৩. অতলে অন্তরীণ – ১৯

তসলিমা নাসরিন

বাইশ জুন, বুধবার

সকাল হয়। পাখির, মানুষের, যানবাহনের শব্দ শুনে বুঝি সকাল। বন্ধ জানালাটির ফাঁকে আটকে থাকা টুকরো টুকরো সাদা আলো দেখে বুঝি যে বাইরে সকাল। শুয়ে থাকতে ভাল লাগে না। বসে থাকি। একটানা বসে থাকতেও আর কতক্ষণ ভাল লাগে! একসময় দাঁড়াই। দাঁড়িয়ে থাকি। কতক্ষণ আর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা যায়। হাঁটি। খুব আস্তে পা ফেলে এক পা দু পা। কিন্তু মনে হতে থাকে পা ফেলার শব্দ খুব জোরে হচ্ছে। নিচতলায় শুনতে পাচ্ছে কেউ। অগত্যা বসে থাকি। সকাল দুপুরের দিকে হেলে পড়ে, আমি হেলে পড়ি মেঝেয়। ঝিমঝিম করে মাথা। শরীর অবশ অবশ লাগে।

যখন ঝ ঢুকলেন ঘরে, তখন বিকেল। ঝ আপিস থেকে ফিরে ফাঁক খুঁজছিলেন এ ঘরে আসার। ছেলে ঘুমিয়ে গেলে, ওদিকে কাজের মানুষগুলো একটু জিরোতে গেলে ঝ তাঁর নিজের ভাতের থালাটি নিয়ে উঠে এলেন এ ঘরে। ঝর ভাগের ভাতে আমার ভাগ বসাতে হয়। যে থালাটি ঢাকনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটির মধ্যে আমার জন্য ভাত তুলে দেন ঝ। তরকারি, মাছ সমান সমান ভাগ করেন। এই অর্ধেকে না হবে আমার, না হবে ঝর। কিন্তু এ ছাড়া আর করার কিছু নেই। এবাড়ির দক্ষ রাঁধুনি যখন পাঁচজনের জন্য রাঁধেন, তখন পাঁচজনের জায়গায় ছ সাতজনও খেতে পারে, কিন্তু বাড়তি খাবার কি করে এ ঘরে পাচার করবেন ঝ! কোনও উপায় নেই। অন্তত ঝ কোনও উপায় দেখছেন না। পাচার করলে জানাজানি হবেই। হলে বাড়ির সকলের সন্দেহ হবে যে ওপরতলায় কোনও প্রাণী নিশ্চয়ই বাস করছে। প্রাণীটি কে, তা জানার জন্য তারা কৌতূহলী হবে। এটি ঝর বাড়ি হলেও, কাজের মানুষগুলো ঝর প্রতিটি আদেশ উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেও ঝ এখন কাউকে বলতে পারছেন না যে এ বাড়িতে তাঁর একজন অতিথি আছে। অতিথির জন্য ঝর এ বাড়িতে যা ইচ্ছে তা করার অধিকার থাকলেও আমার জন্য একটি আলাদা থালায় ভাত বেড়ে আনতে পারেন না তিনি, ঝকে হাত গুটিয়ে রাখতে হয়। হাতের পায়ে পায়ে আশঙ্কা, কেউ জেনে যেতে পারে অতিথির পরিচয় এবং জানিয়ে দিতে পারে আশেপাশের কাউকে। তারপর এক কান থেকে একশ কান। এইসব ঝামেলার চেয়ে ঝ মনে করেন তাঁর নিজের খাবার থেকে আমাকে ভাগ দেওয়াটাই নিরাপদ। ঝর জন্য কষ্ট হয়। আপিস করে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আধপেট খাচ্ছেন। নিজের ভাগে আমি কৌশলে কম খাবার নিতে চেষ্টা করি।

খেয়ে ঝ একটি সিগারেট ধরান। মেঝেতেই আধশোয়া হয়ে সিগারেট ফোঁকেন। গলা চেপে, প্রায় শব্দহীন স্বরে বললেন যে আপিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনি বিশাল এক মিছিল দেখেছেন মোল্লাদের। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, হরতাল যদি করে ফেলতে পারে মোল্লারা তবে সব্বনাশ হয়ে যাবে। এটা এখন বড় একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য। মোল্লারা ডাকলেই যে হরতাল হয় না এ দেশে, তা আমাদের প্রমাণ করতেই হবে।

ঝর হাতে তাঁর তারহীন ফোনটি। তার কণ্ঠস্বর যদি কারও কানে যায়, ভেবে নেবে বুঝি ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। ঝর কাছে সরে এসে ঘরের বাইরে শব্দ না যায়, এমন স্বরে বলি,আপনার কি মনে হয় হরতাল বন্ধ করা সম্ভব হবে?

–এখনও বুঝতে পাচ্ছি না। মোল্লাদের মিছিল তো বিশাল হচ্ছে। ওরা অরগানাইজড। আমাদের গুলোই অরগানাইজড না। এর এটা ভাল লাগে তো ওর ওটা ভাল লাগে না। হাসিনা কি করছে এ সময়? কিচ্ছু না।

ঝ একটি সিগারেট আমার দিকে ছুঁড়ে দেন। সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে একটি টান দিতেই কাশি শুরু হয়। দু হাতে মুখ চেপে কাশি থামাই। সিগারেটটি আমার আঙুল থেকে আলগোছে নিয়ে ঝ সেটি ফুঁকতে থাকেন।

ঝ এখানে বেশি ক্ষণ বসে থাকতে পারেন না। তাঁকে খোঁজা শুরু হলে মুশকিল। তিনি চলে যান। আমি কাতর অনুরোধ করি আজকের পত্রিকাগুলো দিতে। ঘন্টা পার হলে দরজার তল দিয়ে কিছু পত্রিকা ঢুকে যায় এ ঘরে। যেন সারাদিন উপোস থাকার পর এই মাত্র কিছু খাবার জুটেছে, গোগ্রাসে খাবার গেলার মত করে গোগ্রাসে খবর গিলি।

দেশে এখন এটিই সবচেয়ে বড় সংবাদ। হরতাল এবং হরতাল প্রতিরোধ। এমনই অবস্থা এখন যে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি প্রতিরোধ জাতীয় কমিটিকে ঘোষণা দিতে হয়েছে, যে আমরাই কোরআনের পক্ষ শক্তি। ৩০ জুনের হরতালের সপক্ষে স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তিসমূহ পবিত্র কোরআন শরীফকে রক্ষার জন্য হরতাল বলে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভাঁওতাবাজি। কারণ এটা বিশ্বজনীনভাবে স্বীকৃত যে মওদুদী কোরআনের অপব্যাখ্যা করেছে এবং তারই সংগঠন জামাতে ইসলামী কোরআনকে বিকৃত করে অপব্যবহার করে ধর্ম ব্যবসা চালাচ্ছে। এরা আসলে ধর্মের নামে ব্যক্তি স্বার্থ, ব্যবসায়ী স্বার্থ এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়। তাদের এবারের টার্গেট হচ্ছে প্রগতিশীল সংবাদপষেনর কণ্ঠরোধ করা। অতএব ৩০ জুনের হরতালের সপক্ষে তাদের দাবি সর্বৈব মিথ্যা এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল। একাত্তরের হত্যাকারী ভণ্ড মওলানারা কি করে কোরআন ও ইসলাম রক্ষা করতে পারে? বরং এরা কোরআনের কথা বলে মওদুদীবাদকে রক্ষা করার হীন চক্রান্ত করছে। এদেরকেপ্রতিরোধের মাধ্যমেই পবিত্র কোরআনকে রক্ষা করা যাবে এবং এই কমিটি পবিত্র কোরআনকে রক্ষা করার জন্যই এ হরতাল প্রতিরোধের আহবান জানাচ্ছে। প্রকৃত ইসলামের ক্ষতি করার সাধ্য এ ধরনের মওলানা ও স্বার্থা−ন্বষী ধর্ম ব্যবসায়ীদের নেই। সাধারণত হরতাল ডাকা হয় অধিকার আদায়ের জন্য, অথচ ঐ অপশক্তিরা সংবাদপত্রসহ গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের জন্য এই হরতাল ডেকেছে। সভায় সর্বসম্মত অভিমত ব্যক্ত করা হয়, আমরাই কোরআনের পক্ষ শক্তি।

শামসুর রাহমান যে কমিটির সভাপতি, যে কমিটির অনেকে নাস্তিক, অনেকে কোরআন কোনওদিন পড়ে দেখেনি, ছুঁয়ে দেখেনি, সেই কমিটিকে বলতে হয়, দাবি করতে হয়, আমরা কোরআনের পক্ষ শক্তি। এটিই বুঝিয়ে দেয় যে মৌলবাদ বিরোধী শক্তি এখন প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে মৌলবাদীদের বাধা দিতে। এখন যদি কোরআনকে ব্যবহার করলে বাধার কাজটি ভাল হয়, তবে এটিকে ব্যবহার করতেও আপত্তি নেই। এই প্রতিরোধ কমিটি একটি ভুল করছে, আমার মনে হয়। কেবল জামাতে ইসলামীকে মওদুদীবাদী বলে দোষ দিয়ে নিজেদের কোরআনের পক্ষ শক্তি বলে লাভ হবে না কিছু। কারণ জামাতে ইসলামী এই আন্দোলনে কেবল যোগ দিয়েছে, আন্দোলন জামাতে ইসলামী দ্বারা শুরু হয়নি, হরতালের ডাকও জামাত দেয়নি। সুতরাং প্রতিরোধ কমিটি জামাতে ইসলামীকে কোণঠাসা করতে চাইলে অন্য মৌলবাদী শক্তিদের কিছু যায় আসে না। তারা মওদুদীবাদীও নয়, তারা জামাতের নয়, কিন্তুু তাদের শক্তি অনেক বড়, জামাতকে সঙ্গে না নিলেও তাদের চলবে। আসলে জামাতে ইসলামীকে ওরা সঙ্গে নেয়নি। জামাতই গিয়ে ভিড়েছে বড় মৌলবাদী আন্দোলনে।

নতুন এক নিয়ম শুরু হয়েছে। মত বিনিময় সভা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মতবিনিময় সভা করবে পরশুদিন।

এদিকে মোর্চার বক্তারা যে কোনও ত্যাগের বিনিময়ে আগামী ৩০ জুন আহূত হরতাল সফল করে তোলার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন। আগামী ৩০ জুনের হরতাল জাতিকে সুস্পষ্ট দুটি ভাগে ভাগ করেছে। ঐদিন প্রমাণ হবে কারা কোরআন হাদিসের পক্ষে, এবং কোন দল বিপক্ষে। তসলিমা, আহমদ শরীফের দালালরা হরতাল প্রতিহত করার ডাক দিয়েছে। তাদের সেই স্বপ্ন কোনওদিন বাস্তবায়িত হবে না।

খেলাফত মজলিস, প্রতিরোধ আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, তাহাফফুজে হারমাইন, ঈমান বাঁচাও দেশ বাঁচাও, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, জমিয়াতুস সাহাবা, মসজিদ পরিষদ বাংলাদেশ, ঢাকা সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র, পোস্তগোলা ট্রাক মালিক সমিতি, ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, অপসংস্কৃতি প্রতিরোধ কমাণ্ড, অনুপম সাহিত্য সংসদ এরকম কয়েক হাজার ইসলামপন্থীদের সংগঠন সভা সমাবেশ করে হরতালের পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছে। জামাতে ইসলামী পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। অন্য কোনও বছর আশুরা কোনও ঘটনা নয়, এ বছর একটি ঘটনা বটে। মতিউর রহমান নিজামী এই অনুষ্ঠানে এজিদের বিরুদ্ধে ইমাম হোসেনের আপোসহীন সংগ্রামের ইতিহাস বর্ণনা করেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের পর ইসলামের নেতৃত্ব নির্বাচনের মৌলিক পদ্ধতিকে বিকৃত করে রাজতন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল। ইসলামী জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আস্থা ও সমর্থনই হল ইসলামে নেতা নির্বাচনের স্বীকৃত পদ্ধতি। নবী করিম ওরফে হযরত মোহাম্মদ ওরফে আল্লাহর পেয়ারা বান্দা ওরফে আললাহর রসুলের পর চার জন খলিফা একই সঙ্গে মসজিদের ইমামতি ও রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা দান করেছেন। নিজামী সেই খলিফার আমলের সুন্দর ব্যবস্থার কথা স্মরণ করেন এবং তেমন ব্যবস্থা এখন এ দেশে চান সৃষ্টি করতে। নিজামী বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য হয়ে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কী অবলীলায় বলে গেলেন, বর্তমানে যেসব মুসলিম দেশে শরিয়তি আইন কানুন চালু রয়েছে সেগুলোকে ইসলামী রাষ্ট্র বলা যায় না কারণ সেখানে ইসলামী পদ্ধতিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থা নেই। তিনি কোনও রাজতন্ত্র চান না, গণতন্ত্র চান না, তিনি সত্যিকার ইসলামতন্ত্র চান এ দেশে। তসলিমা এবং ধর্মদ্রোহী মুরতাদদের সম্পর্কে বললেন, কারবালার শহীদদের মত আপোসহীনভাবে জীবনপণ সংগ্রাম চালাতে পারলে আমাদের বিজয় সূর্যের মত নিশ্চিত। নাফরমানের জীবন যাপনের চেয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রামরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ অধিকতর শ্রেয়। নিজামী তো বলেছেনই, বাকি নেতারাও জেহাদে মৃত্যুবরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। মহররমের মাস। ইমাম হোসেন মুহম্মদের মেয়ের ঘরের নাতি কারবালায় এজিদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে প্রাণ দিয়েছেন। তাই আজ সেই উদাহরণ টেনে এনে জামাতে ইসলামীর নেতারা বলছেন, ইমাম হোসেনের শাহাদাত অন্যায়ের বিরুদ্ধে জীবন্ত প্রতিবাদ হিসেবে সর্বকালব্যাপী প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। সত্য থেকে বিচ্যুত না হয়ে শাহাদাত বরণ করা শ্রেয়, আজকের দিনে এই শিক্ষার বড় প্রয়োজন। ১৪শ বছর আগে ইমাম হোসেন যে আদর্শের জন্য জালিমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জীবন দান করেছিলেন আজ সেই আদর্শ ইসলাম, আল কুরআন ও আল্লাহকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে, আল্লাহর দরবারে শাহাদাতের নজরানা পেশ করতে পারলে বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।

কী ভয়ংকর আহবান। নেতারা শাগরেদদের বলেই দিলেন, প্রয়োজনে মৃত্যু হোক তোমাদের, এই মৃত্যু পবিত্র, এই মৃত্যু হলে শহীদ হবে, এই মৃত্যু বেহেস্ত নিশ্চিত করবে। নেতারা আসলেই কয়েকটি মৃত্যু কামনা করছেন। মৃত্যু হলে এদেশীয় ঢংএর রাজনীতি শুরু করতে পারবেন তাঁরা। হরতালকারী এবং হরতালপ্রতিরোধকারীর মধ্যে কোনও সংঘর্ষে যদি হরতালকারীদের কেউ নিহত হয়, তবে মহানন্দে হরতালকারীরা লাশের রাজনীতি শুরু করবে। লাশ দেখলে আবেগ উথলে ওঠে জনতার, ইসলাম যে সত্যিই খুন হচ্ছে, তা অনুভব করে সাধারণের ধর্মীয় অনুভূতি শত গুণ বৃদ্ধি পাবে, সরকার বিপাকে পড়ে শেষ পর্যন্ত ব্লাসফেমি আইন চালু করতে বাধ্য হবে, সরকারের মধ্যে যে মৌলবাদী একটি দল আছে, সেই দলটিই চাপ দিয়ে আইনটি করাবে। এর মধ্যে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে হরতাল নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এক দল হরতালের পক্ষে, আরেকদল বিপক্ষে। পক্ষের দলটি শক্তিশালী।

জামাতে ইসলামীর পত্রিকায় সাম্প্রতিক কলামে মখফির লিখেছেন, ‘রাজধানীর রাজপথ থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত এখন এক কথা, দেশের সীমান্ত মুছে ফেলার দাবিদার মুরতাদ তসলিমা ও তার সহগামী দালালদের বিচার করো। স্বাধীনতার মেকী দরদী সেজে যারা দেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যারা অন্নদাশংকরের কবিতা ছেপে শিশু কিশোরদের বাংলাদেশের বর্তমান সীমানা তুলে দেবার পরোক্ষ উস্কানি দেয়, যেসব পত্রিকা বিদেশী এনজিওর অর্থ খেয়ে তাদের দালালি করে এবং কুরআনের আয়াত নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে ও মহানবীর (সঃ) কুৎসা রচনাকারী মুরতাদ বিরোধী গণআন্দোলন ও প্রতিবাদ দিবসকে বানচাল করতে চায়, তাদের স্বরূপ দেশের কোটি কোটি তওহিদী জনতার কাছে এবার নগ্ন ভাবে ধরা পড়েছে। ধরা পড়েছে জরায়ুর স্বাধীনতাকামিনী মুরতাদ তসলিমার সমর্থক এ দেশে কারা? যারা এখানকার মানুষের ধর্মীয় পরিচয়, জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও শিক্ষা সংস্কৃতিকে সুকৌশলে ধ্বংস করে বাংলাদেশের মুসলিম জাতিসত্ত্বাকে ব্রাহ্মণ্য সমাজ সংস্কৃতিতে বিলীন করে দিতে চায়, তারা এখন আত্মপরিচিত। চিহ্নিত তাদের প্রচার বাহনগুলো।

দেশের স্বাধীনতা ও জাতির কলঙ্ক এসব ধর্মদ্রোহী গাদ্দার শ্রেণীর আসল চেহারা ধরা পড়েছে ফতোয়াবাজ আখ্যা দিয়ে পাইকারি ভাবে ধর্মের প্রকৃত সেবক দেশের আলেম সমাজের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার দ্বারা। এ যাবত তারা সমাজে বিশেষ সম্মানিত কয়েকজন ইসলামী ব্যক্তিত্বের ও কোনও কোনও ইসলামী সংগঠন ও তার নেতাদের বিরুদ্ধেই নানা মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। তাদের চরম মিথ্যা আশ্রিত প্রচারণার ধরন দেখেই মনে হয়েছিল যে, আসলে লক্ষ্য বিশেষ কোনও ইসলামী সংগঠন, ব্যক্তিত্ব নয় বরং ইসলামকে এ দেশ থেকে উৎখাত করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।

স্বাধীনতা ও ধর্মদ্রোহী এ মহলটি ইসলাম বিরোধী এনজিওর অর্থে প্রকাশিত কয়টি পত্রিকা হাতে পেয়েই তাদের মূল পরিকল্পনার দিকে অগ্রসর হয়। অর্থাৎ ইসলামের মূল প্রচারক, সেবক, আলেম, ওলামাকে সমাজে হেয় করার কাজ শুরু করে। ওলামা মাশায়েখকে তারা সমাজের উন্নতি অগ্রগতির দুশমন রূপে চিহ্নিত করার জন্য মিথ্যা প্রচারণা চালায়। তাদের চরিত্র হনন করে বিভিন্ন প্রচার মিডিয়ায় কর্মরত নিজেদের সঙ্গীদের দিয়ে তারা আলেম সমাজের জন্যে অপমানকর কাহিনী তৈরি করে। বিশেষ করে টিভি নাটকের খল চরিষেন অভিনয়কারীদেরকে অধিকাংশ ক্ষেষেন ওলামা মাশায়েখের পোশাক আশাক, টুপি, জামা, রুমাল, তসবিহ পরিয়ে দর্শক চিত্তে তাদের ভাব মর্যাদাকে ধ্বংস করার অভিযানে লিপ্ত হয়। তারা জানে না, এ পথ কত ভয়াবহ। তাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, নানা কারণে সমাজের ওলামা একেরাম এ দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক ও সক্রিয়ভাবে অংশ না নিলেও তারা এই উপমহাদেশের ইতিহাস ও রাজনীতিতে আগাগোড়া বিরাট ভূমিকা পালন করে আসছে। হিমালিয়ান উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ঔপনিবেশিক বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে কারা অস্ত্র হাতে নিয়েছিল? ১৮৫৭ সালেও সিপাহী বিপ্লবের সূচনা কারা করেছিল? মূলত আজ বাংলাদেশে যে সমস্ত ওলামা এখানকার কুখ্যাত মুরতাদ ও নবী বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে জানের বাজি রেখে আন্দোলনে নেমেছেন, তারা প্রকৃত পক্ষে আমাদের সে সকল সংগ্রামী বীর মুজাহিদদেরই উত্তরসূরী। সাইয়েদ আহমেদ শহীদ, মুজাদ্দিদে আলফেসানী, হযরত শাহ জালাল, হাজী শরিয়তুল্লাহ ও শহীদ হাজী নেসার আলী তিতুমীর প্রমুখ আমাদের মুক্তি সংগ্রাম ও ইসলামী আন্দোলনের পূর্বসুরীরা হিন্দু এবং একশ্রেণীর সুবিধাভোগী মুসলমানের ন্যায় ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে নিজেদের আখের গুছাতে পারতেন, কিন্তু গোছাননি।

এ সকল সংগ্রামী পূর্বসূরীদের উত্তরাধিকারী ওলামা মাশায়েখ এবং দেশের কোটি কোটি তওহিদী জনতাই আজ ইসলামের জন্য রাস্তায় নেমেছেন। জনতার এই আবেগ বিবেচনাবোধ ও পদক্ষেপকে ক্ষমতাসীন সরকারের আর অবহেলা করা উচিত নয়। অতি সত্বর তাদের দাবি মেনে নেয়া, অপরাধীদের শাস্তিদান এবং দেশে ব্লাসফেমি আইন চালু করা সরকারের কর্তব্য। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম সীমান্ত রক্ষা করা যেমন সরকারের জন্য ফরয, তেমনি ফরয জাতির ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সত্তাকে রক্ষা করা, যা দেশ ও জাতীয় অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য।

একটি ধর্মবিদ্বেষী গোষ্ঠী ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকে মিশন হিসেবে নিয়েছে। অপসংস্কৃতির ধারক বাহকরা মুরতাদ তসলিমা-শরীফ গংদের পক্ষ নিয়েছে।

৩০ জুন হরতাল বিরোধীদের যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে। –এসব কথা ইসলামী ছাত্র শিবিরের ৩ দিন ব্যাপী কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক শিবিরে বলা হয়েছে। জামাতে ইসলামীর সন্ত্রাসী সংগঠন এই শিবির ঠাণ্ডা মাথায় মানুষের গলা কেটে নিতে, হাত পায়ের রগ কেটে ফেলতে অভ্যস্ত। শিবিরের লোক যখন কোনও কাজে নামে, তখন কাজ তারা করে ছাড়ে যে করেই হোক।

আবছা আলোয় পড়ছিলাম। পত্রিকা থেকে চোখ তুলে দেখি অন্ধকার ঘর। ঘরে কোনও আলো নেই। বাইরে অনেকক্ষণ সন্ধে নেমে এসেছে। চোখ টন টন করে। পত্রিকাগুলো সরিয়ে রেখে অন্ধকারের কোলে মাথা রেখে বসে থাকি। সারারাত। সারারাত আমার পাশে বড় বড় চোখ করে আমাকে ভয় দেখাতে থাকে গোলাম আযম।

সকল অধ্যায়

১. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০১
২. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০২
৩. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৩
৪. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৪
৫. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৫
৬. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৬
৭. ২. তাণ্ডব – ০১
৮. ২. তাণ্ডব – ০২
৯. ২. তাণ্ডব – ০৩
১০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০১
১১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০২
১২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৩
১৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৪
১৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৫
১৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৬
১৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৭
১৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৮
১৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৯
১৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১০
২০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১১
২১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১২
২২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৩
২৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৪
২৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৫
২৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৬
২৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৭
২৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৮
২৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৯
২৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২০
৩০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২১
৩১. ৪. দেশান্তর – ১
৩২. ৪. দেশান্তর – ২
৩৩. ৪. দেশান্তর – ৩
৩৪. ৪. দেশান্তর – ৪ (শেষ)
৩৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২২
৩৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৩
৩৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৪
৩৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৫
৩৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৬
৪০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৭
৪১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৮
৪২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৯
৪৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩০
৪৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩১
৪৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩২
৪৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৩
৪৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৪
৪৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৫
৪৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৬
৫০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৭
৫১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৮
৫২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৯
৫৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪০
৫৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪১
৫৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪২
৫৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৩
৫৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৪
৫৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৫
৫৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৬
৬০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৭
৬১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৮
৬২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৯
৬৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫০
৬৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫১
৬৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫২
৬৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৩
৬৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৪
৬৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৫
৬৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৬
৭০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৭
৭১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৮
৭২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৯
৭৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬০
৭৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬১
৭৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬২

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন