৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৮

তসলিমা নাসরিন

একত্রিশ জুলাই, রবিবার

আজও সকালে তৈরি হয়ে থাকি। দুপুরের পর ঙ জানিয়ে দেন যে আজ হচ্ছে না। গতকালের পত্রিকায় একটি খবরের শিরোনাম ছিল তসলিমা নাসরিন প্রসঙ্গে নরওয়ে, জার্মানি এবং ইউরোপীয় কমিশনের বক্তব্য। খবরটি এরকম, জার্মান দূতাবাসের কাউন্সিলার বলেছেন, ১৬ জাতির ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে তসলিমা নাসরিনকে দেশত্যাগের অনুমতি প্রদানের জন্য সরকারের কাছে ফরমাল অনুরোধ জানানো হয়েছে কিন্তু এখনও কোনও জবাব তাঁরা পান নি। এদিকে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এরকম খবর তাঁরা পত্রিকায় পড়েছেন, কিন্তু সরকারিভাবে কিছু জানেন না। ইউরোপীয় কমিশনের চেয়ারম্যান একজন জার্মান। জার্মান দূতাবাসে জানতে চাওয়া হয়, তসলিমাকে দেশত্যাগের অনুমতিদানের জন্য চাপ সৃষ্টি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হন্তক্ষেপের সামিল বলে তিনি মনে করেন কি না। দূতাবাস থেকে বলা হয়, চাপ সৃষ্টির কোনও প্রশ্নই আসে না। ইউরোপীয় কমিশনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা কেবল নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং তা বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে, তা সরকারের ওপর কোনও চাপ সৃষ্টি নয় এবং তা গ্রহণ করা বা না করা সম্পূর্ণ সরকারের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমন অনুরোধ করে বাংলাদেশের আইনকে নিষিক্রয় করতে সহায়তা করছে কি না এবং তা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে কি না জানতে চাওয়া হলে দূতাবাসের মুখপাত্র বলেন, ইউরোপীয় কমিশনের মতামত বা অনুরোধ সরকারকে জানানো ছাড়া বিষয়টির ওপর কোনও মতামত দেওয়া তাঁর দায়িত্ব নয়। ইউরোপীয় কমিশন কেন একজন মহিলার পক্ষে এমন অবস্থান নিচ্ছে যে মহিলা দেশের আপামর জনসাধারণের ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত করেছে এই প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, সমগ্র বিষয়টি ব্যাখ্যার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে এবং ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে কি ঘটছে তার ওপর নজর রেখেই দেখতে হবে। ইউরোপীয় কমিশন মানুষের বাক স্বাধীনতাকে মূল্য দেয় এবং এই বিষয়টিকে এই দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখতে হবে। ঢাকার নরওয়ের মিশন প্রধানকে বিষয়টির ওপর মন্তব্য করতে বলা হলে তিনি বলেন, বাক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্য থেকেই নরওয়ে সরকার বিষয়টি দেখছেন। মিশন প্রধান সরেজমিনে সব দেখছেন এবং নরওয়ে সরকারের কাছে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাচ্ছেন। নরওয়ের পত্রিকায় বাংলাদেশের নারীদের ওপর নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর প্রতিদিন খবর ছাপা হচ্ছে, জনগণের বিশাল একটি অংশ তসলিমা নাসরিনের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য নরওয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। নরওয়ের সরকারকে নরওয়েবাসীদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েই কাজ করতে হয়। বাক স্বাধীনতার নামে উগ্র মতামত বলা ও ছাপানো একটি সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাস ও অনুভূতিকে পদদলিত করা কতটুকু সমর্থনযোগ্য, এই প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তাই বলে বাংলাদেশের মানুষকে কেন মৌলবাদী বলা হচ্ছে, জিজ্ঞেস করা হলে মিশন প্রধান বলেন যে কিছুসংখ্যক উগ্রপন্থী ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ শান্তিপ্রিয় ও সহনশীল। এরপর বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্নের জবাব নরওয়ের মিশন প্রধান দেননি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিশন প্রধান বলেছেন, তসলিমা নাসরিনকে নরওয়ের একটি সেমিনারে যোগ দেয়ার নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে, তবে তিনি যেতে পারবেন কি না তা একমাত্র বাংলাদেশ সরকারই বলতে পারবে। বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে কি না জানতে চাওয়া হলে মিশন প্রধান বলেন, তিনি কেবল পত্র পত্রিকায় যা প্রকাশ হচ্ছে সে সম্পর্কেই জানেন, বেশি জানেন না। ব্লাসফেমি আইন সম্পর্কে বলেন, বর্তমান বিশ্বে এটি অচল এবং এটি মানবাধিকারের পরিপন্থী।

কূটনীতি ব্যাপারটি অদ্ভুত। এটি আমি বুঝি কম। কী কথা বলতে হবে, কী কথা বলতে হবে না তা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। কূটনীতিকরা জানেন কতটুকু বলতে হয়, কোথায় থামতে হয়। কি কথার কি উত্তর দিতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং নরওয়ে বাংলাদেশকে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন আমাকে দেশত্যাগের অনুমতি দিতে। সরকার এটিকে চাপ হিসেবে বা সুযোগ হিসেবে নিয়েছে কি না তা জানি না। কি ঘটছে সরকারে এবং বিদেশি দূতাবাসে, তা এ বাড়ি ও বাড়ির অন্ধকার কোণে লুকিয়ে থেকে আমার বোঝা সম্ভব নয়। তবে এটা ঠিক বিদেশি সরকারগুলোর কোনও দায় পড়েনি আমাকে বিপদমুক্ত করতে, বিদেশি লেখকগোষ্ঠী আর মানবাধিকার সংস্থাগুলোই কেবল মাথা ঘামাচ্ছে, তারা যে কোনও রাজনীতির ঊর্ধ্বে বলেই ঘামাচ্ছে, তারা ব্যক্তি স্বাধীনতা, লেখকের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারে বিশ্বাস করে বলেই ঘামাচ্ছে। তারা মাথা না ঘামালে বিদেশি কোনও সরকার আজ আমাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসতো না, কারণ আমি তাদের কোনও স্বার্থরক্ষার কাজে লাগব না।

ঠকে যখন মনের কথা জানালাম, তিনি বললেন —তোমার খবরটি হোল ওয়ার্ল্ডের মিডিয়াতে গেছে। এখন ইউরোপের দেশগুলো ক্রেডিট নিতে চাইবে তোমাকে বাঁচানোর। সুতরাং বিদেশি সরকারগুলো যে করেই হোক ঝাঁপিয়ে পড়বেই তোমার জন্য কিছু করতে। বলে তো বেড়ানো যাবে যে আমরা মানবাধিকারের পক্ষে এই কাজটি করেছি। এটিই তো বড় একটি স্বার্থ।

—এত কিছু যখন করতেই পারে তাঁরা, কই আমার অনুপস্থিতিতে জামিনের ব্যবস্থা করতে পারে না কেন? হাইকোর্টে গেলে কী নিশ্চয়তা আছে যে আমাকে খুন করা হবে না! কে নিশ্চয়তা দেবে যে ওখানে আততায়ী ওত পেতে থাকবে না! প্রতিদিন নাকি এখন হাইকোর্টে মোল্লারা ভিড় করছে আমি যেতে পারি এই ধারণা করে। ওদের মধ্যে গিয়ে পড়লে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে।

—হ্যাঁ ঘটতে পারে।

—তখন কোথায় পাবো ইউরোপের নেতাদের?

—তোমাকে বাঁচাতে তো তারা এ দেশে পারবে না। এ দেশ থেকে তোমাকে উদ্ধার করেই তোমাকে বাঁচাতে পারে। সেটি ছাড়া তাদের আর করার তেমন কিছু নেই। এ বাড়িতে যদি এখন তোমাকে আক্রমণ করা হয়, রাস্তায় তোমাকে ধরে ফেলা হয় বা আদালতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, ইউরোপের বাপের ক্ষমতা নেই তোমাকে কোনওরকম সাহায্য করার।’ এটুকু বলে আচমকা শান্ত হয়ে বসে থাকেন ঠ।

আমি অনেকক্ষণ পর একসময় নরম গলায় বলি, —‘মনে হয় পুলিশের ব্যবস্থা করা হবে।’

—পুলিশই কত আহত হচ্ছে কত জায়গায়, কত মরছে। সন্ত্রাসীরা আবার পুলিশ মানে নাকি!’

—পুলিশরাই বা কেন মনে করবে যে আমি তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিইনি! তাদের কেন রাগ থাকবে না আমার ওপর?’

ঠ মাথা নাড়েন হ্যাঁ বোধক। আমি ভুল বলেছি বলে তিনি মনে করেন না। ঠ খুব তাড়াহুড়ো করে কথা সারেন আমার সঙ্গে, কারণ এ ঘরে আমার সঙ্গে বসে থাকলে তাঁর চলবে না। কারণ তাঁকে বাড়িখানা দেখতে হবে। বাড়ির মানুষগুলোকে সন্দেহমুক্ত রাখার সবরকম চেষ্টা তাঁকে চালিয়ে যেতে হবে। বাড়িটিতে কোনও অনাকাঙ্খিত অতিথির আগমন যেন না ঘটে, বাড়িটির দিকে বাইরের কোনও চোখ যেন না পড়ে। ঘোমটা মাথায় মুখে আঁচল টেনে বসে থাকা এক কূলবধূর মত আমি। আমাকে দেখলে আমারই ভয় হয়, ইচ্ছে হয় আমার কাছ থেকেই আমি দৌড়ে পালাই। মাঝে মাঝে আমার একটি সংশয় জাগে যে, আমি নিজে হলেও হয়ত তসলিমার এই দুঃসময়ে তাকে আশ্রয় দেবার দুঃসাহস করতাম না।

রাতে ঙ এলেন। জামিন পেতে হলে হাইকোর্টে আমাকে উপস্থিত হতেই হবে ব্যাপারটি ঙর মোটেও ভাল লাগেনি। এত বড় ঝুঁকি নিয়ে কোন মানুষটির আদালতে যাওয়া উচিত! যদি জীবনটিই শেষ পর্যন্ত না রক্ষা হয়, তবে জামিন পেয়ে কী লাভ! ঙ দুশ্চিন্তামুক্ত নন। বিরাট খোলা মাঠের ওপর হাইকোর্টটি। যে কোনও মানুষেরই প্রবেশাধিকার আছে ওখানে। হাইকোর্টের মাঠে, ভেতরে করিডোরে হাজার হাজার মানুষ যদি ভিড় করে, তবে উপায় কি হবে, কি করে ঢুকব আমি, কি করে বেঁচে বেরোবো, তা ভেবে ঙরও ঘুম হচ্ছে না। এ ছাড়া, হাইকোর্টে যাওয়া ছাড়া আর তো কোনও উপায়, ঠ বললেন, নেই। কেন পর পর দুদিন আমাকে আদালতে যেতে নিষেধ করলেন ঙ, তা জানতে চাইলে বললেন যে আমার উকিল তাঁকে জানিয়েছেন যে আদালতে ভাল বিচারক বসেননি। বিচারকদের মধ্যেও খারাপ ভাল আছে। কেউ কেউ সোজা বলে দেবেন, না জামিন হবে না। বলে দেবেন, কোনও নিরাপত্তা দেওয়া হবে না। সুতরাং আমার উকিলকে চোখ কান সব সজাগ রেখে বিচারক মৌলবাদী কি অমৌলবাদী তা পরখ করতে হবে। পরখে যদি অমৌলবাদী জোটে, তবেই জামিনের জন্য দাঁড়াতে হবে, নচেৎ নয়।

ঙ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, সুপ্রীম কোর্টেও যে এত বিচারক মৌলবাদের পক্ষে তা আমার আগে জানা ছিল না।

ঙর দীর্ঘশ্বাস বুকে হেঁটে এগোতে থাকে আমাদের দিকে। পা বেয়ে ওপরে ওঠে, উঠতে উঠতে বুকে এসে স্থির হয়। বুকে আমাদের সবারই এক একটি দীর্ঘশ্বাস। ঠ আর তাঁর স্বামী নিজ নিজ দীর্ঘশ্বাসগুলোকে বিদেয় করে দেন নিজ নিজ বুক থেকে। কেবল আমারটিই পড়ে থাকে বুকে। আমারটিই শত সন্তান গ−র্ভ নিয়ে ভারী শরীরে পড়ে থাকে, আমারটিই আমাকে একটু একটু করে দখল করে নেয়, মুঠোর ভেতরে নেয়। শত শত দীর্ঘ শ্বাস আমার শ্বাস রোধ করে রাখে।

ঙ চলে গেলে ঠ, ঠর স্বামী আর আমি তিনজন চুক চুক করে চা পান করতে করতে টুকটুক করে কথা বলতে থাকি। মাঝে মধ্যে দরজায় কারও শব্দ শুনলে বুক ধুকধুক করে।

—হচ্ছে কি দেশে?

—বাম দলগুলো মাঠে নেমেছে। ঘাতক, রাজাকার উৎখাত আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করার কথা বলছে।

—এতে কি কাজ হবে? সত্যিই কি কোনওদিন এদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে?

—মনে হয় না।

—আমারও মনে হয় না কোনওদিন হবে। বরং মৌলবাদীরা দিন দিন শক্তিশালী হবে। বিএনপি আর আওয়ামী লীগ মৌলবাদীদের আশকারা দিয়ে কত যে ভুল করল, একদিন বুঝবে।

—মনে হয় না কোনওদিন বুঝবে। মৌলবাদীরা এ দেশের সর্বনাশ করলে কার কী! বিএনপি আর আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ্য হল কিছুদিন যে করেই হোক ক্ষমতা ভোগ করা। ভোগ হয়ে গেলে সাধ মিটে যাবে, এরপর দেশটাকে কুত্তায় খাক কী জামাতিতে খাক, তাদের কিছু যায় আসে না। সমাজ নষ্ট হয়ে যাক, দেশ পচে যাক, তাদের কী!

—ভরসা এখন ছাত্রদের ওপর। ছাত্ররা মাসব্যাপী আন্দোলনে যাচ্ছে। আগস্টের তিরিশ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর আপিসে মিছিল নিয়ে যাবে। আগস্টের তিন তারিখে চট্ট গ্রামের ছাত্র হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের গ্রেফতার আর বিচার দাবি আর ছাত্রদের যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে, আগস্টের ছয় তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন রাজাকারমুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ আর আগস্টের দশ তারিখ থেকে সাতাশ তারিখ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বড় বড় শহরগুলোয় ছাত্র জনসভা হবে।

—ছাত্রদের মধ্যে এখনও হয়ত সততা বলে ব্যাপারটি টিকে আছে। কিন্তু তারাও কি বেশিদিন এই সততা টিকিয়ে রাখতে পারে!

—এখন ধরেছে বায়তুল মোকাররমের খতিবকে। বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক সভায় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলেছে ওবায়দুল হক। তার অপসারণ দাবি করা হচ্ছে। বলছে, বায়তুল মোকাররম কোনও দলীয় প্রতিষ্ঠান নয়। এটি জাতীয় মসজিদ, এবাদতের জায়গা। জামাত শিবির দেশের মসজিদগুলোকে নিজেদের গোপন মিটিং আর রাজনৈতিক কাজকারবার চালানোর জন্য ব্যবহার করছে। সরকার গোলাম আযমকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে যেন সরকার বিরোধী আন্দোলন না হয়। মৌলবাদীরা জাতীয় সংসদ সম্পর্কে অবমাননাকর কথা বলেছে। এদের গ্রেফতার করে বিচার করার দাবি জানাচ্ছে ছাত্ররা।

—দাবি তো কতই জানানো হয়। কোন দাবি মানা হবে, কোন দাবি মানা হবে না, তা তো আমরা অনুমানই করতে পারি। এই প্রো-ফান্ডামেন্ডালিস্ট গভরমেন্ট ছাত্রদের মিছিল মিটিংগুলোয় পুলিশ ছেড়ে দিয়ে পণ্ড করে দেবে।

—তা হয়ত দেবে। কিন্তু প্রতিবাদ যে কিছু হচ্ছে এই তো বেশি।

—এই তো বেশি কেন! প্রতিবাদ তো আরও হওয়া উচিত।

—নাহ! কেউ কি আর মাঠে নামতে চাইছে। তসলিমার কারণে এসব হচ্ছে,সুতরাং আমাদের আর দায় কি! এসব তসলিমাই সামলাক। এরকমই তো মনোভাব ছিল সবার। এখন তো সকলে একটা জিনিসই জপছে, মৌলবাদীদের শক্তিটা বেড়েছে তসলিমার কারণে।

—মৌলবাদীরা যে তলে তলে কতটা শক্তিমান হয়েছে, তসলিমার কারণে তা বরং দেখার সুযোগ হল। তা না হলে তো চোখের আড়ালেই থাকত সব। দেশটা মৌলবাদীদের মুঠোর মধ্যে একেবারে চলে গেলেই টনক নড়ত। আগে ভাগেই টনক নড়া তো ভাল, যখন প্রতিরোধের সামান্যও সময় আছে বা সুযোগ আছে।

দেশ নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা হয়। কী হবে দেশের। কী রকম যেন সব পাল্টে গেল। আমরা তিন জনই জানি এবং মানি যে হঠাৎ সবকিছু বড় পাল্টে গেছে। আমরা তিনজনই, মুখে যত আশার কথাই বলি না কেন, মনে মনে ঠিকই জানি যে দীর্ঘশ্বাসের মত দুরাশাও বুকে হেঁটে সরীসৃপের মত আসছে আমাদের দিকে।

অনেকক্ষণ আমরা গভীর রাতের স্তব্ধতাকে সঙ্গী করে স্তব্ধ বসে থাকি। আমাদের মুখের কথা ফুরিয়ে যায় তবু বসে থাকি। আমাদের মনে অনেক কথা থাকে বলেই বসে থাকি।

ঠ আর ঠর স্বামী ঘুমোতে চলে যাবার পরও দেশ নিয়ে আমার দুশ্চিন্তাটি যায় না। দুশ্চিন্তাটি আমাকে কুটকুট করে কামড়াতে থাকে। সারারাত আমাকে দুশ্চিন্তাটি কামড়ায়। সারারাত আমি এক ফোঁটা ঘুমোতে পারি না। না ঘুমোতে ঘুমোতে অনেক আগেই অভ্যেস হয়ে গেছে না ঘুমোনোর।

সকল অধ্যায়

১. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০১
২. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০২
৩. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৩
৪. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৪
৫. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৫
৬. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৬
৭. ২. তাণ্ডব – ০১
৮. ২. তাণ্ডব – ০২
৯. ২. তাণ্ডব – ০৩
১০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০১
১১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০২
১২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৩
১৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৪
১৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৫
১৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৬
১৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৭
১৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৮
১৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৯
১৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১০
২০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১১
২১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১২
২২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৩
২৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৪
২৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৫
২৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৬
২৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৭
২৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৮
২৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৯
২৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২০
৩০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২১
৩১. ৪. দেশান্তর – ১
৩২. ৪. দেশান্তর – ২
৩৩. ৪. দেশান্তর – ৩
৩৪. ৪. দেশান্তর – ৪ (শেষ)
৩৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২২
৩৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৩
৩৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৪
৩৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৫
৩৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৬
৪০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৭
৪১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৮
৪২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৯
৪৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩০
৪৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩১
৪৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩২
৪৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৩
৪৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৪
৪৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৫
৪৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৬
৫০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৭
৫১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৮
৫২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৯
৫৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪০
৫৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪১
৫৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪২
৫৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৩
৫৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৪
৫৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৫
৫৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৬
৬০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৭
৬১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৮
৬২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৯
৬৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫০
৬৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫১
৬৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫২
৬৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৩
৬৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৪
৬৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৫
৬৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৬
৭০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৭
৭১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৮
৭২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৯
৭৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬০
৭৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬১
৭৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬২

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন