, আনন্দবাজার শক্ত ভাষায় তাদের আক্রমণ করছে। তবে দিল্লিতে সিপিএমএর মহিলা সংগঠন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি বাংলাদেশের হাই কমিশনারের কাছে তসলিমার পক্ষে যে স্মারকলিপি দিয়েছে, তারা তাতে যেন তসলিমার জন্য কিছু করার পথে আশা দেখতে পেয়েছে। আনন্দবাজারীরা আরও কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছে এই দেখে যে, বাংলাদেশের ভেতরের গুটিকয়েক মুরতাদ তসলিমার অপকর্মকে প্রকাশ্যে সমর্থন করার দুঃসাহস দেখাতে পেরেছে। আনন্দবাজার এখন এটাকে ঢালাওভাবে প্রচার করছে যে তসলিমার পক্ষেও এখন ঢাকা সরব। আনন্দবাজার লিখেছে, আজ একেবারে প্রকাশ্যেই তসলিমার সমর্থনে সরব হয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ সমাজতন্ত্রী পার্টির মত দল।

আত্মার আত্মীয় তসলিমার জন্য অস্থির আনন্দবাজার গোষ্ঠী ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন সংগঠন তসলিমার পক্ষে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে না কেন, সে জন্য যেমন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ, বাংলাদেশের গুটিকয়েক বিপথগামী তসলিমার পক্ষে কথা বলায় তেমনি আবার পুলকিত।

ইনকিলাবের লোকেরা ভারত বিরোধী হলেও ভারতে কোথাও আমার নিন্দা করা হলে সেটিকে লুফে নিয়ে পুনঃপ্রকাশ করে। ভারতীয় হিন্দু সোমক দাসকে রীতিমত সম্মান করছে ইনকিলাব গোষ্ঠী। রবিবারের প্রতিদিনএ প্রকাশিত সোমক দাসের তসলিমা নাসরিনের নারীবাদ ও লেখক সত্তা ইনকিলাবে ধারাবাহিকভাবে ছাপা হচ্ছে। —তসলিমা নাসরিনের হাতে দুটো তাস, যৌনতা ও ইসলাম। এই তাস দুটিকেই নানাভাবে ব্যবহার করে যাচ্ছেন তিনি একের পর এক রচনায়, আলোচনায় ও সাক্ষাৎকারে। তাঁর নারীবাদে নারী স্বাধীনতার প্রশ্ন যৌন য়েচ্ছ!চারে পর্যবসিত। আসলে পশ্চিমী দৃষ্টিভঙ্গিতে ধর্মের ব্যাখ্যা। লেখক হিসেবেই তিনি কতখানি বিষয় ও ভাষা সচেতন? এই প্রশ্ন তিনি নিজেই করেছেন এবং নিজে যা উত্তর দিয়েছেন তা ইনকিলাব গোষ্ঠীর খুব পছন্দ হয়েছে।

আমাকে এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন, এ নিয়ে এখন অনেকের সন্দেহ। সরকার কি ইচ্ছে করেই আমাকে গ্রেফতার করছে না! সত্যসন্ধ তাঁর নিয়মিত কলামে লিখেছেন, তসলিমা নাসরিন সরকারের দৃষ্টিতে আছেন বহুদিন থেকেই। সরকারি চাকুরে হওয়া সত্ত্বেও সে পরিচয় গোপন করে বিদেশে যাবার সময় তাঁকে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাধা দেয়া হয়েছিল এবং সেই সুবাদে তার পাসপোর্ট বহুদিন আটক ছিল। অতি সম্প্রতি বিদেশ সফরকালে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও এ দেশের গণমানুষের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি কটাক্ষ করার কারণে সারাদেশে তার বিচারের দাবিতে জনমত ফুঁসে উঠেছে। এ প্রেক্ষিতেই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে আজও গ্রেফতার করতে সম্ভব হয়নি। এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী উচ্চারণে যার রচনাবলী কণ্টকিত, যার অবৈধ বহির্গমন প্রয়াসের কারণে পাসপোর্ট আটক হতে পারে এবং যিনি বিদেশে গিয়ে এ দেশের আইন ও সার্বভৌমত্বের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি দেখিয়ে বক্তব্য দেবার স্পর্ধা রাখেন, যার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহলের গভীর সম্পর্ক সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত, তার গতিবিধি সম্পর্কে পুলিশ খোঁজ রাখে না, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য কথা? তা হলে পুলিশ বা স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রয়োজনটা কোথায়? আমরা নিশ্চয়ই গোটা পুলিশ বিভাগের কথা বলছি না। আমাদের আইন শৃঙ্খলা সংস্থার অধিকাংশ সদস্য কর্তব্যপরায়ণ না হলে দেশ এতদিন নিশ্চয়ই মনুষ্যবাসযোগ্য থাকত না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেশ সৎ এবং কর্তব্যপরায়ণ। আমরা জানি যে তসলিমা নাসরিনের মত বির্তকিত ব্যক্তিদের গতিবিধি সম্পর্কে কড়া নজর রাখা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব এবং আমরা বিশ্বাস করি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পূর্বেও এ দায়িত্ব যথারীতি পালিতই হয়ে থাকবে। সুতরাং প্রশ্ন জাগে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর পরই তসলিমা নাসরিন উধাও হয়ে যাবার সুযোগ পেলেন কাদের প্রশ্রয় বা সহযোগিতায়। তাই বলি,বাংলাদেশে বুঝি সরকারের মধ্যেও আরেক অদৃশ্য শক্তি আছে যার কাজ নিয়মতান্ত্রিক সরকারের সব নীতি ও কর্মকাণ্ডকে নস্যাৎ করে দেওয়া।

সরকার ব্যর্থ হলে জনগণই মুরতাদদের বিষদাঁত ভেঙে দেবে–চট্টগ্রামে জামাতে ইসলামির সভায় বলা হয়েছে। সরকার ধর্মদ্রোহী তসলিমা নাসরিন, আহমদ শরীফ, কবীর চৌধুরী গংদের শাস্তিদানে ব্যর্থ হলে দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণই ঐক্যবদ্ধভাবে এসব ধর্মদ্রোহীদের বিষদাঁত ভেঙে দেবে। বিশ্বব্যাপী ইসলামী পুনঃজাগরণ ঠেকানো এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত উপমহাদেশে একটি রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে টেস্ট কেস হিসেবে এ দেশীয় এজেন্টদের দিয়ে এসব ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ঈমান আকিদায় আঘান হেনে পরীক্ষা করছে কতটুকু প্রতিবাদ আসে। অপরদিকে সরকার এসব ষড়যন্ত্রে মদদ যোগাচ্ছে। তসলিমাকে গ্রেফতার করতে না পারা জনগণকে ব্ল্যাকমেইল করা ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহর আসমানী কিতাব পবিত্র কোরান সম্পর্কে তসলিমার ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও ধিককার জানিয়ে আন্তর্জাতিক ইসলাম বিরোধী চক্রের অন্যতম সদস্য তসলিমার প্রকাশ্য ফাঁসির ব্যবস্থা করা আর ধর্মদ্রোহীতার শাস্তি বিল পাস করার দাবি জানানো হয়। পবিত্র কোরানের সম্পূর্ণ পরিবর্তনের দাবি করে এবং ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাতকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করার মত অপরাধ করে কুখ্যাত লেখিকা তসলিমার আর আল্লাহর এই জমিনে বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই। সরকার আজ তসলিমাকে বাঁচানোর জন্য ফন্দি ফিকিরে রয়েছে, না হলে তাকে গ্রেফতার করা সরকারের জন্য এত কঠিন হয়ে দাঁড়াতো না।

রাজশাহীতে জামাতে ইসলামীর বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শেষে সভায় বলা হয়েছে, নাস্তিক মুরতাদদের স্পর্ধা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ইসলামের জাগরণের জোয়ার দেখে সাম্রাজ্যবাদীরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তাদের বেতনভোগী দালাল তসলিমাসহ কতিপয় বিকৃত মানসিকতার লেখক লেখিকা আল্লাহ রসুল ও কোরান হাদিস নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা বলছে। সরকার যদি তাদের রহস্যজনক নীরবতা ভেঙে মুরতাদদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আপামর জনগণ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। আমার পক্ষে বুদ্ধিজীবীরা বিবৃতি দিয়েছেন, তার সমালোচনা করে জামাতে ইসলামি দলের পত্রিকায় আজকের সম্পাদকীয়, ধর্মদ্রোহী রাহুর গ্রাস।

.. .. কয়েকজন আঙুলে গোনা চিহ্নিত বুদ্ধিজীবী ও কবি বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে উৎখাতের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা শুরু করেছেন। যখনই তারা নিজেরাই দলবদ্ধভাবে প্রগতির নামে কিছু করেন তখন যেমন ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রকাশ্যে আহত করার একটা চেষ্টা থাকে। তেমনি ব্যক্তিগতভাবে তাদেরই দ্বারা অনুপ্রাণিত কোনও ব্যক্তিবিশেষ তার কোনও রচনায় কিংবা বক্তৃতা বিবৃতিতে যখন ইসলামি চেতনার ওপর আঘাত হানেন তখন আহত মুসলমানগণের প্রতিক্রিয়াকে বিপথে চালিত করার জন্য ঐ কয়েকজন মাত্র ব্যক্তি নানা বক্তৃতা বিবৃতি প্রচার করে ইসলামকে আঘাতকারী অন্যায়ের পক্ষপাত শুরু করেন। তাদের ধারণা ইসলাম, পবিত্র কুরআন এবং নবী রসুলকে আক্রমণ করে কিংবা আঘাত করে কিছু রচনা করা বা বলাটা হল তাদের প্রগতিশীল অধিকার। আর ধর্মের পক্ষে দাঁড়ানোটা প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ। কেউ ইসলামের পক্ষে দাঁড়ালে সেটা মহা অপরাধ। কারণ ধর্মটা হল তাদের দৃষ্টিতে ধাপ্পাবাজি।

এই দৃষ্টিভঙ্গিকে তারা প্রচার করতে চান গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিরূপে। ফলে তসলিমা নাসরিনের মত দেশ ও ধর্মদ্রোহিনীর পবিত্র কুরআন অবমাননাকেও তারা অত্যন্ত সাহসের সাথে সমর্থন করেন। তার অন্যায়ের সাফাই গাইতে এগিয়ে আসেন। তসলিমা যখন পবিত্র কুরআনের শুদ্ধির পরামর্শ দিয়ে বিদেশি পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেন কিংবা দেশের সার্বভৌম সীমানা তুলে দিয়ে ভারতের সাথে মিশে যেতে বলেন তখন তার ঐসব মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাদী মুরুব্বীরা আড়ালে আবডালে বাহবা দিয়ে বেড়াতে থাকেন। যখন এরই প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশের আধ্যাত্মিক চেতনা সহসা প্রচণ্ড আঘাতে গুমড়ে ওঠে, পথে পথে ক্ষিপ্ত জনগণের মিছিল বেরিয়ে আসে এবং ধর্ম সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন ক্ষমতাসীন সরকার তসলিমা নাসরিনকে গ্রেফতার করা হবে বলে তাকে আত্মগোপনের সুযোগ করে দিয়ে মজা দেখতে থাকেন, তখন ঐসব প্রগতিবাদী বুদ্ধিজীবীরা তাদের গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে ক্রমাগত বিবৃতিতে সই করতে থাকেন, তসলিমার গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। সরকার মৌলবাদীদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তসলিমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। সরকারের উচিত এক্ষুনি তা তুলে নেওয়া ইত্যাদি। বিবৃতিতে সচরাচর যাদের স্বাক্ষর দেখে আমাদের চোখ অভ্যস্ত হয়ে গেছে সেই কবীর চৌধুরী, কবি শামসুর রাহমান, খান সারওয়ার মুরশিদ, ফয়েজ আহমেদ ও জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর স্বাক্ষর থাকবেই। আমাদের ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিটি আঘাতকারী বিষয়ে কেন এরাই বার বার বিবৃতির স্বাক্ষরদাতা হন? এ দেশে এগারো কোটি মুসলমানের ইসলামের প্রতি আগ্রহ কি তবে তাদের ধারণায় কোনও মৌলিক অধিকারের আওতায় পড়ে না? কেবল তসলিমা নাসরিনের ইসলাম ও পবিত্র কুরআন অবমাননার অধিকারটাই মৌলিক নাগরিক অধিকার? তসলিমা নাসরিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশকারী গ্রন্থ লজ্জা নিয়ে যখন ভারতে দাঙ্গা বাঁধে এবং সেখানকার মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা জুলুম এবং অগ্নিসংযোগের মধ্যে ফেলা হয়, মুসলিম মেয়েদের নির্বিচারে ধর্ষণ করা হয় তখন কবীর চৌধুরী, শামসুর রাহমান, ফয়েজ আহমেদ, খান সারওয়ার মুরশিদ এবং জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীরা কোথায় থাকেন?

ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্বেষ প্রচার এ দেশের মানুষ এতদিন দমবন্ধ করে কেবল মৌলিক নাগরিক অধিকারের কথা ভেবেই কিনা জানি না, সহ্য করে এসেছে। এতে এটা ভাবা কারও উচিত নয় যে এগারো কোটি মুসলমান তাদের পবিত্র কুরআনকে বদলে ফেলার কথাও হজম করার পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন যা খুশী তাই বলা যায় এবং কেউ বললে বিবৃতি দিয়ে সমর্থনও করা যায়। হ্যাঁ, বর্তমান সরকারের আমলে আপাত দৃষ্টিতে এটাই প্রতীয়মান হয় বটে। কিন্তু আমরা সরকারকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানিয়ে দিতে চাই এটা সত্য নয়। বর্তমান সরকারের সাধ্য না থাকলেও এ দেশের এগারো কোটি মুসলিম নর নারীর সাধ্য আছে তাদের পবিত্র ধর্মকে নাস্তিক্যবাদী শয়তানের গোটা কয়েক সন্তানের বিদ্রূপ এবং অবহেলা থেকে বাঁচাবার।

কেবল বিবৃতি দিয়ে মৌলবাদী শক্তিকে ঠেকানো যাবে না, পথে নেমেছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। গতকাল বিকেল চারটায় নির্মূল কমিটির সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, স্বাধীনতা বিরোধী পরাজিত শক্তি যে উদ্দেশ্যে একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল সেই একই উদ্দেশ্যে আজ তারা আমাদের মুক্তবুদ্ধির সংবাদপত্রগুলোর ওপর হামলা করছে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি তারাই পরাজিত শষনুকে মাথা তুলতে দিয়েছি। এই শক্তি এখন দেশটাকে পাকিস্তান বানাতে চায়, পতাকা এবং জাতীয় সঙ্গীত বদল করতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে আবার নতুন করে জেহাদে নামতে হবে। সমাবেশে জনকণ্ঠের সাংবাদিকদের ওপর থেকে মামলা এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা তুলে নেবার জোর দাবি জানানো হয়। ডঃ কামাল হোসেন গতকাল বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউন হলে গণফোরাম আয়োজিত সভায় বক্তৃতা করেছেন, বলেছেন, ধর্মের নামে যারা বিভিন্ন ব্যক্তির ফাঁসি চায় তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন। বর্তমান সংসদ কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। এ সংসদ দেশে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগাতে পারেনি। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল, সবাই ব্যর্থ। বহু ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাকে রক্ষা করা সকল নাগরিকের দায়িত্ব। দেশে ইসলাম বিপন্ন হয়নি। ধর্ম ব্যবসায়ীরা ইসলামকে বিপন্ন করেছে। আফ্রিকার নেলসন ম্যাণ্ডেলা শ্বেতাঙ্গদের সাথে আলোচনায় বসতে পারেন। আরাফাত ইজরাইলের সাথে আলোচনা করতে পারেন, কিন্তু আমাদের দুই নেষনী দেশের উন্নয়নের জন্য আলোচনায় বসতে পারেন না। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে এখনও পৃথক করা হয়নি। .. সরকার সংবাদপষেনর স্বাধীনতার নামে পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেফতার ও সাংবাদিকদের হয়রানি করছে। জনগণকে উপেক্ষা করে দেশ চালাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

মাথার মূল্য ধার্য করার প্রতিবাদ করেছে সেই সাজু, সেই জাহেদা, সেই লাভলী এবং তাদের দল। এছাড়া আজকের পত্রিকায় আমার মাথা নিয়ে আর কারও মাথা ব্যথা দেখা যায়নি। তবে মাথা নিয়ে বিবিসি একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে। খবরটি এভাবে বেরিয়েছে। খুলনায় মৌলবাদীদের একটি জনসভায় লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে হত্যার জন্য ১ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রসচিব আজিমউদ্দিন আহমেদ গতকাল শনিবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যে মাওলানা ওই ঘোষণা দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ঠিক কি বলেছিলেন এবং খুলনাতে ঠিক কি ঘটেছিল সরকার তা জানার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, এটা যদি সত্যি হয় তাহলে যার বিরুদ্ধে এই কথা বলা হয়েছে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। তসলিমা এখন আত্মগোপন করে আছেন এমন অবস্থায় তিনি কি করে নিরাপত্তার জন্য অনুরোধ করবেন? সচিব বলেন, তসলিমার উচিত সরকারের কাছে অথবা আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করা। মৌলবাদীরা সংবাদপষেনর ওপর আর তসলিমার বাড়িতে হামলা করেছে, এতে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কি কোনও তদন্ত করছে? এটা একটা সাধারণ অপরাধ নয়, এটা কোনও সাধারণ ভাঙচুর বা গুণ্ডামির অপরাধ নয়। এটা অন্য কিছু। কিন্তু কেউ যদি কোনও সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে, অন্য কাউকে আহত করে, অথবা অন্য যে কোনও কাজ করে যা আইনের চোখে অপরাধ তাহলে ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। এটুকু সংবাদ দেওয়ার পর বিবিসির সাংবাদিক জানান, আমি তাঁকে বাংলায় সাক্ষাৎকার দেবার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, জবাবে তিনি জানান, তাঁর মাতৃভাষা বাংলা নয়, তাঁর মাতৃভাষা উর্দু।

আজ সকাল গেল, দুপুর গেল, বিকেল গেল কোনও খবর নেই ক বা ঙর। আমার যে যাবার কথা ছিল হাইকোর্টে! কেন আজকের এই যাওয়া বাদ দিতে হল, কিছুই আমি বুঝতে পারি না। চ আমাকে সঙ্গে নিয়ে রাতের খাবার খেলেন। খাওয়ায় রুচি নেই আমার, অল্প কিছু খেয়ে উঠে পড়ি। চ যতক্ষণ বাড়িতে থাকেন, ব্যস্ত থাকেন তাঁর কন্যা নিয়ে। আজ রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে তিনি আমার কাছে এসে বসলেন কিছুক্ষণের জন্য। কিছু পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে বললেন যে আজ আপিসে এক মহিলার সঙ্গে আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছিল, মহিলাই তুলেছিল প্রসঙ্গ,বলল লজ্জা একটা বাজে বই, লজ্জা বইটি লিখে আমি খুব ভুল করেছি। আমি চুপ হয়ে থাকি, মনে মনে ভাবি চ নিশ্চয়ই ওই মহিলার মতের সঙ্গে একমত হননি। কিন্তু চ এরপরেই বললেন, আপনার সব বইই আমি পড়েছি, লজ্জাটা আমারও ভাল লাগেনি। খুব একপেশে লেখা।

একপেশে?

হ্যাঁ একপেশে। অনেক কিছু তো সত্য নয়। এ দেশে হিন্দু পলিটিশিয়ান আছে, হিন্দু আর্টিস্ট আছে, ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হিন্দু আছে, হিন্দু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার আছে, হিন্দু সাইন্টিস্ট আছে। লজ্জায় তো এদের কথা লেখেননি। কত বড় বড় মুভমেন্ট হল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, এসব কিছুই লেখা নেই লজ্জায়।

আমি মাথা নিচু করে বসে থাকি। মাথা নিচু করে বুকের ধুকপুক শব্দ শুনতে থাকি। চর মুখের দিকে ভয়ে তাকাই না। যদি চ এখন ঘ এর মত বলেন যে এ বাড়িতে আমার আর থাকা হচ্ছে না!

সকল অধ্যায়

১. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০১
২. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০২
৩. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৩
৪. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৪
৫. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৫
৬. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৬
৭. ২. তাণ্ডব – ০১
৮. ২. তাণ্ডব – ০২
৯. ২. তাণ্ডব – ০৩
১০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০১
১১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০২
১২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৩
১৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৪
১৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৫
১৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৬
১৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৭
১৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৮
১৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৯
১৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১০
২০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১১
২১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১২
২২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৩
২৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৪
২৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৫
২৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৬
২৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৭
২৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৮
২৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৯
২৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২০
৩০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২১
৩১. ৪. দেশান্তর – ১
৩২. ৪. দেশান্তর – ২
৩৩. ৪. দেশান্তর – ৩
৩৪. ৪. দেশান্তর – ৪ (শেষ)
৩৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২২
৩৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৩
৩৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৪
৩৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৫
৩৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৬
৪০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৭
৪১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৮
৪২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৯
৪৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩০
৪৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩১
৪৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩২
৪৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৩
৪৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৪
৪৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৫
৪৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৬
৫০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৭
৫১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৮
৫২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৯
৫৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪০
৫৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪১
৫৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪২
৫৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৩
৫৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৪
৫৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৫
৫৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৬
৬০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৭
৬১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৮
৬২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৯
৬৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫০
৬৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫১
৬৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫২
৬৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৩
৬৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৪
৬৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৫
৬৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৬
৭০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৭
৭১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৮
৭২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৯
৭৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬০
৭৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬১
৭৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬২

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন