নতুন নাটকও ভন্ডুল – উল্লাস মল্লিক

পৌলোমী সেনগুপ্ত

‘লঘুগুরু নাট্যসমাজ’-এর মিটিং-এ ঠিক হল, গতবারের মতো কেলেঙ্কারি এবার যেন না হয়! আমোদপুরের বিখ্যাত নাটকের দল লঘুগুরু নাট্যসমাজকে বহু দূর-দূরান্তের মানুষ একডাকে চেনে। পাড়ার ছেলেছোকরা থেকে শুরু করে বাবা-কাকা, মায় ইশকুলের অঙ্কস্যার বা বাজারের আমুদে সবজিঅলা— সকলেই কোনও না-কোনও সময় স্টেজে উঠেছেন লঘুগুরুর হয়ে নাটক করতে। ফি বছর দুর্গাপুজোর সময় আমোদপুরে নাটক করে লঘুগুরু। কীসব চমৎকার নাটক আর ফাটাফাটি অভিনয়! সেই নাটক দেখে রাধুচোর সাধু হয়ে গেল, রাগী ইংরেজিস্যার মারধোর ছেড়ে দিলেন! আর সেই কিপটে গোবিন্দকাকা, যিনি কিনা গামছা ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতেন, তিনি বেমক্কা দানধ্যান শুরু করে দিলেন। এরকম আরও অনেক রোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। সেসব কাহিনি আমোদপুরের মানুষের মুখে মুখে ঘোরে।

কিন্তু গতবারই একটা কাণ্ড ঘটে গেল। ‘শক্তিগড়ের শার্দূল’ নাটক অভিনয় হচ্ছিল। ক্লাবের মাঠে ঠাসাঠাসি ভিড়। সামনের সারিতে এলাকার গণ্যমান্য মানুষজন। দু’জন বয়স্কা মহিলা, নন্দীঠাকুরমা আর মিছরিদিদা পান চিবোতে চিবোতে নাতিদের বজ্জাতির কথা বলছিলেন। সুখময়জ্যাঠা নাকে চশমা এঁটে ঢুলছিলেন, আর কোন কোন সংলাপ ব্যাকরণমতে অশুদ্ধ, তার নোটস নিচ্ছিলেন বাংলাস্যার রণজয়বাবু।

নাটক তখন প্রায় ক্লাইম্যাক্সে। শক্তিগড়ের রাজা গম্ভীর সিংহের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত। তাঁর মন্ত্রী, সেনাপতি নিহত। সৈন্যসামন্ত ছত্রভঙ্গ। তবুও গর্জন করে গম্ভীর সিংহ হুমকিপুরের সেনাপতি তোম্বা শর্মাকে বললেন, “সিংহ-শেয়ালের রণে, কে জেতে কে হারে। যাইবে পুনঃ দেখা কালিকার মুক্ত রণাঙ্গণে।”

এই সময় তোম্বা শর্মার ছোড়া তির আঘাত করবে গম্ভীর সিংহের বুকে। তোম্বা শর্মার পার্ট করছিল গদাই। গদাইটা চিরকালের আনাড়ি। কোনওদিন এক টিপে উইকেটে বল মেরে রান আউট করতে পারেনি। ঘনশ্যামদা ওকে বারবার বলে দিয়েছিলেন, “খুব কাছে দাঁড়িয়ে, আস্তে করে তিরটা ছুড়ে দিবি।”

কিন্তু গদাই বাহাদুরি দেখানোর জন্য, “তুই সিংহ, হাসালি আমায়! জেনে রাখ, আজই শেষ দিন তোর। এখনই চোখে লাগবে যে ঘোর,” এসব ফালতু সংলাপ বলে লাফিয়ে, ঝাঁপিয়ে স্টেজের একেবারে কোণে গিয়ে শাঁই করে ছুড়ে দিল তিরটা।

ফল যা হওয়ার তাই হল। তিরটা সোজা গিয়ে লাগল সুখময়জ্যাঠার মাথায়। কাঁচা ঘুম ভেঙে যেতে ভয়ানক চটে গেলেন জ্যাঠা। গনগনে লাল চোখে তাকালেন স্টেজের দিকে। গম্ভীর সিংহের পার্ট করছিল বিজু। সে পড়ে গিয়েছে মহা ফ্যাসাদে। অন্য টার্গেটে আঘাত করা তিরে তার মৃত্যুবরণ করা উচিত হবে কি না, তা বুঝতে পারছে না। অসহায়ভাবে উইংসের দিকে তাকাচ্ছে। আর এদিকে, “তোরা একটু শান্তিতে ঘুমোতেও দিবি না,” বলে জ্যাঠা তেড়ে গেলেন বিজুর দিকে।

কাঁদো কাঁদো গলায় বিজু বলল, “আমি নয় জ্যাঠা, গদাই মেরেছে।”

সুখময়জ্যাঠা তখন এক লাফে স্টেজে উঠে গদাইকে ধরতে গেলেন। তারপর দু’জনের মধ্যে সে কী ভীষণ দৌড় প্রতিযোগিতা! এই দৃশ্যটা সবচেয়ে বেশি হাততালি পেলেও, ভন্ডুল হয়ে গেল নাটকটা।

আমাদের ডিরেক্টর ঘনশ্যাম পোদ্দার দাপুটে মানুষ। তিনি গিরীশ ঘোষের মতো গোঁফ আর শম্ভু মিত্রর মতো দাড়ি রাখেন। এই বছর আমাদের নতুন নাটক, ‘লঙ্কাপুরী ওলটপালট’। এবার কাস্টিং-এর সময় ঘনশ্যামদা নতুন একটা কৌশল আমদানি করলেন। আমাদের তারাচরণ বিদ্যাপীঠের হেডস্যারের খুব অভিনয়ের শখ। বেশ লম্বাচওড়া, দশাসই চেহারা তাঁর। গলার স্বরটাও গুরুগম্ভীর। ঘনশ্যামদা তাকে রাবণের পার্ট দিলেন। ক্লাস এইটের অনিতা ঝগড়ুটে স্বভাবের জন্য পাড়ায় বিখ্যাত। ঘনশ্যামদা তাকে মন্থরা করে দিলেন। কিন্তু সমস্যা হল হনুমানকে নিয়ে। কে আর শখ করে কালামুখো হতে চায়। তড়িৎ স্কুলের স্পোর্টসে প্রতি বছর লং জাম্পে ফার্স্ট হয়। ঘনশ্যামদা তাকে ধরলেন।

কিন্তু তড়িৎ কিছুতেই রাজি নয়। বলল, “পাগল হয়েছ? রাক্ষসখোক্কস, মুনিঋষি, হরিণ, এমনকী, গরুড়পাখি পর্যন্ত সাজতে রাজি। কিন্তু হনুমান। উঁহু, পাড়ায় প্রেস্টিজের বারোটা বেজে যাবে।”

গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বিস্তর বোঝানোর পর তড়িৎ রাজি হল বটে, কিন্তু একটা শর্ত দিল। নাটকে হনুমানের কলা খাওয়ার একটা দৃশ্য রাখতে হবে। একছড়া মর্তমান কলা তার চাই।

রিহার্সাল চলল হইহই করে। স্কুল ছুটির পর রিহার্সাল দিই। কিন্তু হেডস্যার খুব কামাই করেন। রাবণ চরিত্রটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে হেডস্যার বললেন, “ও তোদের ভাবতে হবে না, আমি ঠিক স্টেজে মেকআপ করে নেব।”

অভিনয়ের দিন এসে গেল। দুপুরবেলা তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়লাম। এটা ঘনশ্যামদার নির্দেশ। অনেক রাত পর্যন্ত অভিনয় হবে, একটু ফ্রেশ থাকা দরকার।

সন্ধে হতে না-হতেই ক্লাবের মাঠে জমজমাট ভিড়। সুখময়জ্যাঠা যথারীতি সামনের সারিতে। কিন্তু এবার ঘনশ্যামদা কোনও রিস্ক নেননি। প্রথমে ঠিক ছিল, হত্যাটত্যা যা হওয়ার সব ছুরিতে হবে। কিন্তু রামায়ণের যুগে ছুরিকাঘাত খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে বলে, প্রস্তাবটা বাতিল হয়ে গিয়েছে। তাই চাঁদমারি বানিয়ে প্রত্যেক তিরন্দাজকে রোজ টানা এক ঘণ্টা করে তির ছোড়া প্রাকটিস করিয়েছেন ঘনশ্যামদা।

নবীনকাকা আমাদের বাঁধা মেকআপম্যান কাম ড্রেসার। দু’ মিনিটের মধ্যে যে-কোনও মানুষের ভোল বদলে দিতে পারেন। ইদানীং কানে একটু কম শুনছেন। গ্রিনরুমে ঢুকেই নবীনকাকা তড়িৎকে বললেন, “তোর এমন চমৎকার একখানা লেজ বানিয়েছি না, দেখবি, নাটক শেষ হয়ে গেলেও লেজের মায়ায় আর মানুষ হতে ইচ্ছে করছে না। মনে হবে সারাজীবন হনুমান হয়েই থাকি।”

কিছুক্ষণ পরেই অনীতার সঙ্গে নবীনকাকার লেগে গেল। নবীনকাকা অনীতার পিঠে একটা মাথার বালিশ বেঁধে কুঁজ বানাতে চান। কিন্তু পিঠে বালিশ বাঁধতে অনীতা রাজি নয়। তার দাবি, বালিশ বাঁধার দরকার নেই, একটু কুঁজো হয়ে হাটলেই মন্থরার চরিত্র দিব্যি ফুটে উঠবে।

তবে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারিটা হল মেকআপের শেষের দিকে। টুম্পার মন্দোদরীর পার্ট করার কথা। মেকআপের পর আয়নায় নিজের মুখ দেখেই সে হাউমাউ করে উঠল। আমরা ছুটে গেলাম। টুম্বার সাজ দেখে তো আমাদের চোখ কপালে। এ কী সাজিয়েছেন নবীনকাকা! নবীনকাকা বললেন, “কেন, চেড়ির সাজ তো এরকমই হবে।”

টুম্পা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “চেড়ি হব কেন, আমি তো মন্দোদরী!”

নবীনকাকা যত বলেন, “তুমি আমায় বলেছ অশোকবনের চেড়ি।”

টুম্পা তত হাত-পা ছুড়ে বলে, “না, আমি বলেছি মন্দোদরী।”

আমরা বললাম, “ঠিক আছে নবীনকাকা, ওকে নতুন করে মন্দোদরীর মেকআপ করে দিন।”

নবীনকাকা হতাশ হয়ে মাথা নাড়লেন, “আর তো উপায় নেই, রঙের স্টক শেষ। কোনওরকমে চেঁচেপুঁছে টুম্পার মেকআপটা দেওয়া হয়েছে।”

সর্বনাশ! তা হলে উপায়? মন্দোদরী রাবণের স্ত্রী, রাজমহিষী, তাকে ছাড়া নাটক হবে কী করে? টুম্পা তো ভ্যাক করে কেঁদেই ফেলল।

শেষে ঘনশ্যামদা এসে সমাধান করে দিলেন। বললেন, “ঠিক আছে, সাজ যেমন আছে থাক। মন্দোদরীর মুকুটটা ওর মাথায় পরিয়ে দাও। দু’-একটা বাড়তি সংলাপ ঢোকাতে হবে। দর্শকদের বুঝিয়ে দিতে হবে, প্রচুর শোকতাপ পেয়েছে তো জীবনে, তাই মন্দোদরীকে এইরকম চেড়ির মতো দেখতে হয়ে গিয়েছে।”

কালিঝুলি মাখা চেড়ির সাজে সজ্জিত টুম্পাকে ঝলমলে মুকুটটা পরানোর পর যে রূপটা খুলল, তা দেখে আমরা তো বটেই, ঘনশ্যামদা পর্যন্ত চুপ করে গেলেন।

আর সময় নেই, ঢং ঢং করে তৃতীয় ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। ক্রমশ অধৈর্য হয়ে উঠছে দর্শকরা। নাটক শুরু হয়ে গেল।

প্রথম কয়েকটা দৃশ্য বেশ ভালভাবে উতরে গেল। সমস্ত দর্শক একেবারে বুঁদ। সীতার দুঃখে কয়েকজন কেঁদে ফেলল। নন্দীঠাকুরমা আর মিছরিদিদা তো চিৎকার করে মন্থরাকে ‘পাজি, শয়তান’ বলে গালমন্দ করে বসলেন। আমি বিশ্বামিত্র মুনি সেজেছিলাম। আমার সংলাপে একটা খটমট সংস্কৃত শ্লোক ছিল। সেটার তোড়েই বোধহয় আমার বাঁ চোয়াল থেকে দাড়িটা খুলে ঝুলে পড়ল। কিন্তু দর্শকরা কিছু বোঝার আগেই, আমি দ্রুত সংলাপ শেষ করে বেরিয়ে এলাম।

আমাদের একটু উদ্বেগ ছিল হেডস্যারকে নিয়ে। কিন্তু তিনিও চমৎকারভাবে উতরে দিলেন। শুধু একবারেই একটু বেসামাল হয়ে গিয়েছিলেন। স্যারের দোষ নেই। বয়স্ক মানুষ, রাবণের ওয়ার্কলোড নিয়ে কিছুটা কাহিল…। গদি আঁটা চেয়ারে বসে একটু তন্দ্রা এসে গিয়েছিল স্যারের। দূত এসে সংবাদ দিল, “মহারাজ, কপিসেনারা লঙ্কাপুরীতে বড় বেয়াদপি করছে।”

স্যার বলে ফেললেন, ‘নীল ডাউন হয়ে থাকতে বলো।”

নাটক প্রায় শেষের দিকে। রাম-রাবণের চূড়ান্ত লড়াই আসন্ন। হেডস্যার কষে একটিপ নস্যি নিলেন ঘুম তাড়ানোর জন্য।

গ্রিনরুমে এদিকে আর-এক বিপত্তি। ঘনশ্যামদা ছোট্ট একটা বেলুন জোগাড় করেছিলেন। ঠিক ছিল, আলতাভরা বেলুনটা রাবণের পোশাকের মধ্যে বুকের কাছে লুকনো থাকবে। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর রাম যখন ব্রহ্মাস্ত্র ছুড়ে রাবণকে ঘায়েল করবেন, তখন কায়দা করে চাপ দিয়ে বেলুনটা ফাটিয়ে দেবেন হেডস্যার। লাল হয়ে যাবে রাবণের পোশাক। খুব বিশ্বাসযোগ্য হবে দৃশ্যটা।

কিন্তু আলতা ভরতে গিয়ে দেখা গেল, বেলুনটা লিক করছে। সর্বনাশ! এ তো যা অবস্থা, মৃত্যুবাণ মারার আগেই রাবণের পোশাক লাল হয়ে যাবে। কিন্তু এত রাতে নতুন বেলুনই বা পাওয়া যাবে কোথায়! ভজা দশরথ সেজেছিল। নাটকে তার আর কোনও ভূমিকা নেই। ঘনশ্যামদা তাকে ফিট করে দিলেন। বললেন, “তুই মগে করে আলতা নিয়ে উইংসের পাশে অপেক্ষা কর। বুকে বাণ খেয়ে স্যার যখন স্টেজে আছড়ে পড়বেন, আলতাটা স্যারের গায়ে ছুড়ে দিবি।”

রাম-রাবণের যুদ্ধ শুরু হল। সে কী ভীষণ যুদ্ধ। রামের পার্ট করছে দেবু। ক’দিন আগেই ‘লঙ্কাটা ছোট হলেও ঝাল’, এই ট্রানস্লেশনটা পারেনি বলে হেডস্যার তার বাঁ কান ধরে প্রবলভাবে টানাটানি করেছেন। সেই হেডস্যার জনসমক্ষে তার হাতে নিহত হবেন ভেবে, সে বেশ ভয়ে ভয়ে আছে। হেডস্যারের মাথার একদিকে চারটে, আর-এক দিকে পাঁচটা প্লাস্টিকের মাথা বেঁধে রাবণের দশটা মাথা তৈরি করা হয়েছে। হাতে তিরধনুক নিয়ে লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে স্টেজের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ছোটাছুটি করছেন দু’জনে। দাপাদাপিতে মচমচ করে উঠছে স্টেজ। মাঝে মাঝে দু’জনে পরস্পরকে হুংকার দিচ্ছেন। নস্যি নিয়ে উজ্জীবিত হেডস্যার ভয়ংকর পরাক্রম দেখাচ্ছেন। হঠ্যাৎ স্যারের মাথার এক পাশ থেকে বাঁধন খুলে পাঁচটা মাথা স্টেজের উপর পড়ে গেল। ঠিক আচমকা অর্ধেক মাথা খসে পড়ায় কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়লেন স্যার। ঘনশ্যামদা উইংসের আড়াল থেকে ফিসফিস করে বললেন, “দেবু, আর দেরি করিস না, বাণ মেরে দে। স্যার, আপনি শুয়ে পড়ুন।”

কিন্তু বাঁধন খুলে মাথা পড়ে গিয়েছে বলে, স্যার মাঝপথেই লড়াই ছেড়ে দিতে রাজি নন। তাঁর এখনও অনেক বিক্রম দেখানো বাকি। স্যারের এক হাতে তির, অন্য হাতে ধনুক। তিরটা ফেলে দিয়ে প্লাস্টিকের মাথাগুলো কুড়িয়ে নিলেন স্টেজ থেকে। তারপর ফের শুরু করলেন যুদ্ধ। বললেন, “এ মুণ্ড নহে তব শরাঘাতে ছিন্ন মুণ্ড, নেহাত শিথিল রঞ্জু হেতু এ মুণ্ড হয়েছে ভুলুণ্ঠিত। তাতে আমি কি ডরাই তোরে ক্ষুদ্র মানব। বীরকুলে যদি জন্ম তব, আইস সম্মুখ সমরে…” ইত্যাদি।

স্যারের হাতে তির নেই, শুধু ধনুক আর প্লাস্টিকের মুন্ডু ঘুরিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। দর্শকরাও বেশ মজা পেয়েছে, হাততালি দিয়ে উৎসাহিত করছে রাবণকে।

আগের দৃশ্যেই হনুমান কলা খেয়ে খোসাটা স্টেজের উপর ফেলেছিল। যুদ্ধ করতে করতে হঠাৎ সেই খোসায় পা পড়তেই আছাড় খেল রামরূপী দেবু। দেবুর কোমরে একটা পুরনো চোট ছিল, ক’দিন আগেই ফুটবল খেলতে গিয়ে পেয়েছিল চোটটা। স্টেজের উপর সশব্দে পড়েই যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল, “বাবা রে! মরে গেলাম রে…!”

রামকে এভাবে ভূপতিত হতে দেখে রাবণরূপী স্যার বেশ ঘাবড়ে গিয়েছেন। স্যারের এক হাতে প্লাস্টিকের মাথা, অন্য হাতে ধনুক। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এদিক-ওদিক তাকিয়ে, “দশ গুনিব, এর মধ্যে দাঁড়াও উঠিয়া। অস্ত্র লও হাতে!” বলে বক্সিং-এর রেফারির মতো কাউন্ট ডাউন শুরু করলেন হেডস্যার।

ভজা বোধহয় একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। হঠাৎ সে দেখল, একজন স্টেজে পড়ে ছটফট করছে। তাড়াহুড়ো করে তার গায়েই ঢেলে দিল আলতাটা। লাল হয়ে উঠল রামের পোশাক।

পরিস্থিতি অত্যন্ত ঘোরালো হয়ে উঠল। রক্তাক্ত শরীরে রাম স্টেজে শুয়ে ছটফট করছেন, আর সামনে দাঁড়িয়ে বিকট অট্টহাস্য করে কাউন্ট ডাউন করছেন রাবণরূপী স্যার, “ছয়, পাঁচ, চা-আ-র…”

ঘনশ্যামদা দেখলেন, বিপদ। রাবণের হাতে রাম নিহত হলে রণজয়বাবু তাঁকে নির্ঘাত ছাতাপেটা করবেন। তাই তাড়াতাড়ি পরদা টেনে দিলেন।

আমাদের সকলের রাগ গিয়ে পড়ল তড়িতের উপর। পাজিটা তখনও হনুমানের পোশাকে গ্রিনরুমের সামনে দাঁড়িয়ে শেষ কলাটা খাচ্ছে। ঘনশ্যামদা তেড়ে গেলেন তার দিকে। বিশাল একটা লাফ দিয়ে মুহূর্তে নাগালের বাইরে চলে গেল তড়িৎ, তারপর দৌড়ে মিলিয়ে গেল অন্ধকারে।

হেডস্যার বললেন, “একটা ফিতেটিতে নিয়ে আয় তো, লাফটা মেপে রাখি। এই লাফটা দিতে পারলে ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টসে ওর প্রাইজ় বাঁধা।”

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন নবীনকাকা। হেসে বললেন, “শুধু লাফানোর আগে ওই লেজটা লাগিয়ে দেবেন। দেখবেন, ওর ধারেকাছে কেউ আসতে পারছে না। তখন বলেছিলাম না, এই লেজের মাহাত্ম্যই অন্যরকম।”

অক্টোবর ২০০৬

সকল অধ্যায়

১. বিষে বিষক্ষয় – আশাপূর্ণা দেবী
২. আটচল্লিশ – অরবিন্দ গুহ
৩. ডোডো তাতাই পালা কাহিনি – তারাপদ রায়
৪. কৈলাসে চা পান – আশাপূর্ণা দেবী
৫. চোরে ডাকাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬. সাধু কালাচাঁদের নতুন কাজ – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
৭. ইলশেঘাই – লীলা মজুমদার
৮. শরচ্চন্দ্রের সন্ধিভেদ! – শিবরাম চক্রবর্তী
৯. ঝুনুমাসির বিড়াল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১০. বিধু দারোগা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১১. সাধু কালাচাঁদের পালাকীর্তন – শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
১২. কে ফার্স্ট? – আশাপূর্ণা দেবী
১৩. ফ্ল্যাট রেস – জরাসন্ধ
১৪. চিত্তশুদ্ধি আশ্রম – বিমল কর
১৫. টেনাগড়ে টেনশান – বুদ্ধদেব গুহ
১৬. হাতি-চোর – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৭. ছোটমাসির মেয়েরা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
১৮. মোটরবাইক, ষাঁড় ও লাকি – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
১৯. ব্যাঙাচিদের লেজ – তারাপদ রায়
২০. বাজারদর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২১. তেঁতুলমামার জগৎ – হিমানীশ গোস্বামী
২২. রাজার মন ভাল নেই – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৩. গজেনকাকার মাছ-ধরা – বিমল কর
২৪. দাদুর ইঁদুর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৫. সাত নম্বর – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
২৬. মেজদার সার্কাস – চিত্তরঞ্জন সেনগুপ্ত
২৭. চোর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৮. কুস্তির প্যাঁচ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৯. দুঃখহরা বড়ির শিশি – লীলা মজুমদার
৩০. পিলকিন’স ইলেভেন – বিমল কর
৩১. রাত যখন বারোটা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩২. ভুনিকাকার চৌরশতম – বিমল কর
৩৩. গ্রামের নাম জাঁকপুর – আশাপূর্ণা দেবী
৩৪. নিখোঁজ নিরুদ্দেশ হতে গেলে – আশাপূর্ণা দেবী
৩৫. বাঘের দুধ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৬. গগনবাবুর গাড়ি – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৭. গাবু – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৩৮. কুরুক্ষেত্র – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৯. কাক্কাবোক্কার ভুতুড়ে কাণ্ড – শৈলেন ঘোষ
৪০. হরিমতির বাগান – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪১. বড়দার বেড়াল – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
৪২. মহাকর্ম – সমরেশ মজুমদার
৪৩. পায়রাডাঙায় রাতে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৪. মামার বিশ্বকাপ দর্শন – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৫. গটমটে সাহেব বটে – শৈলেন ঘোষ
৪৬. রাঘব বোয়াল – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
৪৭. স্কন্ধকুমার এবং অর্ধচন্দ্র – তারাপদ রায়
৪৮. পাগল হইবার সহজপাঠ – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৪৯. বিপিনবিহারীর বিপদ – সুচিত্রা ভট্টাচার্য
৫০. সাদা রঙের পাঞ্জাবি – অনির্বাণ বসু
৫১. জগু যাবে বেড়াতে – বাণী বসু
৫২. কুঞ্জবাবুর পিঁপড়ে বাতিক – অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়
৫৩. ভুলে যাওয়া – সিদ্ধার্থ ঘোষ
৫৪. ঝগড়ুটে ফাইভ – প্রচেত গুপ্ত
৫৫. বিপদভঞ্জনের সর্পদোষ – উল্লাস মল্লিক
৫৬. মাসির বাড়ি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৭. জাগ্রত অসুরের গল্প – দুলেন্দ্র ভৌমিক
৫৮. কাকাতুয়া ডট কম – প্রচেত গুপ্ত
৫৯. নতুন নাটকও ভন্ডুল – উল্লাস মল্লিক
৬০. রামখেলাওনের কেরামতি – সৌরভ মুখোপাধ্যায়
৬১. কলহগড়ের নিস্তব্ধতা – সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়
৬২. পটলার থিমপুজো – শক্তিপদ রাজগুরু
৬৩. সংকটমোচন কমিটি – প্রচেত গুপ্ত
৬৪. নতুন বন্ধু চিনু – জয়দীপ চক্রবর্তী
৬৫. বুঁচকির মেয়ের বিয়ে – নবনীতা দত্ত

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন