৩. অতলে অন্তরীণ – ১৩

তসলিমা নাসরিন

ষোল জুন, বৃহস্পতিবার

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

০ ধর্ম, জাতি ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের শাস্তি
০ জাতীয় সংসদে জামায়াত কর্তৃক পেশকৃত ধর্মদ্রোহীতার শাস্তি-বিধান বিল পাশ
০ কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা ও
০ এনজিওদের অপতৎপরতা বন্ধের দাবিতে

বিক্ষোভ সমাবেশ

তারিখ ঃ ১৭ই জুন, শুক্রবার, সময়ঃ বাদ জুমা
স্থান ঃ বায়তুল মোকাররম, উত্তর গেইট
প্রধান বক্তা ঃ মাওঃ মতিউর রহমান নিজামী এম.পি
সেক্রেটারি জেনারেল ও জামায়াত সংসদীয় দলের নেতা
সভাপতি ঃ এ,টি,এম, আজহারুল ইসলাম
দলে দলে যোগ দিন
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ঢাকা মহানগরী

বাংলাদেশ জমিয়াতুলুল মোদার্‌রেছীনের পক্ষ থেকে সারা দেশের সকল মাদ্রাসার প্রধ্রধ্রধান ও অন্যান্য শিক্ষকদের জন্য অতি জরুরী বিজ্ঞপ্তি

তসলিমা নাসরিনসহ মুরতাদদের ফাঁসি, কুরআন অবমাননাকারী পত্র পত্রিকা ও বই পুস্তক নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং ব্লাসফেমি আইন প্রবর্তনের দাবীতে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্‌রেছীনের কর্মসূচী

আচ্ছালামু আলাইকুম,

বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্‌রেছীনের পক্ষ থেকে মুরতাদ তসলিমা নাসরিনসহ ইসলাম ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের ফাঁসি, ইসলাম-শরিয়ত, কুরআন হাদীস অবমাননাকারী পত্র পত্রিকা ও বই পুস্তক প্রকাশনা নিষিদ্ধকরণ এবং ঈমান আকীদা বিরোধী প্রচারণা ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী প্রচারণা ও প্রকাশনার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সম্বলিত ব্লাসফেমি আইন প্রবর্তনের দাবীতে নিম্নলিখিত কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্‌রেছীনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সকল সদস্য, আঞ্চলিক জমিয়াত, জেলা জমিয়াত, থানা জমিয়াতসহ সর্বস্তরের সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের প্রতি এ কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য আবেদন জানানো যাচ্ছে।

কর্মসূচীসমূহ

২৪শে জুনঃ প্রতিটি থানা জমিয়াত এবং জেলা জমিয়াতের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিলসহকারে প্রতিটি থানার টিএনও, জেলার ডিসি এবং ডিভিশন্যাল কমিশনার সাহেবদের নিকট স্মারকলিপি পেশ।
২৫শে জুনঃ সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় জমিয়াত কার্যালয়ে জমিয়াতুল মোদা−র্রছীনের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির সভা।
২৬শে জুনঃ সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে দেশের সকল মাদ্রাসার শিক্ষকদের মহাসমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিল সহকারে সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি পেশ।

এই বিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত দাওয়াত হিসাবে গণ্য করবেন। যিনি এই বিজ্ঞপ্তি পড়বেন আল্লাহ ও রসুলের সন্তুষ্টির নিয়তে, এই দাওয়াতনামাকে ফটোস্ট্যাট করে বিভিন্ন মাদ্রাসায় পৌঁছাবেন। বিশেষ করে থানা, জেলা ও আঞ্চলিক জমিয়াত এই দাওয়াত সকলের কাছে যাতে পৌঁছে সেই ব্যবস্থা করবেন। ঘোষিত কর্মসূচী যথাযথভাবে সফল করার সকল ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। বিস্তারিত জানার জন্য প্রতিদিন সকাল ৮টা হতে রাত্রি ১০টা পর্যন্ত নিম্নের টেলিফোনে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। ফোন ৬০৮২২৮, ৬০৮৩৩৮

আয়োজনে ও প্রচারে
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্‌রেছীনের, ঢাকা

তসলিমা নাসরিনসহ মুরতাদদের শাস্তি ও জনকণ্ঠ নিষিদ্ধ করার দাবি অব্যাহত। ঢাকা সহ খুলনা বরিশাল রাজশাহী চট্টগ্রামে জনতার বিশাল বিশাল মিছিল। মিছিলের ছবি। সভার খবর। সভায় বক্তাদের বক্তব্য। একই কথা। একই ধরনের বক্তব্য। গোলাম আযম এখন মঞ্চে। জামাতে ইসলামির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কক্ষ থেকে অন্যত্রও তাঁর পদচারণা শুরু হয়েছে। যে কথাটি বলতে তিনি আজ ওলামা সমাবেশের মঞ্চে উঠেছেন, সেটি জামাতের স্বার্থের জন্য খুব মূল্যবান। তসলিমার ফাঁসি আন্দোলনে জামাতে ইসলামী দলের চেয়েও আকার আকৃতিতে বড় দেখাচ্ছে অন্যান্য ইসলামী দলগুলোকে। কারও ধর্মীয় অনুভূতি খুব প্রবল হলে, কেউ মৌলবাদী হলেই যে জামাতে ইসলামী দলের সদস্য হয় তা নয়। জামাতে ইসলামীর সঙ্গে ভিন্ন মত থাকলেও এই আন্দোলন যে একসঙ্গে একই প্লাটফরম থেকে করা উচিত, তার প্রয়োজনীতার কথা বললেন গোলাম আযম। জামাতে ইসলামী দলটিকে ভারী করাই তাঁর মূল উদ্দেশ্য। এত বড় একটি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার লোভ জামাত কি করে সামলাবে! জামাতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযম বলেছেন, ইসলাম কারও অধীনে থাকার জন্য আসেনি। তাই আমাদের মূল কাজ হবে এ জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। যতদিন দ্বীন প্রতিষ্ঠা না হবে, ততদিন কাজ হবে আলেম ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সৎ কাজে উপদেশ দেয়া, অসৎ কাজে বাধা দেওয়া। সরকারকে দিয়ে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হলে লাখো জনতার উপস্থিতিতে বুলন্দ আওয়াজ তুলতে হবে। আর এর জন্য বাস্তবতা হচ্ছে সম্মিলিত নেতৃত্ব। মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব এর মাধ্যমে দ্বীনের খেদমত হয়। কিন্তু দ্বীন কায়েম সম্ভব নয়। এগুলো দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। আলেম ওলামারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে। ঐক্য কেন হচ্ছে না এবং না হওয়ার পেছনে কোন বাধা কাজ করছে সেটা জানতে হবে। আমার নাগরিকত্বের ব্যাপারটি ফায়সালা হলে আমি জনগণকে নিয়ে ইসলামী আন্দোলনে নামব। আমরা দেখাবো এ দেশে ইসলামের শক্তি বেশি না বিপক্ষের শক্তি বেশি।

মতিউর রহমান নিজামী এবং বাকি নেতারা সমাবেশ এ একই কথা বলেন, ঐক্যবদ্ধ না হলে আল্লাহর গজব থেকে আমরা রক্ষা পাবো না। ইসলামের ওপর যে আঘাত এসেছে তা একা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আলেম সমাজকে ঐক্যের সাথে লড়াই করতে হবে। আলেমদের ঐক্যই আমাদের শক্তি। একই প্লাটফরম থেকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে হবে।

অরাজনৈতিক মোল্লা, মুসল্লি, পীর, ওলামা, মাশায়েখ, আলেম, ইমামদের আজ রাজনৈতিক প্লাটফরম ব্যবহার করার আমন্ত্রণ জানানো হল।

 

এসব খবর জেনে ভয় হয়। ভয় হয় আর সৈয়দ শামসুল হকের লেখাটি পড়ে তাঁর কবিতাটি আওড়াই। ফিরে এসো বাংলাদেশে, কোথায় যাচ্ছে! তুমি ধেই ধেই করে? ..

সৈয়দ শামসুল হক আজ লিখেছেন, এ বড় কঠিন সময়ে আমরা উপস্থিত হয়েছি। রাতের পর রাত নিদ্রাহীন আমি, আমরা, আমাদের দেশমাতৃকা আজ। দেশের এখনকার অবস্থা, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ (আমার বিরুদ্ধে মামলার কথাটি বাদ দেননি) করে তিনি বলছেন, আমাদের ছুঁড়ে দিয়েছে কালো গহবরে, ভুলিয়ে দিতে চাইছে বাংলাদেশের মানুষের মানব-ধারাবাহিকতা, মুক্তিযুদ্ধের মূল কারণ ও চেতনা, এমনকি আমি এমনই শংকা করি যে আমাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে আত্মঘাতী গৃহযুদ্ধের দিকে, যার পরিণামে গণতন্ত্র হবে নিহত, স্বৈরশাসন পুনর্জীবিত, এবং বাংলাদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য, চেতনা ও মূল্যবোধ হবে নির্বাসিত।

ঠিক এই আশংকাটিই আমি করছিলাম। এই আশংকাটি এখন আরও অনেকের মনে কি জাগছে না! ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের দেশটিতে শোষণপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবার, অতীতের দুঃস্বপ্ন থেকে এই সবে জেগে উঠতে থাকা মানুষকে প্রগতিবিমুখ করে তুলবার একটি চক্রান্ত ভেতরে বাইরে কোথাও চলছে, আর রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া এবং যে কোনও ভাবেই হোক ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকা, টিকে থাকা, এই পণ কোথাও কেউ করে বসে আছে। এখনও মানুষ যদি সচেতন না হয়, দেশটিকে না রক্ষা করে ….আমার ভাবনার সুতোগুলো ছিঁড়ে যায় ছঞ্চর ডাকে। ছ আমাকে তাঁর বাগানে নিয়ে যেতে চাইছেন, তাঁর ফুল ফলের গাছ দেখাবেন। ফুল ফলের গাছ দেখায় আমার মন বসে না, মনে সৈয়দ হকের কবিতা ফিরে এসো বাংলাদেশ, কোথায় যাচ্ছে! তুমি ধেই ধেই করে!

সকল অধ্যায়

১. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০১
২. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০২
৩. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৩
৪. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৪
৫. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৫
৬. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৬
৭. ২. তাণ্ডব – ০১
৮. ২. তাণ্ডব – ০২
৯. ২. তাণ্ডব – ০৩
১০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০১
১১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০২
১২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৩
১৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৪
১৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৫
১৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৬
১৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৭
১৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৮
১৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৯
১৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১০
২০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১১
২১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১২
২২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৩
২৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৪
২৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৫
২৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৬
২৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৭
২৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৮
২৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৯
২৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২০
৩০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২১
৩১. ৪. দেশান্তর – ১
৩২. ৪. দেশান্তর – ২
৩৩. ৪. দেশান্তর – ৩
৩৪. ৪. দেশান্তর – ৪ (শেষ)
৩৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২২
৩৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৩
৩৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৪
৩৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৫
৩৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৬
৪০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৭
৪১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৮
৪২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৯
৪৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩০
৪৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩১
৪৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩২
৪৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৩
৪৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৪
৪৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৫
৪৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৬
৫০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৭
৫১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৮
৫২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৯
৫৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪০
৫৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪১
৫৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪২
৫৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৩
৫৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৪
৫৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৫
৫৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৬
৬০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৭
৬১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৮
৬২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৯
৬৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫০
৬৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫১
৬৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫২
৬৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৩
৬৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৪
৬৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৫
৬৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৬
৭০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৭
৭১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৮
৭২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৯
৭৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬০
৭৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬১
৭৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬২

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন