ঝগড়ুটে ফাইভ – প্রচেত গুপ্ত

পৌলোমী সেনগুপ্ত

ক্লাস সেভেনের রুটিনে আজ জ্যামিতি ক্লাস নেই। তবু আমরা পাঁচজনই জ্যামিতি বাক্স নিয়ে এসেছি। আমাদের জ্যামিতি হয় শুক্রবার। আজ সোমবার। আজ পাটিগণিতের দিন। পাটিগণিতের দিন জ্যামিতি বাক্সের কোনও কাজ নেই। কাল রাতে স্কুলের ব্যাগ যখন গোছাচ্ছিলাম, মা পাশে ছিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, “কী রে, কাল তোর জ্যামিতি আছে নাকি?”

আমি বললাম, “না, জ্যামিতি নেই।”

মা অবাক হয়ে বললেন, “তা হলে শুধুমুদু জ্যামিতি বাক্স নিয়ে যাচ্ছিস কেন?”

আমি আরও গম্ভীর হয়ে গেলাম। বললাম, “নিতে হবে মা। একটা ইম্পর্ট্যান্ট ব্যাপার আছে।”

মা আরও অবাক হয়ে বললেন, “ইম্পর্ট্যান্ট ব্যাপার! তোদের কাণ্ডকারখানা কিছুই বুঝি না বাবা!”

কথাটি সত্যি। আমাদের এই কাণ্ড অন্য কারও পক্ষে চট করে বোঝা বেশ কঠিন।

আসলে আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ ঝগড়ার দিন। রিখিয়া, দেবাদৃতা, শ্রুতি, রঞ্জনাদের সঙ্গে আজ আমাদের ফয়সালা। রিখিয়ারা আমাদের ক্লাসেই পড়ে। আমাদের ঠিক পিছনের বেঞ্চে, জানলার পাশে ওদের সিট। ওরা আলুকাবলি খেতে খুব ভালবাসে। আর যে-কোনও গান কোরাসে গায়। আলুকাবলি ভালবাসে বলে ওদের গ্রুপের নাম ‘আলুকাবলি গ্রুপ’। আমাদের ক্লাসে বিভিন্ন গ্রুপের বিভিন্ন নাম। চৈতালিদের গ্রুপের মেয়েগুলো কারণে-অকারণে খালি তিড়িংবিড়িং করে। মনে হয়, সবসময় ওরা যেন হাতে স্কিপিং নিয়ে ঘুরছে। তাই ওদের নাম ‘স্কিপিং গ্রুপ’। মীনাক্ষী, কল্পনা আর মনামিদের কাজই হচ্ছে, বেজার মুখে থাকা। দেখলে মনে হবে, পরীক্ষায় গাড্ডা মেরেছে। আসল ঘটনা কিন্তু তা নয়। ক্লাস টেস্টে দশে দশ পেলেও দেখা যায়, ওদের মুখে হাসি নেই। ওদের আমরা ডাকি ‘কুমড়োপটাশ গ্রুপ’ বলে। তৃষিতাদের গ্রুপের নামটা খুবই মজার। ওরা তিন বন্ধু সারাক্ষণ সেজেগুজে টিপটপ থাকে। সাতসকালে স্কুলে আসার সময় ওরা কোনওদিন মুখে পাউডার লাগাতে ভোলে না। ওদের গ্রুপ নাম পেয়েছে ‘পাউডার গ্রুপ’। এরকম আরও নাম আছে। আমাদের গ্রুপেরও একটা নাম আছে। সেটা পরে বলছি।

রিখিয়াদের সঙ্গে ক’দিন ধরেই আমাদের খটামটি চলছিল। খটামটির বিষয়গুলো বড় কিছু নয়, ছোটখাটো সব। জানলা কেন বন্ধ? বেঞ্চ কেন নড়ছে? জলের লাইনে ঠেললি কেন?

খটামটি হলেও আমাদের সঙ্গে ওদের বন্ধুত্ব কিছুমাত্র কম নয়। বুধবারই রিখিয়া চাউমিন খাইয়েছে। সেই চাউমিন ফ্যান্টাস্টিক বললেও কম বলা হবে। বলা উচিত, সুপার ফ্যান্টাস্টিক। গত সপ্তাহে মীনাক্ষীর হ্যারি পটারের বইয়ের সঙ্গে আমি ‘বুড়ো আংলা’ বদলাবদলি করেছি। সে বই আমি কাল রাতেও পড়েছি। গত শনিবার তো ছুটির পর ওরা গান ধরল, ঊর্মিমালা হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচল।

কিন্তু পরশু থেকে ওরা যে মারাত্মক কাজটা করছে তাতে আর ঘটনা ছোটখাটো দিকে নেই। বড় দিকে মোড় নিয়েছে। আমরাও ঠিক করেছি, সিরিয়াস ধরনের ঝগড়া করে এ-ঘটনার একটা এস্‌পার-ওস্‌পার করব।

এখন পর্যন্ত ঠিক আছে, সিরিয়াস ঝগড়াটা হবে ক্রাফ্‌টস পিরিয়ডে। যদিও সেটা নির্ভর করছে ক্রাফ্‌টস-টিচার মঞ্জুদির উপর। মঞ্জুদি মাঝেমধ্যে আমাদের সেলাইয়ের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে ক্লাসরুম ছেড়ে বেরিয়ে যান। আজও যদি সেরকম বেরিয়ে যান, তা হলে কোনও অসুবিধে নেই, আর যদি তা না হয়, তা হলে হয় টিফিনের সময়, নয়তো ছুটির পর ঘটনা ঘটবে। আমরা পাঁচ জনই তৈরি। আর সেই কারণেই জ্যামিতি বাক্স নিয়ে আসা।

জ্যামিতি বাক্স নিয়ে আসায় মনে হতে পারে, এই ঝগড়ার সঙ্গে জ্যামিতির কোনও সম্পর্ক আছে। মোটেও তা নয়। আমাদের এটাই নিয়ম। যেদিন গুরুত্বপূর্ণ ঝগড়ার ব্যাপার থাকে, সেদিন আমরা পাঁচ বন্ধু একসঙ্গে কিছু একটা করি। সেটা অন্য মেয়েদের চেয়ে একদম আলাদা হতে হবে। পাঁচ জনের বাইরে এটা কেউ জানতে পারে না। গোপন ব্যাপার। আসলে এটা করে আমরা মনে মনে এনার্জি তৈরি করি। নিজেদের বলি, “আজ হল বড় ঝগড়ার দিন। কথাটা যেন খেয়াল থাকে।”

আলাদা হওয়ার জন্য কী করব সেটা আগের দিন ঠিক করে দেয় পারমিতা। পারমিতার মাথায় খুব বুদ্ধি। অঙ্ক ক্লাসে লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা পড়ে। একবার টিচারের হাতে ধরা পড়ে গেল। অ্যালজেবরা খাতার তলায় কবিতার বই। বুলাদি ওকে শাস্তি দিলেন। কড়া শাস্তি। বললেন, “এখনই তোমাকে এই বই থেকে তিনটে কবিতা মুখস্থ করতে হবে। তারপর ক্লাস শেষ হলে আমাদের সবাইকে আবৃত্তি করে শোনাতে হবে। দাঁড়াও, তোমার জন্য তিনখানা বড় বড় কবিতা বেছে দিচ্ছি।”

পারমিতা সহজভাবে বলল, “দিদি, আপনাকে বাছতে হবে না। আমি এ বইয়ের সব কবিতাই মুখস্থ বলতে পারি। এখনই বলতে শুরু করব, না পরে শুরু করব? এখনই করলে ভাল হত, অত কবিতা তো, সময় বেশি লাগবে। শুরু করব?”

বুলাদি একবার মোটাসোটা বইটার দিকে তাকালেন, একবার পারমিতার দিকে তাকালেন। তারপর গম্ভীর গলায় বললেন, “না শুরু করবে না। তুমি এখন বসবে।”

এখানেই শেষ নয়। পারমিতা সব সময়ই অঙ্কে একশোয় একশো পায়। ক্লাসে লুকিয়ে কবিতা পড়েও অঙ্কে একশো পাওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়। তা ছাড়া ওর মাথায় দারুণ দারুণ সব আইডিয়া আসে। সেই কারণেই, ওকে এই দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে। যেদিন বড় ধরনের কোনও ঝগড়ার প্রোগ্রাম থাকে, সেদিন হয় আমরা পাঁচ জনই লাল কালির পেন আনি, নয় আমাদের পাঁচ জনের কাছেই থাকে ফুল-কাটা রুমাল, নয় পাঁচ জনই টিফিনে পটাটো চিপ্‌স নেব। এক-একটা দিন এক-এক রকম।

একবার এরকম একটা ঝগড়ার দিনে পারমিতার বদলে আমরা ঊর্মিমালার পরিকল্পনা শুনেছিলাম। শুনে দারুণ ঝামেলায় পড়েছিলাম।

সেবার ঝগড়া ছিল ক্লাস এইটের মেয়েদের সঙ্গে। ব্যাডমিন্টনের কর্ক নিয়ে ঝগড়া। আগের দিন ওরা আটখানা কর্ক নষ্ট করে আমাদের ক্লাসের উপর দোষ চাপিয়েছিল। গেম-টিচার অঞ্জনা মুখার্জি আমাদের মনিটর সৃজনীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন। করে বুঝতে পারেন, ক্লাস সেভেনের কোনও দোষ নেই। বকুনি না খেলেও বিষয়টা আমাদের পক্ষে খুবই অপমানজনক হল। বকুনি কোনও বড় জিনিস নয়, অপমান অনেক বড়। আমরা পাঁচ জন সিদ্ধান্ত নিলাম, পরের দিনই একটা হেস্তনেস্ত হবে। ক্লাস এইটের সঙ্গে ঝগড়া করব।

ঊর্মিমালা বলল, “কাল আমরা প্রত্যেকে সাউথ আফ্রিকার ম্যাপ নিয়ে আসব।”

ঊর্মিমালার পরিকল্পনা নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের একটু খুঁতখুঁতুনি ছিল। পারমিতা বলল, “থাকুক, ওকে একটা চান্স দেওয়া হোক। আর ঘটনা তো খুব বড় নয়। তথ্য, প্রমাণ, সাক্ষী, সবই আমাদের পক্ষে। ঝগড়াটাই শুধু করতে হবে। এবারটার মতো ঊর্মিমালার কথা শোনা হোক। আমরা পাঁচ জন কাল সাউথ আফ্রিকার ম্যাপ নিয়ে আসব।”

এর পরের ঘটনাই কেলেঙ্কারির।

ভূগোল ক্লাস শুরু হতে দেখি, সকলেই ব্যাগ থেকে সাউথ আফ্রিকার ম্যাপ বের করছে। ছোট ছোট কাগজে, আউট লাইন করা। এমনকী টিচার এসেও দেওয়ালে সড়াত করে সাউথ আফ্রিকার একটা বড় ম্যাপ ঝুলিয়ে দিলেন। আমরা তো হাঁ। হলটা কী? তারপরই মনে পড়ল, আরে, আজ তো সত্যিই সাউথ আফ্রিকা নিয়ে ক্লাস হওয়ার কথা ছিল। ঊর্মিমালা ভুলে গিয়েছিল, আমরাও খেয়াল করিনি।

ঊর্মিমালার উপর খুব রাগ হতে লাগল। একটা ঝগড়ার দিনে আমাদের পাঁচ জনের আলাদা কিছু করা হল না। সকলের কাছেই এক জিনিস। এমনকী টিচারের কাছে পর্যন্ত!

সাউথ আফ্রিকা চিনতে চিনতে চারজনে মিলে কটমট করে ঊর্মিমালার দিকে তাকালাম। যেন সাউথ আফ্রিকা নয়, আমরাই ওকে ভাল করে চিনে নিচ্ছি। বোকাটা ঝগড়ার আনন্দে একেবারে জল ঢেলে দিয়েছে।

আশ্চর্যের ঘটনা হল, সেদিন ঝগড়া কিন্তু দারুণ জমেছিল। প্রায় গোটা ক্লাসই এইটের বিরুদ্ধে নেমে পড়ে। ওরাও কম যায় না। ওদের মধ্যে কয়েকজনের ঝগড়ার কায়দা যথেষ্ট প্রশংসা করবার মতো। ঠিকমতো চর্চা করলে ভবিষ্যতে ভাল করবে।

মজার কথা হল, সেদিন ভূগোল টিচার পর্যন্ত ঝগড়ায় আমাদের ক্লাসের পক্ষ নিয়েছিলেন! তিনি মাথা নেড়ে নেড়ে বললেন, “এটা ঠিক নয়। মোটেই ঠিক নয়। একেবারেই ঠিক নয়। ক্লাস এইটের মেয়েরা ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে কর্ক নষ্ট করেছে। সেটা কোনও দোষের নয়। খেলতে গেলে কর্ক তো নষ্ট হবেই, কিন্তু তা বলে ক্লাস সেভেনের ঘাড়ে চাপানো ভারী অন্যায়। না না, তোমরা যতই বলো, এটা আমি মানতে পারব না। কিছুতেই মানব না।”

আমরা তো অবাক। আরে, সাউথ আফ্রিকার ম্যাপের গুণে দিদিমণির মধ্যেও একটা ঝগড়াঝগড়া ভাব তৈরি হয়ে গেল নাকি!

সেদিনের ঝগড়ায় আমরা জিতেছিলাম ঠিকই, কিন্তু তার পর থেকে আর কোনওদিন ঊর্মিমালার হাতে পরিকল্পনার ভার ছাড়া হয়নি।

এবার আমাদের গ্রুপের নামটা জানিয়ে দিই।

আমাদের নাম হল, ‘ঝগড়ুটে ফাইভ’। স্কুলের মধ্যে ঝগড়ুটে ফাইভ ঝগড়ায় সেরা। এটা আমাদের একটা দারুণ গর্বের ব্যাপার। তবে ঝগড়া ছাড়া আমরা আর কিছু পারি না, তা কিন্তু নয়। পারমিতা যেমন দারুণ অঙ্ক পারে, পৌষালির তেমনই গানের গলা। ও টিভিতেও গান গেয়েছে। দেবপ্রিয়ার ব্যাডমিন্টন খেলা দেখলে চমকে উঠতে হয়। মনে হয়, মানুষ নয়, র‍্যাকেট হাতে কোর্টে একটা পাখি উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। ঊর্মিমালা যখন ছবি আঁকে, স্বয়ং ড্রয়িং-টিচার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। গত বছর স্কুল থেকে ওকে দিল্লিতে পাঠানো হয়েছিল। স্কুল ছাত্রছাত্রীদের জাতীয় আঁকা প্রতিযোগিতায় ও থার্ড হয়ে এসেছে। সেই ট্রফি আমাদের প্রিন্সিপ্যালের ঘরে সাজানো আছে। গেলেই দেখা যাবে। আর নিজের গুণের কথা কী বলব? বলতে গেলেই লজ্জা লজ্জা করে। ভাবি, কিছুতেই বলব না। কিন্তু বলে ফেলি। আমার একটু লেখালিখির ঝোঁক আছে। স্কুলে একমাত্র আমিই সেই মেয়ে, যার তিন-তিনটে লেখা এবার স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছে। একটা গল্প, একটা কবিতা, আর একটা ভ্রমণকাহিনি। গল্পটা ইংরেজিতে লেখা। এইসবের জন্য স্কুলে আমাদের সবাই ভালবাসে।

কিন্তু তা হলে কী হবে, ঝগড়ার মতো আনন্দ আমরা আর কিছুতেই পাই না। মাঝেমধ্যে মনে হয়, বড় হয়ে খুব বড় ঝগড়ুটে হব। ঝগড়ায় আমাদের নাম দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে। পত্র-পত্রিকায় ইন্টারভিউ বেরোবে। চুপিচুপি জানিয়ে রাখি, সেই ইন্টারভিউয়ের জন্য আমাদের ছবি রেডি আছে। পাঁচ জন একে অপরের কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। খুব হাসছি।

আমরা ঝগড়ায় এত ভাল কীভাবে হলাম? তার অনেক গোপন রহস্য আছে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পাঁচ জনের এই দল তৈরি করেছি আমরা। পড়াশোনা, ছবি আঁকা, খেলাধুলোর মতো ঝগড়ার ব্যাপারেও আমাদের পাঁচ জনের পাঁচ রকম গুণ। ঝগড়ার একটা পর্যায়ে পৌঁছে চমৎকার চেঁচাতে পারে পৌষালি। যখন আমরা যুক্তির দিকে পিছিয়ে পড়ি, তখন ও চট করে দায়িত্ব নিয়ে নেয়। এমন চেঁচামেচি শুরু করে যে, প্রতিপক্ষ তাতে বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে সব তালগোল পাকিয়ে ফেলে। তেমনই পারমিতা দেখে যুক্তির দিকটা। ভেবেচিন্তে, ঠান্ডা মাথায় ঝগড়া শুরু করার কাজ ওর। দেবপ্রিয়াকে দেওয়া আছে, তথ্য, পরিসংখ্যান, দিনক্ষণ, তারিখ সরবরাহের দায়িত্ব। এর জন্য সে বাড়িতে নোটবই তৈরি করেছে। ঝগড়া-নোটবই। আমাকে বলা আছে, “তুই উলটো দিকের যুক্তি, তথ্য, কিচ্ছু মানবি না। শুধু ঝগড়া করে যাবি।” সবাই বলে, কোনও কিছু না বুঝে ঝগড়ার ব্যাপারে আমি নাকি ওস্তাদ। যে সময়গুলোতে প্রতিপক্ষের হাতে যুক্তি, পরিসংখ্যান বেশি, তখন আমার এ-গুণটা খুব কাজে লাগে।

ক্লাস এইটের তমালিকাদের সঙ্গে যেবার ঝগড়া হল, সেবার তো আমাদের খুব খারাপ অবস্থা। সেবার ছিল ফুচকা বিষয়ক ঝগড়া। শনিবার দিন ছুটির পর ফুচকা খাওয়ার সময় ওরা এত ঠেলাঠেলি করেছিল, ফুচকাওয়ালার নাজেহাল অবস্থা। হিসেবটিসেব সব গুলিয়ে গেল। কাউকে দু’নম্বর ফুচকাটা দিতে গিয়ে পাঁচ নম্বর বলে ফেলছে। কাউকে আবার পাঁচটা দেওয়ার পর বলছে, এটা নিয়ে দুটো হল। ঝগড়ার সময় দেবপ্রিয়া সেসব ‘ফ্যাক্টস্‌ অ্যান্ড ফিগারস্‌’ আনল। কিন্তু তমালিকারা এমন সব তথ্য দিতে লাগল যে, আমাদের যায় যায় অবস্থা। তখন আমাকে কাজে লাগাল। কোনও তথ্য না-মেনে ঝগড়া চালালাম। একসময় আমরা জিতেও গেলাম।

তবে ঊর্মিমালাই হচ্ছে ঝগড়ুটে ফাইভের মোক্ষম হাতিয়ার। তুরুপের তাস। আমরা চার জনেই যখন ফেল করি, তখন এই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। আর তাতেই অন্যেরা কুপোকাত। হেরে যাচ্ছি দেখলেই ঊর্মিমালা ভেউভেউ করে কেঁদে ওঠে। তার দু’চোখ বেয়ে টসটস করে জল পড়তে থাকে। ফোঁপাতে থাকে। ব্যস এতেই কেল্লা ফতে। প্রতিপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে রণে ভঙ্গ দেয়। ওদেরই কেউ রুমাল বের করে দেয়। কেউ জল আনে। কেউ চুইংগাম দেয়।

আমরা যুদ্ধ জয়ের মতো ঝগড়া জয় করে ফিরে আসি।

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এক-একটা ঝগড়ার পিছনে আমাদের কত পরিশ্রম, কত ভাবনাচিন্তা আছে। এই পারদর্শিতার জন্য কত মেয়ে যে আমাদের পাঁচ জনকে হিংসে করে, তা বলবার নয়। হিংসে তো করবেই। সকলেই ঝগড়া ভালবাসে। আমাদের দেখাদেখি বিভিন্ন ক্লাসে ঝগড়ার দলও হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের মতো করে কেউ পারে না। নাচ, গান, ক্যারাম, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, কুইজ, বিতর্কের মতো যদি স্কুলে আন্তঃস্কুল ঝগড়া প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা হয়, তা হলে আমরা অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হব।

ইদানীং আমরা দলের জন্য আরও একজনকে খুঁজছি। তার কাজ হবে এমনিই এমনিই ঝগড়া করা। পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া যাকে বলে। কোনও কারণ নেই, তবু টুক করে একটা ঝগড়া। মনের মতো মেয়ে আমরা পাচ্ছি না। অনেকেই সুযোগ পাওয়ার জন্য ধরাধরি করছে। কিন্তু আমরা খুব কড়া মনোভাব নিয়েছি। ধরছে বলেই তো আর যাকে-তাকে নেওয়া যায় না। ক্লাস সিক্সের দু’জন আর ক্লাস এইটের একজনের খবর পেয়েছি। অন্য ক্লাসের মেয়ে দলে নেওয়াটা ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছি না। এই নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়াও হয়ে গেছে। কেউ বলছে, থাক, দরকার নেই। কেউ বলছে, এখন হল স্পেশ্যালাইজেশনের যুগ। ঝগড়ার ব্যাপারেও সেটা রক্ষা করা উচিত। কেউ বলছে, নিজেদের বিষয়টা রপ্ত করা উচিত। যাই হোক, এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। চিন্তায় আছি।

আজকের ঝগড়াটা নিয়েও খুব চিন্তায় পড়েছি। মনে জোর আনবার জন্য পাঁচ জনে জ্যামিতি বাক্স এনেছি বটে, কিন্তু তাতে মনের জোর কিছু বাড়ছে না। উলটে ক্রমশ কমছে।

আসলে রিখিয়ারা যে কাজটা করেছে, সেটা সত্যি সত্যি খুবই ভয়ংকর।

পরশু থেকে ওরা আমাদের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিয়েছে। যাকে বলে, নো টক। পরশু রঞ্জনার দিকে তাকিয়ে ঊর্মিমালা হেসেছে। সেই হাসি দেখেও রঞ্জনা মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। কাল শ্রুতিকে আমি ডাকলাম, ও সাড়াই দিল না। পারমিতার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। রিখিয়ার কাছে একটা গানের লাইন জানতে গিয়েছিল। রিখিয়া ‘চিনতে পারছি না’ ধরনের মুখ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।

এই আচরণে আমরা একেবারে ভেঙে পড়েছি। ঝগড়া করতে ভালবাসি ঠিকই, কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করবার কথা আমরা ভাবতেও পারি না। বন্ধুই তো আসল। বন্ধু না থাকলে ঝগড়া করব কার সঙ্গে? যে বন্ধু নয়, তার সঙ্গে কি কখনও প্রাণ খুলে ঝগড়া হয়? মোটেই হয় না। হলেও সেই ঝগড়ায় একদম মজা নেই। আর কথা বলা বন্ধ হলে তো সব বন্ধ! ঝগড়াটা হবেই বা কীভাবে? একা একা শুধু হাত পা নেড়ে তো আর ঝগড়া হয় না। এই কারণেই আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখি। তাদের ভালবাসি। সবাই আমাদের এই জিনিসটা জানে। জানে বলে তারাও আমাদের ভালবাসে। ঝগড়া শেষ হয়ে গেলে আবার গল্প করে।

রিখিয়ারা তো আচ্ছা বোকা। ওরা কি এই সহজ কথাটা জানে না? নাকি জেনেশুনেই আমাদের বিপদে ফেলেছে?

আজ আমরা এই কথা বন্ধ নিয়েই ওদের সঙ্গে জোর ঝগড়ার পথে যাচ্ছি।

কাল ভেবেছিলাম, জিততে পারব। কিন্তু আজ টেনশন হচ্ছে। জিততে পারব কি? না জিততে পারলে লজ্জার বিষয়। ঝগড়ার রেকর্ডে দাগ পড়ে যাবে।

স্কুল শুরুর আগে, বারান্দার এক কোণে আমরা পাঁচজন একসঙ্গে হলাম।

পৌষালি ফিসফিস করে বলল, “আমার তো সুবিধের মনে হচ্ছে না। চেঁচামেচি করে জেতা যাবে বলে তো মনে হচ্ছে না।”

দেবপ্রিয়ার চোখ-মুখের অবস্থা বেশ খারাপ। কাঁচুমাচু গলায় বলল, “ওরা যে পথটা নিয়েছে সেটা মারাত্মক। আমি কাল রাত পর্যন্ত ওদের বিরুদ্ধে তথ্য সাজিয়েছি। কিন্তু সেগুলো জানাব কীভাবে সেটা বুঝতে পারছি না। কোনও কথাই যারা শোনে না তারা তথ্য শুনবে কেন?”

ঊর্মিমালা বলল, “অবস্থা দেখে আমার তো এখনই কেমন কান্না কান্না পাচ্ছে। হ্যাঁরে, সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলব না তো?”

আমি চিন্তিত গলায় বললাম, “আমার স্পেশ্যাল ট্যাকটিক্‌স তো আজ একেবারেই কাজে লাগবে না। আমি যে কোনও কিছু না মেনে ঝগড়া শুরু করে দেব, তার জন্য তো একটা গ্রাউন্ড চাই। ওরা যদি চুপ করে থাকে তা হলে সেই গ্রাউন্ড তৈরি হবে কী করে? কী হবে পারমিতা? ঝগড়ুটে ফাইভ মনে হয় আজ একেবারে গো-হারান হারবে।”

পারমিতা গম্ভীর মুখে বলল, “ঘটনা যে চিন্তার, সে-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এটাও ঠিক যে, আমরা এই পরিস্থিতিতে কোনওদিন পড়িনি। রিখিয়া শ্রুতিরা আমাদের জোর প্যাঁচে ফেলে দিয়েছে। তবে আমি একটা পরিকল্পনা করেছি। মনে হচ্ছে, এতে কাজ হলেও হতে পারে। তোরা এদিকে সরে আয়। দ্যাখ, ঝগড়া করব বলে আজ আমি কী নিয়ে এসেছি।”

আমরা পারমিতার ব্যাগের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। স্কুল শুরুর ঘণ্টা বাজল। ক্লাসের দিকে ছুটতে ছুটতে আমাদের মনে হল, পারমিতাকে কাঁধে তুলে নিই। ও যা পরিকল্পনা করছে, তাতে ওকে কাঁধে তুলে ছোটাই উচিত।

ক্র্যাফ্‌টস পিরিয়ডে মঞ্জুদি আমাদের শক্ত একটা কাজ দিলেন। কাগজের ফুলদানি তৈরি। উত্তেজনায় আমাদের কাজ খুব খারাপ হল। ঊর্মিমালার মতো আঁকিয়ে মেয়ের ফুলদানি দেখলে মনে হবে, রসগোল্লার হাঁড়ি। পারমিতাঁর ফুলদানি কিছুতেই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারল না। আমারটা দাঁড়াচ্ছে ঠিকই, কিন্তু একদিকে হেলে দাঁড়াচ্ছে। ফুলদানি কখনও হেলে দাঁড়ায় না। মাঝখানে একবার শুনতে পেলাম পিছনের বেঞ্চে রিখিয়ারা ফিসফিস করছে। আমি কান খাড়া করলাম। শ্রুতির গলা কানে এল। সে গলা নামিয়ে বলছে, “অ্যাই, ওরা যতই ঝগড়া করতে আসুক, তোরা একটা কথাও বলবি না। চুপ করে থাকবি।”

মঞ্জুদি ধমক দিয়ে বললেন, “স্টপ টকিং। কোনও কথা নয়।”

টিফিনের ঘণ্টা পড়তে পারমিতার ভেল্‌কি শুরু হল। তার ঢাউস ব্যাগ খুলে গুনে গুনে ঠিক ন’খানা ফুলকাটা কাগজের প্লেট বের করল সে। তারপর বের করল ন’খানা কাঠের চামচ। সেগুলো বেঞ্চের উপর সাজানো হল। দেবপ্রিয়া আমাকে চিমটি কাটল। আমি আড়চোখে পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি, রিখিয়ারা এ-ওকে ঠেলাঠেলি করছে।

পৌষালি অবাক হওয়ার ভান করে বলল, “কী রে পারমিতা, আমরা তো মোটে পাঁচ জন, এত প্লেট দিয়ে কী হবে?”

ঊর্মিমালা হেসে বলল, “মনে হয় পারমিতা আজ টিফিনে কাউকে নেমন্তন্ন করেছে।”

আমি ঠাট্টা করে বললাম, “নেমন্তন্ন করে কী খাওয়াবি? পাউরুটি আর ঝোলা গুড়?”

দেবপ্রিয়া হিহি করে হেসে উঠল।

এরপর পারমিতার ব্যাগ থেকে বের হল আসল জিনিস। পেল্লায় সাইজের একটা টিফিন বক্স! সেটার ঢাকনা খুলতেই একেবারে মার-মার কাট-কাট ব্যাপার। আলুকাবলির গন্ধে গোটা ক্লাসরুম ভরে গেল! আহা! মনে হচ্ছে, ধনেপাতা, মটরশুঁটি, ভাজা মশলা আর কাঁচালঙ্কার মধ্যে বসে আছি!

আমরা যখন রিখিয়াদের হাতে প্লেট তুলে দিচ্ছি, তখন ওদের চোখগুলো আমার খুব চেনা লাগল। আমার এক মামার বাড়ি বহরমপুরে। সেখানে ইয়া বড় বড় ছানাবড়া পাওয়া যায়। আমাদের কাণ্ড দেখে রিখিয়াদের চোখগুলো সেই ছানাবড়ার মতো হয়ে গেছে। ওরা প্রথমটায় থতমত খেয়ে গিয়ে কী করবে বুঝতে পারছিল না। বেচারিরা কী করেই বা বুঝবে? গ্রুপের নাম ‘আলুকাবলি’ হলে কী হবে, ঝগড়ার এই ‘আলুকাবলি কায়দাটা’ তো ওরা কল্পনাও করতে পারেনি। ওরা যেমন আমাদের দুর্বলতায় আঘাত করেছে, আমরাও তেমনই ওদের দুর্বল জায়গা ধরে টান মেরেছি। আমরা দুর্বল বন্ধুত্বে, ওরা দুর্বল আলুকাবলিতে। দুটোতে মিলে দারুণ ঝগড়া হচ্ছে!

পারমিতা পিছন দিকে তাকিয়ে বলল, “নে নে, ন্যাকামি করিস না তো। চটপট খেয়ে ফ্যাল। কাল রাতে নিজের হাতে বানিয়েছি। তবে খবরদার, তোরা রেসিপি জানতে চাইবি না। যাদের সঙ্গে ঝগড়া তাদের রেসিপি বলা যাবে না।”

ওরা চারজনেই হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে রিখিয়া, রঞ্জনা প্লেট বাড়িয়ে বলল, “ঠিক আছে বাবা, রেসিপি বলতে হবে না। আর একটু দে তো। ভাগ্যিস আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করলি।”

রিখিয়াদের কথা শুনে এবার আমরা সবাই হাসতে লাগলাম।

ঝগড়ুটে ফাইভ এবারও জিতে গেল।

মার্চ ২০০৫

সকল অধ্যায়

১. বিষে বিষক্ষয় – আশাপূর্ণা দেবী
২. আটচল্লিশ – অরবিন্দ গুহ
৩. ডোডো তাতাই পালা কাহিনি – তারাপদ রায়
৪. কৈলাসে চা পান – আশাপূর্ণা দেবী
৫. চোরে ডাকাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬. সাধু কালাচাঁদের নতুন কাজ – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
৭. ইলশেঘাই – লীলা মজুমদার
৮. শরচ্চন্দ্রের সন্ধিভেদ! – শিবরাম চক্রবর্তী
৯. ঝুনুমাসির বিড়াল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০. বিধু দারোগা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১১. সাধু কালাচাঁদের পালাকীর্তন – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
১২. কে ফার্স্ট? – আশাপূর্ণা দেবী
১৩. ফ্ল্যাট রেস – জরাসন্ধ
১৪. চিত্তশুদ্ধি আশ্রম – বিমল কর
১৫. টেনাগড়ে টেনশান – বুদ্ধদেব গুহ
১৬. হাতি-চোর – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৭. ছোটমাসির মেয়েরা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৮. মোটরবাইক, ষাঁড় ও লাকি – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
১৯. ব্যাঙাচিদের লেজ – তারাপদ রায়
২০. বাজারদর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২১. তেঁতুলমামার জগৎ – হিমানীশ গোস্বামী
২২. রাজার মন ভাল নেই – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৩. গজেনকাকার মাছ-ধরা – বিমল কর
২৪. দাদুর ইঁদুর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৫. সাত নম্বর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৬. মেজদার সার্কাস – চিত্তরঞ্জন সেনগুপ্ত
২৭. চোর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৮. কুস্তির প্যাঁচ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৯. দুঃখহরা বড়ির শিশি – লীলা মজুমদার
৩০. পিলকিন’স ইলেভেন – বিমল কর
৩১. রাত যখন বারোটা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩২. ভুনিকাকার চৌরশতম – বিমল কর
৩৩. গ্রামের নাম জাঁকপুর – আশাপূর্ণা দেবী
৩৪. নিখোঁজ নিরুদ্দেশ হতে গেলে – আশাপূর্ণা দেবী
৩৫. বাঘের দুধ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৬. গগনবাবুর গাড়ি – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৭. গাবু – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৮. কুরুক্ষেত্র – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৯. কাক্কাবোক্কার ভুতুড়ে কাণ্ড – শৈলেন ঘোষ
৪০. হরিমতির বাগান – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪১. বড়দার বেড়াল – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
৪২. মহাকর্ম – সমরেশ মজুমদার
৪৩. পায়রাডাঙায় রাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৪. মামার বিশ্বকাপ দর্শন – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৫. গটমটে সাহেব বটে – শৈলেন ঘোষ
৪৬. রাঘব বোয়াল – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
৪৭. স্কন্ধকুমার এবং অর্ধচন্দ্র – তারাপদ রায়
৪৮. পাগল হইবার সহজপাঠ – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৯. বিপিনবিহারীর বিপদ – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৫০. সাদা রঙের পাঞ্জাবি – অনির্বাণ বসু
৫১. জগু যাবে বেড়াতে – বাণী বসু
৫২. কুঞ্জবাবুর পিঁপড়ে বাতিক – অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়
৫৩. ভুলে যাওয়া – সিদ্ধার্থ ঘোষ
৫৪. ঝগড়ুটে ফাইভ – প্রচেত গুপ্ত
৫৫. বিপদভঞ্জনের সর্পদোষ – উল্লাস মল্লিক
৫৬. মাসির বাড়ি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৭. জাগ্রত অসুরের গল্প – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৫৮. কাকাতুয়া ডট কম – প্রচেত গুপ্ত
৫৯. নতুন নাটকও ভন্ডুল – উল্লাস মল্লিক
৬০. রামখেলাওনের কেরামতি – সৌরভ মুখোপাধ্যায়
৬১. কলহগড়ের নিস্তব্ধতা – সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়
৬২. পটলার থিমপুজো – শক্তিপদ রাজগুরু
৬৩. সংকটমোচন কমিটি – প্রচেত গুপ্ত
৬৪. নতুন বন্ধু চিনু – জয়দীপ চক্রবর্তী
৬৫. বুঁচকির মেয়ের বিয়ে – নবনীতা দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন