৩. অতলে অন্তরীণ – ১১

তসলিমা নাসরিন

চৌদ্দ জুন, মঙ্গলবার

সকালে আমার ঘরে ট্রেতে করে নাস্তা এল। রুটি তরকারি ডিম। ছ আমাকে এত সমাদর না করলেও পারতেন, কিন্তু ছ করেন। তিনি আমার নোংরা কাপড় ধুতে দেবার জন্য বলেন। ঘরের ভেতর ঘোমটায় মাথা ঢেকে বসে থাকার যুক্তি নেই, বলেন। ফাঁক ফোকর! নাহ ফাঁক ফোকর দিয়ে কেউ দেখতে পাবে না। কাজের লোক! কাজের লোকের সাহস হবে না কোনও কিছু রাষ্ট্র করা। তিনি নিজের কথা অনেকক্ষণ বললেন, ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু লেখাপড়া ছাড়েননি। জীবনে অনেক বাধা এসেছে, সব বাধা অতিক্রম করেছেন নিজের একার মনোবল দিয়ে। শুনতে খুব ভাল লাগে সাহসী মেয়েদের কথা। আমি মন দিয়ে শুনি তিনি কেমন কেমন বাধার মুখোমুখি হয়েছেন, কেমন করেই বা ডিঙিয়ে এসেছেন। বিয়ে হয়েছে, বাচ্চা হয়েছে, স্বামী অত্যাচার শুরু করলে স্বামীকে তাড়িয়ে দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, ডিগ্রি নিয়েছেন, নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। কারও কোনও কুকথার পরোয়া করেননি। তিনি একটি নারী উন্নয়ন সংস্থা খুলেছেন, নিরক্ষর মেয়েদের জন্য এই সংস্থার ইশকুল আছে। সেলাইএর, বুননের কাজও দিয়েছেন বেকার মেয়েদের। বললেন, মেয়েদের জন্য কিছু করতে চাও তো তোমার যেতে হবে গ্রামে, গ্রামের মেয়েরা অসম্ভব পরিশ্রমী, ওরা শিক্ষিত হলে, স্বনির্ভর হলে দেশে কোনও সমস্যা থাকবে না। আমি সায় দিই ছর কথায়। এত বড় কাজ করার সুযোগ আমার কখনও হয়নি। এখন তো বেঁচে থাকারই সুযোগ হচ্ছে না। লেখালেখি না করে গ্রামের মেয়েদের স্বনির্ভর করার কাজে সাহায্য করলে সত্যিকার কিছু করা হত, আমি বুঝি। নিজেকে বড় তুচ্ছ মনে হয়, বড় অপদার্থ মনে হয়।

ছ র পড়া শেষ হলে আজকের দুটো পত্রিকা ছ আমাকে পড়তে দেন। ৩০শে জুন হরতাল সফল করার আহবান জানানো হচ্ছে দেশের সমস্ত অঞ্চল থেকে। হরতালের কথা প্রথম তুলেছিল ইয়ং মুসলিম সোসাইটি, এরপর হরতালের প্রস্তাবটি খাচ্ছে দেশের সব মৌলবাদী রাজনৈতিক অরাজনৈতিক দল। দেশের সর্বত্র সভা মিছিল চলছে হরতাল সফল করার দাবিতে। মসজিদের নিরাপদ আঙিনা ছেড়ে মৌলবাদীরা এখন সভা করছে তাদের দাপট নেই এমন এলাকাতেও। ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় গতকালের সভায় মুফতী আমিনী বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাবার জন্য তসলিমা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। স্পীকারের কাছে লেখা আমার চিঠি সম্পর্কে বলেছেন যে আমি কোরান সংশোধনের কথা এখন অস্বীকার করছি, ভয়ে করছি। বলেছেন, সামান্য অপরাধের কারণে সরকার যদি আসামীদের গ্রেফতার করার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করতে পারে, তবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পবিত্রতম গ্রন্থ সম্পর্কে ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি করার অপরাধে তসলিমাকে গ্রেফতারে পুরস্কার ঘোষণার বাধা কোথায়? ২৫শে জুন সকাল ১১ টায় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয় মুফতীর দল থেকে। বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র পরিষদের সভায় বলা হয়েছে, কুখ্যাত লেখিকা মুরতাদ তসলিমা নাসরিনকে রহস্যজনক ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। পরিস্থিতি বেশিদূর অগ্রসর হতে না দিয়ে এখনও সময় আছে তাকে গ্রেফতার করে বিচার করা হোক। তসলিমার ফাঁসির দাবিতে আগামীকাল সংসদ ভবন ঘেরাও করার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদের তিনি আহবান জানিয়েছেন। সচেতন মুসলিম যুব ফোরাম, মান্দারপুর ইসলামি পাঠাগার, পাঞ্জেরী পাঠাগার হরতাল সমর্থনের বিবৃতি দিয়েছে। পাঠাগারের লোক পর্যন্ত সংগঠিত হচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় উত্তেজনা এখন। এ কিসের লক্ষণ! আরও একটি বিবৃতি আমাকে কাঁপিয়ে দেয়। ১০১ জন আইনজীবী তসলিমার গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছে। ইত্তেফাকের খবরটি এরকম, বাংলাদেশে সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের ১০১ জন আইনজীবী গতকাল সোমবার এক যুক্ত বিবৃতিতে ইসলামের শষনুদের মদদ যোগাইতে পবিত্র কোরান শরীফ সম্পর্কে তসলিমা নাসরিনের অবমাননাকর উক্তিতে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনায় চরম আঘাত ও সমাজকে উμছৃঙ্খলতার দিকে ধাবিত করার অপপ্রয়াসে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আইনজীবীগণ ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ করিতে কেহ যেন সাহস না পায় উহার দৃষ্টান্ত সৃষ্টির জন্য অবিলম্বে তসলিমাকে গ্রেফতার ও বিচারের মাধ্যমে তাহাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিদানের দাবি জানান। তাহারা বলেন, অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সকল দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করিতে হইবে। বিবৃতিদানকারী আইনজীবীদের মধ্যে রহিয়াছেন এস এম আবুল কাসেম, সাবেক বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহাব, ব্যারিস্টার শহীদ আলম, ব্যারিস্টার সৈয়দ এমদাদুর রহমান, ব্যারিস্টার ফরিদ উদ্দিন, মোঃ রেজা, ব্যারিস্টার কোরবান আলী, মোঃ গোলাম মাওলা বকুল, মুঃ খলিলুর রহমান রোকনী, সৈয়দা মায়মুনা বেগম ও মোঃ মাহমুদ হোসেন।

আরও একটি খবর, প্রকাশ্যে জনসমাবেশে লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে হত্যার হুমকি ও তার মাথার দাম ঘোষণা করে তাকে হত্যা করতে অন্যকে প্ররোচিত করার অভিযোগে লেখিকার ভাই ফয়জুল কবীর নোমান গতকাল খুলনা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে ৯ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। .. দাদা খুলনা গিয়েছেন মামলা করতে। মুফতী সৈয়দ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা, যে মুফতী সেদিন আমার মাথার মূল্য এক লক্ষ টাকা ঘোষণা করেছে। মামলা করার সিদ্ধান্তটি কবে কখন নেওয়া হল, কে নিল কিছুই আমি জানি না। আমি ধারণা করি, উকিলের আপিস থেকেই দাদাকে পাঠানো হচ্ছে খুলনায়। বুক ভরে শ্বাস নিই। এই শ্বাসের সঙ্গে একটি শক্তি আমার শরীরে নেমে আসে। হাতদুটো মুষ্ঠিবদ্ধ করতে পারি অনায়াসে। হাতের মুঠিদুটো আলগা হয়ে আসে যখন খুলনায় দাদার নিরাপত্তাহীনতার কথা ভাবি। দাদার ওপর অভিযোগ ছিল আমার অনেক, বিয়ের পর তাঁর হঠাৎ বদলে যাওয়া, অসহ্য রকম কৃপণ হয়ে যাওয়া, স্বার্থপর হয়ে যাওয়া। আজ দাদাকে তাঁর সব অন্যায়ের জন্য আমার ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছে করে। আজ মনে হয় দাদা সত্যিই আমাকে ভালবাসেন, সেই ছোটবেলায় যেমন ভালবাসতেন, তেমন আজও। সেই যে আমার জন্য জামার কাপড় কিনে আনতেন, শীলার কাছে দিতেন নানারকম কায়দা করে জামা বানিয়ে দেবার জন্য, সেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবার পয়সা বাঁচিয়ে ফুটপাত থেকে পুরোনো জামা কিনে আনতেন, রঙ কিনে দিতেন ছবি আঁকার জন্য, আমার আঁকা রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের ছবি টাঙিয়ে রেখেছিলেন দেয়ালে, সেই যে নিজে কবিতা লিখে আমার নামে ছেপে দিতেন তাঁর পাতা পত্রিকায়, চিত্ররূপা স্টুডিওতে সঙ্গে নিয়ে ছবি তুলতেন, সিনেমায় নিয়ে যেতেন, সেই যে সেঁজুতির পাণ্ডুলিপি নিয়ে যেতেন প্রেসে, টাকা দিতেন সেঁজুতি ছাপার, এই দাদাকে আমার সেই দাদা বলে মনে হয়। দাদার সঙ্গে কখনও কি আমার আবার দেখা হবে! খুব ইচ্ছে করে তাঁকে দেখতে। কিন্তু সে কি এ জীবনে আর সম্ভব! আমার সঙ্গে কারওরই কি আর দেখা হবে! পত্রিকাগুলো সরিয়ে আমি শুয়ে থাকি, শৈশব কৈশোর এসে আমার হৃদয় জুড়ে গোল্লাছুট খেলে। গোল্লাছুট খেলাটি হঠাৎ থেমে যায়, যখন চোখ পড়ে সাহাবা সৈনিক পরিষদের কর্মসূচিতে। সিলেটে সাহাবা সৈনিক পরিষদের জনসভায় ২৩ জুন সিলেটে অর্ধদিবস হরতাল পালনসহ দু সপ্তাহের লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ মঙ্গলবার ১৪ই জুন থেকে ১৬ই জুন পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে যোগাযোগ ও মতবিনিময়, ১৭ জুন বেলা দুটোয় পরিষদ কার্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময়, ১৮ থেকে ২১ জুন জনসংযোগ সপ্তাহ পালন, ২২ জুন হরতালের সমর্থনে মিছিল ও সমাবেশ এবং ২৩ জুন অর্ধদিবস হরতাল।

বাহ চমৎকার। খালি মাঠ পেয়েছো, খেলে যাও। গোল দিয়ে যাও যত ইচ্ছে। তোমাদের তো বাধা দেওয়ার কেউ নেই। বীভৎস কাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে! প্রতিদিন, তোমাদের কোনও বিরোধী দল তোমাদের মত পথে নামছে না আজও। সুতরাং জয় তোমাদের। মেরে ফেলো আমাকে। মেরে ফেলো যত বুদ্ধিজীবী আছে দেশে সবাইকে, বন্ধ করে দাও প্রগতির পক্ষের সব পত্রিকা। আইন আনো ব্লাসফেমির বিরুদ্ধে। ইসলামি শাসন কায়েম কর। মেয়েদের ধরে ধরে পুড়িয়ে ফেলো, পাথর মারো। তোমাদের জয় হবেই ইনশাল্লাহ।

দুপুরে খাবার দিয়ে যায় কাজের মহিলা। গোগ্রাসে শুরু করি। ফাঁসির আসামীদের তো ভাল খেতে হয়। খেয়ে নাও তসলিমা, মাছ মাংস খেয়ে নাও, কাল হয়ত তোমার আর খাবার সুযোগ হবে না। বলি কিন্তু খেতে গিয়ে দেখি পারছি না। সুস্বাদু খাবার, কিন্তু খেতে ইচ্ছে করে না, দুমুঠো খেয়েই মনে হয় গলা পর্যন্ত ভরে গেছে খাবারে। বমি বমি লাগে।

বিকেলে ভেজানো দরজা খুলে ছ ঢোকেন ঘরে।

চল, বারান্দায় বসবে চল।

বারান্দায়? চমকে উঠি প্রস্তাব শুনে।

ঘরের মধ্যে যার লুকিয়ে থাকতে হয় দরজা জানালা বন্ধ করে, সে কিনা বাইরের আলো দেখবে! মাথায় শাড়ির আঁচল তুলে দিয়ে ছর পেছন পেছন গিয়ে বারান্দার একটি চেয়ারে বসতে হয়। ভেতর বারান্দাতেই তিনি আমাকে ডেকেছেন বসতে। এখানে বসলে আশেপাশের বাড়ি থেকে কারও দেখার সুযোগ নেই। চেয়ারে হেলান দিয়ে তিনি বলেন, আমার বাড়িতে কত আণ্ডারগ্রাউণ্ড পার্টির লোক এসে থেকেছে। আমি জানি কি করে তাদের রাখতে হয়।

এরপর তিনি বলতে থাকেন সেই কথাগুলো, যেগুলো আজ সকালেই তিনি বিস্তারিত বলেছেন। কি করে তিনি এই জায়গায়, যেই জায়গায় তিনি এখন, এসে পৌঁছলেন, কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাঁর, মনের জোর তাঁর কি রকম প্রচণ্ড ছিল।

হঠাৎ বললেন, আমি একটা জিনিস বুঝতে পারি না, তোমার মত নিরীহ মেয়ে, যার গলায় স্বর নেই, মনে তেজ নেই, তোমাকে মোল্লারা মারতে চায় কেন?

আমি মাথা নত করি।

জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী লেখ যে মোল্লারা ক্ষেপে যায়?

–ওই ধর্ম নিয়ে লিখেছিলাম বলে।

–ধর্ম নিয়ে কী লিখেছিলে?

–আসলে ধর্ম তো মেয়েদের স্বাধীনতার পথে বাধা ..

ধমকে ওঠেন ছ। –কে বলল তোমাকে বাধা?

ধমকে চমক লাগে।

–আমার যে এনজিওতে এত মেয়েরা কাজ করে, গ্রামের মোল্লারা কি কোনও রকম অসুবিধা করতে পেরেছে? চেয়েছিল দুএকবার, পারেনি। আমি সোজা মসজিদের ইমামের কাছে গিয়েছি কোরান নিয়ে। কোরানের সুরা পড়ে পড়ে তর্জমা করে দিয়ে এসেছি, বলেছি এই দেখ কি লেখা, এখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে মেয়েদের অধিকারের কথা..। কোরান তারা আমাকে শেখাবে কি, আমিই তাদের শিখিয়েছি।

–তাহলে কি আপনি মনে করেন যে ধর্মীয় আইনে মেয়েদের ..

আমি কথা শেষ করতে পারি না, তিনি বলেন, এ দেশে যে ধর্মীয় আইন আছে, তা যদি মেনে চলা হত, মেয়েদের ৯০ ভাগ দুর্দশাই কেটে যেত।

–ধর্মীয় আইনে তো….

–তালাক হলে স্ত্রীকে খরপোষ দেওয়ার কথা আছে। কজন স্বামী খরপোষ দেয় স্ত্রীকে? দেয় না। মেয়েরাও জানে না যে এত ভাল আইন তাদের পক্ষে আছে। বিয়ের সময় যে দেনমোহরের কথা বলা হয়, কজন স্বামী দেনমোহর দেয় স্ত্রীকে? দেয় না। আইন অমান্য করে। মেয়েরা যদি জানত এইসব আইনের কথা, তারা মামলা করতে পারত স্বামীদের বিরুদ্ধে। চার বিয়ের কথা বল? কোরানে স্পষ্ট লেখা আছে, যদি চারজন স্ত্রীর প্রতি সমান ব্যবহার করতে না পারো, তবে চারটে বিয়ে করবে না, একটি করবে। এটাই তো প্রমাণ যে চারটে বিয়ে না করার জন্য বলা হয়েছে। কোন স্বামী পারবে তার চার স্ত্রীকে একইরকম মর্যাদা দিতে, একই রকম ভালবাসতে? পারবে না, নতুন বউএর প্রতি তাদের বেশি আকর্ষণ থাকবে। না, ধর্ম আমাদের জন্য কোনও সমস্যা নয়। সমস্যা হল অর্থনৈতিক সমস্যা। মেয়েরা যদি শিক্ষিত হয়, স্বাবলম্বী নয়, তবেই তাদের সব সমস্যা দূর হবে। ধর্ম তো কাঠমোল্লাদের নয়, ধর্ম আমাদের। আমাদের দাবি করতে হবে যে আমরা ধর্ম মানি। ধর্মকে বাজে লোকের সম্পত্তি করতে দিলেই তারা বাজে ভাবে ধর্মের ব্যাখ্যা করবে। ইসলাম ধর্মে মেয়েদের যত মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, অন্য অনেক ধর্মেই তত মর্যাদা দেওয়া হয়নি। মেয়েরা উত্তরাধিকার সূষেন বাপের সম্পত্তি পায়, হিন্দু ধর্মে তো তা পায় না, ভারতে আইন করতে হয়েছে মেয়েদের সম্পত্তি দেবার জন্য। ইসলাম ধর্মে আছে যে সম্পত্তির ভাগ মেয়েদের দিতে হবে, কজন মেয়ে সেই সম্পত্তি সত্যিকারের পায়? পায় না, কেন পায় না? কারণ তাদের দেওয়া হয় না। ধর্মে যে অধিকারগুলো আছে, সেই অধিকার পাওয়ার জন্য আগে চেষ্টা করতে হবে। হঠাৎ করে তুমি ধর্মীয় আইন পাল্টে ফেলে একটা সমান অধিকারের আইন চালু করলে, তাতে কী হবে মনে করছো? মনে করছো ব্যাস এখন থেকে আর কোনও বৈষম্য থাকবে না সমাজে? ভুল।

আমি মন দিয়ে শুনি ছ র কথা। আমার মনে হয় না ছ কিছু ভুল বলছেন, বিশেষ করে সমান অধিকারের আইন চালু করলেই যে নিমেষে বৈষম্য দূর হবে না সে কথা। বৈষম্য তো পিতৃতান্ত্রিক সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এত সহজে এই সমাজে নারী তার অধিকার পাবে, তা আমিও মনে করি না। তারপরও আমাকে যেন তিনি ভুল না বোঝেন আমি বলি, তাঁর বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরের পাশে আমার কণ্ঠটি বড় মৃদু, বড় নরম, বলি যে আমি কেবল ধর্ম সম্পর্কে লিখেছি তা নয়, মেয়েদের শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা লিখেছি। শিক্ষা আর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার পাশাপাশি সমঅধিকারের আইনও যদি থাকে তবে তো আরও ভাল। সেই আরও ভাল অবস্থার জন্য আমার স্বপ্ন ছিল।

–স্বপ্ন স্বপ্ন স্বপ্ন …. বসে বসে স্বপ্ন দেখলে কচু হবে। কাজ করতে হবে। বাস্তব জগতের মুখোমুখি হতে হয়। হয়েছো কখনও? কখনও গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছো? কথা বলতে হবে তাদের ভাষায়। জানো তাদের ভাষা? আমি চুপ করে থাকি। মাথাটি ধীরে ধীরে নত হতে থাকে।

–দেশের আশি ভাগ মেয়ে অশিক্ষিত। তুমি যে দাবি করছ তুমি মেয়েদের জন্য লেখ, কজন মেয়ে তোমার লেখা পড়তে পারে? কোন মেয়েরা তোমার লেখা পড়ছে? লেখাপড়া জানা মেয়েরা পড়ছে। লেখাপড়া জানা মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ থাকে, তারা যদি সুযোগ না নেয়, তবে সেটা তাদের দোষ। যাদের স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে, যাদের সুযোগ নেই, তাদের সাহায্য করতে হবে।

হঠাৎ উঠে পড়লেন ছ। অনেকক্ষণ বসে থাকলে পিঠে তাঁর যন্ত্রণা হয়। তাঁর এখন শুয়ে বিশ্রাম নিতে হবে দু ঘণ্টা।

আমি উঠে যাই ঘরে। ঘরে বসে থাকি। নিজেকে বড় তুচ্ছ, বড় অকর্মণ্য, বড় বোকা বলে মনে হতে থাকে। নিজের ওপর আমার রাগ হতে থাকে, ঘৃণাও হতে থাকে। নিজের দু গালে দুটো চড় কষাতে ইচ্ছে করে।

সকল অধ্যায়

১. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০১
২. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০২
৩. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৩
৪. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৪
৫. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৫
৬. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৬
৭. ২. তাণ্ডব – ০১
৮. ২. তাণ্ডব – ০২
৯. ২. তাণ্ডব – ০৩
১০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০১
১১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০২
১২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৩
১৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৪
১৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৫
১৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৬
১৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৭
১৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৮
১৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৯
১৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১০
২০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১১
২১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১২
২২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৩
২৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৪
২৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৫
২৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৬
২৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৭
২৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৮
২৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৯
২৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২০
৩০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২১
৩১. ৪. দেশান্তর – ১
৩২. ৪. দেশান্তর – ২
৩৩. ৪. দেশান্তর – ৩
৩৪. ৪. দেশান্তর – ৪ (শেষ)
৩৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২২
৩৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৩
৩৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৪
৩৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৫
৩৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৬
৪০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৭
৪১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৮
৪২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৯
৪৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩০
৪৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩১
৪৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩২
৪৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৩
৪৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৪
৪৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৫
৪৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৬
৫০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৭
৫১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৮
৫২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৯
৫৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪০
৫৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪১
৫৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪২
৫৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৩
৫৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৪
৫৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৫
৫৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৬
৬০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৭
৬১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৮
৬২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৯
৬৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫০
৬৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫১
৬৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫২
৬৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৩
৬৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৪
৬৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৫
৬৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৬
৭০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৭
৭১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৮
৭২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৯
৭৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬০
৭৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬১
৭৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬২

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন