পাগল হইবার সহজপাঠ – দুলেন্দ্র ভৌমিক

পৌলোমী সেনগুপ্ত

সম্প্রতি মুগবেড়িয়াতে অতি ছোট একটি ঘটনা ঘটে গেল। ঘটনাটি আমাদের দৃষ্টিতে অতি ছোট এবং অতিশয় তুচ্ছ মনে হলেও মুগবেড়িয়ার মানুষদের কাছে সেটি মোটেও তুচ্ছ নয়। মুগবেড়িয়া ছোট গ্রাম হলেও বেশ বর্ধিষ্ণু। দিব্যি আঁটোসাঁটো একটি গ্রাম। সেই গ্রামেরই ছেলে ভবা। ভাল নাম ভবতোষ মল্লিক। ভবতোষ ঠিক কত বছর বয়সে পড়াশোনা শুরু করেছিল সেটা ভবতোষের বাবারও মনে নেই। ক্লাস ফাইভ থেকে টেন পর্যন্ত উঠতে সে সময় নিয়েছিল মোটে এগারো বছর। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে ভবার বাবা এক জ্যোতিষীকে দিয়ে ভবার হস্তরেখা বিচার করে জানতে চেয়েছিলেন মাধ্যমিক পাশ করতে ভবার কত বছর লাগবে? তিনি জীবিত অবস্থায় সেটা দেখে যেতে পারবেন কি না।

সেই জ্যোতিষী ভদ্রলোক যখন নানা কথা জিজ্ঞেস করে কাগজে দাগ কেটে হিসেব করছিলেন তখন ভবা ফিসফিস করে সেই জ্যোতিষীকে বলেছিল, “স্যার, আপনার বলতেই যদি এত সময় লাগে তা হলে ন’টা সাবজেক্ট পাশ করতে আমার কত বছর লাগবে সেটা আমি বুঝতে পারছি। আপনি কোনও রিস্ক না নিয়ে একটু বেশি সময় নিয়ে বলুন।”

জ্যোতিষী অনেক হিসেব করে বিদ্যাস্থানে বিঘ্ন, বৃহস্পতি কুপিত, রবি বিপরীত কক্ষে ইত্যাদি নানা কথা বলে জানিয়েছিলেন, “একটি বছর অপচয় হওয়ার ক্ষীণ আশঙ্কা। কিন্তু দ্বিতীয়বারে অতি উজ্জ্বল উত্তরণ।” সেই ভবা সাতবারেও পাশ করতে না পেরে নিজেই ঘোষণা করল, “যে বিদ্যা ফল দেয় না, তার পেছনে আর সময় নষ্ট করার কোনও অর্থ হয় না।”

এই সিদ্ধান্তটা ভবা মুগবেড়িয়ার সকলকে জানাল ‘হনুমান সংঘ’-এর ক্লাব প্রাঙ্গণে সভা ডেকে। রীতিমতো সভা। মাইক লাগিয়ে প্রথমে সমবেত কণ্ঠে উদ্বোধনী সংগীত, তারপর ভবার বন্ধু পটলার আবৃত্তি, হনুমান সংঘের সভাপতি এবং মুগবেড়িয়ার বিশিষ্ট কুস্তিশিক্ষক বজ্ৰধর সাঁপুইয়ের বক্তৃতা, বজ্রধরবাবুর ছোটছেলে পিনাকপাণির গিটারবাদন এবং সবশেষে ভবার বক্তব্য।

এরকম একটা ঘটনা যে গ্রামে ঘটে সেখানে তাই দেখবার জন্য লোকের অভাব হয় না। মুগবেড়িয়াতেও হল না। অন্য অনেকে এই ঘটনাকে তুচ্ছ মনে করতে পারেন, কিন্তু মুগবেড়িয়ার মানুষ এটাকে কিছুতেই তুচ্ছ মনে করতে পারলেন না। ভবা তার বক্তব্য রাখতে উঠে বলল, “আপনারা যাঁরা খবরের কাগজ পড়েন, টিভি দেখেন তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন জনগণকে কোনও কথা জানাতে হলে দেশের নেতারা সভা করেন। কেউ কেউ প্রেসের লোকদের ডেকে নিজেদের বক্তব্য জানান। আমার কাছে মুগবেড়িয়ার জনগণই আসল জনগণ। তাঁরাই আমার প্রেস। আমি মোটে সাতবার মাধ্যমিকে ফেল করেছি। তাই নিয়ে অনেক ঠাট্টা রসিকতাও শুনেছি। আপনারা জানেন, ব্যর্থতাই সাফল্যের সিঁড়ি তৈরি করে দেয়। যারা ভূগোল পড়েছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই নেপোলিয়নদার কথা জানেন। আমাদের খেলোয়াড় দাদারা বাইরে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। কিন্তু তাই বলে কি খেলা ছেড়ে দিয়েছেন? আমি যে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, সেটা কোনও হতাশা থেকে নয়। যাঁদের কথা আমি আগে বলেছি, তাদের পক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থের অভাব নেই। আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। মাই ফাদার জানিয়েছেন, তাঁর এখন নো-মানি অবস্থা। তাই আমি ব্যবসায় মন দিচ্ছি। আগামীকাল থেকে আমার দোকান ‘মুগবেড়িয়া ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেন্টার’ চালু হচ্ছে। পড়াশোনার ব্যাপারে কোনও সাহায্য গ্রামবাসীদের কাছ থেকে পাইনি। একজন শিক্ষিত বাঙালি ব্যবসায়ীকে সফল করার জন্য বাজারের থলি হাতে আমার দোকানে এগিয়ে আসুন।”

সভার শেষে ভবার স্কুলের ইতিহাসের মাস্টারমশাই এগিয়ে এসে ভবাকে বললেন, “তোকে তো স্বয়ং সরস্বতীও পাশ করাতে পারবে না। নেপোলিয়নের কথা বলতে গিয়ে ভূগোল পড়ার কথা বললি কোন আক্কেলে?”

ভবা একটু হেসে বলল, “স্যার আমার আক্কেলটা একটু বেশি ডিপ বলে আপনারা চিরকাল ফেল করিয়ে এসেছেন। নেপোলিয়ন বললেই তাঁর রাজত্ব, দেশ, দেশের ভৌগোলিক সীমা, দেশের জলহাওয়া এগুলো তো আসবেই। এসবই তো ভূগোলের ব্যাপার। ভূগোল আর ইতিহাস দুটো তো যমজ ভাইয়ের মতো।”

মাস্টারমশাই রেগে গিয়ে বলেন, “কে বলেছে ওরা যমজ ভাইয়ের মতো?”

ভবা অম্লান বদনে উত্তর দেয়, “তাই যদি না হবে তা হলে আমাদের স্কুলে চিরকাল ইতিহাসের পরেই কেন ভূগোল পরীক্ষা থাকত। ওটার তো অদলবদল হত না। যেমন মেন সাবজেক্টগুলোর মধ্যে অঙ্ক হচ্ছে কাঁটাওলা মাছ। সেইজন্য ওটা শেষ পাতে দেওয়া হয়। ওই পরীক্ষা প্রথমদিন হয় না। ঠিক ক্রিকেটের কুম্বলে। প্রথম ওভারে আসে না। স্যার, পরীক্ষায় ফেল করতে পারি, কিন্তু পড়াশোনার ব্যাপারে আমার স্টাডি কিছু কম নয়।”

মিনিটখানেক ভবার দিকে তাকিয়ে থেকে মাস্টারমশাই হনহন করে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। মুগবেড়িয়ার মানুষজন নানা কারণেই ভবাকে বিলক্ষণ চেনে। ভালও বাসে। আবার অনেকে ভবাকে এড়িয়ে চলে। অনেককাল থেকেই ভবার খেলার সঙ্গী, পথের সঙ্গী এবং তার ভালবাসার পাত্র-পাত্রী হচ্ছে মুগবেড়িয়ার কুকুর। ভবা যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে কোথাও যায় তখন ওর আগে-পিছে ওরই সঙ্গে হেঁটে যায় গোটা বিশ-পঁচিশ কুকুর। ভবা একটা ঘরে খাটের ওপর শোয়, সেই ঘরের ভেতরে এবং ঘরের বারান্দায় প্রায় পঁচিশ-তিরিশটা কুকুরও শুয়ে থাকে। ভবার মা এবং পিসি, এমনকী বউদিদের প্রবল আপত্তিতেও ভবা কুকুরছাড়া হতে রাজি না হওয়ায় ভবার ঘরটাই আলাদা করে দেওয়া হল। মল্লিকবাড়ির ফটক দিয়ে ঢুকলেই ভবার ঘর। তারপর উঠোন। উঠোনের ওপারে অন্যদের ঘর। ভবার ঘরের সঙ্গে মূল বাড়ির যোগাযোগ খুবই সামান্য। ভবার বাবা আশুতোষবাবু শুধু বলেন, “একদিক দিয়ে ভালই হল। যে বাড়িতে পঁচিশটা কুকুর আছে সেই বাড়িতে চোর কেন, ডাকাতও ঢুকবে না।”

ভবার মা ভবার প্রতি একটু বেশি স্নেহশীলা। বাড়ির বউরা শাশুড়ির আড়ালে বলে, “মা’র যত আদিখ্যেতা। ছেলের সঙ্গে সঙ্গে কুকুরদের জন্যও খাবার পাঠায়। অত কুকুর তো কম গেলে না।”

ভবার মা ছেলের বউদের বলেন, “তোমরা ভবাকে অত দূর দূর ছাই ছাই কোরো না। ভবা আমার ছেলে ভাল। মনটা পরিষ্কার।”

কোনও এক বউদি টিপ্পনী কেটে বলে, “মাথাটা যদি একটু পরিষ্কার থাকত তা হলে পাশ টাস করে চাকরি করলে সংসারের রোজগার বাড়ত।”

লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মা বলেন, “সে তো আর কপালে নেই। সাত বছর বয়সে টাইফয়েড হল। যমে-মানুষে টানাটানি। সেই থেকেই ওর মাথাটা গেল। এখন খালি অপেক্ষা কবে ভবা পুরো পাগল হয়।”

শাশুড়ির কথা শুনে বউদের চোখগুলো গোল গোল হয়ে গেল। এক বউ বলল, “সে কী! ভবা ঠাকুরপো কি আরও পাগল হবে? এখনই তো হাফ পাগল আছে।”

ভবার মা বলেন, “হাফে হবে না বউমা। ওকে যে পুরো হতে হবে। এটাই বংশের নিয়ম।”

ভবাদের বংশে নাকি নিয়ম আছে তিনপুরুষে একজন করে পাগল হবে। ভবার ঠাকুরদা চাকরি থেকে রিটায়ার করার বছর দুই আগে পাগল হয়েছিলেন। সরকারি অফিস বলে চাকরি যায়নি। ওই অবস্থাতেই দিব্যি কাজ চালিয়ে গেছেন। রিটায়ার করার পর আর তো কোনও বন্ধন রইল না, তাই পুরো পাগল হতে আর কোনও অসুবিধে হল না।

ভবার ঠাকুরদা প্রাণতোষ মল্লিক, দ্বিতীয় পুরুষ ভবার বাবা আশুতোষ মল্লিক। উনি পাগল নন। তাঁর সন্তানরা তৃতীয় পুরুষ। অতএব, এবার ভবার পালা। বংশের যে ট্র্যাডিশন সাতপুরুষ ধরে চলে আসছে সেটা তো কাউকে না কাউকে রক্ষা করতেই হবে।

সাতপুরুষ আগে গঙ্গাসাগর-ফেরত এক জটাধারী সাধু এই মুগবেড়িয়ার বাড়িতে এসে হোম-যজ্ঞ করে এই কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন। উত্তরপ্রদেশের সেই সাধুর কথা ব্যর্থ হয়নি। যেহেতু ব্যর্থ হয়নি তাই মল্লিকবাড়ির পূর্বপুরুষরা উইল করে গেছেন, যে পাগল হবে সে ঈশ্বরের কৃপায় পাগল হবে। তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা চলবে না। গৃহদেবতার মতো সম্মানের সঙ্গে সংসারে রাখতে হবে।

ভবার ঠাকুরদা চাকরি করতেন টেলিফোন অফিসে। রিটায়ার করার পর যখন পুরো পাগল হলেন তখন তার একমাত্র কাজ ছিল, স্বর্গে টেলিফোন করে ঠাকুর-দেবতাদের সঙ্গে গল্প করা। তিনি একটা খাতায় স্বর্গের আইএসডি কোড লিখে রেখেছিলেন। সেই খাতা এখন ভবার দখলে। ভবা মাঝে-মধ্যে সেটা উলটে-পালটে দেখে। ওই খাতায় নাম্বারগুলো লেখা আছে এইভাবে, ‘Kailas’ নাম্বার 0, 11, 1, 9, 12, 1, 19. Narak, নাম্বার 0, 14, 1, 18, 1, 11 এই নম্বরগুলো কী হিসাবে লেখা হত তার সূত্রটাও খাতাতে ছিল। যেমন ইংরেজিতে কৈলাস লিখলে লিখতে হবে, কে.এ.আই, এল.এ.এস। এবার ‘কে’ হচ্ছে ইংরেজি বর্ণমালার এগারো নম্বর, ‘এ’ হচ্ছে এক নম্বর, ‘আই’ হচ্ছে নয় নম্বর, ‘এল’ হচ্ছে বাৱো নম্বর, আবার ‘এ’ অর্থাৎ এক নম্বর, আর ‘এস’ হচ্ছে উনিশ নম্বর। এই নম্বরগুলোর আগে শুধু একটা শূন্য বসাতে হবে। এই হিসাবে ডায়াল ঘোরালে স্বর্গের সবার সঙ্গেই নাকি কথা বলা যায়। ভবার ঠাকুরদা প্রাণতোষ মল্লিক ওই স্বনির্মিত টেলিফোন থেকে বলতেন, “হ্যালো কৈলাস। কে নন্দীদা! একটু বাবাকে দিন না। আমি মুগবেড়িয়া থেকে প্রাণতোষ কথা বলছি। হ্যালো বাবা, এদিকে তো বৃষ্টিতে ফসলের বেজায় ক্ষতি হচ্ছে। বরুণদাকে একটু বলুন, রয়ে সয়ে কাজটা করতে। আপনি কেমন আছেন? অষ্টমীতে আমাদের মুগবেড়িয়ার প্যান্ডেলে আসছেন তো? ছেড়ে দিচ্ছি, পরে কথা হবে।” কখনও ডায়াল ঘোরাতেন, 0, 14, 1, 18, 1, 11. এটা হচ্ছে নরকের নম্বর। প্রাণতোষ মল্লিক বলতেন, “হ্যালো, নরক, কে গুপ্তদা বলছেন? আচ্ছা, আপনি তো চিত্রগুপ্ত, তো ওটা কোন গুপ্ত, সেনগুপ্ত না দাশগুপ্ত? ও, শুধুই গুপ্ত। মানে বদ্যি। আচ্ছা যমদা কী করছেন? ঘুমোচ্ছেন? অবেলায় ঘুম। আর এদিকে কলেরায় মুগবেড়িয়া সাফ হয়ে যাচ্ছে। দেবতা বলে কি মানবতা নেই? কী ভেবেছেন যমদা। কী হবে? উনি তদন্ত করে দেখবেন? উনি কি মর্তের মন্ত্রী নাকি যে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে দাঁত বার করে মরে যাওয়ার পর তদন্ত হবে। আমার কিন্তু স্বর্গের ওপরমহলে যোগাযোগ আছে। দরকার হলে সেখানে ফোন করব। যমদাকে জানিয়ে দেবেন।”

প্রাণতোষ মল্লিক তখন পুরোপুরি পাগল। অতএব, তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করলেও লোকে কিছু বলত না। কিন্তু ভবার টেলিফোন করার বাতিক ছিল না। এক সময় ওর হবি ছিল মৃত্যু নিয়ে পরীক্ষা করার। সেই পরীক্ষা করতে গিয়ে একবার গায়ে মাখা সাবান কেকের মতো কামড়ে কামড়ে খেয়ে ফেলেছিল। আর একবার ভবার মনে হয়েছিল পেটটা পরিষ্কার করার জন্য চার ফোটা উজালা খেলে কেমন হয়। তৃতীয়বার ভবা চেষ্টা করেছিল ট্রেনের তলায় ঝাঁপিয়ে পড়ার। কিন্তু রেলপথে অবরোধ থাকার জন্য ট্রেনই আসেনি। এখন অবশ্য সেসব বাসনা নেই। এখন কুকুরদের নিয়ে সে ভালই আছে। তাদের ভাল মন্দ দেখভাল করা আর মুগবেড়িয়া ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেন্টার চালানো। এই দোকানে বিচিত্র সব জিনিস বিক্রি হয়। যেমন কাগজে প্যাক করা ঘুঁটে, ছেঁড়া কাপড়, দড়ি, পুরনো খবরের কাগজ, কাঁঠালের বিচি, পাথরকুচি পাতা, পুরনো জুতো। এর সঙ্গে আছে লেড়ো বিস্কুট, লজেন্স, খাতা-পেনসিল, বাঁশের লাঠি, মাছ ধরার মশলা, ঘুড়ির সুতো। মাঞ্জা দেওয়ার জন্য কাচের গুঁড়ো, আরও রকমারি জিনিস। ভবার দোকানে লোক যত আসে খদ্দের তত আসে না। ভবার কাণ্ডকারখানা দেখার লোক আছে কিন্তু কেনার লোক কম। একটা দোকানের ভেতরে-বাইরে যদি নানা সাইজের তিরিশটা কুকুর ঘুরঘুর করে তবে কে আর সেই দোকানে যায়। এরই মধ্যে একদিন এক ভদ্রলোক গাড়ি চালিয়ে যেতে গিয়ে ভবার কুকুরদের মধ্যে একটার পায়ে চাপা দিল। আহত কুকুরের চিৎকারে আরও কুকুর চিৎকার করে গাড়ির পেছনে ছুটতে লাগল। ভবা গাড়ির নম্বর টুকে সোজা থানায়। সঙ্গে ওর সর্বক্ষণের সঙ্গী তিরিশটা কুকুর তো আছেই, কিন্তু থানা পর্যন্ত আসতে আসতে আরও বিশ-পঁচিশটা কুকুর ভবার সঙ্গে জুটে গেছে। ভবার কুকুরগুলোর সকলেরই মোটামুটি একটা নাম ছিল। আহত কুকুরটার নাম ‘ডগলা’। একটা সাইকেল রিকশাভ্যানে ‘ডগলা’কে বিছানা করে ভবা শুইয়ে দিয়েছে। ওই ভ্যানের ওপর আরও তিনটে কুকুর ডগলার শুশ্রূষা করছে। তার আগে আর একটা সাইকেল রিকশাভ্যানে বসেছে ভবা আর পটলা। তাতে মাইক লাগানো। ভবা মাইক হাতে বলে যাচ্ছে, “বন্ধুগণ, আমাদের ডগলা আজ গুরুতর আহত। একজন গাড়িওলা লোক তাকে চাপা দিয়ে তার একটি পায়ের দফারফা করে দিয়েছে। কুকুর বলে কি তার প্রাণের অথবা পায়ের কোনও মূল্য নেই? কুকুর প্রভুভক্ত। বিশ্বাসী এবং সমাজের পাহারাদার। ধর্মরাজ স্বয়ং কুকুরের ছদ্মবেশ ধারণ করে মহাভারতে একেবারে শেষের দিকে পাণ্ডবদের স্বর্গে যাওয়ার পথের সহযাত্রী ছিলেন। তাঁর ভূমিকা উপেক্ষার নয়। আমরা আহত এবং মুমূর্ষু ডগলাকে নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে থানায় যাচ্ছি। যত যাচ্ছি ততই আমাদের প্রতিবাদ মিছিলে সারমেয় বন্ধুদের ভিড় বাড়ছে। আপনারা কি আমাদের সঙ্গী হবেন না! আপনার সন্তানের পা যদি গাড়ি চাপায় ভেঙে যেত তা হলে কি আপনি ঘরে বসে থাকতেন? বন্ধুগণ, পশু বলে অবহেলা করবেন না। মানুষকে ভালবাসলে পশুকেও ভালবাসুন।”

ভবার আবেদনে নাকি ভবার নতুন পাগলামি দেখতে একজন দু’জন করে অনেক লোক এই প্রতিবাদ মিছিলে জড়ো হয়ে গেল। থানার মধ্যে যখন মিছিল ঢুকল তখন লোকসংখ্যা চল্লিশ আর কুকুরের সংখ্যা একশো ছাড়িয়ে গেছে। কী একটা কারণে তখন থানায় উপস্থিত ছিলেন এসডিপিও এবং স্থানীয় বিধায়ক শক্তিপদ হাজরা। শতাধিক কুকুরের ঘেউ ঘেউ ধ্বনি তার সঙ্গে চল্লিশজন মানুষের চিৎকারে হতচকিত দারোগা, বিধায়ক আর এসডিপিও পরস্পরের দিকে তাকালেন। এমন অভিনব প্রতিবাদ মিছিল এঁরা ইতিপূর্বে কখনও দেখেননি। এসডিপিও কানাই চক্রবর্তী বললেন, “এ কী, এত কুকুর কেন?”

বিধায়ক শক্তিপদ হাজরা দারোগার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললেন, “ভবাকে আপনি কি কোনও কারণে ঘাঁটিয়েছেন?”

দারোগাসাহেব সভয়ে উত্তর দিলেন, “আমার চোদ্দোপুরুষের কেউ ওকে ঘাঁটাতে সাহস পাবে না। ও কেন যে কুকুরের মিছিল নিয়ে এল কে জানে?”

ওঁরা তিনজনেই ভবার কাছে এলেন। শক্তিপদকে দেখে ভবা বলল, “দেখুন শক্তিদা, আমার ডগলার কী করুণ অবস্থা। কেউ একজন গাড়ি চাপা দিয়ে গেছে। আমি গাড়ির নম্বর টুকে রেখেছি। আমাদের দাবি বারো ঘণ্টার মধ্যে গাড়িওলাকে গ্রেফতার করতে হবে।”

দারোগাসাহেব কী একটা বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু শক্তিপদ তাকে মৃদু একটা ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন। রিকশাভ্যানের কাছে এসে ডগলাকে দেখলেন। ডগলা তখন বিছানায় শুয়ে পিটপিট করে তাকাচ্ছে। ভবার বন্ধু পটলা তাকে ফিডিং বোতলে করে হরলিকস খাওয়াচ্ছে। মুগবেড়িয়ার ধনঞ্জয় সাহা ঠোঙা থেকে মুঠো মুঠো লেড়ো বিস্কুট বার করে অন্য কুকুরকে খাওয়াতে ব্যস্ত।

শক্তিপদ ডগলাকে দেখে মুখে সহানুভূতিসূচক শব্দ করলেন। জিভ তালুতে ঠেকিয়ে শব্দ করলে যেমন চু চু একটা শব্দ ওঠে তেমনই শব্দ উঠল। ভবা বলল, “শক্তিদা, অমন চু-চু করলে হবে না। গ্রেফতারের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে আমি পশুক্লেশ নিবারণী সমিতিতে যাব। দিল্লি পর্যন্ত ফোনাফুনি করব। আর আপনার ভোটের সময় আপনার মিটিং-এ দুশো করে কুকুর লেলিয়ে দেব।”

ভবা ইচ্ছে করলে যে কেমন কাণ্ড করতে পারে সেটা শক্তিপদ বিলক্ষণ জানেন। আর এও জানেন যে, ভবা হচ্ছে মুগবেড়িয়ার বোনাফাইড পাগল। ও যা কিছু করতে পারে। তাই একবার ঢোক গিলে নিয়ে বললেন, “তোর ভাবনা নেই। তোর ডগলা কি আমার ডগলা নয়? বারো নয়, দশ ঘণ্টার মধ্যে গাড়িটাকে ধরতে হবে।”

এসডিপিও কানাই চক্রবর্তী বেশি নড়াচড়া করতে সাহস পাচ্ছেন না। চোদ্দো বছর বয়সে একটি গৃহপালিত কুকুরের কামড় খাওয়ার পর তলপেটে চোদ্দোটা ইঞ্জেকশনের স্মৃতি আজগু ভুলতে পারেননি। তিনি শুধু বললেন, “এগুলো কোন জাতের কুকুর?”

ভবা বলল, “আমার কুকুরের কোনও জাতপাত নেই। এরা সবাই রোডেশিয়ান।”

এবার কানাইবাবুর ঢোক গেলার পালা। তিনি বললেন, “রোডেশিয়ান? সেটা কোন দেশ?”

ভবা উত্তর দিল, “দেশ নয়, জায়গা। রোডে রোডে মানে রাস্তায় রাস্তায় থাকে বলে ওদের নাম রোডেশিয়ান।”

একজন হাবিলদার বাহাদুরি দেখাবার জন্য বারান্দার সিঁড়িতে বসা কয়েকটা রোডেশিয়ানকে একটু লাঠি উঁচিয়ে দেখিয়েছিল মাত্র; ব্যস, ঘেউ ঘেউ শব্দে জনা পঞ্চাশেক কুকুর সেই হাবিলদারকে ঘিরে টানাটানি শুরু করে দিল। দারোগাসাহেব বললেন, “ভাই ভবা, ওদের থামাও। লোকটা তো হার্টফেল করবে।”

ভবা উত্তর দিল, “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলের ওপর লাঠির আস্ফালন কেন করা হল? ওকে ক্ষমা চাইতে হবে।”

হাবিলদারের অবস্থা তখন বড়ই করুণ। পালাবার উপায় নেই, লাফাবার শক্তিও শেষ। রোডেশিয়ানরা তার প্যান্ট কামড়ে ধরে আছে। দারোগাসাহেব বললেন, “ভাই ভবা, ওর ক্ষমা চাইবার মতো অবস্থাও নেই। আমি ওর হয়ে ক্ষমা চাইছি। তুমি তোমার চ্যালাদের থামাও।”

ভবা পকেট থেকে বাঁশি বের করে তিনবার ফুঁ দিতেই কুকুরগুলো হাবিলদারকে ছেড়ে দিল। হাবিলদার সেই যে গিয়ে ঘরে ঢুকে কাঁপতে শুরু করল, সে কাঁপন কখন থেমেছে কে জানে!

সন্ধ্যা হওয়ার আগেই গাড়ির মালিক ভবার মুগবেড়িয়া ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেন্টারে এলেন। ভবা তখন গোটা তিরিশেক কুকুরকে সামনে বসিয়ে হারমোনিয়ম বাজিয়ে স্বরচিত সংগীত শোনাচ্ছিল। পটলা ভদ্রলোকের পরিচয় পেয়ে বলল, “এখন কথা হবে না। এখন ভবার গান চলছে। একটু অপেক্ষা করতে হবে। রোজ বিকেলে আমাদের এখানে গানের জলসা হয়।”

ভদ্রলোক বললেন, “কুকুরদের নিয়ে গানের জলসা! এ জিনিস তো আগে কখনও শুনিনি।”

পটলা ভবার সাক্ষাৎ চ্যালা। ও নিজে ভবার মতো পাগল হওয়ার চেষ্টা করেছিল। এর জন্য মুগবেড়িয়া লাইব্রেরিতে গিয়ে বইয়ের খোঁজও করেছিল কিন্তু পায়নি। পটলার দুঃখ দেখে ভবা নিজেই ‘পাগল হইবার সহজপাঠ’ নামে একটা বই লেখার উদ্যোগ নিয়েছে। পটলা আপাতত সেই বইয়ের অপেক্ষায় আছে।

ভবার কাণ্ডকারখানা দেখে ভদ্রলোক ঘামতে শুরু করলেন। জলসা শেষ হওয়ার পর পটলা পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল, “ভবা, ইনি নাকি কুকুরদের নিয়ে গানের জলসার কথা কখনও শোনেননি।”

ভবা তীক্ষ্ণ চোখে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলল, “শোনেননি কিন্তু গানের সঙ্গে কুকুরের সম্পর্কটা জানেন তো?”

ভদ্রলোক মাথা নেড়ে বলল, “না, তাও শুনিনি।”

ভবা বিরক্ত গলায় বলল, “আপনার মশাই চোখও নেই, কানও নেই। হিজ মাস্টার ভয়েস-এর ‘হিজ’টা কে? কতকাল থেকে চোঙার সামনে বসে গান শুনে যাচ্ছে বলুন তো! অমন নিবেদিত শ্রোতা পাবেন?”

নিজের বিপদ বুঝে ভদ্রলোক আর কথা বাড়ালেন না। কিন্তু ভদ্রলোকের কাছ থেকে ভবা তার ডগলার জন্য একটা পয়সাও নিল না। ভবা বলল, “পায়ের প্লাস্টার এবং পথ্য আমিই জোগাড় করতে পারব। রাস্তার কুকুর, বনের পাখি এই পশুপাখিদের একটু ভালবাসতে শিখুন। কেবল নিজের ধান্দা নিয়ে গাড়ি হাঁকানো চলবে না। জীবে প্রেম বোঝেন তো? জীব শুধু আমি-আপনি নই।”

কথা শেষ করে এক ঠোঙা বিস্কুট ভদ্রলোকের হাতে দিয়ে বললেন, “বাড়ি নিয়ে যান। আমার ভাইপো-ভাইঝিদের দেবেন।”

ভদ্রলোক কোনও প্রতিবাদ করতে পারলেন না। ঠোঙাটা নিয়ে চলে যেতে যেতে ভাবলেন, এই ভবা সত্যি পাগল, না কি অন্যরকম মানুষ।

নিজের গাড়িতে ওঠবার আগে দেখলেন ভবা তার সঙ্গীদের নিয়ে গাড়ির দিকে আসছে। ভদ্রলোক মনে মনে প্রমাদ গুনলেন। ভবা গাড়ির কাছে এসে বলল, “ডগলার পায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বুঝলাম মুগবেড়িয়াতে পশুদের জন্য কোনও হাসপাতাল নেই। তাই আগামীকাল থেকে হাসপাতালের জন্য আমার আন্দোলন শুরু হবে। আপনিও আসবেন এবং যথাসাধ্য সাহায্য করবেন। আসবেন তো?”

ভদ্রলোক ঘাড় নাড়তে নাড়তে বললেন, “আসব।”

দোকানে ফিরে আসার পর পটলা বলল, “ভবা, আবার আন্দোলনে নামলে ‘পাগল হইবার সহজপাঠ’টা কবে লিখবি। আমার তো বয়েস বেড়ে যাচ্ছে। বুড়ো বয়সে পাগল হয়ে কী হবে?”

ভবা একটু ভেবে বলল, “আন্দোলন করতে গিয়ে যদি জেলে যাই তা হলে জেলে বসে বইটা লিখে ফেলব।”

পটলা অবাক গলায় বলল, “জেলে! ওখানে কি লেখা হবে?”

ভবা চটপট উত্তর দিল, “কেন হবে না? লেখাপড়ার সবচেয়ে ভাল জায়গা হচ্ছে জেল। কাগজে পড়িস না, বড় বড় নেতারা বলেন, ওই বইটা আমি জেলে বসে পড়েছি। অমুক প্রবন্ধটা আমি জেলে বসে লিখেছি। জেলই হচ্ছে লেখা ও পড়ার আসল জায়গা।”

পটলা মনে মনে কিছু একটা ভাবল। তারপর বলল, “তুই তো কুকুর ছাড়া জেলেও যাবি না। তাই তোকে যদি জেলে না নেয়?”

ভবা বলল, “আমাদের তো অবস্থান ধর্মঘট। অতএব, ওখানে বসে বসে লিখব।”

ভবার কথার নড়চড় নেই। প্রথমে দিল্লিতে চিঠি পাঠাল। সব চিঠিতে ভবার একই সম্বোধন, “শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী জেঠু, আমি মুগবেড়িয়ার ভবতোষ মল্লিক অর্থাৎ ভবা বলছি।” এইভাবে শুরু করে শেষে লেখে, “জেঠু, এদিকে কোনও কাজে এলে আমার দোকান মুগবেড়িয়া ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেন্টারে একবার জুতোর ধুলো দেবেন। পদধূলি আর কোথায় পাব। সবাই তো জুতো পরে থাকেন। তাই জুতোধূলিই কাম্য।”

এইভাবেই রাজ্যের মন্ত্রীদের কাছেও চিঠি দিয়ে ভবা তার দাবি জানাল। যথারীতি কোনও দিক থেকেই উত্তর এল না। তারপর শুরু হল পোস্টার। পথসভা। পথসভায় লোক জমার পর ভবার অনিবার্য ঘোষণা, “কেউ সভা ছেড়ে গেলে কুকুর কামড়ে দেবে। তার জন্য ভবা সংগ্রাম কমিটি দায়ী থাকবে না।” এর পরেই বিধায়ক শক্তিপদর বাড়ির সামনে ভবা, পটলাসহ জনাদশেক মানুষ আর তিনশো কুকুরের ধরনা শুরু হল। খবর পেয়ে শক্তিপদ পেছনের দরজা দিয়ে পালাতে গিয়ে দেখেন সেখানেও গোটা বিশেক কুকুর ঘুরঘুর করছে। পালাবার সব পথই বন্ধ।

আর এদিকে শক্তিপদবাবুর বারান্দায় বসে ভবা একমনে লিখে চলছে তার স্বপ্নের গ্রন্থ, ‘পাগল হইবার সহজপাঠ’।

লেখা এখনও চলছে। লেখা শেষ হলে পটলার মতো আমিও বলতে পারব পাগল হওয়ার সহজ উপায়টা কেমন।

১৭ মে ২০০০

সকল অধ্যায়

১. বিষে বিষক্ষয় – আশাপূর্ণা দেবী
২. আটচল্লিশ – অরবিন্দ গুহ
৩. ডোডো তাতাই পালা কাহিনি – তারাপদ রায়
৪. কৈলাসে চা পান – আশাপূর্ণা দেবী
৫. চোরে ডাকাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬. সাধু কালাচাঁদের নতুন কাজ – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
৭. ইলশেঘাই – লীলা মজুমদার
৮. শরচ্চন্দ্রের সন্ধিভেদ! – শিবরাম চক্রবর্তী
৯. ঝুনুমাসির বিড়াল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০. বিধু দারোগা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১১. সাধু কালাচাঁদের পালাকীর্তন – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
১২. কে ফার্স্ট? – আশাপূর্ণা দেবী
১৩. ফ্ল্যাট রেস – জরাসন্ধ
১৪. চিত্তশুদ্ধি আশ্রম – বিমল কর
১৫. টেনাগড়ে টেনশান – বুদ্ধদেব গুহ
১৬. হাতি-চোর – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৭. ছোটমাসির মেয়েরা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৮. মোটরবাইক, ষাঁড় ও লাকি – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
১৯. ব্যাঙাচিদের লেজ – তারাপদ রায়
২০. বাজারদর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২১. তেঁতুলমামার জগৎ – হিমানীশ গোস্বামী
২২. রাজার মন ভাল নেই – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৩. গজেনকাকার মাছ-ধরা – বিমল কর
২৪. দাদুর ইঁদুর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৫. সাত নম্বর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৬. মেজদার সার্কাস – চিত্তরঞ্জন সেনগুপ্ত
২৭. চোর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৮. কুস্তির প্যাঁচ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৯. দুঃখহরা বড়ির শিশি – লীলা মজুমদার
৩০. পিলকিন’স ইলেভেন – বিমল কর
৩১. রাত যখন বারোটা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩২. ভুনিকাকার চৌরশতম – বিমল কর
৩৩. গ্রামের নাম জাঁকপুর – আশাপূর্ণা দেবী
৩৪. নিখোঁজ নিরুদ্দেশ হতে গেলে – আশাপূর্ণা দেবী
৩৫. বাঘের দুধ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৬. গগনবাবুর গাড়ি – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৭. গাবু – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৮. কুরুক্ষেত্র – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৯. কাক্কাবোক্কার ভুতুড়ে কাণ্ড – শৈলেন ঘোষ
৪০. হরিমতির বাগান – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪১. বড়দার বেড়াল – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
৪২. মহাকর্ম – সমরেশ মজুমদার
৪৩. পায়রাডাঙায় রাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৪. মামার বিশ্বকাপ দর্শন – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৫. গটমটে সাহেব বটে – শৈলেন ঘোষ
৪৬. রাঘব বোয়াল – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
৪৭. স্কন্ধকুমার এবং অর্ধচন্দ্র – তারাপদ রায়
৪৮. পাগল হইবার সহজপাঠ – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৯. বিপিনবিহারীর বিপদ – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৫০. সাদা রঙের পাঞ্জাবি – অনির্বাণ বসু
৫১. জগু যাবে বেড়াতে – বাণী বসু
৫২. কুঞ্জবাবুর পিঁপড়ে বাতিক – অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়
৫৩. ভুলে যাওয়া – সিদ্ধার্থ ঘোষ
৫৪. ঝগড়ুটে ফাইভ – প্রচেত গুপ্ত
৫৫. বিপদভঞ্জনের সর্পদোষ – উল্লাস মল্লিক
৫৬. মাসির বাড়ি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৭. জাগ্রত অসুরের গল্প – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৫৮. কাকাতুয়া ডট কম – প্রচেত গুপ্ত
৫৯. নতুন নাটকও ভন্ডুল – উল্লাস মল্লিক
৬০. রামখেলাওনের কেরামতি – সৌরভ মুখোপাধ্যায়
৬১. কলহগড়ের নিস্তব্ধতা – সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়
৬২. পটলার থিমপুজো – শক্তিপদ রাজগুরু
৬৩. সংকটমোচন কমিটি – প্রচেত গুপ্ত
৬৪. নতুন বন্ধু চিনু – জয়দীপ চক্রবর্তী
৬৫. বুঁচকির মেয়ের বিয়ে – নবনীতা দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন