৩. অতলে অন্তরীণ – ০৫

তসলিমা নাসরিন

আট জুন, বুধবার

যে ঘরটিতে আমাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে, সে ঘরটিতে একটি জানালা আছে, জানালাটি বন্ধ। ঘরে কোনও পাখা নেই। জুন মাসের গা সেদ্ধ করা গরম। সারারাত গরমে ঘামি, ছটফট করি, উঠে বসি, আবার শুই। মশা ভনভন করছে, কামড়াচ্ছে। অন্ধকারে এপাশ ওপাশ করছি, জলতেষ্টায় কাতরাচ্ছি, কোথায় আলো পাবো, জল পাবো, একটি হাতপাখা পাবো, জানি না। এক রাতেই ঘামাচিতে ভরে গেছে পুরো মুখ। মশার কামড়ের লাল লাল দাগ হাতে পায়ে গালে গলায়। সকালে এককাপ চা খাবার তৃষ্ণায় অস্থির হই। কিন্তু কোথায় পাবো চা! এ বাড়িতে চায়ের চল নেই। চ সকালেই তাঁর চার বছর বয়সী কন্যাটিকে নিয়ে বেরিয়ে গেছেন, ওকে ইশকুলে ছেড়ে দিয়ে তিনি আপিসে যাবেন। বিকেলে বা সন্ধ্যায় ফিরবেন। চর স্বামী ঢাকার বাইরে থাকেন। এ বাড়িতে চ তাঁর কন্যা নিয়ে থাকেন, বাড়ির কাজ কর্ম করার জন্য দশ এগারো বছর বয়সী বল্টু নামের একটি ছেলে আছে। বল্টু রান্না বান্না করে খেয়ে দেয়ে খাবার ঘরে বসে থাকবে। আমি ঘরের দরজা বন্ধ করে পাখাহীন ঘরটিতে বসে থাকব। পেচ্ছ!ব পায়খানায় যেতে হলে আশপাশ দেখে নিয়ে মাথায় কাপড় চোপড় দিয়ে নিজেকে যতটা সম্ভব অচেনা করে ঢুকে যাবো। যদি ক্ষিধেয় মরে যেতে থাকি, কিছু খাবার পেটে না দিলেই নয়, তবে, টেবিলে, আশেপাশের বাড়ির বারান্দা বা জানালা থেকে কেউ কোনও রকম ছিদ্র দিয়েও যেন আমাকে দেখতে না পায় এমন ভাবে বসতে হবে, খেতে হবে। হাঁটাচলা করতে হবে নিঃশব্দে, যেন নিচের তলার লোকেরা টের না পায় যে এ বাড়িতে একটি মানুষ হাঁটছে। মাথার কাপড় যেন কখনও না খসে আমার, বল্টুর যেন কোনও সন্দেহ না হয় যে আমি চর কোনও দূর সম্পর্কের আত্মীয় নই, আমার স্বামী মারা যায়নি, আমি শহরের আত্মীয়দের কাছে অর্থ সাহায্যের জন্য আসিনি। বল্টুর সঙ্গে চোখাচোখি মুখোমুখি পারতপক্ষে না হলে ভাল। সদর দরজায় হঠাৎ বাইরে থেকে তালা পড়লে এখন সন্দেহ জাগবে। বল্টুর তো জাগবেই, প্রতিবেশিদেরও জাগবে। সুতরাং যা চ আগে করছিলেন, তাই করেছেন, শোবার ঘরে তালা দিয়ে গেছেন। খোলা শুধু রান্নাঘর আর গরম ঘরটি, আর এক চিলতে খাবার ঘর নামক জায়গাটি। সকাল পার হতে থাকে, চা পাওয়া হয় না, কিন্তু মাথায় লম্বা ঘোমটা টেনে, যেন গহীন গ্রামের লজ্জাশীলা ফুলবিবি, দুটি রুটি আধা চিবিয়ে আধা গিলে গরমে সেদ্ধ হতে চলে আসি জানালা বন্ধ ঘরটিতে। টেলিফোনের লেজটি বেরিয়ে এসেছে চর শোবার ঘরের দরজার তল দিয়ে। খাবার ঘর থেকে সরিয়ে ফোনটি শোবার ঘরে বন্দি করা হয়েছে। যেন আমি শিশু, আমার নাগাল থেকে কাচের বাসন কোসন সরিয়ে রাখা হচ্ছে। তা হোক, আমি তো অনেকটা শিশুই এখন, অন্যের ওপর নির্ভর করে আছি সব কিছুর জন্য। কোথায় সেই স্বাধীনচেতা মানুষটি! মানুষটির দিকে এখন তাকাতে পারি না। কী হচ্ছে দেশে, জামিন কবে পাবো, কবে মুক্তি পাবো এই লুকিয়ে থাকা থেকে! কিছুই জানি না। সম্ভবত কোনও জামিন আমার হবে না, সম্ভবত আমাকে ছুঁড়ে ফেলা হবে কারাগারে। এই কারাগারের মত বাড়িটিতে সম্ভবত আমার একরকম মহড়া চলছে সত্যিকার কারাগারে থাকার।

সকালেই ঙ আসেন। এসেই খাবার ঘরের জানালর কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের চারদিক দেখে আবিষ্কার করেন যে পাশের তিনতলা বাড়িটির বারান্দা থেকে এ বাড়ির খাবার ঘরটি চাইলেই কেউ দেখতে পারে। একটি পর্দা টাঙিয়ে দেবেন কী না জানালায় তা নিয়ে ভাবেন। কিন্তু আবারও ভাবেন যে হঠাৎ করে পর্দা টাঙিয়ে দিলে কারও যদি আবার সন্দেহ হয়! বাড়িতে একটি ঘোমটা পরা মহিলাকে দেখা গেছে একদিন, তার পরই জানালায় পর্দা ঝুলছে! সন্দেহের কারণ বটে। ঙ সরে আসেন জানালা থেকে, গলা চেপে বলেন, ওদিকটায় যেও না। যাবো না। ঙ কি আজ জানালা দরজা পরীক্ষা করতে এসেছেন! কোথায় আমি যাবো, কোথায় আমি যাবো না তা দাগিয়ে দিতে এসেছেন! না, এসব কারণে আসেননি ঙ। ঙ এসেছেন খুব জরুরি একটি কাজে। আমাকে দিয়ে এক্ষুনি তিনি একটি চিঠি লিখিয়ে নিতে এসেছেন, চিঠিটি আমাকে লিখতে হবে জাতীয় সংসদের স্পীকারের কাছে। ঙর কপালে, গালে, গলায় বিন্দু বিন্দু ঘাম, ঘাম গরমের নাকি ভয়ের তা নিয়ে যখন ভাবছি, বললেন, দেশের অবস্থা খুব খারাপ তসলিমা। আমরা কেউ বুঝে পাচ্ছি না কি হতে যাচ্ছে .। সংসদ ভবনে বাংলাদেশের পতাকার বদলে চাঁদ তারার পতাকা উড়েছে সেদিন।

এসব বলছেন কি! এত বড় স্পর্ধা ওদের!

আতঙ্ক আমাকে আঁকড়ে ধরে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঙ বলেন, দেশের মানুষকে কি জানাতে চাও, বল। তোমার কথা তাদের শোনা দরকার। কোরান সংশোধনের কথা যে বলনি তা লেখ।

বিরক্ত কণ্ঠে বলি, আমি তো বলেইছি যে আমি বলিনি। কতবার বলব!

আবার বল। আবার লেখ। এই চিঠি স্পীকারের কাছে যাবে, সব পত্রিকায় যাবে। আমি ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। তাঁরাও আমাকে বললেন যে স্পীকারের কাছে চিঠি লিখে দেখা যাক কি হয়।

–কী লিখব, আমি কোরান বিশ্বাস করি না সুতরাং কোরান সংশোধন করার কথা বলার আমার কোনও কারণ নেই!

–কোরান বিশ্বাস কর না, এ কথা বলার তোমার দরকার নেই এখন। এসব কথা আগে অনেক বলেছো। খুব বিনীত হয়ে এই চিঠিটি লেখ।

ঙ আমার দিকে কাগজ কলম এগিয়ে দেন। আমি দ্রুত লিখতে থাকি,

মাননীয় স্পীকার,

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ।

সম্প্রতি সরকার আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি নাকি কোরান শরিফ সংশোধনের কথা দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে বলেছি। অথচ কোরান শরিফ সংশোধনের কথা আমি কখনও কোথাও কোনওদিনই উচ্চারণ করিনি। আমার বিশ্বাস এবং মতবাদ নিয়ে আমার রচিত ২১টি বইয়ের কোনও বাক্যেও কোরান সংশোধনের প্রসঙ্গ নেই।

কলকাতার দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার জন্যে যে অমুসলমান মেয়েটি আমার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিল, সে কোরান ও শরিয়া আইনের মধ্যে কী পার্থক্য তা স্পষ্ট জানে না। তাই শরিয়া বিষয়ে আমার উত্তরকে কোরানের সঙ্গে যুক্ত করে ফেলে। তার প্রশ্ন ছিল, তিরিশের দশকে আল্লামা ইকবাল শরিয়া আইনের পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন, এ সম্পর্কে আপনার মত কি? আমি তখন উত্তরে বলি, শরিয়া আইনের অল্প পরিবর্তন আমি চাই না, ১৯৬১ সনে আমাদের দেশে শরিয়া আইনের কিছু পরিবর্তন ঘটেছে, কিন্তু আমি চাই সংশোধিত শরিয়া আইন অর্থাৎ মুসলিম পারিবারিক আইনের পরিবর্তে একটি আধুনিক আইন (য়শভপষক্ষল দভৎভর দষধন)যাতে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত হয়। এই দাবি আমার একার নয়, দেশের প্রতিটি নারী আন্দোলন সংস্থা এই দাবি দীর্ঘদিন থেকে করে আসছে। স্টেটসম্যানের অনভিজ্ঞ সাংবাদিকটি আমার এই বক্তব্যকে সংক্ষেপ করে শরিয়ার স্থলে কোরান বসিয়ে দিয়েছে। কোরান যে সংশোধন করা যায় না তা আমি এর আগের একটি প্রশ্নের উত্তরে স্পষ্ট করে বলেছি কোরানের একটি শব্দও কেউ কখনও পরিবর্তন করতে পারবে না। এই বক্তব্য দ্য স্টেটসম্যানের সাক্ষাৎকারে ছাপাও হয়েছে। ৯ই মে তারিখে বড় বড় ভুলসহ আমার সাক্ষাৎকারটি স্টেটসম্যানে ছাপা হবার পরদিনই আমি প্রতিবাদ করি, যা ওই পত্রিকার ১১মে তারিখে ছাপা হয়েছে। প্রতিবাদের মূল কথা ছিল, আমি কখনও কোথাও কোরান সংশোধনের কথা বলিনি। যারা এখন উদ্দেশ্যমূলক ভাবে যে কথা আমি বলিনি সে কথা প্রচার করে আমার ফাঁসি চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে, কোনও তথ্য যাচাই না করে আমাকেই আসামী করে সরকার মামলা রুজু করেছেন। এটি যে কোনও মানুষেরই মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি হতাশাজনক দৃষ্টান্ত। আমি এই অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করছি।

এটুকু লেখার পর ঙ বললেন, কোরানের আগে পবিত্র শব্দটি বসিয়ে দাও।

না, এটা লিখব না। আমি বলি।

পবিত্র শব্দটি জুড়ে দিলে কী ক্ষতি?

কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু কোরানকে আমি পবিত্র বলে মনে করি না। আমার বইগুলোতে কোরান সম্পর্কে বিস্তর সমালোচনা আছে। তাছাড়া বেদ বাইবেল ও কোরানের নারী নামের লেখাটি ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। সবাই জানে যে আমি কোরানকে মোটেও পবিত্র ভাবিনা। তাছাড়া পবিত্র লিখলেই কি না লিখলেই কি, কোরান তো কোরানই। যারা এটিকে পবিত্র মনে করে তারা করবেই।

ঙ ঠোঁট সজোরে যুক্ত করে ভেবে বলেন, নিরাপত্তার কথা লেখ। তোমার, তোমার ফ্যামিলির। ফ্যামিলির কাকে কাকে নাকি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তোমার বাবার ওপর হামলা হচ্ছে। মৌলবাদীরা ফাঁক খুঁজে বেড়াচ্ছে আক্রমণ করার জন্য।

লিখে যাই, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীরা এবং আমার প্রাণনাশের হুমকি প্রদানকারীরা কেবল আমার জীবন বিপণ্ন করছে না, আমার পরিবারের সদস্যদের জীবনও বিপন্ন করে তুলেছে। যে কথা আমি কখনও উচ্চারণ করিনি তার জন্যে আমাকে দায়ী করে আমার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে, সেই মামলা প্রত্যাহার করার জন্যে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমি সরকারের কাছে আমার এবং আমার পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আবেদন জানাচ্ছি।

এটুকুর পর ঙ বললেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে চাওনি এ কথা বল।

বলি, আমি যা সত্য মনে করি লিখি। কারও ধর্মীয় অনুভতিতে আঘাত লাগবে কি লাগবে না তা ভাবি না।

কিন্তু তুমি তো ইচ্ছে করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবার জন্য লেখ না। তোমার কি উদ্দেশ্য অন্যের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করা?

না এত স্থূল উদ্দেশ্য আমার নেই।

তবে লিখে দাও।

আশা করি আমার এই বিবৃতির পরে সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। কেননা আমার মতামত দ্বারা কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার কোনও ইচ্ছে আমার ছিল না, এবং নেই।

সই করি। তারিখ লেখার সময় ঙ আমাকে থামিয়ে একটু ভাবলেন, ভেবে বললেন, গতকালের তারিখ দাও।

কেন?

সবই তোমার নিরাপত্তার কারণে। আজকে যে লোক চিঠিগুলো চিঠির বাক্সে গোপনে রেখে আসবে, তার চিহ্নিত হলে চলবে না।

ঙ চলে যান, রেখে যান আজকের পত্রিকাগুলো।

এবার বন্ধ ঘরে বসে আগুনে পোড়ো। আগুন পাখাহীন হাওয়াহীন ঘরের নয়, আগুন পত্রিকার খবরের।

 

তসলিমার কর্মকাণ্ডে নাটের গুরুর ভূমিকায় ভারতের একটি মহল

দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা ইনকিলাবের প্রথম পাতায় প্রধান খবর হিসেবে ছাপা হয়েছে একটি চিঠি এবং চিঠির ওপর ভিত্তি করে মন্তব্য। _______________________________

25th May,1994

‘Dearest Taslima,

Further to our telephone conversation this afternoon, here is my latest information.

It seems that, due to an oversight by somebody in our financial depertment, a cheque of $ 5,144.21 ( the advance payment of Lajja), dated 15th of April and in your favour was sent directly to your address( instead of a bank order, to your bank account, as per my instructions).

This cheque was cashed and our account debited by the clearing bank in New York on the 19th of May. I have asked the BNP ( our bank) to fax me the copy of this cheque. I can’t understand what happened unless it was stolen and your signature forged.This is what we want to find out.

The two other payments were made according to my instructions on the 15th and 16th of May, and have gone to your bank who should have the money very shortly if not already.

Needless to say that I am pursuing my enquiries. I shall talk to our financial controller tomorrow to see how to solve the problem.

I am awfully worried about you, and the more furious that such a stupid thing should happen at such an inconvenient time.

With lots of love

Christaine Besse

বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা দীর্ঘদিন থেকে ইসলাম ধর্ম, আইন, ভারত বিভাগ, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, দেশের শ্রদ্ধাভাজন পীর মাশায়েখ, আলেম উলামাদের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক, অপ্রাসঙ্গিক ও আপত্তিকর মন্তব্য এবং লেখালেখি করে আসছেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, কথাবার্তা ও লেখালেখির মধ্যে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ খোলাখুলি প্রকাশিত হয়েছে। তসলিমার এসব কর্মকাণ্ডের পিছনে ইন্ধনদাতা তথা নাটের গুরু হিসেবে যে ভারতের একটি বিশেষ মহল কাজ করছে, তা আজ সুবিদিত। মূলত তসলিমা নাসরিনকে ভারত তার দীর্ঘলালিত মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব প্রসূত কর্মকাণ্ড বা সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য হাসিলের লক্ষ্যে প্রণীত নীল নকশা বাস্তবায়নের খুঁটি হিসেবেই ব্যবহার করছে। তাই দেখা যায়, ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী, রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী ভূমিকার জন্য তসলিমা নাসরিন যখন দেশপ্রেমী জনগণ কর্তৃক ধিকৃত ও ঘৃণিত, তখন ভারত ও সে দেশের একটি বিশেষ মহল তাকে পরম সমাদরে লুফে নিচ্ছে এবং নগদ অর্থ ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানসহ প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্ব প্রদান করে তাকে প্রায় দেবীর মহিমায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই যে উপন্যাস পড়ে মানুষ লেখিকার প্রতি ঘৃণা ও ধিককারে সোচ্চার হয়ে ওঠে, সেই লজ্জা উপন্যাস ভারতের উμচ মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য পাঠ্যসূচিভুক্ত করা হয়েছে। মিথ্যা ও বানোয়াট কথাবার্তায় ঠাসা উপন্যাস নামের এ অপ উপন্যাসটি পড়ে ইতোমধ্যেই ছাত্র ছাত্রীরা বিভ্রান্ত হতে শুরু করেছে। সেখানকার অভিভাবক মহলে এই বইটি পাঠ্য করায় তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে অতি সম্প্রতি লজ্জা উপন্যাস লেখার জন্য বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের ভারতীয় অর্থ পাওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। ভারতীয় বিশেষ মহলের সুকৌশলী ব্যবস্থাপনায় রুপি নয়, এখন তার নামে দফায় দফায় বিদেশি ডলার আসার চাঞ্চল্যকর প্রমাণ পাওয়া গেছে। তসলিমা নাসরিনের লজ্জা উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর এতে ভিত্তিহীন, মিথ্যা তথ্যের ব্যাপক উপস্থাপন দেশপ্রেমিক জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য ও তথ্যে ভরা এ উপন্যাসটি সার্বিকভাবে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী হওয়ার কারণে সরকার তা নিষিদ্ধ করে। কিন্তু বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি বিশেষ গোষ্ঠী ও মৌলবাদী দল বিজেপি লজ্জাকে লুফে নেয় এবং সেখানে উপন্যাসটির ব্যাপকভাবে মুদ্রণ ও প্রচার শুরু হয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সূষেন জানা যায় যে, বিজেপি এ উপন্যাসটি লেখার জন্য তসলিমাকে ৪৫ লাখ টাকা দিয়েছে। বাংলাদেশে তসলিমার অনুরাগী ও ভক্ত মহলটি সাথে সাথে সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং তসলিমাকে ভারতীয় অর্থ মদতানের বিষয়টি মৌলবাদীদের প্রচারণা বলে আখ্যায়িত করে একে ভিত্তিহীন প্রমাণের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু বিধি বাম। অতিসম্প্রতি অপ্রত্যাশিত ভাবে হস্তগত হওয়া তসলিমার নামে নিউইয়র্ক থেকে প্রেরিত একটি ফ্যাক্স থেকে তার ভারতীয় অর্থলাভের চাঞ্চল্যকর প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ফ্যাক্স থেকে দেখা যায় লজ্জা উপন্যাসের জন্য ভারত থেকে তসলিমাকে অর্থ প্রেরণের ঝুঁকি এড়াতে ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। তাই ভারত থেকে সরাসরি নয়, অর্থ প্রেরণ করা হয়েছে আমেরিকার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে। এভাবে ধর্ম রাষ্ট্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরোধী তসলিমা নাসরিনকে অর্থের মদদ জোগানো হচ্ছে — যা তসলিমাকে ধর্মপ্রাণ ও দেশপ্রেমিক মানুষের ধিককার ও প্রতিবাদের প্রতি অবহেলা ও উপেক্ষা প্রকাশের সাহস যোগাচ্ছে।

অন্যদিকে গত ৩ জুন কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা প্রথম পৃষ্ঠায় এক খবর প্রকাশ করেছে। এ খবরে বলা হয় বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বাগে আনতে মুসলিম মৌলবাদীরা এবার তাঁর বাবার ওপর চাপ দিতে শুরু করেছে। পত্রিকা জানায়, তসলিমার বাবা হওয়ার জন্য ডাঃ রজব আলীকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অবশ্য আনন্দবাজার পত্রিকা তসলিমা সম্পর্কে তার আব্বার মন্তব্যও তুলে ধরেছে। জনাব রজব আলী বলেছেন যে আমি ধর্ম বিশ্বাসী মুসলমান হিসেবে ওর(তসলিমা) ধর্মবিরোধী লেখা সমর্থন করি না। ধর্ম সম্বন্ধে ওর বক্তব্যের বিরোধী আমি। লক্ষণীয় যে, তসলিমার আব্বার এ সুস্পষ্ট বক্তব্য এবং অবস্থান সত্ত্বেও ধর্মবিরোধী লেখা থামাতে তসলিমার বাবাকে চাপ শিরোনামে খবরটি চিহ্নিত করার মধ্যে ভারতের ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী বিশেষ মহলটির সাথে আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর বিশেষ উদ্দেশ্যটিরই নগ্ন প্রকাশ ঘটেছে।’

________________________________

লেখাটি প্রায় এক নিঃশ্বাসে পড়ে আমি ভাবতে বসি, ক্রিশ্চান বেস এর পাঠানো ফ্যাক্স ইনকিলাবের লোকদের হাতে পড়ল কি করে! এই ফ্যাক্স আমি পাইনি। আমার যেহেতু ফ্যাক্স মেশিন নেই, ইয়াসমিনের আপিসের ফ্যাক্স নম্বরটিই ক্রিশ্চান বেসকে দিয়েছিলাম। ফ্যাক্সটি ইয়াসমিনের হাতে না পড়ে নিশ্চয়ই অন্য কারও হাতে পড়েছে। যার হাতেই পড়েছে, দিয়েছে ইনকিলাবের লোকদের। নাকি ক্রিশ্চান ফ্যাক্স নম্বর লিখতে ভুল করেছেন, আর গিয়ে পড়েছে কোনও ইনকিলাবের লোকের হাতে, অথবা অন্য কারও হাতে যে কি না ইনকিলাবের লোককে দিয়েছে! কিছু একটা হবে। তবে নিউইয়র্ক থেকে অবশ্যই এই ফ্যাক্স পাঠানো হয়নি। ফরাসি দেশের ফ্রাঁ নিউইয়র্কের ব্যাংকে ডলার হয়ে পরে বাংলাদেশের ব্যাংকে এসে টাকা হয়। এরকই নিয়ম। কিন্তু ইনকিলাব নিউইয়র্কের ব্যাংকের নাম দেখেই ভেবে নিয়েছে ফ্যাক্স নিউইয়র্ক থেকে এসেছে। ভেবে নিয়েছে অথবা ইচ্ছে করেই বানিয়ে লিখেছে। পত্রিকা ঘাঁটতে গিয়ে দেখি বিএনপি দলের পত্রিকা দৈনিক দিনকালে এই চিঠি ছেপে বিশাল করে লিখেছে তসলিমার কাছে ভারত থেকে সরাসরি নয়, ভায়া আমেরিকা হয়ে মোটা অংকের ডলার আসছে। ইয়াসমিন একবার বলেছিল, তার আপিসের মালিকের বড় ভাই মাইদুল ইসলাম বিএনপির সঙ্গে যুক্ত, জিয়ার আমলে মন্ত্রী ছিলেন। তিনিই কি তবে তাঁর দলের পত্রিকায় ছাপার জন্য চিঠিটি পাঠিয়ে দিয়েছেন! হতে পারে! আরেকটি পত্রিকায় আজকের খবর—

ধর্মদ্রোহী নাস্তিক তসলিমার আন্তর্জাতিক মদদদাতাদের আংশিক সন্ধান পাওয়া গেছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে ফ্রান্স থেকে পাঠানো এক ফ্যাক্স অনুযায়ী দেখা যায় ফ্রান্সের খ্রিস্টান বিশি তসলিমাকে তার লজ্জার জন্য অগ্রিম বাবদ পাঁচ হাজার ১৪৪ দশমিক ২১ ডলার পরিশোধ করেছে। এছাড়াও গত ১৫ ও ১৬ মে আরো দু দফায় অর্থ প্রদান করা হয়েছে। প্রাপ্ত ফ্যাক্স অনুযায়ী ১৫ এপ্রিলে পাঠানো প্রথম কিস্তির টাকা গায়েব হয়ে গেছে। এ নিয়ে দু পক্ষে ২৫ মে বিকেলে ফোনে আলোচনা হয়েছে। অর্থ গায়েব হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে ফ্রান্সের বিশি খুব দুশ্চিন্তায় আছেন। তাই তিনি লিখেছেন, আমাদের ব্যাংকের নিউইয়র্ক শাখা থেকে উল্লিখিত অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে বলে প্রমাণ রয়েছে। এ কারণে মিঃ বিশি তাঁদের ব্যাংক বিএনপিকে চেকের কপি পাঠাবার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর ধারণা স্বাক্ষর জাল অথবা চেকটি চুরি না হলে এ ঘটনা ঘটতে পারে না। কারণ চেকটি সরাসরি তসলিমার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। চেকটি ভুলবশত তসলিমার ব্যাংকের অ্যাকাউণ্টে না গিয়ে বাসায় গিয়েছে বলে ফ্যাক্সে বলা হয়েছে। ফ্যাক্সে উল্লেখ করা হয়েছে মিঃ বিশি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন রয়েছেন। উল্লেখ্য, তসলিমা নাসরিন তার বৈধ পাসপোর্ট ফেরত পাবার পর প্রথমে ফ্রান্স পরে নিউইয়র্ক ও কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তসলিমার লজ্জা উপন্যাস ভারতে বিজেপির মুখপত্র হিসেবে কাজ করছে।

এই পত্রিকার লোকের হাতেও ফ্যাক্স টি গেছে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। অন্তত এই লোকেরা জানে যে ফ্যাক্সটি পাঠানো হয়েছে ফ্রান্স থেকে। তবে কোন কোন দেশ হয়ে আমি বাংলাদেশে এসে পৌঁচেছি তা বলতে গিয়ে নিউইয়র্ক উল্লেখ করার সম্ভবত একটি কারণ, ফ্যাক্সে নিউইয়র্কের ব্যাংক প্রসঙ্গটি আছে, আমি ও শহরটা হয়ে এলে অর্থযোগের ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়। সুতরাং আমি ও শহরে না গেলেও পত্রিকাটি আমাকে ও শহরে ঘুরিয়ে আনবে, কার কি বলার আছে! বিজেপি আমাকে ৪৫ লক্ষ টাকা দিয়েছে লজ্জা লেখার জন্য, এটি যারা এতকাল বিশ্বাস করেনি, তাদের বিশ্বাস করাবার জন্য চমৎকার একটি প্রমাণ দেওয়া হল। অনেকে বলে, যা রটে, তা কিছুটা বটে। সুতরাং ৪৫ লক্ষের রটনা যে কিছুটা বটেও, সে ব্যাপারে আজ দেশের কত লক্ষ লোক নিশ্চিত হবে, অনুমান করতে চেষ্টা করি। মাথা বন বন করে ঘুরে ওঠে। আজ যদি ঙ আসেন, চ এসে সামনে দাঁড়ান, অথবা ক, অথবা খ, তাঁরা কী চোখে তাকাবেন আমার দিকে? নিশ্চয়ই বলবেন, যে, না, তোমাকে আমরা আর সাহায্য করতে পারছি না। তুমি এবার নিজের পথ দেখ। তবে কী করব আমি? বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা নেব? রিক্সায় আমি কতদূর যেতে পারব আমাকে রিক্সা থেকে টেনে নামিয়ে রাস্তায় যখন পিষে মারবে? আমার লাশ নিয়ে বড় একটি জয়ের মিছিল হবে সারা শহরে! ঠিক কতক্ষণ পর তা হবে, আমি বেরোনোর কত মিনিট পর! অনুমান করতে চেষ্টা করতে গিয়ে দেখি বমির উদ্রেক হচ্ছে। পেচ্ছ!বখানায় গিয়ে বল্টুর গু মুতের তীব্র গন্ধের মধ্যে দরজা বন্ধ করে মেঝেয় বসে থাকি। বমি আসছে কিন্তু আসছে না। গা জ্বলছে, গলা জ্বলছে। গোঙানোর শব্দ শুনতে থাকি নিজের। একসময় নিজেকে টেনে তুলে বিছানায় নিয়ে যাই। বিছানায় ছড়িয়ে আছে পত্রিকার স্তূপ। এক একটি হাতে নিই, চোখ বুলোই।

তসলিমাকে ধরতে পুলিশ কোর্ট এলাকায় ওৎ পেতে ছিল।

পুলিশ লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ জানিয়েছে যে তাকে গ্রেফতারের জন্য মতিঝিল থানা ও গোয়েন্দা শাখার একাধিক বিশেষ দল ঢাকা মহানগরী ও দেশের কয়েক জায়গায় তৎপরতা চালাচ্ছে। কোথাও তার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তসলিমা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে আসতে পারেন, এ ধরনের গুজবের প্রেক্ষিতে পুলিশ গত ২ দিন হাইকোর্ট ও জজ কোর্ট এলাকায় ওৎ পেতে ছিল। ( দৈনিক সংবাদ)

তসলিমাকে ব্যাপক খোঁজাখুঁজি

গত তিনদিনে তসলিমাকে ধরার জন্য দুই শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঢাকাসহ দেশের পাঁচ শতাধিক সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু তসলিমাকে পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের ধারণা, তিনি দেশের ভেতরেই আত্মগোপন করে আছেন। ঢাকা ময়মনসিংহসহ দেশের সকল সম্ভাব্য স্থানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। কড়া নজর রাখা হচ্ছে তসলিমার আত্মীয়স্বজনসহ ঘনিষ্ঠজনদের গতিবিধির ওপর। জয়দেবপুরের প্রভাবশালী যুবক কায়সারের আশ্রয়ে তসলিমা রয়েছেন, এ খবর পেয়ে পুলিশ সেখানেও অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তসলিমার বাসাসহ তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে এমন বেশ কয়েকটি টেলিফোনের কথাবার্তা পুলিশ রেকর্ড করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, সিএমএম আদালত ও হাইকোর্ট এলাকাতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। গত রোববার এক গোপন সূষেন খবর পেয়ে পুলিশ হোটেল শেরাটনের বেশ কয়েকটি কক্ষে অভিযান চালায়। (ভোরের কাগজ)

তসলিমাকে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে বিবৃতি বিক্ষোভ সমাবেশ

ধর্মদ্রোহী তসলিমা নাসরিনকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবিতে সারাদেশে সভা সমাবেশ বিবৃতি ও বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রয়েছে। নেতৃবৃন্দ ধর্মদ্রোহীদের ইসলামি বিধানমতে শাস্তি প্রদানের জোর দাবি জানান। জনকণ্ঠসহ ধর্মদ্রোহী সকল পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল, ধর্মবিরোধী বইপুস্তক নিষিদ্ধ এবং লেখক, প্রকাশক, সম্পাদকের কঠোর শাস্তি ও এনজিওদের অপতৎপরতা বন্ধের দাবিতে ৩০ জুন বৃহস্পতিবার ইয়ং মুসলিম সোসাইটি বাংলাদেশ আহুত দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতাল কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।

আজ সকাল ১১টায় হোটেল ওসমানী ইন্টারন্যাশনালএ সবুজবাগ, মতিঝিল, ডেমরা, সূত্রাপুর থানা ও ইউনিট প্রধানদের বৈঠক। একই দিন বিকাল ৫টায় সবুজবাগ থানা শাখার উদ্যোগে বাসাবো ওহাব কলোনির মোড়ে গণসমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় হোটেল ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এ লালবাগ, কোতায়ালি, রমনা, ধানমণ্ডি থানা ও ইউনিট প্রধানদের বৈঠক। একই দিন বিকাল ৩টায় বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ চত্বর ইসলাম ও রাষ্ট্রদ্রাহী তৎপরতা প্রতিরাধ মোর্চা ঘোষিত যুব সমাবেশে যোগদান। শুক্রবার সকাল ৯টায় হোটেল ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল মোহাম্মদপুর, মীরপুর, পল্লবী, তেজগাঁও, ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান, উত্তরা থানা ও ইউনিট প্রধানদের বৈঠক। একই দিন বাদ জুম্মা ইসলাম ও রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতা প্রতিরোধ মোর্চা আহুত মিছিলে যোগদান। গতকাল ৩৩ মিন্টো রোডে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দল আয়োজিত এক সভায় ধর্মদ্রোহী তসলিমা নাসরিনকে অবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। বড় কাটরা মাদ্রাসা ছাত্র সংসদের প্রতিবাদ সভায় তসলিমার ফাঁসির দাবি জানানো হয়। তমদ্দুন মজলিশ আয়োজিত আলোচনা সভায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তুল্য বিদেশি অর্থপুষ্ট এনজিওসমূহের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, কুখ্যাত তসলিমা নাসরিনসহ একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী ও কিছু পত্রিকার ইসলাম বৈরি তৎপরতা দমন এবং আমাদের স্বাধীনতা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং জাতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে বিদেশি মদদ পরিচালিত অপপ্রচার মোকাবেলা করার আহবান জানানা হয়। ফ্রীডম পার্টির আলাচনা সভায় বলা হয়, শত প্রলোভনের পশরা সাজিয় এদেশের মানুষকে ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য প্রলুব্ধ করা হলেও জনগণ তাদের ঈমান বিক্রি করবে না। চট্টগ্রাম মাদ্রাসা শিক্ষক মিলনায়তনে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা কুখ্যাত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের ইসলাম ও কুরআন সম্পর্ক ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা করেন এবং তার সকল বই বাজেয়াপ্ত করা এবং তার ফাঁসির দাবি করেন। ২৬৮ এলিফেন্ট রোডে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির (ন্যাপ ভাসানী) সভায় তসলিমা নাসরিন সহ সকল মুরতাদ ও ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে শাস্তির জোর দাবি জানানো হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ মুসলীম লীগ, বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া, ঈমান বাঁচাও দেশ বাঁচাও আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রসমাজ অবিলম্বে তসলিমাকে গ্রেফতার করে ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশ সীরাত মিশনের সভাপতি মাওলানা শাহ আবদুস সাত্তার অবিলম্বে তসলিমা নাসরিনকে খুঁজে বের করতে লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। ধর্মদ্রোহীদর শাস্তি প্রদান, সংসদে ধর্মদ্রোহীদের শাস্তি আইন পাসএর দাবিতে আজ বিকাল সাড় ৪টায় জামাতে ইসলামির উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে এক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন জামাতে ইসলামির সেক্রেটারি ও জামাত সংসদীয় দলের নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামি, প্রখ্যাত মোফাসসির কুরআন মাওলানা দেলোয়ার হোসন সাইদী ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। গণসমাবেশে দলে দলে যোগদান করার জন্য প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রতি উদাত্ত আহবান জানানা হয়েছে। সিলেট মৌলভীবাজারের ৮৫ জন আলেম, শিক্ষক ও বিশিষ্ট ব্যক্তি পৃথক দুটি বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা মনে করি দেশে ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত মুরতাদী অপতৎপরতা একটি গভীর আধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতার পরিকল্পিত অংশ। বিবৃতিতে জাতিকে একতাবদ্ধ দ্বীনি অনুপ্রেরণায় ইসলামদ্রোহী আধিপত্যবাদী এ সকল খ্রিস্টান মিশনারি ও ইহুদিবাদী চক্রান্তকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান করছি।

বরিশালে বিবির পুকুরপাড়ে বিকাল ৩টায় ইসলামি শাসনতন্ত্রের জনসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। (দৈনিক ইনকিলাব)

নাস্তিক মুরতাদদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়িতে হইবে

ইসলাম ও রাষ্ট্রাদ্রোহী তৎপরতা প্রতিরোধ মোর্চা গঠনের লক্ষ্যে গঠিত সমন্বয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও উলামা কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মুফতী ফজলুল হক আমিনী নাস্তিক মুরতাদদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশি আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। মোর্চা ঘোষিত ৯ ই জুনের যুব সমাবেশ ও ১০ই জুনের বিক্ষোভ দিবস সফল করার লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার লালবাগের জামেরা কোরানিয়া আরাবিয়ায় আয়োজিত এক দোয়া সমাবেশে বক্তৃতাকালে মাওলানা আমিনী বলেন, আল্লাহর নিদর্শন যে জাতি অবমাননা করে, আল্লাহর বিধান হইল সে জাতিকে ধ্বংস করিয়া দেওয়া। পবিত্র কোরানের সহিত যে চরম বেয়াদবি ও উপহাস করা হইতেছে তাহাতে যে কোনও সময় ্‌এই জাতি ধ্বংস হইয়া যাইতে পারে। তাই এ দেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে প্রতিটি মুসলমানকে প্রতিবাদমুখর হইতে হইবে। (দৈনিক ইত্তেফাক)

 

জামাতে ইসলামির পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামে আজকের সম্পাদকীয়

তসলিমাকে রক্ষার অভিনব উদ্যোগ

ধর্মদ্রোহী তসলিমার বিরুদ্ধে বিলম্বে হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যখন একটি জামিনের অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, তখন তসলিমাকে রক্ষাকারী ও তার অপসৃষ্ট মুদ্রণ-প্রচারের দায়িত্ব গ্রহণকারী এনজিও সেক্যুলারবাদীরা পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সম্ভবত পতাকা নাটকের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে। তসলিমা, আহমদ শরীফসহ মুরতাদ ইসলামবিরোধী মহলের ঢালাও অপপ্রচার ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে সারাদেশে যখন ধর্মপ্রাণ জনগণের মাঝে স্বতস্ফূর্ত ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে, তখন নাস্তিকতাবাদী মুরতাদপন্থীরা ষড়যন্ত্রের চোরাপথে তসলিমাকে রক্ষার জন্য নতুন নাটক শুরু করেছে। জাতীয় সংসদের কার্যক্রম যখন স্থগিত ছিল, তখন সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় পতাকার বদলে কে বা কারা এক টুকরো বিতর্কিত রঙিন কাপড় টানিয়ে দিয়েছে এবং এই নিয়েই তসলিমা পন্থীরা সারাদেশে তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেষেন বিরোধীদলীয় নেষনী শেখ হাসিনার ভূমিকাও তসলিমা ও মুরতাদপন্থীদের আস্কারা দেবে। তসলিমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিকে শেখ হাসিনা বাড়াবাড়ি বলে অভিহিত করে তার ও তার দলের অবস্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যে নারী জরায়ুর স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যে নারী পুরুষ ধর্ষণের মত অশালীন কুৎসিত কথা বলে, যে নারী পবিত্র কোরান সংশোধনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করে, শেষ হাসিনা সেই নারীর রক্ষক হতে চাইছেন। শেখ হাসিনাদের হজ্ব, মাজার জিয়ারত যে কত ভণ্ডামি এতেই তার প্রমাণ মিলছে। ইতিমধ্যেই কথা উঠেছে, ইসলামের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত হতে দেবার ক্ষেষেন শাসকদল ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। সরকারের যে পুলিশরা এতদিন তসলিমাকে নিরাপত্তা দিয়েছে, তাদের চোখকে এখন ফাঁকি দিয়ে তসলিমা কিভাবে আত্মগোপন করল? তসলিমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির সময়ই কি তাহলে তাকে খবর দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে? পুলিশ নাকি দশ মিনিটের ব্যবধানে তাকে ধরতে পারেনি। তসলিমার ব্যাপারে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রিতা নানাধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। সরকারের পুরো কার্যক্রমই মনে হচ্ছে আই ওয়াশ। অবশ্য স্পীকারও বলেছেন, তসলিমার ধর্মদ্রোহীতামূলক আচরণের প্রসঙ্গ জাতীয় সংসদে আলোচনা করা হবে। তবে তসলিমার মত একটি ধিকৃত নষ্ট মেয়েকে রক্ষা করার জন্য তার ভক্ত অনুরক্ত মৌলবাদবিরোধী চক্রটি শেষ পর্যন্ত জাতীয় পতাকার মত স্পর্শকাতর ইস্যুকেও ব্যবহার করে ছেড়েছে। পতাকা নামানো এবং সেখানে একখন্ড কাপড় ঝোলানোর এই ঘটনার জন্য সংসদ সচিবালয়ে প্রেসনোট ইস্যু করে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছে। এছাড়া এ ব্যাপারে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দেবার লক্ষ্যে ব্যাপক পুলিশী তদন্ত চলছে। কিন্তু তারপরও এনজিওবিরোধী ফতোয়াবাজ মৌলবাদীদের এ ব্যাপারে অভিযুক্ত করার অপপ্রয়াস চলছে। বামপন্থী গুটিকতক লোক এ নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে, মিছিল পর্যন্ত বের করেছে। এমনকি কেউ কেউ পতাকার মর্যাদা রক্ষায় সরকারী ব্যর্থতার প্রসঙ্গ টেনে সরকারের পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করেছে। একদল তো তসলিমার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নিন্দা করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে তারা নানা ধরনের বাক্যবান নিক্ষেপ করেছে। সরকার নাকি মৌলবাদীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তসলিমার বিরুদ্ধে যখন আদালতে মামলা বিচারাধীন, সেই অবস্থায় ইস্যুটি রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিভাবে? একশ্রেণীর পত্রপত্রিকা একই ইস্যুতে সংবাদপষেনর নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিকৃত উস্কানিমূলক খবর প্রচার করে যাচ্ছে। এই বাড়াবাড়ির অবসান হওয়া দরকার। সরকার যদি এসব সমাজবিরোধী শান্তিবিনাশী কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন না করে, তাহলে তসলিমাকে গুম করার নাটকও হয়ত আমাদের দেখতে হবে। কেননা, তসলিমা এখন মহলবিশেষের হাতে তুরুপের তাস। তসলিমা গ্রেফতারের নাটক যত চলতে থাকবে, পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে।

তসলিমা নাসরিনের ব্যাপারে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উদ্বেগ

তসলিমা নাসরিনের নিরাপত্তা বিধান এবং তার ওপর হয়রানি বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আহবান জানিয়েছে। ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কুটনীতিকরা তসলিমার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছেন তাঁর ব্যাপারে। মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তসলিমার বিরুদ্ধে যে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেই করা হয়েছে। কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তসলিমার উচিত আইন অমান্য না করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করা। (আজকের কাগজ)

তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদ

উইমেন ডেভেলপমেন্ট ফোরামের উদ্যোগে মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর নারীর সমঅধিকার ও উন্নয়ন বিরোধী অপতৎপরতার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সভায় তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতারি পরোয়ানার নিন্দা করা হয়। বলা হয়, তসলিমা পবিত্র কোরান সম্পর্কে কোনও কটূক্তি করেনি, সরকার এই মামলা করে মৌলবাদীদের উৎসাহিত করেছে। সভায় মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, মৌলবাদীরা ফতোয়া দিয়ে নারীপুরুষকে দোররা মারা, পুড়িয়ে মারা, বিষপানে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা, উন্নয়ন কার্যক্রমে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থার স্কুল অফিস পুড়িয়ে দেওয়া, জাতীয় পতাকার অবমাননা ইত্যাদি অপরাধ সংঘটিত হলেও এ নিয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্টমহল কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ হঠাৎ করেই সরকার তসলিমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছে। ২২ জন মহিলা সই করেন, রোকেয়া কবীর, সাহিদা বেগম, আফরোজা পারভিন, শিরিন বানু, সালেহা খাতুন..। নারীপক্ষ থেকেও বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। নারীপক্ষের আহবায়ক ফিরদৌস আজিম বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। সমনাগরিকত্বের সঙ্গে সঙ্গে বাক স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা, এবং এমন একটি পরিবেশ যেখানে বিভিন্ন ধরনের মতামত প্রকাশ করার সুযোগ প্রত্যেকটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে সুরক্ষিত — একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু রাখার জন্য এগুলোই হচ্ছে ন্যূনতম শর্ত। বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার এ পরোয়ানা জারি করে আমাদের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারকে আঘাত করেছেন। তিনি অবিলম্বে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার এবং তসলিমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রণ্টের আফরোজা বেগম তসলিমার গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের দাবি করেন। নারী নির্যাতন গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারি ফেডারেশনের পক্ষ থেকেও করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের ৫২ জন আইনজীবী একই দাবি জানান।

চট্টগ্রামের ফতেয়াবাদে তসলিমা পক্ষ, শিবচর থানার বরহামগঞ্জ তসলিমা পক্ষ তসলিমার বিরুদ্ধে জারিকৃত গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের দাবিতে সভার আয়োজন করে। (ইত্তেফাক)

 

জ্ঞানকে জ্ঞান দিয়ে মোকাবেলা করার মধ্যেই প্রক্রক্রক্রকৃত মনীষা নিহিত

মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট লেখক মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল আবীর আহাদ এক বিবৃতিতে তসলিমা নাসরিনকে সংগ্রামী এবং মানবতাবাদী লেখিকা হিসেবে আখ্যায়িত করে তথাকথিত ধর্মদ্রোহীতার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে সরকারের মামলা দায়েরকে দুর্ভাগ্য বলে অভিহিত করে বলেন, ধর্মের সমালোচনা করলে যদি ধর্মের ক্ষতি হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে ধর্মটি অতি ঠুনকো। কোরানে যেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ইসলামকে আল্লাহ নিজেই রক্ষা করবেন, সেখানে ইসলামের বিরুদ্ধে কে কি বলল না বলল তাতে কার কি আসে যায়? ধর্মের সমালোচনাকে গোনাহ বলে কোরানে উল্লেখ রয়েছে এবং গোনাহর বিচার করবেন একমাত্র আল্লাহ। সে ক্ষেষেন ইসলামের সমালোচনাকারীদের বিচারের ভার আল্লাহ কোনও মানুষকে দেননি। অথচ ইসলামের নামাবলী জড়িয়ে একশ্রেণীর অশিক্ষিত ধুরন্ধর মোল্লারা আল্লাহর দায়িত্বটা নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে প্রকারান্তরে তারাই আল্লাহ-দ্রোহিতার পরিচয় দিচ্ছে। অবিলম্বে তিনি এই দুর্বৃত্তদের চক্রকে শায়েস্তা করার জন্যে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান। (আজকের কাগজ)

আমি অবাক হচ্ছি, আমার বিরুদ্ধে সরকারের এই অন্যায় মামলার প্রতিবাদ করছেন না কোনও গণ্যমান্য লেখক, নামী দামী বুদ্ধিজীবী, বড় রাজনৈতিক দল, সাহিত্যিক সাংস্কৃতিক সংগঠন! তাঁরা তো সবসময়ই যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন, বিবৃতি দেন। আমার বোঝার সাধ্য নেই কি কারণ সকলের এমন নীরবতার। আইনজীবীদের যে বিবৃতি বেরিয়েছে, আমার বিশ্বাস তা ক যোগাড় করেছেন। ৫২ জন আইনজীবী সই করে দিয়েছেন, ব্যাপারটি কেমন যেন বিশ্বাস হতে চায় না, সম্ভবত ক একটু বেশি করেই নামধাম লিখে দিয়েছেন। গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টএর বিবৃতির পেছনে আমার বিশ্বাস সাজু আর জাহেদার হাত আছে। তারাই এই বিবৃতি দিয়েছে। উওম্যান ডেভেলপম্যান্ট ফোরামের যে বিবৃতি, হয়ত খ করেছেন যোগাড়। দিব্য-চোখে দেখি আমার জন্য হাতে গোণা কজন মানুষ লোকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বিবৃতি ভিক্ষে চাইছেন। আজ আমার এমনই পরিণতি। রাতে ঙ এসে বললেন যে তিনি বুদ্ধিজীবীদের একটি বিবৃতি যোগাড় করতে চাইছেন, কিন্তু সই করার লোক বেশি নেই বলে বিবৃতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঙর সঙ্গে ক ও এসেছেন। বলেছেন যে দেশের অবস্থা দিন দিন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। লুকিয়ে থাকলে বেঁচে যাবো–এর কোনও নিশ্চয়তা নেই, যে কোনও সময় বিপদ হতে পারে, বিশেষ করে মৌলবাদীদের কেউ যদি আমার খোঁজ পেয়ে যায়। জামিনের অনিশ্চয়তা দিন দিন বাড়ছে। আমাকে জামিন দেওয়া হবে না, আদালতের এই সিদ্ধান্তের কথা কোনও না কোনওভাবে আমার উকিলদের কানে গিয়েছে। জামিন না দেওয়ার সিদ্ধান্তই যদি হয়ে থাকে তবে আমাকে উন্মত্ত মানুষের ভিড়ের মধ্যে আদালতে উপস্থিত করার কোনও অর্থ হয় না। জামিন তো পাওয়াই হবে না, মাঝখান থেকে আমার জীবনটি যাবে। জামিনের এই অনিশ্চয়তা, সর্বোপরি জীবনের এই অনিশ্চয়তা নিয়ে আমি একটি কাজ করতে পারি, এ মুহূর্তে এর চেয়ে ভাল সমাধান অন্য কিছু আর নেই, সে হল পালিয়ে যাওয়া।

স্মাগলড আউট।

প্রথম ভেবেছিলাম বুঝি মজা করছেন ওঁরা। কিন্তু লক্ষ্য করি, মোটেও মজা করার জন্য নয়, ক এবং ঙ দুজনেই এ বিষয়ে রীতিমত গুরুগম্ভীর আলাপ করলেন, এবং একমত হলেন। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া– হাজার রকম অসম্ভব জিনিস আমি কল্পনা করতে পারি, কিন্তু এটি পারি না। আমার দিকে চারটে চোখ যখন প্রশ্ন নিয়ে তাকালো, আমি বললাম, আমি অবৈধভাবে দেশ ছাড়ব না। আমি পালাবো না। দেশের পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হবে, তখন হয়ত পালানোর আর কোনও সুযোগও থাকবে না। এখনও হয়ত ঝুঁকি নিয়ে হলেও এ কাজটি করা যায়। কোনও একটা গাড়ির ব্যবস্থা হবে, গাড়িতে আমাকে তুলে নিয়ে কোথাও কোনও সীমান্তের দিকে অন্ধকারে ছেড়ে দেওয়া হবে। আমার চেহারা বেশভুষা সম্পূর্ণ অন্যরকম থাকবে, ওখানে ধরা পড়লেও যেন কেউ চিনতে না পারে। হেঁটে সীমান্ত পেরিয়ে যাবো। বাঁচার জন্য মানুষ তো অনেক কিছু করে। আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে খুব দ্রুত। কারণ দিন দিন দিন জটিল হচ্ছে। সরকার মৌলবাদীদের হাতের পুতুল হয়ে উঠছে। কথায় কথায় জনকণ্ঠের কথা ওঠে। জনকণ্ঠে গতমাসে ক্লান্ত পথিক ছদ্মনামে এটিএম শামসুদ্দিনের একটি কলাম ছাপা হয়েছিল, শামসুদ্দিন মূলত সেই মোল্লাদের সমালোচনা করেছিলেন, যারা গ্রামে গ্রামে এনজিওতে কাজ করা মেয়েদের ফতোয়া দিচ্ছে। উত্তরবঙ্গের গরিব মেয়েদের তুত গাছ লাগানোর কাজ দিয়েছিল ব্র্যাক। কিন্তু গ্রামের মোল্লারা মেয়েদের লাগানো তুত গাছ কেটে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মেয়েদের বলে দেয় তারা যদি এনজিওতে কাজ করা বন্ধ না করে তবে তাদের সমাজচ্যুত করা হবে, স্বামীদের বাধ্য করা হবে তাদের তালাক দিতে। কলাম লেখক কাঠমোল্লারা যে কোরানের ভুল ব্যাখ্যা করে ফতোয়া দিচ্ছে তাই বলতে গিয়ে তাঁর ছোটবেলার একটি শোনা ঘটনা বর্ণনা করেন, ঘটনাটি এরকম, আমিন নামের এক লোকের কাছে সুন্দরী বিধবা জৈয়তুনের একটি বলদ বর্গা ছিল। আমিন জৈয়তুনের কাছে প্রেম নিবেদন করে ব্যর্থ হলে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সে গরুটি বিক্রি করে দেয়। তো জৈয়তুন টাকা চেয়ে পাঠায় বলদের। কিন্তু আমিন বলদটি তার নিজের ছিল বলে দাবি করে। গ্রামের মোল্লাদের কাছে জৈয়তুন বিচার চায়। বিচার বসে। এদিকে কিন্তু কাঠমোল্লাদের কিছু টাকা পয়সা দিয়ে আমিন ব্যবস্থা করে রেখেছে। সালিশ বসে গ্রামে, কাঠমোল্লারা সুরা ত্বিন থেকে পড়ে ওয়া হাজাল বালাদিন আমিন, এর অর্থ ওরা বলে, পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে বলদটি আমিনের। নিরক্ষর জৈয়তুন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে যায়। এই হল জনকণ্ঠের দোষ, মোল্লাদের নিয়ে ঠাট্টা করে লেখা একটি কলাম ছেপেছে জনকণ্ঠ। ক্লান্ত পথিক তো তবু মোল্লাদের সম্মান করেছেন। কেবল কাঠমোল্লাদের গাল দিয়েছেন, কাঠমোল্লাদের তো মোল্লারাই গাল দেয়। মূর্খ লোকেরা যারা নিজেদের মোল্লা বলে দাবি করে লোক ঠকানোর ব্যবসা করে, তাদের বলা হয় কাঠমোল্লা। কোরানে ভাল কথা লেখা আছে, কিন্তু কোরান হাদিস সম্পর্কে কোনও জ্ঞান নেই বলে কাঠমোল্লারা কোনও আয়াতের বা কোনও সুরার সঠিক ব্যাখ্যা না করে অপব্যাখ্যা করে নিজেদের স্বার্থে, এ কথাই ক্লান্ত পথিক বলেছেন। লেখাটিতে কাঠমোল্লাদের দোষ দেওয়া হয়েছিল, কোরানের সুরাকে দোষ দেওয়া হয়নি। কিন্তু মৌলবাদীদের কিছু একটা ধরতে হয়, ধরতে হয় বলেই জনকণ্ঠকে ধরা। আমাকে যখন ধরে, তখন কিন্তু ঠিক ঠিকই ধরে। আমি তো কোরানের সুরা আয়াতকেই নিন্দা করেছি। আমার ফাঁসির দাবিতে যখন মৌলবাদীদের আন্দোলন সারাদেশে বিশাল আকার ধারণ করল, তখন তারা সুযোগ পেয়ে গেল একটি একটি করে মৌলবাদবিরোধী শক্তিকে ঘায়েল করার। সরকার মৌলবাদীদের প্রতিটি দাবি মেনে নিচ্ছে। আজ জনকণ্ঠের চারজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ২৯৫ (ক) ধারায় সরকার মামলা করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, দুজন সাংবাদিককে ধরেছে পুলিশ, দুজন পলাতক। মৌলবাদীদের দাবি মেটানো ছাড়া সরকারের এখন আর বড় কোনও কাজ নেই। আমার পরিস্থিতির সঙ্গে জনকণ্ঠের সাংবাদিকদের পরিস্থিতির তুলনা করা যায় না। কারণ জনকণ্ঠের কোনও সাংবাদিকের ফাঁসির দাবি মৌলবাদীরা করেনি, দাবি করেছে জনকণ্ঠ পত্রিকা নিষিদ্ধ করার। জনকণ্ঠের সাংবাদিকদের নামও মৌলবাদীরা জানে না, চেহারাও চেনে না। সুতরাং সরকার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একই মামলা করলেও আমি হচ্ছি মৌলবাদীদের মূল টার্গেট।

ক এবং ঙ আমার পালাবার ব্যবস্থা কিভাবে করা যায় তার একটি ছক আঁকলেন। ঘরে অতি সামান্য আলো। কথাবার্তা নিচু স্বরে। কেমন ভূতুড়ে লাগছে সবকিছু। কানে একসময় কারও কোনও কথা পৌঁছয় না। কাঠ কাঠ লাগে শরীরটি। নিজের স্বরে নিজেই আমি চমকে উঠি, যখন শুনি যে বলছি, আমি পালাবো না। তার চেয়ে ভাল আত্মসমর্পণ করব।

এ সময় আত্মসমর্পণ করা আর মৃত্যুদণ্ড গ্রহণ করা যে সমান কথা, এ বিষয়ে ক এবং ঙ অনেকটা একমত। এই সরকারের ওপর কারও আস্থা নেই। মৌলবাদীদের দাবি মেনে আমার ফাঁসির ব্যবস্থা যে এই সরকার করবে না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

আত্মসমর্পণ!

হ্যাঁ, আত্মসমর্পণ। আমার বিচার করতে চায় বিচার করুক। যত হোক দেশের আইন। আইন সবাই মানছে, আমি মানবো না কেন!

ভেবে বলছ কথাটা? ঙ জিজ্ঞেস করেন।

এই আইনে দুবছরের জেল হয়। দুবছর জেল খাটব। কত মানুষই তো জেল খাটে। বলে একটি দীর্ঘশ্বাস সামলে নিই।

ঙ বললেন, জেল জেল যে করছ, জেলে তোমার নিরাপত্তা কি?

আমি বলি, নিরাপত্তা তো দেওয়া হয় জেলে। হয় না কি?

তুমি কি জানো যে জেলে অনেক পলিটিক্যাল মার্ডার হয়! আর তোমার কেইস তো পলিটিক্সের চেয়েও বেশি সেনসিটিভ। রিলিজিয়াস সেন্টিমেন্ট সম্পর্কে তোমার কোনও ধারণা নেই। এর চেয়ে ভয়াবহ জিনিস জগতে আর নেই।

ক শুকনো মুখে বসে থাকেন ঙর পাশে। চোখদুটো ধু ধু করছে। আমি জানি সে কথা। জানি যে জেলে আমাকে মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু দুটো খারাপ এর মধ্যে একটি খারাপকে বেছে নিলাম। চোরের মত পালাতে গিয়ে মরার চেয়ে জেলে খুন হওয়া ভাল। পালাবো কেন, আমি তো কোনও অন্যায় করিনি! আসলে এখন আমার অন্য কোনও উপায় নেই দুধরনের মৃত্যুর মধ্যে একটি মৃত্যুকে বেছে নেওয়া ছাড়া। আমি জেলের মৃত্যুকে বেছে নিলাম।

ক আর ঙ চুপ হয়ে থাকেন। চ শব্দহীন পায়ে ভেজানো দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকেন। ক আর ঙর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকেন দেয়ালে হেলান দিয়ে। সবকটি প্রাণী চুপ। নৈঃশব্দ্য ভেঙে চ বলেন, কিছু খাবেন আপনি?

মাথা নেড়ে না বলি।

দুপুরে খাইনি, রাতেও না। ক্ষিধে বলতে কোনও কিছু আমি বোধ করছি না।

ক এবং ঙ দুজনে আমাকে দুটো চিরকুট দেন। ঙ দেন শামসুর রাহমানের লেখা একটি চিরকুট। তসলিমা, মানসিক ভাবে আমি তোমার সঙ্গে আছি। ক দেন ছোটদার লেখা একটি চিরকুট। নাসরিন, আমরা সবাই তোর কথা ভাবছি। তুই ভেঙে পড়িস না। সত্যের জয় একদিন হবেই। চিরকুটটি আমার হাতে দিয়ে ক বলেছেন, আপনার ভাই কামাল আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, আপনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন তার কোনও খবর আমি জানি কি না জানার জন্য। আমি কিছু বলিনি তাকে। আমাকে এই চিঠিটা দিয়ে গেছে, যদি কখনও আপনার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়, যেন দিয়ে দিই। বলেছে, ময়মনসিংহ থেকে আপনার বাবা নাকি জানিয়েছেন, আপনার কোনও খোঁজ পেলে বলতে যে আপনি যেন মনের জোর রাখেন, যেন ভেঙে না পড়েন। কামাল তার বউ বাচ্চা নিয়ে এখন আপনার বাড়িতে থাকছে। আপনার উকিলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে সে।

ক আর ঙ কতক্ষণ ছিলেন বসে আমার মনে নেই। কারও সঙ্গে আমার আর কোনও বাক্য বিনিময় হয়েছে কি না মনে নেই। মনে নেই সে রাতে আমার ঘুম পেয়েছিল কি না, আমি ঘুমিয়েছিলাম কি না।

সকল অধ্যায়

১. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০১
২. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০২
৩. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৩
৪. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৪
৫. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৫
৬. ১. প্যারিসের ডায়রি – ০৬
৭. ২. তাণ্ডব – ০১
৮. ২. তাণ্ডব – ০২
৯. ২. তাণ্ডব – ০৩
১০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০১
১১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০২
১২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৩
১৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৪
১৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৫
১৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৬
১৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৭
১৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৮
১৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ০৯
১৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১০
২০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১১
২১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১২
২২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৩
২৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৪
২৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৫
২৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৬
২৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৭
২৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৮
২৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ১৯
২৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২০
৩০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২১
৩১. ৪. দেশান্তর – ১
৩২. ৪. দেশান্তর – ২
৩৩. ৪. দেশান্তর – ৩
৩৪. ৪. দেশান্তর – ৪ (শেষ)
৩৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২২
৩৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৩
৩৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৪
৩৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৫
৩৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৬
৪০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৭
৪১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৮
৪২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ২৯
৪৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩০
৪৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩১
৪৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩২
৪৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৩
৪৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৪
৪৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৫
৪৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৬
৫০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৭
৫১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৮
৫২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৩৯
৫৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪০
৫৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪১
৫৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪২
৫৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৩
৫৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৪
৫৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৫
৫৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৬
৬০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৭
৬১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৮
৬২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৪৯
৬৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫০
৬৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫১
৬৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫২
৬৬. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৩
৬৭. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৪
৬৮. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৫
৬৯. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৬
৭০. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৭
৭১. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৮
৭২. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৫৯
৭৩. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬০
৭৪. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬১
৭৫. ৩. অতলে অন্তরীণ – ৬২

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন