তসলিমা নাসরিন
উনিশ জুলাই, মঙ্গলবার
আমেরিকা রাগ করেছে। আমেরিকার দূতাবাস ঘেরাও অভিযানের খবর পেয়ে রাগ। আমেরিকার দূতাবাস মোল্লারা বলেছিল বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে, তাই রাগ। রেগে মেগে বলেছে, দেখ বাপু আমরা তোমাদের দাতাদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম, সুতরাং বুঝে সুঝে চল। আমরা যে বটমলেস বাস্কেটকে সাহায্য দিয়ে যাবো প্রতিবছর, তার তো কিছু শর্ত আছে। শর্তগুলো আবারও বলছি, মন দিয়ে শোন। ১. সাহায্য গ্রহীতা দেশে মার্কিন বিরোধী প্রচারণা চলবে না। ২. সাহায্য গ্রহীতা দেশে মার্কিন জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে হবে। ৩. বাংলাদেশের মানবাধিকার সংরক্ষণ, জনগণের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
এসব যদি না মেনে চলে বাংলাদেশ, তবে, আমেরিকা বলেনি যে এ দেশকে পারমাণবিক বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে, বলেছে অসন্তুষ্ট হবে। পৃথিবীর একনম্বর পরাশক্তিকে নাখোশ করার ইচ্ছে হলেও সাহস অনেক দেশের নেই। না হোক, কিন্তু মৌলবাদীরা আজকাল কাউকে পরোয়া করছে না। তারা লং মার্চের সমর্থনে সভা সমাবেশের আয়োজন করেই চলেছে।
এবার বলছে, ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সব মতের অনুসারীদের রুখে দাঁড়াতে হবে। বলছে, ধর্মদ্রোহী বা নাস্তিকরা যা করছে, তা শুধু ইসলামের বিরুদ্ধেই নয়, ওরা বিভিন্ন ধর্মমতে বিশ্বাসী সকল মানুষের অন্তরেই আঘাত হানে। এসব ধর্মদ্রোহী ও নাস্তিক সকল ধর্মেরই শত্রু। সুতরাং এদের বিরুদ্ধে সকল ধর্মমতের অনুসারীদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সকল ধর্মের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থেই ব্লাসফেমী আইন এবং ধর্মদ্রোহীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দানের ব্যবস্থা করতে হবে। ইসলাম ও রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা প্রতিরোধ মোর্চা আগামী ২৯ জুলাইয়ের লং মার্চ ও মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে লং মার্চ প্রচার সপ্তাহ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সময় সারাদেশে জনসভা, বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ, গণসংযোগ দেয়াল লিখন পোস্টারিং ও হ্যাণ্ড বিল বিতরণের ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। ২৯ জুলাই সারা দেশ থেকে বাস ও লঞ্চে করে কাফেলা আনার জন্য এখন থেকেই জোরদার তৎপরতা চালানোর জন্য মোর্চার জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতা কর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিরোধ মোর্চার পক্ষ থেকে আগামী ২২ জুলাই শুক্রবারকে দোয়া ও বিক্ষোভ দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। এ দিন ঢাকাসহ সারাদেশের মসজিদে ২৯ জুলাইয়ের লং মার্চ ও মহাসমাবেশের সফলতা কামনা করে বাদ জুমা বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মোর্চার পক্ষ থেকে দেশের সকল মসজিদের খতিব ও ইমামদের জুমার খুৎবার আগে এই মহান কর্মসূচী সম্পর্কে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে বক্তব্য রাখার এবং বাদ জুমা মোনাজাত করার আহবান জানানো হয়। এছাড়া জুমার নামাজের পর প্রতিটি মসজিদে ও মহল্লা থেকে এর সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করার জন্য অনুরোধ করা হয়। এ দিন বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট থেকে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে।
সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের নেতারা সারা দেশে ছড়িয়ে গেছেন। অন্য ধর্মের মানুষদেরও সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করার ইচ্ছে ওদের। তা ঠিক, ধার্মিকে ধার্মিকে তো গোল বাঁধার কথা নয়, তাঁরা তো একই স্বার্থ নিয়ে পৃথিবীর পথে চলছেন। নরসিংদীতে মোর্চার সভাপতি বলেছেন, নাস্তিক মুরতাদরা যখন ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে তখন কোনও ধর্মাবলম্বীরাই বাদ পড়ে না। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের ওপরই আঘাত আসে। আসুন আমরা সকল ধর্মের অনুসারীরা নাস্তিক মুরতাদ তথা ধর্মদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে ওদের উৎখাত করি। তার পর আমরা এই মাটিতে সবাই স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করব। ইসলাম কারও ধর্মে আঘাত করে না। .. আল্লাহ রসুল ও ইসলাম সম্পর্কে শয়তানী শক্তি কটূক্তি করবে আর আমরা ঘরে বসে থাকব তা হতে পারে না। শহীদ অথবা গাজি হবার অভিপ্রায় নিয়ে আলেম ওলামা ও পীর মাশায়েখরা খানকা ছেড়ে রাস্তায় নেমেছেন। বাতিল শক্তির পতন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ঘরে ফিরে যেতে পারেন না। আপনারা যে যার অবস্থান থেকে সকল বাধা অতিক্রম করে ২৯ জুলাইএর লংমার্চে যোগ দিন, সেদিন ঢাকায় এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে যাতে নাস্তিক মুরতাদদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায়।
দেশ আজ দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। একটি ইমানী আরেকটি কুফরি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে, এদেশে ইমানী শক্তি থাকবে না কুফরি শক্তি থাকবে। এই কথা অন্য বক্তারা বলেন। সারাদেশের বিভিন্ন মসজিদে মাওলানারা কোরান সম্পর্কে তসলিমার ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তির জন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক গুরুত্বপূর্ণ মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসীরা বাংলাদেশে নাস্তিক মুরতাদ ও ইসলামবিরোধী শক্তির সাম্প্রতিক ন্যাককারজনক অপতৎপরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সালমান রুশদির দোসর, সাম্রাজ্যবাদের দালালরা বাংলাদেশে যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে আমরা প্রবাসীরা তাতে উদ্বিগ্ন। কুখ্যাত তসলিমা নাসরিন আমাদের অন্যদেশী সাথীদের সামনে আমাদের মাথা নিচু করে দিয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার অবিলম্বে তার শাস্তির ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের সুনাম রক্ষা করবেন।
ইসলামী ছাত্র পরিষদের নেতারা বলছেন, মৌলবাদ শব্দ মুসলমানদের জন্য অহংকারের বিষয়। মূল ছাড়া কোনও বস্তু বা জীব পরজীবী বা পরগাছা। এ দেশের তৌহিদী মুসলমানরা কোনও পরগাছা বা পরজীবী নন। তাদের বংশ পরিচয় আছে। তাছাড়া সৃষ্টিকর্তার সাথে রয়েছে তাদের গভীর সম্পর্ক। মানুষ হিসেবে যাদের মূল নেই তারা জারজ। তাই মৌলবাদ বলা হলে মুসলমানরা গর্ব অনুভব করে। যে মুহূর্তে কোরান হাদিস আল্লাহ রসুলএর ওপর আঘাত আসছে সে মুহূর্তে সকল আলেম ওলামা, পীর মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতাকে এক মঞ্চ থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলামবিরোধী অপশক্তির মোকাবিলায় জেহাদের জন্য প্রস্তুত থাকবে হবে। সরকার দেশের ১১ কোটি মানুষকে ধোঁকা দিয়ে নামকাওয়াস্তে তসলিমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে রেখেছে। অপরদিকে বিদেশি প্রভুদের খুশী রাখতে সরকারি নিয়ন্ত্রণে বিদেশি প্রভুদের আস্তানায় তসলিমাকে হেফাজতে রেখেছে। সরকার এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে তাকে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম আঁস্তাকুড়ে পতিত হতে হবে। সভায় তসলিমাকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় তৌহিদী জনতা নিজেরাই আইনকে হাতে তুলে নেবে।
ইসলামী ছাত্রসেনা দল থেকে বলা হচ্ছে, যে, ধর্মদ্রোহীরা দেশ, জাতি, কোরান সুন্নাহ, নবী আওলিয়া ও পীর, আলেম ওলামার বিরুদ্ধে ধৃষ্টতাপূর্ণ লেখা ও বক্তব্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মুরতাদ তসলিমা নাসরিন ও তার সহযোগিরা আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম ও কোরান সুন্নাহ সম্পর্কে কটাক্ষ ও ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে কোটি কোটি ঈমানদার মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। অথচ সরকার তাদের গ্রেফতার ও শাস্তির ব্যাপারে তেমন আন্তরিক নয়। ধর্ম অবমাননা রোধ করে জাতীয় সংসদে কঠোর আইন প্রণয়ন করলে ধর্মদ্রোহীদের দুঃসাহসের অবসান ঘটবে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন