৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৪

তসলিমা নাসরিন

সাতাশ জুলাই, বুধবার

সরকার ও বিরোধী দলকে এই দায় সুদে আসলে শুধতে হবে। আবদুল মান্নান লিখেছেন ইনকিলাবে — জানতে পারলাম, তসলিমা নাসরিনের লজ্জার ইংরেজি ভার্সান একদিনেই ২০,০০০ (বিশ হাজার) কপি বিক্রি হয়ে গেছে। তসলিমাকে নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও ভারতে যে ক্রেজ এর সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মনে হয়, তসলিমার বই ইংরেজি ছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হবে এবং মিলিয়ন মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়ে যাবে। আর সঙ্গে সঙ্গে এই সর্বৈব মিথ্যা কথাটিই সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে যে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চলছে, বাংলাদেশ উগ্র ফতোয়াবাজ ধর্ম ব্যবসায়ীদের দেশ। বাংলাদেশের এই যে ইমেজ সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে, এটা কি কারও জন্যই কল্যাণকর? এই মিথ্যার প্রতিষ্ঠা থেকে কী কল্যাণলাভ করবেন প্রগতিবাদী বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা? কী কল্যাণ লাভ করবে সরকার? কী কল্যাণ লাভ করবে বিরোধী দল, বিশেষত আওয়ামী লীগ? আগামী নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায়ও যায়, তারা কেমন করে মুছবে এই মিথ্যা ইমেজ? তাদেরও কি এর দায় বহন করতে হবে না?

অথচ দেশ ও রাজনীতির যাঁরা হর্তাকর্তা তাঁদের কারও মধ্যে কোন সুবুদ্ধি কাজ করছে বলে মনে হয় না। যে সরকার ইসলামের দোহাই পেড়েই ক্ষমতায় গেছেন, সেই সরকারও পরম নির্বিকারচিত্তে তসলিমা নাসরিনের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও ঔদ্ধত্য অবলোকন করলেন এবং ওর মিশন নির্বিবাদে সম্পন্ন হওয়ার পর একটি কার্যকারিতাহীন নিরর্থক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ, বিশেষত এর নেত্রী শেখ হাসিনা ভারত গোস্বা করবে এবং এখনকার ভারতীয় এজেন্ট, ধর্মদ্রোহী বুদ্ধিজীবীগণ ও তাঁর নিজ দলীয় ব্রাহ্মণ্যবাদপন্থীরা বিগড়ে যাবে–এই ভয়ে টুঁ শব্দটিও উচ্চারণ করলেন না। মনে মনে হয়ত তিনি এই আশাও পুষেছিলেন যে, তসলিমাকে নিয়ে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হলে তাঁর ক্ষমতা দখলের পথই সুগম হবে।

প্রথমত, তসলিমা নাসরিনের লজ্জার বক্তব্যের মধ্যে কি বিন্দুমাত্রও সত্যতা আছে? বাংলাদেশে কি হিন্দুদের ওপর সত্যিই কোনও অত্যাচার হচ্ছে? যদি না হয়ে থাকে তাহলে এই মিথ্যা প্রপাগাণ্ডাকে অজুহাত হিসাবে ধরে নিয়ে আজ সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদ-ব্রাহ্মণ্যবাদ যে ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর তীব্রতর আঘাত হানতে উদ্যত হয়েছে এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ করছে –এটাকে কিভাবে বিচার করা হবে! সরকার ও বিরোধী দলের যেসব নেতা নেত্রী পরমানন্দে তামশা দেখছেন, তাঁদের কতটুকু দেশপ্রেমিক বলা যাবে? বস্তুত ক্ষমতা রক্ষা ও ক্ষমতা দখলের লোভে অন্ধ উন্মত্ত যেসব ব্যক্তি-গোষ্ঠী তসলিমাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ন করলো এবং মুসলমানদের ওপর আঘাত হানার সুযোগ সৃষ্টি করলো, জাতি ও ইতিহাস তাদের কোনওদিনই ক্ষমা করবে না। এই দায় তাদের একদিন সুদে আসলে শুধতে হবে।

 

দায় শোধার মধ্যেই ছিল মন। সন্ধেয় ঘরে ঢুকে ঝ আমাকে জানালেন, তিনজন ব্রিটিশ সংসদ সদস্য আমার মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন। ব্রিটেনে ডিফেণ্ড তসলিমা নামে একটি দল গড়ে উঠেছে। সে না হয় ব্রিটেনে, কিন্তু দেশে কি ঘটছে! দূর দেশে বসে কেউ আমার পক্ষে কথা বলছে, আমাকে বাঁচাতে চাইছে, শুনে মন ভাল হয়ে যায়। কিন্তু দেশের দিকে তাকালে সেই ভাল মনটি আর ভাল থাকে না।

ঝ একটি শিউরে ওঠা খবর দিলেন আজ। গোলাম আযম চট্টগ্রামের লালদীঘির মাঠে জনসভা করেছেন। তাঁর এই সভার বিরুদ্ধে মিছিল হয়েছে গোলামবিরোধী লোকদের। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য চেয়েছিল একই জায়গায় জনসভা করতে। কিন্তু পুলিশ দেয়নি। গোলাম আযম শেষ পর্যন্ত হেভি পুলিশ প্রটেকশানের মধ্যে জনসভা করেছে। গোলাম আযমের পক্ষের দলে আর বিপক্ষের দলে ভীষণ মারামারি হয়েছে। রীতিমত যুদ্ধক্ষেত্র। প্রচুর গোলাগুলি। বোমা ফেটেছে। অনেক আহত। অনেকে হাসপাতালে ভর্তি। সবচেয়ে দুঃখের কথা, ছ জন মানুষ মারা গেছে।

বল কি? কারা মারা গেছে? কোন দলের? চাপা আর্তনাদ আমার।

জামাত শিবিরের লোকেরা মেরেছে বিপক্ষ দলের লোকদের। বিমর্ষ বসে থাকি। গোলাম আযম সভা করতে গিয়েছিলেন আমার ফাঁসি এবং ব্লাসফেমি আইনের দাবি নিয়ে। চট্টগ্রামে তাঁর জনপ্রিয়তা বেশি বলেই চট্টগ্রাম যাওয়া। কে দায়ি ছটি মৃত্যুর জন্য? গোলাম আযম নাকি আমি ? নিজেকে আমার দোষী মনে হতে থাকে।

—সব আমার দোষ। তাই না? ঝকে জিজ্ঞেস করি।

—কেন, তোমার দোষ হবে কেন?

—ওই স্টেটসম্যানে যদি সাক্ষাৎকারটা না দিতাম, তবে তো এসব হত না দেশে।

—তা ঠিক, হয়ত হত না।

—কিন্তু আমি তো কোরান সংশোধনের কথা বলিনি।

—আসলে ওরা কিছু না কিছু নিয়ে এসব করতই।

ঝ আমাকে সান্ত্বনা দেন বটে, কিন্তু গ্লানিবোধ দূর হয় না আমার। এত তুচ্ছ একটি মানুষ আমি। ভাল কোনও ডাক্তার নই, ভাল কোনও লেখক নই, ভাল কোনও কবি নই।অথচ ধর্ম নিয়ে বড় বড় কথা বলতে গিয়েছি। কী দরকার ছিল! অন্য মানুষেরা, যারা ধর্মকে অসার বলে মনে করে, আফিম বলে ভাবে, তারা তো বলতে যায় না আমার মত। তারা সমাজের মানুষের জন্য সুশিক্ষার ব্যবস্থা করতে চায়, তারা আধুনিক আইনের প্রবর্তনের কথা বলে, তারা প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাদের উদ্বুদ্ধ করে একটি সুস্থ রাজনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য। এভাবেই তো হবে ধীরে ধীরে দেশের অবস্থার পরিবর্তন। এভাবেই তো হতে পারে দেশের মঙ্গল। আমিও মঙ্গল চাই, কিন্তু যে পথে আমি এগোচ্ছিল!ম সে পথটি নিশ্চিত ভুল পথ ছিল। এদেশের আশি ভাগ মানুষ মুসলমান, বেশির ভাগই অল্পশিক্ষিত অথবা অশিক্ষিত, তাদের কিনা হঠাৎ করে আমি ধর্ম না মানার কথা বলছি! আমার মাও তো ধর্ম মানেন। কিন্তু তিনি তো কোনও অসৎ মানুষ নন। তিনি তো অদরদী কেউ নন। মায়া মমতা ভালবাসায় টইটম্বুর তাঁর আদ্যোপান্ত। আমার যুক্তিবুদ্ধির বাবার চেয়ে অনেক বেশি হৃদয় ধারণ করেন তিনি। ধর্ম মেনেও তো মানুষ সৎ হতে পারে, নিষ্ঠ হতে পারে, সুস্থ একটি সমাজ গড়ার জন্য সংগ্রাম করতে পারে। তবে কেন আমি সেই মানুষগুলোর কথা ভাবিনি! আমার ওরকম না ভেবেচিন্তে বলা কথাগুলো আঁকড়ে ধরে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে মৌলবাদীরা — যারা ধর্ম বেচে খায়, ধর্ম যাদের মসনদে ওঠার সিঁড়ি, ধর্ম যাদের কাছে মানুষকে বোকা বানাবার, বধির বানাবার জিনিস! আমি তো ঘাতক গোলাম আযমের হাতে সত্যিই একটি অস্ত্র তুলে দিয়েছি। ধর্ম নিয়ে কিছু না বললে আজ এই দেশে ধর্মান্ধদের এই বিশাল বিপুল আন্দোলন হত না, দেশ জুড়ে এই ধর্মীয় জাগরণ না ঘটলে গোলাম আযমের সুযোগ হত না ঘর থেকে বাইরে বেরোবার, জনসভায় বক্তৃতা করবার। গোলাম আযম বক্তৃতা করতে না গেলে ছটি মানুষকে খুন হতে হত না। ছটি মানুষের নিশ্চয়ই কত স্বপ্ন ছিল জীবনে! ওদের জীবন তো আমার জীবনের মতই মূল্যবান। নিজের জীবনটিকে বাঁচাবার জন্য কি রকম আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমি! কফিনে পড়ে থাকতেও আপত্তি নেই, নিঃশ্বাসের শব্দ যেন কেউ না শোনে, ! তাতেও আপত্তি নেই, তবু যেন বেঁচে থাকি। গোলাম আযমের জনসভার প্রতিবাদ করতে যে মানুষগুলো রাস্তায় নেমেছিল, তারা আমার চেয়েও অনেক সাহসী, সংগ্রামী। আমার চেয়েও বেশি দেশপ্রেম তাদের। আমি কেন মরে গিয়ে তবে ওদের বাঁচাচ্ছি না। কী এমন মূল্যবান জীবন আমার। কী এমন ভালটা জীবনে করে ফেলেছি যে আমাকে যে করেই হোক বাঁচতে হবে। আমি কুঁকড়ে থাকি। অপরাধবোধের তীক্ষ্ণ ধারালো ঈগলী ঠোঁট আমার ঠুকরে খেতে থাকে।

 

নানা খবর আজকের পত্রিকায়। তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে আমেরিকার সংবাদপষেন প্রকাশিত খবর খণ্ডন। ২৯ জুলাইর লং মার্চ ও মহাসমাবেশ সফল করার জন্য দেশের বরেণ্য পীর মাশায়েখদের আহবান। তসলিমাকে আশ্রয়দাতা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। ১৫ আগস্ট অর্ধদিবস হরতাল। দৈনিক সংবাদ পত্রিকাটির খবরের দিকে চোখ আমার। এই পত্রিকাটিতেই মেলে নিরপেক্ষ খবর, সৎ সাংবাদিকতা, কোনও দলের মুখপত্র নয় এটি। আজ প্রতিটি পত্রিকার প্রথম পাতা জুড়ে ছবিসহ প্রধান খবর, চট্টগ্রামে ৫ জন নিহত।। লালদীঘি এলাকা রণক্ষেত্র।। সংঘর্ষ গুলি বোমাবাজি।। আহত তিন শতাধিক।। প্রতিবাদে কাল হরতাল। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের আহবানে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের চট্টগ্রাম আগমন প্রতিহত করার কর্মসূচী হিসেবে বিক্ষোভ-রত ছাত্রজনতার সাথে পুলিশ, বিডিআর ও জামাত শিবিরের আর্মড ক্যাডারের মিলিত বাহিনীর কয়েক দফা সংঘর্ষে ৫ জন নিহত ও তিন শতাধিক আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে চাকসুর জিএস আজিম উদ্দিন আহমেদ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতা পারভেজ নিটুল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নেতা এনামুল হক চৌধুরীসহ ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্যান্য আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, জেল হাসপাতাল, বন্দর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে তিনজন ছাত্রঐক্য কর্মী ও দুজন শিবিরকর্মী বলে জানা গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রঐক্য আগামী বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে। গোলাম আযমের আগমনকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে ছাত্রঐক্যের ঘোষিত কর্মসূচীর মোকাবেলায় প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। পুলিশ, বিডিআর, রিজার্ভ পুলিশ, আর্মড আনসারসহ প্রায় দশ হাজার সদস্যের মিলিত বাহিনীর পাশাপাশি প্রায় সমসংখ্যক জামাত শিবিরের আর্মড ক্যাডার গতরাতেই লালদীঘি মাঠ ও আশপাশের এলাকার দখল নিয়ে নেয়। জামাত শিবির কর্মীরা মাথায় হলুদ পট্টি বেঁধে গজারি কাঠ ও গর্জন কাঠের বড় বড় লাঠি ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে লালদীঘিমুখী সবকটি সড়কে অবস্থান নেয়। তারা পথচারীদের তল্লাশি আর জিজ্ঞাসাবাদ করে। আজ মঙ্গলবার ছাত্রঐক্য হরতাল ডেকেছিল। কিন্তু পুলিশ বিডিআর কোথাও কোনও পিকেটারকে মাঠে নামতে দেয়নি। সকাল থেকে ছাত্রঐক্য কর্মীরা কয়েক দফা মিছিল বের করার চেষ্টা করে। প্রতিবারই পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সকাল সাতটায় ও নটায় নিউমার্কেট চত্ত্বরে ছাত্রজনতার সাথে পুলিশ বিডিআরের দুদফা সংঘর্ষ হয়। সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে বোমা ককটেল বিস্ফোরিত হতে থাকে। বেলা দুটোর পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। বেলা তিনটায় লালদীঘি ময়দানে হাজার হাজার পুলিশ বিডিআর ও শিবিরের আর্মড ক্যাডারের নিশ্ছিদ্র প্রহরায় জামাতের জনসভা শুরু হবার পর পর পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য কর্মীরা শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশ শেষে সিনেমা প্যালেসের সামনে দিয়ে লালদীঘির দিকে এগোতে চাইলে বিডিআর তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। বাধা পেয়ে ছাত্র জনতা পেছনে সরে গিয়ে দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়। ছাত্র জনতা সেখানে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে শপথবাক্য পাঠ করে। এরপর প্রায় হাজার পাঁচেক ছাত্র জনতার বিরাট মিছিল কোর্ট রোডের দিকে এগোতে থাকে। বিডিআর মিছিলে কয়েক দফা বাধা দেয়, লাঠিচার্জ করে ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। জিপিওর সামনে ছাত্র জনতার সাথে বিডিআর ও শিবির কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। ছাত্র জনতা তা উপেক্ষা করে তিনটি ব্যারিকেড পর পর ভেঙে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ভবনের সামনে এলে শিবির ক্যাডারদের জায়গা করে দিয়ে বিডিআর সদস্যরা পেছনে চলে আসে। এ সময় প্রচণ্ড শব্দে বোমা বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জামাতের জনসভায় বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। লোকজন ছোটাছুটি করতে থাকে। বেলা ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে শিবির কর্মীদের ছোড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ও সরকারি সিটি কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র এহসানুল হক মনি( ১৮) আহত হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়।

নাহ, সংবাদও অনেক খবর রাখেনি। অন্য পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, নিহত ৬, আহত ৪ শতাধিক। নিহতদের মধ্যে মণি ছাড়াও আরও দুজন ছাত্র খায়ের(২০),আর শাহিন (১৭) আছে। আজকের কাগজের বর্ণনাটি এরপর এরকম, বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে ৭১ এর নরঘাতক, নারীধর্ষণ ও অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের নায়ক যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম ৪টি সশস্ত্র গাড়ি ও অস্ত্রধারী শিবির ক্যাডার পরিবেষ্টিত হয়ে লালদীঘির মাঠে উপস্থিত হয়। আন্দর কিল্লাহ শাহী জামে মসজিদস্থ ইসলামি একাডেমি থেকে সে লালদীঘির ময়দানে আসে। এ সময় ওখান থেকে ৪টি অস্ত্র বোঝাই বস্তাসহ মাইক্রোবাস নিয়ে সমাবেশস্থলে এসে বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে বক্তব্য শেষ করে ঘাতক গোলাম আযম পৌনে ছটায় সমাবেশ স্থল ত্যাগ করে। সমাবেশে শুধু অস্ত্রধারী জামাত শিবির ক্যাডাররাই উপস্থিত ছিল। ঘাতক গোলাম মাত্র কয়েক মিনিট বক্তব্য রাখে।

এরপর আরও অনেক কিছু ঘটে। কোথাও কোনও ঘটনা থেমে থাকে না। আমি ছটি মৃত্যুর সঙ্গে মৃতের মত বসে থাকি।

ডঃ কামাল হোসেন চট্টগ্রাম থেকে জামাতের তাণ্ডবলীলা স্বচক্ষে দেখে এসে প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের যারা সহযোগিতা করবে তাদেরকে জাতি ক্ষমা করবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান আজ জামাত শিবিরের হাতে বিপন্ন হচ্ছে। এই দেশ এবং রাষ্ট্রকে তারা আরও ধ্বংস করার চক্রান্ত করবে। কামাল হোসেন গোলাম আযমের উদ্দেশে বলেন, আপনি ৭১ এ ভুল করেছেন বলে স্বীকার করেছেন, আপনার ভুলের জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ খেসারত দিয়েছে। আজ আবার যে সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছেন, এই ক্ষতি জাতি আর বহন করবে না। একজন নাগরিক হিসেবে এই সরকারকে আমি হুকুম দিচ্ছি অস্ত্রধারীদের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য। সরকার যদি তা না করে আমাদের সকলের দায়িত্ব হচ্ছে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট টিএসসিতে একটি আলোচনা-অনুষ্ঠান করেছে। বিষয় হচ্ছে, প্রস্তাবিত ব্লাসফেমি আইন নির্যাতনের নয়া হাতিয়ার। ব্যারিস্টার সারা হোসেন মূল প্রবন্ধ পড়েছেন। সাবেক বিচারপতি কে এম সোবহান, ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ, কামাল লোহানী, আনিসুজ্জামান, আলী যাকের, আয়শা খানম বক্তৃতা করেছেন। সকলেই ব্লাসফেমি আইনের বিরুদ্ধে বলেছেন।

চট্টগ্রামে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ হচ্ছে চারদিকে। ছাত্রসমাজ তিরিশ তারিখে সারাদেশে হরতাল ডেকেছে।

শুয়ে ছিলাম। চোখদুটো সাদা দেয়ালের দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে শুয়ে ছিল। শুয়ে ছিল একটি হাত বুকে। আরেকটি হাত মাথার পেছনে। শুয়ে ছিল পা দুটো মেঝেয়। স্তব্ধ শুয়ে ছিল। প্রাণহীন অঙ্গগুলো এভাবেই শুয়ে ছিল। মৃতের মত শুয়ে ছিল।

অনেক রাতে ঙ এলেন। কাগজ কলম নিতে বলেন। লিখতে বলেন, যা তিনি বলেন, তা। সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিল্টকে লিখতে হবে চিঠি। কেন লিখতে হবে? ঙ বললেন, কার্ল বিল্ট একটি ফরমাল চিঠি চাইছেন। ফরমালিটি মাথামুণ্ডু কিছুই না জেনে, ঙ যা বলেন, লিখি। লেখা শেষ হলে চিঠিটি একটি খামে ভরে নিয়ে ঙ মিষ্টি হেসে বলেন— মনে হচ্ছে জামিন হবে তোমার!

—জামিন হবে? সত্যিই হবে? অনেকটা আনন্দ আর খানিকটা সংশয় নিয়ে তাকাই।

—তোমার উকিল একটু আশ্বাস দিয়েছেন।

—কি করে হল সব?

—তুমি জানো না প্রতিদিন মিটিং হচ্ছে ইউরোপিয়ান ডিপ্লোমেটদের সঙ্গে সরকারের। সম্ভবত তাদের চাপেই সরকার বাধ্য হয়েছে বেইলের ব্যাপারে গ্রিন সিগন্যাল দিতে।

—হাইকোর্ট কি সরকারের কথা শুনবে? হাইকোর্ট তো ইনডিপেনডেন্ট।

—তা ঠিক। দুএকজন ভাল জাজ আছেন। ওদের সঙ্গেও বোধহয় মিটিং টিটিং হয়েছে।

আনন্দ লাফিয়ে লাফিয়ে নাচে আমার বুকের ভেতর। এতদিনে তবে আমার এই কফিন- জীবনের অবসান হবে! ঝ আমার পিঠে চাপড় দিয়ে বলেন — কী , বিশ্বাস হচ্ছে এখন!

স্তব্ধতা থেকে নিজেকে তুলে নিয়ে বলি— সত্যি বলি তোমাকে, মনে হয় স্বপ্ন দেখছি।

ঙ আমার হাসি-মুখে তাকিয়ে বললেন যে কেবল ইউরোপের সরকারই নয়, আমেরিকার সরকারও চাপ দিচ্ছে খুব। পনেরো জন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন। ডেমোক্র্যাটিক আর রিপাবলিকান দুদলের লোকেই এই চিঠিতে সই করেছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, বলছেন তাঁরা। তোমার নিরাপত্তার জন্যই মূলত চিঠিটি। ঝ প্রশ্ন করেন, ওকে কি যেতে হবে কোর্টে?

ঙ বলেন, মনে হয় না। মনে হয় ওর অনুপস্থিতিতেই ওর জামিন হবে।

এবার আমি উত্তেজনায় সত্যি সত্যি দাঁড়িয়ে যাই। বড় করে শ্বাস নিই।

আমাকে হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে ঙ বলেন —তোমার তো নরওয়েতে একটা আমন্ত্রণ আছে। কবে সেটা?

—বোধহয় সেপ্টেম্বরে।

—সুইডেনেও কি আমন্ত্রণ আছে?

—আছে। কবে অনুষ্ঠান সুইডেনে তা মনে নেই।

—জামিন হয়ে গেলে সম্ভবত তোমাকে চলে যেতে হবে দেশ ছেড়ে।

চমকে উঠি।

—চলে যেতে হবে! কোথায়?

—যে কোনও একটি দেশে।

—কেন?

—যেতে হবে।

—কারণটা কী?

—তোমার নিরাপত্তার জন্য। বাঁচতে তো চাও, নাকি চাও না?

—কতদিনের জন্য?

—অনুষ্ঠানের জন্য যতদিনই লাগে।

—বিদেশে আমার সাতদিনের বেশি ভালো লাগে না। প্যারিসের মত জায়গাতেও অস্থির হয়ে উঠছিলাম দেশে ফেরার জন্য।

—এবার অস্থির হলে চলবে না।

—কেন চলবে না? অনুষ্ঠান শেষে তো চলে আসব!

—মনে হয় না।

—তবে কি?

—এত আমাকে জিজ্ঞেস কোরো না। এত আমি জানি না। তবে জানি এটাই হল কনডিশান।

—কিসের কনডিশান?

—জামিনের।

—জামিন দেবে তারা এই শর্তে যে আমাকে চলে যেতে হবে দেশ ছেড়ে?

ঝ সন্তর্পনে কান পেতে মন পেতে শুনছিলেন ফিসফিসিয়ে বলা কথাগুলো, এখন সিগারেটে জোরে টান দিয়ে জোরে ধোঁয়া ছেড়ে বললেন—তার মানে অ্যামবেসিগুলো সরকারকে রাজি করিয়েছে বেইল দিতে, সরকার রাজি হয়েছে একটি শর্তে যে ওকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই তো!

ঙ মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেন। অন্য কেউ নেই ঘরে, তারপরও এদিক ওদিক দেখে নিয়ে গলা চেপে বললেন—নরওয়ে তো বলেছে সাহায্য বন্ধ করে দেবে বাংলাদেশকে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অনেক দেশই সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

—আপনার সঙ্গে কি করে দেখা হল অ্যামবেসির লোকদের?

—আমি দেখা করেছি। তারপর ওঁরাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন নিয়মিত। ঙ বললেন।

—কতদিন দেশের বাইরে থাকব?

—যতদিন না দেশের অবস্থা একটু ভাল হয়।

সুখের সঙ্গে একটি দুঃখ এসে মেশে। আমাকে করুণ সুরে বাজাতে থাকে।

 

ঙ চলে গেলে ঝকে জিজ্ঞেস করি, কবে দেশের অবস্থা ভাল হবে বল তো!

—তিন চার মাসেই মোল্লারা সোজা হয়ে যাবে।

—ঠিক বলছ?

—ঠিক বলছি। তুমি দেখে নিও।

ঝ আমাকে নতুন ক্যানভাস এনে দিয়ে বলেন— দেশের অবস্থা নিয়ে আপাতত চিন্তা বাদ দাও। ছবি আঁকো।

—ধুত তোমার এত ক্যানভাস, এত রং নষ্ট করার কোনও মানে হয় না। আমি তো ছবি আঁকতে জানি না।

—তুমি আঁকতে না জানলে তোমাকে কি আমি দিতাম এগুলো? আগেই তো তোমাকে বলেছি, তুমি আঁকা চালিয়ে গেলে শিল্পী হিসেবে বেশি নাম করবে। লেখক বা কবি হিসেবে যত নাম করেছো, তার চেয়ে অনেক বেশি।

—আর লজ্জা দিও না তো! এমনি শখের ছবি আঁকা। জীবনে তো শিখিনি কখনও।

—যার প্রতিভা থাকে তার শিখতে হয় না।

ঝর প্রেরণায় তুলি হাতে নিই। সাদা ক্যানভাসে থোক থোক রঙ বসিয়ে দিতে থাকি। একটি মেয়ে, নদীর পাড়ে মেয়েটি পড়ে আছে, গলা কাটা। শাড়ি আলুথালু, ব্লাউজ ছেঁড়া। সূর্য ডুবছে। আরেকটি ক্যানভাসে একটি মেয়ে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে। জিভ বেরিয়ে এসেছে। পায়ের তল থেকে চেয়ার সরে গেছে। রং করি আর পেছনে গিয়ে দেখি ছবি, সামনে এসে দেখি। ডানে মাথা ঘুরিয়ে দেখি, বামে ঘুরিয়ে দেখি। হঠাৎ লক্ষ্য করি, ঝ তাঁর ভিডিওতে তুলে রাখছেন ছবিতে মগ্ন হয়ে থাকা আমাকে।

ঝ তন্ময় হয়ে আমার আঁকা দেখেন। আমি ঘোরের মধ্যে আঁকতে থাকি। একটি ছবি শেষ করে আরেকটি শুরু করি। হাতে রঙ, কাপড় চোপড়ে রঙ, গালে গলায় রঙ। রাত দুটো কি আড়াইটার সময় বাড়ির সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে, ঝর একটি শখ হয়, শখটি হল আমাকে তাঁর বাড়িটি দেখাবেন। প্রস্তাবটি আমার বেশ লাগে। ঝর পেছন পেছন আমি বেরোই। নিচতলা, দোতলা আর তিনতলার প্রতিটি ঘর বারান্দায় ঘুমন্ত মানুষগুলো যেন কোনও শব্দে জেগে না ওঠে, এমন করে বেড়ালের মত নিঃশব্দে হাঁটি আমরা। তিনতলায় একটি বড় স্টুডিও আছে ঝর। ঝর আঁকা সব ছবি, ভাস্কর্য স্তূপ করে রাখা। স্টুডিওটি খুব বড়, বাইরের আলো আসার জন্য দেয়ালে না হয়ে ছাদে বসানো হয়েছে কাচের জানালা। বাড়িটি সাধারণ কোনও সাদামাটা বাড়ির মত নয়, পুরো বাড়িটিই আধুনিক স্থাপত্যশিল্প। নিজেই ঝ এই বাড়ির স্থপতি। ঝ র বয়স খুব বেশি নয়, এই বয়সেই তিনি যশ খ্যাতি সব অর্জন করেছেন। তাঁর জন্য আমার গর্ব হয়। গর্ব হয় একটি মেয়ে হয়ে এই বাংলাদেশের মত দেশে নিজের চেষ্টায় এই অবদি পৌঁছতে পেরেছেন বলে। প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছেন। তাঁর যা হয়েছে তাঁর নিজের কারণেই হয়েছে। কেউ তাঁকে দয়া করে তাঁর খ্যাতিটি তাঁর হাতে ধরিয়ে দেয়নি। কেউ তাঁকে এত উঁচুতে কোনও মই এনে তুলে দেয়নি। স্বাধীন এবং সচ্ছল একটি জীবন পেতে তিনি সংগ্রাম করেছেন। ঝর মত মান সম্মান যশ খ্যাতি কিছুই আমার নেই। তাঁর মত দৃঢ়চিত্ত-চরিত্র আমার নেই। ধন থাকলে বেশির ভাগ মানুষের মন থাকে না। কিন্তু ঝ সেই বেশির ভাগ ধনীর মত নন। ঝ অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে পারেন। সৎ কিন্তু ক্ষ্যাপা, দরিদ্র কিন্তু আদর্শবাদী ছেলে মেয়ে নিয়ে একটি দল গড়ে তুলেছেন তিনি। দরিদ্রদের পক্ষে থাকলে নিজে দরিদ্রের জীবন যাপন করতে হবে তা তিনি মানেন না। তিনি মনে করেন, সবার জন্যই ধন প্রয়োজন, এবং সেই সংগ্রাম তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের নিরাপত্তার জন্য তাঁর যা প্রয়োজন, সব তিনি নিশ্চিত করেছেন। আজ তিনি যদি এই অবস্থায় না থাকতেন, তবে তিনি কিছুই করতে পারতেন না যা করছেন। সমাজ বদলের চিন্তা ধারে কাছে ভিড়ত না যদি না সামান্য অন্ন যোগাতেই দিন পার হত।

বাকি রাতটুকু পাশাপাশি শুয়ে আমরা কথা বলি। বিদেশ যাবার এই প্রস্তাবটি ঠিক কিরকম আমি তখনও বুঝতে পারছি না। ঝ বললেন যে তাঁর মনে হয় এটিই একমাত্র আমার মুক্তির পথ এবং আমার খুশি হওয়া উচিত যে একটি সহজ মুক্তির পথ আমার জন্য ঘটেছে। আজ যদি এটি না ঘটত, তবে তো মৃত্যু ছিল অবধারিত। বাকি একটি পথ ছিল সেটি অবৈধভাবে পালিয়ে যাওয়া দেশ ছেড়ে। ওভাবে পালালে আমাকে আর কখনও দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না, আমার সহায় সম্পত্তি যা আছে সব সরকার নিয়ে নেবে। এখন জামিন নিয়ে বৈধভাবে দেশ ছাড়া হবে, এটির চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না। জানি এর চেয়ে আমার জন্য আর কোনও ভাল সমাধান নেই। তারপরও মন যেন কেমন করে।

সকল অধ্যায়

১. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০১
২. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০২
৩. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৩
৪. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৪
৫. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৫
৬. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৬
৭. ২. তাণ্ডব – ০১
৮. ২. তাণ্ডব – ০২
৯. ২. তাণ্ডব – ০৩
১০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০১
১১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০২
১২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৩
১৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৪
১৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৫
১৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৬
১৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৭
১৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৮
১৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৯
১৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১০
২০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১১
২১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১২
২২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৩
২৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৪
২৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৫
২৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৬
২৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৭
২৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৮
২৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৯
২৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২০
৩০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২১
৩১. ৪. দেশান্তর – ১
৩২. ৪. দেশান্তর – ২
৩৩. ৪. দেশান্তর – ৩
৩৪. ৪. দেশান্তর – ৪ (শেষ)
৩৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২২
৩৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৩
৩৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৪
৩৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৫
৩৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৬
৪০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৭
৪১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৮
৪২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৯
৪৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩০
৪৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩১
৪৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩২
৪৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৩
৪৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৪
৪৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৫
৪৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৬
৫০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৭
৫১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৮
৫২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৯
৫৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪০
৫৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪১
৫৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪২
৫৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৩
৫৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৪
৫৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৫
৫৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৬
৬০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৭
৬১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৮
৬২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৯
৬৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫০
৬৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫১
৬৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫২
৬৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৩
৬৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৪
৬৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৫
৬৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৬
৭০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৭
৭১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৮
৭২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৯
৭৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬০
৭৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬১
৭৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬২

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন