তসলিমা নাসরিন
কুড়ি জুন, সোমবার
গতকাল প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির অপতৎপরতা রোধ করতে জাতীয় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রগতির পক্ষের সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকরা ছিলেন, নামী সাংবাদিকরা ছিলেন, শামসুর রাহমান, কবীর চৌধুরী, কে এম সোবহান, নীলিমা ইব্রাহিম ছিলেন। দুজন আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন, আবদুর রাজ্জাক আর আমির হোসেন আমু। পাঁচ দলের নেতা কাজী আরেফ আহমেদ ছিলেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির লোকও ছিলেন। কমিটিতে শামসুর রাহমান আহবায়ক, আজকের কাগজের সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমদ সদস্য সচিব। আগামী ৩০ জুন সকাল ১০টায় ঢাকাসহ সারাদেশে প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে জাতীয় প্রতিরোধ কমিটি। সেদিন সকলকে সাইকেল-রিক্সা, মটর সাইকেল, গাড়ি, বাস, ট্রাকসহ যে যেভাবে পারেন যানবাহনযোগে ঢাকাসহ সারাদেশে সংশ্লিষ্ট প্রেসক্লাবে সমবেত হওয়ার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে আহবান জানানো হয়েছে। দেশের সকল স্তরে জাতীয় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করারও আহবান জানানো হয়।
জামাতে ইসলামী বা কোনও মৌলবাদী দল আজ পর্যন্ত এ দেশের কোনও ক্ষুদ্র অঞ্চলেও হরতালের ডাক দেওয়ার সাহস পায়নি। আজ তাদের সাহস কতদূর পৌঁচেছে যে তারা দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিচ্ছে। এ সাংঘাতিক একটি ঘটনা বটে।
সাম্প্রদায়িক অপশক্তি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সামাজিক সাংস্কৃতিক মোর্চা গড়ার চিন্তা ভাবনা করছে অনেকে। দেশজুড়ে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ধ্বংসের চক্রান্তে লিপ্ত ফতোয়াবাজ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক শক্তির সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি মোর্চা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
লেখক শিবির বলছে হরতাল প্রতিরোধ কর। জাসদ বলছে, কেবল প্রতিরোধ নয়, স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী চক্রকে সমূলে উচ্ছেদ করতে হবে। ঢাকার রাজপথে এতদিনে মিছিল বেরোলো মৌলবাদ বিরোধী দলের।
ধর্মের নামে ফতোয়াবাজি, উন্মাদনা, উস্কানি রুখে দাঁড়াও
সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদের কালো হাত গুঁড়িয়ে দাও।
নেতারা বলেছেন, ৩০ জুন হরতাল কর্মসূচির দাঁতভাঙা জবাব এদেশবাসী দেবে। বলেছেন, আমাদের স্বাধীনতা ও পতাকার ওপর বিষ ফণা তুলে আছে একটি অশুভ শক্তি, যে কোনও মূল্যে এদের রুখতে হবে। ছাত্রনেতারা ইনকিলাব আর দৈনিক সংগ্রাম নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়। ২৩ জুন মিছিল, সমাবেশ, ২৫ জুন ফতোয়াবাজদের প্রতিরোধ করার দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। হরতাল প্রতিরোধ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন এসেছে টেলিভিশন এবং মঞ্চ নাটকের বিখ্যাত অভিনেতা অভিনেষনীর কাছ থেকে।
ওদিকে গতকাল মাদ্রাসার ছাত্ররা সংসদ ভবনের দিকে বিশাল মিছিল নিয়ে গেছে। তসলিমার ফাঁসির দাবিতে সংসদ ভবন ঘেরাও অভিযান। ৩০ জুনের হরতালবিরোধী মহল মুতরাদচক্রের দোসর ও সমর্থক, এই ঘোষণা দিয়েছে ইতিমধ্যে। বাংলাদেশের শহর বন্দর , গ্রাম গঞ্জ নির্বিশেষে সর্বত্র জোর আওয়াজ উঠেছে ধর্মদ্রোহী তসলিমা ও নাস্তিক আহমদ শরীফসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গ ও মদতদাতাদের ফাঁসি দিতে হবে। তসলিমা নাসরিনের ফাঁসি কার্যকর, জনকণ্ঠ নিষিদ্ধ, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা এবং এনজিওদের. ব্লা ব্লা ব্লা। ইসলামী ছাত্র শিবির বলেছে, দেশ থেকে মুরতাদচক্রকে উৎখাত করতে হবে। ইসলামী চিন্তাবিদরা ঐক্যের আহবান জানিয়েছেন। জাতীয় সুন্নী গণআন্দোলন প্রস্তুতি পরিষদের নেতারা বলেছেন সারা বিশ্বের মুসলমানদের মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
কেবল ছাত্রঐক্যের মিছিল নয়। বাসদের মিছিল বেরিয়েছে।
যুদ্ধাপরাধী ও ফতোয়বাজদের অশুভ আঁতাত রুখে দাঁড়াও
মৌলবাদীদের মিছিল, এবং মৌলবাদবিরাধী দুটো দলের মিছিল। এ দুই মিছিলের মধ্যে মৌলবাদীর মিছিলে যদি ৩০ হাজার লোক, মৌলবাদ বিরোধীতে ৩০০ লোক। এটি শুনতে ভাল লাগে না, এটি দেখতে ভাল লাগে না, এটি বিশ্বাস করতে ভাল লাগে না, তবে এটিই সত্য ঘটনা।
কলাম লেখা চলছে পুরোদমে। দু দলের পত্রিকায় সমানতালে। ফয়েজ আহমেদ লিখেছেন দেশের স্বার্থে ৩০ জুন অপশক্তির বিরুদ্ধে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কৃষ্ণপদ সরকার লিখেছেন জাতীয় জীবনে এখন এসেছে বড় কঠিন সময়। বিপক্ষ দল থেকেও একটি ভাষায় আক্রমণ চলছে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন