ইলশেঘাই – লীলা মজুমদার

পৌলোমী সেনগুপ্ত

মহালয়ার আগের দিন, পানুর নামে ইলশেঘাই থেকে একটা হাতে-লেখা টেলিগ্রাফ এল, “কাম শার্প ছোটমামা।” হাতে-লেখা মানে একটা পঞ্জিকার টেলিগ্রাফের ফর্মে সবুজ কালি দিয়ে হাতে লেখা, চাঁদুমামার নিজের হাতে লেখা, আর কারও লেখা অত খারাপ হতে পারে না। ঝাঁকড়া চুল, ছেঁড়া সরু পেন্টেলুন পরা যে ছোকরা টেলিগ্রাফ এনেছিল, সে পানুর বাবাকে বুঝিয়ে বলল, এইভাবেই নাকি ইলশেঘাইয়ের সব তার পাঠানো হয়, তাতে খরচা একটু বেশি পড়লেও, তাড়াতাড়ি আসে। বাসভাড়া দু’টাকা আর টিফিন এক টাকা দিলেই ও ফিরে যাবে। জবাব থাকলে ওর হাতে পাঠানা যায়, যার টেলিগ্রাফ তার কাছ থেকে সে-খরচা আদায় হবে, এইরকমই ওদের নিয়ম।

পানু কিছু বলবার আগেই হাতে হাতে তিনটাকা দিয়ে বাবা ছেলেটাকে ভাগিয়ে দিলেন।

সেজকাকা চটে গেলেন, “ব্যাটার চোখ দুটো দেখেছিলে? নাকের কাছ ঘেঁষে বসানো। কানের লতি জোড়া। আর তার হাতেই কিনা তিনটে টাকা দিয়ে দিলে!”

বাবা তো অবাক! “তাতে কী হয়েছে?”

“দুষ্কৃতকারীদের ওরকম হয়।”

পানু বলল, “দাদুর তো কানের তলা জোড়া,দাদু কি—“

বাবা ধমক দিলেন, “থাম দিকি। তা চাঁদু এখানে টেলিগ্রাফ পাঠাল কেন, নিজের ভাগনে গুপিকে না পাঠিয়ে?”

“ইয়ে— মানে— বোধহয় কোনও বিপদে পড়েছেন, বাবা, কাল থেকে ছুটি আরম্ভ, আমরা যাব তো?”

বাবা ওইসবই ভালবাসেন, বললেন, “তা যেতে পারো, তবে একা একা ঘুরবে না, তেলেভাজা খাবে না, চাঁদুর সঙ্গে থাকবে!”

শুনে বড় মাস্টার ফিক করে হেসে ফেললেন। “তা থাকবেই তো, নইলে চাঁদুবাবুকে কে আরশুলার হাত থেকে রক্ষা করবে?”

বাবা অবাক হয়ে তাকাতেই, হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গিয়ে বললেন, “মানে কে কাকে দেখে তার ঠিক নেই। আমিও যেতাম, কিন্তু আমার এই কাঠের ঠ্যাংটা একটু মেরামত করে না-নিলেই নয়। ও জায়গা আমার চেনা। ভারী ইন্টারেস্টিং জায়গা, তিনশো বছরের পুরনো ঘরবাড়ি, ইংরেজরা এখানে আসবার বহু আগে ওখানে পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল। এখনও নাকি মাঝে মাঝে তাদের লুকনো সোনাদানা বেরিয়ে পড়ে। বজবজ ছাড়িয়ে মাইল পনেরো যেতে হয়। বাস যায়। বড় বড় গাছ, ফাঁকে ফাঁকে বিশাল সব কাকের চোখের মতো টলটলে-জলে-ভরা পুকুর, তার নীচে মাছ কিলবিল করতে দেখা যায়—দেখবি সব।”

পানুকে কিছুই করতে হল না, বাবাই গুপিদের বাড়ি গিয়ে খুদে ব্যাগ সহ গুপিকে সুদ্ধ নিয়ে রাতে ফিরলেন। রামকানাইদা চেতল মাছের বড়া করেছিল, গুপিকে পায় কে।

পরদিন যখন ইলশেঘাইতে দু’জনে বাস থেকে নামল তখন বেলা একটা হলেও চারদিক কেমন থমথম করছিল। জায়গাটার নাকি বড্ড বদনাম। নাকি একটাও সৎলোক বাস করে না। বড় মাস্টারের কথা। দুপুরের খাবার পানুর মা সঙ্গে দিয়েছিলেন, একটা বটগাছের নীচে বসে তার সদ্ব্যবহার করা হল! মুখে একটা মাংসের বড়া পুরে গুপি পানুকে কনুইয়ের গুঁতো দিয়ে বলল, “সরু পেন্টেলুন বাস থেকে নেমে অবধি আমাদের ফলো করছে।”

পানু ফিরে দেখে সেই কানের লতি-জোড়া ছেলেটা ছাড়া আর-কেউ নয়। চোখাচোখি হতেই ফিক করে হেসে বলল, “একটু চলবে নাকি, ছোটকত্তা, কদ্দিন এ-গন্ধ নাকে ঢোকেনি! তোমাদের নিতে এসেছি।”

তিনজনে মিলে বেশ সাঁটাল। ছেলেটা আস্ত একটা গল্পের ঝুড়ি। এসব গাছ নাকি তিনশো বছরের বেশি পুরনো! এদের ডালে ডালে রহস্য। পুকুর ছেঁচলে যা বেরুবে তা দেখলে নাকি পানুদের পিলে চমকে যাবে। এখানে কেউ সাধারণ লাঠি নিয়ে চলে না, সব গুপ্তি, ভেতরে ছোরা গোঁজা। কেউ কাজকর্ম করে না, অথচ সকলের অবস্থা ভাল, মানে অবস্থা ভাল না হলেও— কী বলে ইয়ে— কাজ করবে কেন, অন্য উপায়ে যদি টাকা-কড়ি আসে। এবার উঠতে হয়, নইলে খ্যাংরাবাবুর নাড়ি ছেড়ে যাবে। খ্যাংরাবাবু যে ছোটমামা, তা আর বলতে হল না।

গঙ্গার ধারে উঁচু পাড়ের ওপর হয়তো চারশো বছরের পুরনো একটা কেল্লামতো বাড়িতে ওদের নিয়ে গেল ছেলেটা। এটাই নাকি এখানকার জমিদারের বাড়ি ছিল, তাঁর প্রবল প্রতাপে বাঘে-গোরুতে এক ঘাটে জল খেত। তারও আগে এটা সান পিদ্রো নামের বিখ্যাত জলদস্যুর আস্তানা ছিল, এর তলাকার পাথর নাকি চোরা-কুঠরি দিয়ে মৌচাকের মতো ঝাঁঝরা হয়ে আছে। “এখানকার বাবুরা একটা একটা করে খুদে খুদে ইট সরিয়ে সেই চোরা-কুঠরির ঢুকবার পথ খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তাতে নাকি গাদা গাদা সোনা ঠাসা। টিকটিকিবাবুকে তাই আনা হয়েছে, শুঁকে শুঁকে বের করে দেবেন। তা আজ পাঁচ দিন চার বেলা লুচি-পাঁঠা-কচুরি-সন্দেশ ওড়াচ্ছেন, চোরা-কুঠরি খুঁজে বের করা দূরে থাকুক, সব সময় নিজের ঘরটাই ঠাওর করতে পারেন না। পরশু ভুলে বুড়ি ঠাকুমার ঘরে ঢুকে পড়াতে, তিনি কষে ধোলাই দিয়েছেন, তাই এখনও বাবু খুঁড়িয়ে হটছেন। অবিশ্যি তোমরা যখন তাঁর নিজের লোক, এ-সব কথা তোমাদের বলা শোভা পায় না। ওটা কী পকেট থেকে বের করলে, ভাজামশলা নাকি?”

ব্যাপার বুঝে পানু-গুপি হাঁ! চাঁদুবাবু হলেন গুপির ছোটমামা, বর্ধমানের সমাদ্দার ইনভেস্টিগেশন্সে দুই বছর শিক্ষানবিশি করলে, পুলিশের দুঁদে গোয়েন্দা বিনু তালুকদার ওঁকে পুলিশের তদন্ত বিভাগের পরীক্ষায় একটা চান্স দেবেন, ছোটমামা সেই আশাতেই আছেন। এদিকে সমাদ্দারের আপিসের সব চাইতে ঘোড়েল তদন্ত বড়সাহেব ছোটমামার উপর চাপিয়ে দেন। ছোটমামার ছোটবেলায় একবার অম্বলের ব্যামো হয়েছিল, সেই ইস্তক যখন-তখন বিপদে পড়লে হাতে-পায়ে খিল ধরে, ভাল ভাল খাবার না খেলে গায়ে জোর পান না। তাই শেষ পর্যন্ত গুপি-পানুকে না ডেকে উপায় থাকে না। তাদের দু’জনেরই চোদ্দো বছর বয়স, ভয়ংকর সাহস আর এই-এই পায়ের গোছ!

কেল্লার চারদিকে খাল কাটা, আগে তাতে কুমির হাঙর কিলবিল করত, তার ওপর পুল বসানো, সেই পুলটা ওপার থেকে কপিকল দিয়ে তুলে ফেলা যায়। মানে আগে যেত, শিকল মেরামত করে, যন্তরে তেল ঢেলে আট-দশজন জোয়ান যদি হাতল ঘোরায় তো এখনও হয়তো যেতে পারে। আপাতত পুল নামানো, নীচের খাল খটখটে শুকনো, তাতে আলু পেঁয়াজের বাগিচা করা হয়েছে। সরু-ঠ্যাং বলল, “সেসব আর কাউকে খেতে হয় না, রাতে দলে দলে বুনো খরগোশ এসে সব সাবাড় করে দেয়। অবিশ্যি গুলতি দিয়ে বুনো খরগোশ মারা যায়, খেতে খুবই ভাল, তবে বেজায় হিংস্র, কামড়েটামড়ে দেয়। বড়কর্তারা তাই কুকুর বেচে দিয়েছেন, খরগোশের ভয়ে কেউ সন্ধ্যার পর এ-জায়গার ত্রিসীমানায় পা দেয় না।”

গুপি-পানু অবাক হয়ে বলল, “তাতে টিকটিকিবাবুর তদন্তের অসুবিধা হয় না?”

হ্যা হ্যা করে খানিকটা হেসে ছোকরা বলল, “কীসের অসুবিধা? ওনার তদন্ত তো কেল্লার মধ্যিখানে, তলায়ও বলতে পারো। বরং সুবিধাই হয়েছে, খরগোশের ভয়ে উনি রেতে পেলিয়ে যেতে পারেন না। জানলা দিয়ে আমাকে বহাল করেছেন তোমাদের নিয়ে আসবার জন্য, বলেছেন তোমরা আমাকে যথেষ্ট খুশি করে দেবে! তোমাদেরও অনেক কাজে লাগতে পারি, রেতে এদিকেই থাকি, শহরে খরগোশের মাংস সরবরাহ করি কিনা—”

গুপি বলল, “কলকাতায়? কোন বাজারে বলো তো?”

সরু-ঠ্যাং হাসল, “ওমা! কলকেতা আবার কোথা পেলে? সে তো বলতে গেলে বোম্বাইয়ের কাছে, শহর বলতে আমরা বুঝি বজবজ, সেও কিছু কলকেতার চেয়ে কম বড় নয়, তার ওপর অনেক বেশি পুরনো-ও বটেক। এই যে এসে গেলাম, ঘণ্টির ছিকলি টানো। আমার পুল পেরুতে মানা।”

চার-মানুষ উঁচু দেয়াল, ফটকটাও কম করে দশ ফুট তো হবেই, মোটা কাঁঠাল কাঠের ওপর লোহার পাত দিয়ে মোড়া, নিশ্চয় সেই সান পিদ্রোই বানিয়েছিল। তবে শেকল টানতে হল না, ফটকের গায়ে ফাটা একটা খুদে দরজা খোলাই ছিল, ভিতরের উঠোনে ছোটমামা ব্যস্তসমস্ত ভাবে পায়চারি করছিলেন। ওদের দেখে ছুটে এসে বললেন, “ওই চোঙা মতো জিনিসটার মধ্যেই ঘোরানো সিঁড়ি আছে, তাই বেয়ে একেবারে ছাদের চুড়োর ঘরে গিয়ে বোস, আমি এই চিংড়িমাছের ঝাল-ফিরেজিটা নামিয়ে এক্ষুনি আসছি, ধরে গেলেই কেলেঙ্কাবি! কিন্তু দেখিস তোরা এসেছিস কেউ যেন টের না পায়।”

গুপি অবাক হয়ে বলল, “সে কী, তুমি কি এদের বাবুর্চি বনে গেলে নাকি? তা হলে সমাদ্দারের তদন্তটা কে করবে শুনি?”

ছোটমামা মুচকি হাসলেন, “বাবুর্চি ছাড়া আবার কে? এখানকার গলিঘুঁজি সে জানবে না তো কি আমি জানব? এখানে জন্মেছিল, ওর আগে ওর বাবা বাবুর্চি ছিল, তার আগে তার বাবা, তিন-চারশো বছর আগে সান পিদ্রোর মুর্গ মশল্লম ওর অতিবড়-প্রপিতামহ রাঁধত। কিন্তু এ-ব্যাটার রান্না মুখে তোলা যায় না, অগত্যা আর কী করা। যাই হোক, এখন তোরা যখন এসে পড়েছিস— এই রে!”

বাবুর্চিখানা থেকেই বোধহয় ছ্যাঁক ছ্যাঁক শব্দ বেরুতেই ছোটমামা সেই চোঙামতো জিনিসটার পাশের একটা নিচু দরজা দিয়ে ছুটে ঢুকে গেলেন। গুপিরাও চোঙায় ঢুকে, আগাগোড়া পাথরের ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে একেবারে চারতলার ছাদের ওপরে চুড়োর নীচেকার গোল ঘরে উপস্থিত হল। অমনি মুখে ঝিরঝির করে এক ঝলক সমুদ্রের হাওয়া লাগল। প্রাণ জুড়িয়ে গেল।

তখন হয়তো বেলা চারটে, এ সময় কেউ যে চিংড়ি মাছের ঝাল-ফিরেজি রাঁধে, পানুর সেটা জানা ছিল না। গুপি বলল, “আচ্ছা, ইলেকট্রিক লাইট নেই, তেলের বাতি জ্বেলে ছোটমামা রাঁধল আর কী! শেষটা যদি কিলবিলেরা উড়ে আসে!”

ঘরে একটা প্রকাণ্ড কারিকুরি করা সেগুনকাঠের তক্তপোশ, তিনটে হালকা নেয়ারের খাট আর একটা কাঠের নিচু টেবিল ছাড়া কোনও আসবাব ছিল না। দেয়ালে অনেক কুলুঙ্গি, মস্ত মস্ত জানলা, তারই একটাতে মান্ধাতার আমলের এক দূরবিন বসানো। নেয়ারের খাটে দিব্যি বিছানা পাতা। তার ওপর ঝপাঝপ শুয়ে পড়ে ওরা বলল, “আঃ! কী আরাম!”

শুয়ে শুয়ে জানলা দিয়ে চেয়ে দেখে নদী তো নয় যেন সাগর, ওপার দেখা যায় না। পাথরের খাড়ির নীচে জোয়ারের জল আছড়ে পড়ে অদ্ভুত এক শব্দ বেরুচ্ছে, যেন বিকট একটা ড্রাগন রাগে ফুসছে! “এই ঘরে ছোটমামা একা শুত! আশ্চর্য!” গুপি বলল, “না শুয়ে করে কী, বাইরে তো হিংস্র খরগোশের পাল, আলুগাছ চিবুচ্ছে! তবে একা নিশ্চয় শুত না। বাবুর্চিকে আনাত, পরদিনের মেনু ঠিক করত।”

এর মধ্যে ছোটমামা ঘরে ঢুকে বললেন, “হাসছিস যে বড়? জানিস এ-বাড়িতে চারশো বছর কেউ হাসেনি।” তারপর নিজের হাঁটু চাপড়ে বললেন, “পুরো পাঁচদিন ধরে হয়রান হয়ে গেলাম, মাটির তলায় মৌচাকের মতো চোরা-কুঠরি, অথচ তার একটা ঢুকবার রাস্তা পাওয়া যাচ্ছে না।”

পানু বলল, “আমি পেয়েছি। কিন্তু খিদেও পেয়েছে, চা-জলখাবার কোথায়?”

সে-কথার উত্তর না দিয়ে ছোটমামা লাফিয়ে উঠলেন, “হ্যাঁ! পেইছিস নাকি? কোথায়?”

জানলার কাছে গিয়ে পানু নীচে পাথরের ঢিপির দিকে দেখাল, “এই দূরবিন দিয়ে দেখো। ওই যে কচ্ছপের মত দেখতে পাথরটার পিছনে, ওটা একটা গুহার মুখ না? ওই না হয়ে যায় না।” দেখে ছোটমামার মুখ পাংশুপানা।

“কিন্তু— কিন্তু— ওখানে যাওয়া হবে কী করে?”

গুপি বলল, “কেন? দিনের বেলায় যেতে দোষ কী? খরগোশরা তো রাতে আসে।”

ছোটমামা বিরক্ত হয়ে ওর দিকে একবার তাকিয়ে বললেন, “ওই পাথর বেয়ে তো নামা যাবে না।”

পানু বলল, “দুষ্কৃতকারী নদী থেকে বামাল ওই পথে ঢুকে চোরা-কুঠরিতে লুটের মাল রাখত। এ-দিক থেকেও যাবার একটা পথ নিশ্চয় আছে, সেইটেই বের করতে হবে। ওরা নিশ্চয় প্রকাশ্যে বাইরে দিয়ে যাওয়া-আসা করত না, তা হলে নবাবের সৈনিকরা আর ওদের আস্ত রাখত না।”

ছোটমামা অবাক হয়ে গেলেন, “নবাব? কোনও নবাবের কথা তো শুনিনি। তবে বিনু তালুকদারের বিশ্বাস বোম্বেটেদের সেনা-টেনা বাজে কথা, এর ভিতরে নিশ্চয় বে-আইনি সোনা পাচারের ষড়যন্ত্র আছে। দলে ভাঙন ধরেছে, একদল লুকিয়েছে, একদল হন্যে হয়ে খুঁজছে, তারাই সমাদ্দার ইনভেস্টিগেশন্সের শরণাপন্ন হয়েছে। স্যারকে আগে থাকতেই এক হাজার টাকা দিয়েছে, সে তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। এদিকে—”

এই বলে বেজার মুখ করে ছোটমামা বসে রইলেন। চা-জলখাবারের কথা কিছু বললেন না। শেষটা পানু আরেকবার সে-কথা তুলতেই, তেড়িয়া হয়ে উঠে বললেন, “কেন, তোদের মায়েরা এদ্দুর ছেলে পাঠিয়েছে, সঙ্গে জলখাবার দেয়নি?”

গুপি রেগেমেগে পোঁটলা খুলে আলু-ফুলকপির শিঙাড়া আর নারকেল নাড়ু বের করে বলল, “দিয়েছে, তবে তোমার জন্য নয়।” এই বলে পানুর হাতে দু’-চারটে দিয়ে, নিজে খেতে আরম্ভ করল।

ছোটমামা বললেন, “ওই দেখ, অমনি চটে গেল! আরে তোরা কি ঠাট্টাও বুঝিস না? তাছাড়া এই অসময়ে খাবারদাবার বের করতে গেলে জানাজানি হয়ে যাবে। বাইরের লোকের ওই পুল পেরুনো মানা, কেউ ঢুকলে তাকে ডালকুত্তা দিয়ে খাওয়ানো হয়—”

“খরগোশ দিয়ে খাওয়ানো হয় বলো, কুকুর-ফুকুর নেই। বাড়িটাতে ভাল করে খানা-তল্লাশি করেছ কি? রান্নাঘরের উনুনের নীচে, শোবার ঘরের খাটের তলায় চোরা দরজা থাকতে পারে।”

ফোঁস করে একটা শব্দ করে ছোটমামা বললেন, “সব দেখা হয়েছে। দুই কর্তার পেয়ারের খানসামাদের, বুড়িঠাকুমার আর তাঁর বউমাদের খাস-দাসীদের প্রত্যেককে যথাসাধ্য ঘুষ দিয়ে খুঁজতে আর-কিছু বাকি রাখিনি। কিচ্ছু পাইনি, মাঝখান থেকে আমার ঠ্যাংটা—”

এই বলে ছোটমামা বা হাঁটুতে হাত বুলুতে লাগলেন। পানু তাঁকে শিঙাড়া নারকেল নাড়ু খাওয়ালে পর তবে একটু সুস্থ হলেন।

স্থির হল, ওসব কোনও কাজের কথা নয়, চোরা দরজা একতলার কোনও অপ্রত্যাশিত অথচ সহজে নাগাল পাওয়া যায়, এমন জায়গায় হবে। রাতে তদন্ত করতে হবে, বাড়ির মধ্যে তো আর খরগোশ নেই, ছোটমামার অত ভয়টা কীসের?

ধরা পড়ার ভয়ে ওই ঘরে ওরা সারাদিন আটক রইল, ছাদে আর অন্য ঘর ছিল না। বাড়িতেও খুব বেশি লোক আছে মনে হল না। এককালের বড়লোক হতে পারে, এখন তাঁদের অবস্থা যে পড়ে গেছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবু নাকি দু’বেলা চর্ব্যচোষ্য খাওয়া চাই। বাড়ির যত ভাল ভাল আসবাব, কাঁসার বাসন, ঝাড়বাতি বেচে বেচে ওঁরা কোর্মা-কাবাব খান, পেস্তা দিয়ে ক্ষীর হয় রোজ। পায়ের নীচে যাঁদের সোনার পাহাড়, তাঁদের এর চাইতে বেশি দুর্দশা কী হতে পারে! আজকাল নাকি ছোটমামাকে বড়কর্তা মেজকর্তা চোখা চোখা কথা শোনাতে শুরু করেছেন। বুড়িঠাকুমা বেঁটে একটা মুগুর এনে রেখেছেন। ভাগ্যিস একতলায় কেউ নামেন না, তাই রান্নাঘরের অদল-বদল ব্যবস্থার কথা কেউ জানেন না। এদিকে কাল থেকে বাবুর্চির দেখা নেই, চোরা দরজা খুঁজে পেয়ে, তাই দিয়ে নেমে কোনও নতুন বিপদে পড়ল কি না তাই বা কে জানে! ছোটমামা ঘনঘন কপালের ঘাম মুছে, রাতের জন্য বাকরখানি বানাতে নীচে নেমে গেলেন। হরেকেষ্ট বলে একটা লোক সর্বদা রান্নাঘর আগলায়, নইলে ছোটমামার গা-শিরশির করে। নালা দিয়ে নাকি জিব-চেরা চার ফুট লম্বা গোসাপ আনাগোনা করে।

অনেক রাতে কর্তাদের দোতলা-তিনতলার ঘর চুপচাপ হয়ে গেলে, ওদের দু’জনের জন্য সে কী ভাল খাবার নিয়ে এলেন ছোটমামা। গুপি বলল, “পুলিশে না ঢুকে, তুমি অশোকা হোটেলে ঢুকলে পারো, ছোটমামা। এমন রান্না কেউ কখনও রাঁধেওনি, খায়ওনি। প্রকৃতির দেওয়া গুণ নষ্ট করতে হয় না।” ছোটমামাও রান্নাঘরের শিকলি তুলে ওদের সঙ্গে খেতে বসলেন। পাশের স্নানের ঘরে তোলা জলে বাসন ধোয়া হল। পানুরা প্লাস্টিকের থালা গেলাস এনেছিল। তারপর টর্চ নিয়ে সবাই নীচে নেমে এল। রবারের জুতোয় এতটুকু শব্দ হল না।

সমস্ত একতলাটাকে গোরুখোঁজা করে ফেলা হল। স্রেফ একটি গোলকধাঁধা! এখানে একটা গলি বাঁক নিয়েছে, ওখানে দুটো সিঁড়ি, সেখানে একটা ঘুপচি খোপ, তাতে ঘুঁটে রাখা হয়েছে। ঘোরানো সিঁড়ি মাটি ফুঁড়ে নীচে নেমে গেছে। সেখানে সারিসারি কুঠরিতে পর্তুগিজরা তাদের রসদ মজুত রাখত। বড় বড় পিপে, মস্ত মস্ত পাথরের হাঁড়া, তাতে বৃষ্টির জল ধরে রাখা হত। ছাদে বড় বড় আংটা, আঁকড়া, দেয়ালে লোহার তাক। ছোটমামা বললেন, “এর প্রতিটি বর্গইঞ্চি হাতুড়ি ঠুকে দেখা হয়েছে, কোথাও এতটুকু ফোপরা আওয়াজ নেই।”

অদ্ভুত সব শব্দ কানে আসছিল, বগবগ করে কোনও জায়গা থেকে জলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল, নিশ্চয় গঙ্গার প্রচণ্ড জোয়ারের জল, অথচ তার সঙ্গে কোথাও কোনও যোগাযোগ নেই, সব শূন্য খাঁ খাঁ করছে। শুধু এক জায়গায় বুড়ি ঠাকুমার তৈরি সারি সারি লঙ্কার আচার রয়েছে, সে নাকি এমনি ঝাল যে, যে-কোনও দিন বোয়ম ফেটে পাথরের দেয়ালে আগুন লেগে যেতে পারে! সে যাই হোক, এখান থেকে যে বেরুবার পথ নেই, সে-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

ছোটমামা বললেন, “থাকবেই বা কেন? বোম্বেটেরা তো দুর্ধর্ষ ডাকাত ছিল, তারা যাতে বাড়ির মধ্যে সেঁদুতে পারে, এমন কোনও পথ নিশ্চয়ই রাখা হয়নি।”

শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে ওরা আবার রান্নাঘরের সামনের চাতালে গিয়ে বসল। গুপি সন্দেহেতে দোতলা-তিনতলার জানলার দিকে তাকাল। খুদে ঘুলঘুলির মতো এদিকের জানলা, মাটি থেকে অনেক উপরে, আলমারির মাথায় না চাপলে পৌঁছনোই যাবে না। ছোটমামা বললেন, “ও কী? অত সন্দ কীসের? কর্তাবাবুদের খাবার সময় বলে রেখেছি যে, কিছু কিছু হদিশ পেইছি বলে দু’জন শাকরেদ আনাচ্ছি। ওঁরা মত দিয়েছেন, তবে এই শর্তে যে কাল সকালের মধ্যে সোনা বের করে দিতে হবে—ই-ই-ক!”

তারার আলোয় দেখা গেল, এই লম্বা একটা গোসাপ ছোটমামার গা ঘেঁষে উঠোনের দেয়ালের কাছেকার খাবার জলের ন্যাড়া কুয়োর মধ্যে দিব্যি নেমে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে কুয়োর মধ্যে থেকে বিশ্রী একটা ওঁয়া ওঁয়া শব্দ বেরুতে লাগল। ছোটমামা সঙ্গে সঙ্গে “ব-ভূত! ব-ভূত!” বলে হাত-পা এলিয়ে মুচ্ছো গেলেন। অথচ বিনু তালুকদার একশোবার ভূতে বিশ্বাস করতে মানা করেছেন। পানুদের সঙ্গে সর্বদা দড়ি, মগ, এসব থাকত। পানু এক দৌড়ে ন্যাড়া কুয়েতে দড়ি-বাঁধা মগ নামিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে রে রে রে করে বেঁটে মুগুর হাতে চুল-ছাঁটা থানপরা বুড়ি ঠাকুমা ওর দিকে ধাওয়া করলেন। অমনি পানুও কুয়োর মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল! আর বুড়ি ঠাকুমা থমকে দাঁড়িয়ে, মুহূর্তের মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে, দেয়ালে ঠেস দিয়ে ঠক-ঠক করে কাঁপতে লাগলেন।

অগত্যা গুপি কুয়ো থেকে জলতোলার মোটা দড়ির এক মাথা থাম্বাতে বেঁধে, অন্য মাথা হাতে নিয়ে কুয়োর কিনারা দিয়ে উঁকি মারতেই, সেই গোসাপটা দিব্যি সুন্দর টিকটিকির মতো বেরিয়ে এসে বুড়িঠাকুমা আর ছোটমামাকে মাড়িয়ে-টাড়িয়ে রান্নাঘরের বড় নর্দমার মধ্যে ঢুকে গেল। ওঁদের দু’জনার মুচ্ছোভাবও অমনি কেটে গেল। তবে এসব কিছুই গুপি দেখতে পায়নি।

গুপি হাতে টর্চ নিয়ে, সযত্নে কুয়োর মধ্যে আলো ফেলেই চমকে উঠল! হাত দশেক নীচেই কুয়ো সরু হয়ে গেছে, চারদিক ঘুরে একটা হাত-দুই চওড়া কার্নিশের মতো বেরিয়ে এসেছে, আর তার ওপর পানু বসে মগ ঝুলিয়ে জল তুলতে চেষ্টা করছে। গুপি ডেকে বলল, “দরকার নেই মুচ্ছো ভেঙে গেছে!” আর অমনি কুয়োর ভিতর থেকে সেই বিশ্রী ওঁয়া ওঁয়া শব্দ উঠতে লাগল। প্রতিধ্বনি ছাড়া কিছু নয়, কিন্তু পানু আর-একটু হলে পড়েই যায় আর কী! কার্নিশের কানায় কোনওমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বিকট চ্যাঁচাতে লাগল, “আমাকে তোল, শিগগির তোল।”

দড়ির মাথায় ফাঁস দিয়ে পানুকে তুলতে খুব কষ্ট হল না। বুড়ি ঠাকুমা হাত লাগালেন। পেল্লায় জোর তাঁর গায়ে।

উপরে উঠে হাঁপাতে হাঁপাতে পানু বলল, “পেয়েছি!”

ঠাকুমা আঁতকে উঠলেন, “কী? কী পেইছিস রে ড্যাকরা?”

“সোনার তাল!”

‘আঁ! কোথায়? শিগগির বল কোথায়!”

পানু বলল, “কুয়োর দেয়ালের খাঁজে। আমার পা লেগে খাঁজের মুখের পাথর খুলে পড়ে গেছে। তার পাশ দিয়ে সুড়ঙ্গ বেরিয়ে গেছে দেখলাম, সিঁড়ি নেমে গেছে!”

শুনেই ঠাকুমা লাফিয়ে উঠলেন, “অ্যাই! অ্যাই তবে ঘাটে নামার পথ! এরা বলে কিনা গঙ্গাচান করতে হলে ফটক দিয়ে বেরিয়ে টাঙ্গা ভাড়া করে যেতে হবে! অথচ একেবারে উঠোনের মধ্যিখানে পথ! সর তোরা, আমি নামব! বলে গঙ্গাতীরে পঞ্চাশ বছর বাস করলাম, আর একবারও গঙ্গাচান করলাম না!” বলে হুড়মুড় করে নেমে পড়েন আর কী!

এমন সময় ফটকের বাইরে ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার, “বাপরে মারে! এই কামড়ালে! এই খেলে রে! ওরে বাপরে! মরে গেলুম রে!” ছোটমামা উঠিপড়ি করে ফটকের মাঝখানের ছোট দরজা খুলে দিলেন, পড়িমরি করে জনাদশেক পুলিশের লোক আর তাদের পিছন পিছন হুড়মুড় করে গোটা পাঁচেক খরগোশ হালুম হালুম করতে করতে ঢুকে পড়ল। ততক্ষণে বড়কর্তা ছোটকর্তা, দুই গিন্নিমা, হরেকেষ্ট, গিন্নিমাদের খাসদাসীরা, কর্তাদের পেয়ারের বেয়ারারা সব এসে জুটেছিল। দেখতে দেখতে খরগোশের দফারফা, রাতে ভোজ, ছোটমামা প্রধান বাবুর্চি। প্রধান আবার কী, বলতে গেলে একমাত্র বাবুর্চি। কারণ আসল বাবুর্চিকে টাকাকড়ি দিয়ে একমাসের ছুটিতে বজবজ পাঠিয়ে যে-লোকটা বাবুর্চির পদে বহাল থেকে, ছোটমামার হয়ে তদন্ত করত, সে বিনু তালুকদারের লোক ছাড়া আর কেউ নয়। সে-ই থানায় রিপোর্ট করতে গেছিল। হরেকেষ্টও একজন পেয়াদা, তবে দীর্ঘকাল এখানে ওখানে রান্নাঘরের চাকর সেজে থেকে থেকে, তার আজকাল রান্নার শখ চেপে গেছে, পুলিশের কাজ ভাল লাগে না!

আর সোনার তাল? সে-সব নাকি কর্তাবাবুদের বাবার পৈতৃক সম্পত্তি, বুড়ো-কর্তার উইলমতো বুড়ি ঠাকুমা আর কর্তারা সমান সমান ভাগ পাবেন। বিনু তালুকদারের লোকগুলো মহা হতাশ। “আরে মশাই দুষ্কৃতকারী ধরা আমাদের কাজ, দুষ্কৃতকারী না থাকলে আমরা হতাশ হই! এঁরা বলছেন নাকি ট্যাক্স ফ্যাক্স যা দেবার সব দেবেন। ধেত্তেরি ছাই!”

এরও অনেক পরে, যখন ওরা বাসে করে কলকাতায় পৌঁছে, পানুদের দোতলার ঘরে বসে রামকানাইদার তৈরি পাঁঠার ঘুগনি খাচ্ছিল, তখন ছোটমামা পকেট থেকে দুটো গত বছরের ফার্স্ট ডে কভার বের করে বললেন, “আমার একটু খটকা লাগছে যে সেই বুড়ো কর্তা মারাই গেছেন পঞ্চাশ বছর আগে, তার সোনার সঙ্গে এগুলো এল কী করে? তবে কি—!”

পানু কাষ্ঠ হেসে বলল, “তবে কি আবার কীসের? ওই কুয়োর খোপে সোনার তালের নীচে ওগুলো ছিল। আরেকটাও ছিল। বোধহয় কেউ দেখতে পাননি, সেটা আমি বিনু তালুকদারের কাছে দিয়েছি। এবার খেল শুরু হল বলে!”

আরও অনেক দিন পরে বিনু তালুকদার পানুর পিঠ চাপড়ে বললেন, “বেজায় চালাক তো তুমি হে। ওই সোনার তালটি হল গিয়ে কর্তাদের চোরা-কারবারির মাল। ওগুলো নিজেরা লুকিয়ে ফেলে, গোয়েন্দা লাগিয়ে খুঁজে বের করিয়ে, অজানা পৈতৃক সম্পত্তি বলে চালাবার তালে ছিলেন ওঁরা। এখন সব ফেঁসে গেল, সোনাগুলো গচ্ছা গেল, তবে ওঁরাই যে লুকিয়েছিলেন তার কোনও প্রমাণ না থাকাতে, ওঁরা নিজেরা পার পেয়ে যাবেন। নিতান্ত পথেও বসবেন না, ওই সব জমিজমাতে নাকি কোনও দামি ধাতুর সন্ধান পাওয়া গেছে, তাই খনিবিভাগ থেকে ন্যায্য দামে সম্পত্তিটা কিনে নেওয়া হচ্ছে। বুড়ি ঠাকুমা প্রথমটা বেঁটে মুগুর নিয়ে তেড়ে এসেছিলেন, তারপর সবটা বুঝিয়ে বলাতে বললেন, “ওমা, তাই নাকি? আমাকেও আবার টাকা দেবে নাকি? তবে রামকেষ্টপুরে গিয়ে গঙ্গার ওপর বোনপোর বাড়িতে থাকাতে আর বাধাটা কী? কবে থেকে বলছে ওরা।”

অগ্রহায়ণ ১৩৮২

সকল অধ্যায়

১. বিষে বিষক্ষয় – আশাপূর্ণা দেবী
২. আটচল্লিশ – অরবিন্দ গুহ
৩. ডোডো তাতাই পালা কাহিনি – তারাপদ রায়
৪. কৈলাসে চা পান – আশাপূর্ণা দেবী
৫. চোরে ডাকাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬. সাধু কালাচাঁদের নতুন কাজ – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
৭. ইলশেঘাই – লীলা মজুমদার
৮. শরচ্চন্দ্রের সন্ধিভেদ! – শিবরাম চক্রবর্তী
৯. ঝুনুমাসির বিড়াল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০. বিধু দারোগা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১১. সাধু কালাচাঁদের পালাকীর্তন – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
১২. কে ফার্স্ট? – আশাপূর্ণা দেবী
১৩. ফ্ল্যাট রেস – জরাসন্ধ
১৪. চিত্তশুদ্ধি আশ্রম – বিমল কর
১৫. টেনাগড়ে টেনশান – বুদ্ধদেব গুহ
১৬. হাতি-চোর – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৭. ছোটমাসির মেয়েরা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৮. মোটরবাইক, ষাঁড় ও লাকি – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
১৯. ব্যাঙাচিদের লেজ – তারাপদ রায়
২০. বাজারদর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২১. তেঁতুলমামার জগৎ – হিমানীশ গোস্বামী
২২. রাজার মন ভাল নেই – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৩. গজেনকাকার মাছ-ধরা – বিমল কর
২৪. দাদুর ইঁদুর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৫. সাত নম্বর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৬. মেজদার সার্কাস – চিত্তরঞ্জন সেনগুপ্ত
২৭. চোর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৮. কুস্তির প্যাঁচ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৯. দুঃখহরা বড়ির শিশি – লীলা মজুমদার
৩০. পিলকিন’স ইলেভেন – বিমল কর
৩১. রাত যখন বারোটা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩২. ভুনিকাকার চৌরশতম – বিমল কর
৩৩. গ্রামের নাম জাঁকপুর – আশাপূর্ণা দেবী
৩৪. নিখোঁজ নিরুদ্দেশ হতে গেলে – আশাপূর্ণা দেবী
৩৫. বাঘের দুধ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৬. গগনবাবুর গাড়ি – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৭. গাবু – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৮. কুরুক্ষেত্র – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৯. কাক্কাবোক্কার ভুতুড়ে কাণ্ড – শৈলেন ঘোষ
৪০. হরিমতির বাগান – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪১. বড়দার বেড়াল – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
৪২. মহাকর্ম – সমরেশ মজুমদার
৪৩. পায়রাডাঙায় রাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৪. মামার বিশ্বকাপ দর্শন – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৫. গটমটে সাহেব বটে – শৈলেন ঘোষ
৪৬. রাঘব বোয়াল – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
৪৭. স্কন্ধকুমার এবং অর্ধচন্দ্র – তারাপদ রায়
৪৮. পাগল হইবার সহজপাঠ – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৯. বিপিনবিহারীর বিপদ – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৫০. সাদা রঙের পাঞ্জাবি – অনির্বাণ বসু
৫১. জগু যাবে বেড়াতে – বাণী বসু
৫২. কুঞ্জবাবুর পিঁপড়ে বাতিক – অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়
৫৩. ভুলে যাওয়া – সিদ্ধার্থ ঘোষ
৫৪. ঝগড়ুটে ফাইভ – প্রচেত গুপ্ত
৫৫. বিপদভঞ্জনের সর্পদোষ – উল্লাস মল্লিক
৫৬. মাসির বাড়ি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৭. জাগ্রত অসুরের গল্প – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৫৮. কাকাতুয়া ডট কম – প্রচেত গুপ্ত
৫৯. নতুন নাটকও ভন্ডুল – উল্লাস মল্লিক
৬০. রামখেলাওনের কেরামতি – সৌরভ মুখোপাধ্যায়
৬১. কলহগড়ের নিস্তব্ধতা – সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়
৬২. পটলার থিমপুজো – শক্তিপদ রাজগুরু
৬৩. সংকটমোচন কমিটি – প্রচেত গুপ্ত
৬৪. নতুন বন্ধু চিনু – জয়দীপ চক্রবর্তী
৬৫. বুঁচকির মেয়ের বিয়ে – নবনীতা দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন