৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৮

তসলিমা নাসরিন

একুশ জুলাই, বৃহস্পতিবার

ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ছাত্র সংসদের অভিষেকে শামসুর রাহমান বলেছেন, আমরা আজ চরম সংকটের মুখোমুখি। ছাত্র সমাজ সমাজের সবচেয়ে অগ্রসর অংশ। আমাদের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ছাত্রসমাজকে এগিয়ে যেতে হবে। তারা ভুল করলে জাতির বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী দল। তারা ভুল করলে বিভ্রান্তি দেখা দিলে আমাদেরকে তা শুধরাবার চেষ্টা করতে হবে। ভুলকে অনুসরণ করলে জাতির বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। নতুন সভ্যতা, নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে, যেখানে সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। জাতি এগিয়ে যাবে প্রগতির দিকে, কল্যাণের দিকে।

আজকের কাগজের সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমেদও আজকাল বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা করছেন। নিজে তিনি আপাদমস্তক আওয়ামী-ভক্ত। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ আনন্দমোহন কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জিতেছে বলে অভিষেকের আয়োজনে আছেন তিনি। অদ্ভুত কথা বলেছেন — নামাজ আমরা পড়ব। ইমামতি আমরাই করব। কোরান নিজেরাই তেলাওয়াত করব। যে রকম আজকে এখানে একজন ছাত্রলীগ কর্মীকে কোরান তেলাওয়াত করতে দেখলাম। এ জন্য জামাতের দরকার নেই। ধর্মের জন্য আমাদের কোনও রাজাকার লাগবে না, দালাল লাগবে না। আমাদের দেশ বাংলাদেশ। আমরা বাঙালি। জাতির জন্মদাতা গর্ব সব কিছু বঙ্গবন্ধু। আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বাঙালিত্ব, গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। এ সব কিছুই আজ আমরা হারিয়েছি। এত কিছু কোনও জাতি হারায়নি। এসব অর্জন আবার ফিরে পেতে হবে। সুস্থ জাতি গড়ে তুলতে হবে। সেই লক্ষ্যে আজকের কাগজে আমরা কাজ করছি, লিখছি।

তা ঠিক বলেছেন কাজী শাহেদ। মাঝে মাঝে মনেই হয় না আজকের কাগজ কোনও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করছে। মৌলবাদীদের আন্দোলনের মিছিলের কোনও খবরই পত্রিকায় ছাপা হয় না। ছাপা হয় কেবল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কথা, মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনের কথা। দশ হাজার মোল্লা রাস্তায় মিছিল করে এল, সেদিনই হয়ত দশজন মৌলবাদ বিরোধী লোক এক জায়গায় জমা হয়ে মোল্লাদের বিরুদ্ধে কিছু বলল। আজকের কাগজে ফলাও করে দ্বিতীয় ঘটনাটি ছাপা হবে। প্রথম ঘটনাটি কাজী শাহেদ বেমালুম উড়িয়ে দেবেন। সংবাদপষেনর নিরপেক্ষ চরিত্রটি আজকাল খুব কম পত্রিকারই আছে। বেশির ভাগ পত্রিকার মালিকই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য বা ভক্ত। পত্রিকাগুলো এক একটি দলের মুখপত্র হিসেবে কাজ করে। কোনও পত্রিকাই বলতে গেলে সত্যিকার নিরপেক্ষ নয়।

আরও অনেক খবর আজকে। আজকের পত্রিকায় খবরের শিরোনামগুলো পড়ি, ইত্তেফাক: প্রতিটি ঘরে তসলিমার সন্ধান করা হইবে। আজ মৌলবাদ বিরোধী লেখক শিল্পীদের সমাবেশ। ভোরের কাগজ: মৌলবাদীদের আস্কারা দেওয়া যায় না, ইসলামে মৌলবাদীদের স্থান নেই –তথ্যমন্ত্রী। আজ মৌলবাদ বিরোধী লেখক শিল্পীদের সমাবেশ। ইনকিলাব: তসলিমা নাসরিনকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে–ব্যারিস্টার রফিক। ইসলাম বিদ্বেষী হওয়ার কারণেই পশ্চিমারা তসলিমাকে সমর্থন দিচ্ছে — অ্যারাব নিউজ। বিভিন্ন সংগঠনের তীব্র নিন্দা, তসলিমার পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হস্তক্ষেপ বরদাশত করা হবে না। দেশে সৃষ্ট গণজাগরণের মাধ্যমেই ইসলামী শাসন কায়েম হবে–মুফতী আমিনী। ২৯ জুলাইর লং মার্চ সফল করার আহবান। লং মার্চে ইসলামী কাফেলার ঢাকা যাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। বাংলাবাজার: তসলিমা নাসরিনের নিরাপত্তা দিতে সরকারের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবেদন। সংবাদ: তসলিমা সম্পর্কে ই-ইউর আবেদন সরকার পেয়েছে। মুসলিম সোসাইটির ঘোষণা, তসলিমাকে পৃথিবীর কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত আরব নিউজ পত্রিকাটিতে লেখা হয়েছে,তসলিমা প্রসঙ্গটি পশ্চিমা দেশগুলোকে ইতিমধ্যে উত্তেজিত করেছে এবং তারা বাংলদেশের সরকারকে তসলিমার নিরাপত্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার আহবান জানিয়েছে। তসলিমা তাঁর লেখায় ইসলামী আইন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিল এবং ইসলামী বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে বিদ্রূপ করেছিল। এর পরেই আন্তর্জাতিক প্রেস ফ্রীডম ও মানবাধিকারের এই স্বঘোষিত অভিভাবকরা তসলিমার উকিল হিসেবে আবির্ভূত হয়। এটি একটি নাটক। এই নাটক তসলিমার নিজের সৃষ্টি, যেন সে যুক্তরাষ্ট্র গমনের সুযোগ পায়। এরপর আমেরিকার সাহিত্য সভাগুলোতে বক্তৃতা দেবার সুযোগ পাবে, বই প্রকাশ করবে এমনকি হিলারি ক্লিনটনেরও সাক্ষাৎ পাবে। মত প্রকাশ মানে জনগণের সেন্টিমেণ্টে আঘাত করার লাইসেন্স নয়। যারা সংঘাতকে উস্কায় ও মদদ যোগায়, সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে, তারা স্বাধীনতার নয়, নৈরাজ্যেরই প্রবক্তা। এদের শাস্তিই হওয়া উচিত। তসলিমা নাসরিনরা হল হাইড্রার মত মাথা বিশিষ্ট দানব। এদের একটি মাথা কাটলে দুটি মাথা গজায়। এদের গুরু সালমান রুশদি থেকে এরা শিখেছে কিভাবে দ্রুত পয়সা কামানো যায়। তৃতীয় বিশ্বে অনেক উচ্চাকাঙ্খী সাহিত্যিক সাংবাদিক রয়েছে যারা লন্ডন প্যারিস নিউইয়র্ক এর আরাম আয়েশের জন্য যে কোনও কিছু করতে রাজি। এ সকল স্বপ্নিককে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই সেখানে অনেক শীতলতা, অনেক ধূসরতা। প্রাথমিক ঔৎসুক্য নিভে যাওয়ার পর তারাও নিভে যাবে। চীনা প্রবাদ তো আছেই, আবাসত্যাগী সিংহ তো কেবল একটি কুকুর।

খবরটি বিএনপির পত্রিকা দিনকালে ছাপা হয়েছে। দিনকালের উদ্দেশ্য বিধেয়র সঙ্গে মৌলবাদী পত্রিকাগুলোর কোনও পার্থক্য নেই। ইনকিলাব আমাকে যে ভাষায় গালাগাল করে, দিনকাল ঠিক সে ভাষাতেই করে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো তসলিমা নাসরিনকে প্রয়োজনীয় সকল নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে এবং তিনি যদি দেশত্যাগে সম্মত হন তাহলে তাকে অনুমতি প্রদানের জন্যও সুপারিশ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ ও সরকারগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞাত আছে এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তারা তাদের পূর্ণ আস্থাও ব্যক্ত করেছেন। তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেছেন, বর্তমান সরকার লেখার ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না। সরকার লেখকের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তবে লেখকের স্বাধীনতার নামে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে ব্যাপারটিকে ভেবে দেখতে হয়। অবাধ স্বাধীনতা সামগ্রিক অবস্থাকে কোথায় নিয়ে যায় তাও তলিয়ে দেখার সময় এসেছে।

ঘটনা যে কোনদিকে মোড় নিচ্ছে ঠিক বুঝতে পারি না। আমি বরং ছবি আঁকায় মন দিই। ছবি আঁকাই দেশের রাজনীতি বোঝার চেয়ে অনেক সহজ মনে হয় আমার। রাতে আমার ছবি আঁকায় ব্যাঘাত ঘটে ঝর কারণে। ঝ এঘরে ভাত নিয়ে এলেন, ভাত খেয়ে সিগারেট ধরাবেন, পত্রিকায় চোখ বুলোবেন, কিছু কিছু খবর পড়বেন, খবর নিয়ে কথা বলবেন, আশঙ্কা বা আশায় দুলবেন, আমাকে দোলাবেন। ঝর সঙ্গে তাই হতে থাকে আমার। গরম গরম খাবার আর খবর। মুসলিম সোসাইটির ঘোষণাটি জানতে ইচ্ছে হয়। ঝর দিকে খবরটি ঠেলে দিই। গতকাল বুধবার সকালে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে ইয়ং মুসলিম সোসাইটি বাংলাদেশ আয়োজিত গণ সমাবেশে বলা হয়েছে, পৃথিবীর যেখানেই থাক, তসলিমা নাসরিনকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। আগামী ২৯শে জুলাই ঢাকা অভিমুখে লং মার্চের আগেই তসলিমাসহ ধর্মদ্রোহীদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে। অন্যথায় ঢাকার প্রতিটি ঘরে তল্লাশি চালিয়ে তসলিমাকে ধরা হবে।

তসলিমাসহ সকল ধর্মদ্রোহীর ফাঁসি, ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন, এনজিওদের অপতৎপরতা নিষিদ্ধসহ অন্যান্য দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে মিছিল সহকারে প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁস্থ কার্যালয়ে যাবার পথে পুলিশ বাধা দেয়। পরে একটি প্রতিনিধিদল সেখানে যায় এবং ১৭ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব ডঃ কামাল সিদ্দিকীর কাছে পেশ করা হয়। সমাবেশে ইসলাম ও রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা প্রতিরোধ মোর্চার সভাপতি মওলানা মহিউদ্দিন খান বলেন, প্রতিরোধ মোর্চা এক লাখ লোকের য়েচ্ছ!সেবক বাহিনী গঠন করেছে। প্রয়োজনে সোসাইটির পাঁচ হাজার কর্মী সুইুইসাইড মিশনে নাম লেখাবে। বিনা চ্যালেঞ্জে ধর্মদ্রোহীদের ছেড়ে দেওয়া হবে না। ঢাকা অভিমুখী ২৯শে জুলাইয়ের ইসলামী কাফেলার যাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনুদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত তসলিমা ও আমরা একই সাথে বেঁচে আছি –এর থেকে লজ্জা আর কি হতে পারে? আজ আমাদের মা আয়শা মদিনার কবর থেকে ফরিয়াদ জানাচ্ছেন, এ দেশের বিখ্যাত ৫/৬ জন বুজুর্গ রসুল(সাঃ)কে স্বপ্নে ফরিয়াদ করতে দেখেছেন। অতএব আর হাত পা গুটিয়ে দাবি জানাবো না। অন্য বক্তারা বলেন, লং মার্চের আগে তসলিমাসহ ধর্মদ্রোহীদের গ্রেফতার ও বিচার শুরু করতে হবে। ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করতে হবে, অন্যথায় সোসাইটি কর্মীদের নিয়ে ঢাকার প্র্রিতিটি ঘরে তল্লাশি করে তসলিমাকে ধরা হবে।

তসলিমা নাসরিনের নিরাপত্তা দিতে সরকারের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন আবেদন জানিয়েছে। বাহ! বেশ কথা। এখন নিরাপত্তা দেওয়া হোক তবে। আমি যখনই চাই আমাকে ভিসা দেওয়া হবে ইউরোপে যাওয়ার, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনও দেশেই আমাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হবে। —এই খবরটি দেখে ঝ উত্তেজিত। তিনি বারবারই বলছেন — তোমার তো এখন আর কোনও দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।

—কিন্তু..

—কিন্তু কি?

—ওরা যে বলছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করবে না! বলছে , একজন কুখ্যাত ও নির্লজ্জ মহিলার পক্ষে ওকালতি করে তথাকথিত সভ্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতরা ঘৃণ্য মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এ দেশে থেকে নির্লজ্জ মহিলাটি এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, কোরান হাদিস, নবী রাসুল ও পীর মাশায়েখগণের বিরুদ্ধে যে অশ্লীল মন্তব্য করে চলেছে, অথচ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি.. ঝ ঝট করে কেড়ে নিয়ে আমার হাতের কাগজটি, বললেন—বাদ দাও। ওরা কিμছু করতে পারবে না। ইনকিলাবের খবর তোমার পড়াই উচিত না।

আমি বলি—ইত্তেফাকের খবরও তো তাই। প্রতিটি ঘরে নাকি আমাকে সন্ধান করবে এখন। আমার প্রশ্ন, যদি পেয়ে যায়! পেয়ে গেলে তো..

ঝনঝন করে ওঠেন ঝ—আবারও ভাবছো এসব কথা!

বড় শ্বাস ফেলে বলি —ভাবতে তো চাই না!

—তাহলে ভাবার দরকার কি? ভাবা বাদ দিয়ে দাও। ছবি কতদূর আঁকলে বল। ছবির কথা বল।

ছবির কথা আমার বলা হয় না। বিচিত্র সব ছবি রচনা করতে থাকি কল্পনায়। মস্তিষ্কে কুটকুট করে কামড়ায় কতগুলো অসভ্য শব্দ। –তসলিমা নাসরিনকে আশ্রয়দান সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত উস্কানিমূলক এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইউরোপীয়দের গভীর ষড়যন্ত্রের নীল নকশার বহিঃপ্রকাশ। তসলিমা নাসরিন বহিঃশক্তির ক্রীড়নক, তাহাকে আশ্রয়দানের প্রতিশ্রুতিই ইহার জ্বলন্ত প্রমাণ। ইহা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের শামিল। এটুকু বলতে বা পড়তেই ইত্তেফাকটি আমার হাত থেকে নিয়ে যান ঝ।

কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকি দুজন। কিছুক্ষণ গানে, ধুমপানে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে মন দিয়ে আবার মন চলে যায় মুফতী আমিনীতে। কাল এক জনসভায় আমিনী বলেছেন, ইউরোপীয় গোষ্ঠী যদি তসলিমাকে রক্ষা করতে আসে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেই জেহাদ ঘোষণা করবো। আমাদের আন্দোলনকে যারা সমর্থন দেবে, তিনি যে মতের বা ধর্মেরই হোক না কেন, তা আমরা সাদরে গ্রহণ করব। যে দাবিতে হরতাল হয়েছিল, তার একটিও সরকার মেনে নেয়নি। কোনও সরকারই তোহিদী জনতার দাবি মেনে নেয়নি। বর্তমান সরকারও মানছে না। তাই সরকারের কলম ভেঙে দিয়ে আমরা সে কলমের অধিকারী হয়েই দাবিসমূহ পূরণ করে নেব। এখন কেবল টুপিওলাদেরই নয়, টুপি ছাড়াদেরও দাবি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা।

ঝ মুফতি আমিনী নিয়ে ভাবছেন না, ভাবছেন উনত্রিশ তারিখে লং মার্চের কাফেলা নিয়ে। ঝর বিশ্বাস উনত্রিশ তারিখের আগে যদি কিছু একটা না হয়..

—কিছু একটা না হয়? কিছু একটাটা কি?

—কিছু একটাটা হল তোমার যদি জামিন না হয়, তোমার যদি দেশ ছাড়া না হয়..

—না হলে কী হবে?

—না হলে অনেক কিছু হতে পারে।

অনেক কিছু কি হবে তা ঝ আর বলেন না। বুঝি কি হবে। বুঝি যে আমার খবর যদি কোনওভাবে পেয়ে যায় ওরা, যদি হাতের কাছে পেয়ে যায়, বুঝি যে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে বা অন্য কোনও বুদ্ধি খাটিয়ে আমাকে যদি ধরে ফেলে ওরা, তবে তো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাহায্যের আর প্রয়োজন হবে না আমার জীবনে। কিছুরই আর কোনওদিনই আমার প্রয়োজন হবে না। বুঝি, ঝ নিঃশব্দে ভাবছেন এসব। তিনি আজ বা কালই, কাল না হলেও পরশু কিছু একটা ঘটুক চাইছেন। মনে মনে তিনি মঙ্গলদীপ জ্বালিয়ে রাখছেন মনে।

ভাবনাগুলো আমাদের আরও নিশ্চুপ করে রাখে। ঝ আর ঘুমোতে যান না দোতলায় তাঁর শোবার ঘরে। এ ঘরেই শুয়ে থাকেন। সারারাত আমি ছবি আঁকি। সারারাত শুয়ে শুয়ে আমার ছবি আঁকা দেখেন ঝ। ক্যানভাসে ঝ। ঝ ক্রমশ সত্যিকার ঝর মতো দেখতে হচ্ছেন। বড় বিনয়-স্বরে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি —আদৌ কি কিছু হচ্ছে?

ছবির দিকে মুগ্ধ তাকিয়ে থেকে বললেন —তুমি কত বড় লেখক আমি জানি না, তবে তুমি অনেক বড় শিল্পী। যদি বেঁচে থাকো..

ঝ থেমে যান। আমি জিজ্ঞেস করি—যদি বেঁচে থাকি, তবে কী ?

ধীরে বলেন তিনি—লেখালেখি যদি ছেড়ে দাও আমার কোনও আপত্তি নেই, তবে জীবনে ছবি আঁকাটা ছেড়ো না। তুমি অনেক বড় শিল্পী হতে পারবে।

ঝর এই প্রেরণা আমাকে ব্যস্ত রাখে ছবি আঁকায়। আমাকে তিনি আরও ক্যানভাস, আরও রং, আরও তুলি এনে দেন।

সকল অধ্যায়

১. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০১
২. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০২
৩. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৩
৪. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৪
৫. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৫
৬. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৬
৭. ২. তাণ্ডব – ০১
৮. ২. তাণ্ডব – ০২
৯. ২. তাণ্ডব – ০৩
১০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০১
১১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০২
১২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৩
১৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৪
১৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৫
১৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৬
১৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৭
১৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৮
১৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৯
১৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১০
২০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১১
২১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১২
২২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৩
২৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৪
২৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৫
২৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৬
২৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৭
২৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৮
২৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৯
২৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২০
৩০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২১
৩১. ৪. দেশান্তর – ১
৩২. ৪. দেশান্তর – ২
৩৩. ৪. দেশান্তর – ৩
৩৪. ৪. দেশান্তর – ৪ (শেষ)
৩৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২২
৩৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৩
৩৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৪
৩৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৫
৩৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৬
৪০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৭
৪১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৮
৪২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৯
৪৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩০
৪৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩১
৪৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩২
৪৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৩
৪৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৪
৪৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৫
৪৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৬
৫০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৭
৫১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৮
৫২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৯
৫৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪০
৫৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪১
৫৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪২
৫৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৩
৫৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৪
৫৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৫
৫৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৬
৬০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৭
৬১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৮
৬২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৯
৬৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫০
৬৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫১
৬৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫২
৬৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৩
৬৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৪
৬৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৫
৬৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৬
৭০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৭
৭১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৮
৭২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৯
৭৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬০
৭৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬১
৭৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬২

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন