৩. অতলে অন্তরীণ – ০১

তসলিমা নাসরিন

চার, জুন। শনিবার

ফোন এল। একটি কণ্ঠস্বর। কণ্ঠস্বরটি অচেনা।

–আপনার নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট হয়েছে। আপনি বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে।

–আপনি কে বলছেন?

–আমাকে আপনি চিনবেন না।

–নাম বলেন।

–আমার নাম শহিদ। আমি আপনার শুভাকাঙ্খী। আপনার বাড়িতে পুলিশ যাচ্ছে, আপনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। দেরি করবেন না।

কি কারণে হুলিয়া জারি এসবের কিছুই না বলে ফোন রেখে দিল লোকটি। শহিদ নামের কোনও লোকের সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। ভাবি, কী কারণ থাকতে পারে এই ফোনের! লোকটি যে ই হোক, লোকটি চাইছে আমি যেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। কোনও ষড়যন্ত্র এর পেছনে লুকিয়ে আছে নিশ্চয়ই। ভাবতে ভাবতে আমি বারান্দা থেকে উঁকি দিয়ে দেখতে থাকি সামনের রাস্তায় কোথাও কেউ সন্দেহজনক দাঁড়িয়ে আছে কি না। সম্ভবত আশে পাশের কোথাও থেকে লোকটি ফোনটি করেছে, আমি বেরিয়ে গেলে সে তার দলের লোক নিয়ে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। কৌশলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে আমাকে মেরে ফেলার ফন্দি এঁটেছে লোক। বাইরে বেরোবার দরজা দুটো একবার দেখে নিই খিল আঁটা আছে কি না। কদিন আগে একটি ফোন এসেছিল এরকম, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সোজা বলল, আপনার বাড়িতে পুলিশ আসছে। কেন পুলিশ আসছে, কি করতে আসছে কিছুই জানায়নি সেই সাংবাদিক। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় বসে ছিলাম। কিছুক্ষণ বাদে যাদুকর জুয়েল আইচ ফোন করলে পুলিশ আসছে এই খবরটি দিই। জুয়েল আইচ তক্ষুনি ভীত উত্তেজিত স্বরে বললেন, তসলিমা আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে।

–কোথায় যাবো এ সময়?

–কোথাও কারও বাড়িতে চলে যান। আপনি বুঝতে পাচ্ছেন না, কি ভয়ংকর কাণ্ড যে হয়ে যেতে পারে। পুলিশের ওপর কোনও বিশ্বাস নেই।

–এ সময়ে কার বাড়িতে যাবো! রাত হয়ে গেছে..। মিনমিন করি।

–রাত হয়েছে তাতে কি! আশে পাশের ফ্ল্যাটে কোথাও চলে যান।

–কাউকে তো চিনি না।

–আমার এক চেনা লোক আছে দু নম্বর বিল্ডিংএ। আমি তাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি। আপাতত তার বাড়িতে চলে যান।

–কিন্তু গিয়েই বা কি লাভ। ফিরে তো আসতেই হবে নিজের বাড়িতে। কারও বাড়িতে লুকিয়ে থেকে কি আর অ্যারেস্ট এড়ানো যাবে। পুলিশ আজ না হোক কাল আমাকে খুঁজে পাবেই। তার চেয়ে যেখানে আছি সেখানেই থাকা ভাল।

জুয়েল আইচ আরও কয়েকবার আমাকে বাড়ি ছাড়ার জন্য অনুরোধ করে ফোন রাখলেন দু নম্বরের চেনা লোককে ফোন করতে। আমি যাইনি বাড়ি ছেড়ে। পুলিশও আসেনি আমার বাড়িতে।

এ ধরনের কোনও ফোনের খবরকে বিশ্বাস করার কোনও মানে হয় না। এটি নেহাত ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। ফোনে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়, গলা কেটে রাস্তায় ফেলে রাখবে, মুণ্ডু উড়িয়ে দেবে, কিন্তু বলাই সার, হাতে নাতে আততায়ীরা আমাকে কখনও পায়নি। এবার বোধহয় এই ফন্দিই এঁটেছে, পুলিশ আসছে বলে ভয় দেখিয়ে বাড়ির বার করবে, আর সঙ্গে সঙ্গেই খপ করে ধরে ফেলে গলাটি আল্লাহু আকবর বলে কেটে সওয়াব কামাবে। চলে যাই আমার লেখার ঘরে, যে লেখাটি লিখছিলাম লিখতে থাকি। এরপর আধঘন্টা পর আবার ফোন। এবারের লোকটিও অচেনা। এবারের লোকটিও বলল, আমাকে আপনি চিনবেন না।

কে আপনি? নাম কি?

বললাম তো, আমাকে আপনি চিনবেন না। আমি কোর্ট থেকে বলছি। এডভোকেট শাহাদাত। আপনার বিরুদ্ধে গভরমেন্ট কেইস করেছে। অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে গেছে। আপনি বাড়ি থেকে আপাতত কোথাও চলে যান।

এই ফোনটি আমাকে ভাবালো। দুটি ভিন্ন লোক দুটি ভিন্ন জায়গা থেকে বলছে যে আমার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়েছে। তবে কি সত্যিই হুলিয়া জারি হয়েছে? তাই বা হবে কেন! মৌলবাদীদের মিছিল বেরোলে সরকার থেকে আমাকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে, যদিও গোয়েন্দা পুলিশ আছেই পেছনে, কিন্তু বাড়ির সামনে তো কিছু পুলিশ অন্তত দাঁড় করানো হয় যখন মিছিল যায় আমার ফাঁসি চেয়ে! এই সরকার কেন আমার বিরুদ্ধে মামলা করবে? মামলা যদি করে কেউ, সে তো মৌলবাদীর দল। দ্বিতীয় লোকটি যখন কথা বলছিল ফোনে, প্রচুর লোকের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছিল। হতে পারে লোকটি যা বলছে, ঠিকই বলছে যে সে কোর্ট থেকে কথা বলছে। লোকটি যদি সত্যিই উকিল হয়ে থাকে, তবে তার পক্ষে হুলিয়ার খবরটি জানা কঠিন নয় মোটেও। কিন্তু তারপরও আমার বিশ্বাস হতে চায় না যে সরকার আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো আমাকে নিরাপত্তা দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে নিরবধি বলে যাচ্ছে। ফতোয়ার খবরটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। এখন সরকার আমাকে নিরাপত্তা না দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করবে! আমি ধন্দে পড়ি। কিছুই ঠিকমত আমার মাথায় ঢুকছে না। অংকে মিলছে না কিছুই। নিচে এখন দুরকম পুলিশ বসে, গত একমাস থেকে পাহারা পুলিশ বসছে ইস্টার্নের গেইটের সামনে আর সাদা পোশাকের গোয়েন্দাগুলো তো হাঁটাহাঁটি করছেই বাড়ির চারপাশে। আবার আমি বারান্দা থেকে উঁকি দিই ভিড়ের রাস্তায়, কোথায় কিসের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে আততায়ী, খুঁজি। কোনও লোক তাকাচ্ছে কি না ঘন ঘন এই বাড়িটির দিকে, দেখি। রাস্তা থেকে চোখদুটো সরাতে নিলেই চোখ পড়ে রাস্তার ওপারের তিনতলা একটি বাড়ির বারান্দায় দুটো লোকের দিকে, আমাকে দেখছে লোক দুটো, দেখছে আর নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। আগে কখনও লোকদুটোকে দেখিনি ও বাড়িতে! ফোনের ওপারের লোকদুটোর সঙ্গে কি বারান্দার এই দুটো লোকের কোনও সম্পর্ক আছে! আছে হয়তো। আমাকে কৌশলে বারান্দায় বের করে চাইছে গুলি করতে! খুব সহজে ওই বারান্দা থেকে আমার দিকে তাক করে গুলি ছোঁড়া যায়! চকিতে একটি ঠাণ্ডা কিছু বুকের ভেতর উথলে ওঠে। দ্রুত সরে আসি বারান্দা থেকে। পর্দা টেনে দিই। কত রকমের আধুনিক অস্ত্র যে এখন মানুষের হাতে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ধনী দেশ থেকে এখানে অর্থ আর অস্ত্র প্রচুর পরিমাণে আসছে। আততায়ীর অভাব হওয়ার তো কথা নয়।

এ মুহূর্তে ঠিক কি করা উচিত আমার বুঝে পাই না। পায়চারি করি। শেষ পর্যন্ত ফোন করি ডক্টর কামাল হোসেনের আপিসে। ফোন ধরলেন সারা হোসেন। সারাকে বললাম, দুটো লোক কিছুক্ষণ আগে ফোনে আমাকে জানিয়েছে যে আমাকে অ্যারেস্ট করার জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। কি অদ্ভুত ব্যাপার, তা কেন হবে!

তাই তো! সারাও বললেন, তা তো হওয়ার কথা নয়। এরকম কিছু তো সারাদিন শুনিনি। দেখি আমি খবর নিচ্ছি। কিছু খবর জানতে পারলে আপনাকে জানাবো। সারা নিজে দায়িত্বটি নিয়ে আমাকে নির্ভার করেন।

আমাকে আধঘন্টা পর ফোন করে জানালেন সারা যে তিনি আদালতে লোক পাঠিয়ে জেনেছেন খবরটি সত্য। মতিঝিল থানা থেকে নূরুল আলম নামের এক পুলিশ অফিসার মামলা করেছে আমার বিরুদ্ধে। আমাকে গ্রেফতার করার জন্য হুলিয়া জারি হয়েছে।

মাথা চরকির মত ঘুরে ওঠে। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না কি করব। যে কোনও মুহূর্তে পুলিশ ঢুকবে ঘরে, হাতদুটোতে হাতকড়া পরাবে, কোমরে হয়ত রশিও বাঁধবে, টেনে নিয়ে যাবে নিচে, ঘাড় ধাককা দিয়ে পুলিশের ভ্যানে ওঠাবে।

–কী অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে?

— আপনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন।

–এখন কী করা উচিত? সারাকে নিস্তেজ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করি।

সারা শান্ত গলায় বললেন, জামিন নিতে হবে। অন্যান্য উকিলের সঙ্গে কথা বলে জামিনের ব্যাপারটা দেখছি।

খানিকটা স্বস্তি জোটে। জামিন নেওয়ার পর মামলার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কামাল হোসেনের মত উকিল থাকতে আমার মুষড়ে পড়ার কিছু নেই। কিছু নেই কিন্তু তারপরও একটি সংশয় আমার ভেতর থেকে যায় না। পুলিশ যদি আমাকে সত্যি সত্যিই গ্রেফতার করে নিয়ে যায়! আজকাল আদালতের বিচারকদের মধ্যেও মৌলবাদী থাকে, পুলিশের মধ্যেও নিশ্চয়ই মৌলবাদী আছে। আমাকে তো হাজতেই পিষে মেরে ফেলবে। সংশয়টি মাকড়শার জালের মত আমাকে আটকে ফেলে।

নানি আর ঝুনু খালা বেড়াতে এসেছেন, মা ওঁদের জন্য রান্না করছেন। মিলন আর ইয়াসমিনের দিকে ছুঁড়ে দিই হুলিয়া জারি হওয়ার খবরটি। ওরা তেমন গা করে না। অনেকদিন থেকেই অদ্ভুত অদ্ভুত সব খবর শুনতে শুনতে ওরা অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। হুলিয়া ব্যাপারটি যে ঠিক কি, তা সম্ভবত ওরাও অনুমান করতে পারে না। দুজনের কারও মুখে কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করি না। ওরা, যে কোনও খবরের মত খবরটি শুনে যে যার কাজে চলে যায়। ইয়াসমিন ভালবাসাকে ঘুম পাড়াতে, মিলন গোসল করতে।

মা, আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হইছে। পুলিশ আইতাছে। শেষ পর্যন্ত মাকে বলি।

মা বলেন, কি কস এইসব আজে বাজে কথা!

–আজে বাজে না। ঠিকই কইতাছি।

–পুলিশ আইব কেন? কি করছস তুই?

–জানি না কি করছি। সরকার নাকি মামলা করছে। মতিঝিলের কোন এক পুলিশ অফিসার নাকি কইছে যে আমি তার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিছি।

–তরে কত কইছি আল্লাহ রসুল নিয়া কিছু লেখিস না। আমার কথা ত শুনছ না।

মাও সম্ভবত বিশ্বাস করছেন না যে সত্যি সত্যিই পুলিশ আসছে আমাকে গ্রেফতার করতে। এর আগে বাঘ আসছে বাঘ আসছের মত পুলিশ আসছে তিনি শুনেছেন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে পুলিশ আসেনি। কিন্তু সত্যি সত্যিই যখন পুলিশ আসছে, তখন বিশ্বাস করতে কেউ চায় না। অসহায় রাখালের মত নিজেকে লাগে। এবারের পুলিশ আসছে রবটি যে কোনও গুজব নয় তা কি করে কাকে বোঝাবো!

নানি এই প্রথম এসেছেন আমার বাড়িতে। বাড়ি কেনার পর মাকে বলেছিলাম যেন একবার নানিকে নিয়ে আসেন ঢাকায়। নানি তাঁর ময়মনসিংহের বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে চান না। তাকেঁ এ পর্যন্ত নিয়ে আসা ঝুনুখালার দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফল। নানির সঙ্গে বসে খাবো আমি, মা খাবার দিচ্ছেন টেবিলে। খেয়ে দেয়ে পানের বাটা খুলে নানির হাতের বানানো একটি পান খাবো, পাশাপাশি শুয়ে গল্প করব, কত দিন পর আমাদের দেখা! নানি বারবারই বলছেন, নাসরিন, আমার কাছে আইসা ব একটু, ক কেমন আছস। খবর টবর ক।

মাথায় আমার হুলিয়া, স্থির হয়ে কি করে বসব আমি!

মা ডাকছেন খেতে। ক্ষিধে উবে গেছে অনেকক্ষণ। অস্থিরতা আমাকে ফোনের কাছে টেনে নেয়। একটি ফোন করি চেনা একজন আইনজীবীকে, সেই একজনের নাম ধরা যাক ক। ককে জানালাম বৃত্তান্ত। ক সব শুনে আমাকে বললেন, এক্ষুনি বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে।

–কোথায় যাবো আমি? কিছু তো বুঝে পাচ্ছি না..

–কোনও আত্মীয় বা বন্ধুর বাড়িতে চলে যান।

–কিন্তু..

–কিন্তু কি? –পালাবো কেন! বাড়িতে থাকাই তো ভাল।

–উফ আপনি বুঝতে পারছেন না। আপাতত আমার বাড়িতে চলে আসুন। এখানে বসে ঠিক করেন কোথায় যাবেন।

–এখনও তো পুলিশ পাহারা আছে। পুলিশ একদিকে আমাকে যদি নিরাপত্তা দেয়, তবে আবার গ্রেফতার করবে কেন?

–কি মুশকিল! পুলিশ যদি আমাকে গ্রেফতার করতে চায়, তবে তো কোনও বাড়িতে গিয়েও কোনও লাভ হবে না। খুঁজে তো আমাকে পাবেই।

–এসব ভেবে সময় নষ্ট করবেন না তো। বাড়ি থেকে বেরোন তাড়াতাড়ি।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপদেশটি আমার পছন্দ হয়নি। কিন্তু এ সময় নিজের বুদ্ধিতে কিছু করার চেয়ে আইন অভিজ্ঞ মানুষের উপদেশই পালন করা উচিত, পছন্দ না হলেও। মিলন গোসল সেরে বেরোতেই মিলনকে বাইরে যাওয়ার জন্য দ্রুত তৈরি হতে বললাম।

–কই যাইবেন?

–তাড়াতাড়ি চল। কথা কওয়ার সময় নাই।

মিলন লুঙ্গি পাল্টে প্যান্ট পরে নিল। আমি যে কাপড়ে ছিলাম, সেটি পরেই।

মার মুখ মুহূর্তে পাল্টে গেল যখন দেখছেন আমি দরজার দিকে এগোচ্ছি।

কই যাইতাছস? কখন ফিরবি? মার কাঁপা কণ্ঠ।

জানি না। বলে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকি নিচে।

পেছনে দরজায় হতভম্ব দাঁড়িয়ে আছেন মা, নানি, ঝুনুখালা, ইয়াসমিন।

দৌড়ে গাড়িতে উঠি। মিলনও। সাহাবুদ্দিনকে দ্রুত পার হতে বলি ইস্টার্ন পয়েন্ট। যেন বাইরে থেকে গাড়ির ভেতরে বসা আমার চেহারাটি কারও দেখার সুযোগ না হয়, যেন আমাকে চিনে ওঠার আগেই আমার গাড়ি দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যায়। যেন কারও সময় এবং সুযোগ না হয় গাড়িটি থামানোর। গেটের কাছে পাহারার দুটো পুলিশ বসে আছে। সাহাবুদ্দিন কখনও গাড়ি দ্রুত চালান না। সাহাবুদ্দিন তো বটেই আমিও পছন্দ করি ধীর গতিতে গাড়ি চালানো। আজ আমার তাড়া দেখে তিনি ঝড়ের বেগে চালালেন। ক তাঁর বাড়িতে বসে ছিলেন আমার অপেক্ষায়। গাড়িটি যদি পুলিশের চোখে পড়ে তাহলে জেনে যাবে যে আমি এখানে। সুতরাং বাড়ির সামনে থেকে গাড়িকে বিদেয় করতে হবে। ব্যাপারটি আমার মাথায় আসেনি, এসেছে কর মাথায়। ক-ই মিলনকে বললেন চলে যেতে। পই পই করে বলে দিলেন,কাউকে যেন সে না জানায় আমি কোথায়, কার বাড়িতে ইত্যাদি কোনও কিছু। ক ইতিমধ্যে তাঁর কজন আইনজীবী বন্ধুকে ফোন করে জেনেছেন এ সম্পর্কে। দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারাটি, দেড়শ বছর আগের পুরোনো আইন, ব্রিটিশের তৈরি, এই প্রথম কারো বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হল। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে যদি কেউ আঘাত করে, তবে এর শাস্তি দু বছরের কারাদণ্ড আর জরিমানা। কিন্তু সবচেয়ে বাজে ব্যাপারটি হল, এই মামলায় জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।

তার মানে কি? জামিন হবে না?

ক মাথা নাড়েন। হবে না।

এ কোনও কথা হল? সবারই তো শুনি জামিন হয়।

হ্যাঁ হয়। খুনীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও তো জামিন হয়।

খুনীদের হয়! তবে আমার জামিন হবে না কেন?

ক হেসে মাথা নাড়তে নাড়তে বলেন, আপনাকে হয়ত খুনী বদমাশের চেয়েও ভয়ংকর কিছু ভাবছে সরকার।

পুলিশ অফিসার মামলা করেছে, এই মামলা ব্যক্তির না হয়ে সরকারের হবে কেন? কর কাছে জানতে চাই।

ক বলেন, পুলিশ অফিসার যখন মামলা করেন, তবে তা সরকারি মামলাই।

আরেকটি অদ্ভুত নিয়ম, সরকারি অনুমোদন ছাড়া এ মামলা কেউ করতে পারে না। তার মানে আমি যদি এই আইনে শায়খুল হাদীসকে ফাঁসাতে চাই, বলি যে শায়খুল হাদীস আমার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে, হবে না। সরকারের অনুমোদন লাগবে। প্রধানমন্ত্রী অথবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সই চাই। সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনও আদালতই এই মামলা নেবে না।

কর মা খ ঢোকেন আমাদের আলোচনায়। ক তাঁর মাকে আগেই জানিয়েছেন ঘটনা।

খ বললেন, এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে জামিনের জন্য চেষ্টা করা।

আমি বলি, কিন্তু জামিন নাকি হবে না!

খ বলেন, খুব বিদঘুটে ব্যাপার। কিন্তু অন্য কোনও উপায় তো নেই। তোমার উকিল এসব ব্যাপারে জানবেন ভাল। তাঁরা হয়ত কোনও ফাঁক ফোকর পেতে পারেন।

নাকি পুলিশের কাছে ধরা দেব? আমি জিজ্ঞেস করি।

ক বলেন, ধরা দেওয়া ঠিক হবে না। ধর্মীয় অনুভূতির ব্যাপার, পুলিশের মধ্যেই মৌলবাদী থাকতে পারে।

খ ও এই ব্যাপারে এক মত। তিনি বললেন, তোমাকে গ্রেফতার করার জন্য মৌলবাদীরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে। তুমি গ্রেফতার হলে তাদের জয় হবে। সরকারকে চাপ দিয়ে তারা এই মামলা পর্যন্ত করিয়ে নিতে পেরেছে। চাপ দিয়ে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থাও করতে পারে।

ক গম্ভীর গলায় বললেন, সময়টা বড় খারাপ তসলিমা। খুব ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হুট করে কিছু করা চলবে না। জামিন না হওয়া পর্যন্ত আপনি কোথাও লুকিয়ে থাকুন, কোনও নিরাপদ জায়গায়।

কিন্তু কোথায় লুকোবো?

এ বাড়িতে আপনি লুকিয়ে থাকতে পারতেন, কিন্তু..

খ বললেন, এ বাড়িতে সম্ভব নয়। ওর গাড়ি ওকে নামিয়ে দিয়ে গেছে এ বাড়িতে। ওর গাড়ি তো এমনিতেই পুলিশ ফলো করে। তাছাড়া অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট পেয়ে পুলিশ এখন ওর নিজের বাড়িতে ওকে না পেয়ে যে সব বাড়িতে ওর যাতায়াত ছিল সেসব বাড়িতে ওকে খুঁজতে যাবে, এবাড়িতেও আসতে পারে।

এত কথা আমার মাথায় আসেনি। ক এবং খ দুজনে নিজেদের মধ্যে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে এ বাড়ি থেকে যত শীঘ্র সম্ভব চলে যেতে হবে। কিন্তু কোন বাড়িতে আমি লুকোতে যাবো! কারও বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে থাকার ব্যাপারটি আমার কাছে বিচ্ছিজ্ঞর লাগছে। কিন্তু ক এবং খর কাছে লুকিয়ে থাকার বিষয়টি যেন বিষয়ই নয়। বাড়ি নিয়ে ভাবনার দায়িত্ব ক এবং খ নিলেন।

রাত নামার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। রাত ঘন না হলে রাস্তায় বেরোনো যাবে না। ওদিকে পুলিশ আমাকে খুঁজছে নিশ্চয়ই। এদিকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য রাতের আশ্রয় খোঁজা হচ্ছে। খ কারও সঙ্গে কথা বললেন ফোনে, বললেন যে তিনি যাচ্ছেন তাঁর বাড়িতে, একটি বিস্ময় অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। বিস্ময়টি কি ওপাশ থেকে জানতে চাওয়া হয়। খ কিছুই ভেঙে বলেননি। রাত ঘন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর এক আত্মীয়কে ফোন করে ঠিক দশ মিনিটের মধ্যে তাঁর বাড়ির দরজার সামনে আসতে বললেন। খ নিজের গাড়িতে আমাকে নিয়ে কোথাও যাবেন না। কারণ পুলিশ যদি এর মধ্যে জেনে যায় যে আমি খর বাড়িতে এসেছি, তবে খ র গাড়ি কোথায় যাচ্ছে না যাচ্ছে তার খোঁজ নেবে। আত্মীয়ের গাড়িটি এসে থামার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। পেছনের আসনে আমাকে বসিয়ে দু পাশে ক এবং খ বসেন। আত্মীয় সামনে। ক আর খ দুজনই আমার মাথায় শাড়ির আঁচল টেনে দিতে বললেন। আঁচল টেনে অভ্যেস নেই আমার, পারি না টানতে। লজ্জায় হাত যায় না আঁচলে। খ নিজে আঁচল উঠিয়ে দেন। মুখ ঢেকে রাখতে হল আঁচলে যেন রাস্তার আলো আমার মুখে পড়লেও কেউ বাইরে থেকে চিনতে না পারে যে এ আমি, খুনের আসামীর চেয়েও বড় আসামী। ক, খ এবং খ এর আত্মীয় অনেকক্ষণ কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন না। সকলের এক চোখ ভেতরে, আরেক চোখ বাইরে, ভিড়ের রাস্তায় গাড়ির গতি স্লথ হলে চঞ্চল হয়ে ওঠেন তিনজনই। না, এভাবে স্তব্ধ বসে থাকলে চলবে না। চলবে না বুঝেই সম্ভবত খ কথা বলতে শুরু করলেন। এমনি কথা, ঘর সংসারের কথা। বাইরে থেকে পুলিশের যদি চোখে পড়ে গাড়িটি, যেন না ভাবতে পারে যে এই গাড়ির ভেতরের মানুষগুলো ঠিক স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। গাড়ি থামালে সর্বনাশ। পাঁচটা টুপি পরা লোক হনহন করে এগিয়ে আসছে ফুটপাত ধরে, গাড়ি থেমে আছে রিক্সার ভিড়ে, ক আমার মুখটি তার মাথা দিয়ে ঢেকে রাখতে চাইছেন। এরপর খ আমার পিঠে ধাককা দিয়ে শরীর উপুড় করে দিলেন। রিক্সা কাটিয়ে গাড়ি কিছুদূর সামনে এগোনোর পর মাথা তুলি, ভয় কেবল আমার হৃদপিণ্ডে হাতুড়ি পেটাচ্ছে না, ক এবং খকেও নিস্তার দিচ্ছে না, বুঝি। মাথা তোলার পরই দেখি দু গজ দূরেই দাঁড়িয়ে আছে পুলিশের গাড়ি। খ গলা চেপে বললেন, শুয়ে পড়। ওটুকু জায়গা শুয়ে পড়ার জায়গা নয়। চোখ নামিয়ে রাখি, নাক মুখের ওপর আঁচল টেনে দিই, মাথা ঢাকা। ক খ সকলেই নিজ নিজ মাথায় আঁচল বা ওড়না তুলে দেন। খর আত্মীয়ও তাই করেন। গাড়ির চারজনের মধ্যে একজন পর্দানশীন হলে পুলিশের সন্দেহ হতে পারে। সকলে আমরা মুহূর্তের মধ্যে ভদ্র ঘরের পর্দানশীন মহিলা বনে যাই। মৌলানা বরকতউল্লাহর দুই বিবি আর দুই কন্যা কোনও আত্মীয়র বাড়ি যাচ্ছে, পুলিশকে এরকম একটি সাধারণ কিছু ভাবার সুযোগ দেওয়া হয়। পুলিশ পার হলে গাড়ির ভেতরের মানুষগুলোর মাথা থেকে আঁচল খসে না। বলা যায় না, আবার কোন মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশের লোক। গাড়ি নিঃশব্দে পথ পেরিয়ে গুলশানের একটি বাড়ির দরজায় থামে। আমরা গাড়ি থেকে নেমে অন্ধকারে মিশে বাড়ির সামনের মাঠে এসে থামি। পর্দার তলায় একটি কালো মিশমিশে ভয় দাঁত মেলে আছে। গালে দুটো শক্ত চড় কষিয়েও এর দাঁত লুকোতে পারি না।

বাড়ি থেকে ঘেউ ঘেউ করে একটি কুকুর বেরিয়ে এল। কুকুরের ঘেউ ঘেউ থামাতে একজন ভদ্রলোক পেছন পেছন দৌড়ে এলেন। ভদ্রলোক কুকুর নিয়ে ভেতরে ঢুকে বারান্দার আলো নিবিয়ে দিলেন। অন্ধকারের পেছন পেছন আমরা। ভদ্রলোকের স্ত্রী, ধরা যাক তিনি গ, আমাদের ভেতর ঘরে নিয়ে ক এবং খ র মুখে ঘটনার অতি সামান্য শুনেই গ ঘরের আলো কমিয়ে দিলেন। দরজা জানালা সব বন্ধ করে আমাদের সামনে চিন্তিত মুখে আইনের একটি বই হাতে নিয়ে বসলেন। আইন নিয়ে ক এবং গর মধ্যে কথা হয়। খুব নিচু স্বরে কথা হয়। কারও মুখ তেমন স্পষ্ট করে আর দেখা যায় না। কথা যা হয়, বেশির ভাগ কথাই আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না। গর সঙ্গে কথা শেষ করে ক আমাকে বললেন যে কাল তিনি আমার উকিলের সঙ্গে জামিনের ব্যাপার নিয়ে কথা বলবেন, জানতে চাইবেন কোনও রকম ফাঁক ফোকর আছে কি না জামিন নেওয়ার। আজ রাতটি গ রাজি হয়েছেন আমাকে তাঁর বাড়িতে রাখতে। এক রাতের বেশি তিনি রাজি নন, কারণ, তাঁর ভয় আশেপাশে দূতাবাস থাকার কারণে প্রচুর পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তায়, যে কোনও সময় তারা জেনে যেতে পারে যে আমি এ বাড়িতে আছি। এ বাড়ির চাকর বাকর আমার বদনখানি দেখলেই চিনে ফেলবে আমি কে, বাইরে গিয়ে কারও কাছে যদি বলে দেয় অতিথির পরিচয়, তবেই জানাজানি হয়ে যাবে। ক আরও বললেন, জামিন পেতে যদি দেরি হয়, তবে কোথায় আমি লুকিয়ে থাকব, সে ব্যবস্থা যেন আমি করে নিই। তিনি মিলনকে খবর দেবেন, মিলন আমাকে এ বাড়ি থেকে নিয়ে যাবে কোনও গোপন জায়গায়। গোপন জায়গাটির কথা যেন আমি ভেবে রাখি।

জায়গা তো কতই আছে। কিন্তু গোপন কোনও জায়গা তো আমার নেই। কার বাড়িতে আমি যাবো নিজেকে লুকিয়ে রাখতে, ভাবি। খ জিজ্ঞেস করলেন আমার কোনও আত্মীয় আছে কি না ঢাকায়। মামা আর খালা আছেন, বলি। বন্ধু আছে? কোনও বন্ধুর বাড়িতে যাওয়া যায় না? তা নিশ্চয়ই যায়। বন্ধুরা খবর শুনলে তো আমাকে সব রকম সাহায্য করবে। ক বললেন, পুলিশ ওসব জায়গায় আপনাকে খুঁজতে যেতে পারে। এমন কেউ আছে যাদের আপনি চেনেন কিন্তু তাদের বাড়িতে আগে যাননি?

অসহায় বালিকা মাথা নাড়ি। মনে হচ্ছে মাথা পাথর হয়ে আছে, মাথায় কিছু ঢুকছে না, মাথা থেকে কিছু বেরোচ্ছে না।

গ বললেন, এ সময় তো ওকে কোনও অ্যামবেসিতে পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম দিতে পারে। কারও বাড়িতে থাকার চেয়ে অ্যামবেসিতে থাকা নিরাপদ। কোনও অ্যামবেসিতে ঢুকে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না।

আমি তৎক্ষণাৎ বলে উঠি মনে মনে তুড়ি বাজিয়ে, আমার সঙ্গে আমেরিকান অ্যামবেসির ফার্স্ট সেক্রেটারির পরিচয় আছে। তিনিই তো আমার পাসপোর্ট নিয়ে দিলেন।

বাহ! ক,খ, গ নিশ্চিন্তের শ্বাস ফেললেন।

গ বললেন, আপনি আজ রাতেই ফোন করুন অ্যামবেসির লোককে। এরকমও হতে পারে আজ রাতেই আপনাকে ওরা নিয়ে যাবে।

গ আমেরিকার দূতাবাসের ফোন নম্বর যোগাড় করে আমাকে দেন। দূতাবাসে ফোন করলে একজন রক্ষী ফোন ধরেন। অ্যাণ্ড্রুর খোঁজ করলে রক্ষী জানান, অ্যাণ্ড্রু এখন বাড়িতে। রক্ষীকে অনুরোধ করি যেন অ্যাণ্ড্রুর বাড়িতে ফোন করে জানান যে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই, চাই আজ রাতেই। আধঘন্টা পর আবার ফোন করে রক্ষীর কাছ থেকে অ্যাণ্ড্রুর বাড়ির টেলিফোন নম্বর নিই। রাত তখন অনেক, অ্যান্ড্রু শুয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে হুলিয়ার খবরটি দিয়ে কোনও রকম রাখ ঢাক না করে আমাকে যেন দূতাবাসে তিনি আশ্রয় দেন, সেই অনুরোধ করি। অ্যান্ড্রু বললেন এই রাতে এখন কিছুই করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়, আমি যেন কাল সকালে তাঁকে আপিসে ফোন করি।

ক, খ এবং আত্মীয় চলে গেলেন, আমাকে বলে গেলেন, আমি যেন ভুলেও ফোন না করি আমার বাড়িতে। কারণ বাড়িতে ফোন নিশ্চয়ই ট্যাপড হচ্ছে, পুলিশ জেনে যাবে আমি কোথায় আছি।

সারারাত একটি অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকি। এক ফোঁটা ঘুম আসে না।

সকল অধ্যায়

১. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০১
২. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০২
৩. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৩
৪. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৪
৫. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৫
৬. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৬
৭. ২. তাণ্ডব – ০১
৮. ২. তাণ্ডব – ০২
৯. ২. তাণ্ডব – ০৩
১০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০১
১১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০২
১২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৩
১৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৪
১৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৫
১৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৬
১৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৭
১৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৮
১৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৯
১৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১০
২০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১১
২১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১২
২২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৩
২৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৪
২৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৫
২৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৬
২৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৭
২৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৮
২৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৯
২৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২০
৩০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২১
৩১. ৪. দেশান্তর – ১
৩২. ৪. দেশান্তর – ২
৩৩. ৪. দেশান্তর – ৩
৩৪. ৪. দেশান্তর – ৪ (শেষ)
৩৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২২
৩৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৩
৩৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৪
৩৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৫
৩৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৬
৪০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৭
৪১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৮
৪২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৯
৪৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩০
৪৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩১
৪৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩২
৪৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৩
৪৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৪
৪৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৫
৪৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৬
৫০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৭
৫১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৮
৫২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৯
৫৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪০
৫৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪১
৫৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪২
৫৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৩
৫৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৪
৫৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৫
৫৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৬
৬০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৭
৬১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৮
৬২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৯
৬৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫০
৬৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫১
৬৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫২
৬৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৩
৬৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৪
৬৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৫
৬৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৬
৭০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৭
৭১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৮
৭২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৯
৭৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬০
৭৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬১
৭৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬২

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন